Friday, June 20, 2025

এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের কতটি অধিকার বা হক রয়েছে

 প্রশ্ন: এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের কতটি অধিকার (হক) রয়েছে? এই অধিকারসমূহ পালন করার শারঈ বিধান কী?

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।অতঃপর:এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের যেসব অধিকার রয়েছে, সে সম্পর্কে হাদীসে দুটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায়। একটিতে পাঁচটি এবং অন্যটিতে ছয়টি হকের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো:
১. সালামের জবাব দেওয়া
২. রোগীকে দেখতে যাওয়া
৩. জানাযার সঙ্গে যাওয়া
৪. নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা
৫. হাঁচির জবাব দেওয়া
৬. উপদেশ চাইলে তা প্রদান করা
.
দলিল হচ্ছে,আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ.“এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের হক পাঁচটি: ১) সালামের জবাব দেওয়া, ২) অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, ৩) লাশের অনুসরণ করা, ৪) নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা, ৫) হাঁচির জবাব দেওয়া।”(সহীহ বুখারী হা/১২৪০; ও সহীহ মুসলিম হা/২১৬২) অপর বর্ননায় আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ: قَالَ إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ.“এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক ছয়টি।” জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল, সেগুলো কী কী? তিনি বললেন: “সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দিবে। সে তোমাকে নিমন্ত্রণ করলে তুমি সাড়া দিবে। তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তাকে উপদেশ দিবে। সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লে তুমি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। সে অসুস্থ হলে তুমি তাকে দেখতে যাবে। সে মারা গেলে তুমি তার পিছে পিছে যাবে।”(সহীহ মুসলিমে হা/২১৬২)
.
ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:وَالْمُرَادُ بِقَوْلِهِ: (حَقُّ الْمُسْلِمِ) أَنَّهُ لَا يَنْبَغِي تَرْكُهُ وَيَكُونُ فِعْلُهُ إمَّا وَاجِبًا أَوْ مَنْدُوبًا نَدْبًا مُؤَكَّدًا شَبِيهًا بِالْوَاجِبِ الَّذِي لَا يَنْبَغِي تَرْكُهُ، وَيَكُونُ اسْتِعْمَالُهُ فِي الْمَعْنَيَيْنِ مِنْ بَابِ اسْتِعْمَالِ الْمُشْتَرَكِ فِي مَعْنَيَيْهِ، فَإِنَّ الْحَقَّ يُسْتَعْمَلُ فِي مَعْنَى الْوَاجِبِ، كَذَا ذَكَرَهُ ابْنُ الْأَعْرَابِيِّ، وَكَذَا يُسْتَعْمَلُ فِي مَعْنَى الثَّابِتِ وَمَعْنَى اللَّازِمِ وَمَعْنَى الصِّدْقِ وَغَيْرِ ذَلِكَ وَقَالَ ابْنُ بَطَّالٍ: الْمُرَادُ بِالْحَقِّ هُنَا الْحُرْمَةُ وَالصُّحْبَةُ.”এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ‘হক’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: যা ত্যাগ করা অনুচিত। যা পালন করা ওয়াজিব কিংবা এমন তাগিদপূর্ণ মুস্তাহাব যা ওয়াজিবের সদৃশ, যা ত্যাগ করা উচিত নয়। এখানে এই শব্দটি দ্বৈত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি এক শব্দ বিভিন্নার্থে ব্যবহৃত হওয়া শ্রেণীয়। কেননা ‘হক’ শব্দটি ওয়াজিব (আবশ্যক) অর্থে ব্যবহৃত হয় যেমনটি বলেছেন ইবনুল আ’রাবী। এছাড়াও শব্দটি সাব্যস্ত, অনিবার্য ও সত্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ইবনু বাত্তাল বলেন: এখানে ‘হক’ দ্বারা উদ্দেশ্য সম্মান ও সাহচর্য।”(শাওকানী; নাইলুল আওত্বার; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২১)
.
ওয়াজিব ও মুস্তাহাবের বিবেচনা থেকে এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের হকসমূহ:
.
এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের অধিকারগুলোর মধ্যে কোনটি ওয়াজিবে-আইন। তথা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর সেটি পালন করা আবশ্যকীয়। যদি কেউ পালন না করে তাহলে সে গুনাহগার হবে। আর কোনটি ওয়াজিবে-কিফায়াহ। তথা কিছু মানুষ পালন করলে অন্যেরা আর গুনাহগার হবে না। আর কোনটি মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। কোন মুসলিম সেটি পালন না করলে গুনাহগার হবে না। সবগুলো ধারাবাহিকভাবে জানার চেষ্টা করব।
.
❑ (১)- যদি শুধু একজনকে সালাম দেয়া হয় তাহলে সালামের জবাব দেয়া তার উপর ওয়াজিব। আর যদি একদল মানুষকে সালাম দেওয়া হয় তাহলে সালামের জবাব দেয়া ফরযে-কিফায়াহ। আর শুরুতে সালাম দেওয়ার মূলবিধান সুন্নত। আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে এসেছে:” ابْتِدَاءُ السَّلاَمِ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ، لِقَوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ وَيَجِبُ الرَّدُّ إِنْ كَانَ السَّلاَمُ عَلَى وَاحِدٍ. وَإِنْ سَلَّمَ عَلَى جَمَاعَةٍ فَالرَّدُّ فِي حَقِّهِمْ فَرْضُ كِفَايَةٍ، فَإِنْ رَدَّ أَحَدُهُمْ سَقَطَ الْحَرَجُ عَنِ الْبَاقِينَ، وَإِنْ رَدَّ الْجَمِيعُ كَانُوا مُؤَدِّينَ لِلْفَرْضِ، سَوَاءٌ رَدُّوا مَعًا أَوْ مُتَعَاقِبِينَ، فَإِنِ امْتَنَعُوا كُلُّهُمْ أَثِمُوا لِخَبَرِ؛ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلاَمِ…”সালাম দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা সালামের প্রসার কর।” একজনকে সালাম দেয়া হলে সালামের জবাব দেয়া তার উপর ওয়াজিব। আর একদল মানুষকে সালাম দেওয়া হলে তখন তাদের সবার উপর এর জবাব দেওয়া ফরযে-কিফায়াহ। অর্থাৎ যদি একজন জবাব দেয় বাকিদের উপর থেকে আবশ্যকতা মওকূফ হয়ে যাবে। আর যদি সবাই জবাব দেয় তাহলে সবাই ফরয আদায় করেছে বলে গণ্য হবে; চাই তারা এক সাথে জবাব দিক কিংবা একজনের পর অন্যজন জবাব দিক। আর যদি সবাই বিরত থাকে তাহলে তারা সবাই গুনাহগার হবে। কারণ হাদীসে আছে: এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের হক পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া…।(আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩১৪)
.
❑ (২)- অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ফরযে-কিফায়াহ।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:وعيادة المريض فرض كفاية، لابد أن يعود المسلمون أخاهم، وإذا عاده واحد منهم حصلت به الكفاية، وقد تكون فرض عين إذا كان المريض من الأقارب وعدت عيادته من الصلة؛ فإن صلة الأرحام واجبة، فتكون فرض عين “অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া (ইয়াদাহ বা সান্ত্বনা প্রদান) ফরযে-কিফায়াহ। কোনো মুসলিম ভাই অসুস্থ হলে মুসলিমদের উচিত তাকে দেখতে যাওয়া। যদি কারো পক্ষ থেকে একজন এটি আদায় করে, তাহলে বাকি সবার পক্ষ থেকে দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ফরজে ‘আইন’ও হয়ে যেতে পারে—যেমন, যদি রোগী আত্মীয়স্বজনদের অন্তর্ভুক্ত হন এবং তাকে দেখতে যাওয়াটা আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণ (صلة الرحم) হিসেবে গণ্য হয়; কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ওয়াজিব। সুতরাং এ অবস্থায় রোগীকে দেখতে যাওয়াটা ফরজে ‘আইন’ হয়ে যাবে।”(ইবনু উসাইমীন,
মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ১০৮৫; শারহু রিয়াদিস সালিহিন; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৯৫-৫৯৭)
.
অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাওয়া বা তার সেবা করা যেমন মুসলমানের উপর ওয়াজিব, তেমনি এর বিশেষ ফযীলত রয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেন,”আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে, হে প্রভু! কিভাবে আমি আপনাকে দেখতে যাব, আপনি তো সারা জাহানের পালনকর্তা? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহ’লে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?”।(সহীহ মুসলিম হা/২৫৬৯; মিশকাত হা/১৫২৮)। রাসূল ﷺ) আরো বলেন,”যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন ফেরেশতা তাকে লক্ষ্য করে বলে, ধন্য তুমি, ধন্য হোক তোমার এ পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি গৃহ তৈরী করে নিলে”।(তিরমিযী হা/২০০৮; মিশকাত হা/৫০১৫; সহীহুত তারগীব হা/২৫৭৮)। তিনি আরো বলেন, ‘যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তুর হাযার ফেরেশতা দো‘আ করতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত দু‘আ করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরী হয়’ (তিরমিযী হা/৯৬৯)। তিনি বলেন, ‘কোন মুসলিম যখন তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের রোগের খবর জানার জন্য যায়, সে না ফেরা পর্যন্ত জান্নাতের খুরফার মধ্যে অবস্থান করে। জিজ্ঞাসা করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! খুরফাহ কী? তিনি বললেন, জান্নাতের ফল-পাড়া’ (মুসলিম হা/২৫৬৮; মিশকাত হা/১৫২৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি রোগীর সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়, সে রহমতের মধ্যে বিচরণ করতে থাকে। অতঃপর সে যখন (রোগীর নিকটে) বসে যায়, তখন রহমতে স্থিতিশীল হয়ে যায় (আহমাদ হা/১৪২৯৯; সিলসিলা সহীহাহ হা/২৫০৪)।
.
❑ (৩)- জানাযায় উপস্থিত হওয়া:
.
মুসলিম মাইয়্যেতের উপর জানাযার নামায পড়া ফর্যে কিফায়াহ (অর্থাৎ কিছু লোক তা পালন করলে বাকী লোকের কোন পাপ হয়না এবং কেউই পালন না করলে সকলেই পাপী হয়। কারণ, এ নামায পড়তে আল্লাহর নবী (ﷺ) আদেশ করেছেন। যায়দ বিন খালেদ জুহানী বলেন, খাইবারের দিন নবী (ﷺ) এর এক সাহাবী মারা গেলে সকলে তাকে খবর দিলেন। কিন্তু তিনি বললেন, “তোমাদের সঙ্গীর জানাযা তোমরা পড়।” এ কথা শুনে সকলের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। কারণ বর্ণনা করে তিনি বললেন, “তোমাদের ঐ সাথী আল্লাহর পথে খেয়ানত করে মারা গেছে…।”(আবু দাউদ হা/২৩৩৫; ইবনে মাজাহ হা/২৮৩৮; মুসনাদে আহমাদ হা/২০৮৬) অবশ্য দুই প্রকার মাইয়্যেতের জানাযা এ নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। অর্থাৎ তাদের জানাযা পড়া ওয়াজেব নয়; তবে বিধেয় বটে। প্রথম হল নাবালক শিশু। কারণ নবী (ﷺ) তার শিশু পুত্র ইব্রাহীম এর জানাযা পড়েন নি। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) এর পুত্র ১৮ মাস বয়সে মারা যায়। তিনি তার জানাযা পড়েন নি।”(আবু দাউদ হা/ ২৭৭২ মুসনাদে আহমাদ হা/২৫১০১; আবু দাউদ হা/২৭২৯) আর দ্বিতীয় হল শহীদ। কেননা নবী (ﷺ) উহুদ প্রভৃতি যুদ্ধের শহীদদের জানাযা পড়েন নি বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। অবশ্য তার নামায না পড়াটা উক্ত ধরনের মাইয়্যেতের অবিধেয় হওয়ার নির্দেশ দেয় না। বরং নিম্নোক্ত শ্রেণীর মাইয়্যেতের জানাযা পড়া ওয়াজেব না হলেও পড়া উচিত।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,
صلاة الجنازة فرض كفاية إذا قام بها البعض سقطت عن الباقين ، وإذا تركها الجميع وهم يعلمون أثموا ، ولا خصوصية للرجال بذلك ، بل الرجال والنساء في مشروعية الصلاة على الجنازة سواء ، وإن كان الأصل في مباشرة ذلك للرجال ، لكن ليس للمرأة أن تتبع الجنازة لما ثبت من قول أم عطية : ( نهينا عن اتباع الجنائز ، ولم يعزم علينا ) رواه البخاري ومسلم ، وفي رواية : ( نهانا رسول الله صلى الله عليه وسلم … ) الحديث .
জানাযার নামায ফরযে কিফায়া। যদি কিছু লোক সেটা আদায় করে অন্যদের উপর থেকে সেটা মওকুফ হয়ে যায়। আর যদি জেনেশুনে সকলে বর্জন করে তাহলে সকলে গুনাহগার হয়। এ বিধান পুরুষদের জন্য খাস নয়। বরং মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায আদায়ের ক্ষেত্রে নর-নারী উভয়ের জন্য বিধান সমান। যদিও মূলত: পুরুষেরাই এ আমলটি করে থাকে। তবে কোন নারী মৃতব্যক্তির অনুগমণ করবে না (কবরস্থানে যাবে না)। যেহেতু উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “আমাদেরকে মৃতব্যক্তির অনুগমণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়নি।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] অপর এক বর্ণনায় এসেছে: “রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে….নিষেধ করেছেন”।(আল-হাদিস; ফাতওয়া লাজনাতুদ দাইমাহ; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪০৪০)
.
❑ (৪)- আর নিমন্ত্রণে সাড়া দেয়া:
.
যে প্রকার দাওয়াতে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে মুসলিম আদিষ্ট সে দাওয়াতকে আলেমরা দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। এক: বিবাহের দাওয়াত। দুই: বিবাহের দাওয়াত ছাড়া অন্যান্য দাওয়াত। সুতরাং যদি সেটা বিয়ের ওলীমার দাওয়াত হয় তাহলে অধিকাংশ মাযহাব মতে কোন শরয়ি ওজর ছাড়া সাড়া দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি ওলীমা ছাড়া অন্য কোন উপলক্ষ্য হয় তাহলে অধিকাংশ মাযহাব মতে সাড়া দেওয়া মুস্তাহাব। তবে নিমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। বনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:(إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْوَلِيمَةِ فَلْيَأْتِهَا) “যখন তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দা’ওয়াত দেয়া হয়, সে যেন ঐ দা’ওয়াতে সাড়া দেয়”।(সহিহ বুখারী হা/৫১৭৩; সহিহ মুসলিম, হা/ ৩৪০১) অপর বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি দা‘ওয়াত বর্জন করল সে আল্লাহ ও তার রসূলের নাফরমানী করল।’’(সহীহ মুসলিম হা/১০৬, ১৪৩১)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, “يقول العلماء رحمهم الله : إنه تجب إجابة دعوة العرس في أول مرة ، أي أول وليمة إذا عيَّنه سواء بنفسه ، أو بوكيله ، أو ببطاقة يرسلها إليه ، بشرط ألا يكون في الوليمة منكر ، فإن كان فيها منكر ففيه تفصيل : إن كان إذا حضر أمكنه منع المنكر وجب عليه الحضور ، وإن كان لا يستطيع فإنه لا يجوز له أن يحضر” “আলেমগণ (আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন) বলেন: বিয়ের প্রথম দাওয়াত কবুল করা ওয়াজিব। অর্থাৎ প্রথম ওয়ালিমার। যদি নিমন্ত্রণকারী কিংবা তার প্রতিনিধি কিংবা কার্ড পাঠানোর মাধ্যমে ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে দাওয়াত দেয়া হয়। তবে শর্ত হচ্ছে এ অনুষ্ঠানে যেন শরিয়ত গর্হিত কোন কিছু না থাকে। আর যদি এ অনুষ্ঠানে শরিয়ত গর্হিত কোন কিছু থাকে তাহলে এর হুকুম ব্যাখ্যাসাপেক্ষ: যদি ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে এ গর্হিত কাজে নিষেধ করা সম্ভবপর হয় তাহলে এ ব্যক্তির জন্য (ঐ ওয়ালিমায়) উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। আর যদি উপস্থিত হয়ে এ গর্হিত কাজে বাধা দেয়া সম্ভবপর না হয় তাহলে এ ব্যক্তির জন্য উপস্থিত হওয়া জায়েজ নয়”।(ইবনু উসাইমীন, লিকা আল-বাব আল-মাফতুহ: ১৩/১৩৩)
.
জেনে রাখা ভালো যে,ওয়ালিমার দাওয়াত পেলে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব হলেও কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ওয়াজিব দায়িত্বটি অব্যাহতি পেতে পারে। অর্থাৎ কিছু যুক্তিসঙ্গত ওযরের (অজুহাত/কারণ) ভিত্তিতে দাওয়াতে না যাওয়া জায়েয (অনুমোদিত) হয়। নিচে এমন কিছু ওযরের বিবরণ দেওয়া হলো, যেগুলোর কারণে দাওয়াতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকা বৈধ গণ্য হবে।
.
(১).খাদ্য সন্দেহযুক্ত হওয়া, (২).খাদ্যানুষ্ঠানে যদি শুধু ধনীদের খাস করে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদের বর্জন করা হয়, (৩).সেখানে এমন লোক আছে যে উপস্থিত সভ্যদের কষ্ট দেয়, (৪).সেখানে এমন সব লোক বসবে যাদের সাথে বসা উচিত নয়, (৫).দাওয়াতকারী তার অনিষ্টতা চাপা দেয়ার জন্য কিংবা তার যশ খ্যাতি প্রকাশের লোভে দাওয়াত করেছে, (৬).দাওয়াতকারী তার বাতিল ও নিষিদ্ধ কর্মের সমর্থন আদায় বা সাহায্যের জন্য দাওয়াত করছে, (৭). কিংবা সেখানে নিষিদ্ধ কর্ম হয়ে থাকে যেমন মদ্যপান, অশ্লীল গান-বাজনা ও খেল-তামাশা ইত্যাদি, (৮).এমনকি বিছানাও যদি রেশমীর বিছানা হয় এ জাতীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত বর্জন করা বৈধ। বর্তমানের দাওয়াতী অনুষ্ঠানগুলোতে কোনো না কোনো দিক থেকে এ জাতীয় কর্মকান্ড হয়েই থাকে। সুতরাং এ জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগদান না করার ওযর বিদ্যমান এবং গ্রহণযোগ্য।(বিস্তারিত জানতে দেখুন, ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হা: ৫১৭৩, নববী; শারহে মুসলিম ৯ম/১০ম খন্ড, হা/১৪২৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
.
❑ (৫)- হাঁচির জবাব দেওয়া:
.
হাঁচির জবাব দেওয়ার হুকুম প্রসঙ্গে আহালুল আলেমের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে রয়েছে:”وَهَذَا التَّشْمِيتُ سُنَّةٌ عِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ.وَفِي قَوْلٍ لِلْحَنَابِلَةِ وَعِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ هُوَ وَاجِبٌ.وَقَالَ الْمَالِكِيَّةُ، وَهُوَ الْمَذْهَبُ عِنْدَ الْحَنَابِلَةِ بِوُجُوبِهِ عَلَى الْكِفَايَةِ. وَنُقِلَ عَنِ الْبَيَانِ أَنَّ الأَشْهَرَ أَنَّهُ فَرْضُ عَيْنٍ، لِحَدِيثِ ” كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ يَقُولَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ “‘শাফেয়ীদের মতে হাঁচির জবাব দেওয়া সুন্নহ। হাম্বলীদের এক মতে এবং হানাফীদের মতে এটি ওয়াজিব। মালেকীদের মেত এবং হাম্বলীদের মাযহাবের মতে: হাঁচির জবাব দেওয়া ওয়াজিবে-কিফায়াহ। আল-বায়ান গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে: প্রসিদ্ধ মতানুসারে এটি ফরযে-আইন। কারণ হাদীসে আছে: যে মুসলিমই এটি (হাঁচির পরে আলহামদুলিল্লাহ) শুনতে পাবে তার জন্য ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ‘হক্ক’ তথা আবশ্যকীয়।” (আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা; ২২)
.
শক্তিশালী মত হলো: কেউ যদি হাঁচিদাতাকে আলহামদুলিল্লাহ পড়তে শুনে তার জন্য হাঁচির জবাব দেওয়া ওয়াজিব। কারণ ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। কেউ যদি হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তাহলে এটি শুনতে পেয়েছে এমন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হাঁচির জবাব দেওয়া ‘হক্ক’ তথা আবশ্যকীয়।”(সহীহ বুখারী হা/৬২২৩)
ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন:وَقَدْ تَقَدَّمَ حَدِيث أَبِي هُرَيْرَة وَفِيهِ فَإِذَا عَطَسَ أَحَدكُمْ، وَحَمِدَ اللَّه، كَانَ حَقًّا عَلَى كُلّ مُسْلِم سَمِعَهُ أَنْ يَقُول: يَرْحَمك اللَّه . وَتَرْجَمَ التِّرْمِذِيّ عَلَى حَدِيث أَنَس ( بَاب مَا جَاءَ فِي إِيجَاب التَّشْمِيت بِحَمْدِ الْعَاطِس) وَهَذَا يَدُلّ عَلَى أَنَّهُ وَاجِب عِنْده، وَهُوَ الصَّوَاب، لِلْأَحَادِيثِ الصَّرِيحَة الظَّاهِرَة فِي الْوُجُوب مِنْ غَيْر مُعَارِض وَاَللَّه أَعْلَم.”ইতঃপূর্বে আবু হুরাইরার হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যাতে রয়েছে: “তোমাদের কেউ যদি হাঁচি দেয় এবং আল্লাহর প্রশংসা করে তাহলে তা শুনতে পেয়েছে এমন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা ‘হক্ক’ তথা আবশ্যকীয়।”তিরমিযী আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: ‘হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহ বলার জবাব প্রদানের আবশ্যকতা প্রসঙ্গে যা বর্ণিত হয়েছে সে সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ’। এই নামকরণ প্রমাণ করে যে হাঁচির জবাব দেয়া তার কাছে ওয়াজিব। এটাই সঠিক অভিমত। কারণ আবশ্যকতার পক্ষে সুস্পষ্ট হাদীসসমূহ রয়েছে, যেগুলোর বিপরীতে কোন হাদিস নেই। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।”
.
এ বিষয়ক হাদিসগুলোর মধ্যে রয়েছে: আবু হুরাইরার হাদীস, যা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।এছাড়াও তাঁর থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদীস রয়েছে: “এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক ওয়াজিব।” সেগুলো ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো রয়েছে সালেম ইবনে উবাইদের হাদীস, যেখানে আছে: ‘তার কাছে যে থাকবে সে যেন বলে: ইয়ারহামুকাল্লাহ’। আরো রয়েছে: তিরমিযী কর্তৃক সংকলিত আলী (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় আছে: (১) তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করবে, (২) নিমন্ত্রণ করলে তাতে সাড়া দিবে, (৩) সে হাঁচি দিলে উত্তর দিবে (তার আলহামদুলিল্লাহর উত্তরে বলবে ইয়ারহামুকাল্লাহ), (৪) সে রোগাক্রান্ত হলে তাকে দেখতে যাবে, (৫) সে মারা গেলে তার লাশের অনুসরণ করবে এবং (৬) নিজের জন্য যা ভালোবাসে তার জন্যেও সেটাকে ভালোবাসবে।” তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান। একাধিক সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ এ হাদিসের এক বর্ণনাকারী আল-হারেস আল-আ’ওয়ার এর সমালোচনা করেছেন। এ বিষয়ে আবু হুরাইরা (রাঃ), আবু আইয়ুব (রাঃ), আল-বারা (রাঃ) এবং আবু মাসউদ (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।আরো রয়েছে: তিরমিযী কর্তৃক সংকলিত আবু আইয়ুব (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দিবে তখন সে যেন বলে: আলহামদুলিল্লাহ। এর সাথে যেন বলে: ‘আলা কুল্লি হাল’। যে ব্যক্তি তার জবাব দিবে সে যেন বলে: ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। আবার হাঁচিদাতা যেন বলে: ‘ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’।”
এ হাদিসগুলোর মধ্যে হাঁচির জবাব দেয়া ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে চার ধরনের প্রমাণ রয়েছে: এক: হাঁচির জবাব দেওয়ার আবশ্যকতা দ্ব্যর্থহীন সুস্পষ্ট শব্দে তথা ‘ওয়াজিব’ শব্দ ব্যবহার করে উল্লেখ করা; যা কোনো ধরনের ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। দুই: ‘হক’ শব্দ ব্যবহার করার মাধ্যমে আবশ্যক করা। তিন: على অব্যয়টির প্রত্যক্ষ অর্থ ‘ওয়াজিব’ আরোপ করা। চার: নির্দেশ প্রদান। এই ধরনগুলো ছাড়া অন্যভাবেও বহু ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।(হাশিয়াতু ইবনুল কাইয়্যিম ‘আলা সুনানি আবি দাউদ খণ্ড;১৩;পৃষ্ঠা;২৫৯) তিনি ইবনু কাইয়ুম আরো বলেন: فَظَاهِرُ الْحَدِيثِ الْمَبْدُوءِ بِهِ: أَنَّ التَّشْمِيتَ فَرْضُ عَيْنٍ عَلَى كُلِّ مَنْ سَمِعَ الْعَاطِسَ يَحْمَدُ اللَّهَ، وَلَا يُجْزِئُ تَشْمِيتُ الْوَاحِدِ عَنْهُمْ، وَهَذَا أَحَدُ قَوْلَيِ الْعُلَمَاءِ، وَاخْتَارَهُ ابن أبي زيد، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ الْعَرَبِيِّ الْمَالِكِيَّانِ، وَلَا دَافِعَ لَهُ.”প্রথম হাদীসটির প্রত্যক্ষ মর্ম: যে ব্যক্তিই হাঁচিদাতাকে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলতে শুনবে তার জন্য এর জবাব দেওয়া ফরযে-আইন (ব্যক্তিক ফরয)। তাই সবার পক্ষ থেকে একজনে হাঁচির জবাব দেওয়া যথেষ্ট হবে না। এটি আলেমদের দুটো অভিমতের একটি। মালেকী আলেম আবু যাইদ ও আবু বকর ইবনুল আরাবী এটি বাছাই করেছেন। এই মতকে প্রতিহতকারী কিছু নেই।”(যাদুল মা’আদ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৩৭)
.
❑ (৬).তার কাছে উপদেশ চাইলে সে উপদেশ দিবে:
.
উপদেশ দেয়ার হুকুমের ক্ষেত্রে মতভেদ থাকলেও শক্তিশালী মত হলো এটি ওয়াজিবে কিফায়াহ। ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:” وَظَاهِرُ كَلَامِ أَحْمَدَ وَالْأَصْحَابِ وُجُوبُ النُّصْحِ لِلْمُسْلِمِ، وَإِنْ لَمْ يَسْأَلْهُ ذَلِكَ، كَمَا هُوَ ظَاهِرُ الْإِخْبَارِ…”ইমাম আহমদ ও তাঁর সাথীদের কথার প্রত্যক্ষ মর্ম হলো: কোন মুসলিমকে সু-পরামর্শ দেওয়া আবশ্যক, যদিও সে নিজের থেকে পরামর্শ না চায়; যেমনটি হাদীসের প্রত্যক্ষ মর্ম থেকে বোধগম্য …(ইবনু মুফলিহ ‘আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩০৭)
.
মোল্লা আলী ক্বারী হানাফি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
(وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ)‘
অর্থাৎ সে যদি তোমার কাছে উপদেশ চায় তাহলে তুমি উপদেশ দিবে। তথা আবশ্যকীয় বিশ্বাস করে দিবে। অনুরূপভাবে সে উপদেশ না চাইলেও তাকে উপদেশ দেওয়া আবশ্যক।”(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২১৩)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আবুল ফাদল আহমাদ বিন আলি ইবনু হাজার আল-আসকালানি, (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম:৭৭৩ হি: মৃত:৮৫২ হি:] বলেন:” وَقَدْ تَبَيَّنَ أَنَّ مَعْنَى الْحَقِّ هُنَا الْوُجُوب، خلافًا لقَوْل بن بَطَّالٍ الْمُرَادُ حَقُّ الْحُرْمَةِ وَالصُّحْبَةِ وَالظَّاهِرُ أَنَّ الْمُرَادَ بِهِ هُنَا وُجُوبُ الْكِفَايَةِ‘এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে এখানে ‘হক’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ওয়াজিব হওয়া। এটি ইবনু বাত্তালের বক্তব্যের বিপরীত, যিনি বলেছেন সম্মান ও সাহচর্যের অধিকার। প্রত্যক্ষ অর্থ হলো এখানে ‘হক’ দ্বারা ওয়াজিবে-কিফায়াহ উদ্দেশ্য।”(ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১১৩) আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৭৮৬৩৯)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate