Thursday, December 23, 2021

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার ভয়াবহ পরিণতি!!


কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার ভয়াবহ পরিণতি!!
সূচীপত্র
ক্রম শিরোনাম
১ অবতরণিকা
২ মুখবন্ধ
৩ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা
৪ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার কারণ সমূহ
৫ মূর্খতা
৬ আল্লাহভীরুতায় দুর্বলতা
৭ অহঙ্কার
৮ দেখা-সাক্ষাতে দীর্ঘ ছেদ
৯ কঠিন তিরস্কার
১০ আপ্যায়নে বেশি বাড়াবাড়ি

১১ মেহমানের প্রতি গুরুত্বহীনতা
১২ অত্যধিক কার্পণ্য
১৩ মিরাস বন্টনে অতি বিলম্ব
১৪ যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য
১৫ দুনিয়া নিয়ে অতি ব্যস্ততা
১৬ তালাক
১৭ অলসতা ও দূরত্ব
১৮ আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি অবস্থান
১৯ আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ধৈর্যের পরিচয় না
দেয়া
২০ যে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে কোনো
আত্মীয়কে দাওয়াত দিতে ভুলে যাওয়া
২১ হিংসা


২২ অত্যধিক ঠাট্টা-মশকারা
২৩ চুগলখুরি করা অথবা তা শুনা
২৪ স্ত্রীর অসৎ চরিত্র
২৫ আত্মীয়তার বন্ধন
২৬ কিভাবে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা পাবে?
২৭ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ফযীলত
২৮ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার উপায়সমূহ
অবতরণিকা
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য
যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা
এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান
দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য
যিনি আমাদেরকে সফল জীবনের পথ
বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের
প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।
মানুষ মাত্রই তার কিছু না কিছু আত্মীয়-স্বজন
অবশ্যই রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে
তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠাই নিতান্ত স্বাভাবিক।
পক্ষান্তরে দুনিয়ার কোনো ক্ষুদ্র স্বার্থকে
কেন্দ্র করে কখনো কখনো তাদের পরস্পরের
মাঝে দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ লেগে যাওয়াও অত্যন্ত
স্বাভাবিক। তবে তা কখনো দীর্ঘায়িত হতে
দেওয়া যাবে না। নতুবা তা এক সময় অপরের
প্রতি কঠিন বিদ্বেষ ও নির্মম শত্রুতা পোষণে
উৎসাহিত করবে। আর তখনই তা একদা সেই পরম
আত্মীয়তার বন্ধনটিকে ছিন্ন করা পর্যন্ত
পৌঁছিয়ে দিবে। যা শরী‘আত কিংবা মানব
দৃষ্টিতেও কখনোই কাম্য নয়। কারণ, আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে একটি মহা
পাপ ও মারাত্মক অপরাধ যা পরস্পরের সম্পর্ক
বিনষ্ট করে দেয় এবং যা আল্লাহ তা‘আলার
অভিশাপ ও তাঁর নগদ শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যা আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও জান্নাতে যাওয়ার
পথে বাধার সৃষ্টি করে। এমনকি যা কখনো কখনো
একাকীত্ব, নীচুতা এবং লাঞ্ছনারও কারণ হয়।
উপরন্তু তা কখনো কখনো মানব জীবনের এক মহা
দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা ও পেরেশানির ব্যাপারও
হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, যার পক্ষ থেকে সর্বদা
ভালো ব্যবহার পাওয়াই মানুষের একমাত্র কামনা
তার পক্ষ থেকে কখনো কোনো দুর্ব্যবহার বা
অসদাচরণ সত্যিই উদ্বেগের বিষয়ই বটে।
উক্ত ব্যাধি বর্তমান সমাজে প্রচুর ব্যাপকতা লাভ
করেছে। কেউ কারোর সাধারণ বৈষয়িক স্বার্থও
অপরের জন্য ছাড়তে চায় না। যার দরুন সেই পরম
আত্মীয়তার বন্ধনটুকু আজ বার বার বিশেষভাবে
বহুমুখী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সেই মহান
বন্ধনটুকু টিকানোর জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এ পুস্তিকাটিতে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত
যতগুলো হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত উহার
বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা
হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয়
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ‘আল্লামা নাসিরুদ্দীন
আল্বানী সাহেবের হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন
নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তদুপরি সকল যোগ্য
গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি
হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থান নির্দেশ
সংযোজন করা হয়েছে। তা সত্বেও সম্পূর্ণরূপে
নিরেট নির্ভুল হওয়ার দাবি করছি না।
শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ
পাঠকবর্গের গোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তবে ভুল যতটুকুই হোক না কেন লেখকের
দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ
থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে
দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে
সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা
করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।
এ পুস্তিকাটি প্রকাশে যে কোনো জনের যে
কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কার্পণ্য করছি না। ইহ
ও পরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে তার
আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার
সর্বোচ্চ আশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল
‘আলামীন।
লেখক
মুখবন্ধ
ﺇِﻥَّ ﺍﻟْـﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ، ﻧَﺤْﻤَﺪُﻩُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻨُﻪُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻩُ، ﻭَﻧَﻌُـﻮْﺫُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻣِﻦْ ﺷُﺮُﻭْﺭِ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ،
ﻭَﻣِﻦْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺕِ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟِﻨَﺎ، ﻣَﻦْ ﻳَّﻬْﺪِﻩِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻣُﻀِﻞَّ ﻟَﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﻳُّﻀْﻠِﻞِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻼَ ﻫَﺎﺩِﻱَ
ﻟَﻪُ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَّ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ، ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ
ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟُﻪُ
নিশ্চয় সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
আমরা সবাই তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁরই নিকট
সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই নিকট
আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও খারাপ
আমল থেকে। যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত
দিবেন তাকে পথভ্রষ্ট করার আর কেউ নেই এবং
যাকে আল্লাহ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করবেন তাকে
হিদায়াত দেওয়ারও আর কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোনো
মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই
এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও একমাত্র তাঁরই
প্রেরিত রাসূল।
বর্তমান বস্তুবাদী মুসলিম সমাজে আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করার ব্যাপারটি খুব একটা ব্যাপকতা
পেয়েছে। পরস্পরকে ভালো কাজের পরামর্শ
দেওয়া এবং পরস্পরের মধ্যকার পবিত্র সুসম্পর্কটুকু
অটুট রাখার জন্য পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ চালু রাখা
খুব একটা বেশি চোখে পড়ে না। যা কিছু রয়েছে
তাও দুনিয়ার ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে।
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নের আবার কয়েকটি ধরনও
রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও
রয়েছেন যে, তার আত্মীয়ের কোনো খবরই
রাখেন না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে
যাচ্ছে; অথচ পরস্পরের মধ্যে কোনো দেখা-
সাক্ষাতই হচ্ছে না। একে অন্যের মধ্যে কোনো
দান বা উপঢৌকন আদান-প্রদান হচ্ছে না, তাদের
কোনো বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করা হচ্ছে না, একে
অপরকে কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করছেন না,
ভালো ব্যবহার দেখিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট করা
হচ্ছে না; বরং তাদেরকে সময় সময় কথা বা
কাজে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।
আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন
যে, তার আত্মীয়-স্বজনের কোনো অনুষ্ঠানেই
তিনি যোগ দেন না। তাদের কোনো দুঃখ-
বেদনার তিনি শরীক হন না। বরং তাদেরকে
কোনো কিছু দান না করে অন্যকে দান করেন; অথচ
তারাই তার দানের সর্বপ্রথম হকদার।
আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন
যে, তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে তিনি তখনই
সুসম্পর্ক বজায় রাখেন যখন তারাও তার সাথে
সুসম্পর্ক বজায় রাখে। আর যখনই তারা তার সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন করে তখন তিনিও তাদের সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমন আচরণকে বাস্তবার্থে
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা বলা যায় না। কারণ,
সমপ্রতিদান তো যে কোনো কারোর সাথেই হতে
পারে। এতে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার বিশেষ
কোনো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান নেই। বস্তুতঃ
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা মানে আপনি
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করবেন। তারা আপনার
সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করুক বা নাই করুক।
আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন
যে, তার আত্মীয়-স্বজনকে তিনি দীন-ধর্মের
সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ও যাবতীয় প্রয়োজনীয়
জ্ঞান শিক্ষা দেন না এবং তাদেরকে ইসলামের
সকল ধর্মীয় অনুশাসন নিজ জীবনে বাস্তবায়নের
প্রতি দাওয়াতও দেন না; অথচ তিনি সর্বদা
অন্যদেরকে ইসলামের খাঁটি আকীদা-বিশ্বাস ও
যাবতীয় ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিতে এতটুকুও
কোতাহী করেন না। বস্তুতঃ এরাই তো উক্ত
দাওয়াতের সর্বপ্রথম হকদার।
পক্ষান্তরে অনেক বংশে ইসলামের সঠিক
আকীদা-বিশ্বাস ও খাঁটি ধর্মীয় জ্ঞান বহনকারী
অনেক আলিমে দীন, ধর্ম প্রচারক ও সমাজ
সংস্কারক রয়েছেন যাদের সাথে তাদের
বংশের লোকেরা পারতপক্ষে ভালো ব্যবহার
দেখায় না। তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান দেয় না।
তাদের কাছ থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের
খাঁটি জ্ঞানের আলো তারা আহরণ করে না। যা
তাদের সাথে শুধু আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করারই
শামিল নয় বরং এতে করে মানুষের মাঝে তাদের
সম্মান ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং সমাজে
তাদের প্রভাবও কমে যায়।
আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন
যে, তিনি নিজেই তার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে
ফাটল ধরাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। যে
কোনো ছুতা-নাতা নিয়েই একেক জনকে অন্যের
ওপর ক্ষেপিয়ে তোলেন।
আত্মীয়তার পরম বন্ধনটুকু ছিন্ন করার উপরোক্ত
ধরনসমূহ ও অন্যান্য নব উদ্ভাবিত ধরন সমষ্টির
মূলোৎপাটনের জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা একটি মারাত্মক
অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের নিন্দা করেন
এবং তাদেরকে লা’নত ও অভিসম্পাত দেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻓَﻬَﻞۡ ﻋَﺴَﻴۡﺘُﻢۡ ﺇِﻥ ﺗَﻮَﻟَّﻴۡﺘُﻢۡ ﺃَﻥ ﺗُﻔۡﺴِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻭَﺗُﻘَﻄِّﻌُﻮٓﺍْ ﺃَﺭۡﺣَﺎﻣَﻜُﻢۡ ٢٢
ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄَﺻَﻤَّﻬُﻢۡ ﻭَﺃَﻋۡﻤَﻰٰٓ ﺃَﺑۡﺼَٰﺮَﻫُﻢۡ ٢٣﴾ ‏[ ﻣﺤﻤﺪ : ٢٢، ٢٣ ‏]
“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা
পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকেই
করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন”। [সূরা
মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻨﻘُﻀُﻮﻥَ ﻋَﻬۡﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦۢ ﺑَﻌۡﺪِ ﻣِﻴﺜَٰﻘِﻪِۦ ﻭَﻳَﻘۡﻄَﻌُﻮﻥَ ﻣَﺎٓ ﺃَﻣَﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِۦٓ ﺃَﻥ
ﻳُﻮﺻَﻞَ ﻭَﻳُﻔۡﺴِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻌۡﻨَﺔُ ﻭَﻟَﻬُﻢۡ ﺳُﻮٓﺀُ ﭐﻟﺪَّﺍﺭِ
٢٥﴾ ‏[ﺍﻟﺮﻋﺪ : ٢٥ ‏]
“যারা আল্লাহ তা‘আলাকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার
ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ
তা‘আলা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং
পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য
রয়েছে লা’নত ও অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই
রয়েছে মন্দ আবাস”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২৫]
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে
না।
জুবায়ের ইবন মুত্বইম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻻ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْـﺠَﻨَّﺔَ ﻗَﺎﻃِﻊٌ ‏»
“আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে
না”। [1]
আবু মূসা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺛَﻼﺛَﺔٌ ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻮْﻥَ ﺍﻟْـﺠَﻨَّﺔَ : ﻣُﺪْﻣِﻦُ ﺍﻟْـﺨَﻤْﺮِ ﻭَﻗَﺎﻃِﻊُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢِ ﻭَﻣُﺼَﺪِّﻕٌ ﺑِﺎﻟﺴِّﺤْﺮِ‏»
“তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। অভ্যস্ত
মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে
বিশ্বাসী”। [2]
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর নেক আমল আল্লাহ
তা‘আলা গ্রহণ করেন না।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺍﻥَّ ﺃَﻋْﻤَﺎﻝَ ﺑَﻨِﻲْ ﺁﺩَﻡَ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﻛُﻞَّ ﺧَﻤِﻴْﺲٍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْـﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻼَ ﻳُﻘْﺒَﻞُ ﻋَﻤَﻞُ ﻗَﺎﻃِﻊِ
ﺭَﺣِﻢٍ ‏»
“আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার
দিবাগত রাত্রিতে (আল্লাহ তা‘আলার নিকট)
উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন
বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না”। [3]
আল্লাহ তা‘আলা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর
শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। উপরন্তু
আখিরাতের শাস্তি তো তার জন্য প্রস্তুত আছেই।
আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺐٍ ﺃَﺟْﺪَﺭُ ﺃَﻥْ ﻳُّﻌَﺠِّﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﺼَﺎﺣِﺒِﻪِ ﺍﻟْﻌُﻘُﻮْﺑَﺔَ ﻓِﻲْ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻣَﻊَ ﻣَﺎ ﻳَﺪَّﺧِﺮُ
ﻟَﻪُ ﻓِﻲْ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻐْﻲِ ﻭَﻗَﻄِﻴْﻌَﺔِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢِ‏»
“দু’টি গুনাহ্ ছাড়া এমন কোনো গুনাহ্ নেই যে গুনাহ
্গারের শাস্তি আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই
দিবেন এবং তা দেওয়াই উচিৎ; উপরন্তু তার জন্য
আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। গুনাহ্ দু’টি হচ্ছে,
অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী”। [4]
কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আল্লাহ
তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺍﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْـﺨَﻠْﻖَ، ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻦْ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢُ : ﻫَﺬَﺍ
ﻣَﻘَﺎﻡُ ﺍﻟْﻌَﺎﺋِﺬِ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻄِﻴْﻌَﺔِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻌَﻢْ، ﺃَﻣَﺎ ﺗَﺮْﺿَﻴْﻦَ ﺃَﻥْ ﺃَﺻِﻞَ ﻣَﻦْ ﻭَﺻَﻠَﻚِ،
ﻭَﺃَﻗْﻄَﻊَ ﻣَﻦْ ﻗَﻄَﻌَﻚِ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ! ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻚِ‏»
“আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিকুল সৃজন শেষে
আত্মীয়তার বন্ধন (দাঁড়িয়ে) বললো, এটিই হচ্ছে
সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর
স্থান। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই। তুমি
কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক
স্থাপন করবো যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন
করবে এবং আমি ওর সাথেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন
করবো যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে।
তখন সে বললো: আমি এ কথায় অবশ্যই রাজি আছি
হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, তা
হলে তোমার জন্য তাই হোক”। [5]
কেউ কেউ মনে করেন, আত্মীয়-স্বজনরা তার
সাথে দুর্ব্যবহার করলে তাদের সাথে
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা জায়িয। মূলতঃ
ব্যাপারটি তেমন নয়। বরং আত্মীয়রা আপনার
সাথে দুর্ব্যবহার করার পরও আপনি যদি তাদের
সাথে ভালো ব্যবহার দেখান তখনই আপনি
তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেছেন
বলে প্রমাণিত হবে।
‘আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহ
ুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻟَﻴْﺲَ ﺍﻟْﻮَﺍﺻِﻞُ ﺑِﺎﻟْـﻤُﻜَﺎﻓِﺊِ، ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺍﻟْﻮَﺍﺻِﻞَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﺇِﺫَﺍ ﻗُﻄِﻌَﺖْ ﺭَﺣِﻤُﻪُ ﻭَﺻَﻠَﻬَﺎ ‏»
“সে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী
হিসেবে গণ্য হবে না যে কেউ তার সাথে
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলেই সে তার সাথে
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। বরং আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষাকারী সে ব্যক্তি যে কেউ তার সাথে
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলেও সে তার সাথে
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে”। [6]
শত্রুতাভাবাপন্ন কোনো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে
সর্বদা ভালো ব্যবহার দেখালেই আপনি তখন
তাদের ব্যাপারে সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার
সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন। তখন তারা কখানোই
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া আপনার
এতটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা
জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে
আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কিছু আত্মীয়-স্বজন
রয়েছে যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা করি; অথচ তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন
করে। আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি;
অথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি
তাদের সাথে ধৈর্যের পরিচয় দেই; অথচ তারা
আমার সাথে কঠোরতা দেখায়। অতএব, তাদের
সাথে এখন আমার করণীয় কী? তখন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‏« ﻟَﺌِﻦْ ﻛُﻨْﺖَ ﻛَﻤَﺎ ﻗُﻠْﺖَ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﺗُﺴِﻔُّﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻞَّ، ﻭَﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻣَﻌَﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻇَﻬِﻴْﺮٌ
ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻣَﺎ ﺩُﻣْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ‏»
“তুমি যদি সত্যি কথাই বলে থাকো তা হলে তুমি
যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাইয়ে দিচ্ছো। আর
তুমি যতদিন পর্যন্ত তাদের সাথে এমন ব্যবহার
করতে থাকবে ততদিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ
থেকে তাদের ওপর তোমার জন্য একজন
সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে”। [7]
শত্রুতাভাবাপন্ন কোনো আত্মীয়-স্বজনকে সদকা
করা সর্বশ্রেষ্ঠ সদকা।
উম্মে কুলসুম বিনতে উক্ববাহ, হাকীম ইবন হিযাম
ও আবু আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত
তারা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺍﻓْﻀَﻞُ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ ﻋَﻠَﻰ ﺫِﻱْ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢِ ﺍﻟْﻜَﺎﺷِﺢِ ‏»
“সর্বশ্রেষ্ঠ সদকা হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যে
আপনার শত্রু তার ওপর সদকা করা”। [8]
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর সঙ্গে আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষা করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।
উক্ববাহ্ ইবন ‘আমির ও ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
থেকে বর্ণিত তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
‏« ﺻِﻞْ ﻣَﻦْ ﻗَﻄَﻌَﻚَ، ﻭَﺍﻋْﻂِ ﻣَﻦْ ﺣَﺮَﻣَﻚَ، ﻭَﺃَﻋْﺮِﺽْ ﻋَﻤَّﻦْ ﻇَﻠَﻤَﻚَ ‏»
“আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো ওর সঙ্গে যে
তোমার সঙ্গে সে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, দাও
ওকে যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে এবং
যালিমের পাশ কেটে যাও তথা তাকে ক্ষমা
করো”। [9]
আত্মীয়-স্বজনকে চেনা-জানা একজন মুমিনের
অবশ্যই কর্তব্য। তা হলেই কেবল আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা করা কারোর পক্ষে সম্ভবপর হবে। নতুবা নয়।
আবু হুরায়রা থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮْﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﺴَﺎﺑِﻜُﻢْ ﻣَﺎ ﺗَﺼِﻠُﻮْﻥَ ﺑِﻪِ ﺃَﺭْﺣَﺎﻣَﻜُﻢْ ؛ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻِﻠَﺔَ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢِ ﻣَﺤَﺒَّﺔٌ ﻓِﻲْ
ﺍﻟْﺄَﻫْﻞِ، ﻣَﺜْﺮَﺍﺓٌ ﻓِﻲْ ﺍﻟـْﻤَﺎﻝِ، ﻣَﻨْﺴَﺄَﺓٌ ﻓِﻲْ ﺍﻟْﺄَﺛَﺮِ‏»
“তোমরা নিজ বংশ সম্পর্কে ততটুকুই জানবে
যাতে তোমরা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে
পারো। কারণ, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে
আত্মীয়-স্বজনদের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং
ধন-সম্পদ ও বয়স বেড়ে যায়”। [10]
আত্মীয়-স্বজনদেরকে সদকা করলে দু’টি সাওয়াব
পাওয়া যায়: একটি সদকার সাওয়াব এবং অপরটি
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার।
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মহিলাদেরকে সদকা করার উপদেশ দিলে নিজ
স্বামীদেরকেও সদকা করা যাবে কি না সে
ব্যাপারে দু’ জন মহিলা সাহাবী বিলাল এর
মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
‏« ﻟَـﻬُﻤَﺎ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ : ﺃَﺟْﺮُ ﺍﻟْﻘَﺮَﺍﺑَﺔِ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ‏»
“(স্বামীদেরকে দিলেও চলবে) বরং তাতে দু’টি
সাওয়াব রয়েছে: একটি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা
করার সাওয়াব এবং আরেকটি সদকার সাওয়াব”।
[11]
একদা মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না
জানিয়ে একটি বান্দি স্বাধীন করে দিলেন।
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে সে সম্পর্কে জানালে তিনি
বলেন,
‏«ﺍﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻚِ ﻟَﻮْ ﺃَﻋْﻄَﻴْﺘِﻬَﺎ ﺃَﺧْﻮَﺍﻟَﻚِ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻋْﻈَﻢَ ﻟِﺄَﺟْﺮِﻙِ ‏»
“জেনে রাখো, তুমি যদি বান্দিটিকে তোমার
মামাদেরকে দিয়ে দিতে তা হলে তুমি আরো
বেশি সাওয়াব পেতে”। [12]
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার বিশেষ গুরুত্বের কারণেই
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ
সাহাবাদেরকে মিসরে অবস্থানরত তাঁরই আত্মীয়-
স্বজনের প্রতি ভালো ব্যবহারের ওয়াসিয়ত
করেন।
আবু যর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺍﻧَّﻜُﻢْ ﺳَﺘَﻔْﺘَﺤُﻮْﻥَ ﻣِﺼْﺮَ، ﻭَﻫِﻲَ ﺃَﺭْﺽٌ ﻳُﺴَﻤَّﻰ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺍﻟْﻘِﻴْﺮَﺍﻁُ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻓَﺘَﺤْﺘُﻤُﻮْﻫَﺎ
ﻓَﺄَﺣْﺴِﻨُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻥَّ ﻟَﻬُﻢْ ﺫِﻣَّﺔً ﻭَﺭَﺣِﻤًﺎ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ : ﺫِﻣَّﺔً ﻭَﺻِﻬْﺮًﺍ ‏»
“তোমরা অচিরেই মিশর বিজয় করবে। যেখানে ক
ীরাতের (দিরহাম ও দীনারের অংশ বিশেষ)
প্রচলন রয়েছে। যখন তোমরা তা বিজয় করবে তখন
সে এলাকার অধিবাসীদের প্রতি দয়া করবে।
কারণ, তাদের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি ও আমার
আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। (ইসমাঈল ‘আলাইহিস
সালামের মা হাজেরা ‘আলাইহাস সালাম
সেখানকার) অথবা হয়তো বা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। কারণ, তাদের
সাথে নিরাপত্তা চুক্তি ও আমার শ্বশুর পক্ষীয়
আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। (রাসূলের স্ত্রী
মারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা সেখানকার)”। [13]
অন্ততপক্ষে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হলেও
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে হবে।
আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺑُﻠُّﻮْﺍ ﺃَﺭْﺣَﺎﻣَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻮْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻼَﻡِ ‏»
“অন্ততপক্ষে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হলেও
তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করো”।
[14]
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কী কী কারণে
মানুষ তার পরম আত্মীয়তার বন্ধনটুকু ছিন্ন করে
দেয়। যা থেকে নিজে দূরে থাকলে বা অন্যকে
দূরে রাখলে আত্মীয়তার বন্ধনটুকু অটুট থাকবে। যা
নিম্নরূপ:
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার কারণসমূহ:
১. মূর্খতা:
কেউ কেউ হয়তো বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন
করার ইহকালীন ও পরকালীন ভয়ানক পরিণতির
কথা না জানার দরুনই আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন
করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। তেমনিভাবে
কেউ কেউ আবার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার
ইহকালীন ও পরকালীন লাভ না জানার কারণেও
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ নাও
হতে পারেন। তাই উক্ত সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য
উভয় প্রকারের জ্ঞানই প্রয়োজন।
২. আল্লাহভীরুতায় দুর্বলতা:
কেউ কেউ হয়তো বা উপরোক্ত জ্ঞান রাখেন।
তবে তার মধ্যে আল্লাহভীরুতা খুবই দুর্বল। যার দরুন
সে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে ভয় পায় না
অথবা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে উৎসাহী হয়
না। এমনকি সে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার
পরিণতি সম্পর্কে এতটুকুও ভেবে দেখে না।
৩. অহঙ্কার:
কোনো কোনো আত্মীয়-স্বজন তো এমনও রয়েছে
যে, যখন সে দুনিয়ার কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত
করে অথবা বিশেষ কোনো সামাজিক প্রতিপত্তি
সে অর্জন করে কিংবা সে বড়ো মাপের একজন
ধনী হয়ে যায় তখন সে নিজ আত্মীয়-স্বজনদের
সাথে সাক্ষাৎ করাকে মানহানি মনে করে। বরং
সে মনে করে যে, আত্মীয়-স্বজনরা তার সাথেই
সাক্ষাৎ করুক এটাই তার অধিকার।
৪. দীর্ঘদিন সাক্ষাত না হওয়া:
কখনো কখনো যে কোনো কারণে কারোর কোনো
আত্মীয়-স্বজনের সাথে তার দীর্ঘ দিন যাবৎ
দেখা-সাক্ষাৎ না হলে পরবর্তীতে তাদের
সাথে সাক্ষাৎ করতে সত্যিই তার লজ্জা লাগে।
এমনকি দেখা করবো করবো বলে আর তাদের
সাথে দেখা করা হয় না। এমনিভাবেই তা এক
সময় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করায় রূপান্তরিত হয়।
৫. কঠিন তিরস্কার:
কেউ কেউ তার কোনো আত্মীয়-স্বজন দীর্ঘ
সাক্ষাতহীনতার পর তার সাথে সাক্ষাৎ করতে
আসলে তাকে খুব কঠিনভাবে তিরস্কার করে। আর
তখনই তার উক্ত আত্মীয় তার সাথে দ্বিতীয়বার
সাক্ষাৎ করতে ভয় ও লজ্জা পায়। আর তখন
এমনিভাবেই ধীরে ধীরে তাদের মধ্যকার
সম্পর্কটুকু ছিন্ন হয়ে যায়।
৬. আপ্যায়নে বেশি বাড়াবাড়ি:
কোন কোনো গরীব ব্যক্তি আবার তার কোনো
আত্মীয়-স্বজন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে
তার জন্য প্রয়োজনাতিরিক্ত অধিক আপ্যায়নের
ব্যবস্থা করে এবং এ জন্য অনেক টাকাও খরচ করে।
তখন তার কোনো বুদ্ধিমান আত্মীয়-স্বজন তার
সাথে আর সাক্ষাৎ করতে চায় না। যেন সে
আপ্যায়নের ঝামেলায় পড়ে আরো গরীব ও আরো
ঋণগ্রস্ত না হয়ে যায়।
৭. মেহমানের প্রতি গুরুত্বহীনতা:
আবার কেউ কেউ এমনও রয়েছে যে, তার কোনো
আত্মীয়-স্বজন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে
তাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। তার
কথাবার্তা গুরুত্ব দিয়ে শোনে না। তার আগমনে
তেমন একটা খুশি প্রকাশ করে না। বরং তাকে
মলিন চেহারায় অভ্যর্থনা জানায়। এমতাবস্থায়
তার আত্মীয়-স্বজনরা তার সাথে দ্বিতীয়বার
দেখা করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
৮. অত্যধিক কার্পণ্য:
কেউ কেউ আবার অনেক ধন-সম্পদের মালিক হওয়া
সত্ত্বেও তার আত্মীয়-স্বজন থেকে সে দূরে
থাকার চেষ্টা করে। তার ধারণা, সে তাদের
নিকটবর্তী হলে তারা তার কাছ থেকে ঋণ চাবে।
তার থেকে যে কোনো আর্থিক সহযোগিতা
কামনা করবে। মূলতঃ সে সম্পদের কোনো মূল্যই
নেই যে সম্পদ দিয়ে কারোর কোনো আত্মীয়-
স্বজন তার কাছ থেকে এতটুকুও উপকৃত হতে
পারলো না।
৯. মিরাস বন্টনে অতি বিলম্বঃ
