১. দিনের প্রথম নিশ্বাসেই উঠুক আল্লাহর স্মরণ, আর দিনটি শুরু হোক ফজরের সালাত আদায়ের মধ্যে দিয়ে………..!
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
إسأل نَفسَك عن الصلاة في وقتها والمُحافظة عليها، خصوصًا صلاة الفجر إن كنت من أهلها وبانتظام، فاعلم أنَّك مُؤمن ليس بَينَك وبينَ الجنَّة إلَّا أن تَموت وإن كُنتَ ضيَّعتَها، فسَارع إلى إنقاذِ نَفسك
“তুমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করো সালাত কি তুমি নির্ধারিত সময়েই আদায় করো? তুমি কি সালাতের প্রতি যত্নবান? বিশেষ করে ফজরের সালাত!যদি তুমি তা (নিয়মিত) আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও,এবং তা নিয়মিতভাবে (যথাসময়ে) আদায় করো, তাহলে জেনে রাখো তুমি একজন প্রকৃত মু’মিন;তোমার আর জান্নাতের মাঝে কেবল মৃত্যুই অন্তরায়।আর যদি তুমি (ফজরের) সালাত অবহেলা করো,তাহলে দেরি না করে নিজের নফসকে উদ্ধার করো!”(ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৭-২৮)।
২. ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নসিহাটি অনুসরণ করলে বিচ্ছেদের হার অনেকটা কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
ننصح المرأة بألا تختار في النكاح إلا رجلاً صاحب دين وخلق، وألا تتعجل المرأة بقبول الخاطب حتى يبحث عنه من جميع الجوانب، ولا أعني أن المرأة لا تتزوج من لا يأتي شيئا من الذنوب، لأن هذا متعذر لكن سددوا وقاربوا.
“আমরা নারীদের পরামর্শ দিচ্ছি—তারা যেন বিয়ের জন্য এমন পুরুষই নির্বাচন করে, যার মধ্যে দ্বীনদারিত্ব ও উত্তম চরিত্র রয়েছে। এবং তারা যেন প্রস্তাব গ্রহণে তাড়াহুড়া না করে, যতক্ষণ না তার (পাত্র) সম্পর্কে সবদিক থেকে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়।আমি এটা বলছি না যে, এমন পুরুষকে বিয়ে করতে হবে যে কোনো পাপই করে না।কারণ, এটি তো অসম্ভব (পাপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত মানুষ পাওয়াই কঠিন) তবে তোমরা সঠিক দিকে লক্ষ্য রাখো এবং যতটা সম্ভব কাছাকাছি হও (আদর্শের দিকে ধাবিত হও)।”(ইবনু উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৩১)
.
৩. সময়: সবচেয়ে মূল্যবান কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত সম্পদ………..!
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
《 الوقت هو أغلى شيء ، لكن هو أرخص شيء عندنا الآن. نمضي أوقاتاً كثيرة بغير فائدة ، بل نمضي أوقاتاً كثيرة فيما يضر .ولست أتحدث عن رجل واحد ، بل عن عموم المسلمين اليوم – مع الأسف الشديد – أنهم في سهو ولهو وغفلة ، ليسوا جادين في أمور دينهم 》.
“সময় হলো সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, অথচ আজ আমাদের কাছে সেটাই সবচেয়ে সস্তা হয়ে গেছে।
আমরা বহু সময় এমন কাজে ব্যয় করি, যাতে কোনো উপকার নেই; বরং অনেক সময় এমন কিছুতে অতিবাহিত করি,যা স্পষ্টভাবে আমাদের ক্ষতির কারণ।আমি শুধু একজন ব্যক্তির কথা বলছি না; বরং দুঃখজনক হলেও সত্য আজকের অধিকাংশ মুসলিমদের অবস্থাই এ রকম: তারা উদাসীনতায়, ক্রীড়াচ্ছলে এবং গাফেলির মাঝে ডুবে আছে; তারা নিজেদের দ্বীন-ধর্মের বিষয়ে মোটেও দায়িত্বশীল নয়।”(ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৪৫)
.
৪. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না…………!
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
من المؤسف أن كثيـرا مـن المسلميـن اليـوم غفلـوا عـن القيام بحـق الوالديـن والأرحام، وقطعوا حبل الوصـل، وحجـة بعضهم أن أقاربـه لا يصلونـه، وهـذه الحجة لا تنفع؛ لأنه لو كان لا يصل إلا من وصلـه لـم تـكـن صـلتـه للـه عـز وجـل، وإنما هي مكافأة، كما في صحيح البخاري أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “ليس الواصل بالمكافئ، ولكن الواصل الذي إذا قطعت رحمه وصلها”
“দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল অনেক মুসলিমই পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি তাদের হক আদায়ে গাফেল হয়ে পড়েছে,তারা তাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে ফেলেছে।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এর যুক্তি হিসেবে বলে যে তার আত্মীয়রা তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না। কিন্তু এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়; কারণ, যদি কেউ শুধুমাত্র তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখে, যারা তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে—তাহলে তার এই সম্পর্ক রাখাটা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং এটি মূলত প্রতিদানস্বরূপ (মোহাব্বত ও বিনিময়ের মনোভাব)। অথচ সহীহ বুখারীতে এসেছে,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সেই ব্যক্তি সম্পর্ক বজায়কারী নয়, যে সম্পর্ক বজায় করার বিনিময়ে বজায় করে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক বজায়কারী হল সেই ব্যক্তি, যে কেউ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা রক্ষা করে।”(সহীহ বুখারী হা/৫৯৯১;ইমাম ইবনু উসাইমীন;মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা-২১৩)
৫. আল্লাহভীতির আলোয় অন্তর আলোকিত করতে হবে।…………!
.
মহান আল্লাহ বলেন:اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُكِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ اِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُهٗ زَادَتۡهُمۡ اِیۡمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمۡ یَتَوَكَّلُوۡنَ ۚ الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ حَقًّا ؕ”মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয়,এবং তার আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হলে তা তাদের ঈমান বর্ধিত করে। আর তারা তাদের রব-এর উপরই নির্ভর করে,যারা সালাত কায়েম করে এবং আমরা তাদেরকে যা রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; তারাই প্রকৃত মুমিন..।(সূরা আনফাল: ২-৪)
.
উক্ত আয়াতের তাফসিরে সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
قوله: (إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ) أي: إذا ذكرت عظمته وجلاله وسلطانه، خافت القلوب، ووجلتن وتأثر الإنسان، حتى إن بعض السلف إذا تليت عليه آيات الخوف يمرض أياما حتى يعوده الناس، أما نحن فقلوبنا قاسية، نسأل الله إن يلينهان فانه تتلى علينا آيات الخوف وتمر وكأنها شراب بارد، فلا نتأثر بذلك، ولا نتعظ إلا من رحم الله، نسأل الله العافية.
لكن المؤمن: هو الذي إذا ذكر الله وجل قلبه وخاف.
كان بعض السلف إذا قيل له: اتق الله ارتعد، حتى يسقط ما في يده. (وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَاناً) (لأنفال: من الآية٢) إذا سمعوا كلام الله_ عز وجل_ ازدادوا إيمانا من وجهين:
الوجه الأول: التصديق بما اخبر الله به من أمور الغيب الماضية والمستقبلة.
الوجه الثاني: القبول والإذعان لأحكام الله، فيمتثلون ما أمر الله به، فيزداد بذلك إيمانهم وينتهون عما نهى الله عنه، تقربا إليه وخوفا منه،
আয়াতে (إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ)— “যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়”, অর্থাৎ, যখন আল্লাহর মহত্ব, গৌরব, সম্মান ও কর্তৃত্বের আলোচনা করা হয়, তখন মুমিনদের অন্তরসমূহ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, কেঁপে উঠে এবং তারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। এমনকি সালাফে সালেহীনদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যখন তারা আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কিত কোনো আয়াত শুনতেন, তখন এতটাই প্রভাবিত হতেন যে অসুস্থ হয়ে পড়তেন—মানুষ তাদের দেখতে যেত।
আর আমরা? আমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেছে। আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের অন্তরসমূহকে কোমল করে দেন। কারণ, আজকাল আমাদের সামনে ভয়-ভীতির আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয়, অথচ সেগুলোর কোনো প্রভাব আমাদের হৃদয়ে পড়ে না এমন মনে হয় যেন এগুলো ঠাণ্ডা পানির মতো প্রবাহিত হয়ে গেল—কোনো অনুভব বা প্রভাব ছাড়াই। আমরা না কাঁদি, না চিন্তা করি, না উপদেশ গ্রহণ করি—সেইসব ব্যক্তি ব্যতীত, যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। আমরা আল্লাহর নিকট সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।প্রকৃত মুমিন তো সেই, যার অন্তর কম্পিত হয় যখন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, এবং সে আল্লাহর ভয় অনুভব করে।সালাফদের কারো কারো অবস্থা এমন ছিল, যে যখন তাকে বলা হতো: “আল্লাহকে ভয় কর”, তখন সে কাঁপতে শুরু করত, এমনকি তার হাতে যা থাকত,তা (মাটিতে) পড়ে যেত। আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَاناً “আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে।”—(সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২)অর্থাৎ, তারা যখন আল্লাহর কালাম শ্রবণ করে, তখন দু’টি দিক থেকে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়ঃ
🔹প্রথমত: তারা আল্লাহ যা বলেন, তা বিশ্বাস করে—তা হোক অতীত বা ভবিষ্যতের গায়েবী বিষয়াবলি।
🔹দ্বিতীয়ত: তারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। যা আদেশ করা হয়েছে, তা পালন করে এবং যা নিষেধ করা হয়েছে, তা পরিত্যাগ করে—আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর ভয় অর্জনের লক্ষ্যে।আর এভাবেই তাদের ঈমান বাড়তে থাকে।”(মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৫৫৪)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____
৬. রোগ-ব্যাধিতে মনোবল না হারিয়ে আশাবাদী ও ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করা উচিত……………!
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
ثم إنه إذا صَبر علَى المَرض وتناسىٰ الأمر حَصل له برؤ منْه، لأن الوَهم النّفسي له تأثيرٌ فِي بقاءِ المَرض، وزِيَادة المَرض، فإذا رَفض الإنسان هَذا الْمرض وَصار لا يفكِّر فِيه، فإنه – بِإذن الله – سَوف يُشفىٰ.
“আর যখন কেউ অসুস্থতার উপর ধৈর্য ধারণ করে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সেই বিষয়টি ভুলে থাকার চেষ্টা করে, তখন সে সেখান থেকে আরোগ্য লাভ করে। কেননা, মানসিক কল্পনা বা ভ্রান্ত ধারণার একটি প্রভাব রয়েছে রোগের স্থায়িত্ব এবং তীব্রতা বৃদ্ধিতে। অতএব, যখন কেউ এই রোগকে (মন থেকে) প্রত্যাখ্যান করে এবং তা নিয়ে চিন্তাই না করে,তখন আল্লাহর ইচ্ছায় সে সুস্থ হয়ে যায়।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, পর্ব: ৫২৩, পৃষ্ঠা: ২)
.
৭. প্রিয় অভিভাবকবৃন্দ এমন দ্বীনদার ও সদাচারী পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়েন না, যার আক্বীদা সহীহ, আচরণ উত্তম, এমনকি যদি সে গরিবও হয় ……..!
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]- কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন:“একজন সদাচারী ও দ্বীনদার উত্তম চরিত্রের অধিকারী যুবক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি আশা করছি, ভবিষ্যতে তার চেয়ে উত্তম কোনো যুবকের প্রস্তাব আসবে। এই পরিস্থিতিতে কি আমার জন্য এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা বৈধ হবে?
প্রশ্নের জবাবে আমাদের ইমাম ইবনু উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
ﻗﺪ ﻳﺪﺭﻙ ﺍﻟﻤﺘﺄﻧﻲ ﺑﻌﺾ ﺣﺎﺟﺘﻪ ﻭﻗﺪ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻊ ﺍﻟﻤﺴﺘﻌﺠﻞ ﺍﻟﺰﻟﻞ ﻭﺭﺑﻤﺎ ﻓﺎﺕ ﻗﻮﻣﺎً ﺟﻞ ﺃﻣﺮﻫﻢ ﻣﻊ ﺍﻟﺘﺄﻧﻲ ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﺮﺃﻱ ﻟﻮ ﻋﺠﻠﻮﺍ ﻻ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﻟﻺﻧﺴﺎﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻴﻊ ﺍﻟﻔﺮﺻﺔ ﺇﺫﺍ ﻭﺟﺪﻫﺎ ، ﻓﺈﺫﺍ ﺧﻄﺐ ﺷﺨﺺ ﺫﻭ ﺧﻠﻖ ﻭﺩﻳﻦ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻳُﻔﻮَّﺕ ﻣﻦ ﺃﺟﻞ ﺍﺭﺗﻘﺎﺏ ﻣﻦ ﻫﻮ ﺃﺻﻠﺢ ﻣﻨﻪ ﻭﺃﺣﺴﻦ ؛ ﻭﺫﻟﻚ ﻷﻥ ﻫﺬﺍ ﻗﺪ ﻻ ﻳﺤﺼﻞ ، ﻭﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﻣﻊ ﺗﻘﺪﻡ ﺍﻟﺴﻦ ﻭﻛﺒﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ، ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﻟﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍً ﺃﻥ ﺗﻔﺮﻁ ﻓﻴﻤﻦ ﺧﻄﺒﻬﺎ ،ﻭﻗﺪ ﺟﺎﺀ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ :
( ﺇﺫﺍ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺗﺮﺿﻮﻥ ﺩﻳﻨﻪ ﻭﺧﻠﻘﻪ ﻓﺄﻧﻜﺤﻮﻩ ) .
ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺨﺎﻃﺐ ﻣﺮﺿﻲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﺍﻟﺨﻠﻖ ، ﻓﻠﺘﺘﺰﻭﺝ ، ﻭﻻ ﺗﻨﺘﻈﺮ ﻷﻣﺮ ﻻ ﺗﺪﺭﻱ ﺃﻳﺤﺼﻞ ﺃﻡ ﻻ ﻳﺤﺼﻞ .
“ধীরস্থির ব্যক্তি কখনো কখনো তার কিছু প্রয়োজন পূরণে সফল হয়, আর তাড়াহুড়োকারীর সঙ্গে ভুলত্রুটি লেগেই থাকে। আবার এমনও হয় কোনো জাতি ধীরতা করতে করতে একটি বড় সুযোগ হারিয়ে ফেলে, অথচ যদি তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে সেটিই হতো যথার্থ ও সঠিক পদক্ষেপ। সুতরাং, কারো জন্য কোনো সুযোগ এলে তা নষ্ট করা উচিত নয়।উদাহরণস্বরূপ,যদি কোনো পুরুষ উত্তম চরিত্র ও দ্বীনদারিত্বসহ বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন কেবল এই আশায় তাকে ফিরিয়ে দেওয়া অনুচিত যে, ভবিষ্যতে আরও উত্তম কেউ আসবে। কারণ নাও হতে পারে। বিশেষত যখন বয়স বেড়ে যায় এবং মেয়েটির যৌবনোত্তীর্ণ দশা এসে পড়ে, তখন তার জন্য এমন সুযোগ হাতছাড়া করা অনুচিত। তাই, যদি প্রস্তাবদাতা ধর্ম ও চরিত্রে সন্তোষজনক হয়, তবে বিয়েতে সম্মতি দেওয়া উচিত। ভবিষ্যতের কোনো অনিশ্চিত সম্ভাবনার আশায় বর্তমান সুযোগ হারানো উচিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:”যখন তোমাদের কাছে এমন একজন আসে, যার দ্বীনদারি ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তখন তার সঙ্গে বিয়ে দাও।”(তিরমিযি হা/১০৮৪) অতএব,যদি প্রস্তাবদাতা দ্বীনদার ও সদাচরণশীল হয়, তবে বিয়েতে সম্মত হওয়া উচিত। ভবিষ্যতের অনিশ্চিত সম্ভাবনার অপেক্ষায় সে সুযোগ হাতছাড়া করা সমীচীন নয়।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-১২, প্রশ্ন নম্বর: ৫)
.
৮. মানবজীবনে ঈমান টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ………….
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
والإنسان ما دامت روحه في جسده فهو معرض للفتنة
ولهذا أوصي نفسي وإياكم أن نسأل الله دائماً الثبات على الإيمان ، وأن تخافوا ؛ لأن تحت أرجلكم مزالق.
فإذا لم يثبتكم الله – عز وجل – وقعتم في الهلاك
واسمعوا قول الله -سبحانه وتعالى- لرسوله -ﷺ- أثبت الخلق، وأقوااهم إيماناً: { ولولا أن ثبتناك لقد كدت تركن إليهم شيئا قليلا } فإذا كان هذا للرسول -ﷺ- فما بالنا نحن ؛ ضعفاء الإيمان واليقين، وتعترينا الشبهات، والشهوات. فنحن على خطر عظيم، فعلينا أن نسأل الله تعالى الثبات على الحق، وألا يزيغ قلوبنا، وهذا هو دعاء أولي الألباب: {ربنا لا تزغ قلوبنا بعد إذ هديتنا}.
“মানুষ যতক্ষণ তার দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ সে ফিতনায় পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এই কারণে আমি নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে এই নসিহত করছি সবসময় আল্লাহর কাছে ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফিক চাইতে থাকুন। আর আল্লাহকে ভয় করুন; কেননা, আপনাদের পায়ের নিচেই লুকিয়ে আছে বিপদের ফাঁদ।সুতরাং, যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে দৃঢ় না রাখেন, তবে তোমরা নিঃসন্দেহে ধ্বংসে পতিত হয়ে যাবে। এই কথাটি খেয়াল করুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম—যিনি মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি অটল ও ঈমানে দৃঢ়তম—তাঁকে কী বলেছেন:{وَلَوْلَا أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا}“”আর যদি না আমরা তোমাকে দৃঢ় রাখতাম, তবে তুমি অবশ্যই তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকে পড়তে।” (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭: ৭৪) যদি রাসূল ﷺ-এর ক্ষেত্রেই এমন অবস্থা হয়, তবে আমাদের অবস্থা কী হবে? আমরা ঈমান ও দৃঢ় বিশ্বাসে দুর্বল, আমাদেরকে ঘিরে রাখে সন্দেহ ও প্রবৃত্তির হামলা। তাই আমরা এক গভীর বিপদের সম্মুখীন।আমাদের উচিত, সর্বদা আল্লাহর কাছে এই দো‘আ করা তিনি যেন আমাদেরকে হকের উপর অটল রাখেন, এবং সৎপথে পরিচালিত করার পর যেন আমাদের অন্তরগুলোকে পথভ্রষ্ট না করেন। এই দোয়াটিই জ্ঞানী ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের দো‘আ:{رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا}“হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিয়েন না।” (সূরা আলে ইমরান: ৮; ইমাম ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘, আলা জাদিল মুস্তাকনি খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৩৮৮)
.
৯. সালাফি মানহাজকে ভ্রান্ত বলা আসলে নিজের ভ্রান্তিকে স্বীকার করারই নাম; কারণ, হককে গালি দেয় সে-ই, যে সোজা পথ থেকে সরে গেছে…..!
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন,হে আমাদের শাইখ, যে ব্যক্তি সালাফি মানহাজকে “তালাফি মানহাজ” (ধ্বংসপ্রাপ্ত পথ) বলে, তার হুকুম কী? (আমরা আল্লাহর কাছে এর থেকে আশ্রয় চাই।)
জবাবে শাইখ বলেন:
حكمه أنه هو التالف، وأنت لا تستغرب يا أخي، لا تستغرب أن يلقَّب أهل الخير بألقاب السوء، أم تعلم أن الأنبياء وصفوا بأنهم سحرة ومجانين؟!
قل نعم ولا!
السائل : نعم.
الشيخ : نعم، الصواب بلى، طيب.
قال الله تعالى: (( كذلك ما أتى الذين من قبلهم من رسول إلا قالوا ساحر أو مجنون )): هل ضر الأنبياء هذا اللقب؟!
الجواب: لا، العاقبة لهم والحمد لله.
