Saturday, August 30, 2025

ইসলামে এক পায়ের ওপর অন্য পা তুলে শোয়ার বিধান

 ইসলামে এক পায়ের ওপর অন্য পা তুলে শোয়ার বিধান (লজ্জাস্থান প্রকাশিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে জায়েজ। অন্যথায় নয়)

প্রশ্ন: জাযাকুমুল্লাহু খাইরান। (আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন)। আমি একটি হাদিস সম্পর্কে বারবার শুনেছি। কিন্তু এর পুরোটা কখনোই জানা হয়নি। হাদিসটির সারমর্ম হলো, শোয়া বা বসার সময় এক পায়ের ওপর অন্য পা রাখা নিষেধ। আমি এই হাদিসের কিছু অংশ ইসলামিক রেডিও চ্যানেল, যেমন: সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেডিওতে শুনেছি। অনুগ্রহ করে এ বিষয়ে আমাকে বিস্তারিত জানাবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।
​উত্তর: ​সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর। ​সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মসজিদে এমন অবস্থায় দেখা গেছে যে, তিনি শুয়ে আছেন এবং এক পায়ের ওপর অন্য পা রেখেছেন। যেমনটি উবাদ বিন তামিমের তার চাচার সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে।
তিনি বলেন:
​”رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد واضعا إحدى رجليه على الأخرى.”
“আমি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মসজিদে এক পা অন্য পায়ের ওপর রাখা অবস্থায় (শুয়ে থাকতে) দেখেছি।” [বুখারি ও মুসলিম] আবার সহিহ মুসলিমের অন্য একটি হাদিসে এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে চিৎ হয়ে শোয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন:
জাবের (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে আছে:
​”أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن اشتمال الصماء وأن يرفع الرجل إحدى رجليه على الأخرى وهو مستلق على ظهره.”
“আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ইশতিমালুস সাম্মা’ (এমনভাবে কাপড় পরা যাতে হাত বের করার কোনও সুযোগ থাকে না) এবং এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে চিত হয়ে শোয়া থেকে নিষেধ করেছেন।”
🔹এই দুই ধরনের হাদিসের মাঝে সমন্বয় এবং এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের ব্যাখ্যা:
​ বিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন, যে হাদিসগুলোতে এই ধরনের শোয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা এমন অবস্থার জন্য প্রযোজ্য, যেখানে সতর বা লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অবস্থায় এটি করেছেন তাতে তার কোনও অংশই প্রকাশ পায়নি। তাই এই অবস্থায় এমনভাবে শোয়া বা বসা জায়েজ এবং এতে কোনও সমস্যা নেই।
– ​সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার নওয়াবি রহ. এ সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন:
“قال العلماء: أحاديث النهي عن الاستلقاء رافعا إحدى رجليه على الأخرى، محمولة على حالة تظهر فيها العورة أو شيء منها، وأما فعله صلى الله عليه وسلم فكان على وجه لا يظهر منها شيء، وهذا لا بأس به ولا كراهة فيه على هذه الصفة.”
” আলেমগণ বলেছেন, যে হাদিসগুলোতে এক পায়ের উপর অন্য পা রেখে চিত হয়ে শোয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা এমন অবস্থার জন্য প্রযোজ্য যখন সতর বা গোপনাঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অবস্থায় তা করেছেন তাতে তার কোনও অংশই প্রকাশ পায়নি। এই অবস্থায় এমনভাবে শোয়া বা বসা জায়েজ এবং এতে কোনও সমস্যা নেই।”
✪ হাফিজ ইবনে হাজার (রহ.):
হাফিজ ইবনে হাজার রহ. ইমাম খাত্তাবি (রহ.)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন:
قال الخطابي: إن النهي الوارد عن ذلك (الاستلقاء مع وضع الرجل على الأخرى) منسوخ، أو يحمل النهي حيث يخشى أن تبدو العورة والجواز حيث يؤمن ذلك، قلت (الحافظ) الثاني أولى من النسخ… انتهى.”
“খাত্তাবি (রহ.) বলেছেন, এ ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তা হয় রহিত হয়ে গেছে।‌ অথবা এই নিষেধাজ্ঞা তখন প্রযোজ্য যখন সতর প্রকাশ পাওয়ার ভয় থাকে। আর তা তখনই জায়েজ যখন এই ধরনের কোনও আশঙ্কা থাকে না।”
– হাফিজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন: “আমার মতে, দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি (যেখানে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কার সাথে নিষেধাজ্ঞা জড়িত) রহিত হওয়ার মতের চেয়ে বেশি সঠিক।”
​আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
[ইসলাম ওয়েব]
✪ ইমাম নওয়াবি রচিত বিখ্যাত রিয়াদুস সালেহীন কিতাবের একটি অধ্যায় হল:
باب جواز الاستلقاء عَلَى القفا ووضع إحدى الرِّجلين عَلَى الأخرى إِذَا لم يَخف انكشاف العورة
“অধ্যায়: চিৎ হয়ে শুয়ে এক পায়ের উপর অন্য পা রাখার বৈধতা, যদি সতর (লজ্জাস্থান) উন্মুক্ত হওয়ার ভয় না থাকে।”
অতঃপর তিনি পূর্বোক্ত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদে এক পায়ের উপরে আরেক পা উঠিয়ে শোয়ার হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
❑ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.:
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায বলেন, “একজন মানুষের জন্য মসজিদ, বাড়ি বা অন্য যেকোনো উপযুক্ত স্থানে চিৎ হয়ে শোয়ায় কোনও সমস্যা নেই। যদি সতর (লজ্জাস্থান) সুরক্ষিত থাকে, তাহলে এক পায়ের উপর অন্য পা রাখাও জায়েজ। যেসব হাদিসে এই কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলোকে এমন পরিস্থিতির জন্য ধরা হয়, যেখানে সতর (লজ্জাস্থান) সুরক্ষিত থাকে না। যদি সতর ঢাকা থাকে তাহলে চিৎ হয়ে শোয়া এবং এক পায়ের উপর অন্য পা রাখায় কোনও ক্ষতি নেই। কারণ মানুষ এই ভঙ্গিতে আরাম অনুভব করতে পারে।‌ তাই এতে কোনও অসুবিধা নেই।” [উৎস: binbaz]
মোটকথা, একজন মানুষ মসজিদে কিংবা নিজ গৃহে লুঙ্গি বা এই জাতীয় কাপড় পরিধান করে আরামের জন্য চিত হয়ে এক পায়ের উপরে আরেক পা তুলে শুয়ে থাকতে পারে। শরিয়তে দৃষ্টিতে নাজায়েজ নয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন, লুঙ্গি সরে গিয়ে লজ্জাস্থান প্রকাশিত না হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানায় সাধারণত মানুষ লুঙ্গি পরিধান করতেন। সে কারণে নবী আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তবে লুঙ্গির ভেতরে আন্ডার ওয়ার থাকলে কিংবা পায়জামা পরিহিত অবস্থায় এভাবে শোয়াতে লজ্জাস্থান প্রকাশিত হওয়ার কোন আশঙ্কা থাকে না। সে ক্ষেত্রেও তা বৈধ।
❑ শিক্ষা:
একজন সচেতন মুসলিম সর্বদা ইসলামি শিষ্টাচার রক্ষা করে সতর্কতার সাথে জীবন যাপন করবে এবং তার নিজের ইজ্জতের হেফাজত করবে। এমনভাবে শোবে না বা বসবে না যাতে তার গোপনাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে যায়। এটি একজন সুস্থ রুচি সম্পন্ন এবং সভ্য মানুষের বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
অনুবাদও গ্রন্থনা:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate