Saturday, March 27, 2021

হালাল ও হারাম

 শুরুর কথা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে তা-কিয়ামত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবাদের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।

মানব সমাজে ধর্মীয় জ্ঞানশূন্যতার দরুন অনেক ধরনের হঠকারিতাই বিরাজমান। তম্মধ্যে লঘু পাপকে গুরু মনে করা এবং গুরু পাপকে লঘু মনে করা অন্যতম। অনেক তো এমনো রয়েছেন যে, যে কাজ পাপের নয় সে কাজকেও মহাপাপ বলে গণ্য করেন। অন্য দিকে মহাপাপকে কিচ্ছুই জ্ঞান করেন না। ঠিক এরই বিপরীতে কেউ কেউ সামান্য সাওয়াবের ব্যাপারকে ফরযের চাইতেও বেশি মূল্য দিয়ে থাকেন; অথচ অন্য দিকে তিনি ফরযেরই কোন ধার ধারেন না। যদ্দরুন শরীয়তের দৃষ্টিকোণে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সাওয়াবের কাজ এমনো থেকে যাচ্ছে যে, আজো পর্যন্ত যা কোন না কোন মুসলিম সমাজে কারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি। অনেক তো এমনো রয়েছেন যে, কোন কোন গুনাহ্’র কাজকে তিনি মহা সাওয়াবের কাজ মনে করছেন এবং সেগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষভাবে কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ দয়াপরবশ হয়ে সেগুলোর সঠিক রূপ ধরিয়ে দিতে চাইলে সে উক্ত সমাজের শয়তান প্রকৃতির মানুষ কর্তৃক ইসলামের শত্রু, গাদ্দার, বেঈমান, কাফির, মুনাফিক, মতলববাজ, বেয়াদব, বুযুর্গদের খাঁটি দুশমন ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত হন। সুতরাং সঠিক বিবেচনার জন্য গুনাহ্’র পর্যায় ও স্তরগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করা আমাদের জন্য একেবারেই অত্যাবশ্যক এবং উক্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত উহার বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ‘আল্লামা নাসিরুদ্দীন আল্বানী সাহেবের হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।

শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোন কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ্ তা‘আলা সবার সহায় হোন।

এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোন জনের যে কোন ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কোতাহী করছিনে। ইহপরকালে আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেককে তার আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ আশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাববাল ‘আলামীন।

সর্বশেষে জনাব আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পান্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম প্রতিদান দিন, তাঁর জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এবং পরিশেষে তাঁকে জান্নাত দিয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।

লেখক

 গ্রন্থ ভূমিকা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

إِنَّ الْـحَمْدَ للهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ.

নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য। আমরা সবাই তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁরই নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও খারাপ আমল থেকে। যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা হিদায়াত দিবেন তাকে পথভ্রষ্ট করার আর কেউ নেই এবং যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করবেন তাকে হিদায়াত দেয়ারও আর কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তা‘আলার বান্দাহ্ ও একমাত্র তাঁরই প্রেরিত রাসূল।

আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষের উপর যা যা ফরয করে দিয়েছেন তা অবশ্যই করতে হবে এবং যা যা হারাম করে দিয়েছেন তা অবশ্যই ছাড়তে হবে।

আবূ সা’লাবাহ্ খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيِّعُوْهَا، وَحَرَّمَ حُرُمَاتٍ فَلَا تَنْتَهِكُوْهَا، وَحَدَّ حُدُوْدًا فَلَا تَعْتَدُوْهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ غَيْرِ نِسْيَانٍ، فَلَا تَبْحَثُوْا عَنْهَا.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা কিছু কাজ ফরয তথা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন যার প্রতি তোমরা কখনোই অবহেলা করবে না এবং আরো কিছু কাজ তিনি হারাম করে দিয়েছেন যা তোমরা কখনোই করতে যাবে না, আরো কিছু সীমা (তা ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ্ যাই হোক না কেন) তিনি তোমাদেরকে বাতলিয়ে দিয়েছেন যা তোমরা কখনোই অতিক্রম করতে যাবে না। তেমনিভাবে তিনি কিছু ব্যাপারে চুপ থেকেছেন (তা ইচ্ছে করেই) ভুলে নয়। সুতরাং তোমরা তা খুঁজতে যাবে না’’।

(দারাক্বুত্বনী/ আর্-রাযা’ ৪২; ত্বাবারানী/ কাবীর ৫৮৯; বায়হাক্বী ১৯৫০৯)

অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা যা যা হালাল করে দিয়েছেন তা হালাল বলে মনে করতেই হবে এবং যা যা তিনি হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম মনে করে অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا أَحَلَّ اللهُ فِيْ كِتَابِهِ فَهُوَ حَلَالٌ، وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ، وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَةَ، فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا، ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: «وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا».

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে যা যা হালাল করে দিয়েছেন তাই হালাল এবং যা যা হারাম করে দিয়েছেন তাই হারাম। আর যে সম্পর্কে তিনি চুপ থেকেছেন তা মানুষের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিশেষ ছাড় (যা করাও যাবে ছাড়াও যাবে, তা নিয়ে তেমন কোন চিন্তাও করতে হবে না)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে সেগুলোকে সেভাবেই গ্রহণ করো। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা ভুলে যাওয়ার নন। অতঃপর তিনি উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন যার অর্থ: তোমার প্রভু কখনো ভুলে যাওয়ার নন’’। (হা’কিম ২/৩৭৫)

হারাম কাজগুলোকেও কুর‘আনের ভাষায় ‘‘’হুদূদ’’ বলা হয় যা করা তো দূরের কথা বরং তার নিকটবর্তী হওয়াও নিষিদ্ধ।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَا»

‘‘এগুলো আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে বাতলানো সীমা। অতএব তোমরা সেগুলোর নিকটেও যাবে না’’। (বাক্বারাহ : ১৮৭)

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার বাতলানো সীমা অতিক্রম করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নামের হুমকি দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا، وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ».

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং আল্লাহ্’র দেয়া সীমা অতিক্রম করে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। তম্মধ্যে সে সদা সর্বদা অবস্থান করবে এবং তাতে তার জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে’’।

(নিসা’ : ১৪)

এ কথা সবারই মনে রাখতে হবে যে, নিষিদ্ধ কাজগুলো একেবারেই বর্জনীয়। তাতে কোন ছাড় নেই। তবে আদেশগুলো যথাসাধ্য পালনীয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوْهُ.

‘‘যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ করি তখন তোমরা তা সাধ্যানুযায়ী করতে চেষ্টা করবে। তবে যখন আমি তোমাদেরকে কোন কিছু বর্জন করতে বলি তখন তোমরা তা অবশ্যই বর্জন করবে’’।

(মুসলিম ১৩৩৭)

যারা কবীরা গুনাহ্ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئٰتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا».

‘‘তোমরা যদি সকল মহাপাপ থেকে বিরত থাকো যা হতে তোমাদেরকে (কঠিনভাবে) বারণ করা হয়েছে তাহলে আমি তোমাদের সকল (ছোট) পাপ ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো খুব সম্মানজনক স্থান তথা জান্নাতে’’। (নিসা’ : ৩১)

আর তা এ কারণেই যে, ছোট পাপগুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমার নামায এবং রামাযানের রোযার মাধ্যমেই ক্ষমা হয়ে যায়।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الصَّلَوَاتُ الْـخَمْسُ، وَالْـجُمْعَةُ إِلَى الْـجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ لِـمَا بَيْنَهُنَّ، إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ.

‘‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে অন্য জুমা, এক রামাযান থেকে অন্য রামাযান এগুলোর মধ্যকার সকল ছোট গুনাহ্’র ক্ষমা বা কাফ্ফারাহ্ হয়ে যায় যখন কবীরা গুনাহ্ থেকে কেউ সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায়’’। (মুসলিম ২৩৩)

সুতরাং কবীরা গুনাহ্ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং এরই পাশাপাশি হারাম কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য। তবে কবীরা গুনাহ্ ও হারাম সম্পর্কে পূর্বের কোন ধারণা না থাকলে তা থেকে বাঁচা কারোর পক্ষে কখনোই সম্ভবপর হবে না। তাই সর্বপ্রথম সে সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করতে হবে এবং তারপরই আমল। নতুবা আপনি না জেনেই তা করে ফেলবেন। অথচ সে কাজটি করার আপনার আদৌ ইচ্ছে ছিলো না।

এ কারণেই হুযাইফাহ্ (রাঃ) একদা বলেছিলেন:

كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ  عَنِ الْـخَيْرِ، وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُّدْرِكَنِيْ.

‘‘সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাভজনক বস্ত্ত সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করতো। আর আমি তাঁকে শুধু ক্ষতিকর বস্ত্ত সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করতাম যাতে আমি না জেনেই সে ক্ষতিকর বস্ত্ততে লিপ্ত না হই’’।

(বুখারী ৩৬০৬; মুসলিম ১৮৪৭)

বাস্তবে দেখা যায়, কিছু সংখ্যক প্রবৃত্তিপ্রেমী জ্ঞানশূন্য ব্যক্তিরা যখন কোন নসীহতকারী ব্যক্তির মুখ থেকে এ কথা শুনে যে, অমুক কাজ কবীরা গুনাহ্ অথবা অমুক বস্ত্ত হারাম তখন সে বিরক্তির সুরে বলে থাকে: সবই তো হারাম। আপনারা আর আমাদের জন্য এমন কি রাখলেন যা হারাম করেননি। আপনারা তো আমাদেরকে বিরক্ত করেই ছাড়লেন। সকল স্বাদকে বিস্বাদ করে দিলেন। জীবনকে একটু মনের মতো করে উপভোগ করতে দিচ্ছেন না। আপনাদের কাছে শুধু হারামই হারাম। অথচ ইসলাম একেবারেই সহজ। আর আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই ক্ষমাশীল।

বান্দাহ্ হিসেবে আমাদের সকলকে এ কথা অবশ্যই মানতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা যাই চান তাই বান্দাহ্’র জন্য বিধান করেন। তাতে কারোর কোন কিছু বলার নেই। তিনি ভালোমন্দ সব কিছুই জানেন। তিনি হলেন হিকমত ওয়ালা। কখন এবং কার জন্য তিনি কি বিধান করবেন তা তিনি ভালোভালেই জানেন। তিনি যা চান হালাল করেন আর যা চান হারাম করেন। বান্দাহ্ হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সন্তুষ্টচিত্তে সেগুলো মেনে চলা।

আল্লাহ্ তা‘আলার সকল বিধি-বিধান সত্য ও ইনসাফ ভিত্তিক। তাতে কারোর প্রতি কোন যুলুম নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلًا، لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ، وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ».

‘‘তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্যতা ও ইনসাফে পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তনকারী কেউই নেই। তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন’’।

(আন্‘আম : ১১৫)

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে হালাল ও হারামের একটি সহজ ও সরল সূত্র বাতলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَيُحِلُّ لَـهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْـخَبَائِثَ».

‘‘সে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য সকল পবিত্র বস্ত্ত হালাল করে দেয় এবং সকল অপবিত্র ও খারাপ বস্ত্ত তাদের উপর হারাম করে দেয়’’।

(আ’রাফ : ১৫৭)

সুতরাং সকল পবিত্র বস্ত্ত হালাল এবং সকল অপবিত্র বস্ত্ত হারাম। আর হালাল ও হারাম নির্ধারণের অধিকার একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই। অতএব কেউ নিজের জন্য উক্ত অধিকার দাবি করলে অথবা সে অধিকার আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য রয়েছে বলে স্বীকার করলে সে কাফির ও মুশ্রিক হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَمْ لَـهُمْ شُرَكَآءُ شَرَعُوْا لَـهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَـمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ».

‘‘তাদের কি (আল্লাহ্ ভিন্ন) এমন কতেক শরীক বা দেবতা রয়েছে? যারা তাদের জন্য এমন কোন ধর্মীয় বিধান রচনা করেছে যার অনুমতি আল্লাহ্ তা‘আলা দেননি’’। (শূরা : ২১)

তেমনিভাবে কুর‘আন ও হাদীসের সঠিক জ্ঞান ছাড়া হালাল ও হারামের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেয়া অথবা সে ব্যাপারে কোন আলোচনা করাও কারোর জন্য জায়িয নয়। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে এ জাতীয় কর্মের বিশেষ নিন্দা করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَقُوْلُوْا لِـمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ».

‘‘তোমরা নিজেদের কথার উপর ভিত্তি করে মিথ্যা বলো না যে, এটি হালাল ও এটি হারাম। কারণ, তাতে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করা হবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে তারা কখনোই সফলকাম হবে না’’।

(নাহ্ল : ১১৬)

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মাধ্যমে কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন। তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন তাঁর হাদীসের মাধ্যমে। যেমন:

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَّبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا، وَلَا تَقْتُلُوْا أَوْلَادَكُمْ مِّنْ إِمْلَاقٍ، نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ، وَلَا تَقْرَبُوْا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَلَا تَقْتُلُوْا النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ، وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ إِلاَّ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ».

‘‘(হে মুহাম্মাদ!) তুমি সবাইকে বলো: আসো! তোমাদের প্রভু তোমাদের উপর যা যা হারাম করে দিয়েছেন তা তোমাদেরকে পড়ে শুনাবো। তা এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, দরিদ্রতার ভয়ে নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কারণ, আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দিচ্ছি, অশ্লীল কথা ও কাজের নিকটেও যেও না, চাই তা প্রকাশ্যই হোক অথবা গোপনীয়, আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে অবৈধভাবে হত্যা করো না, এ সব বিষয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা তা অনুধাবন করতে পারো। ইয়াতীমদের সম্পদের নিকটেও যেও না। তবে একান্ত সদুদ্দেশ্যে তা গ্রহণ করতে পারো যতক্ষণ না তারা বয়:প্রাপ্ত হয়’’। (আন‘আম : ১৫১-১৫২)

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ حَرَّمَ بَيْعَ الْـخَمْرِ وَالْـمَيْتَةِ وَالْـخِنْزِيْرِ وَالْأَصْنَامِ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা হারাম করে দিয়েছেন মদ, মৃত পশু, শুকর ও মূর্তি বিক্রি’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ شَيْئًا حَرَّمَ ثَمَنَهُ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যখন কোন জিনিস হারাম করেন তখন উহার বিক্রি পয়সাও হারাম করে দেন’’। (দারাক্বুত্বনী ৩/৭; আবূ দাউদ ৩৪৮৮)

কখনো কখনো আল্লাহ্ তা‘আলা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের হারামসমূহ একত্রে বর্ণনা করেন। যেমন: তিনি খাদ্য সংক্রান্ত হারামসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

«حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْـمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَـحْمُ الْـخِنْزِيْرِ وَمَآ أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهٰوَالْـمُنْخَنِقَةُ وَالْـمَوْقُوْذَةُ وَالْـمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَآ أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ ذٰلِكُمْ فِسْقٌ».

‘‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত পশু, (প্রবাহিত) রক্ত, শুকরের গোস্ত, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নামে উৎসর্গীকৃত পশু, গলায় ফাঁস পড়ে তথা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরা পশু, প্রহারে মৃত পশু, উপর থেকে পড়ে মরা পশু, শিংয়ের আঘাতে মরা ও হিংস্র জন্তুতে খাওয়া পশু। তবে এগুলোর কোনটিকে তোমরা মৃত্যুর পূর্বেই যবেহ করতে সক্ষম হলে তা অবশ্যই খেতে পারো। তোমাদের উপর আরো হারাম করা হয়েছে সে সকল পশু যা দেবীদের আস্তানায় যবেহ করা হয় এবং তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের উপর হারাম। এ সবগুলো পাপ কর্ম’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩)

তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা বিবাহ্ সংক্রান্ত হারামসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:

«حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمْ اللاَّتِيْ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَآئِبُكُمُ اللاَّتِيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِيْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ، فَإِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ، وَحَلَآئِلُ أَبْنَآئِكُمْ الَّذِيْنَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ، وَأَنْ تَجْمَعُوْا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ، إِلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ، إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا، وَالْـمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَآءِ».

‘‘তোমাদের উপর হারাম করে দেয়া হয়েছে তোমাদের মায়েদেরকে, মেয়েদেরকে, বোনদেরকে, ফুফুদেরকে, খালাদেরকে, ভাইয়ের মেয়েদেরকে, বোনের মেয়েদেরকে, সে মায়েদেরকে যারা তোমাদেরকে স্তন্য দান করেছেন, তোমাদের দুধবোনদেরকে, স্ত্রীদের মায়েদেরকে এবং সে মেয়েদেরকে যাদেরকে লালন-পালন তোমরাই করছো এবং যাদের মায়েদের সাথে তোমরা সহবাসে লিপ্ত হয়েছো, তবে যদি তোমরা তাদের মায়েদের সাথে সহবাস না করে থাকো তা হলে তাদের মেয়েদেরকে বিবাহ্ করতে কোন অসুবিধে নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত সন্তানদের স্ত্রীদেরকেও হারাম করে দেয়া হয়েছে। তেমনিভাবে দু’ সহোদরা বোনকে একত্রে বিবাহ্ করাও হারাম। তবে ইতিপূর্বে যা ঘটে গিয়েছে তা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল করুণাময়। আরো হারাম করা হয়েছে তোমাদের উপর সধবা নারীগণ তথা অন্যের বিবাহিতা স্ত্রীদেরকে’’। (নিসা’ : ২৩-২৪)

তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা উপার্জন সংক্রান্ত হারামসমূহের বর্ণনায় বলেন:

«وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا».

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা হালাল করেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং হারাম করেছেন সুদ’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৫)

ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের জন্য খুব দয়া করে অসংখ্য অগণিত অনেক পবিত্র বস্ত্তকে হালাল করে দিয়েছেন এবং তা সামগ্রিকভাবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِيْ الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا».

‘‘হে মানব! পৃথিবীর অভ্যন্তরের সকল হালাল-পবিত্র বস্ত্ত তোমরা খাও’’। (বাক্বারাহ্ : ১৬৮)

সুতরাং দুনিয়ার যে কোন বস্ত্ত হালাল যতক্ষণ না হারামের কোন দলীল পাওয়া যায়। অতএব আমরা সবাই সদা সর্বদা তাঁরই আনুগত্য, প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবো।

উক্ত হালাল বস্ত্তসমূহ বেশি হওয়ার কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা তা

বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেননি এবং হারাম বস্ত্তসমূহ তিনি বিস্তারিতভাবে এ কারণেই বর্ণনা করেছেন যে, সেগুলো অতীব সীমিত।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا لَكُمْ أَلاَّ تَأْكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ، وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ».

‘‘তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা খাচ্ছো না সে পশুর গোস্ত যা যবাই করা হয়েছে আল্লাহ্ তা‘আলার নাম নিয়ে। অথচ তিনি তোমাদের উপর যা কিছু হারাম করে দিয়েছেন তা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। এমনকি তোমরা নিরুপায় অবস্থায় উক্ত হারাম বস্ত্তও খেতে পারো’’। (আন্‘আম : ১১৯)

ঈমানের দুর্বলতা ও ধর্মীয় জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে যারা হারামের

বিস্তারিত বর্ণনা শুনলে মনে কষ্ট পান তারা কি এমন চান যে, আল্লাহ্ তা‘আলা যেন প্রতিটি হালাল বস্ত্ত বিস্তারিতভাবে আপনাদেরকে বলে দিক। তিনি বলুক যে, উট, গরু, ছাগল, হরিণ, মুরগি, কবুতর, হাঁস, পঙ্গপাল, মাছ সবই হালাল।

সকল ধরনের শাক-সবজি ও ফল-মূল হালাল।

পানি, দুধ, মধু, তেল ইত্যাদি সবই হালাল।

লবন, মসলা, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি সবই হালাল।

প্রয়োজনে যে কোন কাজে কাঠ, লোহা, বালি, সিমেন্ট, কঙ্কর, প্লাস্টিক, কাঁচ, রবার ইত্যাদি সবই ব্যবহার করা জায়িয।

বাই সাইকেল, মোটর সাইকেল, গাড়ি, ট্রেন, নৌকা, উড়োজাহাজ ইত্যাদি সবগুলোতেই আরোহণ করা জায়িয।

এসি, ফ্রিজ, কাপড় ধোয়ার মেশিন, কোন কিছু পেষার মেশিন, কোন ফলের রস বের করার মেশিন ইত্যাদি সবই ব্যবহার করা জায়িয।

চিকিৎসা, প্রকৌশল, খনিজ ও হিসাব বিজ্ঞান, নির্মাণ, পানি বিশুদ্ধ করণ, নিষ্কাশন, মুদ্রণ ইত্যাদি সংক্রান্ত সকল আসবাবপত্রই ব্যবহার করা জায়িয।

সুতি, পলিস্টার, টেট্রন, নাইলন, পশম ইত্যাদি জাতীয় সকল পোশাক-পরিচ্ছদ পরা জায়িয।

মৌলিকভাবে যে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, ভাড়া, চাকুরি এবং যে কোন ধরনের পেশা অবলম্বন করা জায়িয। আরো কত্তো কী?

আপনার কি মনে হয় যে, কখনো কারোর পক্ষে এ জাতীয় সকল হালালের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া সম্ভবপর হবে, না এ জাতীয় বর্ণনার আদৌ কোন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তাদের আরেকটি কথা, ইসলাম একেবারেই সহজ। তাতে কোন কঠিনতা নেই। তাদের উক্ত কথা শুনতে খুবই সুমধুর। কিন্তু এতে তাদের উদ্দেশ্য একেবারেই ভালো নয়। তারা চায় সহজতার ছুতোয় সব কিছু একেবারেই হালাল করে নিতে। তা কখনোই ঠিক নয়। বরং আমাদের জানা উচিৎ যে, নিজস্ব গতিতে শরীয়ত একেবারেই সহজ। তবে তা কারোর রুচি নির্ভরশীল নয় এবং সাধারণভাবে শরীয়ত তো সহজই বটে। এরপরও শরীয়তের তুলনামূলক কঠিন বিধানগুলোকে প্রয়োজনের খাতিরে আরো সহজ করে দেয়া হয়। যেমন: সফরের সময় দু’ ওয়াক্ত নামায একত্রে পড়া, চার রাক্‘আত বিশিষ্ট নামাযকে দু’ রাক্‘আত করে পড়া এবং পরবর্তীতে আদায়ের শর্তে তখন রোযা না রাখার সুযোগও রয়েছে। তেমনিভাবে মুক্বীম (নিজ বাসস্থানে যিনি রয়েছেন) ও মুসাফির তথা ভ্রমণরত ব্যক্তির জন্য ২৪ ও ৭২ ঘন্টা মোজা মাস্হ করার বিধানও রয়েছে। পানি ব্যবহারে অক্ষম অথবা পানি না পাওয়ার সময় ওযুর পরিবর্তে তায়াম্মুমের ব্যবস্থাও রয়েছে। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এবং বৃষ্টি পড়ার সময় ফজরের নামায ছাড়া অন্য চার ওয়াক্ত নামায দু’ ওয়াক্ত করে একত্রে পড়া যায়। সত্যিকার বিবাহের নিয়্যাতে বেগানা মেয়েকে দেখা যায়। কসমের কাফ্ফারায় গোলাম আযাদ, খানা খাওয়ানো অথবা কাপড় পরানোর মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। এমনকি কঠিন মুহূর্তে মৃত পশু খাওয়াও জায়িয রাখা হয়েছে। আরো কত্তো কী?

বিশেষ কিছু জিনিসকে হারাম করার রহস্যসমূহের একটি এও যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এরই মাধ্যমে তাঁর অনুগত ও অবাধ্যকে পৃথক করতে চান। সুতরাং ঈমানদারগণ আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের আশায় বিধানগুলো পালন করে বলেই তাদের জন্য তা সহজ হয়ে যায়। আর মুনাফিকরা অসন্তুষ্ট চিত্তে বিধানগুলো পালন করে বিধায় তা তাদের জন্য অতি কঠিন।

একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কেউ কোন হারাম পরিত্যাগ করলে সে তার অন্তরে বিশেষ এক ধরনের ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে এরই পরিবর্তে আরেকটি ভালো জিনিস দান করবেন।

 গুনাহ্’র কিছু ছুতানাতা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

অনেকেই মনে করে থাকেন, গুনাহ্ করতেই থাকবো। আর সকাল-বিকাল ‘‘সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহাম্দিহী’’ ১০০ বার বলে দেবো। তখন সকল গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে অথবা এক বার হজ্জ করে ফেলবো তা হলে পূর্বের সকল গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।

তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসা করবো, আপনি শুধু আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত ও দয়ার আয়াত এবং এ সংক্রান্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসগুলোই দেখছেন। কুর‘আন ও হাদীসে কি আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তির কোন উল্লেখ নেই? সুতরাং আপনি তাঁর শাস্তির ভয় না পেয়ে শুধু রহমতের আশা করছেন কেন?

কেউ কেউ মনে করেন যে, মানুষ গুনাহ্ করতে বাধ্য। সুতরাং গুনাহ্ করায় মানুষের কোন দোষ নেই। আমরা বলবো: মানুষ যদি গুনাহ্ করতেই বাধ্য হয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুর‘আন ও হাদীসে গুনাহ্’র শাস্তির কথা উল্লেখ করলেনই বা কেন? আল্লাহ্ তা‘আলা কি (নাঊযু বিল্লাহ্) এতো বড় যালিম যে, কাউকে কোন কাজ করতে বাধ্য করবেন। আবার তাকে সে জন্য শাস্তিও দিবেন।

আপনি দয়া করে বাস্তবে একটুখানি পরীক্ষা করে দেখবেন কি? আপনার অন্তরে যখন কোন গুনাহ্’র ইচ্ছে জন্মে তখন আপনি উক্ত গুনাহ্ করার জন্য একটুও সামনে অগ্রসর হবেন না। তখন আপনি দেখবেন, কে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে কাজটি করিয়ে নেয়।

আপনি কি দেখছেন না যে, দুনিয়াতে এমনও কিছু লোক রয়েছেন যাঁরা গুনাহ্ না করেও শান্তিতে জীবন যাপন করছেন। সুতরাং আপনি একাই গুনাহ্ করতে বাধ্য হবেন কেন?

কেউ কেউ মনে করেন, গুনাহ্ করলে তো ঈমানের কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, আমল ঈমানের কোন অংশ নয়। সুতরাং গুনাহ্ করতে কি? কারণ, জান্নাত তো একদিন না একদিন মিলবেই। তাদেরকে আমরা বলবো: আমল ঈমানের কোন অংশ না হয়ে থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের শাখাসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে আমলের কথা কেনই বা উল্লেখ করলেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুর‘আন ও হাদীসে বান্দাহ্’র আমলের কারণেই ঈমান বাড়বে বলে অনেকগুলো প্রমাণ উল্লেখই বা করলেন কেন?

কেউ কেউ মনে করে থাকেন, আমরা যতই গুনাহ্ করি না কেন আমরা তো পীর-ফকির ও বুযুর্গদেরকে খুবই ভালোবাসি। সুতরাং তাদের ভালোবাসা আমাদেরকে বেড়া পার করিয়ে দিবে এবং তাদের উসিলায় দো‘আ করলে কাজ হয়ে যাবে। আমরা বলবো: সাহাবারা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসতেন না? সুতরাং তাঁরা কেন এ আশায় গুনাহ্ করতে থাকেননি। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধির কোন অভাব ছিলো কি?

কেউ কেউ মনে করে থাকেন, আমার বংশে অনেক আলিম ও বুযুর্গ রয়েছেন। সুতরাং তাঁরা আমাদেরকে সঙ্গে না নিয়ে জান্নাতে যাবেন না। আমরা বলবো: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাদের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনরা এ আশায় কেন গুনাহ্ করতে থাকেননি। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধির কোন অভাব ছিলো কি?

কেউ কেউ মনে করেন, আল্লাহ্ তা‘আলার এমন কি প্রয়োজন রয়েছে যে, আমাকে শাস্তি দিবেন। সুতরাং তিনি দয়া করেই সে দিন আমাকে জান্নাত দিয়ে দিবেন। আমরা বলবো: কাউকে জান্নাত দেয়ারও আল্লাহ্ তা‘আলার কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং তিনি তাঁর সাথে মারাত্মক দোষ করা সত্ত্বেও কাউকে জান্নাত দিবেন কেন?

কেউ কেউ মনে করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের সূরাহ যুহার ৫ নং আয়াতে বলেছেন: তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ততক্ষণ পর্যন্ত দিবেন যতক্ষণ না তিনি রাজি হন। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো রাজি হবেন না আমাদেরকে জাহান্নামে ছেড়ে জান্নাতে যেতে। আমরা বলবো: আল্লাহ্ তা‘আলা যখন যালিম ও ফাসিকদেরকে শাস্তি দিতে রাজি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন সে ব্যাপারে রাজি হবেন না? তিনি কি আল্লাহ্ তা‘আলার একান্ত বন্ধু নন? তিনি কি তখন আল্লাহ্ তা‘আলার পছন্দের বিরুদ্ধাচরণ করবেন?

কেউ কেউ মনে করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আনের সূরাহ যুমারের ৫৩ নং আয়াতে বলেছেন: তিনি সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং গুনাহ্ করতে কি? আল্লাহ্ তা‘আলা তো সকল গুনাহ্ ক্ষমাই করে দিবেন। আমরা বলবো: আল্লাহ্ তা‘আলা কি কুর‘আন মাজীদের সূরাহ নিসা’র ৪৮ নং আয়াতে বলেননি যে, তিনি শির্ক ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য গুনাহ্ ক্ষমা করতেও পারেন ইচ্ছে করলে। সুতরাং সকল প্রকারের গুনাহ্ ক্ষমা করার ব্যাপারটি একান্ত তাওবা ও আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছার উপরই নির্ভরশীল।

কেউ কেউ বলে থাকেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সূরাহ ইন্ফিত্বারের ৬ নং আয়াতে মানুষকে উযর শিক্ষা দিয়েছেন যে, মানুষ আল্লাহ্ তা‘আলার দয়ার কারণেই ধোকা খাচ্ছে বা খাবে। সুতরাং আমরা সবাই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে তাঁরই শেখানো উক্ত উযরই পেশ করবো। আমরা বলবো: আপনার উক্ত ধারণা একেবারেই মূর্খতা বশত। বরং মানুষ ধোকা খাবে বা খাচ্ছে শয়তান, কুপ্রবৃত্তি ও মূর্খতার কারণে; আল্লাহ্ তা‘আলার দয়ার নয়। কারণ, কেউ অত্যন্ত দয়াশীল হলে তাঁর সাথে ভালো ব্যবহারই করা উচিৎ। খারাপ ব্যবহার নয়।

কেউ কেউ বলে থাকেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের সূরাহ লাইলের ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে বলেছেন যে, জাহান্নামে দগ্ধ হবে সেই ব্যক্তি যে নিতান্ত হতভাগ্য। যে (আল্লাহ্, রাসূল ও কুর‘আন এর প্রতি) মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর আমরা তো এমন নই। সুতরাং আমরা জান্নাতেই যাবো যত গুনাহ্ই করি না কেন। আমরা বলবো: আল্লাহ্ তা‘আলা এরপরই ১৭ নং আয়াতে বলেছেন: উক্ত লেলিহান জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে পরম সংযমী তথা চরম আল্লাহ্ভীরুরাই। সুতরাং গুনাহ্গাররা সাধারণত জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে না। কারণ, তারা পরম সংযমী তথা চরম আল্লাহ্ভীরু নয়।

কেউ কেউ বলে থাকেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সূরাহ বাক্বারাহ্’র ২৪ নং আয়াতে বলেন: জাহান্নাম প্রস্ত্তত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। সুতরাং আমরা তো মুসলিম। আমাদের জন্য তো জাহান্নাম নয়। আমরা বলবো: আল্লাহ্ তা‘আলা সূরাহ আ’লি ইমরানের ১৩৩ নং আয়াতে বলেছেন: জান্নাত তৈরি করা হয়েছে আল্লাহ্ভীরুদের জন্য। সুতরাং পাপীরা তো খুব সহজেই সেখানে ঢুকতে পারবে না। কারণ, তারা তো আল্লাহ্ভীরু নয়।

কেউ কেউ মনে করেন, গুনাহ্ করতেই থাকবো। এক বছরের গুনাহ্ মাফের জন্য একটি আশুরার রোযাই যথেষ্ট। আরো বাড়তি সাওয়াব বা স্পেশাল দয়ার জন্য তো আরাফার রোযাই যথেষ্ট। সুতরাং তাও রেখে দেবো। অতঃপর জান্নাতে যাওয়ার জন্য আর কিছুই করতে হবে না। আমরা বলবো: রামাযানের রোযা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায তো ফরয। আর এগুলো কবীরা গুনাহ্ থেকে বাঁচার শর্তে সগীরা গুনাহ্গুলো শুধু ক্ষমা করতে পারে। সুতরাং উক্ত নফল রোযা কি এর চাইতেও আরো মর্যাদাশীল যে, সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবে।

কেউ কেউ বলে থাকেন: আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাহ্’র ধারণা অনুযায়ীই তার সাথে ব্যবহার করে থাকেন। সুতরাং আমরা তাঁর সম্পর্কে এ ধারণা করি যে, আমরা যতই গুনাহ্ করি না কেন তিনি আমাদের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং গুনাহ্ করতে কি? আমরা বলবো: কেউ কারোর উপর তাঁর সাথে তার ব্যবহারের ধরন অনুযায়ীই ধারণা করে থাকে। যদি সে উক্ত ব্যক্তির সাথে সর্বদা ভালো ব্যবহার করে থাকে তখন সে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সম্পর্কে এমন ধারণা করতে পারে যে, তিনি তার সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। আর যদি সে তাঁর সাথে সর্বদাই দুর্ব্যবহার করে থাকে তা হলে সে কখনোই তাঁর ব্যাপারে এমন ধারণা করবে না যে, তিনি তার সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।

এ কারণেই হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

إِنَّ الْـمُؤْمِنَ أَحْسَنَ الظَّنَّ بِرَبِّهِ فَأَحْسَنَ الْعَمَلَ، وَإِنَّ الْفَاجِرَ أَسَآءَ الظَّنَّ بِرَبِّهِ فَأَسَآءَ الْعَمَلَ.