لا تستغرب أن يلقب أهلُ السوء أهلَ الخير بألقاب السوء، ألم تعلم أن الذين ينكرون صفات الله عز وجل يصفون المثبتين لها بأنهم مجسمة، وبأنهم حشوية وبأنهم نوابت فلا يضر، نعم لو فُرض أن السلفية صار عندهم مخالفة للسلف في منهجهم فهنا نقول: هذا تالف ولكن ما ننسبه للمذهب، لأنه يوجد من إخواننا الذين هم على مذهب السلف بل الذين يريدون مذهب السلف يوجد منهم من يخالف السلف في تصرفاتهم، ويسيؤون إلى الإسلام وإلى أهل الإسلام أكثر مما يحسنون إليه، وربما أن هذا القائل ربما رأى شخصاً نابياً في تصرفه ومنهجه من السلفيين فقال: إن السلف هم التلف، لا ندري في الواقع، لكن إن أراد السلف الحقيقة فنقول: أنت التالف وليس مذهب السلف.
তার হুকুম হলো সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত। হে আমার ভাই! সৎ ও নেককার মানুষদের যদি খারাপ নামে ডাকা হয়, এতে অবাক হয়ো না। তুমি কি জানো না, নবীদেরও তো ‘জাদুকর’ এবং ‘পাগল’ বলে গালি দেওয়া হয়েছিল?”
প্রশ্নকারী: জী হ্যাঁ।
শাইখ: হ্যাঁ, তবে এখানে সঠিক জবাব হবে: হ্যাঁ অবশ্যই (বলা হয়েছিল)।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:”এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রাসূল এসেছেন তারাই তাকে বলেছে, এ তো এক জাদুকর, না হয় এক (উন্মাদ) পাগল!”(সূরা যারিয়াত: ৫২) প্রশ্ন: নবীদের বিরুদ্ধে দেওয়া এই অপবাদগুলো কি তাদের (নবীদের) কোনো ক্ষতি করেছে?
উত্তর: না, আলহামদুলিল্লাহ, বরং চূড়ান্ত পরিণাম তো তাদেরই অনুকূলে হয়েছে।
সৎ লোকদেরকে অসৎ লোকেরা অপবাদ দিবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি কি জানো না, যারা আল্লাহর গুণাবলিকে অস্বীকার করে, তারা সেসব গুণাবলিকে প্রমাণকারী ব্যক্তিদের ‘মুজাসসিমাহ’ (আল্লাহকে দেহযুক্ত মনে করে এমন), ‘হাশওয়িয়্যাহ’ (বাজে ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলার লোক), এবং ‘নাবিতাহ’ (নব আবির্ভূত পথের অনুসারী) বলে অপবাদ দেয়? কিন্তু এসব অপবাদে কোনো ক্ষতি হয় না।
তবে হ্যাঁ, যদি এমনটা সত্যি হয় যে, সালাফি নামে পরিচিতদের কারও মাঝে এমন আচরণ পাওয়া যায় যা প্রকৃত সালাফদের মানহাজ পরিপন্থী, তাহলে বলা হবে: এ ব্যক্তি নিজেই ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ (تالف)। কিন্তু এর কারণে সালাফি মানহাজ বা পন্থাকেই ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত পথ’ বলা যাবে না। কারণ অনেক ভাই আছেন, যারা আন্তরিকভাবে সালাফদের পথ অনুসরণ করতে চান; কিন্তু তাঁদের কারও কারও আচরণ, কথা বা কার্যক্রম কখনো কখনো সালাফদের প্রকৃত পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এতে ইসলাম ও মুসলমানদের উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকটাই প্রকট হয়।
সম্ভবত,যে ব্যক্তি ‘তালাফি’ বলে অপবাদ দিয়েছে, সে এমন কাউকে দেখেছে, যার আচার-আচরণ ছিল বিশৃঙ্খল, অথচ সে নিজেকে ‘সালাফি’ বলে পরিচয় দিচ্ছিল। তাই তাকে দেখে সে মন্তব্য করেছে: “সালাফিরা তো আসলে ‘তালাফি’ (ধ্বংসপ্রাপ্ত)! আমরা বাস্তবতা জানি না,তবে যদি সে ‘সালাফি বলতে প্রকৃত সালাফদের বুঝায়, তাহলে আমরা বলব: তুমি নিজেই ধ্বংসপ্রাপ্ত, সালাফি মানহাজ নয়।”(ইবনু উসাইমীন;লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-২৩৫)
১০. প্রিয় ভাই! বাসায় অবস্থানকালে পারিবারিক দায়িত্ব পালনে পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের পাশে থাকুন এবং নিজের কাজগুলো নিজেই করার চেষ্টা করুন।
.
আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘গৃহস্থালি কাজ করতেন; অর্থাৎ স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতেন। অতঃপর নামাযের (সময়) হলে তিনি নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন।”(সহীহুল বুখারী হা/ ৬৭৬, ৫৩৬৩, ৬০৩৯, তিরমিযী ২৪৫৮৯, আহমাদ ২৩৭০৬, ২৪৪২৭, ২৫১৮২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
” ومن تواضع النبي صلى الله عليه وسلم أنه كان في بيته في خدمة أهله، يحلب الشاة، يخصف النعل، يخدمهم في بيتهم؛ لأن عائشة سئلت ماذا كان النبي صلى اله عليه وسلم يضع في بيته؟، قالت: ( كَانَ فِي مِهْنَةِ أهْلِهِ )، يعني في خدمتهم عليه الصلاة والسلام الإنسان إذا كان في بيته فمن السنة أن يصنع الشاي مثلا لنفسه ، ويطبخ إذا كان يعرف ، ويغسل ما يحتاج إلى غسله ، كل هذا من السنة ، أنت إذا فعلت ذلك تثاب عليه ثواب سنة ؛ اقتداء بالرسول – عليه الصلاة والسلام – وتواضعا لله -عز وجل- ؛ ولأن هذا يوجد المحبة بينك وبين أهلك، إذا شعر أهلك أنك تساعدهم في مهنتهم أحبوك ، وازدادت قيمتك عندهم ، فيكون في هذا مصلحة كبيرة
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নম্রতা ও বিনয়ের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত হলো তিনি নিজ গৃহে পরিবার-পরিজনের সেবায় আত্মনিয়োগ করতেন। তিনি নিজ হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন, জুতা সেলাই করতেন, এবং ঘরের অন্যান্য কাজেও পরিবারের সঙ্গে সহযোগিতা করতেন। আম্মাজান আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে অবস্থানকালে কী করতেন?” তিনি জবাবে বলেন:”(كَانَ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ) “তিনি ছিলেন পরিবারের কাজে নিয়োজিত।” অর্থাৎ, তিনি ঘরের কাজকর্মে পরিবারের পাশে থাকতেন, তাদের সহযোগিতা করতেন। এই উত্তম চরিত্রই ছিল একজন প্রকৃত আদর্শ পুরুষ ও আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর পরিচয়। অতএব যখন একজন মানুষ নিজ ঘরে অবস্থান করে, তখন তার জন্য সুন্নত হলো নিজে চা তৈরি করা, যদি রান্না জানে তবে রান্না করা, এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ধোয়া ইত্যাদি কাজে অংশগ্রহণ করা। এসব কাজ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। যদি আপনি এগুলো করেন, তাহলে আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করার কারণে সুন্নতের সওয়াব লাভ করবেন। কেননা, এসবের মাধ্যমে আল্লাহর সামনে বিনয় প্রকাশ ঘটে।এর পাশাপাশি, এসব কাজের মাধ্যমে আপনার ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে আন্তরিকতা, স্নেহ ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে। তারা অনুভব করে, আপনি তাদের কাজে সহযোগিতা করছেন এতে আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়বে,আপনার মর্যাদাও তাদের দৃষ্টিতে আরও উঁচু হয়। বস্তুত, এতে রয়েছে অসংখ্য কল্যাণ ও গভীর উপকারিতা।”(ইবনু উসাইমিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫২৯)
১১. বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
إذا رأيت نفسك متحيراً فالزم الاستغفار فإن الاستغفار مما يفتح الله به على العبد.
“যখন তুমি নিজেকে দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পাও, তখন ইস্তিগফারে (ক্ষমা প্রার্থনায়) অবিচল থাকো। কেননা,ইস্তিগফার হলো সেই বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত, যার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার জন্য (সমস্যা সমাধানের) পথ উন্মুক্ত করে দেন।”(শারহুল কাফিয়াতুশ শাফিয়াহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৮৯)
১২. ইলমের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,
إدراك الشيء على ما هو عليه إدراكًا جازمًا
“কোনো জিনিসকে তার প্রকৃত অবস্থা যেমন আছে, তেমনিভাবে সুনিশ্চিত ও সন্দেহমুক্তভাবে উপলব্ধি করার নামই হল জ্ঞান।”(ইবনু উসাইমীন; আল-উসূল মিন ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ১৫; কিতাবুল ইলম, পৃষ্ঠা: ৯)
.
১৩. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন
لا تأخذك العاطفة؛ فالعاطفة إن لم تكن مبنيَّة على العقل والشرع = صارت عاصفة تعصف بك، وتطيح بك في الهاوية.
“আবেগকে তোমার উপর কর্তৃত্ব বা আধিপত্য বিস্তার করতে দিও না। কেননা, আবেগ যদি বুদ্ধি ও শরীআতের ভিত্তিতে না হয়, তবে তা এক ভয়াবহ ঝড় হয়ে ওঠে যা তোমাকে তছনছ করে দিবে এবং ধ্বংসের অতল গহ্বরে (গভীর খাদে) নিক্ষেপ করবে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৫৩৫)
.
১৪. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
إذا رأيت الناس يتزاحمون على أبواب المستشفيات ولكنهم في غفلة عن أبواب المساجد فاعلم أن الوضع ليس بالحسن، لأن تكالب الناس وحرصهم على شفاء الأمراض البدنية دون الأمراض القلبية دليلٌ على أن هناك انتكاساً _والعياذ بالله .
