প্রশ্ন: হালাল উপার্জন তথা চাকরি/ব্যবসা বৈধ হওয়ার মূলনীতি কি? ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশ করে আয় করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে,অনেক কনটেন্ট নির্মাতা এ উপার্জন ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে হালাল না হারাম সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তাও করেন না। অথচ ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে উপার্জনের হালাল-হারামের মৌলিক বিধান জানা প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হাদীসে আছে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অন্বেষণ করা ফরয।” (ইবনে মাজাহ হা/২২৪) যিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ে জড়াবেন তার জন্য অবিলম্বে সেই ইলম অর্জন করাও তার উপর অনিবার্য।উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “আমাদের বাজারে শুধু ঐ ব্যক্তি বিক্রয় করতে পারবে যে দ্বীনী জ্ঞানে প্রজ্ঞা অর্জন করেছে।”[উক্তিটি তিরমিযী (৪৮৭) বর্ণনা করেছেন এবং হাসান গরীব বলেছেন। শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে এটাকে হাসান বলেছেন] আহমাদ বিন আহমাদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,معرفة الحلال من الحرام فرض عين على كل مسلم مكلف ليكون على بصيرة من دينه حتى لا يقع في المحظور ويخالف أحكام الإسلام،”হালাল ও হারাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক দায়িত্বশীল মুসলিমের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ফরয; যাতে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে এমন জাগ্রত জ্ঞানসম্পন্ন হন যেন নিষিদ্ধ বিষয়ে পতিত না হন এবং ইসলামী বিধানের বিরোধিতা না করেন”। (মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফী তালাবির রিযক,রিয়াদ:দারু কুনুয ইশবিলিয়া,পৃষ্ঠা;১১ প্রথম সংস্করণ ১৪৩০ হিঃ/২০০৯ খ্রীঃ) তাই আমাদের সবার আগে বুঝে নিতে হবে এই প্ল্যাটফর্মগুলো,বিশেষ করে গুগল, ফেসবুক বা ইউটিউব কেন অর্থ প্রদান করছে? এই আয়ের উৎস কী? এবং শরিয়তের আলোকে এ ধরনের আয় বৈধ কি না? এই লেখায় ইনশাআল্লাহ আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করব, এবং কনটেন্ট নির্মাণ ও অনলাইন আয়ের ইসলামী দিক নির্দেশনা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
.
জীবনের জন্য হালাল জীবিকা অর্জনের গুরুত্ব এবং ইসলামী শরিয়তের আলোকে হালাল উপার্জনের মৌলিক নীতিমালা:
.
এই পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষকে জীবিকা অন্বেষণ করতে হয়, কারণ এটি জীবনধারণের অপরিহার্য শর্ত। তবে ইসলাম মানুষকে শুধু উপার্জনের নির্দেশই দেয়নি; বরং কিভাবে, কোন পন্থায় উপার্জন করতে হবে তাও সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই একজন মুসলিমের জীবিকা অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশিত হালাল ও শরী‘আতসম্মত পন্থায় হতে হবে। অন্যথায় সেই উপার্জন ইবাদত হওয়া তো দূরের কথা, বরং গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাসূল (ﷺ) নিজেও ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর অনুগামী খুলাফায়ে রাশেদীন ও বহু সাহাবাও ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা এ পেশাকে শুধু দুনিয়ার উপার্জনের মাধ্যমই মনে করতেন না, বরং ইবাদতের এক মহান রূপ হিসেবে গ্রহণ করতেন।ইসলামে “হালাল” বলতে বোঝায় যা কল্যাণকর, পবিত্র এবং শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ। হালাল উপার্জন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি বিষয়। মহান আল্লাহ শুধু উপার্জনের প্রতি উৎসাহ দেননি, বরং উপার্জনের কোন পন্থাটি বৈধ এবং কোনটি অবৈধ তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন: “আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা আল-বাক্বারাহ:২৭৫) সুতরাং, হালাল উপার্জন অর্থ হলো উপার্জনের ক্ষেত্রে শরী‘আতের অনুমোদিত ও নৈতিকভাবে বৈধ পন্থা অবলম্বন করা। রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “কোন উপার্জন সর্বোত্তম?” তিনি উত্তরে বলেন: “মানুষের নিজ হাতে উপার্জন এবং প্রতিটি হালাল ব্যবসা।”(মুসনাদে আহমাদ,মিশকাত হা/২৭৮৩; সিলসিলা সহীহা হা/৬০৭) এই বাণী প্রমাণ করে,ইসলামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য হালাল উপার্জনের দ্বার উন্মুক্ত। তবে অবশ্যই তা হতে হবে সৎ, ন্যায্য ও আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী। আর ইসলামে উপার্জনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দু’টি মূলনীতি রয়েছে। যেমন:
.
(১).উপার্জনের মূল উৎস হালাল হওয়া: এর অর্থ হলো যে বস্তু বা পণ্যের মাধ্যমে উপার্জন করা হচ্ছে,সেই পণ্যটি মূলগত বা শর্তগতভাবে বৈধ ও পবিত্র হতে হবে।অর্থাৎ, যেসব জিনিসের ব্যবসা বা ব্যবহার শরিয়তসম্মত, সেসব থেকেই উপার্জন হালাল হয়। উদাহরণস্বরূপ: কাপড়, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, ইসলামসম্মত বই-পত্র ইত্যাদি বিক্রি করা হালাল ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত।সুতরাং,এসব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থও হালাল। অন্যদিকে, যদি কেউ মদ, জুয়া,পর্নোগ্রাফি, হারাম সংগীতের সিডি, ইসলামবিরোধী বই বা অনুরূপ কোনো হারাম বস্তু বিক্রি করে, তাহলে তার ব্যবসার উৎসই মূলগতভাবে হারাম বলে গণ্য হবে। এমনকি যদি বিক্রির পদ্ধতি সততা ও ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে হয় তবুও ওই উপার্জন হালাল হবে না। কেননা ইসলাম এমন এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যা মানবজাতির জন্য কল্যাণকর ও উপকারী সবকিছুকে হালাল করেছে। মহান আল্লাহ নিজ কুরআনে মানবজাতিকে সম্বোধন করে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা হালাল ও পবিত্র রিজিক থেকে আহার করে, যা তিনি দয়াপূর্ণভাবে তাদের জন্য অনুমোদন করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ “হে মানবসকল! পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে, তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)।উপরিউক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, শুধু হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। এখানে ‘তাইয়্যিব’ বা পবিত্র বলতে ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে, যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাঁটি ও পবিত্র। অবশ্য অধিকাংশ মুফাসসির আয়াতে ‘হালাল’ শব্দ দ্বারা মূলগত বৈধতার এবং ‘তাইয়্যিব’ দ্বারা পদ্ধতিগত বৈধতার অর্থ গ্রহণ করেছেন। (বিস্তারিত জানতে তাফসীরে সা‘দী, পৃষ্ঠা: ৮০)
.
(২).উপার্জনটি পদ্ধতিগত ভাবে হালাল হওয়া: এর অর্থ হলো উপার্জনের মাধ্যম বা পদ্ধতিটি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ (হালাল) হতে হবে। অর্থাৎ যেভাবে অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়াটি শরীয়তসম্মত হওয়া অপরিহার্য।কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা ইসলামী শরী‘আতে নিষিদ্ধ।উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যবসায়ী হালাল পণ্য যেমন কাপড়, খাদ্যদ্রব্য বা অন্যান্য বৈধ সামগ্রী বিক্রি করেন এবং সেই বিক্রয় প্রক্রিয়ায় তিনি ধোঁকাবাজি, ওজনে কম দেওয়া, ঘুষ, সুদ ইত্যাদি অনৈতিক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন, তাহলে তার উপার্জনের মাধ্যমটি হালাল হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু যদি কেউ একই হালাল পণ্য বিক্রি করেন, তবে তা চুরি করা মাল হয়, বা ওজনে কম দেন,পণ্যের দোষ গোপন করেন,কিংবা মিথ্যা বলে, মিথ্যা শপথ করে গ্রাহককে প্রতারিত করেন, তাহলে পণ্যটি মূলগত হালাল হলেও তার উপার্জনের পদ্ধতি শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,”হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সম্মত হয়ে ব্যবসা করা বৈধ এবং একে অপরকে হত্যা করিও না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ’ (সূরা আন-নিসা: ২৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ কর না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৮)। উপরিউক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, ব্যবসার পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথা কঠোর শাস্তির ঘোষণা রয়েছে। অতএব, এই দুটি মূলনীতি (১) উপার্জনের উৎস হালাল হওয়া এবং (২) উপার্জনের পদ্ধতি শরীয়তসম্মত হওয়া যথাযথভাবে মেনে চললে যে কোনো বৈধ ব্যবসা, এমনকি নিজের হাতে কেক তৈরি করে বিক্রয় করাও ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য ইনশাআল্লাহ।
ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশ করে উপার্জন করা জায়েজ কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমেই আমরা গুগল অ্যাডসেন্স ও বিজ্ঞাপন সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবো:
.
সম্মানিত পাঠক! প্রথমেই জানা দরকার Google AdSense বা বিজ্ঞাপন আসলে কী? গুগল অ্যাডসেন্স হলো গুগলের একটি বিজ্ঞাপন পরিচালনামূলক সেবা, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অ্যাপের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে। এসব বিজ্ঞাপন গুগলের নিজস্ব সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এবং ব্যবহারকারীরা যখন এসব বিজ্ঞাপন দেখে বা ক্লিক করে, তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সেই চ্যানেলের মালিক তথা কনটেন্ট নির্মাতার অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয়। এই উপার্জনের পেছনের মূল উৎস হলো বিভিন্ন কোম্পানি, যারা তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য গুগলকে অর্থ প্রদান করে।দুঃখজনক হলেও সত্যি,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে অশ্লীল,অনৈতিক বেপর্দা নারীদের নাচ গান কিংবা ইসলামি দৃষ্টিকোণে হারাম পণ্য যেমন সুদ, মদ, ও এজাতীয় অন্যান্য জিনিসের প্রচারও হয়ে থাকে। গুগল এই বিজ্ঞাপনগুলো বিপুল অর্থের বিনিময়ে ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন করে এবং সেই আয়ের ক্ষুদ্র একটি অংশ বিজ্ঞাপন প্রদর্শনকারীদের যেমন ইউটিউবার বা ওয়েবসাইট মালিকদের দিয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ইনকাম হালাল কিনা!ইতিপূর্বেই আমরা হালাল উপার্জনের মূলনীতি উল্লেখ করেছে অতএব,হালাল উপার্জনের মূলনীতির আলোকে বিচার- বিশ্লেষণ করলে, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মনিটাইজেশন চালু করে কনটেন্ট প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি দুইটি অবস্থায় বিভক্ত হতে পারে। যার মধ্যে একটি পরিপূর্ণ হারাম, আরেকটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ হতে পারে। যেমন:
.
(১).ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওর বিষয়বস্তু যদি হারাম হয়,তাহলে নিশ্চিতভাবে কোনো মতভেদ ছাড়াই সে উপার্জন সম্পূর্ণভাবে হারাম হবে। আর যদি ভিডিওর মূল কন্টেন্ট হালালও হয়, কিন্তু গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে এমনসব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় যেগুলো অশ্লীলতা, নগ্নতা, হারাম পণ্য (যেমন: তামাক, মদ, সুদ, জুয়া) কিংবা বাদ্যযন্ত্রসহ গান-বাজনার প্রচার করে, তাহলে এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থও হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন শুধু হারামেরই নয়, বরং হারামকে প্রশ্রয় ও প্রচারের সহযোগিতাও করে, যা দ্বিগুণ গুনাহের কারণ হয়। দুঃখজনকভাবে, আজকাল একশ্রেণির নারী-পুরুষ নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কেবল অর্থের লোভে কিংবা ভিউয়ের লালসায় অনৈতিক, অশ্লীল ও নগ্ন কনটেন্ট ছড়াচ্ছে। একজন বিবেকবান, আত্মসচেতন মানুষ কখনোই এসব অশ্লীলতার পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। যারা এই সব কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করছে, তারা নিজেরাও যেমন গুনাহগার, তেমনি দর্শকদেরও চোখের জিনায় লিপ্ত করে মারাত্মক পাপে জড়াচ্ছে। অথচ রাসূল ﷺ বলেছেন: “দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা….।”
(সহীহ বুখারী, হা/৬২৪৩; মিশকাত, হা/৮৬)।
.
আল্লাহ তা‘আলা এসব অশ্লীলতা প্রদর্শনকারীদের শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করে বলেন,اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ”নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না”।(সূরা আন-নূর: ১৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,”বলুন, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে”।(সূরা আল-আ‘রাফ: ৩৩)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান করে, সে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; তাদের সওয়াব থেকে কিছুই কমবে না। আর যে ব্যক্তি গোমরাহির দিকে আহ্বান করে, সে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ বহন করবে; তাদের পাপ থেকেও কিছুই কমবে না।”(সহীহ মুসলিম: ২৬৭৪) প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন: ‘আল্লাহ্র চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাশীল কেউ নয় এবং এ কারণেই তিনি সকল অশ্লীল কাজ হারাম করেছেন আর (আল্লাহ্র) প্রশংসার চেয়ে আল্লাহ্র অধিক প্রিয় কিছু নেই।” (সহীহ বুখারী হা/৫২২০)
.
বর্তমান সৌদি আরবের অন্যতম একজন আলেম শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, “হারাম ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা এবং তা প্রচার করে অর্থ উপার্জন করা উভয়-ই হারাম। কেননা তা অন্যায়, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ “তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা কর। এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা কর না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর”।(সূরা আল-মায়িদাহ: ২; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪, ৬৬৯৭, ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৬৭১৭৩)। উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন।(তাফসীর ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা: ১২; তাফসীরে কুরতুবী; ৬ষ্ঠ খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৪৬-৪৭)। কাতার ভিত্তিক বিখ্যাত ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েব’-এর আলেমগণ বলেন, ‘হারাম ও নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত করে অর্থ উপার্জন করা জায়েয নয়। সুতরাং আপনার উপর অপরিহার্য হল নিজেকে এর থেকে মুক্ত করা’ (ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং-২৬৫১০২, ১৩২১৩৯)।
.
পাশাপাশি ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে, إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাসআলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায়’ (অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে)। হাদীছেও এমন বক্তব্য এসেছে (সহীহ বুখারী, হা/৫২; মুসলিম, হা/৩৯৮৬)। অন্য হাদীসে নবী (ﷺ) বলেন,دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ “যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হল দ্বিধা-সন্দেহ”।(তিরমিযী, হা/২৫১৮, সনদ সহীহ)। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সন্দেহমুক্ত, বৈধ ও উৎকৃষ্ট পন্থায় অর্থোপার্জন করার প্রচেষ্টা করা এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন উপার্জনের পথ অন্বেষণ করা”। (মূলনীতিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ দায়িমাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৭৪-২৭৫ ও ১৪তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৪২০)
.
(২).ফেসবুক বা ইউটিউবে আপলোডকৃত ভিডিওর বিষয়বস্তু যদি ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল ও নৈতিকতার সীমার মধ্যে থাকে, এবং ভিডিওতে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনসমূহ অশ্লীলতা, নগ্নতা কিংবা হারাম পণ্য থেকে মুক্ত থাকে, এবং সেখানে শরিয়তসম্মত উপকারিতা অর্জন করা যায় তাহলে তা থেকে আয় করা বৈধ হতে পারে। কিন্তু এটি পুরোপুরি অসম্ভব কেননা Google AdSense তাদের নিজেদের ইচ্ছামত বিজ্ঞাপন নির্বাচন প্রচার প্রসার করে যেখানে চ্যানেল মালিক বা কন্টেন্ট আপলোডকারীর এই বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা নেই। গবেষকগণ বলেন, ইউটিউব মনিটাইজেশন/গুগুল এ্যাডসেন্সে প্রায় ৫০০ ক্যাটাগরি এর মধ্যে মাত্র ২০০ ক্যাটাগরি ব্লক করার সুযোগ আছে। বাকি প্রায় ৩০০ ক্যাটগরি ব্লক করা সম্ভব নয়। সে আলোকে একেক দেশে একেক ধরণের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়।অনেক সময় চ্যানেল মালিক জানতেও পারে না যে, ইউপরোপ-আমেরিকা বা অন্যান্য দেশে তার চ্যানেলে কী ধরণের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে!
.
সারকথা এই যে, ইউটিউব চ্যানেলে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন যদি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ ও হালাল পণ্য বা সেবার প্রচার করে, তাহলে তা অনুমোদনযোগ্য। বিশেষ করে যদি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ গুগল মনিটাইজেশনের পরিবর্তে নিজস্বভাবে প্রস্তুতকৃত হালাল পণ্যের বিজ্ঞাপন ব্যানার বা টেক্সট আকারে ইউটিউব চ্যানেলে উপস্থাপন করে, অথবা দেশীয় কোনো বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শরীয়তসম্মত চুক্তির মাধ্যমে তাদের হালাল পণ্যের প্রচার-প্রসার করে এবং চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক গ্রহণ করে তাহলে সে উপার্জন শরীয়ত অনুযায়ী বৈধ হবে। অন্যথায়, যদি বিজ্ঞাপন বা উপার্জনের মাধ্যম শরীয়তের পরিপন্থী হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, ইসলামে হালাল ও হারাম স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন,یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ”হে মানবসকল! পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে, তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”।(সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)। হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট, আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। (সহীহ বুখারী, হা/৫২; মুসলিম, হা/৩৯৮৬)। রাসূল (ﷺ) হালাল উপার্জনের প্রতি জোর তাগিদ দিয়ে বলেন, إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا “আল্লাহ পবিত্র।পবিত্র ভিন্ন তিনি গ্রহণ করেন না”।(সহীহ মুসলিম হা/১০১৫) অপর বর্ননায় তিনি বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّىَ بِالْحَرَامِ ‘হারাম দ্বারা পরিপুষ্টিসাধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।(মিশকাত হা/২৭৮৭; সিলসিলা সহীহা হা/২৬০৯) তিনি (ﷺ) আরো বলেন, كُلُّ جَسَدٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ “হারাম দ্বারা গঠিত প্রত্যেক দেহ জাহান্নামে যাওয়ার অধিক উপযুক্ত।” (সহীহুল জামে হা/৪৫১৯ সনদ বিশুদ্ধ) অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنِ اكْتَسَبَ مَالًا مِنْ مَأْثَمٍ فَوَصَلَ بِهِ رَحِمَهُ أَوْ تَصَدَّقَ بِهِ أَوْ أَنْفَقَهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ جُمِعَ ذَلِكَ كُلُّهُ جَمِيْعًا فَقُذِفَ بِهِ فِيْ جَهَنَّمَ- ‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করল। অতঃপর এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করল বা ছাদাক্বা করল বা আল্লাহর পথে তা ব্যয় করল, এর সবগুলিকে একত্রিত করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”।(সহীহ আত তারগীব হা/১৭২১)
ইমাম ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,وكما يتَعَلَّق الثَّوَابُ وَالْعِقَاب والمدح والذم بِإِخْرَاج الدِّرْهَم فَكَذَلِك يتَعَلَّق باكتسابه، وَكَذَلِكَ يسْأَل عَنهُ مستخرجه ومصروفه، من أَيْن اكْتَسبهُ وَفِيمَا أنفقهُ-“পুণ্য, শাস্তি, প্রশংসা ও নিন্দা যেমন টাকা-পয়সা খরচের সাথে সম্পৃক্ত, তেমনি তা উপার্জনের সাথেও সম্পর্কিত। অনুরূপভাবে এর আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে”।(ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, আল-ফাওয়াইদ পৃষ্ঠা: ২০৭, ‘টাকা-পয়সা উপার্জনের প্রকারভেদ’ অনুচ্ছেদ; কায়রো দারুল হাদীস: ১৪২৬/২০০৫) তাই হালাল উপার্জন করতে হবে এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ ইনকাম থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,”পবিত্র ও নিকৃষ্ট কখনো সমান হতে পারে না- যদি নিকৃষ্টের আধিক্য তোমাকে আকৃষ্ট করে। অতএব হে বিবেকবান লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে”।(আল মায়েদা, ৫/১০০)।
.
সালাফি শাইখ আবূ যাইদ যামীর (হাফিযাহুল্লাহ্)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইউটিউব থেকে উপার্জন করার বিধান।
জবাবে তিনি বলেন: ❝দেখুন ইউটিউবে আপনি যদি কোন চ্যানেল ওপেন করেন তাহলে সেখানে কিছু বিজ্ঞাপন আসবে (অ্যাডসেন্স ব্যবহারের কারণে), আর (এভাবে) সেখান থেকে আপনি কিছু টাকাও উপার্জন করতে পারবেন। সত্যি বলতে আপনি নিজেও জানেন না যে (অ্যাডসেন্স ব্যবহারের ফলে) ঠিক কোন ধরণের বিজ্ঞাপন আসবে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখানে সুদ, মদ, সিনেমা ও এজাতীয় জিনিস আসে। তো এখানে বেশিরভাগই নোংরা জিনিস দেখায়। আর তাই আমি এটাকে (হালাল এর) অনুকূল মনে করিনা। তারপরও আপনারা উলামাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। তবে আপনার কাছে যদি বাছাই করবার সুযোগ থাকে, যাতে ভালো কোন বিজ্ঞাপন দেখাবে, কিন্তু আপনার কাছে (বাছাই করবার) সেই ক্ষমতা নেই। মনে করুন আপনার চ্যানেল থেকে লাইভ দারস্ হচ্ছে আর উমুক শাইখের হালাল ও হারাম সংক্রান্ত দারস্ হবে। আর তার পূর্বে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে ফিল্মের , মদের, কিংবা অনুরূপ অশ্লীল বিষয়বস্তুর। এখন চিন্তার বিষয় হলো, দুটোই বিপরীতমুখী জিনিস। সুতরাং এটা শোভনীয় নয়। এইজন্যই আমরা আমাদের যেসব চ্যানেল বানিয়েছি তা থেকে অনেক টাকা কামাতে পারি, কিন্তু আমরা কামাই না। কেননা, আমাদের নিকটে এটা শোভনীয় নয়। দা’ওয়াতের খরচপাতি বহন কিংবা মাধ্যম ও উপকরণসমূহ একত্রিত করার জন্য আরও উপায় রয়েছে, টাকা-পয়সা সংগ্রহ করার জন্যেও আরও মাধ্যম রয়েছে, কিন্তু এটা (ইউটিউবে এ্যাডসেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা) ঠিক নয়।❞(গৃহীত: https://youtu.be/mbBWt1rt_0I উর্দু থেকে অনুবাদক: আখতার বিন আমীর)।
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! আমরা সবাইকে হালাল কাজে ধাবিত হতে এবং হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি। জেনে রাখুন, আল্লাহ যখন কোনো জিনিসকে হারাম করেন, তখন তিনি এর মূল্যকেও হারাম করেন। অনুরূপভাবে, হারাম কিছু বাস্তবায়নের মাধ্যমও হারাম। মূল কাজের যে হুকুম, মাধ্যমেরও সেই হুকুম। হুকুমের দিক থেকে এই দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। সুতরাং, প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হলো সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা এবং হালাল উপার্জনের মাধ্যম অন্বেষণ করা।আল্লাহ তাআলা বলেন:وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجاً وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ * وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْراً “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ করে দিবেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা সে ধারণাও করে না। যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ নিশ্চয়ই তার উদ্দেশ্য পূরণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি মাত্রা ঠিক করেছেন।”[সূরা ত্বালাক: ২, ৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।”(ইমাম আলবানী বর্ণনাটিকে হিজাবুল মারআতিল মুসলিমাহ বইয়ে পৃ. ৪৯) সহিহ বলে গণ্য করেছেন] এমনকি হারাম উপার্জন দিয়ে পরিপুষ্ট দেহ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে শরীর হারাম উপার্জনে গঠিত সে শরীর জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া যুক্তিযুক্ত।”(তাবারানী ও আবু নুআইম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহিহ আল-জামে হা/৪৫১৯) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, হালাল রুজি দিয়ে আমাদেরকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং তাঁর নিজ অনুগ্রহে অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।