প্রশ্ন: কুরবানির গোশত তিনভাগে বণ্টন করা কি ওয়াজিব? যার পক্ষ থেকে কুরবানি দেওয়া হচ্ছে, তার জন্য কি সেখান থেকে মাংস খাওয়া ওয়াজিব?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। এর মাধ্যমে নবী ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত আদায়ের সাথে সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতও পালন করা হয়।কুরবানির মাংস বণ্টনের ক্ষেত্রে শরীয়তের পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। সাধারণত কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা হয় একটি অংশ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের মাঝে বিতরণ করা, একটি অংশ গরীব-দুঃস্থদের মাঝে দান করা এবং একটি অংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখা।এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মাসআলা রয়েছে, যেগুলো আমরা তিনটি পয়েন্টে সহজভাবে জানার চেষ্টা করব।
.
(১)-কুরবানির গোশত তিনভাগে বণ্টন করা কি ওয়াজিব?
.
বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী, কুরবানির গোশতকে তিনভাগে বিভক্ত করা উত্তম তবে তা ওয়াজিব নয়। যদিও গোশত তিনভাগ করা বাধ্যতামূলক নয়, তবুও কুরবানির গোশত থেকে গরিব ও অভাবগ্রস্তদের (ফকির-মিসকিন) মাঝে কিছু অংশ দান করা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। এমনকি শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবের শক্তিশালী অভিমতের ভিত্তিতে এটি ওয়াজিব হিসেবে গণ্য হয়। কুরবানিদাতার জন্য কুরবানির মাংস থেকে নিজে খাওয়া, অপরকে খাওয়ানো এবং পরে খাওয়ার জন্য জমা করে রাখা জায়েজ। ইসলামের প্রধান চার ফিক্বহী মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী এ বিষয়ে একমত যে, এই তিন কাজই শরীয়তসম্মত এবং সুন্নাতের আলোকে প্রমাণিত। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: (فَكُلُواْ مِنْهَا وَأَطْعِمُواْ الْبَآئِسَ الْفَقِيرَ )“অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ অভাবীকে আহার করাও”।[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ২৮] আল্লাহ্ আরও বলেন: (فَكُلُواْ مِنْهَا وَأَطْعِمُواْ الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ) “তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং আহার করাও এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে এবং এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে না। এভাবে আমরা সেগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”।[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৬) সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন:” كلوا وأطعموا وادخروا “তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করে রাখ”।(সহিহ বুখারী হা/৫৫৬৯) হাদিসে ‘খাওয়াও’ কথাটি ধনীদেরকে হাদিয়া দেয়া এবং দরিদ্রদেরকে দান করাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: فَكُلُوا، وَادَّخِرُوا، وَتَصَدَّقُو“তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান কর”।(সহিহ মুসলিম হা/১৯৭১; ৪৯৯৭) অনুরূপভাবে কুরবানীর পশুর গোশত সংরক্ষণ করারও অনুমতি এসেছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় ঈদুল আযহার সময় বেদুঈনদের কিছু পরিবার দুর্বল হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা তিনদিনের পরিমাণ জমা রেখে অবশিষ্ট গোশত সদকা করে দাও। পরবর্তী সময়ে লোকেরা বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! লোকেরা তো কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে পানপাত্র তৈরী করছে এবং এর চর্বি গলাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাতে কী হয়েছে? তারা বলল: আপনি তো তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেন: আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্থা দেখে একথা বলেছিলাম। সুতরাং এখন তোমরা খাও ও সংরক্ষণ কর।”(সহিহ মুসলিম হা/১৯৭১; ৪৯৯৭)
.
