Friday, June 20, 2025

ফরজ সিয়ামের কাযা এবং জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনের নফল সিয়াম একই নিয়তে একত্রে রাখা কি শরিয়ত সম্মত

 প্রশ্ন: ফরজ সিয়ামের কাযা এবং জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনের নফল সিয়াম এই দুই সিয়াম একই নিয়তে একত্রে রাখা কি শরিয়ত সম্মত?

▬▬▬▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: যিলহজ্জ হল হিজরি চন্দ্রবছরের দ্বাদশ ও সর্বশেষ মাস, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। এই মাসের প্রথম দশ দিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ,কারণ এই সময়েই ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের মূল কার্যাবলি সম্পন্ন হয়। আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির জন্য কিছু নির্দিষ্ট দিন, মাস ও সময় নির্ধারণ করেছেন, যেগুলোতে ইবাদত-বন্দেগি করার ফযীলত অনেক বেশি। তেমনই একটি মহান মাস হলো যিলহজ্জ। এটি কুরবানির স্মৃতি বিজড়িত মাস, যা আমাদের নবী ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর ত্যাগ ও আনুগত্যের অনন্য দৃষ্টান্তকে স্মরণ করিয়ে দেয়।এই মাসের সবচেয়ে গুরুত্ববহ দিকগুলো হল—হজ, কুরবানী, এবং আরাফার দিনের মর্যাদা। বিশেষ করে প্রথম দশ দিনকে ইসলামের ইতিহাসে অতুলনীয় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:”أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ”দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ হলো যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন।” (সহীহুল জামে হা/১১৩৩) এই দশ দিন ইবাদতের বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো—প্রথম দিন থেকে নবম দিন পর্যন্ত সিয়াম রাখা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে এই দিনগুলোতে সিয়াম রাখতেন এবং তাঁর উম্মাহকেও তা পালনের প্রতি উৎসাহ দিতেন।সুতরাং,যিলহজ্জ মাসের এই মূল্যবান দিনগুলোকে হেলায় হারানো উচিত নয়। বরং ইবাদত, তওবা, দান-সদকা, যিকির, তিলাওয়াত এবং সিয়ামের মাধ্যমে আমরা যেন এই দিনগুলোকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি—এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।জিলহজ মাসের প্রথম দশকের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের তাৎপর্য হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা: সলাত, সিয়াম, সাদাকাহ (কুরবানি), হজ ইত্যাদি। অন্যান্য সময়ে একসাথে এতগুলো ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে না।(ইমাম ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি:খণ্ড;২;পৃষ্ঠা;৪৬০) বিখ্যাত তাবিয়ি সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহ.)-এর অভ্যাস ছিলো, তিনি জিলহজ মাসের প্রথম দশকে ইবাদতের জন্য কঠোরভাবে সাধনা করতেন।(সুনান দারিমি; হাসান সনদ)
.
▪️এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফরজ সিয়ামের কাযা এবং জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনের নফল সিয়াম এই দুই সিয়াম একই নিয়তে একত্রে রাখা কি শরিয়ত সম্মত?
.
এ বিষয়ে আহালুল আলেমদের গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো যদি ইবাদতের প্রকার ভিন্ন হয়, (ফরজ এবং নফল) তাহলে তা আলাদা নিয়ত ও পৃথকভাবে পালন করা আবশ্যক। অর্থাৎ, ফরজ ও নফল ইবাদত একত্রে এক নিয়তে আদায় করা শরিয়তসম্মত নয়। তাই একাধিক সিয়াম যদি ভিন্ন শ্রেণির হয় যেমন ফরজ ও নফল একই নিয়তে একত্রে পালন করা যাবে না। সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,لا يجوز صيام التطوع بنيتين ، نية القضاء ونية السنة “দুটি নিয়তে নফল সিয়াম রাখা জায়েয নেই, একটি কাযা সিয়ামের নিয়ত এবং একটি সুন্নত সিয়ামের রাখার নিয়ত।”…! (ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১০তম খণ্ড: ৩৮৩)
.
যাদের ওপর এক বা একাধিক দিনের রমযানের ফরজ সিয়াম কিংবা অন্য কোন ফরজ সিয়ামের কাযা রয়েছে, তাঁদের জন্য সর্বোত্তম হলো প্রথমেই সেই কাযা সিয়ামগুলো আদায় করে ফেলা। ইসলামি শরীআতে ফরজ ইবাদত সবসময় নফল ইবাদতের ওপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত; কারণ রমযানের রোযা ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি পঞ্চ স্তম্ভের একটি। আর ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।সুতরাং ফরজ সিয়াম আদায় না করে নফল সিয়াম রাখা উচিত নয়।তবে এর অর্থ এই নয় যে, রমযানের কাযা সিয়াম কিংবা অন্য কোন ফরজ সিয়ামের কাযা থাকলে নফল সিয়াম রাখা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।বরং অধিকাংশ আলেমের অভিমত অনুযায়ী, যদি কারো সামনে কাযা সিয়াম আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে এবং পরবর্তী রমযানের আগে তা আদায় করা সম্ভব হয়—তাহলে সে গুরুত্বপূর্ণ নফল সিয়ামও রাখতে পারে। এ অবস্থায় নফল সিয়াম পালন বৈধ ও সহিহ হবে। তবে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: রমযানের কাযা আদায় না করে শাওয়ালের ছয় সিয়াম পালন করা সম্পর্কে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। অনেক ফকীহের মতে, শাওয়ালের ছয় সিয়ামের রাখার পূর্বে রমযানের কাযা সিয়াম আদায় করাই উত্তম ও সুন্নাতের আদর্শের সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।(বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯২৪২৩)
.
▪️এখন যাঁদের ওপর একাধিক ফরজ সিয়াম আদায় করা বাকি আছে, তাঁদের জন্য জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিনের নফল সিয়াম রাখার সঠিক পদ্ধতি কী?
.
এই বিষয়ে সবচেয়ে নিরাপদ মতামত হচ্ছে, যাদের ওপর ফরজ সিয়াম অনেকগুলো কাযা রয়েছে, তারা জিলহজ্জের প্রথম ৯ দিনে ওই কাযা সিয়ামের নিয়তেই সিয়ামগুলো রাখবেন। এতে করে আশা করা যায় জিলহজ্জর সিয়াম রাখার আকাঙ্ক্ষা থাকার কারণে আপনি একদিকে কাজা আদায় করবেন, অন্যদিকে জিলহজ্জের এই মহান দিনের সিয়ামের ফজিলতও অর্জন করবেন ইন শা আল্লাহ। বান্দা যেসব আমল করে সেগুলোর সওয়াবের পরিমাণ নির্ধারণ করার দায়িত্ব আল্লাহ্‌র উপরে। বান্দা যদি আল্লাহ্‌র কাছে প্রতিদান প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ্‌র আনুগত্যের পথে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তার প্রতিদান নষ্ট করবেন না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:اِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ“নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সৎ কর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।”(সূরা তওবাহ; আয়াত: ১২০)
.
“আবূ উবাইদ (ইবন কুতাইবা) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: আমাকে বর্ণনা করেছেন ‘আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী; তিনি বর্ণনা করেছেন সুফইয়ান আস-সাওরী থেকে; তিনি বর্ণনা করেছেন আসওয়াদ ইবনু কায়েস থেকে; আর তিনি বর্ণনা করেছেন তাঁর পিতা কায়েস আল-আব্দী থেকে তিনি বলেন: প্রখ্যাত সাহাবী ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ২৩ হি.] সম্পর্কে এসেছে যে,عنه أنه كان يستحب قضاء رمضان في عشر ذي الحجة، وقال: ” ما من أيامٍ أقضى فيهن رمضان أحب إلي منها”তিনি রমজানের কাজা সিয়াম জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে রাখা পছন্দ করতেন এবং বলতেন:এই দিনগুলোর চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই, যেগুলিতে আমি রমজানের সিয়াম কাযা করি, এ দিনগুলো আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।”(গারিবুল হাদীস; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৮৮-২৮৯; বাইহাক্বী সুনানুল কুবরা হা/৮৩৯৫; সনদ বিশুদ্ধ) একই বক্তব্য ভিন্ন বর্ণনায়ও এসেছে। ইবনু আবী শায়বা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল-মুসান্নাফ-এ এই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, যেখানে বর্ণিত হয়েছে: শারীক আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, তিনি আসওয়াদ ইবনু কাইস থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন—তিনি বলেছেন:لاَ بَأْسَ بِقَضَاءِ رَمَضَانَ فِي الْعَشْرِ “জিলহজের প্রথম দশ দিনে রমজানের কাযা সিয়াম রাখা দোষের কিছু নয়।”(মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ,খণ্ড;৬;পৃষ্ঠা; ৬০ হা/১০৭৬;আল-মুসান্নাফ-এর গবেষকগণ এই রেওয়ায়েতকে হাসান (ভালো মানের) হিসেবে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে ইমাম ইবনু হাজার আল-আসকালানি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৮৯-তে উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
.
বর্ণনাটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আবু উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:معناه: أنَّه لا يتحرَّى التأخير إلى العَشر، ولكنه كان يَستحب صيام العَشر، فإذا دخل على مَن عليه قضاء صام قضاء، لئلاَّ يكون قد تطوَّع وعليه قضاء فيجتمع له الأمران.”এর অর্থ হলো, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে সিয়াম রাখার জন্য দেরি করতেন না, বরং তিনি এই দশ দিনে সিয়াম রাখতে পছন্দ করতেন। অতএব, যদি কারো উপর কাযা সিয়াম থাকত, সে এই দিনে কাযা সিয়াম রাখত, যাতে এমন না হয় যে, নফল সিয়াম রাখছে অথচ ফরয (কাযা) বাকি আছে। এতে করে উভয়টিই (ফরয এবং নফল) একসাথে আদায় হয়ে যেত।”(ইবনু কাসীর; মুসনাদে আল ফারুক খণ্ড; ১; পৃষ্ঠা; ৪২৭)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আবুল ফাদল আহমাদ বিন আলি ইবনু হাজার আল-আসকালানি(রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৭৭৩ হি: মৃত: ৮৫২ হি:] বলেন:قيس العبدي، والد الأسود.عن: علي في الإمارة، وعنه: ابنه الأسود… وروى عن عمر بن الخطاب أيضا.قال النسائي: ثقة.قلت: وقال ابن سعد: قيس أبو الأسود العبدي شهد صلح الحيرة مع خالد بن الوليد، وروى عن عمر حديثا في الجمعة.وذكره ابن حبان في الثقات “কাইস আল-আব্দী, যিনি আসওয়াদের পিতা তিনি ‘ইমারাত’ (শাসনব্যবস্থা) সম্পর্কে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন তাঁর পুত্র আসওয়াদ। তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকেও হাদীস বর্ণনা করেছেন।ইমাম নাসাঈ বলেছেন: তিনি (ثقة) বিশ্বস্ত বর্ননাকারী। আমি (ইবনু হাজার) বলি: ইবনু সা‘দ বলেছেন: কাইস আবু আসওয়াদ আল-আব্দী যিনি খালিদ ইবনুল ওলিদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে হীরা যুদ্ধচুক্তিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন,এবং উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে জুমআ বিষয়ক হাদীস বর্ণনা করেছেন ইবনু হিব্বান তাঁকে বিশ্বস্ত রাবিদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”(হাফেজ ইবন হাজার “তাহযীবুত তাহযীব”;খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪৫৪-৪৫৫)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: যদি ফরয রোযা ও নফল সিয়াম একসাথে পড়ে, তাহলে কি কেউ নফল সিয়াম রাখতে পারবে এবং ফরয সিয়াম পরে কাজা করে নিতে পারবে? যেমন: আশুরা বা আরাফার সিয়াম এবং রমজানের কাযা।
উত্তরে শাইখ বলেন:
بالنسبة للصيام الفريضة والنافلة لا شك أنه من المشروع والمعقول أن يبدأ بالفريضة قبل النافلة ، لأن الفريضة دَيْنٌ واجب عليه ، والنافلة تطوع إن تيسرت وإلا فلا حرج ، وعلى هذا فنقول لمن عليه قضاء من رمضان : اقض ما عليك قبل أن تتطوع ، فإن تطوع قبل أن يقضي ما عليه فالصحيح أن صيامه التطوع صحيح مادام في الوقت سعة ، لأن قضاء رمضان يمتد إلى أن يكون بين الرجل وبين رمضان الثاني مقدار ما عليه ، فمادام الأمر موسعا فالنفل جائز ، كصلاة الفريضة مثلا إذا صلى الإنسان تطوعا قبل الفريضة مع سعة الوقت كان جائزا ، فمن صام يوم عرفة ، أو يوم عاشوراء وعليه قضاء من رمضان فصيامه صحيح ، لكن لو نوى أن يصوم هذا اليوم عن قضاء رمضان حصل له الأجران : أجر يوم عرفة ، وأجر يوم عاشوراء مع أجر القضاء ، هذا بالنسبة لصوم التطوع المطلق الذي لا يرتبط برمضان ، أما صيام ستة أيام من شوال فإنها مرتبطة برمضان ولا تكون إلا بعد قضائه ، فلو صامها قبل القضاء لم يحصل على أجرها ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم : من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر ومعلوم أن من عليه قضاء فإنه لا يعد صائما رمضان حتى يكمل القضاء ، وهذه مسألة يظن بعض الناس أنه إذا خاف خروج شوال قبل صوم الست فإنه يصومها ولو بقي عليه القضاء ، وهذا غلط فإن هذه الستة لا تصام إلا إذا أكمل الإنسان ما عليه من رمضان “
“ফরয ও নফল সিয়ামের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই যে, শরীয়ত ও সাধারণ বোধদৃষ্টিতে ফরয সিয়াম আদায় করাই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ফরয সিয়াম হলো একটি ওয়াজিব দায় একটি ঋণ, যা আদায় করতেই হবে। অন্যদিকে, নফল সিয়াম ইচ্ছাকৃত; যা সম্ভব হলে রাখা উত্তম,না রাখলেও দোষ নেই। তাই আমরা বলি: যার ওপর রমজানের সিয়াম বাকি আছে, সে যেন তা আদায় করে নেয়, তারপর নফল সিয়াম পালন করে।তবে যদি কেউ আগে নফল সিয়াম রেখে পরে কাযা সিয়াম আদায় করে, তাহলে অধিকতর সঠিক মত হলো, তার সেই নফল সিয়ামও শুদ্ধ হবে, যতক্ষণ না রমজানের কাযা সিয়াম রাখার সময় ফুরিয়ে যায়। কারণ, রমজানের কাজা আদায়ের জন্য এক পূর্ণ বছর সময় থাকে পরবর্তী রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।সুতরাং এই সময়সীমা থাকাকালীন নফল সিয়াম রাখা জায়েয। এটি নামাযের বিধানের মতোই: যদি কেউ ওয়াক্ত থাকা অবস্থায় নফল নামায আগে পড়ে এবং পরে ফরয নামায পড়ে, তবে তা বৈধ হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে সিয়াম পালন করে এবং তার উপর রমজানের কাযা সিয়াম অনাদায় থাকে তবে তার সিয়াম রাখাটা সহিহ। তবে তিনি যদি এই সিয়ামের মাধ্যমে রমজানের কাযা সিয়াম পালনেরও নিয়্যত করেন তবে তার দুটি সওয়াব হবে। আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন সিয়াম পালনের সওয়াব ও কাযা সিয়াম আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রমজানের সিয়ামের সাথে যে নফল সিয়ামের কোন সম্পর্ক নেই। তবে শাওয়ালের ছয় সিয়াম রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। সে সিয়াম রমজানের কাযা সিয়াম আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন :من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر “যে ব্যক্তি রমজান মাসে সিয়াম পালন করল, সে সিয়ামের পর শাওয়াল মাসেও ছয়দিন সিয়াম পালন করল, সে যেন গোটা বছর সিয়াম রাখল।”আর এটি জানা বিষয় যে, যার উপর কাযা সিয়াম রয়ে গেছে সে রমজান মাসে সিয়াম পালন করেছে বলে ধরা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কাযা সিয়াম আদায় সম্পূর্ণ করে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৪৩৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate