Wednesday, February 22, 2023

জুয়া এবং প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত কতিপয় জরুরি বিধি-বিধান

 জুয়ার পরিচয় ও ভয়াবহতা, অর্থ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ এবং প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত কতিপয় জরুরি বিধি-বিধান।

নিম্নে জুয়ার পরিচয়, ইসলামে এর নিষিদ্ধতা, অর্থ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার বিধান এবং প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত কতিপয় জরুরি মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল। وبالله التوفيق

❑ জুয়া কাকে?

জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ বা বস্তু (যা পুরস্কার হিসেবে ধার্য করা হয়) নির্ধারণ করা হয়। তারপর কোনও একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হার-জিত নির্ধারণ করে। যে পক্ষ হেরে যায় সে অপর পক্ষকে সেই নির্ধারিত অর্থ বা বস্তু প্রদান করে।
এই খেলায় হেরে যাওয়া বা জিতে যাওয়াতে উভয় পক্ষেরই ঝুঁকি নিতে হয়। [ইউকিপিডিয়া বাংলা]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিরা রাহ. বলেন,

أن يؤخذ مال الإنسان وهو على مخاطرة : هل يحصل له عوضه أو لا يحصل

“জুয়া (قمار) বলা হয়, এমনভাবে মানুষের নিকট অর্থ গ্রহণ করা যে, সে তার বিনিময় পাবে নাকি না সে ব্যাপারে ঝুঁকিতে থাকে।” [মাজমুল ফাতাওয়া ১৯/২৮৩]

কোনও কোনও ফকিহের মতে, জুয়া হল,
كل لعب يشترط فيه أن يأخذ الغالب من المغلوب شيئا
“যে খেলায় এই শর্ত থাকে যে, বিজয়ী ব্যক্তি পরাজিত ব্যক্তি থেকে কোনও কিছু গ্রহণ করবে।” [almaany]

❑ জুয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধান:

ইসলামে জুয়া জাহেলি কর্ম, কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ

“হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কর্ম ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?” [সূরা মায়িদা: ৯০]

❑ জুয়ার নেতীবাচক প্রভাব:

জরীপে জানা গেছে প্রাথমিকভাবে যারা কেবল বিনোদনের জন্য জুয়া খেলা শুরু করেছিল তাদের অনেকেই এটাতে আসক্ত হয়ে গেছে।এই আসক্তি তাদের বিভিন্ন কুকর্মের দিকে ঠেলে দেয়। জুয়ার অর্থ জোগারের জন্য তারা খারাপ কাজ করতে শুরু করে। জুয়ায় হারানো অর্থ ফেরত পাবার জন্য জুয়ারীরা বারবার জুয়া খেলে। জুয়া ব্রেইনে মারাত্মক প্রভাব পরে, জুয়ারীরা চিন্তাগ্রস্থ ও অসহায়ত্ব অনুভব করে অসুস্থ হয়ে যায়।

❑ তিনটি প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়:

ইসলামে কোনও একপক্ষ বিজয়ী হলে পরাজিত পক্ষ থেকে অর্থ গ্রহণ করার পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতা করা হারাম। কারণ এটা হল, জুয়া। তবে তিনটি ক্ষেত্রে তা জায়েজ- যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথক উক্ত বিধান থেকে পৃথক করেছেন। তা হল,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا سَبَقَ إِلَّا فِي نَصْلٍ أَوْ حَافِرٍ أَوْ خُفٍّ

আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তীর, ঘোড়া এবং উট ব্যতীত অন্য কোনও কিছুতে বাজি ধরা যাবে না।” (অর্থাৎ এ তিনটি বিষয় ছাড়া অন্য কোনও কিছুতে দু পক্ষের বাজি ধরার মাধ্যমে বিনিময় (অর্থকড়ি) অর্জন করা জায়েজ নয়)।[সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২৮/ ঘোড়া, পরিচ্ছেদ: ১৪. প্রতিযোগিতা]

শাইখ উসাইমিন রাহ. বলেন,

سَبَقَ : بالفتح، السَّبَق هو العوض الذي يؤخذ عن المسابقة

السَّبَق (এর মধ্যাক্ষরে ফাতহ/যবর সহকারে, উচ্চারণ: সাবাক) শব্দের অর্থ: প্রতিযোগিতায় যে বিনিময় (অর্থকড়ি বা পুরষ্কার ইত্যাদি) গ্রহণ করা হয়।
তিনি উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন,
المسابقة فيها بعوض وأمّا غيرها فلا يجوز، وهذا الإستثناء استثناء مِن شبه الميسر أو من الميسر نفسه، لأنّ المسابقة إذا أُخذ عليها عوض صارت من الميسر، إذ أنّ الدّاخل فيها بين غانم وغارم وهذا هو حقيقة الميسر.
“এই তিনটি ক্ষেত্রে বিনিময় ((অর্থকড়ি বা পুরষ্কার ইত্যাদি)এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করা জায়েজ। কিন্তু এ তিনটি ছাড়া অন্য কোনও ক্ষেত্রে তা জায়েজ নয়। এটি হল, ব্যতিক্রম, এটি জুয়ার সদৃশ বা মূল জুয়া থেকে ব্যতিক্রম। কারণ প্রতিযোগিতায় যদি বিনিময় গ্রহণ করা হয় তাহলে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। কারণ এখানে প্রতিযোগী হয় আর্থিকভাবে লাভবান হবে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এটাই হল, জুয়ার প্রকৃত রূপ।”

তিনি আরও বলেন,
أنّه أبيح أبيح لأنّ ذلك ممّا يعين على الجهاد في سبيل الله، فالإبل تحمل أمتعة المجاهدين وأسلحتهم وتحمل المجاهدين أيضا
والنّصل يرمي به المجاهد فيدافع عن نفسه ويهاجم عدوّه.
وأمّا الحافر فكذلك يكرّ عليه ويفرّ، فهو ممّا ينتفع به في الحرب في الجهاد في سبيل الله.
“এটা জায়েজ হওয়ার কারণ হল, এগুলোর মাধ্যমে মুজা/হিদগণ আল্লাহর পথে জিহাদে উপকৃত হয়। কারণ উট মু-জাহি/দদের আসবাব-সামগ্রী ও অস্ত্র-শস্ত্র বহন করে। মুজা/হিদদেরকেও বহন করে। তীরের সাহায্য মুা/জাহিদ তী/র নিক্ষেপের পাশাপাশি আত্মরক্ষা করে এবং শত্রুর উপর আ/ক্রমণ পরিচালনা করে। আর ঘোড়া শত্রুর উপর আঘাত হেনে পালিয়ে যায়। যার মাধ্যমে রণা/ঙ্গনে আল্লাহর পথে জিহা/দের ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া যায়।”
[উৎস: alathar-শাইখ উসাইমিন রাহ. কর্তৃক বুলুগুল মারামের ব্যাখ্যা, কিতাবুল জি/হাদ (৮ম অধ্যায়)]

❑ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের বিধান এবং এ বিষয়ে কতিপয় ফতোয়া:

শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহ.-এর সংজ্ঞার আলোকে যদি কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য (রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ) নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের শর্তারোপ করা হয় তাহলে সে অর্থ লেনদেন নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং তা হারাম।
কারণ অংশগ্রহণকারীরা এখানে ঝুঁকিতে থাকবে যে, সে তার প্রদান কৃত অর্থের বিনিময় ফেরত পাবে কি না। কেননা এতে বিজয়ী হবে হাতে গোণা কয়েকজন। এতে তারা পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে লাভবান হবে। কিন্তু অন্যান্য অর্থ প্রদানকারীরা নিশ্চিতভাবেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে নিম্নে কতিপয় ফতোয়া প্রদান করা হল:

◈ ১. আহকামুল জাওয়ায়েয ওয়াল মুসাবাকাত (পুরস্কার ও প্রতিযোগিতার বিধিবিধান), লেখক: প্রফেসর ডক্টর খালিদ আল মুশাইকিহ বলেন,

النوع الأوَّل: أن تكون الجائزةُ عن طريق دفْع رسوم للدُّخول في المسابقة وهذا النَّوْع من الميسِر المحرَّم

“১ম প্রকার হল, প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য ফি প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কার দেওয়া হলে এই প্রকার প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।” [আহকামুল জাওয়ায়েয ওয়াল মুসাবাকাত, প্রথম প্রকাশ, প্রকাশকাল ১৪৩৪ হিজরি-দাম্মাম, সৌদি আরব]

◈ ২. সৌদি আরবের হাইয়াতুল কিবারিল ওলামা বা সিনিয়র স্কলারস এসোশিয়েশন-এর সদস্য ডক্টর শাইখ নাসের বিন সাদ আস শিসরি বলেন,

المسابقات التي يدفع جميع المتسابقين رسماً لدخولها وتكون الجائزة محددة سلفاً قبل الدخول وقبل العلم بعدد المتسابقين لا يجوز الدخول فيها بالإجماع

“যে প্রতিযোগিতায় সকল প্রতিযোগী অংশগ্রহণের জন্য একটা ফি প্রদান করে এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং প্রতিযোগীদের সংখ্যা জানার আগেই পুরস্কারটি পূর্ব-নির্ধারিত থাকে তাহলে ইজমা বা আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নয়।” [উৎস: midad-৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর]

◈ ৩. কাতার ভিত্তিক ফতোয়া বিষয়ক ওয়েব সাইটের ফতোয়া:

প্রশ্ন: একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং শারীরিক কসরত মূলক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয় এবং এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে এই টাকা নেয়। এই অর্থ গ্রহণ কি জায়েজ নাকি হারাম?
উত্তর:
فإن صورة هذه المسابقة هي صورة القمار الذي عرَّفه أهل العلم بقولهم: “دخول شخص في أمر يتردد فيه بين الغرم والغنم “والداخل في هذه المسابقة إما أن يخسر ما دفعه إذا فشل وسُبق، أو يربح ما دفعه ودفعه غيره من المتسابقين إذا سَبق وعليه؛ فإن هذا المال المأخوذ بهذه الطريقة حرام

“এই প্রতিযোগিতার পদ্ধতিটি জুয়ার পদ্ধতি। জুয়ার ব্যাপারে আলেমগণ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এভাবে যে, জুয়া হল, একজন ব্যক্তি এমন বিষয়ে অংশ গ্রহণ করবে যেখানে সে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলে লাভবান হবে আর পরাজিত হলে লোকসানের শঙ্কার মধ্যে থাকে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি হয় যে অর্থ প্রদান করেছিলো তা হারাবে যদি সে পরাজিত হয়। অথবা সে তার এবং অন্যান্য প্রতিযোগীদের প্রদত্ত অর্থ পেয়ে লাভবান হবে যদি সে বিজয়ী হয়। সুতরাং এ পদ্ধতিতে গৃহীত অর্থ হারাম।

অন্যত্র বলা হয়েছে,
والحاصل أنه لا يجوز أن يدفع الإنسان شيئا مقابل اشتراكه في مسابقة قد يربح فيها وقد يخسر ، وهو آثم سواء ربح أم خسر، وننصح القائمين على مثل هذه المسابقات من المسلمين أن يتقوا الله في أنفسهم ، ويكفوا عن الترويج لمثل هذه المسابقات المحرمة، وأن يبحثوا عن أساب مشروعة لتنمية مواردهم
“উপসংহার হল যে, কোনও ব্যক্তির জন্য এমন কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বিনিময়ে কোনও কিছু প্রদান করা জায়েজ নয় যাতে সে জিততে পারে বা হারতে পারে। সে জিতুক বা হারুক উভয় অবস্থায় সে গুনাহগার হবে।” [islamweb]

সুতরাং যদি কোনও প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের নিকট নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ গ্রহণের শর্তারোপ করা হয় (যাকে রেজি. ফি বলা হয়)-যা প্রদান ব্যতিরেকে কেউ তাতে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না তাহলে এ জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং সেগুলোতে অংশ গ্রহণ করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। কারণ তা জুয়া। আর আল্লাহ তাআলা কুরআনের জুয়াকে মদের সাথে যুক্ত করে নাপাক এবং শয়তানের কর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

❑ প্রতিযোগিতায় যে কোনও পক্ষের দান গ্রহণ করা জায়েজ:

কোনও প্রতিযোগিতায় যদি দান বা উপহার হিসেেব প্রতিযোগীদের মধ্যে থেকে কেউ বা তৃতীয় কোনও পক্ষ (স্পন্সর) বিজয়ীকে উৎসাহিত করার জন্য অর্থ বা পুরস্কার সামগ্রী প্রদান করে তাহলে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং তা জায়েজ। কারণ এখানে প্রতিযোগীদের কেউ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

শাইখ জিবরিন রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়:

প্রশ্ন: সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের একজনের পক্ষ থেকে অথবা সকলের পক্ষ থেকে অথবা বাইরের অন্য কোনও পক্ষ থেকে বিনিময় গ্রহণ করার বিধান কী?

তিনি উত্তরে বলেন,

اذا كانت هذه المسابقة مفيدة للمتسابقين يكتسبون منها علماً نافعاً وسعة اطلاع، وفوائد دينية أو ثقافية، جاز أخذ العوض فيها، سواء كان ذلك العوض من المتسابقين أو أحدهما أو من غيرهما. والله أعلم

“যদি এই প্রতিযোগিতা প্রতিযোগীদের জন্য উপকারী হয়-যাতে তারা উপকারী ইলম অর্জন, ব্যাপক জানাশোনা এবং দীন বা সংস্কৃতি ক্ষেত্রে লাভবান হয় তাহলে তাতে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ। চাই তা প্রতিযোগীদের নিকট থেকে নেওয়া হোক অথবা তাদের কোনও একজন থেকে নেওয়া হোক অথবা অন্য কারও নিকট থেকে নেওয়া হোক।” [cms.ibn-jebreen]

➧ দৃষ্টি আকর্ষণী:

কেউ কেউ শাইখ জিবরিন রাহ.-এর উক্ত ফতোয়াটিকে প্রতিযোগীর নিকট থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য আবশ্যিকভাবে প্রদেয় ‘রেজিস্ট্রি ফি’ গ্রহণের পক্ষে উপস্থাপন করছে।
কিন্তু তা তাদের বুঝার ভুল। কারণ ফতোয়ার উদ্দেশ্য হল, কোন উপকারী বা দীনী ইলমি বিষয়ক প্রতিযোগিতায় যদি প্রতিযোগীদের একজন কিংবা সকলের পক্ষ থেকে অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতার বিনিময় (পুরস্কার সামগ্রী বা পুরস্কার বাবদ অর্থ) নেওয়া হয় তাহলে তা জায়েজ। অর্থাৎ এক্ষেত্রে যদি প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে কেউ একজন অথবা সকলে মিলে অথবা তৃতীয় কোনও পক্ষ (স্পন্সর) প্রতিযোগিতার বিনিময় বা পুরস্কার দান করে তাহলে সেটা গ্রহণ করা জায়েজ আছে।

এখানে ‘দান’ উদ্দেশ্য না হলে একজন ব্যক্তি ও তৃতীয় পক্ষের প্রসঙ্গ আসতো না।

মোটকথা, প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে কেউ একজন অথবা তৃতীয় কোনও পক্ষ যদি প্রতিযোগীদের পুরস্কার বাবদ সমূদয় অর্থ ও ব্যয়ভার বহন করে তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই। এমনকি সকল প্রতিযোগীও সম্মিলিতভাবে যদি এই ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেয় তাতেও কোনও সমস্যা নেই।

শাইখের ফতোয়ায় প্রতিযোগীর নিকট আবশ্যিকভাবে গৃহীত ফি (যা রেজিস্ট্রেশন বাবদ নেওয়া হয়) সম্পর্কে বক্তব্য নেই। এটা ফতোয়ার উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং উক্ত ফতোয়া ভুল অর্থে গ্রহণ করার সুযোগ নাই।

➧ উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ইসলামি সংগঠন, সামাজিক ক্লাব ইত্যাদি কর্তৃক ছাত্র-ছাত্রী ও যুবকদের জন্য যে সব প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে এবং তারা নিজেদের পক্ষ থেকে পুরস্কারের আয়োজন করে এতে অংশ গ্রহণ করায় কোনও সমস্যা নেই। (যদি প্রতিযোগিতায় অন্য কোনও হারামের সংশ্লিষ্টতা না থাকে)। কারণ এখানে প্রতিযোগীদের নিকট থেকে কোনও অর্থকড়ি নেওয়া হয় না। ফলে বিজয়ী হলেও কোনও প্রতিযোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

❑ পুরস্কার ছাড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে ব্যয়ভার উত্তোলনের উদ্দেশ্যে প্রতিযোগীদের নিকট থেকে অর্থ নেওয়া জায়েজ?

প্রশ্ন: রেজিস্ট্রেশন ফ্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই যদি পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয় সেটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এরকম একটি আয়োজন করতে পুরস্কারের অর্থ ছাড়াও একটা বড় ধরনের অর্থের প্রয়োজন হয়। যেমন: প্রচার-প্রচারণা, প্রশ্নপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। তাছাড়া এসব কাজে বহু লোকবল খাটানোর প্রয়োজন পড়ে। সে দিক বিবেচনায় ন্যূনতম একটি রেজিস্ট্রেশন ফি ধরা হলে তাও কি হারামের মধ্যে গণ্য হবে?
উত্তর: কেউ যদি এহেন ইসলামি জ্ঞান চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তার উদ্দেশ্যে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করে (স্পন্সর করে) তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। চাই তা পুরস্কারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হোক অথবা প্রতিযোগিতার অন্যান্য খরচের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হোক। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ‘আবশ্যিক শর্ত’ হিসেবে রাখা জায়েজ নেই। এটাকে আলিমগণ ‘জুয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ এক্ষেত্রে কেবল হাতেগোনা কতিপয় ব্যক্তি বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে লাভবান হবে আর বেশিরভাগ প্রতিযোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

❑ প্রশ্ন: রেজিস্ট্রেশন ফি না নিলে মানুষ অমনোযোগী হয়ে রেজিস্ট্রেশন করে এবং ঠিক মত স্টাডি না করেই এমনিতেই এক্সামে অংশগ্রহণ করবে। এ যুক্তিতে কি রেজি. ফি নেওয়া যাবে?
উত্তর: যার জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ঘোষিত পুরস্কার অর্জন করতে চায় তারা অবশ্যই পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিয়েই অংশগ্রহণ করবে। কিছু মানুষ হয়তো এমনিতেই অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু তা তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি আগামীতে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা হবে ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু এ যুক্তিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অর্থ প্রদানকে ‘আবশ্যিক শর্ত’ করা যাবে না। কেননা এটি নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত বলেই বিজ্ঞ আলেমগণ উল্লেখ করেছেন-যেমনটি আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি।

❑ প্রতিযোগীদের কেউ যদি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে তা জায়েজ:

প্রশ্ন: কোন ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় যদি সকলে মিলে সমান টাকা দেয় এবং ফাইনালে বিজয়ী প্রতিযোগীগণ সহ অংশগ্রহণকারী সবাই মিলে জমা কৃত টাকা দিয়ে সম্মিলিত খাবারের আয়োজন করে এবং উভয় পক্ষের সকলে মিলে সে খাবার খায় তাহলে এতে কি কোনও সমস্যা আছে?
বি.দ্র. কারো জন্য অতিরিক্ত কোন প্রাইজ মানি বা পুরস্কার নেই। শুধু সকলে মিলে প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে খাবার খাওয়া হবে।
উত্তর: এটা নাজায়েজ নয়। কারণ এখানে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বরং যারা টাকা দিয়েছে তারা সকলেই (বিজয়ী এবং পরাজিত উভয় পক্ষ) নিজেদের টাকার বিনিময়ে খাবার খাচ্ছে। সুতরাং এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে এই খেলার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ত যেন লঙ্ঘিত না হয় বা অন্য কোন হারাম কাজ সংগঠিত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate