উত্তর: এই সংক্রান্ত হাদিসটি আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই কথাটি সেহেরি-ইফতারের সময়সূচী, রোজা-রমজান বিষয়ক বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকার ইসলামি কলাম ইত্যাদিতে উল্লেখ করা হয়ে তাকে, অনেক মসজিদের ইমাম, খতিব এবং ইসলামি বক্তাদের মুখেও প্রায় শোনা যায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়।
অতএব এই হাদিস প্রচার করা ঠিক নয়। এর পরিবর্তে রমজানের ফজিলতে যে সকল বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো প্রচার করা উচিত।
ইসলাম অনলাইন (islamonline)-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
◈ সালমান আল-ফারিসি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষ দিনে আমাদের খুতবা দেন এবং বলেন:
أَيُّهَا النَّاسُ، قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ مُبَارَكٌ، شَهْرٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، جَعَلَ اللهُ صِيَامَهُ فَرِيضَةً، وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا، مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ، وَمَنْ أَدَّى فِيهِ فَرِيضَةً كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ، وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ
‘হে মানুষ! তোমাদের ওপর ছায়া ফেলেছে এক মহান ও বরকতময় মাস। এ মাসে এক রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এর রাতের কিয়ামকে নফল ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এতে কোনও নেক আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে, সে যেন অন্য সময় ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এতে ফরজ আদায় করবে, সে যেন অন্য সময় সত্তরটি ফরজ আদায় করল। এটি এমন এক মাস, যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ মাগফিরাত এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি…’”(হাদিসের সম্পূর্ণ অংশ এখানে উল্লেখ করা হয়নি।)
১. সনদের দুর্বলতা:
ইমাম তিরমিজি [হাসান] হাদিসে আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত:
إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ ، وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنْ النَّارِ وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ
“যখন রমজানের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও বিদ্রোহী জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কোনও দরজা খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং কোনও দরজা বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেন: ‘হে কল্যাণ প্রত্যাশী! এগিয়ে আসো। হে মন্দ প্রত্যাশী! বিরত থাকো।’ এবং আল্লাহ অনেককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা প্রতি রাতেই ঘটে।” [তিরমিজি: ৬৮২, হাসান]
◈ সতর্কতা:
❑ আল্লামা শাইখ ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ):
বর্তমান জমানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ, আল্লামা শাইখ ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়, কিছু মানুষ রমজান মাস এলে বলে থাকে: “রমজানের প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ মাগফিরাত আর শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি।” এটি কি কোনও হাদিস বা আসার?
উত্তরে তিনি বলেন,
هذا أثر يُنسب إلى النبي صلى الله عليه وسلم، ولكنه ضعيف الإسناد. سمعت شيخنا، الشيخ ابن باز -رحمه الله- يقول: “رمضان كله تجتمع فيه هذه الثلاث: الرحمة، والمغفرة، والعتق من النار، من أوله إلى آخره، من غير هذا التفصيل.”
No comments:
Post a Comment