প্রশ্ন: মহিলাদের মাথার উপরে উঁচু করে চুলের ঝুঁটি বাঁধা হারাম হওয়ার বিধান কি ঘরে-বাইরে সর্বত্র প্রযোজ্য নাকি কেবল বাইরে প্রযোজ্য?
উত্তর: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণভাবে উটের কুঁজের মত করে মাথার উপরে উঁচু করে চুলের ঝুঁটি বাঁধতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে সর্বত্র একই বিধান। অর্থাৎ বাড়ির বাইরে যেমন তা হারাম বাড়ির ভিতরেও হারাম। কেননা বাড়িতে এমনটি করার অনুমতি বিষয়ে কোন হাদিস পাওয়া যায় না। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবে।

একজন মহিলা তার চুল জড়ো করে মাথার উপরে ঝুঁটি বাঁধার হুকুম কি যদি সে নিজ ঘরে থাকে?
প্রশ্ন: আমার প্রশ্ন হলো, একজন মহিলা তার চুল জড়ো করে মাথার উপর ঝুটি বেঁধে রাখলে তার কী হুকুম? আর যদি তাকে এতে নিষেধ করা হয়, সে বলে “নিষেধ তো তখনই যখন বাইরে বের হবে। কিন্তু ঘরের ভিতরে করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই।” এ বিষয়ে আপনার মতামত কী, শাইখ? (আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিন)
উত্তর: হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«صنفان من أهل النار لم أرهما: قوم معهم سياطٌ كأذناب البقر يضربون بها الناس، ونساءٌ كاسياتٌ عارياتٌ مميلاتٌ مائلاتٌ، رؤوسهنَّ كأسنمة البُخت المائلة، لا يدخلنَ الجنة، ولا يجدنَ ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا»
“জাহান্নামিদের মধ্যে এমন দুটি শ্রেণি আছে যাদের আমি এখনো দেখিনি:
– এক শ্রেণি: যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মতো চাবুক। তারা সেসব দিয়ে মানুষকে মারবে।
– আর এক শ্রেণি হলো, এমন নারী, যারা পোশাক পরা হলেও যেন নগ্ন। তারা (পুরুষদেরকে) পথভ্রষ্ট করবে এবং নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মতো বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়।” [সহিহ মুসলিম: ২১২৮] সুতরাং যখন কোনো মহিলা তার চুলগুলো মাথার ওপরে জড়ো করে ঝুঁটি বাঁধে তখন তা উটের কুঁজের মতো হয়ে যায়। বিশেষ করে “বুখত” (البُخت) প্রজাতির উট যাদের দুটি কুঁজ থাকে: একটি মূল কুঁজ অপরটি তার পেছনে। অনুরূপভাবে নারীর মাথা ও তার পেছনের চুলের গাঁঠ সেই কুঁজ সদৃশ হয়ে যায়। ফলে সে এই হাদিসের আওতায় পড়ে। এটি কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। সেই ব্যক্তির যে ভুল ধারণা আছে তা হলো: সে মনে করে, ঘরের ভিতরে এইভাবে চুল জড়ো করে রাখলে কোনো সমস্যা নেই! অথচ হারাম তো সব জায়গায়ই হারাম যদি না তা এমন কোনো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত হয় যা কেবল বাইরের পরিবেশে প্রযোজ্য। যেমন: পর্দা বা বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার। এসব বিষয়ে যেমন পার্থক্য আছে (বাইরে নিষেধ, ঘরে বৈধ), কিন্তু চুল জড়ো করে উটের কুঁজের মতো করে রাখা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটি এমন একটি বিষয়, যার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ এসেছে:
يدخلنَ الجنة، ولا يجدنَ ريحها
“তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।”
আল্লাহ আমাদেরকে আশ্রয় দিন। ইমাম মালেকের “মুওয়াত্তা” গ্রন্থে এমন একটি ইঙ্গিত এসেছে, যেখানে কিছু কাপড় (যেমন: লম্বা কাপড় পায়ের গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা) যদি বাড়িতে থাকা অবস্থায় হয় এবং বাইরে পরিধান না করা হয় তবে তা পরা জায়েজ। কিন্তু এটা ইমাম মালেকের ইজতিহাদ (নিজস্ব গবেষণামূলক সিদ্ধান্ত অর্থাৎ এটি হাদিসে বর্ণিত আমভাবে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করা হারাম হওয়ার বিধানের পরিপন্থী) সুতরাং উত্তম তো বটেই বরং অপরিহার্য হলো, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব বিষয়ে নিষেধ করেছেন সেগুলো থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা। তাতেই মুক্তি নিহিত। আল্লাহু আলাম। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ফতোয়া প্রদানে:
– শাইখ আব্দুল কারিম বিন আব্দুল্লাহ আল খুযাইর।
(সাবেক সৌদি, সিনিয়র ওলামা পরিষদ এবং স্থায়ী ফতোয়া ও গবেষণা বোর্ডের সদস্য)।
ফতোয়া অনুবাদক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
No comments:
Post a Comment