Wednesday, September 3, 2025

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এর কিছু নাসীহাহ

 1: জান্নাতে প্রবেশের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে সহিহ আক্বীদার উপর মৃত্যুবরণ করা।

▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:

كل من اعتقد الاعتقاد الصحيح ، وأدى الواجبات ، وترك المحرمات – يدخل الجنة ، هذا اعتقاد أهل السنة ، فإنهم يجزمون بالنجاة لكل من اتقى الله ، كما نطق به القرآن” ا

“যে সকল ব্যক্তি (নারী-পুরুষ) সহীহ আক্বীদা পোষণ করে,ফরজ কাজগুলো পালন করে এবং হারাম বিষয়গুলো বর্জন করে —সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহর আক্বীদা। কারণ, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে (তাকওয়া অবলম্বন করে), সে নিঃসন্দেহে নাজাতপ্রাপ্ত হবে—যেমনটি কুরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।”(মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাববিয়্যাহ” খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪৯৬)।
.
2: সত্যিকার অর্থে “বুদ্ধিমত্তা” কাকে বলে?
▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

فلا يسمى : “عاقلا” إلا : من عرف الخير فطلبه و الشر فتركه. ولهـذا قــال أصحــاب النــار : “لَو كُنَّا نَسمَعُ أَو نَعقِلُ مَا كُنَّا في أَصحَابِ السَّعِيرِ”

“অতএব,কেবল তাকেই ‘বুদ্ধিমান’ বলা যায় যে কল্যাণকে চিনে তা অনুসন্ধান করে এবং অকল্যাণকে চিনে তা পরিহার করে। এ কারণেই জাহান্নামের অধিবাসীরা বলবে: ‘যদি আমরা শুনতাম বা বুঝতাম, তবে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না।’’(সূরা আল-মুলক: ১০; ইবনু তাইমিয়া; আল ঈমান পৃষ্ঠা: ২২)
.
3: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

المؤمن اذا فعل سيئة فإن عقوبتها تندفع عنه بعشر أسباب هي ”

➊ أن يَتُوبَ فَيَتُوب اللَّهُ عَلَيهِ، فَإنَّ التَائِب مِنَ الذَنبِ كَمَن لا ذَنبَ لَه.

➋ أو يَستَغفِر، فَيُغفَرُ لَهُ.

➌ أو يَعمَل حَسنَاتٍ تَمحُوهَا، فَإنَّ الحَسنَاتِ يُذهِبنَّ السيئَات.

➍ أو يَدعُو لَهُ إخوَانُهُ المُؤمِنُونَ وَيستَغفِرُونَ لَهُ حَيًا ومَيتًا.

➎ أو يُهدُونَ لَهُ مِن ثَوَابِ أعمَالُهُم مَا يَنفَعُهُ اللَّه بِهِ.

❻ أو يَشفَعُ فِيهِ نَبِيِّهِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

❼ أو يَبتَلِيَهِ اللَّهُ تَعَالى فِي الدُّنيَا بِمَصا.ئِب تُكَفِرُ عَنهُ.

❽ أو يَبتَلِيَهُ فِي البَرزَخِ بِالصَعقَةِ فَيُكَفِرُ بِهَا عَنهُ.

❾ أو يَبتَلِيَهُ فِي عَرَصاتِ القِيَامَة مِن أهوَالِهَا بِما يُكَفِرُ عَنهُ.

❿ أو يَرحَمُهُ أرحَمُ الرَاحمِين.

🔹فَمن أخطَأتهُ هَذِهِ العَشرَةِ فَلا يَلُومَنَّ إلا نَفسَه.

“একজন মুমিন যখন কোনো পাপ করে, তখন তার শাস্তি দশটি কারণে তার থেকে দূর হয়ে যায়। তা হলো—
➊ সে তওবা করে, ফলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। কারণ, গুনাহ থেকে তওবাকারী ব্যক্তি গুনাহ না করা ব্যক্তির মত।

➋ অথবা সে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করে, ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।

➌ অথবা সে সৎকর্ম করে, যা তার পাপকে মুছে দেয়। নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ পাপকর্ম দূর করে দেয়।

➍ অথবা তার জন্য ঈমানদার ভাইয়েরা দোআ করে ও তার জন্য জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পর ক্ষমা প্রার্থনা করে।

➎ অথবা তারা তাদের আমলের সওয়াব তার উদ্দেশ্যে পাঠায়, যার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করেন।

❻ অথবা তার জন্য তার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন।

❼ অথবা আল্লাহ তা’আলা তাকে দুনিয়াতে বিপদ-আপদে পরীক্ষা দেন, যা তার পাপ মোচন করে।

❽ অথবা আল্লাহ তাকে কবরের জগত (বরযাখ)-এ কঠিন ধাক্কা দিয়ে পরীক্ষা নেন, ফলে তা দ্বারা তার গুনাহ মোচন হয়।

❾ অথবা কিয়ামতের ময়দানের ভয়াবহ অবস্থাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে পরীক্ষা দেন, যার দ্বারা তার পাপ মোচিত হয়।

❿ অথবা সর্বাধিক দয়ালু আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন।

🔹 অতএব, যে ব্যক্তি এই দশটি মাধ্যম থেকেও রক্ষা পায়নি, সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।” (ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
4: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

‏”وكثير من المنتسبين إلى العلم يبتلى بالكبر، كما يبتلى كثير من أهل العبادة بالشرك؛ ولهذا فإن آفة العلم الكبر، وآفة العبادة الرياء؛ وهؤلاء يحرمون حقيقة العلم”.

“অধিকাংশ জ্ঞানী ব্যক্তিরা অহংকারে আক্রান্ত যেমনভাবে অধিকাংশ আবেদ (ইবাদতকারীরা) শিরকে আক্রান্ত। তাই জ্ঞানের বিপদ হলো অহংকার আর ইবাদতের বিপদ হলো রিয়া (লৌকিকতা)। এই ব্যক্তিরাই প্রকৃত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত (আর রদ্দু আলাশ শাযিলী পৃষ্ঠা: ২০৭)

5: শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

فَبَيَّنَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ الْحِرْصَ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ فِي فَسَادِ الدِّينِ لَا يَنْقُصُ عَنْ فَسَادِ الذِّئْبَيْنِ الْجَائِعَيْنِ لِزَرِيبَةِ الْغَنَمِ وَذَلِكَ بَيِّنٌ ؛ فَإِنَّ الدِّينَ السَّلِيمَ لَا يَكُونُ فِيهِ هَذَا الْحِرْصُ وَذَلِكَ أَنَّ الْقَلْبَ إذَا ذَاقَ حَلَاوَةَ عُبُودِيَّتِهِ لِلَّهِ وَمَحَبَّتِهِ لَهُ لَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَحَبَّ إلَيْهِ مِنْ ذَلِكَ حَتَّى يُقَدِّمَهُ عَلَيْهِ وَبِذَلِكَ يُصْرَفُ عَنْ أَهْلِ الْإِخْلَاصِ لِلَّهِ السُّوءُ وَالْفَحْشَاءُ ”

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সম্পদ ও খ্যাতির লোভ ধর্মের জন্য ঠিক ততটাই বিধ্বংসী,যতটা দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে যদি কোনো নিরীহ ভেড়ার পালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। এটি স্পষ্ট, কারণ খাঁটি ও বিশুদ্ধ ধর্মে এই ধরনের লালসার স্থান নেই। যখন কোনো হৃদয় আল্লাহর দাসত্ব ও ভালোবাসার প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করে, তখন সেটিই তার জন্য সর্বাধিক প্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি সে এটিকে দুনিয়ার সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। আর এ কারণেই আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের জীবন থেকে পাপ ও অশ্লীলতা দূর হয়ে যায়।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ২১৫) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

6: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] মহান আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাঁর ‘আরশের উপর উঠার বিষয়টিতে ইজমা’ বর্ণনা করে বলেন,

قد أثبت بالفطرة التي اتفق عليها أهل الفطر السليمة وبالنقول المتواترة عن المرسلين من الأخبار وما نطقت به كتب الله تعالى وما اتفق عليه المؤمنون بالرسل قبل حدوث البدع أن الله تعالى عز وجل فوق العالم وثبت أيضا بالكتاب والسنة والإجماع أنه استوى على العرش فالعلو على العالم معروف بالفطرة والمعقول وبالشرعة والمنقول

“(নিশ্চয়ই মানুষের) সুস্থ ও নির্ভুল স্বভাবসম্পন্ন প্রকৃতি (ফিতরাহ) দ্বারা, নবী-রাসূলগণ থেকে মুতাওয়াতির (সন্দেহাতীত ধারাবাহিক) সূত্রে বর্ণিত হাদিস দ্বারা,যা আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। যা রাসূলগণের ওপর ঈমান আনয়নকারী ঈমানদারগণ বিদ’আতের উৎপত্তি হওয়ার পূর্বে সর্বসম্মত ঐক্যমতের দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে যে,নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা জগতের উপরে। তদুপরি,কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা’ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা ‘আরশের উপর উঠেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা জগতের উপরে থাকার বিষয়টি (মানুষের) ফিত্বরাত, যুক্তি, শরী’আত ও কুরআন ও সুন্নাহ’র ভাষ্য দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত।” (ইবনু তাইমিয়া; বায়ানু তালবীসুল জাহমিয়্যাহ ফী তা’সীসিল বিদা’য়িহিমিল কালামিয়্যাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৫৪)।

7: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

” اعْلَمْ أَنَّ كُلَّ مَنْ أَحَبَّ شَيْئًا لِغَيْرِ اللَّهِ ، فَلَا بُدَّ أَنْ يَضُرَّهُ مَحْبُوبُهُ؛ وَيَكُونَ ذَلِكَ سَبَبًا لِعَذَابِهِ؛ وَلِهَذَا كَانَ الَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ ، وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ؛ يُمَثَّلُ لِأَحَدِهِمْ كَنْزُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتِهِ. يَقُولُ: أَنَا كَنْزُكَ. أَنَا مَالُك. وَكَذَلِكَ نَظَائِرُ هَذَا فِي الْحَدِيثِ: يَقُولُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: (يَا ابْنَ آدَمَ؛ أَلَيْسَ عَدْلًا مِنِّي أَنْ أُوَلِّيَ كُلَّ رَجُلٍ مِنْكُمْ مَا كَانَ يَتَوَلَّاهُ فِي الدُّنْيَا؟) .وَأَصْلُ التَّوَلِّي الْحُبُّ؛ فَكُلُّ مَنْ أَحَبَّ شَيْئًا دُونَ اللَّهِ : وَلَّاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَا تَوَلَّاهُ، وَأَصْلَاهُ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا.
فَمَنْ أَحَبَّ شَيْئًا لِغَيْرِ اللَّهِ فَالضَّرَرُ حَاصِلٌ لَهُ إنْ وُجِدَ، أَوْ فُقِدَ ؛ فَإِنْ فُقِدَ عُذِّبَ بِالْفِرَاقِ وَتَأَلَّمَ، وَإِنْ وُجِدَ فَإِنَّهُ يَحْصُلُ لَهُ مِنْ الْأَلَمِ أَكْثَرُ مِمَّا يَحْصُلُ لَهُ مِنْ اللَّذَّةِ، وَهَذَا أَمْرٌ مَعْلُومٌ بِالِاعْتِبَارِ وَالِاسْتِقْرَاءِ.وَكُلُّ مَنْ أَحَبَّ شَيْئًا دُونَ اللَّهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَإِنَّ مَضَرَّتَهُ أَكْثَرُ مِنْ مَنْفَعَتِهِ ؛ فَصَارَتْ الْمَخْلُوقَاتُ وَبَالًا عَلَيْهِ ، إلَّا مَا كَانَ لِلَّهِ ، وَفِي اللَّهِ؛ فَإِنَّهُ كَمَالٌ وَجَمَالٌ لِلْعَبْدِ ” .

“জেনে রাখো, যে কেউ আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছু ভালোবাসে, সে অনিবার্যভাবে সেই ভালোবাসার বস্তু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শেষ পর্যন্ত সেটিই তার শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।এ কারণেই যারা সোনা ও রূপা জমা করে কিন্তু তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, কিয়ামতের দিন তাদের এই সম্পদ বিষাক্ত সাপের রূপ নেবে, যা তাদের গলায় পেঁচিয়ে ধরা হবে। সেই সাপ তাদের বলবে: ‘আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার ধনভাণ্ডার।’এ ধরনের আরও অনেক উদাহরণ হাদিসে পাওয়া যায়। যেমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন:‘হে আদম সন্তান! এটা কি ন্যায়সঙ্গত নয় যে, আমি প্রত্যেককে সেই বস্তুর হাতে ছেড়ে দেব, যা সে দুনিয়াতে আপন করে নিয়েছিল?’ভালোবাসাই হলো বন্ধুত্বের মূল। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে ভালোবাসে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সেই জিনিসের হাতে ছেড়ে দেবেন এবং সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর জাহান্নাম কতই না ভয়ংকর আবাসস্থল! যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি আসক্ত হয়, তা যদি সে হারায়, তবে বিচ্ছেদের কারণে কষ্ট পায়; আর যদি তা লাভ করে, তবে তাতে যে দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগ আসে, তা তার আনন্দের চেয়েও বেশি হয়। এটি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সুতরাং, যে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে নিছক দুনিয়ার স্বার্থে ভালোবাসে, সে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দুনিয়ার সব কিছুই তার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—শুধুমাত্র সেই ভালোবাসা ছাড়া, যা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়। কারণ, আল্লাহর জন্য ভালোবাসাই মানুষের জন্য প্রকৃত সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতার কারণ।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ; মাজমুউ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৮)
.
8: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

الْمَطْلُوبُ مِنْ الْقُرْآنِ هُوَ فَهْمُ مَعَانِيهِ، وَالْعَمَلُ بِهِ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ هَذِهِ هِمَّةَ حَافِظِهِ لَمْ يَكُنْ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ وَالدِّينِ

“কুরআন তেলাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য হল- কুরআনের অর্থ অনুধাবন করা এবং তদনুযায়ী আমল করা।কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তির যদি এই উদ্দেশ্য না থাকে,তাহলে সে আলেম ও দ্বীনদারের অন্তর্ভুক্ত হবে না।”(ইবনু তায়মিয়াহ; আল-ফাতাওয়াল কুবরা; খণ্ড: ২; পৃষ্টা: ১৩৫)
.
9: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

النتيجة. فمن قدّم عقله على الكتاب والسنة، غرق في بحور الأهواء والبدع ومن تعود معارضة الشرع بالعقل، لايستقر بقلبه إيمان.

“যে ব্যক্তি কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর বিপরীতে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে প্রাধান্য দিবে, সে অচিরেই প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিদআতের গভীর সাগরে ডুবে যাবে। আর যে ব্যক্তি শরীয়তের বিধি-নিষেধকে সর্বদা নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করার অভ্যাস গড়ে তুলবে, তার অন্তরে ঈমান স্থীরতা লাভ করবে না”(ইবনু তাইমিয়া; দারউ তা’আরুযিল আক্বলী ওয়ান নাক্বল; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৮৭)
.
10: শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

فكل خير فيه المسلمون إلى يوم القيامة من الإيمان والإسلام والقرآن والعلم والمعارف والعبادات ودخول الجنة والنجاة من النار فإنما هو ببركة ما فعله الصحابة الذين بلغوا الدين

“ঈমান, ইসলাম, কুরআন, জ্ঞান, স্বাক্ষরতা, ইবাদতসমূহ, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম হতে মুক্তি ইত্যাদি যত কল্যাণ মুসলিমরা ক্বিয়ামত অবধি লাভ করবে, তা মূলত সাহাবায়ে কেরামের কর্মের বরকতেই লাভ করবে, যারা দ্বীনকে প্রচার করে গেছেন”।(ইবনু তাইমিয়াহ; মিনহাজুস সুন্নাতিন নবুবিয়্যাহ; ৬ষ্ঠ খণ্ড; পৃ. ২৫৩)
.
ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

وعلماء السلف من السابقين ومن بعدهم من التابعين أهل الخير والأثر وأهل الفقه والنظر لا يذكرون إلا بالجميل ومن ذكرهم بسوء فهو على غير السبيل

“পূর্ববর্তী আলেমগণ তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈগণ এবং তাদের পরে যারা হাদীস বিশারদ ও ফক্বীহ ছিলেন- তাদেরকে সম্মানের সাথে উল্লেখ করতে হবে। যে ব্যক্তি তাদের সমালোচনা করে তাদেরকে মন্দভাবে উপস্থাপন করে, সে মূলত পথভ্রষ্ট”।(আবূ জা‘ফর আত-ত্বাহাবী, আল-‘আক্বীদাতুত ত্বাহাবী, পৃ. ৫৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

11: নেককার স্ত্রী:আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ:

.হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:

إن المرأة الصالحة تكون في صحبة زوجها الرجل الصالح سنين كثيرة ، وهي متاعه التي قال فيها النبي – صلىٰ الله عليه وسلم : ” « الدنيا متاع ، وخير متاعها المرأة المؤمنة ، إن نظرت إليها أعجبتك ، وإن أمرتها أطاعتك ، وإن غبت عنها حفظتك في نفسها ومالك » ” ، وهي التي أمر بها النبي – صلى الله عليه وسلم – في قوله لما سأله المهاجرون : ” « أي المال خير فنتخذه ؟ فقال : أفضله : لسان ذاكر وقلب شاكر وامرأة صالحة تعين أحدكم على إيمانه » ” ، رواه الترمذي من حديث سالم بن أبي الجعد عن ثوبان .ويكون بينهما من المودة والرحمة ما امتن الله به في كتابه بقوله : { ومن آياته أن خلق لكم من أنفسكم أزواجا لتسكنوا إليها وجعل بينكم مودة ورحمة } [الروم: ٢١ ] ، فيكون ألم الفراق أشد عليهما من الموت أحيانا ، وأشد من ذهاب المال ، وأشد من فراق الأوطان ، خصوصا إن كان بقلب كل واحد منهما حب وعلاقة من صاحبه ، أو كان بينهما أطفال يضيعون بالفراق ويفسد حالهم، ثم يفضي ذلك إلىٰ القطيعة بين أقاربهما ، ووقوع الشر لما زالت نعمة المصاهرة التي امتن الله بها في قوله : { فجعله نسبا وصهرا } [الفرقان: ٥٤] ، ومعلوم أن هذا من الحرج الداخل في عموم قوله تعالى : { وما جعل عليكم في الدين من حرج } [الحج: ٧٨] ، ومن العسر المنفي بقوله : { يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر } [البقرة: ١٨٥] .

“একজন নেককার স্ত্রী তার সৎ ও ন্যায়পরায়ণ স্বামীর সঙ্গী হয়ে দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি তার স্বামীর জন্য দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ,যার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:”দুনিয়া মূলত ভোগ-বিলাসের স্থান, আর এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো এক নেককার স্ত্রী যে তোমার প্রতি দৃষ্টি দিলে তুমি আনন্দিত হবে, তুমি যখন তাকে কোনো নির্দেশ দেবে, সে তা মান্য করবে, আর যখন তুমি অনুপস্থিত থাকবে, তখন সে নিজের সতীত্ব ও তোমার সম্পদের হেফাজত করবে।” (সহিহ মুসলিম হা/১৪৬৭) এমন স্ত্রীকেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশংসিত করেছেন। একদা মুহাজিরগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সর্বোত্তম সম্পদ কোনটি, যা আমরা অর্জন করতে পারি?” তিনি উত্তর দিলেন:”সর্বোত্তম সম্পদ হলো— আল্লাহকে স্মরণকারী জিহ্বা, কৃতজ্ঞচিত্ত হৃদয় এবং এমন এক নেককার স্ত্রী, যে স্বামীকে দ্বীনদারির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে।” (তিরমিজি হা/৩০৯৪;সাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক শুধু পার্থিব নয়, বরং এটি আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ, যেখানে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া বিরাজ করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:”তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনসমূহের একটি হলো তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”(সূরা রূম: ২১) এই ভালোবাসা এতটাই গভীর যে, কখনো কখনো বিচ্ছেদ মৃত্যুর চেয়েও কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। এমনকি ধন-সম্পদ হারানোর বেদনাও তখন তুচ্ছ মনে হয়, জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার কষ্টও ম্লান হয়ে যায়। বিশেষত, যখন স্বামী-স্ত্রীর হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা ও আবেগ থাকে, অথবা তাদের সন্তান থাকে, যাদের এই বিচ্ছেদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়। এর ফলে ধীরে ধীরে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়,শত্রুতা দানা বাঁধে এবং সম্পর্কের মধ্যে অকল্যাণের বীজ বপন হয়। এতে সেই আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়, যা আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আল্লাহ বলেন:”তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য রক্তসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।”(সূরা ফুরকান: ৫৪) এটি সেই কষ্টের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তাঁর দ্বীনের মাধ্যমে দূর করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন:”তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনে কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি।”(সূরা হাজ্জ: ৭৮) এবং এটি সেই কষ্টের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ অপসারণ করতে চান। তিনি বলেন:”আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান এবং তিনি তোমাদের জন্য কষ্ট চান না।”(সূরা বাকারা: ১৮৫; আল-ক্বওয়ায়িদুন নাওরনিয়্যাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৬০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

12: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

إنَّ الوالد إن دعا على ابنه ظلماً أثم وكان ذلك كفارة للابن المظلوم ويؤجر على صبره .

