Wednesday, March 27, 2024

সীরাত ১৩ – রাসূলের ﷺ রেখে দেয়া দু’আ

 

আমরা অনেকেই সেই ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনে এসেছি – এক শস্যদানা পরিমাণ ঈমান থাকলেও আমরা জান্নাতে যাব। কথাটা সত্য – কিন্তু এর পেছনের কাহিনীটা আমরা অনেকেই জানি না । এই সত্যের অন্যতম ভিত্তি হলো প্রিয়নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর রেখে দেয়া একটি দু’আ। আসুন ব্যাপারটা জানি।

আল্লাহ ﷻ প্রত্যেক নবীকে তাদের জীবদ্দশায় একটি বিশেষ দু’আ করতে দিয়েছিলেন – যা অবশ্যই কবুল করা হবে। এই বিশেষ দু’আকে একেক নবী একেকভাবে ব্যবহার করেছেন। কেউ তার পছন্দের মু’জিযা (miracle) পাওয়ার জন্য আবার কেউবা তার উম্মতের উপর ধৈর্যহারা হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন।

– নুহ عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ ৯৫০ বছর ইসলাম প্রচারের পরেও যখন তাঁর উম্মত তাঁর বাণীকে গ্রহণ করেনি, তখন তিনি দু’আ করেছিলেন – “হে আল্লাহ আমি চাইনা এই দুনিয়ায় একটা কাফেরের ঘরও নিস্তার পাক”। এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ ﷻ বিশাল এক বন্যায় সমস্ত কাফেরকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন।

– ইব্রাহীম عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ দু’আ করেছিলেন যাতে নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর জন্ম তাঁর বংশে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাই বলতেন – “আমি আমার পিতা (পূর্বপুরুষ) ইব্রাহিমের দু’আ”

– মুসা عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ ফেরাউনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দু’আ করেছিলেন ফেরাউন যাতে কখনই হেদায়াত না পায়, আর হয়েও ছিল তাই

– সুলাইমান عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ এমন ক্ষমতার জন্য দু’আ করেছিলেন যেরকম ক্ষমতা আর কাউকে দেয়া হবে না। এর ফলশ্রুতিতে সুলাইমান عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ কে জীব-জন্তু, জ্বীন, শয়তান এমনকি বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল

আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ ﷺ কেও এরকম একটি দু’আ উপহার দেয়া হয়েছিল। তিনি কি দু’আ করেছিলেন আসুন তা উনার মুখ থেকেই শুনি।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে আল্লাহ একটি বিশেষ দু’আ উপহার দিয়েছেন, যেটা তিনি উত্তর দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আর তাঁরা প্রত্যেকেই সেটা তাদের নিজের জন্য এই দুনিয়ায় ব্যবহার করেছেন, শুধু আমি ছাড়া। আমি আমার দু’আ রেখে দিয়েছি, ব্যবহার করিনি এবং এটা আমি এই জীবনে ব্যবহার করব না। আমি দু’আটি রেখে দিয়েছি আমার উম্মতের জন্য এবং এটা আমি তাদের জন্য বিচার দিবসে ব্যবহার করব। আর আমার সেই দু’আটি হবে – “হে আল্লাহ, আমার সমস্ত উম্মতকে ক্ষমা করে দিন!” (সাহিহ মুসলিম)

এই সেই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রেখে দেয়া দু’আ যা তিনি বিচার দিবসে করবেন। আল্লাহ ﷻ এই দু’আ কবুল করবেন এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রত্যেক মুসলমান, যার এক শষ্যদানা পরিমাণ ঈমান আছে, সে এক সময় না এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে!

যে নবী তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী দু’আটি আপনার আমার জন্য বরাদ্দ রেখে দিয়েছেন, সেই নবীর আদর্শ মেনে চলা, তাঁর জন্য বেশী বেশী দুরুদ পড়া – আমার আপনার অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাড়ায়।

যাইদ ইবনে খারিজা (রা) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন – কিভাবে দুরুদ পড়তে হবে। জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন – আমার উপর সালাম পাঠিও, নিজেকে দু’আয় ব্যস্ত রেখ আর পড়:

আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহামাদ্দিউ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি শান্তি বর্ষিত করুন মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর পরিবারের উপর।

(সুনান আন-নাসাঈ, অধ্যায় ২, হাদিস নং ১২৭৬)

[শেইখ ইয়াসির কাযির সীরাহ লেকচার পর্ব-২ অনুসারে]

[মহানবীর মহাজীবন ফেইসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/mohanobir.mohajibon.pbuh) এই লেখাটি পর্ব ১৮ নামে প্রকাশিত হয়েছিল । এই ব্লগে সেই একই লেখা পর্ব ১৩ নামে প্রকাশিত হল। ফেইসবুক পেইজের কিছু ছোট লেখাকে ব্লগে একত্রিত করে প্রকাশ করায় নম্বরের এই ভিন্নতা তৈরী হয়েছে। এতে পাঠকের অসুবিধা হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ]

No comments:

Post a Comment

Translate