Wednesday, March 27, 2024

সীরাত ২৭ – বনু কুরাইশ আসল কোত্থেকে?

 

আমরা কমবেশী সবাই জানি যে রাসূলুল্লাহ(সা) ছিলেন কুরাইশ গোত্রের মানুষ। কিন্তু, বনু কুরাইশী কারা ছিল? কে ছিল এই জনাব কুরাইশ? আজকের লেখায় আমরা এটা জানব।

আমাদের প্রিয়নবীর(সা) নাম মুহাম্মাদ(সা) – আমরা সবাই জানি। কিন্তু, পূর্বপুরুষ আদনান থেকে শুরু করে যদি তার পুরো বংশ পরিচয় দিয়ে নাম বলি তাহলে এটা হবে – মুহাম্মাদ (সা) ইবনে আব্দুল্লাহ, ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (শাইবাতাল হামদ), ইবনে হাশিম (আমর), ইবনে আব্দুল মানাফ, ইবনে কুসাই, ইবনে কিলাব, ইবনে মুররা, ইবনে ইলিয়াস (কা’ব,) ইবনে মুদার (লু’আই), ইবনে গালিব, ইবনে ফিহির, ইবনে মালিক, ইবনে নাদর, ইবনে কিনানা, ইবনে খুজাইমা, ইবনে মুদরিকা, ইবনে ইলিয়াস, ইবনে মুদার, ইবনে নিযার, ইবনে মা’দ, ইবনে আদনান। অর্থাৎ, গুনলে দেখবেন আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ(সা) হলেন আরবের বিখ্যাত মানুষ আদনানের ২০তম বংশধর।  

রাসূলুল্লাহ(সা) জন্মেছিলেন আরবের সবচেয়ে সম্মানিত কুরাইশ বংশে। কিন্তু উপরের নামের লিস্টটা চেক করলে আপনি “কুরাইশ” নামে কাউকে পাবেন না! তাহলে কুরাইশ কে ছিল?

আসলে কুরাইশ কারো নাম না, কুরাইশ হলো একটা টাইটেল। কুরাইশ শব্দের কয়েকটা অর্থ আছে। যেমন –  যে ব্যক্তি যে বহু মানুষকে একত্রিত করে, বড় সওদাগর, যুদ্ধজয়ী। উপরের লিস্টের কার ছিল এই টাইটেল? ঐতিহাসিকরা বলেন – রাসূলুল্লাহ(সা) এর পূর্বপুরুষদের তিনজন এই কুরাইশ টাইটেল পেয়েছিল। এরা হচ্ছেন – মুহাম্মাদ(সা) এর ১৪ তম পূর্বপুরুষ নাদর, ১২ তম পূর্বপুরুষ ফিহির ও ৫ম পূর্বপুরুষ কুসাই।

এদেরকে যথাক্রমে বড় কুরাইশ, মেঝ কুরাইশ ও ছোট কুরাইশ বলা হয়। তবে, অনেক ঐতিহাসিকের মতে নাদর ও কুসাই যদিও গুরত্বপূর্ণ নেতা ছিল, কিন্তু  প্রকৃত “কুরাইশ” ছিল ফিহির। কারণ, মক্কায় বসবাসরত যাদেরকে কুরাইশি বলা হত – তাদের সকলেরই পূর্বপুরুষ ফিহির পর্যন্ত মিলে যায়। রাসূলুল্লাহ(সা) এর সময় কুরাইশ গোত্রের ১২ টা উপগোত্র ছিল আর তাদের সবার পূর্বপুরুষ ছিল ফিহির। 

কিন্তু ফিহির বা তার নিকট বংশধরদের নিয়ে খুব বেশী তথ্য ইতিহাসের বইগুলোতে পাওয়া যায় না। তবে, রাসূলুল্লাহ(সা) এর পঞ্চম পূর্বপুরুষ কুসাই থেকে শুরু করে আমরা কিছু কিছু তথ্য পাই। আরবজাতির জন্য কুসাই ও তার বংশধরেরা কি অবদান রেখেছিল এবং কিভাবে গৌরব বয়ে এনেছিল – এটা জানলেই আমরা বুঝতে পারব কেন কুরাইশ গোত্র ও বনু হাশিম বংশকে মক্কাসহ সমস্ত আরবের লোক এত শ্রদ্ধা আর সম্মান করত।

রাসূলুল্লাহ(সা) এর পূর্বপুরুষ কুসাই মক্কাবাসীকে উপহার দিয়েছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা, ইবনে হিশাম চালু করেছিল আন্তর্যাতিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও হাজীদের অসামান্য আপ্যায়ন, আর আব্দুল মুত্তালিব এনেছিল ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত গৌরব। যেহেতু এরা সবাই কুরাইশ বংশের লোক ছিলেন – এভাবে করেই রাসূলুল্লাহ(সা) আসার আগে মহান আল্লাহ কুরাইশ বংশকে আরবের সবচেয়ে সম্মানিত বংশে পরিণত করেছিলেন। পরের পর্বে আমরা এই পূর্বপুরুষদের নিয়ে বিস্তারিত জানব। 

রেফারেন্স:

১) শেইখ ইয়াসির কাদি’র সীরাহ লেকচার – পর্ব ৫

২) উস্তাদা সামিরা আল যাইদের সীরাত বই

৩) ড. সাল্লাবির সীরাত বই

[মহানবীর মহাজীবন ফেইসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/mohanobir.mohajibon.pbuh) এই লেখাটি পর্ব ৩২ নামে প্রকাশিত হয়েছিল । এই ব্লগে সেই একই লেখা পর্ব ২৭ নামে প্রকাশিত হল। ফেইসবুক পেইজের কিছু ছোট লেখাকে ব্লগে একত্রিত করে প্রকাশ করায় নম্বরের এই ভিন্নতা তৈরী হয়েছে। এতে পাঠকের অসুবিধা হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।]

No comments:

Post a Comment

Translate