Monday, March 1, 2021

কিয়ামতের বড় আলামত। পর্ব -2:

 দাজ্জাল মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ  করতে পারবেনাঃ  সহীহ হাদীছের বিবরণ  অনুযায়ী দাজ্জালের জন্যে মক্কা ও  মদীনাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।  মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল  স্থানেই সে প্রবেশ করবে।  ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) কর্তৃক  বর্ণিত দাজ্জালের  হাদীছে এসেছে অতঃপর দাজ্জাল  বললোঃ আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই  আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।  আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের  ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো।  তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য  নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই  আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ  করতে চাইবো তখনই কোষমুক্ত তলোয়ার  হাতে নিয়ে ফেরেশতাগণ  আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার  প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ  পাহারা দিবে’’।[41] সে সময় মদীনা শরীফ  তিনবার কেঁপে উঠবে এবং প্রত্যেক  মুনাফেক এবং কাফেরকে বের  করে দিবে। যারা দাজ্জালের নিকট  যাবে এবং তার ফিতনায় পড়বে তাদের  অধিকাংশই হবে মহিলা। দাজ্জালের  ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্য  পুরুষেরা তাদের স্ত্রী, মা, বোন, কন্যা,  ফুফু  এবং অন্যান্য স্বজন মহিলাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।  দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?  সাহাবীগণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস  করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন  অবস্থান করবে?  উত্তরে তিনি বলেছেনঃ সে চল্লিশ দিন  অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক  বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয়  দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয়  দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর  বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের  মতই হবে। আমরা বললামঃ যে দিনটি এক  বছরের মত দীর্ঘ হবে সে দিন কি এক  দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে?  উত্তরে তিনি বললেনঃ না;  বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ  করে নামায পড়বে।[42]  কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?  দাজ্জালের অধিকাংশ  অনুসারী হবে ইহুদী, তুর্কী এবং অনারব  লোক। তাদের অধিকাংশই হবে গ্রাম্য মূর্খ  এবং মহিলা। ইহুদীরা মিথ্যুক  কানা দাজ্জালের অপেক্ষায় রয়েছে।  তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল  হবে তাদের বাদশা। তার  নেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ দাজ্জালের অধিকাংশ  অনুসারী হবে ইহুদী এবং মহিলা।[43]  তিনি আরো বলেনঃ “ইস্পাহানের সত্তর  হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে।  তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই  বিহীন চাদর’’।[44]  গ্রাম্য অশিক্ষিত লোকেরা মূর্খতার  কারণে এবং দাজ্জালের পরিচয়  সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকার  কারণে দাজ্জালের অলৌকিক  ক্ষমতা দেখে তারা ফিতনায় পড়বে।  মহিলাদের ব্যাপারটিও অনুরূপ।  তারা সহজেই যে কোন জিনিষ  দেখে প্রভাবিত হয়ে থাকে।  • দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার  উপায়ঃ  নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের  ফিতনা হতে রেহাই পাওয়ার উপায়ও  বলে দিয়েছেন।  তিনি উম্মাতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের  উপর রেখে গেছেন। সকল প্রকার  কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকল  অকল্যাণের পথ হতে সতর্ক করেছেন।  উম্মাতের উপরে যেহেতু দাজ্জালের  ফিতনা সবচেয়ে বড় তাই  তিনি দাজ্জালের  ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধান  করেছেন এবং দাজ্জালের  লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন।  যাতে মুমিন বান্দাদের জন্য এই প্রতারক,  ধোকাবাজ ও মিথ্যুক  দাজ্জালকে চিনতে কোনরূপ  অসুবিধা না হয়।  ইমাম সাফারায়েনী (রঃ) বলেনঃ  প্রতিটি বিজ্ঞ মুসলিমের উচিৎ তার  ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং সকল  নারী-পুরুষদের জন্য দাজ্জালের  হাদীছগুলো বর্ণনা করা। বিশেষ  করে ফিতনায় পরিপূর্ণ আমাদের বর্তমান  যামানায়। দাজ্জালের  ফিতনা থেকে বাঁচার  উপায়গুলো নিম্নরূপঃ-  ১) ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরাঃ  ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা এবং ঈমানের  উপর অটল থাকাই দাজ্জালের  ফিতনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।  যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তাঁর অতুলনীয়  সুমহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন  করবে সে অতি সহজেই  দাজ্জালকে চিনতে পারবে।  সে দেখতে পাবে দাজ্জাল খায় পান  করে। মু’মিনের আকীদা এই যে, আল্লাহ  তা’আলা পানাহার ও অন্যান্য মানবীয়  দোষ-গুণ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।  যে পানাহারের  প্রতি মুখাপেক্ষী সে কখনও আল্লাহ  বা রব্ব হতে পারেনা। দাজ্জাল হবে অন্ধ।  আল্লাহ এরূপ দোষ-ত্রুটির অনেক উর্ধে।  আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার  অধিকারী মুমিনগণের মনে প্রশ্ন  জাগবে যে নিজের দোষ থেকে মুক্ত  হতে পারেনা সে কিভাবে প্রভু  হতে পারে? মু’মিনের আকীদা এই যে,  আল্লাহকে দুনীয়ার জীবনে দেখা সম্ভব  নয়। অথচ মিথ্যুক দাজ্জালকে মুমিন-কাফের  সবাই দুনিয়াতে দেখতে পাবে।  ২) দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয়  প্রার্থনা করাঃ  আয়েশা (রাঃ)  বলেনঃ “আমি নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নামাযের  ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয়  চাইতে শুনেছি’’।[45] তিনি নামাযের  শেষ তাশাহুদে বলতেনঃ  ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ ﻭَﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﻣِﻦْ  ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺤْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﻤَﻤَﺎﺕِ ﻭَﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢِ ﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝِ  “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের  আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের  ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের  ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই’’।[46]  ৩) দাজ্জাল থেকে দূরে থাকাঃ  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  দাজ্জালের নিকট যেতে নিষেধ  করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের  কাছে আসবে, যে নিজেকে ঈমানদার  মনে করবে। দাজ্জালের কাজ-কর্ম  দেখে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান  হারা হয়ে যাবে। মুমিনের জন্য উত্তম  হলো সম্ভব  হলে সে সময়ে মদীনা অথবা মক্কায়  বসবাস করার চেষ্টা করা। কারণ দাজ্জাল  তথায় প্রবেশ করতে পারবেনা।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ যে ব্যক্তি দাজ্জাল বের হওয়ার  কথা শুনবে সে যেন তার কাছে না যায়।  আল্লাহর শপথ! এমন একজন লোক  দাজ্জালের  নিকটে যাবে যে নিজেকে ঈমানদার  মনে করবে। অতঃপর সে দাজ্জালের  সাথে প্রেরিত সন্দেহময় জিনিষগুলো ও  তার কাজ-কর্ম  দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান  হারা হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে।  হে আল্লাহ! আমরা আপনার  কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয়  চাই।  ৪) সূরা কাহাফ পাঠ করাঃ  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন  হলে মুমিনদেরকে সূরা কাহাফ মুখস্থ  করতে এবং তা পাঠ করতে আদেশ  করেছেন।  তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের  প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ  করবে সে দাজ্জালের  ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে’’।[47]  সূরা কাহাফ পাঠের নির্দেশ  সম্ভবতঃ এজন্য হতে পারে যে, এই সূরায়  আল্লাহ তা’আলা বিস্ময়কর বড় বড়  কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মুমিন  ব্যক্তি এগুলো গভীরভাবে পাঠ  করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর  ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিত হবেনা।  এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও  পড়বেনা।  দাজ্জালের শেষ পরিণতিঃ  সহীহ হাদীছের বিবরণ  অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর  হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। বিস্তারিত  বিবরণ এই যে, মক্কা-মদীনা ব্যতীত  পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে।  তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র  দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে।  সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার  ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক  সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব  প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের  সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ  থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার  পার্শ্বে একত্রিত হবে।  তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের  দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময়  বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর  হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ)  ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের  গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন।  ঈসা (আঃ)কে দেখে সে পানিতে লবন  গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ)  তাকে লক্ষ্য  করে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত  করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই  পাবেনা।মুমিন ঈসা (আঃ)  তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর  মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের  বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের  হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল  পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার  স্থান পাবেনা। গাছের  আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ  বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার  পিছনে একজন ইহুদী লকিয়ে আছে।  আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর  বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর  বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার  পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো!  তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ  ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে।  কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ  বলে পরিচিত।[48]  সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাঃ)  হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ  ( ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘَﺎﺗِﻞَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩَ ﻓَﻴَﻘْﺘُﻠُﻬُﻢُ  ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺘَﺒِﺊَ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩِﻱُّ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺤَﺠَﺮِ ﻭَﺍﻟﺸَّﺠَﺮِ  ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟْﺤَﺠَﺮُ ﺃَﻭِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮُ ﻳَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻢُ ﻳَﺎ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻬُﻮﺩِﻱٌّ  ﺧَﻠْﻔِﻲ ﻓَﺘَﻌَﺎﻝَ ﻓَﺎﻗْﺘُﻠْﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻐَﺮْﻗَﺪَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣِﻦْ ﺷَﺠَﺮِ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩِ )  “ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ  না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ  করবে। অতঃপর মুসলমানগণ  ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও  পাথরের  আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু  কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ  বা পাথর বলবেঃ হে মুসলমান!  হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন  ইহুদী লুকিয়ে আছে।  আসো এবং তাকে হত্যা করো।  তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের  পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন  কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ  বলে পরিচিত’’।[49]  ৩. ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর আগমণ  আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’তের বিশ্বাস  এই যে, ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ  তা’আলা জীবিত অবস্থায়  আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।  ইহুদীরা তাকে হত্যা করতে পারেনি।  কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের  নবীর উম্মাত হয়ে আবার দুনিয়াতে আগমণ  করবেন। দাজ্জালকে হত্যা করবেন, খৃষ্টান  ধর্মের পতন ঘটাবেন, ন্যায় বিচার  প্রতিষ্ঠা করবেন, আমাদের নবীর শরীয়ত  দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবেন  এবং ইসলামের বিলুপ্ত  হওয়া আদর্শগুলো পুনর্জীবিত করবেন।  পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করার পর  মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তার  জানাযা নামায পড়ে দাফন করবেন। তাঁর  আগমণের পক্ষে কুরআন ও সহীহ  হাদীছে অনেক দলীল রয়েছে।  নিম্নে কতিপয় দলীল বর্ণনা করা হলোঃ  কুরআন থেকে দলীলঃ  ১) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ  ) ﻭَﻗَﻮْﻟِﻬِﻢْ ﺇِﻧَّﺎ ﻗَﺘَﻠْﻨَﺎ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺎ  ﻗَﺘَﻠُﻮﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﺻَﻠَﺒُﻮﻩُ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺷُﺒِّﻪَ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺧْﺘَﻠَﻔُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ  ﻟَﻔِﻲ ﺷَﻚٍّ ﻣِﻨْﻪُ ﻣَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﻋِﻠْﻢٍ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﺗِّﺒَﺎﻉَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﻭَﻣَﺎ ﻗَﺘَﻠُﻮﻩُ  ﻳَﻘِﻴﻨًﺎ ‏(157 ‏) ﺑَﻞْ ﺭَﻓَﻌَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰِﻳﺰًﺍ ﺣَﻜِﻴﻤًﺎ  ‏( 158 ‏) ﻭَﺇِﻥْ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺇِﻟَّﺎ ﻟَﻴُﺆْﻣِﻨَﻦَّ ﺑِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﻣَﻮْﺗِﻪِ ﻭَﻳَﻮْﻡَ  ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ (  “এবং তারা বলে আমরা মারইয়ামের পুত্র  আল্লাহর রাসূল ঈসাকে হত্যা করেছি।  মূলতঃ তারা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও  করতে পারেনি;  বরং তাদেরকে সন্দেহে ফেলা হয়েছে।  নিশ্চয়ই যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল  তারাই সে বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে।  কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের  কোন জ্ঞান নেই।  প্রকৃতপক্ষে তারা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি।  পরন্তু আল্লাহ তাঁকে নিজের  দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ  পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী।  আহলে কিতাবদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর  পূর্বে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন  করবে এবং উত্থান দিবসে তিনি তাদের  উপর সাক্ষ্য প্রদান করবেন’’।  (সূরা নিসাঃ ১৫৭-১৫৯)  এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় মুফাস্িসরগণ  বলেনঃ আখেরী যামানায় যখন ঈসা (আঃ)  দুনিয়ায় অবতরণ করবেন তখন সকল  আহলে কিতাব তাঁর প্রতি বিশ্বাস করবে।  ইহুদীদের দাবী তখন মিথ্যা বলে প্রমাণিত  হবে।  ২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ  ) ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻌِﻠْﻢٌ ﻟِﻠﺴَّﺎﻋَﺔِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻤْﺘَﺮُﻥَّ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺍﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺻِﺮَﺍﻁٌ  ﻣُﺴْﺘَﻘِﻴﻢٌ(  অর্থঃ “নিশ্চয়ই ঈসা (আঃ) কিয়ামতের  নিদর্শন। সুতরাং তোমরা কিয়ামতের  ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ  করোনা। আমার অনুসরণ করো। এটাই সরল  পথ’’। (সূরা যুখরুফঃ ৬১)  অত্র আয়াতে কিয়ামতের  পূর্বে ঈসা (আঃ) এর আগমণের  কথা বলা হয়েছে। এটি হবে কিয়ামতের  একটি বড় আলামত। তাঁর আগমণ কিয়ামত  নিকটবর্তী হওয়ার প্রমাণ বহন করবে’’।[50]  হাদীছ থেকে দলীলঃ  ঈসা (আঃ)এর আগমণের  ব্যাপারে অস্যংখ্য সহীহ হাদীছ বিদ্যমান  রয়েছে। নিম্নে আমরা কয়েকটি হাদীছ  উল্লেখ করবোঃ  ১) নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ  ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﻴُﻮﺷِﻜَﻦَّ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺰِﻝَ ﻓِﻴﻜُﻢُ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺣَﻜَﻤًﺎ  ﻋَﺪْﻟًﺎ ﻓَﻴَﻜْﺴِﺮَ ﺍﻟﺼَّﻠِﻴﺐَ ﻭَﻳَﻘْﺘُﻞَ ﺍﻟْﺨِﻨْﺰِﻳﺮَ ﻭَﻳَﻀَﻊَ ﺍﻟْﺠِﺰْﻳَﺔَ ﻭَﻳَﻔِﻴﺾَ  ﺍﻟْﻤَﺎﻝُ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﺎ ﻳَﻘْﺒَﻠَﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺴَّﺠْﺪَﺓُ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪَﺓُ ﺧَﻴْﺮًﺍ  ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻭَﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺇِﻥْ ﺷِﺌْﺘُﻢْ  ‏( ﻭَﺇِﻥْ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺇِﻟَّﺎ ﻟَﻴُﺆْﻣِﻨَﻦَّ ﺑِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﻣَﻮْﺗِﻪِ ﻭَﻳَﻮْﻡَ  ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ )  “ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ  রয়েছে। অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক  হিসেবে ঈসা (আঃ) তোমাদের  মাঝে আগমণ করবেন। তিনি ক্রুশচিহ্ন  ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন  এবং জিযইয়া প্রত্যাখ্যান করবেন। ধন-সম্পদ  প্রচুর হবে এবং তা নেয়ার মত কোন লোক  পাওয়া যাবেনা। এমনকি মানুষের  কাছে একটি সেজদা দুনিয়া এবং তার  মধ্যকার সমস্ত বস্তু হতে শ্রেষ্ঠ হবে। আবু  হুরায়রা (রাঃ)  বলেনঃ তোমরা চাইলে আল্লাহর এই  বাণীটি পাঠ কর,  ) ﻭَﺇِﻥْ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺇِﻟَّﺎ ﻟَﻴُﺆْﻣِﻨَﻦَّ ﺑِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﻣَﻮْﺗِﻪِ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ  ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ (  “আহলে কিতাবদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর  পূর্বে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন  করবে এবং উত্থান দিবসে তিনি তাদের  উপর সাক্ষ্য প্রদান করবেন’’।[51]  এখানে আবু হুরায়রা (রাঃ)  বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আহলে কিতাবের  লোকেরা অচিরেই ঈসা (আঃ)এর মৃত্যুর  পূর্বেই তাঁর উপর ঈমান আনবে। আর  সেটি হবে আখেরী যামানায় তাঁর  অবতরণের পর।  ২) নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ  ( ﻟَﺎ ﺗَﺰَﺍﻝُ ﻃَﺎﺋِﻔَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻇَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ ﺇِﻟَﻰ  ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻴَﻨْﺰِﻝُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ  ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺃَﻣِﻴﺮُﻫُﻢْ ﺗَﻌَﺎﻝَ ﺻَﻞِّ ﻟَﻨَﺎ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻟَﺎ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﻀَﻜُﻢْ  ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﺃُﻣَﺮَﺍﺀُ ﺗَﻜْﺮِﻣَﺔَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺄُﻣَّﺔَ )  “আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর  প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই  করে বিজয়ী থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ)  আগমণ করবেন। সেদিন মুসলমানদের আমীর  তাঁকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ আসুন!  আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেনঃ না;  বরং তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর।  একারণে যে, আল্লাহ এই  উম্মাতকে সম্মানিত করেছেন’’।[52]  ৩) নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ  ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻫُﻮَ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﺫْ ﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢَ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻓَﻴَﻨْﺰِﻝُ ﻋِﻨْﺪَ  ﺍﻟْﻤَﻨَﺎﺭَﺓِ ﺍﻟْﺒَﻴْﻀَﺎﺀِ ﺷَﺮْﻗِﻲَّ ﺩِﻣَﺸْﻖَ ﺑَﻴْﻦَ ﻣَﻬْﺮُﻭﺩَﺗَﻴْﻦِ ﻭَﺍﺿِﻌًﺎ ﻛَﻔَّﻴْﻪِ  ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺟْﻨِﺤَﺔِ ﻣَﻠَﻜَﻴْﻦِ ﺇِﺫَﺍ ﻃَﺄْﻃَﺄَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻗَﻄَﺮَ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﻓَﻌَﻪُ ﺗَﺤَﺪَّﺭَ  ﻣِﻨْﻪُ ﺟُﻤَﺎﻥٌ ﻛَﺎﻟﻠُّﺆْﻟُﺆِ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟِﻜَﺎﻓِﺮٍ ﻳَﺠِﺪُ ﺭِﻳﺢَ ﻧَﻔَﺴِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎﺕَ  ﻭَﻧَﻔَﺴُﻪُ ﻳَﻨْﺘَﻬِﻲ ﺣَﻴْﺚُ ﻳَﻨْﺘَﻬِﻲ ﻃَﺮْﻓُﻪُ ﻓَﻴَﻄْﻠُﺒُﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺪْﺭِﻛَﻪُ  ﺑِﺒَﺎﺏِ ﻟُﺪٍّ ﻓَﻴَﻘْﺘُﻠُﻪُ ﺛُﻢَّ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻗَﺪْ ﻋَﺼَﻤَﻬُﻢُ  ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻴَﻤْﺴَﺢُ ﻋَﻦْ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢْ ﻭَﻳُﺤَﺪِّﺛُﻬُﻢْ ﺑِﺪَﺭَﺟَﺎﺗِﻬِﻢْ ﻓِﻲ  ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ  “সে (দাজ্জাল) যখন মুসলমানদের ঈমান  ধ্বংসের কাজে লিপ্ত থাকবে আল্লাহ  তা’আলা তখন ঈসা ইবনে মারিয়াম  (আঃ)কে পাঠাবেন। জাফরানের  রঙ্গে রঙ্গিত দু’টি পোষক পরিহিত  হয়ে এবং দু’জন ফেরেশতার পাখার উপর  হাত রেখে দামেস্ক শহরের  পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের  উপরে তিনি অবতরণ করবেন। তিনি যখন  মাথা নিচু করবেন তখন সদ্য  গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির  মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তাঁর  মাথা থেকে পানির  ফোটা ঝরতে থাকবে এবং যখন মাথা উঁচু  করবেন তখন অনুরূপভাবে তাঁর  মাথা হতে মণি-মুক্তার মত চকচকে পানির  ফোটা ঝরতে থাকবে। কাফেরের  শরীরে তাঁর নিঃশ্বাস পড়ার  সাথে সাথেই কাফের মৃত্যু বরণ করবে।  চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত গিয়ে তাঁর  নিঃশ্বাস শেষ হবে।  তিনি দাজ্জালকে ফিলিস্তীনের লুদ্দ  শহরের গেইটে পাকড়াও  করে হত্যা করবেন। অতঃপর তাঁর নিকট এমন  কিছু লোক আসবেন যাদেরকে আল্লাহ  তা’আলা দাজ্জালের  ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন।  তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন  এবং বেহেশতের মধ্যে তাদের উচ্চ  মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দিবেন।[53]  ৪) নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ  ﻓَﺒَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺇِﻣَﺎﻣُﻬُﻢْ ﻗَﺪْ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢُ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢَ ﺇِﺫْ ﻧَﺰَﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ  ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢَ ﻓَﺮَﺟَﻊَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻳَﻨْﻜُﺺُ ﻳَﻤْﺸِﻲ  ﺍﻟْﻘَﻬْﻘَﺮَﻯ ﻟِﻴَﺘَﻘَﺪَّﻡَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻴَﻀَﻊُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻳَﺪَﻩُ  ﺑَﻴْﻦَ ﻛَﺘِﻔَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟَﻪُ ﺗَﻘَﺪَّﻡْ ﻓَﺼَﻞِّ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻚَ ﺃُﻗِﻴﻤَﺖْ ﻓَﻴُﺼَﻠِّﻲ  ﺑِﻬِﻢْ ﺇِﻣَﺎﻣُﻬُﻢْ  “মুসলমানদের ইমাম যখন  তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার  জন্য সামনে চলে যাবেন তখন  ঈসা ইবনে মারইয়াম আগমণ করবেন। ইমাম  যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন  পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন  যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের  ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ) ইমামের  কাধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই  সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও।  কারণ তোমার জন্যই এ নামাযের ইকামত  দেয়া হয়েছে। অতঃপর  তিনি ইমামতি করবেন’’।[54]  এখানে যে ইমামের  কথা বলা হয়েছে আলেমদের বিশুদ্ধ  মতে তিনি হলেন ইমাম মাহদী।  ঈসা (আঃ)এর আগমণ  সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে। এ  সমস্ত সহীহ হাদীছে নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যৎ  বাণী করেছেন যে, কিয়ামতের  পূর্বে ঈসা (আঃ) শেষ নবীর উম্মাত  হয়ে দুনিয়াতে আগমণ করবেন।  এতে বিশ্বাস করা প্রতিটি মুসলিমের  ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।  ঈসা (আঃ) কোথায় এবং কখন অবতরণ  করবেন?  ঈসা (আঃ)এর আগমণ কিয়ামত  নিকটবর্তী হওয়ার একটি বড় আলামত।  পূর্বে আলোচনা করেছি যে, দাজ্জালের  ফিতনা থেকে মুসলমানদেরকে মুক্ত করার  জন্য তিনি আগমণ করবেন। এটিই হবে তাঁর  প্রথম ও প্রধান কাজ।  সে হিসেবে আখেরী যামানায়  দাজ্জাল আগমণ করে যখন মুসলমানদের ঈমান  নষ্ট করার কাজে আত্মনিয়োগ  করবে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয়  সৃষ্টি করবে তখন ঈসা (আঃ) আগমণ  করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।  জাফরানী রঙ্গের দু’টি পোষাক পরিহিত  অবস্থায় দুইজন ফেরেশতার পাখার উপর হাত  রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বে অবস্থিত  সাদা মিনারের উপরে তিনি অবতরণ  করবেন।[55]  ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ  থেকে অবতরনের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানগণ  দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য  প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকবে। এমতাবস্থায়  ফজরের নামাযের ইকামত হয়ে যাবে। তখন  মুসলমানদের ইমাম নামাযের ইমামতির জন্য  সামনে চলে যাবেন।  ঈসা (আঃ)কে দেখে মুসলমানদের ইমাম  পিছনে চলে আসতে চাইবেন  এবং ঈসা (আঃ)কে ইমামতি করতে বলবেন।  কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান  করে মুক্তাদী হয়ে নামায পড়বেন।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ  ( ﻓَﺒَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻫُﻢْ ﻳُﻌِﺪُّﻭﻥَ ﻟِﻠْﻘِﺘَﺎﻝِ ﻳُﺴَﻮُّﻭﻥَ ﺍﻟﺼُّﻔُﻮﻑَ ﺇِﺫْ ﺃُﻗِﻴﻤَﺖِ  ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻓَﻴَﻨْﺰِﻝُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺭَﺁﻩُ ﻋَﺪُﻭُّ  ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺫَﺍﺏَ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺬُﻭﺏُ ﺍﻟْﻤِﻠْﺢُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﻓَﻠَﻮْ ﺗَﺮَﻛَﻪُ ﻟَﺎﻧْﺬَﺍﺏَ ﺣَﺘَّﻰ  ﻳَﻬْﻠِﻚَ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻳَﻘْﺘُﻠُﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻓَﻴُﺮِﻳﻬِﻢْ ﺩَﻣَﻪُ ﻓِﻲ ﺣَﺮْﺑَﺘِﻪِ )  “মুসলমানগণ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার  জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ  করতে থাকবে এবং কাতারবন্দী হতে থাকবে।  ইতিমধ্যেই যখন নামাযের ইকামত  হয়ে যাবে তখন ঈসা (আঃ) অবতরন করবেন।  আল্লাহর শত্রু দাজ্জাল  ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবন  গলার ন্যায় গলতে থাকবে। ঈসা (আঃ)  যদি তাকে ছেড়েও দেন তথাপিও  সে মৃত্যু পর্যন্ত গলতে থাকবে। কিন্তু  তিনি তাকে নিজ হাতে হত্যা করবেন  এবং মুসলমানদেরকে তাঁর  লৌহাস্ত্রে দাজ্জাল হত্যার আলামত  হিসেবে রক্ত দেখাবেন’’।[56]  ঈসা (আঃ) এসে যে সমস্ত দায়িত্ব পালন  করবেনঃ  ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) নবী হয়ে নতুন  কোন শরীয়ত নিয়ে দুনিয়াতে আসবেন  না; বরং তিনি আমাদের নবীর একজন  উম্মাত হয়ে আগমণ করবেন এবং আমাদের  শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-  ফয়সালা করবেন। তিনি নিম্নের বড় বড়  কয়েকটি কাজে আঞ্জাম দিবেন।  ১) দাজ্জালকে হত্যা করবেনঃ  পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে মুসলমানগণ  যখন দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার  জন্যে প্রস্ততি গ্রহণ করতে থাকবেন তখন  আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন।  তখন নামাযের ইকামত হয়ে যাবে।  তিনি তখনকার ইমামের  পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায়  করবেন। দাজ্জাল ঈসা (আঃ)এর আগমণ  সম্পর্কে জানতে পেরে বায়তুল  মাকদিসের দিকে চলে যাবে।  সেখানে গিয়ে দেখবেন দাজ্জাল একদল  মুসলমানকে অবরোধ করে রেখেছে।  ঈসা (আঃ)  সেখানে গিয়ে দরজা খুলতে বলবেন।  দরজা খুলে দেয়া হলে তিনি পিছনে দাজ্জালকে দেখতে পাবেন।  তার পিছু ধাওয়া করে তাকে পাকড়াও  করবেন এবং ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের  গেইটে তাকে এবং তার  বাহিনী তথা ইহুদীদেরকে হত্যা করবেন।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ  ﻓَﺒَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺇِﻣَﺎﻣُﻬُﻢْ ﻗَﺪْ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢُ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢَ ﺇِﺫْ ﻧَﺰَﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ  ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢَ ﻓَﺮَﺟَﻊَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻳَﻨْﻜُﺺُ ﻳَﻤْﺸِﻲ  ﺍﻟْﻘَﻬْﻘَﺮَﻯ ﻟِﻴَﺘَﻘَﺪَّﻡَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻴَﻀَﻊُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻳَﺪَﻩُ  ﺑَﻴْﻦَ ﻛَﺘِﻔَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟَﻪُ ﺗَﻘَﺪَّﻡْ ﻓَﺼَﻞِّ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻚَ ﺃُﻗِﻴﻤَﺖْ ﻓَﻴُﺼَﻠِّﻲ  ﺑِﻬِﻢْ ﺇِﻣَﺎﻣُﻬُﻢْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺍﻧْﺼَﺮَﻑَ ﻗَﺎﻝَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﺍﻓْﺘَﺤُﻮﺍ  ﺍﻟْﺒَﺎﺏَ ﻓَﻴُﻔْﺘَﺢُ ﻭَﻭَﺭَﺍﺀَﻩُ ﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝُ ﻣَﻌَﻪُ ﺳَﺒْﻌُﻮﻥَ ﺃَﻟْﻒَ ﻳَﻬُﻮﺩِﻱٍّ ﻛُﻠُّﻬُﻢْ  ﺫُﻭ ﺳَﻴْﻒٍ ﻣُﺤَﻠًّﻰ ﻭَﺳَﺎﺝٍ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻧَﻈَﺮَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝُ ﺫَﺍﺏَ ﻛَﻤَﺎ  ﻳَﺬُﻭﺏُ ﺍﻟْﻤِﻠْﺢُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﻭَﻳَﻨْﻄَﻠِﻖُ ﻫَﺎﺭِﺑًﺎ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ  ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﺇِﻥَّ ﻟِﻲ ﻓِﻴﻚَ ﺿَﺮْﺑَﺔً ﻟَﻦْ ﺗَﺴْﺒِﻘَﻨِﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻴُﺪْﺭِﻛُﻪُ ﻋِﻨْﺪَ ﺑَﺎﺏِ  ﺍﻟﻠُّﺪِّ ﺍﻟﺸَّﺮْﻗِﻲِّ ﻓَﻴَﻘْﺘُﻠُﻪُ ﻓَﻴَﻬْﺰِﻡُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩَ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺒْﻘَﻰ ﺷَﻲْﺀٌ ﻣِﻤَّﺎ  ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺘَﻮَﺍﺭَﻯ ﺑِﻪِ ﻳَﻬُﻮﺩِﻱٌّ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﻄَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﺸَّﻲْﺀَ ﻟَﺎ  ﺣَﺠَﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﺣَﺎﺋِﻂَ ﻭَﻟَﺎ ﺩَﺍﺑَّﺔَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻐَﺮْﻗَﺪَﺓَ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣِﻦْ  ﺷَﺠَﺮِﻫِﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻨْﻄِﻖُ  “মুসলমানদের ইমাম যখন  তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার  জন্য সামনে চলে যাবেন তখন  ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। ইমাম  যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন  পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন  যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের  ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ) ইমামের  কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই  সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও।  কারণ তোমার জন্যেই এ নামাযের ইকামত  দেয়া হয়েছে। অতঃপর  তিনি ইমামতি করবেন।[57] নামায  শেষে তিনি দরজা খুলতে বলবেন।  তারা দরজা খুলে দিবেন।[58]  পিছনে তিনি দাজ্জালকে দেখতে পাবেন।  তার সাথে থাকবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত  সত্তুর হাজার ইহুদী। দাজ্জাল  ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবন  গলার ন্যায়  গলতে থাকবে এবং পালাতে চেষ্টা করবে।  ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য  করে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত  করব যা থেকে তুমি কখনও রেহাই  পাবেনা।মুমিন ঈসা (আঃ) লুদ্দ শহরের পূর্ব  গেইটে তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত  করে হত্যা করবেন। অতঃপর আল্লাহ  তা’আলা ঈসা (আঃ)এর  মাধ্যমে ইহুদীদেরকে পরাজিত করবেন।  আল্লাহর কোন সৃষ্টজীবের  অন্তরালে ইহুদীরা পালাতে চাইলে আল্লাহ  সে সৃষ্টজীবকে কথা বলার শক্তি দিবেন।  পাথর, গাছ, দেয়াল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর  আড়ালে পলায়ন করলে সকলেই  বলবেঃ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা!  আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে।  আসো এবং তাকে হত্যা করো।  তবে গারকাদ নামক গাছের  পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন  কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ  বলে পরিচিত।[59]  ২) ইয়াজুয-মা’জুযকে ধ্বংস করবেনঃ  ইয়াজুয-মাজুযের আগমণ কিয়ামতের  একটি অন্যতম বড় আলামত। এব্যাপারে একটু  পরে বিস্তারিত আলোচনা হবে।  এখানে যা বলা প্রয়োজন  তা হলো দাজ্জালের ফিতনা খতম করার পর  ইয়াজুয-মাজুযের দলেরা পৃথিবীতে নতুন  করে মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এই বাহিনীর  মোকাবেলা করা মুসলমানদের  জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ঈসা (আঃ)  আল্লাহর কাছে এই বাহিনীকে ধ্বংস  করার জন্য প্রাণ খুলে দু’আ করবেন। আল্লাহ  তাঁর দু’আ কবূল করবেন এবং ইয়াজুয-মাজুযের  বাহিনীকে সমূলে খতম করে দিবেন।  ৩) সমস্ত মতবাদ ধ্বংস করে ইসলামী শাসন  কায়েম করবেনঃ  ঈসা (আঃ) আগমণ  করে ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ করবেন।  আল্লাহর কিতাব এবং আমাদের নবীর  সুন্নাত দিয়ে বিচার-ফয়সালা করবেন।  সেই সময়ে ইসলাম ছাড়া বাকী সমস্ত  মতবাদ মিটিয়ে দিবেন। এজন্যই  তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতিক  হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন  ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর  হত্যা করে ফেলবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের  কাছ থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান  করবেন। ইসলাম অথবা হত্যা ছাড়া অন্য কিছু  গ্রহণ করবেন না। মোটকথা এই  শরীয়তকে নতুনভাবে সংস্কার করার  জন্যে এবং সর্বশেষ নবীর  আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য  তিনি পৃথিবীতে আগমণ করবেন।[60]  ৪) ঈসা (আঃ) এর সময়কালে সুখ-শান্তি ও  নিরাপত্তাঃ  সহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় যে,  ঈসা (আঃ)এর সময়কালে ব্যাপক সুখ-শান্তি,  নিরাপত্তা ও বরকত বিরাজ করবে। আল্লাহ  রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদেরকে এ  সমস্ত জিনিষ দ্বারা সম্মানিত করবেন।  মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ  উঠে যাবে এবং সকল মানুষ  কালেমায়ে তাইয়্যিবা তথা ইসলামের  উপর একত্রিত হয়ে যাবে।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ  ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﻓِﻲ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺣَﻜَﻤًﺎ ﻋَﺪْﻟًﺎ  ﻭَﺇِﻣَﺎﻣًﺎ ﻣُﻘْﺴِﻄًﺎ ﻳَﺪُﻕُّ ﺍﻟﺼَّﻠِﻴﺐَ ﻭَﻳَﺬْﺑَﺢُ ﺍﻟْﺨِﻨْﺰِﻳﺮَ ﻭَﻳَﻀَﻊُ ﺍﻟْﺠِﺰْﻳَﺔَ  ﻭَﻳَﺘْﺮُﻙُ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺴْﻌَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﺎﺓٍ ﻭَﻟَﺎ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺗُﺮْﻓَﻊُ  ﺍﻟﺸَّﺤْﻨَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﺘَّﺒَﺎﻏُﺾُ ﻭَﺗُﻨْﺰَﻉُ ﺣُﻤَﺔُ ﻛُﻞِّ ﺫَﺍﺕِ ﺣُﻤَﺔٍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺪْﺧِﻞَ  ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪُ ﻳَﺪَﻩُ ﻓِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻴَّﺔِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻀُﺮَّﻩُ ﻭَﺗُﻔِﺮَّ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪَﺓُ ﺍﻟْﺄَﺳَﺪَ ﻓَﻠَﺎ  ﻳَﻀُﺮُّﻫَﺎ ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺬِّﺋْﺐُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻐَﻨَﻢِ ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﻛَﻠْﺒُﻬَﺎ ﻭَﺗُﻤْﻠَﺄُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽُ ﻣِﻦَ  ﺍﻟﺴِّﻠْﻢِ ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻤْﻠَﺄُ ﺍﻟْﺈِﻧَﺎﺀُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﻭَﺗَﻜُﻮﻥُ ﺍﻟْﻜَﻠِﻤَﺔُ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻓَﻠَﺎ  ﻳُﻌْﺒَﺪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺗَﻀَﻊُ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏُ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭَﻫَﺎ ﻭَﺗُﺴْﻠَﺐُ ﻗُﺮَﻳْﺶٌ ﻣُﻠْﻜَﻬَﺎ  ﻭَﺗَﻜُﻮﻥُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽُ ﻛَﻔَﺎﺛُﻮﺭِ ﺍﻟْﻔِﻀَّﺔِ ﺗُﻨْﺒِﺖُ ﻧَﺒَﺎﺗَﻬَﺎ ﺑِﻌَﻬْﺪِ ﺁﺩَﻡَ ﺣَﺘَّﻰ  ﻳَﺠْﺘَﻤِﻊَ ﺍﻟﻨَّﻔَﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻘِﻄْﻒِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌِﻨَﺐِ ﻓَﻴُﺸْﺒِﻌَﻬُﻢْ ﻭَﻳَﺠْﺘَﻤِﻊَ  ﺍﻟﻨَّﻔَﺮُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺮُّﻣَّﺎﻧَﺔِ ﻓَﺘُﺸْﺒِﻌَﻬُﻢْ ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭُ ﺑِﻜَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ ﻣِﻦَ  ﺍﻟْﻤَﺎﻝِ ﻭَﺗَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟْﻔَﺮَﺱُ ﺑِﺎﻟﺪُّﺭَﻳْﻬِﻤَﺎﺕِ  “আমার উম্মাতের ভিতরে ন্যায় বিচারক  শাসক এবং ইনসাফ  প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হয়ে ঈসা (আঃ)  আগমণ করবেন। তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতীক  হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন  ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর  হত্যা করে ফেলবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের  থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন।  সাদকা গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা হবে। অর্থাৎ  কোন অভাবী মানুষ থাকবেনা। সবাই  আল্লাহর ফজলে ধনী হয়ে যাবে। কাজেই  সাদকা নেয়ার মত কোন লোক  খুঁজে পাওয়া যাবেনা। উট, ছাগল বা অন্য  কোন চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি যত্ন  নেয়া হবেনা। মানুষে-মানুষে হিংসা-  বিদ্বেষ উঠে যাবে। বিষাক্ত সাপের বিষ  চলে যাবে। শিশু বাচ্চারা বিষাক্ত  সাপের মুখে হাত ঢুকিয়ে দিবে। কিন্তু  সাপ শিশুকে কামড় দিবেনা।  এমনিভাবে শিশু ছেলে সিংহের  পিঠে উঠে বসবে কিন্তু সিংহ ছেলের  কোন ক্ষতি করবেনা। ছাগল  এবং নেকড়ে বাঘ এক  সাথে মাঠে চরে বেড়াবে। অর্থাৎ বাঘ  ছাগলের রাখালের মত হয়ে থাকবে।  পানির মাধ্যমে গ্লাস যেমন পরিপূর্ণ  হয়ে যায় পৃথিবীও  তেমনিভাবে শান্তিতে পরিপূর্ণ  হয়ে যাবে। সকলের কথা একই হবে।  পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া অন্য  কারো ইবাদত করা হবেনা। যুদ্ধ-বিগহ্র বন্ধ  হয়ে যাবে। কুরাইশদের রাজত্ব  ছিনিয়ে নেয়া হবে। যমিন  একেবারে খাঁটি রৌপ্যের মত পরিস্কার  হয়ে যাবে। আদম (আঃ)এর  যামানা থেকে শুরু করে তখন পর্যন্ত সকল  প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হবে। অন্য বর্ণনায়  আছে পাহাড়ের উপরে বীজ  ছিটিয়ে দিলে সেখানেও ফসল উৎপন্ন  হবে। একটি আঙ্গুরের থোকা এমন বড়  হবে যে, একদল মানুষ তা খেয়ে পরিতৃপ্ত  হয়ে যাবে। একটি ডালিম একদল মানুষের  জন্য যথেষ্ট হবে। বলদ গরুর দাম  বেড়ে যাবে এবং কয়েক  পয়সা দিয়ে ঘোড়া ক্রয় করা যাবে।[61]  গরুর দাম বাড়ার এবং ঘোড়ার দাম কমার  কারণ হল সমস্ত যমিন চাষা-বাদের  উপযোগী হয়ে যাবে। কাজেই গরুর  প্রয়োজন হবে বেশী। অপর পক্ষে যুদ্ধ-  বিগ্রহ থাকবেনা বলে ঘোড়ার কোন মূল্যই  থাকবেনা।  ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে কত দিন থাকবেনঃ  ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে কত দিন থাকবেন  এ ব্যাপারে দু’ধরণের মত পাওয়া যায়।  কোন বর্ণনায় আছে তিনি সাত বছর  অবস্থান করবেন। আবার কোন বর্ণনায়  আছে চল্লিশ বছরের কথা।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ  ( ﻓَﻴَﻤْﻜُﺚُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺳَﻨَﺔً ﺛُﻢَّ ﻳُﺘَﻮَﻓَّﻰ ﻓَﻴُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ  ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ )  “অতঃপর তিনি চল্লিশ বছর  পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যু বরণ করবেন।  মুসলমানেরা তাঁর জানাযা নামায  পড়ে দাফন করবে’’।[62]  মুসলিম শরীফে আছে,  ( ﺛُﻢَّ ﻳَﻤْﻜُﺚُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺳَﺒْﻊَ ﺳِﻨِﻴﻦَ ﻟَﻴْﺲَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻋَﺪَﺍﻭَﺓٌ )  “অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে সাত বছর  শান্তিতে বসাবাস করবেন। পরস্পরের  মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ  থাকবেনা’’।[63]  উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন  করতে গিয়ে আলেমগণ বলেনঃ  যে বর্ণনায় সাত বছরের  কথা বলা হয়েছে সেখানে অবতরণ করার  পর সাত বছরের কথা বলা হয়েছে। আর  যেখানে চল্লিশ বছরের  কথা বলা হয়েছে সেখানে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার  সময় তাঁর বয়সকে পুনরায় হিসাব  করে দেখানো হয়েছে।  ঈসা (আঃ) এর মৃত্যু বরণ এবং দাফনঃ  তিনি কোথায় মৃত্যু বরণ করবেন-  এব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট দলীল  পাওয়া যায়না। তদুপরি কোন কোন আলেম  বলেনঃ তিনি মদীনায় ইন্তেকাল করবেন  এবং মদীনাতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর  সাথে তাঁকে দাফন করা হবে। ইমাম  করতুবী বলেনঃ তাঁর কবর কোথায় হবে- এ  ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ  বলেছেন বায়তুল মাকদিসে আবার কেউ  বলেছেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে মদীনায়  তাঁর কবর হবে।[64] (আল্লাহই ভাল জানেন)  ৪. ইয়াজুয-মা’জুযের আগমণ  ইয়াজুয-মা’জুযের পরিচয়ঃ  ইয়াজুয-মা’জুযের দল বের  হওয়া কিয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত।  এরা বের হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও  মহা ফিতনার সৃষ্টি করবে।  এরা বর্তমানে যুল-কারনাইন বাদশা কতৃক  নির্মিত প্রাচীরের ভিতরে অবস্থান  করছে। কিয়ামতের পূর্ব  মুহূর্তে তারা দলে দলে মানব সমাজের  ভিতরে চলে এসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ  চালাবে। তাদের মোকাবেলা করার মত  তখন কারো কোন শক্তি থাকবেনা।  তাদের পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন  কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন আলেম  বলেনঃ তারা শুধু মাত্র আদমের বংশধর।  আদম ও হাওয়ার বংশধর নয়। কারণ  হিসেবে বলেনঃ আদম (আঃ) এর  একবার স্বপ্নদোষ হয়েছিল।   স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বীর্যপাত হয়ে মাটির  সাথে মিশে গেলে তা থেকে আল্লাহ  তায়ালা ইয়াজুয-মা’জুয জাতি সৃষ্টি করেন।  [65]  ইবনে হাজার (রঃ) বলেনঃ কথাটি পূর্ব  যুগের কোন গ্রহণযোগ্য আলেম কর্তৃক  বর্ণিত হয়নি। শুধুমাত্র কা’ব আল-আহবার  থেকে বর্ণিত হয়েছে। কথাটি সুস্পষ্ট  মারফূ হাদীছের বিরোধী হওয়ায়  তা গ্রহণযোগ্য নয়।  মোটকথা তারা তুর্কীদের পূর্ব পুরুষ  ইয়াফিছের বংশধর। আর ইয়াফিছ হলো নূহ  (আঃ)এর সন্তান। কাজেই তারা আদম-  হাওয়ারই সন্তান।  প্রমাণ স্বরূপ বুখারী শরীফের  হাদীছটি উল্লেখযোগ্য।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ  ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﺎ ﺁﺩَﻡُ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻟَﺒَّﻴْﻚَ ﻭَﺳَﻌْﺪَﻳْﻚَ ﻭَﺍﻟْﺨَﻴْﺮُ ﻓِﻲ  ﻳَﺪَﻳْﻚَ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺃَﺧْﺮِﺝْ ﺑَﻌْﺚَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻌْﺚُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻗَﺎﻝَ ﻣِﻦْ  ﻛُﻞِّ ﺃَﻟْﻒٍ ﺗِﺴْﻊَ ﻣِﺎﺋَﺔٍ ﻭَﺗِﺴْﻌَﺔً ﻭَﺗِﺴْﻌِﻴﻦَ ﻓَﻌِﻨْﺪَﻩُ ﻳَﺸِﻴﺐُ ﺍﻟﺼَّﻐِﻴﺮُ  ‏( ﻭَﺗَﻀَﻊُ ﻛُﻞُّ ﺫَﺍﺕِ ﺣَﻤْﻞٍ ﺣَﻤْﻠَﻬَﺎ ﻭَﺗَﺮَﻯ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺳُﻜَﺎﺭَﻯ ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻢْ  ﺑِﺴُﻜَﺎﺭَﻯ ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺷَﺪِﻳﺪٌ ‏) ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻳُّﻨَﺎ  ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪُ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻭَﻣِﻦْ ﻳَﺄْﺟُﻮﺝَ  ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﺗِﺴْﻌُﻤِﺎﺋﺔٌ ﻭَ ﺗِﺴْﻌَﺔٌ ﻭَ ﺗﺴْﻌُﻮْﻥَ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ  ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺭْﺟُﻮ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺭُﺑُﻊَ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓَﻜَﺒَّﺮْﻧَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺭْﺟُﻮ  ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺛُﻠُﺚَ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓَﻜَﺒَّﺮْﻧَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺭْﺟُﻮ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ  ﻧِﺼْﻒَ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓَﻜَﺒَّﺮْﻧَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺇِﻟَّﺎ  ﻛَﺎﻟﺸَّﻌَﺮَﺓِ ﺍﻟﺴَّﻮْﺩَﺍﺀِ ﻓِﻲ ﺟِﻠْﺪِ ﺛَﻮْﺭٍ ﺃَﺑْﻴَﺾَ ﺃَﻭْ ﻛَﺸَﻌَﺮَﺓٍ ﺑَﻴْﻀَﺎﺀَ ﻓِﻲ  ﺟِﻠْﺪِ ﺛَﻮْﺭٍ ﺃَﺳْﻮَﺩَ  অর্থঃ “রোজ হাশরে আল্লাহ  তা’আলা আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম  বলবেনঃ আমি আপনার দরবারে উপস্থিত  আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে। আল্লাহ  বলবেনঃ জাহান্নামের  বাহিনীকে আলাদা করো। আদম  বলবেনঃ কারা জাহান্নামের অধিবাসী।  আল্লাহ বলবেনঃ প্রতি হাজারের  মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু  সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যাবে,  গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের সন্তান  পড়ে যাবে এবং মানুষদেরকে আপনি মাতাল  অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ  তারা মাতাল নয়। আল্লাহর আযাবের  ভয়াবহতা অবলোকন করার কারণেই  তাদেরকে মাতালের মত দেখা যাবে।  সাহবীগণ বললেনঃ আমাদের মধ্য  থেকে কি হবে সেই বাকী একজন?  উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো।  তোমাদের মধ্যে থেকে হবে একজন। আর  ইয়াজুয-মা’জুযের মধ্যে থেকে হবে নয়শত  নিরানব্বই জন। আল্লাহর শপথ!  আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের  চারভাগের একভাগ হবে।  আমরা এটা শুনে তাকবীর পাঠ করলাম।  তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেনঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের  তিনভাগের একভাগ হবে।  আমরা এটা শুনেও তাকবীর পাঠ করলাম।  তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেনঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের  দু’ভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনেও  তাকবীর পাঠ করলাম।  পরিশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেনঃ তোমরা সমগ্র মানব জাতির  মধ্যে একটি সাদা গরুর চামড়ায়  একটি কালো লোমের মত।[66]  কুরআন ও হাদীছ থেকে ইয়াজুয-মাজুয  সম্পর্কে যা জানা যায়ঃ  আল্লাহর দু’জন সৎ বান্দা সমগ্র পৃথিবীর  বাদশা হয়েছিলেন। একজন হলেন আল্লাহর  নবী সুলায়মান ইবনে দাউদ (আঃ) আর  অন্যজন যুল-কারনাইন বাদশা। যুলকারনাইন  বাদশা পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তসহ সমগ্র  পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলেন। কুরআন  মাজীদের সূরা কাহাফে তাঁর ভ্রমণ  কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তাঁর ভ্রমণের  কাহিনীর এক পর্যায়ে ইয়াজুয-মা’জুযের  বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ  ) ﺛُﻢَّ ﺃَﺗْﺒَﻊَ ﺳَﺒَﺒًﺎ ‏( 92 ‏) ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻎَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺴَّﺪَّﻳْﻦِ ﻭَﺟَﺪَ ﻣِﻦْ  ﺩُﻭﻧِﻬِﻤَﺎ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻜَﺎﺩُﻭﻥَ ﻳَﻔْﻘَﻬُﻮﻥَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ‏(93 ‏) ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎﺫَﺍ ﺍﻟْﻘَﺮْﻧَﻴْﻦِ  ﺇِﻥَّ ﻳَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻣُﻔْﺴِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﻬَﻞْ ﻧَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻚَ  ﺧَﺮْﺟًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﺗَﺠْﻌَﻞَ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺳَﺪًّﺍ ‏( 94 ‏) ﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﻣَﻜَّﻨَﻨِﻲ  ﻓِﻴﻪِ ﺭَﺑِّﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻓَﺄَﻋِﻴﻨُﻮﻧِﻲ ﺑِﻘُﻮَّﺓٍ ﺃَﺟْﻌَﻞْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺭَﺩْﻣًﺎ  ‏(95 ‏) ﺁﺗُﻮﻧِﻲ ﺯُﺑَﺮَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﺎﻭَﻯ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺼَّﺪَﻓَﻴْﻦِ ﻗَﺎﻝَ  ﺍﻧﻔُﺨُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﻧَﺎﺭًﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺁﺗُﻮﻧِﻲ ﺃُﻓْﺮِﻍْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻗِﻄْﺮًﺍ ‏( 96 ‏)  ﻓَﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻋُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻈْﻬَﺮُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻋُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻧَﻘْﺒًﺎ ‏(97 ‏) ﻗَﺎﻝَ  ﻫَﺬَﺍ ﺭَﺣْﻤَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻲ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﻭَﻋْﺪُ ﺭَﺑِّﻲ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﺩَﻛَّﺎﺀَ ﻭَﻛَﺎﻥَ  ﻭَﻋْﺪُ ﺭَﺑِّﻲ ﺣَﻘًّﺎ ‏( 98 ‏) ﻭَﺗَﺮَﻛْﻨَﺎ ﺑَﻌْﻀَﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻳَﻤُﻮﺝُ ﻓِﻲ ﺑَﻌْﺾٍ  ﻭَﻧُﻔِﺦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻮﺭِ ﻓَﺠَﻤَﻌْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺟَﻤْﻌًﺎ (  “অতঃপর তিনি পথ অবলম্বন করলেন।  চলতে চলতে তিনি যখন দুই পাহাড়ের  মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছলেন তখন তথায় এমন  এক জাতির সন্ধান পেলেন যারা তাঁর  কথা একেবারেই বুঝতে পারছিলনা।  তারা বললঃ হে যুল-কারনাইন! ইয়াজুয ও  মা’জুয পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে।  আমরা কি আপনাকে বিনিময় স্বরূপ কর প্রদান  করবো এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও  তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ  করে দিবেন? যুল-কারনাইন  বললেনঃ আমার প্রভু  আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই  যথেষ্ট। তোমরা আমাকে শ্রম  দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও  তাদের মাঝখানে একটি মজবুত প্রাচীর  তৈরী করে দিবো। তোমরা লোহার পাত  নিয়ে আসো। অতঃপর যখন দুই পাহাড়ের  মধ্যবর্তী ফাঁকাস্থান পূর্ণ হয়ে লৌহ স্তুপ দুই  পর্বতের সমান হলো তখন যুল-কারনাইন  বললেনঃ তোমরা ফুঁক দিয়ে আগুন  জ্বালাও। যখন ওটা আগুনে পরিণত  হলো তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত  তামা আনয়ন করো, ওটা আগুনের  উপরে ঢেলে দেই। এভাবে প্রাচীর  নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ইয়াজুয ও মা’জুয  তা অতিক্রম  করতে পারলোনা এবং তা ছিদ্র করতেও  সক্ষম হলোনা। যুল-কারনাইন  বললেনঃ এটা আমার প্রভুর অনুগ্রহ। যখন  আমার প্রভুর ওয়াদা পূরণের সময় (কিয়ামত)  নিকটবর্তী হবে তখন  তিনি প্রাচীরকে ভেঙ্গে চুরমার  করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন।  আমার প্রতিপালকের ওয়াদা অবশ্যই  বাস্তবায়িত হবে। সেদিন  আমি তাদেরকে ছেড়ে দেবো দলের পর  দলে সাগরের ঢেউয়ের আকারে।  এবং শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। অতঃপর  আমি তাদের সকলকেই একত্রিত করবো’’।  (সূরা কাহাফঃ ৯২-৯৯)  আখেরী যামানায় কিয়ামতের  পূর্বে পাহাড় ভেদ করে ইয়াজুয ও  মা’জুযের আগমণ সম্পর্কে আল্লাহ  তা’আলা অন্যত্র বলেনঃ  ) ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻓُﺘِﺤَﺖْ ﻳَﺄْﺟُﻮﺝُ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝُ ﻭَﻫُﻢْ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺣَﺪَﺏٍ  ﻳَﻨﺴِﻠُﻮﻥَ ‏(96 ‏) ﻭَﺍﻗْﺘَﺮَﺏَ ﺍﻟْﻮَﻋْﺪُ ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫِﻲَ ﺷَﺎﺧِﺼَﺔٌ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭُ  ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻳَﺎﻭَﻳْﻠَﻨَﺎ ﻗَﺪْ ﻛُﻨَّﺎ ﻓِﻲ ﻏَﻔْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺑَﻞْ ﻛُﻨَّﺎ  ﻇَﺎﻟِﻤِﻴﻦ(  “এমন কি যখন ইয়াজুয ও মা’জুযকে মুক্ত  করা করা হবে তখন তারা প্রত্যেক উঁচু  ভূমি থেকে দলে দলে ছুটে আসবে। যখন  সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হবে তখন  কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে।  তারা বলবেঃ হায় দুর্ভোগ আমাদের!  আমরা তো ছিলাম এবিষয়ে উদাসীন;  বরং আমরা ছিলাম জালেম’’।  (সূরা আম্বীয়াঃ ৯৬-৯৭)  এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহ  তা’আলা ন্যায় পরায়ন বাদশা যুল-  কারনাইনকে ইয়াজুয-মা’জুযের বিশাল  প্রাচীর নির্মাণের ক্ষমতা দিয়েছিলেন।  যাতে তারা মানুষের  মাঝে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয়  সৃষ্টি করতে না পারে। যখন নির্দিষ্ট সময়  এসে যাবে এবং কিয়ামত  নিকটবর্তী হবে তখন উক্ত প্রাচীর  ভেঙ্গে যাবে। প্রচন্ড  বেগে তারা দলে দলে বের হয়ে আসবে।  কোন শক্তিই তাদের  সামনে দাঁড়াতে পারবেনা।  পৃথিবীতে তারা অশান্তি ও  বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আর  এটি হবে শিংগায় ফুঁক দেয়া, দুনিয়া ধ্বংস  ও কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার  অতি নিকটবর্তী সময়ে।  বুখারী ও মুসলিম শরীফে যায়নাব  বিনতে জাহ্শ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,  ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻓَﺰِﻋًﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟَﺎ  ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳْﻞٌ ﻟِﻠْﻌَﺮَﺏِ ﻣِﻦْ ﺷَﺮٍّ ﻗَﺪِ ﺍﻗْﺘَﺮَﺏَ ﻓُﺘِﺢَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻣِﻦْ  ﺭَﺩْﻡِ ﻳَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻣِﺜْﻞُ ﻫَﺬِﻩِ ﻭَﺣَﻠَّﻖَ ﺑِﺈِﺻْﺒَﻌِﻪِ ﺍﻟْﺈِﺑْﻬَﺎﻡِ ﻭَﺍﻟَّﺘِﻲ  ﺗَﻠِﻴﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺯَﻳْﻨَﺐُ ﺑِﻨْﺖُ ﺟَﺤْﺶٍ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻧَﻬْﻠِﻚُ  ﻭَﻓِﻴﻨَﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤُﻮﻥَ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺜُﺮَ ﺍﻟْﺨَﺒَﺚُ  “একদা নবী (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকটে ভীত-  সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করলেন।  তিনি বলছিলেনঃ ( ﻟَﺎ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻟَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ) | আরবদের  জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের  অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আজ ইয়াজুয-  মা’জুযের প্রাচীর এই পরিমাণ  খুলে দেয়া হয়েছে। এ  কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তার  পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত  তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব  বিনতে জাহ্শ (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল  (সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললামঃ হে আল্লাহর  রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও  কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো?  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপ কাজ  বেড়ে যাবে’’।[67]  ইয়াজুয-মা’জুয কখন বের হবে?  কুরআনের বর্ণনা থেকে যা জানা যায়,  তাহলো কিয়ামতের  পূর্বমুহূর্তে তারা মানব  সমাজে চলে এসে ব্যাপক অশান্তি ও  বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।  ﺇِﻥَّ ﻳَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻳَﺤْﻔِﺮُﻭﻥَ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﺩُﻭﺍ ﻳَﺮَﻭْﻥَ  ﺷُﻌَﺎﻉَ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﺭْﺟِﻌُﻮﺍ ﻓَﺴَﻨَﺤْﻔِﺮُﻩُ ﻏَﺪًﺍ  ﻓَﻴُﻌِﻴﺪُﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺷَﺪَّ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﺖْ ﻣُﺪَّﺗُﻬُﻢْ ﻭَﺃَﺭَﺍﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻥْ  ﻳَﺒْﻌَﺜَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺣَﻔَﺮُﻭﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﺩُﻭﺍ ﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺷُﻌَﺎﻉَ  ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﺭْﺟِﻌُﻮﺍ ﻓَﺴَﺘَﺤْﻔِﺮُﻭﻧَﻪُ ﻏَﺪًﺍ ﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ  ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻭَﺍﺳْﺘَﺜْﻨَﻮْﺍ ﻓَﻴَﻌُﻮﺩُﻭﻥَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﻬَﻴْﺌَﺘِﻪِ ﺣِﻴﻦَ ﺗَﺮَﻛُﻮﻩُ  ﻓَﻴَﺤْﻔِﺮُﻭﻧَﻪُ ﻭَﻳَﺨْﺮُﺟُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻴُﻨْﺸِﻔُﻮﻥَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻭَﻳَﺘَﺤَﺼَّﻦُ  ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺣُﺼُﻮﻧِﻬِﻢْ ﻓَﻴَﺮْﻣُﻮﻥَ ﺑِﺴِﻬَﺎﻣِﻬِﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ  ﻓَﺘَﺮْﺟِﻊُ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺍﻟﺪَّﻡُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺍﺟْﻔَﻆَّ ﻓَﻴَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻗَﻬَﺮْﻧَﺎ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ  ﻭَﻋَﻠَﻮْﻧَﺎ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻓَﻴَﺒْﻌَﺚُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻧَﻐَﻔًﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻗْﻔَﺎﺋِﻬِﻢْ ﻓَﻴَﻘْﺘُﻠُﻬُﻢْ  ﺑِﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ  ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺇِﻥَّ ﺩَﻭَﺍﺏَّ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻟَﺘَﺴْﻤَﻦُ ﻭَﺗَﺸْﻜَﺮُ ﺷَﻜَﺮًﺍ ﻣِﻦْ ﻟُﺤُﻮﻣِﻬِﻢْ  “ইয়াজুয-মা’জুয প্রাচীরের ভিতর  থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিদিন খনন  কাজে লিপ্ত রয়েছে। খনন  করতে করতে যখন তারা বের হওয়ার  কাছাকাছি এসে যায় এবং সূর্যের  আলো দেখতে পায় তখন তাদের  নেতা বলেঃ ফিরে চলে যাও,  আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ  করে সকাল সকাল বের হয়ে যাব। আল্লাহ  তা’আলা রাত্রিতে প্রাচীরকে আগের  চেয়ে আরো শক্তভাবে বন্ধ করে দেন।  প্রতিদিন এভাবেই তাদের কাজ  চলতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ কর্তৃক  নির্ধারিত মেয়াদ যখন শেষ  হবে এবং তিনি তাদেরকে বের  করতে চাইবেন তখন তারা খনন  করবে এবং খনন করতে করতে যখন সূর্যের  আলো দেখতে পাবে তখন তাদের  নেতা বলবেঃ ফিরে চলে যাও। ইনশা-  আল্লাহ আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ  করে সকাল সকাল বের হয়ে যাবো। এবার  তারা ইনশা-আল্লাহ বলবে। অথচ এর  আগে কখনও তা বলেনি। তাই পরের  দিনি এসে দেখবে যেভাবে রেখে গিয়েছিল  সেভাবেই রয়ে গেছে। অতি সহজেই  তা খনন করে মানব সমাজে বের  হয়ে আসবে। তারা পৃথিবীর নদী-নালার  সমস্ত পানি পান করে ফেলবে।  এমনকি তাদের প্রথম দল কোন একটি নদীর  পাশে গিয়ে নদীর সমস্ত পানি পান  করে শুকিয়ে ফেলবে।  পরবর্তী দলটি সেখানে এসে কোন  পানি দেখতে না পেয়ে বলবেঃ এখানে তো এক  সময় পানি ছিল। তাদের  ভয়ে লোকেরা নিজ নিজ সহায়-সম্পদ  নিয়ে অবরুদ্ধ শহর অথবা দুর্গের  মধ্যে প্রবেশ করবে। ইয়াজুয-মা’জুযের দল  যখন পৃথিবীতে কোন মানুষ  দেখতে পাবেনা তখন তাদের একজন  বলবে যমিনের সকল অধিবাসীকে খতম  করেছি। আকাশের  অধিবাসীরা বাকী রয়েছে। এই  বলে তারা আকাশের দিকে তীর  নিক্ষেপ করবে। রক্ত মিশ্রিত হয়ে তীর  ফেরত আসবে। তখন তারা বলবে যমিনের  অধিবাসীকে পরাজিত  করেছি এবং আকাশের অধিবাসী পর্যন্ত  পৌঁছে গেছি। অতঃপর আল্লাহ তাদের  ঘাড়ে নাগাফ নামক এক শ্রেণীর  পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক  সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মতই  তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! তাদের মরা দেহ  এবং চর্বি ভক্ষণ করে যমিনের জীব-জন্তু ও  কীটপতঙ্গ  মোটা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর  শুকরিয়া আদায় করবে’’।[68]  তবে নির্দিষ্টভাবে তাদের আগমণ  হবে ঈসা (আঃ)এর আগমণ  এবং দাজ্জালকে পরাজিত করার পর।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ  ﺛُﻢَّ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻗَﺪْ ﻋَﺼَﻤَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻴَﻤْﺴَﺢُ  ﻋَﻦْ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢْ ﻭَﻳُﺤَﺪِّﺛُﻬُﻢْ ﺑِﺪَﺭَﺟَﺎﺗِﻬِﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓَﺒَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻫُﻮَ  ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﺫْ ﺃَﻭْﺣَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺇِﻧِّﻲ ﻗَﺪْ ﺃَﺧْﺮَﺟْﺖُ ﻋِﺒَﺎﺩًﺍ ﻟِﻲ ﻟَﺎ  ﻳَﺪَﺍﻥِ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ ﺑِﻘِﺘَﺎﻟِﻬِﻢْ ﻓَﺤَﺮِّﺯْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻄُّﻮﺭِ ﻭَﻳَﺒْﻌَﺚُ ﺍﻟﻠَّﻪُ  ﻳَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﻣَﺄْﺟُﻮﺝَ ﻭَﻫُﻢْ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺣَﺪَﺏٍ ﻳَﻨْﺴِﻠُﻮﻥَ ﻓَﻴَﻤُﺮُّ ﺃَﻭَﺍﺋِﻠُﻬُﻢْ  ﻋَﻠَﻰ ﺑُﺤَﻴْﺮَﺓِ ﻃَﺒَﺮِﻳَّﺔَ ﻓَﻴَﺸْﺮَﺑُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻳَﻤُﺮُّ ﺁﺧِﺮُﻫُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ  ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻬَﺬِﻩِ ﻣَﺮَّﺓً ﻣَﺎﺀٌ ﻭَﻳُﺤْﺼَﺮُ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻪُ  ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺭَﺃْﺱُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِ ﻟِﺄَﺣَﺪِﻫِﻢْ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻦْ ﻣِﺎﺋَﺔِ ﺩِﻳﻨَﺎﺭٍ  ﻟِﺄَﺣَﺪِﻛُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻓَﻴَﺮْﻏَﺐُ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻪُ ﻓَﻴُﺮْﺳِﻞُ  ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﻨَّﻐَﻒَ ﻓِﻲ ﺭِﻗَﺎﺑِﻬِﻢْ ﻓَﻴُﺼْﺒِﺤُﻮﻥَ ﻓَﺮْﺳَﻰ ﻛَﻤَﻮْﺕِ  ﻧَﻔْﺲٍ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٍ ﺛُﻢَّ ﻳَﻬْﺒِﻂُ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ  ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﻮْﺿِﻊَ ﺷِﺒْﺮٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻠَﺄَﻩُ ﺯَﻫَﻤُﻬُﻢْ ﻭَﻧَﺘْﻨُﻬُﻢْ  ﻓَﻴَﺮْﻏَﺐُ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻴُﺮْﺳِﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ  ﻃَﻴْﺮًﺍ ﻛَﺄَﻋْﻨَﺎﻕِ ﺍﻟْﺒُﺨْﺖِ ﻓَﺘَﺤْﻤِﻠُﻬُﻢْ ﻓَﺘَﻄْﺮَﺣُﻬُﻢْ ﺣَﻴْﺚُ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺛُﻢَّ  ﻳُﺮْﺳِﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻄَﺮًﺍ ﻟَﺎ ﻳَﻜُﻦُّ ﻣِﻨْﻪُ ﺑَﻴْﺖُ ﻣَﺪَﺭٍ ﻭَﻟَﺎ ﻭَﺑَﺮٍ ﻓَﻴَﻐْﺴِﻞُ  ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘْﺮُﻛَﻬَﺎ ﻛَﺎﻟﺰَّﻟَﻔَﺔِ  “অতঃপর ঈসা (আঃ)এর নিকট এমন কিছু লোক  আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ  তা’আলা দাজ্জালের  ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন।  তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন  এবং বেহেশতের মধ্যে তাদের উচ্চ  মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দিবেন।  ঈসা (আঃ) যখন এ অবস্থায় থাকবেন তখন  আল্লাহ তা’আলা তাকে জানাবেন যে,  আমি এমন একটি জাতি বের করেছি,  যাদের সাথে মোকাবেলা করার  ক্ষমতা কারো নেই। কাজেই আপনি আমার  বান্দাদেরকে নিয়ে তুর  পাহাড়ে উঠে যান। এ সময় আল্লাহ  তাআলা ইয়াজুয-মাজুযের বাহিনী প্রেরণ  করবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু  ভূমি থেকে বের হয়ে আসবে। তাদের  প্রথম দলটি ফিলিস্তীনের  তাবারীয়া জলাশয়ের সমস্ত পানি পান  করে ফেলবে। তাদের শেষ  দলটি সেখানে এসে কোন  পানি না পেয়ে বলবেঃ এক সময়  এখানে পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ও  তার সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে।  ঈসা (আঃ) ও তার সাথীগণ প্রচন্ড  খাদ্যাভাবে পড়বেন।  এমনকি বর্তমানে তোমাদের  কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার চেয়ে তাদের  কাছে একটি গরুর মাথা তখন বেশী প্রিয়  হবে। আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাথীগণ  এই ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য  আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন। আল্লাহ  তাদের দু’আ কবূল করে ইয়াজুয-মা’জুযের  ঘাড়ে ‘নাগাফ’ নামক একশ্রেণীর  পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক  সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মত  তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে। অতঃপর  আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাহাবীগণ  যমিনে নেমে এসে দেখবেন ইয়াজুয-  মাজুযের মরা-পচা লাশ ও তাদের শরীরের  চর্বিতে সমগ্র যমিন ভরপূর হয়ে গেছে।  কোথাও অর্ধহাত জায়গাও খালি নেই।  আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাথীগণ  আল্লাহর কাছে আবার দু’আ করবেন।  আল্লাহ তাদের দু’আ কবূল করে উটের  গর্দানের মত লম্বা লম্বা একদল  পাখি পাঠাবেন। আল্লাহর  আদেশে পাখিগুলো তাদেরকে অন্যত্র  নিক্ষেপ করে পৃথিবীকে পরিস্কার করবে।  অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ  করবেন। এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার  মত পরিস্কার হয়ে যাবে।[69]  ইয়াজুয-মা’জুয ধ্বংসের পর পৃথিবীর সুখ-  স্বাচ্ছন্দ্যঃ  প্রাচীরের অপর প্রান্ত হতে বের  হয়ে এসে ইয়াজুয-মা’জুয যখন  পৃথিবীতে বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টি করবে,  অকাতরে গণহত্যা চালাবে এবং ধন-সম্পদ ও  ফসল-ফলাদি ধ্বংসের কাজে লিপ্ত  হবে তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এই  মহা বিপদ থেকে মুসলমানদেরকে উদ্ধার  করার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন।  কারণ তারা সংখ্যায় এত  বেশী এবং তাদের আক্রমণ এত প্রচন্ড  হবে যে, তাদের  সাথে মোকাবেলা করার মত মুসলমানদের  কোন শক্তি থাকবেনা। আল্লাহ  তা’আলা তাঁর দু’আ কবূল করে ইয়াজুয-  মা’জুযের উপরে ছোট ছোট এক ধরণের  পোঁকা প্রেরণ করবেন। পোঁকাগুলোর  আক্রমণে এই বাহিনী স্বমূলে ধ্বংস  হয়ে যাবে। তাদের মরা-  পঁচা দেহে এবং দুর্গন্ধে যমিন ভরপূর  হয়ে যাবে এবং তাতে বসবাস করা অসম্ভব  হয়ে পড়বে। এতে নতুন এক সমস্যার  সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়বার আল্লাহর  নবী ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছে দু’আ  করবেন। আল্লাহ তাঁদের দু’আ কবূল  করে উটের গর্দানের মত লম্বা লম্বা এক দল  পাখি পাঠাবেন।  আল্লাহর আদেশে পাখিগুলো তাদেরকে সাগরে নিক্ষেপ  করে পৃথিবীকে পরিস্কার করবে। অতঃপর  আল্লাহ তা’আলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।  এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার মত  পরিস্কার হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ  তা’আলা যমিনকে ফসল-ফলাদি উৎপন্ন করার  আদেশ দিবেন। যমিন সকল প্রকার ফল ও ফসল  উৎপন্ন করবে। ফলগুলো এত বড় হবে যে,  একটি ডালিম এক দল মানুষের জন্য যথেষ্ট  হবে। লোকেরা ডালিমের খোসার  নিচে ছাঁয়া গ্রহণ করতে পারবে।  দুধে বরকত দেয়া হবে। একটি উটের দুধ  সেদিন কয়েকটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট  হবে, একটি গাভীর দুধ একটি গোত্রের  লোকের জন্য যথেষ্ট  হবে এবং একটি ছাগলের দুধ এক পরিবারের  সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।[70]  মোটকথা মানুষের মাঝে তখন চরম সুখ-  শান্তি বিরাজ করবে। কোন প্রকার অভাব-  অনটন থাকবেনা। সকল বস্তুতে আল্লাহর  তরফ থেকে বরকত নাযিল হবে। আল্লাহর  ইচ্ছায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ  করবে। কতই না সুন্দর হবে তখনকার মানুষের  জীবন ব্যবস্থা! [৪১] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৪২] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৪৩] – মুসনাদে ইমাম আহমাদ। আহমাদ  শাকের সহীহ বলেছেন।  [৪৪] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৪৫] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৪৬]- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল  জানায়েয।  [৪৭] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৪৮] – নেহায়া, আল-ফিতান ওয়াল  মালাহিম, (১/১২৮-১২৯)  [৪৯] – সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল  ফিতান।  [৫০] – তাফসীরে কুরতুবী, তাবারী ও  ইবনে কাছীর।  [৫১] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল  আম্বীয়া। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈসা (আঃ)এর  অবতরণ।  [৫২] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।  [৫৩] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৫৪] – ইবনে মাজাহ, সহীহ ইবনে খুজায়মা।  ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল  জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ২৭৭।  [৫৫] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।  [৫৬] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৫৭] – এখানে যে ইমামের  কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন বিশুদ্ধ  মতে ইমাম মাহদী।  [৫৮] – আল্লামা ইমাম নাসির উদ্দীন  আলবানী (রঃ)  বলেনঃ এখানে বর্ণনা সংক্ষিপ্ত  করা হয়েছে। অর্থাৎ দাজ্জাল  ঈসা (আঃ)এর আগমণ  সম্পর্কে জানতে পেরে বাইতুল  মাকদিসের দিকে চলে যাবে।  সেখানে গিয়ে একদল  মুসলমানকে অবরোধ করে রাখবে।  ঈসা (আঃ)  সেখানে গিয়ে দরজা খুলতে বলবেন।  দরজা খোলা দেয়া হলে তিনি পিছনে দাজ্জালকে দেখতে পাবেন।  [৫৯] – ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল  ফিতান। সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ  নং- ১৩৮৩৩।  [৬০] – তাযকিরা- লিল ইমাম কুরতুবী (২/৭৯২)  [৬১] – ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান।  সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং-  ৭৭৫২।  [৬২] – মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাঊদ।  সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং-  ৫২৬৫।  [৬৩] – সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ দাজ্জালের  আলোচনা।  [৬৪] – লাওয়ামেউল আনওয়ার, (২/১১৩)।  [৬৫] – ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﺍﻟﻤﺴﻤﻰ ‏(ﺍﻟﻤﺴﺎﺋﻞ ﺍﻟﻤﻨﺜﻮﺭﺓ ‏)  ﺹ ১৬৬-১১৭ ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻓﻰ ﺍﻟﻔﺘﺢ ১৩/১০৭ ﻭ  ﻧﺴﺒﻪ ﻟﻠﻨﻮﻭﻯ  [৬৬] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল  আম্বীয়া।  [৬৭] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আম্বীয়া।  [৬৮] – ইবনে মাজা, তিরমিযী,  ইবনে হিব্বান ও মুস্তাদরাকে হাকেম।  সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৭৩৫।  [৬৯] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।  [৭০] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।

No comments:

Post a Comment

Translate