Wednesday, March 27, 2024

আমার স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব

 

আমরা কুরআন মজিদের একটা আয়াতের কথা অনেক সময়ই শুনি – মহান আল্লাহ বলেন –
فَاذۡكُرُوۡنِىۡٓ اَذۡكُرۡكُمۡ
ফাযকুরুনি আযকুরকুম – আমার যিকর (স্মরণ) করো, আমিও তোমাদের যিকর (স্মরণ) করব।
– (সূরা বাকারাহ আয়াত ১৫২)
 
আয়াতটা আমরা শুনি ঠিকই – কিন্তু কতটুকু চিন্তা করি?
 
ভেবে দেখুন আপনি হয়ত কাউকে খুব পছন্দ করেন, ভালবাসেন। আপনি তার থেকে অনেক দূরে আছেন। আপনি তাকে স্মরণ করছেন। সে আপনার কাছে নেই – কিন্তু তাকে স্মরণ করতেই আপনার খুউব ভাল লাগছে, মনটায় কেমন একটা প্রচ্ছন্ন আনন্দ। কিন্তু আপনি কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন সে-ও ঐ মুহূর্তে আপনাকে স্মরণ করছে? আপনি যদি জানতেন ঐ মুহুর্তে সে-ও আপনাকে স্মরণ করছে, তাহলে আপনার কেমন লাগত? আপনার ভাল লাগা কি বহুগুণ বেড়ে যেত না? আমরা যখন মানুষের মজলিসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কে স্মরণ করি, মহান আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের মজলিসে আমাদের স্মরণ করেন। আমরা আল্লাহর দিকে হেঁটে গেলে, আল্লাহ আমাদের দিকে দৌড়ে আসেন! (সাহিহ মুসলিম)
 
কি কি ভাবে আল্লাহর যিকর করা যায়?
 
আল্লাহর যিকর করা যায় সালাত আদায়ের মাধ্যমে। সূরা ত্ব-হায় (আয়াত ১৪) আল্লাহ বলেন:
“সুতরাং আমার ইবাদত কর, আর আমার যিকর করার জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা কর।“
 
আল্লাহর যিকর করা যায় কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। সূরা হিজরে (আয়াত ৯) আল্লাহ বলেন:
“আমিই যিকর (কুরআন) নাযিল করেছি,আর আমিই এর হেফাযত করব।“
 
এছাড়াও আল্লাহর যিকর করা যায় মৌখিক যিকরগুলো উচ্চারণের মাধ্যমে – সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, আ’উযুবিল্লাহ।
 
এত সহজ ইবাদত – যিকর – অথচ এর মাধ্যমে আল্লাহর কত কাছে চলে আসা যায়! আমাদের অনেকের জীবনের অনেক বছর চলে গেছে – ২০, ৩০, ৪০, ৫০ বছর। অনেক সময় হয়তো আফসোস হয় – ইশ আরো আগের থেকে যদি ৫ ওয়াক্ত সালাত শুরু করতে পারতাম! আরো আগে থেকে যদি দ্বীনকে বুঝতে পারতাম! সময়-সুযোগ কি শেষ? নাকি আছে?
 
একবার এক বৃদ্ধ সাহাবী রাসূলুল্লাহ(সা) এর কাছে এসে বললেন: “হে রাসূলুল্লাহ(সা)! ইসলাম আমার কাছে এসেছে, আর আমার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি, এখানকার বাকী সাহাবীদের মত আমার যৌবন নেই। বেশীরভাগ সাহাবীরা যা করছে তার করার শক্তি আমার নেই। কাজেই আমাকে এমন একটা আমলের কথা বলে দিন যেটা আমি এই বয়সেও করতে পারব, আর যদি আমি তা দৃঢ়ভাবে পালন করতে থাকি তাহলে এখানে বসে থেকেও বাকী সাহাবীদের সমমর্যাদায় পৌছতে পারব।”
 
খুব সংক্ষেপে জবাব দিলেন প্রিয় রাসূল(সা)। তিনি বললেন – নিজেকে যিকর এর উপর দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ।
সালাত আদায় করতে, কুরআন পড়তে – শরীর পবিত্র হতে হয়, অযুর দরকার পড়ে। কিন্তু, মুখে যিকর করতে? কিচ্ছু লাগে না। আপনি শুয়ে যিকর করতে পারেন, চেয়ারে বসে যিকর করতে পারেন, হাটতে হাটতে যিকর করতে পারেন, কিবলামুখি হয়ে যিকর করতে পারেন, কিবলামুখি না হয়েও যিকর করতে পারেন, অফিসে কাজ করতে করতে যিকর করতে পারেন, গাড়িতে/বাসে বসে যিকর করতে পারেন, রান্না করতে করতে যিকর করতে পারেন, এমনকি খেতে খেতেও যিকর করতে পারেন।
 
যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণই জবানে হোক যিকরের বাস!
 
 
(শেইখ ইয়াসির কাদি’র “দি প্যারাবলস অফ দ্যা কুরআন” বই থেকে অনুপ্রাণিত)

No comments:

Post a Comment

Translate