Tuesday, March 2, 2021

পুরো সম্পদের বিনিময় জান্নাত কিনেছেন আবু দাহদাহ (রা)


 মদিনার আনসারী গোত্রের এক এতিম কিশোরের একটি খেজুর বাগান ছিল। বাগানটি অন্য লোকের বাগানের সঙ্গে লাগানো ছিল। তার নাম আবু লুবাবা। এতিম ছেলেটি তার বাগানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের চিন্তা করল। যাতে প্রত্যেকের অংশ পৃথক হয়ে যায়। প্রাসের দিতে গিয়ে সে দেখল, প্রতিবেশী আবুল বাবার বাগানের একটি খেজুর গাছ তার সীমানার মধ্যে পড়ে আছে; যে কারণে তার প্রাচীরটি সোজা করে নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবেশী আবুল বাবার কাছে গিয়ে ছেলেটি বলল, আপনার বাগানে অনেক খেজুর গাছ আছে। এই গাছটি আমাকে দিলে আপনার কোন সমস্যা হবে না। গাছটি আপনার; কিন্তু তা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

গাছটি আমার হলে দেয়াল সোজা করে উত্তোলন করা যাবে। তাই আপনি আমাকে কাজটি দিয়ে দিন। সে বলল, আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে খেজুর গাছ দিতে পারব না। ছেলেটি বলল, তাহলে খেজুর গাছ টি আমার কাছে বিক্রি করুন।

আবু লুবাবা উত্তর দিলো, আমি এর কিছুই করতে পারবোনা। কোন উপায় না পেয়ে এতিম ছেলেটি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা জানালো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু লুবাবাকে ডাকলেন। আবু লুবাবা মসজিদে নববীতে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই খেজুর গাছ টি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি অথবা এতিম ছেলেটিকে দান করতে বললেন।

আবু লুবাবা বলল আমি কোনভাবেই খেজুর গাছ টি তাকে দিব না। রাসূল (সাঃ) কয়েক বার বলার পরেও যখন সে রাজি হলেন না; তখন রাসূল সাঃ আবু লুবাবা কে বললেন, তোমার এতিম ভাইকে ওই খেজুর গাছ টি দিয়ে দাও। আমি তোমার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছের জিম্মাদার হবো। আবু লুবাবা এই ঘোষণাটি শোনার পরও খেজুর গাছ টি দিতে অস্বীকার করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ হয়ে গেলেন।

সাহাবাগণ সেই মজলিসের কথোপকথন নিশ্চুপ শুনছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আবু দাহদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। মদিনায় তার ৬০০ সুস্বাদু খেজুর গাছের খুবই প্রসিদ্ধ একটি বাগান ছিল এবং সে বাগানে কয়েকটি ঘর এবং কয়েকটি পানির কূপ ছিল। সেখানে তিনি পরিবার সহ বসবাস করতেন।

হযরত আবু দাহদাহ (রাঃ) বিশ্ব নবীর কথা শুনছিলেন। তিনি ভাবলেন, এই দুনিয়া কি? পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের কাছে এ দুনিয়া তুচ্ছ। বরং যদি জান্নাতী একটি  খেজুর গাছ পাওয়া যায় তাহলে আর কি চাই! তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি জান্নাতে যে খেজুর গাছের কথা বললেন, এটা কি শুধু আবু লুবাদার জন্যই? আমি যদি ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ওই খেজুর গাছ বিক্রয় করে এতিম ছেলেটিকে দেয়ার ব্যবস্থা করি, তাহলে আমিও কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তোমার জন্য জান্নাতে খেজুর গাছ থাকবে। আবু দাহদাহ ওই ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বললেন- হে আবু লুবাবা শোনো! তুমি আমার বাগান সম্পর্কে অবগত আছ, যেখানে ৬০০ খেজুর গাছ আছে, সঙ্গে ঘর ও কয়েকটি কূপও আছে! আবু লুবাবা উত্তর দিলো, মদিনাতে এমন কে আছে, যে আপনার বাগান সম্পর্কে জানে না? তিনি বললেন, তাহলে তুমি আমার ঐ সম্পূর্ণ বাগান গ্রহণ করে তোমার একটি খেজুর গাছ আমাকে দিয়ে দাও। আবু লুবাবা তার এ কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে আবু দাহদাহ (রাঃ) দিকে তাকাল। অতঃপর লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা লক্ষ্য করো আবু দাহদাহ কি বলছে? লোকজন যখন আবু দাহদাহর প্রস্তাবের সাক্ষী হলো তখন সে বলল, হ্যাঁ আমি তোমার খেজুর বাগান গ্রহণ করলাম এবং ঐ খেজুর গাছ টি তোমাকে দিয়ে দিলাম। আবু দাহদাহ ঐ খেজুর গাছের মালিক হয়ে গেলেন এবং এতিম ছেলেটিকে বললেন, এখন থেকে ঐ খেজুর গাছ টি তোমার। আমি তোমাকে উপহার দিলাম। এখন তোমার বাগানের প্রাচীর সোজা করতে আর কোন বাধা নেই। আবু দাহদাহ (রাঃ) বিশ্ব নবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হলাম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আবু দাহদাহর জন্য জান্নাতে এখন কত বিশাল বিশাল খেজুর বাগান অপেক্ষা করছে! হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আল বলেন, এই কথারি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক, দুই বা তিনবার নয়; বরং খুশি হয়ে বারবার বলতে থাকেন। অবশেষে আবু দাহদাহ (রাঃ) জান্নাতের বাগানের সুসংবাদ নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলেন। এরপর নিজের বাগানের দরজায় গিয়ে স্ত্রীকে ডাক দিলেন-হে উম্মে দাহদাহ! উম্মে দাহদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা অত্যন্ত অবাক হলেন যে, আজকে আবু দাহদাহ বাগানের বাইরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভিতরে আসছেন না কেন? আবারো আওয়াজ আসলো! উম্মে দাহদাহ! বাচ্চাদেরকে নিয়ে এবাদন থেকে বের হয়ে আসো। উম্মে দাহদাহ বললেন, আমি বাগান থেকে বের হয়ে আসবো? আবু দাহদাহ বললেন, হ্যাঁ আমিয়ে বাগান বিক্রি করে দিয়েছি।উম্মে দাহদাহ বললেন, আপনি কার নিকট বিক্রি করেছেন? কত দাম দিয়ে বিক্রি করলেন? আবু দাহদাহ বললেন, আমি জান্নাতে একটি খেজুর গাছের বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিয়েছি। উম্মে দাহদাহ বললেন, আল্লাহু আকবার, হে আবু দাহদাহ! আপনি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা করেছেন। জান্নাতের একটি বৃক্ষ, যার নিচে (একজন) অশ্বারোহী একশত বছর পর্যন্ত চলার পরেও তার ছায়া শেষ হবে না(বুখারী) কি সৌভাগ্য আমাদের, আমরা জান্নাতে একটি (খেজুর) গাছ পাবো ( মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরেকে হাকিম)

সুবাহানাল্লাহ

★জান্নাতবাসীরা হাসি-তামাশা লিপ্ত থাকবে। (সূরা ইয়াসিন আয়াত:৫৫-৫৮)

★ সঙ্গে তারা পালঙ্কে হেলান দিয়ে থাকবে। (সূরা ইয়াসিন আয়াত:৫৫-৫৮)

★সেখানে তাদের জন্য ফল-ফলাদি ও তারা যা চাইবে তা থাকবে। (সূরা ইয়াসিন আয়াত:৫৫-৫৮)

★ দয়াময় রবের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সালাম বর্ষিত হবে। (সূরা ইয়াসিন আয়াত:৫৫-৫৮)

আবু দাহদাহ বাগানের পত্রপল্লবিত বৃক্ষরাজি, ফল-ফলাদি ও সুশীতল ছায়ায় ঘেরা জীবন ফেলে রেখে কষ্টকর সঙ্কীর্ণ জীবন-যাপন গ্রহণ করলেন। আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা পরিহার করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হন, বাকি জীবন আল্লাহর আনুগত্যে কাটিয়ে দেন। জান্নাতের স্বপ্ন যে মানুষ দেখেছে, দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট তো তার কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য। (সহি বুখারী ও সহীহ মুসলিম অবলম্বনে)






No comments:

Post a Comment

Translate