প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তি সালাত আদায়ের সময় কোনো রুকন (আবশ্যিক অঙ্গ) বা ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয় কাজ) আদায় করেছে কিনা এই বিষয়ে সন্দেহে পড়ে যায়, তাহলে সেই সন্দেহজনিত ভুল কীভাবে সংশোধন করবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: সালাতে সন্দেহ হলো বৃদ্ধি ও কমতির মাঝে দ্বিধা। যেমন: কেউ যদি দ্বিধায় পড়ে যায় যে সে কি তিন রাকাআত সালাত পড়েছে; নাকি চার রাকাআত। এক্ষেত্রে তার দুই অবস্থা:
(১).হয়তো তার কাছে দুটির একটি প্রাধান্য পাবে: কমতি বা বৃদ্ধি; তাহলে তার কাছে যেটা প্রাধান্য পেয়েছে সেটার উপর ভিত্তি করে সে সালাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরানোর পর দুটি সাহু সিজদাহ দিবে।
.
(২).নতুবা তার কাছে দুটির কোনোটি প্রাধান্য পাবে না। তখন তার যতটুকুর উপর দৃঢ় বিশ্বাস আছে তথা কম সংখ্যা, ততটুকু ধরে নিয়ে সালাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরানোর আগে দুটি সাহু সিজদাহ দিবে।
উদাহরণস্বরূপ: এক ব্যক্তি যোহরের সালাত আদায় করছিল। সালাতের মাঝে তার সন্দেহ হল সে কি তৃতীয় রাকাআতে রয়েছে, নাকি চতুর্থ রাকাআতে? চিন্তা করে তার কাছে তৃতীয় রাকাআতের সম্ভাবনাই বেশি মনে হল। এক্ষেত্রে সে তৃতীয় রাকাআত ধরে নিয়ে আরও একটি রাকাআত আদায় করবে এবং সালামের পর দুটি সাহু সিজদাহ দিবে। অন্য একটি অবস্থা হচ্ছে যখন সন্দেহের দুটো দিকই সমান মনে হয়। যেমন কেউ যোহরের সালাতে রয়েছে এবং তার মনে হল সে কি তৃতীয় রাকাআতে আছে, না কি চতুর্থ? কিন্তু কোনটার দিকেই তার প্রবল ধারণা নেই; উভয়ের সম্ভাবনাই সমান মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় তাকে একীনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থাৎ যে রাকাআত কম সেটাকেই একীন হিসেবে গ্রহণ করবে। ফলে সে তৃতীয় রাকাআত ধরে নিয়ে আরেকটি রাকাআত আদায় করবে এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাহু সিজদাহ করবে তারপর সালাম ফিরিয়ে সালাত সম্পন্ন করবে।
.
এখন মনে করুন আপনি সালাতের সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন; অর্থাৎ আপনি কি একটি সিজদা দিয়েছেন; না দুটি সিজদা দিয়েছেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান তাহলে আপনি একীনের (নিশ্চিত জ্ঞানের) উপর নির্ভর করবেন। একীন হচ্ছে ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। তাই আপনি শুধু একটি সিজদা দিয়েছেন ধরে নিয়ে দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবেন। এরপর সালাম ফেরানোর আগে সহু সিজদা দিয়ে নেয়া উত্তম। এটি শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অভিমত।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন:
” أما إذا كان الشك في الصلاة ، فإنه يأتي بالسجدة ويبني على اليقين ، إذا شك هل سجد سجدة أو سجدتين يأتي بالسجدة الثانية سواء في الركعة الأولى أو الثانية أو الثالثة أو الرابعة ، ويسجد للسهو قبل السلام ، وإن سجد بعد السلام فلا بأس ، ولكن الأفضل قبل السلام “
“আর যদি সন্দেহটি সালাতের মধ্যে হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে এবং সিজদাটি আদায় করবে। যদি সন্দেহ হয় এক সিজদা দিয়েছে, নাকি দুই সিজদা দিয়েছে তাহলে সে ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবে। এটি প্রথম, কিংবা দ্বিতীয়, কিংবা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ যে রাকাতের ক্ষেত্রে হোক না কেন। এরপর সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে; যদি সালাম ফিরানোর পরেও দেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে আগে দেয়াই উত্তম”।(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩০)
.
