Wednesday, September 10, 2025

মিলাদ বা মাওলিদ অনুষ্ঠানের বিধান এবং যে তা পালন করে তার পেছনে সালাতের বিধান

 প্রশ্ন: মিলাদুন্নবী পালনের বিধান কী? এবং যারা এই কাজ করে, বিশেষ করে যখন সে কোনো মসজিদের ইমাম এবং খতিব হয় তাদের ব্যাপারে শরিয়তের বিধান কী? তার পেছনে সালাত পড়া জায়েজ হবে কি? আমি যখন কাউকে বলি যে, এটি একটি নিকৃষ্ট বিদআত তখন সে খুব বিরক্ত হয় এবং সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস দিয়ে যুক্তি দেখায়, যেখানে বলা হয়েছে যে, সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত আছে। আর এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, সোমবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এসব মানুষের ব্যাপারে আমরা কী করব? বিশেষ করে যখন তারা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত? ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ আপনাকে আমাদের এবং সকল মুসলিমকে এর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর: সাধারণভাবে ​জন্মোৎসব পালন করা একটি নব আবিষ্কৃত বিদআত। মিলাদুন্নবী বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া রাহমাতুল্লাহ-এর জন্মোৎসবও এই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। এটি মুসলিমদের মধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে অথচ তা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবিগণ, যেমন: খোলাফায়ে রাশেদিন প্রমূখ তা পালন করেননি। এমনকি প্রথম শ্রেষ্ঠ তিন প্রজন্মের মুসলিমরাও এটি পালন করেননি। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সহিহ হাদিসে বলেছেন:
من عمل عملًا ليس عليه أمرنا فهو رد
​“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে, যার ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”
​তিনি আরও বলেছেন:
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه؛ فهو رد
​“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু তৈরি করবে যা এর অংশ নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
​সুতরাং মুসলিমদের উপর অপরিহার্য হল, এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত অনুসরণ করা এবং তার নির্দেশনা মেনে চলা। মিলাদুন্নবী পালনের কোনো ভিত্তি নেই। বরং এটি একটি বিদআত যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। একজন মুসলিমের জন্য জরুরি হল, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা, তার শরিয়ত ও সুন্নাতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তার পথে চলা। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
​قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
​“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।” [সূরা আলে ইমরান: ৩১] ​এবং তিনি আরও বলেছেন:
​وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
​“রসুল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো।” [সূরা হাশর: ৭]
​অতএব তার প্রতি ভালোবাসা, তাকে অনুসরণ করা, তার নির্দেশনা গ্রহণ করা এবং যা থেকে তিনি নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এটিই একজন মুসলিমের দায়িত্ব। মিলাদ বা অন্য কোনো বিদআত দ্বীনের মধ্যে জায়েজ নয়। বরং তা পরিহার করা আবশ্যক। মিলাদ উদযাপন, কবরের উপর স্থাপনা নির্মাণ, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা এবং কবরের নিকটে সালাত আদায় করা—এগুলো সব নব আবিষ্কৃত বিদআত। একইভাবে, রজব মাসের ২৭ তারিখে ইসরা ও মিরাজের অনুষ্ঠান পালন করাও বিদআত।কারণ শরিয়তে এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
🟢 মিলাদ পালনকারী ​ইমামের পেছনে সালাত: ​যে ইমাম লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন তাকে এই ধরনের কাজ (মিলাদ) থেকে বিরত থাকার জন্য নসিহত করা উচিত। তবে তার পেছনে সালাত সহিহ হবে যদি তার মধ্যে শুধুমাত্র মিলাদের বিদআত থাকে। কারণ এটি একটি বিদআত; কুফর নয়। ​তবে যদি সেই মিলাদ অনুষ্ঠানে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকা হয় এবং তার কাছে সাহায্য চাওয়া হয় তবে এটি বড় কুফর। যদি তারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকে, তার কাছে সাহায্য চায় এবং তার উদ্দেশ্য মানত করে তবে তা বড় কুফর। ​অন্যদিকে শুধু মিলাদ পালন, খাবার বিতরণ, মানুষ একত্রিত হওয়া এবং শিরকমুক্ত কসিদা (কবিতা) পাঠ করা—এটি বিদআত। তবে যদি কসিদার মধ্যে শিরক থাকে, যেমন বুসারির লেখা বুরদা কবিতার এই অংশ:
​يَا أَكْرَمَ الْخَلْقِ مَا لِي مَنْ أَلُوذُ بِهِ سِوَاكَ عِنْدَ حُدُوثِ الْحَادِثِ الْعَمَمِ
​إِنْ لَمْ تَكُنْ فِي مَعَادِي آخِذًا بِيَدِي فَضْلًا وَإِلَّا فَقُلْ يَا زَلَّةَ الْقَدَمِ
​فَإِنَّ مِنْ جُودِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا وَمِنْ عُلُومِكَ عِلْمَ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ
​“হে সৃষ্টির সেরা, মহাবিপদের সময় আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই, যার কাছে আমি আশ্রয় নিতে পারি।”
​“যদি আপনি কিয়ামতের দিন অনুগ্রহ করে আমার হাত না ধরেন, তাহলে আমার পতন অবশ্যম্ভাবী।”
​“আপনার দানশীলতা থেকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই এসেছে এবং আপনার জ্ঞানের অংশ হলো লাওহ ও কলমের জ্ঞান।”
​যে ব্যক্তি এসব বিশ্বাস করে, সে কাফের হয়ে যাবে। আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। ​সুতরাং মুসলিমদের উপর অপরিহার্য হল, শিরক এবং সকল প্রকার বিদআত থেকে দূরে থাকা, এবং একে অপরকে এই কাজগুলো ত্যাগ করার জন্য নসিহত করা। দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, শেখা এবং সুন্নাতের অনুসারী আলেমদের কাছে এই বিদআত সম্পর্কে প্রশ্ন করা উচিত। আমরা সকলের জন্য হেদায়েত, সাফল্য এবং অন্তর্দৃষ্টি কামনা করি।
▪️​ উপস্থাপক: মান্যবর শাইখ,
​সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার হাদিস দ্বারা মিলাদের দলিল পেশ করা কতটা সঠিক?
উত্তরে‌ শাইখ বলেন,
আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত হাদিস যেখানে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এবং তিনি বলেছিলেন:
ذلك يوم ولدت فيه، وبعثت فيه
“এটি সেই দিন যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমাকে নবি হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।”
এটি তাদের জন্য কোনো দলিল হতে পারে না। এই হাদিসটি কেবল সোমবার রোজা রাখার বৈধতা প্রমাণ করে। সোমবার রোজা রাখা যায়। কারণ এই দিনে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই দিনে তার ওপর ওহি নাজিল হয়েছে।
এছাড়াও এই দিনে এবং বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন এবং বলতেন:
إنهما يومان تعرض فيهما الأعمال على الله؛ فأحب أن يعرض عملي وأنا صائم
“এই দুটি দিনে আল্লাহর কাছে আমল পেশ করা হয়। তাই আমি চাই যে আমার আমল পেশ করার সময় আমি রোজা থাকি।”
​সুতরাং সোমবার রোজা রাখা ভালো। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন রোজা রেখেছেন, তেমনি এটি করা উচিত। তিনি বলেননি যে, এই দিনটিকে উৎসব বা ঈদ হিসেবে পালন করতে হবে। বরং কেবল রোজা রাখার বিধান দিয়েছেন। তাই যে রোজা রেখেছে সে উত্তম কাজ করেছে। কিন্তু যে ব্যক্তি মিলাদের আয়োজন করে, খাবার বিতরণ করে এবং কবিতা পাঠের মাধ্যমে উৎসব পালন করে, এটি বিদআত। এ দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate