Monday, March 27, 2023

প্রশ্নোত্তরে জানাজার ইসলামী বিধিবিধান

 জানাযার কিছু বিধান

তালকিন ও তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনা
প্রশ্ন-১. তালকিন কি ও তার নিয়ম কি?
উত্তর: মুমূর্ষূ ব্যক্তিকে কালিমা স্মরণ
করিয়ে দেয়া এবং তাকে কালিমা পাঠ
করার দীক্ষা দানকে আরবিতে ‘তালকিন’
বলা হয়। যখন কারো উপর মৃত্যুর আলামত
জাহির হয়, তখন উপস্থিত ব্যক্তিদের উচিত
তাকে ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ বলার জন্য উদ্বুদ্ধ
করা এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে বলা।
উপস্থিত লোকদের সাথে এ
কালিমা একবার পাঠ করাই তার জন্য
যথেষ্ট,
তবে পীড়াপীড়ি করে তাকে বিরক্ত
করা নিষেধ।
প্রশ্ন-২. মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কিবলামুখী করার
বিধান কি?
উত্তর: আলেমগণ মুমূর্ষু
ব্যক্তিকে কেবলামুখী করা মুস্তাহাব
বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‏« ﺍﻟﻜﻌﺒﺔ ﻗﺒﻠﺘﻜﻢ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻭﺃﻣﻮﺍﺗﺎ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ﻓﻰ ﺍﻟﻮﺻﺎﻳﺎ
ﺑﻠﻔﻆ ‏« ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻗﺒﻠﺘﻜﻢ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻭﺃﻣﻮﺍﺗﺎ‏» (
“বায়তুল্লাহু তোমাদের জীবিত ও মৃত উভয়
অবস্থায় কিবলা”। ইমাম আবু দাউদ ওসিয়ত
অধ্যায়ে বর্ণনা করেন, “বায়তুল হারাম
তোমাদের জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়
কিবলা”।
প্রশ্ন-৩. দাফনের পর তালকিন করার বিধান
কি ?
উত্তর: দাফনের পর তালকিন প্রসঙ্গে শরি
‘আতে কোন প্রমাণ নেই, তাই এটা বিদাত।
দাফনের পর তালকিন প্রসঙ্গে বর্ণিত
হাদিসগুলো জাল ও আমলের অযোগ্য, তাই
তালকিন শুধু মুমূর্ষাবস্থায় করা, মৃত্যুর পর নয়।
প্রশ্ন-৪. অমুসলিম মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালিমার
তালকিন করা বৈধ?
উত্তর: হ্যাঁ, সম্ভব হলে অমুসলিম ব্যক্তিকেও
কালিমার তালকিন করা বৈধ। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জনৈক ইয়াহূদী খাদেম মমূর্ষাবস্থায় পতিত
হলে, তিনি তাকে দেখতে যান ও
তাকে কালিমার তালকিন করে বললেন,
বলঃ
‏« ﺃﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَﺇِﻟَﻪ ﺇﻻّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤّﺪَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ‏»
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত
সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর
রাসূল”। এ কথা শোনে বালকটি তার
পিতা-মাতার দিকে তাকাল,
তারা তাকে বললঃ “তুমি আবুল কাসেমের
আনুগত্য কর”।
এভাবে ইয়াহূদী বালকটি কালিমা পড়ে
ইন্তেকাল করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “সমস্ত
প্রসংশা মহান আল্লাহ তালার
জন্যে যিনি আমার মাধ্যমে এ
বালকটিকে জাহান্নামের অগুন
থেকে মুক্ত করলেন।
প্রশ্ন-৫. উল্লেখিত হাদিস কি অমুসলিম
খাদেম গ্রহণের বৈধতা প্রমাণ করে?
উত্তর: না, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ
জীবনে ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে আরব
উপদ্বীপ হতে বের করে দিতে বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে বের
করে দিতে বলেছেন, খাদেম
হিসাবে তাদেরকে ডেকে আনার কোন
অর্থ নেই।
মৃতের গোসল ও কাফন
প্রশ্ন-১. সাহাবি ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহুর হাদিস দ্বারা মৃত ব্যক্তির গোসলের
পানিতে বড়ই পাতা দেয়া ওয়াজিব
প্রমাণিত হয়?
উত্তর- মৃতের গোসলের পানিতে বড়ই
বা কুলপাতা দেয়া শরীয়ত সম্মত,
তবে ওয়াজিব নয়। আলেমগণ হাদিসের
নির্দেশকে মুস্তাহাব বলেছেন। কারণ
কুলপাতা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য খুব
কার্যকরী।
কুলপাতা না পাওয়া গেলে সাবান বা এ
জাতীয় কিছু ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
প্রশ্ন ২- এহরাম আবস্থায় মৃত ব্যক্তির
গোসলের হুকুম কি?
উত্তর: এহরাম অবস্থায় মৃত ব্যক্তিকেও
অন্যান্যদের ন্যায় গোসল দিতে হবে,
তবে তার
গাঁয়ে সুগন্ধি মাখবে না এবং তার মুখ ও
মাথা ঢাকবে না। তার কাফন পাগড়ি ও
জামা ব্যতীত শুধু এহরামের
কাপড়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। সহিহ হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন এহরাম অবস্থায় মৃত
ব্যক্তি কিয়ামতের দিন
তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে। এহরাম
অবস্থায় মৃত ব্যক্তির হজের অবশিষ্ট কাজ
অন্য কাউকে সম্পূর্ণ করতে হবে না, তার
মৃত্যু আরাফাতে অবস্থানের পর
বা আগে যখনই হোক। কারণ এ
ব্যাপারে রাসূলের কোন নির্দেশ নেই।
প্রশ্ন ৩- নারী ও পুরুষকে কাফন কাপড়
পরানোর নিয়ম কি?
উত্তর- জামা ও পাগড়ী ব্যতীত
পুরুষকে সাদা তিন
কাপড়ে এবং নারীকে ইযার, কামিস,
উড়না ও বড় দু’চাদরসহ মোট পাঁচ
কাপড়ে কাফন দেয়া উত্তম। এ ছাড়া সতর
ঢেকে যায় এমন এক
কাপড়ে নারী কিংবা পুরুষকে কাফন
দেয়াও বৈধ।
প্রশ্ন ৪- মৃত ব্যক্তির গোঁফ, নখ
ইত্যাদি কাটার বিধান কি?
উত্তর- এ প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট কোন দলিল নেই,
তাই কাটা না-কাটা উভয় সমান। কতক
আলেম নখ ও গোঁফ কাটার স্বপক্ষ্যে প্রমাণ
পেশ করেছেন, কিন্তু গোপন অঙ্গের পশম
পরিষ্কার করা ও খতনা করার কোন দলিল
নেই, তাই এ দু’কাজ কোন অবস্থাতেই
করা যাবে না।
প্রশ্ন ৫- মৃত ব্যক্তির
গোসলে কুলপাতা মিশ্রিত পানি ব্যবহার
করা কি সুন্নত?
উত্তর- যেহেতু কুলপাতা মিশ্রিত
পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় খুব কার্যকরী,
তাই অনেক ফেকাহবিদ এটাকে উত্তম
বলেছেন, তবে বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ৬- দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিকে গোসল
দেয়ার সময় রক্তের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য
অনেকে প্লাষ্টিক ইত্যাদির কাবার
ব্যবহার করে, শরি‘আতের দৃষ্টিতে এর হুকুম
কি?
উত্তর- রক্তের প্রবাহ বন্ধ করার জন্যে এ
ধরণের কাবার ব্যবহারে কোন
সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ৭- হাদিসঃ
‏« ﻣﻦ ﻏﺴﻞ ﻣﻴﺘﺎ ﻓﺴﺘﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺳﺘﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ‏»
“যে ব্যক্তি কোন মৃতকে গোসল দেয়,
অতঃপর সে তার
দোষত্রুটি ঢেকে রাখে, আল্লাহ
তালা কিয়ামতের দিন তার
দোষত্রুটি ঢেকে রাখবেন”।
হাদিসটি কতটুকু শুদ্ধ?
উত্তর ৭- এ হাদিস সম্পর্কে আমাদের
জানা নেই, তবে এ সম্পর্কে আমাদের
নিকট বিশুদ্ধ হাদিস হচ্ছেঃ
‏« ﻣﻦ ﺳﺘﺮ ﻣﺴﻠﻤﺎ ﺳﺘﺮﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻷﺧﺮﺓ ‏»
“যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ
ঢেকে রাখবে, দুনিয়া ও
আখেরাতে আল্লাহ তার দোষ
ঢেকে রাখবেন”। (বুখারি ও মুসলিম)
জীবিত ও মৃত সকল মুসলিম এ হুকুমের
অন্তর্ভূক্ত।
প্রশ্ন ৮- সাতবার ধৌত করার পরও যদি মৃত
ব্যক্তি পরিষ্কার না হয়, তাহলে এর অধিক
ধৌত করার অনুমতি আছে?
উত্তর – প্রয়োজনে অধিকবার ধৌত
করা বৈধ।
প্রশ্ন ৯- মৃতদের গোসল দানের
পদ্ধতি শিখানোর জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স
খোলার বিধান কি?
উত্তর – মৃতদের গোসল দানের
পদ্ধতি শিখানোর জন্য কোর্স
খোলা শরীয়ত সম্মত ও একটি ভাল কাজ।
অনেকে তা ভালভাবে করতে পারে না,
তাই এর জন্য প্রশিক্ষণ কোর্সের
ব্যবস্থা করা খুব ভাল উদ্যোগ।
প্রশ্ন ১০- মৃতব্যক্তির গোসল তার
পরিবারের লোকদের দেয়া কি উত্তম?
উত্তর – না, এটা জরুরী নয়, বরং বিশ্বস্ত
এবং এ বিষয়ে ভাল জ্ঞান রাখে এ রকম
লোকই উত্তম।
প্রশ্ন ১১- স্বামীর গোসল তার স্ত্রীর
দেয়া উত্তম না অন্য কেউ দেবে?
উত্তর – স্ত্রী যদি অভিজ্ঞ হয়
তাহলে তার স্বামীকে গোসল
দিতে আপত্তি নেই, যেমন
খলিফা আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার
স্ত্রী ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু
আনহা গোসল দিয়েছেন
এবং আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু
আনহা তার স্বামী আবুবকর রাদিয়াল্লাহু
আনহুকে গোসল দিয়েছেন।
প্রশ্ন ১২- মৃত ব্যক্তি যদি তার গোসলের
জন্য কাউকে অসিয়ত করে যায়, তার
অসিয়ত পুরো করা কি জরুরি?
উত্তর – হ্যাঁ, তার অসিয়ত পুরো করা জরুরি।
প্রশ্ন ১৩- মৃতের কাফনের নির্দিষ্ট বাঁধন
কয়টি?
উত্তর – কাফনের বাঁধনে নির্দিষ্ট কোন
পরিমাণ নেই, উপরে নিচে ও মাঝে মোট
তিনটিই যথেষ্ট। দু’টো হলেও
আপত্তি নেই। মূল বিষয় হল কাফন যেন
খুলে না যায় বরং আটকে থাকে,
সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া।
প্রশ্ন ১৪- মৃতের
গোসলে অংশগ্রহণকারীদের নির্ধারিত
কোন সংখ্যা আছে কি?
উত্তর – গোসলদাতা ও তার একজন সহায়ক,
মোট দু’জনেই যথেষ্ট।
প্রশ্ন ১৫- গোসলদাতা কি মৃত
ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে যে,
সে সালাত আদায় করত কি-না?
উত্তর – যদি বাহ্যিকভাবে মুসলিম বুঝা যায়
বা মৃতকে উপস্থিতকারীগণ মুসলিম হয়,
তাহলে জিজ্ঞাসার প্রয়োজন নেই। অনরূপ
জানাযার সালাতের ক্ষেত্রে।
অনেকে এ
বিষয়টি সাধারণভেবে জিজ্ঞাসা করে,
যার কারণে মৃতের ওয়রিসগণ বিব্রত ও
লজ্জাবোধ করেন।
প্রশ্ন ১৬- তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে তার
স্বামী গোসল দিতে পারবে?
উত্তর – তালাক যদি প্রত্যাহারযোগ্য হয়
(দু’তালাক বা তিন তালাক) তাহলে মৃত
স্ত্রীকে তার স্বামী গোসল
দিতে পারবে অন্যথায় নয়।
প্রশ্ন ১৭- অনেক ফেকাহবিদ মন্তব্য
করেছেন যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু
নশ্বর এই জীবনেই সীমাবদ্ধ। এ
বিষয়ে আপনাদের অভিমত কি?
উত্তর – উল্লিখিত মন্তব্য হাদিসের
পরিপন্থী, বিদায় তার দিকে কর্ণপাত
না করাই ভাল।
প্রশ্ন ১৮- গুপ্ত আঘাত ও নির্মমভাবে নিহত
ব্যক্তিদের কি গোসল দেয়া হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, তাদেরকে গোসল
দেয়া হবে এবং তাদের উপর সালাত
পড়া হবে। যেমন খলীফা ওমর ইব্ন খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু আনহু ও খলীফা ওসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু নির্মমভাবে শহীদ
হয়েছিলেন, অতঃপর তাদেরকে গোসল
দেয়া হয়েছে এবং তাদের উপর
জানাযা পড়া হয়েছে। অনরূপ
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু
নির্মমভাবে শহীদ হয়ে ছিলেন, তাকেও
গোসল দেয়া হয়েছে এবং তার উপর
জানাযা পড়া হয়েছে।
প্রশ্ন ১৯- যুদ্ধের ময়দানে মৃত
যদি নানা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়,
তাকেও কি গোসল, জানাযা ও কাফন
দেয়া হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, তাকেও গোসল ও কাফনসহ সব
কিছু করা হবে, তার উপর
জানাযা পড়া হবে। তার নিয়ত বিশুদ্ধ
হলে ইনশাআল্লাহ সে শাহাদাতের
মর্যাদা লাভ করবে।
প্রশ্ন ২০- কাফন পরানের পর যদি রক্ত
নির্গত হয় তাহলে কি কাফন পরিবর্তন
করতে হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, কাফন পরিবর্তন
করবে বা ধোয়ে নিবে এবং রক্ত যেন
বাহির না হয় সে ব্যবস্থা করবে।
প্রশ্ন ২১- মৃত এবং মৃতের
কাফনে সুগন্ধি দেয়ার হুকুম কি?
উত্তর – মৃত যদি এহরাম অবস্থায় না হয়,
তাহলে মৃত ব্যক্তির গাঁয়ে ও তার
কাফনে সুগন্ধি দেয়া সুন্নত।
প্রশ্ন ২২- গোসলদাতা মৃতের দোষ-
ত্রুটি বা গুণাগুণ বর্ণনা করতে পারবে?
উত্তর – ভাল কিছু প্রকাশ
করতে অসুবিধা নেই, কিন্তু মন্দ কিছু প্রকাশ
করবে না। কারণ এটা পরনিন্দা ও গীবতের
অন্তর্ভূক্ত। নাম প্রকাশ
না করে যদি বলে অনেক মৃতলোক খুব
কালো ও কুৎসিত হয়ে যায় তাহলে কোন
সমস্যা নেই। কিন্তু
নির্দিষ্টভাবে বলা যে, উমুককে গোসল
দিয়েছিলাম তার মাঝে এ ধরণের দোষ
দেখতে পেয়েছি, এভাবে বলা নিষেধ।
কারণ এর ফলে মৃতের ওয়ারিসরা দুঃখ পায়,
তাই এগুলো গিবতের অন্তর্ভুক্ত।
সালাতুল জানাযা ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
প্রশ্ন -১ দাফনের পর সালাতে জানাযার
হুকুম কি? তা কি একমাসের
মধ্যে সীমাবদ্ধ?
উত্তর – দাফনের পর জানাযা পড়া সুন্নাত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফনের পর
জানাযার সালাত পড়েছেন।
যে ব্যক্তি জামাতের সহিত সালাত
পাড়েনি সে দাফনের পর পড়বে।
যে একবার
পড়েছে সে ইচ্ছা করলে অন্যান্য
মুসল্লিদের সাথে একাধিকবার
পড়তে পারবে, এতে কোন সমস্যা নেই।
আলেমদের প্রসিদ্ধ মতানুসারে দাফনের
একমাস পর পর্যন্ত জানাযার সালাত
পড়া যায়।
প্রশ্ন ২- জানাযায় অংশগ্রহণকারীর
যদি আংশিক সালাত ছুটে যায়
তাহলে তা আদায় করতে হবে কি?
উত্তর – হ্যাঁ, ছুটে যাওয়া অংশ
সাথে সাথে আদায় করে নিবে।
যদি ইমামকে তৃতীয় তাকবীরে পায়
তাহলে সে তাকবির
বলে সূরা ফাতিহা পড়বে, ইমাম যখন চতুর্থ
তাকবীর বলবে তখন সে দ্বিতীয়
তাকবীর বলে রাসূলের উপর দরুদ পড়বে,
ইমাম যখন সালাম ফিরাবে তখন সে তৃতীয়
তাকবীর বলে দু’আ পড়বে অতঃপর চতুর্থ
তাকবির দিয়ে সালাম ফিরাবে।
প্রশ্ন ৩- ছুটে যাওয়া আংশিক সালাত
আদায়ের আগেই যদি লাশ তুলে নেয়া হয়
তাহলে অবশিষ্ট সালাত কিভাবে আদায়
করবে?
উত্তর –
সাথে সাথে তাকবিরে তাহরিমা বলে
সূরা ফাতিহা পড়বে, অতঃপর ইমামের
সাথে তাকবির বলবে ও রাসূলের উপর দরুদ
পড়বে। অতঃপর ইমাম সালাম
ফিরালে সে তাকবির দিয়ে দো‘আ
করবে, যার অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি এ
মৃতকে ক্ষমা কর, অতঃপর তাকবির
বলে সালাম ফিরাবে”। ইমামের
সাথে দু’তাকবির পেলে বর্ণিত
পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
প্রশ্ন ৪- জানাযার সালাতে ইমামের
ডানপাশে কাতার বন্ধি জায়েয কি না?
উত্তর – প্রয়োজনে ইমামের ডান ও বাম
দিকে কাতার বন্ধি করা যেতে পারে,
তবে ইমামের পিছনে কাতার বন্ধি করাই
সুন্নত, কিন্তু জায়গার সঙ্কীর্ণতার
কারণে ইমামের ডান ও বামে কাতার
হতে পারবে।
প্রশ্ন ৫- মুনাফেকের উপর জানাযার
নামাজ পড়া যাবে কি?
উত্তর – যার নেফাক সুস্পষ্ট, তার উপর
জানাযার সালাত পড়া যাবে না। কারণ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﺣَﺪٖ ﻣِّﻨۡﻬُﻢ ﻣَّﺎﺕَ ﺃَﺑَﺪٗﺍ ٨٤﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : 84‏]
“আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে,
তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না”।
সূরা আত-তাওবাহ: (৮৪)
আর যদি নেফাকির বিষয়টি অস্পষ্ট
বা অপবাদমুলক হয়, তাহলে তার উপর
জানাযা পড়া যাবে, কারণ মৃতের উপর
জানাযা পড়া অকাট্য দলীলের
কারণে ওয়াজিব, যা কোন সন্দেহের
দ্বারা রহিত হবে না।
প্রশ্ন ৬- লাশ দাফনের একমাস পর কবরের
উপর জানাযা পড়া যাবে?
উত্তর – এ প্রসঙ্গে আলেমদের মতানৈক্য
রয়েছে, তাই উত্তম হল একমাসের পর
না পড়া। অধিকাংশ
বর্ণনা মতে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাস
পর্যন্ত কবরের উপর জানাযা পড়েছেন,
একমাসের বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার
পর নামাজ পড়ছেন বলে কোন প্রমাণ নেই।
তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে জনাযা তো দাফনের
পূর্বে পরে নয়।
প্রশ্ন ৭- জানাযার স্থানে পৌঁছতে অক্ষম
ব্যক্তি গোসল খানায়
জানাযা পড়তে পারবে?
উত্তর – হ্যাঁ,
পড়তে পারবে যদি গোসলখানা পাক হয়।
প্রশ্ন ৮- মৃতব্যক্তিকে সালাত পর্যন্ত কোন
কক্ষে রাখতে কোন অসুবিধা আছে কি?
উত্তর – না, তাতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন ৯- একটি হাদিস বলা হয় যে,
‏« ﺇﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦَ ﺗَﻠْﻌَﺐُ ﺑِﺎﻟْﻤَﻴِّﺖِ ‏»
“শয়তান মৃতব্যক্তিকে নিয়ে খেলা করে”।
এ হাদিসটি কতটুকু শুদ্ধ?
উত্তর – এটি একটি বিভ্রান্তিকর কাথা,
আমাদের
জানামতে ইসলামি শরি‘আতে এর কোন
ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন ১০- যারা কবরের উপর নির্মিত
মসজিদে নামায পড়া বৈধ মনে করে,
তারা তাদের সপক্ষে দলিল পেশ
করে যে, মসজিদে নববিও তো কবরের
উপর, সেখানে কিভাবে সালাত শুদ্ধ
হচ্ছে?
উত্তর – রাসূলের কবর মসজিদে নয়
বরং রাসূলের কবর তাঁর ঘরের ভিতর।
যারা ধারণা করে যে মসজিদে নববি
রাসূলের কবরের উপর তাদের ধারণা ভুল।
প্রশ্ন ১১- জানাযার নামাজে ইমামতির
জন্য মসজিদের স্থায়ী ইমাম অধিক হকদার,
না মৃতের ওয়ারিসগণ?
উত্তর – জানাযা যদি মসজিদে হয়,
তাহলে মসজিদের ইমামই
জানাযা পড়াবে।
প্রশ্ন ১২- আমরা জানি যে দাফনের পর
প্রায় একমাস পর্যন্ত মৃতের উপর নামাজ
পড়া যায়। তাহলে প্রশ্ন জাগে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তাঁর শেষ
জীবনে “জান্নাতুল বাকি”তে (মসজিদের
নববির আশে অবস্থিত গোরস্তান) দাফন কৃত
সাহাবাদের উপর জানাযা পড়েছেন
এবং তাদেরকে সম্বোধন
করে কথা বলেছেন?
উত্তর – তাদের উপর জানাযা পড়েছেন,
এর অর্থ হচ্ছে তাদের জন্যে দু’আ
করেছেন, আর মৃতদের জন্যে দো‘আ
যে কোন সময় হতে পারে।
প্রশ্ন ১৩- যে মসজিদে কবর বিদ্যমান,
সেখানে কি সালাত পড়া যাবে?
উত্তর – না, যে মসজিদে কবর
রয়েছে সেখানে সালাত
পড়া যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে এ
জন্যে অভিশাপ করেছেন যে,
তারা তাদের নবীগণের
কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল।
প্রশ্ন ১৪- যদি অবস্থা এমন হয়
যে পুরা শহরে একটি মাত্র মসজিদ, আর
তাতে রয়েছে কবর এমতাবস্থায় মুসলিমগণ
কি ঐ মসজিদে নামায পড়বে?
উত্তর – মুসলিম
কখনো সে মসজিদে সালাত পড়বে না।
যদি কবরহীন অন্য কোন মসজিদ পাওয়া যায়
তা হলে ঐ মসজিদে পড়বে অন্যথায ঘরেই
সালাত পড়বে। কোন মসজিদে কবর
থাকলে দেখতে হবে যে, মসজিদ
আগে নির্মাণ হয়েছে না কবর
আগে তৈরি হয়েছে, যদি মসজিদ
আগে হয়ে থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষের
উপর ওয়াজিব হচ্ছে কবর খনন করে সেখান
হতে অবশিষ্ট হাড্ডি মাংশ উত্তলন
করে সাধারণ জনগনের জন্যে ব্যাবহারিত
কবরস্থানে স্থানান্তর করা। আর যদি কবর
পূর্ব হতে থাকে আর মসজিদ পরে নির্মাণ
হয়। তাহলে সেখান থেকে মসজিদ
ভেঙ্গে অন্য জায়গায় নির্মাণ করবে,
যেখানে কোন কবর নেই।
কারণ আম্বিয়ায়ে কেরামের কবরের উপর
মসজিদ নির্মাণ করার কারণে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে অভিশাপ
দিয়েছেন। মুমিন জননী উম্মে সালমা ও
উম্মে হাবীবাহ যখন সংবাদ দিলেন যে,
হাবশায় তাঁরা এমন
একটি গির্জা দেখেছেন
যেখানে প্রতিমার ছবি নির্মিত।
এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তাদের
মাঝে কোন সৎকর্মশীল লোক
মারা গেলে তারা তাদের কবরের উপর
মসজিদ নির্মাণ করত
এবং সেখানে তাদের প্রতিমা স্থাপন
করত। তারা আল্লাহর নিকট এ ভূ-পৃষ্ঠের
মধ্যে নিকৃষ্টতম প্রাণী”। এ
থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন
ব্যক্তি কবরের উপর নির্মিত
মসজিদে সালাত পড়লে তা বাতিল
বলে গণ্য, এ সালাত পুনরায় পড়তে হবে।
প্রশ্ন ১৫- স্বেচ্ছাসেবামূলক রক্তদান
জায়েয আছে কি না?
উত্তর – প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে,
তবে লক্ষ্য রাখাতে হবে যে দানকারীর
যেন কোন কষ্ট না হয়। আল্লাহ
তাআলা বলেছেনঃ
﴿ﻭَﻗَﺪۡ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﭐﺿۡﻄُﺮِﺭۡﺗُﻢۡ ﺇِﻟَﻴۡﻪِۗ١١٩﴾
‏[ﺍﻷﻧﻌﺎﻡ 119: ‏]
“অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত
বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর
হারাম করেছেন। তবে যার
প্রতি তোমরা বাধ্য হয়েছ”। সূরা আল-
আনআম: (১১৯)
প্রশ্ন ১৬- জানাযার নিয়ম কি ?
উত্তর – জানাযার নিয়ম এই যে,
প্রথমে তাকবির বলে ইমাম সাহেব
আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা-
ফাতিহা পড়বে। সূরা ফাতিহার
সাথে সূরায়ে ইখলাস
বা সূরায়ে ‘আসরের ন্যায় কোরআনের
কোন ছোট সূরা বা কিছু আয়াত
মিলিয়ে নেয়া মুস্তাহাব।
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এভাবে সূরা মিলিয়ে জানাযা পড়তেন।
অতঃপর দ্বিতীয় তাকবির দিয়ে রাসূলের
উপর দরুদ পড়বে, যেমন অন্যান্য নামাযের
শেষ বৈঠকে পড়া হয়। অতঃপর তৃতীয়
তাকবির দিয়ে মৃতের জন্যে দু’আ করবে,
দু’আর সময় নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে শব্দের
আভিধানিক পরিবর্তন প্রয়োগ করবে,
একাধিক জানাযা হলে বহুবচনের সর্বনাম
ব্যবহার করবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবির
বলবে এবং ক্ষণকাল চুপ থেকে ডান
দিকে এক সালাম ফিরিয়ে জানাযা শেষ
করবে।
আর ছানা ইচ্ছা করলে পড়তেও পারে,
আবার ইচ্ছা করলে ছেড়েও
দিতে পারে। তবে তা পরিত্যাগ করাই
উত্তম হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তোমরা জানাযা নিয়ে তাড়াতাড়ি
করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
প্রশ্ন ১৭- যে ব্যক্তি জানাযা ও
দাফনে অংশগ্রহণ করবে সে কি দু’কিরাত
নেকি পাবে?
উত্তর – হ্যাঁ, সে দু’কিরাত নেকি পাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‏« ﻣﻦ ﺗﺒﻊ ﺍﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ﺣﺘﻰ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻭﻳﻔﺮﻍ ﻣﻦ ﺩﻓﻨﻬﺎ ﻓﺈﻧﻪ
ﻳﺮﺟﻊ ﺑﻘﻴﺮﺍﻃﻴﻦ ﻛﻞ ﻗﻴﺮﺍﻁ ﻣﺜﻞ ﺃﺣﺪ ‏»
“যে ব্যক্তি জানাযায় অংশগ্রহণ
করবে এবং লাশ দাফন পর্যন্ত
অপেক্ষা করবে সে দু’কিরাত
নেকী নিয়ে বাড়ি ফিরবে,
প্রতিটি কিরাত ওহুদ পাহাড় সমান”।
(বুখারি)
ﻭﻟﻘﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏« ﻣﻦ ﺷﻬﺪ ﺍﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ﺣﺘﻰ
ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﻠﻪ ﻗﻴﺮﺍﻁ ﻭﻣﻦ ﺷﻬﺪﻫﺎ ﺣﺘﻰ ﺗﺪﻓﻦ ﻓﻠﻪ
ﻗﻴﺮﺍﻃﺎﻥ ‏» ﻗﻴﻞ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ : ﻭﻣﺎ ﺍﻟﻘﻴﺮﺍﻃﺎﻥ ؟ ﻗﺎﻝ : ‏« ﻣﺜﻞ
ﺍﻟﺠﺒﻠﻴﻦ ﺍﻟﻌﻈﻴﻤﻴﻦ ‏»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
যে ব্যক্তি জানাযায় অংশগ্রণ করত নামাজ
পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে এক কিরাত
নেকি পাবে, আর যে জানাযায় অংশগ্রহণ
করে দাফন পর্যন্ত
অপেক্ষা করবে সে দু’কিরাত
নেকি পাবে”। জিজ্ঞসা করা হল,
হে আল্লাহর রাসূল! দু’কিরাত
বলতে কি বুঝায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “দুইটি বড়
পাহাড় সমপরিমাণ”। (বুখারি ও মুসলিম)
প্রশ্ন ১৮- ইসলামে বিশেষ অবদান
রেখেছেন এমন ব্যক্তির জানাযা একদিন
বা ততোধিক বিলম্ব করা যাবে?
উত্তর – বিলম্ব করাতে যদি কল্যাণ
থাকে তাহলে করা যাবে। যেমন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু
হয়েছে সোমবার অথচ তাঁর দাফন
হয়েছে বুধবার রাতে। তাই ইসলামের
সেবায় নিবেদিত এমন ব্যক্তির দাফন
বিলম্বে যদি কোন কল্যাণ থাকে, যেমন
তার আত্মীয় স্বজনের আগমন ইত্যাদি,
তাহলে বিলম্ব করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ১৯- কোন মৃতের উপর একাধিক বার
জানাযা পড়ার হুকুম কি?
উত্তর – বিশেষ কারণে একাধিক বার
জানাযা পড়া যেতে পারে, যেমন
জানাযা শেষে কিছু লোক উপস্থিত
হলো, তাহলে এরা মৃতের উপর দাফনের
পূর্বে বা পরে জানাযা পড়তে পারবে।
এমনিভাবে যে একবার সবার
সাথে জানাযা পড়েছে সে আগত
লোকদের সাথে লাশ দাফনের পরে ও
পুনরায় জানাযা পড়তে পারবে। কারণ
এতে সালাত আদায়কারী ও মৃত
ব্যক্তি উভয়ের জন্য কল্যাণ রয়েছে।
প্রশ্ন ২০- মায়ের গর্ভে মৃত সন্তানের
জানাযা পড়া যাবে কি?
উত্তর – পাঁচ মাস বা ততোধিক সময়
গর্ভে অবস্থান করে যদি কোন শন্তান মৃত
ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে তাকে গোসল দেবে,
তার জানাযা পড়বে ও তাকে মুসলিমদের
গোরস্থানে দাফন করবে।
প্রশ্ন ২১- আত্মহত্যাকারীর
জানাযা পড়া যাবে কি?
উত্তর – যেহেতু আহলে সূন্নত ওয়াল
জামায়াতের মতানুসারে আত্মহত্যার
কারণে কেউ মুসলিমদের
গন্ডি হতে বেরিয়ে যায় না, তাই অন্যান্য
অপরাধীদের ন্যায় তার উপরও কিছু সংখ্যক
লোক জানাযা পড়ে নিবে।
প্রশ্ন ২২- নিষিদ্ধ সময়ে জানাযার
নামাজা পড়ার বিধান কি?
উত্তর – নিষিদ্ধ
সময়ে জানাযা পড়া যাবে না,
তবে নিষিদ্ধ সময়টি যদি লম্বা হয়, যেমন
ফজরের সালাতের পর হতে সূর্য
উঠা পর্যন্ত এবং আসরের সালাতের পর
হতে সুর্যাস্ত পর্যন্ত, বিশেষ প্রয়োজনে এ
দু’সময়ে জানাযা পড়া ও লাশ দাফন
করা যাবে। আর যদি নিষিদ্ধ সময়টি স্বল্প
হয় তাহলে জানাযা ও দাফন কিছুই
করা যাবে না। আর সল্প সময় বলতে বুঝায়
ঠিক বেলা উঠার পূর্ব মুহূর্ত এবং ঠিক
দ্বিপ্রহর ও সুর্যাস্তের সময়।
সাহাবি উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেন,
‏«ﺛﻼﺙ ﺳﺎﻋﺎﺕ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻨﻬﺎﻧﺎ
ﺃﻥ ﻧﺼﻠﻲ ﻓﻴﻬﻦ ﻭ ﺃﻥ ﻧﻘﺒﺮ ﻓﻴﻬﻦ ﻣﻮﺗﺎﻧﺎ : ﺣﻴﻦ ﺗﻄﻠﻊ
ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺑﺎﺯﻏﺔ ﺣﺘﻰ ﺗﺮﻓﻊ ﻭﺣﻴﻦ ﻳﻘﻮﻡ ﻗﺎﺋﻢ ﺍﻟﻈﻬﻴﺮﺓ ﺣﺘﻰ
ﺗﺰﻭﻝ ﻭﺣﻴﻦ ﺗﻀﻴّﻒ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻟﻠﻐﺮﻭﺏ ‏».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন
সময়ে আমাদেরকে জানাযা পড়তে ও
তাতে আমাদের মৃতদেরকে দাফন
করতে নিষেধ করেছেন, সুর্যোদয়ের সময়
যতক্ষণ না তা পরিপূর্ণরূপে উদয় হয়, ঠিক
দ্বিপ্রহরের সময় যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম
দিকে হেলে যায় এবং ঠিক সূর্যাস্তের
সময়। [মুসলিম]
প্রশ্ন ২৩- বিদ’আতির জানাযায় অংশ গ্রহণ
না করার বিধান কি?
উত্তর – বিদ’আতির বিদ‘আত
যদি বিত’আতিকে কুফর পর্যন্ত নিয়ে যায়,
যেমন খারেযি, মুতাযিলা ও
জাহমিয়া প্রমূখ পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের
বিদ‘আত। তাহলে এরূপ বিদ’আতির
জানাযায় অংশ গ্রহণ করা কারো পক্ষেই
জায়েয নয়।
আর যদি তার বিদ‘আত এ পর্যায়ের না হয়,
তবুও আলেমদের উচিত বিত’আতের
প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে তার
জানাযা পরিত্যাগ করা।
প্রশ্ন ২৪- আলেমদের ন্যায় জনসাধারণ
কি বিদ’আতির জানাযা পরিত্যাগ
করবে না ?
উত্তর – প্রতিটি মুসলিমের
জানাযা পড়া ওয়াজিব, যদিও
সে বিদ’আতি হয়। সুতরাং বিদ‘আত
যদি কুফরের পর্যায়ের না হয়, তাহলে এরূপ
বিদ’আতির জানাযা মুষ্টিমেয় কিছু লোক
পড়ে নেবে। আর যদি বিদ‘আত কুফরের
পর্যায়ের হয়, যেমন খারেযি, রাফেযি,
মুতাযিলা ও জাহমিয়া প্রমূখদের বিদ‘আত,
যারা বিপদে-আপদে আলী রাদিয়াল্লাহু
আনহু ও রাসূলের পরিবারের অন্যান্য
সদস্যদের শরণাপন্ন হয়, তাদেরকে আহ্বান
করে, তাহলে এরূপ বিদ‘আতিদের
জানাযায় অংশগ্রহণ করা কাহারো জন্যই
জায়েয নেয়। আল্লাহ তাআলা মুনাফেক
ও তাদের ন্যায় অন্যান্য কাফেরদের
প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﺣَﺪٖ ﻣِّﻨۡﻬُﻢ ﻣَّﺎﺕَ ﺃَﺑَﺪٗﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻢۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﻗَﺒۡﺮِﻩِۦٓۖ
ﺇِﻧَّﻬُﻢۡ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِۦ ﻭَﻣَﺎﺗُﻮﺍْ ﻭَﻫُﻢۡ ﻓَٰﺴِﻘُﻮﻥَ
٨٤﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : 84‏]
“আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে,
তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না এবং তার
কবরের উপর দাঁড়াবে না। নিশ্চয়
তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার
করেছে এবং তারা ফাসিক অবস্থায়
মারা গিয়েছে”। সূরা আত-তাওবাহ: (৮৪)
প্রশ্ন ২৫- জানাযায় অধিক সংখ্যক
লোকের অংশ গ্রহণে কি বিশেষ কোন
ফজিলত আছে?
উত্তর – সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‏«ﻣﺎ ﻣﻦ ﺭﺟﻞ ﻣﺴﻠﻢ ﻳﻤﻮﺕ ﻓﻴﻘﻮﻡ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺗﻪ ﺃﺭﺑﻌﻮﻥ
ﺭﺟﻼ ﻻﻳﺸﺮﻛﻮﻥ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺷﻴﺌﺎً ﺇﻻ ﺷﻔﻌﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ‏»
“যদি কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করে, আর তার
জানাযায় চল্লিশ জন লোক এমন উপস্থিত
হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক
করে না, আল্লাহ মৃত ব্যক্তির
ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন”।
(মুসলিম)
তাই আলেমগণ বলেছেন,
যে মসজিদে মুসল্লি বেশী হয়, জানাযার
জন্য ঐ মসজিদ অন্বেষণ করা মুস্তাহাব,
মুসল্লি যত বেশী হবে ততই মৃতের
জন্যে কল্যাণ হবে, কারণ এতে সে অধিক
মানুষের দু’আ পাবে।
প্রশ্ন ২৬- জানাযার সালাতে ইমামের
দাঁড়ানোর নিয়ম কি?
উত্তর – সুন্নত হচ্ছে ইমাম পুরুষদের
মাথা বরাবর আর মহিলাদের মাঝা বরাবর
দাঁড়াবে। জানাযা একাধিক লোকের
হলে প্রথমে সালাবক পুরুষদের লাশ,
অতঃপর নাবালেক ছেলেদের লাশ,
অতঃপর সাবালক নারীদের লাশ, অতঃপর
নাবালেক মেয়েদের লাশ রাখবে। একই
সাথে সবার উপর নামাজ পড়ার জন্য
প্রথমে পুরুষদের লাশ লাখবে, অতঃপর
তাদের মাথা বরাবর বাচ্ছাদের
মাথা রাখাবে, অতঃপর তাদের
মাথা বরাবর নারী ও মেয়েদের কোমর
রাখবে।
প্রশ্ন ২৭- জানাযার
সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম কি?
উত্তর – জানাযার
সালাতে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‏« ﺻﻠﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﺭﺃﻳﺘﻤﻮﻧﻲ ﺃﺻﻠﻲ ‏»
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত
আদায় করতে দেখ, সেভাবেই সালাত
আদায় কর”। (বুখারি)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‏« ﻻ ﺻﻼﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ‏»
“ঐ ব্যক্তির কোন সালাত হয়নি,
যে সূরা ফাতিহা পাঠ করে নি”। (বুখারি ও
মুসলিম)
প্রশ্ন ২৮- চতুর্থ তাকবির শেষে কিছু পড়ার
বিধান আছে কি?
উত্তর – চতুর্থ তাকবির শেষে কিছু পড়ার
প্রমাণ নেই, তবে চতুর্থ তাকবির
শেষে একটু চুপ থেকে অতঃপর সালাম
ফিরাবে।
প্রশ্ন ২৯- ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মৃতলোকের
জানাযায় অতিরিক্ত তাকবির
বলা যাবে কি?
উত্তর – প্রচলিত নিয়ম তথা চার
তাকবিরের উপর সীমাবদ্ধ থাকাই উত্তম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ
জীবনে জানাযার পদ্ধতি এরূপই ছিল।
হাবশার বাদশা নাজ্জাশী অত্যন্ত সম্ম
ানী মানুষ হওয়া সত্বেও রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
জানাযায় চারের অধিক তাকবির
বলেননি।
প্রশ্ন ৩০- জানাযার নামাজে রাসূলের
উপর দরূদ পড়ার হুকুম কি?
উত্তর – ওলামায়ে কেরামের প্রশিদ্ধ
উক্তি অনুযায়ী জানাযার
সালাতে রাসূলের উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব।
মুসল্লিরা জানাযায় কখনো রাসূলের উপর
দরূদ পরিত্যাগ করবে না।
প্রশ্ন ৩১- জানাযায় সূরা-ফাতিহা পড়ার
বিধান কি?
উত্তর – সূরা ফাতিহা পড়া উত্তম,
সাহাবি ইব্ন ইব্বাস রাদিআল্লাহ আনহু
সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযায়
সূরা ফাতেহা পড়তেন।
প্রশ্ন ৩২- জানাযার প্রতি তাকবিরে হাত
উঠানো কি সুন্নত ?
উত্তর – জানাযার প্রতি তাকবিরে হাত
উঠানো সুন্নত। বর্ণিত আছে যে,
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর ও আব্দুল্লাহ ইব্ন
আব্বাস প্রতি তাকবিরে হাত উঠাতেন।
(দারা কুতনি)
প্রশ্ন ৩৩- জনৈক
ব্যক্তি জানাযা পড়তে মসজিদে প্রবেশ
করল, কিন্তু তখনো সে ফরজ সালাত
পড়েনি, এমতাবস্থায় সে কি প্রথমে ফরজ
নামাজ পড়বে, না অন্যান্য লোকদের
সাথে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।
যদি ইতিমধ্যে লাশ তুলে নেয়া হয়
তাহলে সে জানাযার নামাজ
পড়বে কি না?
উত্তর -এমতাবস্থায় সে প্রথমে জানাযার
নামাজ আদায় করবে অতঃপর ফরজ নামাজ
পড়বে, কারণ তখন
যদি সে জানাযা না পড়ে পরবর্তীতে
পড়তে পারবে না, পক্ষান্তরে ফরজ
নামাজ তো পরেও পড়া যাচ্ছে। লাশ
তুলে নেয়ার হলে দাফনের পর
জানাযা পড়বে।
প্রশ্ন ৩৪-
আমাদেরে কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় যে,
কোন সহকর্মী মারা গেলে বিজ্ঞাপন
বিতরণ করা হয়, যাতে জানাযার সময় ও
দাফনের স্থানের উল্লেখ থাকে, এ
ব্যাপারে শরি‘আতের হুকুম কি?
উত্তর – যদি এরূপ বলা হয় যে অমুক
মসজিদে অমুকের জানাযা হবে ইত্যাদি,
তাহলে আমার জানা মতে দোষের কিছু
নেই, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্জাশির
ব্যাপারে বলেছিলেন।
প্রশ্ন ৩৫- গায়েবানা জানাযার বিধান কি
?
উত্তর – প্রসিদ্ধ
মতানুসারে এটা নাজ্জাশীর
জন্যে নির্দিষ্ট ছিল। তবে কতিপয় আলেম
বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তি যদি বিশিষ্ট
ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়, যেমন বড়
আলেম, বড় দায়ি, ইসলাম প্রচারের
ক্ষেত্রে যার বিশেষ অবদান রয়েছে,
এরূপ ব্যক্তির
ক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা পড়া
যেতে পারে। কিন্তু আমাদের
জানা মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
নাজ্জাশি ছাড়া অন্য কারো উপর
গায়েবানা জানাযা পড়েননি, অথচ তাঁর
নিকট মক্কাতুল মুক্কারামাহসহ বিভিন্ন
স্থান হতে অনেক সাহাবিদের মৃত্যুর
সংবাদ এসে ছিল। বাস্তবতার
নিরিখে এটাই সত্য মনে হচ্ছে যে,
গায়েবানা জানাযা নাজ্জাশির জন্যেই
নির্দিষ্ট ছিল, তথাপিও যদি কেউ বিশিষ্ট
ব্যক্তিত্বের অধিকারী যেমন আলেম ও
সরকারী কর্মকর্তা প্রমূখদের উপর
পড়তে চায়, তাহলে পড়ার অবকাশ রয়েছে

প্রশ্ন ৩৬- জানাযায় অধিক কাতার
মুস্তাহাব, তাই প্রথম
কাতারে জায়গা রেখে দ্বিতীয় কাতার
করা যাবে কি?
উত্তর – ফরজ নামাজের কাতারের ন্যায়
জানাযার নামাজের কাতার হবে। তাই
আগে প্রথম কাতার পূর্ণ করবে অতঃপর
দ্বিতীয় কাতার।
এক্ষেত্রে সাহাবি মালেক ইব্ন হুবাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত
হাদিসের উপর আমল করা যাবে না, কারণ
তার বর্ণিত হাদিসটি বিশুদ্ধ হাদিসের
বিপরীত, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
প্রথম কাতার পূরণ করা ওয়াজীব।
প্রশ্ন ৩৭- জানাযার নামাজ
কি মাঠে পড়া উত্তম না মসজিদে?
উত্তর – সম্ভব হলে মাঠে পড়াই উত্তম।
তবে মসজিদে পড়াও জায়েয আছে,
যেমন মুমিন জননী আয়শা রাদিয়াল্লাহু
আনহা সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বয়জা নামীয় ব্যক্তির দু’পুত্রের
জানাযা মসজিদেই পড়েছেন। (মুসলিম)
প্রশ্ন ৩৮- জানাযায়
সূরা ফাতিহা পড়া সুন্নত, এ
ব্যাপারে লোকজনকে অবগত করার
জন্যে মাঝে মধ্যে তা স্বশব্দে পড়া
কেমন?
উত্তর –
কখনো কখনো সূরা ফাতিহা স্বশব্দে
পড়তে সমস্যা নেই, যদি সূরা ফাতিহার
সাথে অন্য কোন ছোট একটি সূরা বা কিছু
আয়াত মিলিয়ে নেয়া হয় তাহলে আরও
ভাল। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে বর্ণিত
আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার
নামাজে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য
সূরা মিলিয়ে নিতেন। তবে যদি শুধু
সূরা ফাতিহা পড়ে তাও যথেষ্ট।
প্রশ্ন ৩৯- গায়েবানা জানাযার পদ্ধতি কি
?
উত্তর – লাশ উপস্থিত থাক আর না থাক
জানাযার পদ্ধতি একই।
দাফন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
প্রশ্ন ১- কবরের উপর পাথরকুচি রাখা ও
পানি দেয়ার বিধান কি?
উত্তর – যদি সম্ভব হয় কবরের উপর
পাথরকুচি রাখা মুস্তাহাব, কেননা এর
ফলে কবরের মাটি জমে থাকে। বর্ণিত
আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের উপর কাঁচ
ভাঙ্গা রাখা হয়েছিল। কবরের উপর
পানি ঢালা মুস্তাহাব, যেন
মাটিগুলো জমে যায় ও সহজে মানুষের
দৃষ্টিগোচর হয়, ফলে মানুষ তার
অবমাননা থেকে মুক্ত থাকবে।
প্রশ্ন ২- লাশ কবরে রেখে মুখ
খুলে দেবে কি?
উত্তর – মুখ খুলবে না বরং ঢেকে রাখবে।
হ্যাঁ, এহরামাস্থায় যার মৃত্যু হয় তার মুখ
খুলে দেবে। আরাফাতের ময়দানে এহরাম
অবস্থায় জনৈক ব্যক্তির মূত্য
হলে লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার দাফন
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ
‏« ﺇﻏﺴﻠﻮﻩ ﺑﻤﺎﺀ ﻭﺳﺪﺭ ﻭﻛﻔﻨﻮﻩ ﻓﻲ ﺛﻮﺑﻴﻪ ﻭﻻ ﺗﺨﻤﺮﻭﺍ ﺭﺃﺳﻪ
ﻭﻻ ﻭﺟﻬﻪ ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺒﻌﺚ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻣﻠﺒﻴﺎ‏»
“তাকে কুলপাতা মিশ্রিত
পানি দ্বারা গোসল দাও এবং এহরামের
দু’কাপড়ে কাফন দাও, তার মাথা ও মুখ
ঢেকো না, কারণ কিয়ামতের দিন
সে তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে”।
(বুখারি ও মুসলিম)
প্রশ্ন ৩- অনেকেই মুখ খোলা রাখা ও
পাথর রাখার বিষয়টি খুব গুরুত্ব দেয়, মূলত এর
কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তর – এ ধরণের কথার কোন
ভিত্তি নেই, এটা মুর্খতা ও অজ্ঞতার
আলামত।
প্রশ্ন ৪- মৃত ব্যক্তি যদি তার লাশ অন্য কোন
শহরে দাফন করার জন্য অসিয়ত করে,
তাহলে তার এ অসিয়ত
পুরো করা কি ওয়াজিব?
উত্তর – না, তার এ অসিয়ত
পুরো করা ওয়াজিব নয়, সে যদি কোন
মুসলিম শহরে মারা যায়, তাহলে তাকে ঐ
শহরেই দাফন করা বাঞ্চনীয়।
প্রশ্ন ৫- দাফন করার সময় মহিলাদের কবর
ঢেকে রাখার বিধান কি?
উত্তর – এটা উত্তম।
প্রশ্ন ৬- মৃত ব্যক্তি যদি জীবিতদের জুতার
আওয়াজ শুনতে পায়, তাহলে সে তালকিন
অবশ্যই শুনতে পাবে, এ ধরণের মন্তব্য কতটুকু
সঠিক?
উত্তর – শরিয়ত অনুমোদিত সকল ইবাদত
নির্ধারিত ও সীমাবদ্ধ, এতে অনুমান
বা ধারণার কোন অবকাশ নেই। মৃত
ব্যক্তি জীবিতদের পায়ের
ধ্বনি শোনে ঠিক, কিন্তু এর ফলে তার
কোন ফায়দা হয় না।
মৃত্যুর ফলে মানুষ
দুনিয়া হতে আখেরাতে ফিরে যায়,
কর্মস্থল ত্যাগ করে ভোগের জায়গায়
প্রত্যাবর্তন করে।
প্রশ্ন ৭- কবর খননের লাহাদ ও শেক
তথা সিন্দুক ও বগলি এ দু’প্রকারের
মধ্যে কোনটি উত্তম এবং দাফন
শেষে কবর কতটুকু উঁচু করবে?
উত্তর – মদীনাবাসী লাহাদ খননেই
অভ্যস্ত ছিল, তবে কখনো কখনো শেকও
খনন করত, যেহেতু আল্লাহ তাআলা তার
হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যে লাহাদ
পছন্দ করেছেন, তাই লাহাদই উত্তম,
তবে শেকও জায়েয, বিশেষ করে যখন
কোন প্রয়োজন দেখা দেয়।
সাহাবি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত,
ﺍﻟﻠﺤﺪ ﻟﻨﺎ ﻭﺍﻟﺸﻖ ﻟﻐﻴﺮﻧﺎ
“লাহাদ আমাদের জন্যে আর শেক
অন্যদের জন্যে”। এ হাদিসটি খুবই দুর্বল ।
কারণ এ হাদিসের সনদে বিদ্যমান আব্দুল-
আ’লা আছ্ছালাবী নামক জনৈক
বর্ণনাকারী হাদিস বর্ণনার
ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। আর কবর উঁচু
করা হবে এক বিঘত বা তার
কাছাকাছি পরিমাণ।
প্রশ্ন ৮- অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,
মৃতের ওলী ওয়ারিসগণ উপস্থিত লোকদের
উদ্দেশ্যে বলেন, সম্মানিত
উপস্থিতি আপনারা আপনাদের দাবি-
দাবা মাফ করেদিন,
তাকে ক্ষমা করে দিন, তার জন্যে সবাই
আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এ
জাতীয় প্রথা কি শরিয়ত সম্মত?
উত্তর – এ জাতীয় প্রথার কোন
ভিত্তি আছে আমার জানা নেই। হ্যাঁ,
যদি জানা থাকে যে,
মৃত্যুবরণকারী লোকটি মানুষের উপর জুলুম
করেছে তাহলে বলা যেতে পারে যে,
আপনারা আপনাদের দাবী মাফ করেদিন।
অন্যথায় শুধু এ কথা বলাই যথেষ্ট যে,
আপনারা তার জন্যে আল্লাহর নিকট দু’আ ও
ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
প্রশ্ন ৯- কবর বা কবরস্থানের
রাস্তা আলোকৃত করার বিধান কি?
উত্তর – যদি তা মানুষের
উপকার্থে বা লাশ দাফনের
সুবিদার্থে করা হয় তাহলে জায়েয, যেমন
প্রাচীর ঘেরা গোরস্থান
যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো নেই,
লাশ দাফনের
সুবিধার্থে সেখানে আলোর
ব্যবস্থা করা বৈধ। অন্যথায় কবরের উপর
বাতি জালানো বা কবরকে আলোকসজ্জা
করা নাজায়েয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻟﻌﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺯﺍﺋﺮﺍﺕ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ
ﻭﺍﻟﻤﺘﺨﺬﻳﻦ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺍﻟﺴﺮﺝ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ‏)
“কবর যিয়ারতকারী নারী, কবরের উপর
মসজিদ নির্মাণকারী ও
তাতে আলোকসজ্জাকারীদের উপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন”।
(তিরমিজি)
অনুরূপ যদি মানুষের চলাচলের
সুবিধার্থে রাস্তায় বাতি দেয়া হয় আর
তাতে কবর কিছুটা আলোকৃত হয় তবুও
দোষের কিছু নেই। অনুরূপ লাশ দাফনের
জন্যে বাতি জালানোতে কোন
সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ১০- মাইয়্যেতের সাথে চলার সুন্নত
তরিকা কি?
উত্তর – মাইয়্যেতের সাথে জানাযার
স্থানে যাবে, অতঃপর গোরস্থানে দাফন
শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﺗﺒﻊ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻣﺴﻠﻢ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻭﻛﺎﻥ ﻣﻌﻬﺎ ﺣﺘﻰ
ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻭﻳﻔﺮﻍ ﻣﻦ ﺩﻓﻨﻬﺎ ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺮﺟﻊ ﺑﻘﻴﺮﺍﻃﻴﻦ ﻛﻞ
ﻗﻴﺮﺍﻁ ﻣﺜﻞ ﺟﺒﻞ ﺃﺣﺪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ও সাওয়াবের
আশায় কোন মুসলিমের জানাযায় অংশ
গ্রহন করল এবং দাফন পর্যন্ত তার
সাথে থাকল ও তার দাফন কর্ম শেষ করল,
সে দু’কিরাত নেকি নিয়ে ফিরবে,
প্রত্যেক কিরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ”।
(বুখারি)
প্রশ্ন ১১- মৃত ব্যক্তির জন্য ইস্তেকামাতের
দু’আ কখন করবে, দাফনের পর না দাফনের
মাঝে?
উত্তর – দাফন শেষ করে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম
দাফনের কাজ শেষ করে কবরের
পাশে দাড়িয়ে বলেছিলেন,
‏« ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍ ﻷﺧﻴﻜﻢ ، ﻭﺍﺳﺄﻟﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﺍﻟﺘﺜﺒﻴﺖ ﻓﺈﻧﻪ ﺍﻵﻥ
ﻳﺴﺄﻝ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ‏)
“তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য
ক্ষমা পার্থনা কর এবং আল্লাহর নিকট তার
জন্য ইস্তেকামাতের দো‘আ কর, কারণ এখন
তাকে প্রশ্ন করা হবে। [আবু দাউদ]
‏« ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻣِﻠَّﺔِ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ‏)
“আল্লাহর নামে ও তার রাসূলের
তরিকা অনুযায়ী এ লাশ দাফন করছি”। (আবু
দাউদ)
প্রশ্ন ১২- কবর আযাব প্রসঙ্গে অনেক
ঘটনা বর্ণনা করা হয়, যেমন জনৈক
ব্যক্তিকে দাফন করার
উদ্দেশ্যে কবরে রাখা হলে সাপ
বেরিয়ে আসে, যখন অন্য কবরে রাখা হয়
সেখানেও সাপ বেরিয়ে আসে ইত্যাদি,
এ সবরে ভিত্তি কতটুকু?
উত্তর – ঘটনার সত্যতা সমন্ধে আল্লাহ
তাআলাই ভাল জানেন, তবে এ ধরণের
ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আল্লামা ইবনে রজন রাহিমাহুল্লাহ নিজ
গ্রন্থ “আহওয়ালুল কবর” এ প্রসঙ্গে অনেক
ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর
বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্ন ১৩- ওয়াজ ও নসিহতের সময় এসব
ঘটনা উপাস্থাপন বলা কি ঠিক?
উত্তর – এসব ঘটনার
বিশুদ্ধতা সম্পর্কে যেহেতু জানা যায়নি,
তাই এগুলো না বলা উত্তম। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা যা প্রমাণিত তাই
যথেষ্ট। মূল বিষয়
হচ্ছে মানুষদেরকে ইবাদতের প্রতি উৎসাহ
দান করা ও গুনাহের প্রতি নিরুৎসাহিত
করা। যেমনটি করেছিলেন
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
তার সাহাবায়ে কিরাম। এ ছাড়া বাস্তব-
অবাস্তব কিচ্ছা-কাহিনী না বলাই ভাল।
প্রশ্ন ১৪- এক কবরে নারী-পুরুষ
উভয়কে দাফন করা কি জায়েয?
উত্তর – এতে কোন সমস্যা নেই,
প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে, যখন যুদ্ধ
বা মহামারি ইত্যাদি কারণে অনেক লাশ
একত্র জমা হয়।
প্রশ্ন ১৫- লাশ কবরে রেখে বাঁধন
খুলে দেবে কি?
উত্তর – বাঁধন খুলে দেয়া উত্তম, সাহাবিগণ
এরূপ করতেন।
প্রশ্ন ১৬- কবরের উপর কোন চিহ্ন স্থাপন
করা জায়েয আছে কি?
উত্তর – কবরের উপর পাথর,
হাড্ডি বা লোহা ইত্যাদি দ্বারা চিহ্ন
স্থাপন করার দোষণীয় নয়, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম
সাহাবি ওসমান ইবন মাজউন রাদিয়াল্লাহু
আনহুর কবরের উপর চিহ্ন স্থাপন
করেছিলেন।
প্রশ্ন ১৭-
মৃতকে কেবলামুখি করে রাখা সুন্নত
না মুস্তাহাব?
উত্তর –
মৃতকে কেবলামুখী করে রাখা সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻟﻜﻌﺒﺔ ﻗﺒﻠﺘﻜﻢ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻭ ﺃﻣﻮﺍﺗﺎ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ‏)
“জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়ই বাইতুল্লাহ
তোমাদের কিবলা”। (আবুদাউদ)
তাই মৃতকে ডান
পাঁজরে শুইয়ে কেবলামুখী করে রাখবে।
প্রশ্ন ১৮- কবর সংস্কার করা কি জায়েয?
উত্তর – প্রয়োজন হলে কবর সংস্কার
করা যায়, যেমন কবরের নির্দিষ্ট
জায়গা ভুলে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকলে বা অন্য কোন
প্রয়োজনে।
প্রশ্ন ১৯- মৃতুদের হাড্ডি জীর্ণ
হয়ে গেলে সেগুলো অন্যত্র স্থানান্তর
করা কি জায়েয?
উত্তর – প্রয়োজন হলে স্থানান্তর
করা যাবে, অন্যথায় নিজ স্থানে কবর
বহাল থাকবে।
প্রশ্ন ২০- দিনে লাশ দাফন করা উত্তম, এ
কথার ভিত্তি কি?
উত্তর – নিষিদ্ধ তিন সময় ব্যতীত যে কোন
সময় লাশ দাফন করা বৈধ,
সাহাবি উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেনঃ “আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন
সময় নামাজ পড়তে ও আমাদের
মৃতদেরকে দাফন করতে নিষেধ করেছেন,
সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় ও ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়,
যতক্ষণ না তা হেলে যায়।
প্রশ্ন ২১- মৃত ব্যক্তি যদি মহিলা হয়, আর তার
কোন অভিভাবক যদি উপস্থিত না থাকে,
তাহলে পুরুষগণ স্বেচ্ছায় তার লাশ
কবরে রাখার
ব্যাপারে কি সহযোগিতা করতে পারবে
?
উত্তর – মৃত মহিলার অভিভাবক উপস্থিত
থাকা সত্বেও তার লাশ কবরে রাখার
ব্যাপারে স্বেচ্ছায়
পুরুষরা সহযোগিতা করতে পারবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত
থাকা সত্বেও তাঁর এক মেয়ের লাশ অন্য
পুরুষরা কবরে নামিয়ে ছিল।
প্রশ্ন ২২- কোন মসজিদে যদি কবর থাকে,
যা স্থানান্তরে ফিতনার আশঙ্কা হয়,
তাহলে সে কবরটি স্থানান্তর
করা কি ওয়াজিব?
উত্তর – এমতাবস্থায়
দেখতে হবে যে কোনটি আগে, কবর
না মসজিদ, যদি মসজিদ আগে নির্মাণ হয়,
তাহলে মসজিদ ঠিক রেখে কবর নিঃশেষ
করতে হবে, তবে এ কাজটি আদালত
বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা যেন
কোন ধরণের ফিতনা সৃষ্টি না হয়। আর
যদি কবর আগে স্থাপিত হয়, তাহলে কবর
ঠিক রেখে মসজিদ
ভেঙ্গে ফেলতে হবে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছন,
‏«ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﻭﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍ ﻗﺒﻮﺭ ﺃﻧﺒﻴﺎﺋﻬﻢ
ﻣﺴﺎﺟﺪ ‏» ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﺘﻪ ‏)
“ইয়াহূদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর
অভিশাপ, তারা তাদের নবিদের
কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে”।
(বুখারি ও মুসলিম)
এমনিভাবে মুমিন জননী উম্মে-সালমা ও
উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু
আনহা হাবশায় অবস্থিত গীর্জা ও
তাতে নির্মিত মূর্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দিলে,
তিনি বলেনঃ
‏«ﺃﻭﻟﺌﻚ ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﻓﻴﻬﻢ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺼﺎﻟﺢ ﺑﻨﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﻗﺒﺮﻩ
ﻣﺴﺠﺪﺍ ﻭﺻﻮﺭﻭﺍ ﻓﻴﻪ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺼﻮﺭ ﺃﻭﻟﺌﻚ ﺷﺮﺍﺭ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻋﻨﺪ
ﺍﻟﻠﻪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ‏)
“তারা এমন যে, যখন তাদের কোন
নেককার লোক মারা যায়, তারা তার
কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে ও
তাতে তার ছবি অঙ্কন করে, এরাই
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম মাখলুক”। (বুখারি ও
মুসলিম)
হাদিস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
কবরের উপর নির্মিত মসজিদে নামাজ
পড়লে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরণের
মসজিদে নামাজ পড়তে নিষেধ
করেছেন, কারণ এটা শিরকে আকরের
মাধ্যে গণ্য।
প্রশ্ন ২৩- এক কবরে দু’লাশ রাখার
পদ্ধতি কি?
উত্তর – দু’জনের মধ্যে যে অধিক
সম্মানী তাকে প্রথমে কিবলা মুখী করে
রাখবে, অতঃপর দ্বিতীয়
ব্যক্তিকে রাখবে। উভয়কে ডান পাজরের
উপর কিবলামুখী করে শোয়াবে। যদি তিন
ব্যক্তিকে একই কবরে দাফন করতে হয়,
তাহলে তৃতীয় ব্যক্তিকে পূর্বের দু’জনের
পাশে শোয়াবে। বর্ণিত আছে যে, ওহুদ
যুদ্ধে শাহাদতবরণকারী সাহাবাদের
লাশের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন দু’জন,
দু’জন ও তিনজন তিনজন করে এক-এক
কবরে দাফন কর। যে কোরআনে অধিক
পারদর্শী তাকে আগে রাখ।
প্রশ্ন ২৪- দাফন করার সময় নিম্নে বর্ণিত
আয়াত পাঠ করার বিধান কি?
﴿ﻣِﻨۡﻬَﺎ ﺧَﻠَﻘۡﻨَٰﻜُﻢۡ ﻭَﻓِﻴﻬَﺎ ﻧُﻌِﻴﺪُﻛُﻢۡ ﻭَﻣِﻨۡﻬَﺎ ﻧُﺨۡﺮِﺟُﻜُﻢۡ ﺗَﺎﺭَﺓً ﺃُﺧۡﺮَﻯٰ
٥٥﴾ ‏[ ﻃﻪ 55:‏]
“মাটি থেকেই
আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি,
মাটিতেই
আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব
এবং এ মাটি থেকেই
তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনব”।
সূরা তা-হা: (৫৫)
উত্তর – দাফনের সময় এ আয়াত বলা সুন্নত
তবে এর সাথে আরো যুক্ত করবে—
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ
প্রশ্ন ২৫- কাফনের
কাপড়ে কালিমায়ে তাইয়্যিবা লিখা,
অথবা কাগজে লিখে তা কাফনে রেখে
দেয়া কেমন?
উত্তর – এ ধরণের কাজের কোন
ভিত্তি নেই। শরিয়ত স্বীকৃত কাজ
হচ্ছে উপস্থিত লোকজন মুমূর্ষু
ব্যক্তিকে কালিমায়ে তাইয়্যিবা
তালকিন করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟﻘﻨﻮﺍ ﻣﻮﺗﺎﻛﻢ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে লা-
ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর তালকিন কর”।
(মুসলিম)
যেন মৃতের সর্বশেষ কথা “লা-
ইলাহা ইল্লাল্লাহ” হয়। এ ছাড়া কাফনের
উপর বা কবরের
দেয়ালে কালিমা লেখার কোন বিধান
নেই।
প্রশ্ন ২৬- কবরের পাশে দাড়িয়ে ওয়াজ
করা কেমন?
উত্তর – কবরের পাশে দাড়িয়ে ওয়াজ
করতে নিষেধ নেই, এটা বিদআতের
অন্তর্ভুক্ত নয়, সাহাবি বারা ইব্ন আজেব
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের
পাশে দাড়িয়ে ওয়াজ করেছেন।
সান্ত্বনা দান ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
প্রশ্ন ১- শোকবার্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত
হওয়া ও তাদের সাথে বৈঠক
করা কি বৈধ?
উত্তর – শোকাহত মুসলিম
পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া মুস্তাহাব, এর
মাধ্যমে তাদেরকে সুহৃদয়তা দেখানো হয়।
এ সময় যদি তাদের নিকট চা,
কফি ইত্যাদি পান করে বা আতর
ইত্যাদি গ্রহণ করে, যা সাধারণত অন্যান্য
সাক্ষাত প্রার্থীদের সাথে করা হয়,
এতে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ২- শোক প্রকাশের সময় এ
কথা বলা কেমন যে, সে তার শেষ
ঠিকানায় চলে গেছে?
উত্তর – আমার জানামতে তাতে কোন
সমস্যা নেই, কারণ দুনিয়ার তুলনায় পরকাল
নিশ্চয় তার শেষ ঠিকানা। তবে মুমিনদের
সত্যিকারের শেষ
ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত আর কাফেরদের
শেষ ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।
প্রশ্ন ৩- সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যেঃ
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳَّﺘُﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﻔۡﺲُ ﭐﻟۡﻤُﻄۡﻤَﺌِﻨَّﺔُ ٢٧﴾ ‏[ ﺍﻟﻔﺠﺮ 27: ‏]
“হে প্রশান্ত আত্মা” [ফজর: ২৭]
বলে মৃতকে সম্বোধন করা কেমন?
উত্তর – এ ধরণের বাক্য পরিত্যাগ
করা উচিত, কারণ তাদের জানা নেই
যে মৃতের আত্মা বাস্তবিকেই কেমন।
শরিয়ত অনুমোদিত আমল হচ্ছে মৃতের
জন্যে প্রার্থনা করা, তার জন্যে ক্ষমা ও
রহমতের দো‘আ করা।
প্রশ্ন ৪- পেপার পত্রিকায় শোকপ্রকাশ
করা কেমন, এটাকি মাতমের অন্তর্ভূক্ত?
উত্তর – এটা নিষিদ্ধ মাতমের অন্তর্ভূক্ত
না হলেও বর্জন করা উচিত, কারণ
এতে নিষ্প্রয়োজনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়।
প্রশ্ন ৫- মৃতের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তিন
দিন পর্যন্ত মৃতের বাড়িতে অবস্থান করে,
এটা কেমন?
উত্তর – মৃতের পরিবারের
সাথে হৃদ্যতা প্রকাশের জন্য
সেখানে তিন অবস্থান করা বৈধ, তবে এ
ক্ষেত্রে ওলিমার ন্যায় লোকদের জন্য
খাওয়ার অনুষ্ঠান করবে না।
প্রশ্ন ৬ – সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কি কোন
নির্ধারিত সময় আছে?
উত্তর – আমার জানামতে এর জন্য
নির্ধারিত কোন সময় নেই।
প্রশ্ন ৭- শোকাহত
পরিবারকে খানা পৌঁছানো বাবদ
জবেহকৃত প্রাণী পাঠিয়ে দেয়া কেমন?
উত্তর – দেয়া যেতে পারে, নিকটতম
আত্মীয়দের
দ্বারা তা রান্না করে নেবে। মুতার
যুদ্ধে সাহাবি জাফর ইবন আবু তালিব
শাহাদত বরণ করলে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
পরিবারের লোকদেরকে বললেন,
তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য
খানা তৈরি করে পাঠিয়ে দাও, কারণ
তারা কঠিন বিপদগ্রস্ত খানা তৈরির
মানষিকতা তাদের নেই।
প্রশ্ন ৮- মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করেছে যে,
তার ইন্তেকালের পর যেন বিলাপ
করা না হয়, তবও যদি কেউ তার জন্য বিলাপ
করে, তাহলে কি মৃতকে আযাব
দেয়া হবে?
উত্তর – তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই
ভাল জানেন, প্রত্যেকের উচিত তার
আপনজনদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা।
ওয়ারিসদের সতর্ক করার পরও যদি কেউ
তার জন্য বিলাপ করে তাহলে ইনশাল্লাহ
সে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে না। মহান
আল্লাহ তালা বলেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٞ ﻭِﺯۡﺭَ ﺃُﺧۡﺮَﻯٰۚ ١٨﴾ ‏[ ﻓﺎﻃﺮ 18:‏]
“আর কোন বোঝা বহনকারী অন্যের
বোঝা বহন করবে না”। সূরা ফাতিরঃ (১৮)
প্রশ্ন ৯- শোকাহত পরিবারের জন্য
প্রেরিত দুপর বা রাতের খাবারে অন্য
কেউ অংশগ্রণ করলে তা কি মাতম
বা বিলাপে পরিণত হবে?
উত্তর – না, তা মাতমের অন্তর্ভূক্ত
হবে না। কারণ আগত লোকদের জন্য
শোকাহত পরিবার খানার
ব্যাবস্থা করেনি, বরং অন্যরা তাদের জন্য
ব্যাবস্থা করেছে, আর তা অতিরিক্ত
হওয়ায় অন্যরা তাতে অংশগ্রহণ করেছে,
তাই এতে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ১০ – অনিচ্ছায় যদি ক্রন্দনের
মধ্যে বিলাপ এসে যায় তাহলে তার হুকুম
কি?
উত্তর – বিলাপ সর্বাস্থায় না জায়েয,
তবে চক্ষু অশ্রুশিক্ত ও অন্তর বিষণ্ন
হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইব্রাহিমের
ইন্তেকালের পর তিনি বলেছেন,
‏«ﺍﻟﻌﻴﻦ ﺗﺪﻣﻊ ﻭ ﺍﻟﻘﻠﺐ ﻳﺤﺰﻥ ﻭﻻ ﻧﻘﻮﻝ ﺇﻻ ﻣﺎ ﻳﺮﺿﻰ ﺍﻟﺮﺏ
ﻭ ﺇﻧﺎ ﻟﻔﺮﺍﻗﻚ ﻳﺎ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻟﻤﺤﺰﻭﻧﻮﻥ ‏» ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“চক্ষু অশ্রু বিসর্জন করছে, অন্তর ব্যথিত
হচ্ছে, তবুও প্রভূর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন
কথা বলব না, হে ইব্রাহীম, তোমার
বিরহে আমরা ব্যথিত”। (বুখারি)
প্রশ্ন ১১ – শোকপ্রকাশের জন্য সফর করা ও
শোকাহত লোকদের নিকট অবস্থান
করা কেমন?
উত্তর – এ বিষয়টি শোকাহত লোকদের
অবস্থার উপর নির্ভর করবে,
তারা যদি এতে আন্দবোধ
করে তাহলে তাদের নিকট অবস্থান
করতে কোন সমস্যা নেই, অন্যথায় নয়।
প্রশ্ন ১২ – ফকিহগণ বলেছেন,
স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য সর্বোচ্চ
তিন দিন শোক প্রকাশ করা বৈধ, অর্থাৎ
সাজসজ্জ্বা ত্যাগ করা, কথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর – কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক, বিশুদ্ধ হাদিস
দ্বারা তা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏« ﻻ ﺗﺤﺪ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻋﻠﻰ ﻣﻴﺖ ﻓﻮﻕ ﺛﻼﺙ ﺇﻻ ﻋﻠﻰ ﺯﻭﺝ ﺃﺭﺑﻌﺔ
ﺃﺷﻬﺮ ﻭﻋﺸﺮﺍ ‏» ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“কোন নারী মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের
বেশী শোক প্রকাশ করেব না, তবে তার
স্বামীর জন্য চারমাস দশদিন শোক প্রকাশ
করবে”। (বুখারি ও মুসলিম)
প্রশ্ন ১৩ – শোকাহত পরিবার নিজেদের
খানা নিজেরা পাক করতে পারবে কি?
উত্তর – হ্যাঁ, তারা নিজেদের
খানা নিজেরা রান্না করবে, এতে কোন
সমস্যা নেই, তবে কারো জন্য
পাকাবে না।
প্রশ্ন ১৪ – মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য
করে শোকগাথা ছন্দ বা কবিতা পাঠ
করা কি মাতমের অন্তর্ভূক্ত?
উত্তর –
মৃতকে উদ্দেশ্যে করে শোকগাথা ছন্দ
বা কবিতা পাঠ করা হারাম ও নিষিদ্ধ
মাতমের অন্তর্ভূক্ত হবে না।
তবে কারো প্রশংসায় সীমাতিরিক্ত
করা কোন অবস্থাতে জায়েয হবে না।
যেমন করে থাকে কবি ও গায়কগণ।
প্রশ্ন ১৫ – পত্র-পত্রিকার
মাধ্যমে শোকবার্তা পাঠনো কেমন?
উত্তর – বিষয়টি বিবেচনা সাপেক্ষ, কারণ
এটা একটি ব্যয়বহুল কাজ, তবুও
যদি সত্যবাণী দ্বারা শোকপ্রকাশ করা হয়
তবে জায়েয, তবে এভাবে না করাই
উত্তম। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনার
জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তাদের নিকট পত্র
পাঠাবে বা মোবাইল করবে, বা সাক্ষাত
করবে।
কবর যিয়ারত
প্রশ্ন ১ – কবর দৃষ্টিগোচর হলে বা কবরের
দেয়াল অতিক্রম
করলে কবরবাসীদেরকে সালাম
করতে হবে কি?
উত্তর – পথিক হলেও সালাম দেয়া উত্তম,
এরূপ ব্যক্তির যিয়ারতের নিয়ত
করে নেয়া উত্তম।
প্রশ্ন ২ – যিয়ারতকারীর নির্দিষ্ট কবরের
পাশে গিয়ে যিয়ারত করার হুকুম কি?
উত্তর – গোরস্থানের প্রথম কবরের
পাশে দাঁড়িয়ে দো‘আ করাই যথেষ্ট, তবুও
যদি নির্দিষ্ট কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দো
‘আ ও সালাম করতে চায় করতে পারবে।
প্রশ্ন ৩ – মৃত
ব্যক্তি যিয়ারতকারীকে চিনতে পারে?
উত্তর – কতিপয় হাদিসে এসেছে যে,
যিয়ারতকারী যদি এমন হয়
যে দুনিয়াতে তার সাথে পরিচয় ছিল
তাহলে আল্লাহ যিয়ারতকারীর
সালামের উত্তর দেয়ার জন্য তার রুহ
ফিরিয়ে দেন । কিন্তু এ হাদিসের
সনদে কিছু ত্রুটি রয়েছে। অবশ্য
আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহ
হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
প্রশ্ন ৪ – উম্মে আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু
সূত্রে বর্ণিত,
‏« ﻧﻬﻴﻨﺎ ﻋﻦ ﺍﺗﺒﺎﻉ ﺍﻟﺠﻨﺎﺋﺰ ﻭﻟﻢ ﻳﻌﺰﻡ ﻋﻠﻴﻨﺎ ‏»
“আমাদেরকে জানাযার
সাথে চলতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু
কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি”।
হাদিসটির ব্যাখ্যা কি?
উত্তর – আবস্থা দৃষ্টে প্রতিয়মান হচ্ছে যে
, বর্ণনাকারীর মতে নিষেধটি কঠোর নয়,
তবে আমাদের জেনে রাখা উচিত
যে প্রত্যেক নিষেধ হারাম। কারণ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন।
‏«ﻣﺎ ﻧﻬﻴﺘﻜﻢ ﻋﻨﻪ ﻓﺎﺟﺘﻨﺒﻮﻩ ﻭﻣﺎ ﺃﻣﺮﺗﻜﻢ ﺑﻪ ﻓﺄﺗﻮﺍ ﻣﻨﻪ ﻣﺎ
ﺍﺳﺘﻄﻌﺘﻢ ‏» ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“আমি যার থেকে তোমাদেরকে নিষেধ
করি, তোমরা তা পরিত্যাগ কর, আর
আমি তোমাদেরকে যার আদেশ দেই,
তোমরা তা সাধ্যানুসারে পালন কর”।
(বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে,
মহিলাদের জানাযার সাথে কবর পর্যন্ত
যাওয়া হারাম, তবে পুরুষদের ন্যায়
তারা জানাযায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
প্রশ্ন ৫ – একটি হাদিসে আছে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জনৈক ব্যক্তিকে কবরের উপর
জুতা নিয়ে হাটতে দেখে বললেন,
হে জুতা ওয়ালা! তোমার জুতাদ্বয়
খুলে নাও। এ হাদিসের উপর কি আমল
করা যাবে? জুতা নিয়ে কেউ কবরের উপর
হাটা-
চলা করতে চাইলে তাকে কি নিষেধ
করা হবে?
উত্তর – হ্যাঁ, বর্ণিত হাদিসের উপর আমল
করা যাবে, সুতরাং কোন অবস্থাতেই
কবরের উপর জুতা নিয়ে হাটা-
চলা করা জায়েয হবে না। হ্যাঁ, বিশেষ
প্রয়োজনে যেমন কবরের উপর
যদি কাঁটাদার গাছ থাকে বা মাটি অত্যন্ত
গরম হয়,
যে কারণে খালিপায়ে চলা অসম্ভব হয়,
এমতাবস্থায় জুতা নিয়ে কবরের উপর
হাঁটা যেতে পারে, এরূপ কোন বিশেষ
প্রয়োজন না হলে তাকে অবশ্যই নিষেধ
করা হবে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
তাকে শরি‘আতের হুকুম জানিয়ে দেবে।
প্রশ্ন ৬ –
গোরস্থানে প্রবেশকালে জুতা খুলার
বিধান কি?
উত্তর – কবরের উপর
দিয়ে হেঁটে গেলে জুতা অবশ্যই
খুলতে হবে, আর যদি কবরের উপর
দিয়ে না হেটে গোরস্থানের প্রথম
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়,
তা হলে জুতা খুলতে হবে না।
প্রশ্ন ৭ – জনৈক মহিলাকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একটি কবরের পাশে ক্রন্দরত আবস্থায়
দেখে বলেছিলেন,
‏« ﺍﺗﻘﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺻﺒﺮﻱ‏»
“আল্লাহকে ভয়কর ও ধৈর্যধারণ কর”।
(বুখারি ও মুসলিম) এ হাদিস কি মহিলাদের
কবর যিয়ারত বৈধ প্রমাণ করে না?
উত্তর – সম্ভবত উল্লিখিত
ঘটনাটি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের
জন্য কবর যিয়ারত বৈধ থাকাকালিন
সময়ের ঘটনা। আর মহিলাদের জন্য কবর
যিয়ারত নিষিদ্ধকারী হাদিস এ হাদিসের
জন্যে নাসেখ বা এ
হাদিসকে রহিতকারী।
প্রশ্ন ৮ – কিছু কিছু শহরে অনেক মানুষ
কববের উপর ঘর
তৈরি করে সেখানে বসবাস করে।
এটা কতটুকু শরিয়ত সম্মত?
উত্তর – এটা নেহায়েত গর্হিত ও
নিন্দনীয় কাজ, এ কাজের
দ্বারা কবরবাসীদের অপমান করা হয়, তাই
তাদেরকে এ কাজ হতে বারণ
করা এবং শরি‘আতের বিধান
সম্পর্কে অবহিত করা জরুরী। তারা এসব
কবরের উপর যেসব সালাত আদায় করেছে,
তা সব বাতিল ও বৃথা। এ অবস্থায় কবরের
উপর বসাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম
বলেছেন,
‏« ﻻ ﺗﺼﻠﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ﻭﻻ ﺗﺠﻠﺴﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﺎ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“কবরের দিকে মুখ করে নামাজ
পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না”।
(মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলইহি ওয়াসাল্লম আরো বলেছেন,
‏«ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﻭﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍ ﻗﺒﻮﺭ ﺃﻧﺒﻴﺎﺋﻬﻢ
ﻣﺴﺎﺟﺪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“আল্লাহ ইয়াহূদী ও নাসারাদের উপর
লানত করেছেন, কারণ তারা তাদের
নবীদের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত
করেছে”। (বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিস সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
বাণী দ্বারা তাদেরকে তাদের গর্হিত
কাজের জন্য সতর্ক করেছেন।
প্রশ্ন ৯ – জনৈক ব্যক্তির কবরের উপর
একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হল, আর ঐ
ব্রিজের উপর
দিয়ে একটি যাত্রিবাহী গাড়ি যাওয়ার
সময় বিরত দিল, যাত্রীদের মাঝে একজন
মহিলাও রয়েছে। এখন প্রশ্ন
হচ্ছে গাড়িটির যাত্রা বিরতির
কারণে সে মহিলা কি কবর
যিয়ারতকারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে,
সে মহিলা কি কবরবাসীদের সালাম
করবে?
উত্তর – না, মহিলা কবর যিয়ারতকারীদের
অন্তর্ভূক্ত হবে না, ব্রিজ কেন কবরের পাশ
দিয়ে হেঁটে গেলেও কবর
যিয়ারতকারী বলে গণ্য হবে না।
মহিলা যদি পথচারী হয়, তবুও তার
পক্ষে কবরবাসীদের সালাম
না করা উত্তম।
প্রশ্ন ১০ – একটি হাদিস প্রচলিত আছে,
‏« ﺍﺫﺍ ﻣﺮﺭﺗﻢ ﺑﻘﺒﺮ ﻛﺎﻓﺮ ﻓﺒﺸﺮﻭﻩ ﺑﺎﻟﻨﺎﺭ ‏»
“যখন তোমরা কোন কাফেরের কবরের
পাশ দিয়ে যাও, তখন
তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দাও”। এ
হাদিসটি কতটুকু শুদ্ধ?
উত্তর – আমার জানা মতে এ হাদিসের
বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই।
প্রশ্ন ১১- মহিলারা কবরের পাশ
দিয়ে যাওয়ার সময় কবরবাসীদের সালাম
দেবে কি?
উত্তর – আমার
জানা মতে কবরবাসীদেরকে মহিলাদের
সালাম না-করা উচিৎ। কারণ সালাম
বিনিময় কবর যিয়ারতের রাস্তা উম্মুক্ত
করবে, দ্বিতীয়ত সালাম দেয়া কবর
জিয়ারতের অন্তর্ভুক্ত। তাই মহিলাদের
উপর ওয়াজি হচ্ছে সালাম বর্জন করা,
তারা যিয়ারত ব্যতীত মৃতদের জন্য শুধু দো
‘আ করবে।
প্রশ্ন ১২ – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতের
নিয়ম কি?
উত্তর – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতের
সুন্নত তরিকা এই যে, কবরের দিকে মুখ
করে সালাম দেবে, অতঃপর তাঁর
দু’সাথী আবু-বকর ও ওমরকে সালাম দেবে,
অতঃপর ইচ্ছা করলে অন্য জায়গায়
গিয়ে কিবলামুখী হয়ে নিজের জন্য দো
‘আ করবে।
প্রশ্ন ১৩ – মহিলাগণ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কবর যিয়ারত করতে পারবে কি?
উত্তর – মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত
করা নিষেধ, যেসব হাদিসে মহিলাদের
কবর যিয়ারত থেকে বারণ করা হয়েছে,
সেখানে রাসূলের কবরও অন্তর্ভুক্ত, তাই
তাদের জন্য জরুরী হচ্ছে রাসূলের কবর
যিয়ারত না-করা। মহিলাদের জন্য
রাসূলের কবর যিয়ারত বৈধ না অবৈধ এ
সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম
দু’ভাগে বিভক্ত, তাই সুন্নতের অনুসরণ ও
মতানৈক্য থেকে বাঁচার জন্য মহিলাদের
জন্য যে কোন কবর যিয়ারত ছেড়ে দেয়াই
শ্রেয়। তা ছাড়া মহিলাদের জন্য কবর
যিয়ারত নিষেধ সংক্রান্ত
হাদিসে রাসূলের কবরকে বাদ
দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় হাদিসের
ব্যাপকতার উপর আমল করাই ওয়াজিব, যতক্ষণ
না এর বিপরীত কোন সহিহ হাদিস
পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ১৪ –
মসজিদে প্রবেশকালে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কবর যিয়ারত করতে পারবে কি?
উত্তর –
মসজিদে প্রবেশকালে রাসূলকে শুধু
সালাম করবে, শুধু কবর জিয়াতর
উদ্দেশ্যে যাবে না, তবে মাঝে-
সাজে যেতে পারে।
প্রশ্ন ১৫ – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতের
উদ্দেশ্যে সফর করা কি জায়েয?
উত্তর – মসজিদে নববি জিয়ারতের
উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয। তাই
মসজিদে নববির যিয়ারত মূল উদ্দেশ্য
করে সফর করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়
হিসেবে নবীর কবর যিয়ারত করবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻻﺗﺸﺪ ﺍﻟﺮﺣﺎﻝ ﺇﻻ ﺇﻟﻰ ﺛﻼﺛﺔ ﻣﺴﺎﺟﺪ : ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ
ﻭﻣﺴﺠﺪﻱ ﻫﺬﺍ ﻭﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻻﻗﺼﻰ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সফর
করা যাবে নাঃ মাসজিদে হারাম, আমার
এ মসজিদ ও মসজিদে আকসা”। (বুখারি)
প্রশ্ন ১৬ – কবর জিয়ারতের জন্য জুমার
দিনকে নির্দিষ্ট করা কেমন?
উত্তর – এর কোন ভিত্তি নেই।
যিয়ারতকারী সুযোগ বুঝে যখন
ইচ্ছা যিয়ারত করবে। জিয়ারতের জন্য
কোন দিন বা রাতকে নির্ধারিত
করা বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﺍﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ‏» ‏(ﻣﺘﻔﻖ
ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“আমাদের এ দ্বীনে যে কেউ নতুন কিছু
আবিষ্কার করল, তা পরিত্যক্ত”। (বুখারি ও
মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻋﻤﻼ ﻟﻴﺲ ﻋﻴﻪ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“যে এমন কোন কাজ করল যা আমাদের
আদর্শ নয়, তা পরিত্যক্ত”। হাদিসটি ইমাম
মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার
সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
প্রশ্ন ১৭ – মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত
নিষেধ হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহাকে কিভাবে কবর জিয়ারতের দো
‘আ শিক্ষা দিয়েছেন?
উত্তর – কবর যিয়ারত প্রথমে সবার জন্য
নিষেধ ছিল, অতঃপর সবার জন্য জায়েয হয়,
অতঃপর শুধু মহিলাদের জন্য নিষেধ হয়। এ
ব্যাখ্যার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আহাকে কবর
জিয়ারতের আদব তখন
শিক্ষা দিয়েছিলেন যখন তা সবার জন্য
জায়েয ছিল।
প্রশ্ন ১৮ – কবরের পাশে দো‘আ কি দু’হাত
তুলে করতে হবে?
উত্তর – কবরের পাশে দু’হাত তুলে দো‘আ
করা জায়েয আছে,
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর
যিয়ারত করে কবরবাসীদের জন্য দু’হাত
তুলে দো‘আ করেছেন। (মুসলিম)
প্রশ্ন ১৯ – কবরের পাশে সম্মিলিত দোয়ার
কি হুকুম?
উত্তর – কাউকে দো‘আ
করতে দেখে শ্রোতাদের আমিন আমিন
বলায় কোন বাঁধা নেই।
তবে পরিকল্পিতভাবে সম্মিলিত দো‘আ
করা যাবে না। অকস্মাৎ কাউকে দো‘আ
করতে দেখে তার সাথে সাথে আমিন
আমিন বলা যাবে, কারণ এটাকে সম্মিলিত
দো‘আ বলা হয় না।
প্রশ্ন ২০ – গোরস্থানের
প্রথমাংশে সালাম দিলে সমস্ত
কবরবাসীর জন্য সালাম বিবেচ্য হবে?
উত্তর – এ সালামই যথেষ্ট, সে ইনশাল্লাহ
জিয়ারতের সাওয়াব পেয়ে যাবে।
যদি গোরস্থান অনেক বড় হয় আর
সে ঘুরে ঘুরে সব দিক দিয়ে সালাম
বিনিময় করতে চায় তাও করতে পারবে।
প্রশ্ন ২১ – অমুসলিমের কবর যিয়ারত
করা কি জায়েয?
উত্তর – শিক্ষা গ্রহণের জন্য
হলে অমুসলিমের কবর যিয়ারত
করা জায়েয। যেমন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
মায়ের কবর যিয়ারত করে তাঁর
জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার
অনুমতি চেয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁকে এ
বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়নি। শুধু
জিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ২২ – দু’ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের
জন্য নির্দিষ্ট করার কোন
ভিত্তি আছে কি?
উত্তর – আমার জানামতে এর কোন
ভিত্তি নেই, যিয়ারতকারীর যখন সুযোগ
হবে তখন সে যিয়ারত করবে, এটাই সুন্নত।
প্রশ্ন ২৩ – মৃতের জন্য দো‘আ করার সময় কবর
মুখী হয়ে দো‘আ করা কি নিষেধ?
উত্তর – না, নিষেধ নয়, মৃতের জন্য দো‘আ
করার সময় কেবলামুখী ও কবরমুখী উভয়
বৈধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির
দাফন শেষে বললেন,
‏« ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍ ﻷﺧﻴﻜﻢ ﻭﺍﺳﺄﻟﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺘﺜﺒﻴﺖ ﻓﺈﻧﻪ ﺍﻵﻥ
ﻳﺴﺄﻝ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ‏)
“তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য
ক্ষমা প্রর্থনা কর এবং তার
ইস্তেকামাতের দো‘আ কর,
কেননা তাকে এখন প্রশ্ন করা হবে”।
এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
কথা বলেননি যে, কিবলামুখী হয়ে দো
‘আ কর।
সুতরাং কিবলামুখী হয়ে দো‘আ করুক আর
কবরমুখী হয়ে দো‘আ করুক উভয়ই জায়েয।
রাসূলের সাহাবিগণ কবরের চতুর্পাশে দা
ঁড়িয়ে মৃতের জন্য দো‘আ করতেন।
প্রশ্ন ২৪- দু’হাত তুলে মৃতের জন্য দো‘আ
করা কি জায়েয?
উত্তর – কিছু কিছু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কবর যিয়ারত
করে দো‘আ করতেন তখন দু’হাত তুলেই
দো‘আ করতেন। যেমন ইমাম মুসলিম
রাহিমাহুল্লাহ উম্মুল মুমিনিন
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর
যিয়ারত করে তাদের জন্য দো‘আ করার
সময় দু’হাত তুলেছেন।
প্রশ্ন ২৫ – আমাদের এখানে কিছু
সৎকর্মী যুবক বাস করে, তারা নিজেদের
সাথে কতক গাফেল লোকদেরকে কবর
জিয়ারতের জন্য নিয়ে যেতে চায়, হয়ত
তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় সঞ্চার হবে।
এ ব্যাপারে আপনাদের মত কি?
উত্তর – এটা একটি মহৎ কাজ, এতে কোন
বাঁধা নেই। এটা ভাল
কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করার
অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম
বিনিময় দান করুন।
প্রশ্ন ২৬ – কবরের উপর কোন চিহ্ন স্থাপন
করার হুকুম কি?
উত্তর – লিখা বা নাম্বারিং করা ব্যতীত
শুধু পরিচয়ের জন্য কবরের উপর চিহ্ন স্থাপন
করা যেতে পারে। বিশুদ্ধ হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কবরের উপর কিছু লিখতে নিষেধ
করেছেন, আর নাম্বারিং করাও লিখার
অন্তর্ভূক্ত। তবে কবরস্থ লোকের পরিচয়ের
জন্য শুধু পাথর ইত্যাদি রাখা যাবে,
কালো বা হলুদ রঙের পাথরও রাখা যাবে।
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবি উসমান ইবন
মাজউন রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবরের উপর
চিহ্ন স্থাপন করেছিলেন।
জানাযা বিষয়ে বিভিন্ন ফতোয়া
প্রশ্ন ১ – ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুবরণকারীর
অঙ্গদানের বিধান কি?
উত্তর – জীবিত হোক আর মৃত হোক
প্রতিটি মুসলিম অত্যন্ত সম্মানের
অধিকারী, সুতরাং তার সাথে এমন কোন
আচরণ করা উচিৎ হবে না, যা তার জন্য
কষ্টকর বা তার আকৃতি বিকৃতির শামিল,
যেমন হাড়
বাঙ্গা বা টুকরো টুকরো করা ইত্যাদি।
হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻛﺴﺮ ﻋﻈﻢ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻛﻜﺴﺮﻩ ﺣﻴﺎ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ‏)
“মৃতের হাড় ভাঙ্গা তার জীবিত অবস্থায়
হাড় ভাঙ্গার ন্যায়”। (আবুদাউদ)
উল্লেখিত হাদিস এ কথার প্রমাণ বহন
করে যে, কোন জীবিত ব্যক্তির
উপকারার্থে মৃত ব্যক্তির অঙ্গহানি করা,
যেমন রিদপিন্ড বা কলিজা ইত্যাদি কর্তন
করা জায়েয নয়, কারণ এটা হাড়
ভাঙ্গা হতেও জঘন্য। মানবাঙ্গ দান
করা জায়েয কি না এ
বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের যথেষ্ট
মতানৈক্য রয়েছে। কতিপয় আলেম
বলেছেন বর্তমান সময়ে অঙ্গদানের অধিক
প্রয়োজন দেখা দেয়ার কারণে তা বৈধ।
কিন্তু তাদের এ উক্তি সঠিক নয়।
পূর্বোল্লিখিত হাদিস
দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, অঙ্গদান জায়েয
নেই। এবং এতে যেমন মৃত ব্যক্তির অঙ্গের
সাথে খেল-তামাশা করা হয়, অনুরূপ
তাকে অপমানও করা হয়।
বাস্তব সত্য হল এই যে, মৃতের ওয়ারিসগণ
সম্পদের লোভে মৃতের মানহানীর
বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করে না,
তা ছাড়া ওয়ারিসগণ তো শুধু মৃতের
মালের ওয়ারিস হয় তার দেহের ওয়ারিস
তো কেউ হয় না।
প্রশ্ন ২ – মৃত কাফেরের হাড় বিচ্ছিন্ন
করার হুকুম কি?
উত্তর – এ বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ,
যদি মৃত কাফের জিম্মি অথবা চুক্তিভুক্ত
বা নিরাপত্তা কামী হয়, তাহলে তার হাড়
বিচ্ছিন্ন করা জায়েয হবে না, কারণ
সে মুসলিমদের ন্যায় সম্মানী, আর
যদি সে যুদ্ধরত দেশের হয়
তাহলে জায়েয হবে।
প্রশ্ন ৩ – প্রতিশোধ বা কিসাস
হিসাবে মৃতব্যক্তির হাড্ডি বিচ্ছিন্ন
করা কি ওয়াজিব?
উত্তর – ওয়াজিব নয়, কারণ কিসাস
তো চলে শর্তসাপক্ষে শুধু জীবিতদের
মাঝে।
প্রশ্ন ৪ – মৃতব্যক্তি অঙ্গদানের অসিয়ত
করলে তা কি বাস্তবায়ন করা হবে?
উত্তর – পূর্বের ফতোয়ার কারণে তার
অসিয়ত বাস্তবায়ন করা হবে না। যদিও
সে অসিয়ত করে যায়, কারণ তার দেহের
মালিক সে নিজে নয়।
প্রশ্ন ৫ – মৃতের সম্পদ থেকে প্রথমে কাফন
ও সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন সুগন্ধি ইত্যাদির
খরচ কি আলাদা করা হবে?
উত্তর – মৃতের ত্যাজ্য সম্পদ হতে সর্বপ্রথম
কাফন দাফন যেমন লাশের গোসল দেয়া,
কবর খনন করা ইত্যাদির খরচ বের করা হবে,
অতপর বন্ধকের বিনিময়ে গৃহিত ঋণ
পরিশোধ করা হবে, অতঃপর সাধারণ করজ
পরিশোধ করা হবে, অতঃপর সম্পদের এক
তৃতীয়াংশ হতে ওয়ারিস ব্যতীত অন্যদের
জন্য কৃত অসিয়ত পূরণ করা হবে।
প্রশ্ন ৬ – কোন ব্যক্তির যদি ব্রেইন স্ট্রোক
হয়, তাহলে তাকে তৎক্ষণাৎ মৃত বলা যাবে
?
উত্তর – না, তাকে মৃত বলা যাবে না,
তাকে মৃত ঘোষণা করার
ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবে না, বরং মৃত্যুর
বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত
অপেক্ষা করবে। অনেক সময় ডাক্তারগণ
রুগির কলিজা ইত্যাদি কেটে নেয়ার জন্য
এ বিষয়ে হাড়াহুড়ো করে,
এবং মৃতকে নিয়ে যাই ইচ্ছা তাই
করতে থাকে এগুলো সম্পুর্ণ না জায়েয।
প্রশ্ন ৭ – ডাক্তারগণ দাবি করেন যে,
ব্রেইন স্ট্রোকের মানুষ কখনো জীবন
ফিরে পায় না, কথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর – তাদের এ দাবি নির্ভরযোগ্য নয়।
আমাদের নিকট এমন অনেক তথ্য আছে যে,
ব্রেইন স্ট্রোককৃত মানুষ জীবন
ফিরে পেয়েছে এবং দীর্ঘদিন জীবিত
ছিল। মূল কথা হচ্ছে ব্রেইন স্ট্রোককৃত
ব্যক্তিকে ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত বলা যাবে না,
যতক্ষণ না তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত
হওয়া যাবে।
প্রশ্ন ৮ – মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসিন
ব্যতীত অন্য কোন সূরা পড়া জায়েয
আছে কি?
উত্তর – যেহেতু হাদিস
শরিফে সূরা ইয়াসিন পড়ার
কথা এসেছে তাই ঐ সূরা পড়াই উত্তম,
কিন্তু তার সাথে অন্য সূরা পড়লেও কোন
সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ৯ – মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা জায়েয
আছে কি?
উত্তর – মৃত ব্যক্তিকে পুরুষ বা এমন
মহিলা চুম্বন করতে পারবে যার
সাথে বিয়ে বন্ধন চিরতরের জন্য হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের এন্তেকাল
হলে সাহাবি আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু
তার কপালে চুমু দিয়ে ছিলেন।
প্রশ্ন ১০ –
মৃতকে রিফ্রিজারেটরে রেখে মৃত্যুর
ছয়মাস পর জানাযা পড়া কেমন?
উত্তর – প্রয়োজনে ছয়মাস বা ততোধিক
সময় দেরি করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ১১ – হজে গমনকরী যে ব্যক্তির হজ
নষ্ট হয়ে গেছে, তার মৃত্যু হলে বিধান কি
?
উত্তর – তার সাথেও শুদ্ধ
হজে গমনকারী ব্যক্তির ন্যায় আচরণ
করা হবে। তাকে তার কাপড়েই
সুগন্ধি ছাড়া মাথা ও মুখ
খোলা রেখে কাফন দয়া হবে।
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত
আছে যে, জনৈক হাজি বাহন
হতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাহাবিদেরকে বললেন,
‏« ﺍﻏﺴﻠﻮﻩ ﺑﻤﺎﺀ ﻭﺳﺪﺭ ﻭﻛﻔﻨﻮﻩ ﻓﻲ ﺛﻮﺑﻴﻪ ﻭﻻ ﺗﺤﻨﻄﻮﻩ ﻭﻻ
ﺗﺨﻤﺮﻭﺍ ﻭﺟﻬﻪ ﻭﻻ ﺭﺃﺳﻪ ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺒﻌﺚ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﻣﻠﺒﻴﺎ ‏» ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“তাকে কুলপাতা মিশ্রিত
পানি দ্বারা গোসল দাও, এহরামের
দু’কাপড়ে কাফন দাও এবং তার মাথা ও মুখ
খোলা রাখ, কেননা সে কিয়ামতের দিন
তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে”। (বুখারি ও
মুসলিম)
প্রশ্ন ১২ – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণী ব্যক্তির উপর
জানাযার নামাজ কেন পড়তেন না?
উত্তর – ইসলামের শুরুতে ঋণ
গ্রহণে নিরুৎসাহী করা ও গৃহিত ঋণ দ্রুত
পরিশোধের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পন্থা অবলম্বন
করেছিলেন। পরবর্তীতে তা রহিত
হয়ে যায়, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণমুক্ত, ঋণগ্রস্ত
সকলের উপর জানাযা পড়তেন।
প্রশ্ন ১৩ – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻭﺃﻧﺘﻢ ﺷﻬﺪﺍﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﺭﺿﻪ‏»
“তোমরা আল্লাহর জমিনে তার সাক্ষী”।
উল্লেখিত হাদিসটির ব্যাখ্যা কি?
উত্তর – এ হাদিসটি সে ব্যক্তির জন্য
প্রযোজ্য যে তার ভাল-মন্দ সব কিছু
মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেয়,
কাজেই মানুষ তার কর্মের উপর
সাক্ষী হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
বাণী দ্বারা নিজ উম্মতদিগকে মন্দকাজ
করা ও তা প্রকাশে বারণ করেছেন
এবং ভাল কাজ করা ও তা প্রকাশের
প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
প্রশ্ন ১৪- জীবিতদের কোন আমল মৃতদের
নিকট পৌঁছে কি?
উত্তর – যেসব আমল মৃতদের নিকট পৌঁছার
কথা হাদিসে এসেছে সে সব আমল
পৌঁছে যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
‏«ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﺍﻧﻘﻄﻊ ﻋﻤﻠﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺛﻼﺙ : ﺻﺪﻗﺔ ﺟﺎﺭﻳﺔ
ﺃﻭ ﻋﻠﻢ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ﺃﻭ ﻭﻟﺪ ﺻﺎﻟﺢ ﻳﺪﻋﻮﻟﻪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“যখন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন তার
সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি ব্যতীত:
সদকায়ে জারিয়াহ অথবা মানুষের উপকার
হয় এমন এলেম অথবা নেক সন্তান যে তার
জন্য দো‘আ করে”। (মুসলিম)
এ ছাড়া সাদকাহ, দোয়া, হজ, ওমরাহ
ইত্যাদি মৃতের নিকট পৌঁছার
কথা হাদিসে এসেছে। কিন্তু সালাত
সিয়াম কোরআন তিলাওয়াতে তওয়াফ
ইত্যাদি মৃতদের নিকট পৌঁছার কোন প্রমাণ
নেই, তাই এগুলো পরিহার করা উচিৎ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
‏« ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻋﻤﻼ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“যে এমন কোন কাজ করল যা আমাদের
আদর্শ মোতাবেক নয়, তা পরিত্যক্ত”।
(মুসলিম)
প্রশ্ন ১৫ – মৃতরা জীবিতদের কতক আমল
দ্বারা উপকৃত হবে আর কতক আমল
দ্বারা হবে না, এর প্রমাণ কি?
উত্তর – এসব বিষয় ওহী নির্ভর,
এখানে মানুষের ধারণা বা অনুমানের
কোন অবকাশ নেই। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ‏» ‏(ﻣﺘﻔﻖ
ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“আমাদের দ্বীনে যে এমন কিছু আবিষ্কার
করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যক্ত”।
(বুখারি ও মুসলিম)
প্রশ্ন ১৬ – মৃত ব্যক্তিরা জীবিত নিকট
আত্মীয়দের আমল সম্পর্কে অবগত হন কি?
উত্তর – আমার জানামতে শরি‘আতে এর
কোন প্রমাণ নেই।
প্রশ্ন ১৭ – ধর্মযুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন
কাফেরকে গালি দেয়া যাবে কি?
উত্তর – যদি কোন কাফের ইসলামের
বিরোধীতা বা ইসলামের
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি
লাভ করে,
তাহলে তাকে গালি দেয়া শরিয়ত সম্মত।
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের
একজামা’ত যেমন আবুজাহেল, ওতবা ইবন
রাবিয়া, শায়বা ইবন রবিয়ার উপর অভিশাপ
করেছেন।
প্রশ্ন ১৮ – বিপদের সময় শোকর
করা কি ওয়াজিব?
উত্তর – বিপদের সময় সবর করা ওয়াজিব,
কিন্তু তার উপর সন্তুষ্ট থাকা ও শোকর
করা মুস্তাহাব। এখানে তিনটি স্তর
রয়েছে, (ক) ধৈর্যধরণ, এটা ওয়াজিব। (খ)
বিপদের উপর সন্তুষ্ট থাকা, এটা সুন্নত। (ঘ)
বিপদের উপর শুকরিয়া আদায় করা, এটাই
সর্বোত্তম।
প্রশ্ন ১৯ – অনেক মেডিকেল
কলেজগুলোতে দক্ষিণ
এশিয়া হতে গবেষণার জন্য লাশ আনা হয়
এবং পরীক্ষা করার জন্য লাশ কাটা-
ছেড়া করা হয়, শরিয়ত দৃষ্টে এ কাজ
কেমন?
উত্তর – লাশটি যদি এরূপ কাফের
সম্প্রদায়ের হয় যাদের সাথে নিরাপত্তার
কোন চুক্তি নেই তাহলে বৈধ, অন্যথায়
নয়।
প্রশ্ন ২০ – সন্ধেহভাজন মৃত ব্যক্তির অঙ্গ
বিচ্ছেদ করা কেমন?
উত্তর – শরিয়ত সম্মত
কারণে করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ২১ –
জানাযা নিয়ে দ্রুতচলা কি সুন্নত?
উত্তর –
জানাযা নিয়ে সাধ্যানুযায়ী দ্রুতচলা
সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺃﺳﺮﻋﻮﺍ ﺑﺎﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ﻓﺈﻥ ﺗﻚ ﺻﺎﻟﺤﺔ ﻓﺨﻴﺮ ﺗﻘﺪﻣﻮﻧﻬﺎ ﺇﻟﻴﻪ
ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺳﻮﻯ ﺫﻟﻚ ﻓﺸﺮ ﺗﻀﻌﻮﻧﻪ ﻋﻦ ﺭﻗﺎﺑﻜﻢ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতচল,
যদি পূণ্যবান হয়
তাহলে তোমরা তাকে ভাল পরিণতির
দিকে দ্রুত পৌঁছে দিলে, আর
যদি পাপী হয়,
তাহলে একটি মন্দবস্তুকে তোমাদের কাঁধ
থেকে দ্রুত সরালে। (বুখারি)
প্রশ্ন ২২ – জানাযায় দ্রুত করার অর্থ
কি গোসল ও নামাজে দ্রুত করা?
উত্তর – এর অর্থ হচ্ছে চলার পথে দ্রুত চলা,
কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয় হিসেবে গোসল,
কাফন, দাফন ও নামাজ সব এর অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ২৩ – উম্মে আতিয়া সূত্রে বর্ণিত
হাদিসে রয়েছেঃ
‏« ﻧﻬﻴﻨﺎ ﻋﻦ ﺍﺗﺒﺎﻉ ﺍﻟﺠﻨﺎﺋﺰ ‏»
“আমাদেরকে জানাযার
সাথে যেতে নিষেধ করা হয়েছে”। এ
হাদিসের ব্যাখ্যা কি?
উত্তর – নিষেধের উদ্দেশ্য
হচ্ছে গোরস্থানে যাওয়া।
জানাযা পড়তে নিষেধ করা হয়নি,
জানাযা পুরুষদের জন্য যেমন বৈধ
মহিলাদের জন্যও বৈধ। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের
যুগে মহিলারাও রাসূলের
সাথে জানাযায় অংশ গ্রহণ করতেন।
প্রশ্ন ২৪ – জানাযার সাথে গমনকারীদের
জন্য সুন্নত তরিকা কি?
উত্তর – জানাযার সাথে গমনকারীদের
জন্য সুন্নত হচ্ছে পুরুষরা যতক্ষণ না কাঁধ
থেকে লাশ জমিনে না রাখবে, কেউ
বসবে না। আর প্রত্যাবর্তনের
ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে যতক্ষণ না লাশ দাফন
শেষ হয় অপেক্ষা করবে, যাতে সালাত ও
দাফন উভয় আমলের পরিপূর্ণ নেকি লাভ
করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﺗﺒﻊ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻜﺎﻥ ﻣﻌﻬﺎ ﺣﺘﻰ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻭ
ﻳﻔﺮﻍ ﻣﻦ ﺩﻓﻨﻬﺎ ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺮﺟﻊ ﺑﻘﻴﺮﺍﻃﻴﻦ ﻛﻞ ﻗﻴﺮﺍﻁ ﻣﺜﻞ ﺟﺒﻞ
ﺃﺣﺪ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায়
অংশ গ্রহণ করে, অতঃপর তার সাথেই
থাকে যতক্ষণ না তার উপর সালাত আদায়
করা হয় ও তার দাফন শেষ হয়,
সে সে দু’কিরাত পূণ্য
নিয়ে বাড়ি ফিরবে, প্রত্যেক কিরাত ওহুদ
পাহাড়ের সমান”। (বুখারি)
প্রশ্ন ২৫ – মৃত
ব্যক্তিকে কিভাবে কবরে রাখবে?
উত্তর – আব্দুল্লাহ ইবন জায়েদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত হাদিস
প্রমাণ করে যে, মৃত ব্যক্তিকে পায়ের
দিক হতে প্রবেশ করিয়ে মাথার
দিকে টেনে আনবে এবং কেবলামুখী
করে ডান
পাঁজরে শোয়াবে এবং নিম্নের দো‘আ
পড়বেঃ
‏« ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﻣﻠﺔ ﺭﺳﻮﻝِ ﻟﻠﻪ ‏»
“আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আদর্শ মোতাবেক রাখছি”। (আবুদাউদ)
প্রশ্ন ২৬ – কাফেরের
জানাযা দেখে দাঁড়ানো যাবে কি?
উত্তর – হ্যাঁ, কাফেরের জানাযা দেখেও
দাঁড়ানো যাবে, কারণ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇﺫﺍ ﺭﺃﻳﺘﻢ ﺍﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ‏» ﻭﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺎﺕ :
ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻬﺎ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻳﻬﻮﺩﻱ ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﺃﻟﻴﺴﺖ
ﻧﻔﺴﺎ ‏» ﻭﻓﻲ ﻟﻔﻆ ‏« ﺇﻧﻤﺎ ﻗﻤﻨﺎ ﻟﻠﻤﻼﺋﻜﺔ ‏» ﻭﻓﻲ ﻟﻔﻆ ‏« ﺇﻥ
ﻟﻠﻤﻮﺕ ﻟﻔﺰﻋﺎ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ‏)
“যখন তোমরা জানাযা দেখ, তখন
তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। অন্য এক বর্ণনায়
আছে, সাহাবগণ বললেনঃ “হে আল্লাহর
রাসূল! এটাতো এক ইয়াহূদীর জানাযা”।
তিনি বললেনঃ “এটা কি প্রাণী নয়?” অন্য
বর্ণনায় আছে যে,
“আমরা তো ফেরেশতাদের
সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি”। অন্য
আরেকটি বর্ণনায় আছে যে, “মৃত্যুর
রয়েছে বিভীষিকা রয়েছে”। (আহমদ)
প্রশ্ন ২৭ – কোন মুসলিম মসজিদে অবস্থান
করছেন, এমতাবস্থায় কোন
জানাযা যাইতে দেখলে দাঁড়াতে হবে
কি?
উত্তর – হাদিসের বাহ্যিক
দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে এমতাবস্থায়ও
দাঁড়ানো মুস্তাহাব। না দাঁড়ালেও
সমস্যা নেই কারণ এটা সুন্নত বা ওয়াজিব
নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একসময়
জানাযা দেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবার
অন্য সময় দাঁড়াননি।
জানাযা বিষয়ে প্রশ্নাবলি
প্রশ্ন ১ – পুরুষদের কবর কতটুকু গভীর হবে আর
নারীদের কবর কতটুকু গভীর হবে?
উত্তর – উত্তম হচ্ছে উভয়ের কবর
মানবাকৃতির অর্ধেক পরিমাণ গভীর করা,
যেন হিংস্রপ্রাণীর আক্রমণ হতে নিরাপদ
থাকে।
প্রশ্ন ২ – পাহাড়ি এলাকায়
মৃতব্যক্তিকে পাহাড়ের গর্তে বা গুহায়
দাফন করা হয় এটা কেমন?
উত্তর – সম্ভব হলে কবর খনন
করা এবং কাচা ইটের দেয়াল
তৈরি করে দেয়া উত্তম। আর
যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে পাহাড়ের
গুহায় মাটি দেবে এবং হিংস্রজন্তু
হতে নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করবে। এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তালা বলেন,
﴿ﻓَﭑﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﭐﺳۡﺘَﻄَﻌۡﺘُﻢۡ ١٦﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ 16:‏]
“অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয়
কর”। সূরা আত্তাগাবুনঃ (১৬)
প্রশ্ন ৩ – কাচা ইট পাওয়া না গেলে পাথর
ব্যাবহার করা যাবে কি?
উত্তর – বর্ণিত আয়াতের দ্বারা বুঝা যায়
যে কাচা ইট পাওয়া না গেলে কাঠ,
পাথর, পাত ইত্যাদি ব্যবহার
করা যেতে পারে, যার দ্বারা মৃতের
সুরক্ষা হয়, অতঃপর মাটি দেবে। আল্লাহ
তালা বলেছেন,
﴿ﻓَﭑﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﭐﺳۡﺘَﻄَﻌۡﺘُﻢۡ ١٦﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ 16:‏]
“অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয়
কর”। সূরা আত্তাগাবুনঃ (১৬)
অনুরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺇﺫﺍ ﺃﻣﺮﺗﻜﻢ ﺑﺄﻣﺮ ﻓﺄﺗﻮﺍ ﻣﻨﻪ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﻌﺘﻢ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ‏)
“আমি যখন তোমাদেরকে কোন
বিষয়ে নির্দেশ করি, তোমরা তোমাদের
সাধ্যানুযায়ী তা বাস্তবায়ন কর”। (বুখারি)
প্রশ্ন ৪ – অনেক জায়গায় দেখা যায় যে,
নারী-পুরুষের কবর সহজে পার্থক্য করার
জন্য, নারীদের জন্য একধরনের চিহ্ন আর
পুরুষদের জন্য অন্য ধরনের চিহ্ন ব্যবহার
করা হয়। এ ধরনের কাজের কোন
ভিত্তি আছে কি?
উত্তর – আমার জানামতে এর কোন
ভিত্তি নেই, সুন্নত হচ্ছে দাফন, উচ্চতা ও
গভীরতা নারী-পুরুষ সকলের জন্য সমান
হবে।
প্রশ্ন ৫ – সহজে পার্থক্য করার
সুবিধার্থে গোরস্থানের কিছু অংশ
পুরুষদের জন্য আর কিছু অংশ মহিলাদের জন্য
নির্দিষ্ট করা কেমন?
উত্তর – আমার জানা মতে এর কোন
ভিত্তি নেই। শরিয়ত সম্মত নিয়ম হল সমগ্র
গোরস্থান সকলের জন্য সমপর্যায়ের
থাকবে, এটাই সকলের জন্য সহজতর উপায়।
ইসলামের ঊষালগ্ন হতে অধ্যাবদি এ
পদ্ধতিই চলে আসছে। মদিনার ‘জান্নাতুল
বাকি’ নামক গোরস্থান নারী-পুরুষের জন্য
সমান ছিল, আর সমস্ত কল্যাণ ও মঙ্গল
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাগণের
অনুসরণের মধ্যেই বিদ্যমান।
প্রশ্ন ৬ – সহজে পরিচিতির জন্য অনেক
গোরস্থানের প্রতিরক্ষা দেয়ালে নম্বর
লাগানো হয় এটা কেমন?
উত্তর – অনেক ক্ষেত্রে কবরের উপর
লিখার কারণে কবর কেন্দ্রিক
ফেতনা সৃষ্টি হয়, তাই কবরের উপর
লিখা সম্পুর্ণ নিষেধ ও না-জায়েয। আর
প্রতিরক্ষা দেয়ালে নম্বর
লাগানো নিষেধ হওয়া সম্পর্কে আমার
নিকট যদিও কোন প্রমাণ নেই, তবুও বলব
যেহেতু এটাও কবরের উপর লিখার সাদৃশ্য
তাই এটা বর্জন করা উচিৎ।
প্রশ্ন ৭ – অনেক
সান্ত্বনা প্রদানকারীকে দেখা যায় যে,
সহজে সান্ত্বনা দেয়ার
জন্যে তারা শোকাহত লোকদেরকে কবর
হতে দূরে এক জায়গায় দাঁড়
করিয়ে তাদের সাথে কথা-বার্তা বলে,
এরূপ করা কেমন?
উত্তর – আমার
জানামতে এরূপকরাতে কোন সমস্যা নেই,
কারণ এতে সান্ত্বনা জ্ঞাপন সহজ হয়।
প্রশ্ন ৮ – মুমূর্ষু বা মৃত
মহিলাদেরকে মেহেদী দেয়া কেমন?
উত্তর – আমার জানা মতে এর কোন
ভত্তি নেই।
প্রশ্ন ৯ – মৃত ব্যক্তিকে মিসওয়াক
করানো কেমন?
উত্তর – আমার জানামতে এর কোন
ভিত্তি নেই, শরি‘আতের বিধান
হচ্ছে মৃতকে অযু করানো, অযু করানোর সময়
যখন কুলি করানো হয় তখন যদি জীবিতদের
ন্যায় তাকেও মিসওয়াক করিয়ে দেয়া হয়,
তাহলে করানো যেতে পারে।
প্রশ্ন ১০ – উপস্থিত লোকজন মুমূর্ষু
ব্যক্তিকে কিভাবে কিবলামুখী করবে?
উত্তর – ডানপাশে শোয়াবে এবং মুখমন্ডল
কিবলামুখী করে দেবে, যেমনটি করা হয়
কবরে শোয়াবার সময়।
প্রশ্ন ১১ – মৃতের উপর কোরআন মজিদ
রেখে দেয়া কেমন?
উত্তর – এ ধরণের কাজ শরিয়ত সম্মত নয়, শরি
‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই,
বরং এগুলো বিদ‘আত।
প্রশ্ন ১২ – জানাযার নামাজ মাঠে পড়াই
উত্তম বলে সুবিদিত, তাই গোরস্থানের
একাংশ জানাযার জন্য নির্দিষ্ট করব
না ঈদের মাঠেই জানাযা পড়ব?
উত্তর – জানাযার জন্য যদি নির্ধারিত
কোন স্থান থাকে তাহলে সেখানেই
পড়বে অন্যথায় নারী-পুরুষ
নির্বিশেষে সকলের জানাযা মসজিদেই
পড়বে। জানাযার নামাজ
মসজিদে পড়তে কোন সমস্যা নেই,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বায়জা নামী ব্যক্তির দু’পুত্রের
জানাযা মসজিদেই পড়েছেন।
প্রশ্ন ১৩ – কোন মুসল্লি নিজ মহল্লায় ফরজ
নামাজ পড়লেন অতঃপর জানাযার জন্য
গিয়ে দেখলেন যে, ঐ মসজিদে এখনও
ফরজ নামাজের জামাত হয়নি। এমতাবস্থায়
সে জানাযার জন্য
অপেক্ষা করবে না অন্যদের
সাথে নামাজে শরিক হবে?
এমনিভাবে যে ব্যক্তি এত বিলম্বে আসল
যে, নামাজ তিন রাকাত হয়ে গেছে,
যদি সে জামাতে শরিক হয় তাহলে তার
জানাযাও ছুটে যাওয়ার
সম্ভাবনা আছে এমতাবস্থায়
সে কি করবে?
উত্তর – কোন মুসলিম
যদি মসজিদে এসে দেখতে পায় যে,
মুসল্লিগণ জামাতের সহিত নামাজ
পড়ছে তখন সেও জামাতে শরিক
হয়ে যাবে, এ নামাজ তার জন্য নফল হবে।
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুজর রাদিয়াল্লাহু
আনহুকে বলেছিলেন,
‏« ﺻﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻟﻮﻗﺘﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺃﻗﻴﻤﺖ ﻭﺃﻧﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺼﻞ
ﻣﻌﻬﻢ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻟﻚ ﻧﺎﻓﻠﺔ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“হে আবুজর, সময়মত নামাজ পড়,
যদি নামাজের ইকামত হয় আর তুমি তখন
মসজিদে থাক, তখন তাদের সাথেও
নামাজ পড়, এটা তোমার জন্য নফল হবে”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিদায়
হজে মিনায় অবস্থান করছিলেন,
দু’ব্যক্তিকে রাসূলের নিকট আনা হল
যারা জামাতে অংশগ্রহণ করে নেই,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,
‏«ﻣﺎ ﻣﻨﻌﻜﻤﺎ ﺃﻥ ﺗﺼﻠﻴﺎ ﻣﻌﻨﺎ ؟‏» ﻓﻘﺎﻻ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ
ﺻﻠﻴﻨﺎ ﻓﻲ ﺭﺣﺎﻟﻨﺎ . ﻗﺎﻝ : ‏« ﻻ ﺗﻔﻌﻼ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻤﺎ ﻓﻲ
ﺭﺣﺎﻟﻜﻤﺎ ﺛﻢ ﺃﺗﻴﺘﻤﺎ ﻣﺴﺠﺪ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﺼﻠﻴﺎ ﻣﻌﻬﻢ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻟﻜﻢ
ﻧﺎﻓﻠﺔ ‏»
“আমাদের সাথে তোমরা কেন নামাজ
পড়নি” তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল,
আমরা আমাদের দলের সাথে নামাজ
পড়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে বললেন: “এরূপ কর না, যখন
তোমরা তোমাদের তাবুতে নামাজ
পড়ে নাও, অতঃপর কোন মসজিদের
জামাতে এসে উপস্থিত হও, তখন তাদের
সাথেও নামাজ পড়, এটা তোমাদের জন্য
নফল হবে”।
প্রশ্ন ১৪ – মৃত ব্যক্তি যদি এই মর্মে অসিয়ত
করে যে, তার জানাযার নামাজ অমুক
ব্যক্তি পড়াবে, তাহলে ইমামতির জন্য
অসিয়তকৃত ব্যক্তি উত্তম
হবে না নির্ধারিত ইমাম?
উত্তর – অসিয়তকৃত ব্যক্তির তুলনায়
মসজিদের নির্ধারিত ইমামই উত্তম, কারণ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻻ ﻳﺆﻣﻦ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻲ ﺳﻠﻄﺎﻧﻪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বের
জায়গায় ইমামতি করবে না”। (মুসলিম)
প্রশ্ন ১৫ – ইমামের সামনে জানাযার জন্য
লাশ রাখার নিয়ম কি?
উত্তর – মৃত পুরুষের লাশ
এভাবে রাখবে যে, লাশের মাথা যেন
ইমাম বরাবর হয়, আর মৃত মহিলার লাশ
এভাবে রাখবে যে, লাশের কোমর যেন
ইমাম বরাবর হয়। এপদ্ধতিই সহিহ হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত। আর যদি লাশ নারী-পুরুষ
উভয়ের হয়, যেমন নারী, পুরুষ ও বাচ্ছা,
তাহলে ইমামের সামনে প্রথমে পুরুষের
লাশ, অতঃপর বালকের লাশ, অতঃপর
মহিলার লাশ, অতঃপর বালিকার লাশ
রাখবে। লাশ রাখার ক্ষেত্রে পুরুষের
মাথা বরাবর মহিলাদের কোমর হবে, যেন
সকল লাশের অবস্থান ইমামের
সামনে শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে হয়।
প্রশ্ন ১৬ – এহরামরত মহিলার
লাশকে কিভাবে কাফন পড়াবে?
উত্তর – অন্যান্য মহিলাদের ন্যায় তাকেও
ইযার (দেহের নিম্নাংশের পরিধেয়
বস্ত্র), উড়না, জামা ও দু’চাদর দ্বারা কাফন
পড়াবে।
মাথা ঢেকে দেবে তবে নেকাব
ব্যতীত। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহরামত মৃত
মহিলাকে নেকাব পড়াতে নিষেধ
করেছেন, যেহেতু সে এহরামরত তাই
সুগন্ধিও লাগাবে না।
প্রশ্ন ১৭ – ভিডিওর মাধ্যমে মৃতের গোসল
ও কাফন দাফন শিখানো কেমন?
উত্তর – বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত
যে, ছবি অঙ্কন করা নিষেধ,
ছবি অঙ্কনকারীগণ অভিশপ্ত, তাই ভিডিও
ছাড়া অন্য উপায়ে মৃতের গোসল ও কাফন-
দাফন শিখাবে।
প্রশ্ন ১৮ – শহরের ভেতর অবস্থিত
গোরস্থান ঈদগাহের
একেবারে নিকটে এমতাবস্থায় ঈদগাহ
পরিবর্তন করার হুকুম কি?
উত্তর – এটা আদালতের কাজ, আদালত
বিবেচনা করবে এ অবস্থায় শরি‘আতের
দৃষ্টিতে কি করা উচিৎ।
প্রশ্ন ১৯ – গোরস্থানের
গেটে গোরস্থানে প্রবেশের দো‘আ
লেখার হুকুম কি?
উত্তর – আমার জানামতে এর কোন
ভিত্তি নেই। এর বিপরীতে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের
উপর কিছু লিখতে নিষেধ করেছেন
বলে প্রমাণিত, তা ছাড়া কবরের গেটের
উপর লেখার অনুমোদন, কবরের উপর
লেখার প্রচলনকে প্রসারিত করবে, তাই
কবরের গেটের উপর দো‘আ
ইত্যাদি লেখা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন ২০ – কবরের উপর কাচা খেজুর
গাছের ডালা স্থাপন করার হুকুম কি?
উত্তর – এটা শরিয়ত সম্মত নয় বরং বিদআত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ
জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, অমুক
দু’কবরে আযাব হচ্ছে, তাই তিনি ঐ
দু’কবরের উপর খেজুরের ডালা স্থাপন
করেছেন, যাতে কবর আযাব বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া অন্য কোন কবরের উপর
তিনি তা স্থাপন করেননি। এতে বুঝাগেল
যে এ কাজটি ঐ দু’কবরের সাথে সীমাবদ্ধ
ছিল, তাই অন্য কোথায় এ কাজ করা বৈধ
হবে না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻋﻤﻼ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“যে এমন কোন কাজ করল
যে বিষয়ে আমাদের আদর্শ নেই,
তা পরিত্যক্ত”। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ‏» ‏(ﻣﺘﻔﻖ
ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“আমাদের এ দ্বীনে যে নতুন কিছুর
উদ্ভাবন করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়,
তা পরিত্যক্ত”। (বুখারি ও মুসলিম)
বর্ণিত হাদিসদ্বয় একথার প্রমাণ যে,
কবরের উপর লিখা, ফুল
দেয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ না-জায়েয।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনা করতে,
কবরের উপর ঘর বানাতে, বসতে ও
লিখতে নিষেধ করেছেন।
প্রশ্ন ২১ – মুক্তাদির
যদি জানা না থাকে যে, মৃত
ব্যক্তি নারী কি পুরুষ, এমতাবস্থায়
সে কিভাবে দো‘আ পড়বে?
উত্তর – দোয়ার বিষয়টি ব্যাপক, তাই
এখানে যদি পুংলিঙ্গের
স্থলে স্ত্রীলিঙ্গ আর স্ত্রীলিঙ্গের
স্থলে পুংলিঙ্গের সর্বনাম ব্যবহার করা হয়
তাহলে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ২২ – বালকদের জানাযায় কোন
দো‘আ পড়বে?
উত্তর – বড়দের জন্য যে দো‘আ পড়া হয়
বালকদের জন্য অনুরূপ দোয়াই পড়বে। হ্যাঁ,
তাদের জন্য সহিহ হাদিস
দ্বারা যে অতিরিক্ত দো‘আ প্রমাণিত,
তা হচ্ছেঃ
‏« ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﺟﻌﻠﻪ ﺫﺧﺮﺍ ﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻪ ﻭﻓﺮﻃﺎ ﻭﺷﻔﻴﻌﺎ ﻣﺠﺎﺑﺎ ﺍﻟﻠﻬﻢ
ﺃﻋﻈﻢ ﺑﻪ ﺃﺟﻮﺭﻫﻤﺎ ﻭﺛﻘﻞ ﺑﻪ ﻣﻮﺍﺯﻳﻨﻬﻤﺎ ﻭﺃﻟﺤﻘﻪ ﺑﺼﺎﻟﺢ ﺳﻠﻒ
ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻭﺍﺟﻌﻠﻪ ﻓﻲ ﻛﻔﺎﻟﺔ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ
ﻭ ﻗﻪ ﺑﺮﺣﻤﺘﻚ ﻋﺬﺍﺏ ﺍﻟﺠﺤﻴﻢ ‏»
“হে আল্লাহ, এই বাচ্চাকে তার পিতা-
মাতার জন্য অগ্রবর্তী নেকী ও
সযত্নে রক্ষিত সম্পদ হিসাবে কবুল কর
এবং তাকে এমন সুপারিশকারী বানাও
যার সুপারিশ কবুল করা হয়। হে আল্লাহ, এই
বাচ্চার দ্বারা তার পিতা-মাতার সওয়াব
আরো বৃদ্ধি কর। এর দ্বারা তাদের নেকীর
পাল্লা আরো ভারী করে দাও। আর
একে নেককার মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত কর
এবং তাকে ইবরাহীম আলাইহিস
সালামের যিম্মায় রাখ। তাকে তোমার
রহমতের দ্বারা দোযখের আযাব
হতে বাঁচিয়ে দাও”। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও
বলেছেন,
‏« ﺍﻟﻄﻔﻞ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻳﺪﻋﻰ ﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻪ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ‏)
“বাচ্চার উপর নামাজ পড়া হবে, কিন্তু দো
‘আ তার পিতা-মাতার জন্য করা হবে”।
(আহমদ)
প্রশ্ন ২৩ – মৃত যদি কোন ভিন্ন দেশের
শ্রমিক হয় এবং তার অভিভাকগণ লাশের
দাবি করে, কিন্তু লাশ পৌঁছানোর প্রচুর
খরচের সাথে সাথে তাকে দীর্ঘদিন
বক্সে রাখতে হয়, যার কারণে তার
নাড়িভুড়ি পর্যন্ত গলে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকে, এমতাবস্থায় কফিল
কি তাকে মৃত্যুর স্থানেই দাফন করবে,
না অভিভাকদের দাবি অনুযায়ী তার
দেশে পাঠিয়ে দেবে?
উত্তর – জীবিত-মৃত সর্বাবস্থায়
প্রতিটি মুসলিম মর্যাদার অধিকারী, তাই
কোন মুসলমানের লাশ স্থান্তরের
মধ্যে যদি প্রশ্নে বর্ণিত সমস্যার
সম্ভাবনা থাকে তাহলে কোন
অবস্থাতেই একজন মুসলমানের লাশ
স্থান্তর করা জায়েয হবে না।
যেখানে তার মৃত্যু হয়েছে সেখানেই
তার দাফন হবে, এটাই শরিয়ত স্বীকৃত নিয়ম।
হ্যাঁ, যদি তার লাশ স্থানন্তরের উপর
ধর্মীয় কোন কল্যাণ নির্ভরশীল হয়,
এবং স্থানন্তর না করলে মুসলিমগণ
তা হতে বঞ্চিত হবে, আর স্থানন্তর
দ্বারা প্রশ্নে বর্ণিত লাশ বিকৃতির
সমস্যাও না-থাকে তাহলে স্থানন্তর
করা যেতে পারে।
হ্যাঁ, যদি আরব উপদ্বীপে কোন
কাফেরের মৃত্যু হয় তাহলে অবশ্যই তার
লাশ স্থানান্তর করতে হবে। কোন
অবস্থাতেই তাকে আরব উপদ্বীপে দাফন
করা জায়েয হবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অমুসলিদেরকে সেখান থেকে বের
করে দেয়ার জন্য অসিয়ত করেছেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
‏«ﻻﻳﺠﺘﻤﻊ ﻓﻴﻬﺎ ﺩﻳﻨﺎﻥ ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ‏)
“আরব উপদ্বীপে কখনো দু’টি ধর্ম একত্র
হতে পারে না”। (আহমদ)
প্রশ্ন ২৪ – জনৈক মহিলা কোন পারিশ্রমিক
ছাড়াই মৃতদের গোসল দিতেন,
যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়
কাজ, তবুও তিনি কাজটি এ জন্য
ছেড়ে দিয়েছেন যে, এ কাজের
দ্বারা মানুষ নির্বোধ ও নির্দয় হয়ে যায়।
তার এ মন্তব্যের উপর আমরা একমত পোষণ
করব কি না?
উত্তর – মুসলিমদের প্রয়োজনের
কথা বিবেচনা করে এ মহিলার জন্য উচিৎ
যে, তিনি নিয়মিতভাবে মৃতদের গোসল
দিয়ে যাবেন এবং আল্লাহর নিকট
হতে পুরুস্কারের দৃঢ় আশা রাখবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺣﺎﺟﺔ ﺃﺧﻴﻪ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺣﺎﺟﺘﻪ‏» ‏(ﻣﺘﻔﻖ
ﻋﻠﻴﻪ ‏)
“যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরো করে,
আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরো করবেন”।
(বুখারি ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,
‏« ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﻋﻮﻥ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻓﻲ ﻋﻮﻥ
ﺃﺧﻴﻪ‏» ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ‏)
“আল্লাহ ততক্ষণ বান্দার
সাহায্যে লেগে থাকেন যতক্ষণ
বান্দা তার ভাইয়ের
সাহয্যে লেগে থাকে”। (মুসলিম)
প্রশ্ন ২৫ – মৃতের জানাযার নামাজ পড়ার
জন্য সফর করার হুকুম কি?
উত্তর– জানাযার জন্য সফর
করা যেতে পারে, কোন সমস্যা নেই।
দরুদ ও সালাম নাযিল হোক মুহাম্মদ সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবার
এবং সমস্ত সাহাবি ও মুমিনদের উপর।
সংকলন: শায়খ আব্দুল আযীয ইব্ন আব্দুল্লাহ
ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহ
অনুবাদক: শিহাবউদ্দিন হোসাইন
সম্পাদনা: সানাউল্লাহ নজির আহমদ – ড. আবু
বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ,
সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Translate