Saturday, February 5, 2022

স্বামীর আর্থিক সঙ্কটে সংসার ভাঙ্গার উপক্রম। সমাধান কি?

 প্রশ্ন: এক বোন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে দ্বীনের পথে চলার জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ার ও আলেমকে বিয়ে করে যার পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিল। বোনটি স্বামী নিয়ে আলাদা বাসায় থাকতেন এবং সংসারের জন্য বাবা মায়ের থেকে বোনটির টাকা নিতে হতো। এ সব কারণে স্বামীকে শ্বশুর বাড়ির সবাই হেয় করতো। বোনটিও তার স্বামীকে প্রেশার দিত তার ইনকামের স্কেল বাড়ানোর জন্য। বর্তমানে চার বছর বিবাহিত জীবনে তিন মাস যাবত তারা আলাদা থাকছেন এবং স্বামী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে।

এক্ষেত্রে সমাধান কি?
উত্তর:
প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য, তার স্ত্রী-পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য হালাল পন্থায় আয়-উপার্জনের চেষ্টা করা। যেন তাদেরকে কারও প্রতি মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়। শ্বশুরের অর্থ-সম্পদের প্রতি মুখাপেক্ষী থাকা একজন পুরুষের জন্য নি:সন্দেহে লাঞ্ছনার বিষয়। তাই অবশ্যই তাকে হালাল পন্থায় চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতে হবে। এটা তার জন্য ফরজ। কারণ ইসলাম স্বামীর উপর তার স্ত্রী ও পরিবারের ভরণ-পোষণের সুব্যবস্থা করা আবশ্যক করেছে। তৎসঙ্গে উৎসাহিত করেছে কষ্ট-পরিশ্রমের মাধ্যমে হালাল পন্থায় অর্থ উপার্জনের প্রতি।

❑ নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত ও হাদিস পেশ করা হল:

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ ‎
“নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছি।” [সূরা বালাদ: ৪]

◈ তিনি আরও বলেন,

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللهِ
“অত:পর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (অর্থ-সম্পদ, জীবিকা ইত্যাদি) সন্ধান কর।” [সূরা জুমুআহ: ১০]

◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً قَطُّ خَيْراً مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ عليه السلام كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ». رواه البخاري
‘‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায় নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’’ [সহীহুল বুখারি]

হ্যাঁ, প্রয়োজনবোধে সাময়িকভাবে শ্বশুর বা অন্য কারও কাছে সুদমুক্ত কিছু অর্থ ঋণও নিতে পারে। পরে উপার্জন করে তা অবশ্যই পরিশোধ করবে।

❑ স্বামীর আর্থিক সঙ্কট মূর্হতে স্ত্রীর করণীয়:

এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর কর্তব্য, তার স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তার উপর খরচের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করা বরং অল্পে তুষ্ট থাকা এবং ধৈর্যের সাথে তার সঙ্গ দেওয়া। ইসলামে অল্পে তুষ্টির প্রশংসা করা হয়েছে। যেমন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ
“সে ব্যক্তি নিশ্চিতভাবে সফল যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, যাকে পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্ট থাকার শক্তি দিয়েছেন।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ১৩। যাকাত, পরিচ্ছেদ: ৪৩. ভিক্ষাবৃত্তি বেঁচে থাকা এবং অল্প তুষ্ট থাকা সম্পর্কে]

আর্থিকভাবে অভাব-অনটনের কারণে স্ত্রীর জন্য স্বামী থেকে আলাদা থাকা বৈধ নয়।

বরং তারা একসাথে বসবাস করবে এবং স্বামীকে হালাল উপার্জনে সহায়তা করবে এবং উৎসাহ যোগাবে। এমনটি করলে আল্লাহ তাদের মাঝে ভালবাসার সম্পর্ক সুদৃঢ় করবেন এবং অল্প অর্থ-সম্পদেও বরকত দান করবেন। এর মাধ্যমে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখ-আনন্দে ভরপুর থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আর স্বামী সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও যদি পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে এ ক্ষেত্রে মাজুর। তবে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে এবং আল্লাহর কাছে হালাল উপার্জনের জন্য দুআ করবে। বিশেষ কোনও পেশায় সফল না হলে অন্য পেশা অনুসন্ধান করবে।

এ ক্ষেত্রে স্ত্রী তার যোগ্যতা অনুযায়ী হালাল পন্থায় উপার্জন করে স্বামীকে তার আর্থিক সমস্যা লাঘবে সহায়তা করতে পারে। যেমন: হস্তশিল্প, বোরকা ও কাপড় সেলাই, বুটিকের কাজ, মহিলা মাদরাসা বা বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, শিশু বা মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানো, বাড়িতে পশু ও হাস-মুরগি পালন ইত্যাদি।

ভুলে গেলে চলবে না যে, আল্লাহর দুনিয়ায় রিজিকের পথ একটি নয়। বরং হাজারও পথ খোলা আছে। একটিতে সফল না হল অন্য দিকে চেষ্টা করবে। যে চেষ্টা করে সে সফল হয়। আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকলে তিনি তাকে অপ্রত্যাশিতভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করেন এবং সমস্যা লাঘব করেন। আল্লাহ বলেন,

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا-وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” [সূরা তালাক: ২ ও ৩]

❑ স্বামী যদি অলসতা বশত: অর্থ উপার্জন না করে বা হারাম পন্থায় অর্থ নষ্ট করে তাহলে স্ত্রীর করণীয়:

স্বামী যদি অবহেলা ও অলসতা বশত: অর্থ উপার্জনে মনোযোগী না হয় অথবা কোনও হারাম পথে টাকা-পয়সা অপচয় করে যার কারণে স্ত্রী সর্বনিম্ন ভরণ-পোষণ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে তার করণীয় হল, প্রথমে স্বামীকে আন্তরিকতার সাথে বুঝানো, হালাল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করা। কিন্তু এতে স্বামীর মধ্যে পরিবর্তন না এলে তার নিকট থেকে খোলা তালাক চাওয়া জায়েজ। কারণ এমন অকর্মণ্য, অলস ও অর্থ অপচয় কারী স্বামীর সাথে সংসার করার কারণে সে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সুতরাং ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার স্বার্থে সমঝোতার মাধ্যমে তার নিকট খোলা তালাক চাইবে কিন্তু সে তালাক দিতে সম্মত না হলে কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ভাবে তালাক এর ব্যবস্থা করতে পারে-ইসলাম তাকে এ সুযোগ দিয়েছে আল হামদুলিল্লাহ। আল্লাহু আলাম। ❖❖❖❖❖❖❖❖❖❖❖❖❖❖❖
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।

No comments:

Post a Comment

Translate