Sunday, May 25, 2025

হালাল উপার্জনের মূলনীতি এবং বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশ করে উপার্জন করা জায়েজ কি

 প্রশ্ন: হালাল উপার্জন তথা চাকরি/ব্যবসা বৈধ হওয়ার মূলনীতি কি? ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশ করে আয় করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?

▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে,অনেক কনটেন্ট নির্মাতা এ উপার্জন ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে হালাল না হারাম সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তাও করেন না। অথচ ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে উপার্জনের হালাল-হারামের মৌলিক বিধান জানা প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হাদীসে আছে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অন্বেষণ করা ফরয।” (ইবনে মাজাহ হা/২২৪) যিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ে জড়াবেন তার জন্য অবিলম্বে সেই ইলম অর্জন করাও তার উপর অনিবার্য।উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “আমাদের বাজারে শুধু ঐ ব্যক্তি বিক্রয় করতে পারবে যে দ্বীনী জ্ঞানে প্রজ্ঞা অর্জন করেছে।”[উক্তিটি তিরমিযী (৪৮৭) বর্ণনা করেছেন এবং হাসান গরীব বলেছেন। শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে এটাকে হাসান বলেছেন] আহমাদ বিন আহমাদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,معرفة الحلال من الحرام فرض عين على كل مسلم مكلف ليكون على بصيرة من دينه حتى لا يقع في المحظور ويخالف أحكام الإسلام،”হালাল ও হারাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক দায়িত্বশীল মুসলিমের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ফরয; যাতে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে এমন জাগ্রত জ্ঞানসম্পন্ন হন যেন নিষিদ্ধ বিষয়ে পতিত না হন এবং ইসলামী বিধানের বিরোধিতা না করেন”। (মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফী তালাবির রিযক,রিয়াদ:দারু কুনুয ইশবিলিয়া,পৃষ্ঠা;১১ প্রথম সংস্করণ ১৪৩০ হিঃ/২০০৯ খ্রীঃ) তাই আমাদের সবার আগে বুঝে নিতে হবে এই প্ল্যাটফর্মগুলো,বিশেষ করে গুগল, ফেসবুক বা ইউটিউব কেন অর্থ প্রদান করছে? এই আয়ের উৎস কী? এবং শরিয়তের আলোকে এ ধরনের আয় বৈধ কি না? এই লেখায় ইনশাআল্লাহ আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করব, এবং কনটেন্ট নির্মাণ ও অনলাইন আয়ের ইসলামী দিক নির্দেশনা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
.
জীবনের জন্য হালাল জীবিকা অর্জনের গুরুত্ব এবং ইসলামী শরিয়তের আলোকে হালাল উপার্জনের মৌলিক নীতিমালা:
.
এই পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষকে জীবিকা অন্বেষণ করতে হয়, কারণ এটি জীবনধারণের অপরিহার্য শর্ত। তবে ইসলাম মানুষকে শুধু উপার্জনের নির্দেশই দেয়নি; বরং কিভাবে, কোন পন্থায় উপার্জন করতে হবে তাও সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই একজন মুসলিমের জীবিকা অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশিত হালাল ও শরী‘আতসম্মত পন্থায় হতে হবে। অন্যথায় সেই উপার্জন ইবাদত হওয়া তো দূরের কথা, বরং গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাসূল (ﷺ) নিজেও ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর অনুগামী খুলাফায়ে রাশেদীন ও বহু সাহাবাও ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা এ পেশাকে শুধু দুনিয়ার উপার্জনের মাধ্যমই মনে করতেন না, বরং ইবাদতের এক মহান রূপ হিসেবে গ্রহণ করতেন।ইসলামে “হালাল” বলতে বোঝায় যা কল্যাণকর, পবিত্র এবং শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ। হালাল উপার্জন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি বিষয়। মহান আল্লাহ শুধু উপার্জনের প্রতি উৎসাহ দেননি, বরং উপার্জনের কোন পন্থাটি বৈধ এবং কোনটি অবৈধ তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন: “আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা আল-বাক্বারাহ:২৭৫) সুতরাং, হালাল উপার্জন অর্থ হলো উপার্জনের ক্ষেত্রে শরী‘আতের অনুমোদিত ও নৈতিকভাবে বৈধ পন্থা অবলম্বন করা। রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “কোন উপার্জন সর্বোত্তম?” তিনি উত্তরে বলেন: “মানুষের নিজ হাতে উপার্জন এবং প্রতিটি হালাল ব্যবসা।”(মুসনাদে আহমাদ,মিশকাত হা/২৭৮৩; সিলসিলা সহীহা হা/৬০৭) এই বাণী প্রমাণ করে,ইসলামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য হালাল উপার্জনের দ্বার উন্মুক্ত। তবে অবশ্যই তা হতে হবে সৎ, ন্যায্য ও আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী। আর ইসলামে উপার্জনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দু’টি মূলনীতি রয়েছে। যেমন:
.
(১).উপার্জনের মূল উৎস হালাল হওয়া: এর অর্থ হলো যে বস্তু বা পণ্যের মাধ্যমে উপার্জন করা হচ্ছে,সেই পণ্যটি মূলগত বা শর্তগতভাবে বৈধ ও পবিত্র হতে হবে।অর্থাৎ, যেসব জিনিসের ব্যবসা বা ব্যবহার শরিয়তসম্মত, সেসব থেকেই উপার্জন হালাল হয়। উদাহরণস্বরূপ: কাপড়, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, ইসলামসম্মত বই-পত্র ইত্যাদি বিক্রি করা হালাল ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত।সুতরাং,এসব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থও হালাল। অন্যদিকে, যদি কেউ মদ, জুয়া,পর্নোগ্রাফি, হারাম সংগীতের সিডি, ইসলামবিরোধী বই বা অনুরূপ কোনো হারাম বস্তু বিক্রি করে, তাহলে তার ব্যবসার উৎসই মূলগতভাবে হারাম বলে গণ্য হবে। এমনকি যদি বিক্রির পদ্ধতি সততা ও ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে হয় তবুও ওই উপার্জন হালাল হবে না। কেননা ইসলাম এমন এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যা মানবজাতির জন্য কল্যাণকর ও উপকারী সবকিছুকে হালাল করেছে। মহান আল্লাহ নিজ কুরআনে মানবজাতিকে সম্বোধন করে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা হালাল ও পবিত্র রিজিক থেকে আহার করে, যা তিনি দয়াপূর্ণভাবে তাদের জন্য অনুমোদন করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ “হে মানবসকল! পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে, তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)।উপরিউক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, শুধু হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। এখানে ‘তাইয়্যিব’ বা পবিত্র বলতে ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে, যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাঁটি ও পবিত্র। অবশ্য অধিকাংশ মুফাসসির আয়াতে ‘হালাল’ শব্দ দ্বারা মূলগত বৈধতার এবং ‘তাইয়্যিব’ দ্বারা পদ্ধতিগত বৈধতার অর্থ গ্রহণ করেছেন। (বিস্তারিত জানতে তাফসীরে সা‘দী, পৃষ্ঠা: ৮০)
.
(২).উপার্জনটি পদ্ধতিগত ভাবে হালাল হওয়া: এর অর্থ হলো উপার্জনের মাধ্যম বা পদ্ধতিটি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ (হালাল) হতে হবে। অর্থাৎ যেভাবে অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়াটি শরীয়তসম্মত হওয়া অপরিহার্য।কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা ইসলামী শরী‘আতে নিষিদ্ধ।উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যবসায়ী হালাল পণ্য যেমন কাপড়, খাদ্যদ্রব্য বা অন্যান্য বৈধ সামগ্রী বিক্রি করেন এবং সেই বিক্রয় প্রক্রিয়ায় তিনি ধোঁকাবাজি, ওজনে কম দেওয়া, ঘুষ, সুদ ইত্যাদি অনৈতিক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন, তাহলে তার উপার্জনের মাধ্যমটি হালাল হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু যদি কেউ একই হালাল পণ্য বিক্রি করেন, তবে তা চুরি করা মাল হয়, বা ওজনে কম দেন,পণ্যের দোষ গোপন করেন,কিংবা মিথ্যা বলে, মিথ্যা শপথ করে গ্রাহককে প্রতারিত করেন, তাহলে পণ্যটি মূলগত হালাল হলেও তার উপার্জনের পদ্ধতি শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,”হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সম্মত হয়ে ব্যবসা করা বৈধ এবং একে অপরকে হত্যা করিও না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ’ (সূরা আন-নিসা: ২৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ কর না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৮)। উপরিউক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, ব্যবসার পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথা কঠোর শাস্তির ঘোষণা রয়েছে। অতএব, এই দুটি মূলনীতি (১) উপার্জনের উৎস হালাল হওয়া এবং (২) উপার্জনের পদ্ধতি শরীয়তসম্মত হওয়া যথাযথভাবে মেনে চললে যে কোনো বৈধ ব্যবসা, এমনকি নিজের হাতে কেক তৈরি করে বিক্রয় করাও ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য ইনশাআল্লাহ।
ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশ করে উপার্জন করা জায়েজ কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমেই আমরা গুগল অ্যাডসেন্স ও বিজ্ঞাপন সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবো:
.
সম্মানিত পাঠক! প্রথমেই জানা দরকার Google AdSense বা বিজ্ঞাপন আসলে কী? গুগল অ্যাডসেন্স হলো গুগলের একটি বিজ্ঞাপন পরিচালনামূলক সেবা, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অ্যাপের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে। এসব বিজ্ঞাপন গুগলের নিজস্ব সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এবং ব্যবহারকারীরা যখন এসব বিজ্ঞাপন দেখে বা ক্লিক করে, তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সেই চ্যানেলের মালিক তথা কনটেন্ট নির্মাতার অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয়। এই উপার্জনের পেছনের মূল উৎস হলো বিভিন্ন কোম্পানি, যারা তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য গুগলকে অর্থ প্রদান করে।দুঃখজনক হলেও সত্যি,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে অশ্লীল,অনৈতিক বেপর্দা নারীদের নাচ গান কিংবা ইসলামি দৃষ্টিকোণে হারাম পণ্য যেমন সুদ, মদ, ও এজাতীয় অন্যান্য জিনিসের প্রচারও হয়ে থাকে। গুগল এই বিজ্ঞাপনগুলো বিপুল অর্থের বিনিময়ে ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন করে এবং সেই আয়ের ক্ষুদ্র একটি অংশ বিজ্ঞাপন প্রদর্শনকারীদের যেমন ইউটিউবার বা ওয়েবসাইট মালিকদের দিয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ইনকাম হালাল কিনা!ইতিপূর্বেই আমরা হালাল উপার্জনের মূলনীতি উল্লেখ করেছে অতএব,হালাল উপার্জনের মূলনীতির আলোকে বিচার- বিশ্লেষণ করলে, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মনিটাইজেশন চালু করে কনটেন্ট প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি দুইটি অবস্থায় বিভক্ত হতে পারে। যার মধ্যে একটি পরিপূর্ণ হারাম, আরেকটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ হতে পারে। যেমন:
.
(১).ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওর বিষয়বস্তু যদি হারাম হয়,তাহলে নিশ্চিতভাবে কোনো মতভেদ ছাড়াই সে উপার্জন সম্পূর্ণভাবে হারাম হবে। আর যদি ভিডিওর মূল কন্টেন্ট হালালও হয়, কিন্তু গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে এমনসব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় যেগুলো অশ্লীলতা, নগ্নতা, হারাম পণ্য (যেমন: তামাক, মদ, সুদ, জুয়া) কিংবা বাদ্যযন্ত্রসহ গান-বাজনার প্রচার করে, তাহলে এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থও হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন শুধু হারামেরই নয়, বরং হারামকে প্রশ্রয় ও প্রচারের সহযোগিতাও করে, যা দ্বিগুণ গুনাহের কারণ হয়। দুঃখজনকভাবে, আজকাল একশ্রেণির নারী-পুরুষ নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কেবল অর্থের লোভে কিংবা ভিউয়ের লালসায় অনৈতিক, অশ্লীল ও নগ্ন কনটেন্ট ছড়াচ্ছে। একজন বিবেকবান, আত্মসচেতন মানুষ কখনোই এসব অশ্লীলতার পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। যারা এই সব কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করছে, তারা নিজেরাও যেমন গুনাহগার, তেমনি দর্শকদেরও চোখের জিনায় লিপ্ত করে মারাত্মক পাপে জড়াচ্ছে। অথচ রাসূল ﷺ বলেছেন: “দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা….।”
(সহীহ বুখারী, হা/৬২৪৩; মিশকাত, হা/৮৬)।
.
আল্লাহ তা‘আলা এসব অশ্লীলতা প্রদর্শনকারীদের শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করে বলেন,اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ”নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না”।(সূরা আন-নূর: ১৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,”বলুন, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে”।(সূরা আল-আ‘রাফ: ৩৩)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান করে, সে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; তাদের সওয়াব থেকে কিছুই কমবে না। আর যে ব্যক্তি গোমরাহির দিকে আহ্বান করে, সে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ বহন করবে; তাদের পাপ থেকেও কিছুই কমবে না।”(সহীহ মুসলিম: ২৬৭৪) প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন: ‘আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাশীল কেউ নয় এবং এ কারণেই তিনি সকল অশ্লীল কাজ হারাম করেছেন আর (আল্লাহ্‌র) প্রশংসার চেয়ে আল্লাহ্‌র অধিক প্রিয় কিছু নেই।” (সহীহ বুখারী হা/৫২২০)
.
বর্তমান সৌদি আরবের অন্যতম একজন আলেম শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, “হারাম ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা এবং তা প্রচার করে অর্থ উপার্জন করা উভয়-ই হারাম। কেননা তা অন্যায়, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ “তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা কর। এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা কর না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর”।(সূরা আল-মায়িদাহ: ২; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪, ৬৬৯৭, ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৬৭১৭৩)। উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন।(তাফসীর ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা: ১২; তাফসীরে কুরতুবী; ৬ষ্ঠ খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৪৬-৪৭)। কাতার ভিত্তিক বিখ্যাত ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েব’-এর আলেমগণ বলেন, ‘হারাম ও নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত করে অর্থ উপার্জন করা জায়েয নয়। সুতরাং আপনার উপর অপরিহার্য হল নিজেকে এর থেকে মুক্ত করা’ (ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং-২৬৫১০২, ১৩২১৩৯)।
.
পাশাপাশি ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে, إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাসআলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায়’ (অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে)। হাদীছেও এমন বক্তব্য এসেছে (সহীহ বুখারী, হা/৫২; মুসলিম, হা/৩৯৮৬)। অন্য হাদীসে নবী (ﷺ) বলেন,دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ “যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হল দ্বিধা-সন্দেহ”।(তিরমিযী, হা/২৫১৮, সনদ সহীহ)। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সন্দেহমুক্ত, বৈধ ও উৎকৃষ্ট পন্থায় অর্থোপার্জন করার প্রচেষ্টা করা এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন উপার্জনের পথ অন্বেষণ করা”। (মূলনীতিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ দায়িমাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৭৪-২৭৫ ও ১৪তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৪২০)
.
(২).ফেসবুক বা ইউটিউবে আপলোডকৃত ভিডিওর বিষয়বস্তু যদি ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল ও নৈতিকতার সীমার মধ্যে থাকে, এবং ভিডিওতে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনসমূহ অশ্লীলতা, নগ্নতা কিংবা হারাম পণ্য থেকে মুক্ত থাকে, এবং সেখানে শরিয়তসম্মত উপকারিতা অর্জন করা যায় তাহলে তা থেকে আয় করা বৈধ হতে পারে। কিন্তু এটি পুরোপুরি অসম্ভব কেননা Google AdSense তাদের নিজেদের ইচ্ছামত বিজ্ঞাপন নির্বাচন প্রচার প্রসার করে যেখানে চ্যানেল মালিক বা কন্টেন্ট আপলোডকারীর এই বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা নেই। গবেষকগণ বলেন, ইউটিউব মনিটাইজেশন/গুগুল এ্যাডসেন্সে প্রায় ৫০০ ক্যাটাগরি এর মধ্যে মাত্র ২০০ ক্যাটাগরি ব্লক করার সুযোগ আছে। বাকি প্রায় ৩০০ ক্যাটগরি ব্লক করা সম্ভব নয়। সে আলোকে একেক দেশে একেক ধরণের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়।অনেক সময় চ্যানেল মালিক জানতেও পারে না যে, ইউপরোপ-আমেরিকা বা অন্যান্য দেশে তার চ্যানেলে কী ধরণের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে!
.
সারকথা এই যে, ইউটিউব চ্যানেলে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন যদি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ ও হালাল পণ্য বা সেবার প্রচার করে, তাহলে তা অনুমোদনযোগ্য। বিশেষ করে যদি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ গুগল মনিটাইজেশনের পরিবর্তে নিজস্বভাবে প্রস্তুতকৃত হালাল পণ্যের বিজ্ঞাপন ব্যানার বা টেক্সট আকারে ইউটিউব চ্যানেলে উপস্থাপন করে, অথবা দেশীয় কোনো বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শরীয়তসম্মত চুক্তির মাধ্যমে তাদের হালাল পণ্যের প্রচার-প্রসার করে এবং চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক গ্রহণ করে তাহলে সে উপার্জন শরীয়ত অনুযায়ী বৈধ হবে। অন্যথায়, যদি বিজ্ঞাপন বা উপার্জনের মাধ্যম শরীয়তের পরিপন্থী হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, ইসলামে হালাল ও হারাম স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন,یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ”হে মানবসকল! পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে, তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”।(সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)। হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট, আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। (সহীহ বুখারী, হা/৫২; মুসলিম, হা/৩৯৮৬)। রাসূল (ﷺ) হালাল উপার্জনের প্রতি জোর তাগিদ দিয়ে বলেন, إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا “আল্লাহ পবিত্র।পবিত্র ভিন্ন তিনি গ্রহণ করেন না”।(সহীহ মুসলিম হা/১০১৫) অপর বর্ননায় তিনি বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّىَ بِالْحَرَامِ ‘হারাম দ্বারা পরিপুষ্টিসাধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।(মিশকাত হা/২৭৮৭; সিলসিলা সহীহা হা/২৬০৯) তিনি (ﷺ) আরো বলেন, كُلُّ جَسَدٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ “হারাম দ্বারা গঠিত প্রত্যেক দেহ জাহান্নামে যাওয়ার অধিক উপযুক্ত।” (সহীহুল জামে হা/৪৫১৯ সনদ বিশুদ্ধ) অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنِ اكْتَسَبَ مَالًا مِنْ مَأْثَمٍ فَوَصَلَ بِهِ رَحِمَهُ أَوْ تَصَدَّقَ بِهِ أَوْ أَنْفَقَهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ جُمِعَ ذَلِكَ كُلُّهُ جَمِيْعًا فَقُذِفَ بِهِ فِيْ جَهَنَّمَ- ‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করল। অতঃপর এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করল বা ছাদাক্বা করল বা আল্লাহর পথে তা ব্যয় করল, এর সবগুলিকে একত্রিত করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”।(সহীহ আত তারগীব হা/১৭২১)
ইমাম ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,وكما يتَعَلَّق الثَّوَابُ وَالْعِقَاب والمدح والذم بِإِخْرَاج الدِّرْهَم فَكَذَلِك يتَعَلَّق باكتسابه، وَكَذَلِكَ يسْأَل عَنهُ مستخرجه ومصروفه، من أَيْن اكْتَسبهُ وَفِيمَا أنفقهُ-“পুণ্য, শাস্তি, প্রশংসা ও নিন্দা যেমন টাকা-পয়সা খরচের সাথে সম্পৃক্ত, তেমনি তা উপার্জনের সাথেও সম্পর্কিত। অনুরূপভাবে এর আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে”।(ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, আল-ফাওয়াইদ পৃষ্ঠা: ২০৭, ‘টাকা-পয়সা উপার্জনের প্রকারভেদ’ অনুচ্ছেদ; কায়রো দারুল হাদীস: ১৪২৬/২০০৫) তাই হালাল উপার্জন করতে হবে এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ ইনকাম থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,”পবিত্র ও নিকৃষ্ট কখনো সমান হতে পারে না- যদি নিকৃষ্টের আধিক্য তোমাকে আকৃষ্ট করে। অতএব হে বিবেকবান লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে”।(আল মায়েদা, ৫/১০০)।
.
সালাফি শাইখ আবূ যাইদ যামীর (হাফিযাহুল্লাহ্)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইউটিউব থেকে উপার্জন করার বিধান।
জবাবে তিনি বলেন: ❝দেখুন ইউটিউবে আপনি যদি কোন চ্যানেল ওপেন করেন তাহলে সেখানে কিছু বিজ্ঞাপন আসবে (অ্যাডসেন্স ব্যবহারের কারণে), আর (এভাবে) সেখান থেকে আপনি কিছু টাকাও উপার্জন করতে পারবেন। সত্যি বলতে আপনি নিজেও জানেন না যে (অ্যাডসেন্স ব্যবহারের ফলে) ঠিক কোন ধরণের বিজ্ঞাপন আসবে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখানে সুদ, মদ, সিনেমা ও এজাতীয় জিনিস আসে। তো এখানে বেশিরভাগই নোংরা জিনিস দেখায়। আর তাই আমি এটাকে (হালাল এর) অনুকূল মনে করিনা। তারপরও আপনারা উলামাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। তবে আপনার কাছে যদি বাছাই করবার সুযোগ থাকে, যাতে ভালো কোন বিজ্ঞাপন দেখাবে, কিন্তু আপনার কাছে (বাছাই করবার) সেই ক্ষমতা নেই। মনে করুন আপনার চ্যানেল থেকে লাইভ দারস্ হচ্ছে আর উমুক শাইখের হালাল ও হারাম সংক্রান্ত দারস্ হবে। আর তার পূর্বে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে ফিল্মের , মদের, কিংবা অনুরূপ অশ্লীল বিষয়বস্তুর। এখন চিন্তার বিষয় হলো, দুটোই বিপরীতমুখী জিনিস। সুতরাং এটা শোভনীয় নয়। এইজন্যই আমরা আমাদের যেসব চ্যানেল বানিয়েছি তা থেকে অনেক টাকা কামাতে পারি, কিন্তু আমরা কামাই না। কেননা, আমাদের নিকটে এটা শোভনীয় নয়। দা’ওয়াতের খরচপাতি বহন কিংবা মাধ্যম ও উপকরণসমূহ একত্রিত করার জন্য আরও উপায় রয়েছে, টাকা-পয়সা সংগ্রহ করার জন্যেও আরও মাধ্যম রয়েছে, কিন্তু এটা (ইউটিউবে এ্যাডসেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা) ঠিক নয়।❞(গৃহীত: https://youtu.be/mbBWt1rt_0I উর্দু থেকে অনুবাদক: আখতার বিন আমীর)।
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! আমরা সবাইকে হালাল কাজে ধাবিত হতে এবং হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি। জেনে রাখুন, আল্লাহ যখন কোনো জিনিসকে হারাম করেন, তখন তিনি এর মূল্যকেও হারাম করেন। অনুরূপভাবে, হারাম কিছু বাস্তবায়নের মাধ্যমও হারাম। মূল কাজের যে হুকুম, মাধ্যমেরও সেই হুকুম। হুকুমের দিক থেকে এই দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। সুতরাং, প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হলো সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা এবং হালাল উপার্জনের মাধ্যম অন্বেষণ করা।আল্লাহ তাআলা বলেন:وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجاً وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ * وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْراً “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ করে দিবেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা সে ধারণাও করে না। যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ নিশ্চয়ই তার উদ্দেশ্য পূরণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি মাত্রা ঠিক করেছেন।”[সূরা ত্বালাক: ২, ৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।”(ইমাম আলবানী বর্ণনাটিকে হিজাবুল মারআতিল মুসলিমাহ বইয়ে পৃ. ৪৯) সহিহ বলে গণ্য করেছেন] এমনকি হারাম উপার্জন দিয়ে পরিপুষ্ট দেহ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে শরীর হারাম উপার্জনে গঠিত সে শরীর জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া যুক্তিযুক্ত।”(তাবারানী ও আবু নুআইম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহিহ আল-জামে হা/৪৫১৯) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, হালাল রুজি দিয়ে আমাদেরকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং তাঁর নিজ অনুগ্রহে অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

বাসায় বা বাইরে কাজের ফাঁকে অমনোযোগী হয়ে রেডিও বা মোবাইল থেকে কুরআনের তেলাওয়াত শোনা কি শরিয়তসম্মত

 প্রশ্ন: সালাতের বাইরে কুরআন তেলাওয়াত শোনা হলে, তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা এবং তেলাওয়াত চলাকালে নীরব থাকা কি শরয়ী দৃষ্টিতে আবশ্যক? এছাড়া বাসায় বা বাইরে কাজের ফাঁকে, শুয়ে-বসে রেডিও/মোবাইল থেকে কুরআনের তেলাওয়াত শোনা কি শরিয়তসম্মত? এ অবস্থায় মনোযোগে ঘাটতি হলে শোনার বিধান কী হবে?

▬▬▬▬▬▬▬▬◆◯◆▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার জন্য। দুরুদ বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। অতঃপর মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানবজাতির কল্যাণের আলো।মানবজাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ যে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তা হলো আল-কুরআন। এই মহাগ্রন্থের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা হলো এটি আল্লাহ তাআলার কালাম, অর্থাৎ স্বয়ং তাঁর বাণী। তাই এর প্রতিটি অক্ষর, শব্দ, আয়াত এবং সূরা, রহমত, বরকত ও হেদায়াতে পরিপূর্ণ।যখন কোনো মুমিন নারী-পুরুষ কুরআন তেলাওয়াত করে,কিংবা তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করে তখন তার ঈমান বৃদ্ধি পায়, চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, অন্তর কেঁপে ওঠে,গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় এবং মন-প্রাণ বিনয়ী হয়ে পড়ে। সুতরাং, কুরআন তেলাওয়াত কিংবা অন্য কারো তেলাওয়াত শ্রবণ করার সময় মনোযোগ অন্য কোথাও রাখা উচিত নয়। তেলাওয়াত অবশ্যই উদাসীনতা ছাড়া, পূর্ণ মনোযোগ ও শ্রদ্ধার সাথে করা উচিত,শোনা উচিত। তেলাওয়াতের সময় একজন ক্বারী (তেলাওয়াতকারী) ভাববে,সে যেন স্বয়ং আল্লাহর সামনে উপস্থিত রয়েছে এবং আল্লাহর কালাম তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে কথা বলছে। এভাবে তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতে হবে, যাতে মনোসংযোগ ও একাগ্রতা আরও বাড়ে।
.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে,সালাতের বাইরে কুরআনের তেলাওয়াত শ্রবণ করার সময় চুপ থাকা ও মনোযোগ দেওয়া ফরজ (ওয়াজিব) না মুস্তাহাব (উপযুক্ত) এ বিষয়ে আহলুল আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।সাধারণত,এ বিষয়ে দু’টি প্রসিদ্ধ অভিমত পাওয়া যায়।
.
(১).প্রথম অভিমত হলো সালাতের বাইরে মনোযোগ সহকারে কুরআনুল কারীম শ্রবণ করা এবং তেলাওয়াত চলাকালে নীরব থাকা ওয়াজিব। এটি হানাফি মাজহাবের অভিমত। তাঁদের কেউ কেউ একে ব্যক্তিগত ফরজ (ফরযে আইন) হিসেবে গণ্য করেছেন, আবার কেউ কেউ একে সমষ্টিগত ফরজ (ফরযে কিফায়া) বলে বিবেচনা করেছেন। তাঁরা দলিল হিসেবে আল্লাহ্‌ তাআলার এই আয়াতটি পেশ করেছেন যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন:وَ اِذَا قُرِیٴَ الۡقُرۡاٰنُ فَاسۡتَمِعُوۡا لَهٗ وَ اَنۡصِتُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ“অতএব, যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষিত হয়।”(সূরা আল-আ’রাফ; ৭: ২০৪)
.
আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ গ্রন্থে এ এসেছে:
الاستماع إلى تلاوة القرآن الكريم حين يقرأ خارج الصلاة واجبٌ إن لم يكن هناك عذرٌ مشروعٌ لترك الاستماع .
وقد اختلف الحنفيّة في هذا الوجوب ، هل هو وجوبٌ عينيٌّ ، أو وجوبٌ كفائيٌّ ؟
قال ابن عابدين : الأصل أنّ الاستماع للقرآن فرض كفايةٍ ، لأنّه لإقامة حقّه ، بأن يكون ملتفتاً إليه غير مضيّعٍ ، وذلك يحصل بإنصات البعض ، كما في ردّ السّلام .ونقل الحمويّ عن أستاذه قاضي القضاة يحيى الشّهير بمنقاري زاده : أنّ له رسالةً حقّق فيها أنّ سماع القرآن فرضُ عينٍ .نعم إنّ قوله تعالى في سورة الأعراف ( وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ) قد نزلت لنسخ جواز الكلام أثناء الصّلاة ، إلاّ أنّ العبرة لعموم اللّفظ لا لخصوص السّبب ، ولفظها يعمّ قراءة القرآن في الصّلاة وفي غيرها “
“নামাযের বাইরে কুরআন তিলাওয়াত করা হলে, যদি তা শোনার ক্ষেত্রে শরয়ী কোনো বৈধ ওজর না থাকে, তাহলে সেই তিলাওয়াত শোনা ওয়াজিব (আবশ্যক)। তবে হানাফি মাজহাবে এ ওয়াজিব হওয়ার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে এটি কি ফরযে আইন (প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ফরজ) নাকি ফরযে কেফায়া (সম্মিলিতভাবে ফরজ)?” ইবনে আবিদীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: মূলনীতি হলো কুরআন শ্রবণ করা ফরযে কিফায়া, কেননা এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআনের হক আদায় করা, অর্থাৎ মনোযোগসহ তা শোনা ও অবহেলা না করা। আর এটি তখনই পূরণ হয়ে যায় যখন উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ অন্তত তা মনোযোগসহ শোনে। ঠিক যেমন সালামের জবাব দেওয়া (যদি এক ব্যক্তি জবাব দেয়, তবে অন্যদের পক্ষ থেকেও তা আদায় হয়ে যায়)। আল-হামাওয়ী তাঁর শাইখ, প্রধান বিচারপতি ইয়াহইয়া (যিনি ‘মিনকারীযাদা’ নামে পরিচিত) থেকে বর্ণনা করেছেন: তাঁর একটি পুস্তিকা রয়েছে, যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শোনা ফরযে ‘আইন (ব্যক্তিগত ফরজ)।” “হ্যাঁ, আল্লাহ তায়ালার বাণী: ‘আর যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শোন এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষিত হয়’ (সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত ২০৪)—এই আয়াত নামাযের সময় কথা বলার বৈধতা রহিত করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল। তবে ফিকহের মূলনীতি হলো: শুধু অবতীর্ণ হওয়ার কারণ নয়, বরং শব্দের সাধারণতাই বিবেচ্য। আর এই আয়াতের শব্দাবলী এমন যে, তা নামাযের ভেতরে ও বাইরে—উভয় ক্ষেত্রেই কুরআন তিলাওয়াতের সময় শ্রবণের নির্দেশ দেয়।”(আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
(২).দ্বিতীয় মতামত অনুযায়ী সালাতের বাইরে মনোযোগ সহকারে কুরআনুল কারীম শ্রবণ করা এবং তেলাওয়াতের সময় চুপ থাকা মুস্তাহাব ও সুপারিশকৃত। এ মতের অনুসারীরা সূরা আল-আ‘রাফের ২০৪ নং আয়াতকে কেবল নামাযের তিলাওয়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ব্যাখ্যা করেছেন।এটি (জমহুর) অধিকাংশ আলেমদের মত।
.
হাফিয ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
وقال علي بن أبي طلحة عن ابن عباس في الآية قوله : ( وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ) الأعراف/204 : يعني في الصلاة المفروضة . وكذا روي عن عبد الله بن المغفل . وقال ابن جرير : حدثنا حميد بن مسعدة حدثنا بشر بن المفضل حدثنا الجريري عن طلحة بن عبيد الله بن كريز قال : رأيت عبيد بن عمير وعطاء بن أبي رباح يتحدثان والقاص يقص فقلت : ألا تستمعان إلى الذكر وتستوجبان الموعود ؟ قال : فنظرا إلي ثم أقبلا على حديثهما . قال : فأعدت ، فنظرا إلي وأقبلا على حديثهما . قال : فأعدت الثالثة ، قال : فنظرا إلي فقالا : إنما ذلك في الصلاة ( وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ) الأعراف/204وكذا رواه غير واحد عن مجاهد وقال عبد الرزاق عن الثوري عن ليث عن مجاهد قال : لا بأس إذا قرأ الرجل في غير الصلاة أن يتكلم .
وكذا قال سعيد بن جبير والضحاك وإبراهيم النخعي وقتادة والشعبي والسدي وعبد الرحمن بن زيد بن أسلم : أن المراد بذلك في الصلاة .وهذا اختيار ابن جرير : أن المراد من ذلك الإنصات في الصلاة وفي الخطبة كما جاء في الأحاديث من الأمر بالإنصات خلف الإمام وحال الخطبة “
“আলী ইবনে আবি তালহা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে আয়াতটির (সূরা আল-আ‘রাফ: ২০৪) তাফসিরে বর্ণনা করেন:“وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ”অর্থ: যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা দয়া প্রাপ্ত হও।[সূরা আল-আ‘রাফ: ২০৪] তিনি বলেন: এর অর্থ হলো ফরজ নামাযে (ইমামের) কুরআন তিলাওত শোনার সময় (চুপ থাকা)। একই ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবনুল মুগাফফাল থেকেও বর্ণিত হয়েছে। ইবনু জারীর বলেন: আমাদেরকে হামীদ ইবনু মাসআদাহ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমাদেরকে বিশর ইবনুল মুফাদ্দাল বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমাদেরকে আল-জারীরী বর্ণনা করেছেন, তিনি তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু কুরায়য থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:আমি ‘উবায়দ ইবনু উমাইর এবং ‘আতা ইবনু আবি রাবাহকে দেখেছি তারা একজন কাহিনীকার কাহিনী বলার সময় নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলেন। আমি বললাম: “তোমরা কি ‘যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো’—এই আয়াত শুনো না? তাহলে কি তোমরা আল্লাহর প্রতিশ্রুত রহমতের যোগ্য হওয়ার চেষ্টা করবে না?” তারা আমার দিকে তাকালেন এবং আবার নিজেদের কথাবার্তায় ফিরে গেলেন। আমি আবার বললাম, তারা আবার তাকালেন, আবার নিজেদের কথায় ফিরে গেলেন।তৃতীয়বার বললে, তারা বললেন: এই নির্দেশ শুধুমাত্র নামাযের মধ্যে প্রযোজ্য। এমনিভাবেই একাধিক ব্যক্তি মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকেও এই ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন। আবদুর রাজ্জাক, স্বরী থেকে, তিনি লায়স থেকে, তিনি মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: “নামাযের বাইরে কেউ কুরআন তিলাওয়াত করলে, তখন কথা বললে কোনো সমস্যা নেই।”এমনটিই বলেছেন:সাঈদ ইবনু জুবাইর, যাহহাক, ইব্রাহীম নাখাঈ, কাতাদাহ, আশ-শা‘বী, আস-সুদ্দী এবং আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম। ইবনু জারীরও এই মতকেই গ্রহণ করেছেন: এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযে অথবা খুতবার সময় কুরআন তিলাওয়াত হলে চুপ থাকা ও মনোযোগ দেওয়া। কেননা, হাদীসসমূহে এমন সময় ইমামের পেছনে এবং খুতবার সময় চুপ থাকার নির্দেশ এসেছে।”(তাফসীরে ইবনে কাসীর; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৭২)
.
উপরোক্ত দুটি মতের মধ্যে দ্বিতীয় মতটি অধিক গ্রহণযোগ্য ও যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ কোনো বিষয়কে বাধ্যতামূলক করতে হলে তার জন্য কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ থেকে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য দলীল থাকা আবশ্যক। অন্যথায়,যথাযথ প্রমাণ ব্যতিরেকে কাউকে কোনো বিষয়ে বাধ্য করা বা নিষেধ করা হলে,তা মানুষের জন্য জুলুম ও কষ্টদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।তবে হা! এতে কোন সন্দেহ নাই যে,কুরআন তিলাওয়াত চলাকালে শ্রদ্ধার সাথে নিরবতা অবলম্বন করে মনোযোগ সহকারে শোনা একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও কাম্য। এটি কুরআনের প্রতি সম্মান ও মহত্ব প্রদর্শনের অংশ হিসেবে বিবেচিত।অন্যদিকে, ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে, জাগ্রত অবস্থায় হোক বা নিদ্রারত অবস্থায়, কুরআনের তিলাওয়াত রেডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে চালু রাখা দোষণীয় নয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তিলাওয়াতের পরিবেশে যেন কোনো রকম হট্টগোল, চেঁচামেচি, অনুচিত কথাবার্তা বা কুরআনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু না ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে তিলাওয়াত বন্ধ রাখা অধিক উপযুক্ত ও সম্মানজনক। কারণ, কুরআনের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত।যেমন:জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِقْرَؤُوْا الْقُرْآنَ مَا ائْتَلَفَتْ عَلَيْهِ قُلُوْبُكُمْ فَإِذَا اخْتَلَفْتُمْ فَقُوْمُوْا عَنْهُ “তোমরা কুরআন পড়, যতক্ষণ তোমাদের মন তা সাগ্রহে চায়। অতঃপর যখন মনের ভাব অন্যরূপ দেখ, তখন তা ছেড়ে উঠে যাও!”(সহীহ বুখারী, হা/৫০৬০; মিশকাত, হা/২১৯০) অপর বর্ননায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ فَاسْتَعْجَمَ الْقُرْآنُ عَلَى لِسَانِهِ فَلَمْ يَدْرِ مَا يَقُوْلُ فَلْيَضْطَجِعْ “যখন তোমাদের কেউ রাতে উঠবে ও (ঘুমের চাপের কারণে) জিহ্বায় কুরআন পড়তে এমন অসুবিধা বোধ করবে যে, সে কি বলছে তা বুঝতে পারবে না, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে”।(সহীহ মুসলিম,হা/৭৮৭;আবূ দাঊদ, হা/১৩১১; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৭২)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] তাঁর গ্রন্থ মুখতাছারুত তিবইয়ান ফী আদাবী হামলাতিল কুরআন -এ বলেন:ومما يعتنى به ويتأكد الأمر به احترام القرآن من أمور قد يتساهل فيها بعض الغافلين القارئين مجتمعين .فمن ذلك : اجتناب الضحك واللغط والحديث في خلال القراءة إلا كلاما يضطر إليه ، وليمتثل قول الله تعالى : ( وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون ) কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন—এটি এমন একটি বিষয়, যার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, কিছু গাফেল ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে কুরআন তেলাওয়াত করেন, অথচ যথাযথ আদব রক্ষা করেন না। যেমন—তেলাওয়াত চলাকালীন হাসাহাসি, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা কিংবা অমনোযোগিতা—এসব থেকে বিরত থাকা উচিত। কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কথা বলার অনুমতি রয়েছে। আল্লাহ তাআলার এই বাণী অনুসরণ করা উচিত: ‘যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং নীরব থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষিত হয়।”(সূরা আ’রাফ: ২০৪; ইমাম নববী, মুখতাসারুত তিবইয়ান ফী আদাবী হামলাতিল কুরআন; পৃষ্ঠা: ৯২)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “বাসায় রেডিও তে বা রেকর্ডারে কুরআনে কারীম বাজিয়ে রাখার হুকুম কী; যখন কেউ তার পরিবারকে দেখার জন্য বা আত্মীয়স্বজনকে দেখার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে?
জবাবে শাইখ বলেন: لا حرج في ذلك، إذا كان ما حوله لغط، إذا كان ما حوله مَن يلغط أو يتكلم بغير حاجة فلا بأس، أما فتح الراديو على القرآن وحوله من يلغط ويتكلم ويخوض فلا، تركه أولى ، يصك؛ لأن هذا فيه نوع امتهان للقرآن، أما إذا فتح ولا عنده أحد، وعنده أحد يستمع أو ساكت أو نائم لا بأس “এতে কোন আপত্তি নাই; যদি তেলাওয়াতের আশেপাশে হৈচৈ না থাকে। যদি তেলাওয়াতের পাশে হৈচৈ করার বা প্রয়োজনবিহীন কথা বলার মত কেউ না থাকে তাহলে কোন অসুবিধা নাই। আর যদি রেডিওতে কুরআন তেলাওয়াত ছেড়ে রাখা হয় অথচ আশপাশে কেউ হৈচৈ করছে, কথা বলছে তাহলে নয়। বরং এমতাবস্থায় বন্ধ রাখাই যুক্তিযুক্ত। যেহেতু এতে কুরআনের অমর্যাদা করা হয়। আর যদি এভাবে ছেড়ে রাখা হয় যে, সেখানে কেউ নাই কিংবা কেউ শুনতেছে, কেউ চুপ করে আছে কিংবা কেউ ঘুমিয়ে আছে তাহলে এতে কোন অসুবিধা নাই।” (বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৬১৪৫; ইসলাম সাওয়াল জবাব ফাতওয়া নং ১৭৪৭৪৩)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:আমি দীর্ঘ সময় রান্নাঘরে থাকি, আমার স্বামীর জন্য খাবার প্রস্তুতের কাজে। সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আমি কুরআন তেলাওয়াত শুনি, কখনো রেডিও থেকে, কখনো টেপ রেকর্ডার থেকে। তাহলে আমার এই কাজ কি সঠিক? নাকি এটি অনুচিত, কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন: আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং নীরব থাকো, যেন তোমরা দয়া লাভ কর।[সূরা আল-আ’রাফ: ২০৪]
উত্তরে শাইখ বলেন:”لا بأس باستماع القرآن الكريم من المذياع أو من المسجل والإنسان يشتغل ، ولا يتعارض هذا مع قوله : ( فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ ) ؛ لأن الإنصات مطلوب حسب الإمكان ، والذي يشتغل ينصت للقرآن حسب استطاعته ” ا”রেডিও বা টেপ রেকর্ডার থেকে কুরআন তেলাওয়াত শোনা,যদিও কেউ কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে,তাতে কোনো দোষ নেই। এটি আয়াতে উল্লেখিত (মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর ও চুপ থাকো)-এর বিরোধী নয়। কারণ, নীরবতা ও মনোযোগ দেওয়া সম্ভবপরতার ভিত্তিতে চাওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি কোনো কাজে ব্যস্ত, সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কুরআনের প্রতি মনোযোগ দিবে।”(আল-মনতাকা মিন ফাতাওয়া আল-ফাওজান,খণ্ড ৩, প্রশ্ন নং-৪৩৭)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: “কিছু মানুষ ঘুমানোর পূর্বে, অথবা পড়াশোনা কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কুরআন তিলাওয়াত শোনে। এটি কি আদব (শিষ্টাচার)-এর অন্তর্ভুক্ত? এবং এর শরঈ হুকুম কী?”
তিনি উত্তরে বলেন: هذا ليس من الآداب ، ليس من الآداب أن يتلى كتاب الله ولو بواسطة الشريط وأنت متغافل عنه ، لقول الله تبارك وتعالى: ( وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا ) الأعراف/20 ، فلذلك نقول : إن كنت متفرغاً لاستماعه فاستمع ، وإن كنت مشغولاً فلا تفتحه … بعض الناس يقول لي: لا ينام إلا على سماع القرآن، إذا كان كذلك فلا بأس ، إذا كان مضطجعاً ينتظر النوم ما عنده شغل ، فيستمع هذا لا بأس به ، ومن استعان بسماع كلام الله، على ما يريد من الأمور المباحة ، لا بأس ليس هناك مانع
“এটি শিষ্টাচারের পরিপন্থী যে, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) তেলাওয়াত করা হয়, এমনকি যদিও তা
টেপ বা রেকর্ডিং-এর মাধ্যমে হোক, এমতাবস্থায় তুমি তার প্রতি (গাফিল) উদাসীন থাকো।কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো’ (সূরা আল আ’রাফ: ২০৪)। সুতরাং আমরা বলি: যদি তুমি এটি শোনার জন্য অবসর হও, তাহলে শুনো; আর যদি ব্যস্ত থাকো, তাহলে তা চালু করো না।…কিছু লোক আমাকে বলে, ‘আমি কুরআন না শুনলে ঘুমাতে পারি না।’ যদি এমন হয় যে, সে শুয়ে আছে এবং ঘুমের জন্য অপেক্ষা করছে, তার কোনো কাজ নেই, এবং সে মনোযোগ দিয়ে (কুরআন) শুনছে,তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর কেউ যদি কুরআনের বাণী শুনে এমন কোনো বৈধ উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, তাহলে তাতেও কোনো সমস্যা নেই,এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।”(ইবনু উসাইমীন; লিকাউল বাবিল মাফতূহ, পর্ব ১৪৬; পৃষ্ঠা: ১৪)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল
প্রশ্ন: একদল লোক গাড়িতে সফর করছিল, তাদের একজন কুরআনের ক্যাসেট চালু করলো। এখন প্রশ্ন হলো,গাড়ীর সবার কি সেই ক্যাসেট শুনা ফরয? আর কেউ যদি কথা বলে, তাহলে কি সে গুনাহগার হবে?
শাইখ (রহিমাহুল্লাহ) এর উত্তরে বলেন:
قال الإمام أحمد رحمه الله في هذه الآية : هذا في الصلاة . وقال : أجمعوا على أن ذلك في الصلاة . وعلى هذا فلو كنت بجوار شخص يقرأ القرآن ويجهر به ، وأنا أسبح وأهلل – ذكر خاص – فإنه لا يلزمني أن أستمع له ، وإنما ذلك في الصلاة فقط .ولكني أقول للأخ الذي شغل المسجل : لا تشغل والناس غافلون ؛ لأن هذا أدنى ما نقول فيه أنه يشبه من قال الله فيهم : ( وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ ) فصلت/26 ، فإذا رأيت إخوانك لا يريدون الاستماع ، إنما هم مشغولون بالحديث بينهم ، فلا تشغل المسجل ، وإذا كنت تشتاق لهذا فهناك سماعة صغيرة أدخلها في أذنك ، ويجعل الصوت له وحده “
“ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াত সম্পর্কে বলেছেন— {وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا}—”যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শুনো এবং চুপ থাকো”(সূরা আরাফ:২০৪)—এই আয়াত সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এবং তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সমস্ত বিদ্বান একমত যে এটি সালাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সুতরাং, যদি আমি এমন কারো পাশে থাকি যিনি জোরে কুরআন তেলাওয়াত করছে, আর আমি নিজে তখন তাসবীহ-তাহলীল (ব্যক্তিগত জিকির) করছি, তাহলে আমার উপর সেই কুরআন শোনা আবশ্যক নয়। এই নির্দেশ কেবল সালাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে আমি সেই ভাইকে যিনি গাড়িতে ক্যাসেট চালু করেছেন একটি পরামর্শ দেব: এমন অবস্থায় ক্যাসেট চালাবেন না, যখন চারপাশের লোকজন গাফেল, অর্থাৎ কুরআন শুনতে আগ্রহী নয়। কারণ, অন্তত আমরা এটুকু বলব এটি এমন এক ধরনের কাজ হয়ে যেতে পারে, যা সেই লোকদের অনুরূপ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন: “আর কাফিররা বলে, তোমরা এ কুরআনের নির্দেশ শোন না এবং তা (আবৃত্তি) তেলাওয়াতের সময় শোরগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হতে পার।”(সূরা ফুসসিলাত: ৪০/২৬) সুতরাং যদি আপনি দেখেন আপনার সঙ্গীরা কুরআন শুনতে আগ্রহী নয়, বরং আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত, তাহলে ক্যাসেট চালাবেন না। যদি আপনি একা শুনতে চান, তাহলে এমন একটি ছোট হেডফোন ব্যবহার করুন, যা আপনি কানে লাগাতে পারেন এবং শুধু আপনি শুনতে পারেন।”(ইবনু উসাইমীন; লিকাউল বাবিল মাফতূহ, পর্ব: ১৯৭; পৃষ্ঠা: ২৬) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◆◯◆▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি.)।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান

 প্রশ্ন: অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান কি? নারীরা কি ঘরে নামাজ আদায়ের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন? ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় তাঁদের জন্য পারফিউম ব্যবহারের অনুমতি আছে কি?

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: নারীদের পারফিউম ব্যবহারের জায়েজ- নাজায়েজ সংক্রান্ত বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ যেমন:
.
▪️প্রথমত: অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান কি:
.
আলেমগণ বলেছেন: অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম বা সুগন্ধি ব্যবহারের হুকুম নির্ভর করে এতে থাকা অ্যালকোহলের পরিমাণ ও তার প্রভাবের ওপর। যদি অ্যালকোহলের পরিমাণ এত বেশি হয় যে তা সুগন্ধির গঠন বা বৈশিষ্ট্যে স্পষ্ট প্রভাব ফেলে, তাহলে এমন সুগন্ধি ব্যবহার করা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই বৈধ নয়। তবে যদি অ্যালকোহলের পরিমাণ খুব কম হয় এবং তা দ্বারা সুগন্ধির বৈশিষ্ট্যে কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত না হয়, তাহলে সে ধরনের পারফিউম ব্যবহার করা জায়েয (বৈধ) গণ্য হবে।” আর একটি মূলনীতি হচ্ছে,কোন জিনিস যদি হারাম হিসেবে গণ্য হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবে তাহলে সেটার ব্যবসা করা; তা থেকে কোন উপকার গ্রহণ করা যেমন;চিকিৎসা করাও হারাম।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,«إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ“আল্লাহ তা‘আলা হারাম বস্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য কোনো চিকিৎসা রাখেন নি”।(বাইহাক্বী হা/১৯৪৬৩; ইবন হিব্বান খণ্ড ৪, হা/১৩৯১)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,العطور المشتملة على نسبة من الكحول يسكر كثيرها ، في نجاستها خلاف بين العلماء ، مبني على نجاسة الخمر وطهارتها ، فمن حكم على الخمر بالنجاسة ، أثبت لهذه العطور النجاسة ، ومن قال بطهارة الخمر ، قال: إن هذه العطور طاهرة .وبكلِّ حال ، فلا يجوز استعمال العطور التي فيها كحول ، سواء قلنا بنجاسة الخمر أو طهارتها ؛ لوجوب إتلاف الخمر ، وعدم الاستفادة منها ، والعطور التي فيها كحول يسكر كثيرها : حكمها حكم الخمر “যেসব সুগন্ধিতে এমন পরিমাণ অ্যালকোহল রয়েছে, যার অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে নেশা সৃষ্টি হয় সে ধরনের সুগন্ধির পবিত্রতা বা অপবিত্রতা সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এই মতভেদ মূলত মদের পবিত্রতা বা অপবিত্রতার উপর নির্ভর করে। যারা মদকে অপবিত্র মনে করেন, তারা এ ধরনের সুগন্ধিকেও অপবিত্র মনে করেন; আর যারা মদকে পবিত্র মনে করেন, তারা এই সুগন্ধিগুলোকেও পবিত্র মনে করেন। তবে যাই হোক না কেন, যেসব সুগন্ধিতে এমন অ্যালকোহল রয়েছে যা অধিক গ্রহণে নেশা সৃষ্টি করে, সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ নয়। কারণ, শরিয়তে মদ ধ্বংস করার আদেশ রয়েছে এবং তা থেকে উপকার গ্রহণ নিষিদ্ধ। অতএব, এসব সুগন্ধির বিধানও মদের মতোই।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা: ১৪৪)
.
ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির আলেমগন আরও বলেছেন :” إذا كانت نسبة الكحول بالعطور بلغت درجة الإسكار ، بشرب الكثير من تلك العطور ، فالشرب من تلك العطور محرم ، والاتجار فيها محرم ، وكذا سائر أنواع الانتفاع ؛ لأنه خمر ، سواء كثر أم قل .وإن لم يبلغ المخلوط من العطور بالكحول درجة الإسكار بشرب الكثير منه : جاز استعماله والاتجار فيه”যদি কোনো সুগন্ধিতে থাকা অ্যালকোহলের পরিমাণ এত বেশি হয় যে, তা অধিক পরিমাণে পান করলে নেশা সৃষ্টি করে, তবে সেই সুগন্ধি পান করা হারাম, তা দ্বারা ব্যবসা করা হারাম, এবং তা যেকোনো রূপে ব্যবহার করাও হারাম; কেননা, সেটি মদ—অল্প হোক বা বেশি।কিন্তু যদি সুগন্ধিতে থাকা অ্যালকোহল এমন মাত্রার হয় যে, তা অধিক পরিমাণে পান করলেও নেশা সৃষ্টি করে না, তবে তা ব্যবহার করা এবং তা দিয়ে ব্যবসা করা জায়েয।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৫৪)
.
স্থায়ী কমিটির আলেমগনকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: অ্যালকোহল বা মদের সব ধরণের ব্যবহারের হুকুম কি? অর্থাৎ ফার্নিচার বার্নিশের কাজে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে, জ্বালানি হিসেবে, ড্রেসিং করার ক্ষেত্রে, পারফিউম তৈরীতে, শোধন করার ক্ষেত্রে এবং ভিনেগার হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে? জবাবে তারা বলেন:ما أسكر شرب كثيره فهو خمر ، وقليله وكثيره سواء ، سواء سمي كحولا أم سمي باسم آخر ، والواجب إراقته وتحريم الإبقاء عليه لاستخدامه والانتفاع به في تنظيف أو تطهير أو وقود أو تعطير أو تحويله خلا ، أم غير ذلك من أنواع الانتفاع .أما ما لم يسكر شرب كثيره ، فليس بخمر ، ويجوز استعماله في تعطير وعلاج وتطهير جروح ونحو ذلك .عبد الله بن قعود … عبد الله بن غديان … عبد الرزاق عفيفي … عبد العزيز بن عبد الله بن بازযে জিনিস বেশি পান করলে মাতলামি ধরে সেটাই মদ। এ জিনিসের অল্প বা বেশি বিধান সমান। এটাকে অ্যালকোহল বলা হোক কিংবা অন্য কোন নাম দেয়া হোক। আবশ্যকীয় কর্তব্য হচ্ছে এটা ঢেলে ফেলে দেয়া। নানাবিধ কাজে যেমন ড্রেসিং করা, শোধন করা, জ্বালানি পদার্থ, পারফিউম তৈরী কিংবা ভিনগারে রূপান্তরিত করণ ইত্যাদি কাজে লাগানোর জন্য এটি রেখে দেওয়া হারাম। আর যে পদার্থ বেশি পান করলেও মাতলামি ধরে না– সেটা মদ নয়। সে পদার্থ পারফিউম তৈরীতে, ঔষধ হিসেবে, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা জায়েয।(ফতুয়া প্রদানকারী “শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন কুয়ুদ, শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন গাদইয়ান, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ্‌ বিন বায”। ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা: ১০৬)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ” استعمال الروائح العطرية المشتملة على مادة الكحول : لا يجوز ؛ لأنه ثبت لدينا بقول أهل الخبرة من الأطباء : أنها مسكرة ،”অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়েয নেই। কেননা আমাদের কাছে বিজ্ঞ ডাক্তারদের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ রয়েছে যে, এগুলো মাদকতা সৃষ্টি করে (মাজাল্লাতুল বুহুস আলইসলামিয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ১৮৫)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:” العطور المسكرة يحرم استعمالها ، ولا تجوز الصلاة في الثوب الذي أصابه شيء منها حتى يغسل ما أصابه منها ؛ كسائر النجاسات ، وكذا البدن يجب غسل ما أصابه منها ؛ لأنها نجسة ؛ لأنها خمر”انتهى من “যেই সুগন্ধি মাদকতা সৃষ্টি করে, তা ব্যবহার করা হারাম। এবং যেই কাপড়ে সুগন্ধি লেগে যায়, ওই কাপড় পরিধান করা সালাত আদায় করা জায়েজ নেই। যতক্ষণ না সে ওই কাপড় ধৌত করে , যেখানে সুগন্ধি লেগে যায়। কেননা এটি নাপাক। যেহেতু এটি মদ।”(মুনতাকা ফাতাওয়া আল-ফাওযান, ১৭ তম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৮)
.
▪️দ্বিতীয়ত: নারীদের ঘরে নামাজ আদায়ের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান:
.
একজন নারী, বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত,ঘরে থাকার সময় নিজেস্ব পরিমন্ডলে মাহারামদের সামনে শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ নয় এমন সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি সালাত আদায়ের পূর্বে এই সুগন্ধি ব্যবহার করাও জায়েজ এবং এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিবাহিত নারীরা যদি তার স্বামীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সুগন্ধি ব্যবহার করে, তবে তা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়),কারণ এটি একজন উত্তম স্ত্রীর গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।প্রখ্যাত সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জুমআর দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির গোসল ও মিসওয়াক করা কর্তব্য এবং সামর্থ্য থাকলে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার করে’। অন্য বর্ণনায় আছে,(وَلَوْ مِنْ طِيبِ الْمَرْأَةِ) এমনকি স্ত্রীর সুগন্ধি থেকে হলেও।”(সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৬; ই.ফা. ১৮৩০) এই হাদীসের শেষাংশ “এমনকি স্ত্রীর সুগন্ধি থেকে হলেও” এর মাধ্যমে বোঝা যায়, নারীরা ঘরের ভেতর নিজস্ব পরিবেশে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে। এবং এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, স্বামী জরুরি প্রয়োজনে স্ত্রীর সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন, যদি তার নিজের সুগন্ধি না থাকে।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম জায়নুদ্দীন মুহাম্মাদ আব্দুর রউফ বিন তাজ আল-আরিফীন বিন নুরুদ্দিন আলী বিন জায়নুল আবিদীন আল-হাদ্দাদী আল-মানাবী আল-ক্বাহেরী [জন্ম:৯৫২, মৃত্যু:১০৩১ হি:] (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
أما التطيب والتزين للزوج فمطلوب محبوب ، قال بعض الكبراء : تزيُّنُ المرأة وتطيُّبُها لزوجها من أقوى أسباب المحبة والألفة بينهما ، وعدم الكراهة والنفرة ؛ لأن العين رائد القلب ، فإذا استحسنت منظرا أوصلته إلى القلب فحصلت المحبة ، وإذا نظرت منظرا بشعا أو ما لا يعجبها من زي أو لباس تلقيه إلى القلب فتحصل الكراهة والنفرة ، ولهذا كان من وصايا نساء العرب لبعضهن : إياك أن تقع عين زوجك على شئ لا يستملحه ، أو يشم منك ما يستقبحه
“স্বামীর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে উপস্থাপন করা নারীর জন্য উত্তম ও প্রশংসনীয়। জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিরা বলেন, একজন নারীর পক্ষে তার স্বামীর জন্য নিজেকে সাজানো ও সুগন্ধি ব্যবহার করা তাদের মাঝে ভালোবাসা ও স্নেহ জোরদার করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।এর ফলে পরস্পরের প্রতি বিতৃষ্ণা ও বিরূপতা দূর হয়, এবং আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। কারন চোখ হচ্ছে হৃদয়ের দূত। যখন চোখ কোনো সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করে, তখন তা হৃদয়ে পৌঁছে ভালোবাসা ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে চোখ যদি এমন কিছু দেখে যা অপছন্দনীয় বা অনাকর্ষণীয় যেমন অগোছালো পোশাক কিংবা অযত্নে সাজানো রূপ,তাহলে তা হৃদয়ে বিরক্তি ও বিমুখতা সৃষ্টি করে। এ কারণে প্রাচীন আরব নারীরা একে অন্যকে উপদেশ দিতেন: “সাবধান থেকো, যেন তোমার স্বামী তোমার মাঝে এমন কিছু না দেখে যা সে অপছন্দ করে, কিংবা এমন কোনো গন্ধ না পায় যা তার কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়।”(মানাবি; ফায়জুল ক্বদীর; খন্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৯০)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে একজন নারীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: আমি কি সুগন্ধি ব্যবহার করে নামাজ পড়তে পারি? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তরে শাইখ বলেন:
نعم، الصلاة بالطيب لا بأس بها، بل الطيب مشروع للمؤمن والمؤمنة، لكن المؤمنة تطيب في بيتها، المؤمنة تطيب في بيتها، وعند زوجها، وليس لها التطيب عند الخروج إلى الأسواق، ولا إلى المساجد، أما المؤمن فيتطيب في بيته، وفي أسواقه، وفي المسجد الطيب مطلوب، وهو من سنة المرسلين.
فإذا صلت المرأة في بيتها متطيبة بدهن العود، أو الورد، أو العنبر، ونحو ذلك كله طيب، لا شيء في ذلك، ولا حرج في ذلك، بل هو مطلوب، لكن لا تخرج بالطيب الذي يجد الناس رائحته، لا تخرج به إلى الأسواق، ولا إلى المساجد؛ لأن الرسول نهى عن هذا -عليه الصلاة والسلام- نعم.
المقدم: جزاكم الله خيرًا.
হ্যাঁ, সুগন্ধি ব্যবহার করে নামাজ আদায় করাতে কোনো সমস্যা নেই, বরং সুগন্ধি ব্যবহার করা মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য অনুমোদিত (সুন্নত)। তবে একজন মুমিনা নারীর উচিত, সে নিজ গৃহে সুগন্ধি ব্যবহার করবে, স্বামীর সামনে তা ব্যবহার করবে, কিন্তু বাজারে বের হওয়ার সময় কিংবা মসজিদে যাওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা তার জন্য বৈধ নয়। আর একজন মুমিন পুরুষ গৃহে, বাজারে এবং মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে। সুগন্ধি ব্যবহার করার চর্চা হলো নবীদের সুন্নতের অংশ। সুতরাং, যদি কোনো নারী নিজ গৃহে নামাজ আদায় করে এবং সে আগরবাতি, গোলাপ জল, আম্বার বা অনুরূপ কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই, এতে কোনো দোষ নেই, বরং তা প্রশংসনীয়।তবে সে যেন এ ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে না বের হয় যার ঘ্রাণ মানুষ পেতে পারে না বাজারে, না মসজিদে; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে এ ধরনের কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। উপস্থাপক: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৪৯৩৮)
.
▪ তৃতীয়ত:নারীরা যখন ঘরের বাইরে বের হয় বা এমন পুরুষদের সামনে আসে, যারা তাদের মাহরাম নয়, সে সময় তাদের সুগন্ধি ব্যবহার করার বিধান:”
.
নারী, বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত, তার জন্য ঘরের বাইরে যেমন মসজিদ, বাজার, মার্কেট ইত্যাদি স্থানে কিংবা কোনো নন-মাহরাম পুরুষের সামনে সুগন্ধি ব্যবহার করে যাওয়া শরীয়তসম্মত নয়। মহিলাদের জন্য পরপুরুষের সামনে পর্দা করে চলা যেমন জরুরি তেমনি তাদের সামনে ঘ্রাণ প্রকাশ না করা জরুরি। নারী বেপর্দা হয়ে চললে যেমন যিনা হয় তেমনি আতর, পারফিউম বা যেকোনো সুগন্ধি ব্যবহার করে পরপুরুষের সামনে গেলে যিনা হয়। আবু মূসা আল-আশআরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ‘কোনো মহিলা যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো লোকদের সামনে দিয়ে যায় যাতে তারা তার সুগন্ধির ঘ্রাণ পায়, তাহলে সে যিনাকারিণী মহিলা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৬২; নাসাঈ, হা/৫১২৬; সহীহ আত-তারগীব, হা/২০১৯ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬৮১)। অপর হাদীসে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। সুতরাং মহিলা যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসম্মুখে যায়, তখন সে এইরূপ এইরূপ অর্থাৎ ব্যভিচারিণী। (তিরমিযী হা/২৭৮৬; আবু দাঊদ, হা/৪১৭৩; মিশকাত, হা/১০৬৫, সনদ হাসান)। এমনকি নারীরা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদেও যেতে পারবে না। হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ‘কোনো মহিলা যদি মসজিদে যেতে চায়, তাহলে সে যেন সুগন্ধি থেকে সেভাবে গোসল করে নেয় যেভাবে সে নাপাকির গোসল করে থাকে।’ (নাসাঈ, হা/৫১২৭; সিলসিলা সহীহা, হা/১০১৩)। অপর বর্ননায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে বললেন- إِذَا شَهِدَتْ إِحْدَاكُنَّ الْمَسْجِدَ فَلاَ تَمَسَّ ‘তোমাদের কোনো মহিলা যদি মসজিদে আসে, তাহলে সে যেন আতর ব্যবহার না করে।’(সহীহ মুসলিম, হা/৪৪৩; মিশকাত, হা/১০৬০)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন মহিলা তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তার কাছ থেকে তীব্র ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, হে পরাক্রমশালী মহান আল্লাহর বান্দী! তুমি কি মসজিদে যাচ্ছো? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আর মসজিদে যাওয়ার জন্য তুমি সুগন্ধি ব্যবহার করেছো? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং গোসল করো। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, কোনো মহিলা যদি সুগন্ধির ঘ্রাণ ছড়াতে ছড়াতে মসজিদে যায়, আল্লাহ তার সালাত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে বাড়ি ফিরে গিয়ে গোসল না করে। (মুসনাদে আবীল ইয়ালা, হা/৬৩৮৫; জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ, ১/১৩৮ পৃঃ)। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, طِيبُ الرِّجَالِ مَا ظَهَرَ رِيحُهٗ وَخَفِيَ لَوْنُهٗ وَطِيبُ النِّسَاءِ مَا ظَهَرَ لَوْنُهٗ وَخَفِيَ رِيحُهٗ ‘‘পুরুষের জন্য সর্বোত্তম সুগন্ধি হচ্ছে ঐ জিনিস যার ঘ্রাণ প্রকাশ পায় কিন্তু রং অপ্রকাশ্য থাকে। আর নারীর জন্য সর্বোত্তম সুগন্ধি হচ্ছে ঐ জিনিস যার রং প্রকাশ পায় কিন্তু ঘ্রাণ অপ্রকাশ্য থাকে।’’ (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হা/৪০৪৪)
.
তবে “হ্যাঁ, যদি কোনও মুসলিম নারী এমন পরিস্থিতিতে সুগন্ধি ব্যবহার করেন, যেখানে পুরুষদের এর গন্ধ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই—যেমন: স্বামীর সাথে গাড়িতে নির্জন স্থানে যাওয়া, শুধুমাত্র নারীদের জন্য নির্ধারিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, কিংবা শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষিত মসজিদের প্রবেশ পথে ব্যবহার তাহলে তা বৈধ হবে। কারণ, এখানে নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ, অর্থাৎ সুগন্ধির গন্ধ পুরুষদের কাছে পৌঁছানো, অনুপস্থিত। এবং সুগন্ধি ব্যবহারের উদ্দেশ্য যদি হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিজেকে পরিপাটি করে রাখা, তাহলে এটি শরিয়তসম্মত হিসেবে গণ্য হবে।”এর স্বপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে, আয়িশা বিনতু তালহা (রহ.) সূত্রে বর্ণিত। উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেছেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (মদীনা থেকে) মক্কায় সফর করেছি এবং ইহরামের সময় আমরা আমাদের পরিধেয় বস্ত্রে উত্তম সুগন্ধি মেখেছি। আমাদের কেউ ঘর্মাক্ত হলে তা মুখমন্ডল বেয়ে পড়তো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতেন কিন্তু তা ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন না।”(আবু দাউদ হা/১৮৩০ সনদ বিশুদ্ধ) এটি সেই যুগের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত, যখন নারীরা পুরুষদের থেকে পৃথক থাকত এবং হাওদায় অবস্থান করে আড়ালেই চলাফেরা করত।”
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, يجوز لها الطيب إذا كان خروجها إلى مجمع نسائي لا تمر في الطريق على الرجال”মহিলাদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়েয; যদি সে নারীদের কোন স্থানে বের হয় এবং রাস্তায় পুরুষদের পাশ দিয়ে না যায়।” (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১০ পৃষ্ঠা: ৪০)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
” أما إذا كانت المرأة ستركب في السيارة ولا يظهر ريحها إلا لمن يحل له أن تظهر الريح عنده ، وستنزل فورا إلى محل عملها بدون أن يكون هناك رجال حولها ، فهذا لا بأس به ، لأنه ليس في هذا محذور ، فهي في سيارتها كأنها في بيتها ، أما إذا كانت ستمر إلى جانب الرجال فلا يحل لها أن تتطيب ” انتهى .
فإن حصلت بعض الظروف الطارئة التي أدت إلى شم بعض الرجال طيب هذه المرأة ، بسبب حادث سيارة مثلا ، أو مرض مفاجئ نقلت على إثره إلى المستشفى ونحو ذلك ، فهذا من الأمور المعفو عنها إن شاء الله ، إذ لا يكلف الله نفسا إلا وسعها ، والحكم الشرعي يتبع حالات الاختيار لا حالات الاضطرار .
والله أعلم .
“অতঃপর যদি কোনো নারী গাড়িতে চড়ে এবং তার সুগন্ধি কেবলমাত্র তাদের নিকট প্রকাশ পায়,যাদের জন্য তা প্রকাশ করা বৈধ এবং সে সরাসরি গাড়ি থেকে নেমে তার কর্মস্থলে প্রবেশ করে যেখানে তার আশেপাশে কোনো পুরুষ থাকবে না তাহলে এতে কোনো দোষ নেই। কারণ এতে হারাম কিছুই নেই।যখন সে তার গাড়িতে থাকে তখন মনে হয় সে তার বাড়িতেই আছে। কিন্তু যদি সে পুরুষদের পাশ দিয়ে যায় তাহলে তার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়েয হবে না।” আবার যদি এমন কোন জরুরী অবস্থা দেখা দেয় যেখানে কিছু পুরুষ এই মহিলার পারফিউমের গন্ধ পেয়ে যায়, যেমন; একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে বা হঠাৎ অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিংবা অনুরূপ কিছু ঘটে তাহলে এটি এমন কিছু যা ক্ষমাযোগ্য ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহ কোনো মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে দেন না। আর শরয়ি বিধান মূলত স্বেচ্ছায় করা কাজের ওপর নির্ভর করে, বাধ্যবাধকতার ওপর নয়। আর আল্লাহই সর্বজ্ঞ।”(শাইখ ইবনে উসাইমিন (রহঃ) এর জালসাতে রামাদানিয়্যাহ; ১৪১৫ আল-মাজলিস আল-খামিস/মাজমুআত আসিলাহ তুহিম্ম আল-উসরাহ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং- ১০২৩২৯)।
.
জেনে রাখা উচিত যে, নারীদের জন্য ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম। তবে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে তারা পুরুষ মিশ্রিত মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য যেতে পারে যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিও না। তবে, তাদের জন্য ঘরই উত্তম।”[হাদিসটি আবু দাউদ তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে, ‘নারীদের মসজিদে যাওয়া’ শীর্ষক পরিচ্ছেদ ও ‘এ বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে সংকলন করেছেন। হাদিসটি ‘সহিহুল জামে’ হা/৭৪৫৮ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:ولا بأس بحضور النساء صلاة التراويح إذا أمنت الفتنة بشرط أن يخرجن محتشمات غير متبرجات بزينة ولا متطيبات “যদি ফিতনার আশংকা না থাকে তবে তারাবীর সালাতে নারীদের উপস্থিত হওয়াতে কোন সমস্যা নেই।তবে শর্ত হলো- তারা শালীনভাবে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে বের হবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।”(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড; ১৪: পৃষ্ঠা: ২১১)
.
শাইখ বকর আবু যাইদ তার ‘হিরাসাতুল ফাদ্বিলাহ’ নামক গ্রন্থে নারীদের মসজিদে বের হওয়ার সকল শর্ত একত্রিত করেছেন। সেখানে তিনি বলেন: “নিম্নোক্ত বিধিবিধানের আলোকে মুসলিম নারীকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে:
(১) সে নিজে ফিতনায় পড়া অথবা তার দ্বারা অন্য কেউ ফিতনাগ্রস্ত হওয়া থেকে আশংকামুক্ত হওয়া।
(২) তার সেখানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কোন বিষয় সংঘটিত না হওয়া।
(৩) রাস্তায় অথবা মসজিদে পুরুষদের সাথে ভিড় না করা।
(৪) সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হওয়া।
(৫) পরিপূর্ণ হিজাব পরিধান করা যাতে কোনো প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়।
(৬) নারীদের জন্য মসজিদের আলাদা প্রবেশপথ থাকা। যাতে নারীরা সে পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও বের হতে পারে।এই প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদ ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।
(৭) নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হওয়া।
(৮) নারীদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো সর্বশেষ কাতার। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত।
(৯) যদি ইমাম নামাযে কোন ব্যতিক্রম করে তবে পুরুষরা তাসবীহ পাঠ করবে এবং নারীরা ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপর তালি দিয়ে শব্দ করবে।
(১০) নারীরা পুরুষদের আগে মসজিদ থেকে বের হবে। নারীরা ঘরে পৌঁছা পর্যন্ত পুরুষরা অপেক্ষা করবে। এ প্রসঙ্গে উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে সহীহ বুখারীতে ও অন্যান্য কিতাবে হাদিস প্রমাণিত হয়েছে।” (শাইখ বকর আবু যাইদ ‘হিরাসাতুল ফাদ্বিলাহ’; পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের জন্য ও সকল মুসলিম ভাইদের জন্য ইখলাস ও কবুলিয়তের প্রার্থনা করছি। তিনি যেন আমাদের আমলগুলো তাঁর পছন্দ ও সন্তুষ্টি মোতাবেক সম্পন্ন করান। আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রপ্রধান তথা শাসকদের প্রশংসা করার বিধান

 প্রশ্ন: শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রপ্রধান তথা শাসকদের প্রশংসা করার বিধান কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬◆◯◆▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার জন্য। দুরুদ বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। অতঃপর: মূলনীতি হল:”শাসকদের প্রশংসা অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই বিবেচিত হয়।” কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শাসকদের ক্ষেত্রে এমন মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা ও তোষামোদের আশ্রয় নেওয়া হয়, যা সমাজে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা বাড়াবাড়ি সব ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। প্রশংসার ক্ষেত্রেও তাই। অতি প্রশংসায় মিথ্যার মিশ্রণ লুকায়িত থাকে। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) নিজের ক্ষেত্রেও অতি প্রশংসা পছন্দ করতেন না। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন, তোমরা তার চেয়ে উঁচু মর্যাদা আমাকে দাও, তা আমি পছন্দ করি না।”(মুসনাদে আহমদ, হা/১২১৪১) অপর বর্ননায় এসেছে, মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:إِذَا رَأَيْتُمُ الْمَدَّاحِيْنَ فَاحْثُوْا فِيْ وُجُوْهِهِمُ التُّرَابَ “যখন তোমরা প্রশংসায় বাড়াবাড়িকারীদের দেখবে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।(সহীহ মুসলিম হা/৩০০২; সহীহুল জামি‘ হা/৫৭০) রাসূসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, إِيَّاكُمْ وَالتَّمَادُحَ فَإِنَّهُ الذَّبْحُ ‘তোমরা পরস্পর প্রশংসা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা তা হচ্ছে যব্হ করা”।(ইবনু মাজাহ, হা/৩৭৪৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২৮৪)।
.
“দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, কিছু মানুষ শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনায় দোয়া করাকে তাদের প্রশংসা ও গুণকীর্তনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।” আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের একটি মূলনীতি হচ্ছে; শাসকবর্গ সৎ হোক কিংবা অসৎ,তাদের জন্য কল্যাণের দু’আ করা শরয়ী দিক থেকে ওয়াজিব।এটা যেমন নববী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত;তেমনি এটা ছিল আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের নিকট সুসাব্যস্ত নীতি।আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমাদের ঐ সমস্ত আমির সর্বোত্তম, যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো এবং তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসে, তারা তোমাদের জন্য দোয়া করে এবং তোমরাও তাদের জন্য দোয়া কর।”(সহিহ মুসলিম, হা/৪৬৯৮)হাদীসটির ব্যাখায় বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:وقوله: ((ويصلون عليكم وتصلون عليهم)) الصلاة هنا بمعنى الدعاء يعني تدعون لهم ويدعون لكم) রাসূল ﷺ এর বানী:“তারা তোমাদের জন্য দোয়া করে এবং তোমরাও তাদের জন্য দোয়া কর। (এখানে সলাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে) যার অর্থ, দোয়া করা। অর্থাৎ, তোমরা তাদের জন্য দোয়া কর, তারাও তোমাদের জন্য দোয়া করে।”(শারহু রিয়াদুস সালিহিন,খণ্ড;৩;,পৃষ্ঠা;৬৪৭) তাছাড়া শাসকদের জন্য কৃত দোয়া তাদেরকে নসিহাহ করার অন্তর্ভুক্ত। নাবী ﷺ বলেছেন, ‘সদুপদেশ দেয়াই দ্বীন।’ আমরা বললাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের জন্য।”(সহীহ মুসলিম, হা/১০০) এই হাদীসটির ব্যাখ্যায় বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:أما النصيحة لأئمة المسلمين فبالدعاء لهم والسمع والطاعة لهم في المعروف والتعاون معهم على الخير وترك الشر وعدم الخروج عليهم) “মুসলিম শাসকদের প্রতি নসিহত (উপদেশ) হলো—তাদের জন্য দোয়া করা, সৎকাজে তাদের কথা শোনা ও মানা, ভালো কাজে তাদের সহযোগিতা করা, মন্দ থেকে বিরত থাকা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা।”(বিন বায; মাজমূউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৮৭)
.
শাসকের জন্য কল্যাণের দোয়া করা—হোক সে সৎ কিংবা অসৎ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। এটা ছিল আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের নিকট সুসাব্যস্ত নীতি।প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিম,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন:لَوْ أَنَّ لِي دَعْوَةً مُسْتَجَابَةً، مَا جَعَلْتُهَا إِلاَّ فِي إِمَامٍ، فَصَلاَحُ الإِمَامِ صَلاَحُ البِلاَدِ وَالعِبَادِ “আমার যদি কবুলযোগ্য কোন দু‘আ থাকত, তবে তা আমি কেবল রাষ্ট্রপ্রধানের জন্যই নির্ধারণ করতাম। কেননা রাষ্ট্রপ্রধানের কল্যাণের মাঝে দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিহিত থাকে।”(সিয়ারু আ‘লামিন আন-নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১০৪; হিলইয়াতুল আলওলিয়া, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৯১) এ কথার অর্থগত উদ্দেশ্য ‘শারহুস সুন্নাহ’য় ইমাম বারবাহারি (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন,إذا جعلتُها في نفسي لم تَعْدُني، وإذا جعلتُها في السلطان صلح فصلح بصلاحه العباد والبلاد“যদি দোয়াটি আমি আমার নিজের জন্য করি, তাহলে এটা আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, কিন্তু আমি যদি সেটা শাসকের জন্য করি তাহলে, সে সৎ হয়ে যাবে, তার সাথে সাথে জনগণ এবং নগর-রাষ্ট্রও পরিশুদ্ধ হবে।”(শারহুস সুন্নাহ লিল বারবাহারি, পৃষ্ঠা: ১১৪) এজন্য ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলতেন, (وإني لأدعو له بالتسديد والتوفيق – أي: الإمام – في الليل والنهار – والتأييد، وأرى ذلك واجباً علي)”আমি শাসকের জন্য দিবানিশি দোয়া করি, যাতে সে পরিশোধিত হয় এবং তৌফিক ও সাহায্য-সহযোগিতা পায়। আমি মনে করি এটা আমার জন্য অত্যাবশ্যক।”(সুন্নাহ লিল খাল্লাল, পৃষ্ঠা: ১৪) আহলুস সুন্নাহ’র ইমাম শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) জন্ম ১৬৪ হি./৭৮০ খ্রি. এবং মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.। বলেছেন “لو علمت أن لي دعوة مستجابة لصرفتها لولي الأمر لأن في صلاحه صلاح الرعية“আমি যদি জানতাম, আমার কোনো কবুলযোগ্য দু‘আ আছে, তাহলে অবশ্যই আমি সে দু‘আ শাসকের জন্য করতাম।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ৩৯১; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.) ইমাম বারবাহারী (রহিমাহুল্লহ) বলেন: “وإذا رأيت الرجل يدعو على السلطان فاعلم أنه صاحب هوىً، وإذا رأيت الرجل يدعو للسلطان بالصلاح، فاعلم أنه صاحب سنة إن شاء الله “যদি তুমি কাউকে শাসকের বিরুদ্ধে বদদোয়া করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো সে বিদআতের অনুসারী (হাওয়ার অনুসারী)। আর যদি তুমি কাউকে শাসকের জন্য সংশোধন ও কল্যাণের দোয়া করতে দেখো, তাহলে জেনে রাখো সে সুন্নাহপন্থীদের একজন ইনশাআল্লাহ।” (শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৩৬)
.
“বর্তমানে দেখা যায়, অনেকেই শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনার দুআর পরিবর্তে অতিরিক্ত প্রশংসায় মেতে ওঠেন,আবার কেউ কেউ সীমা অতিক্রম করে সমালোচনা ও বদদোয়ার পথ বেছে নেন।” ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী নামে প্রসিদ্ধ রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি. মৃত: ৭৯৫ হি:] বলেছেন,وكثيراً ما يمدح مَنْ لا يستحق المدح، ويلعن من لا يستحق اللّعن.”অনেকেই প্রশংসা পাবার হকদার নয়, এমন ব্যক্তির প্রশংসা করেন। আবার অনেকেই অভিশাপ পাওয়ার হকদার নন, এমন ব্যক্তিকেই অভিশাপ দেওয়া হয়।”(মাজমূ রাসায়েল ইবনু রজব; খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১১০; শারহু হাদিস লাব্বাইক, পৃষ্ঠা: ৪৭) জালেমদের প্রশংসা করা চাই তারা শাসক হোক কিংবা সাধারণ মানুষ এটা এক প্রকার জুলুম। এটি কোনোভাবেই সালাফিয়্যাতের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তাহলে ঐ ব্যক্তির অবস্থা কেমন হতে পারে, যে ব্যক্তি প্রশংসার মাধ্যমে আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং শেষমেশ মিথ্যা প্রশংসাকারীতে পরিণত হয়?!সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) বলেন:“একজন মানুষ এমন একটি কথা বলে ফেলে, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়, অথচ সে তা তেমন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনাও করে না; কিন্তু সেই কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়।”(সহিহ বুখারি, হা/৬৪৭৮)
.
অন্যায় উদ্দেশ্যে শাসকের মিথ্যা প্রশংসা করা শরিয়ত বহির্ভূত কাজ। উদাহরণস্বরূপ, ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) যিনি তিনজন জালিম শাসক: মামুন, মুতাসিম এবং ওয়াসিক এর শাসনামলে জীবন অতিবাহিত করেছেন। তারা দ্বীনের বিষয়ে মানুষকে ফিতনায় ফেলেছিল, বিদআতের প্রচলন ঘটিয়েছিল এবং ‘খলকুল কুরআন’ এর মতো ভয়াবহ বিদআতের মাধ্যমে মুসলিমদের কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছিল। এই অবস্থাতেও ইমাম আহমদ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম ধৈর্য ধারণ করেন এবং শরিয়তসম্মত পরিসরে শাসকের কথা মানার এবং আনুগত্যের উপদেশ দিয়ে গেছেন। যদিও তারা নিজেরাও নির্যাতনের শিকার হন। তবুও কোথাও আমরা দেখতে পাই না যে, ইমাম আহমদ ঐ শাসকদের প্রশংসা করেছেন। ইমাম নাবাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,يكره في الخطبة أشياء …ثم قال: ومنها المجازفة في أوصاف السلاطين في الدعاء لهم وكذبهم في كثير من ذلك كقولهم السلطان العالم العادل ونحوه) “খুৎবায় কিছু কথা বলা অপছন্দনীয় (মাকরূহ) —অতঃপর তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে একটি—শাসকদের জন্য দোয়া করতে গিয়ে তাদের প্রশংসায় অতিরঞ্জন করা এবং তাতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া। যেমন বলা হয়, তিনি হলেন জ্ঞানবান ও ন্যায়পরায়ণ সরকার ইত্যাদি।”(নববী; আল-মাজমূ‘; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫২৯)
.
আল্লামাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আবু বুতাইন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যেমনটি দুরারুস সানিয়্যাহ,
ফিল কুতুবিন নাজদিয়্যাহ)-তে এসেছে:ما في بعض الخطب، من الثناء والمدح بالكذب. وولي الأمر إنما يدعى له، لا يمدح لاسيما بما ليس فيه؛ وهؤلاء الذين يمدحون في الخطب، هم الذين أماتوا الدين، فمادحهم مخطئ، فليس في الولاة اليوم من يستحق المدح، ولا أن يثنى عليه، وإنما يدعى لهم بالتوفيق والهداية) “কিছু খুৎবায় যে মিথ্যাভাবে প্রশংসা ও গুণকীর্তন করা হয়। তা গ্রহণযোগ্য নয়। শাসকের জন্য দু’আ করা হবে,কিন্তু তার প্রশংসা করা হবে না;বিশেষত,এমন কিছু দিয়ে যা তার মধ্যে নেই। সুতরাং ঐ সমস্ত খতিব, যারা তাদের প্রশংসা করে, তারাই দ্বীনকে ধ্বংস করছে। তাদের প্রশংসাকারীরা ভুল করছে। আজকের দিনে এমন কোনো শাসক নেই, যে প্রশংসার হকদার, অথবা যার গুণকীর্তন করা যায়। বরং তাদের জন্য তৌফিক ও হিদায়াতের দোয়া করতে হবে।”(দুরারুস সানিয়্যাহ, ফিল কুতুবিন নাজদিয়্যাহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৪১)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, “জনগণের সামনে শাসকের প্রশংসা করা অথবা তাতে মাত্রাতিরিক্ততা করা কি জায়েজ, না (শাসকদের ব্যাপারে) মানুষদের শুধু ধৈর্যধারণ, আনুগত্য ও বিদ্রোহ না করার আদেশ দেওয়াই যথেষ্ট?” উত্তরে শাইখ বলেন :
يلزمه الصمت وإذا أردا أنه يبين للناس يبين أن حكم الإسلام طاعة ولاة الأمور والسمع والطاعة لهم ولاة أمور المسلمين والسمع والطاعة لهم بما أمر الله به وأمر به رسوله صلى الله عليه وسلم والصبر على ما يحصل منهم من خطأ لا يصل إلى حد الكفر، نعم)
““তার জন্য কর্তব্য হচ্ছে চুপ থাকা। আর যদি সে (এই বিষয়ে) মানুষদের সামনে কিছু ব্যাখ্যা করতেই চায়, তাহলে সে যেন এটুকুই ব্যাখ্যা করে যে, ইসলামের বিধান হলো মুসলিম শাসকদের আনুগত্য করা, তাদের কথা শোনা ও মান্য করা এটি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ﷺ-এর নির্দেশ। আর তাদের পক্ষ থেকে যে ভুলত্রুটি হয়, তা যদি কুফর (অবিশ্বাস)-এর স্তরে না পৌঁছে, তাহলে সেসবের ওপর ধৈর্য ধারণ করা আবশ্যক।” (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে লিংক: http://www.alfawzan.af.org.sa/node/14254)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী প্রথিতযশা মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] ওকাফাতুন মাআ কালিমাতিন লি ইবনি মাসউদ রা: শিরোনামের একটি অডিওতে বলেন:
: (لكن الدعاء شيء والمدح شيء آخر. المدح لا يجوز؛ لأنه يراد به الدنيا.وأما الدعاء فيراد به صلاح الدين والدنيا والآخرة، فالدعاء مبعثه أمر شرعي لله.وأما المدح فلأهله مقاصد مختلفة، ولهذا العلماء يدعون ولا يمدحون مدحاً مطلقاً، قد يثني بعضهم بثناء خاص مقيد لظهور فائدة عمل عمله ولي الأمر؛ لكن هذا على الاستثناء ليس قاعدة مطَّردة يثني لتشجيعه على الخير وترغيبه فيه وحثه عليه.أما المدح فإنه ليس من صنيع السلف الصالح، وإنما من صنيعهم الدعاء؛ لأن الدعاء مما يرجى به صلاح دينه، وإذا صلح دين ولي الأمر صلح به شيء كثير.على الرابط التالي:
“(শাসকদের জন্য) দোয়া করা এক জিনিস, আর প্রশংসা করা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। প্রশংসা করা জায়েয নয়; কেননা এতে দুনিয়াবি উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। আর দোয়ার মাধ্যমে কামনা করা হয় দ্বীন, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ। সুতরাং দু’আ হচ্ছে একটি শারঈ বিষয়। যা আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয়। অন্যদিকে প্রশংসার ক্ষেত্রে প্রশংসাকারীর বিভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। এজন্য উলামাগণ শাসকদের জন্য দু’আ করেন, কিন্তু তাদের প্রশংসা করেন না। যদিও কখনো কখনো তাদের নির্দিষ্ট কিছু প্রশংসা করেছেন, কোনো কাজের উপকার জাহির করার জন্য, যে কাজ শাসক করেছে। কিন্তু এটা ব্যতিক্রম এবং এটা নির্ধারিত মূলনীতি নয়। তাদের প্রশংসা করেছেন, তাদেরকে ভালো কাজে উৎসাহপ্রদানের জন্য। আসলে প্রশংসা সালাফদের কর্ম ছিল না, বরং তাদের কর্ম ছিল দুয়া। কারণ দোয়ার মাধ্যমে আশা করা যায়, তার দ্বীন শুদ্ধ হবে। আর শাসকের দ্বীনে যখন পরিশুদ্ধতা আসবে, তখন তার মাধ্যমে আরও অনেক কিছুরই পরিবর্তন হবে।”
(ওকাফাতুন মাআ কালিমাতিন লি ইবনি মাসউদ; লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=Wx6-pns4y1I
·
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, শাসকদের অযৌক্তিক বা অতিরঞ্জিত প্রশংসা করা ইসলামের শিক্ষা নয়। বিষয়টি আরও জঘন্য হয়ে ওঠে, যদি সেই শাসক অত্যাচারী হয়। এই নিকৃষ্টতা আরও বাড়ে, যখন প্রশংসা তার সামনেই করা হয়—বিশেষত যখন সে এমন একজন, যার আচরণ ও শাসনশৈলী কর্তৃত্ববাদী। হাম্মাম ইবনু হারিস (রহ.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সামনে তাঁর প্রশংসা করতে শুরু করলে, মিকদাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাগান্বিত হয়ে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখে কাঁকর ছুড়ে মারেন। উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি এমন করলে কেন?’ তিনি উত্তরে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি: “তোমরা যখন কারো মুখোমুখি প্রশংসাকারীদের দেখো, তখন তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দাও।” [সহিহ মুসলিম, হা/৩০০০) আমাদের ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:المادح هو الذي يسمع منه مرة بعد أخرى لكن المداح كلما جلس عند إنسان كبيرا أو أميرا أو قاضيا أو عالما أو ما أشبه ذلك “প্রশংসাকারীর কাছ থেকে একবার দুইবার প্রশংসা শোনা যাবে। কিন্তু অধিক প্রশংসাকারী, যখনই মানুষের কাছে বসে সে বড়ো হোক, শাসক হোক, বিচারক হোক, আলেম হোক, কিংবা অন্য কেউ তখনই সে প্রশংসা করতে শুরু করে।”(ইবনু উসাইমীন; শারহু রিয়াদিস সালিহিন, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৬৫)
·
উল্লেখ যে, কিছু আলেম প্রশংসা বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁরা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে একে একে বৈধ বলেছেন,আবার অন্য কিছু প্রেক্ষিতে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেমন:আমাদের ইমাম বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল; কোনো ব্যক্তির উচিৎ কি তার ভাইকে সে যেসব গুণে গুণান্বিত,সে গুণের ভিত্তিতে প্রশংসা করা?
.
জবাবে শাইখ বলেন:
أو لا وهذا له أحوال
:الحال الأولى: أن يكون في مدحه خير وتشجيع له على الأوصاف الحميدة والأخلاق الفاضلة فهذا لا بأس به لأنه تشجيع تشجيع لصاحبه فإذا رأيت من رجل الكرم والشجاعة وبذل النفس والإحسان إلى الغير فذكرته بما هو فيه أمامه من أجل أن تشجعه وتثبته حتى يستمر على ما هو عليه فهذا حسن وهو داخل في قوله تعالى: {وتعاونوا على البر والتقوى}.
والثاني: أن تمدحه لتبين فضله بين الناس وينتشر ويحترمه الناس كما فعل النبي صلى الله عليه وسلم مع أبي بكر وعمر رضي الله عنهما أما أبي بكر فإن النبي صلى الله عليه وسلم كان يتحدث ذات يوم قال: ((من أصبح منكم صائما)) فقال أبو بكر: أنا. فقال: ((من تبع منكم جنازة)) قال أبو بكر: أنا. فقال: ((من عاد اليوم مريضا)) فقال أبو بكر: أنا. وذكر أشياء فقال النبي صلى الله عليه وسلم: ((ما اجتمعن في امرئ إلا دخل الجنة)). وكذلك لما حدث أنه من جر ثوبه خيلاء لن ينظر الله إليه قال أبو بكر: يا رسول الله إن أحد شقي إزاري يسترخي علي إلا أن أتعاهده فقال: ((أنك لست ممن يصنع ذلك خيلاء)). وقال لعمر: ((إن الشيطان ما سلكت فجا إلا سلك فجا غير فجك)) يعني: إذا سلكت طريقا فإن الشيطان يهرب منه ويذهب إلى طريق آخر كل هذا لبيان فضل أبي بكر وعمر رضي الله عنهما هذا لا بأس به.
الثالث: أن يمدح غيره ويغلو في إطرائه ويصفه بما لا يستحق فهذا محرم وهو كذب وخداع مثل أن يذكر رجلا أميرا أو وزيرا أو ما أشبه ذلك ويطريه ويصفه بما ليس فيه من الصفات الحميدة فهذا حرام عليك وهو أيضا ضرر على الممدوح.
الرابع: أن يمدحه بما هو فيه لكن يخشى أن الإنسان الممدوح يغتر بنفسه ويزهو بنفسه ويترفع على غيره فهذا أيضا محرم لا يجوز)
এমতাবস্থায় তার অবস্থা কয়েকরকম হতে পারে।
প্রথম অবস্থা: যদি কারো প্রশংসা করা হয় এবং তাতে কল্যাণ থাকে, যেমন ভালো গুণাবলি ও উত্তম চরিত্রে উৎসাহ প্রদান—তাহলে এতে কোনো দোষ নেই। কেননা এতে প্রশংসিত ব্যক্তিকে উৎসাহিত করা হয়। যেমন, আপনি যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে দানশীলতা, সাহসিকতা, আত্মোৎসর্গ ও পরোপকারিতার গুণ দেখতে পান, তাহলে তার সামনে তা উল্লেখ করতে পারেন যেন সে এতে আরও উৎসাহ পায় এবং তার উত্তম আচরণ চালিয়ে যায়। এটি একটি প্রশংসনীয় কাজ এবং আল্লাহ তাআলার এই বাণীর অন্তর্ভুক্ত:“তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতির কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো।” (সূরা আল-মায়িদা: ২)
.
দ্বিতীয় অবস্থা: আপনি কাউকে প্রশংসা করছেন, যাতে তার মর্যাদা মানুষের কাছে প্রকাশ পায় এবং মানুষ তাকে সম্মান করে এটাও জায়েয। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ও উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) সম্পর্কে করেছেন। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:“তোমাদের মধ্যে আজ কে রোযাদার হয়ে সকাল করেছে?” আবু বকর (রাঃ) বললেন, “আমি।”তিনি বললেন: “কে আজ জানাজায় অংশ নিয়েছে?”আবু বকর বললেন, “আমি।” তিনি বললেন: “কে আজ অসুস্থকে দেখতে গিয়েছে?” আবু বকর বললেন, “আমি।”তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “এই গুণগুলো যার মধ্যে একত্রিত হবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি অহংকার করে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।” এ কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) বললেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাপড়ের একটি দিক অসতর্কতাবশত নিচে নেমে আসে, তবে আমি তা ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা করি।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি তো সে ধরনের লোক নও, যারা অহংকার করে এটা করে।” আর উমর (রাঃ) সম্পর্কে তিনি বলেন:“তুমি যে পথে চল, শয়তান সে পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে যায়।” অর্থাৎ, তুমি এমন রকম প্রতাপশালী ও আল্লাহভীরু যে, শয়তান তোমার পথ এড়িয়ে চলে।এই ধরনের প্রশংসাও বৈধ, কারণ এটি উত্তম গুণাবলি প্রসঙ্গে লোকদের জানানো এবং মর্যাদা প্রকাশের উদ্দেশ্যে।
.
তৃতীয় অবস্থা: কেউ যদি অন্য কারো প্রশংসা করে এবং তাতে বাড়াবাড়ি করে বা এমন গুণাবলি উল্লেখ করে যা তার মধ্যে নেই, তবে এটি হারাম। এটি মিথ্যা ও প্রতারণার শামিল। যেমন কেউ কোনো শাসক, মন্ত্রী বা বড় কোনো ব্যক্তির অতিরিক্ত প্রশংসা করে এবং এমন গুণাবলি তুলে ধরে যা আদৌ তার মধ্যে নেই তাহলে এটি হারাম। এ ধরনের প্রশংসা মুমিনের জন্য নিষিদ্ধ এবং এটা প্রশংসিত ব্যক্তির জন্যও ক্ষতিকর, কারণ তা তাকে ধোঁকায় ফেলতে পারে।
.
চতুর্থ অবস্থা: কাউকে তার প্রকৃত গুণাবলি দিয়ে প্রশংসা করা, কিন্তু আশঙ্কা থাকে যে এতে সে অহংকারে পতিত হবে, নিজেকে বড় মনে করতে শুরু করবে এবং অন্যদের প্রতি তুচ্ছ ভাব পোষণ করবে তাহলে এ ধরণের প্রশংসাও হারাম ও অনুচিত।”(ইবনু উসাইমীন;শারহুরিয়াদিস সালিহিন, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৬৩)
·
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, উলামায়ে কেরাম শাসকের প্রশংসা করতে নিরুৎসাহিত করেন বিশেষ করে যদি তা মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত হয়। বরং কোন কোন ইমামদের মতে, বর্তমান সময়ে এমন কোনো শাসক নেই, যিনি প্রকৃত অর্থে প্রশংসার যোগ্য। তবে কোনো শাসক যদি কোনো ভালো কাজ করেন, তাহলে তাকে সে কাজে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে আলেমগণ তার সে ভালো কাজটির প্রশংসা করতে পারেন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সঠিক নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুধাবন করার এবং তা অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◆◯◆▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Translate