Wednesday, March 3, 2021

হযরত ঈসা আঃ এর জীবনী

 

হযরত ঈসা আঃ এর জীবনী

 
 
 
 
 
 
3 Votes


হযরত ঈসা (আ:) জীবনিহযরত ঈসা(আলাইহিস সালাম)1.ঈসার মা ও নানী2.মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালন3.ঈসার জন্ম ওলালন-পালন4.মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্য5.মারিয়ামের বৈশিষ্ট্যসমূহ6.শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ7.ঈসা (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ8.ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী9.ঈসা (আঃ)-এরদাওয়াত10.ঈসা (আঃ)-এর পেশকৃত পাঁচটি নিদর্শন1.দাওয়াতের ফলশ্রুতি2.ইহুদীদের উপরপ্রেরিত গযব ও তার কারণ সমূহ3.ইহুদীদের অভিশপ্ত হওয়ার ১০টি কারণ4.ঈসা (আঃ)-কে হত্যারষড়যন্ত্র ও তাঁর ঊর্ধ্বারোহন5.আল্লাহর পাঁচটি অঙ্গীকার6.‘হাওয়ারী’ কারা?7.আসমান থেকেখাঞ্চা ভর্তি খাদ্য অবতরণ8.ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীদের কুফরী এবং ক্বিয়ামতের দিনআল্লাহরসঙ্গে ঈসা (আঃ)-এর কথোপকথন9.শিক্ষণীয় বিষয় সমূহহযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনু ইস্রাঈলবংশের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল। তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁরপরথেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন নবী আগমন করেননি।এই সময়টাকে ﻓﺘﺮﺓ ﺍﻟﺮﺳﻞ বা ‘রাসূল আগমনের বিরতিকাল’ বলা হয়। ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিতকাল পূর্বে হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবংমুহাম্মাদী শরী‘আত অনুসরণে ইমামমাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির রাজ্যকায়েম করবেন। তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে বিশ্ব সংস্কারে ব্রতী হবেন। তাইতাঁরসম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত ধারণা দেওয়া অত্যন্ত যরূরী বিবেচনা করে আল্লাহ পাকশেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মূসা(আঃ)-এর অনুসারী হওয়ার দাবীদার ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই স্বীকার করেনি। অত্যন্তলজ্জাষ্করভাবে তারা তাঁকে জনৈক ইউসুফ মিস্ত্রীর জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছে(নাঊযুবিল্লাহ)। অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও অনুসারী হবার দাবীদার খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করেতাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’(তওবাহ৯/৩০)বানিয়েছে’। বরং ত্রিত্ববাদী খৃষ্টানরা তাঁকে সরাসরি‘আল্লাহ’ সাব্যস্ত করেছে এবং বলেছে যে, তিনি হ’লেন তিন আল্লাহর একজন ( ﺛَﺎﻟِﺚُﺛَﻠَﺜَﺔٍ=মায়েদাহ ৭৩)। অর্থাৎ ঈসা, মারিয়াম ও আল্লাহ প্রত্যেকেই আল্লাহ এবং তারা এটাকে ‘বুদ্ধিবহির্ভূত সত্য’ বলে ক্ষান্ত হয়। অথচ এরূপ ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহদ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করেছেন(মায়েদাহ ৫/৭২-৭৩)।কুরআন তাঁরসম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছে। আমরা এখন সেদিকে মনোনিবেশ করব।উল্লেখ্য যে, হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট ১৫টি সূরায় ৯৮টি আয়াতে[1]বর্ণিতহয়েছে।ঈসার মা ও নানী :ঈসা (আঃ)-এর আলোচনা করতে গেলে তাঁর মা ওনানীর আলোচনা আগেই করেনিতে হয়। কারণ তাঁদের ঘটনাবলীর সাথে ঈসারজীবনের গভীর যোগসূত্ররয়েছে। পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণেরশরী‘আতে প্রচলিতইবাদত-পদ্ধতির মধ্যে আল্লাহর নামে সন্তান উৎসর্গ করার রেওয়াজও চালু ছিল। এসবউৎসর্গীত সন্তানদের পার্থিব কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হ’ত না। এ পদ্ধতি অনুযায়ী ঈসারনানী অর্থাৎ ইমরানের স্ত্রী নিজের গর্ভস্থ সন্তান সম্পর্কে মানত করলেন যে, তাকেবিশেষভাবে আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োজিত করা হবে। তিনিভেবেছিলেন যে পুত্র সন্তান হবে। কিন্তু যখন তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করলেন, তখনআক্ষেপ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি কন্যা প্রসব করেছি’?(আলে ইমরান ৩৬)।অর্থাৎ একে দিয়ে তো আমার মানত পূর্ণ হবে না। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ। তিনিউক্ত কন্যাকেই কবুল করে নেন। বস্ত্ততঃ ইনিই ছিলেন মারিয়াম বিনতে ইমরান, যিনি ঈসা (আঃ)-এর কুমারী মাতা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকে জান্নাতের শ্রেষ্ঠ চারজন মহিলার অন্যতমহিসাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ﺃﻓﻀﻞُ ﻧﺴﺎﺀِ ﺃﻫﻞِ ﺍﻟﺠﻨﺖِ ﺧﺪﻳﺠﺖُ ﺑﻨﺖِ ﺧُﻮَﻳْﻠﺪِﻭﻓﺎﻃﻤﺔُ ﺑﻨﺖِ ﻣﺤﻤﺪٍ ﻭﻣﺮﻳﻤُــــــــــــ ‘জান্নাতবাসী মহিলাগণের মধ্যে সেরা হ’লেন চারজন: খাদীজাবিনতে খুওয়ালিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারিয়াম বিনতে ইমরানএবং আসিয়া বিনতে মুযাহিম, যিনিফেরাঊনের স্ত্রী’।[2]মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালন :মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালনসম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓُ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻧَﺬَﺭْﺕُ ﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﻓِﻲْ ﺑَﻄْﻨِﻲْ ﻣُﺤَﺮَّﺭﺍً ﻓَﺘَﻘَﺒَّﻞْﻣِﻨِّﻲ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ – ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻭَﺿَﻌَﺘْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻭَﺿَﻌْﺘُﻬَﺎ ﺃُﻧﺜَﻰ ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﻤَﺎ ﻭَﺿَﻌَﺖْﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺍﻟﺬَّﻛَﺮُ ﻛَﺎﻷُﻧﺜَﻰ ﻭَﺇِﻧِّﻲ ﺳَﻤَّﻴْﺘُﻬَﺎ ﻣَﺮْﻳَﻤَﻮِﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻋِﻴْﺬُﻫَﺎ ﺑِﻚَ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺘَﻬَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﺍﻟﺮَّﺟِﻴﻢِ- ﻓَﺘَﻘَﺒَّﻠَﻬَﺎ ﺭَﺑُّﻬَﺎﺑِﻘَﺒُﻮﻝٍ ﺣَﺴَﻦٍ ﻭَﺃَﻧﺒَﺘَﻬَﺎ ﻧَﺒَﺎﺗﺎً ﺣَﺴَﻨﺎً ﻭَﻛَﻔَّﻠَﻬَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ، ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺍﻟْﻤِﺤْﺮَﺍﺏَ ﻭَﺟَﺪَ ﻋِﻨﺪَﻫَﺎ ﺭِﺯْﻗﺎً ﻗَﺎﻝَﻳَﺎ ﻣَﺮْﻳَﻢُ ﺃَﻧَّﻰ ﻟَﻚِ ﻫَـﺬَﺍ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻫُﻮَ ﻣِﻦْ ﻋِﻨﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳَﺮْﺯُﻕُ ﻣَﻦْ ﻳََّﺸَﺂﺀُ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏٍ- ‏) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ৩৫-৩৭(-‘যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে আমার প্রভু! আমার গর্ভে যা রয়েছেতাকে আমিতোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত হিসাবে। অতএব আমার পক্ষ থেকেতুমি তাকে কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’(আলে ইমরান ৩৫)। ‘অতঃপরসে যখন তাকে প্রসব করল, তখন বলল, হে প্রভু! আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব করেছি!অথচ আল্লাহ ভাল করেই জানেন, সে কি প্রসব করেছে। (আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়েবললেন,) এই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই।আর আমি তার নাম রাখলাম ‘মারিয়াম’।(মারিয়ামের মা দো‘আ করে বলল, হেআল্লাহ!) আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকেতোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি, অভিশপ্ত শয়তানের কবল হ’তে’(৩৬)। আল্লাহ বলেন,‘অতঃপর তার প্রভু তাকে উত্তমভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাকে প্রবৃদ্ধি দান করলেনসুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তিনি তাকেযাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পণকরলেন। (অতঃপর ঘটনা হ’ল এইযে,) যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কাছে আসতেন, তখনই কিছু খাদ্যদেখতেপেতেন। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, মারিয়াম! এসব কোথা থেকে তোমার কাছে এল?মারিয়াম বলত, ‘এসবআল্লাহর নিকট থেকে আসে। নিশ্চয়ইআল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দানকরে থাকেন’(আলে ইমরান ৩/৩৫-৩৭)।উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নামে উৎসর্গীত সন্তানপালন করাকে তখনকার সময়ে খুবই পুণ্যের কাজ মনে করা হ’ত। আর সেকারণে মারিয়ামকেপ্রতিপালনের দায়িত্বনেওয়ার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ফলে লটারীরব্যবস্থা করা হয় এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর বয়োবৃদ্ধ নবী হযরত যাকারিয়া (আঃ) মারিয়ামেরদায়িত্বপ্রাপ্ত হন(আলে ইমরান ৩/৪৪)।ঈসার জন্ম ও লালন-পালন :এভাবে মেহরাবে অবস্থানকরে মারিয়াম বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমত করতে থাকেন। সম্মানিত নবীও মারিয়ামেরবয়োবৃদ্ধ খালু যাকারিয়া (আঃ) সর্বদা তাকে দেখাশুনা করতেন। মেহরাবের উত্তর-পূর্বদিকেসম্ভবতঃ খেজুর বাগান ও ঝর্ণাধারা ছিল। যেখানে মারিয়াম পর্দা টাঙিয়ে মাঝে-মধ্যে পায়চারিকরতেন। অভ্যাসমত তিনি উক্ত নির্জন স্থানে একদিন পায়চারি করছিলেন। এমন সময় হঠাৎমানুষের বেশে সেখানে জিবরাঈল উপস্থিত হন। স্বাভাবিকভাবেই তাতে মারিয়াম ভীত হয়েপড়েন। এ বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ: ﻭَﺍﺫْﻛُﺮْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺇِﺫِ ﺍﻧﺘَﺒَﺬَﺕْ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻬَﺎﻣَﻜَﺎﻧﺎًﺷَﺮْﻗِﻴًّﺎ – ﻓَﺎﺗَّﺨَﺬَﺕْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻬِﻢْ ﺣِﺠَﺎﺑﺎً ﻓَﺄَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺭُﻭﺣَﻨَﺎ ﻓَﺘَﻤَﺜَّﻞَ ﻟَﻬَﺎ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺳَﻮِﻳًّﺎ- ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُﺑِﺎﻟﺮَّﺣْﻤَﻦ ﻣِﻨﻚَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺖَ ﺗَﻘِﻴًّﺎ – ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺭَﺑِّﻚِ ﻟِﺄَﻫَﺐَ ﻟَﻚِ ﻏُﻼَﻣًﺎ ﺯَﻛِﻴًّﺎ- ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺃَﻧَّﻰ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻟِﻲ ﻏُﻼَﻡٌﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻤْﺴَﺴْﻨِﻲ ﺑَﺸَﺮٌ ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﻙُ ﺑَﻐِﻴًّﺎ – ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺬَﻟِﻚِ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚِ ﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻫَﻴِّﻦٌ ﻭَﻟِﻨَﺠْﻌَﻠَﻪُ ﺁﻳَﺔً ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﻣِّﻨَّﺎﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣَّﻘْﻀِﻴًّﺎ – ‏)ﻣﺮﻳﻢ ১৬-২১(-(হে মুহাম্মাদ!) ‘আপনি এই কিতাবে মারিয়ামের কথা বর্ণনা করুন।যখনসে তার পরিবারের লোকজন হ’তে পৃথকহয়ে পূর্বদিকে একস্থানে আশ্রয়নিল’(মারিয়াম ১৬)। ‘অতঃপর সে তাদের থেকে আড়াল করার জন্য পর্দা টাঙিয়ে নিল। অতঃপরআমরা তার নিকটে আমাদের ‘রূহ’ (অর্থাৎ জিব্রীলকে) প্রেরণ করলাম। সে তার কাছেগিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল’(১৭)। ‘মারিয়াম বলল, আমি তোমার থেকেকরুণাময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদি তুমি আল্লাহভীরু হও’(১৮)। ‘সে বলল, আমি তোকেবল তোমার প্রভুর প্রেরিত। এজন্য যে, আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র সন্তান দানকরে যাব’(১৯)। ‘মারিয়াম বলল, কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকেস্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণী নই’(২০)। ‘সে বলল, এভাবেই হবে। তোমার পালনকর্তাবলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার এবং আমরা তাকে (ঈসাকে) মানবজাতির জন্য একটানিদর্শন ও আমাদের পক্ষ হ’তে বিশেষ অনুগ্রহরূপে পয়দা করতে চাই। তাছাড়া এটা (পূর্বথেকেই) নির্ধারিত বিষয়’(মারিয়াম ১৯/১৬-২১)। অতঃপর জিব্রীল মারিয়ামের মুখে অথবা তাঁরপরিহিত জামায় ফুঁক মারলেন এবং তাতেই তাঁর গর্ভ সঞ্চার হ’ল(আম্বিয়া ২১/৯১; তাহরীম ৬৬/১২)।অন্য আয়াতে একে ‘আল্লাহর কলেমা’) ﺑِﻜَﻠِﻤَﺔٍ ﻣِﻨْﻪُ (অর্থাৎ ‘কুন্’ (হও) বলা হয়েছে(আলেইমরান ৩/৪৫)।অতঃপর আল্লাহ বলেন, ﻓَﺤَﻤَﻠَﺘْﻪُ ﻓَﺎﻧﺘَﺒَﺬَﺕْ ﺑِﻪِ ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﻗَﺼِﻴًّﺎ – ﻓَﺄَﺟَﺎﺀﻫَﺎ ﺍﻟْﻤَﺨَﺎﺽُ ﺇِﻟَﻰ ﺟِﺬْﻉِﺍﻟﻨَّﺨْﻠَﺔِ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﻟَﻴْﺘَﻨِﻲ ﻣِﺖُّ ﻗَﺒْﻞَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻛُﻨﺖُ ﻧَﺴْﻴًﺎ ﻣَّﻨْﺴِﻴًّﺎ- ﻓَﻨَﺎﺩَﺍﻫَﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺃَﻻَّ ﺗَﺤْﺰَﻧِﻲ ﻗَﺪْ ﺟَﻌَﻞَ ﺭَﺑُّﻚِﺗَﺤْﺘَﻚِ ﺳَﺮِﻳًّﺎ – ﻭَﻫُﺰِّﻱْ ﺇِﻟَﻴْﻚِ ﺑِﺠِﺬْﻉِ ﺍﻟﻨَّﺨْﻠَﺔِ ﺗُﺴَﺎﻗِﻂْ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺭُﻃَﺒًﺎ ﺟَﻨِﻴًّﺎ- ﻓَﻜُﻠِﻲْ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑِﻲْ ﻭَﻗَﺮِّﻱْ ﻋَﻴْﻨًﺎ ﻓَﺈِﻣَّﺎﺗَﺮَﻳِﻦَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮِ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻓَﻘُﻮﻟِﻲْ ﺇِﻧِّﻲْ ﻧَﺬَﺭْﺕُ ﻟِﻠﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺻَﻮْﻣﺎً ﻓَﻠَﻦْ ﺃُﻛَﻠِّﻤَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺇِﻧﺴِﻴًّﺎ – ‏)ﻣﺮﻳﻢ ২২-২৬(-‘অতঃপরমারিয়াম গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং তৎসহ একটু দূরবর্তী স্থানে চলে গেল’(মারিয়াম ২২)।‘এমতাবস্থায় প্রসববেদনা তাকে একটি খর্জুর বৃক্ষেরমূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তখনসে বলল, হায়! আমি যদি এর আগেই মারা যেতাম এবং আমি যদি মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্তহয়ে যেতাম’(২৩)। ‘এমন সময় ফেরেশতা তাকে নিম্নদেশ থেকে (অর্থাৎ পার্শ্ববর্তীনিম্নভূমি থেকে) আওয়ায দিয়ে বলল, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমারপাদদেশে একটি ঝর্ণাধারা সৃষ্টি করেছেন’(২৪)। ‘আর তুমি খর্জুর বৃক্ষের কান্ড ধরেনিজের দিকে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার দিকে সুপক্ক খেজুর পতিত হবে’(২৫)। ‘তুমিআহার কর, পান কর এং স্বীয় চক্ষু শীতল কর। আর যদি কোন মানুষকে তুমি দেখ, তবেতাকে বলে দিয়ো যে, আমি দয়াময় আল্লাহর জন্যছিয়াম পালনের মানত করেছি। সুতরাং আমিআজ কারু সাথে কোন মতেই কথা বলব না’(মারিয়াম ১৯/২২-২৬)।উল্লেখ্য যে, ইসলাম-পূর্বকালের বিভিন্ন শরী‘আতে সম্ভবতঃ ছিয়াম পালনের সাথে অন্যতম নিয়ম ছিল সারাদিন মৌনতাঅবলম্বন করা। হযরত যাকারিয়া (আঃ)-কেও সন্তান প্রদানের নিদর্শন হিসাবে তিন দিন ছিয়ামেরসাথে মৌনতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে ঐ অবস্থায় ইশারা-ইঙ্গিতে কথাবলার অবকাশ ছিল(মারিয়াম ১৯/১০-১১)। একইভাবে মারিয়ামকেও নির্দেশ দেওয়া হ’ল(মারিয়াম১৯/২৬)।আলোচনা :(১) যেহেতু ঈসা (আঃ)-এর জন্মগ্রহণের ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে অলৌকিক,তাই তার গর্ভধারণের মেয়াদ স্বাভাবিক নিয়মের বহির্ভূত ছিল বলেই ধরে নিতে হবে। নয় মাসদশদিন পরে সন্তান প্রসব শেষে চল্লিশ দিন ‘নেফাস’ অর্থাৎ রজঃস্রাব হ’তে পবিত্রতারমেয়াদও এখানে ধর্তব্য না হওয়াই সমীচীন। অতএব ঈসাকে গর্ভধারণের ব্যাপারটাও যেমননিয়ম বহির্ভূত, তার ভূমিষ্ট হওয়া ও তার মায়ের পবিত্রতা লাভের পুরা ঘটনাটাই নিয়ম বহির্ভূত এবংঅলৌকিক। আর এটা আল্লাহর জন্য একেবারেই সাধারণ বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তানজন্ম হবে, মাকে দশ মাস গর্ভধারণ করতে হবে ইত্যাদি নিয়ম আল্লাহরই সৃষ্টি এবং এই নিয়মভেঙ্গে সন্তান দান করাও তাঁরই এখতিয়ার। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, ﺇِﻥَّ ﻣَﺜَﻞَﻋِﻴْﺴَﻰ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﻤَﺜَﻞِ ﺁﺩَﻡَ ﺧَﻠَﻘَﻪُ ﻣِﻨْﺘُﺮَﺍﺏٍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﻛُﻦْ ﻓَﻴَﻜُﻮْﻥُ- ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻚَ ﻓَﻼَ ﺗَﻜُﻦ ﻣِّﻦَﺍﻟْﻤُﻤْﺘَﺮِﻳْﻦَ- ‏) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৫৯-৬০(-‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে ঈসার দৃষ্টান্ত হ’ল আদমের মত। তাকেতিনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন এবং বলেন, হয়ে যাও ব্যস হয়ে গেল’। ‘যা তোমার প্রভু আল্লাহবলেন, সেটাই সত্য। অতএব তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’(আলে ইমরান৩/৫৯-৬০)। অর্থাৎ আদমকে যেমন পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করা হয়েছে, ঈসাকে তেমনি পিতাছাড়াই শুধু মায়ের মাধ্যমেই সৃষ্টি করাহয়েছে। আর এটাই যে সত্য এবং এর বাইরে যাবতীয়জল্পনা-কল্পনা যে মিথ্যা, সে কথাও উপরোক্ত আয়াতে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দেওয়াহয়েছে। দুর্ভাগ্য এই যে, যে বনু ইস্রাঈলের নবী ও রাসূল হয়ে ঈসা (আঃ)-এর আগমনঘটলো, সেই ইহুদী-নাছারারাই আল্লাহর উক্ত ঘোষণাকে মিথ্যা বলে গণ্য করেছে।অথচএই হতভাগারা মারিয়ামের পূর্বদিকে যাওয়ার অনুসরণে পূর্বদিককে তাদের ক্বিবলা বানিয়েছে।[3](২) এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মারিয়ামকে খেজুর গাছের কান্ড ধরে নাড়াদিতে বলা হয়েছে, যাতে সুপক্ক খেজুর নীচে পতিত হয়। এটাতে বুঝা যায় যে, ওটা ছিলতখন খেজুর পাকার মৌসুম অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। আর খৃষ্টানরা কথিত যীশু খৃষ্টের জন্মদিন তথাতাদেরভাষায় X-mas Day বা বড় দিন উৎসব পালন করে থাকে শীতকালে ২৫শে ডিসেম্বরতারিখে। অথচ এর কোন ভিত্তি তাদের কাছে নেই। যেমন কোন ভিত্তি নেইমুসলমানদের কাছে১২ই রবীউল আউয়াল একই তারিখে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্ম ওমৃত্যু দিবস পালনের। অথচ জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী রাসূলের জন্মদিবস ছিল ৯ইরবীউল আউয়াল সোমবার ও মৃত্যুর তারিখ ছিল ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার।ইসলামে কারুজন্ম বা মৃত্যু দিবস পালনের বিধান নেই। ক্রুসেডযুদ্ধের সময় খৃষ্টান বাহিনীর বড়দিনপালনের দেখাদেখি ৬০৫ অথবা ৬২৫ হিজরীতে ইরাকের এরবল প্রদেশের গভর্ণর আবুসাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী(৫৮৬-৬৩২ হি:)-এর মাধ্যমে কথিত ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রথাপ্রথম চালু হয়। এই বিদ‘আতী প্রথা কোন কোন মুসলিম দেশে বিশেষ করে ভারতউপমহাদেশে শিকড় গেড়ে বসেছে।(৩) এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, খেজুরগাছের গোড়া ধরে নাড়া দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। বিশেষ করে একজন সদ্য প্রসূতসন্তানের মায়ের পক্ষে। এর মধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, নেকীর কাজেআল্লাহর উপরে ভরসা করে বান্দাকেঅবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। যত সামান্যই হৌক কাজকরতে হবে। আল্লাহ তাতেই বরকত দিবেন। যেমন তালূত ও দাঊদকে আল্লাহ দিয়েছিলেনএবং যেমন শেষনবী (ছাঃ)-কে আল্লাহ সাহায্য করেছিলেন বিশেষভাবে হিজরতেররাত্রিতে মক্কা ত্যাগের সময়, হিজরতকালীন সফরে এবং বদর ও খন্দক যুদ্ধের কঠিনসময়ে। অতএব আমরা ধরে নিতে পারি যে, মারিয়ামের গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব ও প্রসবপরবর্তী পবিত্রতাঅর্জন সবই ছিল অলৌকিক এবং সবই অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্নহয়।এর পরের ঘটনা আমরা সরাসরি কুরআন থেকে বিবৃত করব। আল্লাহ বলেন, ﻓَﺄَﺗَﺖْ ﺑِﻪِ ﻗَﻮْﻣَﻬَﺎﺗَﺤْﻤِﻠُﻪُ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻳَﺎ ﻣَﺮْﻳَﻢُ ﻟَﻘَﺪْ ﺟِﺌْﺖِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺮِﻳًّﺎ- ﻳَﺎ ﺃُﺧْﺖَ ﻫَﺎﺭُﻭﻥَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺑُﻮْﻙِ ﺍﻣْﺮَﺃَ ﺳَﻮْﺀٍ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺃُﻣُّﻚِﺑَﻐِﻴًّﺎ – ‏)ﻣﺮﻳﻢ ২৭-২৮(-‘অতঃপর মারিয়াম তার সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হ’ল।তারা বলল, হে মারিয়াম! তুমি একটা আশ্চর্য বস্ত্ত নিয়ে এসেছ’। ‘হে হারূণের বোন![4]তোমার পিতা কোন অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না কিংবা তোমার মাতাও কোন ব্যভিচারিণী মহিলাছিলেন না’(মারিয়াম ১৯/২৭-২৮)। কওমের লোকদের এ ধরনের কথা ও সন্দেহেরজওয়াবে নিজে কিছু না বলে বিবি মারিয়াম তার সদ্য প্রসূত সন্তানের দিকে ইশারা করলেন।অর্থাৎ একথার জবাব সেই-ই দিবে। কেননা সে আল্লাহর দেওয়া এক অলৌকিক সন্তান, যাকওমের লোকেরা জানে না। আল্লাহ বলেন, ﻓَﺄَﺷَﺎﺭَﺕْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻛَﻴْﻒَ ﻧُﻜَﻠِّﻢُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﻬْﺪِﺻَﺒِﻴًّﺎ- ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻲْ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺁﺗَﺎﻧِﻲَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺟَﻌَﻠَﻨِﻲ ﻧَﺒِﻴًّﺎ – ﻭَﺟَﻌَﻠَﻨِﻲْ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛﺎً ﺃَﻳْﻦَ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖُ ﻭَﺃَﻭْﺻَﺎﻧِﻲْ ﺑِﺎﻟﺼَّﻼَﺓِﻭَﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻣَﺎ ﺩُﻣْﺖُ ﺣَﻴًّﺎ- ﻭَﺑَﺮًّﺍ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﺗِﻲْ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺠْﻌَﻠْﻨِﻲْ ﺟَﺒَّﺎﺭًﺍ ﺷَﻘِﻴًّﺎ- ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻲَّ ﻳَﻮْﻡَ ﻭُﻟِﺪﺕُّ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺃَﻣُﻮْﺕُﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺃُﺑْﻌَﺚُ ﺣَﻴًّﺎ – ‏)ﻣﺮﻳﻢ ২৯-৩৩(-‘অতঃপর মারিয়াম ঈসার দিকে ইঙ্গিত করল। তখন লোকেরা বলল,কোলের শিশুর সাথে আমরা কিভাবে কথা বলব’?(মারিয়াম ২৯)। ঈসা তখন বলে উঠল, ‘আমিআল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব (ইনজীল) প্রদান করেছেন এবং আমাকে নবীকরেছেন’(৩০)। ‘আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকেজোরালো নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন ছালাত ওযাকাত আদায়করতে’(৩১)। ‘এবং আমার মায়ের অনুগত থাকতে। আল্লাহ আমাকে উদ্ধত ও হতভাগাকরেননি’(৩২)। ‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করবএবং যেদিন জীবিত পুনরুত্থিত হব’(মারিয়াম ১৯/২৯-৩৩)।ঈসার উপরোক্ত বক্তব্য শেষ করারপর সংশয়বাদী ও বিতর্ককারী লোকদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, ﺫَﻟِﻚَ ﻋِﻴْﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻓِﻴْﻪِ ﻳَﻤْﺘَﺮُﻭْﻥَ- ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ِﻟﻠﻪِ ﺃَﻥ ﻳَّﺘَّﺨِﺬَ ﻣِﻦْ ﻭَﻟَﺪٍ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﺃَﻣْﺮﺍً ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮْﻝُﻟَﻪُ ﻛُﻦْ ﻓَﻴَﻜُﻮْﻥُ – ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻭَﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻓَﺎﻋْﺒُﺪُﻭْﻩُ ﻫَﺬَﺍ ﺻِﺮَﺍﻁٌ ﻣُّﺴْﺘَﻘِﻴْﻢٌ – ‏)ﻣﺮﻳﻢ ৩৪-৩৬(-‘ইনিই হ’লেনমারিয়াম পুত্র ঈসা। আর ওটাই হ’ল সত্যকথা (যা উপরে বর্ণিত হয়েছে), যে বিষয়ে লোকেরা(অহেতুক) বিতর্ক করে থাকে’(মারিয়াম ৩৪)। ‘আল্লাহ এমন নন যে, তিনি সন্তান গ্রহণ করবেন(যেমন অতিভক্ত খৃষ্টানরা বলে থাকে যে, ঈসা ‘আল্লাহর পুত্র’)। তিনি মহাপবিত্র। যখন তিনিকোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন বলেন, হও! ব্যস, হয়ে যায়’(৩৫)। ‘ঈসা আরও বলল,‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর।(মনে রেখ) এটাই হ’ল সরল পথ’(মারিয়াম ১৯/৩৪-৩৬)।কিন্তু সদ্যপ্রসূত শিশু ঈসার মুখ দিয়েঅনুরূপ সারগর্ভ কথা শুনেও কি কওমের লোকেরা আশ্বস্ত হ’তে পেরেছিল? কিছুলোক আশ্বস্ত হ’লেও অনেকে পারেনি। তারা নানা বাজে কথা রটাতে থাকে। তাদের ঐসববাক-বিতন্ডার প্রতি ইঙ্গিত করেইপরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন, ﻓَﺎﺧْﺘَﻠَﻒَ ﺍﻟْﺄَﺣْﺰَﺍﺏُ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﻨِﻬِﻢْﻓَﻮَﻳْﻞٌ ﻟِّﻠَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﻣِﻦ ﻣَّﺸْﻬَﺪِ ﻳَﻮْﻡٍ ﻋَﻈِﻴْﻢٍ – ﺃَﺳْﻤِﻊْ ﺑِﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺑْﺼِﺮْ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﺄْﺗُﻮْﻧَﻨَﺎ ﻟَﻜِﻦِ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮْﻥَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻓِﻲْﺿَﻼَﻝٍ ﻣُّﺒِﻴْﻦٍ – ‏)ﻣﺮﻳﻢ ৩৭-৩৮(-‘অতঃপর তাদের মধ্যকার বিভিন্ন দল বিভিন্ন (মত ও পথে) বিভক্তহয়েগেল (দুনিয়াতে যার শেষ হবে না)। অতএব ক্বিয়ামতের মহাদিবস আগমন কালেঅবিশ্বাসী কাফিরদের জন্য ধ্বংস’। ‘সেদিন তারা চমৎকারভাবে শুনবে ও দেখবে, যেদিন তারাসবাই আমাদের কাছে আগমন করবে। কিন্তু আজ যালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতেরয়েছে’(মারিয়াম ১৯/৩৭-৩৮)।মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্য :আল্লাহ পাকনিজেই মারিয়ামের সতীত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ﻭَﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺍﺑْﻨَﺖَ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺃَﺣْﺼَﻨَﺖْﻓَﺮْﺟَﻬَﺎ ﻓَﻨَﻔَﺨْﻨَﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭْﺣِﻨَﺎ ﻭَﺻَﺪَّﻗَﺖْ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺭَﺑِّﻬَﺎ ﻭَﻛُﺘُﺒِﻪِ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﺎﻧِﺘِﻴﻦَ – ‏)ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ ১২(-‘তিনিদৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন ইমরান তনয়া মারিয়ামের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপরআমিতার মধ্যে আমার পক্ষ হ’তে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বাণী ওকিতাব সমূহকেসত্যে পরিণত করেছিল এবং সে ছিল বিনয়ীদের অন্যতম’(তাহরীম ৬৬/১২)।মারিয়ামের বৈশিষ্ট্য সমূহ :(১) তিনি ছিলেন বিশ্ব নারী সমাজের শীর্ষস্থানীয়া এবং আল্লাহরমনোনীত ও পবিত্র ব্যক্তিত্ব(আলে ইমরান ৩/৪২)।(২) তিনি ছিলেন সর্বদা আল্লাহর উপাসনায়রত, বিনয়ী, রুকু কারিনী ও সিজদাকারিনী(ঐ, ৩/৪৩)।(৩) তিনি ছিলেন সতীসাধ্বী এবংআল্লাহর আদেশ ও বাণী সমূহের বাস্তবায়নকারিনী(তাহরীম ৬৬/১২)।(৪) আল্লাহ নিজেইতার নাম রাখেন ‘মারিয়াম’(আলে ইমরান ৩/৩৬)। অতএব তিনি ছিলেন অতীব সৌভাগ্যবতী।শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ:(১) মারিয়াম ছিলেন তার মায়ের মানতের সন্তান এবং তার নাম আল্লাহ নিজেরেখেছিলেন।(২) মারিয়ামের মা দো‘আ করেছিলেন এই মর্মে যে, আমি তাকে ও তারসন্তানদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি অভিশপ্ত শয়তানের কবল হ’তে এবং আল্লাহসে দো‘আ কবুল করেছিলেন উত্তমরূপে। অতএব মারিয়াম ও তার পুত্র ঈসার পবিত্রতাসম্পর্কে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই।(৩) মারিয়াম আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসেরখিদমতে রত ছিলেন এবং তাকে আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ ফল-ফলাদির মাধ্যমে খাদ্যপরিবেশন করা হ’ত(আলে ইমরান ৩/৩৭)। এতে বুঝা যায় যে, পবিত্রাত্মা মহিলাগণ মসজিদেরখিদমত করতে পারেন এবং আল্লাহ তাঁর নেককার বান্দাদের জন্য যেকোন স্থানে খাদ্যপরিবেশন করে থাকেন।(৪) মারিয়ামের গর্ভধারণ ও ঈসার জন্মগ্রহণ ছিল সম্পূর্ণরূপেঅলৌকিক ঘটনা। আল্লাহ পাক নিয়মেরস্রষ্টা এবং তিনিই নিয়মের ভঙ্গকারী। তাকে কোন বিষয়েবাধ্যকরার মত কেউ নেই। তিনি পিতা-মাতাছাড়াই আদমকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর পিতা ছাড়াই শুধুমাতার মাধ্যমে ঈসাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যা খুশী তাই করতে পারেন।(৫) ঈসার জন্মগ্রীষ্মকালে হয়েছিল খেজুর পাকার মওসুমে। খৃষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা মতে২৫শে ডিসেম্বরের প্রচন্ড শীতের সময়ে নয়।(৬) ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করেঅথবা অদৃশ্য থেকে নেককার বান্দাকে আল্লাহর হুকুমে সাহায্য করে থাকেন। যেমনজিব্রীল মানবাকৃতি ধারণ করে মারিয়ামের জামায় ফুঁক দিলেন। অতঃপর অদৃশ্য থেকে আওয়াযদিয়ে তার খাদ্য ও পানীয়ের পথ নির্দেশ দান করলেন।(৭) বান্দাকে কেবল প্রার্থনাকরলেই চলবে না, তাকে কাজে নামতে হবে। তবেই তাতে আল্লাহর সাহায্যনেমেআসবে। যেমন খেজুর বৃক্ষের কান্ড ধরে নাড়া দেওয়ার সামান্য প্রচেষ্টার মাধ্যমেআল্লাহর হুকুমে সুপক্ক খেজুর সমূহ পতিত হয়।(৮) বিশেষ সময়ে আল্লাহর হুকুমে শিশুসন্তানের মুখ দিয়ে সারগর্ভবক্তব্য সমূহ বের হ’তে পারে। যেমন ঈসার মুখ দিয়ে বেরহয়েছিল তার মায়ের পবিত্রতা প্রমাণের জন্য। বুখারী শরীফে বর্ণিত বনু ইস্রাঈলেরজুরায়েজ-এর ঘটনায়ও এরপ্রমাণ পাওয়া যায়।[5](৯) ঈসা কোন উপাস্য ছিলেন না। বরংতিনি ছিলেনঅন্যদের মত আল্লাহর একজন দাস মাত্র এবং তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী ওকিতাবধারী রাসূল।(১০) ঈসা যে বিনা বাপে পয়দা হয়েছিলেন, তার অন্যতম প্রমাণ এই যে,কুরআনের সর্বত্র তাঁকে ‘মারিয়াম-পুত্র’) ﻋﻴﺴﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﺮﻳﻢ (বলা হয়েছে(বাক্বারাহ ২/৮৭, ২৫৩;আলে ইমরান ৩/৪৫ প্রভৃতি)। পিতা-মাতা উভয়ে থাকলে হয়তবা তাঁকে কেবল ঈসা বলেইসম্বোধন করা হ’ত, যেমন অন্যান্য নবীগণের বেলায় করা হয়েছে। অথচ মারিয়ামকেতারপিতার দিকে সম্বন্ধ করে ‘মারিয়াম বিনতে ইমরান’) ﺍﺑﻨﺖ ﻋﻤﺮﺍﻥ (‘ইমরান-কন্যা’ বলা হয়েছে(তাহরীম ৬৬/১২)।(১১) একমাত্র মারিয়ামের নাম ধরেইআল্লাহ তাঁর সতীত্বের সাক্ষ্যঘোষণা করেছেন(তাহরীম ৬৬/১২)। যাপৃথিবীর অন্য কোন মহিলা সম্পর্কে করা হয়নি।অতএব যাবতীয়বিতর্কের অবসানের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তাছাড়া আল্লাহ তাঁকে‘ছিদ্দীক্বাহ’ অর্থাৎ কথায় ও কর্মে ‘সত্যবাদীনী’ আখ্যা দিয়েছেন(মায়েদাহ ৫/৭৫)। যেটাঅন্য কোন মহিলা সম্পর্কে দেওয়া হয়নি।ঈসা (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ :(১) তিনি ছিলেন বিনাবাপে পয়দা বিশ্বের একমাত্র নবী(আলে ইমরান ৩/৪৬ প্রভৃতি)। (২) আল্লাহ স্বয়ং যার নামরাখেন মসীহ ঈসা রূপে(আলে ইমরান ৩/৪৫)। (৩) তিনি শয়তানের অনিষ্টকারিতা হ’তে মুক্তছিলেন(ঐ, ৩/৩৬-৩৭)। (৪) দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি ছিলেন মহা সম্মানের অধিকারী এবংআল্লাহর একান্ত প্রিয়জনদের অন্যতম(আলে ইমরান ৩/৪৫)। (৫) তিনিমাতৃক্রোড়ে থেকেইসারগর্ভ বক্তব্য রাখেন(মারিয়াম ১৯/২৭-৩৩; আলে ইমরান ৩/৪৬)। (৬) তিনি বনু ইস্রাঈলগণেরপ্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন(আলে ইমরান ৩/৪৯)এবং শেষনবী ‘আহমাদ’-এর আগমনেরভবিষ্যদ্বাণী করেন(ছফ ৬১/৬)। (৭) তাঁর মো‘জেযা সমূহের মধ্যে ছিল- (ক) তিনি মাটিরতৈরী পাখিতে ফুঁক দিলেই তা জীবন্ত হয়ে উড়ে যেত (খ) তিনি জন্মান্ধকে চক্ষুষ্মান ওকুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে পারতেন(গ) তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন (ঘ) তিনিবলে দিতে পারতেন মানুষ বাড়ী থেকে যা খেয়ে আসে এবংযা সে ঘরে সঞ্চিতরেখে আসে(আলে ইমরান ৩/৪৯; মায়েদাহ ৫/১১০)।(৮) তিনি আল্লাহর কিতাব ইনজীলপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। তবে তওরাতেহারামকৃত অনেক বিষয়কে তিনি হালাল করেন(আলে ইমরান ৩/৫০)। (৯) তিনি ইহুদী চক্রান্তেরশিকার হয়ে সরকারী নির্যাতনের সম্মুখীন হন। ফলে আল্লাহ তাঁকে সশরীরে আসমানেউঠিয়ে নেন(আলে ইমরান ৩/৫২, ৫৪-৫৫; নিসা ৪/১৫৮)। শত্রুরা তাঁরই মত আরেকজনকেসন্দেহ বশে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে এবং তারা নিশ্চিতভাবেই ঈসাকে হত্যা করেনি’(নিসা৪/১৫৭)।(১০) তিনিই একমাত্র নবী, যাকে আল্লাহ জীবিত অবস্থায় দুনিয়া থেকে আসমানেউঠিয়ে নিয়েছেন এবং ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে তিনি পুনরায় সশরীরে দুনিয়াতে অবতরণকরবেন এবং দাজ্জাল, ক্রুশ, শূকর প্রভৃতি ধ্বংস করবেন। অতঃপর ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারাপৃথিবীতে ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ীশান্তির রাজ্য কায়েম করবেন।[6]হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী:সাধারণতঃ সকল নবীই ৪০ বছর বয়সে নবুঅত লাভ করেছেন। তবে ঈসা (আঃ)সম্ভবতঃ তার কিছু পূর্বেই নবুঅতও কিতাব প্রাপ্ত হন। কেননা বিভিন্ন রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিতহয়েছে যে, আকাশে তুলে নেবার সময় তাঁর বয়স ৩০ থেকে ৩৫-এর মধ্যে ছিল। তিনিযৌবনে আকাশে উত্তোলিত হয়েছিলেন এবং পৌঢ় বয়সে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে এসে মানুষকেতাওহীদের দাওয়াত দিবেন।ঈসা (আঃ)-এর দাওয়াত :ঈসা (আঃ) নবুঅত লাভ করার পরস্বীয়কওমকে প্রধানতঃ নিম্নোক্ত ৭টি বিষয়ে দাওয়াত দিয়ে বলেন, ﻳَﺎﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺇِﻧِّﻲﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢ ﻣُّﺼَﺪِّﻗﺎً ﻟِّﻤَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺔَّﻭْﺭَﺍﺓِﻭَﻣُﺒَﺸِّﺮًﺍ ﺑِﺮَﺳُﻮﻝٍ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻱ ﺍﺳْﻤُﻪُ ﺃَﺣْﻤَﺪُ -‘হেবনু ইস্রাঈলগণ! আমি তোমাদের নিকটে আগমন করেছি(১)আল্লাহর রাসূল হিসাবে(২)আমারপূর্ববর্তী তওরাত কিতাবের সত্যায়নকারী হিসাবে এবং(৩)আমার পরে আগমনকারীরাসূলেরসুসংবাদ দানকারী হিসাবে, যার নাম হবে আহমাদ’…(ছফ ৬১/৬)। তিনি বললেন, ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺭَﺑِّﻲ ﻭَﺭَﺑُّﻜُﻢْﻓَﺎﻋْﺒُﺪُﻭﻩُ ﻫَﺬَﺍ ﺻِﺮَﺍﻁٌ ﻣُّﺴْﺘَﻘِﻴْﻢٌ ‘(৪)নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তাএবং তোমাদের পালনকর্তা।অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। এটাই সরল পথ’(মারিয়াম ১৯/৩৬)।তিনি বললেন, ﻭَﻣُﺼَﺪِّﻗﺎً ﻟِّﻤَﺎ ﺑَﻴْﻦَﻳَﺪَﻱَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺘَّﻮْﺭَﺍﺓِ ﻭَِﻷُﺣِﻞَّ ﻟَﻜُﻢ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﺣُﺮِّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺟِﺌْﺘُﻜُﻢ ﺑِﺂﻳَﺔٍ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢْ ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍْ ﺍﻟﻠﻪَﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﻥِ- ‏) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৫০(-‘আমার আনীত এ কিতাব (ইনজীল) পূর্ববর্তীকিতাব তাওরাতকেসত্যায়ন করে এবংএজন্য যে,(৫)আমি তোমাদের জন্য হালাল করে দেব কোন কোনবস্ত্ত, যা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। আর(৬)আমি তোমাদের নিকটে এসেছি তোমাদেরপালনকর্তার নিদর্শন সহ। অতএব(৭)তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্যকর’(আলে ইমরান ৩/৫০)।এটার ব্যাখ্যা এসেছে অন্য আয়াতেযে, ﻓَﺒِﻈُﻠْﻢٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫَﺎﺩُﻭْﺍﺣَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻃَﻴِّﺒَﺎﺕٍ ﺃُﺣِﻠَّﺖْ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺑِﺼَﺪِّﻫِﻢْ ﻋَﻦْ ﺳَﺒِﻴْﻞِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﺜِﻴْﺮًﺍ – ﻭَﺃَﺧْﺬِﻫِﻢُ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﻗَﺪْ ﻧُﻬُﻮْﺍ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺃَﻛْﻠِﻬِﻢْﺃَﻣْﻮَﺍﻝَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﺃَﻋْﺘَﺪْﻧَﺎ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳْﻦَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑﺎً ﺃَﻟِﻴْﻤﺎً – ‏)ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ১৬০-১৬১(-‘বস্ত্ততঃইহুদীদের পাপের কারণেআমরা তাদের উপরে হারাম করেছিলামবহু পবিত্র বস্ত্ত, যা তাদেরজন্য হালাল ছিল। এটা ছিল(১)আল্লাহর পথে তাদের অধিক বাধা দানের কারণে’। ‘এবং এ কারণেযে,(২)তারা সূদ গ্রহণ করত। অথচ এ ব্যাপারে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ কারণেযে,(৩)তারা অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করত। বস্ত্ততঃ আমরা কাফিরদের জন্যপ্রস্ত্তত রেখেছি বেদনাদায়ক শাস্তি’(নিসা ৪/১৬০-১৬১)। তিনি আরও বলেন, ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻫَﺎﺩُﻭْﺍﺣَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﻛُﻞَّ ﺫِﻱْ ﻇُﻔُﺮٍ ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮِ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨَﻢِ ﺣَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺷُﺤُﻮﻣَﻬُﻤَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺣَﻤَﻠَﺖْ ﻇُﻬُﻮْﺭُﻫُﻤَﺎ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﺤَﻮَﺍﻳَﺎ ﺃَﻭْ ﻣَﺎﺍﺧْﺘَﻠَﻂَ ﺑِﻌَﻈْﻢٍ ﺫَﻟِﻚَ ﺟَﺰَﻳْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺑِﺒَﻐْﻴِﻬِﻢْ ﻭِﺇِﻧَّﺎ ﻟَﺼَﺎﺩِﻗُﻮْﻥَ- ‏( ﺍﻷﻧﻌﺎﻡ ১৪৬)-‘এবং ইহুদীদের জন্য আমরা(১)প্রত্যেক নখবিশিষ্ট পশু হারাম করেছিলাম এবং(২)ছাগল ও গরু থেকে এতদুভয়ের চর্বিআমরা তাদের জন্যহারাম করেছিলাম। কিন্তু ঐ চর্বিব্যতীত যা পৃষ্ঠে কিংবা অন্ত্রেসংযুক্তথাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমরা তাদের এ শাস্তিদিয়েছিলাম। আর আমরা অবশ্যই সত্যবাদী’(আন‘আম ৬/১৪৬)।ঈসা (আঃ)-এর পেশকৃত পাঁচটিনিদর্শন :তাওহীদ ও রিসালাতের উপরে ঈমান আনার দাওয়াত দেওয়ার পরে তিনি বনু ইস্রাঈলকেতাঁর আনীত নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করেন। তিনিবলেন, ﻭَﺭَﺳُﻮْﻻً ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻨِﻲْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺃَﻧِّﻲْ ﻗَﺪْ ﺟِﺌْﺘُﻜُﻢْﺑِﺂﻳَﺔٍ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢْ ﺃَﻧِّﻲْ ﺃَﺧْﻠُﻖُ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻄِّﻴْﻦِ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺔِ ﺍﻟﻄَّﻴْﺮِ ﻓَﺄَﻧْﻔُﺦُ ﻓِﻴْﻪِ ﻓَﻴَﻜُﻮْﻥُ ﻃَﻴْﺮﺍً ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺃُﺑْﺮِﺉُﺍﻷﻛْﻤَﻪَ ﻭﺍﻷَﺑْﺮَﺹَ ﻭَﺃُﺣْﻴِـﻲ ﺍﻟْﻤَﻮْﺗَﻰ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺃُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮْﻥَ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺪَّﺧِﺮُﻭْﻥَ ﻓِﻲْ ﺑُﻴُﻮْﺗِﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﻓِﻲْ ﺫَﻟِﻚَﻵﻳَﺔً ﻟَّﻜُﻢْ ﺇِﻥْ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣُّﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ- ‏) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৪৯(-‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকটে তোমাদেরপালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। (যেমন-)(১)আমি তোমাদের জন্য মাটিদ্বারা পাখির আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুঁক দেই, তখন তা উড়ন্ত পাখিতেপরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে।(২)আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং(৩)ধবল-কুষ্ঠরোগীকে।(৪)আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে।(৫)আমিতোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস।এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’(আলে ইমরান ৩/৪৯)।উল্লেখ্যযে, যখন যে দেশে যে বিষয়ের আধিক্য ও উৎকর্ষ থাকে, তখন সেই দেশে সেইবিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যুৎপত্তি সহ নবী প্রেরণ করা হয়। যেমন মূসার সময় মিসরে ছিলজাদুবিদ্যার প্রাদুর্ভাব। ফলে আল্লাহ তাঁকে লাঠির মো‘জেযা দিয়ে পাঠালেন। অনুরূপভাবেঈসার সময়ে শাম বা সিরিয়া এলাকা ছিল চিকিৎসা বিদ্যায় সেরা। সেকারণ ঈসাকে আল্লাহ উপরেবর্ণিত অলৌকিক ক্ষমতা ও মো‘জেযা সমূহ দিয়ে পাঠান। যেমন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এরসময়ে আরবরা ভাষা ও সাহিত্যের সর্বোচ্চ অলংকারে ভূষিত ছিল। ফলে কুরআন তাদেরসামনে হতবুদ্ধিকারী মো‘জেযা রূপে নাযিল হয়। যাতে আরবের স্বনামখ্যাত কবিরা মাথানোয়াতে বাধ্য হয়।দাওয়াতের ফলশ্রুতি :ঈসা (আঃ)-এর মো‘জেযা সমূহ দেখে এবং তাঁরমুখনিঃসৃত তাওহীদের বাণী শুনে গরীব শ্রেণীর কিছু লোক তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হ’লেওদুনিয়াদার সমাজ নেতারা তাঁর প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। কারণ তাওহীদের সাম্য বাণী সমাজেরকায়েমী স্বার্থবাদী নেতাদের স্বার্থেই প্রথম আঘাত হেনে থাকে। শয়তান তাদেরকেকুমন্ত্রণা দেয়। ফলে তারা ঈসা (আঃ)-এর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়।বিগত নবীগণের ন্যায় বনুইস্রাঈলগণ তাদের বংশের শেষ নবী ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্ত শুরু করে। তারাপ্রথমেই ঈসা (আঃ)-কে ‘জাদুকর’ বলে আখ্যায়িত করে। যেমন আল্লাহ বলেন, (হে ঈসা!) ﺇِﺫْﺟِﺌْﺘَﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺇِﻥْ ﻫَـﺬَﺍ ﺇِﻻَّ ﺳِﺤْﺮٌ ﻣُّﺒِﻴْﻦٌ – ‏) ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ১১০(-‘যখন তুমিতাদেরকাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের তারা বলল, এটাপ্রকাশ্য জাদু ব্যতীত কিছুই নয়’(মায়েদাহ ৫/১১০)।উক্ত অপবাদে ঈসা (আঃ) ক্ষান্ত না হয়ে বরংআরও দ্বিগুণ বেগে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যেতে থাকেন। তখন বিরোধীরা বেছেনেয় অতীব নোংরা পথ। তারা তাঁর মায়ের নামে অপবাদ রটাতে শুরু করে। যাতে ঈসা (আঃ)অত্যন্ত ব্যথা পেলেও নবুঅতের গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবকিছু নীরবে সহ্যকরতে থাকেন। ফলে ঈসা (আঃ)-এরসমর্থক সংখ্যা যতই বাড়তে থাকে, অবিশ্বাসী সমাজনেতাদের চক্রান্ত ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে।এবার তারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল এবংসেজন্য দেশের বাদশাহকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করল। তারা অনবরতবাদশাহর কান ভারি করতে থাকে এই মর্মে যে, লোকটি আল্লাহ দ্রোহী। সে তাওরাতপরিবর্তন করে সবাইকে বিধর্মী করতে সচেষ্ট। এসব অভিযোগ শুনে অবশেষেবাদশাহ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। তখন ইহুদীদের এসব ষড়যন্ত্রনস্যাৎ করার জন্য আল্লাহ স্বীয় কৌশল প্রেরণ করেন এবং ঈসা (আঃ)-কেসশরীরেআসমানে উঠিয়ে নেন।ইহুদীদের উপর প্রেরিত গযব ও তার কারণ সমূহ :ঈসা (আঃ)-এরদাওয়াত প্রত্যাখ্যানকরার কারণে আল্লাহ ইহুদী কাফিরদের উপরে নানাবিধ দুনিয়াবী গযব নাযিলকরেন। তাদেরকে কেন শাস্তি দেওয়া হয়েছিল- সে বিষয়ে অনেকগুলি কারণের মধ্যেআল্লাহ বলেন, ﻓَﺒِﻤَﺎ ﻧَﻘْﻀِﻬِﻢْ ﻣِﻴﺜَﺎﻗَﻬُﻢْ ﻭَﻛُﻔْﺮِﻫِﻢْ ﺑَﺂﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻗَﺘْﻠِﻬِﻢُ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀَ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣَﻖًّ ﻭَﻗَﻮْﻟِﻬِﻢْ ﻗُﻠُﻮﺑُﻨَﺎﻏُﻠْﻒٌ ﺑَﻞْ ﻃَﺒَﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺑِﻜُﻔْﺮِﻫِﻢْ ﻓَﻼَ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮْﻥَ ﺇِﻻَّ ﻗَﻠِﻴْﻼً- ﻭَﺑِﻜُﻔْﺮِﻫِﻢْ ﻭَﻗَﻮْﻟِﻬِﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺑُﻬْﺘَﺎﻧﺎً ﻋَﻈِﻴْﻤﺎً-ﻭَﻗَﻮْﻟِﻬِﻢْ ﺇِﻧَّﺎ ﻗَﺘَﻠْﻨَﺎ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴْﺢَ ﻋِﻴْﺴَﻰ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻗَﺘَﻠُﻮْﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﺻَﻠَﺒُﻮْﻩُ ﻭَﻟَـﻜِﻦْ ﺷُﺒِّﻪَ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺇِﻥَّﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺍﺧْﺘَﻠَﻔُﻮْﺍ ﻓِﻴْﻪِ ﻟَﻔِﻲْ ﺷَﻚٍّ ﻣِّﻨْﻪُ ﻣَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺑِﻬِﻤِﻦْ ﻋِﻠْﻢٍ ﺇِﻻَّ ﺍﺗِّﺒَﺎﻉَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﻭَﻣَﺎ ﻗَﺘَﻠُﻮْﻩُ ﻳَﻘِﻴْﻨﺎً – ﺑَﻞ ﺭَّﻓَﻌَﻪُ ﺍﻟﻠﻪُﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰِﻳْﺰﺍً ﺣَﻜِﻴْﻤﺎً – ‏)ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ১৫৫-১৫৮(-‘তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল (১)তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে, (২) অন্যায়ভাবে রাসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং(৩)তাদের এই উক্তির কারণে যে, ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন’…(নিসা ১৫৫)। ‘আর (৪) তাদেরকুফরীর কারণে এবং (৫) মারিয়ামের প্রতি মহা অপবাদ আরোপের কারণে’(১৫৬)। ‘আরতাদের (৬) একথার কারণে যে, ‘আমরা মারিয়াম-পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যাকরেছি, যিনি ছিলেনআল্লাহর রাসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যাকরেছিল, না শূলে চড়িয়েছিল। বরং তাদের জন্য ধাঁধারসৃষ্টি করা হয়েছিল। বস্ত্ততঃ তারা এ ব্যাপারে নানাবিধ কথা বলে। তারাএ বিষয়ে সন্দেহেরমাঝে পড়ে আছে। শুধুমাত্র ধারণার অনুসরণ করা ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানইনেই। আর নিশ্চিতভাবেই তারা তাকে হত্যা করেনি’(১৫৭)। ‘বরং তাকে আল্লাহ নিজের কাছেউঠিয়ে নিয়েছেন। আর আল্লাহ হ’লেন মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’(নিসা ৪/১৫৫-১৫৮)।ইহুদীদের অভিশপ্ত হওয়ার ১০টি কারণ :সূরা নিসা ১৫৫-৬১ আয়াতে ইহুদীদের ইপর আল্লাহরগযব নাযিলের ও তাদের অভিশপ্ত হওয়ার যে কারণ সমূহ বর্ণিত হয়েছে, তা সংক্ষেপেনিম্নরূপ :(১) তাদের ব্যাপক পাপাচার (২) আল্লাহর পথে বাধা দান (৩) সূদী লেনদেন (৪)অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ (৫) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা (৬) নবীগণকে হত্যা করা (৭)আল্লাহর পথে আগ্রহী না হওয়া এবং অজুহাত দেওয়া যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন (৮)কুফরী করা (৯) মারিয়ামের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া (১০) ঈসাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যারমিথ্যা দাবী করা।ঈসা (আঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র ও তাঁর ঊর্ধ্বারোহন :তৎকালীন রোম সম্রাটছাতিয়ূনুস-এর নির্দেশে (মাযহারী) ঈসা (আঃ)-কে গ্রেফতারের জন্য সরকারী বাহিনী ওইহুদী চক্রান্তকারীরা তাঁর বাড়ী ঘেরাও করে। তারা জনৈক নরাধমকে ঈসা (আঃ)-কে হত্যাকরার জন্য পাঠায়। কিন্তু ইতিপূর্বে আল্লাহ ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেওয়ায় সে বিফল মনোরথহয়ে ফিরে যায়। কিন্তু এরি মধ্যে আল্লাহর হুকুমে তার চেহারা ঈসা (আঃ)-এর সদৃশ হয়ে যায়।ফলে ইহুদীরা তাকেই ঈসা ভেবে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করে।ইহুদী-নাছারারা কেবলসন্দেহের বশবর্তী হয়েই নানা কথা বলে এবং ঈসাকে হত্যা করার মিথ্যা দাবী করে।আল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের কোনই জ্ঞান নেই। তারা কেবলই সন্দেহের মধ্যেপড়ে আছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যাকরতে পারেনি’(নিসা ৪/১৫৭)। বরং তার মতকাউকে তারা হত্যা করেছিল ।উল্লেখ্য যে, ঈসা (আঃ) তাঁর উপরে বিশ্বাসী সে যুগের ওপরবর্তী যুগের সকল খৃষ্টানের পাপের বোঝানিজে কাঁধে নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপশূলে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে খৃষ্টানদের দাবী স্রেফ প্রতারণা ও অপপ্রচারবৈ কিছুই নয়।আল্লাহর পাঁচটি অঙ্গীকার :ইহুদীদের বিপক্ষে হযরত ঈসা (আঃ)-কে সাহায্যেরব্যাপারে আল্লাহ পাঁচটি ওয়াদা করেছিলেন এবং সবক’টিই তিনি পূর্ণ করেন। (১) হত্যার মাধ্যমেনয় বরং তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে (২) তাঁকে ঊর্ধ্বজগতে তুলে নেওয়া হবে (৩) তাকেশত্রুদের অপবাদ থেকে মুক্তকরা হবে (৪) অবিশ্বাসীদের বিপক্ষে ঈসারঅনুসারীদেরকে ক্বিয়ামত অবধি বিজয়ী রাখা হবে এবং (৫) ক্বিয়ামতের দিন সবকিছুর চূড়ান্তফায়ছালা করা হবে। এ বিষয়গুলি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে। যেমন আল্লাহবলেন, ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﺎ ﻋِﻴْﺴَﻰ ﺇِﻧِّﻲْ ﻣُﺘَﻮَﻓِّﻴْﻚَ ﻭَﺭَﺍﻓِﻌُﻚَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻭَﻣُﻄَﻬِّﺮُﻙَ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﻭَﺟَﺎﻋِﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَﺍﺗَّﺒَﻌُﻮْﻙَ ﻓَﻮْﻕَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣَﺮْﺟِﻌُﻜُﻢْ ﻓَﺄَﺣْﻜُﻢُ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻓِﻴْﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻓِﻴْﻪِﺗَﺨْﺘَﻠِﻔُﻮْﻥَ- ‏) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৫৫(-‘আর স্মরণ কর যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমাকেওফাত দিব এবং তোমাকে আমার কাছে তুলে নেব এবং তোমাকে কাফিরদের হাত থেকেমুক্তকরব। আর যারা তোমার অনুসরণ করবে,তাদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের বিরুদ্ধেবিজয়ী করে রাখবো। অতঃপর তোমাদের সবাইকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে,তখন আমি তোমাদের মধ্যকার বিবাদীয় বিষয়ে ফায়ছালা করে দেব’(আলে ইমরান ৩/৫৫)।উক্ত আয়াতে বর্ণিত ﻣُﺘَﻮَﻓِّﻴْﻚَঅর্থ ‘আমি তোমাকে ওফাত দিব’। ‘ওফাত’ অর্থ পুরোপুরিনেওয়া। মৃত্যুকালে মানুষের আয়ু পূর্ণ হয় বলে একে ‘ওফাত’ বলা হয়। রূপক অর্থে নিদ্রাযাওয়াকেও ওফাত বা মৃত্যু বলা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﺘَﻮَﻓَّﻰ ﺍﻟْﺄَﻧْﻔُﺲَ ﺣِﻴْﻦَ ﻣَﻮْﺗِﻬَﺎ ﻭَﺍﻟَّﺘِﻲْﻟَﻢْ ﺗَﻤُﺖْ ﻓِﻲْ ﻣَﻨَﺎﻣِﻬَﺎ -‘আল্লাহ মানুষের প্রাণ নিয়ে নেন তার মৃত্যুকালে, আর যে মরেনা তারনিদ্রাকালে’(যুমার ৩৯/৪২)। সেকারণ যাহহাক, ফাররা প্রমুখ বিদ্বানগণ ﻣُﺘَﻮَﻓِّﻴْﻚَ ﻭَﺭَﺍﻓِﻌُﻚَ ﺇِﻟﻰَّ -এর অর্থবলেন, আমি আপনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নেব এবং শেষ যামানায় (পৃথিবীতে নামিয়েদিয়ে) স্বাভাবিক মৃত্যু দান করব। এখানে বর্ণনার আগপিছ হয়েছে মাত্র’(কুরতুবী, ইবনুকাছীর)। যাকুরআনের বহু স্থানে হয়েছে। ঈসারঅবতরণ, দাজ্জাল নিধন, পৃথিবীতে শান্তিররাজ্য স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে ছহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীছ সমূহ বর্ণিত হয়েছে। প্রায় সকল বড়বড় নবীই হিজরত করেছেন। এক্ষণে পৃথিবী থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া, অতঃপরপুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করা- এটা ঈসা (আঃ)-এর জন্য এক ধরনেরহিজরত বৈ কি! পার্থক্য এই যে, অন্যান্য নবীগণ দুনিয়াতেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানেহিজরত করেছেন। পক্ষান্তরে ঈসা (আঃ) দুনিয়া থেকেআসমানে হিজরত করেছেন। অতঃপরআসমান থেকে দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত এবং তিনিই সকল ক্ষমতারঅধিকারী।অতঃপর ঈসার অনুসারীদের ক্বিয়ামত অবধি বিজয়ী করে রাখার অর্থ ঈমানী বিজয়এবং সেটি ঈসা (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুসারীদেরমাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে। ঈমানী বিজয়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিজয়যেমনখেলাফত যুগে হয়েছে, ভবিষ্যতে আবারও সেটা হবে। এমনকি কোন বস্তিঘরেওইসলামের বিজয় নিশান উড়তে বাকী থাকবে না। সবশেষে ক্বিয়ামত প্রাক্কালে ঈসা ওমাহদীর নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিজয় সংঘটিত হবে এবং সারা পৃথিবী শান্তির রাজ্যেপরিণত হবে।[7]‘হাওয়ারী’ কারা? ﺣَﻮﺍﺭِﻯّ শব্দটিﺣَﻮَﺭٌধাতু থেকে ব্যুৎপন্ন। অর্থ দেওয়ালেচুনকাম করার জন্য ধবধবে সাদা চুন। পারিভাষিক অর্থে ঈসা (আঃ)-এর খাঁটি অনুসারীশীর্ষস্থানীয় ভক্ত ও সাহায্যকারী ব্যক্তিগণকে ‘হাওয়ারী’ বলা হ’ত। কেউ বলেছেনযে,নাবাত্বী ভাষায় হাওয়ারী অর্থ ধোপা) ﺍﻟﻘﺼﺎﺭ (। ঈসার খাঁটি অনুসারীগণ ধোপা ছিলেন, যারাকাপড় ধৌত করতেন। পরে তারা ঐ নামেই পরিচিত হন। অথবা এজন্য তাদের উপাধি ‘হাওয়ারী’ ছিলযে, তারা সর্বদা সাদা পোষাক পরিধান করতেন। কোন কোন তাফসীরবিদ তাঁদের সংখ্যা ১২জন বলেছেন। ঈসা )আঃ(-এর ভক্ত সহচরগণকে যেমন ‘হাওয়ারী’ বলা হয়; শেষনবীমুহাম্মাদ )ছাঃ(-এর ভক্ত সহচরগণকে তেমনি ‘ছাহাবী’ বলা হয়। আভিধানিক অর্থে ছাহাবী অর্থসাথী বা সহচর হ’লেও পারিভাষিক অর্থে রাসূল )ছাঃ( ব্যতীত অন্যদের সাথীগণকে ‘ছাহাবী’বলা হয় না। কেননা এই পরিভাষাটি কেবল ঐসকল পবিত্রাত্মা ব্যক্তিগণের জন্যেই সৃষ্টিহয়েছে। অবশ্য ‘হাওয়ারী’ শব্দটি কোন কোন সময় শুধু ‘সাহায্যকারী’ বা আন্তরিক বন্ধুঅর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ )ছাঃ( একদা বলেন, ‘প্রত্যেক নবীর একজন‘হাওয়ারী’ অর্থাৎ খাঁটি সহচর থাকে। তেমনি আমার ‘হাওয়ারী’ হ’ল যুবায়ের’।[8]ঈসা (আঃ) যখন বনুইস্রাঈলের স্বার্থবাদী নেতাদের বিরোধিতা ও চক্রান্ত বুঝতে পারলেন, তখন নিজেরএকনিষ্ঠ সাথীদের বাছাই করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন এবং সবাইকে ডেকেজিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আমার সত্যিকারের ভক্ত ও অনুসারী কারা? একথাটিইকুরআনে বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্তভাবে- ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺣَﺲَّ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻣِﻨْﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﺃَﻧﺼَﺎﺭِﻱ ﺇِﻟَﻰﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺤَﻮَﺍﺭِﻳُّﻮﻥَ ﻧَﺤْﻦُ ﺃَﻧﺼَﺎﺭُﺍﻟﻠﻪِ ﺁﻣَﻨَّﺎ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﺷْﻬَﺪْ ﺑِﺄَﻧَّﺎ ﻣُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ- ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺁﻣَﻨَّﺎ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﺖَ ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌْﻨَﺎﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﺎﻛْﺘُﺒْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪِﻳْﻦَ- ‏) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৫২-৫৩(-‘যখন ঈসা বনু ইস্রাঈলের কুফরী অনুধাবণকরলেন, তখন বললেন, কারা আছ আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্যকারী? তখন হাওয়ারীগণবলল, আমরাই আল্লাহর পথে আপনার সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছি। আপনিসাক্ষ্য থাকুন যে আমরা সবাই আত্মসমর্পণকারী’। ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সেই সববিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যা তুমি নাযিল করেছ এবং আমরা রাসূলের অনুসারীহয়েছি। অতএব তুমি আমাদেরকে মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নাও’(আলে ইমরান৩/৫২-৫৩)অন্যত্র এসেছে এভাবে- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﻮْﻧُﻮْﺍ ﺃَﻧﺼَﺎﺭَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﻤَﺎﻗَﺎﻝَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻟِﻠْﺤَﻮَﺍﺭِﻳِّﻴﻦَ ﻣَﻦْ ﺃَﻧﺼَﺎﺭِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺤَﻮَﺍﺭِﻳُّﻮﻥَ ﻧَﺤْﻦُ ﺃَﻧﺼَﺎﺭُﺍﻟﻠﻪِ ﻓَﺂَﻣَﻨَﺖ ﻃَّﺎﺋِﻔَﺔٌ ﻣِّﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَﻭَﻛَﻔَﺮَﺕ ﻃَّﺎﺋِﻔَﺔٌ، ﻓَﺄَﻳَّﺪْﻧَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺪُﻭِّﻫِﻢْ ﻓَﺄَﺻْﺒَﺤُﻮﺍ ﻇَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ – ‏)ﺍﻟﺼﻒ ১৪(-‘হে বিশ্বাসী গণ!তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। যেমন মারিয়াম-তনয় ঈসা হাওয়ারীদের বলেছিল,কে আছ আল্লাহর জন্য আমাকে সাহায্যকারী? হাওয়ারীরা বলেছিল, আমরাই আল্লাহরসাহায্যকারী। অতঃপর বনু ইস্রাঈলের একটি দল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং অন্যদল প্রত্যাখ্যানকরল। অতঃপর আমরা বিশ্বাসীদের সাহায্য করলাম তাদের শত্রুদের উপরে। ফলে তারাবিজয়ী হ’ল’(ছফ ৬১/১৪)।অবশ্য হাওয়ারীদের এই আনুগত্য প্রকাশের ক্ষমতা আল্লাহ দানকরেছিলেন তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে। যেমন তিনি বলেন, ﻭَﺇِﺫْ ﺃَﻭْﺣَﻴْﺖُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺤَﻮَﺍﺭِﻳِّﻴْﻦَ ﺃَﻥْ ﺁﻣِﻨُﻮْﺍﺑِﻲْ ﻭَﺑِﺮَﺳُﻮْﻟِﻲْ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﺁﻣَﻨَّﺎ ﻭَﺍﺷْﻬَﺪْ ﺑِﺄَﻧَّﻨَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻤُﻮْﻥَ – ‏( ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ১১১)-‘আর যখন আমি হাওয়ারীদের মনেজাগ্রত করলাম যে, আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তখন তারা বলল, আমরাবিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা সবাই আত্মসমর্পণকারী’(মায়েদাহ৫/১১১)। এখানে হাওয়ারীদের নিকট ‘অহি’ করা অর্থ তাদের হৃদয়ে বিষয়টি সঞ্চার করা বাজাগ্রত করা। এটা নবুঅতের ‘অহি’ নয়।বস্ত্ততঃ শত্রুদের উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে ঈসা (আঃ)তাঁর অনুসারীগণের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। সাথে সাথে বারজন ভক্ত অনুসারী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং আনুগত্যের শপথ নিয়েছিলেন। অতঃপরতারাই ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহণের পরে ঈসায়ী ধর্ম প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদানরাখেন। যদিও পরবর্তী কালে তাদেরমধ্যে বহু ভেজাল ঢুকে পড়ে এবং তারা বহু দলেবিভক্ত হয়ে যায়। আজও বিশ্ব খৃষ্টান সমাজ রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেষ্ট্যান্ট নামে প্রধানদু’দলে বিভক্ত। যাদের রয়েছে অসংখ্য উপদল। আর এরা সব দলই ভ্রান্ত।ইমাম বাগাভী (রহঃ)সূরা ছফ ১৪ আয়াতের তাফসীরে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহণের পর খৃষ্টান জাতি তিন দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল তাকে‘আল্লাহ’ বলে। একদল তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ বলে এবং একদল তাকে ‘আল্লাহর দাস ও রাসূল’বলে। প্রত্যেক দলের অনুসারী দল ছিল। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ বাড়তেথাকে।অতঃপর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে এবং তিনি মুমিনদের দলকে সমর্থন দেন।ফলে তারাই দলীলের ভিত্তিতে জয়লাভ করে। বলা বাহুল্য মুমিন ঈসায়ীগণসবাই ইসলাম কবুলকরে ধন্য হন। ‘বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ সাহায্য করলেন ও তারা বিজয়ী হ’ল’ বলতেউম্মতে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে। যারা ঈসা ও মুহাম্মাদ উভয় নবীর উপরে বিশ্বাসস্থাপন করেছেন এবং অবিশ্বাসী কাফের মুশরিকদের উপর দুনিয়া ও আখেরাতেবিজয়ীহয়েছেন।আসমান থেকে খাঞ্চা ভর্তি খাদ্য অবতরণ :মূসা (আঃ)-এর উম্মতগণের জন্যআল্লাহ আসমান থেকে মান্না ও সালওয়ার জান্নাতী খাবার নামিয়ে দিয়েছিলেন। সম্ভবতঃ তাতেউদ্বুদ্ধ হয়ে একদা হাওয়ারীগণ ঈসা (আঃ)-এর নিকটে অনুরূপ দাবী করে বসলো। বিষয়টিরকুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ- ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺤَﻮَﺍﺭِﻳُّﻮْﻥَ ﻳَﺎ ﻋِﻴْﺴَﻰ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻫَﻞْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴْﻊُ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻥ ﻳُﻨَﺰِّﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎﻣَﺂﺋِﺪَﺓً ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺗَّﻘُﻮْﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢ ﻣُّﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ- ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻧُﺮِﻳْﺪُ ﺃَﻥ ﻧَّﺄْﻛُﻞَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﺗَﻄْﻤَﺌِﻦَّ ﻗُﻠُﻮْﺑُﻨَﺎ ﻭَﻧَﻌْﻠَﻢَ ﺃَﻥْﻗَﺪْ ﺻَﺪَﻗْﺘَﻨَﺎ ﻭَﻧَﻜُﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪِﻳْﻦَ- ﻗَﺎﻝَ ﻋِﻴْﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺃَﻧْﺰِﻝْ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻣَﺂﺋِﺪَﺓً ﻣِّﻦَﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺗَﻜُﻮْﻥُ ﻟَﻨَﺎ ﻋِﻴْﺪﺍً ﻟِّﺄَﻭَّﻟِﻨَﺎ ﻭَﺁﺧِﺮِﻧَﺎ ﻭَﺁﻳَﺔً ﻣِّﻨْﻚَ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻴْﺮُﺍﻟﺮَّﺍﺯِﻗِﻴْﻦَ- ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺇِﻧِّﻲْ ﻣُﻨَﺰِّﻟُﻬَﺎﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﻤَﻦ ﻳَّﻜْﻔُﺮْ ﺑَﻌْﺪُ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻧِّﻲْ ﺃُﻋَﺬِّﺑُﻪُ ﻋَﺬَﺍﺑﺎًﻻَّ ﺃُﻋَﺬِّﺑُﻪُ ﺃَﺣَﺪﺍً ﻣِّﻦَ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ – ‏) ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ১১২-১১৫(-‘যখনহাওয়ারীরা বলল, হে মারিয়াম-পুত্র ঈসা! আপনার পালনকর্তা কি এরূপ করতে পারেন যে,আমাদের জন্যআকাশ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করে দেবেন? তিনি বললেন, যদিতোমরা ঈমানদার হও, তবে আল্লাহকে ভয় কর’(মায়েদাহ ১১২)। ‘তারা বলল, আমরা তা থেকেখেতে চাই,আমাদের অন্তর পরিতৃপ্ত হবে এবং আমরা জেনে নেব যে, আপনি সত্যবলেছেন ও আমরা সাক্ষ্যদাতা হয়ে যাব’(১১৩)। ‘তখন মরিয়াম-তনয় ঈসা বলল, হে আল্লাহ! হেআমাদের পালনকর্তা! আমাদের প্রতি আসমান থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ করুন। তাআমাদের জন্য তথা আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং আপনারপক্ষ হ’তে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রূযী দান করুন। আপনিই শ্রেষ্ঠরূযীদাতা’(১১৪)। ‘আল্লাহ বললেন, নিশ্চয়ই আমি সে খাঞ্চা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণকরব। অতঃপর যে ব্যক্তি অকৃতজ্ঞ হবে, আমি তাকে এমন শাস্তি দেব, যে শাস্তিবিশ্বজগতে অপর কাউকে দেব না’(মায়েদাহ ৫/১১২-১১৫)।উল্লেখ্য যে, উক্ত খাদ্য সঞ্চিতরাখা নিষিদ্ধ ছিল। তিরমিযীর একটি হাদীছে আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে,উক্ত খাদ্যভর্তি খাঞ্চা আসমান হ’তে নাযিল হয়েছিল এবং হাওয়ারীগণ তৃপ্তিভরে খেয়েছিল।কিন্তু লোকদের মধ্যে কিছু লোক তা সঞ্চিত রেখেছিল। ফলে তারা বানর ও শূকরেরূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল।[9]ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীদের কুফরী এবং ক্বিয়ামতের দিনআল্লাহর সঙ্গে ঈসা (আঃ)-এর কথোপকথন :ঈসা (আঃ)-এর ঊর্ধ্বারোহনের ফলেঈসায়ীদের মধ্যে যে আক্বীদাগত বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং তারা যে কুফরীতে লিপ্তহয়, সে বিষয়ে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন ঈসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন আল্লাহবলেন, ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﺎ ﻋِﻴْﺴَﻰ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺃَﺃَﻧْﺖَ ﻗُﻠْﺖَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﺍﺗَّﺨِﺬُﻭْﻧِﻲْ ﻭَﺃُﻣِّﻲَ ﺇِﻟَـﻬَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﺩُﻭْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮْﻥُ ﻟِﻲْ ﺃَﻥْ ﺃَﻗُﻮْﻝَ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟِﻲْ ﺑِﺤَﻖٍّ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖُ ﻗُﻠْﺘُﻪُ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﻠِﻤْﺘَﻪُ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﻓِﻲْ ﻧَﻔْﺴِﻲْ ﻭَﻻَﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﻓِﻲْ ﻧَﻔْﺴِﻚَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﻋَﻼَّﻡُ ﺍﻟْﻐُﻴُﻮْﺏِ – ﻣَﺎ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺃَﻣَﺮْﺗَﻨِﻴْﺒِﻪِ ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻭَﺭَﺑَّﻜُﻢْﻭَﻛُﻨْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺷَﻬِﻴْﺪﺍً ﻣَّﺎ ﺩُﻣْﺖُ ﻓِﻴْﻬِﻢْ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺗَﻮَﻓَّﻴْﺘَﻨِﻲْ ﻛُﻨْﺖَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺮَّﻗِﻴْﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍﺷَﻬِﻴْﺪٌ – ﺇِﻥْ ﺗُﻌَﺬِّﺑْﻬُﻢْ ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻋِﺒَﺎﺩُﻙَ ﻭَﺇِﻥْ ﺗَﻐْﻔِﺮْ ﻟَﻬُﻢْ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳْﺰُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴْﻢُ- ‏) ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ১১৬-১১৮(-‘যখনআল্লাহ বলবেন, হে মরিয়াম-তনয় ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলেযে, তোমরাআল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ওআমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা বলবেন, আপনিমহাপবিত্র। আমার জন্য শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমারনেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই তা জানেন। বস্ত্ততঃআপনি আমার মনের কথাজানেন, কিন্তু আমি জানি না কি আপনার মনের মধ্যে আছে। নিশ্চয়ই আপনি অদৃশ্য বিষয়েঅবগত’(মায়েদাহ ১১৬)। ‘আমি তো তাদের কিছুই বলিনি, কেবল সেকথাই বলেছি যা আপনিবলতে বলেছেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর, যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা।বস্ত্ততঃ আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম, যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখনআপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগতরয়েছেন। আপনি সকল বিষয়ে পূর্ণ অবগত’(১১৭)। ‘এক্ষণে যদি আপনি তাদেরকে শাস্তিদেন, তবে তারা আপনার দাস। আর যদি আপনি তাদের ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত ওমহাবিজ্ঞ’(মায়েদাহ৫/১১৬-১১৮)।উপরোক্ত ১১৭নং আয়াতে বর্ণিত ﻓَﻠَﻤَّﺎﺗَﻮَﻓَّﻴْﺘَﻨِﻲْ বাক্যটিতে ঈসা(আঃ)-এর মৃত্যুর দলীল তালাশ করার এবং তাঁর ঊর্ধ্বারোহনের বিষয়টিকে অস্বীকার করারপ্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করার কোন সুযোগ নেই। কেননা এ কথোপকথনটি ক্বিয়ামতেরদিন হবে। যার আগে আসমান থেকে অবতরণের পর দুনিয়ায় তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে যাবে।[10]ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :হযরত ঈসা (আঃ)-এর নবুঅতীজীবন থেকে আমরা নিম্নোক্ত শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ জানতে পারি। যেমন-(১) পিতাইবরাহীম (আঃ)-এর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর বংশের হাযার হাযার নবী-রাসূলের মধ্যেসর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। তাঁর পূর্বেকার সকল নবী এবংতিনি নিজে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যিনি ইবরাহীম(আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের একমাত্র নবী এবং সর্বশেষ ওসর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূল বনু ইস্রাঈল তথা স্ব স্ব গোত্রেরপ্রতি আগমন করলেও শেষনবী প্রেরিত হয়েছিলেন বিশ্ব মানবতার প্রতি বিশ্বনবীহিসাবে। অতএব ঈসা (আঃ)-এর প্রতিশ্রুত শেষনবী ‘আহমাদ’ বা মুহাম্মাদ-এর অনুসারী উম্মতেমুহাম্মাদীই হ’ল ঈসা (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারী ও প্রকৃত উত্তরসুরী। নামধারী খৃষ্টানরা নয়।(২) মু‘জেযা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরোধী পক্ষকে ভয় দেখানো যায় বা চুপ করানোযায়। কিন্তু হেদায়াতের জন্য আল্লাহর রহমত আবশ্যক। যেমন ঈসা (আঃ)-কে যে মু‘জেযাদেওয়া হয়েছিল, সে ধরনের মু‘জেযা অন্য কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁরজন্মটাই ছিল এক জীবন্ত মু‘জেযা। কিন্তু তা সত্ত্বেও শত্রুরা হেদায়াত লাভ করেনি।(৩)সবকিছু মানবীয় জ্ঞান দ্বারা পরিমাপ করা যায় না। বরং সর্বদা এলাহী সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্বাসী ওআকাংখী থাকতে হয়। যেমন মারিয়াম ও তৎপুত্র ঈসার জীবনের প্রতিটি ঘটনায়প্রমাণিতহয়েছে।(৪) যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজের কাজ করেন ও পরকালীন মঙ্গলের পথপ্রদর্শন করেন, স্বার্থপর ও দুনিয়া পূজারী সমাজ নেতারা তাদের শত্রু হয় এবং পদে পদেবাধাদেয়। কিন্তু সাথে সাথে একদল নিঃস্বার্থ সহযোগীও তারা পেয়ে থাকেন। যেমন ঈসা(আঃ) পেয়েছিলেন।(৫) দুনিয়াবী সংঘাতে দুনিয়াদারদের পার্থিব বিজয় হ’লেও চূড়ান্ত বিচারেতাদের পরাজয় হয় এবং তারা ইতিহাসে সর্বাধিক নিন্দিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে নবীও সমাজ সংস্কারকগণ নির্যাতিত হ’লেও চূড়ান্ত বিচারে তারাই বিজয়ী হন এবং সারা বিশ্ব তাদেরইভক্ত ও অনুসারী হয়। ঈসা (আঃ)-এর জীবন তারই অন্যতম প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّﺃَﻧْﺖَ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻙَ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ – ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﻰ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻯَّ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮْﻡُﺍﻟﺤِﺴَﺎﺏُ -‏[1 ]. যথাক্রমে (১) বাক্বারাহ ২/৮৭, ১৩৬, ২৫৩; (২) আলে-ইমরান ৩/৩৫-৬৩=২৯,৮৪; (৩)নিসা ৪/১৫৬-১৫৮=৩, ১৬৩, ১৭১-১৭২; (৪) মায়েদাহ ৫/১৭, ৪৬-৪৭, ৭২-৭৫=৪, ৭৮, ১১০-১১৮=৯;(৫) আন‘আম ৬/৮৫; (৬) তওবা ৯/৩০-৩১; (৭) মারিয়াম ১৯/১৬-৪০=২৫; (৮) আম্বিয়া ২১/৯১; (৯)মুমিনূন ২৩/৫০; (১০) আহযাব ৩২/৭; (১১) শূরা ৪২/১৩; (১২) যুখরুফ ৪৩/৫৭-৫৯=৩, ৬৩-৬৫=৩; (১৩)হাদীদ ৫৭/২৭; (১৪) ছফ ৬১/৬, ১৪; (১৫) তাহরীম ৬৬/১২। সর্বমোট= ৯৮টি \[2]. আহমাদ,ত্বাবারাণী, হাকেম, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে; সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৫০৮।[3]. ঈসার জন্মেরস্থানটিকে এখন Bethlehem) ﺑﻴﺖ ﻟﺤﻢ (বলা হয়। যা উত্তরকুদ্স থেকে ৮ কি:মি: দক্ষিণেঅবস্থিত এবং ফিলিস্তীনের পশ্চিম তীরে ইস্রাঈলের দখলীভুক্ত।- লেখক \[4].মারিয়ামের এক ইবাদতগুযার ভাইয়ের নাম ছিল হারূণ। অথবা হারূণ (আঃ)-এর বংশধর হওয়ার কারণেও এটাবলা হ’তে পারে (কুরতুবী)।[5]. বুখারী, হা/২৪৮২ ‘মাযালিম’ অধ্যায় ৩৫ অনুচ্ছেদ।[6].মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫০৫-৭ ‘ফিতান’ অধ্যায় ‘ঈসার অবতরণ’ অনুচ্ছেদ-৫; তিরমিযী,আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪৫২-৫, ঐ, ‘ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২।[7]. আহমাদ, সনদছহীহ মিশকাত হা/৪২; তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৪৭৫, সনদ ছহীহ; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪৫৩-৫৪;মুসলিম,মিশকাত হা/৫৫০৭।[8]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬১০১ ‘মানক্বিব’ অধ্যায় ৯ অনুচ্ছেদ।[9]. আলবানী, যঈফ তিরমিযী হা/৩০৬১, ‘তাফসীর’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫১৫০ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়‘ন্যায় কাজের আদেশ’ অনুচ্ছেদ-২২।[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫ ‘ফিতান’ অধ্যায় ‘ক্বিয়ামতপ্রাক্কালের নিদর্শন সমূহ ও দাজ্জালের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ-৩; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম,মিশকাত হা/৫৫০৫-০৭, ‘ফিতান’ অধ্যায় ‘ঈসার অবতরণ’ অনুচ্ছেদ-৫।

No comments:

Post a Comment

Translate