1: ইলম ও আমলের মধ্যে সমন্বয় করা জরুরি:
.
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:
أَطْلُبُ الْعِلْمَ طَلَبًا لَا يَضُرُّ بِالْعِبَادَةِ، وَأَطْلُبُ الْعِبَادَةَ طَلَبًا لَا يَضُرُّ بِالْعِلْمِ، فَإِنَّ مَنْ عَمِلَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ مَا يُفْسِدُ أَكْثَرَ مِمَّا يُصْلِحُ،
“আমি এমনভাবে ইলম অন্বেষণ করি, যা ইবাদতের জন্য ক্ষতিকর হবে না। আর আমি এমনভাবে ইবাদত করি, যা ইলম অন্বেষণের জন্য ক্ষতিকর হবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া আমল করে সে যতটা না সংশোধন করে তার চেয়ে বেশী অনিষ্ট করে”।(মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ;খণ্ড;৭;পৃষ্ঠা;১৮৭; যামাখশারী,রাবীউল আবরার;খণ্ড;৪;পৃষ্ঠা;৩২)
.
2: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:
مكارم الأخلاق المؤمن قوة في لين وحزم في دين وإيمان في يقين وحرص على العِلْمِ وَاقْتِصَاد في اللفقة وبذل فِي السَّعَةِ وقناعة في الفاقة ورحمة للمجهود وإعطاء في حَقٌّ وَبر في استقامة
“একজন মুমিনের উত্তম চরিত্র হল: নমনীয়তায় দৃঢ়তা, ধর্মে দৃঢ় অবস্থান, নিশ্চিয়তার উপর ঈমান, জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ, ব্যয়ে মিতব্যয়ীতা, প্রাচুর্যে দান, দারিদ্র্যে সন্তুষ্টি, কষ্টভোগকারীর প্রতি দয়া, ন্যায়ের পথে দান, এবং সৎপথে থেকে উত্তম আচরণ করা।”(কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিজ সালিহ,পৃষ্ঠা; ৩০২)
3: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:
‘الْمُؤْمِنُ حَلِيمٌ لَا يَجْهَلُ وَإِنْ جُهِلْ عَلَيْهِ حَلِيمٌ لَا يَظْلِمُ وإن ظلِمَ غَفَرَ لَا يَقْطَعُ وَإِنْ قُطِعَ وَصَل لَا يَبْخَلُ وَإِنْ يُجْلُ عَلَيْهِ صَبَرَ.
“মুমিন (খাঁটি ঈমানদার) ব্যক্তি সহনশীল। সে অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করে না। যদিও তার সাথে অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করা হয়। সে অন্যদের উপর অন্যায় করে না, যদিও তার উপর অন্যায় করা হয়, তবে সে ক্ষমা করে। সে সম্পর্ক ছিন্ন করে না, যদিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়, তবে সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। সে কৃপণ নয়, যদিও তার সাথে কৃপণতাপূর্ণ আচরণ করা হয়, তবে সে ধৈর্যধারণ করে”। (ইবনু আবিদ দুনইয়া,আল-হিলমু, হা/৬১,পৃষ্ঠা; ৫৩)
4: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ,হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি.] বলেন:
إخواننا أحب إلينا من أهلنا وأولادنا لأن أهلنا يذكروننا بالدنيا وإخواننا يذكروننا بالآخرة
“আমাদের (দ্বীনি) ভাইয়েরা আমাদের নিকট আমাদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততির চেয়েও অধিক প্রিয়; কারণ, পরিবার-পরিজন আমাদের দুনিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, আর ভাইয়েরা আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।”(গাজালী;ইয়াহইয়াউ উলুমিদ্দিন খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৭৬)
5: প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে,একদা হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলা হলো,
ﺇﻥ ﻧﺎﺳﺎً ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﻓﺄﺩَّﻯ ﺣﻘﻬﺎ ﻭﻓﺮﺿﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ
“কিছু মানুষ বলে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ তিনি (হাসান বসরি) বললেন: ‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, এবং এর হক ও এর ফরজসমূহ আদায় করবে—তবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’”(ইবনু রাজাব আল হাম্বালী, ইখলাসি ওয়া তাহক্বীকু মা‘নাহা; পৃষ্ঠা: ১৪; আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত)
.
6: প্রখ্যাত তাবেঈ আহলুস সুন্নাহ’র অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম
হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি:] বলেন:
«كان أهل الجاهلية إذا خطب الرجل المرأة تقول:ما حسبه،
وما حسبها؟فلما جاء الإسلام،قالوا:ما دينه،وما دينها؟وأنتم اليوم تقولون:ما ماله،وما مالها؟»
“জাহেলী (ইসলাম পূর্ব) যুগে যখন কোনো পুরুষ কোনো মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিত তখন তারা জিজ্ঞেস করত,ছেলের বংশ কি? মেয়ের বংশ কি? [তথা তখন পাত্র-পাত্রীর বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইত]।
.
অতঃপর ইসলামের আগমনের পর তারা জিজ্ঞেস করতঃ ছেলের দ্বীনের অবস্থা কি? বা মেয়ের দ্বীনের অবস্থা কি? [তথা পাত্র-পাত্রী দ্বীনদার কিনা এটা জানতে চাইত]।
.
আর আজকের দিনে এসে আপনারা জিজ্ঞেস করেন- ছেলের সম্পদের পরিমাণ কত? মেয়ের সম্পদের পরিমাণ কত? [তথা দ্বীন বাদ দিয়ে অর্থ সম্পদকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পদের পরিমাণ জানতে চাওয়া](ইবনু আব্দিল বার, বাহজাতুল মাজালিস,২/৩৮ ও ১৮১)
.
7: জাকারিয়া ইবনু ইয়াহিয়া আমাদেরকে বলেছেন, উবাইদুল্লাহ ইবনু আয়শা আমাদেরকে বলেছেন , এবং সালামা ইবনু সাঈদ আমাদেরকে বলেছেন,তিনি বলেন…”
شاور رجلٌ الحسن فقال: يا أبا سعيد! لي ابنةٌ أحبها، وقد خطبها رجالٌ من أهل الدنيا، فمن ترى لي أن أزوجها؟
فقال: زوجها من تَقي، إن أحبها أكرمها، وإن أبغضها لم يظلمها.
জৈনক ব্যক্তি ইমাম হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে পরামর্শ চেয়ে বললেন, হে আবু সাঈদ! আমার একটি মেয়ে রয়েছে, যাকে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। অনেক লোক, যারা দুনিয়াদার ও সম্পদশালী,তারা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন আপনি কী পরামর্শ দেন, আমি কাকে তার জন্য যোগ্য পাত্র বলে বিবেচনা করব এবং তার সঙ্গে তাকে বিবাহ দেব?
.
ইমাম হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন: তাকে এমন একজন সৎ ও ধার্মিক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিন, যার অন্তরে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) রয়েছে। কারণ, যদি সে তাকে ভালোবাসে,তবে তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেবে। আর যদি কোনো কারণে অপছন্দ করে, তবুও তার সঙ্গে কোনো অন্যায় বা অবিচার করবে না”।(আন-নাফাকাতু আলাল আ’য়ালী লি ইবনে আবিদ দুনিয়া,খন্ড:১ পৃষ্ঠা: ২৭৩;বর্ণনা: ১২৫;ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৪১;আদাবুল হাসান বসরি লি ইবনে জাওযী রহ, পৃষ্ঠা: ৩১]
.
8: এক ব্যক্তি ইমাম হাসান বসরি (রহিমাহুল্লাহ)-এর কন্যাকে এক লক্ষ দিরহাম মোহরের বিনিময়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। এ সময় হাসান বসরির স্ত্রী বললেন:
«زَوِّجُهُ؛فَقَدْ أَرْغَبَها في الصَّدَاقِ،وبذل لها ما ترى،فقال الحسن: إنَّ رجلاً بذل في صداق امرأة مئة ألفٍ لَجَاهِلٌ مَغْرُورٌ يَجِبُ أَلَا يُرْغَبَ فِي مُناكَحَتِهِ،ولا يُحْرَصَ على مُصاهَرَتِهِ.وترك تزويجه، وزَوَّجَها من رجل صالح.»
“আপনি মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন। দেখুন, সে মেয়ের জন্য কত বেশি মোহর দিতে আগ্রহী।” এ কথা শুনে হাসান বসরি (রহ.) বললেন: “যে ব্যক্তি স্ত্রীকে মোহরের পেছনে এক লক্ষ দিরহাম খরচ করে, সে একজন অজ্ঞ ও প্রতারিত ব্যক্তি। এমন একজনকে মেয়ে বিয়ে দেওয়া কিংবা তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।” তৎক্ষণাৎ তিনি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তীতে তার কন্যার জন্য একজন ধর্মপরায়ণ ও নৈতিকতাসম্পন্ন পাত্র পছন্দ করে তাকে বিয়ে দেন”।(আদাবুল হাসান আল-বাসরি – ইবনুল জাওযী, পৃষ্ঠা: ৩১)
.
9: ইমাম হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
اَلْمُؤْمِنُ كَالْغَرِيبِ لاَ يَجْزَعُ مِنْ ذُلِّهَا، وَلاَ يُنَافِسُ فِي عِزِّهَا، لَهُ شَأْنٌ، وَلِلنَّاسِ شَأْنٌ- وَجِّهُوا هَذِهِ الْفُضُولَ حَيْثُ وَجَّهَهَا اللهُ ‘
“মুমিন হলো অপরিচিতের মতো। দুনিয়ার কোনো অপমান বা লাঞ্ছনায় সে উৎকণ্ঠিত হয় না আবার মর্যাদার প্রতিযোগিতায়ও লিপ্ত হয় না। তার নিজের জন্য যেমন একটি মর্যাদা রয়েছে, তেমনি মানুষের জন্যও তাদের নিজস্ব মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং, এই দুনিয়াবী তুচ্ছ ও নিরর্থক বিষয়গুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং আল্লাহ যে দিকে ডেকেছেন সেই পথে এগিয়ে যাও।”(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/৩৬৩৫৮,জামেঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম;২/৩৭৯)
.
10: বিদআতীরা ডিবেট/বিতর্কের আহ্বান করলে কী করবেন? আপনি অবশ্যই হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহর নীতিতে যাবেন।
▬▬▬▬▬▬▬▪️🌻▪️▬▬▬▬▬▬▬
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এক ব্যক্তি এসে বললো,
: يا أبا سعيد ! إني أريد أن أخاصمك
“হে আবু সাঈদ, আসুন, আপনার সাথে দীনের কিছু মাসআলায় ডিবেট করি।
জবাবে হাসান বসরী বলেন,,
: إليك عني، فإني قد عرفت ديني، وإنما يخاصمك الشاك في دينه
“আমি তো আমার দীনকে জেনেবুঝে গ্রহণ করেছি, তুমি যদি তোমার দীন হারিয়ে ফেলে থাক,তবে সেটা খুঁজে বেড়াও।” অপর বর্ননায় এসেছে,তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
اذهب إلى شاك مثلك يناظرك، فإني قد عرفت ديني
“তোমার মত সন্দেহবাদীর কাছে যাও যে তোমার সাথে বিতর্ক করবে,কারণ আমি আমার ধর্ম শিখেছি”।(আল-আজুররী,আশ শারীআহ,আসার নং ১৯৭৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
11: ইমাম হাসান বসরি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০ হি:] বলেন,
الفتنة إذا أقبلت عرفها كل عالم، وإذا أدبرت عرفها كل جاهل
“যখন ফিতনা আসে, তখন সকল আলিম একে চিনতে পারে,আর সকল অজ্ঞ একে তখনই চিনতে পারে তখন,যখন তা চলে যায়।”
12: সর্বাবস্থায় আপনার পালনকর্তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন:
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেছেন, إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُوْدٌ ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ’ (সূরা আদিয়াত ১০০/৬)। মানুষ তার উপর আপতিত মুসীবতগুলো গণনা করে কিন্তু তাকে প্রদত্ত নে‘মত সমূহের কথা ভুলে যায়।(তাফসীর ইবনু কাসীর খন্ড:৪ পৃষ্ঠা: ৭০০)
.
13: একদা হাসান আল বাসরী (রাহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ইবলিসের স্ত্রীর নাম কী?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘আমি তার বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম না। তাই বলতে পারছি না।’
.
যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। এখান থেকে আমরা কি শিখলাম? বর্তমানে ও এমন অনেক মানুষ আছে যারা এই ধরনের অদ্ভুত প্রশ্ন করেন যেটা যানার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই,কল্যান নেই।অথচ আমরা এমন অদ্ভুত গুরুত্বহীন প্রশ্ন করি একটি হাদীসে , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে সম্পর্কে তোমাদের বলিনি, সে সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো না। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ তাদের নবীগণের নিকট অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাঁদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং কোন বিষয়ে আমি তোমাদের নিষেধ করলে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো। [সহীহ বুখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, তিরমিযী ২৬৭৯, আহমাদ ৭৩২০] (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
No comments:
Post a Comment