সংক্ষিপ্ত ও সহজ হজ এবং উমরা নির্দেশিকা।
সংকলন: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী রহ.।
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
ভূমিকা: হজ হলো ইসলামের ৫টি রুকনের সর্বশেষ তথা পঞ্চম রুকন। এটি একটি ইবাদত যা আত্মিক, মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ত্যাগ সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর এটি পালন করা ফরজ।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا
“মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা এর হজ পালন করবে।” [সূরা আল ইমরান: ৯৭]
রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
«مَنْ أَتَى هَذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
“যে ব্যক্তি (হজ ও উমরা করার জন্য) এঘরে আসবে, অতঃপর স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হবে না এবং পাপাচারে লিপ্ত হবে না, সে এমন (নিষ্পাপ) অবস্থায় ফিরে আসবে যেমন তার মাতা তাকে ভূমিষ্ট করেছিল।” [মুসলিম]
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন:
«صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ، وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ»
“মসজিদে হারামে এক সালাত অন্য মসজিদে এক লক্ষ সালাতের চাইতে বেশি উত্তম।” [আহমদ ও ইবনে মাজাহ]
এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি বিশুদ্ধভাবে আদায়ের চেষ্টা করা একান্তভাবে অপরিহার্য।

১. একনিষ্ঠতার সাথে শুধুমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য হজ পালন করা।
২. এটি পালনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা ও পদ্ধতি অনুসরণ করা।
৩. হালাল বা বৈধ উপার্জন থেকে হজব্রত পালন করা।
৪. হজের বিধান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা।
৫. যাবতীয় শিরক, বিদআত ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা।

৬. ইহরামের পূর্বে শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা তথা নাভীমূল, বগলের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা ইত্যাদি।
৭. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। [ওয়াজিব]
৮. মিকাতে গিয়ে ইহরামের উদ্দেশ্যে প্রথমে গোসল করা।
৯. মাথা, দাড়ি বা শরীরে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
১০. সেলাইবিহীন দুটি কাপড়ে ইহরাম বাঁধা। (শুধু পুরুষদের জন্য)। মহিলারা স্বাভাবিক পোশাকে থাকবে।
১১. কাপড় দুটি সাদা হওয়া উত্তম।
১২. হজ বা উমরার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট মিকাত অতিক্রমের পূর্বে (অন্তরে) নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা। [রুকন]
১৩. তামাত্তু হজের জন্য প্রথমে উমরা আদায় করা।
১৪. উমরার ইহরাম বাঁধার সময় বলা: ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’।
১৫. ইফরাদ হজের ইহরাম বাঁধার সময় বলা: ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান’।
১৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পঠিত তালবিয়া জোরে জোরে পাঠ করা।
১৭. কিরান হজের ইহরাম বাঁধার সময় বলা: ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া উমরাতান’।

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنَّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكُ، لَا شَرِيْكَ لَكَ
উচ্চারণ: ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ানি’য়ামাতা লাকা ওয়াল্ মুক, লা-শারীকা লাকা’।
অর্থ: “আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির! আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির! নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও তোমারই, তোমার কোনো শরিক নেই।”
১৮. অজু-গোসল করে পবিত্রতার সাথে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করা।
১৯. মসজিদে হারামে প্রবেশের পূর্বে তালবিয়া বলা বন্ধ করা।
২০. তাওয়াফের জন্য সরাসরি হাজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
২১. তাওয়াফ শুরুর পূর্বে (পুরুষের জন্য) ইজতিবা করা।
ইজতিবা অর্থ: ইহরামের কাপড় ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রাখা।
নামাজের সময় উভয় কাঁধ ঢেকে রাখা জরুরি।
২২. بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُ أَكْبَرُ
‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হজরে আসওয়াদকে চুমু দিয়ে বা ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা।
২৩. প্রথম তিন চক্করে রমল করা। (দ্রুত পদে চলা)
২৪. তাওয়াফ অবস্থায় কোনো দু’আ নির্দিষ্ট না করে যে কোনো দুআ-জিকির পাঠ করা।
২৫. আল্লাহর ঘর বাম দিকে রেখে তাওয়াফ করা।
২৬. হাতিমের বাহির দিয়ে তাওয়াফ করা।
২৭. রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করা। তা না পারলে ইঙ্গিত না করেই চলতে থাকা।
২৮. রোকনে ইয়ামেনি এবং হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করা:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্কিনা আযাবান্নার।”
অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।” [সূরা বাকারা: ২০১]
২৯. একাধারে সাত চক্কর পূর্ণ করা। (রুকন)
৩০. মাকামে ইবরাহিমের পেছনের দিকে দুই রাকাত নামাজ পড়া। সেখানে সম্ভব না হলে মসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে তা আদায় করা।
(বর্তমানে তাওয়াফের স্থান সংকুলানের স্বার্থে মাকামে ইবরাহিমের পেছনে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।)
৩১. এই দুই রাকাত নামাজে সূরা ফাতিহার পর প্রথম রাকাআতে সূরা কাফেরূন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইখলাস পড়া।
৩২. জমজমের পানি পান করা এবং তা সামান্য কিছু মাথায় ঢালা।
৩৩. আবার হজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া বা সেদিকে ডান হাত উত্তোলন করে ইশারা করা।
৩৪. নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করতে করতে সাফা পাহাড়ে আরোহন করা:
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ
উচ্চারণ: “ইন্নাস সাফা ওয়াল মাওয়াতা মিন শা’আয়িরিলহ”
অর্থ: “নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া পর্বতদ্বয় আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন।” [সূরা বাকারা: ১৫৮]
অতঃপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পাঠ করা।
অতঃপর তিনবার বলবে:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ الْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ .
৩৫. এরপর জানা যে কোনো দু’আ পাঠ করবে।
৩৬. সবুজ বাতিদ্বয়ের মধ্যবর্তী অংশে (পুরুষদের) দৌড়ানো। (মহিলারা দৌড়াবে না বরং স্বাভাবিক গতিতে চলবে)
৩৭. সাফা-মারওয়া সাঈ করার সময় কোনো দোয়া নির্দিষ্ট না করে যেকোনো দোয়া, তাসবিহ ইত্যাদি পাঠ করবে।
৩৮. মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করা।
৩৯. সেখানেও সাফা পাহাড়ের ন্যায় দুআ করা।
৪০. সাত বার সাঈ করা। (রুকন)
৪১. সাফা থেকে মারওয়া গমন ১ম চক্কর, মারওয়া থেকে সাফা প্রত্যাবর্তন ২য় চক্কর। এভাবে ৭ম চক্কর মারওয়ায় এসে শেষ করা।
৪২. তামাত্তুকারী মাথার চুল মুড়িয়ে বা খাটো করে হালাল হয়ে যাওয়া।
৪৩. কিরান ও ইফরাদকারী ইহরাম অবস্থাতেই থেকে যাওয়া।

৪৪. এদিন প্রভাতে তামাত্তুকারী পূর্ব নিয়মে ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান’ বলে হজের ইহরাম বাঁধা। (রুকন)
৪৫. মিনায় গমন করে জোহর থেকে ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজ) কসর করে আদায় করা। সেখানে রাত্রি যাপন করা।

৪৬. এদিন সূর্যোদয়ের পর আরাফাতে গমন করা। এসময় অধিক পরিমাণে তালবিয়া (লাব্বাইক…) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার) পাঠ করা।
৪৭. দুপুর পর্যন্ত আরাফাত সীমানার বাইরে ‘নামেরা’ নামক স্থানে অবস্থান করা।
৪৮. সেখানে প্রদত্ত্ব খুতবা শোনা।
৪৯. জোহর আসরের নামাজ জোহরের সময় এক আজানে দুই ইকামতে কসর করে আদায় করা।
৫০. দুই নামাজের মাঝের সুন্নত নামাজগুলো না পড়া।
৫১. সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর আরাফাতে অবস্থান নেওয়া। (রুকন)
৫২. বেশি বেশি তালবিয়া, তাকবির পাঠ করা এবং কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দুআয় মশগুল থাকা।
৫৩. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। (ওয়াজিব)
৫৪. অতঃপর ধীর গতিতে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে গমন করা।
৫৫. সেখানে সর্বপ্রথম মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে ও দুই ইকামতে আদায় করা।
৫৬. মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা। (ওয়াজিব)
৫৭. রাতে কোনো প্রকার ইবাদাতে মশগুল না হয়ে সরাসরি ঘুমিয়ে পড়া।
৫৮. ফজর নামাজ আদায় করে মাশআরুল হারামে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা।
৫৯. সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া।
৬০. ‘বাতুনে মুহাসসার’ (মুজদালিফা ও মিনার মধ্যবর্তী অঞ্চল) নামক স্থানে দ্রুত গতিতে চলা।

৬১. মুজদালিফা বা মিনার যে কোনো স্থান থেকে ৭টি কংকর সংগ্রহ করা।
৬২. বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপের পূর্বে তালবিয়া বন্ধ করা।
৬৩. সূর্যোদয়ের পর উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বড় জামারায় একে একে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)
৬৪. মিনা বা মক্কার হারামের সীমানার মধ্যে যে কোনো স্থানে কুরবানী করা। [তামাত্তু এবং কিরানকারীর জন্য ওয়াজিব]
৬৫. নিজ হাতে কুরবানি করা। (কুরবানির টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে দেওয়াও বৈধ)
৬৬. সম্ভব হলে কুরবানি কিছু মাংস ভক্ষণ করা।
৬৭. ঈদের দিন ব্যতীত পরবর্তী তিন দিনও (১১, ১২, ১৩) কুরবানি করা বৈধ।
৬৮. মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করে হালাল হওয়া।
তবে মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের গিরা সমপরিমাণ কাটবে। (ওয়াজিব)
৬৯. মক্কায় গিয়ে রমল (হালকা দৌড়ানো) ব্যতিরেকে কাবা ঘরের তাওয়াফ করা। এটিকে তওয়াফে ইফাযাহ বলা হয়। (রুকন)
৭০. তাওয়াফের পর পূর্বের ন্যায় দু রাকাআত নামাজ পড়া।
৭১. তামাত্তু কারীর সাফা-মারওয়া সাঈ করা। (রুকন)
৭২. ১০ তারিখের কাজগুলি (কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি, মাথা মুণ্ডন ও তাওয়াফ) ধারাবাহিক ভাবে সম্পাদন করার চেষ্টা করা। তবে অধিক বিশুদ্ধ মতে এগুলো আগে-পরে হয়ে গেলেও অসুবিধা নেই।
৭৩. মক্কা থেকে মিনায় প্রত্যাবর্তন করে ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১১ ও ১২ তারিখের রাত যাপন করা। (ওয়াজিব)
৭৪. ১১ ও ১২ তারিখ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামারার প্রতিটিতে তাকবিরসহ সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)
৭৫. তিনটি জামারায় পাথর মারার ক্ষেত্রে ছোট ও মধ্যবর্তী জামারার পর সামনে বেড়ে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দুআ করা। কিন্তু বড় জামারায় পাথর মেরে দাঁড়াবে না দু’আও করতে হবে না।
৭৬. ১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করার ইচ্ছা করলে সূর্যাস্তের পূর্বেই তা করতে হবে।
৭৭. সূর্যাস্তের পর মিনায় থেকে গেলে সেই রাত্রি (মিনায়) যাপন করা ওয়াজিব, এবং পরবর্তী ১৩ তারিখ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামারায় পাথর মারাও ওয়াজিব।
৭৮. মক্কায় এসে রমল বিহীন বিদায়ী তাওয়াফ করা। (ওয়াজিব)

১. অনেকে ইহরাম বাঁধার সময় থেকেই ইজতেবা করে অর্থাৎ ইহরামের কাপড় ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখে দেয়, এমনকি সালাতের সময়ও সেভাবেই থাকে। এরূপ করা সুন্নতের পরিপন্থী। ইজতেবা শুধু তাওয়াফের মুহূর্তে করা সুন্নত; অন্য সময় নয়।
২. কাবা ঘরের তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া সাঈ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দুআ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এসময় অনির্দিষ্টভাবে যে কোনো দুআ বা প্রার্থনা যে কোনো ভাষায় করা যাবে। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের কিতাবে যে সকল দু’আ লিখিত আছে- ১ম চক্করের দুআ……. ২য় চক্করের দুআ তা নিঃসন্দেহে ভুল। কেননা এভাবে নির্দিষ্ট চক্করের জন্য নির্দিষ্ট দু’আ না রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়েছেন না তিনি পড়তে বলেছেন, না কোনো সাহাবি এরূপ করেছেন।
৩. অনেকে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্যে দু রাকাআত সালাত আদায় করে থাকে! মূলত: ইহরামের জন্য কোনো সালাত নেই। তবে কোনো ফরজ সালাতের সময় হয়ে গেলে, উক্ত সালাত আদায় করার পর ইহরাম বাঁধবে।
৪. ১০ তারিখে তাওয়াফে ইফাযাহ করতে না পারলে পরবর্তীতে যে কোনো সময় তা করতে পারবে। তবে ১৩ তারিখের মধ্যে আদায় করা উত্তম।
৫. প্রয়োজনে তাওয়াফে ইফাযাহর সাথে বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ত করলে উভয়টিই আদায় হয়ে যাবে।
৬. কোনো অবস্থাতেই আরাফাতের ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে প্রস্থান বৈধ নয়।
৭. তামাত্তুকারীর কোনো অবস্থাতেই এক সাঈ যথেষ্ট নয়। ১০ তারিখের পূর্বে তাওয়াফে ইফাযাহ করলে সেটি আদায় হবে না।
৮. তানইম বা মসজিদে আয়েশা বা ওমরাহ মসজিদ থেকে ঘন ঘন ইহরাম বেঁধে এসে নিজের জন্য বা আত্মীয়-স্বজনের নামে ওমরা পালন করা বিধি সম্মত নয়। কেননা একই সফরে এরূপ একাধিক ওমরা করা রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেইদের কারো থেকেই সাব্যস্ত নেই। [বিস্তারিত দেখুন আল-মুগনী ৫/১৭]
৯. মসজিদে নববীর জিয়ারত: এটি মুস্তাহাব। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, কিংবা ওয়াজিব বা ফরজও নয়। আর এটি জিয়ারত করা হজ ও ওমরার সামান্যতম অংশ বিশেষও নয়। অনেকেই মনে করে যে, হজ সফরে গিয়ে মদিনা জিয়ারত না করলে হজ শুদ্ধ হবে না এই ধারণা ভুল।
সুতরাং শুধুমাত্র মদিনার মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েজ (বৈধ)। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে (যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর মাজার জিয়ারত বা সাহাবিদেরৎকবর জিয়ারত ইত্যাদি উদ্দেশ্যে) সফর করা জায়েজ নয়। তবে মদিনায় পৌঁছে যাওয়ার পর এগুলো জিয়ারত করতে কোনো বাধা নেই। [বুখারী ও মুসলিম]

১. ইহরাম বাঁধা।
২. আরাফায় অবস্থান করা।
৩. তাওয়াফে ইফাযাহ করা।
৪. সাঈ করা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
*হজ বা ওমরার কোনো একটি রুকন ছুটে গেলে তা বাতিল হয়ে যাবে।
*আর কোনো একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে কাফফারা দিতে হবে।

১. মিকাত হতে ইহরাম বাঁধা।
২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা।
৩. মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা।
৪. ১১, ১২ জিলহজের রাতগুলো মিনায় যাপন করা।
৫. জামারায় পাথর মারা।
৬. কুরবানি করা। (তামাত্তু ও কিরানকারীদের জন্য)
৭. চুল কামানো বা ছোট করা।
৮. বিদায়ী তাওয়াফ করা। (তবে ঋতুমতী ও প্রসূতি মহিলাদের জন্য এটি আবশ্যক নয়।)

১. সেলাইকৃত কাপড় পরা।
২. মুখ ঢাকা।
৩. পুরুষদের মাথা ঢাকা।
৪. হাতমোজা পরিধান করা।
৫. নখ, চুল ইত্যাদি কাটা।
৬. স্থলচর প্রাণী শিকার করা বা তা শিকার করার জন্য ইঙ্গিত করা।
৭. স্ত্রী সহবাস করা।
৮. কোনো জিনিস কুড়ানো (হারাম এলাকায়)।
৯. বিয়ে করা বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া।
১০. সুগন্ধি ব্যবহার করা।

১. ইসলাম [সূরা তাওবাহ: ৫৪]
২. জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া [আহমাদ, আবু দাউদ, নাসায়ী]
৩. স্বাধীন হওয়া। [আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ী]
৪. বালেগ হওয়া। [আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ী]
৫. আর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া। [আল ইমরান: ৯৭]
৬. মহিলার জন্য স্বামী অথবা মাহরাম থাকা। [বুখারী ও মুসলিম]
মহান আল্লাহ্ আমাদের পবিত্র কুরআন এবং সহিহ্ হাদিস অনুযায়ী হজ পালন করে সৌভাগ্যশালীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন!!
No comments:
Post a Comment