Wednesday, March 3, 2021

হযরত সুলাইমান আঃ এর জীবনী

 




হযরত সোলায়মান (আ:)১৮. হযরত সুলায়মান (আলাইহিস সালাম)সূচীপত্র♦বাল্যকালে সুলায়মান♦সুলায়মানের বৈশিষ্ট্যসমূহ♦দু’টি সূক্ষ্মতত্ত্ব♦সুলায়মানের জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী(১) ন্যায়বিচারের ঘটনা(২) পিপীলিকার ঘটনা(৩) ‘হুদহুদ’ পাখির ঘটনা(৪) রাণী বিলক্বীসের ঘটনা(৫) অশ্বকুরবানীর ঘটনা♦সিংহাসনের উপরে একটি নিষ্প্রাণ দেহ প্রাপ্তির ঘটনা(৭) ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলারফল(৮) হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের ঘটনা(৯) বায়তুল মুক্বাদ্দাস নির্মাণ ও সুলায়মান (আঃ)-এরমৃত্যুর বিস্ময়কর ঘটনা♦মৃত্যু কাহিনীর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ♦সংশয় নিরসন♦সুলায়মান(আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ♦সুলায়মানের মৃত্যু ও রাজত্বকালহযরতদাঊদ (আঃ)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলায়মান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের ন্যূনাধিক দেড় হাযার বছর পূর্বে তিনি নবী হন। সুলায়মান ছিলেন পিতার ১৯জনপুত্রের অন্যতম। আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুঅতের সম্পদে সমৃদ্ধকরেন। এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নে‘মত দান করেন, যা অন্য কোন নবীকে দান করেননি।ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলায়মান (আঃ)-এর মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুলমুক্বাদ্দাসেরনির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন (মাযহারী, কুরতুবী)।তবে তিনি কতবছর বয়সে নবী হয়েছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না। শাম ও ইরাক অঞ্চলে পিতাররেখে যাওয়া রাজ্যের তিনিবাদশাহ ছিলেন। তাঁর রাজ্য তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সুখীওশক্তিশালী রাজ্য ছিল। কুরআনে তাঁর সম্পর্কে ৭টি সূরায় ৫১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[1]আমরা সেগুলিকে একত্রিত করে কাহিনীরূপে পেশ করার চেষ্টা পাবইনশাআল্লাহ।বাল্যকালেসুলায়মান :(১) আল্লাহ পাক সুলায়মানকে তার বাল্যকালেই গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দানকরেছিলেন। ছাগপালের মালিক ও শস্যক্ষেতের মালিকের মধ্যে পিতা হযরত দাঊদ (আঃ)যেভাবে বিরোধ মীমাংসা করেছিলেন, বালক সুলায়মান তার চাইতে উত্তম ফায়ছালা পেশকরেছিলেন। ফলে হযরত দাঊদ (আঃ) নিজের পূর্বের রায় বাতিল করে পুত্রের দেওয়াপ্রস্তাব গ্রহণ করেন ও সে মোতাবেক রায় দান করেন।উক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেআললাহ বলেন, ﻭَﺩَﺍﻭُﻭﺩَ ﻭَﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺇِﺫْ ﻳَﺤْﻜُﻤَﺎﻥِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺮْﺙِ ﺇِﺫْ ﻧَﻔَﺸَﺖْ ﻓِﻴْﻪِ ﻏَﻨَﻢُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﻟِﺤُﻜْﻤِﻬِﻢْﺷَﺎﻫِﺪِﻳْﻦَ- ﻓَﻔَﻬَّﻤْﻨَﺎﻫَﺎ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻭَﻛُﻼًّ ﺁﺗَﻴْﻨَﺎ ﺣُﻜْﻤﺎً ﻭَّﻋِﻠْﻤﺎً ‏(ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ৭৮-৭৯)-‘আর স্মরণ কর দাঊদ ওসুলায়মানকে,যখন তারা একটি শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল, যাতে রাত্রিকালে কারুমেষপাল ঢুকে পড়েছিল। আর তাদের বিচারকার্য আমাদের সম্মুখেই হচ্ছিল’। ‘অতঃপর আমরাসুলায়মানকে মোকদ্দমাটির ফায়ছালা বুঝিয়ে দিলাম এবং আমরা উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দানকরেছিলাম’ (আম্বিয়া২১/৭৮-৭৯)।ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ভূষিত সুলায়মানকেপরবর্তীতে যথার্থভাবেই পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,ﻭَﻭَﺭِﺙَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﺩَﺍﻭُﻭﺩَ ‘সুলায়মান দাঊদেরউত্তরাধিকারী হয়েছিলেন’ (নমল ২৭/১৬)। অন্যত্রআল্লাহ বলেন, ﻭَﻭَﻫَﺒْﻨَﺎ ﻟِﺪَﺍﻭُﻭﺩَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﺇِﻧَّﻪُ ﺃَﻭَّﺍﺏٌ ‏( ﺹ ৩০)- ‘আমরা দাঊদেরজন্যসুলায়মানকে দান করেছিলাম। কতই না সুন্দর বান্দা সে এবং সে ছিল (আমার প্রতি) সদাপ্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/৩০)।(২) আরেকটি ঘটনা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, যানিম্নরূপ: ‘দু’জন মহিলার দু’টি বাচ্চা ছিল। একদিন নেকড়ে বাঘ এসে একটি বাচ্চাকে নিয়ে যায়।তখন প্রত্যেকে বলল যে, তোমার বাচ্চা নিয়ে গেছে। যেটি আছে ওটি আমার বাচ্চা।বিষয়টি ফায়ছালার জন্য দুই মহিলা খলীফা দাঊদের কাছে এলো। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারপক্ষে রায় দিলেন। তখন তারা বেরিয়ে সুলায়মানের কাছে এলো এবং সবকথাখুলে বলল।সুলায়মান তখন একটি ছুরি আনতে বললেন এবং বাচ্চাটাকেদু’টুকরা করে দু’মহিলাকে দিতেচাইলেন। তখন বয়োকনিষ্ঠ মহিলাটি বলল, ইয়ারহামুকাল্লাহু ‘আল্লাহ আপনাকে অনুগ্রহ করুন’বাচ্চাটি ঐ মহিলার। তখন সুলায়মান কনিষ্ঠমহিলার পক্ষে রায় দিলেন’।[2]সুলায়মানের বৈশিষ্ট্য সমূহ:দাঊদ (আঃ)-এর ন্যায় সুলায়ামন (আঃ)-কেও আল্লাহ বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন, যা আরকাউকে দান করেননি। যেমন: (১) বায়ু প্রবাহ অনুগত হওয়া (২) তামাকে তরল ধাতুতে পরিণত করা(৩) জিনকে অধীনস্ত করা (৪) পক্ষীকূলকে অনুগত করা (৫) পিপীলিকার ভাষা বুঝা (৬)অতুলনীয় সাম্রাজ্য দান করা (৭) প্রাপ্ত অনুগ্রহ রাজির হিসাব নারাখার অনুমতি পাওয়া। নিম্নেবিস্তারিতভাবে বর্ণিত হ’ল:১. বায়ু প্রবাহকে তাঁর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর হুকুমমত বায়ুতাঁকে তাঁর ইচ্ছামত স্থানে বহন করে নিয়ে যেত। তিনি সদলবলে বায়ুর পিঠে নিজ সিংহাসনেসওয়ার হয়ে দু’মাসের পথ একদিনে পৌঁছে যেতেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟِﺴُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَﺍﻟﺮِّﻳﺢَ ﻏُﺪُﻭُّﻫَﺎ ﺷَﻬْﺮٌ ﻭَﺭَﻭَﺍﺣُﻬَﺎ ﺷَﻬْﺮٌ -… ‏( ﺳﺒﺎ ৩৪)-‘এবং আমরা সুলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলামবায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ ও বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত…’ (সাবা ৩৪/১২)।উল্লেখ্য যে, ইবনু আববাস (রাঃ)-এরনামে যে কথা বর্ণিত হয়েছে যে, মানুষ ও জিনের চারলক্ষ আসন বিশিষ্ট বিশাল বহর নিয়ে সুলায়মান বায়ু প্রবাহে যাত্রা করতেন এবং সারা পথ ছালাতে রতথাকতেন ও এই মহা নে‘মত প্রদানের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। এত দ্রুতচলাসত্ত্বেও বায়ু তরঙ্গে তাঁদের উপরে কোনরূপ চাপ সৃষ্টি হ’ত না এবং রোদ বৃষ্টি থেকেরক্ষার জন্য মাথার উপর দিয়ে লাখ লাখ পাখি তাদেরকে ছায়া করে যেত’ ইত্যাদি যেসব কথাতাফসীরের কেতাব সমূহে বর্ণিত হয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন ইস্রাঈলী উপকথা মাত্র।আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟِﺴُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺍﻟﺮِّﻳﺢَ ﻋَﺎﺻِﻔَﺔً ﺗَﺠْﺮِﻱْ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﺑَﺎﺭَﻛْﻨَﺎ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﺑِﻜُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍﻋَﺎﻟِﻤِﻴْﻦَ – ‏(ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ৮১)-‘আর আমরা সুলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে। যা তারআদেশে প্রবাহিত হ’ত ঐ দেশের দিকে, যেখানে আমরা কল্যাণ রেখেছি। আর আমরাসকল বিষয়ে সম্যক অবগত রয়েছি’ (আম্বিয়া ২১/৮১)। অন্যত্র আল্লাহ উক্ত বায়ুকে ﺭُﺧَﺎﺀবলেছেন (ছোয়াদ ৩৮/৩৬)। যার অর্থ মৃদু বায়ু, যা শূন্যে তরঙ্গ-সংঘাত সৃষ্টি করে না। ﻋَﺎﺻِﻔَﺔٌও ﺭُﺧَﺎﺀ দু’টি বিশেষণের সমন্বয় এভাবে হ’তে পারে যে, কোনরূপ তরঙ্গ সংঘাত সৃষ্টি নাকরে তীব্র বেগে বায়ু প্রবাহিত হওয়াটা ছিল আল্লাহর বিশেষ রহমতএবং সুলায়মানের অন্যতমমু‘জেযা।উল্লেখ্য যে, হাসান বাছরীর নামে যেকথা বলা হয়ে থাকে যে, একদিন ঘোড়াতদারকি করতে গিয়ে সুলায়মানের আছরের ছালাত ক্বাযা হয়ে যায়। সেই ক্ষোভে তিনি সবঘোড়া যবেহ করে দেন। ফলেতার বিনিময়ে আল্লাহ তাঁকে পুরস্কার স্বরূপ বায়ু প্রবাহকেঅনুগত করে দেন বলে যেকথা তাফসীরের কেতাবসমূহে চালু আছে, তার কোন ভিত্তিনেই। এগুলি হিংসুক ইহুদীদের রটনা মাত্র।[3]২. তামার ন্যায় শক্ত পদার্থকে আল্লাহ সুলায়মানেরজন্য তরল ধাতুতে পরিণত করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﺃَﺳَﻠْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﻋَﻴْﻦَ ﺍﻟْﻘِﻄْﺮِ … ‘আমরাতার জন্য গলিত তামার একটি ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম…’ (সাবা ৩৪/১২)। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ঐগলিত ধাতু উত্তপ্ত ছিল না। বরং তা দিয়ে অতি সহজে পাত্রাদি তৈরী করা যেত। সুলায়মানের পরথেকেই তামা গলিয়ে পাত্রাদি তৈরী করা শুরু হয় বলে কুরতুবী বর্ণনা করেছেন। পিতাদাঊদের জন্য ছিল লোহা গলানোর মু‘জেযা এবং পুত্র সুলায়মানের জন্য ছিল তামা গলানোরমু‘জেযা। আর এজন্যেই আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেন, ﺇِﻋْﻤَﻠُﻮﺍ ﺁﻝَ ﺩَﺍﻭُﻭﺩَ ﺷُﻜْﺮﺍً ﻭَﻗَﻠِﻴﻞٌ ﻣِّﻦْﻋِﺒَﺎﺩِﻱَ ﺍﻟﺸَّﻜُﻮﺭُ ‘হে দাঊদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। বস্ত্ততঃ আমারবান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ’ (সাবা ৩৪/১৩)।দু’টি সূক্ষ্মতত্ত্ব :(ক) দাঊদ (আঃ)-এরজন্য আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক শক্ত ও ঘন পদার্থ লোহাকে নরম ও সুউচ্চ পর্বতমালাকেঅনুগত করে দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে সুলায়মান (আঃ)-এর জন্য আল্লাহ শক্ত তামাকেগলানো এবং বায়ু, জিন ইত্যাদি এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বস্ত্তকে অনুগত করে দিয়েছিলেন, যাচোখেও দেখা যায় না। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর শক্তি বড়-ছোট সবকিছুরমধ্যে পরিব্যাপ্ত।(খ) এখানে আরেকটি বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহরতাক্বওয়াশীল অনুগত বান্দারা আল্লাহর হুকুমে বিশ্বচরাচরের সকল সৃষ্টির উপরে আধিপত্যকরতে পারে এবং সবকিছুকে বশীভূত করে তা থেকে খিদমত নিতে পারে।৩. জিনকে তাঁরঅধীন করে দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠِﻦِّ ﻣَﻦ ﻳَّﻌْﻤَﻞُ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺭَﺑِّﻪِ …‏( ﺳﺒﺎ ১২)- ‘আর জিনের মধ্যে কিছুসংখ্যক তার (সুলায়মানের) সম্মুখে কাজ করত তারপালনকর্তার (আল্লাহর) আদেশে…’ (সাবা ৩৪/১২)।অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦِ ﻣَﻦْﻳَّﻐُﻮْﺻُﻮْﻥَ ﻟَﻪُ ﻭَﻳَﻌْﻤَﻠُﻮْﻥَ ﻋَﻤَﻼً ﺩُﻭْﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺣَﺎﻓِﻈِﻴْﻦَ- ‏(ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ৮২)-‘এবং আমরা তার অধীনকরে দিয়েছিলাম শয়তানদের কতককে, যারা তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত এবং এছাড়া অন্যআরও কাজ করত। আমরা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতাম’(আম্বিয়া ২১/৮২)।অন্যত্র বলাহয়েছে, ﻭَﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦَ ﻛُﻞَّ ﺑَﻨَّﺎﺀٍ ﻭَّﻏَﻮَّﺍﺹٍ- ﻭَﺁﺧَﺮِﻳْﻦَ ﻣُﻘَﺮَّﻧِﻴْﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺻْﻔَﺎﺩِ- ‏(ﺹ ৩৭-৩৮)-‘আর সকলশয়তানকে তার অধীন করে দিলাম, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী’। ‘এবং অন্য আরওঅনেককে অধীন করে দিলাম,যারা আবদ্ধ থাকত শৃংখলে’ (ছোয়াদ৩৮/৩৭-৩৮)।বস্ত্ততঃজিনেরা সাগরে ডুব দিয়ে তলদেশ থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত তুলে আনত এবংসুলায়মানের হুকুমে নির্মাণ কাজ সহ যেকোন কাজ করার জন্য সদা প্রস্ত্তত থাকত। ঈমানদারজিনেরা তো ছওয়াবের নিয়তে স্বেচ্ছায় আনুগত্য করত। কিন্তু দুষ্ট জিনগুলোবেড়ীবদ্ধ অবস্থায় সুলায়মানের ভয়ে কাজ করত। এই অদৃশ্য শৃংখল কেমন ছিল, তা কল্পনাকরার দরকার নেই। আদেশ পালনে সদাপ্রস্ত্তত থাকাটাও এক প্রকার শৃংখলবদ্ধ থাকা বৈ কি!‘শয়তান’হচ্ছে আগুন দ্বারা সৃষ্ট বুদ্ধি ও চেতনা সম্পন্ন এক প্রকার সূক্ষ্ম দেহধারী জীব।জিনেরমধ্যকার অবাধ্য ও কাফির জিনগুলিকেই মূলতঃ ‘শয়তান’ নামে অভিহিত করা হয়। আয়াতে ‘শৃংখলবদ্ধ’কথাটি এদের জন্যেই বলা হয়েছে। আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকায় এরা সুলায়মানের কোনক্ষতি করতে পারত না। বরং সর্বদা তাঁর হুকুম পালনের জন্য প্রস্ত্তত থাকত। তাদের বিভিন্নকাজের মধ্যে আল্লাহ নিজেই কয়েকটি কাজের কথাউল্লেখ করেছেন। যেমন, ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮْﻥَﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺂﺀُ ﻣِﻦْ ﻣَّﺤَﺎﺭِﻳْﺐَ ﻭَﺗَﻤَﺎﺛِﻴْﻞَ ﻭَﺟِﻔَﺎﻥٍ ﻛَﺎﻟْﺠَﻮَﺍﺏِ ﻭَﻗُﺪُﻭْﺭٍ ﺭَّﺍﺳِﻴَﺎﺕٍ … ‏( ﺳﺒﺎ ১৩)-‘তারা সুলায়মানেরইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাষ্কর্য, হাউয সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লীর উপরে স্থাপিত বিশালডেগনির্মাণ করত…’ (সাবা ৩৪/১৩)। উল্লেখ্য যে, ﺗﻤﺎﺛﻴﻞ তথা ভাষ্কর্য কিংবা চিত্র ও প্রতিকৃতিঅংকন বা স্থাপন যদি গাছ বা প্রাকৃতিক দৃশ্যের হয়, তাহ’লে ইসলামে তা জায়েয রয়েছে। কিন্তুযদি তা প্রাণীদেহের হয়, তবে তা নিষিদ্ধ।৪. পক্ষীকুলকে সুলায়মানের অনুগত করেদেওয়া হয়েছিল এবং তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﻭَﺭِﺙَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﺩَﺍﻭُﻭﺩَﻭَﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋُﻠِّﻤْﻨَﺎ ﻣَﻨﻄِﻖَ ﺍﻟﻄَّﻴْﺮِ ﻭَﺃُﻭﺗِﻴﻨَﺎﻣِﻦ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞُ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴْﻦُ ু ‏( ﻧﻤﻞ১৬)-‘সুলায়মান দাঊদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল এবং বলেছিল, হে লোক সকল!আমাদেরকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেওয়াহয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব’ (নমল ২৭/১৬)।পক্ষীকুল তাঁর হুকুমে বিভিন্নকাজ করত। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পত্র তিনি হুদহুদ পাখির মাধ্যমেপার্শ্ববর্তী ‘সাবা’ রাজ্যের রাণী বিলক্বীসের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। এ ঘটনাপরে বিবৃত হবে।৫. পিপীলিকার ভাষাও তিনি বুঝতেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺗَﻮْﺍ ﻋَﻠَﻰﻭَﺍﺩِﻱ ﺍﻟﻨَّﻤْﻞِ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻧَﻤْﻠَﺔٌ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﻤْﻞُ ﺍﺩْﺧُﻠُﻮْﺍ ﻣَﺴَﺎﻛِﻨَﻜُﻢْ ﻻَ ﻳَﺤْﻄِﻤَﻨَّﻜُﻢْ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﻭَﺟُﻨُﻮﺩُﻩُ ﻭَﻫُﻢْ ﻻَ ﻳَﺸْﻌُﺮُﻭْﻥَ-ﻓَﺘَﺒَﺴَّﻢَ ﺿَﺎﺣِﻜﺎً ﻣِّﻦ ﻗَﻮْﻟِﻬَﺎ -… ‏( ﻧﻤﻞ ১৮-১৯)-‘অবশেষে সুলায়মান তার সৈন্যদল নিয়ে পিপীলিকাঅধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল। তখন পিপীলিকা (নেতা) বলল, হে পিপীলিকা দল! তোমরা স্ব স্বগৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের পিষ্ট করেফেলবে’। ‘তার এই কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসল… (নমল ২৭/১৮-১৯)।৬. তাঁকে এমন সাম্রাজ্যদান করা হয়েছিল, যা পৃথিবীতে আর কাউকে দান করা হয়নি। এজন্য আল্লাহর হুকুমে তিনিআল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﻫَﺐْ ﻟِﻲْ ﻣُﻠْﻜﺎًﻻَّ ﻳَﻨْﺒَﻐِﻲ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ ﻣِّﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻱْ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏُ- ‏(ﺹ ৩৫)-‘সুলায়মান বলল, হে আমার পালনকর্তা!আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন এক সাম্রাজ্য দান কর, যা আমার পরে আর কেউ যেন নাপায়। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা’ (ছোয়াদ ৩৮/৩৫)।উল্লেখ্য যে, পয়গম্বরগণের কোন দো‘আআল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে হয় না। সে হিসাবে হযরত সুলায়মান (আঃ) এ দো‘আটিও আল্লাহতা‘আলার অনুমতিক্রমেই করেছিলেন। কেবল ক্ষমতা লাভ এর উদ্দেশ্য ছিল না। বরং এরপিছনে আল্লাহর বিধানাবলী বাস্তবায়ন করা এবং তাওহীদের ঝান্ডাকে সমুন্নত করাই মূলউদ্দেশ্য ছিল।কেননা আল্লাহ জানতেন যে, রাজত্ব লাভের পর সুলায়মান তাওহীদ ও ইনছাফপ্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করবেন এবং তিনি কখনোই অহংকারের বশীভূত হবেন না। তাই তাঁকেএরূপ দো‘আর অনুমতি দেওয়া হয় এবং সে দো‘আ সর্বাংশে কবুল হয়।ইসলামে নেতৃত্ব ওশাসন ক্ষমতা চেয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ। আল্লামা জুবাঈ বলেন, আল্লাহর অনুমতিক্রমেই তিনি এটাচেয়েছিলেন। কেননা নবীগণ আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কোন সুফারিশ করতে পারেন না।তাছাড়াএটা বলাও সঙ্গত হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেনযে, বর্তমানে(জাদু দ্বারা বিপর্যস্ত এই দেশে) তুমি ব্যতীত দ্বীনের জন্য কল্যাণকর এবং যথার্থশাসনের যোগ্যতা অন্য কারু মধ্যে নেই। অতএব তুমি প্রার্থনা করলে আমি তোমাকে তাদান করব।’ সেমতে তিনি দো‘আ করেন ও আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন।[4]৭. প্রাপ্তঅনুগ্রহরাজির হিসাব রাখা বা না রাখার অনুমতি প্রদান। আল্লাহ পাক হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর রাজত্বলাভের দো‘আ কবুল করার পরে তার প্রতি বায়ু, জিন, পক্ষীকুল ও জীব-জন্তু সমূহকেঅনুগত করে দেন। অতঃপর বলেন, ﻫَﺬَﺍ ﻋَﻄَﺎﺅُﻧَﺎ ﻓَﺎﻣْﻨُﻦْ ﺃَﻭْ ﺃَﻣْﺴِﻚْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏٍ، ﻭَﺇِﻥَّ ﻟَﻪُ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎﻟَﺰُﻟْﻔَﻰ ﻭَﺣُﺴْﻦَ ﻣَﺂﺏٍ- ‏(ﺹ ৩৯-৪০)-‘এসবই আমার অনুগ্রহ। অতএব এগুলো তুমি কাউকে দাও অথবানিজে রেখে দাও, তার কোন হিসাব দিতে হবে না’। ‘নিশ্চয়ই তার (সুলায়মানের) জন্য আমারকাছে রয়েছে নৈকট্য ও শুভ পরিণতি’ (ছোয়াদ ৩৮/৩৯-৪০)।বস্ত্ততঃ এটি ছিল সুলায়মানেরআমানতদারী ও বিশ্বস্ততার প্রতি আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রদত্ত একপ্রকার সনদপত্র। পৃথিবীরকোন ব্যক্তির জন্য সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন সত্যায়নপত্র নাযিলহয়েছে বলে জানা যায় না। অথচ এই মহান নবী সম্পর্কে ইহুদী-নাছারা বিদ্বানরা বাজে কথারটনা করে থাকে।সুলায়মানের জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী :(১) ন্যায় বিচারের ঘটনা: ছাগপালের মালিক ও শস্যক্ষেতের মালিকের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় তাঁর দেওয়া প্রস্তাববাদশাহ দাঊদ (আঃ) গ্রহণকরেন ও নিজের দেওয়া পূর্বের রায় বাতিল করে পুত্র সুলায়মানেরদেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী রায় দেন ও তা কার্যকর করেন। এটি ছিল সুলায়মানের বাল্যকালেরঘটনা, যা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন (দ্র: আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)। এ ঘটনা আমরাদাঊদ (আঃ)-এর কাহিনীতে বলে এসেছি।(২) পিপীলিকার ঘটনা : হযরত সুলায়মান (আঃ) একদা তাঁরবিশাল সেনাবাহিনী সহ একটি এলাকা অতিক্রম করছিলেন। ঐ সময় তাঁর সাথে জিন, মানুষপক্ষীকুল ছিল। যে এলাকা দিয়ে তাঁরা যাচ্ছিলেনসে এলাকায় বালির ঢিবি সদৃশ পিপীলিকাদের বহুবসতঘর ছিল। সুলায়মান বাহিনীকে আসতে দেখে পিপীলিকাদের সর্দার তাদেরকে বলল,তোমরা শীঘ্র পালাও। নইলে পাদপিষ্ট হয়ে শেষ হয়ে যাবে। সুলায়মান (আঃ)পিপীলিকাদের এই বক্তব্য শুনতে পেলেন। এ বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ: ﻭَﻭَﺭِﺙَﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﺩَﺍﻭُﻭﺩَ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻋُﻠِّﻤْﻨَﺎ ﻣَﻨﻄِﻖَ ﺍﻟﻄَّﻴْﺮِ ﻭَﺃُﻭﺗِﻴﻨَﺎﻣِﻦ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞُﺍﻟْﻤُﺒِﻴﻦُ- ﻭَﺣُﺸِﺮَ ﻟِﺴُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺟُﻨُﻮﺩُﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠِﻦِّ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧﺲِ ﻭَﺍﻟﻄَّﻴْﺮِ ﻓَﻬُﻢْ ﻳُﻮﺯَﻋُﻮﻥَ – ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺗَﻮْﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﺍﺩِﻱﺍﻟﻨَّﻤْﻞِ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻧَﻤْﻠَﺔٌ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﻤْﻞُ ﺍﺩْﺧُﻠُﻮﺍ ﻣَﺴَﺎﻛِﻨَﻜُﻢْ ﻻَ ﻳَﺤْﻄِﻤَﻨَّﻜُﻢْ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﻭَﺟُﻨُﻮﺩُﻩُ ﻭَﻫُﻢْ ﻻَ ﻳَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ-ﻓَﺘَﺒَﺴَّﻢَ ﺿَﺎﺣِﻜﺎً ﻣِّﻦ ﻗَﻮْﻟِﻬَﺎ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺃَﻭْﺯِﻋْﻨِﻲ ﺃَﻥْ ﺃَﺷْﻜُﺮَ ﻧِﻌْﻤَﺘَﻚَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺘَﻌَﻠَﻲَّ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻭَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﺃَﻥْ ﺃَﻋْﻤَﻞَﺻَﺎﻟِﺤﺎً ﺗَﺮْﺿَﺎﻩُ ﻭَﺃَﺩْﺧِﻠْﻨِﻲ ﺑِﺮَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻓِﻲ ﻋِﺒَﺎﺩِﻙَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ – ‏( ﻧﻤﻞ ১৬-১৯)-‘সুলায়মান দাঊদেরস্থলাভিষিক্ত হ’ল এবং বলল, হে লোকসকল! আমাদেরকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়াহয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্টশ্রেষ্ঠত্ব’ (নমল ১৬)। ‘অতঃপর সুলায়মানের সম্মুখে তারসোনাবাহিনীকে সমবেত করা হ’লজিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হ’ল’ (১৭)। ‘অতঃপরযখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হ’ল, তখন এক পিপীলিকা বলল, ‘হেপিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনীঅজ্ঞাতসারে তোমদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে’ (১৮)। ‘তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকিহাসল এবং বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও, যেন আমি তোমারনে‘মতেরশুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমিতোমার পসন্দনীয় সৎকর্মাদি করতে পারি এবং তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমারসৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৬-১৯)।উপরোক্ত আয়াতগুলিতেপ্রমাণিত হয় যে, সুলায়মান (আঃ) কেবল পাখির ভাষা নয়, বরং সকল জীবজন্তু এমনকি ক্ষুদ্রপিঁপড়ার কথাও বুঝতেন। এজন্য তিনি মোটেই গর্ববোধ না করে বরং আল্লাহর অনুগ্রহেরপ্রতি শুকরিয়া আদায় করেন এবং নিজেকে যাতে আল্লাহ অন্যান্য সৎকর্মশীলদেরঅন্তর্ভুক্ত করেন সে প্রার্থনা করেন। এখানে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, তিনিকেবল জিন-ইনসানের নয় বরং তাঁর সময়কার সকল জীবজন্তুরও নবী ছিলেন। তাঁর নবুঅতকেসবাই স্বীকার করত এবং সকলে তাঁর প্রতি আনুগত্য পোষণ করত। যদিও জিন ও ইনসানব্যতীত অন্য প্রাণী শরী‘আত পালনের হকদার নয়।(৩) ‘হুদহুদ’ পাখির ঘটনা : হযরত সুলায়মান(আঃ) আল্লাহর হুকুমে পক্ষীকুলের আনুগত্য লাভ করেন। একদিন তিনি পক্ষীকুলকেডেকে একত্রিত করেন ও তাদের ভাল-মন্দ খোঁজ-খবর নেন। তখন দেখতে পেলেনযে, ‘হুদহুদ’ পাখিটা নেই। তিনি অনতিবিলম্বে তাকে ধরে আনার জন্যকড়া নির্দেশ জারিকরলেন। সাথে তার অনুপস্থিতির উপযুক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেন। উক্ত ঘটনাকুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ: ﻭَﺗَﻔَﻘَّﺪَ ﺍﻟﻄَّﻴْﺮَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﻟِﻲَ ﻻَ ﺃَﺭَﻯ ﺍﻟْﻬُﺪْﻫُﺪَ ﺃَﻡْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻐَﺎﺋِﺒِﻴﻦَ- ﻟَﺄُﻋَﺬِّﺑَﻨَّﻪُﻋَﺬَﺍﺑﺎً ﺷَﺪِﻳﺪﺍً ﺃَﻭْ ﻟَﺄَﺫْﺑَﺤَﻨَّﻪُ ﺃَﻭْ ﻟَﻴَﺄْﺗِﻴَﻨِّﻲ ﺑِﺴُﻠْﻄَﺎﻥٍ ﻣُّﺒِﻴﻦٍ – ﻓَﻤَﻜَﺚَ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﻌِﻴﺪٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺣَﻄْﺖُ ﺑِﻤَﺎ ﻟَﻢْ ﺗُﺤِﻂْ ﺑِﻪِﻭَﺟِﺌْﺘُﻚَ ﻣِﻦْ ﺳَﺒَﺈٍ ﺑِﻨَﺒَﺈٍ ﻳَّﻘِﻴﻦٍ – ‏( ﻧﻤﻞ ২০-২২)-‘সুলায়মান পক্ষীকুলের খোঁজ-খবরনিল। অতঃপর বলল,কি হ’ল হুদহুদকে দেখছি না যে? না-কি সে অনুপস্থিত’(নমল ২০)। সে বলল, ‘আমি অবশ্যইতাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা যবহ করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ’ (২১)।‘কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ এসে হাযির হয়ে বলল,(হে বাদশাহ!) আপনি যে বিষয়ে অবগতনন, আমিতা অবগত হয়েছি। আমি আপনার নিকটে ‘সাবা’ থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি’ (নমল২৭/২০-২২)।এ পর্যন্ত বলেই সে তার নতুন আনীতসংবাদের রিপোর্ট পেশ করল।হুদহুদের মাধ্যমে একথা বলানোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে একথা জানিয়ে দিলেনযে, নবীগণ গায়েবের খবর রাখেন না। তাঁরা কেবল অতটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহতাদেরকে অবহিত করেন।উল্লেখ্য যে, ‘হুদহুদ’ এক জাতীয় ছোট্ট পাখির নাম। যাপক্ষীকুলেরমধ্যে অতীব ক্ষুদ্র ও দুর্বল এবং যার সংখ্যাও দুনিয়াতে খুবইকম। বর্ণিতআছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) একদা নও মুসলিম ইহুদী পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিনসালাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, এতসব পাখী থাকতে বিশেষভাবে ‘হুদহুদ’ পাখির খোঁজনেওয়ার কারণ কি ছিল? জওয়াবে তিনি বলেন, সুলায়মান (আঃ) তাঁর বিশাল বাহিনীসহ ঐসময় এমনএক অঞ্চলে ছিলেন, যেখানে পানি ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা হুদহুদ পাখিকে এই বৈশিষ্ট্য দানকরেছেনযে, সে ভূগর্ভের বস্ত্ত সমূহকে এবং ভূগর্ভে প্রবাহিত পানি উপর থেকেদেখতে পায়। হযরত সুলায়মান (আঃ) হুদহুদকে এজন্যেই বিশেষভাবে খোঁজ করছিলেনযে, এতদঞ্চলে কোথায় মরুগর্ভে পানি লুক্কায়িত আছে, সেটা জেনে নিয়ে সেখানেজিন দ্বারা খনন করে যাতে দ্রুত পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায়’। একদা হযরত আব্দুল্লাহইবনে আববাস (রাঃ) ‘হুদহুদ’ পাখি সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তখন নাফে‘ ইবনুল আযরক্বতাঁকে বলেন, ﻗِﻒْ ﻳﺎ ﻭَﻗَّﺎﻑُ ! ﻛﻴﻒ ﻳَﺮَﻯ ﺍﻟﻬﺪﻫﺪُ ﺑﺎﻃﻦَ ﺍﻷﺭﺽِ ﻭﻫﻮ ﻻ ﻳَﺮَﻯ ﺍﻟْﻔَﺦَّ ﺣِﻴْﻦَ ﻳَﻘَﻊُﻓﻴﻪ-‘জেনে নিন হে মহা জ্ঞানী! হুদহুদ পাখি মাটির গভীরে দেখতে পায়। কিন্তু (তাকেধরার জন্য) মাটির উপরে বিস্তৃত জাল সে দেখতে পায় না। যখন সে তাতে পতিত হয়’।জবাবেইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ﺇﺫﺍ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﻘَﺪَﺭُﻋَﻤِﻰَ ﺍﻟﺒَﺼَﺮُ ‘যখন তাক্বদীর এসে যায়, চক্ষুঅন্ধ হয়ে যায়’। চমৎকার এ জবাবে মুগ্ধ হয়ে ইবনুল ‘আরাবী বলেন, ﻻﻳَﻘْﺪِﺭُ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍﺍﻟﺠﻮﺍﺏِ ﺇﻻ ﻋﺎﻟِﻢُ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥِ ‘এরূপ জওয়াব দিতে কেউ সক্ষম হয় না, কুরআনের আলেমব্যতীত’।[5](৪) রাণী বিলক্বীসের ঘটনা : হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর শাম ও ইরাক সাম্রাজ্যেরপার্শ্ববর্তী ইয়ামন তথা ‘সাবা’ রাজ্যের রাণী ছিলেন বিলক্বীস বিনতুস সারাহ বিন হাদাহিদ বিনশারাহীল। তিনি ছিলেন সাম বিন নূহ (আঃ)-এর ১৮তম অধঃস্তন বংশধর। তাঁর ঊর্ধ্বতন ৯ম পিতামহেরনাম ছিল ‘সাবা’।[6] সম্ভবতঃ তাঁর নামেই ‘সাবা’ সাম্রাজ্যের নামকরণ হয়।আল্লাহ তাদের সামনেজীবনোপকরণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং নবীগণের মাধ্যমে এসবনে‘মতের শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারা ভোগ-বিলাসে মত্তহয়ে আল্লাহর অবাধ্য হয় এবং ‘সূর্য পূজারী’ হয়ে যায়। ফলে তাদের উপরে প্লাবণেরআযাব প্রেরিত হয় ও সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহসূরা সাবা ১৫ হ’তে ১৭ আয়াতে এইসম্প্রদায় সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।দুনিয়াবী দিক দিয়ে এই ‘সাবা’ সাম্রাজ্য খুবইসমৃদ্ধ এবং শান-শওকতে পূর্ণ ছিল। তাদের সম্পর্কে হযরত সুলায়মানের কিছু জানা ছিল নাবলেই কুরআনী বর্ণনায় প্রতীয়মান হয়। তাঁর এই না জানাটা বিস্ময়কর কিছু ছিল না। ইয়াকূব (আঃ)তাঁর বাড়ীর অনতিদূরে তাঁর সন্তান ইউসুফকে কূয়ায় নিক্ষেপের ঘটনা জানতে পারেননি।স্ত্রী আয়েশার গলার হারটি হারিয়ে গেল। অথচ স্বামী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা জানতে পারেননি।বস্ত্ততঃ আল্লাহ যতটুকু ইল্ম বান্দাকে দেন, তার বেশী জানার ক্ষমতা কারু নেই।পার্শ্ববর্তী ‘সাবা’ সাম্রাজ্য সম্পর্কে পূর্বে না জানা এবং পরে জানার মধ্যে যে কি মঙ্গলনিহিত ছিল, তা পরবর্তী ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়েছে এবং রাণী বিলক্বীস মুসলমান হয়ে যান।বস্ত্ততঃ হুদহুদ পাখি তাদের সম্পর্কে হযরত সুলায়মানের নিকটে এসে প্রথম খবর দেয়। তারবর্ণিত প্রতিবেদনটি ছিল কুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ : ﺇِﻧِّﻲ ﻭَﺟَﺪﺕُّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﺗَﻤْﻠِﻜُﻬُﻢْ ﻭَﺃُﻭﺗِﻴَﺖْ ﻣِﻨﻜُﻞِّﺷَﻲْﺀٍ ﻭَﻟَﻬَﺎ ﻋَﺮْﺵٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ – ﻭَﺟَﺪْﺗُﻬَﺎ ﻭَﻗَﻮْﻣَﻬَﺎ ﻳَﺴْﺠُﺪُﻭﻥَ ﻟِﻠﺸَّﻤْﺲِ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺯَﻳَّﻦَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻬُﻢْﻓَﺼَﺪَّﻫُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻓَﻬُﻢْ ﻻَ ﻳَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ – ‏( ﻧﻤﻞ ২৩-২৪)-‘আমি এক মহিলাকে সাবা বাসীদের উপরেরাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসনআছে’ (২৩)। ‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকেসিজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলীকে সুশোভিত করেছে। অতঃপরতাদেরকে সত্যপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। ফলে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় না’ (নমল২৭/২৩-২৪)।সুলায়মান বলল, ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻨَﻨْﻈُﺮُ ﺃَﺻَﺪَﻗْﺖَ ﺃَﻡْ ﻛُﻨْﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺑِﻴْﻦَ ‏( 27 ‏) ﺍﺫْﻫَﺐْ ﺑِﻜِﺘَﺎﺑِﻲْ ﻫَﺬَﺍ ﻓَﺄَﻟْﻘِﻪْﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﺛُﻢَّ ﺗَﻮَﻝَّ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮْ ﻣَﺎﺫَﺍ ﻳَﺮْﺟِﻌُﻮْﻥَ ‏(28 ‏) ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﻠَﺄُﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻟْﻘِﻲَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻛِﺘَﺎﺏٌ ﻛَﺮِﻳْﻢٌ ‏( 29 ‏) ﺇِﻧَّﻪُﻣِﻦْ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤٰﻨِﺎﻟﺮَّﺣِﻴْﻢِ ‏(30 ‏) ﺃَﻻَّ ﺗَﻌْﻠُﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃْﺗُﻮْﻧِﻲ ﻣُﺴْﻠِﻤِﻴْﻦَ ‏( 31 ‏) ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎﺍﻟْﻤَﻠَﺄُ ﺃَﻓْﺘُﻮْﻧِﻲْ ﻓِﻲْ ﺃَﻣْﺮِﻱْ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖُ ﻗَﺎﻃِﻌَﺔً ﺃَﻣْﺮًﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺸْﻬَﺪُﻭْﻥِ ‏(32 ‏) ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺤْﻦُ ﺃُﻭْﻟُﻮْ ﻗُﻮَّﺓٍ ﻭَﺃُﻭْﻟُﻮْ ﺑَﺄْﺱٍﺷَﺪِﻳْﺪٍ ﻭَﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻚِ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮِﻱْ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺗَﺄْﻣُﺮِﻳْﻦَ ‏( 33 ‏) ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﻠُﻮْﻙَ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻠُﻮْﺍ ﻗَﺮْﻳَﺔً ﺃَﻓْﺴَﺪُﻭْﻫَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻠُﻮﺍ ﺃَﻋِﺰَّﺓَﺃَﻫْﻠِﻬَﺎ ﺃَﺫِﻟَّﺔً ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ ‏(34 ‏) ﻭَﺇِﻧِّﻲ ﻣُﺮْﺳِﻠَﺔٌ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﺑِﻬَﺪِﻳَّﺔٍ ﻓَﻨَﺎﻇِﺮَﺓٌ ﺑِﻢَ ﻳَﺮْﺟِﻊُ ﺍﻟْﻤُﺮْﺳَﻠُﻮْﻥَ ‏( 35 ‏) ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺟَﺎﺀَﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺗُﻤِﺪُّﻭْﻧَﻦِ ﺑِﻤَﺎﻝٍ ﻓَﻤَﺎ ﺁﺗَﺎﻧِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺁﺗَﺎﻛُﻢْ ﺑَﻞْ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﺑِﻬَﺪِﻳَّﺘِﻜُﻢْ ﺗَﻔْﺮَﺣُﻮْﻥَ ‏(36 ‏) ﺍﺭْﺟِﻊْﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻓَﻠَﻨَﺄْﺗِﻴَﻨَّﻬُﻢْ ﺑِﺠُﻨُﻮْﺩٍ ﻻَ ﻗِﺒَﻞَ ﻟَﻬُﻢْ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻟَﻨُﺨْﺮِﺟَﻨَّﻬُﻢْ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺃَﺫِﻟَّﺔً ﻭَﻫُﻢْ ﺻَﺎﻏِﺮُﻭْﻥَ ‏( 37 ‏) ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﻠَﺄُﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻳَﺄْﺗِﻴْﻨِﻲْ ﺑِﻌَﺮْﺷِﻬَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺄْﺗُﻮﻧِﻲ ﻣُﺴْﻠِﻤِﻴْﻦَ ‏(38 ‏) ﻗَﺎﻝَ ﻋِﻔْﺮِﻳْﺖٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠِﻦِّ ﺃَﻧَﺎ ﺁﺗِﻴْﻚَ ﺑِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗَﻘُﻮْﻡَﻣِﻦ ﻣَّﻘَﺎﻣِﻚَ ﻭَﺇِﻧِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻟَﻘَﻮِﻱٌّ ﺃَﻣِﻴْﻦٌ ‏( 39 ‏) ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻋِﻠْﻢٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺃَﻧَﺎ ﺁﺗِﻴْﻚَ ﺑِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥ ﻳَّﺮْﺗَﺪَّﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻃَﺮْﻓُﻚَ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺁﻩُ ﻣُﺴْﺘَﻘِﺮًّﺍﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻗَﺎﻝَ ﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻞِ ﺭَﺑِّﻲ ﻟِﻴَﺒْﻠُﻮَﻧِﻲ ﺃَﺃَﺷْﻜُﺮُ ﺃَﻡْ ﺃَﻛْﻔُﺮُ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﻜَﺮَ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎﻳَﺸْﻜُﺮُ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﻔَﺮَ ﻓَﺈِﻥَّ ﺭَﺑِّﻲ ﻏَﻨِﻲٌّ ﻛَﺮِﻳْﻢٌ ‏( 40 ‏) ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻜِّﺮُﻭﺍ ﻟَﻬَﺎ ﻋَﺮْﺷَﻬَﺎ ﻧَﻨْﻈُﺮْ ﺃَﺗَﻬْﺘَﺪِﻱ ﺃَﻡْ ﺗَﻜُﻮﻥُﻣِﻨَﺎﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻻَ ﻳَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ ‏(41 ‏) ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﻗِﻴْﻞَ ﺃَﻫَﻜَﺬَﺍ ﻋَﺮْﺷُﻚِ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﻫُﻮَ ﻭَﺃُﻭﺗِﻴﻨَﺎ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻬَﺎ ﻭَﻛُﻨَّﺎﻣُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ‏(42 ‏) ﻭَﺻَﺪَّﻫَﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﻌْﺒُﺪُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﻛَﺎﻓِﺮِﻳْﻦَ ‏( 43 ‏) ﻗِﻴْﻞَ ﻟَﻬَﺎ ﺍﺩْﺧُﻠِﻲْﺍﻟﺼَّﺮْﺣَﻔَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺃَﺗْﻪُ ﺣَﺴِﺒَﺘْﻪُ ﻟُﺠَّﺔً ﻭَﻛَﺸَﻔَﺖْ ﻋَﻦْ ﺳَﺎﻗَﻴْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻪُ ﺻَﺮْﺡٌ ﻣُﻤَﺮَّﺩٌ ﻣِﻦْ ﻗَﻮَﺍﺭِﻳْﺮَ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲﻇَﻠَﻤْﺖُ ﻧَﻔْﺴِﻴﻮَﺃَﺳْﻠَﻤْﺖُ ﻣَﻊَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ِﻟﻠﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ- ‏( ﻧﻤﻞ 44-27 )-‘এখন আমরা দেখব তুমি সত্যবলছ, না তুমি মিথ্যাবাদীদের একজন’ (২৭)। ‘তুমি আমার এই পত্র নিয়ে যাও এবংএটা তাদেরকাছে অর্পণ কর। অতঃপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় এবং দেখ, তারা কি জওয়াবদেয়’ (২৮)। ‘বিলক্বীস বলল, হে সভাসদ বর্গ! আমাকে একটি মহিমান্বিত পত্র দেওয়াহয়েছে’ (২৯)। ‘সেই পত্র সুলায়মানের পক্ষ হ’তে এবং তা হ’লএই: করুণাময় কৃপানিধানআল্লাহরনামে (শুরু করছি)’ (৩০)। ‘আমার মোকাবেলায় তোমরা শক্তি প্রদর্শন করো না এবংবশ্যতা স্বীকার করে আমার নিকটে উপস্থিতহও’ (৩১)। ‘বিলক্বীস বলল, হে আমার পারিষদবর্গ! আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দিন। আপনাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোনকাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না’ (৩২)। ‘তারা বলল, আমরা শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা। এখনসিদ্ধান্ত আপনার হাতে। অতএব ভেবে দেখুন আপনি আমাদের কি আদেশকরবেন’ (৩৩)।‘রাণী বলল, রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকেবিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত লোকদের অপদস্থ করে। তারাও এরূপকরবে’ (৩৪)। ‘অতএব আমি তাঁর নিকটে কিছু উপঢৌকন পাঠাই। দেখি, প্রেরিত লোকেরা কিজওয়াব নিয়ে আসে’ (৩৫)। ‘অতঃপর যখন দূত সুলায়মানের কাছে আগমন করল, তখন সুলায়মানবলল, তোমরা কি ধন-সম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন,তা তোমাদের দেওয়া বস্ত্ত থেকে অনেক উত্তম। বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকননিয়ে সুখে থাক’ (৩৬)। ‘ফিরে যাও তাদের কাছে। এখন অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধেসেনাবাহিনী সহ আগমন করব, যার মোকাবেলা করার শক্তি তাদের নেই। আমরা অবশ্যইতাদেরকেঅপদস্থ করে সেখান থেকে বহিষ্কারকরব এবং তারা হবে লাঞ্ছিত’ (৩৭)। ‘অতঃপরসুলায়মান বলল, হে আমার পারিষদবর্গ! তারা আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কেআছবিলক্বীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’ (৩৮) ‘জনৈক দৈত্য-জ্বিন বলল, আপনিআপনার স্থান থেকে ওঠারপূর্বেই আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান ওবিশ্বস্ত’ (৩৯)। ‘(কিন্তু) কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, তোমার চোখের পলক ফেলারপূর্বেই আমি তা এনে দিব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখল, তখন বলল, এটাআমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি শুকরিয়া আদায় করি, নাঅকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের কল্যাণের জন্য তাকরে থাকে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্তও কৃপাময়’(নমল ৪০)।‘সুলায়মান বলল, বিলক্বীসের সিংহাসনের আকৃতি বদলিয়ে দাও, দেখব সেসঠিক বস্ত্ত চিনতে পারে,না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা সঠিক পথ খুঁজে পায় না?’ (৪১)‘অতঃপর যখন বিলক্বীস এসে গেল, তখনতাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল: আপনার সিংহাসন কিএরূপই? সে বলল, মনে হয় এটা সেটিই হবে। আমরা পূর্বেই সবকিছু অবগত হয়েছি এবংআমরাআজ্ঞাবহ হয়ে গেছি’ (৪২)। ‘বস্ত্ততঃ আল্লাহর পরিবর্তে সে যার উপাসনা করত, সেই-ইতাকে ঈমান থেকে বিরত রেখেছিল। নিশ্চয়ই সেকাফের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তছিল’ (৪৩)। ‘তাকে বলা হ’ল, প্রাসাদে প্রবেশ করুন। অতঃপর যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল,তখন ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। ফলেসে তার পায়ের গোছা খুলেফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। বিলক্বীস বলল, হে আমারপালনকর্তা! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্বজাহানেরপালনকর্তা আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ করলাম’ (নমল ২৭/২৭-৪৪)।সূরা নমল ২২ হ’তে ৪৪আয়াত পর্যন্ত উপরে বর্ণিত ২৩টি আয়াতে রাণী বিলক্বীসের কাহিনী শেষ হয়েছে।এর মধ্যে ৪০তম আয়াতে ‘যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল’ বলে কাকে বুঝানো হয়েছে,এ বিষয়ে তাফসীরবিদগণ মতভেদ করেছেন। তার মধ্যে প্রবল মত হ’ল এই যে, তিনিছিলেন স্বয়ং হযরত সুলায়মান (আঃ)। কেননা আল্লাহর কিতাবের সর্বাধিক জ্ঞান তাঁরই ছিল। তিনি এরদ্বারা উপস্থিত জিন ও মানুষ পারিষদ বর্গকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমাদের সাহায্য ছাড়াওআল্লাহ অন্যের মাধ্যমে অর্থাৎ ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করে থাকেন।‘আর এটি হ’ল আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ’ (নমল ৪০)। দ্বিতীয়তঃ গোটা ব্যাপারটাই ছিল একটামু‘জেযা এবং রাণী বিলক্বীসকে আল্লাহর সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রদর্শন করাই ছিল তাঁরউদ্দেশ্য। বস্ত্ততঃ এতে তিনি সফল হয়েছিলেন এবং সুদূর ইয়ামনথেকে বায়তুল মুক্বাদ্দাসেবিলক্বীস তার সিংহাসনের আগাম উপস্থিতি দেখে অতঃপর স্ফটিক স্বচ্ছ প্রাসাদেপ্রবেশকালে অনন্য কারুকার্য দেখে এবং তার তুলনায় নিজের ক্ষমতা ও প্রাসাদের দীনতাবুঝে লজ্জিত ও অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণকরে মুসলমান হয়ে যান। মূলতঃ এটাই ছিল হযরত সুলায়মানের মূল উদ্দেশ্য, যা শতভাগ সফলহয়েছিল।এর পরবর্তী ঘটনাবলী, যা বিভিন্ন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে যেমন সুলায়মানেরসাথে বিলক্বীসের বিবাহ হয়েছিল। সুলায়মান তার রাজত্ব বহাল রেখে ইয়ামনে পাঠিয়েদেন। প্রতি মাসে সুলায়মান একবার করে সেখানে যেতেন ও তিনদিন করে থাকতেন। তিনিসেখানে বিলক্বীসের জন্য তিনটি নযীরবিহীন প্রাসাদ নির্মাণ করে দেন- ইত্যাদি সবকথাইধারণা প্রসূত। যার কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই।জনৈক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উৎবাকেজিজ্ঞেস করেন, সুলায়মান (আঃ)-এর সাথে বিলক্বীসের বিয়ে হয়েছিল কি? জওয়াবে তিনিবলেন, বিলক্বীসের বক্তব্য ﻭَﺃَﺳْﻠَﻤْﺖُ ﻣَﻊَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ِﻟﻠﻬِﺮَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ ‘আমি সুলায়মানের সাথেবিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ করলাম’ (নমল ৪৪)-এ পর্যন্তই শেষহয়ে গেছে। কুরআন এর পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চুপ রয়েছে। অতএব আমাদেরএ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই (তাফসীর বাগাভী)।(৫) অশ্ব কুরবানীর ঘটনা:পিতা দাঊদের ন্যায় পুত্র সুলায়মানকেও আল্লাহ বারবার পরীক্ষায় ফেলেছেন তাকে সর্বদাআল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনশীল রাখার জন্য। ফলে তাঁর জীবনের এক একটি পরীক্ষা একএকটি ঘটনার জন্ম দিয়েছে। কুরআন সেগুলির সামান্য কিছু উল্লেখ করেছে, যতটুকুআমাদের উপদেশ হাছিলের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু পথভ্রষ্ট ইহুদী-নাছারা পন্ডিতগণ সেইসব ঘটনার উপরে রং চড়িয়ে এবং নিজেদের পক্ষ থেকে উদ্ভট সব গল্পের অবতারণাকরে তাদেরই স্বগোত্র বনু ইস্রাঈলের এইসব মহান নবীগণের চরিত্র হনন করেছে।মুসলিম উম্মাহ বিগত সকল নবীকে সমানভাবে সম্মান করে। তাইইহুদী-নাছারাদের অপপ্রচারথেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখে এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বর্ণনারউপরে নির্ভর করে। সেখানে যতটুকু পাওয়া যায়, তার উপরেই তারা বাক সংযত রাখে।আলোচ্যঅশ্ব কুরবানীর ঘটনাটি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বর্ণনা নিম্নরূপ : ﺇِﺫْ ﻋُﺮِﺽَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّﺍﻟﺼَّﺎﻓِﻨَﺎﺕُ ﺍﻟْﺠِﻴَﺎﺩُ- ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻲْ ﺃَﺣْﺒَﺒْﺖُ ﺣُﺐَّ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻋَﻦْ ﺫِﻛْﺮِ ﺭَﺑِّﻲْ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻮَﺍﺭَﺕْ ﺑِﺎﻟْﺤِﺠَﺎﺏِ – ﺭُﺩُّﻭْﻫَﺎ ﻋَﻠَﻲَّﻓَﻄَﻔِﻖَ ﻣَﺴْﺤﺎً ﺑِﺎﻟﺴُّﻮْﻕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﻋْﻨَﺎﻕِ – ‏( ﺹ ৩১-৩৩)-‘যখন তার সামনে অপরাহ্নে উৎকৃষ্ট অশ্বরাজিপেশ করা হ’ল’ (ছোয়াদ ৩১)। ‘তখন সে বলল, আমি তো আমার প্রভুর স্মরণের জন্যইঘোড়াগুলিকে মহববত করে থাকি (কেননা এর দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হয়ে থাকে।অতঃপর সে ঘোড়াগুলিকে দৌড়িয়ে দিল,) এমনকি সেগুলি দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেল’ (৩২)।‘(অতঃপর সে বলল,) ঘোড়াগুলিকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো। অতঃপর সে তাদের গলায়ও পায়ে (আদর করে) হাত বুলাতে লাগল’ (ছোয়াদ ৩৮/৩১-৩৩)।উপরোক্ত তরজমাটি ইবনুআববাস (রাঃ)-এর ব্যাখ্যার অনুসরণে ইবনুজারীরের গৃহীত ব্যাখ্যার অনুকূলে করা হয়েছে।অনেকে উপরোক্ত তাফসীরের সাথে বিভিন্ন কথা যোগ করেছেন। যেমন ঘোড়াপরিদর্শনে মগ্ন হওয়ার কারণে হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর আছরের ছালাত ক্বাযা হয়ে যায়। তাতেতিনি ক্ষু্ব্ধ হয়ে সব ঘোড়া কুরবানী করে দেন। কেউ বলেছেন, তিনি আল্লাহর নিকটেসূর্যকে ফিরিয়ে দেবার আবেদন করেন। সেমতে সূর্যকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনিআছরের ছালাত আদায় করে নেন। তারপর সূর্য অস্তমিত হয়। বস্ত্ততঃ এইসব কথার পক্ষেকুরআন ও ছহীহ হাদীছের কোন দলীল নেই। অতএব এসব থেকে বিরত থাকাইউত্তম।(৬) সিংহাসনের উপরে একটি নিষ্প্রাণ দেহ প্রাপ্তির ঘটনা :আল্লাহ বলেন- ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻓَﺘَﻨَّﺎﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻭَﺃَﻟْﻘَﻴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﺮْﺳِﻴِّﻪِ ﺟَﺴَﺪﺍً ﺛُﻢَّ ﺃَﻧَﺎﺏَ ‏(ﺹ ৩৪) ‘আমরা সুলায়মানকে পরীক্ষা করলাম এবংরেখে দিলাম তার সিংহাসনের উপর একটি নিষ্প্রাণ দেহ। অতঃপর সে রুজু হ’ল’ (ছোয়াদ৩৮/৩৪)। এ বিষয়ে কুরআনের বর্ণনা কেবল এতটুকুই। এক্ষণে সেই নিষ্প্রাণ দেহটিকিসের ছিল, একে সিংহাসনের উপর রাখার হেতু কি ছিল, এর মাধ্যমে কি ধরনের পরীক্ষা হ’ল-এসব বিবরণ কুরআন বা ছহীহ হাদীছে কিছুই বর্ণিত হয়নি। অতএব এ বিষয়ে কেবল এতটুকুঈমান রাখা কর্তব্য যে, সুলায়মান (আঃ) এভাবে পরীক্ষায় পতিত হয়েছিলেন। যার ফলে তিনিআল্লাহর প্রতি আরো বেশী রুজু হন ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যা সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতিতাঁর অটুট আনুগত্যের পরিচয় বহনকরে।উক্ত ঘটনাকে রং চড়িয়ে ইস্রাঈলী রেওয়ায়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, সুলায়মানের রাজত্বের গুঢ় রহস্য তার আংটির মধ্যে নিহিত ছিল।একদিন এক শয়তান তাঁর আংটিটা হাতিয়ে নেয় এবং নিজেই সুলায়মান সেজে সিংহাসনে বসে।এদিকে আংটি হারা সুলায়মান (আঃ) সিংহাসন হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকেন। একদিন ঘটনাক্রমেএকটি মাছের পেট থেকে সুলায়মান উক্ত আংটি উদ্ধার করেন ও চল্লিশ দিন পর পুনরায় সিংহাসনলাভ করেন’। সিংহাসনে বসা ঐ শয়তানের রাখা কোন বস্ত্তকে এখানে আল্লাহ নিষ্প্রাণ দেহবলেছেন।বস্ত্ততঃ এসবই বানোয়াট কাহিনী। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আহলে কিতাবেরএকটি দল হযরত সুলায়মান (আঃ)-কে নবী বলেই স্বীকার করে না। বাহ্যতঃ এসব কাহিনীতাদেরই অপকীর্তি’।(৭) ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলার ফল :ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে এ বিষয়েবর্ণিত ঘটনার সারমর্ম এই যে, একবার হযরত সুলায়মান (আঃ) এ মনোভাব ব্যক্ত করলেন যে,রাত্রিতে আমি (আমার ৯০ বা ১০০) সকল স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব। যাতে প্রত্যেকের গর্ভথেকে একটিকরে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেও পরে তারা আল্লাহর পথে ঘোড় সওয়ারহয়ে জিহাদ করবে। কিন্তুএ সময় তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ (অর্থঃ ‘যদি আল্লাহ চান’) বলতে ভুলেগেলেন। নবীর এ ত্রুটি আল্লাহ পসন্দ করলেন না। ফলে মাত্র একজন স্ত্রীর গর্ভথেকে একটি অপূর্ণাঙ্গ ও মৃত শিশু ভূমিষ্ট হ’ল’।[7] এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, সুলায়মানবিশ্বের সর্বাধিকক্ষমতাসম্পন্ন বাদশাহ হ’লেও এবংজিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও সকল জীবজন্তুতাঁর হুকুম বরদার হ’লেও আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তার কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না। অতএব তাঁর‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে ভুলে যাওয়াটা ছোটখাট কোন অপরাধ নয়।এ ঘটনায় এটাও স্পষ্ট হয় যে,যারা যত বড় পদাধিকারী হবেন, তাদের ততবেশী আল্লাহর অনুগত হ’তে হবে এবংসর্বাবস্থায় সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। সর্বদা বিনীত হয়ে চলতেহবে এবং কোন অবস্থাতেই অহংকার করা চলবে না।অনেক তাফসীরবিদ সূরা ছোয়াদ ৩৪আয়াতে বর্ণিত ‘সিংহাসনের উপরে নিষ্প্রাণ দেহ’ রাখার ঘটনার সাথে কিছুটা সাদৃশ্য দেখেছহীহ বুখারীতে বর্ণিত উপরোক্ত ঘটনাকে উক্ত আয়াতের তাফসীর হিসাবে সাব্যস্তকরেছেন। তারা বলেন যে, সিংহাসনে নিষ্প্রাণ দেহ রাখার অর্থ এই যে, সুলায়মান(আঃ)-এরজনৈক চাকর উক্ত মৃত সন্তানকে এনে তাঁর সিংহাসনে রেখে দেয়। এতে সুলায়মান (আঃ)বুঝে নেন যে, এটা তাঁর ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলার ফল। সেমতে তিনি আল্লাহর দিকে রুজুহ’লেন ও ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। ক্বাযী আবুস সাঊদ, আল্লামা আলূসী, আশরাফআলীথানভী প্রমুখ এ তাফসীর বর্ণনা করেছেন। এতদ্ব্যতীত ইমাম রাযীও আরেকটিতাফসীর করেছেন যে, সুলায়মান (আঃ) একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে এমন দুর্বল হয়ে পড়েনযে, সিংহাসনে বসালে তাঁকে নিষ্প্রাণ দেহ বলে মনে হ’ত। পরে সুস্থ হ’লে তিনিআল্লাহরদিকে রুজু হন…। এ তাফসীর একেবারেই অনুমান ভিত্তিক। কুরআনী বর্ণনার সাথেএর কোন মিল নেই।প্রকৃত প্রস্তাবে ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত ঘটনাকে উক্ত আয়াতেরঅকাট্ট তাফসীর বলা যায়না। কেননা এ ঘটনায় বর্ণিত রেওয়ায়াত সমূহের কোনটাতেই এরূপইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলোচ্য ঘটনাটিকে উক্ত আয়াতের তাফসীর হিসাবেবর্ণনা করেছেন। সম্ভবতঃ এ কারণেই অত্র হাদীছটি ছহীহ বুখারীর ‘জিহাদ’ ‘আম্বিয়া’‘শপথসমূহ’ প্রভৃতি অধ্যায়ে একাধিক সনদে আনা হ’লেও সূরা ছোয়াদের উপরোক্ত ৩৪আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী আনেননি। এতে বুঝা যায় যে, ইমাম বুখারীর মতেওআলোচ্য হাদীছটি উক্ত আয়াতের তাফসীর নয়। বরং রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) অন্যান্য পয়গম্বরেরযেমন বহু ঘটনা বর্ণনা করেছেন, এটাও তেমনি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। এটা কোনআয়াতের তাফসীর নয়।বস্ত্ততঃ কুরআন পাকে এই ঘটনা উল্লেখ করার আসল উদ্দেশ্য হ’লমানুষকে একথা বুঝানো যে, তারা কোন বিপদাপদে বা পরীক্ষায় পতিতহ’লে যেনপূর্বাপেক্ষা অধিকভাবেআল্লাহর দিকে রুজু হয়। যেমন সুলায়মান (আঃ) হয়েছিলেন।(৮) হারূতও মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের কাহিনী :সুলায়মান (আঃ)-এর রাজত্বকালে বেঈমান জিনেরালোকদের ধোঁকা দিতএই বলে যে, সুলায়মান জাদুর জোরেসবকিছু করেন। তিনি কোননবী নন। শয়তানদের ভেল্কিবাজিতে বহু লোক বিভ্রান্ত হচ্ছিল। এমনকি শেষনবী (ছাঃ)-এরসময়েও যখন তিনি সুলায়মান (আঃ)-এর প্রশংসা করেন, তখন ইহুদী নেতারা বলেছিল,আশ্চর্যের বিষয় যে, মুহাম্মাদ সুলায়মানকে নবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলেরমধ্যে সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর মাত্র। কেননাস্বাভাবিকভাবেকোন মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনু জারীর)।এক্ষণে সুলায়মান (আঃ)যে সত্য নবী, তিনি যে জাদুকর নন, জনগণকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এবংনবীগণের মু‘জেযা ও শয়তানদের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝাবার জন্য আল্লাহ পাক হারূত ওমারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’ শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন।‘বাবেল’হ’ল ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী, যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিল। ফেরেশতাদ্বয়সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেনএবং জাদুকরদেরঅনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সুলায়মানের নবুঅতের অনুসারী হয়,সেকথা বলতে লাগলেন।জাদু ও মু‘জেযার পার্থক্য এই যে, জাদু প্রাকৃতিক কারণের অধীন।কারণ ব্যতীত জাদু সংঘটিত হয় না। কিন্তু দর্শক সে কারণ সম্পর্কে অবহিত থাকে না বলেইতাতে বিভ্রান্ত হয়। এমনকি কুফরীতে লিপ্ত হয় এবং ঐ জাদুকরকেই সকল ক্ষমতার মালিকবলে ধারণা করতে থাকে। আজকের যুগে ভিডিও চিত্রসহ হাযার মাইল দূরের ভাষণ ঘরে বসেশুনে এবং দেখে যেকোন অজ্ঞ লোকের পক্ষে নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিতে পড়াস্বাভাবিক। তেমনি সেযুগেও জাদুকরদের বিভিন্ন অলৌকিক বস্ত্ত দেখে অজ্ঞ মানুষবিভ্রান্তিতে পড়ত।পক্ষান্তরে মু‘জেযা কোন প্রাকৃতিক কারণের অধীন নয়। বরংতা সরাসরিআল্লাহর নির্দেশে সম্পাদিত হয়। নবী ব্যতীত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি তাঁর ‘কারামত’ বাসম্মান প্রদর্শনের বিষয়টিও একইভাবে সম্পাদিত হয়। এতে প্রাকৃতিক কারণের যেমন কোনসম্পৃক্ততা নেই, তেমনি সম্মানিত ব্যক্তির নিজস্ব কোন ক্ষমতা বা হাত নেই। উভয় বস্ত্তরপার্থক্য বুঝার সহজ উপায় এই যে, মু‘জেযা কেবল নবীগণের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। যারাআল্লাহভীতি, উন্নত চরিত্র মাধুর্য এবং পবিত্র জীবনযাপন সহ সকল মানবিক গুণে সর্বকালেসকলের আদর্শ স্থানীয় হন।আর নবী ও অলীগণের মধ্যে পার্থক্য এই যে, নবীগণপ্রকাশ্যে নবুঅতের দাবী করে থাকেন। কিন্তু অলীগণ কখনোই নিজেকে অলীবলে দাবী করেন না। অলীগণ সাধারণভাবে নেককার মানুষ। কিন্তু নবীগণ আল্লাহরবিশেষভাবে নির্বাচিত বান্দা, যাদেরকে তিনি নবুঅতের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করে থাকেন।নবীগণের মু‘জেযা প্রকাশে তাদের নিজস্ব কোন ক্ষমতা বা কৃতিত্ব নেই। পক্ষান্তরেদুষ্ট লোকেরাই জাদুবিদ্যা শিখে ও তার মাধ্যমে নিজেদের দুনিয়া হাছিল করে থাকে।উভয়ের চরিত্র জনগণের মাঝে পরিষ্কারভাবে পার্থক্য সৃষ্টি করে।বস্ত্ততঃ সুলায়মান (আঃ)-এরনবুঅতের সমর্থনেই আল্লাহ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়কেবাবেল শহরে পাঠিয়ে ছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌُﻮْﺍ ﻣَﺎ ﺗَﺘْﻠُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦُ ﻋَﻠَﻰﻣُﻠْﻚِ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﻔَﺮَ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥُ ﻭَﻟَـﻜِﻦَّ ﺍﻟﺸَّﻴْﺎﻃِﻴْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻮْﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺍﻟﺴِّﺤْﺮَ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤَﻠَﻜَﻴْﻦِﺑِﺒَﺎﺑِﻞَ ﻫَﺎﺭُﻭْﺕَ ﻭَﻣَﺎﺭُﻭْﺕَ ﻭَﻣَﺎ ﻳُﻌَﻠِّﻤَﺎﻥِ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪٍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮْﻻَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﻓَﻼَ ﺗَﻜْﻔُﺮْ ﻓَﻴَﺘَﻌَﻠَّﻤُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﻣَﺎﻳُﻔَﺮِّﻗُﻮْﻥَ ﺑِﻪِ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﻤَﺮْﺀِ ﻭَﺯَﻭْﺟِﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻢْ ﺑِﻀَﺂﺭِّﻳﻦَ ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺃَﺣَﺪٍ ﺇِﻻَّ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻳَﺘَﻌَﻠَّﻤُﻮْﻥَ ﻣَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻫُﻢْ ﻭَﻻَﻳَﻨْﻔَﻌُﻬُﻢْ، ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻋَﻠِﻤُﻮْﺍ ﻟَﻤَﻦِ ﺍﺷْﺘَﺮَﺍﻩُ ﻣَﺎ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦْ ﺧَﻼَﻕٍ ﻭَﻟَﺒِﺌْﺲَ ﻣَﺎ ﺷَﺮَﻭْﺍ ﺑِﻪِ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍﻳَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ – ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺁﻣَﻨُﻮْﺍ ﻭﺍﺗَّﻘَﻮْﺍ ﻟَﻤَﺜُﻮْﺑَﺔٌ ﻣِّﻦْ ﻋِﻨْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺧَﻴْﺮٌ، ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ- ‏(ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ১০২-১০৩)-‘(ইহুদী-নাছারাগণ) ঐ সবের অনুসরণ করে থাকে, যা সুলায়মানের রাজত্বকালেশয়তানরা আবৃত্তি করত। অথচ সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারামানুষকে জাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত এবং বাবেল শহরে হারূত ও মারূত দুই ফেরেশতার উপরে যা নাযিলহয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। বস্ত্ততঃ তারা (হারূত-মারূত) উভয়ে একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত নাযে, আমরা এসেছি পরীক্ষা স্বরূপ। কাজেই তুমি (জাদু শিখে) কাফির হয়ো না। কিন্তু তারাতাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। অথচআল্লাহরআদেশ ব্যতীত তদ্বারা তারা কারু ক্ষতি করতে পারত না। লোকেরা তাদের কাছেশিখত ঐসব বস্ত্ত যা তাদের ক্ষতি করে এবং তাদের কোন উপকার করে না। তারা ভালভাবেইজানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করবে, তার জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। যারবিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানতো’। ‘যদি তারা ঈমান আনত ওআল্লাহভীরু হ’ত, তবে আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পেত, যদি তারা জানত’ (বাক্বারাহ২/১০২-১০৩)।বলা বাহুল্য, সুলায়মান (আঃ)-কে জিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও জীবজন্তুর উপরেএকচ্ছত্র ক্ষমতা দান করা ছিল আল্লাহর এক মহা পরীক্ষা। শয়তান ও তাদের অনুসারী দুষ্টলোকেরা সর্বদা এটাকে বস্ত্তবাদী দৃষ্টিতে দেখেছে এবং যুক্তিবাদের ধূম্রজালেপড়ে পথ হারিয়েছে। অথচ আল্লাহর নবী সুলায়মান (আঃ) সর্বদা আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়াআদায় করেছেন। আমরাও তার নবুঅতের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করি।(৯) বায়তুলমুক্বাদ্দাস নির্মাণ ও সুলায়মান (আঃ)-এর মৃত্যুর বিস্ময়কর ঘটনা :বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণসর্বপ্রথম ফেরেশতাদের মাধ্যমে অথবা আদম (আঃ)-এর কোন সন্তানের মাধ্যমেসম্পন্ন হয় কা‘বাগৃহ নির্মাণের চল্লিশ বছর পরে। অতঃপর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে হযরত ইয়াকূব (আঃ) তাপুনর্নির্মাণ করেন। তার প্রায় হাযার বছর পরে দাঊদ (আঃ) তার পুনর্নির্মাণ শুরু করেন এবং সুলায়মান(আঃ)-এর হাতে তা সমাপ্ত হয়। কিন্তু মূল নির্মাণকাজ শেষ হ’লেও আনুসঙ্গিক কিছু কাজ তখনওবাকী ছিল। এমন সময় হযরত সুলায়মানের মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এল। এই কাজগুলি অবাধ্যতাপ্রবণজিনদের উপরে ন্যস্ত ছিল। তারা হযরত সুলায়মানের ভয়ে কাজ করত। তারাতাঁর মৃত্যু সংবাদজানতে পারলে কাজ ফেলে রেখে পালাতো। ফলে নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ থেকেযেত। তখন সুলায়মান (আঃ) আল্লাহরনির্দেশে মৃত্যুর জন্যে প্রস্ত্তত হয়ে তাঁর কাঁচ নির্মিতমেহরাবে প্রবেশ করলেন। যাতে বাইরে থেকে ভিতরে সবকিছু দেখা যায়। তিনিবিধানানুযায়ী ইবাদতের উদ্দেশ্যে লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন, যাতে রূহ বেরিয়েযাবার পরেও লাঠিতে ভর দিয়ে দেহ স্বস্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। সেটাই হ’ল। আল্লাহর হুকুমেতাঁর দেহ উক্ত লাঠিতে ভর করে এক বছর দাঁড়িয়ে থাকল। দেহ পচলো না, খসলো না বাপড়ে গেল না। জিনেরা ভয়ে কাছে যায়নি। ফলে তারা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে কাজ শেষকরে ফেলল। এভাবে কাজ সমাপ্ত হ’লে আল্লাহর হুকুমে কিছু উই পোকার সাহায্যে লাঠিভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং সুলায়মান (আঃ)-এর লাশ মাটিতে পড়ে যায়। উক্ত কথাগুলি আল্লাহবলেননিম্নোক্ত ভাবে- ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻣَﺎ ﺩَﻟَّﻬُﻤْﻌَﻠَﻰ ﻣَﻮْﺗِﻪِ ﺇِﻻَّ ﺩَﺍﺑَّﺔُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺗَﺄْﻛُﻞُ ﻣِﻨْﺴَﺄَﺗَﻪُ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﺮَّﺗَﺒَﻴَّﻨَﺖِ ﺍﻟْﺠِﻦُّ ﺃَﻥ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﻣَﺎ ﻟَﺒِﺜُﻮْﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻤُﻬِﻴْﻦِ- ‏( ﺳﺒﺎ ১৪)-‘অতঃপর যখন আমরাসুলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুনপোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল।সুলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরাবুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্য বিষয় জানতো, তাহ’লে তারা (মসজিদ নির্মাণের) এই হাড়ভাঙ্গাখাটুনির আযাবের মধ্যে আবদ্ধ থাকতো না’ (সাবা ৩৪/১৪)। সুলায়মানের মৃত্যুর এই ঘটনা আংশিককুরআনের আলোচ্য আয়াতের এবং আংশিক ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ থেকে বর্ণিতহয়েছে (ইবনে কাছীর)।সুলায়মানের এই অলৌকিক মৃত্যু কাহিনীর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ :(১) মৃত্যুর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হ’লে নবী-রাসূল যে-ই হৌন না কেন, এক সেকেন্ডআগপিছ হবে না।(২) আল্লাহ কোন মহান কাজ সম্পন্ন করতে চাইলে যেকোন উপায়ে তাসম্পন্ন করেন। এমনকি মৃত লাশের মাধ্যমেও করতে পারেন।(৩) ইতিপূর্বে জিনেরা বিভিন্নআগাম খবর এনে বলত যে, আমরা গায়েবের খবর জানি। অথচ চোখের সামনেমৃত্যুবরণকারী সুলায়মান (আঃ)-এর খবর তারা জানতে পারেনি এক বছরের মধ্যে। এতেতাদের অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী অসার প্রমাণিত হয়।সংশয় নিরসন(১) সুলায়মানের আংটি চুরি ওরাজত্ব হরণ :বাক্বারাহ ১০২ : ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌُﻮْﺍ ﻣَﺎ ﺗَﺘْﻠُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦُ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻠْﻚِ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ‘এবং সুলায়মানেররাজত্বে শয়তানগণ যা আবৃত্তি করত, তারা (ইহুদীরা) তার অনুসরণ করত’।উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়তাফসীর জালালাইনে বলা হয়েছে, ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺤﺮ، ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺩﻓﻨﺘﻪ ﺗﺤﺖ ﻛﺮﺳﻴﻪ ﻟَﻤَّﺎ ﻧُﺰِﻉَ ﻣﻠﻜُﻪ -‘(শয়তানেরা) জাদু হ’তে (আবৃত্তি করত), যা সুলায়মান-এর সিংহাসনেরনীচে তারা দাফন করেছিলতাঁর রাজত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার প্রাক্কালে। আমরা বলি, সুলায়মান (আঃ) একজন জলীলুল ক্বদরনবী ছিলেন। তিনি জাদুকর ছিলেন না বা জাদুর শক্তির বলে তিনি সবকিছুকে অনুগত করেননি।তাঁর সিংহাসনের নীচে কোন জাদুও কেউ লুকিয়ে রাখেনি। তাছাড়া তাঁর রাজত্ব ছিনিয়ে নেবারমত কোন অঘটন ঘটেনি এবং এমন কোন খবরও আল্লাহ বা তাঁর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকেদেননি। এগুলি নবীগণের মর্যাদার বরখেলাফ এবং স্রেফ ইস্রাঈলী কল্পকাহিনী মাত্র।অতএব উক্ত আয়াত সমূহের প্রকাশ্য অর্থ এই যে, সুলায়মান (আঃ)-এর অতুলনীয় সাম্রাজ্যেঈর্ষান্বিত শয়তানেরা সর্বত্র রটিয়ে দেয় যে, জিন-ইনসান ও পশু-পক্ষী সবার উপরেসুলায়মানের একাধিপত্যের মূল কারণ হ’ল তাঁর পঠিত কিছু কালেমা, যার কিছু কিছু আমরা জানি। যারাএগুলি শিখবে ও তার উপরে আমল করবে, তারাও অনুরূপ ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। তখনলোকেরা ঐসব জাদু বিদ্যা শিখতে ঝুঁকে পড়ল ও তাদের অনুসারী হ’ল এবং কুফরী করতেশুরু করল। বর্ণিত আয়াতে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং সুলায়মান (আঃ)-এর নির্দোষিতা ঘোষণাকরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, সুলায়মান জাদুর বলে নয়, বরং আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতাবলে দেশ শাসন করেন। মূল কথা হ’ল, ইহুদীরা সকল নবীকে গালি দিয়েছে এবংসেভাবে সুলায়মান (আঃ)-কেও তোহমত দিয়েছে।(২) হারূত ও মারূতের কাহিনী :একইআয়াতে হারূত ও মারূত দুই ফেরেশতা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে মাননীয়তাফসীরকার বলেছেন, ﻗﺎﻝ ﺇﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ﻫﻤﺎ ﺳﺎﺣﺮﺍﻥ، ﻛﺎﻧﺎ ﻳﻌﻠﻤﺎﻥ ﺍﻟﺴﺤﺮ – ইবনু আববাস (রাঃ)বলেন, ‘তারা ছিলেন দু’জন জাদুকর। তারা জাদু শিক্ষা দিতেন’। অথচ তাঁরা জাদুকর ছিলেন না। বরংফেরেশতা ছিলেন। যারা কখনোই আল্লাহর অবাধ্য ছিলেন না। জাদুকর বলে তাদের উপরেতোহমত লাগানো হয়েছেমাত্র।এতদ্ব্যতীত বাহরুল মুহীত্ব, বায়যাবী প্রভৃতি তাফসীরগ্রন্থে যেমন বলা হয়েছে যে, (ক) আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা স্বরূপ মানুষ হিসেবেদুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। পরে তারা মানুষের ন্যায় মহাপাপে লিপ্ত হয়। (খ) তখন শাস্তি স্বরূপতাদের পায়ে বেড়ী দিয়ে বাবেল শহরে একটি পাহাড়ের গুহার মধ্যেআটকিয়ে রাখা হয়।যারা যেখানে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করবে। (গ) আর যে সুন্দরী মেয়েটির সঙ্গেতারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল, সে মেয়েটি আসমানে ‘যোহরা’ তারকা হিসেবে ক্বিয়ামতপর্যন্ত ঝুলন্ত থাকবে’– এগুলি সব তাফসীরের নামে উদ্ভট গল্প মাত্র, যা সুলায়মানের শত্রুইহুদী-নাছারাদের উর্বর মস্তিষ্কের ফসল ছাড়া কিছুই নয়।মূল ঘটনা এই যে, ঐ সময় ইরাকেরবাবেল বা ব্যবিলন শহর জাদু বিদ্যায় শীর্ষে ছিল। সুলায়মানের বিশাল ক্ষমতাকে শয়তান ও দুষ্টলোকেরা উক্ত জাদু বিদ্যার ফল বলে রটনা করত। তখন নবুঅত ও জাদুর মধ্যে পার্থক্যবুঝানোর জন্য আল্লাহ হারূত ও মারূত নামক দু’জন ফেরেশতাকে সেখানে শিক্ষক হিসাবেমানুষের বেশে পাঠান। তারা লোকদের জাদু বিদ্যার অনিষ্টকারিতা ও নবুঅতের কল্যাণকারিতাসম্পর্কে বুঝাতে থাকেন। কিন্তু লোকেরা অকল্যাণকর বিষয়গুলিই শিখতে চাইত। যাকুরআনের উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।(৩) সুলায়মানের (আঃ)-এর উপরে প্রদত্ততোহমত :ছোয়াদ ৩৪ : ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻓَﺘَﻨَّﺎ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻭَﺃَﻟْﻘَﻴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﺮْﺳِﻴِّﻪِ ﺟَﺴَﺪﺍً ﺛُﻢَّ ﺃَﻧَﺎﺏَ ‘আমিসোলায়মানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপরে রেখে দিলাম একটি নিষ্প্রাণদেহ। অতঃপর সে বিনত হ’ল।’ এখানে তাফসীরজালালাইনে বলা হয়েছে, ﺍﺑﺘﻠﻴﻨﺎﻩ ﺑﺴﺒﺐ ﻣﻠﻜﻪ،ﻭﺫﻟﻚ ﻟﺘﺰﻭﺟﻪ ﺑﺎﻣﺮﺃﺓ ﻫﻮﺍﻫﺎ، ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺗﻌﺒﺪ ﺍﻟﺼﻨﻢ ﻓﻰ ﺩﺍﺭﻩ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻋﻠﻤﻪ ﻭﻛﺎﻥ ﻣُﻠﻜﻪ ﻓﻰ ﺧﺎﺗﻤﻪ،ﻓﻨﺰﻋﻪ ﻣﺮﺓ ﻋﻨﺪ ﺇﺭﺍﺩﺓﺍﻟﺨﻼﺀ ﻋﻨﺪ ﺃﻣﺮﺃﺓ ﺍﻟﻤﺴﻤﺎﺓ ﺑﺎﻷﻣﻴﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﻋﺎﺩﺗﻪ، ﻓﺠﺎﺀﻫﺎ ﺟﻨّﻰ ﻓﻰ ﺻﻮﺭﺓﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﻓﺄﺧﺬﻩ ﻣﻨﻬﺎ … ﺛﻢ ﺃﻧﺎﺏ : ﺭﺟﻊ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﻣُﻠﻜﻪ ﺑﻌﺪ ﺃﻳﺎﻡ، ﺑﺄﻥ ﻭﺻﻞ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺨﺎﺗﻢ ﻓﻠﺒﺴﻪﻭﺟﻠﺲ ﻋﻠﻰ ﻛﺮﺳﻴﻪ -‘আমরা তাকে তার রাজত্বের কারণে পরীক্ষা করলাম। সেটা এই যে,তিনিএকজন মহিলাকে বিবাহ করেন, যার প্রতি তিনি আসক্ত হয়েছিলেন। ঐ মহিলা তার গৃহে তারঅগোচরে মূর্তি পূজা করত। আর সুলায়মানের রাজত্ব ছিল তার আংটির কারণে। একদিন তিনিটয়লেটে যাবার সময় অভ্যাসবশতঃ আংটিটি খুলে তাঁর উক্ত স্ত্রী ‘আমীনা’-র নিকটে রেখেযান। এমন সময় একটি জিন সুলায়মানের রূপ ধারণ করে সেখানে উপস্থিত হয় ও তার নিকটথেকে আংটিটি নিয়ে নেয়।…অতঃপর সুলায়মান বেরিয়ে এসে দেখেন তাঁর সিংহাসনেঅন্যজন বসে আছে এবং লোকেরা সবাই তাকে অস্বীকার করে।…‘অতঃপর সে বিনত হ’ল’অর্থাৎ সুলায়মান কিছু দিন পরে তাঁর আংটির নিকটে পৌঁছে যান। অতঃপর আংটি পরিধান করে নিজ রাজআসনে উপবেশন করেন’।আমরা বলি, এই ব্যাখ্যার মধ্যে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। কেননাএই ব্যাখ্যা দ্বারা নবী ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। যেখানেনবীদের ইয্যতের হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহর, সেখানে এ ধরনের তাফসীর বাতিলপ্রতিপন্ন হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। সুলায়মান (আঃ)-কে আল্লাহ পরীক্ষা করেছিলেনএবং সেপরীক্ষার ফলে তিনি আল্লাহর দিকে অধিকতর রুজু হয়েছিলেন। কুরআন মাজীদে এই ঘটনাআমাদেরকে শুনানোর উদ্দেশ্য হ’ল যাতে আমরাও কোন পরীক্ষায় নিপতিত হ’লেদিশেহারানা হয়ে যেন আল্লাহর দিকে অধিকতর রুজু ও বিনীত হই- একথা বুঝানো। এখানেমূল ঘটনা বর্ণনা করা আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। তার কোন প্রয়োজনও নেই এবং তার জানারযথার্থ কোন উপায়ও আমাদেরকাছে নেই।এ সম্পর্কে মাননীয় তাফসীরকার যে আংটিরঘটনা উল্লেখ করেছেন, তাছাড়াও তাঁর আংটি শয়তানের করায়ত্ত হওয়া, ৪০দিন পরে তা মাছেরপেট থেকে উদ্ধার করে পুনরায় সিংহাসন ফিরে পাওয়া ইত্যাদি গল্পকে হাফেয ইবনু কাছীরস্রেফ ইস্রাঈলী উপকথা বলেপ্রত্যাখ্যান করেছেন।নবী সুলায়মানের স্বীয়স্ত্রীদের সাথে ঘটনার যে বিবরণ ছহীহ বুখারী সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে এসেছে,সেটিকে ক্বাযী আবুস সঊদ, আল্লামা আলূসী, আশরাফ আলী থানভী প্রমুখমুফাসসিরগণের ন্যায় অনেকে অত্র আয়াতের তাফসীর ভেবেছেন। কিন্তু সেটাও ঠিকনয়। ইমাম বুখারী স্বয়ং উক্ত হাদীছকে অত্র আয়াতের তাফসীরে আনেননি। বরং বিভিন্ননবীর ঘটনা বর্ণনার ন্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সুলায়মান নবী সম্বন্ধেও একটি ঘটনাউল্লেখকরেছেন মাত্র। অত্র আয়াতের শানে নুযূল বা ব্যাখ্যা হিসাবে নয়। উল্লেখ্য যে,ই.ফা.বা. ঢাকা-রঅনুবাদের টীকাতেও উক্ত ঘটনাকে অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় আনা হয়েছে (পৃঃ৭৪৪ টীকা ১৪১)। যা নিতান্তই ভুল।সুলায়মান (আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ:১. নবুঅত ও খেলাফত একত্রে একই ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া সম্ভব।২. ধর্মইরাজনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। ধর্মীয় রাজনীতির মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তিপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।৩. প্রকৃত মহান তিনিই, যিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয়েও অহংকারীহন না। বরং সর্বদা আল্লাহর প্রতি বিনীত থাকেন।৪. শত্রুমুক্ত কোন মানুষ দুনিয়াতে নেই।সুলায়মানের মত একচ্ছত্র এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাদশাহর বিরুদ্ধেও চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ওমিথ্যাচার চালানো হয়েছে।৫. সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে প্রজাসাধারণের কাজ করলেও তারাঅনেক সময় না বুঝে বিরোধিতা করে। যেমন বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্তনা হওয়ায় আল্লাহ বাকী সময়ের জন্য সুলায়মানের প্রাণহীন দেহকে লাঠিতে ঠেস দিয়েদাঁড় করিয়ে রাখেন জিন মিস্ত্রী ও জোগাড়েদের ভয় দেখানোর জন্য। যাতে তারা কাজফেলে রেখে চলে না যায় এবং নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হবার সুযোগ না পায়।সুলায়মানের মৃত্যুও রাজত্বকাল :সুলায়মান (আঃ) ৫৩ বছর বেঁচেছিলেন। তন্মধ্যে ৪০ বছর তিনি রাজত্ব করেন।তাঁর মৃত্যুরপরে তাঁর পুত্র রাহবা‘আম ( ﺭﺣﺒﻌﺎﻡ ) ১৭ বছর রাজত্ব করেন। অতঃপর বনু ইস্রাঈলেররাজত্ব বিভক্ত হয়ে যায়।[8] সুলায়মান মনছূরপুরীর হিসাব মতে শেষনবী (ছাঃ)-এরআবির্ভাবের প্রায় ১৫৪৬ বছর পূর্বে সুলায়মান (আঃ) মৃত্যুবরণ করেন।[9][1]. যথাক্রমে(১) সূরা বাক্বারাহ ২/১০২; (২) নিসা ৪/১৬৩; (৩) আন‘আম ৬/৮৪; (৪) আম্বিয়া২১/৭৮-৭৯, ৮১-৮২; (৫) নমল ২৭/১৫-৪৪=৩০; (৬) সাবা ৩৪/১২-১৪; (৭)ছোয়াদ ৩৮/৩০-৪০=১১;মোট ৫১টি আয়াত।[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৭১৯ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টিরসূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ-৯।[3]. কুরতুবী, সাবা ১২ আয়াতের টীকাদ্রষ্টব্য।[4]. মাহমূদ আলূসী (মৃ: ১২৭০হি:), রূহুল মা‘আনী (বৈরুত: দার এহইয়াউত তুরাছিল‘আরাবী, তাবি), তাফসীর সূরা ছোয়াদ ৩৫, ২৩/২০১ পৃ:।[5]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা নমল ২০আয়াত।[6]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা নমল ৪৪ ও ২৩ আয়াত।[7]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাতহা/৫৭২০ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ-৯।[8].ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২৯-৩০।[9]. মানছূরপুরী, রহমাতুল লিল আলামীন ৩/১০৯পৃঃ।

1 comment:

Translate