Wednesday, March 3, 2021

রাসুলুল্লাহ সঃ এর জীবনী পার্ট -এক

 হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) জীবনের কাহিনিমুহাম্মাদ (সঃ) আলাইহিঅসাল্লাম জন্ম:—-হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশগোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন।প্রচলিত ধারনা মোতাবেক, উনার জন্ম ৫৭০খৃস্টাব্দে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াটতার পুস্তকে ৫৭০ সনই ব্যবহার করেছেন। তবেউনার প্রকৃত জন্মতারিখবের করা বেশ কষ্টসাধ্য।তাছাড়া মুহাম্মদ(সা.)নিজে কোনো মন্তব্যকরেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমানপাওয়া যায়নি. এজন্যই এ নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধরয়েছে। এমনকি জন্মমাস নিয়েও ব্যপকমতবিরোধ পাওয়া যায় । [৩] যেমন, এক বর্ণনা মতে,উনার জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২ শে এপ্রিল।সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবংমোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এইতথ্য বেরিয়েএসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিকদৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাইহোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধেরঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ারসিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়েকারো মাঝে দ্বিমত নেই।শৈশব ও কৈশোর কালতত্কালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমিরমুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদেরসুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মেরপরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিতবেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্টসময় পর আবার ফেরত নিতেন। এই রীতি অনুসারেমোহাম্মদকেও হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপরনাম হালিমা সাদিয়া)হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এই শিশুকেঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরেআসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালনকরতে সমর্থ হন। তখনকার একটি ঘটনাউল্লেখযোগ্য – শিশু মোহাম্মদ কেবল হালিমারএকটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপরদুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছরলালনপালনের পর হালিমা শিশু মোহাম্মদকে আমিনারকাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায়মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মাদকে হালিমারকাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকেফিরে পেতে। এতেতার আশা পূর্ণ হল। ইসলামীবিশ্বাসমতে এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনাঘটে – একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটিঅংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়েআবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটিইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছেফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনিমায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয়ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। সম্ভবতকোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীরকবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। আমিনা ছেলে,শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০কিলোমিটারপথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন। তিনিমদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পরমক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসেতিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেইমৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুলমোত্তালেব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায়পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদেরদেখাশোনা করতে থাকেন। মোহাম্মদের বয়সযখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান।মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকেমোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান।আবু তালিব ব্যবসায়ীছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরেএকবার সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদের বয়সযখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্যবায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আরনিষেধ করতে পারলেননা। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পরকাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময়আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যেররাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিতআছে, শহরটিতে জারজিস সামেএক খ্রিস্টান পাদ্রীছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিতছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসেকাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এসময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবীহিসেবে চিহ্নিত করেন। ফুজ্জারের যুদ্ধ যখনশুরুহয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ংঅংশগ্রহণ করেন।যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্তব্যথিত হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময়থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন।নবুয়ত-পূর্ব জীবনআরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানতপ্রবণতাএবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুলনামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মাদ এতেযোগদান করেন এবং এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ারক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকারাখেন। বিভিন্ন সূত্রথেকে জানা যায় তরুণ বয়সে মুহাম্মাদের তেমনকোন পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন বলেঅনেকেই উল্লেখ করেছেন। সাধারণত তিনি যেবকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা’দগোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়েতিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন।এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। মুহাম্মাদ অল্পসময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভকরেন। এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধিহয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলাঅর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী।ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবংইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন।মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েতখনখাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকেনিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান।মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদীজার পণ্যনিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।খাদীজামাইছারার মুখে মুহাম্মাদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতারভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসায়েরসফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেওঅবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করারসিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসাবিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তারমনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনেমুহাম্মাদ বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথাবলেন জানাবেন। মুহাম্মাদ তাঁর চাচাদের সাথে কথাবলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময়খাদীজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫।খাদীজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়েকরেননি। খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদের ৬ জন সন্তানজন্মগ্রহণকরে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম, যয়নাব,রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম’, ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ।ছেলে সন্তানদুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদেরমধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করেএবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীরজীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে।মুহাম্মাদের বয়সযখন ৩৫ বছর তখন কা’বা গৃহের পূনঃনির্মাণেরপ্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটিকারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনোইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়।এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ(পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোনগোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিলকোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগকরে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপনছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়েবিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকারএক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যেহত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণকরে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজাদিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তইসবাই মেনে নেবে। পরদিন মুহাম্মাদ সবার প্রথমেকাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্টহয় এবং তাকেবিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আরতার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল। যা হোক এইদায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মাদ অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালাকরেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজহাতেহাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেকগোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকেচাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়েযেতে বলেন এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথরউঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।নবুওয়তপ্রাপ্তিচল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবী মুহাম্মাদনবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ এই সময়েই স্রষ্টা তারকাছে ওহী প্রেরণ করেন। নবুওয়তসম্বন্ধেসবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়আজ-জুহরির বর্ণনায়। জুহরি বর্ণিত হাদীস অনুসারেনবী সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন।ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর নবীপ্রায়ই মক্কারঅদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তাঁরস্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবারদিয়ে আসতেন।এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তারকাছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী নিয়ে আসেন।জিব্রাইল তাঁকে এই পংক্তি কটি পড়তে বলেন:“পাঠকরুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টিকরেছেন। সৃষ্টি করেছেনমানুষকে জমাট রক্তথেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনিকলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষাদিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।[৪]”উত্তরেনবী জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতেজিব্রাইল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগকরেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তুএবারও মুহাম্মাদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশকরেন। এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর মুহাম্মাদপংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। অবর্তীর্ণ হয়কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের প্রথমপাঁচ আয়াত। প্রথম অবতরণের পর নবী এতই ভীতহয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহেপ্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গাজড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাবেন,“আমাকে আবৃত কর”। খাদিজানবীর সকল কথা সম্পূর্ণবিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনেনেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজানিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছেযান। নওফেল তাঁকে শেষ নবী হিসেবেআখ্যায়িত করে। ধীরে ধীরে আত্মস্থ হননবী। তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেনপরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতিরপর তাঁর কাছে দ্বিতীয় বারের মত ওহী আসে।এবার অবতীর্ণ হয়সূরা মুদ্দাস্সির-এর কয়েকটি আয়াত।এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারেআত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ। এই ইসলাম ছিলজীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার জন্যপ্রেরিতএকটি আদর্শ ব্যবস্থা। তাই এর প্রতিষ্ঠার পথছিল খুবই বন্ধুর। এই প্রতিকূলততার মধ্যেই নবীরমক্কী জীবন শুরু হয়।মক্কীজীবনপ্রত্যাদেশ অবতরণের পর নবী বুঝতেপারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকেপুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতেহবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করাব্যাতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোনউপায় ছিলনা। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ওবন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণীপ্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদের আহ্বানে ইসলামগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন খাদিজা। এরপরমুসলিমহন মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেইপ্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময়তার বয়স ছিল মাত্র ১০বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছেদেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরনিয়ে একটি সভা করেন; এইসভায় কেউই তাঁর আদর্শমেনে নেয়নি,এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণকরে, সে হলো আলী। ইসলাম গ্রহণকারীতৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধূ আবুবকর। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারেরকাজ শুরু করেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকেসম্পূর্ণ গোপনে।প্রকাশ্য দাওয়াততিন বছরগোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যেইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারেরসূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল।নবী সাফা পর্বতেরওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেতকরেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়াকোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। কিন্তুএতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায় এবংএই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ওঅত্যাচার শুরু হয়।মক্কায় বিরোধিতারসম্মুখীনবিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নির্যাতন শুরুকরে: প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি,এরপর অপপ্রচার, কুটতর্ক এবং যুক্তি। এক সময়ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টাশুরু হয় যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচকফ্রন্ট গড়ে উঠে। একই সাথে গড়ে তোলা হয়সাহিত্য ও অশ্লীল গান-বাজনার ফ্রন্ট, এমনকি একংপর্যায়ে মুহাম্মাদের সাথে আপোষেরওপ্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ তা মেনেনেননি; কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মতইসলাম পালন করা, সেক্ষেত্র তার ইসলাম প্রতিষ্ঠারলক্ষ্যই ভেস্তে যেতো।ইথিওপিয়ায়হিজরতধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধেসহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবী কিছু সংখ্যকমুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখানথেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনারচেষ্টা করে, যদিও তৎকালীনআবিসিনিয়ার সম্রাটনাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি।গুরুত্বপূর্ণব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণএরপর ইসলামের ইতিহাসেযে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল উমর ইবনুলখাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। নবী সবসময় চাইতেনযেন আবু জেহেল ও উমরের মধ্যে যেকোনএকজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। তার এই ইচ্ছাএতে পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরেরবিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলামপ্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিইতখনও মুখ্য বলে বিবিচেত হচ্ছিল। এরপর একসময়নবীর চাচা হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলামগ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেওপ্রতিষ্ঠিত হয়।একঘরে অবস্থাএভাবে ইসলাম যখনশ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছে তখন মক্কার কুরাইশরামুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার অনুসারীসহ সহ গোটা বনু হাশেম গোত্রকে একঘরে ওআটককরে। তিন বছর আটক থাকার পর তারা মুক্তি পায়।দুঃখের বছর ও তায়েফ গমনকিন্তু মুক্তির পরেরবছরটি ছিল মুহাম্মাদের জন্য দুঃখের বছর। কারণএইবছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রীখাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে নবীমক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপরে অনেকটাইহতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়েএবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (অবশ্যতায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)।কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনিচূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন।এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরেরআঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তুতবুও তিনি হাল ছাড়েননি; নব নব সম্ভবনার কথা চিন্তাকরতে থাকেন।মি’রাজ তথা উর্দ্ধারোহনএমনসময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে এসময় মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামথেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায়যান; এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। কথিতআছে, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষযানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টারসান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশ্ত ওদোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকনকরেন। এই যাত্রা ইতিহাসে মি’রাজ নামে পরিচিত। এইসম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ইঅতিবাহিতহয়নি বলে বলা হয়।মদীনায় হিজরতএরপরআরও শুভ ঘটনা ঘটে। মদীনার বেশকিছু লোকইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে।তারা মূলত হজ্জ্ব করতে এসে ইসলামে দাওয়াতপেয়েছিল। এরা আকাব নামক স্থানে মুহাম্মাদেরকাছে শপথ করে যে তারা যে কোন অবস্থায়নবীকে রক্ষা করবে এবং ইসলামে প্রসারে কাজকরবে। এই শপথগুলো আকাবার শপথ নামেসুপরিচিত।এই শপথগুলোর মাধ্যমেই মদীনায় ইসলামপ্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবংএকসময় মদীনার ১২ টিগোত্রের নেতারা একটিপ্রতিনিধিদল প্রেরণের মাধ্যমে মুহাম্মাদকে(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আসারআমন্ত্রণ জানায়। মদীনা তথা ইয়াসরিবে অনেকআগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্রগোত্র এবং ইহুদীদের সাথে অন্যদের যুদ্ধলেগে থাকে। বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধেসবগুলো গোত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ায় প্রচুররক্তপাতঘটে। এ থেকে মদীনার লোকেরাবুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে, রক্তের বিনিময়েরক্ত নেয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতেপারেনা। এজন্য তাদের একজন নেতা দরকার যেসবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে। এ চিন্তাথেকেই তারা মুহাম্মাদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল,যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকেই তখনও ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেনি। এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কাথেকে হিজরত করে মদীনায় চলে যায়।সবশেষে মুহাম্মাদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিস্টাব্দেমদীনায় হিজরত করেন। তাদের হিজরতের দিনেইকুরাইশরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যদিও তা সফল হয়নি।এভাবেই মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে।মাদানীজীবনমূল নিবন্ধ: মদীনায় মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রেরসাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবেপরিগণিতহত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকমনয়,কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধনহিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হত। এটিতখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তারজন্ম দেয়।ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিনগণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামী পঞ্জিকারবর্ষেরশেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ:After Hijra।স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধানপ্রণয়নমুহাম্মাদ মদীনায় গিয়েছিলেন একজনমধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটিমূল পক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ। তিনি তার দায়িত্বসুচারুরুপে পালন করেছিলেন। মদীনার সকলগোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদীনা সনদস্বাক্ষরকরেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথমসংবিধানহিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।এই সনদের মাধ্যমেমুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণাকরা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিরগোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যেজবাবদিহিতার অনুভুতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয়গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানততিনটি ইহুদী গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনুনাদির)। এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদেস্বাক্ষর করেছিল। এই সনদের মাধ্যমে মদীনাএকটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবংমুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হন তার প্রধান।মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধমদীনায় রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিনখারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রেরধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণকরতে থাকে।মুহাম্মাদ(স)মদীনায় এসেআশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তিস্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণীছিলেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকলমুসলিমদের সম্পত্তি ক্রোক করে। এই অবস্থায়৬২৪ সালে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কারএকটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার উদ্দেশ্যেপাঠায়। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করেঅস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদেরকাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টারপ্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়।আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিকদিয়ে কুরাইশদেরএক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জনকরে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়। মুসলিমদেরমতে এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তাকরেছিলেন। যাহোক, এই সময় থেকেইইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিতে হয়।এতে প্রথম দিকে মুসলিমরা পরাজিত হলেও শেষেবিজয়ীরবেশে মদীনায় প্রবেশ করতে সমর্থহয়। কুরাইশরা বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্তমুহূর্তের নীতিগত দূর্বলতার কারণে পরাজিতেরবেশে মক্কায় প্রবেশ করে। ৬২৭ সালে আবুসুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদীনাআক্রমণ করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধেমুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিতহয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতেপরিণত হয়। ফলেআশেপাশের অনেকগোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষমহয়।মদীনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্ককিন্তু এ সময়মদীনার বসবাসকারী ইহুদীরা ইসলামী রাষ্ট্রেরজন্য হুমকী হয়ে দেখা দেয়। মূলত ইহুদীরাবিশ্বাস করতনা যে, একজন অ-ইহুদী শেষ নবীহতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শমেনে নেয়নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তিবুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)প্রতিটি যুদ্ধেরপরে একটি করে ইহুদী গোত্রের উপরআক্রমণ করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনুকাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদীনাথেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকলইহুদীকে মদীনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।[৫]মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এই ইহুদীবিদ্বেশের দুটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটিধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক[৬]। ধর্মীয় দিক দিয়েচিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবীকেমেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবেচিন্তা করলে, ইহুদীরা মদীনার জন্য একটি হুমকীও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করাহয়।[৭]হুদাইবিয়ার সন্ধিকুরআনে যদিও মুসলিমদেরহজ্জ্বের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ ককরাআছে, তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরাহজ্জ্ব আদায় করতে পারছিল না। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দিব্যদর্শনে দেখতে পানতিনি হজ্জ্বের জন্য মাথা কামাচ্ছেন। এ দেখে তিনিহজ্জ্ব করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬হিজরীসনের শাওয়াল মাসে হজ্জ্বেরউদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মদীনার পথে যাত্রাকরেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাঁধা দেয়।অগত্যামুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামকস্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথেমুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যাইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধিমতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মদীনায়প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদেরবিরুদ্ধে গেলেও মুহাম্মাদ এই চুক্তি সম্পাদনকরেছিলেন।বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্রপ্রেরণরাসূল (সাঃ)সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবেপ্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং পৃথিবীর সব জায়গায়ইসলামের আহ্বান পৌঁছ দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ারসন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলোথেকে আশ্বস্ত হয়ে এ কাজে মননিবেশকরেন। সেসময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলোছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য (the holy romanempire),এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশাসাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের ‘আযীয মুকাউকিস’,ইয়ামামারসর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশপ্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জমাসের শেষদিকে একইদিনে এদেঁর কাছেইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণকরেন।প্রেরিত দূতগণের তালিকাদািহয়া ক্বালবী(রাঃ)কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে।আবদুল্লাহবিন হুযাফা (রাঃ)কে পারস্যসম্রাট পারভেজের কাছে।হাতিব বিন আবূ বুলতা’আ (রাঃ) কে মিশরৈর শাসনকর্তারকাছে।আমর বিন উমাইয়া (রাঃ) কে হাবশার রাজানাজ্জাশীর কাছে।সলীত বিন উমর বিন আবদেশামস (রাঃ) কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।শুজাইবনেওয়াহাব আসাদী (রাঃ)কে গাসসানী শাসক হারিসেরকাছে।শাসকদের মধ্য হতে শুধুমাত্রবাদশাহনাজ্জাসী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণকরেননি।মক্কা বিজয়মূল নিবন্ধ: মুসলমানদের মক্কাবিজয়দশ বছরমেয়াদি হুদাইবিয়ার সন্ধি মাত্র দু’ বছরপরেই ভেঙ্গে যায়। খুযাআহ গোত্র ছিলমুসলমানদের মিত্র,অপরদিকে তাদের শত্রু বকরগোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র। একরাতেবকরগোত্র খুযাআদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।কুরাইশরা এই আক্রমণেঅন্যায়ভাবে বকরগোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সহয়োগিতা করে।কোন কোন বর্ণনামতে কুরাইশদের কিছু যুবকওএইহামলায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনার পর মুহাম্মাদ (সঃ)কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ পত্র প্রেরণকরেন এবং কুরাইশদেরকে এই তিনটি শর্তের যেকোন একটি মেনে নিতে বলেন। শর্ত তিনটিহলো;কুরাইশ খুযাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণশোধ করবে।অথবা তারা বকর গোত্রের সাথেতাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করবে।অথবা এঘোষণা দিবে যে, হুদায়বিয়ারসন্ধি বাতিল করাহয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।কুরাইশরা জানালো যে, তারা শুধু তৃতীয় শর্তটি গ্রহণকরবে। কিন্তু খুব দ্রুত কুরাইশ তাদের ভুল বুঝতেপারলো এবং আবু সুফয়ানকে সন্ধি নবায়নের জন্যদূত হিসেবে মদীনায় প্রেরণ করলো। কিন্তুমুহাম্মাদ (সঃ)কুরাইশদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেনএবং মক্কা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করলেন।৬৩০খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ (সঃ) দশহাজার সাহাবীর বিশালবাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিনছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ।বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধেমক্কা বিজিত হলো এবং মুহাম্মাদ (সঃ) বিজয়ীবেশেসেখানে প্রবেশ করলেন। তিনি মক্কাবাসীরজন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। তবে দশজননর এবং নারী এই ক্ষমার বাইরে ছিল। তারাবিভিন্নভাবেইসলাম ও মুহাম্মাদ (সঃ)এর কুৎসা রটাত। তবে এদেরমধ্য হতেও পরবর্তিতে কয়েকজনকে ক্ষমা করাহয়। মক্কায় প্রবেশ করেই মুহাম্মাদ (সঃ) সর্বপ্রথমকাবাঘরে আগমন করেন এবং সেখানকার সকল মূর্তিধ্বংস করেন। মুসলমানদের শান-শওকত দেখে এবংমুহাম্মাদ (সঃ)এর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশমক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করে। কোরআনে এইবিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।মক্কা বিজয়ের পরমূল নিবন্ধ:মক্কা বিজয়ের পরেমুহাম্মাদমৃত্যুমূল নিবন্ধ:মুহাম্মাদের মৃত্যুবিদায় হজ্জথেকে ফেরার পর হিজরী ১১সালের সফর মাসেমুহাম্মদ (সাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রাপ্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেওউষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনিএগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতাতীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়েআয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁরকাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল,মৃত্যুর একদিন পূর্বেতিনি এগুলোও দান করে দেন। বলা হয়, এই অসুস্থতাছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানোখাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে ১১ হিজরীসালের রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ সন্ধায় তিনিমৃত্যবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩বছর। আলী(রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফনপরান।আয়েশ (রাঃ)এর কামরার যে স্থানে তিনিমৃত্যুবরণ করেন,জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফনকরা হয়।ইসলামী বর্ণনামতে মুহাম্মাদেরঅলৌকিকত্বব্যতিক্রমের প্রতি আকর্ষন মানুষেরস্বভাবজাত, অন্যদিকে অলৌকিকত্বের প্রভাবআমাদের লৌকিক জীবনে সুদূর প্রসারী। আরবীমু’জেযা শব্দের অর্থ আসাধারন বিষয়, অলৌকিকত্ব।মুহাম্মদের [স.] অসংখ্য মু’জেযার মধ্যে প্রকাশ্যমু’জেযার সংখ্যা দশ হাজারেরও অধিক।[৮]ব্যাখ্যাকারীগণ মুহাম্মদের [স.]মু’জেযাগুলোকে তিনভাগে বিভক্ত করেআলোচনা করেছেন।প্রথমত যা তাঁর দেহ হতেবহির্ভূত। যথা- চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া, বৃক্ষ নিকটেআসা, ঊট ও হরিনের অভিযোগ ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত যাতাঁরদেহসম্পৃক্ত যথা- ‘মহরে নবুওয়াত’ যাহলো দুইকাঁধের মাঝখানেআল্লাহর রাসূল মোহাম্মাদবাক্যটিলেখা ছিল মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। তৃতীয়ত তাঁরনৈতিকও চারিত্রিক গুণাবলী যথা- নির্ভিক, অকুতোভয়,দানশীল, সত্য ভাষণকারী, দুনিয়াবিমুখ ইত্যাদি। আলকোরানের সুরা ক্বামারে মুহাম্মদের [স.] আংগুলদ্বারা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে। বদরযুদ্ধের আগের দিন বদর নামকস্থানে পৌঁছে মুহাম্মদ[স.] বললেন ‘এটা আমুকের শাহাদাতের স্থান, এটাঅমুকের (কাফেরের) হত্যার স্থান… সাহাবীরা (রা.)বলেন ‘রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যারজন্য যে স্থান দেখিয়েছেন, তার সামান্য এদিকসেদিক হয়নি।’ (মুসলিম) বিভিন্ন যুদ্ধে আকাশেরফেরেশতাগন অংশগ্রহন করতো। যা আল্লাহর সাহায্যও রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএরমু’জেযার প্রমান। হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস(রাঃ) বলেন- ‘ ওহুদের যুদ্ধের দিন আমি রাসুলুল্লাহ!সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরডানে বামে সাদাপোষাকের দু জন কে (জিব্রাইল, মিকাইল) দেখলামযাদের কে আর কোন দিন দেখেনি। (বুখারী,মুসলিম)সাহাবীর ভাংগা পা রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরস্পর্শে ভালো হওয়া আরো একটিমু’জেযা। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাঃ)এর পা ভেংগে গেলে তিনি তা রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জানালে রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পায়ের উপর হাত বুলালেন।সাহাবী বলেন- ‘ এতে আমার পা এমনভাবে সুস্থহয়ে গেলো যেন তাতে আমি কখনো আখাতইপাইনি। (বুখারী) স্বল্প খাদ্যে হাজার মানুষেরপরিতৃপ্ত ভোজন হওয়া প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ!সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উল্লেখযোগ্যমু’জেযা। এরুপ বহু ঘটনা বহু সাহাবী বর্ণনাকরেছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় যখনরাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকলসাহাবীগন ক্ষুধায় অস্থির ও দুর্বলহয়ে পরেছিলেনতখন জাবের (রাঃ) একটি বকরীর বাচ্চা জবাই করলেনআর এক সা পরিমান জবের রুটি তৈরি করলেন আর তাদিয়েই সবাই তৃপ্তিতে খেলেন। সাহাবী জাবের(রাঃ) আল্লাহর শপথ করে বলেন- ‘সকলে তৃপ্তিসহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও চুলায় গোশতভর্তি ডেকচি ফুটছিল এবং রুটি হচ্ছিল।’(বুখারী, মুসলিম)

No comments:

Post a Comment

Translate