কোনো কোনো আলেমের মতে সালাতের কোনো রুকন আদায়ে সন্দেহ হলে, তা সালাতের রাকাআতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহের মতোই গণ্য হবে। যদি সন্দেহকারী নিশ্চিতভাবে বুঝতে না পারেন কোনটি সঠিক অর্থাৎ তার কাছে কোনো দিক প্রবল না মনে হয় তাহলে তাকে একীনের উপর নির্ভর করবে। একীন অর্থাৎ নিশ্চিত দিকটি, যা সাধারণত কম সংখ্যাটি হয়ে থাকে। এই অবস্থায় সে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পূর্বে সাহু সিজদা আদায় করবে। আর যদি তার কাছে কোনো একটি সম্ভাবনা প্রবল মনে হয়, তাহলে সে সেই প্রবল ধারণার ভিত্তিতে সালাত সম্পন্ন করবে এবং সালাম ফিরানোর পূর্বেই সাহু সিজদা আদায় করবে। যেমন:
মুরদাওয়ি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:قَوْلُهُ ( وَمَنْ شَكَّ فِي تَرْكِ رُكْنٍ : فَهُوَ كَتَرْكِهِ ) هَذَا الْمَذْهَبُ , وَعَلَيْهِ أَكْثَرُ الْأَصْحَابِ وَقَطَعَ بِهِ كَثِيرٌ مِنْهُمْ , وَقِيلَ : هُوَ كَتَرْكِ رَكْعَةٍ قِيَاسًا , فَيَتَحَرَّى ، وَيَعْمَلُ بِغَلَبَةِ الظَّنِّ“গ্রন্থকারের বক্তব্য: কারো কোনো একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হওয়া সে রুকন আদৌ পালন না করার মতো , এটাই মাযহাবের অভিমত। মাযহাবের অধিকাংশ আলেম এ মতটি গ্রহণ করেছেন। তাদের অনেকে এ মতটিকে অকাট্য বলেছেন। কারো কারো মতে, এ মাসয়ালাটি কোনো একটি রাকাত ছেড়ে দেয়ার মাসায়ালার সাথে কিয়াসযোগ্য। তাই সে ব্যক্তি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করবে।”
(আল-ইনসাফ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫০)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]বলেন:
وإن شكَّ في تَرْكِ رُكن فكتركه أي : لو شَكَّ هل فَعَلَ الرُّكن أو تَرَكَه ، كان حكمه حكم مَنْ تركه .مثاله : قام إلى الرَّكعة الثانية ؛ فَشَكَّ هل سَجَدَ مرَّتين أم مرَّة واحدة ؟ … .وكان الشَّكُّ في تَرْكِ الرُّكن كالتَّرك ؛ لأن الأصل عدمُ فِعْله ، فإذا شَكَّ هل فَعَلَه ، لكن إذا غلب على ظَنِّه أنه فَعَلَه ؛ فعلى القول الرَّاجح وهو العمل بغلبة الظَّنِّ يكون فاعلاً له حكماً ، ولا يرجع ؛ لأننا ذكرنا إذا شَكَّ في عدد الركعات يبني على غالب ظَنِّهِ ، ولكن عليه سجود السَّهو بعد السلام
“যদি কারো কোনো একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হয় সেটা কোনো রুকন ছেড়ে দেয়ার মতই”। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি সন্দেহ করে যে, সে কি রুকনটি আদায় করেছে নাকি আদায় করেনি তার হুকুম হবে, যে ব্যক্তিটি আদৌ রুকনটি আদায় করেনি সে ব্যক্তির হুকুমের মতো। এর উদাহরণ হচ্ছে- কোনো মুসল্লি দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পর তার সন্দেহ হল সে কি সিজদা দুইটা দিয়েছে নাকি একটা দিয়েছে? কোনো কিছু আদায় না-করার সন্দেহ ঐ কাজটি আদৌ না-করার মতো। কারণ কোনো কিছু না-করা নিয়ে যখন সন্দেহ হয় তখন সে জিনিসের মূল অবস্থা হচ্ছে না-করা। কিন্তু তার যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সে রুকনটি আদায় করেছে তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী সে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে নীতিগতভাবে সে রুকনটি আদায় করেছে ধরা হবে এবং তাকে এ রুকনটি পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, যদি কেউ সালাতের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে তাহলে সে ব্যক্তি তার প্রবল ধারণার উপর নির্ভর করবে। তবে সালাম ফিরানোর পর তাকে সহু সিজদা দিতে হবে।”((ইবনু উসামীন, আশ-শারহুল মুমতি‘,আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩৮৪)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
No comments:
Post a Comment