Monday, May 12, 2025

জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

 প্রশ্ন: জাতীয়তাবাদ (Nationalism) কী? জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

▬▬▬▬▬▬▬▬◆◯◆▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার জন্য। দুরুদ বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। অতঃপর ইংরেজি Nationalism শব্দের বাংলা পরিভাষা হচ্ছে,জাতীয়তাবাদ।(Nationalism) হলো এমন একটি মতবাদ ও চিন্তাধারা, যার মাধ্যমে একটি জাতি তার স্বতন্ত্রতা, ঐক্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সচেতন হয় এবং তা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায় অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে বলা হয়েছে: Nationalism is the desire by a group of people who share the same race, culture, language etc. to form an independent country.” অর্থাৎ ‘জাতীয়তাবাদ হচ্ছে একই ভাষা, সংস্কৃতি, জাতি, গোষ্ঠী ইত্যাদির অংশীদার একদল মানুষের একটি স্বাধীন দেশ গঠনের আকাঙ্ক্ষা’।কার্ল্টন হেইস (Carleton Hayes) বলেন, জাতীয়তার সাংস্কৃতিক ভিত্তি হল, একই ভাষা এবং একই ঐতিহ্য। যখন এগুলো কোন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে আবেগ তাড়িত দেশত্ববোধে পরিণত হয়, তখনই জন্ম নেয় জাতীয়তাবাদ।এই মতবাদের মৌলিক উপাদান ৬টি। (১) বংশ (২) অঞ্চল, (৩) ভাষা, (৪) বর্ণ, (৫) অর্থনৈতিক ঐক্য এবং (৬) শাসনতান্ত্রিক ঐক্য।উক্ত ছয়টি উপাদানের মধ্যে ধর্মকে স্থান দেয়া হয়নি। জাতীয়তাবাদ ধর্মকে নস্যাৎ করার প্রথম কোন বিজাতীয় মতবাদ। একই স্বার্থ ও ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে একটি জাতি বলে। আর ‘জাতি’ ভিত্তিক মতবাদকে ‘জাতীয়তাবাদ’ বলে।(দেখুন: C. J. Hayes, Nationalism : A Religion (New York : Mcmillan, 1960 AD), p. 6.; ড.তাহির আমিন, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ (ঢাকা : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট, জুলাই ২০০৮ খৃ.),পৃষ্ঠা: ৩২ আল ইখলাস)
.
❑ জাতীয়তাবাদের উত্থান ও পতনের সময়কাল:
জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা। গবেষকদের দৃষ্টিতে ফরাসী বিপ্লবের কিছু পূর্বে অর্থাৎ ১৭৮৯ খ্রীস্টাব্দের পূর্বে জাতীয়তাবাদের আবির্ভাব ঘটে। ১৭৮৯ থেকে ১৯১৪ খ্রি. পর্যন্ত এর দ্বিতীয় যুগ। মানবতা বিধ্বংসী এই মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন ইটালির ম্যাকিয়াভেলি (Machiavelli) এবং জার্মানির ফ্যাসিবাদের উদ্যোক্তা রক্ত পিপাসু হিটলার। এদেরকেই আধুনিক জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়।তবে ইংরেজরা জাতীয়তাবাদ বা জাতি সত্তার পথিকৃৎ।(source: bcssolutionbd) ১৮ শতক হল,জাতীয়তাবাদের উত্থানের যুগ। কিন্তু মতবাদটি এর অন্তর্নিহিত অর্থের কারণে ১৯১৪ সালের পর থেকে নেতিবাচক রূপ লাভ করে। গ্লেন্ডা স্লুগা বলেন, ২০শ শতাব্দী হল জাতীয়তাবাদের মোহমুক্তি এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের উন্মেষের সময়।(দেখুন/Glenda Sluga, Internationalism in the Age of Nationalism (University of Pennsylvania Press, 2013) ch 1]
.
❑ জাতীয়তাবাদ এর প্রকারভেদ:
.
জাতীয়তাবাদ (Nationalism) একটি বহুস্তরবিশিষ্ট ধারণা, যা ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তিতে গড়ে উঠতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি রূপ হলো:
(১). ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ: যখন ভাষা একটি জাতির প্রধান পরিচায়ক হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ—বাঙালি জাতীয়তাবাদ, আরব জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি।
.
(২). ভৌগোলিক বা রাষ্ট্রভিত্তিক জাতীয়তাবাদ: যখন নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হয়। যেমন—বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি।
.
(৩). বর্ণভিত্তিক জাতীয়তাবাদ: জাতিগোষ্ঠী বা বর্ণের ওপর ভিত্তি করে গঠিত জাতীয়তাবাদ। যেমন কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদ, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ।
.
(৪). লিঙ্গভিত্তিক জাতীয়তাবাদ: যখন একটি লিঙ্গ বিশেষের অভিজ্ঞতা ও অধিকারকে জাতিসত্তার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন নারীবাদী বা পুরুষবাদী জাতীয়তাবাদ।
.
(৫).জাতিগোষ্ঠী বা নৃতাত্ত্বিক ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ: নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর স্বকীয়তা, সংস্কৃতি ও অধিকারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদ। যেমন কুর্দি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি।
.
❑ ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয়তাবাদ:
.
জাতীয়তাবাদ ও এজাতীয় অন্যান্য মানবসৃষ্ট মতবাদ ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মানব-রচিত কুফরি মতবাদ,এগুলো ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিশ্বাস ও আদর্শের পরিপন্থী। এ দর্শন আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণের (‘আল-হুব্বু ফিল্লাহ ওয়াল-বুগযু ফিল্লাহ’) মত গুরুত্বপূর্ণ আক্বীদার ভিত্তি ভেঙে দেয়। এতে করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের বদলে জাতি, ভূখণ্ড ও ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ, একজন কাফির জাতীয়ভাবে আপন হলেও, ঈমানদার ভিনদেশি মুসলিমের চেয়ে প্রিয় হয়ে ওঠে যা ‘আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’ নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি, বিভাজন ও আকীদাগত দুর্বলতার জন্ম দেয়। তাছাড়া মহান আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির পথনির্দেশক হিসেবে একমাত্র সত্য ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছেন। এটি কোনো মানুষের চিন্তা-নির্ভর নয়; বরং তা খোদ বিশ্বজগতের স্রষ্টার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ চূড়ান্ত জীবনবিধান।সুতরাং ইসলাম ব্যতীত যেসব মতবাদ ও দর্শনের প্রচলন ঘটেছে—যেমন জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র প্রভৃতি—সেগুলো আল্লাহর দেওয়া দ্বীনের বিকল্প হতে পারে না এবং মুসলিমদের জন্য তা গ্রহণযোগ্য নয়। এসব মতবাদ ইসলামি আকিদা ও তাওহিদের পরিপন্থী হওয়ায়, কোনো মুসলিমের জন্য এসব বিশ্বাস করা বা অনুসরণ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়।আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন:”ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه وهو في الآخرة من الخاسرين “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করতে চায়, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”(সূরা আলে ইমরান: ৮৫)এছাড়াও জাতীয়তাবাদ মূলত জাহেলী যুগে প্রচলিত গোত্র ও গোষ্ঠী ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার আধুনিক সংস্করণ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা জাহেলী সভ্যতার দিকে ফিরে যেতে নিষেধ করেছেন (সূরা আল-মায়িদাহ:৫০)। রাসূল (ﷺ) যাবতীয় জাহেলী কর্মকাণ্ডকে কবর দিয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী শাসনের সূচনা করেছেন।(সহীহ মুসলিম, পৃষ্ঠা: ৩৫৫, হা/১২১৮)
.
জাতীয়তাবাদী কবি ফখরী আল-বারুদী বলেছিলেন:
بلادُ العرب أوطاني من الشام لبغـدانِ
ومن نجدٍ إلى يَمَـنٍ إلى مصرَ فتَطوان
فلا حدٌّ يُباعدنــا ولا دينٌ يُفرِّقنــا
لسانُ الضاد يجمعنا بغسّانٍ وعدنــانِ
আরবদের দেশ আমার স্বদেশ
শাম থেকে বাগদাদ পর্যন্ত,
নাজদ থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত,
মিশর থেকে তেতুয়ান পর্যন্ত।
কোনো সীমান্ত আমাদের আলাদা করতে পারে না,
আর কোনো ধর্ম আমাদের বিভক্ত করতে পারে না।”(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৭৭৩২)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:كل ما خرج عن دعوى الإسلام والقرآن من نسب أو بلد أو جنس أو مذهب أو طريقة: فهو من عزاء الجاهلية، بل لما اختصم مهاجري وأنصاري فقال المهاجري: يا للمهاجرين، وقال الأنصاري: يا للأنصار، قال النبي صلى الله عليه وسلم: «أبدعوى الجاهلية وأنا بين أظهركم وغضب لذلك غضبا شديدا» “ইসলাম এবং কুরআনের আহ্বানের বাইরে সকল বংশীয়, দেশ, জাতি, মাজহাব ও তরিকার আহ্বান জাহিলিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। একবার এক মুহাজির এবং এক আনসার সাহাবি বিবাদে লিপ্ত হলে মুহাজির ডাক দিয়ে বললেন, হে মুহাজিররা, তোমরা কে কোথায় আছো, জলদি ছুটে আসো-সাহায্য করো।” তখন আনসারি সাহাবীও ডেকে বললেন, হে আনসাররা, তোমাদের কে কোথায় আছো, জলদি ছুটে আসো-সাহায্য করো” তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,“জাহিলিয়াতের আহ্বান! অথচ আমি এখনো তোমাদের মাঝে বিদ্যমান আছি।” এতে তিনি প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন”।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ৩২৮; বিন বায; ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে আরব জাতীয়তাবাদের সমালোচনা; পৃষ্ঠা: ১৭)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: আপনার দৃষ্টিতে সে জাতীয়তাবাদী দাওয়াত সম্পর্কে কী মত, যারা মনে করে যে বংশগত বা ভাষাগত পরিচয় ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? অর্থাৎ যারা জাতীয়তাকে দ্বীনের ওপর অগ্রাধিকার দেয়?
তিনি উত্তর দিলেন:
هذه دعوة جاهلية ، لا يجوز الانتساب إليها ، ولا تشجيع القائمين بها , بل يجب القضاء عليها ؛ لأن الشريعة الإسلامية جاءت بمحاربتها والتنفير منها , وتفنيد شبههم ومزاعمهم والرد عليها بما يوضح الحقيقة لطالبها ؛ لأن الإسلام وحده هو الذي يخلد العروبة لغة ، وأدباً ، وخلقاً , وأن التنكر لهذا الدين معناه القضاء الحقيقي على العروبة في لغتها ، وأدبها ، وخلقها , ولذلك يجب على الدعاة أن يستميتوا في إبراز الدعوة إلى الإسلام بقدر ما يستميت الاستعمار في إخفائه .
ومن المعلوم من دين الإسلام بالضرورة أن الدعوة إلى القومية العربية أو غيرها من القوميات دعوة باطلة ، وخطأ عظيم ، ومنكر ظاهر ، وجاهلية نكراء ، وكيد للإسلام وأهله , وذلك لوجوه قد أوضحناها في كتاب مستقل سميته : ” نقد القومية العربية على ضوء الإسلام والواقع ” .
“এটি এক প্রকার জাহিলি (অজ্ঞতামূলক) দাওয়াত এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া, সমর্থন জানানো কিংবা উৎসাহ দেওয়া কোনোভাবেই বৈধ নয়; বরং এটি মুছে ফেলা একান্ত জরুরি। কারণ ইসলামী শরিয়ত এসেছে এই ধরনের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষকে তা থেকে দূরে রাখার জন্য, তাদের সন্দেহ ও ভ্রান্ত যুক্তিগুলো খণ্ডন করে এবং সত্যকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করার জন্য যাতে সত্য অনুসরণকারীরা তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। ইসলামই একমাত্র শক্তি যা আরবত্বকে এর ভাষা, সাহিত্য ও নৈতিক মূল্যবোধসহ টিকিয়ে রেখেছে এবং অমর করেছে। ফলে যে কেউ ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করে, সে প্রকৃতপক্ষে আরবত্বেরই বিরোধিতা করছে এর ভাষা, সাহিত্য ও চরিত্রের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছে।এ কারণেই এক একজন দাঈ বা ইসলাম প্রচারকের উচিত, এমন নিষ্ঠা ও আত্মোৎসর্গের সঙ্গে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া, যেমনভাবে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো ইসলামের বিরুদ্ধাচরণে তাদের সামর্থ্য ব্যয় করেছে ও এখনো করে যাচ্ছে। এই বিষয়টি ইসলামের অন্যতম মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত বিষয় যে,আরব জাতীয়তাবাদ কিংবা যেকোনো জাতীয়তাবাদে দাওয়াত দেওয়া একটি বাতিল পথে আহ্বান, ভয়াবহ গোমরাহি, স্পষ্ট গুনাহ ও জঘন্য জাহিলিয়াতের প্রতিফলন। এটি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।এই বিষয়ে আমি একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যার নাম: ‘ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে আরব জাতীয়তাবাদের সমালোচনা’।(ফাতাওয়া ইবনে বায, খণ্ড ৪, পৃ. ১৭৩; বিস্তারিত আলোচনা: খণ্ড ১, পৃ. ২৮০-৩১৮ পর্যন্ত।
.
শাইখ (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন:
إن من أعظم الظلم ، وأسفه السفه , أن يقارن بين الإسلام وبين القومية العربية , وهل للقومية المجردة من الإسلام من المزايا ما تستحق به أن تجعل في صف الإسلام , وأن يقارن بينها وبينه ؟ لا شك أن هذا من أعظم الهضم للإسلام ، والتنكر لمبادئه ، وتعاليمه الرشيدة , وكيف يليق في عقل عاقل أن يقارن بين قومية لو كان أبو جهل , وعتبة بن ربيعة , وشيبة بن ربيعة وأضرابهم من أعداء الإسلام أحياء لكانوا هم صناديدها وأعظم دعاتها , وبين دين كريم صالح لكل زمان ومكان , دعاته وأنصاره هم : محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وأبو بكر الصديق , وعمر ابن الخطاب , وعثمان بن عفان , وعلي بن أبي طالب , وغيرهم من الصحابة ، صناديد الإسلام ، وحماته الأبطال , ومن سلك سبيلهم من الأخيار؟ لا يستسيغ المقارنة بين قومية هذا شأنها , وهؤلاء رجالها ، وبين دين هذا شأنه ، وهؤلاء أنصاره ودعاته , إلا مصاب في عقله , أو مقلد أعمى , أو عدو لدود للإسلام ، ومن جاء به ، وما مثل هؤلاء في هذه المقارنة إلا مثل من قارن بين البعر والدر , أو بين الرسل والشياطين , ومن تأمل هذا المقام من ذوي البصائر , وسبر الحقائق والنتائج : ظهر له أن المقارنة بين القومية والإسلام : أخطر على الإسلام من المقارنة بين ما ذكر آنفا ، ثم كيف تصح المقارنة بين قومية غاية من مات عليها النار , وبين دين غاية من مات عليه الفوز بجوار الرب الكريم , في دار الكرامة والمقام الأمين ؟ .اللهم اهدنا وقومنا سواء السبيل , إنك على كل شيء قدير .
“নিঃসন্দেহে সর্বপ্রকার জুলুমের মধ্যে এটি অন্যতম বড় জুলুম এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের মূর্খতা হলো ইসলামকে আরব জাতীয়তাবাদের সঙ্গে তুলনা করা। একবার ভাবুন, ইসলামবিহীন জাতীয়তাবাদের এমন কী গুণ আছে, যা তাকে ইসলামের সমকক্ষ করে তোলে? (ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদ) এই দুইয়ের মধ্যে কি আদৌ কোনো তুলনার অবকাশ আছে? এটা নিঃসন্দেহে ইসলামের প্রতি চরম অবিচার এবং তার মহান নীতিমালা ও জ্ঞানপূর্ণ শিক্ষার প্রকাশ্য অস্বীকৃতি। কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ কীভাবে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের তুলনা করতে পারে? যখন আমরা দেখি, আবু জাহল, উতবা ও শায়বা ইবনু রাবি’আ এবং ইসলামবিরোধী এবং অন্যান্য কাফের ও ইসলামবিদ্বেষীরা যদি আজ বেঁচে থাকত, তবে তারাই হতো জাতীয়তাবাদের অগ্রগণ্য প্রচারক ও নেতৃত্বদানকারী। অপরদিকে, ইসলামের ধারক ও বাহক ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এবং তাঁর অনুগত সাহাবীগণ আবু বকর সিদ্দীক, উমর ইবনুল খাত্তাব, উসমান ইবনু আফফান, আলী ইবনু আবি তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী সকল সৎকর্মপরায়ণ মানুষ। তাহলে কীভাবে কোনো বিবেকবান ব্যক্তি এমন একটি মতাদর্শ জাতীয়তাবাদের সঙ্গে তুলনা করতে পারে এমন একটি দ্বীনের, যার অনুসারীরা হলেন আল্লাহর প্রদত্ত আলোয় পথ চলা নবী, সাহাবা ও মুত্তাকিগণ? যে ব্যক্তি এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা করে,সে হয় মস্তিষ্কবিকৃত,
অথবা অন্ধ অনুকরণকারী,অথবা ইসলামের দুশমন। এমন এক তুলনার উদাহরণ যা এমন, যেমন কেউ মুক্তার সঙ্গে কংকর তুলনা করে, অথবা নবীদের সঙ্গে শয়তানদের তুলনা করে।সুতরাং যে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন, সে যদি চিন্তা করে ও সত্যের অনুসন্ধান করে, সে এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারবে—ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদ কখনোই তুলনার উপযুক্ত নয়। এটি সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের মধ্যে তুলনা করা, পূর্বোক্ত তুলনার চেয়েও (মুক্তা ও কংকর, রাসূল ও শয়তান) ইসলামের জন্য আরও বিপজ্জনক।তারপর কিভাবে সঠিক হতে পারে এমন একটি তুলনা,যেখানে জাতীয়তাবাদের পরিণতি হলো: যে কেউ এই ধারণা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, তার গন্তব্য জাহান্নাম।আর ইসলামের পরিণতি হলো: যে এতে মৃত্যু বরণ করে, সে পৌঁছে যায় মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্যে, মর্যাদার ঘরে, নিরাপদ আবাসে বা স্থানে। হে আল্লাহ! আমাদের হিদায়াত দাও এবং আমাদেরকে সরল পথে প্রতিষ্ঠিত রাখো, নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশালী।”(ফাতাওয়ে শায়েখ বিন বার খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৩২০-৩২১)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক প্রদত্ত ফাতওয়া দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী, যেখানে তিনি আরব জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামের মধ্যে তুলনা করার বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন। দ্বিতীয় ফাতওয়া তিনি ঐ ব্যক্তির হুকুম বর্ণনা করেছেন,যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের তুলনা করে। তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন এমন ব্যক্তি হয় বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী, অন্ধ অনুকরণকারী, অথবা ইসলামের কঠিন শত্রু। যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের প্রকৃতি জানে না, তার ক্ষেত্রে ওজরের সম্ভাবনা থাকতে পারে এবং সে হয়তো মাফযোগ্য ইনশাআল্লাহ। তবে যে ব্যক্তি ইসলামের প্রকৃতি জানে এবং তবুও বিশ্বাস করে যে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম, ব্যবস্থা বা মতবাদ শ্রেষ্ঠতর তাহলে সে নিঃসন্দেহে কা-ফির, এতে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই। মহান আল্লাহর কাছে দু’আ করছি তিনি যেন আমাদেরকে একমাত্র ইসলামী জীবন আদর্শকে আমাদের ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষানীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লালন এবং বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন এবং সব ধরণের ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা, মানব রচিত মতবাদ ও মতাদর্শ থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহুম্মা আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◆◆▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি ।

No comments:

Post a Comment

Translate