Saturday, February 22, 2025

তাকদির বা অদৃষ্ট লিখনে বিশ্বাস ছাড়া মুসলিম দাবি করার সুযোগ নেই

 প্রশ্ন: আমার এক দ্বীনি ভাই নিজের ভাগ্যের প্রতি তেমন বিশ্বাস করতে চান না। সে বলে, নিজেদের কর্মদক্ষতার কারণেই সব সাফল্য আসে। এই ধরনের বিশ্বাস থাকলে ঈমান থাকবে কি?

উত্তর: তকদির বা ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের একটি।রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ

“ঈমান হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর সকল ফেরেশতা, তাঁর যাবতীয় [আসমানি] কিতাব, তাঁর সমস্ত রসুল এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখবে। সাথে সাথে তকদির এবং এর ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে।” [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮]

❂ এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া মুমিন দাবি করা সম্ভব নয়:

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন,

لَوْ كَانَ لِأَحَدِهِمْ مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَبًا ثُمَّ أَنْفَقَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا قَبِلَهُ اللَّهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ

“সেই সত্তার কসম, যার হাতে ইবনে উমরের জীবন! তাদের (তকদির অস্বীকারকারীদের) কারও কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, তবুও আল্লাহ পাক উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদিরের প্রতি ঈমান আনে।”
এরপর তিনি ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ সম্পর্কিত হাদিস দ্বারা এ কথার পক্ষে দলিল পেশ করেন। [শরহুল আকিদা আত-তাহাবিয়া, শায়খ আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি]

❂ তিনি আরও বলেন,

مَنْ مَاتَ عَلَى غَيْرِ الْإِيمَانِ بِالْقَدَرِ فَلَيْسَ مِنِّي

“যে ব্যক্তি তকদিরের উপর বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [সুনান আবি দাউদ, হাদিস নং ৪৭০০]

❂ ইবনু দাইলামী থেকে বর্ণিত আছে, কাতাদা (রাহ.) বলেন, “আমি উবাই ইবনে কা’বের কাছে গেলাম এবং তাকে বললাম, ‘তকদিরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু সংশয় এসেছে। আপনি আমাকে তকদির সম্পর্কে উপদেশমূলক কিছু বলুন, যাতে আল্লাহ তা’আলা আমার অন্তর থেকে এ সংশয় দূর করে দেন।’

তখন তিনি বললেন,

لَوْ أَنَّ لَكَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا فَأَنْفَقْتَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا قَبِلَهُ اللَّهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ، وَتَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَمَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ، وَلَوْ مُتَّ عَلَى غَيْرِ هَذَا لَدَخَلْتَ النَّارَ

“তুমি যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান কর, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তকদিরকে বিশ্বাস করবে। আর জেনে রাখ, তোমার জীবনে যা ঘটেছে, তা কখনো ব্যতিক্রম হত না। আর তোমার জীবনে যা ঘটার ছিল না, তা কখনো ঘটত না। যদি তুমি এ বিশ্বাস ছাড়া মারা যাও, তবে অবশ্যই তুমি জাহান্নামি হবে।’”

এরপর আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং যায়েদ বিন সাবিত (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর নিকট গেলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদিস উল্লেখ করলেন।

[সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, ৫/১৮৫, ১৮৯]

❑ যারা বলে, ‘নিজের যোগ্যতা বলেই সব কিছু হয়’— তাদের কথার অসারতা:

আমাদের যোগ্যতা দ্বারাই যদি সব কাজ হতো, তাহলে প্রতিটি দম্পতি বাবা-মা হতে পারত। কিন্তু অসংখ্য মানুষ সারা জীবন একটি সন্তানের মুখ দেখার জন্য হাহাকার করে কাটিয়ে দেয়। অথচ সন্তান গ্রহণের জন্য অন্যরা যা করে, তারাও তাই করেছে। কিন্তু তকদির বা ভাগ্যের লিখনের কারণে তারা ফল লাভ করতে পারেনি।

নিজস্ব যোগ্যতা দ্বারাই যদি সব কিছু হতো, তাহলে কৃষকরা চাষাবাদ করেও অনেক সময় ফসল ঘরে তুলতে পারত না কেন? বরং ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। এটাই তকদির।

যোগ্যতা দ্বারাই যদি সব সাফল্য আসত, তাহলে মানুষ নিজেকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে পারত। অথচ সাইক্লোন, ভূমিকম্প ও নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তখন মানুষের কিছুই করার থাকে না। তকদির বা অদৃষ্ট লিখনের কাছে নিরুপায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তার কোনো গতি থাকে না।

এমন আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।

সুতরাং ভাগ্যের লিখনে বিশ্বাস রেখে এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও ভরসা সহকারে কাজ করতে হবে। সাফল্য দেওয়া বা না দেওয়া একমাত্র আল্লাহর হাতে। এ বিশ্বাস থেকে বের হয়ে গেলে মানুষ নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করার যোগ্যতা হারায়। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।


No comments:

Post a Comment

Translate