(১). খারেজি সম্প্রদায়: খারিজি’ শব্দটি আরবি ‘খুরুজ’ মূলধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ বাহির হওয়া বা সীমানা লঙ্ঘন করা। একবচনে বলা হয় ‘খারিজি’ এবং এর বহুবচন ‘খাওয়ারিজ’। আভিধানিক দৃষ্টিকোণে, ‘খারিজি’ বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যে তার সম্প্রদায়, গোত্র বা সমসাময়িকদের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় এবং বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। খারেজিদের আক্বীদা হচ্ছে,কবিরা গুনাহগার হলো কাফির, কবীরাগুনাহ বড় কুফরি। যা মিল্লাত (ইসলাম) থেকে বের করে দেয়। এরা বলে, যে কবীরাগুনাহ করবে, সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) বলেছেন, فَكانَ مِن أوَّلِ البِدَعِ والتَّفَرُّقِ الَّذِي وقَعَ فِي هَذِهِ الأُمَّةِ «بِدْعَةُ الخَوارِجِ» المُكَفِّرَةِ بِالذَّنْبِ “এই উম্মতের মধ্যে উদ্ভূত সর্বপ্রথম বিদআত ও বিভক্তি হলো খারেজিদের বিদআত; যারা (বড়ো কুফর নয় এমন) গুনাহের দরুন কাফির ফতোয়া দেয়।”(মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ৪৭০)
Monday, May 12, 2025
কবিরা গুনাহগারদের বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তিনটি দল
.
(২). মুতাজিলা সম্প্রদায়: মু‘তাযিলা” (المعتزلة) শব্দটি এসেছে “ই‘তাযাল” (اعتزل) ক্রিয়াপদ থেকে, যার অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া, আলাদা থাকা বা একাকীত্ব অবলম্বন করা। এই দার্শনিক মতবাদের উদ্ভব হয় হিজরী প্রথম শতকের শেষভাগ এবং দ্বিতীয় শতকের শুরুতে, যখন কিছু চিন্তাবিদ প্রচলিত ধারার চিন্তা থেকে সরে এসে স্বতন্ত্র মত প্রকাশ করেন। এদের আক্বীদা হচ্ছে, কবীরাগুনাহগার ব্যক্তি কাফির এবং মুমিন এই দুইয়ের মাঝখানে রয়েছে,এরা বলে,কবিরা গুনাহগার মুমিনও নয়, আবার কাফিরও নয়, বরং সে দুটো স্তরের মধ্যবর্তী স্তরের আওতাভুক্ত। আর এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে,এমনকি শাফা‘আতের মাধ্যমেও তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা যাবে না। কারণ সে ঈমানহীনভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। মু‘তাযিলা মতবাদের জনক ওয়াছিল বিন আতা বললেন,أنا لا أقول إن صاحب الكبيرة مؤمن مطلقا ولا كافر مطلقا بل هو في منزلة بين المنزلتين لا مؤمن ولا كافر “আমি কবীরাগুনাহকারীকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন বলব না এবং পূর্ণাঙ্গ কাফিরও বলব না। বরং তার অবস্থান উভয়ের মাঝামাঝি। না মুমিন না কাফির”(আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫)
.
(৩). মুরজিয়া সম্প্রদায়: মুরজিয়া” (المرجئة) শব্দটি আরবি “إرجاء” ইরজা মূলধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো বিলম্ব করা, স্থগিত রাখা, বা পেছনে ঠেলে দেওয়া।যেমন: আল্লাহ তা’আলা বলেন, ফির’আউন বলেছিল, ‘আরিজহ ওয়া আখাহু’ [সূরা আল-আ’রাফ: ১১১] অর্থাৎ “মূসা ও তার ভাইকে একটু বিলম্ব করাও”। আর সে হিসেবে এদেরকে মুরজিয়া বলার কারণ তারা আমলকে ঈমানের সংজ্ঞায় প্রবেশ করায় না। তারা বলে, ঈমান হচ্ছে শুধু অন্তরে বিশ্বাসের নাম।এরা কবীরাগুনাহকে মুলতবি রাখে। এদের আক্বীদা হচ্ছে,কবিরা গুনাহগার পরিপূর্ণ ইমানওয়ালা মুমিন।কবীরাগুনাহ ঈমানের কোন ক্ষতি করে না। তার কোনো শাস্তি হবে না, এমনকি সে শাস্তির হকদারও হবে না। তাদের নিকট আমল ঈমানের রুকন নয়। সীমালঙ্ঘন বা পাপ কাজও ঈমানের কোন ক্ষতি করে না। যেমনভাবে কুফরী আনুগত্যের কোন ক্ষতি করতে পারে না। এরাই হল মুরজিয়া।।
.
পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে প্রতিদানপ্রাপ্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কবিরা গুনাহগারের বিধান হচ্ছে কোনো ব্যক্তি যদি বড় গোনাহে লিপ্ত হয়, তবে সে তার গোনাহের কারণে সে আল্লাহর নির্ধারিত প্রতিদান তথা শাস্তির হকদার হবে। তবে এতে সে চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে না। বরং তার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল আল্লাহ চাইলে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে তাকে তার গোনাহ অনুযায়ী শাস্তি দেবেন,আবার তিনি চাইলে তাঁর অনুগ্রহে সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেবেন।”যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্য সব (গুনাহ) যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [সুরা নিসা: ৪৮] এছাড়াও কুরআন সুন্নাহ’য় আরো বহু দলিল রয়েছে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment