Sunday, February 28, 2021

কুরআন ও হাদিসের আলোকে গুনাহ মাফের আমল, পর্ব -2:

 কুরআন ও হাদিসের আলোকে গুনাহ মাফের আমল, পর্ব -2: ২. চরিত্রের অধ্যায়  ২. ১. বিশুদ্ধ তাওবা[24] :  হে মুক্তির পথের পথিক বান্দা!  জেনে রাখুন, তাওবা হলো ইসলামের  মূলনীতিসমূহের অন্যতম একটি; আর  তা হলো মহাশক্তিধর মালিকের নিকট  নিশ্চিত অবস্থানের  দিকে ভ্রমণকারীদের প্রথম মানযিল  এবং পরকালের  দিকে অভিযাত্রীদের দীর্ঘ পথের  সূচনা।  তা সত্ত্বেও এটা যেমনিভাবে সূচনা,  ঠিক অনুরূপভাবে এটা মাঝামাঝি ও  শেষও বটে;  সুতরাং তা থেকে কোনো নৈতিকতা  সম্পন্ন বান্দা বিচ্ছিন্ন  হতে পারে না এবং মৃত্যু পর্যন্ত  সে তা অব্যাহত রাখবে। আর তাওবার  সূচনা হল এমনভাবে লজ্জিত  বা অনুশোচনা করা, যা এ দৃঢ়তা, সঠিক  ইচ্ছাশক্তি ও প্রকৃত জ্ঞানবোধ জন্ম  দিবে যে, পাপরাশি হলো বান্দা ও  তার প্রতিপালকের  মাঝখানে পর্দা বা অন্তরায়; কেননা,  তা অন্তরের ময়লা বা কালিমা;  সুতরাং সে দ্রুত মুক্তি ও শান্তির  দিকে চলবে; আর আল্লাহর  দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাঁর  থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই; আর  যে ব্যক্তি তার রবের নিকট আশ্রয় নেয়,  সে এমন আশ্রয়ে চলে যায়,  যেখানে সে ক্ষতিগ্রস্ত  হবে না এবং কখনও  সে ফিরে আসবে না শূন্য হাতে।  আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:  ﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺗُﻮﺑُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮۡﺑَﺔٗ ﻧَّﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰٰ  ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﴾ ‏[ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٨ ‏]  “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর  কাছে তাওবা কর—বিশুদ্ধ তাওবা;  সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের  পাপসমূহ মোচন করে দেবেন।” [25]  আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  ‏« ﺍﻟﺘَّﺎﺋِﺐُ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺬَّﻧْﺐِ ﻛَﻤَﻦْ ﻟَﺎ ﺫَﻧْﺐَ ﻟَﻪُ ‏» . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ  ﻣﺎﺟﻪ ‏) .  “গুনাহ্ থেকে তাওবাকারী ব্যক্তি ঐ  ব্যক্তির মত, যার কোনো গুনাহ্ নেই।”[26]  অতএব, হে আমার ভাই! তাওবা ও  তোমার মাঝে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল  রচিত হওয়ার পূর্বেই তুমি তাওবার  কাজটি দ্রুত সম্পন্ন কর; কারণ,  কোনো ব্যক্তিই জানে না যে,  আল্লাহ তার সাথে কেমন আচরণ  করবেন।  জনৈক কবির কবিতা:  ﻗَﺪِّﻡْ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻚَ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻣَﺮْﺟُﻮَّﺓً  ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﻤَﻤَﺎﺕِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺣَﺒْﺲِ ﺍﻷَﻟْﺴُﻦِ  (তুমি তোমার নিজের জন্য প্রত্যাশিত  তাওবা পেশ কর  মৃত্যুর পূর্বে এবং কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার  আগেই)।  ﺑﺎﺩِﺭ ﺑﻬﺎ ﻏَﻠﻖَ ﺍﻟﻨّﻔﻮﺱ ﻓﺈﻧَّﻬﺎ  ﺫُﺧﺮٌ ﻭﻏُﻨﻢ ﻟﻠﻤُﻨﻴﺐ ﺍﻟﻤﺤﺴِﻦِ  (সুযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগেই  তুমি তা সম্পন্ন কর; কারণ, তা হল  তাওবাকারী সৎকর্মশীল ব্যক্তির জন্য  সঞ্চিত ধন ও গনীমত)।  ২. ২. উদারতা[27] প্রদর্শন:  ইসলামের প্রত্যেকটি আদেশ ও  নিষেধের মধ্যে সূক্ষ্ম ও  স্থূলভাবে উদারতার বিষয়টি সুস্পষ্ট;  সুতরাং বাস্তবেই নতুনভাবে সেটার  পুনরুত্থান ঘটেছে ইসলামের  মূলবস্তুতে এবং তার  প্রত্যেকটি কর্মপদ্ধতি, নিয়মনীতি ও  শাসনব্যবস্থার মধ্যে।  ইসলামের মধ্যে উদারতার  বিষয়টি স্বর্ণের এমন প্রলেপের মত নয়  যে, মানুষ কোনো মরুভূমির মরীচিকায়  ঝাঁপিয়ে পড়বে, পিপাসা কাতর  ব্যক্তি তাকে পানি মনে করবে, কিন্তু  যখন সে সেটার কাছে আসে, তখন  দেখে সেটা আসলে কিছুই নয়।  উদারতা মানে বদান্যতা ও  দানশীলতার মাধ্যমে মনের তৃপ্তি,  স্বচ্ছতা ও দীনদারীর  দ্বারা হৃদয়ে আনন্দ উপভোগ করা,  সহজ ও সরল করার মাধ্যমে নম্রতা প্রদর্শন  করা,  আনন্দময় ও সুসংবাদ নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল  চেহারা প্রদর্শন,  কোনো প্রকার অপদস্থতা ছাড়াই  মুমিনগণের প্রতি বিনয় প্রদর্শন,  কোনো প্রকার ধোকা ও  প্রতারণা ছাড়াই লেনদেনে ছাড়  প্রদান,  কোনো প্রকার খাতির ও তোষামোদ  ছাড়াই আল্লাহর দিকে আহ্বান করার  ক্ষেত্রে সহজ পন্থা অবলম্বন,  কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও  গড়িমসি ছাড়াই আল্লাহ সুবহানাহু  ওয়া তা‘আলার দীনের আনুগত্য করা।  বস্তুত উদারতা হচ্ছে ইসলামের দরজা,  নৈতিক চরিত্রের উচ্চ সোপান  এবং ঈমানের সর্বোত্তম বস্তু।  এটাই হলো সে উদারতা,  যা পাপরাশিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার  করে দেয়; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:  ﴿ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺄۡﺗَﻞِ ﺃُﻭْﻟُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻔَﻀۡﻞِ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﻭَﭐﻟﺴَّﻌَﺔِ ﺃَﻥ ﻳُﺆۡﺗُﻮٓﺍْ ﺃُﻭْﻟِﻲ  ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴَٰﻜِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﻬَٰﺠِﺮِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِۖ ﻭَﻟۡﻴَﻌۡﻔُﻮﺍْ  ﻭَﻟۡﻴَﺼۡﻔَﺤُﻮٓﺍْۗ ﺃَﻟَﺎ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺃَﻥ ﻳَﻐۡﻔِﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢۡۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ  ٢٢ ﴾ ‏[ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٢٢‏]  “আর তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও  প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন শপথ  গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন,  অভাবগ্রস্তকে ও আল্লাহর রাস্তায়  হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না;  তারা যেন  ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-  ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও  না যে, আল্লাহ্  তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? আর আল্লাহ্  ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [28]  আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  ‏« ﺗَﻠَﻘَّﺖِ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﺭُﻭْﺡَ ﺭَﺟُﻞٍ ﻣِﻤَّﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻜُﻢْ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻪُ :  ﻋَﻤِﻠْﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻻ ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺗَﺬَﻛَّﺮْ ، ﻗَﺎﻝَ :  ﻛُﻨْﺖُ ﺃُﺩَﺍﻳِﻦُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ، ﻓَﺂﻣُﺮُ ﻓِﺘْﻴَﺎﻧِﻲ ﺃَﻥْ ﻳُﻨْﻈِﺮُﻭﺍ ﺍﻟْﻤُﻮﺳِﺮَ ،  ﻭَﻳَﺘَﺠَﺎﻭَﺯُﻭﺍ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻌْﺴِﺮِ ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ : ﺗَﺠَﺎﻭَﺯُﻭﺍ ﻋَﻨْﻪُ ‏» .  ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ‏) .  “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক  ব্যক্তির রূহের সাথে ফিরিশ্তাগণ  সাক্ষাৎ করে (অর্থাৎ তার মৃত্যুকালে)  জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি (বিশেষ)  কোনো সৎকাজ করেছ কি? সে বলল:  না, তারা বললেন: স্মরণ করে দেখ;  সে বলল: আমি মানুষের  সাথে লেনদেন করতাম; তারপর অসচ্ছল  ব্যক্তিদের অবকাশ দিতে ও সচ্ছল  ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন  করতে আমি আমার  লোকদেরকে নির্দেশ দিতাম।  নবী সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এরপর  মহান আল্লাহ তা‘আলা বললেন:  “তাকে দায়মুক্ত করে দাও।”[29]  ২. ৩. মন্দকাজের পরে ভালকাজ করা:  মানুষ প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার  কাছে দুর্বল; সুতরাং বান্দা যখন  কোনো অন্যায় ও অপরাধ করে ফেলে,  তখন সে যেন দ্রুত তার মোকাবিলায়  একটি ভাল কাজ করে ফেলে; যেমন—  কর্কশ ব্যবহারের  মোকাবিলা করবে কোমল ব্যবহার  দ্বারা, ক্রোধের  মোকাবিলা করবে সংযম প্রদর্শন করার  দ্বারা এবং এভাবে করে প্রতিটি  মন্দের মোকাবিলায় ভালো অভ্যাস  গড়ে তুলবে এবং সমস্যার সমাধান  করবে; আর এটাই সবচেয়ে লাগসই  পদ্ধতি কিন্তু এটা হওয়া এমন শর্ত নয়  যে প্রয়োজনে তার  অন্যথা করা যাবে না; কারণ, রোগের  চিকিৎসা করা হয় তার বিপরীত বস্তুর  দ্বারা; আর প্রতিটি অপরাধই  অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলে,  যা তার বিপরীতে ভালকাজের মত নূর  বা আলো ছাড়া দূর করতে পারে না।  আর যে ব্যক্তি এ অবস্থানের অনুসন্ধান  করবে, সে দেখবে যে সবচেয়ে সুন্দর ও  দ্রুত কার্যকরী পন্থা হলো পুরাতন  গুনাহের জন্য নতুন করে ভালকাজ করা।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  ﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﺤَﺴَﻨَٰﺖِ ﻳُﺬۡﻫِﺒۡﻦَ ﭐﻟﺴَّﻴَِّٔﺎﺕِۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺫِﻛۡﺮَﻯٰ ﻟِﻠﺬَّٰﻛِﺮِﻳﻦَ ١١٤  ﴾ ‏[ﻫﻮﺩ : ١١٤ ‏]  “নিশ্চয় সৎকাজ  অসৎকাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ  গ্রহণকারীদের জন্য এটা এক উপদেশ।” [30]  আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  ‏« ﺍﺗَّﻖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﻴْﺚُ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ، ﻭَﺃَﺗْﺒِﻊِ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔَ ﺗَﻤْﺤُﻬَﺎ ،  ﻭَﺧَﺎﻟِﻖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﺨُﻠُﻖٍ ﺣَﺴَﻦٍ ‏» . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ‏) .  “তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহর  তাকওয়া অবলম্বন কর এবং অসৎকাজ  করলে সাথে সাথেই সৎকাজ কর,  তাহলে ভাল কাজ মন্দ  কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; আর  মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহারের  মাধ্যমে মেলামেশা কর।” [31]  ২. ৪. সালাম দেওয়া ও উত্তম কথা বলা:  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  ‏« ﺇﻥ ﻣﻦ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﻤﻐﻔﺮﺓ ﺑﺬﻝ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺣﺴﻦ ﺍﻟﻜﻼﻡ ‏» .  “ক্ষমা নিশ্চিতকরণের অন্যতম উপায়  হলো সালাম বিনিময় করা এবং উত্তম  কথা বলা।” [32]  ২. ৫. মুসাফাহা বা করমর্দন:  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  ‏« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻤَﻴْﻦِ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎﻥِ ﻓَﻴَﺘَﺼَﺎﻓَﺤَﺎﻥِ ﺇِﻟَّﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺒْﻞَ  ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺘَﺮِﻗَﺎ ‏» . ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ‏) .  “দুই মুসলিমের যখন সাক্ষাৎ হয়  এবং তারা পরস্পর মুসাফাহা করে, তখন  তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই  আল্লাহ  তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।”[  33]  ২. ৬. জীব-জন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল  আচরণ করা:  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  ‏« ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﻄَﺮِﻳﻖٍ ، ﺇِﺫْ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶُ ،  ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺑِﺌْﺮًﺍ ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻓَﺸَﺮِﺏَ ، ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﻠْﺐٌ  ﻳَﻠْﻬَﺚُ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﺜَّﺮَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ : ﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻠَﻎَ ﻫَﺬَﺍ  ﺍﻟْﻜَﻠْﺐَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻠَﻎَ ﻣِﻨِّﻲْ ، ﻓَﻨَﺰَﻝَ ﺍﻟْﺒِﺌْﺮَ ، ﻓَﻤَﻸَ  ﺧُﻔَّﻪُ ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣْﺴَﻜَﻪُ ﺑِﻔِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺭَﻗِﻲَ ، ﻓَﺴَﻘَﻰ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐَ ، ﻓَﺸَﻜَﺮَ  ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻐَﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺇِﻥَّ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦَ  ﺍﻟْﺒَﻬَﺎﺋِﻢِ ﻷَﺟْﺮًﺍ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺫَﺍﺕِ ﻛَﺒِﺪٍ ﺭَﻃْﺒَﺔٍ ﺃَﺟْﺮٌ ‏» .  ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺃﺣﻤﺪ ‏) .  “একদা এক ব্যক্তি পথে হেঁটে যাচ্ছিল,  এক পর্যায়ে তার তীব্র  পিপাসা লাগে; তারপর সে একটি কূপ  পেয়ে গেল, তারপর সে তাতে অবতরণ  করল এবং পানি পান করল; অতঃপর  সে উঠে এলো; হঠাৎ করে দেখল,  একটি কুকুর হাপাচ্ছে, পিপাসায় কাতর  হয়ে কাদ চাটছে; অতঃপর লোকটি বলল:  এ কুকুরটি পিপাসায় সেরূপ কষ্ট পাচ্ছে,  যেরূপ কষ্ট আমার হয়েছিল। অতঃপর  সে কূপে অবতরণ করল এবং তার মোজার  মধ্যে পানি ভরল, তারপর তা মুখ  দিয়ে তা (কামড়িয়ে)  ধরে উপরে উঠে এলো। তারপর  সে কুকুরটিকে পানি পান করাল।  তারপর আল্লাহ তাকে তার প্রতিদান  দিলেন  এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।  সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন:  হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! জীব-জন্তুর  জন্যও কি আমাদের পুরস্কার আছে?  জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, প্রত্যেক  সতেজ হৃদয়ের  (সাথে ভালো ব্যবহারের)  জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে।” [34]  এই হলো জীবজন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল  ব্যবহারের ব্যাপারে নবী কারীম  সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের  কতিপয় দৃষ্টিভঙ্গি।  আর এই বর্ণনার মধ্যে কতিপয় ইউরোপীয়  কাফিরদের দ্বারা প্রভাবিত  জ্ঞানপাপীদের জন্য সত্য সুন্দর ও সুস্পষ্ট  বক্তব্য রয়েছে যে, ইসলাম এসব  ইউরোপীয় কাফিরদের অনেক আগেই  জীবজন্তুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণের  নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে,  যা তারা মুসলিমগণের কাছ  থেকে শিক্ষা লাভ করেছে,  তাতে ব্যাপক প্রসার  করেছে এবং তাকে বিধিবদ্ধ করেছে,  এমনকি ঐসব  জ্ঞানপাপীরা ধারণা করে নিয়েছে  যে, তা ইউরোপীয়দের বিশেষ  বৈশিষ্ট্য।  এই ইসলামী মূলনীতির মূলবস্তু হলো দয়া,  সহানুভূতি, সেগুলোর উপর সাধ্যের  বাইরে বোঝা চাপিয়ে না দেওয়া  এবং সেগুলোকে খেল ও তামাশার  উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ না করা।  কিন্তু যেসব কাফির জীবজন্তুর  প্রতি দয়া করার  নীতিতে বিশ্বাসী এবং এই  উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও  সংস্থা গড়ে তুলেছে, তাদের নিকট  জীবজন্তুর প্রতি দয়া করার বিষয়টি এমন  নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে,  তারা তাকে মানুষের উপর  মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে।  আর তাদের কোনো কোন  দেশে তারা বিষয়টিকে খেল-  তামাশার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে;  উদাহরণস্বরূপ সাবেক মুসলিম স্পেন  বর্তমান খ্রিষ্টান স্পেন  রাজ্যে বিস্তৃত বলদ বা ষাড়ের মধ্যকার  লড়াইয়ের কথা বলা যায় (!)।  ২. ৭. কবীরা গুনাহ্ ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ  থেকে বিরত থাকা:  আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন,  জেনে রাখবেন যে, পরিপূর্ণ মুমিনগণ  যাবতীয় কবীরা গুনাহ্ ও অশ্লীল  কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ  তা‘আলা বলেছেন:  ﴿ ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻟِﻴَﺠۡﺰِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳَٰٓـُٔﻮﺍْ  ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻤِﻠُﻮﺍْ ﻭَﻳَﺠۡﺰِﻱَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺣۡﺴَﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟۡﺤُﺴۡﻨَﻰ ٣١ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ  ﻳَﺠۡﺘَﻨِﺒُﻮﻥَ ﻛَﺒَٰٓﺌِﺮَ ﭐﻟۡﺈِﺛۡﻢِ ﻭَﭐﻟۡﻔَﻮَٰﺣِﺶَ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟﻠَّﻤَﻢَۚ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻭَٰﺳِﻊُ  ﭐﻟۡﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓِۚ ﻫُﻮَ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻜُﻢۡ ﺇِﺫۡ ﺃَﻧﺸَﺄَﻛُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻭَﺇِﺫۡ ﺃَﻧﺘُﻢۡ ﺃَﺟِﻨَّﺔٞ  ﻓِﻲ ﺑُﻄُﻮﻥِ ﺃُﻣَّﻬَٰﺘِﻜُﻢۡۖ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﺰَﻛُّﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۖ ﻫُﻮَ ﺃَﻋۡﻠَﻢُ ﺑِﻤَﻦِ ﭐﺗَّﻘَﻰٰٓ  ٣٢ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺠﻢ : ٣١، ٣٢ ‏]  “আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও  যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই।  যাতে তিনি তাদের কাজের  প্রতিফল দিতে পারেন, যারা মন্দ  কাজ  করে এবং তাদেরকে তিনি উত্তম  পুরস্কার দিতে পারেন, যারা সৎকাজ  করে; যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও  অশ্লীল কাজ থেকে, ছোটখাট অপরাধ  ব্যতীত। নিশ্চয় আপনার রবের  ক্ষমা অপরিসীম; তিনি তোমাদের  সম্পর্কে সম্যক অবগত—যখন  তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি  করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন  তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে।  অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না,  তিনিই সম্যক জানেন তার সম্পর্কে,  যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে।”[35]  কিন্তু  বান্দা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া  থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়  না; আর এ জন্যেই আল্লাহ  তা‘আলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন  এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য;  সুতরাং তিনি বলেছেন আর তার  বাণী সত্য:  ﴿ ﺇِﻥ ﺗَﺠۡﺘَﻨِﺒُﻮﺍْ ﻛَﺒَﺎٓﺋِﺮَ ﻣَﺎ ﺗُﻨۡﻬَﻮۡﻥَ ﻋَﻨۡﻪُ ﻧُﻜَﻔِّﺮۡ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ  ﻭَﻧُﺪۡﺧِﻠۡﻜُﻢ ﻣُّﺪۡﺧَﻠٗﺎ ﻛَﺮِﻳﻤٗﺎ ٣١ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣١ ‏]  “তোমাদেরকে যা নিষেধ  করা হয়েছে, তার  মধ্যে যা কবীরা গোনাহ্  তা থেকে বিরত  থাকলে আমরা তোমাদের ছোট  পাপগুলো ক্ষমা করব  এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক  স্থানে প্রবেশ করাব।” [36]  এখানে উদ্দেশ্য হলো পাপ মোচন ও  গুনাহ্ ক্ষমার বর্ণনা করা, যখন  কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত  থাকা হয় …. আর এখানে এটাই  হলো আল্লাহ তা‘আলার  ওয়াদা এবং মুমিনদের জন্য তাঁর পক্ষ  থেকে সুসংবাদ।  ২. ৮. বিপদ-মুসিবত:  মনের বেদনা, শরীরের অসুস্থতা,  প্রিয়জনকে হারানো এবং সম্পদের  ক্ষয়-ক্ষতি থেকে কোনো ব্যক্তিই  নিরাপদ নয়। আর এর থেকে মুক্ত নয়  সৎকর্মশীল ও অসৎকর্মশীল  ব্যক্তি এবং মুমিন ও কাফির কেউই;  কিন্তু মুমিন ব্যক্তি এই বিপদ-  মুসিবতগুলোকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ  করে; এমন চিত্ত যা তার  চালিকা শক্তিকে আল্লাহর  হাতে ন্যস্ত করেছে। কারণ,  সে নিশ্চিত জ্ঞানে জানে যে,  সে যে বিপদে আক্রান্ত হয়েছে,  তা তাকে ছেড়ে যেতো না, আর  যে বিপদ তাকে পায় নি তা তার উপর  আপতিত হবে না।  আর এই বিপদগুলো মুমিন বান্দাকে তার  পাপরাশি থেকে এমনভাবে পবিত্র  করে দেয়,  যেমনিভাবে সাদা কাপড়কে পানি,  বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করা হয়;  ফলে সে বালা-মুসিবত থেকে ঐ  দিনের মত (পাপমুক্ত হয়ে) বের হয়,  যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ  অবস্থায় প্রসব করেছে।  আর এই অপরাধের বিষয়টি মানুষের জন্য  একটি অপরিহার্য বিষয়; কেননা,  আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর  রহমতের ব্যাপারটি হল—  তিনি তাদেরকে একের পর এক বিপদ-  মুসিবতের প্রতিশ্রুতি দেন  যাতে তিনি তাদেরকে পরিশুদ্ধ ও  পবিত্র করেন; আর তাদের  থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন,  তাদের হৃদয়সমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর  মাধ্যমে তাদের পা-সমূহ সুস্থির  রাখেন।  এই বিপদ-মুসিবতগুলো আল্লাহ  তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের  প্রতি সন্তুষ্টি ও ভালবাসার  প্রমাণস্বরূপ; কারণ, আল্লাহ  তা‘আলা যখন  কোনো বান্দাকে ভালবাসেন, তখন  তিনি তাকে বিপদ-মুসিবত  দ্বারা পরীক্ষা করেন; আর যখনই ব্যক্তির  ঈমান ও বিশ্বাস মজবুত ও  শক্তিশালী হবে, তখনই তার  পরীক্ষা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে;  সুতরাং এই অবস্থায় যে সন্তুষ্ট থাকবে,  তারা জন্য রয়েছে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি;  আর যে অধৈর্য হবে, তার জন্য  রয়েছে (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  ‏« ﺃَﺷَﺪُّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑَﻼﺀً ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ، ﺛُﻢَّ ﺍﻷَﻣْﺜَﻞُ ﻓَﺎﻷَﻣْﺜَﻞُ ، ﻳُﺒْﺘَﻠَﻰ  ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺴَﺐِ ﺩِﻳﻨِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﺻُﻠْﺒًﺎ ﺍﺷْﺘَﺪَّ  ﺑَﻼﺅُﻩُ ، ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺩِﻳﻨِﻪِ ﺭِﻗَّﺔٍ ﺍﺑْﺘُﻠِﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺴَﺐِ ﺩِﻳﻨِﻪِ ،  ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺒْﺮَﺡُ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﺀُ ﺑِﺎﻟْﻌَﺒْﺪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘْﺮُﻛَﻪُ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﺎ  ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ‏» . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ‏) .  “মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন  মুসিবতের শিকার হয়েছেন নবীগণ;  অতঃপর ক্রমানুসারে পরবর্তী ধাপের  সৎব্যক্তিগণ, ব্যক্তি পরীক্ষা বা কষ্টের  সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে;  সুতরাং সে যদি তার দীনের  ব্যাপারে দৃঢ়তার সাথে অটল থাকে,  তাহলে তার বিপদ-আপদও কঠোর  থেকে কঠোরতর হবে; আর যদি সে তার  দীনের ব্যাপারে আপোষকামী হয়,  তাহলে সে পরীক্ষা বা কষ্টের  সম্মুখীন হবে তার দীনদারী অনুসারে;  সুতরাং বান্দা বালা-  মুসিবতে আক্রান্ত হতেই থাকবে যতক্ষণ  না তা তাকে যমীনের উপরে গুনাহ  বিহীন অবস্থায়  চলাফেরা করাতে পারবে।” [37]  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:  ‏« ﺇِﺫَﺍ ﺍﺑْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﺑِﺒَﻠَﺎﺀٍ ﻓِﻲ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ :  ﺍﻛْﺘُﺐْ ﻟَﻪُ ﺻَﺎﻟِﺢَ ﻋَﻤَﻠِﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻪُ ، ﻓَﺈِﻥْ ﺷَﻔَﺎﻩُ ﻏَﺴَﻠَﻪُ  ﻭَﻃَﻬَّﺮَﻩُ ، ﻭَﺇِﻥْ ﻗَﺒَﻀَﻪُ ﻏَﻔَﺮَ ﻟَﻪُ ﻭَﺭَﺣِﻤَﻪُ ‏» . ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ‏) .  “যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো মুসলিম  বান্দাকে তার শারীরিক দুঃখ-কষ্ট  বা রোগ-ব্যাধির  দ্বারা পরীক্ষা করেন, তখন আল্লাহ  বলেন: তার সৎকাজগুলো লিখ,  যে কাজগুলো সে (সুস্থ অবস্থায়) করত;  অতঃপর তিনি যদি তাকে রোগমুক্ত  করেন, তাহলে তিনি (রহমতের  পানি দ্বারা) ধুয়ে মুছে তাকে পবিত্র  করে দেন; আর যদি তাকে মৃত্যুর  মাধ্যমে উঠিয়ে নেন,  তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন  এবং তার প্রতি রহম করেন।” [38]  আবূ শা‘ছা আস-  সান‘আনী থেকে বর্ণিত:  তিনি একদা দামেস্কের  একটি মাসজিদে গমন করেন এবং এক  পর্যায়ে সন্ধ্যায় ভ্রমণ করতে লাগলেন,  অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল  সাদ্দাদ ইবন আউস ও আস-সুনাবেহী’র।  অতঃপর আমি (আবূ শা‘ছা আস-  সানা‘আনী) বললাম: আল্লাহ  তোমাদের প্রতি রহম করুন,  তোমরা কোথায় যাওয়ার  পরিকল্পনা করেছ? জবাবে তারা বলল:  আমরা সেখানে আমাদের এক অসুস্থ  ভাইকে দেখতে যাচ্ছি; অতঃপর  আমিও তাদের সাথে চললাম, তারপর  তারা ঐ ব্যক্তির নিকট উপস্থিত  হয়ে বলল: তোমার সকাল কেমন  কেটেছে? জবাবে সে বলল: আমার  সকাল নেয়ামতের উপর কেটেছে।  অতঃপর তাকে উদ্দেশ্য করে সাদ্দাদ  ইবন আউস বললেন: আমি তোমাকে গুনাহ  মাফ ও পাপ মোচনের সুসংবাদ দিচ্ছি;  কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে  শুনেছি:  ‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺇِﻧِّﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺖُ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ  ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻓَﺤَﻤِﺪَﻧِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺘُﻪُ ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻣِﻦْ ﻣَﻀْﺠَﻌِﻪِ  ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﻴَﻮْﻡِ ﻭَﻟَﺪَﺗْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ ، ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﺮَّﺏُّ ﻋَﺰَّ  ﻭَﺟَﻞَّ : ﺃَﻧَﺎ ﻗَﻴَّﺪْﺕُ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﻭَﺍﺑْﺘَﻠَﻴْﺘُﻪُ ، ﻭَﺃَﺟْﺮُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ  ﺗُﺠْﺮُﻭﻥَ ﻟَﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺤِﻴﺢٌ ‏» . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ‏) .  “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  আমি যখন আমার বান্দাগণের মধ্য  থেকে কোনো মুমিন  বান্দাকে কোনো বিপদ-মুসিবত  দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর  সে আমার দুঃখ-কষ্টের  পরীক্ষা করা অবস্থায় আমার  প্রশংসা করে, তখন সে তার  শয্যা থেকে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ  অবস্থায় উঠবে, যেদিন তার  মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব  করেছে; আর মহান রব বলবেন:  আমি আমার বান্দাকে আটক  করেছি এবং তাকে দুঃখ-কষ্ট  দ্বারা পরীক্ষা করেছি, তোমরা তার  জন্য সাওয়াব লিখবে,  যেমনিভাবে তোমরা তার সুস্থ  অবস্থায় তার জন্য সাওয়াব  লিখতে।” [39]  * * *  [24] দেখুন: আমার প্রবন্ধ ”  ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ ﺍﻟﻨﺼﻮﺡ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ  ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ” (আল-কুরআনুল কারীম ও সহীহ  হাদিসের আলোকে খাঁটি তাওবা);  তাতে অনুসন্ধানী ও অতিরিক্ত  জানতে আগ্রহী ব্যক্তির জন্য কাম্যবস্তু ও  কাঙ্খিত বিষয়ের নির্দেশনা রয়েছে।  [25] সূরা আত-তাহরীম আয়াত: ৮  [26] ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৪২৫০  এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ  হাদিসটি আবদুল্লাহ আবন মাস‘উদ  রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি বলি:  হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।  [27] দেখুন: আমার প্রবন্ধ ” ﺍﻟﺴﻤﺎﺣﺔ ﻓﻲ ﺿﻮﺀ  ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﺓ ” (আল-কুরআনুল  কারীম ও পবিত্র সুন্নাহ’র  আলোকে উদারতা); তাতে আরও  বিস্তারিত ও অতিরিক্ত বিবরণ  রয়েছে।  [28] সূরা আন-নূর, আয়াত: ২২  [29] বুখারী, হাদিস নং- ১৯৭১; মুসলিম,  হাদিস নং- ৪০৭৬  আমি বলি: হাদিসটি হাসান  পর্যায়ের।  [30] সূরা হুদ, আয়াত: ১১৪  [31] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৮৭;  হাদিসটি অন্যান্য হাদিসের সমর্থনের  কারণে সহীহ, যেমনটি আমি ‘তাখরীজু  আহাদিসিল অসিয়্যাতিস  সুগরা’ ( ﺗﺨﺮﻳﺞ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ ﺍﻟﺼﻐﺮﻯ ) নামক  গ্রন্থে বর্ণনা করেছি, হাদিস নং- ৩  আমি বলি: হাদিসটি হাসান  পর্যায়ের।  [32] খারায়েতী, ‘মাকারিমুল  আখলাক’ ( ﻣﻜﺎﺭﻡ ﺍﻷﺧﻼﻕ ): পৃ. ২৩; আর একই  সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন আল-  কাদা‘য়ী, ‘মুসানদু শিহাব’ ( ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺸﻬﺎﺏ ),  হাদিস নং- ১১৪০, তিনি বলেন:  আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন  সালেহ ইবন আহমাদ ইবন হাম্বল,  তিনি বলেন: আমাদের নিকট হাদিস  বর্ণনা করেছেন আমার পিতা,  তিনি বলেন: আমাদেরকে ইবনুল  আশজা‘য়ী একখানা কিতাব  দিয়েছেন, যাতে সুফিয়ান  থেকে বর্ণিত হাদিস বর্ণিত আছে,  তিনি মিকদাম ইবন শুরাইহ  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার  পিতা থেকে— তার পিতা তার  দাদা থেকে বর্ণনা করেন,  তিনি বলেন, আমি বললাম:  হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন আমল  আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে?  তখন তিনি বললেন: অতঃপর  তিনি উপরিউক্ত হাদিসটি উল্লেখ  করেন। আর হাদিসটি সহীহ; আরও দেখুন:  ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস  সহীহাহ’ ( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ), হাদিস  নং- ১০৩৫  [33] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫২১২;  তিরিমিযী, হাদিস নং- ২৭২৭; ইবনু  মাজাহ, হাদিস নং- ৩৭০৩; আহমদ,  হাদিস নং- ৪/২৮৯ ও ৩০৩  এবং তাঁরা ভিন্ন আরও  অনেকে হাদিসটি বারা ইবন ‘আযেব  রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হাদিসের  সনদটি দুর্বল; কেননা, সনদের মধ্যে আবূ  ইসহাক নামে ‘মুদাল্লিস’  বর্ণনাকারী রয়েছে। তবে এই  হাদিসের সমর্থনে আনাস  রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিস  বর্ণিত আছে, যা ইমাম আহমাদ রহ.  ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন, হাদিস  নং- ৩/১৪২; মোটকথা অন্য হাদিসের  সমর্থনের কারণে হাদিসটি সহীহ,  আল্লাহ তা‘আলাই সব চেয়ে ভাল  জানেন।  [34] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৩; মুসলিম,  হাদিস নং- ৫৯৯৬; আবূ দাউদ, হাদিস  নং- ২৫৫০; আহমদ, হাদিস নং- ২/৩৭৫ ও  ৫১৭ এবং তাঁরা ভিন্ন আরও  অনেকে হাদিসটি আবূ  হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন।  [35] সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩১ – ৩২  [36] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩১  [37] তিরমিযী, হাদিস নং- ২৩৯৮; ইবনু  মাজাহ, হাদিস নং- ৪০২৩; দারেমী:  ২/৩২০; ইবনু হিব্বান: (২৯৮ ও ২৯৯—  মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪০ ও ৪১);  আহমাদ: (১/১৭২, ১৭৪, ১৮০ ও ১৮৫)  এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ  হাদিসটি দু’টি সনদে সা‘য়াদ ইবন  আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে ‘মারফু’  হিসেবে বর্ণনা করেছেন।  আমি বলি: হাদিসটি সহীহ এবং এর  সমর্থনে আরও একটি হাদিস বর্ণিত  আছে, যা ইবনু মাজাহ: (৪০২৪), হাকেম:  (৪/৩০৭) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ আবূ  সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন; হাকেম রহ.  বলেন: ইমাম মুসলিম রহ. এর  শর্তে হাদিসটি সহীহ এবং ইমাম  যাহাবী রহ.ও হাদিসটিকে সহীহ  বলেন; আমি বলি: হাদিসটি সহীহ,  তাঁর উভয়ে যেমনটি বলেছেন।  [38] আহমাদ: (৩/১৪৮, ২৩৮, ২৫৮);  তিনি হাদিসটি হাম্মাদ ইবন  সালামা থেকে বর্ণনা করেন,  তিনি সিনান ইবন রবি‘আ  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আনাস  রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  থেকে বর্ণনা করেন।  আমি বলি: এই সনদটি হাসান পর্যায়ের  — ইনশাআল্লাহ; কেননা, সিনান ইবন  রবি‘আ সত্যবাদী।  [39] আহমাদ: (৪/১২৩); আমি বলি: এই  সনদটি হাসান পর্যায়ের।

No comments:

Post a Comment

Translate