Monday, May 12, 2025

ঘড়ি কোন হাতে পরিধান করা সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী

 প্রশ্ন: ঘড়ি কোন হাতে পরিধান করা সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী। ডান হাতে নাকি বাম হাতে? একটি ভারসাম্যপূর্ণ পর্যালোচনা।

▬▬▬▬▬▬❂✿❂▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর ঘড়ি কোন হাতে পরিধান করা উত্তম এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিংবা সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো স্পষ্ট দলিল প্রমাণিত হয়নি। কারণ, ঘড়ি একটি আধুনিক আবিষ্কার যা নবীজির যুগে ছিল না। ফলে এই বিষয়টি একটি ইজতিহাদী মাসআলা হিসেবে বিবেচিত। এই ইজতিহাদী মাসআলায় ইমামগণ সাধারণত আংটি পরিধান সংক্রান্ত হাদীসগুলোর উপর কিয়াস করে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ‘ঘড়ি কোন হাতে পরিধান করা সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী এই বিষয়ে মোটামুটি তিনটি মত পাওয়া যায়।
.
▪️(১). একদল আলেমদের মতে ঘড়ি ডান হাতে পরিধান করা সুন্নত। এই মতের পক্ষে থাকা আলেমগণ: শাফেঈ মাজহাবের কিছু আলেম, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] শাইখ আব্দুল কারীম আল-খুদাইর, শাইখ ওয়ালিদ বিন রাশিদ আস-সাঈদান (হাফিজাহুল্লাহ)সহ আরো অনেকে। ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূরে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এই মতের আলেমদের পক্ষে দলিল হচ্ছে:
.
(ক).ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা ও শিষ্টাচারের পরিপূর্ণ নির্দেশনা দেয়। শরিয়তের অন্যতম মৌলিক নীতিমালা হলো সম্মানিত ও পবিত্র কাজসমূহ ডান হাত দিয়ে সম্পাদন করা এবং অশুচি বা হীন কাজসমূহ বাম হাত দিয়ে সম্পাদন করা, যাতে ডান দিকের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র ও উত্তম কাজগুলোয় ডান দিককে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন এবং সেদিকেই অগ্রাধিকার দিতেন। যেমন:আম্মাজান আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِيْ تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ ‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুতা পরিধান, চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক হতে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন”।(সহীহ বুখারী, হা/১৬৮)।
.
(খ).তাঁরা আরও বলেন, ডান হাতে ঘড়ি পরা কুফরীদের থেকে মুসলিমদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার একটি মাধ্যম কারণ অধিকাংশ কাফের বাম হাতে ঘড়ি পরিধান করে। আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ইয়াহূদী ও নাসারাদের বিরোধিতা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের অনুকরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।”রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’(আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৭)
এটি প্রমাণ করে কা-ফের-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা খুবই মারাত্মক বিষয়, সেটা কথার মাধ্যমে সাদৃশ্য হোক কিংবা কর্মের মাধ্যমে, পোশাকের মাধ্যমে হোক কিংবা অভ্যাস, অনুষ্ঠান বা উৎসবের মাধ্যমে।
.
(গ).তারা আংটির ক্ষেত্রে কিয়াস করে থাকেন যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ডান হাতে আংটি পরতেন, তাই তাঁরা ডান হাতেই ঘরি পরিধানকে অগ্রাধিকার দেন; যদিও কিছু হাদিসে বাম হাতে পরার উল্লেখও পাওয়া যায়।” আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে রূপার একটি আংটি পরিধান করেছেন। তাতে হাবশী মোহর ছিল। তিনি এর মোহরটি হাতের তালুর দিকে রাখতেন। (সহীহ মুসলিম হা/৫৩৮০) আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতে আংটি পরতেন। (আহমাদ আল-মুসনাদ; ৩/২৬৫)। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন,নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আংটি ছিল এ আঙ্গুলে- এ কথা বলে তিনি বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের দিকে ইঙ্গিত করেন।”(সহীহ মুসলিম হা/৫৩৮২) তবে অধিকাংশ হাদিস ডান হাতের পক্ষে।
.
(ঘ).ঘড়ি কেবল সময়ের পরিমাপই নয়, এটি পরিধানকারীর মর্যাদা, রুচি ও সৌন্দর্যবোধেরও প্রতীক। তাই যখন ঘড়িটি ডান হাতে পরিধান করা হয়, তখন তা বাহ্যিক সৌন্দর্যকে আরও পরিপূর্ণ করে তোলে। রাসূল (ﷺ) নিজেও সম্মানজনক ও পরিচ্ছন্নতার কাজগুলিতে ডান দিককে অগ্রাধিকার দিতেন, যা পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।”
.
(ঙ).তারা আরও বলেন, বাম হাতে ঘড়ি পরার ফলে এটি অজুর সময় বা পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে নাপাকির সংস্পর্শে আসতে পারে, যা তহারাতের শুদ্ধতা ও সৌন্দর্যকে ব্যাহত করতে পারে। অথচ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যেমন আবূ মালেক আল-আশআরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,”পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক”(সহীহ মুসলিম, হা/২২৩; মিশকাত, হা/২৮১)
.
▪️(২).অপর একদল আলেমের মতে, ঘড়ি বাঁ হাতে পরাই অধিক উত্তম। এ অভিমতের পক্ষে রয়েছেন ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এবং কিছু মালিকি ফিকহবিদ। তাঁদের মতে, ডান হাতে আংটি পরা মাকরূহ; সুতরাং বাম হাতই শ্রেয়। ইবনু রজব হাম্বলি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট হয় যে, তিনি বাঁ হাতে আংটি পরাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁদের দলিল—ডান হাতে আংটি পরার প্রচলন সাহাবাদের যুগে খুব বেশি ছিল না,বরং বাঁ হাতেই পরার নজির বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া, ডান হাত দিয়ে অন্যকে কিছু প্রদান করা ও গ্রহণ করা সুন্নাত; এই আদব রক্ষা করার স্বার্থেই ঘড়ি পরিধানে বাঁ হাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া যুক্তিসঙ্গত বলে তাঁরা মনে করেন।(বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩৯৫৪০)।
.
▪️(৩).অন্য একদল আলেম বলেছেন, ঘড়ি পরার ক্ষেত্রে ডান বা বাম উভয় হাতই বৈধ। একজন ব্যক্তি নিজ সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্যের ভিত্তিতে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে পারে। শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই, সুতরাং এ বিষয়ে কোনোটাই সুন্নাহর পরিপন্থী নয়।এই মতের পক্ষে রয়েছেন:সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা), বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ),ইমাম বিন বায,ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর,শাইখ বকর আবু যায়েদ তিনি ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ফাতওয়ার সমালোচনা করেন,এবং ইসলামিক প্রশ্নোত্তর সাইট (islamqa.info) তাদের দলিলসমূহ:
(১).আংটির উপর কিয়াস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান ও বাঁম উভয় হাতে আংটি পরেছেন, তাই ঘড়ি পরিধানের ক্ষেত্রে কোন একটি হাতকে নির্দিষ্ট করার কোন দলিল কিংবা নির্দিষ্ট কোন ফজিলত নেই।
.
(২).বাস্তবতা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করলে, ডান হাতে ঘড়ি পরলে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা হতে পারে অথবা ঘড়ি ভাঙার আশঙ্কা থাকতে পারে। অধিকাংশ ঘড়ির নকশা বাঁ হাতে পরার উপযোগী, কারণ এর সুইচ বা রিল সাধারণত ডান পাশেই থাকে। এছাড়া, ডান হাতে খাওয়ার সময় সময় দেখার জন্য বাঁ হাতটি বেশি সুবিধাজনক।”
.
(৩).ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়ার হাদীসের প্রাসঙ্গিকতা সব কাজে নয়; বরং তা মূলত শুরু ও সমাপ্তির মতো নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ।”
.
(৪).অনেক কাফেরও ডান হাতে ঘড়ি পরেন তাই এটিকে কাফেরদের বিরোধিতার মানদণ্ডে বিবেচনা করা সঙ্গত নয়।” এই মতের পক্ষে কয়েকটি ফাতওয়া হল।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল; পুরুষদের জন্য ডান বা বাম হাতে ঘড়ি পরিধান বৈধ কিনা?
জবাবে স্থায়ী কমিটির আলেমগন বলেছেন, الأمر في ذلك واسع،فيجوز لبسها في اليمنى أو اليسرى للرجال والنساء كالخاتم.”এ বিষয়ে প্রশস্ততা রয়েছে, সুতরাং আংটির ন্যায় ঘড়িও নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ডানহাতে কিংবা বামহাতে পরিধান করাতে কোন আপত্তি নেই”।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ৮০: ফাতওয়া নং-৯৫৮৪)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,لا حرج في لبس الساعة في اليد اليمنى أو اليسرى،كالخاتم، وقد ثبت عن النبي ﷺ أنه لبس الخاتم في اليمنى واليسرى.» انتهى.”আংটির মত ঘড়ি ডানহাতে কিংবা বামহাতে পরতে কোন আপত্তি নেই। নবী ﷺ থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি ডানহাতে ও বামহাতে আংটি পরেছেন।”(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৫৫)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:وضع الساعة في اليد اليمنى ليس أفضل من وضعها في اليد اليسرى؛لأن الساعة أشبه ما تكون بالخاتم،فلا فرق بين أن تضع الساعة في اليمين أو اليسار،لكن لا شك أن وضعها في اليسار أيسر للإنسان،من ناحية التعبئة،ومن ناحية النظر إليها أيضاً،ثم هي أسلم في الغالب؛لأن اليمنى أكثر حركة فهي أخطر.والأمر في هذا واسع،فلا يقال:إن السنة أن تلبسها باليمين؛لأن السنة جاءت في اليمين واليسار في الخاتم، والساعة أشبه شيء به»انتهى.”ডানহাতে ঘড়ি পরা বামহাতে ঘড়ি পরার চেয়ে উত্তম নয়।কেননা ঘড়ির বিষয়টি আংটির কাছাকাছি। এ কারণে ঘড়ি ডানহাতে পরা কিংবা বামহাতে পরার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে বামহাতে পরা মানুষের জন্য সহজতর পরার দিক থেকে এবং ঘড়ি দেখার দিক থেকে। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বামহাতে ঘড়ি পরাটা অধিক নিরাপদ।কেননা ডানহাতে বেশি কাজ করা হয়। তাই সেটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়টিতে প্রশস্ততা রয়েছে।তাই এ কথা বলা যাবে না যে,ডানহাতে পরা সুন্নত।কেননা হাদিসে ডানহাতে ও বামহাতে আংটি পরার বিষয়টি উদ্ধৃত হয়েছে।ঘড়ি আংটির সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।”(ইমাম উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১১০)
.
▪️এখন প্রশ্ন হচ্ছে উপরোক্ত তিনটি মতের মধ্যে কোনটি সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী?
.
জবাবে বলা যায় তিনটি মতের মধ্যে সুন্নাহ’র অধিক নিকটবর্তী হচ্ছে, ডান হাতে গড়ি পরিধান করা যেমনটি
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী আদ-দিমাশক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ব্যাখ্যা করেছেন। ডান হাতে ঘড়ি পরিধান করা সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী বলে গণ্য হয়, কারণ এটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত সকল ভালো কাজে ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে অধিকাংশ কাফিরদের বিরোধিতা, আংটির মত ডান হাতে ব্যবহারের অনুরূপতা,এবং অপবিত্রতা থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্ত থাকার একটি মাধ্যম হিসেবেও ডান হাত ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যদিও ঘড়ি পরার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধি-নিষেধ নেই, তবে যখন সুযোগ থাকে, ডান হাতে পরা উত্তম। তবে, যদি এমন কোনো পরিস্থিতি থাকে যেখানে ডান হাতে ঘড়ি পরলে তা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে বাঁ হাতে পরা বৈধ এবং এমনকি অনেক সময় সেটাও উত্তম হতে পারে।
.
বর্তমান সৌদি আরবের আক্বীদার অন্যতম আলেম শাইখ ওয়ালিদ বিন রাশিদ আস-সাঈদান (হাফিজাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ঘড়ি ও আংটি কোন হাতে পরা উত্তম ডান হাতে, না বাম হাতে?
উত্তরে শাইখ বলেন:
الأمر في ذلك واسع، فأما الخاتم فقد ثبت أن النبي ? لبسه في اليمين تارة وفي شماله تارة، فيجوز هذا وهذا، وأما الساعة فلا نص فيها؛ لأنها واقعة جديدة ولنا فيها تخريجان: الأول: أن تقاس على الخاتم فيجوز لبسها في اليمين أو في الشمال فالأمر واحد. والثاني: أن تلبس في اليمين، وذلك لثلاثة أمور: أحدها: أنها من باب الكرامة والتجمل والتزين، ذلك لأن الإنسان لا يقصد بشرائها مجرد مراعاة الوقت فقط، بل يقصد منها أيضًا النواحي الجمالية، وقد تقرر أن ما كان من باب التكريم والتزيين فتقدم فيه اليمين.
الثاني: أن لبسها في اليسار هي العادة السائدة عند الكفار على مختلف طوائفهم ومن المعلوم أن المسلمين أخذوا هذه العادة منهم تقليدًا لهم في ذلك (1)، ومخالفة الكفار فيما هو من عاداتهم وعبادتهم مقصد من مقاصد الشريعة حتى وإن كان في الأشياء اليسيرة كفرق الشعر؛ لأنهم يسدلون، وحف الشارب؛ لأنهم لا يحفون، والصلاة في النعل؛ لأنهم لا يصلون فيها، وكراهة اشتمال الصماء فقيل إنها لبسة اليهود، وتحريم شد الزنار، وغيرها كثيرة فمخالفة الكفار عمومًا واليهود والنصارى خصوصًا مقصد من مقاصد الشريعة فإذا كان من عادتهم لبس الساعة في اليسار فنحن نخالفهم ونلبسها في اليمين وينوي الإنسان بذلك مخالفتهم فيثاب عليه.
الثالث: أن اليد اليسار هي آلة إزالة النجاسات والأشياء المستقذرة فيخشى عند لبسها في اليسار أن يتسرب لها شيء من النجاسات وخصوصًا إذا كانت واسعة وهذا مما يغلب على الظن وغلبة الظن منزلة منزلة اليقين فدرءاً لذلك تلبس في اليمين التي لا تعلق لها بإزالة شيء من ذلك، والنفس تطمئن للتخريج الثاني لكن الأمر واسع ولا أظن العاقل ينكر على من لبسها في هذه أو لبسها في هذه؛ لأن مسائل الاجتهاد لا إنكار فيها وهذه منها
“আমি বলি, এই ব্যাপারে ইসলামে ব্যাপকতা রয়েছে, অর্থাৎ এতে কোনো সংকীর্ণতা বা কঠোরতা নেই। আংটির ক্ষেত্রে, প্রমাণ রয়েছে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো ডান হাতে আংটি পরেছেন, আবার কখনো বাম হাতে। ফলে, উভয়ভাবে পরা বৈধ। আর ঘড়ির বিষয়ে এটি নতুন আবিষ্কৃত একটি বিষয়, যার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট দলীল নেই। তবে আমরা এতে দুটি ব্যাখ্যার দিক নিতে পারি:
প্রথম ব্যাখ্যা হলো এটি আংটির উপর কিয়াস করে বলা যায়। যেহেতু আংটি দুই হাতে পরা যায়, ঘড়িও তেমনি ডান বা বাম যেকোনো হাতে পরা বৈধ। এতে কোনো সংকীর্ণতা নেই।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো ঘড়ি ডান হাতে পরা উচিত। এর তিনটি কারণ রয়েছে:
(১).এটি সৌন্দর্য, শোভা ও সম্মানের বস্তু হিসেবে গণ্য হয়। মানুষ কেবল সময় দেখার জন্যই ঘড়ি পরে না, বরং এটি অলঙ্কার হিসেবেও পরে। শরিয়তে যা কিছু সৌন্দর্য ও সম্মানের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, সেসব ক্ষেত্রে ডান হাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
(২).বাম হাতে ঘড়ি পরা হচ্ছে কা-ফিরদের সাধারণ অভ্যাস তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীতেই এটি প্রচলিত। মুসলিমরা মূলত তাদের অনুসরণ করেই এটি গ্রহণ করেছে। অথচ শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো কা-ফিরদের অনুকরণ না করা, তা যত সামান্য বিষয়েই হোক না কেন। যেমন: চুল মাঝখান দিয়ে ভাগ করা কারণ তারা চুল ঝুলিয়ে রাখে; গোঁফ ছেঁটে রাখা কারণ তারা তা করে না; জুতা পায়ে নামায পড়া কারণ তারা তা করে না; ‘ইত্তিবা’ (চাদর একদিকে মোড়ানো) অপছন্দনীয়, কারণ এটি ইহুদিদের পোশাক বলা হয়; ‘যুননার’ (অবিশ্বাসীদের ধর্মীয় বেল্ট) পরা হারাম এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। সুতরাং, কা-ফিরদের বিশেষ করে ই-হুদি ও খ্রি-স্টানদের ভিন্নরূপ হওয়া শরিয়তের একটি উদ্দেশ্য। যদি তাদের রীতি হয় বাম হাতে ঘড়ি পরা, তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করব, ডান হাতে পরব; আর এই নিয়তে পরলে এতে সাওয়াবও পাওয়া যাবে।
(৩). বাম হাত সাধারণত অপবিত্রতা ও অশুচি জিনিস দূর করার কাজে ব্যবহৃত হয়। ফলে, যদি ঘড়ি বাম হাতে পরা হয়, বিশেষত যদি তা ঢিলা হয়, তবে অপবিত্রতা লাগার সম্ভাবনা থাকে। আর প্রবল ধারণাকে শরিয়তে নিশ্চিততার মর্যাদা দেওয়া হয়। তাই এই সম্ভাবনা থেকে বাঁচতে ডান হাতে ঘড়ি পরাই নিরাপদ ও উত্তম।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল দ্বিতীয় ব্যাখ্যাই অধিক প্রশান্তিদায়ক। তবে বিষয়টি উন্মুক্ত (ব্যাপকতা রয়েছে), এতে কোনো কঠোরতা নেই। আমি মনে করি না কোনো বিবেকবান ব্যক্তি কাউকে দোষারোপ করবে সে ডান হাতে পরুক বা বাম হাতে। কারণ এটি ইজতিহাদি (ব্যক্তিগত মতভেদযোগ্য) বিষয়, আর ইজতিহাদি বিষয়ে দোষারোপ করা যায় না।” (তালকীহুল আফহাম আল-উলিয়্যাহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭৬) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
রচনাকাল: ভোর ৪টা ৪৯ মিনিট।
রোজ বুধবার।
৯ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি।
২৪শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
৭ই মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।

No comments:

Post a Comment

Translate