“যদি কোনো বাবা তার সন্তানকে অন্যায়ভাবে বদদোয়া দেয়,তাহলে তিনি পাপী হবেন আর (এ বদদোয়া সেই নিরপরাধ) সন্তানের জন্য গুনাহ মোচনের মাধ্যম (কাফফারা) হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যদি সেই সন্তান ধৈর্যধারণ করে, তবে সে এর বিনিময়ে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) পুরস্কৃত হবে”।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ২১)
.
13: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

والإنسان ليس له أن يتكلم بلا علم لا في النفي ، ولا في الإثبات ولو سكت من لا يدري ، قلَّ الخلاف

“মানুষের জন্য জ্ঞান ছাড়া (দ্বীনি) কোনো বিষয়ে কথা বলা বৈধ নয়,তা হোক শারঈ বিধান অস্বীকারে বা প্রমাণে। অজ্ঞ ব্যক্তি যদি নীরব থাকে,তাহলে মতবিরোধ অনেক কমে যাবে”।(জামিউল মাসায়িল,ইবনু তাইমিয়া; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৮৯)
.
14: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

“لا شيء أحب إلى الله من التوحيد ولا شيء أبغض إليه من الشرك، وكثرة الذنوب مع صحة التوحيد خير من قلة الذنوب مع فساد التوحيد”.

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হল তাওহিদ (একত্ববাদ) এবং সবচেয়ে ঘৃণ্য হল শির্ক (অংশীদার স্থাপন)।তাওহিদের শুদ্ধতার সঙ্গে বেশি পাপ করা, তাওহিদ বিনষ্ট হওয়ার সঙ্গে কম পাপ করার চেয়ে উত্তম।”(আল-ইস্তিকামাহ: ৩৬৪)
..
15: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

مريم احتاجت إلى من يڪفلها،فڪيف بغيرها من النساء؟وهذا أمر معروفٌ بالتجربة، أن المرأة تحتاج من الحفظ والصيانة ما لا يحتاج إليه الصبي،وڪل ما كان أستر لها وأصون ڪان أصلح لها

“মরিয়ম আলাইহাস সালামও একজন অভিভাবকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, তাহলে অন্যান্য নারীদের জন্য এ প্রয়োজন কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীরা এমন সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার প্রয়োজন বোধ করেন, যা শিশুদের ক্ষেত্রেও এতটা প্রয়োজন হয় না এবং যে বিষয়টি তাদের সবচেয়ে বেশি আড়াল ও সুরক্ষায় রাখে,সেটিই তাদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর।”(জামিউল মাসায়িল, ইবনু তাইমিয়া; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪১৭)
.
16: ইত্বান ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একটি সুদীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ানোর উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘মালেক ইবনে দুখ্‌শুম কোথায়!’’ একজন লোক বলে উঠল, ‘সে তো একজন মুনাফিক; আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘ও কথা বলো না। তুমি কি মনে কর না যে, সে (কালিমাহ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে এবং সে তার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়? যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে (কালিমাহ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম ক‘রে দেন।’’ (সহীহুল বুখারী ৭৭, ১৮৯, ৪২৪, ৪২৫, ৬৬৭, ৬৮৬, ৮৩৮, ৮৪০, ১১৮৬, ৪০১০, ৫৪০১, ৬৩৫৪, ৬৪২২, ৬৯৩৮)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

“لا شيء أحب إلى الله من التوحيد ولا شيء أبغض إليه من الشرك، وكثرة الذنوب مع صحة التوحيد خير من قلة الذنوب مع فساد التوحيد”.

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হল তাওহিদ (একত্ববাদ) এবং সবচেয়ে ঘৃণ্য হল শির্ক (অংশীদার স্থাপন)। তাওহিদ বিনষ্ট হওয়ার সঙ্গে কম পাপ করার চেয়ে, তাওহিদ শুদ্ধতার সঙ্গে বেশি পাপ করা উত্তম।”(অর্থাৎ তাওহিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ) (আল-ইস্তিকামাহ: ৩৬৪)
.
17: শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

إنّنَا في زَمنٍ تَمُوجُ فِيه الفِتَن، وتَتَلاحَقُ فِيه النَوازِل والمِحَن،
وعامَّة الفِتَنِ سبَبُها أمرَان: قلّة العِلم، وضَعفُ الصَّبر.

“আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি, যেখানে ফিতনার ঢেউ প্রবলভাবে আঘাত হানছে, নতুন নতুন বিপর্যয় একের পর এক উদ্ভূত হচ্ছে। এসব ফিতনার মূল কারন দুটি: (১). যথাযথ (ইলম) জ্ঞানের অভাব। (২). ধৈর্যের ঘাটতি বা দুর্বলতা।”(মুসতাদরাক আলা
মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১২৭)
.
18: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন: فإن التوكل على الله واجب من أعظم الواجبات كما أن الإخلاص لله واجب وقد أمر الله بالتوكل في غير آية أعظم مما أمر بالوضوء وغسل الجنابة، ونهى عن التوكل على غيره سبحانه- “আল্লাহর উপর ভরসা করা ফরয। এটি উচ্চ পর্যায়ের ফরয সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহর জন্য ইখলাস বা বিশুদ্ধচিত্তে কাজ করা ফরয। অযূ ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতার অর্জনের জন্য গোসলের ব্যাপারে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা একটি আয়াতে একবার বলে তা ফরয সাব্যস্ত করেছেন,সেখানে একাধিক আয়াতে তিনি তাঁর উপর ভরসা করার আদেশ দিয়েছেন এবং তাঁকে ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করতে নিষেধ করেছেন”।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬)

19: শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) তার বিরোধিতা কারীদের তিন বছর সময় দিয়েছিলেন।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

” … مَعَ أَنِّي فِي عُمْرِي إلَى سَاعَتِي هَذِهِ لَمْ أَدْعُ أَحَدًا قَطُّ فِي أُصُولِ الدِّينِ إلَى مَذْهَبٍ حَنْبَلِيٍّ وَغَيْرِ حَنْبَلِيٍّ ، وَلَا انْتَصَرْت لِذَلِكَ ، وَلَا أَذْكُرُهُ فِي كَلَامِي ، وَلَا أَذْكُرُ إلَّا مَا اتَّفَقَ عَلَيْهِ سَلَفُ الْأُمَّةِ وَأَئِمَّتُهَا، وَقَدْ قُلْت لَهُمْ غَيْرَ مَرَّةٍ : أَنَا أُمْهِلُ مَنْ يُخَالِفُنِي ثَلَاثَ سِنِينَ إنْ جَاءَ بِحَرْفِ وَاحِدٍ عَنْ أَحَدٍ مِنْ أَئِمَّةِ الْقُرُونِ الثَّلَاثَةِ يُخَالِفُ مَا قُلْته فَأَنَا أُقِرُّ بِذَلِكَ ، وَأَمَّا مَا أَذْكُرُهُ فَأَذْكُرُهُ عَنْ أَئِمَّةِ الْقُرُونِ الثَّلَاثَةِ بِأَلْفَاظِهِمْ وَبِأَلْفَاظِ مِنْ نَقْلِ إجْمَاعِهِمْ مِنْ عَامَّةِ الطَّوَائِفِ ، هَذَا مَعَ أَنِّي دَائِمًا وَمَنْ جَالَسَنِي يَعْلَمُ ذَلِكَ مِنِّي : أَنِّي مِنْ أَعْظَمِ النَّاسِ نَهْيًا عَنْ أَنْ يُنْسَبَ مُعَيَّنٌ إلَى تَكْفِيرٍ وَتَفْسِيقٍ وَمَعْصِيَةٍ ، إلَّا إذَا عُلِمَ أَنَّهُ قَدْ قَامَتْ عَلَيْهِ الْحُجَّةُ الرسالية الَّتِي مَنْ خَالَفَهَا كَانَ كَافِرًا تَارَةً وَفَاسِقًا أُخْرَى وَعَاصِيًا أُخْرَى وَإِنِّي أُقَرِّرُ أَنَّ اللَّهَ قَدْ غَفَرَ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ خَطَأَهَا: وَذَلِكَ يَعُمُّ الْخَطَأَ فِي الْمَسَائِلِ الْخَبَرِيَّةِ الْقَوْلِيَّةِ وَالْمَسَائِلِ الْعَمَلِيَّةِ ، وَمَا زَالَ السَّلَفُ يَتَنَازَعُونَ فِي كَثِيرٍ مِنْ هَذِهِ الْمَسَائِلِ وَلَمْ يَشْهَدْ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَلَى أَحَدٍ لَا بِكُفْرِ وَلَا بِفِسْقِ وَلَا مَعْصِيَةٍ

আমার জীবনের এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমি কখনো ইসলামের মৌলিক (আক্বিদাহ) বিষয়ে হাম্বলী মাযহাব বা অন্য কোন মাযহাবের দিকে কাউকে দাওয়াত দিইনি। আমি কখনো এর সমর্থনও করি না। এমনকি কখনো আমি আমার কোন আলোচনাতে তা উল্লেখও করিনি। কেবলমাত্র আমি ততটুকুই উল্লেখ করি, সালফে-সালেহীনগন যার উপর একমত হয়েছেন। আমি তাদেরকে বারংবার বলে থাকি: যারা আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাদের আমি তিন বছর সময় দিচ্ছি; যদি তারা তিন শতাব্দীর কোনো ইমামের একটি কথাও নিয়ে আসে– যা আমার কথার বিপরীত, তবে আমি তা মেনে নিবো।আমি যা বলি বা উল্লেখ করি, তা মূলত তিন শতাব্দীর ইমামগণের কথার সাথে মিল রেখেই করে থাকি। পাশাপাশি সর্বসাধারণ মানুষদের অভিন্ন কথার সাথে মিল রেখে। আমি সর্বদাই এমনটি করে থাকি। আমার সাথে উঠা-বসা করা ব্যক্তি জানে যে, আমি নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তিকে কাফের, ফাসেক বা পাপী বলা নিষেধের ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে কত বেশি সতর্কতা অবলম্বন করি। তবে যদি জানা যায় যে, সে ব্যক্তির উপর সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণাদি রয়েছে; যার সে বিপরীত করে, তবে সে কখনো কাফের, কখনো ফাসেক। আবার কখনো পাপী। তবে আমি এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস ও স্বীকৃতি দিই যে, আল্লাহ তা‘আলা এই উম্মতের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিবেন।এই ভুলটি কথা এবং কাজ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (এই ভুলটি গায়েব (অদৃশ্যে)-এর মাসআলা-মাসায়েলের অন্তর্ভূক্ত। যেমন, জান্নাত-জাহান্নাম, সিরাত, হাশর-নাশর, কবরের শাস্তি ইত্যাদি। আবার আমল সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েলরও অন্তর্ভুক্ত। যেমন, হালাল-হারাম) সর্বকালে এই ধরনের অনেক মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে সালাফগণের মত মতবিরোধপূর্ণ হয়েছে। অথচ তাদের কেউ কাউকে কাফের, ফাসেক কিংবা পাপী বলে আখ্যায়িত করেননি।(মাজমু’ল ফাতওয়া; খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২২৯)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

20: শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

‌الحسد ‌مرض ‌من ‌أمراض النفس وهو مرض غالب فلا يخلص منه إلا قليل من الناس ولهذا يقال: ما خلا جسد من حسد لكن اللئيم يبديه والكريم يخفيه،

“হিংসা অন্তরের অন্যতম ব্যাধি। অধিকাংশ ব্যক্তির মধ্যে এই রোগ বিদ্যমান। খুব কম সংখ্যক মানুষ ছাড়া এ রোগ থেকে কেউ মুক্তি পায় না। এজন্যই বলা হয়, হাসাদ মুক্ত কোন জাসাদ নেই (অর্থাৎ কোন শরীরই হিংসা মুক্ত নয়)। (পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে,) নিকৃষ্ট শ্রেণীর লোক সেই হিংসা প্রকাশ করে, আর সম্মানিত ব্যক্তি সেটা গোপন করে রাখে”।(মাজমূ‘উল ফাতাওয়া; খন্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ১২৪)

21: ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
إنما ‌يرفع ‌الله ‌الشخص بقدر تمسكه بسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم،
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতকে যে ব্যক্তি যতটুকু আঁকড়ে ধরবে, আল্লাহ তার মর্যাদা ততটুকু বৃদ্ধি করবেন”।(মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদে‘ঈ, তুহফাতুল মুজীব, পৃষ্ঠা. ৩৬৮)

22: শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
الْقِرَاءَةُ الْقَلِيلَةُ بِتَفَكُّرٍ أَفْضَلُ مِنْ الْكَثِيرَةِ بِلَا تَفَكُّرٍ،

“না বুঝে অনেক বেশী কুরআন তেলাওয়াত করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনা করে অল্প তেলাওয়াত করা অতি উত্তম” (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা, খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৩৩৪)

23: প্রখ্যাত সাহাবী মিকদাদ বিন আসওয়াদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, আল্লাহর কসম, আমি অবশ্যই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ، إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنِ، إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنُ، وَلَمَنْ ابْتُلِيَ فَصَبَرَ فَوَاهًا “

নিশ্চয় যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে দূরে থাকবে, সে-ই সৌভাগ্যবান; নিশ্চয় যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে দূরে থাকবে, সে-ই সৌভাগ্যবান; নিশ্চয় যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে দূরে থাকবে, সে-ই সৌভাগ্যবান। আর যে ব্যক্তি ফিতনায় পড়ে ধৈর্যধারণ করবে, তার জন্য কতই না মঙ্গল!” (আবু দাউদ, হা/৪২৬৩)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

“ولا تقع فتنة إلا من ترك ما أمر الله به؛ فإنه سبحانه أمر بالحق وأمر بالصبر؛ فالفتنة إما من ترك الحق، وإما من ترك الصبر”.

“কেবলমাত্র আল্লাহর নির্দেশ পরিত্যাগ করার দরুন ফিতনা সংঘটিত হয়। কেননা আল্লাহ হকের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ধৈর্যেরও নির্দেশ দিয়েছেন। ফিতনা আসে হয় হক পরিত্যাগের জন্য,আর নয়তো ধৈর্য পরিত্যাগের জন্য।” (আল-ইস্তিকামাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৯) আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

24: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

وليس ‌على ‌المرأة ‌بعد ‌حق ‌الله ‌ورسوله أوجب من حق الزوج، ‘

“নারীর জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অধিকারের পর স্বামীর চেয়ে অপরিহার্য অধিকার আর কারো নেই”। (ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩২; পৃষ্ঠা: ২৭৫)

25: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

,مَا كَسَرَ اللهُ عَبْدَهُ الْمُؤْمِنَ إِلَّا لِيَجْبُرَهُ، ‌وَلَا ‌مَنَعَهُ ‌إِلَّا ‌لِيُعْطِيَهُ، وَلَا ابْتَلَاهُ إِلَّا لِيُعَافِيَهُ، وَلَا أَمَاتَهُ إِلَّا لِيُحْيِيَهُ، وَلَا نَغَّصَ عَلَيْهِ الدُّنْيَا إِلَّا لِيُرَغِّبَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَلَا ابْتَلَاهُ بِجَفَاءِ النَّاسِ إِلَّا لِيَرُدَّهُ إِلَيْهِ-

“আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাকে সাহায্য করার জন্যই মূলতঃ তাকে বিপদে ফেলেন। তাকে বিশেষ কিছু দান করার জন্যই সাধারণ কিছু দেওয়া থেকে বিরত রাখেন। সুস্থতা দানের জন্য তাকে (শারীরিক রোগ-ব্যাধি দিয়ে) পরীক্ষা করে থাকেন। পরকালে নতুন জীবন দান করার জন্য পার্থিব মৃত্যু দান করেন। তাকে আখেরাতের প্রতি আগ্রহী করার জন্য দুনিয়াকে তার জন্য কঠিন করে দেন। নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষের দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে কষ্ট দেন”(ইবনুল মাওসিলী, মুখতাসার আস-সাওয়া‘ইকুল মুরসালাহ, পৃষ্ঠা: ৩০৬)

26: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

وَدِينُ الإِسْلامِ مَبْنِيٌّ عَلَى أَصْلَيْنِ , عَلَى أَنْ لا نَعْبُدَ إلاّ اللَّهَ , وَأَنْ نَعْبُدَهُ بِمَا شَرَعَ , لا نَعْبُدُهُ بِالْبِدَعِ . قَالَ تَعَالَى : فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلا صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا . فَالْعَمَلُ الصَّالِحُ مَا أَحَبَّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ , وَهُوَ الْمَشْرُوعُ الْمَسْنُونُ , وَلِهَذَا كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ – رضي الله عنه – يَقُولُ فِي دُعَائِهِ , اللَّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِي كُلَّهُ صَالِحًا وَاجْعَلْهُ لِوَجْهِك خَالِصًا , وَلا تَجْعَلْ لأَحَدٍ فِيهِ شَيْئًا

দ্বীন ইসলাম মূলতঃ দুইটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এক: আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না। দুই: আমরা আল্লাহর বিধান মোতাবেক তাঁর ইবাদত করব; বিদআত মোতাবেক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব, যে ব্যক্তি তার রবের (প্রতিপালকের) সাক্ষাত কামনা করে, সে যেনআমলে সালেহ করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ১১০]

আমলে সালেহ হচ্ছে- যে আমল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালবাসেন, পছন্দ করেন; সেটাই শরিয়ত ও সুন্নাহ। তাইতো উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) তাঁর দুআতে বলতেন: “হে আল্লাহ, আমার সকল আমল যেন সালেহ (সুন্নাহ মোতাবেক) হয়, আপনার জন্য খালেস (একনিষ্ঠ) হয় এবং এতে যেন অন্য কারো অংশ না থাকে।[ বিস্তারিত জানতে দেখুন ইবনে তাইমিয়ার আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫] আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
.
27: কুরআন সবকিছুর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ
.
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَ لَا یَاۡتُوۡنَکَ بِمَثَلٍ اِلَّا جِئۡنٰکَ بِالۡحَقِّ وَ اَحۡسَنَ تَفۡسِیۡرًا
“তারা (কা-ফে-ররা) আপনার (মুহাম্মদ ﷺ-এর ) কাছে যে উপমা (সংশয়) পেশ করুক না কেন আমি আপনাকে (সেটা প্রতিহত করার জন্য) সত্য দিয়েছি এবং (ওটার চেয়ে) উত্তমতর ব্যাখ্যা দিয়েছি।”[সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ৩৩]

উক্ত আয়াতের আলোকে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

” أخبر سبحانه أن الكفار لا يأتونه بقياس عقلي لباطلهم إلا جاءه الله بالحق ، وجاءه من البيان والدليل وضرب المثل بما هو أحسن تفسيرًا ، وكشفًا وإيضاحًا للحق من قياسهم ”

“মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, কা-ফে-রে-রা তাদের বাতিলের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক যে মানদণ্ড নিয়ে আসুক না কেন আল্লাহ তাঁকে সত্য দিয়েছেন এবং তাঁকে এমন বিশ্লেষণ, প্রমাণ ও উপমা দিয়েছেন; যা তাদের মানদণ্ডের চেয়ে সত্যকে অধিক ব্যাখ্যাকারী, উন্মোচনকারী ও স্পষ্টকারী।”[ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া,খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১০৬)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

28: শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
.
আলেমগণ একথার উপর ঐকমত্য হয়েছেন যে, জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা অতিব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, শ্রেষ্ঠ আনুগত্য ও ইসলামের অন্যতম বড় নিদর্শন।(মাজমু’ ফাতাওয়া খন্ড:২৩ পৃষ্ঠা: ২২২)

29: অষ্টম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
.
والعالم يعرف الجاهل؛ لأنه كان جاهلا والجاهل لا يعرف العالم لأنه لم يكن عالماً
.
আলিম অজ্ঞ বা জাহিলকে চিনতে পারেন,কারণ তিনি একসময় জাহিল ছিলেন। কিন্তু জাহিল আলিমকে চিনতে পারে না, কারণ সে কখনো আলিম ছিল না।”(মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ২৩৫)

30: ইতিহাস বিখ্যাত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম,শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.]-এর জীবনী থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তার ওস্তাদ শাইখুল ইসলাম সম্পর্কে বলেন,শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)-কে নিজের বিরোধী পক্ষ ব্যক্তিদের সাথে খুব সুন্দর বন্ধুসুলভ আচরণ করতে দেখে তাঁর একজন কাছের সাথী বলতেন, হায়! যদি আমি আমার বন্ধুদের সাথে এমন সৌহার্দপূর্ণ হতে পারতাম,যেভাবে ইবনে তাইমিয়া তাঁর শত্রুদের সাথে হয়ে যান![ইবনুল ক্বাইয়্যিম মাদারিজুস সালিকীন:খন্ড:২ পৃষ্ঠা: ৩৪৫ ]
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,“মানুষজনের ব্যাপারে জেনে ইনসাফের সাথে কথা বলতে হবে; না জেনে যুলুম করে কথা বলা যাবে না।”[ইবনে তাইমিয়া মিনহাজুস সুন্নাহ: ৪/৩৩৭]
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) একটি ঘটনা
উল্লেখ করে বলেন,একদিন আমি তাঁর (ইমাম ইবন তাইমিয়ার) কাছে তাঁর সব থেকে কট্টর শত্রুর মৃত্যুর ‘সুসংবাদ’ দিলাম। যিনি তাঁকে খুব বেশি কষ্ট দিতেন। তিনি তা (এই ভঙ্গিতে মৃত্যুর সংবাদ দেয়া) অপছন্দ করলেন এবং আমাকে বকা দিলেন। তিনি দুঃখিত হয়ে “ইন্না লিল্লাহ” পড়লেন। পরে তিনি মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছে গিয়ে তাদেরকে সমবেদনা জানিয়ে বললেনঃ আপনারা আমাকে ওনার (মৃত ব্যক্তির) স্থানে মনে করবেন। আপনাদের কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন। আমি আবশ্যই আপনাদের পাশে থাকবো। তারা (মৃত লোকটির আত্মীয়রা) এ কথায় খুবই আনন্দিত হলেন। তারা তাঁর জন্য দোয়া করলেন। তাঁর এই মহানুভবতাকে তারা খুব বড় চোখে দেখলেন..”[ইবনুল কাইয়িম মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৩৪৫]
.
নিজের উপর অত্যাচার,নির্যাতনকারীদের ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)
.
সুলতান নাসিরুদ্দিন কালাউন যখন ২য় বার ক্ষমতায় ফিরে এলেন।তখন তিনি ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য অস্থির হয়ে পড়লেন। উভয়ের সাক্ষাত হলে তারা কোলাকুলি করলেন। এবং দীর্ঘ সময় একান্ত আলাপ-আলোচনা করলেন। এক পর্যায়ে সুলতান ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে বেশ কয়েকজন বিচারপতি আলেমকে হত্যার ফাতওয়ার ব্যাপারে ফাতওয়া চাইলেন। এবং তাঁর কাছ থেকে এই ফাতওয়া আদায়ের চেষ্টা হিসেবে বললেন: তারা অর্থাৎ (ঐ আলেমরা) কিন্তু আপনাকেও বহু কষ্ট দিয়েছে। অনেকবার আপনাকে হত্যার চেষ্টাও করেছে। ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) সুলতানের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাঁর সামনে ঐ আলেমদের প্রশংসা করতে শুরু করলেন। সুলতানের পক্ষ থেকে তাঁদের কোনোরূপ ক্ষতির বিরোধিতা করলেন। এবং বললেন- আপনি ওনাদেরকে হত্যা করলে তাঁদের সমকক্ষ আলেম উম্মতের মাঝে আর পাবেন না। তারা যদি আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তাহলে আমি তো তাঁদেরকে মাফ করে দিয়েছি। আর যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ নিবেন। আমি নিজের জন্য প্রতিশোধ নেওয়া পছন্দ করি না। শেষ পর্যন্ত সুলতান তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন।”(ইমাম ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – খন্ড: ১৬, পৃষ্ঠা ৬১)
.
31: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন: মাল ও সম্পদ কামনার বিষয়ে চার ধরনের মানুষ রয়েছে।
.
(১) যারা আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে মানুষের উপর কর্তৃত্ব চায় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। যেমন দুষ্টমতি রাজা-বাদশা ও সমাজনেতারা।
.
(২) যারা কর্তৃত্ব কামনা ছাড়াই সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। যেমন চোর-বাটপার প্রভৃতি নিম্নশ্রেণীর লোকেরা।
.
(৩) যারা বিশৃংখলা ছাড়াই কেবল কর্তৃত্ব চায়। যেমন ঐসব দ্বীনদার লোক যারা দ্বীনের মাধ্যমে সমাজের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করে।
.
(৪) জান্নাতীগণ। যারা সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব চায় না ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে না।(ইবনু তায়মিয়াহ, আস-সিয়াসাতুশ শারঈয়াহ: ১৭-১৯ পৃষ্ঠা)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী

32: শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

فَعَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ أَنْ لَا يَتَكَلَّمَ فِيْ شَيْءٍ مِنْ الدِّيْنِ إلَّا تَبَعًا لِمَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ وَلَا يَتَقَدَّمُ بَيْنَ يَدَيْهِ؛ بَلْ يَنْظُرُ مَا قَالَ فَيَكُوْنُ قَوْلُهُ تَبَعًا لِقَوْلِهِ وَعَمَلُهُ تَبَعًا لِأَمْرِهِ فَهَكَذَا كَانَ الصَّحَابَةُ وَمَنْ سَلَكَ سَبِيْلَهُمْ مِنْ التَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانِ وَأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ؛ فَلِهَذَا لَمْ يَكُنْ أَحَدٌ مِنْهُمْ يُعَارِضُ النُّصُوْصَ بِمَعْقُوْلِهِ وَلَا يُؤَسِّسُ دِيْنًا غَيْرَ مَا جَاءَ بِهِ الرَّسُوْلُ وَإِذَا أَرَادَ مَعْرِفَةَ شَيْءٍ مِنْ الدِّيْنِ وَالْكَلَامِ فِيْهِ نَظَرَ فِيْمَا قَالَهُ اللهُ وَالرَّسُوْلُ فَمِنْهُ يَتَعَلَّمُ وَبِهِ يَتَكَلَّمُ وَفِيْهِ يَنْظُرُ وَيَتَفَكَّرُ وَبِهِ يَسْتَدِلُّ فَهَذَا أَصْلُ أَهْلِ السُّنَّةِ

সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের উপর আবশ্যক হল, নবী করীম (ﷺ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর অনুসরণ ব্যতীত দ্বীনের কোন বিষয়ে কোন কথা না বলা এবং যা তাঁর সামনে আসে না সে বিষয়েও কোন কথা না বলা। বরং সে যেন লক্ষ্য করে নবী করীম (ﷺ) কী বলেছেন। অতঃপর তাঁর কথাটি যেন হয় নবী করীম (ﷺ)-এর অনুকূলে। তার আমলটি যেন হয় নবী করীম (ﷺ)-এর নির্দেশ অনুসারে। ছাহাবী, তাবেঈ ও মুসলিমদের ইমামগণ এরূপই ছিলেন। একারণেই তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ বুদ্ধি দিয়ে কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা করেননি। আর নবী করীম (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন তা ব্যতীত অন্য কোন দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করেননি। তাঁরা যখনই দ্বীনের কোন বিষয়কে জানার ইচ্ছা করেছেন তারা লক্ষ করেছেন যে ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) কী বলেছেন। অতঃপর তা থেকেই শিক্ষা অর্জন করেছেন। তা দিয়েই কথা বলেছেন এবং তাঁর মধ্যেই দৃষ্টি রেখেছেন। আর তাঁকেই প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপণ করেছেন। আর এটাই আহলুস সুন্নাহর মূলনীতি।(ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৬৩)

33: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:
.
নেতৃস্থানীয় আলেমদের মধ্যে একজনও – যারা উম্মতের মধ্যে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত – ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ, ছোট বা বড় কোন বিষয়েই তার বিরুদ্ধে যাননি।
.
তারা সর্বসম্মত ভাবে এবং নিশ্চিতভাবে একমত যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুসরণ করা ওয়াজিব এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত অন্য কারো মতামত গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে কেউ একটি মত পোষণ করে এবং এর বিপরীতে একটি সহীহ হাদীস থাকে,তবে তার কাছে অবশ্যই হাদীস অনুসরণ না করার জন্য একটি অজুহাত থাকবে। সমস্ত অজুহাত তিনটি বিভাগে পড়ে:

(১).তিনি বিশ্বাস করেননি যে, রাসূল (ﷺ) একথা বলেছেন।
.
(২).তিনি বিশ্বাস করেননি যে,রাসূল (ﷺ) এটি বলার সময় এই বিষয়টির উল্লেখ করছেন।
.
(৩).তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে,রাসূল (ﷺ)-এর সেই হুকুমটি রহিত বা বাতিল হয়ে গেছে।
.
ভিন্ন মত পোষণ করার প্রধান কারন এই তিনটি,সাথে ছোটখাটো অন্যান্য কারনও থাকতে পারে।(ইবনে তাইমিয়া,রাফাউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আলাম: পৃষ্ঠা: ৮-৯, এবং ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২২৭৭৭৬)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

34: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.]বলেছেন:

أَدْنَى خَصْلَة لِأهْلِ الْحَدِيْثِ مَحَبَّةُ الْقُرْآنِ وَالْحَدِيثِ وَالْبَحْثِ عَنْهُمَا وَعَنْ مَعَانِيْهِمَا وَالْعَمَلِ بِمَا عَلِمُوهُ مِنْهمَا

আহলুল হাদীসদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, তারা কুরআন-হাদীসের প্রতি অগাধ ভালোবাসা রাখেন,এ দুটি নিয়ে গবেষণা করেন ও এর তত্ত্বানুসন্ধান করেন। আর তারা কুরআন ও হাদীস থেকে যা জানতে পারেন,তার উপরে আমল করেন।(ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৫৯)

35: অষ্টম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:

,الْمَقْدُورُ يَكْتَنِفُهُ أَمْرَانِ: التَّوَكُّلُ قَبْلَهُ، وَالرِّضَا بَعْدَهُ، ‌فَمَنْ ‌تَوَكَّلَ ‌عَلَى ‌اللهِ ‌قَبْلَ ‌الْفِعْلِ. وَرَضِيَ بِالْمَقْضِيِّ لَهُ بَعْدَ الْفِعْلِ فَقَدْ قَامَ بِالْعُبُودِيَّةِ،

ভাগ্য বা তাক্বদীর দু’টি বিষয় দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে: কাজের শুরুতে তাওয়াক্কুল এবং শেষে সন্তুষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি কাজ করার শুরুতে আল্লাহর উপর ভরসা করল এবং কাজের শেষে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকল, সে যেন পূর্ণভাবে আল্লাহর দাসত্ব করল।(ইবনুল ক্বাইয়িম,মাদারিজুস সালেকীন, ২/১২২)

36: শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:
.
যে কেউ পবিত্র কুরআন এবং রাসূল ﷺ এর সুন্নাহতে যা বলা হয়েছে তা অধ্যয়ন করে তাহলে তিনি স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন যে,শরীয়তের বাধ্যবাধকতা অর্থাৎ [কিছু ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালন] শিখা এবং পালন করা সক্ষম হওয়ার সাথে সংযুক্ত। যদি কেউ উভয়ের কোনটি করতে অক্ষম হয়,তবে সে যা করতে অক্ষম তা তার ক্ষেত্রে মওকুফ করা হবে,কারণ আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বেশি বোঝা দেন না…(মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, খন্ড: ২১, পৃষ্ঠা: ৬৩৪)
.
37: শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন:তিনি (আব্দুল ওয়াহ্‌হাব বিন আবুল ফারাজ আল-মাকদিসি) বলেন: “একদল সলফে সালেহীন থেকে তা বর্ণিত আছে। তাদের কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আপনি কি মুহাম্মাদের মাধ্যমে আল্লাহ্‌কে চিনেছেন? নাকি আল্লাহ্‌কে তাঁর মাধ্যমে চিনেছেন? তিনি বলেন: আমি আল্লাহ্‌কে তাঁর মাধ্যমে চিনেছি এবং মুহাম্মাদকে (ﷺ) আল্লাহ্‌র মাধ্যমে চিনেছি। যদি আমি মুহাম্মাদের মাধ্যমে আল্লাহ্‌কে চিনতাম; তাহলে অনুগ্রহ আল্লাহ্‌র বদলে মুহাম্মদের জন্য হত।”(দারউ তাআরুযুল আকল ওয়াল নাকল, ৯/২৫)
.
38: শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] প্রদত্ত ফাতওয়া বলেন,
.
দ্বীন ইসলাম মূলতঃ দুইটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এক: আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না। দুই: আমরা আল্লাহর বিধান মোতাবেক তাঁর ইবাদত করব; বিদআত মোতাবেক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব, যে ব্যক্তি তার রবের (প্রতিপালকের) সাক্ষাত কামনা করে, সে যেনআমলে সালেহ করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ১১০]
.
আমলে সালেহ হচ্ছে- যে আমল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালবাসেন, পছন্দ করেন; সেটাই শরিয়ত ও সুন্নাহ। তাইতো উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) তাঁর দুআতে বলতেন: “হে আল্লাহ, আমার সকল আমল যেন সালেহ (সুন্নাহ মোতাবেক) হয়, আপনার জন্য খালেস (একনিষ্ঠ) হয় এবং এতে যেন অন্য কারো অংশ না থাকে।[ইবনে তাইমিয়ার কথা থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত; দেখুন আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫ এবং ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৪০৩৩) আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী

39: শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন,
.
من تكلم في الدين بلا علمٍ كان كاذباً وإن كان لا يتعمد الكذب

-যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত ইলম ছাড়া দ্বীনের ব্যাপারে কথাবার্তা বলে সে একজন মিথ্যাবাদী,যদিও তার অভিপ্রায় বা ইচ্ছা ছিল না মিথ্যা বলা।(মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ খন্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৪৪৯)
.
40: শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন,কোন ব্যক্তির সুখী হওয়া নির্ভর করেঃ

(১) তাকে যা আদেশ করা হয়েছে,তা পালন করা,
(২) তাকে যা নিষেধ করা হয়েছে, তা থেকে বেচে থাকা এবং
(৩) তার জন্য (আল্লাহর নির্ধারিত) ভাগ্যকে (সন্তুষ্টচিত্তে) মেনে নেওয়ার মধ্যে।”

(মাজমূ আল-ফাতাওয়াঃ খন্ড: ৮; পৃষ্ঠা-৪৫৩)

41: শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন,
.
আশ‘আরী এবং তার মতো যারা আছেন তারা হলেন সালাফ এবং জাহমিয়াদের মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থিত। তারা (আশ‘আরীরা) সালাফদের কাছ থেকে বিশুদ্ধ কথা গ্রহণ করেছেন এবং জাহমিয়াদের কাছ থেকে যুক্তিভিত্তিক মতবাদসমূহ গ্রহণ করেছেন, যা তাদের কাছে বিশুদ্ধ বলে মনে হতো, কিন্তু আসলে তা ছিল অশুদ্ধ।(মাজমুউল ফাতাওয়া,খন্ড ১৬, পৃষ্ঠা: ৪৭১)

42: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] (যিনি ইবনে তাইমিয়া নামে পরিচিত) বলেন,মানুষকে দ্বীনের দিকে দাওয়াতের জন্য তিনটি বিষয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলো হলো,

(১).দাওয়াত দেওয়ার পূর্বে জ্ঞান রাখা (ব্যক্তির সিচুয়েশন বুঝা এবং ইসলামের নির্দেশনাটা জানা থাকা);
.
(২).দাওয়াত দেওয়ার সময় বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা এবং
.
(৩).দাওয়াত দেওয়ার পর সবর করা (দ্রুত ফল লাভের জন্য তাড়াহুড়া না করা)।(আল-ইরাকিয়্যাহ: ১/২৬৮]
.

43: হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] (যিনি ইবনে তাইমিয়্যাহ নামে পরিচিত) বলেছেন,পবিত্র কুরআনের আলোচিত বিষয়বস্তু তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:

(১) তাওহীদ,
(২) পূর্ব যুগের কাহিনী এবং
(৩) আদেশ ও নিষেধ। তাওহীদের অংশ অপর দুইটি অংশ থেকে উত্তম। (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ খন্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৩০৫)

44: শায়খুল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম আবুল মুযাফফার সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরস্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহর প্রতীক হল, সালাফে ছালিহীনের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ‘আতকে বর্জন করা’ (সাওনুল মানত্বিক; পৃষ্ঠা: ১৫৮)।

No comments:

Post a Comment

Translate