“যদি তুমি দেখো যে মানুষজন হাসপাতালের দরজাগুলোর সামনে ভিড় জমাচ্ছে, অথচ তারা মসজিদের দরজাগুলোর প্রতি উদাসীন, তাহলে বুঝে নাও যে অবস্থা ভালো নয়। কারণ, শরীরের অসুখ নিরাময়ে তারা যতটা উদ্বিগ্ন ও তৎপর, হৃদয়ের রোগ নিরাময়ে তারা ততটাই উদাসীন এটি একটি বিপর্যয়ের স্পষ্ট নিদর্শন।(আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)”(ইবনু উসাইমীন; ফাতহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৭৪)
.
১৫. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন;
إِذَا بَلَغَتِ الْبِنْتُ حَدًّا تَتَعَلَّقُ بِهَا نُفُوسُ الرِّجَالِ وَشَهْوَاتُهُمْ فَإِنَّهَا تَحْتَجِبُ دَفْعًا لِلْفِتْنَةِ وَالشَّرِّ، وَيَخْتَلِفُ هَذَا بِاخْتِلَافِ النِّسَاءِ، فَإِنَّ مِنْهُنَّ مَنْ تَكُونُ سَرِيعَةَ النُّمُوِّ جَيِّدَةَ الشَّبَابِ، وَمِنْهُنَّ مَنْ تَكُونُ بِالْعَكْسِ.
“যখন কোনো মেয়ে এমন এক বয়সে উপনীত হয়, যে সময় পুরুষদের মন ও (আকাঙ্ক্ষা) কামনা-বাসনা তার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে,তখন ফিতনা ও অকল্যাণ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে তাকে পর্দা করতে হবে। এটি বিভিন্ন মেয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারণ তাদের মধ্যে কেউ কেউ দ্রুত বড় হয় ও তরুণী হয়, আবার কেউ কেউ হয় এর উল্টো”(ইবনু উসাইমীন;মাজমূ‘আতু আসইলাতিন তাহুম্মুল উসরাহ আল-মুসলিমাহ, পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৪)
আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
১৬. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
وﷲِ إن المعاصيَ لتؤثرُ في أمنِ البلادِ وتؤثرُ في رخائها واقتصادها وتؤثرُ في قلوبِ الشعبِ”.
“আল্লাহ্র কসম! নিশ্চয়ই গুনাহসমূহ দেশের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলে,দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে এবং জনগণের হৃদয়েও গভীর প্রভাব ফেলে।”(আসারুল মা‘আসি পৃষ্ঠা নং-১৬)
.
১৭. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: “নামাযের পরে পঠিতব্য তাসবীহ চারভাবে বর্ণিত হয়েছে:
(১). দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং দশ বার আল্লাহু আকবর।
.
(২). তেত্রিশ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর। সর্বমোট নিরানব্বই বার। তারপর শেষ করবে لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ বলার মাধ্যমে।
.
(৩). তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবর বলা।
.
(৪). সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবর পঁচিশ বার করে সর্বমোট একশত বার বলা।”(শারহু মানযূমাতি উসূলিল ফিকহ ওয়া কাওয়াইদুহু; পৃষ্ঠা: ১৭৬-১৭৭)
১৮. ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদর্শিত বাহ্যিক ধার্মিকতা দেখে প্রতারিত হবেন না।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
وكم من نساء الآن يبكين ندمًا حين تزوجن ملتزمين! ووجدن أنهم من أسوأ الناس معاملة لزوجاتهم! مع أن النبي صلى الله عليه وسلم يقول: (خيركم خيركم لأهله)”.
“কত নারীই না আজ অনুশোচনায় অশ্রু ঝরাচ্ছেন (কাঁদছেন), যখন তারা এমন পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে করেছেন, যারা বাইরে থেকে দ্বীনদার (ধার্মিক) বলে মনে হতো; কিন্তু পরে জানতে পারেন,এই পুরুষরাই নিজেদের স্ত্রীর সঙ্গে আচরণে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ! অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের (স্ত্রীর) কাছে উত্তম।”(ইবনে মাজাহ হা/১৯৭৭; ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং ২০/২২৫)
.
১৯. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
هي أيام يسيرة ثم ارتحال، وينقضي زمن العمل إلى زمن الجزاء، ولكن اصبر وصابر حتى تنال ما يناله الصابرون.
(দুনিয়ার) এই জীবন তো খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। এরপরই বিদায় নিতে হবে। অতঃপর আমল করার সময় শেষ হয়ে যাবে এবং (কিয়ামতে) শুরু হবে প্রতিদান প্রাপ্তির সময়। অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ কর, এবং ধৈর্যের সঙ্গে সংগ্রাম করো—যতক্ষণ না তুমি ধৈর্যশীলদের প্রাপ্ত প্রতিদান অর্জন করো।”(শারহুল কাফিয়্যা আশ-শাফিয়্যাহ, খন্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৪৫৮)
.
২০. বিক্ষোভ আন্দোলন সমাবেশ সম্পর্কে ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ফাতওয়া:
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর:- প্রিয় পাঠক! সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্নকর্তা: সম্মানিত শায়খ! আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করে যে, খারাপ কাজের প্রতিবাদ হিসেবে আন্দোলন করা বৈধ। যখন তারা কোন মন্দ কাজ দেখে, তখন তারা একত্রিত হয়ে আন্দোলন করে। তাদের দাবি শাসক এই ধরনের কাজের অনুমতি দিয়েছেন।
শাইখ জবাবে বলেন :
أولًا : إن المظاهرات لا تفيد بلا شك بل هي فتح باب للشر والفوضى، والمظاهرات تمر هذه الأفواج وربما تمر على الدكاكين وعلى الأشياء التي تسرق وتسرق، وربما يكون فيها اختلاط بين الشباب المردان والكهل وربما يكون فيها نساء أحيانًا، فهي منكر ولا خير فيها، لكن ذكروا لي أن بعض البلاد النصرانية الغربية لا يمكن الحصول على الحق إلا بالمظاهرات، وهم أعني النصارى والغربيون إذا أرادوا أن يفحموا الخصومة تظاهروا فإذا كان مستعملًا وهذه بلاد كفار ولا يرون بها بأسًا ولا يصل المسلم إلى حقه أو المسلمون إلى حقهم إلا بهذا فأرجو ألا يكون به بأس، أما في البلاد الإسلامية فأرى أنها حرام ولا تجوز، وأتعجب من بعض الحكام إن كان كما قلت حقًّا أن يأذن فيها مع ما فيها من الفوضى إيش الفائدة منها؟ نعم ربما يكون بعض الحكام يريد أمرًا إذا فعله انتقده الغرب مثلًا وهو يداهن الغرب ويحابي الغرب فيأذن للشعب أن يتظاهر حتى يقول للغربيين : انظروا إلى الشعب تظاهروا يريدون كذا أو تظاهروا لا يريدون كذا، فهذه ربما تكون وسيلة لغيرها ينظر فيها هل مصالحها أكثر أو مفاسدها أكثر ؟
السائل : … .
الشيخ : إيش ؟
السائل : كذا منكر حصل فعملت المظاهرة فنفع .
الشيخ : لكنها تضر أكثر إن نفعت هذه المرة ضرت المرة الثانية، يسار نعم
প্রথমত:নিঃসন্দেহে আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল কোন (ফায়দা) উপকারে আসে না।বরং এগুলি মন্দ এবং বিশৃঙ্খলার দরজা খুলে দেয়।এই আন্দোলন যখন পাড়া-মহল্লা দিয়ে অতিবাহিত হয়, তখন মাঝে মধ্যে দোকানপাটে লুটপাট, চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই-রাহাজানি হয়। কখনো কখনো যুবক ও বয়স্কদের মধ্যে সংমিশ্রণ
ঘটে এমনকি মহিলারাও এতে শরিক হয়। এটি ঘৃণিত, এর মধ্যে কোন উপকারিতা নেই। তবে আমি (শুনেছি) অবগত হয়েছি যে, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের কিছু খ্রীষ্টান দেশ মনে করে যে, ন্যায়বিচার পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে (বিক্ষোভ) আন্দোলন। তারা অর্থাৎ, খ্রিষ্টানরা ও পশ্চিমারা যদি তাদের প্রতিপক্ষদের চুপ করাতে চায়, এবং নিজেদের অধিকার আদায় ও সরকারকে যথাযোগ্য জবাব দেয়ার জন্য আন্দোলন করে।যদি এটি অমুসলিম দেশগুলিতে হয় এবং তারা এতে কোন সমস্যা না দেখে আর মুসলিমরা সেখানে এ কাজ (আন্দোলন) না করা পর্যন্ত নিজেদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম না হয়,তবে আমি আশা করি এটি সমস্যা হিসেবে দেখা হবে না (অর্থাৎ অমুসলিমদের দেশে মুসলিমদের অধিকার পাওয়ার জন্য এটি করাতে কোন সমস্যা নেই)।
কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে আমি মনে করি এটি জায়েজ নয়,বরং হারাম। আমি অবাক (আশ্চর্য) হই ঐ সমস্ত মুসলিম দেশের কথা শুনে,— আপনি যেমনটি বলেছেন যদি তা সত্য হয় যে তিনি (এই ধরনের বিক্ষোভে) অনুমতি দেন, যদিও এতে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এতে কি কোন উপকারিতা আছে? হ্যাঁ ! হতে পারে, কিছু শাসক এমন কিছু করতে চান যা করলে পশ্চিমারা তার সমালোচনা করবে, অথচ তিনি পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট রাখতে চান। সুতরাং, তারা জনগণকে আন্দোলন করার অনুমতি দেয় যাতে পশ্চিমাদের বলতে পারেন: ‘দেখো, জনগণ তো নিজেরাই বিক্ষোভ করছে; তারাই এটা চায়’ কিংবা ‘তারা এটা চায় না’। এটি হয়তো কোনো অন্য (কৌশল) উদ্দেশ্যের অংশও হতে পারে। তবে, এটাতে লাভ বেশি হচ্ছে নাকি ক্ষতি বেশি হচ্ছে? (এটা খেয়াল করতে হবে যে, এতে কতটুকু উপকারীতা বয়ে আনছে আর কতটুকু (ক্ষতি) অপকারিতা বয়ে আনছে)
প্রশ্নকর্তা: …………
শাইখ: কি?
প্রশ্নকর্তা: যদি অন্যায় কাজের জন্য আন্দোলন করা হয় আর এর ফলে উপকার সাধন হয়?
শাইখ: কিন্তু এটা (বিক্ষোভ আন্দোলন) উপকার করলেও অধিকাংশ সময় ক্ষতিই বেশি করে। এমনকি যদি এইবার উপকারী হয়, পরের বার এটি ক্ষতি করবে। আর এটা একটি বামপন্থী মনোভাব। হা!”( ইবনু উসাইমীন ;লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-২০৩)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
২১. আমাদের ইমাম সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন
: العشر الأواسط أفضل من العشر الأول والعشر الأواخر أفضل من العشر الأواسط وتجدون هذا في الغالب مطرد وأن الأوقات الفاضلة آخرها أفضل من أولها ويوم الجمعة عصره أفضل من أوله ويوم عرفة عصره أفضل من أوله والحكمة من هذا والله أعلم:أن النفوس إذا بدأت بالعمل كلت وملت فرغبت بفضل آخر الأوقات على أولها حتى تنشط فتعمل العمل الصالح.
“(রমাদানের) প্রথম দশ দিনের তুলনায় মধ্যবর্তী দশ দিন উত্তম। মধ্যবর্তী দশ দিনের তুলনায় শেষ দশ দিন উত্তম। এই বিষয়টি প্রায়শই সঠিকভাবে প্রমাণিত হয় যে,সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তার শেষ সময়। যা প্রথম সময়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যেমন শুক্রবারের বিকেল তার প্রথম অংশের তুলনায় উত্তম। আরাফার দিন বিকেল তার প্রথম অংশের তুলনায় উত্তম। এর (হিকমা) রহস্য আল্লাহ জানেন। তবে মানুষের মন যখন কাজ শুরু করে, তখন তা ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। ফলে তারা শেষ সময়ের বরকত পেতে আগ্রহী হয় এবং সে সময়ে ভালো কাজ করার জন্য আবার উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে”।(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-৭১/৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
২২. “আহলুল হাদিস ও সালাফিরা একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি না করে বরং সবাই সংঘটিত হয়ে মিলেমিশে কাজ করুন।”
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
আমাদের ইমাম সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন;
فاقول لإخوانى من شباب الصحوة الإسلامية إذا كنا نريد أن نوقظ الأمة الإسلامية من رقدتها ومن غفلتها فإنه يجب علينا أن نسير بخطط ثابتة و على أسس راسحة لأننا نريد أن يكون الحكم لله ونريد أن يثبت دين الله فى الأرض على عباد الله وهذه غاية عظيمة
“আমি আমার ইসলামী জাগরণের পথিকৃৎ তরুণ ভাইদের বলতে চাই, যদি আমরা মুসলিম উম্মাহকে তার গভীর নিদ্রা ও গাফিলতি থেকে জাগ্রত করতে চাই,তাহলে আমাদের অবশ্যই সুদৃঢ় পরিকল্পনা ও স্থিতিশীল ভিত্তির ওপর অগ্রসর হতে হবে। কারণ আমরা চাই শাসন কেবল আল্লাহরই হোক, এবং আমরা চাই আল্লাহর দ্বীন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ও দৃঢ়মূল হোক। আর আর নিঃসন্দেহে এটা এক মহান লক্ষ্য।” (আস-সাহওয়াতুল ইসলামিয়াহ: যাওয়াবিত ওয়া তাওজীহাত, পৃষ্ঠা: ৫২)
.
২৩. বিবাহের প্রস্তাবকারী পাত্রের জন্য তার প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা কিছু শর্ত সাপেক্ষে বৈধ।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
এই বিষয়ে আমাদের ইমাম সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য,বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
” يجوز للخاطب أن يرى مخطوبته لكن بشروط :
الشرط الأول : أن يحتاج إلى رؤيتها فإن لم يكن حاجة فالأصل منع نظر الرجل إلى امرأة أجنبية منه ؛ لقوله تعالى ( قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ).
ثانيا : أن يكون عازما على الخطبة ، فإن كان مترددا فلا ينظر ، لكن إذا عزم فينظر ، ثم إما أن يقدم وإما أن يحجم .
ثالثا : أن يكون النظر بلا خلوة ، أي يشترط أن يكون معه أحد من محارمها إما أبوها أو أخوها أو عمها أو خالها ، وذلك لأن الخلوة بالمرأة الأجنبية محرمة ؛ لقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( لا يخلون رجل بامرأة إلا مع ذي محرم ) ، وقال صلى الله عليه وسلم : ( إياكم والدخول على النساء قالوا : يا رسول الله ، أرأيت الحمو ؟ قال : الحمو الموت ).
الرابع : أن يغلب على ظنه إجابتها وإجابة أهلها ، فإن كان لا يغلب على ظنه ذلك فإن النظر هنا لا فائدة منه ؛ إذ إنه لا يجاب إلى نكاح هذه المرأة سواء نظر إليها أم لم ينظر إليها .
واشترط بعض العلماء ألا تتحرك شهوته عند النظر وأن يكون قصده مجرد الاستعلام فقط وإذا تحركت شهوته وجب عليه الكف عن النظر ، وذلك لأن المرأة قبل أن يعقد عليها ليست محلاً للتلذذ بالنظر إليها فيجب عليه الكف ، ثم إنه يجب في هذا الحال أن تخرج المرأة إلى الخاطب على وجه معتاد أي لا تخرج متجملة بالثياب ولا محسنة وجهها بأنواع المحاسن ، وذلك لأنها لم تكن إلى الآن زوجة له ، ثم إنها إذا أتت إليه على وجه متجمل لابسة أحسن ثيابها فإن الإنسان قد يقدم على نكاحها نظرا لأنها بهرته في أول مرة ، ثم إذا رجعنا إلى الحقائق فيما بعد وجدنا أن الأمر على خلاف ما واجهها به أول مرة ”
“বিয়ের উদ্দেশ্যে কোনো পুরুষের জন্য তার প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা বৈধ, তবে কিছু শর্ত রয়েছে:
প্রথম শর্ত: দেখা প্রয়োজনীয় হতে হবে। যদি প্রয়োজন না থাকে, তাহলে মূলনীতি হলো একজন পুরুষের জন্য কোনো অজানা (নন মাহারাম) নারীর দিকে দৃষ্টি দেওয়া নিষিদ্ধ। কারণ আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন:قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ(মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে” (সূরা আন-নূর: ৩০)
.
দ্বিতীয় শর্ত: তার বিয়ের বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে। যদি সে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে,তাহলে দেখা বৈধ নয়। তবে যদি সে বিয়ে করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সে দেখতে পারবে, এরপর হয়তো অগ্রসর হবে অথবা পিছিয়ে আসবে।
.
তৃতীয় শর্ত: দেখা হতে হবে নির্জনতা (খালওয়া) ছাড়া। অর্থাৎ, সেখানে মেয়েটির কোনো মাহরাম (যেমন: তার বাবা, ভাই, চাচা বা মামা) উপস্থিত থাকতে হবে। কারণ কোনো পুরুষের জন্য একাকী কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে থাকা হারাম। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:”لا يخلون رجل بامرأة إلا مع ذي محرم”কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে না থাকে, তবে তার মাহরাম (ঘনিষ্ঠ আত্মীয়) থাকলে ভিন্ন কথা”(সহীহ বুখারী হা/৫২৩৩) তিনি (ﷺ) আরও বলেছেন:”إياكم والدخول على النساء”
নারীদের কাছে প্রবেশ করা থেকে সাবধান থাকো।সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল, দেবর (স্বামীর ভাই) সম্পর্কে কী বলবেন?”তিনি বললেন: “الحمو الموت””দেবর হলো মৃত্যুতুল্য “(সহীহ বুখারি হা/৫২৩২)
.
চতুর্থ শর্ত: (মেয়েটিকে দেখার ক্ষেত্রে) তার (মেয়ের) এবং তার অভিভাবকদের সম্মতির সম্ভাবনা প্রবল হতে হবে। যদি তাদের সম্মতির সম্ভাবনা না থাকে, তবে এই দেখা অর্থহীন হবে। কারণ সে যদি মেয়েটিকে দেখেও থাকে, তবুও যদি তাকে বিয়ে করার অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে এই দেখা অনর্থক।
.
কিছু আলেম আরও একটি শর্ত যোগ করেছেন—দেখার সময় পুরুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, বাসনা বা ইচ্ছা।
(“শাহ্-ও-য়াত) জাগ্রত হওয়া জায়েজ নয়, বরং তার উদ্দেশ্য কেবল তথ্য সংগ্রহ করা হওয়া উচিত। যদি তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, বাসনা বা ইচ্ছা জেগে ওঠে, তবে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া আবশ্যক। কারণ, বিয়ের আগ পর্যন্ত নারীকে দেখার মাধ্যমে কোনো প্রকার আনন্দ লাভ করা বৈধ নয়।
এছাড়াও, মেয়েটির উচিত স্বাভাবিক অবস্থায় পুরুষের সামনে আসা। বিশেষভাবে সাজসজ্জা করে বা সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে আসা উচিত নয়। কারণ, সে এখনো তার স্ত্রী নয়। যদি সে সুসজ্জিত হয়ে আসে, তাহলে হতে পারে পুরুষ প্রথম দর্শনেই তার প্রতি মোহিত হয়ে পড়ে এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু পরে বাস্তবতা বুঝতে পারলে সে হয়তো অনুতপ্ত হবে”।(ইবনু উসাইমীন,ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব,পৃষ্ঠা:২৫৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
২৪: সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
“الإنسان إذا فتح على نفسه (باب التشاؤم) فإنها تضيق عليه الدنيا ؛ فيتخيل كل شيء على أنه شؤم”.
“যদি মানুষ নিজের জন্য (অশুভ লক্ষণের) দরজা খুলে দেয়, তাহলে দুনিয়া তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যাবে;
এবং সে প্রতিটি বিষয়কে অমঙ্গলের প্রতিচ্ছবি হিসেবে কল্পনা করতে থাকবে।”(ইবনু উসাইমীন আল কাওলুল মুফিদ আলা কিতাবিত তাওহীদ,খণ্ড:২ পৃষ্ঠা:৩২)
২৫. সৎ কাজের আদেশ করা ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা এটি নারী-পুরুষ উভয়ের দায়িত্ব।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:-
*وظيفة الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر ليست خاصة بالرجال،بل حتى النساء عليهن أن يأمرن بالمعروف وينهين عن المنكر، ولكن في حقول النساء، ليس في مجامع الرجال وفي أسواق الرجال،لكن في مجتمعات النساء، في أيام العرس وفي أيام والدراسة*
“সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করার দায়িত্ব শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট নয়; বরং নারীদেরও এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এটি নারীদের পরিমণ্ডলে হওয়া উচিত— পুরুষদের সমাবেশ বা তাদের বাজারে নয়; বরং নারীদের নিজস্ব পরিবেশে, যেমন বিয়ের অনুষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অনুরূপ স্থানে।”(মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন,শারহু রিয়াদিস সালিহিন (রিয়াদ: দারুল ওয়াতান, প্রকাশের ক্রমধারাবিহীন, ১৪২৬ হি. খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪১১)
.
২৬. বিবাহের জন্য কেমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করবেন?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
نصيحتي لمن أراد الزواج أن يختار من النساء من أوصى النبي ﷺ بتزوجها حيث قال: “تزوجوا الودود الولود” وقال ﷺ: “تنكح المرأة لمالها، وحسبها، وجمالها، ودينها، فأظفر بذات الدين”،
وأن تختار المرأة من كان ذا خلق ودين، لقول النبي ﷺ:
“إذا أتاكم من ترضون دينه وخلقه فزوجوه”
وأن وأن تتحرى غاية التحري ولاتتعجل بقبول الخطبة حتى تبحث عن حال الخاطب لئلا تندم على تسرعها.
“যারা বিবাহ করতে চায়, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো—তারা যেন সেই নারীদের বেছে নেয়, যাদের সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহের জন্য উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:”এমন নারীকে বিয়ে করো যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী”। (আবু দাউদ হা/২০৫০) এবং আরও বলেছেন: “নারীকে বিবাহ করা হয় চারটি বিষয় দেখে। সেগুলো হলো: তার সম্পদ,তার বংশ, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারি।’’তুমি দ্বীনদারি (বেছে নেওয়া)-র মাধ্যমে সফলতা অর্জন করো”।(সহীহুল বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬)
.
এবং নারীদের উচিত এমন একজন পুরুষকে নির্বাচন করা,যে উত্তম চরিত্র ও দ্বীনদারীতার অধিকারী। যেমনটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যদি তোমাদের কাছে এমন কোনো পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব দেয়,যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে বিবাহ দাও’।(তিরমিযী হা/১০৮৪ সনদ হাসান) এছাড়াও,বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে যেন তাড়াহুড়ো না করে,বরং পাত্র সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত, যাতে পরে তাড়াহুড়োর জন্য অনুশোচনা করতে না হয়।”(ইবনু উসাইমীন; “মুসলিম নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী”- ৯৬)
.
২৭. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
ينبغي لنا أن لا ننظر إلى منزلتنا عند الناس وإنما ننظر إلى منزلتنا عند الله عز وجل وإذا صححنا ذلك كفانا الله مؤونة الناس
“আমাদের উচিত মানুষের দৃষ্টিতে আমাদের (মর্যাদা) অবস্থান নিয়ে চিন্তা না করা; বরং আমাদের উচিত আল্লাহ্র দৃষ্টিতে আমাদের মর্যাদা কেমন,তা নিয়ে চিন্তা করা। যদি আমরা এটি সংশোধন করি (অর্থাৎ আল্লাহ্র সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিই),তাহলে আল্লাহ আমাদের জন্য মানুষের (প্রশংসা বা সমালোচনার) বোঝা হালকা করে দেবেন।”(ইবনু উসাইমীন;তাফসিরুল কুরআনিল কারিম সূরা আন-নিসা খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৯১)
.
২৮. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
“ما خرجنا لنعيش في الدنيا كما تعيش البهائم نأكل ونشرب وننام فقط ، ولكن خرجنا لكي نعد الزاد للآخرة”
“আমরা দুনিয়ায় কেবল পশুর মতো খাওয়া,পান করা ও ঘুমানোর জন্য আসিনি,বরং আমরা পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার উদ্দেশ্যে (দুনিয়ায়) এসেছি।”(ইবনু উসাইমীন; শারহুল কাফিয়াহ আশ-শাফিয়াহ খণ্ড:৪ পৃষ্ঠা:৩৭৯)
.
২৯. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
” الإخلاص لله في العبادة معناه : ألا يحمل العبدَ إلى العبادة إلا حب الله تعالى وتعظيمه ورجاء ثوابه ورضوانه ، ولهذا قال الله تعالى عن محمد رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم: (مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا) الفتح/ 29 ”
“ইবাদতে আল্লাহর জন্য (ইখলাস) একনিষ্ঠতার অর্থ হলো: বান্দাকে ইবাদতের জন্য চালিত করবে শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা, তাঁর মহত্ত্বের প্রতি সম্মান,তাঁর সন্তুষ্টি এবং পুরস্কার লাভের আকাঙ্ক্ষা।এই কারণেই আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বলেছেন:”মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল;আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, কিন্তু নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আপনি তাদেরকে দেখবেন রুকুতে ও সিজদায় অবনত,আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের চিহ্ন তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাবে ফুটে উঠেছে”।(সূরা ফাতহ: ২৯ ইবনু উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২১; পৃষ্ঠা: ১৯)
৩০. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন
إن من الحكمة أن الإنسان يصلي النافلة
في بيته حتى يراه الصبيان فيتعلمون
منه، وحتى يقتدي به النّـساء، وحتى لا
يكون البيت مقبرة لا يصلي فيه .
“এটি বুদ্ধিমত্তার কথা যে,(পুরুষ) মানুষ নফল (ঐচ্ছিক) সালাত তার ঘরে আদায় করবে,যাতে শিশুরা তাকে দেখে শিখতে পারে, মহিলারা তাকে অনুসরণ করতে পারে,এবং ঘরটি যেন কবরের মত হয়ে না যায়,যেখানে নামাজ আদায় করা হয় না।”(ইবনু উসাইমিন,শারহু বুলবুল মারাম, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৪৬)
.
৩১. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
فالمهم أنت يا أخي امشِ على الكتاب والسنة
ولا يهمك أحد ، والدنيا ليست للبقاء ، الذي ما مات اليوم سيموت غداً .
“অতএব হে আমার ভাই! তুমি কুরআন ও সুন্নাহর পথ অনুসরণ কর।অন্য কারো কথায় কান দিও না। (মনে রেখো),এই পৃথিবী চিরস্থায়ী নয়। যে আজ বেঁচে আছে,সে কাল মৃত্যুবরণ করবে”।(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-৭১)
৩২. বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
لا أرى جواز السفر إلى تركيا من أجل التنزه فليس بينها وبين بلاد الكفر فرق إلّا الاذان
“বিনোদনের উদ্দেশ্যে তুরস্কে সফর করা আমি বৈধ মনে করি না কারণ সে দেশের মাঝে এবং কাফের দেশের মাঝে আযান ছাড়া কোন পার্থক্য নেই।”(ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১৭০)
.
৩৩. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
” قضاء حوائج المسلمين أهم من الاعتكاف ، لأن نفعها متعد ، والنفع المتعدي أفضل من النفع القاصر ، إلا إذا كان
النفع القاصر من مهمات الإسلام وواجبات الإسلام
“মুসলমানদের কাজে সহযোগিতা করা ইতিকাফ করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর উপকার নিজের গণ্ডি পেরিয়ে অন্যদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে। ব্যক্তিগত উপকারের চেয়ে নৈর্ব্যক্তিক উপকার অধিক উত্তম। তবে ব্যক্তিগত আমলটা যদি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ও ফরয শ্রেণীর হয় তাহলে নয়।”।(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ১৮০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
.
৩৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا ، أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنْ الدُّنْيَا ) .
“আঁধার রাতের মতো ফিত্নাহ্ আসার পূর্বেই তোমরা সৎ ‘আমালের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে একজন মু’মিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মু’মিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে”।(সহীহ মুসলিম হা/২১৩; ই.ফা. ২১৪; ই.সে. ২২১)
.
হাদিসটির ব্যাখ্যায় বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন;
المهم : أن الرسول عليه الصلاة والسلام حذرنا من هذه الفتن التي كقطع الليل المظلم ، يصبح الإنسان مؤمناً ويمسى كافراً – والعياذ بالله – يومٌ واحدٌ يرتد عن الإسلام ، يخرج من الدَّين ، يصبح فيه مؤمناً ويمسى كافراً – نسأل الله العافية – لماذا ؟ يبيع دينه بعرَض من الدنيا ، ولا تظن أن العرَض من الدنيا هو المال ! كل متاع الدنيا عرَض ، سواء مال ، أو جاه ، أو رئاسة ، أو نساء ، أو غير ذلك ، كل ما في الدنيا من متاع : فإنه عرَض ، كما قال تعالى : ( تبتغون عرَض الحياة الدنيا فعند الله مغانم كثيرة ) فما في الدنيا كله عرَض .
فهؤلاء الذين يُصبحون مؤمنين ويمسون كفاراً ، أو يمسون ويصبحون كفاراً : كلهم يبيعون دينهم بعرَض من الدنيا .
نسأل الله أن يعيذنا وإياكم من الفتن ، واستعيذوا دائما من الفتن
“মূল কথা হলো, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সতর্ক করেছেন ঐ সকল ফিতনা ও পরীক্ষা থেকে, যা এক টুকরো অন্ধকার কালো রাতের ন্যায় হবে। এতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যেখানে একজন ব্যক্তি সকালে মুমিন থাকবে, কিন্তু সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে (আল্লাহ আমাদের নিরাপদ রাখুন) বা সে সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে এবং সকালে কাফির হয়ে যাবে। এই অবস্থা কেন ঘটবে? কারণ তারা নিজেদের দ্বীন বিক্রি করে দেবে সামান্য পার্থিব লাভের বিনিময়ে।
.
পার্থিব লাভ বলতে শুধু সম্পদকেই বোঝাবে না; বরং এতে পৃথিবীর যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে—চাই তা অর্থ,পদমর্যাদা, নেতৃত্ব, নারীসঙ্গ,অথবা অন্য কিছু। পৃথিবীর সকল ধরণের আকর্ষণ পার্থিব লাভের অন্তর্ভুক্ত। যেসব লোক সকালে মুমিন আর সন্ধ্যায় কাফির বা সন্ধ্যায় মুমিন আর সকালে কাফির হয়ে যাবে, তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা দুনিয়ার স্বার্থে নিজেদের দ্বীন ও ঈমান বিক্রি করে দেবে। আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি, তিনি যেন আমাদের এবং আপনাকে সকলপ্রকার ফিতনা ও পরীক্ষা থেকে রক্ষা করেন। নিয়মিতভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত, যেন তিনি আমাদেরকে ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখেন”।[ইবনু উসাইমীন; শারহু রিয়াদুস সালিহীন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২০] (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
৩৫. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন;
«ومِن أجمع ما يكون من الدعاء ما ذكره في حديث أنس رضي الله عنه أن النبي ﷺ كان يُكثر أن يقول في دعائه: ((ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار)).. فإن هذا الدعاء أجمع الدعاء .. (( ربنا آتنا في الدنيا حسنة )) يشمل كل حسنات الدنيا : من زوجة صالحة ومركب مريح وسكن مطمئن وغير ذلك (( وفي الآخرة حسنة )) يشمل حسنات الآخرة كلها : من الحساب اليسير وإعطاء الكتاب باليمين والمرور على الصراط بسهولة والشرب من حوض الرسول ﷺ ودخول الجنة إلى غير ذلك من حسنات الآخرة فهذا الدعاء من أجمع الأدعية، بل هو أجمعها؛ لأنه شامل». .
“দোয়া সমূহের মধ্যে সবচেয়ে সমন্বিত ও অর্থবহ দোয়াগুলোর একটি হলো সেই দোয়া, যা আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) তার দোয়ায় অধিক পরিমাণে এই দু’আটি পড়তেন:‘رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ(“হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন, আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”(সূরা বাকারাহ:২০১) এটি এমন একটি দোয়া, যা দুনিয়া ও আখিরাতের সব রকমের কল্যাণকে একত্র করে। যেমন:رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً “এই অংশে দুনিয়ার সকল কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: সৎ জীবনসঙ্গী, আরামদায়ক বাহন, নিরাপদ ও প্রশান্তিময় বাসস্থান, এবং দুনিয়ার অন্যান্য কল্যাণকর বিষয়।وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً “এই অংশে আখিরাতের সকল কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: সহজ হিসাব নেওয়া, ডান হাতে আমলনামা গ্রহণ, নিরাপদে সিরাত পার হওয়া, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করা, জান্নাতে প্রবেশ, এবং আখিরাতের অন্যান্য সমস্ত কল্যাণ। সুতরাং,এই দোয়াটি দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণের সারাংশ। বরং,এটি দু’আগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক এবং পরিপূর্ণ দু’আ।”(ইবনু উসাইমিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন: ১৬/৬) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
৩৬. বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আমি ২১ বছর বয়সী একজন যুবক। আমি বিয়ে করতে চাই, কিন্তু আমার দুই বড় ভাই এখনও বিয়ে করেনি। তাদের আগে আমার বিয়ে করা কি উচিত হবে?
উত্তরে শাইখ বলেন:
أقول للأخ السائل إنك لست صغيراً على الزواج ؛ فعمرو بن العاص تزوج وله إحدى عشرة سنة ، وجاءه ولد ، ولهذا يقال ليس بينه وبين ابنه عبد الله إلا ثلاث عشرة سنة .
فأقول للأخ السائل توكل على الله وتزوج وأخواك الكبيران متى تيسر لهما الزواج يتزوجان .وهذا من الخطأ الفادح عند بعض الناس أنه لا يزوج البنت الصغيرة مع وجود أكبر منها ، وهذا حرام عليه .
فإذا خطبها كفءٌ في خلقه ودينه فليزوجها وربما تكون هي حائلاً بين البنت الكبيرة وبين الزواج ، كثيراً ما تحول الصغيرة دون الكبيرة فإذا تزوجت الصغيرة فتح الله الباب للكبيرة ، وهذا شيءٌ مجرب ( أي تحول بنت دون بنت ) كما تحول ذرية دون ذرية فقد ورد علينا أكثر من قصة رجلٌ يتزوج فيبقى خمسة عشر عاما لا يولد له فيتزوج الثانية فتحمل الثانية من أول ليلة ثم تحمل الأولى في نفس الأيام .فنقول للسائل تزوج ولا يُعدُّ هذا عقوقاً للوالدين ، ولا قطيعة رحم للأخوين .
“যে যুবক এই প্রশ্ন করেছেন, তাকে আমি বলব—
আপনি এখন বিবাহের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আপনি এখন আর ছোট নন। ইতিহাসে দেখা যায়, সাহাবী আমর ইবনুল আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন এবং তার সন্তানও হয়েছিল। এমনকি বলা হয়, তার এবং তার ছেলে আবদুল্লাহর বয়সের পার্থক্য মাত্র ১৩ বছর।
.
যে ব্যক্তি এই প্রশ্ন করেছেন, তাকে আমি উৎসাহ দেব: আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন এবং বিয়ে করুন। যদি আল্লাহ আপনার বড় দুই ভাইয়ের জন্য বিয়ে করা সহজ করেন, তারাও বিয়ে করবে। কিন্তু বড় ভাইয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ছোট ভাইকে বিয়ে করতে না দেওয়া একটি গুরুতর সামাজিক ভুল। এটি কেবল একটি অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
.
যদি কোনো যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি আপনার কাছে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও দ্বীনদারীতা ঠিক আছে,তাহলে সেটি গ্রহণ করা উচিত। বড় ভাইদের বিয়ে দেরিতে হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।অনেক সময় দেখা যায়, ছোট ভাইয়ের বিয়ে বড় ভাইয়ের বিয়ের পথ খুলে দেয়। এটি কেবল বিবাহের ক্ষেত্রেই নয়, এমনকি সন্তানের জন্ম নিয়েও অনেক সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অনেক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এটি প্রমাণিত যে,দীর্ঘদিন নিঃসন্তান থাকা কেউ দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করার পর সন্তান লাভ করে, এবং পরবর্তীতে প্রথম স্ত্রীও সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হন।অতএব, আমি আপনাকে বলবো, আপনি বিবাহ করুন। এতে আপনার পিতামাতার অবাধ্যতা কিংবা বড় ভাইদের প্রতি অবমাননা কিছুই হবে না। বরং এটি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং বরকতের এক শুভ পদক্ষেপ”।(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-১৫) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
৩৭. তাওয়াক্কুলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
,التوكل هو صدق الاعتماد على الله عز وجل في جلب المنافع ودفع المضار مع فعل الأسباب التي أمر الله بها-
“কল্যাণ অর্জনে ও অকল্যাণ দূরীকরণে সত্যিকারভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং এতদসঙ্গে আল্লাহ যে সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করতে বলেছেন তা অবলম্বন করাকে তাওয়াক্কুল বলে”(ইমাম ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৬৩)
৩৮. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন,
ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কিংবা ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলা হয়েছিল: “ইহুদীরা বলে আমাদের নামাযে আমাদের ওয়াসওয়াসার উদ্রেক হয় না। তিনি বলেন: হ্যাঁ। শয়তান এমন অন্তরে কি করবে যেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত!” (ইবনে উসাইমীন লিকাআতুল বাব আল-মাহতুহ; পৃষ্ঠা: ১৪)
৩৯. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,
إن الأمة الإسلامية لو رجعت إلى دين الله حقا لو رجع رعاتها ورعيتها إلى دين الله حقا واتخذوا المؤمنين أولياء واتخذوا الكافرين أعداء لملكوا مشارق الأرض ومغاربها
“নিশ্চয় মুসলিম উম্মাহ,শাসকগোষ্ঠী এবং প্রজাসাধারণ সত্যিকার অর্থে যদি আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসত এবং কাফের সম্প্রদায়কে শত্রু আর মুমিনদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করত, তাহলে তারা পূর্ব থেকে পশ্চিম- সারা জাহানের অধিকারী (মালিক) হয়ে যেত”।(আস-সাহওয়াতুল ইসলামিয়াহ: যাওয়াবিত ওয়া তাওজীহাত, পৃষ্ঠা: ১০)
৪০. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
” أول ما خلق الله من الأشياء المعلومة لنا هو العرش ، واستوى عليه بعد خلق السماوات، كما قال – تعالى -: ( وهو الذي خلق السماوات والأرض في ستة أيام وكان عرشه على الماء ليبلوكم أيكم أحسن عملا ) “.
“আমাদের কাছে পরিচিত জিনিসগুলির মধ্যে আল্লাহ সর্বপ্রথম যে জিনিসটি সৃষ্টি করেছেন তা হল আরশ, এবং তিনি আসমান সৃষ্টি করার পর (যেভাবে তাঁর মর্যাদা ও পরিপূর্ণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সেইভাবে) এর উপরে উঠেছেন,যেমন আল্লাহ বলেন:”আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম”।(সূরা হুদ: ৭; উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৬২)
.
৪১. মহান আল্লাহর সত্তাগত গুণ চেনার মূলনীতি হল:
وضابط الصفة الذاتية: أنه لم يزل ولا يزال متصفا بها
“যে গুণে তিনি পূর্বে গুণান্বিত ছিলেন এবং এখনও গুণান্বিত আছেন”।
.
অর্থাৎ সত্তাসংলগ্ন গুণ হলো, যেগুলো অনাদি কাল থেকে আল্লাহর সত্তার সঙ্গে রয়েছে এবং অনন্তকাল ধরে থাকবে। যেমন, ইলম, কুদরত, শ্রবণ, দর্শন, পরাক্রমশীলতা, হিকমত, সর্বোচ্চতা, ‘আযমত। এর মধ্যে সংবাদজাত গুণ যেমন চেহারা, দু‘হাত, দু‘চোখ ইত্যাদিও শামিল রয়েছে।.
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন
“الصفات الذاتية: هي صفات المعاني الثابتة لله أزلاً وأبدا، مثل الحياة، والعلم، والقدرة، والسمع، والبصر، والعزة، والحكمة، إلى غير ذلك وهي كثيرة فهذه نسميها صفات ذاتية؛ لأنه متصف بها أزلا وأبدا ولا تفارق ذاته”
“সত্তাগত গুণাবলী: যে ভাবগুলো আল্লাহ্র জন্য অনাদি ও অনন্তকাল ব্যাপী সাব্যস্ত; যেমন- জীবন, জ্ঞান, ক্ষমতা, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, পরাক্রমশালিতা ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি অনেক গুণ। এ গুণগুলোকে আমরা সত্তাগত গুণ বলে থাকি। যেহেতু তিনি এসব গুণে অনাদি ও অনন্তকাল ব্যাপী গুণান্বিত। এগুলো তাঁর সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না।”(শারহুস সাফ্যারিনিয়্যাহ পৃষ্ঠা-১৫৫)।
.
৪২. বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য,অন্যতম মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ,ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,
.
যখন সময় খারাপ হয়ে যাবে আর দেখবে, মানুষের সাথে মেলামেশা শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে এবং আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, তখন তোমার কর্তব্য হলো, তাদের পরিত্যাগ করে একাকী অবস্থান করা।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে বকরি, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়া অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। সে তার দ্বিন নিয়ে ফিতনা থেকে পলায়ন করবে (ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৪৯৫)।’’ [শাইখ ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, শারহু রিয়াদিস সলিহিন: ৫/৩৫৪]
৪৩. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:”আলেমদের উচিত যখনই তারা তাদের কাতারে কোনো বিদআ’তীকে দেখতে পাবেন, তখনই তাকে তাদের কাতার থেকে বের করে দেবেন। কেননা, আহলুস সুন্নাহর মাঝে বিদআ’তীর উপস্হিতি মানেই মুশকিল। কারণ বিদআ’ত ক্যান্সারের মতো। এটা থেকে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ বের হতে পারে না।”(শরহুল আকীদা আস-সাফারীনিয়্যাহ ১৮৩ পৃষ্ঠা)
.
৪৪. বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]বলেছেন,
এই দুনিয়ার জীবনে কোনও মানুষের পক্ষে সর্বদা আনন্দে থাকা সম্ভব নয়। তার একটি দিন যদি যায় প্রফুল্লতায়, তো আরেকটি দিন যাবে দুশ্চিন্তায় (এটাই স্বাভাবিক)।’ [ইবনু উসায়মিন, শারহু রিয়াদিস সালিহিন: ১/২৪৩]
.
৪৫. বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির মুহাদ্দিস ফাক্বীহ ও উসুলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
যদি একজন ব্যক্তি বিদ্রোহ করে এবং ক্ষমতা দখল করে,জনগণকে অবশ্যই তার আনুগত্য করতে হবে, এমনকি যদি সে জোর করে এবং তাদের সম্মতি ছাড়াই ক্ষমতা দখল করে, কারণ সে ক্ষমতা দখল করেছে।
তার কারণ এই যে, যদি তার শাসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়,তাহলে এটি একটি বড় ধরনের মন্দের দিকে পরিচালিত করবে যেমনটি উমাইয়া আমলে ঘটেছিল যখন তাদের কেউ কেউ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে খলিফা উপাধি লাভ করে তখন মানুষ আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করে তাদের আনুগত্য করেছিল।(শরহ আল-আকিদাহ আল-সাফারিনিয়্যাহ (পৃষ্ঠা: ৬৮৮)।
৪৬. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
العلماء أعظم بكثير من غيبة غير العلماء، لأن غيبة غير العلماء غيبة شخصية، إن ضرت فإنها لا تضر إلا الذي اغتاب والذي قيلت فيه الغيبة، لكن غيبة العلماء تضر الإسلام كله؛ لأن العلماء حملة لواء الإسلام، فإذا سقطت الثقة بأقوالهم؛ سقط لواء الإسلام، وصار في هذا ضرر على الأمة الإسلامية، ‘
আলেমদের গীবত সাধারণ মানুষের গীবতের চেয়ে ভয়াবহতা বেশী।কারন সাধারণ মানুষের গীবত ব্যক্তি পর্যায়ে হয়ে থাকে। এই গীবতের মাধ্যমে শুধু গীবতকারী এবং যার দোষ বর্ণনা করা হয় তার ক্ষতি হয় (অন্য কারো কোন ক্ষতি হয় না)। কিন্তু আলেমদের গীবত পুরো ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। কেননা আলেমগণ ইসলামের পতাকা বহনকারী। তাদের কথা-বার্তা বা পরনিন্দার মাধ্যমে (জনগণের কাছে তাদের) বিশ্বস্ততা যখন লোপ পেয়ে যায়,তখন ইসলামের নিশান ভূলুণ্ঠিত হয়।ফলে এই ক্ষতি গোটা মুসলিম উম্মাহর উপর আপতিত হয়।(ইমাম উসাইমীন শরহ রিয়াদুস সালেহীন, ১/২৫৬)
৪৭. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
যদি দ্বীন (ইসলাম) মানুষের আবেগের উপর নির্ভরশীল হতো, তাহলে সমস্ত বিদআ’তীপন্থীরা হক্কপন্থী হিসেবে গণ্য হতো।”(ইমাম উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী লিক্বা নং ৩৩)
.
৪৮. না*স্তি*ক*রা শয়তানের খাদেম, আর এজন্যই তারা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে।
.
মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সহজাত প্রমাণ সম্পর্কে সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
.
শয়তানের দ্বারা যারা বিপথগামী হয়নি, তাদের জন্য মহান আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে সব থেকে বড় প্রমাণ হলো ফিতরাতি বা সহজাত প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,সুতরাং আপনি (হে মুহাম্মাদ) একনিষ্ঠভাবে নিজ চেহারাকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আল্লাহর সেই ফিতরাতের (প্রকৃতি) অনুসরণ কর; যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।”(সূরা রুম:৩০;৩০) মানুষের সঠিক ফিতরাত (প্রকৃতি) আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় এবং এ থেকে বিচ্যুত হয় না; যদি না শয়তান তাকে বিপথগামী করে। শয়তানের দ্বারা যে বিপথগামী হয়েছে, সে এই প্রমাণকে না-ও অনুধাবন করতে পারে।আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন,তখন তিনি বলেছিলেন,اَللَّهُمَّ أَغِثْنَا, اَللَّهُمَّ أَغِثْنَا (আল্লা-হুম্মা আগিসনা,আল্লা-হুম্মা আগিসনা,অর্থ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দিন।তখন আকাশে মেঘ করলো এবং তিনি মিম্বার থেকে নেমে আসার আগেই বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। এটা স্রষ্টার অস্তিত্ত্বের পক্ষে একটি দলিল।(শারহ আল-সাফারিনিয়্যাহ থেকে অনূদিত দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৬৭৪৫)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
৪৯. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
.
মুসলমানদের মধ্যে পাপী তিন প্রকার: প্রথম দল যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; দ্বিতীয় দল যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং তাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি পাবে, তারপর তাদেরকে বের করে আনা হবে। এবং তৃতীয় একটি দল যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং শাস্তি পাবে, তবে তাদের জন্য শাফায়াত করা হবে এবং তাদের প্রাপ্য শাস্তি সম্পূর্ণরূপে পাওয়ার আগেই তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনা হবে। (উসাইমীন; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব: ৪/২)
.
৫০. ইচ্ছেকৃত সালাত পরিত্যাগকারীর কোরবানি দেওয়া এবং পশু জবাই করা কোনটিই জায়েজ নয়।
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন; যদি সালাত পরিত্যাগকারী কুরবানী করার ইচ্ছা করে তাহলে তার উচিত হলো সালাত পরিত্যাগ করার জন্য প্রথমত আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করা। যদি সে তওবা না করে এবং তার উপরেই সে অটল থাকে অর্থাৎ সালাত আদায় না করে তাহলে তার ওই কুরবানীতে নেকি হবে না এবং কুরবানী কবুলও হবে না । যদি সে সালাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজেই যবেহ করে তাহলে সেই যবেহটি হবে মৃত্যুর ন্যায়। আর মৃত্যু খাওয়া হালাল নয়। কারণ মুরতাদ কর্তৃক জবাই করা গোশত হারাম। (উসাইমীন; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব: ৩২/১২৪)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন; যদি কোন সালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি পশু জবেহ করে তাহলে তার জবেহিত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ নয় কেন? কারণ, সেটা হারাম। যদি ইয়াহুদী এবং খ্রিস্টান জবেহ করে তাহলে তার জবেহকৃত গোশতটা আমাদের জন্য হালাল। কেননা ইহুদী-খ্রিষ্টানের জবেহকৃত গোশতের চেয়ে সালাত পরিত্যাগকারীর যবেহকৃত গোশতটি বেশি জঘন্যতম এবং নাপাক। (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খন্ড: ১২, পৃষ্ঠা: ৪৫, ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৫৯৬৪৫)
আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
৫১. বিবাহে পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
.
মেয়ের অভিভাবকের উপর ফরজ হচ্ছে- প্রস্তাব দেয়া ছেলের দ্বীনদারি ও চারিত্রিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া। যদি ভাল তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দিবে। আর যদি বিরূপ তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবে। যদি আল্লাহ দেখেন যে, এই অভিভাবক শুধু দ্বীনদারি ও চারিত্রিক কারণে এই ছেলের কাছে বিয়ে দেয়নি তাহলে তিনি অচিরেই তার মেয়ের জন্য দ্বীনদার ও চরিত্রবান ছেলের ব্যবস্থা করে দিবেন।(উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ফতোয়া সংকলনে (বিবাহ/পাত্র নির্বাচন/প্রশ্ন নং-১৬ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৪০৫৪)
৫২. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ,আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] -কে তাঁর শেষ সময়ে অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,শরীয়তের বিধি বিধান জানার জন্য কাদের কাছে প্রশ্ন করা উচিত?
.
শাইখ উত্তরে বলেন, শাইখ সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান এবং শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল-বারাক (হাফিযাহুল্লাহ) এই দু’জনকে জিজ্ঞাসা করা উচিত।
No comments:
Post a Comment