পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:-সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]বলেন,যে যুবক (ইনশআল্লাহ্) সঠিক গন্তব্যের দিকে আগাচ্ছে এমন যুবকের প্রতি আমাদের উপদেশ হচ্ছে:
(১): সঠিক পথে অটল ও অবিচল থাকার জন্য সার্বক্ষণিক আল্লাহর কাছে দু’আ/প্রার্থনা করা।
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে বলেন, তুমি বল,اللَّهُمَّ اهْدِنِىْ وَسَدِّدْنِىْ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুপথ প্রদর্শন কর এবং আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর। আর তুমি সুপথের সংকল্প কর এবং সঠিক পথে স্থির থাক, যেভাবে তীর তার লক্ষ্যে স্থির থাকে।(সহীহ মুসলিম হা/২৭২৫; মিশকাত হা/২৪৮৫)
.
(২): কুরআনের মর্ম বুঝে বুঝে বেশি পরিমাণে কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা।কারন বুঝে বুঝে অনুধাবন করে কুরআন পড়লে এ কুরআন মানুষের অন্তরের উপর ব্যাপক প্রভাব তৈরী করে।মহান আল্লাহ বলেন,كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ- অর্থ: এটি এক কল্যাণময় কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে তারা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে।(সূরা সোয়াদ ৩৮/২৯)। এই আয়াতে আল্লাহ মানুষকে কুরআন গবেষণা ও তার তাৎপর্য অনুধাবনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
.
(৩): আল্লাহ্র আনুগত্যের পথকে আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। বিরক্তি ও অলসতা যেন তাকে স্পর্শ না করে। কেননা রাসূল (ﷺ) অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। রাসূল ﷺ দু’আয় বলতেন,اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجْزِ، وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ، وَالهَرَمِ وَالبُخْلِ অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, স্থবিরতা ও কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।(সহীহুল বুখারী হা/২৮২৩, ৪৭০৭, ৬৩৬৭, ৬৩৬৯, মুসলিম হা/২৭০৬, তিরমিযী হা/ ৩৪৮৪)
.
(৪): সৎসঙ্গ গ্রহণে সচেষ্ট থাকা এবং অসৎসঙ্গ থেকে দূরে থাকা। রাসূল (ﷺ) বলেন,الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে যে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে’।(আবূদাঊদ হা/৪৮৩৩; তিরমিযী হা/২৩৭৮, সনদ হাসান) রাসূল (ﷺ) আরো বলেছেন,لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ ‘তুমি মুমিন ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন কেবল পরহেযগার লোকে খায়।(সহীহ বুখারী হা/৬০১১; সহীহ মুসলিম হা/২৫৮৬; মিশকাত হা/৪৯৫৩)
.
(৫): যখন নফস তার উপর কুপ্রভাব ফেলতে চাইবে তখনি নফসকে (কুপ্রবৃত্তিকে) নসীহত করা। নফস বলতে পারে: দূরত্বও তো অনেক, রাস্তা অনেক দীর্ঘ। তখন সে নফসকে নসীহত করবে এবং অবিচল থাকবে। কারণ জান্নাত দুঃখ, কষ্ট, ক্লেশ দিয়ে পরিবেষ্টিত। আর জাহান্নাম ভোগ বিলাস দিয়ে পরিবেষ্টিত। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত!(সুনানে তিরমিযী ২৪০২, সহীহ আল জামি‘ আস সগীর ৮১৭৭ মিশকাত হা/১৫৭০)
.
(৬): খারাপ সঙ্গি থেকে দূরে থাকা। যদিও তারা ইতিপূর্বে তার বন্ধু ছিল। কেননা খারাপ সঙ্গিরা তাকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “খারাপ সঙ্গির উদাহরণ হচ্ছে কামারের হাপরের ন্যায়; হয়তো তোমার কাপড় পুড়ে দিবে, নয়তো তুমি এর থেকে দুর্গন্ধ পাবে।(কিছুটা পরিমার্জিত দেখুন ইমাম উসাইমিন লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ, ১/১৫৩ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১২৭০৬৭)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
No comments:
Post a Comment