কখনো কখনো অলসতা কিংবা কোনো কর্তা
ব্যক্তির হঠকারিতার দরুন ওয়ারিস আত্মীয়-
স্বজনদের মাঝে মিরাস বন্টন করা হয় না। তখন
মিরাস বন্টনে উৎসাহী ও অনুৎসাহীদের মাঝে এক
ধরনের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। আর এরই পরিণতিতে
তাদের মধ্যকার আত্মীয়তার বন্ধনটুকুও ছিন্ন হয়ে
যায়।
১০. যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য:
কখনো কখনো আবার কেউ কেউ নিজ আত্মীয়-স্বজন
ও বোন-ভাইদেরকে নিয়ে যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য
করে থাকে; অথচ তারা পরস্পরের মধ্যে এ
সংক্রান্ত কোনো সুস্পষ্ট নিয়ম-নীতি ঠিক করে
নি। বরং তারা পরস্পরের প্রতি ভালো ধারণার
ভিত্তিতেই তা চালিয়ে যায়। কিন্তু যখন লাভ
বেশি হতে শুরু করে এবং কাজের পরিধিও বেড়ে
যায় তখন তাদের পরস্পরের মাঝে এক ধরণের
কুধারণা জন্ম নেয়। আর তখনই তারা একে অপরের
প্রতি যুলুম করতে উদ্যত হয়। বিশেষ করে যখন
তাদের মাঝে আল্লাহভীতি ও একে অপরকে
অগ্রাধিকার দেয়ার নীতি লোপ পায় অথবা কেউ
কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একতরফা
সিদ্ধান্ত নেয় কিংবা এক জন অন্যের চাইতে
কাজে বেশি উৎসাহী হয়। আর এ ভাবেই তখন
তাদের মধ্যকার আত্মীয়তার বন্ধনটুকু ছিন্ন হতে শুরু
করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﺇِﻥَّ ﻛَﺜِﻴﺮٗﺍ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﺨُﻠَﻄَﺎٓﺀِ ﻟَﻴَﺒۡﻐِﻲ ﺑَﻌۡﻀُﻬُﻢۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﺑَﻌۡﺾٍ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍْ
ﭐﻟﺼَّٰﻠِﺤَٰﺖِ ﻭَﻗَﻠِﻴﻞٞ ﻣَّﺎ ﻫُﻢۡ﴾ ‏[ ﺹ : ٢٤ ‏]
“নিশ্চয় শরীকদের অনেকেই একে অন্যের ওপর
অবিচার করে থাকে। তবে সৎকর্মশীল মুমিনরা নয়।
যারা সংখ্যায় খুবই কম”। [সূরা সাদ, আয়াত: ২৪]
১১. দুনিয়া নিয়ে অতি ব্যস্ততা:
কেউ কেউ আবার দুনিয়া নিয়ে অতি ব্যস্ততার
দরুন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করার
সুযোগই পান না। এমনিভাবেই তা এক দিন
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করায় রূপান্তরিত হয়।
১২. তালাক:
কখনো কখনো আবার কেউ কেউ নিজ আত্মীয়-
স্বজনকে বিবাহ করার পর তাকে যে কোনো
কারণে তালাক দিয়ে দেয়। তখন তাদের সন্তান
কিংবা তাদের মধ্যকার কোনো লেন-দেন নিয়ে
তাদের মাঝে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার পরিণতিতে
একদা তাদের মধ্যকার আত্মীয়তার বন্ধনটুকুও ছিন্ন
হয়ে যায়।
১৩. অলসতা ও দূরত্ব:
কেউ কেউ চাকুরির কারণে আত্মীয়-স্বজন থেকে
বহু দূরে অবস্থান করে থাকে। অলসতা ও দূরত্বের
কারণে ইচ্ছা থাকলেও আত্মীয়-স্বজনের সাথে
আর সাক্ষাৎ করা হয় না। এমনিভাবেই তা এক দিন
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করায় রূপান্তরিত হয়।
১৪. আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি অবস্থান:
আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি অবস্থানও কখনো
কখনো আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার কারণ হতে
পারে। কারণ, একে অপরের পাশে স্থায়ীভাবে
অবস্থান করলে যে কোনো সময় তাদের মাঝে
দ্বন্দ্ব লাগতেই পারে। এ জন্যই উমার বলেন,
‏« ﻣُﺮُﻭْﺍ ﺫَﻭِﻱْ ﺍﻟْﻘَﺮَﺍﺑَﺎﺕِ ﺃَﻥْ ﻳَّﺘَﺰَﺍﻭَﺭُﻭْﺍ ﻭَﻻَ ﻳَﺘَﺠَﺎﻭَﺭُﻭْﺍ ‏»
“তোমরা নিজ আত্মীয়-স্বজনদেরকে আদেশ করো
যেন তারা পরস্পর সাক্ষাৎ করে এবং একে অপর
থেকে দূরে অবস্থান করে”। [15]
কারণ, আত্মীয়-স্বজনরা দীর্ঘ দিন যাবৎ একে
অপরের পাশাপাশি অবস্থান করলে নিজ নিজ
অধিকার নিয়ে তাদের পরস্পরের মাঝে কোনো
না কোনো সময় দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ স্বভাবতই ঘটে
থাকবে। আর এতে করে তাদের পরস্পরের মাঝে
বৈরিতা ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো
ঘৃণ্য ব্যাপারটিও ঘটতে পারে।
আবার কখনো কখনো আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের
অতি নিকটে অবস্থান করার দরুন পরস্পরের ছেলে-
মেয়েদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিজেদের মধ্যকার
দ্বন্দ্বে রূপান্তরিত হয়। কারণ, স্বভাবতই প্রত্যেক
ব্যক্তি নিজ নিজ সন্তানকে অপরের সামনে
নির্দোষই প্রমাণ করতে চায়। আর এতে করে
তাদের পরস্পরের মাঝে বৈরিতা ও আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করার মতো ঘৃণ্য ব্যাপারটিও ঘটতে
পারে।
আকসাম ইবন সাইফী বলেন,
‏« ﺗَﺒَﺎﻋَﺪُﻭْﺍ ﻓِﻲْ ﺍﻟﺪِّﻳَﺎﺭِ ﺗَﻘَﺎﺭَﺑُﻮْﺍ ﻓِﻲْ ﺍﻟْـﻤَﻮَﺩَّﺓِ‏»
“তোমরা দূরে দূরে অবস্থান করো তা হলে
তোমাদের মাঝে ভালোবাসা জন্মিবে”। [16]
১৫. আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ধৈর্যের পরিচয় না
দেওয়া:
কোন কোনো আত্মীয়-স্বজন তো এমনো রয়েছে
যে, অন্য আত্মীয়ের সামান্যটুকু দোষ-ত্রুটিও তার
এতটুকু সহ্য হয় না। কেউ তার প্রতি সামান্যটুকু দোষ
করলেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য সে
উদ্যত হয়।
১৬. যে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে কোনো আত্মীয়-
স্বজনকে দাওয়াত দিতে ভুলে যাওয়া:
কেউ বিয়ে-শাদী কিংবা আকীকা ইত্যাদি
অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে সে সাধারণত তার
নিজ আত্মীয়-স্বজন এবং নিকটতম বন্ধু-
বান্ধবদেরকে মৌখিক, কার্ড দিয়ে অথবা
টেলিফোনের মাধ্যমে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত
থাকার জন্য দাওয়াত করে থাকে। এ দিকে
অনুষ্ঠানের প্রচুর আয়োজনাদির ঝামেলার দরুন
হয়তো বা সে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাউকে
দাওয়াত দিতে ভুলে গেলো। আর তখনই তার উক্ত
আত্মীয় মানসিক দুর্বলতা ও অত্যাধিক কু-
ধারণাপ্রবণ হওয়ার দরুন তার সম্পর্কে বাস্তবতা
বহির্ভূত নিরেট খারাপ মন্তব্য করে বসে। তখন সে
মনে মনে বলে, আমার আত্মীয়টি আমাকে হীন
মনে করেই ইচ্ছাকৃতভাবে দাওয়াত দিতে ভুলে
গেলো। আর তখন এমনিভাবেই তা এক দিন
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করায় রূপান্তরিত হয়।
১৭. হিংসা:
আল্লাহ তা‘আলা মানব সমাজের কোনো কোনো
ব্যক্তিকে অন্যান্যদের তুলনায় অত্যধিক জ্ঞান,
দুনিয়ার পদ মর্যাদা, ধন-সম্পদ ও মানুষের
ভালোবাসা দিয়ে থাকেন। তখন তিনি নিজ
আত্মীয়-স্বজনদের খবরাখবর নেন এবং তাদেরকে
যথাসাধ্য সহযোগিতা করে থাকেন। আর তখনই
তাঁর কোনো হিংসুক আত্মীয়ের তা সহ্য নাও হতে
পারে। তখন সে উক্ত ব্যক্তির নিষ্ঠার ব্যাপারে
কথা তোলে এবং তার সাথে হিংসাবশত শত্রুতা
করতে থাকে। আর তখন এমনিভাবেই তা এক দিন
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করায় রূপান্তরিত হয়।
১৮. অত্যধিক ঠাট্টা-মশকারা:
কেউ কেউ আবার স্বভাবগতভাবেই হাসি-ঠাট্টা
করাকে বেশি পছন্দ করে। এমতাবস্থায় তার মুখ
থেকে কখনো কখনো এমন শব্দ বা বাক্য বের হওয়া
অস্বাভাবিক নয় যা অন্যের অনুভূতিকে
দারুণভাবে আঘাত করে। তখন বক্তার প্রতি তার
অন্তরে এক ধরণের ঘৃণা ও শত্রুতা জন্ম নেয়। আর এ
ধরণের ব্যাপার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেই বেশি
ঘটতে পারে। কারণ, তারাই তো বেশির ভাগ
পরস্পর একত্রিত হয়।
আল্লামাহ্ ইবন আব্দিল বার রহ. বলেন, কিছু কিছু
বিজ্ঞ আলিম হাসি-ঠাট্টা করাকে অপছন্দ
করতেন। কারণ, এর পরিণতি ভালো নয়। এর মাধ্যমে
মানুষের ইজ্জত ও ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয়। মানুষে
মানুষে শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। [17]
১৯. চুগলখুরি করা অথবা তা শুনা:
কিছু মানুষের এমন কুরুচিপূর্ণ স্বভাব রয়েছে যে,
এক জনের কথা অন্য জনের কাছে না লাগালে
তার পেটের ভাতই হজম হয় না। তার কাজই হচ্ছে
একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে মানুষের
মধ্যকার সুসম্পর্ক বিনষ্ট করা। এভাবে কখনো
কখনো আত্মীয়তার বন্ধনও বিনষ্ট হয়। চুগলির
চাইতে চুগলি শুনার অপরাধ কম নয়। কারণ, কেউ
সর্বদা অন্যের কাছ থেকে চুগলি শুনলে ও বিশ্বাস
করলে তার জীবনে একদা এমন এক সময় আসবে যখন
সে তার জন্য কোনো খাঁটি বন্ধুই খুঁজে পাবে না।
২০. স্ত্রীর অসৎ চরিত্র:
কারো কারোর স্ত্রী তো এমন রয়েছে যে, সে
তার স্বামীর কোনো আত্মীয়-স্বজনকে দেখতে
পারে না। সে চায় না যে, কেউ তার স্বামীর
অনুগ্রহভাজন হোক। সুতরাং সে তার স্বামীকে
তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি বিষিয়ে তোলে।
তাদের সাথে তাকে সাক্ষাৎ করতে দেয় না।
তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে সে
তাকে নিরুৎসাহিত করে। সে তার বাসায়
স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের কাউকে আপ্যায়ন
করতে দেয় না। হঠাৎ তার স্বামীর আত্মীয়-
স্বজনদের কেউ তার বাসায় এসে পড়লে সে তার
প্রতি কোনো ধরনের উৎসাহই প্রকাশ করে না।
এমনিভাবেই তা এক দিন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন
করায় রূপান্তরিত হয়।
আর কিছু স্বামী তো এমনো রয়েছে যে, সে তার
স্ত্রীর একান্ত গোলাম। তার স্ত্রী চাইলেই সে
তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনটুকু
রক্ষা করবে। নতুবা নয়। এমনকি সে তার স্ত্রীর
একান্ত আনুগত্যের কারণে নিজ মাতা-পিতারও
অবাধ্য হয়ে যায়।
যখন আমরা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার
ভয়াবহতা ও উহার কারণসমূহ জানতে পারলাম তখন
একজন বুদ্ধিমান মু’মিন হিসেবে আমাদের একান্ত
কর্তব্য হবে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না হওয়ার
ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা এবং আত্মীয়তার বন্ধন
ছিন্ন হয় এমন কারণসমূহ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে
থাকা।
এরই পাশাপাশি আমাদেরকে আরো জানতে হবে
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার গুরুত্ব এবং উহা
রক্ষা করার নিয়ম-কানুন ও মাধ্যমসমূহ।
আত্মীয়তার বন্ধন
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা বলতে নিজ বংশ ও
শ্বশুর বংশের আত্মীয়দের প্রতি দয়া করা, তাদের
সাথে নম্র ব্যবহার করা এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট
লাঘবে যথাসাধ্য যথেষ্ট যত্নবান হওয়াকে বুঝায়।
যদিও তারা আপনার থেকে বহু দূরে অবস্থান করুক
না কেন কিংবা আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করুক
না কেন।
কীভাবে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা পাবে?
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার অনেকগুলো পথ ও
মাধ্যম রয়েছে যার কিয়দংশ নিম্নে উল্লেখ করা
হলো:
তাদের সাথে বার বার সাক্ষাৎ করা, তাদের
খবরাখবর নেওয়া, তাদের সম্পর্কে কাউকে
জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে মাঝে মধ্যে কোনো
কিছু উপঢৌকন দেওয়া, তাদেরকে যথোপযুক্ত
সম্মান করা, তাদের গরীবদেরকে সদকা-খায়রাত
এবং ধনীদের সাথে নম্র ব্যবহার করা, তাদের
বড়দেরকে সম্মান করা এবং ছোট ও দুর্বলদের
প্রতি দয়া করা, তাদেরকে আপ্যায়ন করা,
তাদেরকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা, তাদের
মধ্যে যারা আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে
তাদের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
তাদের বিবাহ-শাদীতে অংশ গ্রহণ করা, তাদের
দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকা, তাদের জন্য দো‘আ
করা, তাদের সাথে প্রশস্ত অন্তরের পরিচয়
দেওয়া, তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ
নিরসনের চেষ্টা করা তথা তাদের পারস্পরিক
সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করা, তাদের রুগ্নের সেবা
করা, তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা ইত্যাদি।
সব চাইতে বেশি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা পাবে
নিজ আত্মীয়-স্বজনকে হিদায়াতের দিকে ডাকা
এবং তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ
থেকে নিষেধ করার মাধ্যমে।
উক্ত আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার উপায়গুলো
সর্বদা ওদের সাথেই প্রযোজ্য হবে যারা
ইসলামকে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করছেন বলে
ধারণা করা হয় অথবা ইসলাম বিরোধী চাল-চলন
তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নয়।
তবে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা কাফির,
মুশরিক অথবা ইসলাম বিরোধী চাল-চলনে অভ্যস্ত
তাদেরকে পরকালে আল্লাহ তা‘আলার কঠিন
আযাবের ভয় দেখিয়ে সঠিক পথে উঠানোর
সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। পক্ষান্তরে তা যদি
কোনোভাবেই সম্ভবপর না হয় তথা তারা ধর্মীয়
উপদেশের প্রতি একেবারেই মনোযোগী না হয়
এবং আপনিও তাদের সাথে চলতে গেলে নিজের
ঈমান-আমল হারানোর ভয় থাকে তা হলে তাদের
সাথে আর চলা যাবে না। বরং তাদেরকে কোনো
ধরনের কষ্ট না দিয়ে সুন্দরভাবেই পরিত্যাগ
করবে এবং তাদের জন্য সর্বদা হিদায়াতের
দো‘আ করবে। তবে যখনই তাদেরকে ধর্মের প্রতি
দাওয়াত দেয়ার কোনো সুবর্ণ সুযোগ মিলে যায়
তবে তা একান্ত সুযোগ বলে মনে করে কাজে
লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
তবে আত্মীয়-স্বজনদেরকে ইসলামের দাওয়াত
দেয়ার ক্ষেত্রে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে
হবে যে, তাদের সাথে কখনো কোনোভাবেই
দুর্ব্যবহার করা যাবে না। বরং তাদেরকে নম্রতা,
কৌশল এবং সদুপদেশের মাধ্যমে ধর্মের দিকে
ধাবিত করতে হবে। ইসলামের দাওয়াত দিতে
গিয়ে কখনো তাদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া
যাবে না। তবে একান্তভাবে তা কখনো করতে
হলে ভালোভাবেই করবে।
অনেক দাঈদেরকেই এমন দেখা যায় যে, তার
আত্মীয়-স্বজন ও বংশীয়দের মাঝে তার কোনো
প্রভাব নেই। তা এ কারণে হতে পারে যে, তিনি
তাদেরকে ধর্মের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার
ব্যাপারে কোনো গুরুত্বই দেন না অথবা
তাদেরকে দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে সুন্দর পন্থা
অবলম্বন করেন না। তা কখনোই ঠিক নয়। বরং
তাদের সামনে বিনম্রভাবে উপস্থিত হয়ে
তাদেরকে খুব গুরুত্ব ও সম্মান দেখাবে। তা হলেই
তারা তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করবে।
তেমনিভাবে প্রত্যেক পরিবার ও বংশের কর্তব্য,
তাদের আলিমদেরকে সম্মান করা, তাঁদের কথা
শুনা, তাঁদেরকে নগণ্য মনে না করা। কারণ,
তাঁদের সম্মান তাঁদের বংশেরই সম্মান।
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ফযীলত
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ফযীলত সত্যিই
অনেক। যা দুনিয়া ও আখিরাত তথা উভয়
জাহানের কল্যাণকেই শামিল করে এবং যা
কুর‘আন-হাদীস ও বিজ্ঞজনদের কথায় পরিব্যাপ্ত।
নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু ফযীলত উল্লেখ করা
হলো:
১. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা এক জন একান্ত
আল্লাহ তা‘আলার অনুগত বুদ্ধিমানের পরিচায়ক:
আল্লাহ তা‘আলা সত্যিকার বুদ্ধিমানদের বর্ণনা
দিতে গিয়ে বলেন,
﴿ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺼِﻠُﻮﻥَ ﻣَﺎٓ ﺃَﻣَﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِۦٓ ﺃَﻥ ﻳُﻮﺻَﻞَ ﻭَﻳَﺨۡﺸَﻮۡﻥَ ﺭَﺑَّﻬُﻢۡ ﻭَﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﺳُﻮٓﺀَ
ﭐﻟۡﺤِﺴَﺎﺏِ ٢١﴾ ‏[ ﺍﻟﺮﻋﺪ : ٢١ ‏]
“আর যারা আল্লাহ তা‘আলা যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন
রাখতে আদেশ করেছেন তা অক্ষুন্ন রাখে, ভয়
করে তাদের প্রভুকে এবং ভয় করে কঠোর
হিসাবকে”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত ২১]
২. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ঈমানের একটি
বাহ্যিক পরিচয় বহন করে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ ﻓَﻠْﻴَﺼِﻞْ ﺭَﺣِﻤَﻪُ ‏»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে
বিশ্বাসী সে যেন নিজ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা
করে”। [18]
৩. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে রিযিক ও বয়সে
বরকত আসে। উপরন্তু তাদের ভালোবাসাও পাওয়া
যায়:
আনাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺍﺣَﺐَّ ﺃَﻥْ ﻳُّﺒْﺴَﻂَ ﻟَﻪُ ﻓِﻲْ ﺭِﺯْﻗِﻪِ ﻭَﻳُﻨْﺴَﺄَ ﻟَﻪُ ﻓِﻲْ ﺃَﺛَﺮِﻩِ ﻓَﻠْﻴَﺼِﻞْ ﺭَﺣِﻤَﻪُ «
“যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিযিক ও বয়স
বেড়ে যাক সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা
করে”। [19]
রিযিক ও বয়স বাড়া বলতে তা সরাসরি বেড়ে
যাওয়া অথবা তাতে বরকত হওয়াকে বুঝানো হয়।
রিযিক ও বয়সে বরকত হওয়া মানে আল্লাহ
তা‘আলা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারীকে এমন
শারীরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, কর্ম ক্ষমতা ও কর্ম
দক্ষতা দান করবেন যাতে করে সে তার সীমিত
বয়স এবং রিযিক নিয়ে এমন সকল মহান কর্মকান্ড
তার জীবনে বাস্তবায়ন করবে যা সাধারণত অন্য
কারোর পক্ষে দীর্ঘ বয়স এবং বেশি রিযিক
নিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে না।
বয়স ও রিযিক মুক্বাদ্দার তথা চূড়ান্তভাবে
নির্ধারিত। এরপরও তা সরাসরি বেড়ে যাওয়া
মানে বরাদ্দ মূলত দু’ ধরণের। প্রথম বরাদ্দ
চিরস্থায়ী তথা সর্ব চূড়ান্ত যা একমাত্র লাওহে
মাহফূজেই লিপিবদ্ধ থাকে। যা কখনো পরিবর্তন
করা হয় না। আর দ্বিতীয় বরাদ্দ হচ্ছে অস্থায়ী যা
একমাত্র ফিরিশতাদের বালামেই লিপিবদ্ধ
থাকে। যা পরিবর্তন করা যেতে পারে। আল্লাহ
তা‘আলা দায়িত্বশীল ফিরিশ্তাকে আদেশ করেন
কারোর একটি নির্দিষ্ট বয়স ও পরিমিত রিযিক
লিখতে এবং তিনি তাঁকে এও বলে দেন যে, এ
ব্যক্তি যদি তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে তা
হলে তাকে এতো এতো বয়স ও এতো এতো রিযিক
বাড়িয়ে দিবে। দায়িত্বশীল ফিরিশতা জানেন
না যে, উক্ত ব্যক্তি তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা
করবে কি করবে না এবং তার বয়স ও রিযিক
বাড়ানো হবে কি হবে না; অথচ আল্লাহ তা‘আলা
এ ব্যাপারে চূড়ান্ত জ্ঞান রাখেন এবং তা
লাওহে মাহফূযে চূড়ান্তভাবে লিপিবদ্ধও করে
রখেছেন। আর সে অনুযায়ী ফিরিশ্তার বালামে
পরিবর্তন আনা হবে।
সুতরাং কখনো কখনো কোনো কোনো কারণে
কারোর রিযিক ও বয়সে পরিবর্তন আসতে পারে
যা আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব থেকেই জানেন এবং
তা লাওহে মাহফূযে চূড়ান্তভাবে লিপিবদ্ধও
করে রখেছেন। যদিও তা দায়িত্বশীল ফিরিশ্তা
জানেন না। যদি আল্লাহ তা‘আলা কারোর জন্য
তার কামাইয়ের মাধ্যমে তার জন্য কোনো
রিযিক বরাদ্দ করে থাকেন তা হলে তিনি
তাকে কামাইয়ের উৎসাহ্ ও সুযোগ দিবেন। আর
যদি আল্লাহ তা‘আলা কারোর জন্য তার
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার মাধ্যমে তার জন্য
কোনো রিযিক বরাদ্দ করে থাকেন তা হলে
তিনি তাকে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার উৎসাহ
ও সুযোগ দিবেন। তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা
যদি কারোর জন্য তার কোনো পরিশ্রম ছাড়াই
তথা ওয়ারিশি সূত্রে কোনো রিযিক বরাদ্দ করে
থাকেন তা হলে তিনি তার কোনো নিকট
আত্মীয়কে যার থেকে সে মিরাস পাবে তাকে
যথা সময়ে মৃত্যু দিয়ে তার উক্ত রিযিকের
ব্যবস্থা করবেন।
এগুলো কখনো চূড়ান্ত লেখা বিরোধী নয়। বরং
কোনো বরাদ্দকে শুধুমাত্র কোনো কারণ
সংশ্লিষ্ট করা যা চূড়ান্তভাবে লাওহে মাহফূযে
লিপিবদ্ধ রয়েছে। যদিও তা দায়িত্বশীল
ফিরিশাকে পূর্ব থেকে না জানানোর দরুন
তিনি তা চূড়ান্তভাবে তাঁর বালামে লিখে
রাখতে পারেননি। বরং তাঁকে ব্যাপারটি
চূড়ান্তভাবে লেখার জন্য উক্ত কারণটি বাস্তবে
সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা পরিতৃপ্তি ও
তৃষ্ণা নিবারণকে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ, সন্তানকে
স্ত্রী সহবাস এবং ফসলকে বীজের সাথে সম্পৃক্ত
করেছেন।
৪. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে আল্লাহ
তা‘আলার সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺍﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖَ، ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻦْ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢُ : ﻫَﺬَﺍ
ﻣَﻘَﺎﻡُ ﺍﻟْﻌَﺎﺋِﺬِ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻄِﻴْﻌَﺔِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻌَﻢْ، ﺃَﻣَﺎ ﺗَﺮْﺿَﻴْﻦَ ﺃَﻥْ ﺃَﺻِﻞَ ﻣَﻦْ ﻭَﺻَﻠَﻚِ،
ﻭَﺃَﻗْﻄَﻊَ ﻣَﻦْ ﻗَﻄَﻌَﻚِ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ! ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻚِ‏»
“আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিকুল সৃজন শেষে
আত্মীয়তার বন্ধন (দাঁড়িয়ে) বললো: এটিই হচ্ছে
সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর
স্থান। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: হ্যাঁ, ঠিকই। তুমি
কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক
স্থাপন করবো যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন
করবে এবং আমি ওর সাথেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন
করবো যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে।
তখন সে বললোঃ আমি এ কথায় অবশ্যই রাজি আছি
হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ তা
হলে তোমার জন্য তাই হোক”। [20]
৫. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে জান্নাত অতি
নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম অতি দূরবর্তী হয়ে
যায়:
আবু আইয়ূব আন্সারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏« ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟﻨَﺒِﻲِّ e ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺩُﻟَّﻨِﻲْ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻤَﻞٍ ﺃَﻋْﻤَﻠُﻪُ ﻳُﺪْﻧِﻴْﻨِﻲْ ﻣِﻦَ ﺍﻟـْﺠَﻨَّﺔِ
ﻭَﻳُﺒَﺎﻋِﺪُﻧِﻲْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺗَﻌْﺒُﺪُ ﺍﻟﻠﻪَ، ﻻَ ﺗُﺸْﺮِﻙُ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻭَﺗُﻘِﻴْﻢُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ
ﻭَﺗُﺆْﺗِﻲْ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ، ﻭَﺗَﺼِﻞُ ﺫَﺍ ﺭَﺣِﻤِﻚَ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺩْﺑَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ e : ﺇِﻥْ ﺗَﻤَﺴَّﻚَ
ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﺑِﻪِ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْـﺠَﻨَّﺔَ‏» .
“জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন: (হে নবী!)
আপনি আমাকে এমন একটি আমল বাতলিয়ে দিন
যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং
জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করবে, তাঁর
সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। সালাত কায়েম
করবে, যাকাত দিবে ও নিজ আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা করবে। লোকটি রওয়ানা করলে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
উদ্দেশ্য করে বললেন: সে যদি আদিষ্ট বিষয়গুলো
আঁকড়ে ধরে রাখে তা হলে সে জান্নাতে
যাবে”। [21]
৬. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে গুনাহ্ মাফ হয়।
যদিও তা বড়ই হোক না কেন:
‘আব্দুল্লাহ্ ইবন উমাররাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
»ﺃَﺗَﻰ ﺭَﺟُﻞٌ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ e ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ! ﺇِﻧِّﻲْ ﺃَﺻَﺒْﺖُ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﻋَﻈِﻴْﻤًﺎ، ﻓَﻬَﻞْ ﻟِﻲْ
ﻣِﻦْ ﺗَﻮْﺑَﺔٍ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻫَﻞْ ﻟَﻚَ ﻣِﻦْ ﺃُﻡٍّ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻫَﻞْ ﻟَﻚَ ﻣِﻦْ ﺧَﺎﻟَﺔٍ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻌَﻢْ،
ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺒِﺮَّﻫَﺎ ‏»
“জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর
রাসূল! আমি একটি বড় গুনাহ্ করে ফেলেছি।
সুতরাং আমার জন্য কি তাওবাহ্ আছে? রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
জিজ্ঞাসা করেন: তোমার কি মা আছে? সে
বললো: নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে আবারো জিজ্ঞাসা করলেন:
তোমার কি খালা আছে? সে বললোঃ জি হ্যাঁ।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন: সুতরাং তার সাথেই ভালো ব্যবহার
করবে”। [22]
৭. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ইসলামের একটি
বাহ্যিক সৌন্দর্য ধারণ করে:
ইসলাম মানুষের পারস্পরিক সুসম্পর্ক রক্ষা করে।
ইসলাম অন্য মানুষের প্রতি দয়া ও কল্যাণ শিখায়।
তাই ইসলাম মানুষের পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা করতে আদেশ করে এবং তা যে কোনো
কারণে ছিন্ন করতে নিষেধ করে। আর এভাবেই
একদা একটি মুসলিম সমাজ পারস্পরিক সুসম্পর্কের
ভিত্তিতে দৃঢ়, দয়াশীল ও পরকল্যাণকামী হয়। যা
অন্য কোনো আধুনিক সমাজে দেখা যায় না।
৮. বিশ্বের প্রতিটি আসমানী ধর্মই আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষা করতে আদেশ করে এবং তা ছিন্ন
করতে নিষেধ করে।
এ থেকেই বুঝা যায় আল্লাহ তা‘আলার নিকট
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ব্যাপারটি কতটুকু
গুরুত্বপূর্ণ।
৯. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা দুনিয়ার সুনাম ও
জনমানুষের প্রশংসা পাওয়ার একটি বিশেষ
মাধ্যম।
তা শুধু মুসলিম সমাজেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা যে
কোনো কাফির সমাজেও বিশেষ গুরুত্বের
দাবিদার।
১০. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির বিশেষ গুণাবলীর পরিচায়ক।
কারণ, তা বদান্যতা, উদারতা, কৃতজ্ঞতা, বংশীয়
মর্যাদা, মানসিক স্বচ্ছতা, নিষ্ঠা ও মানুষের
প্রতি সদ্ব্যবহারের পরিচয় বহন করে।
১১. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা আত্মীয়দের
মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভালোবাসা আরো
বাড়িয়ে দেয়।
মনে হবে তারা একই সূত্রে গাঁথা। এতে করে
তাদের পারস্পরিক জীবন আরো অত্যধিক সুখী ও
আনন্দময় হবে।
১২. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির সম্মান আরো বাড়িয়ে দেয়। কারণ, কেউ
নিজ আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে
এবং তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান করলে তারাও
তাকে সম্মান করবে, যে কোনো কাজে তারা
তার একান্ত সহযোগী হবে এবং তারা তাকে
তাদের নেতৃত্বের আসনে বসাবে।
১৩. আত্মীয়দের মধ্যকার পারস্পরিক আত্মীয়তার
বন্ধন সুন্দরভাবে রক্ষা করা হলে জনসমাজে
তাদের মর্যাদা বাড়ে। অন্যদেরকে তখন তাদের
সাথে বহু হিসাব করে চলতে হয়। কেউ কখনো
তাদের উপর সামান্যটুকুও যুলুম করতে সাহস পায়
না।
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার উপায়সমূহ:
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার অনেকগুলো উপায়
যার কিয়দংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে দুনিয়া ও
আখিরাতের যে যে লাভগুলো পাওয়া যায় তা
সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, কোনো বস্ত্তর
ফলাফল ও পরিণতি জানলেই তা করার সদিচ্ছা
জন্মে এবং তা করতে মানুষ অধিক আগ্রহী হয়।
২. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার ভয়ানক পরিণতি
সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। কারণ, তা ব্যক্তি
জীবনে একদা বিশেষ চিন্তা, বিষণ্ণতা, লজ্জা ও
আফসোস বয়ে আনে। কেননা, কোনো জিনিসের
ভয়ানক পরিণতির কথা জানা থাকলেই তো তা
থেকে দূরে থাকা একদা সহজ হয়।
৩. এ ব্যাপারে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার একান্ত
সহোযোগিতা কামনা করবে। কারণ, একমাত্র
আল্লাহ তা‘আলাই বান্দাহ্’র সকল কাজ সহজ করে
দিতে পারেন।
৪. আত্মীয়-স্বজনদের দুর্ব্যবহারকে আপনি নিজ
ভালো ব্যবহার ও দয়া দিয়ে মোকাবিলা করবেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য
করে বলেন, হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমার এমন কিছু
আত্মীয়-স্বজন রয়েছে যাদের সাথে আমি
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করি ; অথচ তারা আমার
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে
ভালো ব্যবহার করি ; অথচ তারা আমার সাথে
দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে ধৈর্যের
পরিচয় দেই; অথচ তারা আমার সাথে কঠোরতা
দেখায়। অতএব, তাদের সাথে এখন আমার করণীয়
কি? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
» ﻟَﺌِﻦْ ﻛُﻨْﺖَ ﻛَﻤَﺎ ﻗُﻠْﺖَ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﺗُﺴِﻔُّﻬُﻢُ ﺍﻟْـﻤَﻞَّ، ﻭَﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻣَﻌَﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻇَﻬِﻴْﺮٌ
ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻣَﺎ ﺩُﻣْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ‏»
“তুমি যদি সত্যি কথাই বলে থাকো তা হলে তুমি
যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাইয়ে দিচ্ছো। আর
তুমি যতদিন পর্যন্ত তাদের সাথে এমন ব্যবহার
করতে থাকবে ততদিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ
থেকে তাদের ওপর তোমার জন্য একজন
সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে”। [23]
৫. আত্মীয়-স্বজনদের খুঁটিনাটি ভুলচুকের
কৈফিয়তসমূহ মেনে নিবে। কারণ, মানুষ বলতেই
তো ভুল হওয়া একান্তই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে
ইউসুফ ‘আলাইহিস সালামের রেখে যাওয়া
জ্বলন্ত আদর্শের কথা মাঝে মাঝে স্মরণ করা
যেতে পারে। কেননা, তিনি এতো কিছুর পরও
তাঁর ভাইয়েরা যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাঁর
কাছে ক্ষমা চেয়েছে তখন তিনি তাদেরকে
ক্ষমা করে দিয়েছেন। বরং তিনি তাদের ক্ষমার
জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট একান্তভাবে
ফরিয়াদও করেছেন।
৬. আত্মীয়-স্বজনরা নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা
না চাইলেও নিজের উদারতা বশত তাদেরকে
ক্ষমা করে দিবে এবং তাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ
একেবারেই ভুলে যাবে।
কারণ, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উন্নত মানসিকতা ও
পরম সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। বুদ্ধিমান
ব্যক্তি তো সেই যে নিজ আত্মীয়-স্বজনকে ক্ষমা
করে দেয় এবং তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো
একেবারেই ভুলে যায়।
৭. নিজ আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নম্রতা ও
ভদ্রতার পরিচয় দিবে। কারণ, এতে করে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনরা তাকে অধিক হারে
ভালোবাসবে এবং তার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য
সর্বদা চেষ্টা করবে।
৮. আত্মীয়-স্বজনদের খুঁটিনাটি ভুলচুক সমূহ নিজ
চোখে দেখেও তা না দেখার ভান করবে এবং
তা নিয়ে কখনো ব্যস্ত হবে না। কারণ, এটি হলো
মহান ব্যক্তিদের অনুপম চরিত্র। আর এভাবেই তো
পরস্পরের ভালোবাসা দীর্ঘ দিন টিকে থাকে
এবং পরস্পরের শত্রুতা ধীরে ধীরে লোপ পায়। আর
এটি হচ্ছে উন্নত মানসিকতা ও স্বচ্ছতার
পরিচায়ক। এতে করে মানুষের মান-সম্মান ক্রমেই
বাড়তে থাকে। কখনো তা কমে না।
আল্লামা ইবন হিব্বান রহ. বলেন, যে ব্যক্তি
মানুষের সাথে চলার ক্ষেত্রে তাদের দোষ-ত্রুটি
সমূহ এড়িয়ে চলা এবং তাদের থেকে বেশি কিছু
পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করার নীতি
অবলম্বন করে না সে স্বচ্ছ জীবনের চাইতে অস্বচ্ছ
জীবনই বেশি ভোগ করবে। মানুষের বন্ধুত্বের
চাইতে তাদের শত্রুতাই তার ভাগ্যে বেশি
জুটবে।[24]
৯. যথাসাধ্য আত্মীয়-স্বজনদের খিদমত করার
চেষ্টা করবে। চাই তা সরাসরি হোক অথবা
নিজের ধন-সম্পদ ও পদ-মর্যাদা দিয়েই হোক না
কেন।
১০. আত্মীয়-স্বজনদেরকে কখনো নিজ অনুগ্রহের
খোঁটা দিবে না। এমনকি তাদের থেকে
সমপর্যায়ের আচরণের আশাও করবে না। কারণ, ইত
োপূর্বেই বলা হয়েছে, সে ব্যক্তি আত্মীয়তার
বন্ধন রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে না যে
ব্যক্তি কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা
করলেই তবে সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন
রক্ষা করে।
১১. আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অল্পতে তুষ্ট থাকার
নীতি অবলম্বন করবে। কারণ, এ নীতি অবলম্বন
করলেই আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা অতি সহজতর
হয়। নতুবা নয়।
১২. আত্মীয়-স্বজনদের অবস্থা ও মানসিকতা
বুঝেই তাদের সাথে অনুরূপ আচরণ করবে। কারণ,
আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ তো এমনো রয়েছে
যে, তার সাথে বছরে অন্তত একবার সাক্ষাৎ এবং
মাঝে মাঝে সামান্য ফোনালাপই যথেষ্ট। আবার
কেউ কেউ তো এমনো রয়েছে যে, তার সাথে
মাঝে মাঝে কিছু হাসিখুশি কথা বললেই সে
তাতে খুব খুশি। আবার কেউ কেউ এমনো রয়েছে
যে, তার সাথে বারবার সাক্ষাৎ দিতে হয় এবং
সর্বদা তার খবরাখবর নিতে হয়। নতুবা সে রাগ
করে। অতএব আত্মীয়দের প্রত্যেকের সাথে তার
মেযাজ অনুযায়ী আচরণ করবে। তা হলেই তাদের
সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা অতি সহজেই
সম্ভবপর হবে।
১৩. আত্মীয়দের সাথে আপ্যায়নে বাড়াবাড়ি
করবে না।
কারণ, আত্মীয়-স্বজনরা যখন দেখবে আপনি
তাদের আপ্যায়নে বাড়াবাড়ি করছেন না তখন
তারা বারবার আপনার সাথে সাক্ষাতে উৎসাহী
হবে। আর যখন তারা দেখবে আপনি তাদের
আপ্যায়নে বাড়াবাড়ি করছেন তখন তারা আপনার
সাথে বারবার সাক্ষাতে সঙ্কোচ বোধ করবে এ
মনে করে যে, তারা আপনার সাথে বারবার
সাক্ষাৎ করে আপনাকে বিরক্ত করছে না তো?!
১৪. কোনো কারণে আত্মীয়-স্বজনদের কাউকে
একান্ত তিরস্কার করতে হলে তা হালকাভাবে
করবে। কারণ, সত্যিকারার্থে ভদ্র ব্যক্তি সে, যে
মানুষের অধিকারগুলো পুরোপুরিভাবে আদায় করে
এবং নিজের অধিকারগুলো প্রয়োজন বোধে
ছেড়ে দেয়। যাতে করে আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে
পাস্পরিক সম্প্রীতি বজায় থাকে। তবে নিজের
অধিকার খর্ব হওয়ার দরুন কাউকে একান্ত
তিরস্কার করতে হলেও তা হালকাভাবে করবে।
১৫. আত্মীয়-স্বজনদের তিরস্কার সহ্য করবে এবং
তার একটি সুন্দর ব্যাখ্যাও বের করবে। এটি হচ্ছে
সত্যিকারার্থে বিশিষ্ট গুণীজনদেরই চরিত্র।
যাঁদের মধ্যে মানবিক যাবতীয় গুণাবলী বিদ্যমান
এবং যারা শীর্ষ স্থানীয় চরিত্রবান তারাই তো
সমাজের অত্যন্ত ধৈর্যশীল ব্যক্তিবর্গই হয়ে
থাকেন। তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন তাদেরকে
তিরস্কার করলে তারা মনে করেন, তাঁদের উক্ত
আত্মীয় সত্যিই তাঁদেরকে অত্যধিক
ভালোবাসেন এবং তাদের বারবার আসা-যাওয়া
ও সাক্ষাৎ তিনি অবশ্যই কামনা করেন। তাই
তারা তাঁদের উক্ত আত্মীয়ের নিকট তাঁদের কৃত
অপরাধ স্বীকার করেন। কারণ, দুনিয়াতে কিছু
লোক তো এমনো রয়েছে যে, তারা অন্যদেরকে
খুবই ভালোবাসেন ঠিকই। তবে তারা অন্যের
কোনো দোষ-ত্রুটি দেখলেই তাকে খুবই তিরস্কার
করে।
১৬. আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যে কোনো ধরণের
হাসি-ঠাট্টা করতে তাদের সার্বিক অবস্থার
প্রতি খেয়াল রাখবে এবং তাদের মধ্যে যারা
হাসি-ঠাট্টা মোটেই পছন্দ করে না তাদের
সাথে তা করবে না।
১৭. আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কোনোভাবেই
বাগ্বিতণ্ডা ও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে না।
কারণ, তা ধীরে ধীরে পরস্পরের মাঝে বিদ্বেষ
ও শত্রুতা সৃষ্টি করে। বরং তাদের সাথে এমন সকল
আচরণ করা থেকে দূরে থাকবে যা সাধারণত
পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।
১৮. কখনো নিজ আত্মীয়-স্বজনদের কারোর সাথে
কোনো ধরণের ঝগড়া-বিবাদ ঘটে গেলে
যথাসাধ্য আকর্ষণীয় উপঢৌকনের মাধ্যমে
নিজেদের মধ্যকার পূর্বের ভাব ও সম্পর্ক
ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। কারণ, হাদিয়া ও
উপঢৌকন এমন একটি জিনিস যা পরস্পরের মধ্যে
ভালোবাসা সৃষ্টি করে এবং পরস্পরের মধ্যকার
ভুল ধারণাসমূহ নিরসন করে।
১৯. সর্বদা এ কথা মনে রাখবে যে, আত্মীয়-
স্বজনরা হচ্ছে নিজের শরীরের একটি অংশের
ন্যায়।
সুতরাং তাদেরকে পরিত্যাগ করা কখনোই
সম্ভবপর নয়। বরং তাদের সম্মানই নিজের সম্মান
এবং তাদের অসম্মানই নিজের অসম্মান। আরবরা
বলে থাকে,
‏« ﺍﻧْﻔُﻚَ ﻣِﻨْﻚَ ﻭَﺇِﻥْ ﺫَﻥَّ‏»
“নাক তো তোমারই যদিও তা থেকে লাগাতার
সিন বের হয়”।
২০. সর্বদা এ কথা মনে রাখবে যে, আত্মীয়-
স্বজনদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা সত্যিই একটি
নিকৃষ্ট কাজ।
কেউ এতে নিজকে লাভবান মনে করলেও মূলতঃ
সে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কেউ এতে নিজকে বিজয়ী
মনে করলেও মূলতঃ সে পরাজয়ী।
২১. বিয়ে-শাদী, আক্বীকা ইত্যাদি তথা যে
কোনো অনুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজনদেরকে দাওয়াত
দেওয়ার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে। এ
জন্য সহজ উপায় হচ্ছে, প্রত্যেকেই নিজের সকল
আত্মীয়-স্বজনদের একটি লিস্ট সংরক্ষণ করবে।
যাতে থাকবে তাদের নাম ও টেলিফোন কিংবা
মোবাইল নম্বর। আর যখনই কোনো অনুষ্ঠান করার
চিন্তা করবে তখনই উক্ত লিস্ট খুলে সবাইকে
যথাসাধ্য দাওয়াত দেয়ার চেষ্টা করবে। চাই তা
সরাসরি হোক অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে। যদি
কোনো আত্মীয় যে কোনোভাবে উক্ত দাওয়াত
থেকে বাদ পড়ে যায় তা হলে অতি দ্রুত নিজের
ভুল স্বীকার করে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে
এবং তাকে যে কোনোভাবে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা
করবে।
২২. আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে কোনো ধরনের
সমস্যা ঘটে গেলে তাদের মধ্যে যাকে আল্লাহ
তা‘আলা সবার ভালোবাসা কুড়ানোর সুযোগ
দিয়েছেন তাকে উক্ত সমস্যা দূর করার জন্য দ্রুত
এগিয়ে যেতে হবে। তা না করলে একদা উক্ত
সমস্যা বড়ো থেকে বড়ো হয়ে সবাইকেই জড়িয়ে
ফেলবে।
২৩. নিজেদের মধ্যকার কেউ মারা গেলে তার
রেখে যাওয়া সম্পত্তি দ্রুত ওয়ারিশদের মাঝে
বন্টন করে দিবে।
যেন কারোর ওয়ারিশি সম্পত্তি নিয়ে ওয়ারিশ
আত্মীয়-স্বজনদের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ
সৃষ্টি না হয়।
২৪. আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যকার যৌথ ব্যবসা-
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবাই নিজেদের মধ্যে
সর্বদা একতা ও সমঝোতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব
দিবে। আমানতদারিতা, সত্যবাদিতা, পরস্পর দয়া,
ভালোবাসা ও পরামর্শ এবং অন্যকে নিজের উপর
অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতি সর্বদা যত্নবান
থাকবে। প্রত্যেকে অন্যের জন্য তাই
ভালোবাসবে যা নিজের জন্য ভালোবাসে এবং
প্রত্যেকে নিজের অধিকারের পাশাপাশি
অন্যের অধিকারের প্রতিও যত্নবান হবে।
কখনো কোনো সমস্যা অনুভূত হলে তা অত্যধিক
সুস্পষ্টতার সাথে বিশেষ পর্যালোচনার মাধ্যমে
সমাধান করার চেষ্টা করবে। প্রত্যেকেই নিষ্ঠার
সাথে কাজ করার চেষ্টা করবে। অন্যের কাজের
প্রতি বেশি দৃষ্টি দিবে না। যে কোনো
ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত
হলে তা লিখে রাখার চেষ্টা করবে। এভাবে
চলতে থাকলে ইন্শাআল্লাহ তাদের মধ্যে আল্লাহ
তা‘আলার পক্ষ থেকে রহমত ও বরকত নাযিল হবে
এবং নিজেদের মধ্যকার ভালোবাসা দীর্ঘ দিন
অটুট থাকবে।
২৫. মাসে, ছয় মাসে অথবা বছরে অন্তত একবার
হলেও আত্মীয়-স্বজনরা সবাই কোথাও না কোথাও
একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করবে। এভাবে সবাই
একত্রিত হলে পরস্পর পরিচিতি, সহযোগিতা ও
ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে উক্ত
বৈঠকগুলোর নেতৃতে যদি থাকে জ্ঞানী ও
বুদ্ধিমানরা।
২৬. আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে পারস্পরিক
সহযোগিতার জন্য নিজেদের মধ্যে সর্বদা একটি
ফান্ড রাখা উচিত। তাতে সবার পক্ষ থেকে
নির্দিষ্ট হারে মাসিক চাঁদা, নিজেদের মধ্যকার
ধনীদের বিশেষ দান-সাদাকা সংগ্রহ করা যেতে
পারে। আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কোনো সমস্যায়
পড়লে তা বিশেষভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে
সে ব্যাপারে তাকে যথাযোগ্য সহযোগিতা
করবে। এতে করে পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা
জন্মিবে ও বৃদ্ধি পাবে।
২৭. আত্মীয়-স্বজনদের একটি ফোন বুক তৈরি করে
তা কপি করে সবার মাঝে বিতরণ করবে। উক্ত
ফোন বুকটি সর্বদা নিজ আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণ
করিয়ে দিবে। এতে করে ফোনের মাধ্যমে
আত্মীয়-স্বজনদের খবরাখবর নেওয়া এবং
তাদেরকে বিশেষ অনুষ্ঠানাদিতে দাওয়াত
দেয়া সহজ হবে। আত্মীয়তার বন্ধনও রক্ষা পাবে।
২৮. আত্মীয়-স্বজনদের যে কাউকে বার বার
বিরক্ত করা ও ঝামেলায় ফেলা থেকে বিরত
থাকবে। কাউকে তার সাধ্যাতীত কিছু করতে
বার বার বিরক্ত করবে না। বিশেষ করে আত্মীয়-
স্বজনদের কেউ যদি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা ধনী
ব্যক্তি হোন তা হলে তাদেরকে এমন কাজ করতে
চাপ সৃষ্টি করবে না যা তাদের সাধ্যের বাইরে
অথবা কষ্টসাধ্য। যদি তারা কোনো কারণে
কারোর কোনো আবদার রক্ষা করতে না পারে তা
হলে তাঁদেরকে কোনো তিরস্কার করবে না। বরং
তাদেরকে এ ক্ষেত্রে অপারগ মনে করবে।
২৯. আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে পারস্পরিক পরামর্শ
আদান-প্রদানের সুব্যবস্থা থাকা উচিত। বরং
তাদের মাঝে একটি স্থায়ী মজলিসে শুরা
থাকলে তা আরো ভালো। যাতে করে কারোর
কোনো বড়ো সমস্যা দেখা দিলে তাদের উপযুক্ত
পরামর্শ নেয়া যায় এবং এমন এক সিদ্ধান্তে
উপনীত হওয়া যায় যাতে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট
থাকবেন। উপরন্তু আত্মীয়-স্বজনরাও সবাই খুশি
থাকবে। তবে মজলিসে শুরার সদস্যরা এমন হতে
হবে যাদের রয়েছে অত্যধিক দূরদর্শিতা,
বিচক্ষণতা, ধৈর্য ও যথা সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত
নেওয়ার দুর্বার ক্ষমতা।
৩০. তবে উপরোক্ত সকল বিষয়ে এ কথার খেয়াল
রাখবে যে, যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক হয় একমাত্র
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং পারস্পরিক
সহযোগিতা হয় পরোকল্যাণ ও আল্লাহভীরুতা র
ভিত্তিতে। যেন তা জাহেলী যুগের বংশ ও
আত্মীয় প্রেমের ভিত্তিতে না হয়।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে এ পরম
আত্মীয়তার বন্ধনটুকু ছিন্ন করা থেকে সর্বদা
বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!
ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻧَﺒِﻴِّﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَّﻋَﻠَﻰ ﺁﻟِﻪِ ﻭَﺻَﺤْﺒِﻪِ ﺃَﺟْﻤَﻌِﻴْﻦَ
মানুষ মাত্রই তার কিছু না কিছু আত্মীয়-স্বজন
অবশ্যই রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে
তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠাই নিতান্ত স্বাভাবিক।
পক্ষান্তরে দুনিয়ার কোনো ক্ষুদ্র স্বার্থকে
কেন্দ্র করে কখনো কখনো তাদের পরস্পরের
মাঝে দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ লেগে যাওয়াও অত্যন্ত
স্বাভাবিক। আত্মীয়তার মাঝে দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ এবং
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার ধরণসমূহ ও অন্যান্য
নব উদ্ভাবিত ধরণ সমষ্টির মূলোৎপাটনের জন্যই
লেখকের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ২৫৫৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯০৯;
আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৯৬; আব্দুর রায্যাক,
হাদীস নং ২০২৩৮; বায়হাকী, হাদীস নং ১২৯৯৭।
[2] আহমদ, হাদীস নং ১৯৫৮৭; হাকিম, হাদীস নং
৭২৩৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫৩৪৬।
[3] আহমদ, হাদীস নং ১০২৭৭।
[4] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯০২; তিরমিযী, হাদীস
নং ২৫১১; ইবন মাজাহ্, হাদীস নং ৪২৮৬; ইবন
হিব্বান, হাদীস নং ৪৫৫, ৪৫৬; বায্যার, হাদীস
নং ৩৬৯৩; আহমাদ, হাদীস নং ২০৩৯০, ২০৩৯৬,
২০৪১৪।
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩০, ৫৯৮৭; সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৪।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯১; আবু দাউদ,
হাদীস নং ১৬৯৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯০৮;
বায়হাকী, হাদীস নং ১২৯৯৮।
[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৮।
[8] ইবন খুযাইমাহ্, হাদীস নং ২৩৮৬; বায়হাকী,
হাদীস নং ১৩০০২; দা’রামী, হাদীস নং ১৬৭৯;
ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস নং ৩১২৬, ৩৯২৩,
৪০৫১; আওসাত্ব, হাদীস নং ৩২৭৯; আহমাদ,
হাদীস নং ১৫৩৫৫, ২৩৫৭৭।
[9] আহমাদ, হাদীস নং ১৭৩৭২, ১৭৪৮৮; হাকিম,
হাদীস নং ৭২৮৫; বায়হাকী, হাদীস নং ২০৮৮০;
ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস নং ৭৩৯, ৭৪০;
আওসাত্ব, হাদীস নং ৫৫৬৭।
[10] তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৭৯।
[11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৬৬; সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ১০০০।
[12] সহীহ বুখারী, ২৫৯২, ২৫৯৪; সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ৯৯৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৯০।
[13] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৩।
[14] বায্যার, হাদীস নং ১৮৭৭।
[15] উয়ূনুল-আখবার: ৩/৮৮; ইহয়াউ উলূমিদ্দীন:
২/২১৬।
[16] উয়ূনুল-আখ্বার ৩/৮৮।
[17] বাহজাতুল-মাজালিস ৩/৫৬৯।
[18] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৩৮।
[19] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৬৭, ৫৯৮৫, ৫৯৮৬;
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৭; আবু দাউদ,
হাদীস নং ১৬৯৩।
[20] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩০, ৫৯৮৭; সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৪।
[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৯৬, ৫৯৮২, ৫৯৮৩;
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩।
[22] তিরমিযী, হাদীস নং ১৯০৪।
[23] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৮।
[24] রাওযাতুল-উক্বালা: ৭২।
________________________________________________________
_______________________________
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয
আল-মাদানী
সম্পাদনা: ড. মুহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ

No comments:

Post a Comment

Translate