হাদিসটির ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:قوله صلى الله عليه وسلم:إنما نهيتكم من أجل الدافة التي دفت والمراد هنا من ورد من ضعفاء الأعراب للمواساة. قوله: (يجملون) بفتح الياء مع كسر الميم وضمها.. يقال: جملت الدهن.. وأجملته إجمالا أي أذبته..قوله صلى الله عليه وسلم: إنما نهيتكم من أجل الدافة التي دفت فكلوا وادخروا وتصدقوا هذا تصريح بزوال النهي عن ادخارها فوق ثلاث، وفيه الأمر بالصدقة منها، والأمر بالأكل، فأما الصدقة منها إذا كانت أضحية تطوع فواجبة على الصحيح عند أصحابنا بما يقع عليه الاسم منها، ويستحب أن يكون بمعظمها. قالوا: وأدنى الكمال أن يأكل الثلث ويتصدق بالثلث ويهدي الثلث، وفيه قول أنه يأكل النصف، ويتصدق بالنصف، وهذا الخلاف في قدر أدنى الكمال في الاستحباب، فأما الإجزاء فيجزيه الصدقة بما يقع عليه الاسم كما ذكرنا.. وأما الأكل منها فيستحب ولا يجب.. وحمل الجمهور هذا الأمر وهو قوله تعالى: فكلوا منها على الندب أو الإباحة لا سيما وقد ورد بعد الحظر.”হাদিসের বাণী: “আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্থা দেখে একথা বলেছিলাম” এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে যে বেদুঈন দল এসেছিল তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ। হাদিসের বাণী: আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্থা দেখে একথা বলেছিলাম। এখন তোমরা খাও ও সংরক্ষণ কর” তিনদিনের অধিক সময় গোশ্ত সংরক্ষণ করার নিষেধাজ্ঞা বাতিল হওয়ার পক্ষে সরাসরি দলিল। এ হাদিসে কুরবানীর পশুর গোশ্ত সদকা করা ও খাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। যদি কুরবানীটা নফল কুরবানী হয় তাহলে আমাদের মাযহাবের আলেমদের নিকট সঠিক হল: ন্যূনতম যতটুকু দিলে সদকা করেছে বলা সঠিক হবে ততটুকু সদকা করতে হবে; আর বেশির ভাগ অংশ দিয়ে সদকা করা মুস্তাহাব। তারা বলেন: পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ হল: এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ সদকা করা এবং এক তৃতীয়াংশ হাদিয়া দেওয়া। এ মাসয়ালায় অন্য একটি অভিমত হল: অর্ধেক খাওয়া ও অর্ধেক দান করে দেওয়া। এই মতভেদ হল: মুস্তাহাবের উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করার ন্যূনতম পদ্ধতি। যদিও ন্যূনতম যতটুকু সদকা করলে সেটাকে সদকা করেছে বলা সঠিক হবে ততটুকু সদকা করাই যথেষ্ট; যেমনটি আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। আর কুরবানীর পশুর গোশ্ত খাওয়া মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। জমহুর আলেম হাদিসের নির্দেশ তোমরা খাও কে ব্যাখ্যা করেছেন মুস্তাহাব অর্থে কিংবা বৈধতার অর্থে; বিশেষতঃ যেহেতু নির্দেশটি নিষেধাজ্ঞার পরে উদ্ধৃত হয়েছে।”(নববী শারহে সহীহ মুসলিম খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ১২৯; হা/১৯৭১)।
.
শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমামু দারিল হিজরাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ন: ৯৩ হি: মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন: لا حد فيما يأكل ويتصدق ويطعم الفقراء والأغنياء، إن شاء نيئاً وإن شاء مطبوخاً “খাওয়া, সদকা করা ও গরীবদেরকে কিংবা ধনীদেরকে গোশত দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নাই; কেউ চাইলে কাঁচা গোশত দিতে পারেন কিংবা রান্নাকৃত গোশত দিতে পারেন।”(আল কাফি; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪২৪) শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ বলেন:يستحب التصدق بأكثرها وقالوا: أدنى الكمال أن يأكل الثلث ويتصدق بالثلث، ويهدي الثلث، وقالوا يجوز أكل النصف، والأصح التصوالأغنياء”অধিকাংশ সদকা করে দেওয়া মুস্তাহাব। তারা বলেন: পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ হল এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ দান করা ও এক তৃতীয়াংশ সদকা করে দেওয়া। তারা বলেন: অর্ধেক খাওয়াও জায়েয। সর্বাধিক শুদ্ধ অভিমত হল কিছু পরিমাণ দান করা।”(নাইলুল আওতার; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৪৫; আস-সিরাজুল ওয়াহ্হাজ: ৫৬৩)।
.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম, শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) জন্ম ১৬৪ হি./৭৮০ খ্রি. এবং মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.। বলেছেন: نحن نذهب إلى حديث عبد الله (ابن عباس) رضي الله عنهما يأكل هو الثلث ويطعم من أراد الثلث ويتصدق على المساكين بالثلث رواه أبو موسى الأصفهاني في الوظائف وقال حديث حسن وهو قول ابن مسعود وابن عمر ولم يعرف لهما مخالف من الصحابة “আমাদের অভিমত হল আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস: “সে নিজে এক তৃতীয়াংশ খাবে, এক তৃতীয়াংশ খাওয়াবে (যে চায়); আর এক তৃতীয়াংশ মিসকীনদেরকে দান করবে।” হাদিসটি আবু মুসা আল-ইসফাহানি “আল-ওয়াযায়িফ” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করার পর বলেন: এটি হাসান হাদিস এবং ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) এর অভিমত। সাহাবীদের মধ্যে অন্য কেউ এ দুইজনের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন মর্মে জানা যায় না।”(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৬৩২)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন: الاستحباب أن يأكل ثلث أضحيته، ويهدي ثلثها، ويتصدق بثلثها، ولو أكل أكثر جاز “কুরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ হাদিয়া (উপহার) দেওয়া এক তৃতীয়াংশ সদকা (দান) করা মুস্তাহাব। যদি বেশির ভাগ খায় তাহলেও জায়েজ আছে।”(ইবনু কুদামাহ আল মুগনি; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪৮৮)।
.
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “যে ব্যক্তি কুরবানির গোশত তিনভাগে বণ্টন করতে বলে, তার দলিল কী? আর এটি কি ওয়াজিব?” জবাবে শাইখ বলেন: لا، ليس بواجب. والذي ينبغي أن الإنسان يأكل ويتصدق ويهدي لمن ليسوا من أهل الصدقة؛ كالأغنياء.“না, এটি ওয়াজিব নয়। তবে কুরবানিদাতার উচিত কুরবানির গোশত নিজে খাওয়া, দান করা এবং যারা দানগ্রহণের হকদার নয় তাদেরকে হাদিয়া দেওয়া; যেমন: ধনী ব্যক্তিবর্গ।”(ইমাম ‘আব্বাদের “দারসে তিরমিযী”, ১৭২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: ফাতাওয়া আহকামিল উদ্বহিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৫০; দারুল ইখলাসি ওয়াস সাওয়াব, আলজিয়ার্স কর্তৃক প্রকাশিত)।
.
কোনও কোনও আলেম তা দুভাগ করা উত্তম বলেছেন। একভাগ নিজের জন্য আরেক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য। এটি ইমাম শাফেয়ীর পরবর্তী অভিমত। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন: فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ “অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।”(সূরা হজ: ২৮) বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, الأضحية شرعها الله لعباده ، وجعلها قربةً يتقرب بها إليه في عيد النَّحر، في الحاضرة والبادية، ولم يُحدد سبحانه ما يأخذه منها صاحبها، وما يُعطيه الفقراء، فقال : فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ [الحج:28]، والآية الأخرى: فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ [الحج:36].فالمشروع للمؤمن في ضحيَّته أن يأكل ويُطعم، فإذا أخرج الثلث ووزعه للفقراء وأكل الثلثين مع أهل بيته؛ فلا بأس ولا حرج في ذلك، ولو أخرج أقلَّ من الثلث؛ كفى ذلك، وإن أعطى الفقراء أيضًا من جيرانه وأقاربه؛ فلا بأس، فالأمر في هذا واسعٌ، والحمد لله “আল্লাহ তাআলা কুরবানিকে বান্দাদের জন্য শরিয়ত সম্মত করেছেন এবং কুরবানির ঈদের দিন তা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যমে হিসেব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কুরবানি দাতা সেখান থেকে কতটুকু গ্রহণ করবেন তা নির্ধারণ করে দেননি। বরং তিনি বলেছেন, “অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।” [সূরা হজ: ২৮] অন্য আয়াতে তিনি বলেন,“তা থেকে তোমরা নিজেরা খাও এবং খাওয়াও এমন দরিদ্র ব্যক্তিকে যে আত্মমর্যাদার কারণে কারও কাছে কিছু চায় না এবং এমন ব্যক্তিকে যে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে।”(সূরা হজ: ৩৬) সুতরাং শরিয়তের নিয়ম হল,একজন মুমিন ব্যক্তি কুরবানির গোশত নিজে খাবে এবং অন্যকে খাওয়াবে। তবে যদি তিনভাগের একভাগ বের করে দেয় এবং তা গরিব-অসহায় মানুষের মধ্যে বণ্টন করে এবং বাকি দু ভাগ তার পরিবার সহকারে খায় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা বা সংকোচ নেই। আর যদি এক তৃতীয়াংশের কম বের করে তাও যথেষ্ট হবে। যদি তার গরিব নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশীদেরকে দেয় তাতেও কোনও সমস্যা নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-৪৪৩৯) সুতরাং কারো পরিবারে যদি সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তাদের জন্য গোশতের বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে বেশিরভাগ রেখে দিতে পারে। উল্লেখ্য যে নিজের স্ত্রী সন্তান ও পরিবারবর্গকে গোশত খাওয়ানোও সদকার অন্তর্ভুক্ত।
.

.
কুরআন সুন্নাহ তথা শারঈ (নস) দলিল প্রমাণ করে যে, হাদি (হজে কুরবানিকৃত পশু) ও উযহিয়াহ (ঈদের কুরবানি) থেকে অন্তত কিছু অংশ সাদকা হিসেবে সাদাকা করা আবশ্যক (ওয়াজিব), যদিও তা সামান্য পরিমাণে হয়; এটাই শাফেয়ী ও হাম্বলি মাযহাবের মত; আর কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক নসের আলোকে এটিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ অভিমত। তবে কতটুকু পরিমাণ সাদকা করা হবে তা নির্দিষ্ট করে কোনো কুরআন সুন্নাহ’য় বর্ণিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে প্রমাণস্বরূপ মহান আল্লাহর এই বাণী পেশ করা যেতে পারে: মহান আল্লাহ বলেন: فَكُلُواْ مِنْهَا وَأَطْعِمُواْ الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ) “তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং আহার করাও এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে এবং এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে না। এভাবে আমরা সেগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”।(সূরা হজ্জ: ৩৬) আয়াতে (القانع) হলো সেই ব্যক্তি, যে অভাব থাকলেও আত্মমর্যাদাবোধের কারণে কারো কাছে চায় না। আর (المعتر) হলো সে, যে চায়। অতএব এই দরিদ্রদের হাদি তথা কুরবানি থেকে প্রাপ্য হক রয়েছে।
.
আল মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ তে বলা হয়েছে: وَهَذَا وَإِنْ كَانَ وَارِدًا فِي الْهَدْيِ، إِلاَّ أَنَّ الْهَدْيَ وَالأُضْحِيَّةَ مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ “যদিও এই আয়াতটি হাদিকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে, তবুও হাদি ও উযহিয়াহ একই শ্রেণিভুক্ত।” (আল মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১১৫) হাদিসে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) বলেছেন: فَكُلُوا، وَادَّخِرُوا، وَتَصَدَّقُو“তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান করো”।(সহিহ মুসলিম হা/১৯৭১; ৪৯৯৭)।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন: يجب التصدق بقدرٍ ينطلق عليه الاسم؛ لأن المقصود إرفاق المساكين، فعلى هذا: إن أكل الجميع، لزمه ضمان ما ينطلق عليه الاسم”একটি ‘অংশ’ সাদকা দেওয়া ওয়াজিব। কারণ মূল উদ্দেশ্য হলো মিসকিনদের (দরিদ্রদের) সহানুভূতির সঙ্গে সহায়তা করা। অতএব যদি কেউ পুরোটা খেয়ে ফেলে তাহলে তাকে সাদকার পরিমাণ একটি অংশ দিয়ে ক্ষতিপূরণ করতে হবে।”(রাওযাতুত ত্বালিবীন ও উমদাতুল মুফতিন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২২৩)।
.
আল-মুরদাউয়ি (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল-ইনসাফ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন: وَإِنْ أَكَلَهَا كُلَّهَا، ضَمِنَ أَقَلَّ مَا يُجْزِئُ فِي الصَّدَقَةِ مِنْهَا “যদি সে সবটুকু খেয়ে ফেলে, তাহলে সদকার জন্য ক্ষতিপূরণস্বরূপ সর্বনিম্ন একটি অংশ দিতে হবে। (আল ইনসাফ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪৯১)।
.
হাম্বলি মাযহাবের আলেম ‘বুহুতি’ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: فَإِنْ لَمْ يَتَصَدَّقْ بِشَيْءٍ نِيءٍ مِنْهَا، ضَمِنَ أَقَلَّ مَا يَقَعُ عَلَيْهِ الِاسْمُ، كَالْأُوقِيَّةِ “যদি কাঁচা মাংস সাদকা না দেয়, তাহলে তাকে অন্তত এক ‘আউন্স’ সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”(বুহুতি; কাশশাফুল ক্বিনাআ খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪৪৪)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল এমন একজন সম্পর্কে,যে পুরো কুরবানির মাংস রান্না করে আত্মীয়দের সঙ্গে খায়, কিন্তু কিছুই সদকা দেয় না। তিনি জবাবে বলেন: هذا خطأ؛ لأن الله تعالى قال:لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ الله فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ.وعلى هذا: يلزمهم الآن أن يضمنوا ما أكلوه، عن كل شاة شيئًا من اللحم، يشترونه ويتصدقون به “এটা ভুল। কারণ আল্লাহ বলেন: “যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা হতে আহার করো এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও”।(সূরা হজ্জ: ২৮)-এই ভিত্তিতে বলা যায়: যারা খেয়ে ফেলেছে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রতিটি ছাগলের জন্য এক অংশ মাংস কিনে সাদকা দিতে হবে।”(ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ১৩২)।
.
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.]-জিজ্ঞেস করা হয়েছিল “কুরবানির সকল গোশত খেয়ে ফেলার বিধান কী?” জবাবে শাইখ বলেন: يأكل ويتصدق ويهدي، لا ينبغي أن يأكلها كلها، يعطى للفقراء منها، إما أن يوزع عليهم وإما أن يدعو جماعة منهم يأكلون ويشاركون في الأكل، أما من أكلها كلها لا يعيد.”কুরবানির গোশত খাবে, দান করবে এবং হাদিয়া দিবে। সকল গোশত খেয়ে ফেলা সমীচীন নয়। কুরবানির গোশত থেকে অভাবী লোকদের দান করবে। তাদের মধ্যে গোশত বণ্টন করবে, অথবা তাদের একদল লোককে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবে। আর যে ব্যক্তি সকল গোশত খেয়ে ফেলেছে, সে পুনরায় এই কাজ করবে না।”(ইমাম ‘আব্বাদের “দারসে তিরমিযী”, ১৭২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: ফাতাওয়া আহকামিল উদ্বহিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৪৯; দারুল ইখলাসি ওয়াস সাওয়াব, আলজিয়ার্স কর্তৃক প্রকাশিত)।
.

.
যার পক্ষ থেকে কুরবানি দেওয়া হয়, তার জন্য কুরবানির গোশত থেকে খাওয়া ওয়াজিব কি না এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে, কুরবানির গোশত ভক্ষণ করা মুস্তাহাব (সুন্নত), এটি ওয়াজিব (আবশ্যক) নয়। চার মাজহাবের ইমামগণও এই মতকেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন। যদিও কিছু সংখ্যক আলেমের অভিমত হলো কুরবানির গোশত থেকে অন্তত কিছু অংশ খাওয়া ওয়াজিব; কারণ কুরআন ও হাদীসে কুরবানির গোশত ভোগ করার যে নির্দেশ এসেছে, তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। (বিস্তারিত দেখুন: ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪৯৪১৫)।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:وَأَمَّا الْأَكْل مِنْهَا فَيُسْتَحَبّ وَلَا يَجِب , هَذَا مَذْهَبنَا وَمَذْهَب الْعُلَمَاء كَافَّة , إِلَّا مَا حُكِيَ عَنْ بَعْض السَّلَف أَنَّهُ أَوْجَبَ الْأَكْل مِنْهَا… لِظَاهِرِ هَذَا الْحَدِيث فِي الْأَمْر بِالْأَكْلِ، مَعَ قَوْله تَعَالَى: فَكُلُوا مِنْهَا، وَحَمَلَ الْجُمْهُور هَذَا الْأَمْر عَلَى النَّدْب أَوْ الْإِبَاحَة، لَا سِيَّمَا وَقَدْ وَرَدَ بَعْد الْحَظْر “কুরবানীর গোশত খাওয়াটা মুস্তাহাব (সুপারিশকৃত), ওয়াজিব নয়। এটি আমাদের মাজহাব (শাফি) এবং অধিকাংশ আলিমদের ঐক্যমত। যদিও কিছু সালাফের মতে, এটি খাওয়া ওয়াজিব। কারণ হাদীসের প্রকাশ্য অর্থে খাওয়ার নির্দেশ রয়েছে, এবং আল্লাহ বলেন: “সুতরাং তা থেকে খাও…”তবে অধিকাংশ আলিমদের মতে, এই নির্দেশ মুস্তাহাব বা অনুমতির জন্য, বিশেষ করে যখন এটা পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞার পরে এসেছে।”(ইমাম নববী, শারহু সহীহ মুসলিম, ১৩তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৩১)। ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:فَلَوْ تَصَدَّقَ بِهَا كُلِّهَا، أَوْ بِأَكْثَرِهَا، جَازَ”কেউ যদি কুরবানীর সমস্ত বা অধিকাংশ অংশ দান করে, তাহলে তা জায়েয”।(ইবনু কুদামাহ আল মুগনি; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩৮০)।
.
হাম্বলি মাযহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ যাদুল-মুসতাকনি গ্রন্থে বলা হয়েছে:ويسن أن يأكل ويهدي ويتصدق أثلاثا “গোশত তিন ভাগে ভাগ করা সুপারিশকৃত: এক তৃতীয়াংশ খাওয়ার জন্য, এক তৃতীয়াংশ উপহার দেওয়ার জন্য, এবং এক তৃতীয়াংশ দান করার জন্য। এর ব্যাখায়
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-বলেন:
قوله: ويسن أن يأكل ويهدي ويتصدق أثلاثا ، أي: يشرع ، لا على وجه الوجوب ، بل على وجه الاستحباب أن يقسمها أثلاثا ، فيأكل الثلث، ويهدي بالثلث ، ويتصدق بالثلث .والفرق بين الهدية والصدقة : أن ما قصد به التودد والألفة فهو هدية ؛ لما جاء في الحديث: (تهادوا تحابوا) ، وما قصد به التقرب إلى الله فهو صدقة ، وعلى هذا فتكون الصدقة للمحتاج ، والهدية للغني .وقوله : أثلاثا أي : ثلثا للأكل ، وثلثا للهدية ، وثلثا للصدقة ؛ لأجل أن يكون انتفاع الناس على اختلاف طبقاتهم في هذه الأضحية، وقدم الأكل؛ لأن الله قدمه فقال : ( فكلوا منها وأطعموا البائس الفقير ) الحج/28.وقوله: ويسن أن يأكل ,ظاهره : أنه لو تصدق بها كلها فلا شيء عليه ولا إثم عليه ، وهذا بناء على أن الأكل من الأضحية سنة كما هو قول جمهور العلماء .وقال بعض أهل العلم : بل الأكل منها واجب يأثم بتركه ؛ لأن الله أمر به ، وقدمه على الصدقة ؛ ولأن النبي صلى الله عليه وسلم في حجة الوداع (أمر أن يؤخذ من كل بدنة قطعة فجعلت في قدر فطبخت فأكل من لحمها وشرب من مرقها) ، قالوا : وتكلف هذا الأمر أن يأخذ من مائة بعير مائة قطعة تطبخ في قدر ، ويأكل منها يدل على أن الأمر في الآية الكريمة للوجوب ؛ ولأن هذا من باب التمتع بنعم الله عز وجل فيدخل في قوله صلى الله عليه وسلم : (أيام التشريق أيام أكل وشرب وذكر لله عز وجل) .وعلى كل حال لا ينبغي للإنسان أن يدع الأكل من أضحيته “
“তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নাহ” মানে হলো এটি নির্ধারিত নয়, বরং (মুস্তাহাব) সুপারিশকৃত। এক তৃতীয়াংশ খাবে, এক তৃতীয়াংশ উপহার দিবে, আর এক তৃতীয়াংশ দান করবে। উপহার (হাদিয়াহ) আর দান (সাদকা)-এর মধ্যে পার্থক্য হলো: উপহার দেওয়া হয় ভালোবাসা ও সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে: তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, তাতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। আর সাদকা দেওয়া হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, গরীব-দুস্থদের জন্য। তিন ভাগ করার মাধ্যমে সবাই কুরবানীর বরকত পায়। খাওয়ার বিষয়টি আগে এসেছে, কারণ আল্লাহ বলেন: [সূরা হজ্ব ২২: ২৮] কুরবানীর গোশত খাওয়া সম্পর্কে সুপারিশ: যদি কেউ পুরো কুরবানী দান করে দেয়, তাহলে তাতে কোনো গুনাহ নেই কারণ অধিকাংশ আলিমের মতে, কুরবানী থেকে খাওয়াটা সুন্নাহ। তবে কিছু আলিম মনে করেন, এটি খাওয়া ওয়াজিব এবং না খেলে গুনাহ হবে কারণ আল্লাহ এর নির্দেশ দিয়েছেন এবং হজ্ব বিদায়ের সময় রাসূল (ﷺ) একেক পশু থেকে একটি করে অংশ নিয়ে রান্না করে খেয়েছেন এবং তার ঝোল পান করেছেন। একশত উটের জন্য এটি করা নির্দেশের বাধ্যতামূলকতা প্রমাণ করে। তারা আরও বলেন, এটি আল্লাহর নিয়ামতের ভোগের অংশ এবং রাসূল (ﷺ) বলেন: তাশরীক এর দিনগুলো হলো খাওয়া, পান করা, এবং আল্লাহকে স্মরণ করার দিন। সুতরাং পুরো কুরবানী থেকে খাওয়া বাদ দেওয়া অনুচিত।”(ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪৮১)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment