প্রশ্ন: ইমাম যদি রুকুর আগে ও পরে হাত তোলার মতো কিছু সুন্নাহ ত্যাগ করেন তাহলে কি মুসল্লিকে ইমামের অনুসরণ করতে হবে নাকি সুন্নাহর অনুসরণ করা উত্তম?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর ইমাম শব্দের অর্থ নেতা। তিনি মাননীয় ও অনুসরণীয়।সালাত আদায়ে তিনি নেতৃত্ব দেন। সকল শ্রেণীর মুসল্লী তার নেতৃত্বে সালাতে রুকু সিজদা আদায় করেন, উঠেন ও বসেন। তার তাকবীর ধ্বনি শুনে সকলে তার অনুকরণ ও অনুসরণ করেন, কেউই তা লঙ্ঘন করে না। ইমামের এরূপ অনুসরণই হলো ইক্তিদা। ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সালাতে ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব।কারন রাসূল (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ “ইমাম নিযুক্ত করা হয়, কেবল তাঁকে অনুসরণ করার জন্য”।(সহীহ বুখারী হা/৩৭৮) এখানে অনুসরণ করার অর্থ হলো,ইমাম কোনো কাজ শেষ করার পরপরই মুক্তাদির সেই কাজটি শুরু করা।(বিস্তারিত জানতে দেখুন; হাশিয়াতু ইবনে কাসিম খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৮৫; ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি; আলা জাদিল মুস্তাকনি; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৬৯; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৪৪৫৮)
.
সালাতে ইমাম যদি কোনো সুন্নাহ ত্যাগ করেন তাহলে মুক্তাদির করণীয় হলো যে আমলকে তিনি সুন্নাত মনে করেন, ইমাম তা করুন বা না করুন, তিনিও তা পালন করবেন। তবে যদি সেই আমল করার কারণে ইমামের অনুসরণ ব্যাহত হয় অর্থাৎ তিনি ইমামের থেকে এগিয়ে যান কিংবা পেছনে পড়ে যান তাহলে এ অবস্থায় ইমামের অনুসরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুন্নাত আমলটি ছেড়ে দেবেন। প্রশ্নে উল্লিখিত বিষয় (রুকুতে যাওয়ার আগে ও পরে হাত তোলা) ইমামের অনুসরণে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না। সুতরাং মুক্তাদির জন্য এ কাজ করা উচিত। কিন্তু যে আমলের কারণে অনুসরণ ব্যাহত হয়, তার উদাহরণ হলো: যদি মুক্তাদি জলসাতুল ইস্তেরাহাহ (বিশ্রামের জন্য অল্পক্ষণ বসা) করতে চান অথচ ইমাম তা না করেন, তবে এ ক্ষেত্রে মুক্তাদির উচিত হবে ইমামের অনুসরণে সেই আমলটি ছেড়ে দেওয়া।(বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৪৪৫৮)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,وَإِنْ تَرَكَ الإِمَامُ جلْسَةَ الاسْتِرَاحَةِ أَتَى بِهَا الْمَأْمُومُ , قَالَ أَصْحَابُنَا (يعني الشافعية) : لأَنَّ الْمُخَالَفَةَ فِيهَا يَسِيرَةٌ ا”যদি ইমাম ‘জলসাতুল ইস্তিরাহা’ (বিশ্রামের বসা) ছেড়ে দেন,তবে মুক্তাদি তা আদায় করবে। আমাদের শাফি‘ঈ মাযহাবের আলেমগণ বলেছেন:
কারণ এতে ইমামের সাথে ভিন্নতা খুবই সামান্য।”(ইমাম নববী; আল-মাজমু; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৪০)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
الشيء الذي لا يقتضي التَّأخُّر عن الإمام ولا التَّقدُّم عليه فهذا يأخذ المأموم بما يراه ، مثاله : لو كان الإمام لا يرى رفع اليدين عند التَّكبير للرُّكوع والرَّفع منه والقيام من التَّشهد الأوَّل ، والمأموم يرى أن ذلك مستحبٌّ ، فإنه يفعل ذلك ؛ لأنه لا يستلزم تأخراً عن الإمام ولا تقدُّماً عليه ، ولهذا قال الرَّسول صلّى الله عليه وسلّم : (إذا كَبَّر فكبِّروا ، وإذا ركع فاركعوا ، وإذا سجد فاسجدوا) والفاء تدلُّ على التَّرتيب والتَّعقيب ، وكذلك أيضاً : لو كان الإمام يَتورَّكُ في كلِّ تشهُّد يعقبه سَلام حتى في الثُّنائيَّة ، والمأموم لا يرى أنه يَتورَّك إلا في تشهُّد ثانٍ فيما يُشرع فيه تشهُّدان ، فإنه هنا له ألا يتورَّك مع إمامه في الثُّنائيَّة ؛ لأن هذا لا يؤدِّي إلى تخلُّف ولا سبق
“যে সব কাজ ইমামের থেকে পিছিয়ে পড়া বা তার আগে এগিয়ে যাওয়ার কারণ হয় না, সে ক্ষেত্রে মুক্তাদির জন্য তার নিজের মত অনুসরণ করা বৈধ। উদাহরণস্বরূপ: যদি ইমাম রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহুদের পর দাঁড়ানোর সময় তাকবীরের সাথে হাত তোলাকে পছন্দ না করেন, অথচ মুক্তাদি তা মুস্তাহাব মনে করেন, তবে তিনি (মুক্তাদি) তা করতে পারেন। কারণ এতে ইমামের থেকে না পিছিয়ে পড়া হয়, না এগিয়ে যাওয়া হয়। এই কারণেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “যখন তিনি তাকবীর দেন,তখন তোমরাও তাকবীর দাও। যখন তিনি রুকু করেন, তখন তোমরাও রুকু করো। আর যখন তিনি সিজদাহ করেন, তখন তোমরাও সিজদাহ করো।” এখানে “فـ (ফা)” অক্ষরটি নির্দেশ করছে তাৎক্ষণিকতা ও ক্রমান্বয়। একইভাবে যদি কোনো ইমাম প্রত্যেক তাশাহুদের পর তাওয়াররুক (বসার একটি নির্দ্বিষ্ট পদ্ধতি) করেন এমনকি দুই রাকাআত বিশিষ্ট নামাজেও অথচ মুক্তাদির মতে দুই রাকাআত বিশিষ্ট নামাজে তাওয়াররুক করা বৈধ নয়; বরং দুই তাশাহহুদ বিশিষ্ট নামাজের দ্বিতীয় তাশাহুদের ক্ষেত্রেই কেবল তাওয়াররুক করা বৈধ, তাহলে এই ক্ষেত্রে মুক্তাদির জন্য ইমামের সাথে দুই রাকাআত বিশিষ্ট নামাজে তাওয়াররুক না করলে অসুবিধা নেই। কারণ এতে ইমামের সাথে না পিছিয়ে পড়া হয়, না তার আগে এগিয়ে যাওয়া হয়।”(ইবনু উসামীন আশ-শারহুল মুমতি; আলা জাদিল মুস্তাকনি; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩১৯-৩২০)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
No comments:
Post a Comment