Friday, December 10, 2021

আল্লাহ কি নিরাকার ?

 আল্লাহ কি নিরাকার ?

======================
কোন মুসলীমকে যদি জিজ্ঞাসা করেন যে আল্লাহর কি আকার আছে?
অনেকেই এক বাক্যে বলবেন যে, ‘আল্লাহর আকার নেই, তিনি নিরাকার।’ [নাউযুবিল্লাহ!]
খুবই আশ্চর্য বিষয় অধিকাংশ মুসলিম এর আক্বীদাহ সঠিক না । অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ্‌ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। অথচ আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত আক্বীদাহ বাদ না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে আল্লাহ্‌ বলেন,
-‘এবং মুনাফিক পুরুষ মুনাফিক নারী ও মুশরিক পুরুষ মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা রাখে তাদেরকে আল্লাহ্‌ শাস্তি দিবেন।’[১]
.
যেসব মুসলিম সঠিক আক্বীদার খবর রাখে না তারা হিন্দুদের সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে নিরাকার আল্লাহ্‌র ধারনা গ্রহন করেছে। এজন্যই পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায়ই শোনা যায়, ‘আল্লাহ্‌ নিরাকার এবং সর্বত্র বিরাজমান’।
উপরোক্ত এ বিশ্বাস হিন্দু ধর্মের মূল বিশ্বাসঃ ব্রহ্ম একক, অদ্বিতীয় , নির্গুণ হতে বর্ণীত হয়েছে:
-‘তিনি নিরাকার ও সর্বত্র বা সর্বভূতে বিরাজমান!’ [২]
.
আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলা কোরআনে তাঁর সিফাতে যাত এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন তাঁর নিজস্ব সত্তার বর্ণনায় হাত,পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি , শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-ইত্যাদি উল্লেখ করছেন। আমরা কোন সৃষ্টির সাথে তুলনা ছাড়াই এগুলো বিশ্বাস করি। এই বর্ণনা হতে বুঝা যায় আল্লাহ নিরাকার নন, যেমন:
.
■কোরআন হতে দলিলঃ
==================
 তারা আল্লাহ্‌র যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।[৩]
 ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। (হে রাসুল) আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের চেহারা অর্থাৎ সত্ত্বাই একমাত্র বাকি থাকবে। [৪]
 হে ইবলিস, তোমাকে কোন জিনিসটি তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি,তুমি কি এমনি ওদ্ধত্ত প্রকাশ করলে,না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পূর্ণ কেউ। [৫]
 বরং তাঁর দু হাতই প্রসারিত,যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। [৬]
 বল -অনুগ্রহ আল্লাহ্‌রই হাতে।[৭]
 সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে । তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের দর্শনকারী।[৮]
 দৃষ্টি শক্তি তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না বরং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি সুক্ষদরশি,সম্যকপরিজ্ঞাত। [৯]
 আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারন করুন আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন।[১০]
 নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শ্রবণ করেন ও দেখেন।[১১]
 আল্লাহ্‌র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন। [১২]
.
■হাদীস হতে দলিলঃ
===============
 জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্নিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-‘শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালকে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখহীন হবে না।’ [১৩]
.
 সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
-“জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বরকতময় আল্লাহ বলবেন, -‘তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দেই?’ তারা বলবে, -‘তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’
তারপর আল্লাহ (হঠাৎ) পর্দা সরিয়ে দেবেন (এবং তারা তাঁর চেহারা দর্শন লাভ করবে) ।. সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন (দীদার)ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।” [১৪]
.
সুতরাং আল্লাহকে নিরাকার বলা মানে আল্লাহর উপরোক্ত সিফাতকে অস্বীকার করা।
কোরআন ও হাদীসের কোথায় নেই যে আল্লাহর নিরাকার।
একটা কথা পরিষ্কার বুঝা দরকার যে যদি আপনি বলেন যে, আল্লাহর আকার কিরুপ তা আপনি জানেন না, তা হলে আপনার আক্বীদা ঠিক আছে। কারন আল্লাহ্‌ বলেন,
-‘আল্লাহ্‌র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।’ [১৫]
কিন্তু আপনি যদি বলেন আল্লহর আকার নেই, অর্থাৎ আল্লাহ নিরাকার, তা হলে আপনার আক্বীদায় গলদ আছে।
.
আপনার আক্বীদা সংসশোধন করুন। আমরা কোরআন ও হাদীস হতে উপরে প্রমান করেছি যে, আল্লাহ নিরাকার নয়, এর পরও যদি আপনি বলেন যে আল্লাহ নিরাকার, তা হলে আপনি ইসলামের সঠিক আক্বীদা বিশ্বাসের উপর থাকবেন কি করে?
_______________________
[১] সুরা-ফাতহ, আয়াত-৬
[২] স্রীমদ্ভগবত গীতা যথাযথ; কৃষ্ণ কৃপাশ্রীমূর্তি শীল অভয়চরনাবিন্দু ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কতৃক সম্পাদিত,অনুবাদঃ শ্রীমদ ভক্তিচারু । ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট , মায়াপুর।
[৩] সূরা-যুমার ৬৭
[৪] আর-রাহমান ২৬-২৭
[৫] সূরা-সদ ৭৫
[৬] সূরা-সদ ৬৪
[৭] সূরা-আলে ইমরান ৭৩
[৮] সুরা-আল-কিয়ামাহ ২৩
[৯] সূরা-আনআম ১০৩
[১০] সূরা-আত-তূর ৪৮
[১১] সূরা-মুজাদালাহ ১
[১২] সূরা-আশ-শুরা ১১
[১৩] সহীহ বুখারী ৫৫৪, ৫৭৩, ৪৮৫১, সহিহ মুসলিম ৬৩৩
[১৪] সহিহ মুসলিম ১৮১
[১৫] সূরা-আশ-শুরা ১১

No comments:

Post a Comment

Translate