Wednesday, March 27, 2024

সীরাত ৭ – মহানবীর ﷺ বিনয়

 Camel_Trekking-1-large

আমরা যখন নেতা বা সিনিয়র টাইপের কিছু হয়ে যাই, আমাদের মধ্যে খুব হোমড়া-চোমড়া একটা ভাব চলে আসে। আমরা চাই আমরা বসে থাকব, আর সবাই আমাদের কাজ করে দিবে। মহানবী ﷺ কিন্তু মোটেও এরকম ছিলেন না, মুসলিম জাহানের নেতা হওয়ার পরেও তিনি সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতেন। আসুন একটা কাহিনী শুনি।

বদরের যুদ্ধে যাওয়ার সময় মুসলিম বাহিনীর সহায়-সম্পদের অবস্থা খুবই করুন ছিল। সর্বসাকুল্যে উট ছিল প্রায় ৭৫টি, আর যোদ্ধার সংখ্যা ৩১৩, বা তার কিছু কম-বেশী। কাজেই, পথ চলতে তিনজন মানুষকে শেয়ার করতে হচ্ছে একটা উট। আলি ইবনে আবি তালিব (রা) আর আবু লুবাবা (রা) পড়লেন এক অদ্ভূত পরিস্থিতিতে – তাদেরকে উট শেয়ার করতে হবে স্বয়ং মহানবী ﷺ এর সাথে! মহানবী একে মহান আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, তার উপর বয়সেও তাদের চেয়ে বহু বড়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন – ও রাসূলুল্লাহ, আমরা দুজনেই তো বয়সে অনেক ছোট, কেবল তিরিশের কোঠায় – আমরা হেঁটেই চলে যেতে পারব, আপনি একাই বরং উটে চড়ুন।

এরকম পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জায়গায় আসুন অন্য যে কোন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রিকে রেখে একটু কল্পনা করি। রাসূলুল্লাহর ﷺ বয়স তখন প্রায় ৫৪ বছর, তার উপর তিনি ﷺ সেনাবাহিনীর প্রধান, মদীনাকে যদি একটা রাষ্ট্র হিসাবে কল্পনা করি তাহলে তিনি ﷺ সেই রাষ্ট্রেরও প্রধান। এই অবস্থায় নিজের জন্য একটা উট কিন্তু তাঁর এমনিতেই পাওনা। উনি যদি একাই একটা উটে চড়েন কেউ সেটা অস্বাভাবিক মনে করবে না, কেউ কিছু বলবেও না। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ ﷺ তো আমার মতো, আপনার মতো সাধারণ কেউ নন। তিনি ﷺ তো অন্যের কষ্ট লাঘব এর কোন সুযোগ কে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়বেন না, তিনি তো আরাম করার মানুষ নন, তিনি তো বিনয়ের আধার।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আলীর (রা) অনুরোধ গ্রহণ করলেন না, আবার এমনভাবে তার অনুরোধকে এড়িয়ে গেলেন না যাতে আলিকে ছোট করা হয়। এমন একটা কথা বললেন যার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন – তিনি আলি বা লুবাবাকে কোন দয়া দেখাচ্ছেন না, বরং উটে একা একা চড়ার মধ্যে তাঁর কোন উপকার নেই। তিনি ﷺ বললেন – তোমাদের দু’জনের কেউই আমার চেয়ে বেশী শক্ত-সামর্থ্য নও, আর সওয়াবের প্রয়োজনীয়তা তোমাদের চাইতে আমারো কম নেই, কাজেই আমরা ভাগাভাগি করেই উটে চড়ব।

অগত্যা কি আর করা, আল্লাহর রাসূলের ﷺ সাথে উট ভাগাভাগি করে আলি (রা) আর লুবাবা (রা) কে বদর প্রান্তরের দিকে যাত্রা করতে হলো। যে নেতা এত নির্লোভ, এত বিনয়ী, তাঁকে তাঁর অনুসারী সাহাবীরা যে নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসবে – এরকম হওয়াটাই কিন্তু স্বাভাবিক।

সূত্র: শেইখ ইয়াসির কাযীর সিরাহ লেকচার – পর্ব ২

 

[মহানবীর মহাজীবন ফেইসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/mohanobir.mohajibon.pbuh) এই লেখাটি পর্ব ১১ নামে প্রকাশিত হয়েছিল । এই ব্লগে সেই একই লেখা পর্ব ৭ নামে প্রকাশিত হল। ফেইসবুক পেইজের কিছু লেখাকে ব্লগে একত্রিত করে প্রকাশ করায় নম্বরের এই ভিন্নতা তৈরী হয়েছে। এতে পাঠকের অসুবিধা হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ]

No comments:

Post a Comment

Translate