Wednesday, March 27, 2024

খাওয়াতের (রা) উট আর রাসূলের (সা) হাসি

 

আপনি যদি অফিসে বা অফিসের বাইরে কখনো কোন টিম ম্যানেজ করে থাকেন, অথবা আপনার যদি একাধিক সন্তান থাকে – তাহলে আপনি জেনে থাকবেন যে একই উপদেশ সবার জন্য খাটে না। প্রত্যেককে তার পার্সোনালিটি অনুযায়ী এডভাইস দিতে হয়। কাউকে হয়তো ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলতে হয়, কাউকে একটু জোর দিয়ে বলতে হয়, আবার কারো ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে হয়ত কিছু বলতেই হয় না – আপনার উপস্থিতি আর হাসিমুখই অনেক না বলা কথা বলে দেয়। আমাদের রাসূলুল্লাহ(সা) ছিলেন মাস্টার হিউমান কমিউনিকেটর। খাওয়াত ইবনে যুবাইর আল-আনসারী (রা) নামক এক সাহাবী, নিষিদ্ধের প্রতি যার কিঞ্চিৎ দুর্বতলতা ছিল, তাকে হাস্যরসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা) কিভাবে সঠিক পথে ফিরিয়ে ছিলেন আজকে সেই গল্পটা বলব।

খাওয়াত (রা) একবার রাসূলুল্লাহ(সা) এর সাথে কোন এক যাত্রা থেকে ফিরছিলেন। পথে মার-এ-যাহরান নামক এক জায়গায় তাঁরা তাঁবু খাটিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। খাওয়াত(রা) তাঁবু থেকে কি এক কাজে একবার বাইরে বের হলেন, আর তার চোখে পড়ল অদূরেই কিছু নারী রাস্তায় বসে গল্প-গুজব করছিলেন। খাওয়াত ভাবল – দেখি এদের গল্পে একটু কান পাতা যায় কিনা। তাঁবুর ভেতরে যেয়ে সে ভাল একটা জুব্বা পড়ল, তারপর বের হয়ে সেই নারীদের পাশে যেয়ে বসল।

যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়! হঠাৎ করে রাসূলুল্লাহ(সা) তাঁবু থেকে বের হলেন। চমকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল খাওয়াত। রাসূলুল্লাহ(সা) জিজ্ঞেস করলেন – “তুমি মেয়েদের সাথে যেয়ে বসে আছ কেন খাওয়াত?” কি বলতে হবে বুঝতে না পারে খাওয়াত বলে উঠল – “হে রাসূলুল্লাহ (সা)! আমার উটটা হঠাৎ করে কোথায় যেন পালিয়ে গেছে, আমি ওটাকে খুঁজতে বের হয়েছি।“

রাসূলুল্লাহ(সা) কিছু বললেন না। হাঁটা শুরু করলেন, খাওয়াতও তার সাথে সাথে গেল। কিছু কাজ সেরে রাসূলুল্লাহ(সা) অজু করলেন। তারপর খাওয়াতকে ঠাট্টার স্বরে জিজ্ঞেস করলেন – “ও আবু আব্দুল্লাহ (খাওয়াতের আরেক নাম), তোমার হারানো উটের কি অবস্থা?” জবাবে খাওয়াত চুপচাপ থাকে, কি আর বলবে? মুখে কোন উত্তর দিতে পারে না। ভাবে, কেমন করে কেটে পড়া যায়।

এর পরের কয়দিন যখনই খাওয়াতের সাথে রাসূলুল্লাহ(সা) এর দেখা হয় তখনই তিনি ঠাট্টার স্বরে জিজ্ঞেস করেন – “ও আবু আব্দুল্লাহ, তোমার হারানো উটের কি অবস্থা?” খাওয়াত ভাবে – এ কোন শাঁখের করাতের মধ্যে পড়লাম – না পারি সত্য বলতে, না পারি মিথ্যা বলতে!

খাওয়াত এরপর থেকে চেষ্টা করত কিছুতেই যাতে রাসূলুল্লাহ(সা) এর সামনে সে এসে না পড়ে। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন চলে? মসজিদে নববীতে একদিন নফল নামাজ পড়ছিল খাওয়াত। এর মধ্যেই দেখল রাসূল্ললাহ(সা) মসজিদে ঢুকেছেন। শুধু তাই না, দেখতে দেখতে তিনি (সা) একদম খাওয়াতের পাশেই এসে বসলেন! খাওয়াতের বুকের ধুকপুকানি বাড়ে। সে নামাজ লম্বা করতেই থাকে, মনে মনে ভাবে – রাসূলুল্লাহ(সা) না উঠা পর্যন্ত আজকে নামাজ শেষ করব না! খাওয়াতের লম্বা নামাজ দেখে যা বুঝার তা বুঝে যান রাসূলুল্লাহ(সা)। মুচকি হেসে বলেন – “ও আবু আব্দুল্লাহ! যত খুশী নামাজ লম্বা কর, তোমার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে উঠছি না!”

খাওয়াত মনে মনে ভাবল – “ওহ আল্লাহ! আর পারছি না! রাসূলুল্লাহ(সা) এর কাছে আমার ভুলের জন্য এবার ক্ষমা চেয়ে নিব।“  

খাওয়াতের নামাজ শেষ হতেই রাসূলুল্লাহ(সা) তাকে সালাম দিলেন। তারপর সেই একই সুরে একই প্রশ্ন – “ও আবু আব্দুল্লাহ, তোমার হারানো উটের কি অবস্থা?”

খাওয়াত এবার সত্য স্বীকার করে ফেলল – “যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন (অর্থাৎ আল্লাহ) তাঁর কসম! যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি তারপর থেকে আমার উট একটা বারের জন্যেও হারায়নি।”

জবাবে রাসূলুল্লাহ(সা) খাওয়াতের জন্য শুধুই দু’আ করলেন। তিনবার বললেন – “আল্লাহ তোমার উপর রহম করুন।”

এই ঘটনার পর খাওয়াত এই ধরনের ভুল থেকে ফিরে এসেছিলেন।

(হাদিসটি বিভিন্ন গ্রন্থে আছে – যেমন আত-তাবারানী’র আল-মুজ’আম আল কাবির (৪/২০৩),ইবনে সা’দ এর আত-তাবাকাত আল-কুবরা (৩/৩৬২-৩৬৪)। আমি প্রথম শুনেছি শেইখ ইয়াহিয়া রোডাস এর মুখে “রিভাইভিং দা ইসলামিক স্পিরিট ২০২৩” কনফারেন্সে।)

No comments:

Post a Comment

Translate