Wednesday, March 3, 2021

হযরত নূহ আঃ এর জীবনী

 



. হযরত নূহ(আলাইহিস সালাম)1.নূহ (আঃ)-এরপরিচয়2.তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয়অবস্থা3.স্বীয় কওমের প্রতি নূহ (আঃ)-এরদাওয়াত4.নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি5.আপত্তিসমূহের জওয়াব1.নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতেরফলশ্রুতি2.নূহের প্লাবন ও গযবের কুরআনীবিবরণ3.অন্যান্য বিবরণ4.নৌকার আরোহীগণ5.নূহ(আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহআদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) পর্যন্তদশশতাব্দীর ব্যবধান ছিল। যার শেষদিকেক্রমবর্ধমান মানবকুলে শিরক ও কুসংস্কারেরআবির্ভাব ঘটে এবং তা বিস্তৃতি লাভ করে। ফলেতাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহনূহ (আঃ)-কেনবী ও রাসূল করে পাঠান। তিনি সাড়ে নয়শতবছরের দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারাজীবন পথভোলা মানুষকে পথে আনার জন্যদাওয়াতে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তাঁর কওম তাঁকেপ্রত্যাখ্যান করে। ফলে আল্লাহর গযবে তারানিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপরে আরও কয়েকটি কওমআল্লাহর অবাধ্যতার কারণে পরপর ধ্বংস হয়।এভাবেপৃথিবীতে আদি যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৬টি জাতির ঘটনাকুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবংকুরআনের মাধ্যমেই জগদ্বাসী তাদের খবরজানতে পেরেছে। যাতে মুসলিম উম্মাহ ওপৃথিবীবাসী তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। উক্ত৬টি জাতি হ’ল- কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, কওমে লূত,মাদইয়ান ও কওমে ফেরাঊন। অবশ্য কুরআনে এতালিকায় কওমে ইবরাহীমের কথাও এসেছে(তওবাহ ৯/৭০)। যদিও তারা একত্রে ধ্বংস হয়নি। তবেইবরাহীমের ভাতিজা লূত-এর কওম একত্রে ধ্বংস ওনিশ্চিহ্ন হয়েছিল। আমরা এখানে প্রথমে নূহ (আঃ)ও তাঁর কওম সম্পর্কে আলোচনা করব।নূহ (আঃ)-এরপরিচয় :‘আবুল বাশার ছানী’ ( ﺍﺑﻮﺍﻟﺒﺸﺮﺍﻟﺜﺎﻧﻰ)বামানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলে খ্যাত নূহ(আলাইহিসসালাম)ছিলেন পিতা আদম(আলাইহিস সালাম)-এর দশমঅথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। তিনিছিলেন দুনিয়াতে ১মরাসূল।[1]নূহ (আঃ)-এর চারটি পুত্র ছিলঃ সাম, হাম, ইয়াফিছ ওইয়াম অথবা কেন‘আন।[2]প্রথম তিনজন ঈমানআনেন। কিন্তু শেষোক্ত জন কাফের হয়েপ্লাবনে ডুবে মারা যায়। নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতে তাঁরকওমের হাতেগণা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তিসাড়া দেন এবং তারাই প্লাবনের সময় নৌকারোহণেরমাধ্যমে নাজাত পান। নূহের কিশতীতে কয়জনঈমানদার ব্যক্তি আরোহণ করে নাজাতপেয়েছিলেন, সে বিষয়ে কুরআনে বা হাদীছেকোন কিছুই বর্ণিত হয়নি। অমনিভাবে কিশতীটি কতবড় ছিল, কিভাবে ও কত দিনে তৈরী হয়েছিল, এসববিষয়েও কিছু বর্ণিত হয়নি। এসব বিষয়ে যা কিছু বিভিন্নতাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর ভিত্তি হ’লইস্রাঈলী উপকথা সমূহ। যার সঠিক কোন ভিত্তিনেই।[3]ইমাম তিরমিযীহযরত সামুরা (রাঃ) প্রমুখাৎরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে সূরা ছাফফাত ৭৭ আয়াতেরতাফসীরে বর্ণনা করেন যে, নূহের প্লাবনশেষে কেবল তাঁর তিন পুত্র সাম, হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণই অবশিষ্ট ছিল।[4]রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরওবলেন যে, ﺳﺎﻡ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﻭﺣﺎﻡ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺒﺶ ﻭ ﻳﺎﻓﺚﺃﺑﻮ ﺍﻟﺮﻭﻡ .‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতাএবংইয়াফেছ রোমকদের (গ্রীক) পিতা’।[5]ইবনুআববাস ও ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তী মানব জাতিসবাই নূহের বংশধর’।[6]আল্লাহ বলেন, ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﺫُﺭِّﻳَّﺘَﻪُﻫُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺎﻗِﻴْﻦَ .‘আমরা তার (নূহের) বংশধরগণকেইঅবশিষ্ট রেখেছি’(ছাফফাত ৩৭/৭৭)। ফলে ইহুদী-খৃষ্টান সহ সকল ধর্মমতের লোকেরা নূহ (আঃ)-কে তাদের পিতা হিসাবে মর্যাদা দিয়েথাকে। সামছিলেন তিন পুত্রের মধ্যে বড়। তিনি ছিলেন ﺃﺑﻮﺍﻟﻌﺮﺏবা আরব জাতির পিতা। তাঁর বংশধরগণেরমধ্যেইছিলেন হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক এবংইসমাঈলের বংশধর ছিলেন মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানহযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)। ইসহাকের বংশধরগণের মধ্যেছিলেন ইয়াকূব, ইউসুফ, মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, ইউনুস,ইলিয়াস, ঈসা প্রমুখ নবী ও রাসূলগণ। হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধরগণের নিকটে প্রেরিত নবীগণের নামজানা যায়নি। তবে আরবদের মধ্যকার চারজন নবীছিলেন হূদ, ছালেহ, শু‘আয়েব ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)।[7]অধিকাংশ ছাহাবীর মতে নূহ (আঃ) ছিলেন ইদরীস(আঃ)-এর পূর্বেকার নবী।[8]তিনিই ছিলেন জগতেরপ্রথমরাসূল।[9]ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তিনি চল্লিশবছর বয়সে নবুঅত প্রাপ্ত হন এবং মহাপ্লাবনের পরষাট বছর জীবিত ছিলেন।[10]ফলে সুদীর্ঘকালযাবত তিনি নবী হিসাবে শিরকে নিমজ্জিত হঠকারীকওমকে দাওয়াত দেন। প্লাবনের পর তাঁর সাথেনৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমেপৃথিবীতে নতুনভাবে আবাদ শুরু হয় এবং তাদেরকেতিনি সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এ কারণেতাঁকে ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয়।আদম (আঃ)৯৬০ বছর বেঁচে ছিলেন[11]এবং নূহ (আঃ) ৯৫০ বছরজীবন পেয়েছিলেন(আনকাবূত ২৯/১৪)।উল্লেখ্য যে, আদম ও নূহ (আঃ)-এর দীর্ঘ বয়সআল্লাহর বিশেষ দান ও তাঁদের মু‘জেযা স্বরূপ ছিল।নূহ (আঃ)-এর পুরুষানুক্রমিক বয়স তাঁরন্যায় দীর্ঘ ছিলনা। নূহ (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয়সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করতেন। তারা বাহ্যতঃ সভ্যহ’লেও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনিতাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।উল্লেখ্য যে, হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে পবিত্রকুরআনের ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিতহয়েছে।[12]তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা:আদম (আঃ)-এর সময়ে ঈমানের সাথে শিরক ওকুফরের মুকাবিলা ছিল না। তখন সবাই তওহীদেরঅনুসারী একই উম্মতভুক্ত ছিল(বাক্বারাহ ২/২১৩)। তাঁরশরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই ছিল পৃথিবী আবাদকরণও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তুকালের বিবর্তনে মানুষের মধ্য শিরকেরঅনুপ্রবেশ ঘটে। নূহের কওম ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ,ইয়াঊক্ব ও নাস্র প্রমুখ মৃত নেককার লোকদেরঅসীলায় আখেরাতে মুক্তি পাবার আশায় তাদের পূজাশুরু করে। এই পূজা তাদের কবরেও হ’তে পারে,কিংবা তাদের মূর্তি বানিয়েও হ’তে পারে। মুহাম্মাদ ইবনুক্বায়েস বলেন, আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তীসময়কালের এই পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ওসৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদেরমৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলেপ্ররোচনা দেয় যে, এইসব নেককার মানুষেরমূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতিইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারাতাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুরপরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায়পড়ে ঐ মূর্তিগুলিকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজাশুরুকরে দেয়। তারা এইসব মূর্তির অসীলায় বৃষ্টিপ্রার্থনা করত’।[13]আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথমমূর্তিপূজার শিরকের সূচনা হয়।ইমাম বুখারী (রহঃ) হযরতআব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন যে, এই লোকগুলি হযরত নূহ (আঃ)-এরযুগের নেককার ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পরশয়তান তাদের অনুসারীদের এই মর্মে ধোঁকা দিলযে, এঁদের বসার স্থানগুলিতে এক একটি মূর্তি বানাওও তাদের নামে নামকরণ কর। লোকেরা তাইকরল। …এই মূর্তিগুলি পরবর্তীকালে আরবদেরমধ্যেও চালু ছিল। ‘ওয়াদ’ ছিল বনু কালবের জন্যদূমাতুল জান্দালে, সুওয়া‘ ছিল বনু হোযায়েলেরজন্য, ইয়াগূছ ছিল বনু গুত্বায়েফ-এর জন্য জুরুফ নামকস্থানে, ইয়া‘ঊক্ব ছিল বনু হামদানের জন্য এবং নাস্রছিল হিমইয়ার গোত্রের বনু যি-কালা এর জন্য’।[14]ইবনু আবী হাতেম-এর বর্ণনায় এসেছে যে,‘ওয়াদ’ ছিল এদের মধ্যে প্রথম এবং সর্বাধিকনেককার ব্যক্তি। তিনি মারা গেলে লোকেরাতারপ্রতি ভক্তিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শয়তান এইসুযোগ গ্রহণ করে এবং লোকদেরকে তার মূর্তিবানাতে প্ররোচনা দেয়। ফলে ওয়াদ-এর মূর্তিইহ’ল পৃথিবীরসর্বপ্রথম মূর্তি, আল্লাহকে বাদদিয়েযার পূজা শুরু হয়’।[15]অতএব পৃথিবীর প্রাচীনতমশিরক হ’ল নেককার মানুষের কবর অথবা তাদেরমূর্তিপূজা। যা আজও প্রায়সকল ধর্মীয় সমাজে চালুআছে এবং বর্তমানে যা মুসলিম সমাজে স্থানপূজা,কবর পূজা, ছবি-প্রতিকৃতি, মিনার ও ভাষ্কর্য পূজায় রূপনিয়েছে। উক্ত পাঁচটি মূর্তির মাহাত্ম্য ও তাদের প্রতিভক্তি লোকদের হৃদয়ে এমনভাবে প্রোথিতহয়েছিল যে, তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবংপারস্পরিক চুক্তি সম্পাদনকালে তাদের নাম উল্লেখকরত। এতদ্ব্যতীত তারা নানাবিধ সামাজিক অনাচারেডুবে গিয়েছিল। সম্প্রদায়ের এইরূপ পতন দশায়আল্লাহ তাদের হেদায়াতের জন্য নূহ (আঃ)-কেরাসূল হিসাবে প্রেরণ করেন(আ‘রাফ ৭/৬১)।স্বীয়কওমের প্রতি নূহ (আঃ)-এর দাওয়াত :আল্লাহবলেন, ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻧُﻮﺣﺎً ﺇِﻟَﻰ ﻗَﻮْﻣِﻪِ ﺃَﻥْ ﺃَﻧﺬِﺭْ ﻗَﻮْﻣَﻚَ ﻣِﻦﻗَﺒْﻞِ ﺃَﻥ ﻳَّﺄْﺗِﻴَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ، ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﻜُﻢْ ﻧَﺬِﻳﺮٌﻣُّﺒِﻴﻦٌَ، ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﻩُ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﻥِ، ﻳَﻐْﻔِﺮْ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦْﺫُﻧُﻮْﺑِﻜُﻢْ ﻭَﻳُﺆَﺧِّﺮْﻛُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺟَﻞٍ ﻣُّﺴَﻤًّﻰ ﺇِﻥَّ ﺃَﺟَﻞَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﻻَ ﻳُﺆَﺧَّﺮُ ﻟَﻮْ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ- ‏)ﻧﻮﺡ ১-৪(-‘আমরা নূহকে তারকওমের নিকটে প্রেরণ করলাম তাদের উপরেমর্মান্তিক আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বেই তাদেরকেসতর্ক করার জন্য’। ‘নূহ তাদেরকে বলল, হে আমারজাতি! আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী’। ‘এবিষয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয়কর এবং আমার আনুগত্য কর’। ‘তাতে আল্লাহতোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময়পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। তবে এটা নিশ্চিত যে,আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে, তখন তাএতটুকুও পিছানো হবে না। যদি তোমরা তাজানতে’(নূহ ৭১/১-৪)।অতঃপর তিনি তাদেরকে শিরকপরিত্যাগ করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতেফিরিয়ে আনার জন্য বান্দার উপরে আল্লাহর অসংখ্যঅনুগ্রহ ও অগণিত নে‘মতরাজির কথা স্মরণ করিয়েদিয়ে বলেন, ﺃَﻟَﻢْ ﺗَﺮَﻭْﺍ ﻛَﻴْﻒَ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻤَﺎﻭَﺍﺕٍﻃِﺒَﺎﻗﺎ، ﻭََﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﻧُﻮﺭﺍً ﻭَّﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﺳِﺮَﺍﺟﺎً،ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﻧﺒَﺘَﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻧَﺒَﺎﺗﺎً، ﺛُﻢَّ ﻳُﻌِﻴﺪُﻛُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎﻭَﻳُﺨْﺮِﺟُﻜُﻢْ ﺇِﺧْﺮَﺍﺟﺎً، ﻭَﺍﻟﻠﻪ ُﺟَﻌَﻞَ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺑِﺴَﺎﻃﺎً،ﻟِﺘَﺴْﻠُﻜُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺳُﺒُﻼً ﻓِﺠَﺎﺟﺎً- ‏(ﻧﻮﺡ ১৫-২০)-‘তোমরা কিলক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরেস্তরে সৃষ্টি করেছেন’। ‘সেখানে তিনি চন্দ্রকেরেখেছেন আলো রূপে এবং সূর্যকেরেখেছেন প্রদীপ রূপে’। ‘আল্লাহতোমাদেরকে মাটি থেকে উদ্গত করেছেন’।‘অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন ও আবারপুনরুত্থিতকরবেন’। ‘আল্লাহ তোমাদের জন্যযমীনকে করেছেন বিছানা সদৃশ’। ‘যাতে তোমরাচলাফেরা করতে পার প্রশস্ত রাস্তাসমূহে’(নূহ৭১/১৫-২০)।নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে দিন-রাত দাওয়াতদিতে থাকেন। তিনি তাদেরকে প্রকাশ্যে ওগোপনে বিভিন্ন পন্থায় ও পদ্ধতিতে দাওয়াত দেন।কিন্তু ফলাফল হয় নিতান্ত নৈরাশ্যজনক। তাঁর দাওয়াতেঅতিষ্ট হয়ে তারা তাঁকে দেখলেই পালিয়ে যেত।কখনো কানে আঙ্গুল দিত। কখনো তাদেরচেহারা কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলতো। তারাতাদের হঠকারিতা ও যিদে অটল থাকত এবং চরমঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত’(নূহ ৭১/৬-৯)। এক সময়কওমের সর্দাররা লোকদের ডেকে বলল, ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍﻻَ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﺁﻟِﻬَﺘَﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﻭَﺩّﺍً ﻭَﻻَ ﺳُﻮَﺍﻋﺎً ﻭَّﻻَ ﻳَﻐُﻮﺙَﻭَﻳَﻌُﻮﻕَ ﻭَﻧَﺴْﺮﺍً – ‏)ﻧﻮﺡ ২১-২৩(-(খবরদার!) ‘তোমরাতোমাদের পূর্ব পুরুষদের পূজিত উপাস্য ওয়াদ,সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব, নাস্র-কে কখনোই পরিত্যাগকরবে না’। (এভাবে) ‘তারা বহু লোককে পথভ্রষ্টকরে এবং (তাদের ধনবল ও জনবল দিয়ে) নূহ-এরবিরুদ্ধে ভয়ানক সব চক্রান্ত শুরুকরে’(নূহ৭১/২১-২৩)।নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটিআপত্তি :কওমের অবিশ্বাসী নেতারা জনগণকেবিভ্রান্ত করার জন্য নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটিআপত্তি উত্থাপন করেছিল। যথাঃ (১) আপনি তোআমাদের মতই একজন মানুষ। নবী হ’লে তোফেরেশতা হতেন। (২) আপনার অনুসারী হ’লআমাদের মধ্যকার হীন ও কম বুদ্ধিসম্পন্নলোকেরা (৩) কওমের উপরে আপনাদেরকোন প্রাধান্য পরিদৃষ্ট হয় না(হূদ ১১/২৭)। (৪)আপনার দাওয়াত আমাদের বাপ-দাদাদের রীতিবিরোধী (৫) আপনি আসলে নেতৃত্বেরঅভিলাষী(মুমিনূন ২৩/২৪-২৫)। অতএব আপনাকেআমরামিথ্যাবাদী মনে করি(হূদ ১১/২৭)।জনগণকেক্ষেপিয়ে তোলার জন্য নূহ-এর দাওয়াতকেক্ষমতালোভী রাজনৈতিক আন্দোলন বলেআখ্যায়িত করে কাফের নেতারা বলল, ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟْﻤَﻠَﺄُﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻣِﻪِ ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺇِﻻَّ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺃَﻥﻳَّﺘَﻔَﻀَّﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻮْ ﺷَﺂﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ُﻟَﺄَﻧﺰَﻝَ ﻣَﻠَﺂﺋِﻜَﺔً ﻣَّﺎ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﺑِﻬَﺬَﺍﻓِﻲْ ﺁﺑَﺎﺋِﻨَﺎ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻟِﻴْﻦَ – ‏(ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ ২৪-২৫)-‘এ লোক তোতোমাদের মতই একজন মানুষ। আসলে সেতোমাদের উপরে নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহইচ্ছাকরলে তো একজন ফেরেশতা পাঠাতেপারতেন। তাছাড়া এ লোক যেসব কথা বলছে,তাতো আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছেকখনো শুনিনি’। ‘আসলে লোকটার মধ্যেপাগলামী রয়েছে কিংবা তার সাথে কোন জিনরয়েছে। অতএব তোমরা এ ব্যক্তির দিকেভ্রুক্ষেপ কর না। বরং কিছুদিন অপেক্ষা কর’(মুমিনূন২৩/২৪-২৫)। (এভাবে) ‘তারা তাঁকে সরাসরি পাগল বলেএবং (প্রাণে মারার) হুমকি দেয়’(ক্বামার ৫৪/৯)।আপত্তিসমূহের জওয়াব :(১) গোত্রের নেতাদেরউপরোক্ত আপত্তি ও অপবাদ সমূহের জবাবে নূহ(আঃ) বলেন, ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺃَﺭَﺃَﻳْﺘُﻢْ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻴِّﻨَﺔٍ ﻣِّﻦﺭَّﺑِّﻲْ ﻭَﺁﺗَﺎﻧِﻲْ ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻣِّﻦْ ﻋِﻨْﺪِﻩِ ﻓَﻌُﻤِّﻴَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺃَﻧُﻠْﺰِﻣُﻜُﻤُﻮْﻫَﺎﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﻟَﻬَﺎ ﻛَﺎﺭِﻫُﻮْﻥَ- ‏)ﻫﻮﺩ ২৮(-‘হে আমার কওম! আমিযদি আমার প্রভুর পক্ষ হ’তে স্পষ্ট দলীলেরউপরে থাকি, আর তিনি যদি তাঁর পক্ষ হ’তে আমাকেরহমত দান করেন, আর সেসব থেকে যদিতোমাদের চক্ষু অন্ধ থাকে, তাহ’লে কি আমি তাতোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাদের উপরেচাপিয়ে দিতে পারি?(হূদ ১১/২৮)। একথা দ্বারাবুঝানোহয়েছে যে, নবুওয়াত ও রিসালাত চেয়েপাওয়া যায় না। এটা সস্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন।তিনি মানুষের জন্য কোন ফেরেশতাকে নয়, বরংতাঁর মনোনীত কোন মানুষকেই নবী করেপাঠিয়ে থাকেন স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ সহকারে। নূহ(আঃ) তাঁর কওমকে আরও বলেন, ﺃَﻭَﻋَﺠِﺒْﺘُﻢْ ﺃَﻥْ ﺟَﺎﺀَﻛُﻢْﺫِﻛْﺮٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻟِﻴُﻨْﺬِﺭَﻛُﻢْ ﻭَﻟِﺘَﺘَّﻘُﻮﺍ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْﺗُﺮْﺣَﻤُﻮْﻥَ- ‏)ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ ৬৪(-‘তোমরা কি এ বিষয়েআশ্চর্যবোধ করছ যে, তোমাদের পালনকর্তারপয়গাম তোমাদের মধ্য থেকেই একজনেরমাধ্যমে তোমাদের কাছে এসেছে, যাতে সেতোমাদের ভীতি প্রদর্শন করে ও তার ফলেতোমরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’(আ‘রাফ ৭/৬৩)।আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তারা নূহকে মিথ্যা সাব্যস্তকরে। তখন আমরা তাকে ও তার নৌকারোহীসাথীদেরকে মুক্ত করি এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপকারীদের ডুবিয়ে মারি।বস্ত্ততঃতারা ছিল জ্ঞানান্ধ’(আ‘রাফ ৭/৬৪)।মুসলিম উম্মাহরমধ্যে একদল লোক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে‘নূরের নবী’ বলে পরোক্ষভাবে তাঁকে‘ফেরেশতা নবী’ বানাতে চায়। এভাবে তারা বিগতযুগের কাফিরদেরসন্দেহবাদের অনুসরণ করেমাত্র। অথচ আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟَﻮْ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻟَّﺠَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُﺭَﺟُﻼً ﻭَﻟَﻠَﺒَﺴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣَّﺎ ﻳَﻠْﺒِﺴُﻮْﻥَ- ‏) ﺍﻷﻧﻌﺎﻡ ৯(-‘যদি আমরাকোন ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবেসে মানুষের আকারেই হ’ত। কিন্তু এতেও তারা ঐসন্দেহই প্রকাশ করত, যা এখন করছে’(আন‘আম৬/৯)।(২) তাদের দ্বিতীয় আপত্তির জবাবেনূহ (আঃ)বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑِﻄَﺎﺭِﺩِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮْﺍ ﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣُّﻼَﻗُﻮْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْﻭَﻟَـﻜِﻨِّﻲْ ﺃَﺭَﺍﻛُﻢْ ﻗَﻮْﻣﺎً ﺗَﺠْﻬَﻠُﻮْﻥَ، ﻭَﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﻣَﻦ ﻳَّﻨْﺼُﺮُﻧِﻲْ ﻣِﻦَﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻥْ ﻃَﺮَﺩﺗُّﻬُﻢْ ﺃَﻓَﻼَ ﺗَﺬَﻛَّﺮُﻭْﻥَ؟- ‏)ﻫﻮﺩ ২৯-৩০(-‘আমিকোন (গরীব) ঈমানদার ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতেপারি না।তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার দীদার লাভেধন্য হবে। বরং আমি তোমাদেরই মূর্খ দেখছি’।‘হে আমার কওম! আমি যদি ঐসব লোকদেরতাড়িয়ে দেই, তাহ’লে কে আমাকে আল্লাহরপাকড়াও থেকে রক্ষা করবে? তোমরা কি উপদেশগ্রহণ করবে না?(হূদ ১১/২৯-৩০; শো‘আরা২৬/১১১-১১৫)।(৩) তৃতীয় আপত্তির জবাবে তিনিবলেন, ﻭَﻻَ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﺰْﺩَﺭِﻱ ﺃَﻋْﻴُﻨُﻜُﻢْ ﻟَﻦ ﻳُﺆْﺗِﻴَﻬُﻢُﺍﻟﻠﻪ ُﺧَﻴْﺮﺍً ﺍﻟﻠّﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺇِﻧِّﻲ ﺇِﺫﺍً ﻟَّﻤِﻦَﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ- ‏)ﻫﻮﺩ ৩১(-‘তোমাদের দৃষ্টিতে যারাদীনহীন-অবাঞ্ছিত ব্যক্তি তাদেরকে আল্লাহকোনরূপ কল্যাণ দান করবেননা। তাদের মনের কথাআল্লাহ ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললেআমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’(হূদ১১/৩১)।অতএব দুনিয়াবী প্রাধান্য মূলতঃ কোনপ্রাধান্য নয়। পরকালীন উচ্চমর্যাদাই হ’ল প্রকৃতমর্যাদা।(৪) চতুর্থ আপত্তির জবাবে তিনি পয়গম্বরসুলভউত্তর দিয়ে বলেন, ﻗَﺎﻟَﻴَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻲْ ﺿَﻼَﻟَﺔٌ ﻭَﻟَﻜِﻨِّﻲْﺭَﺳُﻮْﻝٌ ﻣِّﻨﺮَّﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ، ﺃُﺑَﻠِّﻐُﻜُﻢْ ﺭِﺳَﺎﻻَﺕِ ﺭَﺑِّﻲْ ﻭَﺃَﻧْﺼَﺢُ ﻟَﻜُﻢْﻭَﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻣَﺎ ﻻَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ‏)ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ ৬১-৬২(-‘হেআমার কওম! আমার মধ্যে কোনই পথভ্রষ্টতানেই। বরং আমি বিশ্বপালকের পক্ষ হ’তে প্রেরিতরাসূল’। ‘আমি তোমাদের নিকটে আমার প্রভুর রিসালাতপৌঁছে দেই এবং আমি তোমাদেরকে সদুপদেশদিয়ে থাকি। কেননা আমি আল্লাহর পক্ষ থেকেএমন বিষয় জানি, যা তোমরা জানো না’(আ‘রাফ৭/৬১-৬২)।অতএব আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাত তথাঅহী-র বিধান পালন করা ও তা জনগণের নিকটেপৌঁছে দেওয়াই আমারদায়িত্ব ও কর্তব্য- পিতৃধর্ম পালনকরা নয়। বস্ত্ততঃ বাপ-দাদার ধর্মের দোহাই নূহ (আঃ)থেকে শুরু করে শেষনবী মুহাম্মাদ(ছাঃ) পর্যন্তসবাইকে দেওয়া হয়েছিল। আর সেকারণে প্রায়সকল নবীকেই স্ব স্ব জাতির নিকট থেকে চরমনির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল।(৫) অতঃপরনেতৃত্ব লাভের আশায় নূহ (আঃ) লোকদেরনিকটে দাওয়াত দিচ্ছেন মর্মে তাদের পঞ্চমআপত্তির জবাবে তিনি স্পষ্টভাষায় বলে দেনযে, ﻭَﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﻻَ ﺃَﺳْﺌَﻠُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﺎﻻً ﺇِﻥْ ﺃَﺟْﺮِﻱَ ﺇِﻻَّ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺏِّﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ – ‏( ﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ ১০৯)-‘এই দাওয়াতের বিনিময়ে আমিতোমাদের কাছে কোন মাল-দৌলত বা কোনবিনিময় কামনা করি না। আমার পুরষ্কার তো কেবলবিশ্বপালকের (আল্লাহর) নিকটেইরয়েছে’(শো‘আরা ২৬/১০৯; ইউনুস ১০/৭২; হূদ১১/২৯)।বস্ত্ততঃপক্ষে সকল নবীই একথাবলেছেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কাছেএসে তাঁর কওমের নেতারা যখন নেতৃত্ব গ্রহণেরঅথবা মাল-দৌলতের বিনিময়ে তাওহীদের দাওয়াতপরিত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখন তিনি তাপ্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমারডানহাতে সূর্য ওবামহাতে চন্দ্র এনে দাও, তথাপি আমিযে সত্য নিয়ে আগমন করেছি, তা পরিত্যাগ করবনা’(আর-রাহীক্ব পৃঃ৯৭)।বস্ত্ততঃ শিরকের মাধ্যমেদুনিয়া অর্জন সহজলভ্য হয় বিধায় যুগ যুগ ধরেদুনিয়াপূজারী এক শ্রেণীর বকধার্মিক লোক মূর্তি,কবর ও মাযার নিয়ে পড়ে আছে। লোকেরাতাদেরকে আল্লাহর অলী ভাবে। অথচ ওরা মূলতঃশয়তানের অলী। ইবরাহীম (আঃ) এদেরউদ্দেশ্যেই বলেছিলেন, ﺭَﺏِّ ﺇِﻧَّﻬُﻦَّ ﺃَﺿْﻠَﻠْﻦَ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِّﻦَﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻤَﻦْ ﺗَﺒِﻌَﻨِﻲْ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣِﻨِّﻲْ ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺼَﺎﻧِﻲْ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﻏَﻔُﻮْﺭٌﺭَّﺣِﻴْﻢٌ – ‏) ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ৩৬(-‘হে প্রভু! এ মূর্তিগুলি বহুলোককে পথভ্রষ্ট করেছে। এক্ষণে যারাআমার অনুগামী হয়েছে, কেবল তারাই আমারদলভুক্ত। আর যারা আমার অবাধ্যতা করেছে (তাদেরব্যাপারে আপনিই সবকিছু), নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীলও দয়াবান’(ইবরাহীম ১৪/৩৬)। নিঃসন্দেহে যারাশেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যিকারের অনুসারীহবে, কেবল তারাই আখেরাতে মুক্তি পাবে।যেহেতু ‘শিরকপন্থীদের জন্য আল্লাহজান্নাতকে হারাম করেছেন’(মায়েদাহ ৫/৭২),সেহেতু শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জনকারীলোকেরা এবং মুশরিক ব্যক্তিরা মুখে আল্লাহকেস্বীকার করলেও ওরা চিরস্থায়ীভাবেজাহান্নামেরঅধিবাসী হবে। অতএব হে মানুষ! শিরকহ’তে সাবধান হও!!নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতি:আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে সাড়ে নয়শত বছরেরসুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। তিনি একপুরুষের পর দ্বিতীয় পুরুষকে অতঃপর তৃতীয়পুরুষকে শুধু এই আশায় দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিলেন যে,তারা ঈমান আনবে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দীঅক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও তারা ঈমানআনেনি। মূলতঃ এই সময় নূহ (আঃ)-এর কওম জনবল ওঅর্থবলে বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।সংখ্যাধিক্যের কারণে ইরাকের ভূখন্ড ও পাহাড়েওতাদের আবাস সংকুলান হচ্ছিল না। আল্লাহর চিরন্তননীতি এই যে, তিনি অবাধ্যজাতিকে সাময়িকভাবেঅবকাশ দেন(বাক্বারাহ ২/১৫)। নূহের কওমসংখ্যাশক্তি ও ধনাঢ্যতার শিখরে উপনীত হয়েদিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তারা নূহ (আঃ)-এরদাওয়াতকে তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। নূহ(আঃ) তাদেরকে দিবারাত্রি দাওয়াত দেন। কখনোগোপনে কখনো প্রকাশ্যেঅর্থাৎ সকল পন্থাঅবলম্বন করে তিনি নিজ কওমকে দ্বীনেরপথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন(নূহ ৭১/৫-৯)।আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, এই সুদীর্ঘদাওয়াতী যিন্দেগীতে তিনি যেমন কখনোচেষ্টায় ক্ষান্ত হননি, তেমনি কখনো নিরাশও হননি।সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নানাবিধ নির্যাতনেরসম্মুখীন হয়েও তিনি ছবর করেন। কওমেরনেতারা বলল,62 ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻟَﺌِﻦ ﻟَّﻢْ ﺗَﻨْﺘَﻪِ ﻳَﺎ ﻧُﻮْﺡُ ﻟَﺘَﻜُﻮْﻧَﻦَّ ﻣِﻦَﺍﻟْﻤَﺮْﺟُﻮْﻣِﻴْﻦَ – ‏) ﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ ১১৬(-‘হে নূহ! যদি তুমি বিরত নাহও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণ করেদেওয়া হবে’(শো‘আরা ২৬/১১৬)। তবুও বারবারআশাবাদী হয়ে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিতে থাকেন।আর তাদের জন্য দো‘আ করে বলতেথাকেন, ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻘَﻮْﻣِﻲْ ﺇَﻧَّﻬُﻢْ ﻻَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ -‘হে আমারপালনকর্তা! তুমি আমার কওমকে ক্ষমা কর। কেননাতারা জানে না’(তাফসীর কুরতুবী, সূরা নূহ)।ওদিকেতাঁর সম্প্রদায়ের অনীহা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য এবংঔদ্ধত্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুহাম্মাদ ইবনুইসহাক্ব বলেন, ﻭﻟﻢ ﻳﻠﻖ ﻧﺒﻰ ﻣﻦ ﻗﻮﻣﻪ ﻣﻦ ﺍﻷﺫﻯﻣﺜﻠﻨﻮﺡ ﺇﻻ ﻧﺒﻰ ﻗُﺘﻞ ‘নিহত কোন নবী ব্যতীতঅন্য কোন নবী তার কওমের নিকট থেকেনূহের মত নির্যাতন ভোগ করেননি’(ইবনু কাছীর,সূরা আ‘রাফ ৫৯-৬২)। বলা চলে যে, তাদের অহংকার ওঅত্যাচার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল এবং পাপষোলকলায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে একপর্যায়ে নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে ডেকেবললেন, ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻛَﺒُﺮَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﻣَّﻘَﺎﻣِﻲْ ﻭَﺗَﺬْﻛِﻴْﺮِﻱْﺑِﺂﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻌَﻠَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺗَﻮَﻛَّﻠْﺖُ ﻓَﺄَﺟْﻤِﻌُﻮْﺍ ﺃَﻣْﺮَﻛُﻢْ ﻭَﺷُﺮَﻛَﺎﺀَﻛُﻢْﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻜُﻦْ ﺃَﻣْﺮُﻛُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻏُﻤَّﺔً ﺛُﻢَّ ﺍﻗْﻀُﻮﺍْ ﺇِﻟَﻲَّ ﻭَﻻَﺗُﻨْﻈِﺮُﻭْﻥِ، ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻮَﻟَّﻴْﺘُﻢْ ﻓَﻤَﺎ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻜُﻢ ﻣِّﻦْ ﺃَﺟْﺮٍ ﺇِﻥْ ﺃَﺟْﺮِﻱَ ﺇِﻻَّﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺃُﻣِﺮْﺕُ ﺃَﻥْ ﺃَﻛُﻮْﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴْﻦَ، ﻓََﻜَﺬَّﺑُﻮْﻩُﻓَﻨَﺠَّﻴْﻨَﺎﻩُ ﻭَﻣَﻦ ﻣَّﻌَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔُﻠْﻜِﻮَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺧَﻼَﺋِﻒَ ﻭَﺃَﻏْﺮَﻗْﻨَﺎﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﺬَّﺑُﻮْﺍ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮْ ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔُﺍﻟْﻤُﻨْﺬَﺭِﻳْﻦَ – ‏)ﻳﻮﻧﺲ ৭১-৭৩(-‘হে আমার কওম! যদিতোমাদের মাঝে আমার অবস্থিতি ও আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে তোমাদের উপদেশ দেওয়া ভারিবলে মনে হয়, তবে আমি আল্লাহর উপরে ভরসাকরছি। এখন তোমরা তোমাদের যাবতীয় শক্তিএকত্রিত কর ও তোমাদের শরীকদের সমবেতকর, যাতে তোমাদের মধ্যে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না থাকে। অতঃপর আমার ব্যাপারে একটাফায়ছালা করে ফেল এবং আমাকে মোটেও অবকাশদিয়ো না’। ‘এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও।তবে জেনে রেখ, আমি তোমাদের কাছেকোনরূপ বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময়কেবলমাত্র আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আরআমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমিআত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই’। ‘কিন্তুতারপরওতারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল…’(ইউনুস১০/৭১-৭৩)। বলা বাহুল্য যে, এটা ছিল কওমের দুরাচারনেতাদের প্রতি নূহ (আঃ)-এর ছুঁড়ে দেওয়াচ্যালেঞ্জ, যার মুকাবিলা করা তাদের পক্ষে আদৌসম্ভব ছিল না।এ সময় আল্লাহ পাক অহী নাযিল করেবলেন, ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻦ ﻳُّﺆْﻣِﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻣِﻚَ ﺇِﻻَّ ﻣَﻦْ ﻗَﺪْ ﺁﻣَﻦَ ﻓَﻼَﺗَﺒْﺘَﺌِﺲْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ- ‏(ﻫﻮﺩ ৩৬)-‘তোমারকওমের যারা ইতিমধ্যে ঈমান এনেছে, তারাব্যতীত আর কেউ ঈমান আনবে না। অতএব তুমিওদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হয়ো না’(হূদ ১১/৩৬)।এভাবে আল্লাহর অহী মারফত তিনি যখন জেনেনিলেন যে, এরা কেউ আর ঈমান আনবে না। বরংকুফর, শিরক ও পথভ্রষ্টতার উপরেই ওরা যিদ করেথাকবে, তখন নিরাশ হয়ে তিনি প্রার্থনা করলেন, ﻗَﺎﻝَﺭَﺏِّ ﺍﻧﺼُﺮْﻧِﻲ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺬَّﺑُﻮْﻥِ- ‏)ﻣﺆﻣﻨﻮﻥ ২৬(-‘হে আমারপালনকর্তা! আমাকে সাহায্য কর। কেননা ওরা আমাকেমিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে’(মুমিনূন ২৩/২৬)। ﻓَﺎﻓْﺘَﺢْﺑَﻴْﻨِﻲْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻓَﺘْﺤًﺎ ﻭَﻧَﺠِّﻨِﻲْ ﻭَﻣَﻦ ﻣَّﻌِﻲَ ﻣِﻦَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ- ‏) ﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ ১১৮(-‘অতএব তুমি আমার ও তাদেরমাঝে চূড়ান্ত ফয়ছালা করে দাও এবং আমাকে ও আমারসাথী মুমিনদেরকে তুমি (ওদের হাত থেকে)মুক্তকর’(শো‘আরা ২৬/১১৮)। তিনি স্বীয় প্রভুকেআহবান করে বললেন, ﻓَﺪَﻋَﺎ ﺭَﺑَّﻪُ ﺃَﻧِّﻲْ ﻣَﻐْﻠُﻮْﺏٌﻓَﺎﻧْﺘَﺼِﺮْ – ‏) ﺍﻟﻘﻤﺮ ১০(-‘আমি অপারগ হয়ে গেছি।এক্ষণে তুমি ওদের বদলা নাও’(ক্বামার ৫৪/১০)। তিনিঅতঃপর চূড়ান্তভাবেবদ দো‘আ করে বললেন, ﻭَﻗَﺎﻝَﻧُﻮْﺡٌ ﺭَّﺏِّ ﻻَ ﺗَﺬَﺭْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳْﻦَ ﺩَﻳَّﺎﺭًﺍ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺇِﻥْﺗَﺬَﺭْﻫُﻢْ ﻳُﻀِﻠُّﻮﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَﻙَ ﻭَﻻَ ﻳَﻠِﺪُﻭْﺍ ﺇِﻻَّ ﻓَﺎﺟِﺮًﺍ ﻛَﻔَّﺎﺭًﺍ- ‏)ﻧﻮﺡ২৬-২৭(-‘হে প্রভু! পৃথিবীতে একজন কাফেরগৃহবাসীকেও তুমি ছেড়ে দিয়ো না’। ‘যদি তুমিওদের রেহাই দাও, তাহ’লে ওরা তোমার বান্দাদেরপথভ্রষ্ট করবে এবং ওরা কোন সন্তান জন্ম দিবেনা পাপাচারী ও কাফের ব্যতীত’(নূহ ৭১/২৬-২৭)।বলাবাহুল্য, নূহ (আঃ)-এর এই দো‘আ আল্লাহ সাথেসাথে কবুল করেন। যার ফলে তারা ধ্বংস ও নিশ্চিহ্নহ’ল এবং কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় মুমিন নর-নারী মুক্তিপেলেন। বর্তমান পৃথিবীর সবাই তাদের বংশধর।আল্লাহ বলেন, ﺫُﺭِّﻳَّﺔَ ﻣَﻦْ ﺣَﻤَﻠْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﻧُﻮﺡٍ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪﺍًﺷَﻜُﻮْﺭﺍً -‘তোমরা তাদের বংশধর, যাদেরকে আমরানূহের সাথে (নৌকায়) সওয়ার করিয়েছিলাম। বস্ত্ততঃসে ছিল একজন কৃতজ্ঞ বান্দা’(ইসরা ১৭/৩; ছাফফাত৩৭/৭৭)।গযবের কারণ :আল্লাহ বলেন, ﻣِﻤَّﺎ ﺧَﻄِﻴﺌَﺎﺗِﻬِﻢْﺃُﻏْﺮِﻗُﻮْﺍ ﻓَﺄُﺩْﺧِﻠُﻮْﺍ ﻧَﺎﺭﺍً ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪُﻭْﺍ ﻟَﻬُﻢ ﻣِّﻦ ﺩُﻭْﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِﺃَﻧﺼَﺎﺭﺍً -‘তাদের পাপরাশির কারণে তাদেরকে(প্লাবনে) ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। অতঃপর তাদেরকে(কবরের) অগ্নিতে প্রবেশ করানো হয়েছিল।কিন্তু নিজেদের জন্য আল্লাহর মুকাবেলায় কাউকেতারা সাহায্যকারী পায়নি’(নূহ ৭১/২৫)। উপরোক্তআয়াতে বুঝা যায় যে, পথভ্রষ্ট সমাজনেতাদেরসাথে পুরা সমাজটাই পাপে নিমজ্জিত হয়েছিল।যেজন্য সর্বগ্রাসী প্লাবনের গযবে তাদেরকেডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়। এমনকি মৃত্যুর পর বরযখীজীবনে তাদেরকে কবর আযাবেরঅগ্নিকুন্ডেপ্রবেশ করানো হয়েছে, সেকথাও আল্লাহবলে দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত ক্বিয়ামতের দিনতাদের জন্য জাহান্নাম যে সুনিশ্চিত, সেকথাওবুঝিয়েদেওয়া হয়েছে। কেননা তারাসেদিন মুক্তির জন্যকোন সুফারিশকারী পাবেনা।শিক্ষণীয় বিষয়:সমাজপরিচালনার জন্য সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনখুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারে দল ওপ্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতিঅনুসরণ করা আবশ্যক।নূহের প্লাবন ও গযবেরকুরআনী বিবরণ :এ বিষয়ে সূরা হূদে পরপর ১২টিআয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন, চূড়ান্ত গযব আসারপূর্বে আল্লাহনূহ (আঃ)-কে বললেন, ﻭَﺍﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟْﻔُﻠْﻚَﺑِﺄَﻋْﻴُﻨِﻨَﺎ ﻭَﻭَﺣْﻴِﻨَﺎ ﻭَﻻَ ﺗُﺨَﺎﻃِﺒْﻨِﻲْ ﻓِﻲ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻇَﻠَﻤُﻮْﺍ ﺇِﻧَّﻬُﻢﻣُّﻐْﺮَﻗُﻮْﻥَ، ﻭَﻳَﺼْﻨَﻊُ ﺍﻟْﻔُﻠْﻚَ ﻭَﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻣَﺮَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﻸٌ ﻣِّﻦ ﻗَﻮْﻣِﻪِﺳَﺨِﺮُﻭﺍْ ﻣِﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻥ ﺗَﺴْﺨَﺮُﻭْﺍ ﻣِﻨَّﺎ ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﻧَﺴْﺨَﺮُ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻛَﻤَﺎﺗَﺴْﺨَﺮُﻭﻥَ، ﻓَﺴَﻮْﻑَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﻣَﻦ ﻳَّﺄْﺗِﻴﻪِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻳُﺨْﺰِﻳْﻪِ ﻭَﻳَﺤِﻞُّﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻣُّﻘِﻴﻢٌ، ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺃَﻣْﺮُﻧَﺎ ﻭَﻓَﺎﺭَ ﺍﻟﺘَّﻨُّﻮﺭُ ﻗُﻠْﻨَﺎﺍﺣْﻤِﻞْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣِﻦ ﻛُﻞٍّ ﺯَﻭْﺟَﻴْﻦِ ﺍﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻭَﺃَﻫْﻠَﻚَ ﺇِﻻَّ ﻣَﻦ ﺳَﺒَﻖَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝُ ﻭَﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﻭَﻣَﺎ ﺁﻣَﻦَ ﻣَﻌَﻪُ ﺇِﻻَّ ﻗَﻠِﻴﻞٌ، ﻭَﻗَﺎﻝَﺍﺭْﻛَﺒُﻮْﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻣَﺠْﺮِﻳﻬَﺎ ﻭَﻣُﺮْﺳَﺎﻫَﺎ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﻐَﻔُﻮﺭٌﺭَّﺣِﻴﻢٌ، ﻭَﻫِﻲَ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻲْ ﻣَﻮْﺟٍﻜَﺎﻟْﺠِﺒَﺎﻝِ ﻭَﻧَﺎﺩَﻯ ﻧُﻮﺡٌﺍﺑْﻨَﻪُ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺰِﻝٍ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺍﺭْﻛَﺐ ﻣَّﻌَﻨَﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻜُﻦ ﻣَّﻊَﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ، ﻗَﺎﻝَ ﺳَﺂﻭِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﺒَﻞٍ ﻳَﻌْﺼِﻤُﻨِﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀﻗَﺎﻝَ ﻻَﻋَﺎﺻِﻢَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻻَّ ﻣَﻦ ﺭَّﺣِﻢَ ﻭَﺣَﺎﻝَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎﺍﻟْﻤَﻮْﺝُ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﻐْﺮَﻗِﻴﻦَ، ﻭَﻗِﻴﻞَ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺽُ ﺍﺑْﻠَﻌِﻲ ﻣَﺎﺀَﻙِﻭَﻳَﺎ ﺳَﻤَﺎﺀ ﺃَﻗْﻠِﻌِﻲ ﻭَﻏِﻴْﺾَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﻭَﻗُﻀِﻲَ ﺍﻷَﻣْﺮُ ﻭَﺍﺳْﺘَﻮَﺕْﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺠُﻮﺩِﻱِّ ﻭَﻗِﻴﻞَ ﺑُﻌْﺪﺍً ﻟِّﻠْﻘَﻮْﻡِ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ، ﻭَﻧَﺎﺩَﻯ ﻧُﻮﺡٌﺭَّﺑَّﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﺍﺑُﻨِﻲ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻲ ﻭَﺇِﻥَّ ﻭَﻋْﺪَﻙَ ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻭَﺃَﻧﺖَﺃَﺣْﻜَﻢُ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻤِﻴﻦَ، ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻧُﻮْﺡُ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻚَ ﺇِﻧَّﻪُﻋَﻤَﻞٌ ﻏَﻴْﺮُ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻓَﻼَ ﺗَﺴْﺄَﻟْﻦِ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪِ ﻋِﻠْﻢٌ ﺇِﻧِّﻲﺃَﻋِﻈُﻚَ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴﻦَ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَﺃَﻥْ ﺃَﺳْﺄَﻟَﻚَ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟِﻲ ﺑِﻪِ ﻋِﻠْﻢٌ ﻭَﺇِﻻَّ ﺗَﻐْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺗَﺮْﺣَﻤْﻨِﻲﺃَﻛُﻦ ﻣِّﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳﻦَ، ﻗِﻴﻞَ ﻳَﺎ ﻧُﻮﺡُ ﺍﻫْﺒِﻂْ ﺑِﺴَﻼَﻡٍ ﻣِّﻨَّﺎﻭَﺑَﺮﻛَﺎﺕٍ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَﻢٍ ﻣِّﻤَّﻦ ﻣَّﻌَﻚَ ﻭَﺃُﻣَﻢٌ ﺳَﻨُﻤَﺘِّﻌُﻬُﻢْ ﺛُﻢَّﻳَﻤَﺴُّﻬُﻢْ ﻣِّﻨَّﺎ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ- ‏)ﻫﻮﺩ ৩৭-৪৮(-‘তুমি আমারসম্মুখে আমারই নির্দেশনা মোতাবেক একটা নৌকাতৈরী কর এবং (স্বজাতির প্রতি দয়াপরবশ হয়ে)যালেমদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলোনা। অবশ্যই ওরা ডুবে মরবে’(হূদ ১১/৩৭)। আল্লাহবলেন, ‘অতঃপর নূহ নৌকা তৈরী শুরু করল। তারকওমের নেতারা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তারাতাকে বিদ্রুপ করত। নূহ তাদের বলল, তোমরা যদিআমাদের উপহাস করে থাক, তবে জেনেরেখো তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ,আমরাও তেমনি তোমাদের উপহাস করছি’(৩৮)।‘অচিরেই তোমরা জানতে পারবে লাঞ্ছনাকর আযাবকাদের উপরে আসে এবং কাদের উপরে নেমেআসে চিরস্থায়ী গযব’(৩৯)। আল্লাহ বলেন,‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলাউদ্বেলিত হয়ে উঠল, (অর্থাৎ রান্নার চুলা হ’তে পানিউথলে উঠলো), তখন আমি বললাম, সর্বপ্রকারজোড়ার দু’টি করে এবং যাদের উপরে পূর্বেইহুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে, তাদের বাদ দিয়েতোমার পরিবারবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে নৌকায়তুলে নাও। বলা বাহুল্য, অতি অল্প সংখ্যক লোকই তারসাথে ঈমান এনেছিল’(৪০)।‘নূহ তাঁদের বলল,তোমরা এতে আরোহণ কর। আল্লাহর নামেই এরগতি ও স্থিতি। নিশ্চয়ই আমার প্রভু অতীব ক্ষমাশীলও দয়াবান’(৪১)। ‘অতঃপর নৌকাখানি তাদের বহন করেনিয়ে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝ দিয়ে। এসময় নূহ তার পুত্রকে (ইয়ামকে) ডাক দিল- যখন সেদূরে ছিল, হে বৎস! আমাদের সাথে আরোহণকর, কাফেরদের সাথে থেকো না’(৪২)। ‘সেবলল, অচিরেই আমিকোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব। যাআমাকে প্লাবনের পানি হ’তে রক্ষা করবে’। নূহবলল, ‘আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কারুরক্ষা নেই, একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন সেব্যতীত। এমন সময় পিতা-পুত্র উভয়ের মাঝে বড়একটা ঢেউ এসে আড়ালকরল এবং সে ডুবেগেল’(৪৩)। অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হ’ল, হেপৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হেপ্লাবনের পানি! নেমে যাও)। হে আকাশ! ক্ষান্ত হও(অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ কর)। অতঃপরপানি হরাস পেল ও গযব শেষ হ’ল। ওদিকে জূদীপাহাড়ে গিয়ে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হ’ল,যালেমরা নিপাত যাও’(৪৪)। ‘এ সময় নূহ তার প্রভুকেডেকে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার পুত্রতো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, আর তোমারওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য, আর তুমিই সর্বাপেক্ষাবিজ্ঞ ফায়ছালাকারী(৪৫)। ‘আল্লাহ বললেন, হে নূহ!নিশ্চয়ই সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সেদুরাচার। তুমি আমার নিকটে এমন বিষয়ে আবেদন করনা, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। আমিতোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি যেন জাহিলদেরঅন্তর্ভুক্ত হয়ো না’(৪৬)। ‘নূহ বলল, হে আমারপালনকর্তা! আমার অজানা বিষয়ে আবেদন করা হ’তেআমি তোমার নিকটে পানাহ চাচ্ছি। তুমিযদি আমাকেক্ষমা না কর ও অনুগ্রহনা কর, তাহ’লে আমিক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’(৪৭)। ‘বলাহ’ল, হে নূহ! এখন (নৌকা থেকে) অবতরণ করআমাদের পক্ষ হ’তে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সহকারেতোমার উপর ও তোমার সঙ্গী দলগুলির উপর এবংসেই (ভবিষ্যৎ) সম্প্রদায়গুলির উপর- যাদেরকেআমরা সত্বর সম্পদরাজি দান করব। অতঃপর তাদেরউপরে আমাদের পক্ষ হ’তে মর্মান্তিক আযাবস্পর্শ করবে’(হূদ ১১/৩৭-৪৮)।মাক্কী জীবনেরচরম আতংক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সূরা হূদ নাযিল করেসেখানে যথাক্রমে নূহ, হূদ, ছালেহ, ইব্রাহীম,লূত, শু‘আয়েব ও মূসা প্রমুখ বিগত নবী ওরাসূলগণের ও তাদের সম্প্রদায়ের কাহিনীসংক্ষেপে বর্ণনার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁরসাথীদেরকে আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়েছেন।যেমন প্রথমে নূহ (আঃ)-এর কাহিনী বর্ণনাশেষে আল্লাহ বলেন, ﺗِﻠْﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧﺒَﺎﺀِ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻧُﻮْﺣِﻴْﻬَﺎﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻬَﺎ ﺃَﻧْﺘَﻮَﻻَ ﻗَﻮْﻣُﻚَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞِ ﻫَـﺬَﺍ ﻓَﺎﺻْﺒِﺮْﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻌَﺎﻗِﺒَﺔَ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴْﻦَ- ‏)ﻫﻮﺩ ৪৯(-‘এটি গায়েবের খবর যাআমরা আপনার নিকটে অহী করেছি।যা ইতিপূর্বেআপনি বা আপনার সম্প্রদায় জানতো না। অতএব আপনিধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই শুভ পরিণাম কেবলআল্লাহভীরুদের জন্যই’(হূদ ১১/৪৯)। বস্ত্ততঃকুরআনের মাধ্যমেই পৃথিবীবাসী সর্বপ্রথম বিগতযুগের এই সব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির খবর জানতেপেরেছে।অন্যান্য বিবরণ :সূরা হূদে বর্ণিতউপরোক্ত আয়াত সমূহে নূহ (আঃ)-এর প্লাবনেরনাতিদীর্ঘ ঘটনা বিবৃত হয়েছে। কুরআন তারবাকরীতি অনুযায়ী কেবলপ্রয়োজনীয় কথাগুলিইবলে দিয়েছে। বাদবাকী ব্যাখ্যা সমূহ মোটামুটিনিম্নরূপঃ(১) কিশতী :নূহ (আঃ)-কে যখন নৌকা তৈরীরনির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তিনি নৌকাও চিনতেন না,তৈরী করতেও জানতেন না। আর সেকারণেইআল্লাহ নির্দেশ দিলেন, ‘তুমি নৌকা তৈরী করআমাদের চোখের সম্মুখে ও আমাদের অহীঅনুসারে’(হূদ ১১/৩৭; মুমিনূন ২৩/২৭)। এর দ্বারা বুঝাযায়. যে, নৌকা তৈরীরজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ ও নির্মাণ কৌশল জিবরীল (আঃ) নূহ (আঃ)-কেশিক্ষা দিয়েছিলেন। এভাবেসরাসরি অহীর মাধ্যমেনূহ (আঃ)-এর হাতে নৌকা ও জাহায নির্মাণ শিল্পেরগোড়াপত্তন হয়। অতঃপর যুগে যুগে তার উন্নতিসাধিত হয়েছে এবং মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল ওযাত্রী পরিবহনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা যারউপরে দাঁড়িয়ে আছে।একথাধারণা করা মোটেই অমূলক হবে না যে, উক্ত নৌকাতৈরী করতে নূহ (আঃ)-এর বহুদিন সময় লেগেছিল।নৌকাটি অবশ্যই বিরাটায়তনের ছিল। যাতে মানুষ, পশু ওপাখি পৃথকভাবে থাকতে পারে। কিন্তু এজন্য নৌকাটিকয় তলা বিশিষ্ট ছিল, কি কাঠের ছিল, কত গজ লম্বা ওচওড়া ছিল, এসব কাহিনীর কোন সঠিক ভিত্তি নেই।নদীবিহীন মরু এলাকায় বিনা কারণে নৌকা তৈরীকরাকে পশুশ্রম ও নিছক পাগলামি বলে ‘কওমেরনেতারা নূহ (আঃ)-কে ঠাট্টা করত’(হূদ ৩৮)। এব্যাপরে নূহ (আঃ) বলতেন, তোমাদের ঠাট্টার জবাবসত্বর তোমরা জানতে পারবে(হূদ ৩৯)। দীর্ঘ দিনধরে নৌকা তৈরী শেষ হবার পরেই আল্লাহর চূড়ান্তফায়ছালা নেমে আসে এবং গযবের প্রাথমিক আলামতহিসাবে চুলা থেকে পানি বের হ’তে থাকে।(২)তান্নূর ও তূফান :‘তান্নূর’ বলা হয় মূলতঃ উনুন বা চুলাকে।এটি অনারব শব্দ, যাকে আরবী করা হয়েছে(কুরতুবী)। সহজ-সরল ও প্রকাশ্য অর্থ অনুযায়ীইরাকের মূছেল নগরীতে অবস্থিত নূহ (আঃ)-এরপারিবারিক চুলা থেকে পানি উথলে বের হওয়ারআলামতের মাধ্যমেই নূহের তুফানের সূচনা হয়।অর্থাৎ এটি ছিল প্লাবনের প্রাথমিক আলামত মাত্র(কুরতুবী)। ‘তূফান’ অর্থ যেকোন বস্ত্তরঅত্যাধিক্য। প্লাবনকে ‘তূফান’ বলা হয় পানিরআধিক্যের কারণে, যাসব কিছুকে ডুবিয়ে দেয়।আল্লাহ বলেন, ‘আমরা নূহকে প্রেরণ করেছিলামতার সম্প্রদায়ের নিকট। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশকম এক হাযার বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপরতাদেরকে ‘তূফান’ (অর্থাৎ মহাপ্লাবন) গ্রাসকরেছিল। আর তারা ছিল অত্যাচারী(আনকাবূত২৯/১৪)। যদিও অনেকে এর নানারূপ ব্যাখ্যাদিয়েছেন। যার সবকিছুই ইস্রাঈলিয়াত এবং ভিত্তিহীন।[16]ভূতলের উত্থিত পানি ছাড়াও তার সাথে যুক্তহয়েছিল অবিরাম ধারে আকাশবন্যা। যেমন আল্লাহবলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছলএবং চুলা উচ্ছ্বসিত হ’ল (অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ পানিতেউদ্বেলিত হয়ে উঠল)-(হূদ ৪০)। অন্যত্র আল্লাহবলেন, ﻓَﻔَﺘَﺤْﻨَﺎ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺑِﻤَﺎﺀٍ ﻣُّﻨْﻬَﻤِﺮٍ، ﻭَﻓَﺠَّﺮْﻧَﺎﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻋُﻴُﻮْﻧﺎً ﻓَﺎﻟْﺘَﻘَﻰ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻣْﺮٍ ﻗَﺪْ ﻗُﺪِﺭَ، ﻭَﺣَﻤَﻠْﻨَﺎﻩُﻋَﻠَﻰ ﺫَﺍﺕِ ﺃَﻟْﻮَﺍﺡٍ ﻭَﺩُﺳُﺮٍ، ﺗَﺠْﺮِﻱْ ﺑِﺄَﻋْﻴُﻨِﻨَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀً ﻟِّﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَﻛُﻔِﺮَ، ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺗَّﺮَﻛْﻨَﺎﻫَﺎ ﺁﻳَﺔً ﻓَﻬَﻞْ ﻣِﻦ ﻣُّﺪَّﻛِﺮٍ -‘তখন আমরা খুলেদিলাম আকাশের দুয়ার সমূহ প্রবল বারিপাতেরমাধ্যমে’। ‘এবং ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম নদীসমূহকে। অতঃপর উভয় পানি মিলিত হ’ল একটি পূর্বনির্ধারিত কাজে (অর্থাৎ ডুবিয়ে মারার কাজে)’। ‘আমিনূহকে আরোহন করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেকনির্মিত জলযানে’। ‘যা চলত আমার দৃষ্টির সম্মুখে। এটাতার (অর্থাৎ আল্লাহর) পক্ষ থেকে প্রতিশোধছিল, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল’। ‘আমরাএকেনিদর্শন হিসাবে রেখে দিয়েছি। অতএব কোনচিন্তাশীল আছেকি’?(ক্বামার ৫৪/১১-১৫)। যেকারণে নূহ-পুত্র ‘ইয়াম’ পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েওরেহাই পায়নি(হূদ ৪৩)। ঐ সময় কোন কোন ঢেউপাহাড়ের চূড়া হ’তেও উঁচু ছিল। অতঃপর প্লাবনবিধ্বংসীরূপ ধারণ করে এবং পাহাড়ের মত ঢেউয়েরমধ্য দিয়ে নৌকা চলতে থাকে’(হূদ ৪২)।২০০৪ সালের২৬শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সাগরতলে সংঘটিতভূমিকম্পের সুনামিতে উত্থিত ৩৩ ফুট উঁচু ঢেউনূহের তূফানকে স্মরণ করিয়ে দেয়।নৌকারআরোহীগণ :তূফানের আলামত প্রকাশিত হওয়ারসাথে সাথে নূহ (আঃ)-কে হুকুম দেওয়া হ’ল, ﻗُﻠْﻨَﺎﺍﺣْﻤِﻞْ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞٍّ ﺯَﻭْﺟَﻴْﻨِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ ‘জোড় বিশিষ্টপ্রত্যেক প্রাণীর এক এক জোড়া করে নৌকায়তুলে নাও’(হূদ ১১/৪০; মুমিনূন ২৩/২৭)। এর দ্বারাকেবল ঐসব প্রাণী বুঝানো হয়েছে, যা নর ওমাদীর মিলনে জন্মলাভ করে এবং যা মানুষেরদৈনন্দিন জীবনে অতীব প্রয়োজনীয়। যেমনগরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা ও হাঁস-মুরগী ইত্যাদি পশু-পক্ষী।এরপর নূহ (আঃ)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়কেবল তাঁর পরিবারসহ ঈমানদার নর-নারীকে নৌকায়তুলে নিতে। যাদের সংখ্যা অতীব নগণ্য ছিল(হূদ৪০)। কিন্তু সঠিক সংখ্যা কুরআন বা হাদীছেউল্লেখিত হয়নি।তবে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস(রাঃ)হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ছিলচল্লিশ জন করে পুরুষ ও নারী মোট আশি জন।প্লাবনের পর তারা ইরাকের মূছেল নগরীর যেস্থানটিতে বসতি স্থাপন করেন, তা ‘ছামানূন’ বা আশিনামে খ্যাত হয়ে যায়।[17]প্লাবনে মুক্তিপ্রাপ্তদের‘সূমর’ ( ﺳﻮﻣﺮ ) জাতি বলা হ’ত। ‘জূদী’) ﺟﻮﺩﻯ(পাহাড়েগিয়ে নৌকা নোঙর করে(হূদ ১১/৪৪)। এপাহাড়টি আজও ঐ নামেই পরিচিত। এটি নূহ (আঃ)-এর মূলআবাস ভূমি ইরাকের মূছেল নগরীর উত্তরে‘ইবনে ওমর’ দ্বীপের অদূরে আর্মেনিয়াসীমান্তে অবস্থিত। বস্ত্ততঃ এটি একটি পবর্তমালারঅংশ বিশেষের নাম। এর অপর এক অংশের নাম‘আরারাত’ পর্বত। প্রাচীন ইতিহাসে উল্লেখরয়েছে যে, ইরাকের বিভিন্ন স্থানে উক্তকিশতীর ভগ্ন টুকরা সমূহ অনেকের কাছেসংরক্ষিত আছে। যা বরকত মনে করা হয় এবং বিভিন্নরোগ-ব্যধিতে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকরা হয়।উল্লেখ্য যে, নূহের পুত্র কাফিরদেরদলভুক্ত হওয়ায় মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তুনূহের স্ত্রী সম্পর্কে এখানে কিছু বলা হয়নি।এতে স্পষ্ট হয় যে, তিনি আগেই মারা গিয়েছিলেন(ইবনু কাছীর, হূদ ১১/৪০)। তিনি গোপনে কুফরীপোষণ করতেন ও কাফিরদের সমর্থন করতেন।নূহের স্ত্রী ও লূত্বের স্ত্রী স্ব স্ব স্বামীরনবুঅতের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রেখেয়ানত করেছিল বলে স্বয়ং আল্লাহবর্ণনাকরেছেন। নবীদের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেওকুফরীর কারণে তারা জাহান্নামবাসী হয়েছেন(তাহরীম ৬৬/১০)। সম্ভবতঃ মহাপ্লাবনের সময়নূহের স্ত্রী জীবিত ছিলেন না। সেকারণগযবের ঘটনা বর্ণনায় কেবল পুত্র ইয়ামেরকথাএসেছে। কিন্তু তার মায়ের কথা আসেনি।নূহ (আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :১.প্রথম রাসূল নূহ (আঃ)-এর সত্যতার বিরুদ্ধে যে পাঁচটিআপত্তি তোলা হয়েছিল, সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠরাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যতার বিরুদ্ধেও ঐঅভিযোগগুলি তোলা হয়েছিল। শেষনবীর প্রকৃতদ্বীনী উত্তরাধিকারী হিসাবে সমাজ সংস্কারকমুত্তাক্বী আলেমগণের উপরে নবুঅতের বিষয়টিবাদে বাকী চারটি অভিযোগ যুগে যুগে উত্থাপিতহওয়াটাই স্বাভাবিক।২. নূহ (আঃ) যেমন দীর্ঘকাল যাবতনিজ জাতির পক্ষ হ’তে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগকরা সত্ত্বেও তাদের হেদায়াতের ব্যাপারে নিরাশহ’তেন না, প্রকৃত সমাজ হিতৈষী আলেম ওনেতাগণেরও তেমনি নিরাশ হওয়া উচিত নয়।৩. নবীপরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ঈমান না থাকারকারণে নূহের স্ত্রী ও পুত্র যেমন নাজাত লাভেব্যর্থ হয়েছে, তেমনি এ যুগেও হওয়া সম্ভব।কাফির ও মুশরিক সন্তান বা কোন নিকটাত্মীয়েরমাগফেরাতের জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করাজায়েয নয়।৪. ঈমানী সম্পদই বড় সম্পদ। আল্লাহরনিকটে ঈমানদারের মর্যাদা সর্বপেক্ষা বেশী।যদিও সে দুনিয়াবী জীবনে দীনহীন গরীবহয়।৫. ঈমানহীন সমাজ নেতা ও ধনী লোকদেরখুশী করার জন্য ঈমানদার গরীবদের দূরে সরিয়েদেওয়া যাবে না।৬. মৃত নেককার মানুষের অসীলায়পরকালে মুক্তি পাওয়ার ধারণার ভিত্তিতে সৃষ্টমূর্তিপূজার শিরক বিশ্ব ইতিহাসের প্রাচীনতম শিরক।এই শিরকের কারণেই নূহের কওম আল্লাহর গযবেধ্বংস হয়েছিল।তাই যাবতীয় প্রকারের শিরকথেকে তওবা করা কর্তব্য। সাথে সাথে এই মহাপাপথেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য আলেমদের এবংসমাজ ও রাষ্ট্র নেতাদের এগিয়ে আসা যরূরী।৭.সমাজ নেতাদের পথভ্রষ্টতার কারণেই দেশেআল্লাহর গযব নেমে আসে। অতএব তাদেরকেইসবার আগে হুঁশিয়ার হওয়া কর্তব্য।৮. বিপদ থেকেমুক্তি পাওয়ার জন্যআল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করারসাথে সাথে সাধ্যমত বাস্তব প্রচেষ্টা চালাতে হয়।যেমন নূহ (আঃ) প্রথমে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনাকরেন। অতঃপর গযব থেকেবাঁচার জন্য আল্লাহরহুকুমে নৌকা তৈরী করেন।৯. আল্লাহ পাক স্বীয়অহী দ্বারা বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে যুগেযুগেবিভিন্ন শিল্পকর্মের সূচনা করেছেন, যেমনআদম (আঃ)-এর মাধ্যমেকৃষিকর্ম ও চাকার প্রচলনকরেছেনএবং নূহ (আঃ)-এর মাধ্যমে জাহায শিল্পেরসূচনা করেছেন।১০. দুনিয়াবী জৌলুস সত্ত্বেওযালেমরা সর্বযুগেই নিন্দিত ও ধিকৃত হয়। পক্ষান্তরেনির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও ঈমানদারগণ সর্বযুগে নন্দিতও প্রশংসিত হন।১১. কিসে মানুষের প্রকৃত মঙ্গলনিহিত রয়েছে, মানুষ নিজে তা নির্ণয় করতে পারেনা। তাকে সর্বদা আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষীথাকতে হয়। তাই ‘আল্লাহর অহি’ তথা পবিত্র কুরআনওছহীহ হাদীছের হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত এবংচূড়ান্ত সত্যের মাপকাঠি।১২. পূর্বতন সকল নবীরদাওয়াত ছিলএক ও অভিন্ন এবং তা ছিল নির্ভেজালতাওহীদের প্রতি দাওয়াত। মানুষের সার্বিকজীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠাই হ’ল প্রকৃত অর্থেইক্বামতে দ্বীন।১৩. আল্লাহ স্বীয় নেককারবান্দাগণের পক্ষে তাদের শত্রুদের থেকেপ্রতিশোধ নিয়ে থাকেন এবং নেক বান্দাদের মুক্তকরেন। যেমন নূহের শত্রুদের থেকেআল্লাহবদলা নিয়েছিলেন এবং নূহ ও তাঁর ঈমানদার সাথীদেরমুক্ত করেছিলেন।১৪. ঈমানদারগণের বিরুদ্ধেবিশ্বইতিহাসের প্রথম তোহমত ছিল এই যে,তারা হ’লসমাজের দীনহীন ও স্বল্পবুদ্ধির লোক ( ﻫﻢﺃﺭَﺍﺫَﻟُﻨَﺎ ﺑَﺎﺩِﻯَ ﺍﻟﺮﺃﻯ -হূদ ২৭)। এ যুগেও তার ব্যতিক্রমনয়।১৫. নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারী সমাজসংষ্কারকগণ সমাজের গালমন্দ খেয়েও সমাজ ত্যাগকরেন না। কিন্তু তাঁরা বদ দো‘আ করলে আল্লাহরগযব নেমে আসে।[1]. মুসলিম হা/৩২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায় ৮৪ অনুচ্ছেদ। রাবীআবু হুরায়রা (রাঃ)।[2]. কুরতুবী, সূরা আনকাবূত ১৪আয়াতের ব্যাখ্যা।[3]. দ্রঃ কুরতুবী টীকা সূরা হূদ৩৮-৪০ আয়াত।[4]. তাফসীর ইবনে কাছীর সূরাছাফফাত ৭৭ আয়াতের ব্যাখ্যা।[5]. তিরমিযীহা/৩২৩০-৩১; আলবানী সনদ ‘যঈফ’ বলেছেন;আহমাদ হা/১৯৯৮২ তাহকীকঃ হামযাহ আহমাদ; হাকেম২/৫৪৬ পৃঃ; তিনি একে ‘ছহীহ’ বলেছেন ওযাহাবীতাকে সমর্থন করেছেন।[6]. ঐ।[7]. মুহাম্মাদসালামাহ জাবর, তারীখুল আম্বিয়া (কুয়েত : মাকতাবাছাহওয়াহ ১৪১৩/১৯৯৩), পৃঃ ১৪৩-৪৪, ছহীহ ইবনু হিববান,আবু যর গেফারী হ’তে মরফূ সূত্রে; সনদ যঈফ।[8]. বাহরে মুহীত-এর বরাতে তাফসীরমা‘আরেফুল কুরআন পৃঃ ৪৫২ সূরা আ‘রাফ ৫৯-৬৪ আয়াত।[9]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৭২, ‘ক্বিয়ামতেরঅবস্থা’ অধ্যায় ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ।[10].কুরতুবী, ইবনু কাছীর; সূরা আনকাবূত ১৪-১৫ আয়াত।[11]. তিরমিযী, মিশকাত হা/১১৮ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’অনুচ্ছেদ; তিরমিযী অত্র হাদীছকে ‘হাসানছহীহ’ বলেছেন। অতঃপর ‘সালাম’ অনুচ্ছেদেবর্ণিত ৪৬৬২ নং হাদীছটিকে তিনি ‘হাসান গরীব’বলেছেন। যেখানে আদম (আঃ)-এর বয়স ৯৪০ বলাহয়েছে। ছাহেবে মিরক্বাত ও ছাহেবে তুহফাপ্রথমোক্তহাদীছকে ‘অগ্রগণ্য’ ( ﺃﺭﺟﺢ( বলেছেন।[12]. যথাক্রমে আলে ইমরান৩/৩৩-৩৪; নিসা ৪/১৬৩; আন‘আম ৬/৬, ৮৪; আ‘রাফ৭/৫৯, ৬৯, ১৩৩= ৩; তওবা ৯/৭০; ইউনুস ১০/৭১; হূদ১১/২৫, ৩২, ৩৬, ৪২, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৮৯= ৮; ইবরাহীম১৪/৯; ইসরা ১৭/৩, ১৭; মারিয়াম১৯/৫৮; আম্বিয়া ২১/৭৬;হজ্জ ২২/৪২; মুমিনূন ২৩/২৩; ফুরক্বান ২৫/৩৭;শো‘আরা ২৬/১০৫, ১০৬, ১১৬; আনকাবূত ২৯/১৪-১৫;আহযাব ৩৩/৭; ছাফফাত ৩৭/৭৫, ৭৯; ছোয়াদ ৩৮/১২;গাফের/মুমিন ৪০/৫, ৩১-৩৩= ৪; শূরা ৪২/১৩; ক্বাফ৫০/১২; যারিয়াত ৫১/৪৬; নাজম ৫৩/৫২; ক্বামার৫৪/৯-১৬= ৮; হাদীদ ৫৭/২৬; তাহরীম ৬৬/১০; নূহ৭১/১-২৮= ২৮। সর্বমোট = ৮১ টি।[13]. ইবনুকাছীর, সূরা নূহ। বুখারী মওকুফ সূত্রে আবদুল্লাহইবনে আববাস(রাঃ) হ’তে এটি বর্ণনা করেন‘তাফসীর’ অধ্যায় হা/৪৯২০।[14]. বুখারী ‘তাফসীর’অধ্যায় হা/৪৯২০;তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা নূহ।[15]. তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা নূহ।[16].কুরতুবী, হূদ ৪০ আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।[17].কুরতুবী, ইবনু কাছীর; হূদ ৪০ আয়াতের ব্যাখ্যাদ্রষ্টব্য।

No comments:

Post a Comment

Translate