‘‘নিশ্চয়ই মু’মিন ব্যক্তি নিজ প্রভু সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে বলেই সর্বদা সে ভালো আমল করে। আর পাপী ব্যক্তি নিজ প্রভু সম্পর্কে খারাপ ধারণা করে বলেই সে সর্বদা খারাপ আমল করে’’।

বান্দাহ্ তো আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে এমন ধারণা করবে যে, সে ভালো আমল করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তা বিনষ্ট করে দিবেন না। বরং তিনি তা কবুল করে নিবেন এবং তিনি তাকে দয়া করে জান্নাত দিয়ে দিবেন। তার উপর একটুখানিও যুলুম করবেন না।

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) এর নিকট ছয় অথবা সাতটি দিনার রেখে তাঁকে তা গরিবদের মাঝে বন্টন করতে বললেন। কিন্তু তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুখের কারণে তা করতে ভুলে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ হয়ে তাঁকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা জানালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সে দিনারগুলো হাতে রেখে বললেন:

مَا ظَنُّ مُحَمَّدٍ بِرَبِّهِ لَوْ لَقِيَ اللهَ وَهَذِهِ عِنْدَهُ.

‘‘মুহাম্মাদের নিজ প্রভু সম্পর্কে কি ধারণা হতে পারে যদি সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করে অথচ তার নিকট এ দিনারগুলো রয়েছে’’।

(আহমাদ্ ৬/৮৬, ১৮২; ইব্নু হিববান ৬৮৬ ’হুমায়দী, হাদীস ২৮৩ ইব্নু সা’দ ২/২৩৮)

কেউ কেউ বলতে পারেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেও তাঁর রহমতের আশা করা যেতে পারে। কারণ, তাঁর রহমত অপার ও অপরিসীম। আমরা বলবো: আপনার কথা ঠিকই। কিন্তু তারই সাথে সাথে আপনাকে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো অপাত্রে দয়া করবেন না। কারণ, তিনি হিকমতওয়ালা এবং অত্যন্ত পরাক্রমশীল। যে দয়ার উপযুক্ত তাকেই দয়া করবেন। আর যে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত তাকে তিনি অবশ্যই শাস্তি দিবেন। বরং সে ব্যক্তিই আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে সুধারণা রাখতে পারে যে তাওবা করেছে, নিজ কৃতকর্মের উপর লজ্জিত হয়েছে, বাকি জীবন ভালো কাজে খরচ করবে বলে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে ওয়াদা করেছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، أُوْلٰٓئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَةَ اللهِ».

‘‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং যারা আল্লাহ্’র পথে জিহাদ ও হিজরত করেছে একমাত্র তারাই আল্লাহ্’র রহমতের আশা করতে পারে’’।

(বাক্বারাহ্ : ২১৮)

এ কথা সবারই মনে রাখতে হবে যে, একটি হচ্ছে আশা। আরেকটি হচ্ছে দুরাশা। কেউ কোন বস্ত্তর যৌক্তিক আশা করলে তাকে তিনটি কাজ করতে হয়। যা নিম্নরূপ:

ক. যে বস্ত্তর সে আশা করছে সে বস্ত্তটিকে খুব ভালোবাসতে হবে।

খ. সে বস্ত্তটি কোনভাবে হাত

ছাড়া হয়ে যায় কি না সে আশঙ্কা সদা সর্বদা মনে রেখে সে ব্যাপারে তাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

গ. যথাসাধ্য উক্ত বস্ত্তটি হাসিলের প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে।

এর কোন একটি কারোর মধ্যে পাওয়া না গেলে তার আশা দুরাশা বৈ আর কি?

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَافَ أَدْلَجَ، وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ الْـمَنْزِلَ، أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ ؛ أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ الْـجَنَّةُ.

‘‘যার সময়মত গন্তব্যে পৌঁছার ভয় রয়েছে সে অবশ্যই প্রথম রাত্রে যাত্রা শুরু করবে। আর যে প্রথম রাত্রেই যাত্রা শুরু করলো সে অবশ্যই মঞ্জিলে (গন্তব্যে) পৌঁছুবে। তোমরা মনে রাখবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার পণ্য খুবই দামি। আর আল্লাহ্ তা‘আলার পণ্য হচ্ছে জান্নাত’’।

(তিরমিযী ২৪৫০; হা’কিম ৪/৩০৭; ‘আব্দুব্নু ’হুমাইদ্ ১৪৬০)

সাহাবাদের জীবনী পড়ে দেখলে খুব সহজেই এ কথা বুঝে আসবে যে, আমাদের আশা সত্যিই দুরাশা যা কখনোই পূরণ হবার নয়। তাঁদের আশার পাশাপাশি ছিলো আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি অত্যন্ত ভয়।

একদা আবূ বকর (রাঃ) নিজকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

وَدِدْتُ أَنِّيْ شَعْرَةٌ فِيْ جَنْبِ عَبْدٍ مُّؤْمِنٍ.

‘‘হায়! আমি যদি মু’মিন বান্দাহ্’র পার্শ্ব দেশের একটি লোম হতাম’’। (আহমাদ/যুহ্দ, পৃষ্ঠা: ১০৮)

একদা তিনি নিজ জিহবাহ্ টেনে ধরে বলেন:

هَذَا الَّذِيْ أَوْرَدَنِيَ الْـمَوَارِدَ.

‘‘এটিই আমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে’’। (আহমাদ/যুহ্দ, পৃষ্ঠা: ১০৯)

তিনি বেশি বেশি কাঁদতেন এবং সবাইকে বলতেন:

اِبْكُوْا ؛ فَإِنْ لَمْ تَبْكُوْا فَتَبَاكُوْا.

‘‘কাঁদো; কাঁদতে না পারলে কাঁদার ভান করো’’। (আহমাদ/যুহ্দ, পৃষ্ঠা: ১০৮)

একদা ’উমর (রাঃ) সূরাহ ত্বূর পড়তে পড়তে যখন নিম্নোক্ত আয়াতে পৌঁছুলেন তখন কাঁদতে শুরু করলেন। এমনকি কাঁদতে কাঁদতে তিনি রুগ্ন হয়ে গেলেন এবং মানুষ তাঁর শুশ্রূষা করতে আসলো। আয়াতটি নিম্নরূপ:

«إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ».

‘‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী’’। (ত্বূর : ৭)

বেশি কান্নার কারণে তাঁর চেহারায় কালো দু’টি দাগ পড়ে যায়। তাঁর মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন: আমার গন্ডদেশকে জমিনের সাথে লাগিয়ে দাও। তাতে হয়তো আল্লাহ্ তা‘আলা আমার উপর দয়া করবেন। আহ্! আল্লাহ্ তা‘আলা যদি আমাকে ক্ষমা না করেন। অতঃপর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

একদা ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আপনার মাধ্যমেই দুনিয়ার অনেকগুলো শহর আবাদ হয়েছে এবং অনেকগুলো এলাকা বিজয় হয়েছে। আরো আরো। তখন তিনি বললেন: আমি শুধু জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। না চাই কোন গুনাহ্ না চাই কোন পুণ্য।

’উস্মান (রাঃ) যে কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়েই কেঁদে ফেলতেন। এমন কি তাঁর সমস্ত দাড়ি কান্নার পানিতে ভিজে যেতো। তিনি বলতেন: আমাকে যদি জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে রাখা হয় এবং তখন আমি জানি না যে, আমাকে কোন দিকে যেতে বলা হবে। তখন আমি আমার গন্তব্য জানার আগেই চাবো ছাই হয়ে যেতে।

‘আলী (রাঃ) সর্বদা দু’টি বস্ত্তকে ভয় করতেন। দীর্ঘ আশা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ। কারণ, দীর্ঘ আশা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয় এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে সত্য গ্রহণ থেকে দূরে রাখে।

তিনি আরো বলেন: দুনিয়া চলে যাচ্ছে, আখিরাত এগিয়ে আসছে এবং প্রত্যেকটিরই অনুগামী রয়েছে। সুতরাং তোমরা আখিরাতের অনুগামী হও। দুনিয়ার অনুগামী হয়ো না। কারণ, এখন কাজের সময়। হিসাব নেই। আর আখিরাতে হিসাব রয়েছে। কোন কাজ নেই।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) বলেন: আমি আখিরাতে যে ব্যাপারে ভয় পাচ্ছি তা হচ্ছে, আমাকে বলা হবে: হে আবুদ্দারদা’! তুমি অনেক কিছু জেনেছো। তবে সে মতে কতটুকু আমল করেছো?

তিনি আরো বলেন: মৃত্যুর পর তোমাদের কি হবে তা যদি তোমরা এখন জানতে পারতে তা হলে তোমরা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করতে পারতে না। এমনকি নিজ ঘরেও অবস্থান করতে পারতে না। বরং তোমরা খালি ময়দানে নেমে পড়তে, ভয়ে বুকে থাপড়াতে এবং শুধু কাঁদতেই থাকতে। তিনি আপসোস করে বলেন: আহ্! আমি যদি গাছ হতাম মানুষ আমাকে কেটে কাজে লাগাতো।

বেশি বেশি কান্না করার কারণে আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাসের উভয় চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়।

আবূ যর (রাঃ) বলতেন: আহ্! আমি যদি গাছ হতাম মানুষ আমাকে কেটে কাজে লাগাতো। আহ্! আমি যদি জন্মই না নিতাম। একদা কেউ তাঁকে খরচ বাবত কিছু দিতে চাইলে তিনি বললেন: আমার নিকট একটি ছাগল আছে যার দুধ আমি পান করি। কয়েকটি গাধা আছে যার উপর চড়ে আমি এদিক ওদিক যেতে পারি। একটি আযাদ করা গোলাম আছে যে আমার খিদমত আঞ্জাম দেয় এবং গায়ে দেয়ার মতো একটি বাড়তি আলখাল্লাও রয়েছে। আমি এগুলোর ব্যাপারেই হিসাব-কিতাবের ভয় পাচ্ছি। আর বেশির আমার কোন প্রয়োজন নেই।

আবূ ’উবাইদাহ্ (রাঃ) বলেন: আহ্! আমি যদি একটি ভেড়া হতাম। আমার পরিবারবর্গ আমাকে যবেহ্ করে খেয়ে ফেলতো।

ইব্নু আবী মুলাইকাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: আমি ত্রিশ জন সাহাবাকে এমন পেলাম যে, তাঁরা নিজের ব্যাপারে মুনাফিকির ভয় পেতো।

কেউ কেউ আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্য হওয়ার পরও শান্তিতে জীবন যাপন করছে বিধায় এমন মনে করে থাকেন যে, যখন আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে এখানে শান্তিতে রাখছেন তখন তিনি পরকালেও আমাকে শান্তিতে রাখবেন। সুতরাং পরকাল নিয়ে চিন্তা করার এমন কি রয়েছে? মূলতঃ উক্ত চিন্তা-চেতনা একেবারেই ভুল।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا رَأَيْتَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُعْطِيْ الْعَبْدَ مِنَ الدُّنْيَا عَلَى مَعَاصِيْهِ مَا يُحِبُّ، فَإِنَّمَا هُوَ اسْتِدْرَاجٌ، ثُمَّ تَلَا قَوْلَهُ عَزَّ وَجَلَّ: «فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهٰفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتّٰى إِذَا فَرِحُوْا بِمَآ أُوْتُوْآ أَخَذْنٰهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُّبْلِسُوْنَ».

‘‘তুমি যখন দেখবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বান্দাহ্কে তাঁর অবাধ্যতা সত্ত্বেও পার্থিব সম্পদ হতে সে যা চায় তাই দিচ্ছেন তা হলে এ কথা মনে করতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ঢিল দিচ্ছেন। তিনি দেখছেন যে, সে এভাবে কতদূর যেতে পারে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন যার মর্মার্থ এই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: অতঃপর যখন তারা সকল নসীহত (অবহেলা বশত) ভুলে গেলো তখন আমি তাদের জন্য (রহমত ও নি’য়ামতের) সকল দরোজা খুলে দিলাম। পরিশেষে যখন তারা সেগুলো নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলো তখন আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। তখন তারা একেবারেই নিরাশ হয়ে পড়লো’’। (আন্‘আম : ৪৪) (আহমাদ্ ৪/১৪৫; ত্বাবারানী/কাবীর ৯১৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«فَأَمَّا الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ، فَيَقُوْلُ رَبِّيْ أَكْرَمَنِ، وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ، فَيَقُوْلُ رَبِّيْ أَهَانَنِ، كَلَّا».

‘‘মানুষ তো এমন যে, যখন তাকে পরীক্ষামূলক সম্মান ও সুখ-সম্পদ দেয়া হয় তখন সে বলে: আমার প্রভু আমাকে সম্মান করেছেন। আর যদি তাকে পরীক্ষামূলক রিযিকের সঙ্কটে ফেলা হয় তখন সে বলে: আমার প্রভু আমাকে অসম্মান করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: না, কখনো ব্যাপারটি এমন নয়’’। (ফজর : ১৫-১৭)

কেউ কেউ মনে করেন, দুনিয়া নগদ আর আখিরাত বাকি। সুতরাং নগদ ছেড়ে বাকির চিন্তা করতে যাবো কেন? আমরা বলবো: বাকি থেকে নগদ ভালো তখন যখন নগদ ও বাকি লাভের দিক দিয়ে সমান। কিন্তু যখন বাকি নগদ চাইতে অনেক অনেক গুণ ভালো প্রমাণিত হয় তখন সত্যিকারার্থে নগদ চাইতে বাকিই বেশি ভালো। আর এ কথা সকল মু’মিন ব্যক্তি জানে যে, আখিরাত দুনিয়ার চাইতে অনেক অনেকগুণ ভালো এবং চিরস্থায়ী। সুতরাং আখিরাতের উপর দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া বোকামি বৈ কি?

মুস্তাউরিদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِيْ الْآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ هَذِهِ فِيْ الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ ؟!

‘‘আল্লাহ্’র কসম! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া এমন যে, কেউ তার (তর্জনী) অঙ্গুলি সাগরে রাখলো। অতঃপর সে অঙ্গুলির সাথে যে পানিটুকু উঠে আসলো তার তুলনা যেমন পুরো সাগরের সাথে’’।

(মুসলিম ২৮৫৮; তিরমিযী ২৩২৩ আহমাদ্ ১/২২৯, ২৩০; ইব্নু মাজাহ্ ৪১৮৩)

এ যদি হয় দুনিয়ার তুলনা আখিরাতের সাথে তা হলে এক জন মানব জীবনের তুলনা আখিরাতের সাথে কতটুকু হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখে না।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, দুনিয়া হচ্ছে নিশ্চিত আর আখিরাত হচ্ছে অনিশ্চিত। সুতরাং নিশ্চিত রেখে অনিশ্চিতের পেছনে পড়বো কেন? আমরা বলবো: আপনি কি সত্যিই আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী, না কি নন? আপনি যদি আখিরাতকে সত্যিই বিশ্বাস করে থাকেন তা হলে এ জাতীয় কথাই আপনার মুখ থেকে বেরুতে পারে না। আর যদি আপনি আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী না হয়েই থাকেন তা হলে আপনার ঈমানকে প্রথমে শুদ্ধ করে নিন। অতঃপর জান্নাত অথবা জাহান্নামের কথা ভাবুন।

 গুনাহ্’র বিভিন্ন অপকার

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মুসলিম বলতেই সবারই এ কথা জানা উচিৎ যে, বিষ যেমন শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তেমনিভাবে গুনাহ্ও অন্তরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে তাতে ক্ষতির তারতম্য অবশ্যই রয়েছে। এমনকি দুনিয়া ও আখিরাতে যত অকল্যাণ অথবা ব্যাধি রয়েছে তার মূলে রয়েছে গুনাহ্ ও পাপাচার।

এরই কারণেই আদম ও হাউওয়া’ বা হাওয়া (আলাইহিমাস্ সালাম) একদা জান্নাত থেকে বের হতে বাধ্য হন।

এরই কারণে শয়তান ইব্লীস আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়।

এরই কারণে নূহ্ (আঃ) এর যুগে বিশ্বব্যাপী মহা প্লাবন দেখা দেয় এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও বস্ত্ত ছাড়া সবই ধ্বংস হয়ে যায়।

এরই কারণে ’হূদ্ (আঃ) এর যুগে ধ্বংসাত্মক বায়ু প্রবাহিত হয় এবং সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়।

এরই কারণে সা’লিহ্ (আঃ) এর যুগে ভয়ঙ্কর চিৎকার শুনে সবাই হৃদয় ফেটে অথবা হৃদয় ছিঁড়ে মারা যায়।

এরই কারণে লুত্ব (আঃ) এর যুগে তাঁরই আবাসভূমিকে উল্টিয়ে তাতে পাথর নিক্ষেপ করা হয় এবং শুধু একজন ছাড়া তাঁর পরিবারের সকলকেই রক্ষা করা হয়। আর অন্যরা সবাই দুনিয়া থেকে একেবারেই নির্মূল হয়ে যায়।

এরই কারণে শু‘আইব (আঃ) এর যুগে আকাশ থেকে আগুন বর্ষিত হয়।

এরই কারণে ফির‘আউন ও তার বংশধররা লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়।

এরই কারণে ক্বারূন তার ঘর, সম্পদ ও পরিবারসহ ভূমিতে ধসে যায়।

এরই কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা বনী ইস্রাঈল তথা ইহুদিদের উপর এমন শত্রু পাঠিয়ে দেন যারা তাদের এলাকায় ঢুকে তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে দেয়, তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করে, তাদের মহিলা ও বাচ্চাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের সকল সম্পদ লুটে নেয়। এভাবে একবার নয়। বরং দু’ দু’ বার ঘটে। পরিশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে কসম করে বলেন:

«وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَّسُوْمُهُمْ سُوْءَ الْعَذَابِ».

‘‘(হে নবী!) তুমি স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তোমার প্রভু ঘোষণা করলেন, তিনি অবশ্যই কিয়ামত পর্যন্ত ইহুদিদের প্রতি এমন লোক পাঠাবেন যারা ওদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে’’। (আ’রাফ : ১৬৭)

ইব্নু ‘আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) গুনাহ্’র অপকার সম্পর্কে বলেন: হে গুনাহ্গার! তুমি গুনাহ্’র কঠিন পরিণাম থেকে নিশ্চিন্ত হয়ো না। তেমনিভাবে গুনাহ্’র সঙ্গে যা সংশ্লিষ্ট তার ভয়াবহতা থেকেও। গুনাহ্’র চাইতেও মারাত্মক এই যে, তুমি গুনাহ্’র সময় ডানে-বামের লেখক ফিরিশ্তাদের লজ্জা পাচ্ছো না। তুমি গুনাহ্ করে এখনো হাসছো অথচ তুমি জানো না যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার সাথে কিয়ামতের দিন কি ব্যবহার করবেন। তুমি গুনাহ্ করতে পেরে খুশি হচ্ছো। গুনাহ্ না করতে পেরে ব্যথিত হচ্ছো। গুনাহ্’র সময় বাতাস তোমার ঘরের দরোজা খুলে ফেললে মানুষ দেখে ফেলবে বলে ভয় পাচ্ছো অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা যে তোমাকে দেখছেন তা ভয় করছো না। তুমি কি জানো আইয়ূব (আঃ) কি দোষ করেছেন যার দরুন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে কঠিন রোগে আক্রান্ত করেন এবং তাঁর সকল সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়। তাঁর দোষ এতটুকুই ছিলো যে, একদা এক মযলুম তথা অত্যাচারিত ব্যক্তি যালিমের বিরুদ্ধে তাঁর সহযোগিতা চেয়েছিলো। তখন তিনি তার সহযোগিতা করেননি এবং অত্যাচারীর অত্যাচার তিনি প্রতিহত করেননি। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে উক্ত শাস্তি দিয়েছেন।

এ কারণেই ইমাম আওযায়ী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: গুনাহ্ যে ছোট তা দেখো না বরং কার শানে তুমি গুনাহ্ করছো তাই ভেবে দেখো।

ফুযাইল বিন্ ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: তুমি গুনাহ্কে যতই ছোট মনে করবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তা ততই বড় হয়ে দেখা দিবে। আর যতই তুমি তা বড় মনে করবে ততই তা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ছোট হয়ে দেখা দিবে।

কখনো কখনো গুনাহ্’র প্রতিক্রিয়া দ্রুত দেখা যায় না। তখন গুনাহ্গার মনে করে থাকে যে, এর প্রতিক্রিয়া আর দেখা যাবে না। তখন সে উক্ত গুনাহ্’র কথা একেবারেই ভুলে যায়। অথচ এটি একটি মারাত্মক ভুল চিন্তা-চেতনা।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) বলেন: তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদত এমনভাবে করো যে, তোমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। নিজকে সর্বদা মৃত বলে মনে করো। এ কথা সর্বদা মনে রাখবে যে, যথেষ্ট পরিমাণ স্বল্প সম্পদ অনেক ভালো এমন বেশি সম্পদ থেকে যা মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে। নেকী কখনো পুরাতন হয় না এবং গুনাহ্ কখনো ভুলা যায় না। বরং উহার প্রতিক্রিয়া অনিবার্য।

জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তি একদা এক অল্প বয়স্ক ছেলের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তার সৌন্দর্য সম্পর্কে ভাবতেছিলেন। তখন তাকে স্বপ্নে বলা হলো যে, তুমি এর পরিণতি চল্লিশ বছর পরও দেখতে পাবে।

 ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১. গুনাহ্গার ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, ধর্মীয় জ্ঞান হচ্ছে নূর বা আলো যা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী যে কারোর অন্তরে ঢেলে দেন। আর গুনাহ্ সে নূরকে নিভিয়ে দেয়।

 গুনাহ্’র কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২. গুনাহ্গার ব্যক্তি গুনাহ্’র কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيْبُهُ.

‘‘নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি গুনাহ্’র কারণেই রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়’’।

(হা’কিম ১৮১৪, ৬০৩৮; আহমাদ ২২৪৪০, ২২৪৬৬, ২২৪৯১; আবূ ইয়া’লা ২৮২; ইব্নু মাজাহ্ ৮৯, ৪০৯৪)

ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ্ভীরুতাই রিযিক বর্ধনের কারণ হয়। সুতরাং রিযিক পেতে হলে গুনাহ্ অবশ্যই ছাড়তে হবে। উল্লেখ্য যে, কারো কারোর নিকটে উক্ত হাদীস শুদ্ধ নয়।

 গুনাহ্গারের অন্তরে এক ধরনের বিক্ষিপ্ত ভাব সৃষ্টি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের অন্তরে এক ধরনের বিক্ষিপ্ত ভাব সৃষ্টি হয়। যার দরুন আল্লাহ্ তা‘আলা ও তার অন্তরের মাঝে এমন এক দূরত্ব জন্ম নেয় যার ক্ষতিপূরণ আল্লাহ্ তা‘আলা না চায় তো কখনোই সম্ভব নয়।

 সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নেককার লোকদের মাঝে ও গুনাহ্গারের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪. গুনাহ্’র কারণে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নেককার লোকদের মাঝে ও গুনাহ্গারের মাঝে বিরাট এক দূরত্ব জন্ম নেয়। যার দরুন সে কখনো তাদের নিকটবর্তী হতে চায় না। বরং সর্বদা সে শয়তান প্রকৃতির লোকদের সাথেই উঠা-বসা করা পছন্দ করে। কখনো এ দূরত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, তার স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন কিছুই তার ভালো লাগে না। বরং পরিশেষে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, ধীরে ধীরে নিজের উপরও তার এক ধরনের বিরক্তি ভাব জন্ম নেয়। যার পরিণতি কখনোই কারোর জন্য সুখকর নয়।

তাই তো কোন এক বুযুর্গ বলেছিলেন: আমি যখন গুনাহ্ করি তখন এর প্রতিক্রিয়া আমার আরোহণ এমনকি আমার স্ত্রীর মধ্যেও দেখতে পাই।

 সকল কাজকর্ম কঠিন হয়ে পড়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৫. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের সকল কাজকর্ম তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ঠিক এরই বিপরীতে কেউ আল্লাহ্ তা‘আলাকে সত্যিকারার্থে ভয় করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার সকল কাজ সহজ করে দেন।

 অন্তর ধীরে ধীরে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৬. সত্যিকারার্থেই গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের অন্তর ধীরে ধীরে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য হচ্ছে এক ধরনের নূর। আর গুনাহ্ হচ্ছে এক ধরনের অন্ধকার। উক্ত অন্ধকার যতই বাড়বে তার অস্থিরতাও ততই বাড়বে। তখন সে বিদ্‘আত, শির্ক, কুফর সবই করে ফেলবে অথচ সে তা একটুও টের পাবে না। কখনো কখনো উক্ত অন্ধকার তার চোখেও ছড়িয়ে পড়ে। তখন তা কালো হতে থাকে এবং তার চেহারাও।

এ কারণেই আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) বলেন: কোন নেক কাজ করলে চেহারায় উজ্জলতা ফুটে উঠে। অন্তরে আলো জন্ম নেয়। রিযিকে সচ্ছলতা, শরীরে শক্তি ও মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায়। আর গুনাহ্ করলে চেহারা কালো, অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। রিযিকে ঘাটতি আসে এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি এক ধরনের বিদ্বেষভাব জন্ম নেয়।

অন্তর ও শরীর জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৭. ধীরে ধীরে গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের অন্তর ও শরীর জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে। অন্তরের শীর্ণতা তো একেবারেই সুস্পষ্ট। আর শরীরের জীর্ণতা তো এভাবেই যে, মু’মিনের সত্যিকার শক্তি তো অন্তরেই। যখনই তার অন্তর শক্তিশালী হবে তখন তার শরীরও শক্তিশালী হবে। আর গুনাহ্গার ব্যক্তি তাকে দেখতে যতই শক্তিশালী মনে হোক না কেন কাজের সময় ঈমানদারদের সম্মুখে সে অত্যন্তই দুর্বল। তাই ইসলামী ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, পারস্যবাসী ও রোমানরা যতই শক্তিশালী থেকে থাকুক না কেন ঈমানদারদের সম্মুখে তারা এতটুকুও টিকতে পারে নাই।

 আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য তথা নেক কাজ থেকে বঞ্চিত হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৮. গুনাহ্গার ব্যক্তি গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য তথা নেক কাজ থেকে বঞ্চিত হয়। নেক কাজের কোন উৎসাহ্ই তার মধ্যে জন্ম নেয় না। আর জন্ম নিলেও তাতে তার মন বসে না। যেমন: কোন রোগী কোন খানা খেয়ে দীর্ঘ সময় অসুস্থ থাকলে অনেক ধরনের ভালো খানা থেকে সে বঞ্চিত হয়।

 বয়স বা উহার বরকত কমিয়ে দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৯. গুনাহ্ বয়স বা উহার বরকত কমিয়ে দেয় যেমনিভাবে নেক কাজ বয়স বা উহার বরকত বাড়িয়ে দেয়।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلاَّ الدُّعَاءُ، وَلَا يَزِيْدُ فِيْ الْعُمْرِ إِلاَّ الْبِرُّ.

‘‘ভাগ্য (যা পরিবর্তন যোগ্য) একমাত্র দো‘আই পরিবর্তন করতে পারে এবং বয়স বা উহার বরকত নেক কাজ করলেই বেড়ে যায়’’।

(হা’কিম ১৮১৪, ৬০৩৮; আহমাদ ২২৪৪০, ২২৪৬৬, ২২৪৯১; আবূ ইয়া’লা ২৮২; ইব্নু মাজাহ্ ৮৯, ৪০৯৪)

জীবন বলতে আত্মার জীবনকেই বুঝানো হয়। আর আত্মার জীবন বলতে সে জীবনকেই বুঝানো হয় যা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য ব্যয়িত হয়। নেক কাজ, আল্লাহ্ভীরুতা ও তাঁরই আনুগত্য এ জীবনকে বাড়িয়ে দেয়।

 একটি গুনাহ্ আরেকটি গুনাহ্’র জন্ম দেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১০. একটি গুনাহ্ আরেকটি গুনাহ্’র জন্ম দেয়। পরিশেষে গুনাহ্ করতে করতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, গুনাহ্ থেকে বের হওয়া তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না যতক্ষণ না আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি এ ব্যাপারে দয়া করেন। ঠিক এরই বিপরীতে একটি নেক কাজ আরেকটি নেক কাজের উৎসাহ্ জন্ম দেয়। এভাবেই নেক ও গুনাহ্ অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন এমন হয় যে, কোন নেককার নেক কাজ করতে না পারলে সে অস্থির হয়ে পড়ে এবং কোন বদ্কার নেক কাজ করতে চাইলে তার জন্য তা সহজ হয় না। উহার মধ্যে তার মন বসে না। তাতে সে মনের শান্তি অনুভব করে না যতক্ষণ না সে আবার গুনাহে ফিরে না আসে। এ কারণেই দেখা যায়, অনেকেই গুনাহ্ করছে ঠিকই। কিন্তু সে আর গুনাহে মজা পাচ্ছে না। তবে সে তা এ কারণেই করে যাচ্ছে যে, সে তা না করলে মনে খুব অস্থিরতা অনুভব করে।

এ কারণেই জনৈক কবি বলেন:

فَكَانَتْ دَوَائِيْ، وَهِيَ دَائِيْ بِعَيْنِهِ كَمَا يَتَدَاوَى شَارِبُ الْـخَمْرِ بِالْـخَمْرِ.

‘‘সেটিই আমার চিকিৎসা; অথচ সেটিই আমার রোগ যেমনিভাবে মদ্যপায়ী মদ দিয়েই তার চিকিৎসাকর্ম চালিয়ে যায়’’।

বান্দাহ্ যখন বার বার নেক কাজ করতে থাকে, নেক কাজকেই সে ভালোবাসে এবং নেক কাজকেই সে অন্য কাজের উপর প্রাধান্য দেয় তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ফিরিশ্তা দিয়েই সহযোগিতা করে থাকেন। ঠিক এরই বিপরীতে যখন কেউ বার বার গুনাহ্ করতে থাকে, গুনাহ্কেই ভালোবাসে এবং গুনাহ্কেই নেক কাজের উপর প্রাধান্য দেয় তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর শয়তানকেই ছেড়ে দেন। তখন সে তার পক্ষ থেকে শয়তানিরই সহযোগিতা পেয়ে থাকে। ভালোর নয়।

 বার বার গুনাহ্’র ইচ্ছা পোষণ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১১. গুনাহ্গারের অন্তর বার বার গুনাহ্’র ইচ্ছা পোষণ করতে করতে আর ভালোর ইচ্ছা পোষণ করতে পারে না। এমনকি তখন তার মধ্যে গুনাহ্ থেকে তাওবা করার ইচ্ছাও একেবারেই ক্ষীণ হয়ে যায়। বরং ধীরে ধীরে উক্ত ইচ্ছা একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। তখন দেখা যায়, এক জন ব্যক্তি অর্ধাঙ্গ রোগী অথচ সে এখনো আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তাওবা করছে না। আর কখনো সে মুখে তাওবা ইস্তিগ্ফার করলেও তা মিথ্যুকের তাওবা বলেই বিবেচিত। কারণ, তার অন্তর তখনো গুনাহ্লোভী। সে সুযোগ পেলেই গুনাহ্ করবে বলে আশা পোষণ করে থাকে।

 গুনাহ্কে গুনাহ্ মনে না করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১২. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্কে গুনাহ্ মনে করার চেতনাটুকুও গুনাহ্গারের অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়। তখন গুনাহ্ করাই তার অভ্যাসে পরিণত হয়। তাকে কেউ গুনাহ্ করতে দেখলে অথবা কেউ এ ব্যাপারে তার সম্পর্কে কথা বললে সে এতটুকুও লজ্জা পায় না। বরং অন্যকে দেখিয়ে করতে পারলে সে তাতে বেশি মজা পায়। গুনাহ্ করতে পেরেছে বলে সে অন্যের কাছে গর্ব করে এবং যে তার গুনাহ্ সম্পর্কে অবগত নয় তাকেও সে তা জানিয়ে দেয়। সাধারণত এ জাতীয় মানুষের তাওবা নসীব হয় না এবং তাকে ক্ষমাও করা হয় না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ أُمَّتِيْ مُعَافىً إِلاَّ الْـمُجَاهِرِيْنَ، وَإِنَّ مِنَ الْـمُجَاهَرَةِ أَنْ يَّعْمَلَ الرَّجُـلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا، ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ، فَيَقُوْلُ: يَا فُلَانٌ! عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْهُ.

‘‘প্রকাশ্য গুনাহ্গার ছাড়া সকল উম্মতই ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত। আর প্রকাশ্য গুনাহ্’র অন্তর্ভুক্ত এটিও যে, জনৈক ব্যক্তি গভীর রাত্রে কোন একটি গুনাহ্’র কাজ করলো। ভোর হয়েছে অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা এখনো তার গুনাহ্টিকে লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সে নিজেই জনসম্মুখে তার গুনাহ্টি ফাঁস করে দিয়েছে। সে বলছে, হে অমুক! শুনো, আমি গত রাত্রিতে এমন এমন করেছি। অথচ তার প্রভু তার গুনাহ্টিকে রাত্রি বেলায় লুকিয়ে রেখেছেন। আর সে ভোর হতেই আল্লাহ্ তা‘আলার গোপন রাখা বিষয়টিকে ফাঁস করে দিলো’’। (বুখারী ৬০৬৯; মুসলিম ২৯৯০)

 গুনাহ্গার ব্যক্তি গুনাহ্’র মাধ্যমে পূর্বের কোন এক অভিশপ্ত তথা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির যোগ্য

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৩. গুনাহ্গার ব্যক্তি গুনাহ্’র মাধ্যমে পূর্বের কোন এক অভিশপ্ত তথা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির যোগ্য (?) ওয়ারিশ হিসেবে গণ্য হয়। যেমন:

সমকামী ব্যক্তি লুত্ব সম্প্রদায়ের ওয়ারিশ।

মাপে কম দেয় যে সে শু‘আইব সম্প্রদায়ের ওয়ারিশ।

ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী ফির‘আউন সম্প্রদায়ের ওয়ারিশ।

দাম্ভিক ও আত্মম্ভরি হূদ সম্প্রদায়ের ওয়ারিশ।

সুতরাং গুনাহ্গার যে গুনাহ্ই করুক না কেন তার সাথে পূর্বের কোন এক জাতির সাথে সে বিষয়ে মিল রয়েছে। তবে উক্ত মিল কিন্তু প্রশংসনীয় নয়। কারণ, তারা ছিলো আল্লাহ্ তা‘আলার একান্ত অবাধ্য এবং তাঁর কঠিন শত্রু।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

‘‘যে ব্যক্তি (মুসলিম ছাড়া) অন্য কোন জাতির সঙ্গে কোন বিষয়ে মিল রাখলো সে তাদের মধ্যেই পরিগণিত হবে’’।

(আহমাদ ২/৫০, ৯২; আবূ দাউদ ৪০৩১)

 গুনাহ্গার ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার দৃষ্টিতে একেবারেই গুরুত্বহীন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৪. গুনাহ্গার ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার দৃষ্টিতে একেবারেই গুরুত্বহীন। হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: তারা (গুনাহ্গাররা) আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট গুরুত্বহীন বলেই তো তাঁর অবাধ্য হতে পারলো। আল্লাহ্ তা‘আলা যদি তাদেরকে গুরুত্বই দিতেন তাহলে তাদেরকে গুনাহ্ থেকে অবশ্যই রক্ষা করতেন।

আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কারোর সম্মান না থাকলে মানুষের নিকটও তার কোন সম্মান থাকে না। যদিও তারা বাহ্যিকভাবে তাকে কোন প্রয়োজনে বা তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য সম্মান করে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَنْ يُّهِنِ اللهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُّكْرِمٍ».

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে অসম্মান করেন তাকে সম্মান দেয়ার আর কেউ নেই’’। (হাজ্জ : ১৮)

 বড় গুনাহ্ও ছোট মনে হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৫. গুনাহ্ করতে করতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, তার নিকট বড় গুনাহ্ও ছোট মনে হয়। এটিই ধ্বংসের মূল। কারণ, বান্দাহ্ গুনাহ্কে যতই ছোট মনে করবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তা ততই বড় হিসেবে পরিগণিত হবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নিশ্চয়ই মু’মিন গুনাহ্কে এমন মনে করে যে, যেন সে পাহাড়ের নিচে। ভয় পাচ্ছে পাহাড়টি কখন যে তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ে। আর ফাসিক (আল্লাহ্’র অবাধ্য) গুনাহ্কে এমন মনে করে যে, যেমন কোন একটি মাছি তার নাকে বসলো আর সে হাত দিয়ে মাছিটিকে তাড়িয়ে দিলে তা উড়ে গেলো।

 গুনাহ্গারই নয় বরং অন্য পশু এবং মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৬. গুনাহ্’র কারণে শুধু গুনাহ্গারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং তাতে অন্য পশু এবং অন্য মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নিশ্চয়ই পাখি তার বাসায় মরে যায় শুধুমাত্র যালিমের যুলুমের কারণেই।

মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: যখন এলাকায় দুর্ভিক্ষ বা অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তখন পশুরা গুনাহ্গারদের প্রতি লা’নত করে এবং বলে: এটি আদম সন্তানের গুনাহ্’রই অপকার।

অসম্মান ও লাঞ্ছনার কারণ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৭. গুনাহ্ গুনাহ্গার ব্যক্তির অসম্মান ও লাঞ্ছনার কারণ হয়। সম্মান তো একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًا».

‘‘কেউ সম্মান চাইলে তার জানা উচিৎ যে, সকল সম্মান আল্লাহ্’র জন্যই তথা তাঁরই আনুগত্যে নিহিত’’। (ফাত্বির : ১০)

’হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: গুনাহ্গাররা যদিও উন্নত মানের ঘোড়া ও খচ্ছরে সাওয়ার হয় তবুও গুনাহ্’র লাঞ্ছনা তাদের অন্তর থেকে কখনো পৃথক হয় না। আল্লাহ্ তা‘আলা যে কোনভাবে গুনাহ্গারকে লাঞ্ছিত করবেনই।

 গুনাহ্গারের মেধা নষ্ট করে দেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৮. গুনাহ্ গুনাহ্গারের মেধা নষ্ট করে দেয়। কারণ, মেধার এক ধরনের আলো রয়েছে। আর গুনাহ্ উক্ত আলোকে একেবারেই নষ্ট করে দেয়।

জনৈক বুযুর্গ বলেন: মানুষের মেধা নষ্ট হলেই তো সে গুনাহ্ করতে পারে। কারণ, তার মেধা সচল থাকলে সে কিভাবে এমন সত্তার অবাধ্য হতে পারে যার হাতে তার জীবন ও মরণ এবং যিনি তাকে সর্বদা দেখছেন। ফিরিশ্তারাও তাকে দেখছেন। কুর‘আন, ঈমান, মৃত্যু ও জাহান্নাম তাকে গুনাহ্ করা থেকে নিষেধ করছে। গুনাহ্’র কারণে তার দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সবের পরও গুনাহ্ করা কি একজন সচল মেধাবী লোকের কাজ হতে পারে?!

 গুনাহ্গারের অন্তরের উপর ভ্রষ্টাচারের সিল-মোহর পড়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৯. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তরের উপর ভ্রষ্টাচারের সিল-মোহর পড়ে যায়। তখন সে আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ থেকে সম্পূর্ণরূপে গাফিল হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوْبِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ».

‘‘না, তাদের কথা সত্য নয়। বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে’’। (মুত্বাফ্ফিফীন : ১৪)

কোন কোন ব্যাখ্যাকার বলেছেন: উক্ত মরিচা গুনাহ্’র মরিচা। কারণ, গুনাহ্ করলে অন্তরে এক ধরনের মরিচা ধরে। আর উক্ত মরিচা বাড়লেই উহাকে ‘‘রান’’ বলা হয়। আরো বাড়লে উহাকে ‘‘ত্বাব্’’’ বা ‘‘খাত্ম’’ তথা সীল-মোহর বলা হয়। তখন অন্তর এমন হয়ে যায় যেন তা পর্দা দিয়ে বেষ্টিত।

 গুনাহ্’র উপর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ফিরিশ্তাদের লা’নত

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২০. কিছু কিছু গুনাহ্’র উপর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ফিরিশ্তাদের লা’নত রয়েছে। সুতরাং এ জাতীয় গুনাহ্গারের উপর উক্ত লা’নত পতিত হবে অবশ্যই। আর যে গুনাহ্গুলো এগুলোর চেয়েও বড় উহার উপর তো তাঁদের লা’নত আছেই।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْـمُوْتَشِمَاتِ وَالْـمُتَنَمِّصَاتِ وَالْـمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْـنِ، الْـمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন সে মহিলাকে যে অপরের চেহারা দাগে এবং যে অপরকে দিয়ে নিজ চেহারা দাগ করায়, যার চেহারার কেশ উঠানো হয় এবং যে মহিলা সৌন্দর্যের জন্য নিজ দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে; আল্লাহ্ প্রদত্ত গঠন পরিবর্তন করে’’।

(বুখারী ৪৮৮৬, ৫৯৩১, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮;; মুসলিম ২১২৫)

আবূ হুরাইরাহ্, আয়েশা, আস্মা’ ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْـمُسْتَوْصِلَةَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন নিজের চুলের সাথে অন্য চুল সংযুক্তকারিণী মহিলাকে এবং যার জন্য তা করা হয়েছে তাকেও’’।

(বুখারী ৫৯৩৩, ৫৯৩৪, ৫৯৩৭, ৫৯৪২; মুসলিম ২১২২, ২১২৩, ২১২৪)

জাবির ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত তথা অভিসম্পাত করেছেন সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তিকে। তারা হচ্ছে: সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষীদ্বয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: তারা সবাই সমপর্যায়েরই দোষী’’।

(মুসলিম ১৫৯৭, ১৫৯৮; তিরমিযী ১২০৬; আবূ দাউদ ৩৩৩৩; ইব্নু মাজাহ্ ২৩০৭; ইব্নু হিববান ৫০২৫; আহমাদ ৬৩৫, ৬৬০, ৮৪৪, ১১২০, ১২৮৮, ১৩৬৪, ৩৭২৫, ৩৭৩৭, ৩৮০৯, ৪৩২৭, ১৪৩০২)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْـمُحَلِّلَ وَالْـمُحَلَّلَ لَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন (কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য) হালালকারীকে এবং যার জন্য তাকে হালাল করা হয়েছে’’। (আবূ দাউদ ২০৭৬)

জাবির, ‘আলী ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  الْـمُحَلِّلَ وَالْـمُحَلَّلَ لَهُ.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন (কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য) হালালকারীকে এবং যার জন্য তাকে হালাল করা হয়েছে’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ১৯৬১, ১৯৬২; তিরমিযী ১১১৯, ১১২০)

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْـمُسْتَعَارِ؟ قَالُوْا: بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: هُوَ الْـمُحَلِّلُ، لَعَنَ اللهُ الْـمُحَلِّلَ وَالْـمُحَلَّلَ لَهُ.

‘‘আমি কি তোমাদেরকে ধার করা পাঁঠার সংবাদ দেবো না? সাহাবারা বললেন: হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহ্’র রাসূল। তখন তিনি বললেন: সে হচ্ছে হালালকারি। আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন (কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য) হালালকারিকে এবং যার জন্য তা হালাল করা হয়েছে’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ১৯৬৩)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ، يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ، وَيَسْرِقُ الْـحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন এমন চোরকে যার হাত খানা কাটা গেলো একটি লোহার টুপি অথবা এক খানা রশি চুরির জন্য’’।

(বুখারী ৬৭৮৩; মুসলিম ১৬৮৭)

আনাস্ বিন্ মালিক ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  فِيْ الْـخَمْرِ عَشْرَةً: عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْـمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالْـمُشْتَرِيَ لَهَا، وَالْـمُشْتَرَاةَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لُعِنَتِ الْـخَمْرُ بِعَيْنِهَا.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের ব্যাপারে দশ জন ব্যক্তিকে লা’নত তথা অভিসম্পাত করেন: যে মদ বানায়, প্রস্ত্তত কারক, যে পান করে, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নেয়া হয়, যে অন্যকে পান করায়, বিক্রেতা, যে লাভ খায়, খরিদদার এবং যার জন্য খরিদ করা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সরাসরি মদকেই অভিসম্পাত করা হয়’’।

(তিরমিযী ১২৯৫; আবূ দাউদ ৩৬৭৪; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৩, ৩৪৪৪)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন সে ব্যক্তিকে যে নিজ পিতাকে লা’নত করে, যে আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন পশু যবেহ্ করে, যে কোন বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দেয় এবং যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে’’। (মুসলিম ১৯৭৮)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  مَنِ اتَّخَذَ شَيْئًا فِيْهِ الرُّوْحُ غَرَضًا.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন এমন ব্যক্তিকে যে কোন জীবন্ত প্রাণীকে (তীরের) লক্ষ্যবস্ত্ত বানায়’’। (মুসলিম ১৯৫৮)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  الْـمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْـمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন এমন পুরুষকে যারা মহিলাদের সাথে যে কোন ভাবে (পোশাকে, চলনে ইত্যাদি) সামঞ্জস্য বজায় রাখতে উৎসাহী এবং সে মহিলাদেরকে যারা পুরুষদের সাথে যে কোন ভাবে (পোশাকে, চলনে ইত্যাদি) সামঞ্জস্য বজায় রাখতে উৎসাহী’’।

(বুখারী ৫৮৮৫, ৫৮৮৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْـمَرْأَةِ، وَالْـمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পুরুষকে লা’নত করেন যে পুরুষ মহিলার ঢংয়ে পোশাক পরে এবং এমন মহিলাকে লা’নত করেন যে মহিলা পুরুষের ঢংয়ে পোশাক পরে’’।

(আবূ দাউদ ৪০৯৮; ইব্নু হিববান ৫৭৫১, ৫৭৫২; হা’কিম ৪/১৯৪; আহমাদ ২/৩২৫)

আবূ জু’হাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَعَنَ النِّبِيُّ  الْـمُصَوِّرَ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন (যে কোনভাবে কোন প্রণীর) ছবি ধারণকারীকে’’। (বুখারী ২০৮৬, ২২৩৮, ৫৩৪৭)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন’’।

(আহমাদ ২৯১৫; ইব্নু হিববান ৪৪১৭; বায়হাক্বী ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬; আবূ ইয়া’লা ২৫৩৯; ‘আব্দুব্নু ’হুমাইদ্ ৫৮৯; হা’কিম ৪/৩৫৬)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ كَمَهَ أَعْمَى عَنِ الطَّرِيْقِ، وَلَعَنَ اللهُ مَنْ وَقَعَ عَلَى بَهِيْمَةٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন এমন ব্যক্তিকে যে কোন অন্ধকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে ব্যক্তিকেও যে চতুষ্পদ জন্তুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়’’।

(ত্বাবারানী/কবীর ১১৫৪৬; বায়হাক্বী ১৬৭৯৪; আহমাদ ১৮৭৫, ২৯১৫; ইব্নু ’হুমাইদ্ ৫৮৯; ইব্নু হিববান ৪৪১৭; আবূ ইয়া’লা’ ২৫৩৯; হা’কিম ৮/২৩১)

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ  حِمَارٌ قَدْ وُسِمَ فِيْ وَجْهِهِ، فَقَالَ: لَعَنَ اللهُ الَّذِيْ وَسَمَهُ.

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যার চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দেয়া হয়েছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করুক সে ব্যক্তিকে যে গাধাটির চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দিলো’’। (মুসলিম ২১১৭)

’হাস্সান বিন্ সাবিত, আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  زَوَّارَاتِ الْقُبُوْرِ.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি কবর যিয়ারতকারিণীদেরকে লা’নত করেন’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৫৯৬, ১৫৯৭)

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَلْعُوْنٌ مَنْ أَتَى اِمْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا.

‘‘অভিশপ্ত সে ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহার করে’’।

(আবূ দাউদ ২১৬২; আহমাদ ২/৪৪৪, ৪৭৯)

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا دَعَا الرَّجُلُ اِمْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ، فَأَبَتْ أَنْ تَجِيْءَ لَعَنَتْهَا الْـمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.

‘‘যখন কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীকে (সহবাসের জন্য) নিজ বিছানায় ডাকে অথচ সে সেখানে আসতে অস্বীকার করে তখন ফিরিশ্তারা তাকে সকাল পর্যন্ত লা’নত করতে থাকে’’। (বুখারী ৩২৩৭, ৫১৯৩; মুসলিম ১৪৩৬)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ، أَوِ انْتَمَى إِلَى غَيْرِ مَوَالِيْهِ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةُ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَـدْلًا، وَمَنْ أَخْفَرَ مُسْلِمًا، فَعَلَيْهِ لَـعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ.

‘‘যে ব্যক্তি নিজ জন্মদাতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা বলে দাবি করলো অথবা নিজ মনিব ছাড়া অন্য কাউকে মনিব বলে পরিচয় দিলো তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার পক্ষ থেকে কোন ফরয ও নফল আমল কবুল করবেন না। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করলো তার উপরও আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত এবং কিয়ামতের দিন তার পক্ষ থেকেও কোন ফরয ও নফল আমল কবুল করা হবে না’’। (মুসলিম ১৩৭০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيْهِ بِحَدِيْدَةٍ، فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ حَتَّى يَدَعَهُ، وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لِأَبِيْهِ وَأُمِّهِ.

‘‘যে ব্যক্তি নিজ ভাইয়ের প্রতি ধারালো কোন লোহা (ছুরি, চাকু, দা তথা যে কোন অস্ত্র) দ্বারা ইশারা করলো ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকবে যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে যদিও সে তার সহোদর ভাই হোক না কেন’’। (মুসলিম ২৬১৬)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَبَّ أَصْحَابِيْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ.

‘‘যে ব্যক্তি আমার সাহাবাদেরকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত’’। (ত্বাবারানী/কবীর ১২৭০৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ بَعْدِ مِيْثَاقِهِ، وَيَقْطَعُوْنَ مَآ أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِيْ الْأَرْضِ، أُوْلَآئِكَ لَـهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَـهُمْ سُوْءُ الدَّارِ».

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে দেয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা আদেশ করেছেন (আত্মীয়তার বন্ধন) তা ছিন্ন করে। পৃথিবীতে অশান্তি ছড়িয়ে বেড়ায় তাদের জন্যই রয়েছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল’’।

(রা’দ্ : ২৫)

তিনি আরো বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ لَعَنَهُمُ اللهُ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا»

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে লা’নত করেন এবং (আখিরাতে) তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন লাঞ্ছনাকর শাস্তি’’। (আহ্যাব : ৫৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَآ أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْـهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِيْ الْكِتَابِ، أُوْلَآئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা আমার অবতীর্ণ উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথ নির্দেশ কিতাবের মাধ্যমে মানুষকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার পরও তা লুকিয়ে রেখেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং সকল অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে’’। (বাক্বারাহ্ : ১৫৯)

তিনি আরো বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْـمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوْا فِيْ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী, সরলমনা মু’মিন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মহা শাস্তি’’। (নূর : ২৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ أُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْـجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هَؤُلَآءِ أَهْدَى مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا سَبِيْلًا، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ، وَمَنْ يَّلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ نَصِيْرًا»

‘‘তুমি কি ওদের প্রতি লক্ষ্য করেছো যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে। তারা (আল্লাহ্ তা‘আলাকে ছেড়ে) যাদুকর, গণক, প্রতিমা ও শয়তানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কাফিরদের সম্পর্কে বলে, তারাই মু’মিনদের চাইতে অধিক সুপথগামী। এদেরই প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেছেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে অভিসম্পাত করেন তার জন্য তুমি কোন সাহায্যকারীই পাবে না’’। (নিসা’ : ৫১-৫২)

সাওবান, আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  الرَّاشِيَ وَالْـمُرْتَشِيَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لَعَنَ اللهُ الرَّاشِيَ وَالْـمُرْتَشِيَ وَالرَّائِشَ الَّذِيْ يَمْشِيْ بَيْنَهُمَا.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন ঘুষখোর ও ঘুষদাতাকে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন ঘুষখোর, ঘুষদাতা এবং তাদের মাধ্যমকেও’’।

(তিরমিযী ১৩৩৬, ১৩৩৭; ইব্নু হিববান ৫০৭৬, ৫০৭৭; হা’কিম ৪/১০৩)

এ ছাড়াও আরো অনেক গুনাহ্ রয়েছে যে গুনাহ্গারের উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত রয়েছে। এ জাতীয় গুনাহ্গাররা যদি গুনাহ্ করার সময় এতটুকুই ভাবে যে তাদের উপর অনেকেরই লা’নত পড়ছে তা হলে তাদের জন্য উক্ত গুনাহ্ ছাড়া একেবারেই সহজ হয়ে যাবে।

 গুনাহ্গার ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ফিরিশ্তাদের দো‘আ থেকে বঞ্চিত হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২১. গুনাহ্গার ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ফিরিশ্তাদের দো‘আ থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, তাদের দো‘আ তো ওদেরই জন্যই যারা আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে এবং গুনাহ্ করলেও তাওবা করে নেয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আদেশ করে বলেন:

«فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُؤْمِنَاتِ»

‘‘অতএব তুমি জেনে রাখো যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার ও মু’মিন নর-নারীদের গুনাহ্’র জন্য’’। (মুহাম্মাদ্ : ১৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা আর্শ বহনকারী ফিরিশ্তাদের সম্পর্কে বলেন:

«الَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا، رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْـجَحِيْمِ، رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِيْ وَعَدْتَّهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ أَبَآئِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْـحَكِيْمُ، وَقِهِمُ السَّيِّئَاتِ، وَمَنْ تَقِ السَّيِّئَاتِ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهُ، وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ»

‘‘যারা আর্শ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুস্পার্শ্ব ঘিরে আছে তারা তাদের প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা ও তাঁর প্রশংসা করে এবং তাঁর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা মু’মিনদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে এ বলে যে, হে আমাদের প্রভু! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে তাদেরকে আপনি ক্ষমা করে দিন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদেরকে দাখিল করুন স্থায়ী জান্নাতে যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎকর্মশীল রয়েছে তাদেরকেও। আপনি তো নিশ্চয়ই পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। আপনি তাদেরকে গুনাহ্’র পরিণাম (শাস্তি) থেকেও রক্ষা করুন। আপনি যাকে সে দিন গুনাহ্’র পরিণাম থেকে রক্ষা করবেন তাকেই তো অনুগ্রহ করবেন। আর এটাই তো (তাদের জন্য) মহা সাফল্য’’। (গাফির/মু’মিন ৭-৯)

 গুনাহ্’র নির্ধারিত কিছু শাস্তি রয়েছে যা পরকালে গুনাহ্গারকে অবশ্যই ভুগতে হবে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২২. এ ছাড়াও কিছু গুনাহ্’র নির্ধারিত কিছু শাস্তি রয়েছে যা পরকালে গুনাহ্গারকে অবশ্যই ভুগতে হবে। তা নিম্নরূপ:

সামুরাহ্ বিন্ জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশির ভাগ সময় ভোর বেলায় সাহাবাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমরা কি কেউ গত রাত কোন স্বপ্ন দেখেছো? তখন সাহাবাদের যে যাই দেখেছেন তাঁর নিকট তা বলতেন। এক সকালে তিনিই ভোর বেলায় সাহাবাদেরকে বললেন: গত রাত আমার নিকট দু’ জন ব্যক্তি এসেছে। তারা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললো: চলুন, তখন আমি তাদের সাথেই রওয়ানা করলাম। যেতে যেতে আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছুলাম যে এক পেশে অথবা চিৎ হয়ে শায়িত। অন্য আরেক জন তার পাশেই দাঁড়িয়ে একটি প্রকান্ড প্রস্তর হাতে। লোকটি পাথর মেরে শায়িত ব্যক্তির মাথা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে এবং পাথরটি মাথায় লেগে দূরে ছিটকিয়ে পড়ছে। লোকটি ছিটকে পড়া পাথর খন্ড নিয়ে ফিরে আসতে আসতেই শায়িত ব্যক্তির মাথা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। অতঃপর দাঁড়ানো ব্যক্তি আবারো শায়িত ব্যক্তির মাথায় পূর্বের ন্যায় আঘাত হানছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আশ্চর্য! এরা কারা? আমার সাথীদ্বয় বললো: সামনে চলুন। তখন আমরা সামনে চললাম। যেতে যেতে আমরা আবারো এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছুলাম যে বসা অথবা চিত হয়ে শায়িত। অন্য আরেক জন তার পাশেই দাঁড়িয়ে একটি মাথা বাঁকানো লোহা হাতে। লোকটি বাঁকানো লোহা দিয়ে শায়িত ব্যক্তির একটি গাল, নাকের ছিদ্র এবং চোখ ঘাড় পর্যন্ত চিরে ফেলছে। এরপর সে উক্ত ব্যক্তির অন্য গাল, নাকের ছিদ্র এবং চোখটিকেও এমনিভাবে চিরে ফেলছে। লোকটি শায়িত ব্যক্তির এক পার্শ্ব চিরতে না চিরতেই তার অন্য পার্শ্ব পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে এবং লোকটি বসা অথবা শায়িত ব্যক্তিটির সাথে সে ব্যবহারই করছে যা পূর্বে করেছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আশ্চর্য! এরা কারা? আমার সাথীদ্বয় বললো: সামনে চলুন। তখন আমরা সামনে চললাম। যেতে যেতে আমরা চুলার ন্যায় একটি বড় গর্তের মুখে পৌঁছুলাম। গর্ত থেকে খুব চিৎকার শুনা যাচ্ছে। তখন আমারা গর্তের ভেতরে তাকালে দেখলাম, সেখানে অনেকগুলো উলঙ্গ পুরুষ ও মহিলা। নিচ থেকে কঠিন লেলিহান আগুন তাদেরকে ধাওয়া করছে এবং তা তাদের নিকট পৌঁছুতেই তারা খুব চিৎকারে ফেটে পড়ছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আশ্চর্য! এরা কারা? আমার সাথীদ্বয় বললো: সামনে চলুন। তখন আমরা সামনে চললাম। যেতে যেতে আমরা একটি রক্তিম নদীর পার্শ্বে পৌঁছুলাম। নদীতে জনৈক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। নদীর পার্শ্বে অন্য আরেক জন অনেকগুলো পাথর খন্ড সামনে নিয়ে বসে আছে। লোকটি সাঁতার কাটতে কাটতে পাথর ওয়ালার নিকট এসে হা করতেই সে তার মুখে একটি পাথর গুঁজে দেয়। অতঃপর সে আবারো সাঁতার কাটতে যায় এবং সাঁতার কাটতে কাটতে আবারো পাথর ওয়ালার নিকট আসলে সে পূর্বের ন্যায় আরেকটি পাথর তার মুখে গুঁজে দেয়। ...

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আজ রাত তো আমি অনেকগুলো আশ্চর্যজনক ব্যাপারই দেখলাম তা তোমরা আমাকে খুলে বলবে কি? তখন তারা আমাকে বললো: অবশ্যই আমরা আপনাকে ব্যাপারগুলো এখনই খুলে বলছি। তাই শুনুন। প্রথম ব্যক্তির দোষ এই যে, সে কুর‘আন মাজীদ তিলাওয়াত করে সে মতে আমল করে না এবং ফরয নামায না পড়ে সে ঘুমিয়ে থাকে। দ্বিতীয় ব্যক্তির দোষ এই যে, সে ভোর বেলায় ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলে বেড়ায় যা দুনিয়ার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। আর উলঙ্গ পুরুষ ও মহিলাদের দোষ এই যে, তারা ছিলো ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী। আর চতুর্থ ব্যক্তিটি হচ্ছে সুদখোর। (বুখারী ১৩৮৬, ৭০৪৭)

 গুনাহ্’র কারণে পৃথিবীর পানি, বাতাস, ফলমূল, শস্য, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি বিনষ্ট হয়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৩. গুনাহ্’র কারণে পৃথিবীর পানি, বাতাস, ফলমূল, শস্য, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি বিনষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«ظَهَرَ الْفَسَادُ فِيْ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ»

‘‘মানুষের কৃতকর্মের কারণেই জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আর তা এ কারণেই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এরই মাধ্যমে বান্দাহ্কে তার কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করান যাতে তারা (সঠিক পথে) ফিরে আসে’’। (রূম : ৪১)

 গুনাহ্’র কারণেই পৃথিবীতে ভূমিধস ও ভূমিকম্প সংঘটিত হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৪. গুনাহ্’র কারণেই পৃথিবীতে ভূমিধস ও ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এমনকি ভূমি থেকে বরকত একেবারেই উঠে যায়।

এ কথা কারোর অজানা নয় যে, ইতিপূর্বে এখনকার চাইতেও ফলমূল আরো বড় ও আরো সুস্বাদু হতো। এমনকি হাজরে আস্ওয়াদ একদা সূর্যের ন্যায় জ্বলজ্বলে এবং সাদা ছিলো। অথচ মানুষের গুনাহ্’র কারণেই তা আজ আস্ওয়াদ বা কালো। সুতরাং বুঝা গেলো, গুনাহ্’র প্রভাব সকল বস্ত্তর উপরই পড়ে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সামূদ্ সম্প্রদায়ের এলাকায় পৌঁছুলেন তখন তিনি সাহাবাদেরকে তাদের কুয়া থেকে পানি পান ও তা সংগ্রহ করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি গুনাহ্’র প্রভাব মানুষের উপরও পড়ে। যার দরুন কোন কোন আলিমের ধারণা মতে মানুষ দিন দিন খাটো হতে চলছে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَطُوْلُهُ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا. فَلَمْ يَزَلِ الْـخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الْآنَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন। তখন তিনি ছিলেন ষাট হাত লম্বা। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মানুষ খাটো হতেই চলছে’’। (বুখারী ৩৩২৬; মুসলিম ২৮৪১)

তবে কিয়ামতের পূর্বে আবারো যখন ঈসা (আঃ) দুনিয়াতে অবতরণ করে বিশ্বের বুকে পুরো শরীয়ত বাস্তবায়ন করবেন তখন আবারো আকাশ থেকে বরকত নেমে আসবে। তখন এক আনারের খোসার ছায়া দশ থেকে চল্লিশ জন মানুষ গ্রহণ করতে পারবে এবং তা সকলের খাদ্যের জন্যও যথেষ্ট হবে। আঙ্গুরের একটি ছড়া একটি উটের বোঝাই হবে।

 গুনাহ্গারের অন্তর থেকে ইসলামী চেতনায় লালিত মানব আত্মসম্মানবোধ একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৫. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তর থেকে ইসলামী চেতনায় লালিত মানব আত্মসম্মানবোধ একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়। এ কথা সত্য যে, যার ঈমান যতই দৃঢ় তার এই আত্মমর্যাদাবোধ ততই মজবুত। ঠিক এরই বিপরীতে যার ঈমান যতই দুর্বল তার এই আত্মমর্যাদাবোধও ততই দুর্বল। এ কারণেই তা পূর্ণাঙ্গরূপে পাওয়া যায় রাসূলদের মধ্যে। এরপর ঈমানের তারতম্য অনুযায়ী অন্যদের মধ্যেও।

সা’দ বিন্ ’উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَوْ رَأَيْتُ رَجُلًا مَعَ اِمْرَأَتِيْ لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ.

‘‘আমি কাউকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে দেখলে তৎক্ষনাৎই তার গর্দান উড়িয়ে দেবো’’।

উল্লিখিত উক্তিটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কানে পৌঁছুতেই তিনি বললেন:

أَتَعْجَبُوْنَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ؟ وَاللهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ، وَاللهُ أَغْيَرُ مِنِّيْ، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللهِ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ.

‘‘তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো সা’দের আত্মসম্মানবোধ দেখে? আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আমার আত্মসম্মানবোধ তার চেয়েও বেশি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার আরো বেশি। যার দরুন তিনি হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা’’।

(বুখারী ৬৮৪৬; মুসলিম ১৪৯৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ! وَاللهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ أَنْ يَّزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ.

‘‘হে মুহাম্মাদ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতরা! আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতে আর কারোর আত্মসম্মানবোধ বেশি হতে পারেনা। যার দরুন তিনি চান না যে, তাঁর কোন বান্দাহ্ বা বান্দি ব্যভিচার করুক’’। (বুখারী ১০৪৪; মুসলিম ৯০১)

তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত কোন ’উযর বা কৈফিয়ত গ্রহণ করা উক্ত আত্মসম্মানবোধ বিরোধী নয়। বরং তা প্রশংসনীয়ও বটে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا أَحَدَ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ، وَلِذَلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ أَنْزَلَ الْكِتَابَ وَأَرْسَلَ الرُّسُلَ، وَلَا أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمَدْحُ مِنَ اللهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ مَدَحَ نَفْسَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও অধিক আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও কারোর যুক্তিসঙ্গত কৈফিয়ত গ্রহণ করা বেশি পছন্দ করেন এমন আর কেউ নেই। এ জন্যই তিনি কিতাব নাযিল করেন এবং রাসূল প্রেরণ করেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও অন্যের প্রশংসা বেশি পছন্দ করেন এমন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি নিজের প্রশংসা নিজেই করেন’’।

(বুখারী ৪৬৩৪, ৪৬৩৭, ৫২২০, ৭৪০৩; মুসলিম ২৭৬০)

জাবির বিন্ ‘আতীক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مِنَ الْغَيْرَةِ مَا يُحِبُّ اللهُ، وَمِنْهَا مَا يُبْغِضُ اللهُ، فَأَمَّا الَّتِيْ يُحِبُّهَا اللهُ فَالْغَيْرَةُ فِيْ الرِّيْبَةِ، وَأَمَّا الْغَيْرَةُ الَّتِيْ يُبْغِضُهَا اللهُ فَالْغَيْرَةُ فِيْ غَيْرِ رِيْبَةٍ.

‘‘কিছু আত্মসম্মানবোধ আল্লাহ্ তা‘আলা পছনদ করেন আর কিছু অপছন্দ। পছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ এই যে, যা হবে যুক্তিসঙ্গত তথা ব্যভিচার সম্বন্ধে সংশয়াকুল। আর অপছন্দনীয় আত্মসম্মানবোধ এই যে, যা হবে অযৌক্তিক তথা সংশয়হীন’’।

(আবূ দাউদ ২৬৫৯; ইব্নু হিববান ২৯৫; দা’রামী ২২২৬; নাসায়ী ২৫৫৮; আহমাদ ৫/৪৪৫, ৪৪৬)

কারোর মধ্যে আত্মসম্মানবোধ দুর্বল হয়ে গেলে সে আর গুনাহ্কে গুনাহ্ বলে মনে করে না। না নিজের ব্যাপারে না অন্যের ব্যাপারে। কেউ কেউ তো গুনাহ্ করতে করতে ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সে গুনাহ্কে সুন্দর রূপে অন্যের নিকটও উপস্থাপন করে। তাকে সে গুনাহ্ করতে বলে এবং করার জন্য উৎসাহ্ জোগায়। বরং তা সংঘটনের জন্য তাকে সহযোগিতাও করে থাকে। এ কারণেই ‘‘দাইয়ূস’’ তথা যে নিজ পরিবারের ইয্যতহানী হলেও তা সহজেই সহ্য করে যায় তার উপর জান্নাত হারাম।

 গুনাহ্গারের অন্তর থেকে লজ্জাবোধ একেবারেই নি:শেষ হয়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৬. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তর থেকে লজ্জাবোধ একেবারেই নি:শেষ হয়ে যায়। আর লজ্জাশীলতা তো কল্যাণই কল্যাণ।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ.

‘‘লজ্জা বলতে সবটাই ভালো’’। (মুসলিম ৩৭)

লজ্জাবোধ চলে গেলে মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।

আবূ মাস্’ঊদ্ বাদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلَامِ النُبُوَّةِ : إِذَا لَمْ تَسْتَحْيِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ.

‘‘নবীদের যে কথাটি মানুষ আজো স্মরণ রেখেছে তা হচ্ছে, যখন তুমি লজ্জাই পাচ্ছো না তখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারো’’।(বুখারী ৩৪৮৩, ৩৪৮৪)

লজ্জা হারিয়ে কখনো মানুষ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সে একাকী কোন খারাপ কাজ করার পরও জনসম্মুখে তা জানিয়ে দেয় এবং তা করতে পেরেছে বলে সে নিজ মনে খুব আনন্দ বোধ করে। এমন পর্যায়ে কোন ব্যক্তি উপনীত হলে তখন সে ব্যক্তির সঠিক পথে ফিরে আসার আর তেমন কোন সম্ভাবনা থাকে না।

অন্তর থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার সম্মান ও মাহাত্ম্য একেবারেই উঠে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৭. গুনাহ্ করতে করতে অন্তর থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার সম্মান ও মাহাত্ম্য একেবারেই উঠে যায়। কারণ, গুনাহ্গারের অন্তরে যদি আল্লাহ্ তা‘আলার সম্মান ও মহিমা অটুট থাকতো তা হলে সে উক্ত গুনাহ্ সম্পাদন করতেই পারতো না এবং এরই পরিণতিতে আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষের অন্তর থেকেও তার সম্মান উঠিয়ে নেন। আর আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে অসম্মান করবেন তাকে সম্মান দেয়ার আর কেউই নেই।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

وَمَنْ يُّهِنِ اللهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُّكْرِمٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা আর কেউই নেই’’। (হাজ্জ : ১৮)

 আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্কে পরিত্যাগ করেন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৮. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্কে পরিত্যাগ করেন। তাকে আর কোন ব্যাপারে সহযোগিতা করেন না। বরং তাকে প্রবৃত্তি ও শয়তানের হাতে ছেড়ে দেন। তখন তার ধ্বংস অনিবার্য।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا الله وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ، وَاتَّقُوْا اللهَ، إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ، وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوْا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ، أُوْلَآئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেরই এ কথা ভেবে দেখা দরকার যে, সে কিয়ামত দিবসের জন্য কি পুঁজি তৈরি করেছে। অতএব তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকেই ভয় করো। তোমাদের কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা নিশ্চয়ই অবগত এবং তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। যার ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা (শুধু তাদেরকেই ভুলে যান নি) বরং তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। এরাই তো সত্যিকার পাপাচারী’’। (হাশর : ১৮-১৯)

এর চাইতেও বেশি ক্ষতি কারোর জন্য আর কি হতে পারে যে, সে নিজের পরিণতির কথা ভাবে না। নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা চিন্তা করে না। নিজের পূর্ণ শান্তি ও তৃপ্তির আকাঙ্খা তথা তা অর্জনের কোন প্রচেষ্টাই তার নেই।

 গুনাহ্গারকে ইহ্সানের পর্যায় থেকে বঞ্চিত করে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

২৯. গুনাহ্ গুনাহ্গারকে ইহ্সানের পর্যায় থেকে বঞ্চিত করে। ইহ্সানের পর্যায় হলো সর্বোচ্চ পর্যায়। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদাত এমনভাবে করা যে, যেন আপনি আল্লাহ্ তা‘আলাকে দেখতে পাচ্ছেন। আর তা না হলে এমন যেন হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন। ফলে সে মুহসিনীনদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা ও বিশেষ সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। কখনো কখনো এমনো হয় যে, সে ঈমানের পর্যায় থেকেও বঞ্চিত হয়। ফলে ঈমানের সকল কল্যাণও তার হাতছাড়া হয়ে যায়। ঈমানের প্রায় একশতটি কল্যাণ রয়েছে। তম্মধ্যে মু’মিনদের জন্য মহা পুণ্য, দুনিয়া ও আখিরাতের সকল বালা-মুসীবত থেকে উদ্ধার, তাদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট আর্শবাহী ফিরিশ্তাদের মাগফিরাত কামনা, আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ বন্ধুত্ব, তাদেরকে ফিরিশ্তাদের মাধ্যমে শরীয়তের উপর দৃঢ়পদ করণ, তাদের জন্য স্পেশাল সম্মান, তাদের জন্য সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার সহযোগিতা, দুনিয়া ও আখিরাতের সুউচ্চ সম্মান, গুনাহ্ মাফ ও সম্মান জনক উপজীবিকা, পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ রহমত ও দীর্ঘ অন্ধকার পথ পাড়ি দেয়ার জন্য নূরের সুব্যবস্থা, ফিরিশ্তা, নবী ও নেক্কারদের ভালোবাসা, আখিরাতের নিরাপত্তা এবং তারাই পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার একমাত্র নি’য়ামতপ্রাপ্ত ও তাদের জন্যই কুর‘আনের হিদায়াত ও সুচিকিৎসা ইত্যাদি অন্যতম। কখনো কখনো এমন হয় যে, বার বার গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা তার অন্তরের উপর কুফরির মোহর মেরে দেন এবং সে ব্যক্তি ইসলামের গন্ডি থেকেই সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়। তারপরও আল্লাহ্ চায় তো তাওবা’র দরোজা সর্বদা তার জন্য খোলা রয়েছে।

 আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাতমুখী পুণ্যময় পদযাত্রাকে শ্লথ করে দেয় এবং সে পথে বাধা তথা অন্তরায় সৃষ্টি করে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩০. গুনাহ্ বান্দাহ্’র আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাতমুখী পুণ্যময় পদযাত্রাকে শ্লথ করে দেয় এবং সে পথে বাধা তথা অন্তরায় সৃষ্টি করে। কারণ, এ পদযাত্রা একান্ত আন্তরিক শক্তির উপরই নির্ভরশীল। আর একমাত্র গুনাহ্’র কারণেই উক্ত আন্তরিক শক্তি ধীরে ধীরে লোপ পায়। এমনকি তা কখনো কখনো সমূলেই বিনষ্ট হয়ে যায়। কারণ, গুনাহ্’র একান্ত বৈশিষ্ট্য এই যে, তা অন্তরকে নির্জীব, রোগাক্রান্ত অথবা দুর্বল করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি আটটি সমস্যার সম্মুখীন হয় যেগুলো থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট একান্তভাবে আশ্রয় কামনা করেছিলেন। সেগুলো হচ্ছে চিন্তা, আশঙ্কা, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের চাপ ও মানুষের অপমান।

 নি’য়ামতের পরিবর্তে আযাব নেমে আসে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩১. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলার নি’য়ামতের পরিবর্তে আযাব নেমে আসে। কারণ, একমাত্র গুনাহ্’র কারণেই দুনিয়া থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার নি’য়ামত উঠে যায় এবং সমূহ বিপদ নেমে আসে।

‘আলী (রাঃ) ইরশাদ করেন:

مَا نَزَلَ بَلَاءٌ إِلاَّ بِذَنْبٍ، وَلَا رُفِعَ إِلاَّ بِتَوْبَةٍ.

‘‘গুনাহ্’র কারণেই সমূহ বিপদ নেমে আসে এবং তাওবা’র কারণেই তা উঠিয়ে নেয়া হয়’’।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ»

‘‘তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো আল্লাহ্ তা‘আলা এমনিতেই ক্ষমা করে দেন’’। (শুরা’ : ৩০)

 তা‘আলা গুনাহ্গারের অন্তরে ভীষণ ভয়-ভীতি ঢেলে দেন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩২. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা গুনাহ্গারের অন্তরে ভীষণ ভয়-ভীতি ঢেলে দেন। সুতরাং গুনাহ্গার সর্বদা ভয়ার্ত থাকে। সামান্য বাতাস তার ঘরের দরোজা একটু করে নাড়া দিলেই অথবা সে কারোর পদধ্বনি শুনতে পেলেই বিপদের আশঙ্কা করে।

 একাকীত্ব, ভয় ও ভয়ঙ্কর বিক্ষিপ্তভাব সৃষ্টি করে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৩. গুনাহ্ গুনাহ্গারের অন্তরে এক ধরনের একাকীত্ব, ভয় ও ভয়ঙ্কর বিক্ষিপ্তভাব সৃষ্টি করে। তখন তার মাঝে ও আল্লাহ্ তা‘আলার মাঝে এবং তার মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে এক ধরনের দূরত্ব জন্ম নেয়। তখন সে কারোর সান্নিধ্যে আগ্রহী হয় না। বরং তাদের সান্নিধ্যে সে সমূহ অকল্যাণের আশঙ্কা করে। গুনাহ্ যতই বাড়বে এ দূরত্বও ততই বৃদ্ধি পাবে।

 অন্তরের সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থতা এবং স্থিরতার পরিবর্তে স্খলন বাড়িয়ে দেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৪. গুনাহ্ গুনাহ্গারের অন্তরের সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থতা এবং স্থিরতার পরিবর্তে স্খলন বাড়িয়ে দেয়। বাহ্যিক রোগ যেমন শরীরকে অসুস্থ করে তেমনিভাবে গুনাহ্ও অন্তরকে অসুস্থ করে। আর এ রোগের চিকিৎসা একমাত্র গুনাহ্ পরিত্যাগ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঠিক এরই বিপরীতে যে নিজ প্রবৃত্তিকে দমন করতে পেরেছে সে যেমন পরকালে আল্লাহ্ চায় তো জান্নাতে থাকবে তেমনিভাবে এ দুনিয়াতেও সে জান্নাতে। কবরের জীবনেও সে জান্নাতে। কোন শান্তিকেই এ শান্তির সাথে তুলনা করা যায় না। বরং অন্য শান্তির তুলনা এ শান্তির সাথে এমন যেমন দুনিয়ার শান্তির সাথে আখিরাতের শান্তির তুলনা। আর সবারই এ কথা জানা যে, এতদুভয়ের মাঝে কোন তুলনাই হয় না। এ ব্যাপার শুধু ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউই অনুভব করতে পারবে না।

যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে ভালোবাসে সে এ দুনিয়াতে তিন প্রকারের শাস্তি ভোগ করে। সে জিনিস পাওয়ার আগে তা পাচ্ছে না বলে মানসিক শাস্তি, তা পাওয়ার পর হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাগত শাস্তি এবং তা হাতছাড়া হয়ে গেলে বিরহের শাস্তি। কবরের জীবনেও তার জন্য অনেকগুলো শাস্তি রয়েছে। দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে বঞ্চিত হওয়ার শাস্তি, তা আর কখনো ফিরে আসবে না বলে আপসোসের শাস্তি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার শাস্তি। সুতরাং চিন্তা, আশঙ্কা ও আফসোস তার অন্তরকে সেখানে এমনভাবে ক্লান্ত করে তুলবে যেমনিভাবে কিড়া-মাকড় তার শরীরকে খেয়ে নষ্ট করে ফেলবে। আর জাহান্নামে তো তার জন্য হরেক রকমের শাস্তি রয়েছেই। যার কোন ইয়ত্তা নেই।

 অন্তর্দৃষ্টি ও উহার বিশেষ আলোকরশ্মি নষ্ট হয়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৫. গুনাহ্’র কারণে অন্তর্দৃষ্টি ও উহার বিশেষ আলোকরশ্মি নষ্ট হয়ে যায়। তখন জ্ঞানের পথগুলো তার জন্য একেবারেই রুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ, গুনাহ্’র অন্ধকার সে আলোকে ঢেকে ফেলে। কখনো এ অন্ধকার গুনাহ্গারের চেহারায়ও ফুটে উঠে। এমনকি পরিশেষে এ অন্ধকার তার কবরে গিয়েও প্রতিভাত হয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ هَذِهِ الْقُبُوْرَ مَمْلُوْءَةٌ ظُلْمَةً عَلَى أَهْلِهَا، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُنَوِّرُهَا لَـهُمْ بِصَلَاتِيْ عَلَيْهِمْ.

‘‘এ কবরগুলো অধিবাসীদেরকে নিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ। আর আল্লাহ্ তা‘আলা আমার দো‘আয় তাদের জন্য তা আলোকিত করে দেন’’। (মুসলিম ৯৫৬)

কিয়ামতের দিন এ অন্ধকার গুনাহ্গারের চেহারায় আরো সুস্পষ্টরূপে ধরা পড়বে। যা তখন সবাই দেখতে পাবে। দেখতে কয়লার মতো দেখাবে।

 অন্তরকে হীন, লাঞ্ছিত ও কলুষিত করে দেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৬. গুনাহ্ গুনাহ্গারের অন্তরকে হীন, লাঞ্ছিত ও কলুষিত করে দেয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا، وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا.

‘‘সে ব্যক্তিই একমাত্র সফলকাম যে নিজ অন্তরাত্মাকে (আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের মাধ্যমে) পবিত্র করেছে এবং একমাত্র সে ব্যক্তিই ব্যর্থ যে নিজ অন্তরাত্মাকে (আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যতার মাধ্যমে) কলুষিত করেছে’’। (শাম্স : ৯-১০)

সর্বদা শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বেড়াজালে আবদ্ধ থাকে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৭. গুনাহ্গার সর্বদা শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বেড়াজালে আবদ্ধ থাকে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাত অভিমুখী পদযাত্রা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর আল্লাহ্ভীরুতাই উক্ত কয়েদখানা থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ। মূল কথা হচ্ছে, বান্দাহ্’র অন্তর আল্লাহ্ তা‘আলা থেকে যতই দূরে সরবে ততই নানা বিপদাপদ তার দিকে ঘনিয়ে আসবে। আর যতই নিকটবর্তী হবে ততই বিপদাপদ দূরে সরে যাবে। আল্লাহ্ তা‘আলা থেকে অন্তরের দূরত্ব চার ধরনের। গাফিলতির দূরত্ব, সাধারণ গুনাহ্’র দূরত্ব, বিদ্‘আতের দূরত্ব এবং মুনাফিকি, শির্ক ও কুফরির দূরত্ব।

 আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর সকল বান্দাহ্’র নিকট লাঞ্ছিত হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৮. গুনাহ্গার ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর সকল বান্দাহ্’র নিকট লাঞ্ছিত। তাকে কেউই সম্মান দিতে চায় না। এমনকি তার মৃত্যুর পর কেউ তাকে স্মরণও করে না। ঠিক এরই বিপরীতে নবী ও নবীদের সত্যিকার অনুসারীদের সম্মান ও পরিচিতি অনস্বীকার্য।

 ভালো বিশেষণের পরিবর্তে অনেকগুলো খারাপ বিশেষণে বিশেষিত হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৩৯. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গার ব্যক্তি ভালো বিশেষণের পরিবর্তে অনেকগুলো খারাপ বিশেষণে বিশেষিত হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যকারীদের বিশেষণসমূহ:

ঈমানদার, নেককার, নিষ্ঠাবান, আল্লাহ্ভীরু, আনুগত্যশীল, আল্লাহ্ অভিমুখী, বুযুর্গ, পরহেযগার, সৎকর্মশীল, ’ইবাদাতগুযার, রোনাযার, মুত্তাক্বী, খাঁটি ও সর্বগ্রাহ্য ব্যক্তি ইত্যাদি।

আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যদের বিশেষণসমূহ:

কাফির, মুশ্রিক, মুনাফিক, বদ্কার, গুনাহ্গার, অবাধ্য, খারাপ, ফাসাদী, খবীস, আল্লাহ্’র রোষানলে পতিত, হঠকারী, ব্যভিচারী, চোর, চোট্টা, চোগলখোর, পরদোষ চর্চাকারী, হত্যাকারী, লোভী, ইতর, মিথ্যুক, খিয়ানতকারী, সমকামী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, গাদ্দার ইত্যাদি।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ»

‘‘ঈমানের পর ফাসিকি তথা অবাধ্যতা খুবই নিকৃষ্ট নাম’’। (’হুজুরাত : ১১)

 গুনাহ্ গুনাহ্গারের বুদ্ধিমত্তায় একান্ত প্রভাব ফেলে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪০. গুনাহ্ গুনাহ্গারের বুদ্ধিমত্তায় একান্ত প্রভাব ফেলে। আপনি স্বচক্ষেই দু’ জন বুদ্ধিমানের মধ্যে বুদ্ধির তফাৎ দেখবেন। যাদের এক জন আল্লাহ্’র আনুগত্যশীল আর আরেক জন অবাধ্য। দেখবেন, আল্লাহ্’র আনুগত্যকারীর বুদ্ধি অপর জনের চাইতেও বেশি। তার চিন্তা ও সিদ্ধান্ত একান্তই সঠিক।

এমন ব্যক্তিকে কিভাবে বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে যে অনন্তকালের সুখ শান্তিকে কুরবানি দিয়ে দুনিয়ার সামান্য সুখকে গ্রহণ করলো। মু’মিন তো এমনই হওয়া উচিত যে, সে দুনিয়ার সামান্য সুখভোগকে কুরবানি দিয়ে আখিরাতের চিরসুখের আশা করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنْ تَكُوْنُوْا تَأْلَـمُوْنَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَـمُوْنَ كَمَا تَأْلَـمُوْنَ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لَا يَرْجُوْنَ»

‘‘তোমরা যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তা হলে তারাও তো তোমাদের ন্যায় কষ্ট পেয়েছে। তবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তোমাদের যে (পরকালের) আশা ও ভরসা রয়েছে তা তাদের নেই’’। (নিসা’ : ১০৪)

 আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্ক একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪১. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্ক একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর যখন কারোর সম্পর্ক আল্লাহ্ তা‘আলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন সকল অকল্যাণ ও অনিষ্ট তাকে ঘিরে ফেলে এবং সকল কল্যাণ ও লাভ তার থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়।

জনৈক বুযুর্গ বলেন: বান্দাহ্’র অবস্থান আল্লাহ্ তা‘আলা ও শয়তানের মাঝে। অতএব যখন বান্দাহ্ আল্লাহ্ তা‘আলা থেকে বিমুখ হয় তখন শয়তান তার বন্ধু রূপে তার কাছে ধরা দেয়। আর যে সর্বদা আল্লাহ্মুখী থাকে শয়তান তাকে কখনো কাবু করতে পারে না।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَآئِكَةِ اسْجُدُوْا لِآدَمَ فَسَجَدُوْا إِلَّآ إِبْلِيْسَ، كَانَ مِنَ الْـجِنِّ، فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ، أَفَتَتَّخِذُوْنَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِيْ، وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ، بِئْسَ لِلظَّالِمِيْنَ بَدَلًا»

‘‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ফিরিশ্তাদেরকে বললাম: তোমরা আদমকে সিজ্দাহ্ করো। তখন সবাই সিজ্দাহ্ করলো শুধু ইবলীস ছাড়া। সে জিনদের অন্যতম। সে তার প্রভুর আদেশ অমান্য করলো। তবুও কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। যালিমদের জন্য এ হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট বিকল্প’’। (কাহ্ফ : ৫০)

 বয়স, রিযিক, জ্ঞান, আমল ও আনুগত্যের বরকত কমিয়ে দেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪২. গুনাহ্ বয়স, রিযিক, জ্ঞান, আমল ও আনুগত্যের বরকত কমিয়ে দেয়। তথা দীন-দুনিয়ার সকল বরকতে ঘাটতি আসে। কারণ, সকল বরকত তো আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ»

‘‘জনপদবাসীরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো তা হলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও জমিনের বরকতের দ্বার খুলে দিতাম’’। (আ’রাফ : ৯৬)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَأَنْ لَّوِ اسْتَقَامُوْا عَلَى الطَّرِيْقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُمْ مَّآءً غَدَقًا»

‘‘তারা যদি সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত থাকতো তা হলে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে প্রচুর বারি বর্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম’’। (জিন : ১৬)

জাবির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ ও আবূ উমা’মাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ رُوْحَ الْقُدُسِ نَفَثَ فِيْ رُوْعِيْ أَنَّهُ لَنْ تَمُوْتَ نَفْسٌ حَتَّى تَسْتَكْمِلَ رِزْقَهَا، فَاتَّقُوْا اللهَ وَأَجْمِلُوْا فِيْ الطَّلَبِ، فَإِنَّهُ لَنْ يُّنَالُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلاَّ بِطَاعَتِهِ، وَإِنَّ اللهَ جَعَلَ الرَّوْحَ وَالْفَرَحَ فِيْ الرِّضَى وَالْيَقِيْنِ، وَجَعَلَ الْـهَمَّ وَالْـحُزْنَ فِيْ الشَّكِّ وَالسُّخْطِ.

‘‘নিশ্চয়ই জিব্রীল (আঃ) আমার অন্তরে এ মর্মে ভাবোদয় করলেন যে, কোন প্রাণী মৃত্যু বরণ করবে না যতক্ষণ না সে নিজ রিযিক সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং শরীয়ত সম্মত উপায়ে ভালোভাবে উপার্জন করো। কারণ, এ কথা সবারই জানতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট থেকে কিছু পেতে হলে তাঁর আনুগত্য অবশ্যই করতে হবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা একমাত্র তাঁর উপর সন্তুষ্টি ও দৃঢ় বিশ্বাসের মধ্যেই মানুষের জন্য রেখেছেন সুখ ও শান্তি এবং তাঁর উপর অসন্তুষ্টি ও সন্দেহের মধ্যেই রেখেছেন ভয় ও আশঙ্কা’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ২১৪৪ বায়হাক্বী ৫/২৬৫ আবূ নু‘আঈম/’হিল্ইয়াহ্ ১০/২৭)

 গুনাহ্গার উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে নেমে আসে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৩. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গার উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে নেমে আসে। এমনকি পরিশেষে সে জাহান্নামীদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তবে তাওবা করার পর সে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতেও পারে। আবার নাও আসতে পারে। আবার কখনো সে আরো উঁচু পর্যায়েও যেতে পারে। আর তা নির্ণীত হবে একমাত্র তার তাওবার ধরনের উপরই।

 গুনাহ্গারের ক্ষতি করতে এমন ব্যক্তিও সাহসী হবে যে ইতিপূর্বে তা করতে সাহস পায়নি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৪. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের ক্ষতি করতে এমন ব্যক্তিও সাহসী হবে যে ইতিপূর্বে তা করতে সাহস পায়নি। তখন শয়তান তাকে ভয়ার্ত ও চিন্তিত করতে সাহস পাবে। তাকে পথভ্রষ্ট করতে ও ওয়াস্ওয়াসা দিতে সে উৎসাহী হবে। এমনকি মানবরূপী শয়তানও তাকে কষ্ট দিতে সক্ষম হবে। তার পরিবার, সন্তান, কাজের লোক, প্রতিবেশী এমনকি তার পালিত পশুও তার কথার মূল্যায়ন বা তার আনুগত্য করবে না। প্রশাসকরাও তার উপর যুলুম করবে। এমনকি তার অন্তরও তার আনুগত্য করবে না। ভালো কাজে তার সহযোগী হবে না। বরং খারাপের দিকেই তাকে টেনে নিয়ে যাবে।

জনৈক বুযুর্গ বলেন: আমি আল্লাহ্ তা‘আলার নাফরমানি করলেই তার পরিণাম আমার স্ত্রী ও বাহনের মধ্যে অনুভব করতে পারি।

 গুনাহ্গারের অন্তরে গুনাহ্’র জংয়ের এক আস্তর পড়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৫. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তরে গুনাহ্’র জংয়ের এক আস্তর পড়ে যায়। তখন বিপদের সময়ও তার অন্তর তা কাটিয়ে উঠতে তার সহযোগিতা করে না। আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ফরিয়াদ করতে চায় না। যিকিরে ব্যস্ত হয় না এবং একমাত্র তাঁরই উপর ভরসা করতে রাজি হয় না। বরং কখনো কখনো এমন হয় যে, তার ইন্তিকালের সময় তার যবানও তাকে ঈমান নিয়ে মরতে সহযোগিতা করে না।

জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় বলা হলো: ‘‘লা’ ইলা’হা ইল্লাল্লাহু’’ পড়ো। তখন সে গান গাইতে শুরু করলো এবং এমতাবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করলো। আরেক জন উত্তর দিলো: কালিমা এখন আর আমার কোন ফায়েদায় আসবে না। কারণ, দুনিয়াতে এমন কোন গুনাহ্ নেই যা আমি করতে ছাড়িনি এবং এমতাবস্থায়ই সে মারা গেলো। আরেক জন বললো: আমি এ কালিমায় বিশ্বাস করি না। অথচ ইতিপূর্বে সবাই তাকে মুসলিম হিসেবেই চিনতো। আরেক জন বললো: আমি তো কালিমা উচ্চারণ করতেই পারছিনে। আরেক জন বললো: আল্লাহ্’র জন্য আমাকে একটি টাকা দাও। আল্লাহ্’র জন্য আমাকে একটি টাকা দাও। আরেক জন বললো: এ কাপড়টি এতো। আর ও কাপড়টি অতো। আরো কত্তো কী?

 গুনাহ্গারের অন্তর একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৬. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের অন্তর একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়। পুরো অন্ধ না হলেও তার অন্তর্দৃষ্টি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন সে আর হিদায়াতের দিশা পায় না। আর পেলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে না।

মানব পরিপূর্ণতা তো দু’টি জিনিসেই সীমাবদ্ধ। আর তা হচ্ছে, সত্য জানা ও মিথ্যার উপর সত্যকে প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মানুষের সম্মানের তারতম্য এ দু’য়ের কারণেই হয়ে থাকে এবং এ দু’য়ের কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা নবীদের প্রশংসা করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ أُوْلِيْ الْأَيْدِيْ وَالْأَبْصَارِ»

‘‘স্মরণ করো আমার বান্দাহ্ ইব্রাহীম, ইস্হাক, ইয়া’কূব এর কথা; তারা ছিলো শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী’’। (স্বাদ্ : ৪৫)

এ ব্যাপারে মানুষ চার ভাগে বিভক্ত:

১. যাদের ধর্মীয় জ্ঞানে পান্ডিত্য রয়েছে এবং এরই পাশাপাশি সত্য বাস্তবায়নের ক্ষমতাও রয়েছে। এরাই হচ্ছেন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ। এরা সংখ্যায় খুবই কম এবং এরাই দ্বীন-দুনিয়ার সার্বিক নেতৃত্বের একমাত্র উপযুক্ত।

২. যাদের ধর্মীয় জ্ঞান নেই এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতাও নেই। এরা সংখ্যায় খুবই বেশি।

৩. যাদের ধর্মীয় জ্ঞান রয়েছে ঠিকই তবে তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা খুবই ক্ষীণ। না সে নিজে তা বাস্তবায়ন করছে, না সে অন্যকে এর প্রতি দা’ওয়াত দিচ্ছে।

৪. যাদের যে কোন বিষয় বাস্তবায়নের ক্ষমতা তো রয়েছে ঠিকই তবে তার ধর্মীয় কোন জ্ঞান নেই।

গুনাহ্’র মাধ্যমে শয়তান ও তার সহযোগীদেরকে তাদের কাজে সহযোগিতা করা হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৭. গুনাহ্’র মাধ্যমে শয়তান ও তার সহযোগীদেরকে তাদের কাজে সহযোগিতা করা হয়। এ কথা সবারই জানা যে, আল্লাহ্ তা‘আলা শয়তানের মাধ্যমে মানব জাতিকে বিশেষ এক পরীক্ষায় ফেলেছেন। শয়তান মানুষের চরম শত্রু। মানুষের শত্রুতা করতে সে কখনো পিছপা হয় না। বরং সে তার সকল শক্তি বিনিয়োগ করছে এই একই পথে। তার সাথে সহযোগী হিসেবে রয়েছে বিশেষ এক সেনাদল মানুষ ও জিনদের মধ্য থেকে। ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁরই প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে বিশেষ এক সেনাদল দিয়েছেন এবং এ যুদ্ধের পরিণতিতে তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে যেমনিভাবে ওদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলা স্বেচ্ছায় মু’মিনদের সাথে একটি ব্যবসায়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ، تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ، ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ، ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ، وَأُخْرَى تُحِبُّوْنَهَا نَصْرٌ مِّنَ اللهِ وَفَتْحٌ قَرِيْبٌ، وَبَشِّرِ الْـمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বাণিজ্যের সংবাদ দেবো না? যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল এর উপর ঈমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার পথে জিহাদ করবে। এটাই তো তোমাদের জন্য সর্বোত্তম যদি তোমরা তা জানতে! (আর এরই মাধ্যমে) আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে এমন একটি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে অনেকগুলো নদী। তিনি আরো প্রবেশ করাবেন তোমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতের উত্তম আবাসগৃহে এবং এটিই তো মহা সাফল্য। তিনি তোমাদেরকে আরেকটি পছন্দসই বস্ত্ত দান করবেন। আর তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্য এবং অত্যাসন্ন বিজয়। অতএব (হে রাসূল!) তুমি মু’মিনদেরকে এ ব্যাপারে সুসংবাদ দাও’’।

(স্বাফ্ফ : ১০-১৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَـهُمْ بِأَنَّ لَـهُمُ الْـجَنَّةَ، يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ، وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِيْ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيْلِ وَالْقُرْآنِ، وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللهِ! فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهِ، وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ»

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনদের থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে এ শর্তে ক্রয় করেছেন যে, তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করবে। তারা অন্যকে হত্যা করবে ও নিজে প্রয়োজনে নিহত হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলার সত্যিকার ওয়াদা রয়েছে যা তিনি ব্যক্ত করেন তাওরাত, ইন্জীল ও কুর‘আনে। আর কে আছে আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও বেশি ওয়াদা রক্ষাকারী? অতএব তোমরা আনন্দিত হতে পারো এ ব্যবসা নিয়ে যা তোমরা (আমার সাথে) সম্পাদন করেছো। আর এটিই তো মহা সাফল্য’’। (তাওবাহ্ : ১১১)

আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত যুদ্ধের ঝান্ডা অর্পণ করেছেন মানুষের অন্তরের হাতে এবং তার বিশেষ সহযোগী হিসেবে নির্ধারণ করেছেন নিজ ফিরিশ্তাদেরকে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُوْنَهُ مِنْ أَمْرِ اللهِ»

‘‘মানুষের জন্য তার সামনে ও পেছনে রয়েছে একের পর এক প্রহরী। তারা আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশে মানুষকে রক্ষণাবেক্ষণ করে’’।

(রা’দ্ : ১১)

কুর‘আন মাজীদ এ যুদ্ধে আরো এক বিশেষ সহযোগী। আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনের শরীর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রেখে যুদ্ধকে আরো অগ্রসর করেন। জ্ঞান তার পরামর্শদাতা। ঈমান তাকে দৃঢ়পদ করে এবং ধৈর্য শিখায়। আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি তার ইয়াক্বীন ও দৃঢ় বিশ্বাস সত্য উদঘাটনে তাকে আরো সহযোগিতা করে। যার দরুন সে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে চায়।

চোখ তাকে পর্যবেক্ষণের সহযোগিতা দেয়। কান সংবাদ সংগ্রহের। মুখ অভিব্যক্তির এবং হাত ও পা কর্ম বাস্তবায়নের। সাধারণ ফিরিশ্তারা বিশেষ করে আর্শবাহীরা তার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছে। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দো‘আ করছে। এমনকি আল্লাহ্ তা‘আলা নিজেই সে ব্যক্তি তাঁর অনুগতদের দলভুক্ত বলে তার সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَإِنَّ جُنْدَنَا لَـهُمُ الْغَالِبُوْنَ»

’’আমার বাহিনীই হবে নিশ্চিতভাবে বিজয়ী’’। (স্বাফ্ফাত : ১৭৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«أُوْلَآئِكَ حِزْبُ اللهِ، أَلَآ إِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْـمُفْلِحُوْنَ»

‘‘এরাই আল্লাহ্’র দলের। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার দলই সর্বদা সফলকাম হবে’’। (মুজাদালাহ্ : ২২)

মূলতঃ চারটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হলেই উক্ত যুদ্ধে সফলকাম হওয়া সম্ভব। যা আল্লাহ্ তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতে ব্যক্ত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا، وَاتَّقُوْا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধরো, ধৈর্যের সাথে শত্রুর মুকাবিলা করো, শত্রু আসার পথগুলো সতর্কভাবে পাহারা দাও এবং আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো তবেই তোমরা সফলকাম হবে’’। (আ’লি ’ইমরা’ন : ২০০)

উক্ত চারটি বিষয়ের কোন একটি বাদ পড়ে গেলে অথবা কারোর নিকট তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়লে তার পক্ষে উক্ত যুদ্ধে সফলতা অর্জন করা কখনোই সম্ভবপর হবে না।

অতএব শত্রু ঢোকার বিশেষ পথগুলো তথা অন্তর, চোখ, কান, জিহবা, পেট, হাত ও পা খুব যত্নসহ পাহারা দিতে হবে। যাতে এগুলোর মাধ্যমে শয়তান অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে।

শয়তান মানুষকে কাবু করার জন্য তার মনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কার মন কি কি জিনিস ভালোবাসে সেগুলোর প্রতি সে গুরুত্ব দেয় এবং তাকে সেগুলোর ওয়াদা এবং আশাও দেয়। এমনকি সেগুলোর চিত্রও তার মানসপটে অঙ্কন করে। যা শয়নে স্বপনে সে দেখতে থাকে। যখন তা তার অন্তরে পুরোভাবে বসে যায় তখন সে সেগুলোর প্রতি তার উৎসাহ জাগিয়ে তোলে। আর যখন অন্তর সেগুলো পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায় তখনই শয়তান অন্যান্য পথ তথা চোখ, কান, জিহবা, মুখ, হাত ও পায়ের উপরও জয়ী হয়। আর তখনই তারা তা আর ছাড়তে চায় না। তারা এ পথে অন্যকে আসতে প্রতিরোধ করে। সম্পূর্ণরূপে তাকে প্রতিরোধ না করতে পারলেও একেবারে অন্ততপক্ষে তাকে দুর্বলই করে ছাড়ে। আর তখনই অন্যদের প্রভাব তার উপর আর তেমন কার্যকরী হয় না।

যখন শয়তান কারোর উক্ত পথগুলো কাবু করতে পারে বিশেষ করে চক্ষুকে তখন সে ব্যক্তি কিছু দেখলেও তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না। বরং তা মন ভুলানোর জন্যই দেখে। আবার কখনো সে তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শয়তান তা দীর্ঘক্ষণ টিকতে দেয় না।

উক্ত পথগুলোর মধ্যে শয়তান চোখকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ, এটাই কাউকে পথভ্রষ্ট করার একমাত্র সর্ব বৃহৎ মাধ্যম। শয়তান কোন অবৈধ বস্ত্তকে দেখার জন্য এ যুক্তি প্রদর্শন করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তো উক্ত বস্ত্তটি দেখার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তা দেখতে তোমার অসুবিধে কোথায়? কখনো কখনো সে কোন কোন বুযুর্গ প্রকৃতির ব্যক্তিকে তো এভাবেও ধোকা দেয় যে, এ বস্ত্ত আর আল্লাহ্ তা‘আলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সবই তো আল্লাহ্। আর যদি সে ব্যক্তি এ কথায় সন্তুষ্ট না থাকে তা হলে শয়তান তাকে এতটুকু পরামর্শ দেয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বস্ত্তটির মধ্যে ঢুকে আছেন অথবা বস্ত্তটি আল্লাহ্ তা‘আলার মধ্যে ঢুকে আছে। এ কথাগুলো যখন শয়তান কোন বুযুর্গ ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দিতে পারে তখন সে তাকে দুনিয়া থেকে বিরাগ ও বেশি বেশি ইবাদাত করতে বলে এবং তারই মাধ্যমে সে অন্যকে গোমরাহ্ করতে শুরু করে।

শয়তান যখন কারোর কানকে কাবু করে ফেলে তখন সে সে পথে এমন কিছু প্রবেশ করতে দেয় না যা তার নেতৃত্বকে খর্ব করবে। বরং সে যাদুকরী ও সুমিষ্ট শব্দে উপস্থাপিত অসত্যকেই তার কানে ঢুকতে দেয় এবং কারোর নিকট এ জাতীয় কথা স্থান পেলে তাকে তা শুনার প্রতি আরো আগ্রহী করে তোলে। তখন এ জাতীয় কথা শুনার প্রতি তার মধ্যে এক ধরনের নেশা জন্ম নেয়। আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল এবং যে কোন উপদেশদাতার কথা এ পথে আর ঢুকতে দেয়া হয় না। এমনকি কোনভাবে কুর‘আন ও বিশুদ্ধ হাদীসের কথা তার কানে প্রবেশ করলেও তা বুঝা ও তা নিয়ে চিন্তা করা এবং তা কর্তৃক উপদেশ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কঠিন বাধা সৃষ্টি করা হয় এর বিপরীতমুখী চিন্তা তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে অথবা তা করা কঠিন এবং তা করতে গেলে কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে এ কথা বলেও তাকে বুঝানো হয়। এ কথাও তাকে বুঝানো হয় যে, এ ব্যাপারটি খুবই সাধারণ। এর চাইতে আরো কতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে যা নিয়ে ব্যস্ত হওয়া আরো দরকার অথবা এ কথা শুনার লোক কোথায়? এ কথা বললে তোমার শত্রু বেড়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। বরং যারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার কাজে নিয়োজিত তাদেরকে হেয় করা এবং তাদের যে কোন দোষ খুঁজে বের করা, তারা বেশি বাড়াবাড়ি করছে বলে আখ্যা দেয়া এবং তারাই একমাত্র এলাকার মধ্যে ফিৎনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছে বলেও বুঝানো হয় তথা তাদের কথার অপব্যাখ্যা দেয়া হয়। পরিশেষে কখনো কখনো উক্ত ব্যক্তিই শয়তানের পুরো কাজ হাতে নিয়ে সমাজের অপনেতৃত্ব দিতে থাকে। তখনই শয়তান তার উপর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে উক্ত এলাকা থেকে বিদায় নেয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا، وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُوْنَ»

‘‘আর এমনিভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য জিন ও মানব বহু শয়তানকে সৃষ্টি করেছি। তারা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর ও ধোঁকাপূর্ণ কথা শিক্ষা দেয়। তোমার প্রভুর ইচ্ছে হলে তারা এমন কাজ করতে পারতো না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তাদের বানানো কথাগুলোকে বর্জন করে চলবে’’। (আন্‘আম : ১১২)

শয়তান কারোর জিহবাকে কাবু করতে পারলে সে এমন কথাই তাকে বলা শেখাবে যা তার শুধু ক্ষতিই সাধন করবে। বরং তাকে যিকির, তিলাওয়াত, ইস্তিগ্ফার এবং অন্যকে সদুপদেশ দেয়া থেকেও সর্বদা বিরত রাখবে।

শয়তান এ ক্ষেত্রে দু’টি ব্যাপারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর তা হচ্ছে অসত্য বলা অথবা সত্য বলা থেকে বিরত থাকা। কারণ, দু’টিই তার জন্য বিশেষ লাভজনক।

শয়তান কখনো এ কৌশল গ্রহণ করে যে, সে কোন ব্যক্তির মুখ দিয়ে একটি অসত্য কথা বলে দেয় এবং শ্রোতার নিকট তা মনোমুগ্ধকর করে তোলে। তখন ধীরে ধীরে তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

এরপরই শয়তান মানুষের হাত ও পা কাবু করার চেষ্টা চালায়। যাতে সে ক্ষতিকর বস্ত্তই ধরতে যায় এবং ক্ষতিকর বস্ত্তর দিকেই অগ্রসর হয়।

মানুষের অন্তরকে কাবু করার জন্য বিশেষ করে শয়তান তার কুপ্রবৃত্তির সহযোগিতা নিয়ে থাকে। যাতে তার মধ্যে কখনো ভালোর স্পৃহা জন্ম না নিতে পারে এবং এ ব্যাপারে দু’টি মাধ্যমই ভালো ফল দেয়। আর তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাতের ব্যাপারে গাফিলতি এবং প্রবৃত্তির পূজা।

শয়তান মানুষের খারাপ চাহিদা পূরণা©র্থ তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে এবং নিজে না পারলে এ ব্যাপারে অন্য মানব শয়তানেরও সহযোগিতা নেয়। তাতেও তাকে কাবু করা সম্ভব না হলে সে তার রাগ ও উত্তেজনাকর সময়ের অপেক্ষায় থাকে। কারণ, তখন মানুষ নিজের উপর নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আর তখনই শয়তান তাকে দিয়ে নিজ ইচ্ছানুযায়ী যে কোন কাজ করিয়ে নিতে পারে।

 গুনাহ্গার নিজকেই ভুলে যায় যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তাকে ভুলে যান

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৮. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গার নিজকেই ভুলে যায় যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তাকে ভুলে যান। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوْا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ، أُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ»

‘‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। যার ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা (শুধু তাদেরকেই ভুলে যান নি) বরং তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। এরাই তো সত্যিকার পাপাচারী’’। (হাশ্র : ১৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«نَسُوْا اللهَ فَنَسِيَهُمْ»

‘‘তারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন’’। (তাওবাহ্ : ৬৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে ভুলে গেলে তার কল্যাণ চান না যেমনিভাবে কেউ নিজকে ভুলে গেলে তার সুখ, শান্তি ও কল্যাণ সম্পর্কে সে আর ভাবে না। তার নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো আর তার চোখে পড়ে না। যার দরুন সে তা সংশোধনও করতে চায় না। এমনকি তার রোগের কথাও সে ভুলে যায়। তাই সে রোগগুলোর চিকিৎসাও করতে চায় না। সুতারাং এর চাইতেও দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? তবুও এ জাতীয় মানুষের সংখ্যা আজ অনেক বেশি। তারা দীর্ঘ আখিরাতকে ক্ষণিকের দুনিয়ার পরিবর্তে বিক্রি করে দিয়েছে। সুতরাং তারা সদা সর্বদা ক্ষতি ও লোকসানেরই ভাগী। লাভের নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْـحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ، فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ، وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ»

‘‘এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের আযাব আর কম করা হবে না এবং তাদেরকে কোন ধরনের সাহায্যও করা হবে না’’। (বাক্বারাহ্ : ৮৬)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«فَمَا رَبِحَتْ تِجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ»

‘‘সুতরাং তাদের বাণিজ্য লাভজনক হয় নি এবং তারা এ ব্যাপারে সঠিক কোন দিক-নির্দেশনাও পায় নি’’। (বাক্বারাহ্ : ১৬)

প্রত্যেকেই নিজ জীবন নিয়ে ব্যবসা করে। তবে তাতে কেউ হয় সফলকাম। আর কেউ হয় ক্ষতিগ্রস্ত।

আবূ মা’লিক আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ النَّاسِ يَغْدُوْ، فَبَائِعٌ نَفْسَهُ، فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْبِقُهَا.

‘‘প্রত্যেকেই নিজ জীবনকে কোন কিছুর বিনিময়ে বিক্রি করে। তাতে কেউ নিজ জীবনকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে নেয়। আর কেউ উহাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়’’। (মুসলিম ২২৩)

ঠিক এরই বিপরীতে বুদ্ধিমানরা আখিরাতকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা নিজের জান ও মালের পরিবর্তে জান্নাত খরিদ করেন। তারা এ দুনিয়ার জীবনটাকে ক্ষণস্থায়ী মনে করেন। তবে কিয়ামতের দিন সবার নিকটই এ কথার সত্যতা সুস্পষ্টরূপে উদ্ভাসিত হবে। দুনিয়ার জীবনটাকে সবার নিকট তখন খুব সামান্যই মনে হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَنْ لَّمْ يَلْبَثُوْا إِلاَّ سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُوْنَ بَيْنَهُمْ»

‘‘আর তুমি ওদেরকে সে দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দাও যে দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে একত্রিত করবেন (কিয়ামতের মাঠে) তখন তাদের এমন মনে হবে যে, তারা দুনিয়াতে একটি দিনের কিছু অংশই অবস্থান করেছে এবং তা ছিলো পরস্পর পরিচিত হওয়ার জন্যই’’। (ইউনুস্ : ৪৫)

তবে যারা উক্ত ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্যও আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে ক্ষতি পূরণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এবং যারা নিজ জান ও মালের পরিবর্তে জান্নাত খরিদ করতে পারছেন না তাদের জন্যও আরেকটি সুব্যবস্থা তথা সুসংবাদ রয়েছে। যা নিম্নরূপ:

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«التَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْـحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الَامِرُوْنَ بِالْـمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْـمُنْكَرِ وَالْـحَافِظُوْنَ لِـحُدُوْدِ اللهِ، وَبَشِّرِ الْـمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘তারা তাওবাকারী, ইবাদাতগুযার ও আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসাকারী, রোযাদার, রুকূ’ ও সিজদাহ্কারী, সৎ কাজের আদেশকর্তা ও অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানসমূহের হিফাযতকারী। (হে নবী!) তুমি এ জাতীয় মু’মিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও’’। (তাওবাহ্ : ১১২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পণ্য সংগ্রহের আরেকটি সংক্ষিপ্ত পন্থা বাতলিয়েছেন। আর তা হচ্ছে নিম্নরূপ:

সাহ্ল বিন্ সা’দ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ.

‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’ চোয়ালের মধ্যভাগ তথা মুখ এবং দু’ পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযতের দায়িত্ব নিবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেবো’’। (বুখারী ৬৪৭৪)

 উপস্থিত নি’য়ামতগুলোও উঠে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৪৯. গুনাহ্’র কারণে উপস্থিত নি’য়ামতগুলোও উঠে যায় এবং আসন্ন নি’য়াতগুলোর পথে সমূহ বাধা সৃষ্টি করে। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলার নি’য়ামতগুলো একমাত্র তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব।

 ফিরিশ্তারা গুনাহ্গার থেকে অনেক দূরে সরে যায় এবং শয়তান তার অতি নিকটে এসে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৫০. গুনাহ্’র কারণে ফিরিশ্তারা গুনাহ্গার থেকে অনেক দূরে সরে যায় এবং শয়তান তার অতি নিকটে এসে যায়।

জনৈক বুযুর্গ বলেন: যখন কেউ ঘুম থেকে উঠে তখন শয়তান ও ফিরিশ্তা তার নিকটবর্তী হয়। যখন সে আল্লাহ্ তা‘আলার যিকির, তাঁর প্রশংসা, বড়ত্ব ও একত্ববাদ উচ্চারণ করে তখন ফিরিশ্তা শয়তানকে তাড়িয়ে দিয়ে তার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। আর যখন সে এর বিপরীত করে তখন ফিরিশ্তা অনেক দূরে সরে যায় এবং তার দায়িত্ব শয়তানই গ্রহণ করে।

আর ফিরিশ্তা কারোর জীবন সাথী হলে সে তার জীবিতাবস্থায়, মৃত্যুর সময় ও তার পুনরুত্থানের সময় তার সহযোগিতা করে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْـمَلَآئِكَةُ أَلاَّ تَخَافُوْا، وَلَا تَحْزَنُوْا، وَأَبْشِرُوْ بِالْـجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ، نَحْنُ أَوْلِيَآؤُكُمْ فِيْ الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِيْ الْآخِرَةِ، وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيْ أَنْفُسُـكُمْ، وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ، نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ»

‘‘প্রকৃতপক্ষে যারা বলে: আমাদের প্রভু আল্লাহ্। অতঃপর (তাদের স্বীকারোক্তির উপর) তারা অবিচল থাকে তখন ফিরিশ্তারা তাদের নিকট (মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সময়) নাযিল হয়ে বলবে: তোমরা ভয় পেয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না। বরং তোমাদেরকে দুনিয়াতে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা তোমরা পাবে বলে আনন্দিত হতে পারো। আমরাই তোমাদের পরম বন্ধু ও একান্ত সহযোগী দুনিয়ার জীবনেও এবং আখিরাতের জীবনেও। জান্নাতে তোমাদের জন্য রয়েছে তখন যা কিছু তোমাদের মন চাবে তা এবং তাতে রয়েছে তা যার তোমরা ফরমায়েশ করবে। যা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বিশেষ আপ্যায়ন’’। (ফুস্সিলাত/ হা’ মীম আস্ সাজ্দাহ্ : ৩০-৩২)

ফিরিশ্তা কারোর বন্ধু হলে সে তার অন্তরে ভালোর উদ্রেক করবে এবং তার মুখ দিয়ে ভালো কথা উচ্চারণ করাবে। এমনকি তার পক্ষ হয়ে অন্যকে প্রতিরোধ করবে। সে কারোর জন্য তার অলক্ষ্যে দো‘আ করলে ফিরিশ্তারা বলবে: তোমার জন্যও হুবহু তাই হোক। সে নামাযে সূরাহ ফাতিহা পড়ে শেষ করলে ফিরিশ্তারা আমিন বলবে। সে গুনাহ্ করলে ফিরিশ্তারা ইস্তিগ্ফার করবে এবং সে ওযু করে শু’লে ফিরিশ্তা তার শরীরের সাথে লেগেই সেখানে অবস্থান করবে।

 গুনাহ্গার নিজেই নিজের ধ্বংসের জন্য সমূহ পথ খুলে দেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

৫১. গুনাহ্’র মাধ্যমে গুনাহ্গার নিজেই নিজের ধ্বংসের জন্য সমূহ পথ খুলে দেয়। তখন তার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। কারণ, শরীর সুস্থ থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন যা তার শক্তি আনয়ন করে, শরীর থেকে ময়লা নিষ্কাশনের প্রয়োজন যা বেড়ে গেলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং সতর্কতা অবলম্বনেরও প্রয়োজন যাতে এমন কিছু শরীর গ্রহণ না করে যাতে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তেমনিভাবে অন্তরকে সুস্থ ও সজীব রাখার জন্য ঈমান ও নেক আমলের প্রয়োজন যা তার শক্তি বর্ধন করবে, তাওবার মাধ্যমে গুনাহ্’র ময়লাগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন যাতে অন্তর অসুস্থ হয়ে না পড়ে এবং বিশেষ সতর্কতারও প্রয়োজন যাতে তাকে এমন কিছু আক্রমণ করতে না পারে যা তার ধ্বংসের কারণ হয়। আর গুনাহ্ তো উক্ত বস্ত্তত্রয়ের সম্পূর্ণই বিপরীত। অতএব তার ধ্বংস আসবে না কেন?

গুনাহ্’র উক্ত অপকারগুলো যদি গুনাহ্গারের জন্য গুনাহ্ ছাড়ার ব্যাপারে সহযোগী না হয় তা হলে অবশ্যই তাকে গুনাহ্’র শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দুনিয়ার শারীরিক শাস্তিগুলোর কথা ভাবতে হবে। যদিও ইসলামী আইন অনুযায়ী অনেক দেশেই বিচার হচ্ছে না তবুও গুনাহ্গারকে এ কথা অবশ্যই ভাবতে হবে যে, আমি এ গুলো থেকে বেঁচে গেলেও সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত তো আমি থেকেই যাচ্ছি এবং আখিরাতের শাস্তি থেকে তো কখনোই নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়।

শরীয়তের শাস্তিগুলো হচ্ছে চুরিতে হাত কাটা, ছিনতাই বা হাইজাক করলে হাত-পা উভয়টিই কেটে ফেলা, নেশাকর বস্ত্ত সেবন করলে অথবা কোন সতী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলে বেত্রাঘাত করা, বিবাহিত পুরুষ ও মহিলা ব্যভিচার করলে তাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করা, অবিবাহিত হলে একশ’টি বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর, কুফরি কোন কথা বা কাজ করলে, ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ছেড়ে দিলে, সমকাম করলে এবং কোন পশুর সাথে যৌন সঙ্গম করলে হত্যা করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

গুনাহ্গারকে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, গুনাহ্’র শাস্তি কিছু রয়েছে নির্ধারিত যা উপরে বলা হয়েছে। আর কিছু রয়েছে অনির্ধারিত যা গুনাহ্গারকে এমনকি পুরো জাতিকেও কখনো কখনো ভুগতে হতে পারে এবং তা যে কোন পর্যায়েরই হতে পারে। শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, ইহলৌকিক, পারলৌকিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সরাসরি অথবা পরোক্ষ। শাস্তির ব্যাপকতা গুনাহ্’র ব্যাপ্তির উপরই নির্ভরশীল। তবে কেউ শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি থেকে কোনভাবে বেঁচে গেলেও অন্য শাস্তি থেকে সে অবশ্যই বাঁচতে পারবে না।

কিছু কিছু গুনাহে শারীরিক শাস্তি না থাকলেও তাতে অর্থনৈতিক দন্ড অবশ্যই রয়েছে। যেমন: ইহ্রামরত ও রমযানের রোযা থাকাবস্থায় স্ত্রী সহবাস, ভুলবশত হত্যা, শপথভঙ্গ ইত্যাদি।

এ ছাড়া সামাজিক পর্যায়ের কোন পাপ বন্ধ করার জন্য চাই তা যতই ছোট হোক না কেন প্রশাসক বা বিচারক অপরাধীকে যে কোন শাস্তি দিতে পারেন। তবে এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন ব্যাপারে শরীয়ত নির্ধারিত কোন শারীরিক দন্ড বিধি থাকলে তা প্রয়োগ না করে অথবা তা প্রয়োগের পাশাপাশি বিচারকের খেয়ালখুশি মতো অপরাধীর উপর অন্য কোন দন্ড প্রয়োগ করা যাবে না। যা বর্তমান গ্রাম্য বিচারাচারে বিচারক কর্তৃক প্রয়োগ হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, শরীয়ত নির্ধারিত কোন দন্ড বিধি গ্রাম্য বিচারে প্রয়োগ করা যাবে না। বরং তা একমাত্র প্রশাসক বা তাঁর পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত ব্যক্তিই প্রয়োগ করার অধিকার রাখে।

গুনাহ্’র শারীরিক শাস্তি ছাড়াও যে শাস্তিগুলো রয়েছে তম্মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্যতম:

ক. গুনাহ্গারের অন্তর ও শ্রবণ শক্তির উপর মোহর মেরে দেয়া, তার অন্তরকে আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়া, তাকে নিজ স্বার্থের কথাও ভুলিয়ে দেয়া, আল্লাহ্ তা‘আলা তার অন্তরকে পঙ্কিলতামুক্ত করতে না চাওয়া, অন্তরকে সংকীর্ণ করে দেয়া, সত্য থেকে বিমুখ করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

খ. আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য করা থেকে বিমুখ হওয়া।

গ. গুনাহ্গারের অন্তরকে মূক, বধির ও অন্ধ করে দেয়া। তখন সে সত্য বলতে পারে না এবং তা শুনতে ও দেখতে পায় না।

ঘ. গুনাহ্গারের অন্তরকে নিম্নগামী করে দেয়া। যাতে সে সর্বদা ময়লা ও পঙ্কিলতা নিয়েই ভাবতে থাকে।

ঙ. কল্যাণকর কথা, কাজ ও চরিত্র থেকে দূরে থাকা।

চ. গুনাহ্গারের অন্তরকে পশুর অন্তরে রূপান্তরিত করা। তখন কারো কারোর অন্তর রূপ নেয় শুকর, কুকুর, গাধা ও সাপ-বিচ্ছুর। আবার কারো কারোর অন্তর রূপ নেয় আক্রমণাত্মক পশু, ময়ূর, মোরগ, কবুতর, উট, নেকড়ে বাঘ ও খরগোশের।

ছ. গুনাহ্গারের অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে উল্টো করে দেয়া। তখন সে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য, ভালোকে খারাপ এবং খারাপকে ভালো, সংশোধনকে ফাসাদ এবং ফাসাদকে সংশোধন, ভ্রষ্টতাকে হিদায়াত এবং হিদায়াতকে ভ্রষ্টতা, আনুগত্যকে অবাধ্যতা এবং অবাধ্যতাকে আনুগত্য আল্লাহ্’র রাস্তায় বাধা সৃষ্টিকে আহবান এবং আহবানকে বাধা সৃষ্টি মনে করে থাকে।

জ. বান্দাহ্ ও তার প্রভুর মাঝে দুনিয়া ও আখিরাতে আড়াল সৃষ্টি করা।

ঝ. দুনিয়া ও কবরে তার জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়া এবং আখিরাতে শাস্তি ভোগ করা।

গুনাহ্’র পর্যায় ও ফাসাদের ব্যাপকতা এবং সংকীর্ণতার তারতম্যের দরুনই শাস্তির তারতম্য হয়ে থাকে। তাই গুনাহ্’র ধরন ও প্রকারগুলো আমাদের জানা উচিৎ যা নিম্নরূপ:

প্রথমত: গুনাহ্ দু’ প্রকার: আদিষ্ট কাজ না করা এবং নিষিদ্ধ কাজ সম্পাদন করা। এ গুলোর সম্পর্ক কখনো শরীরের সাথে আবার কখনো অন্তরের সাথে হয়ে থাকে। আবার কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকারের সাথে আবার কখনো বান্দাহ্’র অধিকারের সাথে।

অন্য দৃষ্টিকোনে গুনাহ্কে আবার চার ভাগেও বিভক্ত করা যায় যা নিম্নরূপ:

ক. প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব সংক্রান্ত গুনাহ্ তথা যা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য মানায় তা নিজের মধ্যে স্থান দেয়া। যেমন: মহিমা, গর্ব, পরাক্রম, কঠোরতা ও মানুষকে পদানত করা ইত্যাদি। এরই সাথে শির্ক সংশ্লিষ্ট।

খ. ইবলীসি বা শয়তানী গুনাহ্। যেমন: হিংসা, দ্রোহ, ধোঁকা, বিদ্বেষ, বৈরিতা, ষড়যন্ত্র, কূটকৌশল, অন্যকে গুনাহ্’র পরামর্শ দেয়া বা গুনাহ্’র আদেশ করা এবং গুনাহ্কে তার সম্মুখে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, আল্লাহ্’র আনুগত্য করতে নিষেধ করা বা কোন ইবাদাত অন্যকে নিকৃষ্টভাবে দেখানো, বিদ্‘আত করা বা ইসলামে নব উদ্ভাবন এবং বিদ্‘আত ও পথভ্রষ্টতার দিকে মানুষকে আহবান করা ইত্যাদি।

গ. বাঘ ও সিংহ প্রকৃতির গুনাহ্। যেমন: অত্যাচার, রাগ, অন্যের রক্ত প্রবাহিত করা, দুর্বল ও অক্ষমের উপর চড়াও হওয়া এবং মানুষকে অযথা কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।

ঘ. সাধারণ পশু প্রকৃতির গুনাহ্। যেমন: অত্যধিক লোভ, পেট ও লজ্জাস্থানের চাহিদা পূরণে উঠেপড়ে লাগা, ব্যভিচার, চুরি, কৃপণতা, কাপুরুষতা, অস্থিরতা, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি।

অধিকাংশ মানুষ এ জাতীয় গুনাহে বেশি লিপ্ত হয় এবং এটাই গুনাহ্’র প্রথম সোপান। কারণ, দুর্বল মানুষের সংখ্যাইতো দুনিয়াতে অনেক বেশি।

আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের সকলকে সমূহ নেক কাজ করা ও সমূহ গুনাহ্ থেকে uঁবচে থাকার তাওফীক দান করুন।

আ-মিন ইয়া রাববাল্ আ-লামীন!

 হারাম ও কবীরা গুনাহ্

 শেয়ার ও অন্যান্য 

’’হারাম’’ শব্দের আভিধানিক অর্থ: অবৈধ বা নিষিদ্ধ (বস্ত্ত, কথা, কাজ, বিশ্বাস ও ধারণা)। শরীয়তের পরিভাষায় হারাম বলতে সে সকল গুনাহ্কে বুঝানো হয় যে সকল গুনাহ্গার শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কোনভাবে নিন্দিত।

’’কবীরা’’ শব্দের আভিধানিক অর্থ: বড়। শরীয়তের পরিভাষায় কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল গুনাহ্কে বুঝানো হয় যে সকল গুনাহ্’র ব্যাপারে কুর‘আন বা সহীহ হাদীসে নির্দিষ্ট ঐহিক বা পারলৌকিক শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে অথবা সে সকল গুনাহ্কে কুর‘আন, হাদীস কিংবা সকল আলিমের ঐকমত্যে কবীরা বা মারাত্মক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কারো কারো মতে কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল গুনাহ্কে বুঝানো হয় যে সকল গুনাহ্’র ব্যাপারে শাস্তি, ক্রোধ, ঈমানশূন্যতা বা অভিশাপের মারাত্মক হুমকি বা জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

আবার কারো কারো মতে কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল গুনাহ্কে বুঝানো হয় যে সকল গুনাহ্গারকে আল্লাহ্ তা‘আলা বা তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন অথবা যে সকল গুনাহ্গারকে কুর‘আন কিংবা সহীহ হাদীসে ফাসিক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কারো কারো মতে কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল কাজকে বুঝানো হয় যে সকল কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সকল শরীয়ত একমত।

আবার কারো কারো মতে কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল কাজকে বুঝানো হয় যে সকল কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে কুর‘আনের সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।

কারো কারো মতে কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল গুনাহ্কে বুঝানো হয় যে সকল গুনাহ্’র বিস্তারিত বর্ণনা আল্লাহ্ তা‘আলা সূরাহ নিসা’র শুরু থেকে নিম্নোক্ত আয়াত পর্যন্ত দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ، وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا»

‘‘তোমরা যদি সকল মহাপাপ থেকে বিরত থাকো যা হতে তোমাদেরকে (কঠিনভাবে) বারণ করা হয়েছে তাহলে আমি তোমাদের সকল ছোট পাপ ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো খুব সম্মানজনক স্থানে’’। (নিসা’ : ৩১)

অনুরূপভাবে কোন ফরয কাজ পরিত্যাগ করাও কবীরা গুনাহ্’র শামিল।

কবীরা গুনাহ্’র উক্ত সংজ্ঞাদাতারা উহার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা করেননি। বরং তাঁরা ওই সকল গুনাহ্কেই কবীরা গুনাহ্ বলে আখ্যায়িত করেন যে সকল গুনাহ্’র মধ্যে উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান।

ঠিক এরই বিপরীতে কিছু সংখ্যক সাহাবা ও বিশিষ্ট আলিম কবীরা গুনাহ্’র নির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা করেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ (রাঃ) বলেন: কবীরা গুনাহ্ সর্বমোট চারটি।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু ‘আন্হুমা) বলেন: কবীরা গুনাহ্ সর্বমোট সাতটি।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রাযিয়াল্লাহু ‘আন্হুমা) বলেন: কবীরা গুনাহ্ সর্বমোট নয়টি।

কেউ কেউ বলেন: কবীরা গুনাহ্ সর্বমোট এগারোটি।

আবার কারো কারো মতে কবীরা গুনাহ্ সর্বমোট সত্তরটি।

আবূ ত্বালিব মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: কবীরা গুনাহ্ সংক্রান্ত সাহাবাদের সকল বাণী একত্রিত করলে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে:

অন্তরের সাথে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ চারটি: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন গুনাহ্ বার বার করতে থাকার মানসিকতা, যদিও তা একেবারেই ছোট হোক না কেন, আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ এবং তাঁর পাকড়াও থেকে একেবারেই নিশ্চিন্ত হওয়া।

মুখের সাথে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ও চারটি: মিথ্যা সাক্ষী, কোন সতী-সাধ্বী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাধ দেয়া, মিথ্যা কসম ও যাদু।

পেটের সাথে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ তিনটি: মদ্য পান, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ ও সুদ খাওয়া।

লজ্জাস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ দু’টি: ব্যভিচার ও সমকাম।

হাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ও দু’টি: হত্যা ও চুরি।

পায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ একটি। আর তা হচ্ছে কাফির ও মুশ্রিকের সাথে সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন।

পুরো শরীরের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ও একটি। আর তা হচ্ছে নিজ মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া।

আবার কোন কোন আলিমের মতে সকল পাপই মহাপাপ। কারণ, যে কোন গুনাহ্’র মানেই আল্লাহ্ তা‘আলার সঙ্গে চরম স্পর্ধা প্রদর্শন ও তাঁর একান্ত নাফরমানি।

তাদের ধারণা, কোন গুনাহ্ই তা যে পর্যায়েরই হোক না কেন তা আল্লাহ্ তা‘আলার এতটুকুও ক্ষতি করতে পারে না। সুতরাং সকল গুনাহ্ই আল্লাহ্ তা‘আলার দৃষ্টিতে সমান। সকল গুনাহ্ই তাঁর নাফরমানি বৈ কি?

তারা আরো বলেন: গুনাহ্’র ভয়ঙ্করতা নির্ভরশীল আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার বিনষ্ট ও উহার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শনের উপরই। তা না হলে যে ব্যক্তি শরীয়তের বিধান না জেনে হালাল মনে করে মদ পান বা ব্যভিচার করেছে তার শাস্তি অনেক বেশি হতো সে ব্যক্তির চাইতে যে ব্যক্তি তা হারাম জেনে সংঘটন করেছে। কারণ, প্রথম ব্যক্তির দোষ দু’টি: মূর্খতা ও হারাম কাজ সংঘটন এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির দোষ শুধুমাত্র একটি। আর তা হচ্ছে হারাম কাজ সংঘটন। অথচ দ্বিতীয় ব্যক্তি নির্দিষ্ট শাস্তি পাচ্ছে এবং প্রথম ব্যক্তি তা পাচ্ছে না। আর তা হচ্ছে এ কারণেই যে, প্রথম ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেনি। কারণ, সে জানেই না যে তা আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার। ঠিক এরই বিপরীতে দ্বিতীয় ব্যক্তি তা আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার জেনেই তার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে।

তারা আরো বলেন: গুনাহ্ মানেই আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ ও নিষেধকে তুচ্ছ মনে করা এবং তাঁর দেয়া নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সকল গুনাহ্ই সমান। সবই বড়।

যেমন: জনৈক ব্যক্তি তার একটি গোলামকে ভারী কাজের আদেশ করেছেন আর অন্য জনকে হালকা কাজের। অথচ তাদের কেউই উক্ত আদেশ পালন করেনি। তখন সে ব্যক্তি উভয় গোলামকেই ঘৃণা করবে এবং তাদেরকে বিক্রি করে দিবে।

তারা আরো বলেন: উক্ত কারণেই যে ব্যক্তি মক্কায় অবস্থান করেও হজ্জ করেনি অথবা যে ব্যক্তি মসজিদের পাশে থেকেও নামায পড়েনি তার অপরাধ অনেক বেশি সে ব্যক্তির চাইতে যার ঘর মক্কা বা মসজিদ থেকে অনেক দূরে। ঠিক এরই বিপরীতে অপর দু’ ব্যক্তি সমান দোষী যাদের একজন পঞ্চাশ হাজার টাকার মালিক অথচ সে যাকাত আদায় করেনি। আর অন্য জন দু’ লক্ষ টাকার মালিক তবুও সে যাকাত আদায় করেনি। কারণ, উভয় জনই যাকাত দিচ্ছে না। চাই তাদের কারোর সম্পদ বেশি হোক বা কম। অন্য দিকে যাকাত দিতে তেমন কোন পরিশ্রমও নেই।

 কবীরা গুনাহ্’র ব্যাপক পরিচিতি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ইমাম ’ইয্যুদ্দীন বিন্ ‘আব্দুস্ সালাম (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: ওই সকল গুনাহ্গুলোকেও কবীরা গুনাহ্ বলে ধরে নিতে হবে যেগুলোর ক্ষতি কোন না কোন কবীরা গুনাহ্’র সমান অথবা তার চাইতেও অনেক বেশি। যদিও সেগুলোকে কুর‘আন বা সহীহ হাদীসে কবীরা গুনাহ্ বলে আখ্যায়িত করা হয়নি। যেমন: আল্লাহ্ তা‘আলা বা তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গালি দেয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অসম্মান করা, কোন রাসূলকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা, কা’বা শরীফকে ময়লাযুক্ত করা, কুর‘আন মাজীদকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা, কোন সতী মহিলাকে অন্য কারোর ব্যভিচার অথবা কোন মুসলিমকে অন্য কারোর হত্যার জন্য ধরে রাখা, কোন কাফির গোষ্ঠীকে মুসলিমদের ব্যাপারে তথ্য দেয়া অথচ সে জানে যে, তারা সুযোগ পেলে উক্ত মুসলিমদেরকে হত্যা করবে, তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরকে ধরে নিয়ে যাবে অথবা তাদের ধন-সম্পদ লুট করবে কিংবা তাদের স্ত্রী-কন্যার সাথে ব্যভিচার করবে এমনকি তাদের ঘর-বাড়িও ভেঙ্গে দিবে, তেমনিভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কারোর জীবন নাশ করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

 গুনাহ্’র তারতম্যের মূল রহস্য

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলা যুগে যুগে রাসূল পাঠিয়েছেন, কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং ভূমন্ডল ও নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র একটি কারণে। আর তা হচ্ছে সঠিকভাবে তাঁকে চেনা ও এককভাবে তাঁরই ইবাদাত ও আনুগত্য করা। ডাকলে একমাত্র তাঁকেই ডাকা।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنَ»

‘‘আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমারই ইবাদাত করার জন্যে’’। (যারিয়াত : ৫৬)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ، يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলাই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং তদনুরূপ (সপ্ত) জমিনও। ওগুলোতে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ। যাতে তোমরা বুঝতে পারো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব বিষয়ে শক্তিমান এবং সব কিছুই নিশ্চিতভাবে তাঁর জ্ঞানাধীন’’। (ত্বালাক্ব : ১২)

সুতরাং আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টি এবং তাঁর আদেশের লক্ষ্যই হচ্ছে তাঁর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁকে চেনা ও একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা। বরং দুনিয়াতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ، وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمْ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ»

‘‘নিশ্চয়ই আমি রাসূলদেরকে পাঠিয়েছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাঁদের সঙ্গে নাযিল করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড তথা ন্যায়-নীতি পরিমাপক জ্ঞান। যেন মানুষ ইন্সাফের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে’’। (হা’দীদ : ২৫)

মানবস্রষ্টার প্রতি তার বান্দাহ্’র একান্ত সুবিচার হচ্ছে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ»

‘‘নিশ্চয়ই শির্ক বড় যুলুম’’। (লুক্বমান : ১৩)

সুতরাং যে কাজই উক্ত উদ্দেশ্যের চরম বিরোধী তাই মহাপাপ এবং যে কোন পাপই উক্ত বিরোধীতার মানানুসারে ছোট বা বড় বলে বিবেচিত হয়। ঠিক এরই বিপরীতে যে কাজই উক্ত উদ্দেশ্যকে দুনিয়ার বুকে বাস্তবায়ন করতে সত্যিকারার্থে সহযোগিতা করবে তাই হবে অবশ্য করণীয় অথবা ঈমান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন।

উক্ত সূত্র বুঝে আসলেই আপনি বুঝতে পারবেন সকল ইবাদাত ও গুনাহ্’র পরস্পর তারতম্য।

শির্ক যখন উক্ত উদ্দেশ্যের চরম বিরোধী অতএব তা বিনা বাক্যে সর্ববৃহৎ মহাপাপ। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা মুশ্রিকের উপর জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার জান, মাল ও পরিবারবর্গ তাওহীদপন্থীদের জন্য হালাল করেন। কারণ, সে যখন আল্লাহ্ তা‘আলার একচ্ছত্র গোলামি ছেড়ে দিয়েছে তখন তিনি তাকে ও তার অনুগত পরিবারবর্গকে তাঁর তাওহীদপন্থী বান্দাহ্দের গোলামি করতে বাধ্য করেছেন। তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা মুশ্রিকের কোন নেক আমল কবুল করবেন না এবং তার ব্যাপারে কিয়ামতের দিন কারোর কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। আখিরাতে তার কোন ফরিয়াদ শুনা হবে না এবং সে দিন তার কোন গুনাহ্ ক্ষমা করা হবে না। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার শানে নিতান্ত মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে এবং তাঁর প্রতি চরম অবিচার করেছে।

কেউ বলতে পারেন: যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে পাওয়ার জন্য দুনিয়ার কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে মাধ্যম বানিয়েছে তারা তো সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা‘আলাকে অধিক সম্মান করে। কারণ, তারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা বড় মহীয়ান। সুতরাং কোন মাধ্যম ছাড়া সে মহীয়ানের নিকটবর্তী হওয়া যাবে না। তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের প্রতি এতো অসন্তুষ্ট কেন?

উত্তরে বলতে হয়: শির্ক প্রথমত: দু’ প্রকার:

১. যা আল্লাহ্ তা‘আলার মহান সত্তা, তাঁর নাম, কাম ও গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত।

২. যা তাঁর ইবাদাত ও তাঁর সঙ্গে সঠিক আচার-আচরণের সাথে সম্পৃক্ত। যদিও উক্ত মুশ্রিক এমন মনে করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ সত্তা, কর্ম ও গুণাবলীতে একক। তাঁর কোন শরীক নেই।

প্রথমোক্ত শির্ক আবার দু’ প্রকার:

 ১. অস্বীকার বা অধিকার খর্বের শির্ক

 শেয়ার ও অন্যান্য 

উক্ত শির্ক অতি মারাত্মক ও অতিশয় ঘৃণ্য। যা ছিলো ফির‘আউনের শির্ক। কারণ, সে বলেছিলো:

«وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ»

‘‘জগতগুলোর প্রভু আবার কে?’’ (শু‘আরা’ : ২৩)

সে আরো বলে:

«يٰهَامَانُ ابْنِ لِيْ صَرْحًا، لَعَلِّيْ أَبْلُغُ الْأَسْبَابَ، أَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَأَطَّلِعَ إِلٰى إِلٰهِ مُوْسٰى وَإِنِّيْ لَأَظُنُّهُ كَاذِبًا»

‘‘হে হা’মান! তুমি আমার জন্য একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরি করো যাতে আমি আকাশের দরোজা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারি এবং আমি স্বচক্ষে দেখতে পাই মূসা (আঃ) এর মা’বূদকে। আমার ধারণা, নিশ্চয়ই সে (মূসা (আঃ)) মিথ্যাবাদী’’। (গা’ফির/মু’মিন : ৩৬-৩৭)

শির্ক বলতেই অস্বীকার অথবা যে কোন ভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার খর্ব করাকে বুঝায়। চাই তা সামান্যটুকুই হোক না কেন। সুতরাং প্রতিটি মুশ্রিকই অস্বীকারকারী বা আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার খর্বকারী এবং প্রতিটি অস্বীকারকারী বা অধিকার খর্বকারীই মুশ্রিক।

অস্বীকার বা অধিকার খর্ব করণ আবার তিন প্রকার:

১. সৃষ্টিকুলের সব কিছুই আল্লাহ্ তা‘আলা সৃষ্টি করেননি। বরং কোন কোন জিনিস মানুষও সৃষ্টি করেছে বা এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে এমন মনে করা।

২. আল্লাহ্ তা‘আলার নাম, কাম বা গুণাবলীর কিয়দংশ বা সম্পূর্ণটুকুই অস্বীকার করা।

৩. মানুষ থেকে প্রাপ্য আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার তথা একচ্ছত্র আনুগত্য ও শির্ক অবিমিশ্র ইবাদাত আদায় না করা।

ওয়াহ্দাতুল্ উজূদ্ (সৃষ্টিই স্রষ্টা) মতবাদ, বিশ্ব অবিনশ্বর মতবাদ এবং আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ নাম, কাম ও গুণাবলী শূন্য মতবাদ ইত্যাদি উক্ত শির্কেরই অন্তর্গত।

২. আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য ইলাহ্ স্বীকার করার শির্ক:

উক্ত মুশ্রিকরা আল্লাহ্ তা‘আলার নাম, গুণাবলী ও প্রভুত্ব স্বীকার করে। তবে তারা তাঁরই পাশাপাশি অন্য ইলাহ্তেও বিশ্বাস করে।

যেমন: খ্রিস্টানদের শির্ক। তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি ’ঈসা (আঃ) ও তাঁর মাকে ইলাহ্ বলে স্বীকার করে।

অগ্নিপূজকদের শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তারা সকল কল্যাণকর কর্মকান্ডকে আলো এবং সকল অকল্যাণকর কর্মকান্ডকে আঁধারের সৃষ্টি বলে মনে করে।

তাক্বদীর বা ভাগ্যে অবিশ্বাসীদের শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তারা মনে করে, মানুষ বা যে কোন প্রাণী আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা-অনুমতি ছাড়াও নিরেট নিজ ইচ্ছায় যে কোন কাজ করতে পারে। এরা বাস্তবে অগ্নিপূজকদেরই অনুরূপ।

ইব্রাহীম (আঃ) এর সঙ্গে তর্ককারী ‘‘নাম্রূদ্ বিন্ কিন্‘আন’’ এর শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তার অন্যতম দাবি এটিও ছিলো যে, সে ইচ্ছে করলেই কাউকে মারতে বা জীবিত করতে পারে।

কবরপূজারীদের শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি নিজ পীর-বুযুর্গদেরকেও রব্ ও ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছে।

রাশি-নক্ষত্রে বিশ্বাসী এবং সূর্যপূজারীদের শির্কও উক্ত শির্কের অধীন।

উক্ত মুশ্রিকদের কেউ কেউ আল্লাহ্ তা‘আলাকে বাস্তব মা’বূদ বলেও বিশ্বাস করে। আবার কেউ কেউ আল্লাহ্ তা‘আলাকে বড় মা’বূদ বা মা’বূদদের অন্যতম বলেও মনে করে। আবার কেউ কেউ এমনো মনে করে যে, তাদের ছোট মা’বূদগুলো অতি তাড়াতাড়ি তাদেরকে তাদের বড় মা’বূদের নিকটবর্তী করে দিবে।

 ইবাদাতের শির্ক

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ইবাদাতের শির্ক কিন্তু উপরোক্ত শির্ক অপেক্ষা সামান্যটুকু গৌণ। তম্মধ্যে কিছু রয়েছে ক্ষমার অযোগ্য। আবার কিছু কিছু রয়েছে ক্ষমাযোগ্য। কারণ, তা প্রকাশ পায় এমন ব্যক্তি থেকে যিনি বিশ্বাস করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবূদ নেই। তিনি ছাড়া কেউ কারোর কোন ক্ষতি বা লাভ করতে পারে না। কিছু দিতে বা বঞ্চিত করতে পারে না। তিনিই একমাত্র প্রভু। তিনি ভিন্ন অন্য কোন প্রতিপালক নেই। তবে তার সমস্যা এই যে, সে ব্যক্তি ইবাদাত করতে গেলে একনিষ্ঠার সাথে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য করে না। বরং তা কখনো কখনো নিজের সুবিধার জন্যে, আবার কখনো কখনো দুনিয়া কামানোর জন্যে, আবার কখনো কখনো সমাজের নিকট নিজ পজিশন, সম্মান ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য করে থাকে। সুতরাং তার ইবাদাতের কিয়দংশ আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য, আবার কিছু নিজ নফ্স ও প্রবৃত্তির জন্য, আবার কিছু অংশ শয়তানের জন্য, আবার কিছু মানুষের জন্যও হয়ে থাকে।

মুসলিমদের মধ্যকার অধিকাংশ মানুষই উক্ত শির্কে নিমগ্ন এবং এ শির্ক সম্পর্কেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

الشِّرْكُ فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَخْفَى مِنْ دَبِيْبِ النَّمْلَةِ، قَالُوْا: كَيْفَ نَنْجُوْ مِنْهُ يَا رَسُوْلَ الله! قَالَ: قُلِ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ.

‘‘শির্ক এ উম্মতের মধ্যে লুক্কায়িত বা অস্পষ্ট যেমন লুক্কায়িত বা অস্পষ্ট পিপীলিকার চলন। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! তবে আমরা কিভাবে তা থেকে বাঁচতে পারি? তিনি বললেন: তুমি বলবে: হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি জেনেবুঝে শির্ক করা থেকে। তেমনিভাবে আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি আমার অজানা শির্ক থেকে’’। (আহমাদ : ৪/৪০৩ সা’হী’হুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৭৩১)

যেমন: কোন আমল কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা শির্ক।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوْحَى إِلَيَّ، أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ، فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَآءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا، وَلَا يُشْرِكُ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا»

‘‘হে নবী! তুমি বলে দাও: আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ মাত্র। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, নিশ্চয়ই তোমাদের মা’বূদই একমাত্র মা’বূদ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে’’।

(কাহ্ফ : ১১০)

যখন আল্লাহ্ তা‘আলা একক। তাঁর কোন শরীক নেই। তখন সকল ইবাদাতও একমাত্র তাঁরই জন্য হতে হবে। আর নেক আমল বলতে এমন আমলকেই বুঝানো হয় যা সম্পাদন করা হবে একমাত্র সুন্নাত ভিত্তিক এবং যা কাউকে দেখানোর জন্য সংঘটিত হবে না।

’উমর (রাঃ) আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিম্নোক্ত দো‘আ করতেন:

اللَّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِيْ كُلَّهُ صَالِحًا، وَاجْعَلْهُ لِوَجْهِكَ خَالِصًا، وَلَا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيْهِ شَيْئًا.

‘‘হে আল্লাহ্! আমার সকল আমল যেন নেক আমল হয় এবং তা যেন একমাত্র আপনারই জন্য হয়। উহার কিয়দংশও যেন আপনি ভিন্ন অন্য কারোর জন্য না হয়’’।

উক্ত শির্ক যে কোন আমলের সাওয়াব বিনষ্টকারী। বরং কখনো কখনো এ জাতীয় আমলকারীকে এ জন্য শাস্তির সম্মুখীনও হতে হবে। বিশেষ করে সে আমল যখন তার উপর ওয়াজিব হয়ে থাকে এবং শির্কযুক্ত হওয়ার দরুন তা আদায় বলে গণ্য না হয়। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা মানব জাতিকে একমাত্র খাঁটি আমল করারই আদেশ করেছেন। শির্ক মিশ্রিত আমলের নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَآ أُمِرُوْا إلاَّ لِيَعْبُدُوْا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ»

‘‘তাদেরকে তো আদেশই করা হয়েছে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই ইবাদাত করবে নিষ্ঠা ও ঈমানের সাথে এবং শির্কমুক্তভাবে’’।

(বাইয়িনাহ্ : ৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْـرِيْ، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ.

‘‘আমি শরীকদের শির্ক তথা অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমলের মধ্যে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করলো তখন আমি তাকেও প্রত্যাখ্যান করি এবং তার শির্ককেও’’। (মুসলিম ২৯৮৫)

উক্ত শির্ক (ইবাদাতের শির্ক) আবার দু’ প্রকার:

১. ক্ষমার অযোগ্য শির্ক।

২. ক্ষমাযোগ্য শির্ক।

প্রথম প্রকার আবার বৃহৎ এবং সর্ববৃহৎও হয়ে থাকে। যা বিনা তাওবায় কখনো ক্ষমা করা হয় না। যেমন: ভালোবাসার শির্ক, ভয়ের শির্ক, একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজ্দাহ্ করার শির্ক, কা’বা শরীফ ছাড়া অন্য কোন গৃহ তাওয়াফের শির্ক, হাজরে আস্ওয়াদ্ ছাড়া অন্য কোন পাথর চুম্বন করার শির্ক ইত্যাদি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ছোট শির্ক। যা ক্ষমাযোগ্য। যেমন: শব্দ ও নিয়্যাতের শির্ক।

শির্কের মূল রহস্য কথা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শির্কের মূল রহস্য কথা দু’টি:

১. আল্লাহ্ তা‘আলার কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে তুলনা করা।

২. কোন বান্দাহ্ নিজকে আল্লাহ্ তা‘আলার ন্যায় মনে করা।

একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই লাভ-ক্ষতির মালিক। একমাত্র তিনিই কাউকে কোন কিছু দেন বা তা থেকে বঞ্চিত করেন। সুতরাং একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটই কোন কিছু চাইতে হবে। তাঁকেই ভয় করতে হবে এবং তাঁর নিকটই কোন কিছু কামনা করতে হবে। তাঁরই উপর ভরসা করতে হবে। যদি কেউ আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করলো অথবা অন্য কারো উপর ভরসা করলো তাহলে সে অবশ্যই ওব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে তুলনা করেই তা করলো।

আল্লাহ্ তা‘আলাই সকল গুণের একচ্ছত্র মালিক। সুতরাং সকল ইবাদাত তাঁরই জন্য হতে হবে। একান্ত সম্মান, ভয়, আশা, ভালোবাসা, নম্রতা, অধীনতা, তাওবা, দো‘আ, ভরসা, সাহায্য প্রার্থনা ও শপথ করা ইত্যাদি শরীয়তের দৃষ্টিকোণানুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে তাঁরই জন্য হতে হবে। মানুষের বিবেক এবং তার সহজাত প্রকৃতিও তা সমর্থন করে।

যে ব্যক্তি নিজকে বড় মনে করে মানুষের প্রশংসা, সম্মান, অধীনতা কামনা করে এবং সে চায় সকল মানুষ তাকেই ভয় করুক, তারই নিকট আশ্রয় কামনা করুক, তারই নিকট কোন কিছু আশা করুক, তারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুক তাহলে সে অবশ্যই নিজকে প্রভুত্ব ও উপাসনায় আল্লাহ্ তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করেই তা করছে।

যদি কোন ছবিকারকে শুধু ছবি তৈরির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাদৃশ্যতার দরুন কিয়ামতের দিন সর্ববৃহৎ শাস্তির অধিকারী হতে হয় তা হলে যে ব্যক্তি নিজকে প্রভুত্ব ও উপাসনায় আল্লাহ্ তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করে তার শাস্তি বাস্তবে কি হতে পারে তা আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ.

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ছবিকাররা’’। (বুখারী ৫৯৫০; মুসলিম ২১০৯)

যদি কোন মানুষ শাহানশাহ্ নামী হওয়ার দরুন কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বনিকৃষ্ট এবং সে জন্য তাঁর কোপানলে পতিত হতে হয় তাহলে যে ব্যক্তি নিজকে প্রভুত্ব ও উপাসনায় আল্লাহ্ তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করে তার শাস্তি বাস্তবে কি হতে পারে তা আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَغْيَظُ رَجُلٍ عَلَى اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَخْبَثُهُ وَأَغْيَظُهُ عَلَيْهِ رَجُلٌ كَانَ يُسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ، لَا مَلِكَ إِلاَّ اللهُ.

‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বনিকৃষ্ট এবং সে জন্য তাঁর কোপানলে পতিত সে ব্যক্তি যার নাম শাহেনশাহ্ বা রাজাধিরাজ। কারণ, সত্যিকারের রাজা বা সমরাট তো একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই’’। (মুসলিম ২১৪৩)

উক্ত আলোচনার পাশাপাশি আরেকটি গূঢ় রহস্যের কথা আমাদেরকে ভালোভাবে জানতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ববৃহৎ গুনাহ্ হচ্ছে তাঁর সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর শানে খারাপ ধারণাকারীদের সম্পর্কে বলেন:

«عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ السَّوْءِ وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَلَعَنَهُمْ وَأَعَدَّ لَـهُمْ جَهَنَّمَ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا»

‘‘অমঙ্গল চক্র তাদের জন্যই। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। উপরন্তু তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন জাহান্নাম এবং ওটা কতইনা নিকৃষ্ট গন্তব্য’’। (ফাত্হ : ৬)

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে এবং তিনি ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে কাউকে মাধ্যম স্থির করে তারা নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার শানে ভালো ধারণা রাখে না। সুতরাং ইসলামী শরীয়ত কখনো আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে কোন মাধ্যম স্বীকার করতে পারে না। মানব প্রকৃতি এবং তার বিবেকও তা সম্ভব বলে মনে করতে পারে না।

ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«مَا ذَا تَعْبُدُوْنَ، أَئِفْكًا آلِهَةً دُوْنَ اللهِ تُرِيْدُوْنَ، فَمَا ظَنُّكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ»

‘‘তোমরা কিসের পূজা করছো? তোমরা কি আল্লাহ্ তা‘আলার পরিবর্তে কতক অলীক মা’বূদকেই চাচ্ছো? জগতপ্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। তোমাদের ধারণা কি এই যে, তিনি তোমাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দিবেন? তা অবশ্যই নয়’’। (সা’ফ্ফাত : ৮৫-৮৭)

কোন মালিকই নিজ ভৃত্যকে তার কোন নিজস্ব অধিকারের অংশীদার মনে করতে কখনোই রাজি নয়। সুতরাং যারা কোন মানুষকে আল্লাহ্ তা‘আলার নিজস্ব অধিকারের অংশীদার মনে করে তার জন্য তা ব্যয় করে তারা কিছুতেই আল্লাহ্ তা‘আলার সঠিক সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখেনি।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلًا مِّنْ أَنْفُسِكُمْ هَلْ لَكُمْ مِّنْ مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِّنْ شُرَكَآءَ فِيْ مَا رَزَقْنَاكُمْ فَأَنْتُمْ فِيْهِ سَوَآءٌ، تَخَافُوْنَهُمْ كَخِيْفَتِكُمْ أَنْفُسَـكُمْ، كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তোমাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে তোমাদের সমান অংশীদার? ফলে তোমরা তাদেরকে সেরূপ ভয় করো যেরূপ তোমরা পরস্পরকে ভয় করো। আমি এভাবেই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী বিবৃত করি’’। (রূম : ২৮)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«يَآ أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوْا لَهُ، إِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَنْ يَّخْلُقُوْا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوْا لَهُ، وَإِنْ يَّسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لاَّ يَسْتَنْقِذُوْهُ مِنْهُ، ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْـمَطْلُوْبُ، مَا قَدَرُوْا اللهَ حَقَّ قَدْرِهِ، إِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ»

‘‘হে মানব সকল! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে। খুব মনোযোগ দিয়ে তোমরা তা শ্রবণ করো। তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার পরিবর্তে যাদেরকে ডাকছো তারা সবাই একত্রিত হয়েও একটি মাছি পর্যন্ত তৈরি করতে পারবে না। এমনকি কোন মাছি যদি তাদের সম্মুখ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয় তারা তাও উদ্ধার করতে পারবে না। পূজারী ও দেবতা কতই না দূর্বল। বস্ত্তত: তারা আল্লাহ্ তা‘আলার যথোচিত সম্মান রক্ষা করেনি। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমতাবান ও পরাক্রমশালী’’। (হাজ্জ : ৭৩-৭৪)

যারা পীর-বুযুর্গ পূজা করে তাদের পীর-বুযুর্গ একটি মাছিও বানাতে সক্ষম নয়। সুতরাং তারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে ওদেরকে মাধ্যম মেনে সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা‘আলাকেই অসম্মান করেছে। কারণ, তিনিই হচ্ছেন ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের একমাত্র মালিক। সুতরাং সবাইকে সরাসরি তাঁরই শরণাপন্ন হতে হবে। অন্য কারোর নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا قَدَرُوْا اللهَ حَقَّ قَدْرِهِ، وَالْأَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِيْنِهِ، سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ»

‘‘তারা আল্লাহ্ তা‘আলার যথোচিত সম্মান করেনি; অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁরই মুষ্টিতে এবং আকাশমন্ডলও আবদ্ধ থাকবে তাঁরই ডান হাতে। তিনি পবিত্র ও সুমহান তাদের শির্ক থেকে’’। (যুমার : ৬৭)

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন রাসূল পাঠাননি এবং কোন কিতাবও অবতীর্ণ করেননি। প্রতিটি ব্যক্তিই স্বাধীন। সে যাচ্ছেতাই আচরণ করবে। তারা সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার সুন্দর গুণাবলীর সরাসরি অর্থে বিশ্বাসী নয় এবং যারা মনে করে, তিনি শুনেন না, দেখেন না, কোন কিছুর ইচ্ছেও করেন না, তাঁর কোন স্বাধীনতা নেই, তিনি সকল সৃষ্টির উপরে নন। বরং তিনি সর্বস্থানে বিরাজমান, তিনি যখন ইচ্ছে এবং যার সাথে ইচ্ছে কথা বলেন না এবং সকল মানব কর্মকান্ড তাঁর ইচ্ছে, ক্ষমতা ও সৃষ্টির বাইরে তারা সবাই নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, মানুষ যা করে তা সে একান্ত বাধ্য হয়েই করে। তাতে তার কোন স্বাধীনতা নেই। অতএব মানুষ যা করেছে তা পরোক্ষভাবে আল্লাহ্ই করেছেন। তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা খারাপ কাজের জন্য পরকালে বান্দাহ্কে শাস্তি দিবেন তারাও সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে সর্বস্থানে মনে করে। এমনকি টয়লেট এবং সকল অপবিত্র স্থানেও। যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে নিজ আর্শে ‘আযীমে সমাসীন বলে মনে করে না তারাও নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, বাস্তবার্থে আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে ভালোবাসেন না, কারো প্রতি দয়া করেন না, কারো উপর সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হন না, তাঁর কোন কাজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে না, তিনি সরাসরি কোন কাজ করেন না। অতএব তিনি আর্শে সমাসীন নন, রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন না, মূসা (আঃ) এর সাথে তিনি ত্বূর পাহাড়ের দিক থেকে কথা বলেননি, কিয়ামতের দিন তিনি নিজ বান্দাহ্দের মধ্যে ফায়সালা করার জন্যে আসবেন না তারাও তাঁকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলার স্ত্রী-সন্তান আছে, তিনি তাঁর খাছ বান্দাহ্দের মধ্যে ঢুকে পড়েন। যেমন: সূফী মান্সূর হাল্লাজ অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়ার সকল বস্ত্তর মাঝে বিরাজমান তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রাসূল ও তদীয় পরিবারবর্গের শত্রুদেরকে সম্মান দিয়েছেন, তাদেরকে রাসূলের মৃত্যুর পরপরই মুসলিম বিশ্বের খিলাফত ও রাষ্ট্র দিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল ও তদীয় পরিবারবর্গ প্রেমীদেরকে তথা শিয়াদেরকে অসম্মান ও লাঞ্ছিত করেছেন তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

উক্ত বিশ্বাস ইহুদী ও খ্রিস্টান থেকে চয়িত। তারাও আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে মনে করতো, তিনি একদা এক যালিম রাষ্ট্রপতি তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠিয়েছেন। যে মিথ্যাভাবে নবী হওয়ার দাবি করেছে। এমনকি সে দীর্ঘদিন বেঁচেও ছিলো। সর্বদা মিথ্যা কথা বলতো। বলতো: আল্লাহ্ তা‘আলা এ কথা বলেছেন, এ কাজের আদেশ করেছেন, এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, পূর্বের সকল নবী ও রাসূলদের শরীয়তকে রহিত করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সে ও তার অনুসারীদের জন্য পূর্বের সকল নবী ও রাসূলদের অনুসারী হওয়ার এ যুগের দাবিদারদের জান, মাল ও স্ত্রী-সন্তান হালাল করে দিয়েছেন, এতদসত্ত্বেও আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সার্বিকভাবে সাহায্য করেছেন, তার সকল দো‘আ কবুল করেছেন, তার শত্রুদের উপর তাকে জয়ী করেছেন।

যারা মনে করে, পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর খাঁটি ওলীদেরকে শাস্তি ও জাহান্নাম এবং তাঁর শত্রুদেরকে তিনি শান্তি ও জান্নাত দিতে পারেন। উভয়ই তাঁর নিকট সমান। কুর‘আন ও হাদীসে এ ব্যাপারে যা রয়েছে তা সংবাদ মাত্র। তিনি এর উল্টাও করতে পারেন। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে এ জাতীয় চিন্তা-চেতনার কঠোর নিন্দা করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ كَالْـمُفْسِدِيْنَ فِيْ الْأَرْضِ، أَمْ نَجْعَلُ الْـمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ»

‘‘কাফিররা কি এমন ধারণা করে যে, যারা আমার উপর ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, তেমনিভাবে যারা আমাকে কঠিন ভয় করে এবং যারা অপরাধী তাদের সকলকে আমি সমপর্যায়ের মনে করবো? কখনোই তা হতে পারে না’’। (সোয়াদ্ : ২৮)

তিনি আরো বলেন:

«أَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوْا السَّيِّئَاتِ أَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ، سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ، سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ، وَخَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ، وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ»

‘‘দুষ্কৃতীরা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের ন্যায় মনে করবো। তা কখনোই হতে পারে না। বরং তাদের উক্ত সিদ্ধান্ত কতইনা মন্দ। আল্লাহ্ তা‘আলা আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে তৈরি করেছেন যথার্থভাবে এবং (তাতে প্রত্যেককে কর্ম স্বাধীনতাও দিয়েছেন) যেন প্রত্যেককে তার কর্মানুযায়ী ফলাফল দেয়া যেতে পারে এবং তাদের প্রতি এতটুকুও যুলুম করা হবে না’’। (জা’সিয়াহ্ : ২১-২২)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«أَفَنَجْعَلُ الْـمُسْلِمِيْنَ كَالْـمُجْرِمِيْنَ، مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ»

‘‘আমি কি আত্মসমর্পণকারীদেরকে অপরাধীদের ন্যায় মনে করবো? তোমাদের কি হয়েছে? তোমাদের এ কেমন সিদ্ধান্ত’’। (ক্বালাম : ৩৫-৩৬)

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা মৃতদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। যে দিন আল্লাহ্ তা‘আলা সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করবেন এবং অপরাধীদেরকে শাস্তি দিবেন। অত্যাচারী থেকে অত্যাচারিতের অধিকার আদায় করবেন। যারা এ দুনিয়াতে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য দু:সহ ক্লান্তি সহ্য করেছে তাদেরকে উপযুক্ত সম্মান করবেন। তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে, তাঁর অধিকার বিনষ্ট করে, তাঁর স্মরণ থেকে গাফিল থাকে, তাঁর সন্তুষ্টির পরিবর্তে নিজেদের প্রবৃত্তির সন্তুষ্টি কামনা করে, মানুষের আনুগত্য যাদের নিকট আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের চাইতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ, যারা তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিকে অধিক মূল্যায়ন করে আল্লাহ্ তা‘আলার দৃষ্টির চাইতে, যারা মানুষকে লজ্জা করে; আল্লাহ্ তা‘আলাকে নয়, মানুষকে ভয় করে; নিজ প্রভুকে নয়, মানুষের সাথে সাধ্যমতো ভালো আচরণ করে; আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে নয়, যারা নিজ প্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়েও খুব মনোযোগ সহকারে অন্য মানুষের পূজা করে; কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদাতে তাদের মন এতটুকুও বসে না তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার চরম অবাধ্য শয়তান ইবলিসকে তাঁর সাথে সম্মান, আনুগত্য, অধীনতা, ভয় ও আশায় শরীক করেছে তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে। কারণ, মানুষ দুনিয়াতে আললাহ্ তা‘আলা ছাড়া যারই ইবাদাত করুক না কেন তা পরোক্ষভাবে শয়তানের ইবাদাত বলেই গণ্য। যেহেতু মূল পলিসিদাতা সেই।

তাই আল্লাহ্ তা‘আলা যথার্থই বলেছেন:

«أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِيْ آدَمَ أَنْ لاَّ تَعْبُدُوْا الشَّيْطَانَ، إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ»

‘‘হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের পূজা করো না। কারণ, সে হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’’। (ইয়াসীন : ৬০)

উক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে নিম্ন বিষয়গুলো জানতে পারলাম:

ক. কেনই বা শির্ক সর্ববৃহৎ গুনাহ্।

খ. কেনই বা আল্লাহ্ তা‘আলা তা তাওবা ব্যতীত কখনোই ক্ষমা করবেন না।

গ. মুশ্রিক ব্যক্তি কেনই বা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। কখনোই সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।

ঘ. আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে কেনই বা মাধ্যম গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হবে। যা দুনিয়ার নীতিতে নিষিদ্ধ নয়।

উক্ত কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বনাশা বলে আখ্যায়িত সাতটি কবীরা গুনাহ্’র সর্বশীর্ষে শির্কের কথাই উল্লেখ করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْـمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْـمُحْصَنَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ.

‘‘তোমরা বিধ্বংসী সাতটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকো। সাহাবারা বললেন: হে আল¬াহ্’র রাসূল! ওগুলো কি? তিনি বলেন: আল¬াহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে অংশীদার করা, যাদু আদান-প্রদান, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ ভক্ষণ, সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন এবং সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলাদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো’’। (বুখারী ২৭৬৬, ৬৮৫৭; মুসলিম ৮৯)

নিম্নে উক্ত বিষয়সমূহের ধারাবাহিক বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো:

 আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা। তা প্রতিপালন, উপাসনা, আল্লাহ’র নাম ও গুণাবলীর যে কোনটিরই ক্ষেত্রে হোক না কেন।

শির্ক নির্দ্বিধায় সকল গুনাহ্’র শীর্ষে অবস্থিত।

আবূ বাক্রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ ثَلَاثًا، قَالُوْا: بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: الإِشْرَاكُ بِاللهِ..

‘‘আমি কি তোমাদেরকে বড় গুনাহ্’র কথা বলবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথাটি সাহাবাদেরকে তিন বার জিজ্ঞাসা করেন। সাহাবারা বললেন: হ্যাঁ, বলুন হে আল্লাহ্’র রাসূল! তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা’’। (বুখারী ২৬৫৪, ৫৯৭৬; মুসলিম ৮৭)

শির্ক সকল ধরনের আমলকেই বিনষ্ট করে দেয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

«وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَـحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ»

‘‘তাঁরা (নবীগণ) যদি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করতো তা হলে তাঁদের সকল আমল পন্ড হয়ে যেতো’’। (আন‘আম: ৮৮)

শির্ক আবার দু’ প্রকার: বড় শির্ক ও ছোট শির্ক। প্রকারদ্বয়ের বিস্তারিত আলোচনা আমাদেরই রচিত দু’ খন্ডে বিভক্ত ‘‘শির্ক: কি ও কত প্রকার’’ বইটিতে অচিরেই পাচ্ছেন। তবুও এ ব্যাপারে সর্ব সাধারণের কিঞ্চিত ধারণার জন্য তার ইঙ্গিতপূর্ণ সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো

 বড় শির্ক

 শেয়ার ও অন্যান্য 

উক্ত শির্ক এতে লিপ্ত যে কোন ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকেই বের করে দেয়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাওবা ছাড়া এ ধরনের শির্ক কখনো ক্ষমা করবেন না।

তিনি বলেন:

«إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ»

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা কখনো ক্ষমা করবেন না। তবে তিনি এ ছাড়া অন্যান্য সকল গুনাহ্ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করে দিবেন’’। (নিসা: ৪৮)

এ ধরনের শির্কে লিপ্ত ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম। জাহান্নামই হবে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ، وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ»

‘‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে করেন তার চিরস্থায়ী ঠিকানা। আর এরূপ অত্যাচারীদের তখন আর কোন সাহায্যকারী থাকবে না’’। (মায়িদাহ: ৭২)

বড় শির্কগুলো সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নরূপ:

১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করার শির্ক।

২. বিপদের সময় একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট ফরিয়াদ করার শির্ক।

৩. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট আশ্রয় প্রার্থনার শির্ক।

৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট আশা ও বাসনার শির্ক।

৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট সাহায্য প্রার্থনার শির্ক।

৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য রুকু, সিজ্দাহ্, তার সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো, নামায ইত্যাদির শির্ক।

৭. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ঘর কা’বাহ্ শরীফ ছাড়া অন্য কোন ঘর বা মাযারের তাওয়াফ করার শির্ক।

৮. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট তাওবাহ্ করার শির্ক।

৯. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন পশু জবাইয়ের শির্ক।

১০. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন কিছু মানত করার শির্ক।

১১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর একচ্ছত্র আনুগত্য করার শির্ক।

১২. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে এককভাবে ভালোবাসার শির্ক।

১৩. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে এককভাবে ভয় করার শির্ক।

১৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুলের শির্ক।

১৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ কারোর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

১৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ কাউকে হিদায়াত দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

১৭. কবর পূজার শির্ক।

১৮. আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ সত্তা সহ সর্বস্থানে রয়েছেন এমন মনে করার শির্ক।

১৯. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও বিশ্ব পরিচালনায় অন্য কারোর হাত রয়েছে এমন মনে করার শির্ক।

২০. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তি বা দল শরীয়তের বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ ছাড়া নিজ মেধা ও বুদ্ধির আলোকে কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য জীবন বিধান রচনা করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

২১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে ধনী বা গরিব বানাতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

২২. কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার কাছ থেকে কেউ কারোর গুনাহ্সমূহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারবে এমন মনে করার শির্ক।

২৩. কিয়ামতের দিন কেউ কাউকে আল্লাহ্ তা‘আলার কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে এমন মনে করার শির্ক।

২৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কোন গাউস-ক্বুতুব দুনিয়া, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, লাওহ্, ক্বলম, ‘আর্শ, কুর্সী তথা সর্ব স্থানের সর্ব কিছু দেখে বা শুনে এমন মনে করার শির্ক।

২৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ গায়েব জানে বা কখনো কখনো তার কাশ্ফ হয় এমন মনে করার শির্ক।

২৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ কারোর অন্তরের লুক্কায়িত কথা বলে দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

২৭. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

২৮. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ কারোর অন্তরের সামান্যটুকু পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

২৯. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ঘর মসজিদ ছাড়াও অন্য কোন মাজারের খাদিম হওয়া যায় এমন মনে করার শির্ক।

৩০. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়াও অন্য কারোর ইচ্ছা স্বকীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

৩১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে সন্তান-সন্ততি দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

৩২. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে সুস্থতা দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

৩৩. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার তাওফীক ছাড়াও কেউ ইচ্ছে করলেই কোন নেক আমল করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

৩৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়াও কেউ কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

৩৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে জীবন বা মৃত্যু দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।

৩৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তি সর্বদা জীবিত রয়েছে বা থাকবে এমন মনে করার শির্ক।

 ছোট শির্ক

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ছোট শির্ক বলতে এমন কাজ ও কথাকে বুঝানো হয় যা তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দিবে না বটে। তবে তা কবীরা গুনাহ্ তথা মহা পাপ অপেক্ষা আরো জঘন্যতম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَلَا تَجْعَلُوْا لِلهِ أَنْدَادًا وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»

‘‘সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করো না। অথচ তোমরা এ সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছো’’। (বাক্বারাহ্ : ২২)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:

الْأَنْدَادُ هُوَ الشِّرْكُ أَخْفَى مِنْ دَبِيْبِ النَّمْلِ عَلَى صَفَاةٍ سَوْدَاءَ فِيْ ظُلْمَةِ اللَّيْلِ، وَهُوَ أَنْ تَقُوْلَ: وَاللهِ وَحَيَاتِكِ يَا فُلَانَةَ! وَحَيَاتِيْ، وَتَقُوْلَ: لَوْلَا كَلْبَةٌ هَذِهِ لَأَتَانَا اللُّصُـوْصُ، وَلَوْلَا الْبَطُّ فِيْ الدَّارِ لَأَتَى اللُّصُوْصُ، وَقَوْلُ الرَّجُلِ لِصَاحِبِهِ: مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ، وَقَوْلُ الرَّجُلِ: لَوْلَا اللهُ وَفُلَانٌ، لَا تَجْعَلْ فِيْهَا فُلَانًا، هَذَا كُلُّهُ بِهِ شِرْكٌ.

‘‘‘আন্দাদ্’’ বলতে এমন শির্ককে বুঝানো হচ্ছে যা অন্ধকার রাতে কালো পাথরে পিঁপড়ার চলন চাইতেও সূক্ষ্ম। যা টের পাওয়া খুবই দুরূহ। যেমন: তোমার এ কথা বলা যে, হে অমুক! আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তোমার ও আমার জীবনের কসম! অথবা এ কথা বলা যে, যদি এ কুকুরটা না হতো তা হলে (আজ রাত) চোর অবশ্যই আসতো। যদি ঘরে হাঁসগুলো না থাকতো তা হলে (আজ রাত) চোর অবশ্যই ঢুকতো অথবা কারোর নিজ সাথীকে এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তুমি না চাইলে কাজটা হতো না অথবা কারোর এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এবং অমুক না থাকলে কাজটা হতো না। অমুক শব্দটি সাথে লাগাবে না। (বরং বলবে: আল্লাহ্ তা‘আলা যদি না চাইতেন কাজটা হতো না)। কারণ, এ সব কথা শির্কের অন্তর্গত’’।

ছোট শির্কগুলো সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নরূপ:

১. কোন বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য সুতা বা রিং পরার শির্ক।

২. শির্ক মিশ্রিত মন্ত্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁকের শির্ক।

৩. তাবিজ-কবচের শির্ক।

৪. শরীয়ত অসম্মত বস্ত্ত বা ব্যক্তি কর্তৃক বরকত গ্রহণের শির্ক।

৫. যাদুর শির্ক।

৬. ভাগ্য গণনার শির্ক।

৭. জ্যোতিষীর শির্ক।

৮. চন্দ্র বা অন্য কোন গ্রহের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি হয় এমন মনে করার শির্ক।

৯. আল্লাহ্ তা‘আলার যে কোন নিয়ামত অস্বীকার করার শির্ক।

১০. কোন প্রাণীর বিশেষ কোন আচরণে অমঙ্গলের আশংকা রয়েছে এমন মনে করার শির্ক।

১১. শরীয়ত অসম্মত কোন বস্তু বা ব্যক্তির ওয়াসীলা ধরার শির্ক।

১২. নামায ত্যাগের শির্ক।

১৩. আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তুমি না চাইলে কাজটা হতো না এমন বলার শির্ক।

১৪. আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর নামে কসম খাওয়ার শির্ক।

১৫. যুগ বা বাতাসকে গালি দেয়ার শির্ক।

১৬. কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ‘‘যদি এমন করতাম তা হলে এমন হতো না’’ বলার শির্ক।

১৭. কোন নেক আমল দুনিয়া কামানোর নিয়্যাতে করার শির্ক।

১৮. কোন নেক আমল আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারোর সন্তুষ্টির জন্য করার শির্ক।

১৯. কোন নেক আমল কাউকে দেখানো বা শুনানোর জন্য করার শির্ক।

 ছোট শির্ক ও বড় শির্কের মধ্যে পার্থক্য

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ছোট শির্ক ও বড় শিরকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নরূপ:

১. বড় শির্ক তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকেই সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়। ঠিক এরই বিপরীতে ছোট শির্ক এমন নয় বটে। তবে তা কবীরা গুনাহ্ তথা মহা পাপ অপেক্ষা আরো জঘন্যতম।

২. বড় শির্ক তাতে লিপ্ত ব্যক্তির সকল নেক আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। ঠিক এরই বিপরীতে ছোট শির্ক শুধু সে আমলকেই বিনষ্ট করে যে আমলে এ জাতীয় শির্কের সংমিশ্রণ রয়েছে। অন্য আমলকে নয়।

৩. বড় শির্ক তাতে লিপ্ত ব্যক্তির জান ও মাল তথা সার্বিক নিরাপত্তা বিনষ্ট করে দেয়। ঠিক এরই বিপরীতে ছোট শির্ক এমন নয়।

৪. বড় শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকালের জন্য জাহান্নামী হয়ে যায়। জান্নাত তার জন্য হারাম। তবে ছোট শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি এমন নয়। বরং সে কিছু দিনের জন্য জাহান্নামে গেলেও পরবর্তীতে তাকে জাহান্নাম থেকে চিরতরে মুক্তি দেয়া হবে।

৫. বড় শির্কে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখা যাবে না। বরং তার সাথে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যদিও সে নিকট আত্মীয় হোক না কেন। তবে ছোট শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি এমন নয়। বরং তার সাথে সম্পর্ক ততটুকুই রাখা যাবে যতটুকু তার ঈমান রয়েছে। তেমনিভাবে তার সাথে ততটুকুই সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে যতটুকু তার মধ্যে শির্ক রয়েছে।

 ২. যাদু

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যাদু শিক্ষা দেয়া বা শিক্ষা নেয়া শুধু কবীরা গুনাহ্ই নয়। বরং তা শির্ক এবং কুফর ও বটে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَاْنُ وَلَكِنَّ الشَّيَاْطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاْسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزَلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَاْبِلَ هَاْرُوْتَ وَمَاْرُوْتَ وَمَا يُعَلِّمَاْنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُوْلَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ»

‘‘সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি, তবে শয়তানরাই কুফরি করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো বাবেল শহরে বিশেষ করে হারূত-মারূত ব্যক্তিদ্বয়কে। (জিব্রীল ও মীকাঈল) ফিরিশ্তাদ্বয়ের উপর কোন যাদু অবতীর্ণ করা হয়নি (যা ইহুদিরা ধারণা করতো)। তবে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় কাউকে যাদু শিক্ষা দিতো না যতক্ষণ না তারা বলতো, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ মাত্র, অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরী করো না।

(সূরাহ বাকারাহ : ১০২)

যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, কারো ব্যাপারে তা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা। এ ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে।

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

حَدُّ السَّاْحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ.

‘‘যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তলোয়ারের কোপ তথা শিরশ্ছেদ’’।

(তিরমিযী ১৪৬০)

জুনদুব (রাঃ) শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি তা বাস্তবে কার্যকরী করেও দেখিয়েছেন।

আবূ ’উসমান নাহ্দী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ عِنْدَ الْوَلِيْدِ رَجُلٌ يَلْعَبُ، فَذَبَحَ إِنْسَانًا وَأَبَانَ رَأْسَهُ، فَعَجِبْنَا فَأَعَادَ رَأْسَهُ، فَجَاءَ جُنْدُبٌ الْأَزْدِيْ فَقَتَلَهُ.

‘‘ইরাকে ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববার সম্মুখে জনৈক ব্যক্তি খেলা দেখাচ্ছিলো। সে জনৈক ব্যক্তির মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এতে আমরা খুব বিস্মিত হলে লোকটি কর্তিত মাথা খানি যথাস্থানে ফিরিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে জুনদুব (রাঃ) এসে তাকে হত্যা করেন’’। (বুখারী/আত্তা’রীখুল্ কাবীর : ২/২২২ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)

তেমনিভাবে উম্মুল্ মু’মিনীন ’হাফ্সা (রাঃ) ও নিজ ক্রীতদাসীকে জাদুকরী প্রমাণিত হওয়ার পর হত্যা করেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

سَحَرَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ جَارِيَةٌ لَهَا، فَأَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، فَقَتَلَتْهَا، فَبَلَغَ ذَلِكَ عُثْمَانُ  فَغَضِبَ، فَأَتَاهُ اِبْنُ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ فَقَالَ: جَارِيَتُهَا سَحَرَتْهَا، أَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، قَالَ: فَكَفَّ عُثْمَانُ  قَالَ الرَّاوِيْ: وَكَأَنَّهُ إِنَّمَا كَانَ غَضَبُهُ لِقَتْلِهَا إِيَّاهَا بِغَيْرِ أَمْرِهِ.

‘‘হাফ্সা বিন্ত ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে তাঁর এক ক্রীতদাসী যাদু করে। এমনকি সে ব্যাপারটির স্বীকারোক্তিও করে এবং যাদুর বস্ত্তটি উঠিয়ে ফেলে দেয়। এতদ্ কারণে ’হাফ্সা (রাঃ) ক্রীতদাসীটিকে হত্যা করেন। সংবাদটি ’উস্মান (রাঃ) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি খুব রাগান্বিত হন। অতঃপর ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) তাঁকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললে তিনি এ ব্যাপারে চুপ হয়ে যান তথা তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন: ’উসমান (রাঃ) এর অনুমতি না নিয়ে ক্রীতদাসীটিকে হত্যা করার কারণেই তিনি এতো রাগান্বিত হন’’।

(‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৮৭৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)

অনুরূপভাবে ’উমর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফতকালে সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন।

বাজালা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ  أَنِ اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ، قَالَ الرَّاوِيْ: فَقَتَلْنَا ثَلَاثَ سَوَاحِرَ.

’উমর (রাঃ) নিজ খিলাফতকালে এ আদেশ জারি করে চিঠি পাঠান যে, তোমরা সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করো। বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর আমরা তিনজন মহিলা যাদুকরকে হত্যা করি’’।

(আবূ দাউদ ৩০৪৩ বায়হাকী : ৮/১৩৬ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৯৮২, ৩২৬৫২ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ৯৯৭২; আহমাদ ১৬৫৭; আবূ ইয়া’লা ৮৬০, ৮৬১)

’উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে উক্ত আদেশের ব্যাপারে কেউ কোন বিরোধিতা দেখাননি বিধায় উক্ত ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে বলে প্রমাণিত হলো।

 ৩. অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করাও কবীরা গুনাহ্। তবে উক্ত হত্যা আরো ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হয় যখন তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয় যাকে বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব এবং যাকে হত্যা করা একেবারেই অমানবিক। যেমন: নিষ্পাপ শিশু, নিজ মাতা-পিতা, নবী-রাসূল, ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রপতি অথবা উপদেশদাতা আলিমকে হত্যা করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِآيَاتِ اللهِ، وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ، وَيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ أَعْمَالُـهُمْ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَا لَـهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াত ও নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা ন্যায় ও ইন্সাফের আদেশ করে তাদেরকেও। (হে নবী) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং এদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না’’। (আ’লি ’ইমরা’ন : ২১-২২)

আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত হত্যাকারীকে চির জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তিনি তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তেমনিভাবে তার উপর তাঁর অভিশাপ ও আখিরাতে তার জন্য দ্বিগুণ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا»

‘‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি ক্রদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি’’। (নিসা : ৯৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ বান্দাহ্দের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:

«وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ، وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَلَا يَزْنُوْنَ، وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا، يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهِ مُهَانًا، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا، فَأُوْلَآئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّآتِهِمْ حَسَنَاتٍ، وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا»

‘‘আর যারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরীয়ত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে। তবে যারা তাওবা করে, (নতুনভাবে) ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’।

(ফুর্কান : ৬৮-৭০)

উক্ত হত্যার ভয়াবহতার কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা শুধুমাত্র এক ব্যক্তির হত্যাকারীকে সকল মানুষের হত্যাকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِيْ إِسْرَآئِيْلَ أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِيْ الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيْعًا، وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا»

’’উক্ত কারণেই আমি বানী ইস্রাঈল্কে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যার বিনিময় অথবা ভূপৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টির হেতু ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকান্ড থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকেই রক্ষা করলো’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩২)

উক্ত হত্যাকান্ডকে হাদীসের পরিভাষায় সর্ববৃহৎ গুনাহ্ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ: الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَوْلُ الزُّوْرِ، أَوْ قَالَ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ.

‘‘সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন: হয়তো বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিথ্যা সাক্ষী দেয়া’’। (বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ৮৮)

নিম্নোক্ত হাদীসগুলোতে হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা ও ভয়ঙ্করতা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَجِيْءُ الْمَقْتُوْلُ بِالْقَاتِلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ؛ نَاصِيَتُهُ وَرَأْسُهُ بِيَدِهِ، وَأَوْدَاجُهُ تَشْخَبُ دَمًا، يَقُوْلُ: يَا رَبِّ! هَذَا قَتَلَنِيْ، حَتَّى يُدْنِيَهُ مِنَ الْعَرْشِ، قَالَ: فَذَكَـرُوْا لِابْنِ عَبَّاسٍ التَّوْبَةَ، فَتَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: «وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا»

قَالَ: مَا نُسِخَتْ هَذِهِ الْآيَةُ، وَلَا بُدِّلَتْ، وَأَنَّى لَهُ التَّوْبَةُ؟!.

‘‘হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে আল্লাহ্ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে বলবে: হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আর্শের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে। শ্রোতারা ইব্নে ‘আববাস্ (রাঃ) কে উক্ত হত্যাকারীর তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরোক্ত সূরাহ নিসা’র আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন: উক্ত আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তাওবা কোন কাজেই আসবে না’’। (তিরমিযী ৩০২৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৭০; নাসায়ী ৪৮৬৬)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَنْ يَزَالَ الْـمُؤْمِنُ فِيْ فُسْحَةٍ مِّنْ دِيْنِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا.

‘‘মু’মিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করে’’। (বুখারী ৬৮৬২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ وَرَطَاتِ الْأُمُوْرِ الَّتِيْ لَا مَخْرَجَ لِمَنْ أَوْقَعَ نَفْسَهُ فِيْهَا سَفْكُ الدَّمِ الْـحَرَامِ بِغَيْرِ حِلِّهِ.

‘‘এমন ঝামেলা যা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর রক্তপাত করা’’। (বুখারী ৬৮৬৩)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ الدِّمَاءِ.

‘‘কিয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসেব হবে রক্তের’’। (বুখারী ৬৫৩৩, ৬৮৬৪; মুসলিম ১৬৭৮; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৬৪, ২৬৬৬)

আবূ সা’ঈদ ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَأَهْلَ الْأَرْضِ اشْتَرَكُوْا فِيْ دَمِ مُؤْمِنٍ لَأَكَبَّهُمُ اللهُ فِيْ النَّارِ.

‘‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সকলে মিলেও কোন মু’মিন হত্যায় অংশ গ্রহণ করে তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সকলকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’’। (তিরমিযী ১৩৯৮)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

سِبَابُ الْـمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.

‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া আল্লাহ্’র অবাধ্যতা এবং তাকে হত্যা করা কুফরি’’। (বুখারী ৪৮; মুসলিম ৬৪)

জারীর বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ আল্-বাজালী, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ ও আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَرْجِعُوْا بَعْدِيْ كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ.

‘‘আমার ইন্তিকালের পর তোমরা কাফির হয়ে যেও না। পরস্পর হত্যাকান্ড করো না’’।

(বুখারী ১২১, ১৭৩৯, ৪৪০৫, ৬১৬৬, ৬৭৮৫, ৬৮৬৮, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম ৬৫, ৬৬, ১৬৭৯)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট পুরো বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ একজন মুসলিম হত্যা অপেক্ষা’’।

(তিরমিযী ১৩৯৫; নাসায়ী ৩৯৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৬৮)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يُرَحْ رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيْحَهَا تُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا.

‘‘যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোন কাফিরকে হত্যা করলো সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়’’। (বুখারী ৩১৬৬, ৬৯১৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৮৬)

জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি কতক তাবি’য়ীকে অসিয়ত করতে গিয়ে বলেন:

إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنَ الْإِنْسَانِ بَطْنُهُ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَأْكُـلَ إِلاَّ طَيِّبًا، فَلْيَفْعَلْ، وَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يُحَالَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ بِمِلْءِ كَفِّهِ مِنْ دَمٍ أَهْرَاقَهُ فَلْيَفْعَلْ.

‘‘মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম পেটই পঁচে-গলে দুর্গন্ধময় হয়ে যায়। সুতরাং যার পক্ষে এটা সম্ভবপর হয় যে, সে সর্বদা হালাল ও প্রবিত্র বস্তুই ভক্ষণ করবে তা হলে সে যেন তাই করে। তেমনিভাবে যার পক্ষে এটাও সম্ভবপর হয় যে, সে ও তার জান্নাতে যাওয়ার মাঝে এক করতলভর্তি অবৈধভাবে প্রবাহিত রক্তও বাধার সৃষ্টি করবে না তা হলে সে যেন তাই করে’’। (বুখারী ৭১৫২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) একদা কা’বা শরীফকে সম্বোধন করে বলেন:

مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ! وَالْـمُؤْمِنُ أَعْظَمُ حُرْمَةً عِنْدَ اللهِ مِنْكِ!.

‘‘তুমি কতই না সম্মানী! তুমি কতই না মর্যাদাশীল! তবে একজন মু’মিনের মর্যাদা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তোমার চাইতেও বেশি’’।

(তিরমিযী ২০৩২; ইব্নু হিববান ৫৭৬৩)

হত্যাকারী এবং হত্যাকৃত উভয় ব্যক্তিই জাহান্নামী।

আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا الْتَقَى الْـمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْـمَقْتُوْلُ فِيْ النَّارِ، قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ الله! هَذَا الْقَاتِلُ، فَمَا بَالُ الْـمَقْتُوْلِ؟ قَالَ: إِنَّهُ كَانَ حَرِيْصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ.

‘‘যখন দু’জন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সম্মুখীন হয় তখন হত্যাকারী এবং হত্যাকৃত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! হত্যাকারীর ব্যাপারটি তো বুঝলাম। তবে হত্যাকৃত ব্যক্তির দোষ কি যার কারণে সে জাহান্নামে যাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কারণ, সেও তো নিজ সঙ্গীকে মারার জন্য অত্যন্ত উদ্গ্রীব ছিলো’’। (বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, ৭০৮৩; মুসলিম ২৮৮৮)

আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ইচ্ছাকৃত হত্যাকারীর ক্ষমার আশা খুবই ক্ষীণ।

মু‘আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى اللهُ أَنْ يَّغْفِرَهُ إِلاَّ الرَّجُلُ يَمُوْتُ كَافِرًا، أَوِ الرَّجُلُ يَقْتُلُ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا.

‘‘প্রতিটি গুনাহ্ আশা করা যায় আল্লাহ্ তা‘আলা তা ক্ষমা করে দিবেন। তবে দু’টি গুনাহ্ যা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোন মু’মিনকে হত্যা করলে’’।

(নাসায়ী ৩৯৮৪; আহমাদ ১৬৯০৭; হা’কিম ৪/৩৫১)

কোন মহিলার গর্ভ ধারণের চার মাস পর দরিদ্রতার ভয়ে তার গর্ভপাত করাও কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করার শামিল।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَدْعُوَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَّطْعَمَ مَعَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيْلَةِ جَارِكَ.

‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কোন পাপটি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা’’। (বুখারী ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম ৮৬)

তবে শরীয়ত সম্মত তিনটি কারণের কোন একটি কারণে শাসক গোষ্ঠীর জন্য কাউকে হত্যা করা বৈধ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: النَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالثَّيِّبُ الزَّانِيْ، وَالتَّارِكُ لِدِيْنِهِ، الْـمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ.

‘‘এমন কোন মুসলিমকে হত্যা করা জায়িয নয় যে এ কথা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই এবং আমি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্’র রাসূল। তবে তিনটি কারণের কোন একটি কারণে তাকে হত্যা করা যেতে পারে অথবা হত্যা করা শরীয়ত সম্মত। তা হচ্ছে, সে কাউকে হত্যা করে থাকলে তাকেও হত্যা করা হবে। কোন বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচার করলে। কেউ ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করলে এবং জামা‘আত চ্যুত হলে’’।

(বুখারী ৬৮৭৮; মুসলিম ১৬৭৬; আবূ দাউদ ৪৩৫২; তিরমিযী ১৪০২; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৮২; ইব্নু হিববান ৪৪০৮ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ৩৬৪৯২; আহমাদ ৩৬২১, ৪০৬৫)

কেউ কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করলে গুনাহ্’র কিয়দংশ আদম (আঃ) এর প্রথম সন্তান কাবিলের উপর বর্তাবে। কারণ, সেই সর্ব প্রথম মানব সমাজে হত্যাকান্ড চালু করে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ اَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ.

‘‘কোন মানুষ অত্যাচার বশত: হত্যা হলে তার রক্তের কিয়দংশ আদম (আঃ) এর প্রথম সন্তানের উপর বর্তাবে। কারণ, সেই সর্ব প্রথম মানব সমাজে হত্যা কান্ড চালু করে’’। (বুখারী ৩৩৩৫ ৭৩২১; মুসলিম ১৬৭৭)

 হত্যাকারীর শাস্তি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

অবৈধভাবে কেউ কাউকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করলে তার শাস্তি হচ্ছে, ক্বিসাস্ তথা হত্যার পরিবর্তে হত্যা অথবা দিয়াত তথা ক্ষতিপূরণ স্বরূপ শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সম্পদ। তবে এ ব্যাপারে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা রাজি থাকতে হবে অথবা আপোস-মীমাংসার মাধ্যমে নির্ধারিত সম্পদ। অনুরূপভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা হত্যাকারীকে একেবারে ক্ষমাও করে দিতে পারে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِيْ الْقَتْلَى، الْـحُرُّ بِالْـحُرِّ، وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ، وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى، فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيْهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْـمَعْرُوْفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ، ذَلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ، فَمَنِ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর নিহতদের ব্যাপারে ক্বিসাস্ তথা হত্যার পরিবর্তে হত্যা নির্ধারণ করা হলো। স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী। তবে কাউকে যদি তার ভাই (মৃত ব্যক্তি) এর পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা করে দেয়া হয় তথা মৃতের ওয়ারিশরা ক্বিসাসের পরিবর্তে দিয়াত গ্রহণ করতে রাজি হয় তবে ওয়ারিশরা যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে তা আদায়ের ব্যাপারে তাগাদা দেয় এবং হত্যাকারী যেন তা সদ্ভাবে আদায় করে। এ হচ্ছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে লঘু সংবিধান এবং (তোমাদের উপর) তাঁর একান্ত করুণা। এরপরও কেউ সীমালংঘন করলে তথা হত্যাকারীকে হত্যা করলে তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’’। (বাক্বারাহ্ : ১৭৮)

ক্বিসাস সত্যিকারার্থে কোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। বরং তাতে এমন অনেকগুলো ফায়েদা রয়েছে যা একমাত্র বুদ্ধিমানরাই উদ্ঘাটন করতে পারেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা ক্বিসাসের ফায়েদা বা উপকার সম্পর্কে বলেন:

«وَلَكُمْ فِيْ الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَّآ أُوْلِيْ الْأَلَبَابِ، لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ»

‘‘হে জ্ঞানী লোকেরা! ক্বিসাসের মধ্যেই তোমাদের সকলের বাস্তব জীবন লুক্কায়িত আছে। (কোন হত্যাকারীর উপর ক্বিসাসের বিধান প্রয়োগ করা হলে অন্যরা এ ভয়ে আর কাউকে হত্যা করবে না। তখন অনেকগুলো তাজা জীবন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে) এতে করে হয়তো বা তোমরা আল্লাহ্ভীরু হবে’’। (বাক্বারাহ্ : ১৭৯)

আ’য়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ قَتْلُ مُسْلِمٍ إِلاَّ فِيْ إِحْـدَى ثَلَاثِ خِصَالٍ: زَانٍ مُحْصَنٍ فَيُرْجَمُ، وَرَجُلٍ يَقْتُلُ مُسْلِمًا مُتَعَمِّدًا فَيُقْتَلُ، وَرَجُلٍ يَخْرُجُ مِنَ الْإِسْلَامِ فَيُحَارِبُ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَيُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الْأَرْضِ.

‘‘তিনটি কারণের কোন একটি কারণ ছাড়া অন্য যে কোন কারণে কোন মুসলিমকে হত্যা করা জায়িয নয়। উক্ত তিনটি কারণ হচ্ছে: ব্যভিচারী বিবাহিত স্বাধীন পুরুষ। তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। কেউ কোন মুসলিমকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তাকে তার পরিবর্তে হত্যা করা হবে। কেউ ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসি দেয়া হবে অথবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাড়ানো হবে তথা তাকে কোথাও স্থির হতে দেয়া যাবে না’’।

(আবূ দাউদ ৪৩৫৩ নাসায়ী : ৭/৯১; হা’কিম : ৪/৩৬৭)

আবূ শুরাইহ্ খুযা’য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيْلٌ بَعْدَ مَقَالَتِيْ هَذِهِ فَأَهْلُهُ بَيْنَ خِيْرَتِيْنِ: إِمَّا أَنْ يَأْخُذُوْا الْعَقْلَ أَوْ يَقْتُلُوْا.

‘‘আমার এ কথার পর কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে তার ওয়ারিশরা দু’টি অধিকার পাবে। দিয়াত গ্রহণ করবে অথবা হত্যাকারীকে হত্যা করবে’’। (আবূ দাউদ ৪৫০৪; তিরমিযী ১৪০৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قُتِلَ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظْرَيْنِ: إِمَّا أَنْ يُعْقَلُ، وَإِمَّا أَنْ يُّقَادَ أَهْلُ الْقَتِيْلِ.

‘‘কাউকে হত্যা করা হলে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশরা দু’টি অধিকার পাবে। তার মধ্য থেকে ভেবেচিন্তে তারা উত্তমটিই গ্রহণ করবে। তার দিয়াত নেয়া হবে অথবা তার ওয়ারিশদেরকে তার ক্বিসাস্ নেয়ার সুবিধা দেয়া হবে’’।

(বুখারী ১১২; মুসলিম ১৩৫৫; আবূ দাউদ ৪৫০৫; তিরমিযী ১৪০৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيْلٌ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظْرَيْنِ: إِمَّا أَنْ يَّعْفُوَ وَإِمَّا أَنْ يَقْتَلَ.

‘‘কাউকে হত্যা করা হলে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশরা দু’টি অধিকার পাবে। তার মধ্য থেকে ভেবেচিন্তে তারা উত্তমটিই গ্রহণ করবে। হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিবে অথবা তাকে হত্যা করবে’’। (তিরমিযী ১৪০৫)

তবে বিচারকের দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি সর্বপ্রথম হত্যাকৃতের ওয়ারিশদেরকে ক্ষমার পরামর্শ দিবেন।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ  رُفِعَ إِلَيْهِ شَيْءٌ فِيْهِ قِصَاصٌ إِلاَّ أَمَرَ فِيْهِ بِالْعَفْوِ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ক্বিসাস্ সংক্রান্ত কোন ব্যাপার উপস্থাপন করা হলে তিনি সর্বপ্রথম ক্ষমারই আদেশ করতেন’’।

(আবূ দাউদ ৪৪৯৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৭৪২)

পিতা-মাতা অথবা দাদা-দাদী তাদের কোন সন্তানকে হত্যা করলে তাদেরকে তার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না।

’উমর বিন্ খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يُقَادُ الْوَالِدُ بِالْوَلَدِ.

‘‘পিতা-মাতা অথবা দাদা-দাদীকে তাদের সন্তান হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না’’।

(তিরমিযী ১৪০০; ইব্নু মাজাহ্ ২৭১২; আহমাদ : ১/২২ ইব্নুল জারূদ্, হাদীস ৭৮৮ বায়হাক্বী : ৮/৩৮)

তবে তাদেরকে সন্তান হত্যার দিয়াত অবশ্যই দিতে হবে এবং তারা হত্যাকৃতের ওয়ারিসি সম্পত্তি হিসেবে উক্ত দিয়াতের কোন অংশই পাবে না।

এ ছাড়াও হত্যাকারী ব্যক্তি হত্যাকৃত ব্যক্তির যে কোন ধরনের ওয়ারিশ হলেও সে উক্ত ব্যক্তির ওয়ারিসি সম্পত্তির কিছুই পাবে না। এমনকি দিয়াতের কোন অংশও নয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْقَاتِلُ لَا يَرِثُ.

‘‘হত্যাকারী ব্যক্তি কোন মিরাসই পাবে না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬৯৫)

হত্যাকারী কোন মুসলিমকে কোন কাফির হত্যার পরিবর্তে ক্বিসাস্ হিসেবে হত্যা করা যাবে না। বরং তাকে উক্ত হত্যার পরিবর্তে দিয়াত দিতে হবে।

‘আলী, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يُقْتَلُ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ.

‘‘কোন মুসলিমকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না’’।

(বুখারী ১১১; আবূ দাউদ ৪৫৩০; তিরমিযী ১৪১২ নাসায়ী : ৮/১৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৭০৮, ২৭০৯, ২৭১০ আহমাদ্ : ১/১২২; হা’কিম : ২/১৫৩)

হত্যাকারী যে কোন পুরুষকে যে কোন মহিলা হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে। অনুরূপভাবে হত্যাকারী ব্যক্তি যেভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই হত্যাকারীকে হত্যা করা হবে।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

إِنَّ يَهُوْدِيًّا رَضَّ رَأْسَ جَارِيَةٍ بَيْنَ حَجَرَيْنِ، قِيْلَ: مَنْ فَعَـلَ هَذَا بِكِ، أَفُلَانٌ؟ أَفُلَانٌ، حَتَّى سُمِّيَ الْيَهُوْدِيُّ، فَأَوْمَأَتْ بِرَأْسِهَا، فَأُخِذَ الْيَهُوْدِيُّ فَاعْتَرَفَ، فَأَمَرَ بِهِ النَّبِيُّ  فَرُضَّ رَأْسُهُ بَيْنَ حَجَرَيْنِ.

‘‘জনৈক ইহুদি ব্যক্তি দু’টি পাথরের মাঝে এক আন্সারী মেয়ের মাথা রেখে তা পিষে দিলে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কে সে ব্যক্তি যে তোমার সাথে এমন ব্যবহার করলো? ওমুক না ওমুক। একে একে অনেকের নামই তার সামনে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষে তার সামনে ইহুদিটির নাম উল্লেখ করা হলে সে মাথা দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞাসাকারীর প্রতি সমর্থন জানায় এবং ইহুদিটিকে পাকড়াও করা হলে সে তা স্বীকারও করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপভাবে তার মাথা পিষে দেয়ার আদেশ জারি করেন এবং তাঁর আদেশ যথোচিত কার্যকরী করা হয়’’।

(বুখারী ২৪১৩; মুসলিম ১৬৭২; আবূ দাউদ ৪৫৩৫; ইব্নু মাজাহ্ ২৭১৫, ২৭১৬)

হত্যাকারী ছাড়া অন্য কাউকে কারোর হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلاَّ عَلَيْهَا، وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرَى»

‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। কোন পাপীই অন্যের পাপের বোঝা নিজে বহন করবে না’’। (আন্‘আম : ১৬৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُوْمًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا، فَلَا يُسْرِفْ فِّيْ الْقَتْلِ، إِنَّهُ كَانَ مَنْصُوْرًا»

‘‘কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার ওয়ারিশকে আমি (আল্লাহ্) ক্বিসাস্ গ্রহণের অধিকার দিয়ে থাকি। তবে (হত্যার পরিবর্তে) হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। (যেমন: হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্য নির্দোষকে হত্যা, হত্যাকারীর সঙ্গে অন্য নিরপরাধকেও হত্যা অথবা হত্যাকারীকে অমানবিকভাবে হত্যা করা ইত্যাদি)। কারণ, তার এ কথা জেনে রাখা উচিৎ যে, ক্বিসাস্ নেয়ার ব্যাপারে তাকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রা’ঈল : ৩৩)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আম্র (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَعْتَى النَّاسِ عَلَى اللهِ ثَلَاثَةٌ: مَنْ قَتَلَ فِيْ حَرَمِ اللهِ، أَوْ قَتَـلَ غَيْرَ قَاتِلِهِ، أَوْ قَتَلَ لِذُحْلِ الْجَاهِلِيَّةِ.

‘‘মানব জাতির মধ্য থেকে তিন ব্যক্তিই আল্লাহ্ তা‘আলার সঙ্গে সব চাইতে বেশি গাদ্দারী করে থাকে। তারা হচ্ছে: (মক্কা-মদীনার) হারাম এলাকায় কাউকে হত্যাকারী। যে ব্যক্তি হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্যকে হত্যা করে। শত্রুতাবশত: অন্যকে হত্যাকারী। যা বরবর যুগের নিয়ম ছিলো’’।

(আহমাদ : ২/১৭৯, ১৮৭ ইব্নু হিববান : ১৩/৩৪০)

‘আমর বিন্ আ’হ্ওয়াস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিদায় হজ্জের দিবসে নিম্নোক্ত কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

أَلَا لَا يَجْنِيْ جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ، وَلَا يَجْنِيْ وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ، وَلَا مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ.

‘‘যে কোন অপরাধী অপরাধের জন্য সে নিজেই দায়ী। অন্য কেউ নয়। অতএব পিতার অপরাধের জন্য সন্তান দায়ী নয়। অনুরূপভাবে সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাও দায়ী নন’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৭১৯)

কেউ কাউকে এমন বস্ত্ত দিয়ে হত্যা করলে যা কর্তৃক সাধারণত কেউ কাউকে হত্যা করে না সে জন্য তাকে অবশ্যই দিয়াত দিতে হবে। এ জাতীয় হত্যা ‘‘তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যা’’ নামে পরিচিত। এ হত্যার সাথে ইচ্ছাকৃত হত্যার কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ, তাতে হত্যার সামান্যটুকু ইচ্ছা অবশ্যই পাওয়া যায়। তবে উক্ত হত্যাকে নিরেট ইচ্ছাকৃত হত্যা এ কারণেই বলা হয় না যে, যেহেতু তাতে এমন বস্ত্ত ব্যবহার করা হয়নি যা কর্তৃক সাধারণত কাউকে হত্যা করা হয়। অনুরূপভাবে এ জাতীয় হত্যাকান্ডে ক্বিসাস্ নেই বলে ভুলবশত: হত্যার সঙ্গেও এর সামান্যটুকু সাদৃশ্য থেকে যায়।

কারোর হত্যাকারীর পরিচয় পাওয়া সম্ভবপর না হলেও তার দিয়াত দিতে হয়। কারণ, কোন মুসলিমের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেয়া হবে না। তবে সরকারই সে দিয়াত বহন করবে। সে জন্য কাউকে হত্যা করা যাবে না। যেমন: কোন ভিড় শেষ হওয়ার পর সেখানে কাউকে মৃত পাওয়া গেলে।

কোন ব্যক্তি কারোর ক্বিসাস্ অথবা দিয়াত বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করলে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার অভিশাপ নিপতিত হয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قُتِلَ عِمِّيًّا أَوْ رِمِّيًّا بِحَجَرٍ أَوْ سَوْطٍ أَوْ عَصًا فَعَقْلُهُ عَقْلُ الْـخَطَإِ، وَمَنْ قُتِلَ عَمْدًا فَهُوَ قَوَدٌ، وَمَنْ حَالَ دُوْنَهُ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلاَ عَدْلٌ.

‘‘যার হত্যাকারীর পরিচয় মিলেনি অথবা যাকে পাথর মেরে কিংবা লাঠি ও বেত্রাঘাতে হত্যা করা হয়েছে তার দিয়াত হচ্ছে ভুলবশত হত্যার দিয়্যাত। তবে যাকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা হয়েছে তার শাস্তি হবে ক্বিসাস্। যে ব্যক্তি উক্ত ক্বিসাস্ বা দিয়াত বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার পক্ষ থেকে কোন প্রকার তাওবা অথবা ফিদ্য়া (ক্ষতিপূরণ) গ্রহণ করা হবে না। অন্য অর্থে, তার পক্ষ থেকে কোন ফরয ও নফল ইবাদাত গ্রহণ করা হবে না’’।

(আবূ দাউদ ৪৫৪০, ৪৫৯১ নাসায়ী : ৮/৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৮৫)

 সরকারী কোষাগার চার ধরনের দায়ভার গ্রহণ করতে বাধ্য (হত্যাকারীর শাস্তি)

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সরকারী কোষাগার চার ধরনের দায়ভার গ্রহণ করতে বাধ্য। যা নিম্নরূপ:

১. কোন মুসলিম ঋণগ্রস্তাবস্থায় মারা গেলে এবং ঋণ পরিশোধ করার মতো কোন সম্পদ সে রেখে না গেলে উক্ত ঋণ তার সরকারই পরিশোধ করবে।

২. কেউ কাউকে ভুলবশত: অথবা তুলনামূলক ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে এবং সে ব্যক্তি আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলে অথবা তার কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকলে উক্ত দিয়াত তার সরকারই পরিশোধ করবে। তবে তার কোন আত্মীয়-স্বজন থাকলে তারাই তা পরিশোধ করবে।

৩. কোন হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা নির্দিষ্ট কোন আলামতের ভিত্তিতে কাউকে সে হত্যার জন্য দায়ী করলে অতঃপর বিচারক তাদেরকে সে ব্যাপারে পঞ্চাশটি কসম করতে বলার পরও তারা তা করতে অস্বীকৃতি জানালে এবং বিবাদীর পক্ষ থেকেও তারা সে জাতীয় কসম গ্রহণ না করলে সরকার কোষাগার থেকেই তার দিয়াত আদায় করবে।

৪. কোন হত্যাকৃত ব্যক্তির হত্যাকারীর পরিচয় পাওয়া না গেলেও সরকার তার দিয়াত বায়তুল্মাল্ থেকেই আদায় করবে।

ইচ্ছাকৃত হত্যা বলতে স্বভাবত: হত্যা করা হয় এমন বস্ত্ত দিয়ে কাউকে হত্যা করাকে বুঝানো হয়।

নিম্নে ইচ্ছাকৃত হত্যার কয়েকটি রূপ উল্লেখ করা হয়েছে:

১. কোন ভারী বস্ত্ত দিয়ে হত্যা।

২. শরীরে ঢুকে যায় এমন বস্ত্ত দিয়ে হত্যা।

৩. হিংস্র পশুর থাবায় নিক্ষেপ করে হত্যা।

৪. আগুনে বা পানিতে নিক্ষেপ করে হত্যা।

৫. গলা টিপে হত্যা।

৬. খানা-পানি না দিয়ে খিদে ও তৃষ্ণায় হত্যা।

৭. বিষ পানে হত্যা।

৮. যাদু করে হত্যা।

৯. হত্যা সংক্রান্ত ব্যাপারে দু’জন মিলে সাক্ষী দিয়ে কাউকে হত্যা করানো।

নিরেট ইচ্ছাকৃত অথবা তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত হচ্ছে: একশতটি উট। যার মধ্যে চল্লিশটি হবে গর্ভবতী।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا إِنَّ دِيَةَ الْـخَطَإِ شِبْهِ الْعَمْدِ: مَا كَانَ بِالسَّوْطِ وَالْعَصَا مِئَةٌ مِنَ الْإِبِلِ، مِنْهَا أَرْبَعُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهَا أَوْلَادُهَا.

‘‘কাউকে লাঠি ও বেত্রাঘাতে হত্যা করা হলে তথা তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত হচ্ছে: একশতটি উট। যার মধ্যে চল্লিশটি হবে গর্ভবতী’’।

(আবূ দাউদ ৪৫৪৭, ৪৫৮৮ নাসায়ী : ৮/৪১; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৭৬; ইব্নু হিববান ১৫২৬)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

عَقْلُ شِبْهِ الْعَمْدِ مُغَلَّظٌ مِثْلُ عَقْلِ الْعَمْدِ، وَلَا يُقْتَلُ صَاحِبُهُ.

‘‘তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াতের ন্যায় বেশি। এ জাতীয় হত্যাকারীকে কখনো হত্যা করা হবে না’’।

(আবূ দাউদ ৪৫৬৫)

ভুলবশত: হত্যার দিয়াত হচ্ছে: বিশটি দু’বছরের মাদি উট, চল্লিশটি তিন বছরের নর ও মাদি উট, বিশটি চার বছরের মাদি উট ও বিশটি পাঁচ বছরের মাদি উট।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دِيَةُ الْخَطَإِ أَخْمَاسًا: عِشْرُوْنَ حِقَّةً، وَعِشْرُوْنَ جَذَعَةً، وَعِشْرُوْنَ بَنَاتِ مَخَاضٍ، وَعِشْرُوْنَ بَنَاتِ لَبُوْنٍ، وَعِشْرُوْنَ بَنِيْ لَبُوْنٍ.

‘‘ভুলবশত: হত্যার দিয়াত হচ্ছে: বিশটি চার বছরের মাদি উট, বিশটি পাঁচ বছরের মাদি উট, বিশটি দু’ বছরের মাদি উট ও চল্লিশটি তিন বছরের নর ও মাদি উট’’। (দারাক্বুত্বনী, হাদীস ৩৩৩২)

বর্তমান সৌদি রিয়ালের হিসাবানুযায়ী নিরেট ইচ্ছাকৃত অথবা তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত হচ্ছে: ১,২০, ০০০ (এক লক্ষ বিশ হাজার) রিয়াল এবং ভুলবশত: হত্যার দিয়াত হচ্ছে: ১০০, ০০০ (এক লক্ষ) রিয়াল। তবে সর্ব যুগেই উটের মূল্যের পরিবর্তনের কারণে উক্ত দিয়াতের হার পরিবর্তনশীল।

ইচ্ছাকৃত হত্যার দিয়াত স্বয়ং হত্যাকারীই পরিশোধ করতে বাধ্য। অন্য কেউ উহার সামান্যটুকুও বহন করবে না। তবে তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যা ও ভুলবশত: হত্যার দিয়াত হত্যাকারীর পুরুষ আত্মীয়-স্বজনই পরিশোধ করবে। যদিও হত্যাকারী ধনীই হোক না কেন। তবে বিজ্ঞ বিচারক ব্যক্তি উক্ত দিয়্যাতকে আত্মীয়তার দূরত্ব ও নৈকট্যের কথা বিবেচনা করে সকল আত্মীয়-স্বজনের উপর বন্টন করে দিবে। যা তারা তিন বছরের মধ্যেই সহজ ও সরল কিস্তিতে পরিশোধ করবে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

اقْتَتَلَتِ امْرَأَتَانِ مِنْ هُذَيْلٍ، فَرَمَتْ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَى بِحَجَرٍ فَقَتَلَتْهَا وَمَا فِيْ بَطْنِـهَا، فَاخْتَصَمُوْا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَضَى رَسُوْلِ اللهِ  أَنَّ دِيَةَ جَنِيْنِهَا غُرَّةٌ: عَبْدٌ أَوْ وَلِيْدَةٌ، وَقَضَى بِدِيَةِ الْـمَرْأَةِ عَلَى عَاقِلَتِهَا.

‘‘হুযাইল্ গোত্রের দু’জন মহিলা ঝগড়া করে একজন অপরজনকে একটি পাথর নিক্ষেপ করে। তাতে অপর মহিলাটি ও তার পেটের সন্তান মরে যায়। মহিলাটির ওয়ারিশরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ ব্যাপারে বিচার দায়ের করলে তিনি নিম্নোক্ত ফায়সালা করেন:

১. সন্তানের দিয়াত হচ্ছে, একটি গোলাম অথবা একটি বান্দি। যা হত্যাকারিণী মহিলাটি স্বয়ং আদায় করবে। যার পরিমাণ পাঁচটি উট।

২. হত্যাকৃতা মহিলার দিয়াত হত্যাকারিণী মহিলার আত্মীয়-স্বজনরাই আদায় করবে’’। (বুখারী ৫৭৫৮; মুসলিম ১৬৮১)

মিক্বদাম শামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَنَا وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ، أَعْقِلُ عَنْهُ وَأَرِثُهُ، وَالْـخَالُ وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ، يَعْقِلُ عَنْهُ وَيَرِثُهُ.

’’যার ওয়ারিশ নেই তার ওয়ারিশ হবো আমি। আমি তার পক্ষ থেকে দিয়াত দেবো এবং তার ওয়ারিশ হবো। যার ওয়ারিশ নেই তার ওয়ারিশ হবে তার মামা। সে তার পক্ষ থেকে দিয়াত দেবে এবং তার ওয়ারিশ হবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬৮৪)

ইহুদি-খ্রিস্টান অথবা যে কোন চুক্তিবদ্ধ কিংবা নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফিরের দিয়াত মুসলিমের দিয়্যাতের অর্ধেক। অনুরূপভাবে গোলামের দিয়্যাতও স্বাধীন পুরুষের দিয়্যাতের অর্ধেক। তেমনিভাবে মহিলার দিয়্যাতও পুরুষের দিয়্যাতের অর্ধেক। এ ব্যাপারে আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَضَى رَسُوْلُ اللهِ  أَنَّ عَقْلَ أَهْلِ الْكِتَابَيْنِ نِصْفُ عَقْلِ الْـمُسْلِمِيْنَ، وَهُمُ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى.

’’ইহুদি-খ্রিস্টানদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফায়সালা এই যে, তাদের দিয়াত মুসলিমদের দিয়্যাতের অর্ধেক’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬৯৪)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دِيَةُ الْـمُعَاهَدِ نِصْفُ دِيَةِ الْـحُرِّ.

‘‘চুক্তিবদ্ধ কাফিরের দিয়াত স্বাধীন পুরুষের দিয়্যাতের অর্ধেক’’।

(আবূ দাউদ ৪৫৮৩)

‘আমর বিন্ শু‘আইব থেকে বর্ণিত তিনি তার পিতা থেকে এবং তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

عَقْلُ الْـمَرأَةِ مِثْلُ عَقْلِ الرَّجُلِ، حَتَّى يَبْلُغَ الثُّلُثَ مِنْ دِيَتِهَا.

‘‘মহিলার দিয়াত পুরুষের দিয়্যাতের মতোই। তবে যখন তা তার মূল দিয়্যাতের এক তৃতীয়াংশে পৌঁছুবে তখন তার দিয়াত হবে পুরুষের দিয়্যাতের অর্ধেক’’। (নাসায়ী : ৮/৪৫)

যদি কোন হত্যাকৃত ব্যক্তি কোথাও ক্ষতবিক্ষত অথবা রক্তাক্তাবস্থায় পাওয়া যায় এবং তার হত্যাকারী জানা না যায়। এমনকি হত্যাকারীর ব্যাপারে কোন প্রমাণও মিলেনি। তবুও হত্যাকৃতের ওয়ারিশরা উক্ত হত্যার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করছে এবং তাদের দাবির পক্ষে কিছু আকার-ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। যেমন: হত্যাকৃত ব্যক্তি ও সন্দেহকৃত ব্যক্তির মাঝে পূর্বের কোন শত্রুতা ছিলো অথবা সন্দেহকৃত ব্যক্তির ঘরেই হত্যাকৃত ব্যক্তিকে পাওয়া গেলো অথবা হত্যাকৃতের কোন ব্যবহৃত সম্পদ সন্দেহকৃত ব্যক্তির সাথে পাওয়া গেলো অথবা হত্যার ব্যাপারে বাচ্চাদের সাক্ষী পাওয়া যায় কোন বালিগ পুরুষের নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় বাদী ব্যক্তি সন্দেহকৃত ব্যক্তি যে উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে তা বলে পঞ্চাশটি কসম খাবে। অতঃপর ইচ্ছাকৃত হত্যা বলে প্রমাণিত হলে তার ক্বিসাস্ নেয়া হবে এবং ভুলবশত হত্যা প্রমাণিত হলে উহার দিয়াত নেয়া হবে। আর যদি বাদী ব্যক্তি পঞ্চাশটি কসম খেতে অস্বীকার করে অথবা বাদী পক্ষ মহিলা কিংবা বাচ্চা হয় তখন বিবাদী ব্যক্তি পঞ্চাশটি কসম খেয়ে উক্ত অপবাদ থেকে নিজকে নিষ্কৃত করবে। আর যদি সেও কসম খেতে অস্বীকার করে তা হলে অবশ্যই তাকে হত্যাকারী বলে দোষী সাব্যস্ত করা হবে। আর যদি বিবাদী ব্যক্তি পঞ্চাশটি কসম খেয়ে বসে অথবা বাদী পক্ষ তার কসমে রাজি না হয় তখন হত্যাকারীর দিয়াত সরকারী খাজাঞ্চিখানা থেকে দেয়া হবে।

তবে ’উলামা সম্প্রদায় উক্ত দাবির বিশুদ্ধতার জন্য দশটি শর্ত উল্লেখ করে থাকেন। যা নিম্নরূপ:

১. উক্ত হত্যার দাবি বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কিছু আকার-ইঙ্গিত পাওয়া যেতে হবে। যার কিয়দংশ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

২. যার বিরুদ্ধে হত্যার দাবি করা হচ্ছে সে বালিগ ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।

৩. যার ব্যাপারে হত্যার সন্দেহ করা হচ্ছে তার পক্ষে কাউকে হত্যা করা সম্ভবপর হতে হবে। যেমন: কারোর হাত-পা অবশ। এমতাবস্থায় তাকে সন্দেহ করা যাবে না।

৪. উক্ত দাবির মধ্যে হত্যার বাস্তব বর্ণনা অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন: এমন বলা যে, তার শরীরের ওমুক জায়গায় তলোয়ারের আঘাত রয়েছে।

৫. সমস্ত ওয়ারিশ উক্ত হত্যার দাবির ব্যাপারে একমত হতে হবে। কেউ চুপ থাকলে চলবে না।

৬. সমস্ত ওয়ারিশ উক্ত হত্যার ব্যাপারে একমত হতে হবে। কেউ উক্ত হত্যাকে অস্বীকার করলে চলবে না।

৭. সমস্ত ওয়ারিশ উক্ত দাবি করতে হবে।

৮. সমস্ত ওয়ারিশ এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে দায়ী করতে হবে। এমন যেন না হয়, কেউ বললো: অমুক ব্যক্তি হত্যা করেছে। আরেক জন বললো: না, এ নয় বরং অন্য আরেক জন হত্যা করেছে।

৯. ওয়ারিশদের মধ্যে পুরুষ থাকতে হবে।

১০. দাবি এক ব্যক্তির ব্যাপারে হতে হবে। অনেক জনের ব্যাপারে নয়।

সাহ্ল বিন্ আবূ হাস্মা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি তাঁর বংশের বড়দের মুখ থেকে শ্রবণ করেন যে, আব্দুল্লাহ্ বিন্ সাহ্ল এবং মু’হাইয়েসা (রা.) কোন এক কারণে খাইবার রওয়ানা করেন। কিছুক্ষণ পর উভয় জন ভিন্ন হয়ে যান। অতঃপর মু’হাইয়েসার নিকট এ সংবাদ আসলো যে, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ সাহ্লকে হত্যা করে কূপে ফেলে দেয়া হয়েছে। তখন সে ইহুদিদের নিকট এসে বললো: আল্লাহ্’র কসম! তোমরাই ওকে হত্যা করেছো। তারা বললো: আল্লাহ্’র কসম! আমরা ওকে হত্যা করিনি। তখন সে এবং তার ভাই ’হুওয়াইয়েসা এবং আব্দুর রহ্মান বিন্ সাহ্ল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। মু’হাইয়েসা কথা বলতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:

كَبِّرْ كَبِّرْ.

‘‘তোমার বড় ভাইকে কথা বলতে দাও’’।

তখন ’হুওয়াইয়েসা ঘটনাটি বিস্তারিত বললে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

إِمَّا أَنْ يَّدُوْا وَإِمَّا أَنْ يَّأْذَنُوْا بِحَرْبٍ، فَكَتَبَ إِلَيْهِمْ فِيْ ذَلِكَ كِتَابًا، فَكَتَبُوْا: إِنَّا وَاللهِ مَا قَتَلْنَاهُ، فَقَالَ لِـحُوَيِّصَةَ وَمُحَيِّصَةَ وَعَبْدِ الرَّحْمَنْ بِنْ سَهْلٍ: أَتَحْلِفُوْنَ وَتَسْتَحِقُّوْنَ دَمَ صَاحِبِكُمْ؟ قَالُوْا: لَا، قَالَ: فَتَحْلِفُ لَكُمْ يَهُوْدُ؟ قَالُوْا: لَيْسُوْا مُسْلِمِيْنَ، فَوَدَاهُ رَسُوْلُ اللهِ  مِنْ عِنْدِهِ، فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مِئَةَ نَاقَةٍ.

‘‘তারা দিয়াত দিবে অথবা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যপারে তাদের নিকট চিঠি পাঠালে তারা তাঁর কাছে লিখে পাঠায় যে, আল্লাহ্’র কসম! আমরা ওকে হত্যা করিনি। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’হুওয়াইয়েসা, মু’হাইয়েসা ও আব্দুর রহ্মান বিন্ সাহ্লকে বলেন: তোমরা কি কসম খেয়ে ওর ক্বিসাস্ নিবে? তারা বললো: না। তিনি বললেন: তাহলে ইহুদিরা তোমাদের নিকট কসম খাবে? তারা বললো: তারা মুসলিম নয়। অতএব তাদের কসমের কোন গুরুত্ব নেই। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পক্ষ থেকে একশতটি উট তাদের নিকট দিয়াত হিসেবে পাঠিয়ে দেন’’। (বুখারী ৭১৯২; মুসলিম ১৬৬৯)

কেউ কাউকে ধোঁকা কিংবা কৌশলে অথবা অভয় দিয়ে হত্যা করলে (চাই তা সম্পদের জন্য হোক কিংবা ইজ্জতহানির জন্যে অথবা কোন রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়) এমনকি স্বামী স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করলেও বিচারক উক্ত হত্যাকারীকে অবশ্যই হত্যা করবে। কোনভাবেই তাকে ক্ষমা করা হবে না। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার যমিনে ফিৎনা সৃষ্টিকারী। অনুরূপভাবে সন্ত্রাসী, দস্যু, তস্কর, ধর্ষক ও শ্লীলতাহানিকারী, ছিনতাইকারী এবং অপহরণকারীর বিধানও একই। চাই তারা কাউকে হত্যা করুক অথবা নাই করুক। তবে তারা কাউকে হত্যা করলে অবশ্যই তাদেরকে হত্যা করতে হবে। আর তারা কাউকে হত্যা না করলে তাদেরকে চারটি শাস্তির যে কোন একটি শাস্তি দেয়া হবে। হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসী দেয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্ধী করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এমনকি একজনকে হত্যা করার ব্যাপারে কয়েকজন অংশ গ্রহণ করলেও তাদের সকলকে হত্যা করা হবে। যদি তারা সরাসরি উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَسْعَوْنَ فِيْ الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُّقَتَّلُوْا أَوْ يُصَلَّبُوْا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيْهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْ مِنَ الْأَرْضِ، ذَلِكَ لَـهُمْ خِزْيٌ فِيْ الدُّنْيَا وَلَـهُمْ فِيْ الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ، إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَقْدِرُوْا عَلَيْهِمْ فَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ»

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধি-বিধানের উপর হঠকারিতা দেখায় এবং (হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসী দেয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখা হবে (যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়)। এ হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকের ভীষণ অপমান এবং পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে যদি তারা স্বেচ্ছায় তাওবা করে নেয় তাহলে জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩৩)

তবে মানুষের হৃত অধিকার তাদেরকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَدِمَ أُنَاسٌ مِنْ عُرَيْنَةَ عَلَى رَسُوْلُ اللهِ  الْـمَدِيْنَةَ، فَاجْتَوَوْهَا، فَقَالَ لَـهُمْ رَسُوْلُ اللهِ : إِنْ شِئْتُمْ أَنْ تَخْرُجُـوْا إِلَى إِبِلِ الصَّدَقَةِ فَتَشْرَبُوْا مِنْ أَلْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا، فَفَعَلُوْا، فَصَحُّوْا، ثُمَّ مَالُوْا عَلَى الرُّعَاةِ فَقَتَلُوْهُمْ وَارْتَدُّوْا عَنِ الْإِسْلَامِ، وَسَاقُوْا ذَوْدَ رَسُوْلِ اللهِ ، فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ ، فَبَعَثَ فِيْ أَثَرِهِمْ، فَأُتِيَ بِهِمْ، فَقَطَعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ، وَسَمَلَ أَعْيُنَهُمْ وَتَرَكَهُمْ فِيْ الْـحَرَّةِ حَتَّى مَاتُوْا.

’উরাইনাহ্ গোত্রের কিছু লোক মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। অসুস্থতার দরুন তারা মদীনায় অবস্থান করতে চাচ্ছিলো না। অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন: যদি তোমাদের মনে চায় তা হলে তোমরা সাদাকার উটের দুধ ও প্রস্রাব পান করতে পারো। তারা তাই করলো। তাতে তারা সুস্থ হয়ে গেলো। অতঃপর তারা উট রাখালদেরকে হত্যা করলো, মুর্তাদ্ হয়ে গেলো এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকটি উট নিয়ে গেলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপারটি জানতে পেরে তাদেরকে ধরে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তাদেরকে উপস্থিত করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হাত-পা কেটে দিলেন, তাদের চোখ উঠিয়ে ফেললেন এবং তাদেরকে রোদ্রে বেঁধে রাখলেন যতক্ষণ না তারা মৃত্যু বরণ করে’’।

(বুখারী ৫৬৮৫, ৫৬৮৬; মুসলিম ১৬৭১)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قُتِلَ غُلَامٌ غِيْلَةً، فَقَالَ عُمَرُ: لَوِ اشْتَرَكَ فِيْهِ أَهْلُ صَنْعَاءَ لَقَتَلْتُهُمْ بِهِ.

‘‘জনৈক যুবককে গুপ্তভাবে হত্যা করা হলে ’উমর (রাঃ) বললেন: পুরো সান্‘আবাসীরাও (বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী) যদি উক্ত যুবককে হত্যা করায় অংশ গ্রহণ করতো তা হলে আমি তাদের সকলকেই ওর পরিবর্তে হত্যা করতাম। তাদেরকে আমি কখনোই এমনিতেই ছেড়ে দিতাম না’’।

(বুখারী ৬৮৯৬)

তবে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আর তা হলো: কেউ কাউকে হত্যা করে তাওবা করে ফেললে সে দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে কি না?

এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, তাওবার কারণে দুনিয়ার শাস্তি কখনো ক্ষমা করা হবে না। তবে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা যদি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয় তা হলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। অন্যথা নয়।

তবে তাওবার কারণে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করা হবে কি না সে ব্যাপারে আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের তিনটি মত উল্লেখযোগ্য। যা নিম্নরূপ:

১. তার জন্য আখিরাতের শাস্তি ক্ষমা করা হবে না। কারণ, যাকে হত্যা করা হয়েছে সে তার অধিকার ফিরে পায়নি। অতএব তাকে তা আখিরাতে দেয়া হবে।

২. তাওবার কারণে আখিরাতে তাকে আর শাস্তি দেয়া হবে না। কারণ, তাওবা সকল গুনাহ্ মুছে দেয়। আর হত্যাকৃত ব্যক্তি যখন নিজ অধিকার আদায় করতে সক্ষম নয় সে জন্য তার ওয়ারিশদেরকে এ ব্যাপারে তার প্রতিনিধি বানানো হয়েছে। সুতরাং তাদের ফায়সালা তার ফায়সালা হিসেবেই ধরা হবে। অতএব আখিরাতে তার পাওনা বলতে কিছুই থাকবে না। যার দরুন হত্যাকারীকে শাস্তি পেতে হবে।

প্রথম মতই গ্রহণযোগ্য। কারণ, তাতে আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাসের সমর্থন রয়েছে। আর একটি কথা হচ্ছে, হত্যার সঙ্গে তিনটি অধিকার সম্পৃক্ত। আল্লাহ্’র অধিকার, হত্যাকৃত ব্যক্তির অধিকার ও তার ওয়ারিশদের অধিকার। সুতরাং তাওবার কারণে আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার রক্ষা পেলো। ওয়ারিশদের অধিকার ক্বিসাস্ (হত্যার বিনিময়ে হত্যা), দিয়াত (শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ), চুক্তিবদ্ধ সম্পদ অথবা ক্ষমার মাধ্যমে রক্ষিত হয়। তবে হত্যাকৃত ব্যক্তির অধিকার কিছুতেই রক্ষা পায়নি। যা সে পরকালেই পাবে ইন্শাআল্লাহ্।

 ৪. সুদ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সুদ খাওয়া মারাত্মক অপরাধ। এ জন্যই তো আল্লাহ্ তা‘আলা সুদখোরের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। যা অন্য কোন পাপীর সাথে দেননি।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট রয়েছে তা বর্জন করো যদি তোমরা মু’মিন হওয়ার দাবি করে থাকো। আর যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৮-২৭৯)

অর্থনৈতিক মন্দাভাব, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, অকর্মের সংখ্যাবৃদ্ধি, কোম্পানীগুলোর অধ:পতন, নিজের সকল উপার্জন ঋণ পরিশোধেই নি:শেষ হয়ে যাওয়া, দেশের বেশির ভাগ সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে সীমাবদ্ধ হওয়া তথা সমাজে উচ্চস্তরের আবির্ভাব সে যুদ্ধেরই অন্তর্গত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদের সাথে সম্পৃক্ত চার প্রকারের লোককে সমভাবে দোষী সাব্যস্ত করেন।

জাবির ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত (অভিসম্পাত) করেন সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তিকে। তারা হচ্ছে: সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষীদ্বয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: তারা সবাই সমপর্যায়ের দোষী’’।

(মুসলিম ১৫৯৮; তিরমিযী ১২০৬; আবূ দাউদ ৩৩৩৩; ইব্নু মাজাহ্ ২৩০৭; ইব্নু হিববান ৫০২৫; আহমাদ ৬৩৫, ৬৬০, ৮৪৪, ১১২০, ১২৮৮, ১৩৬৪, ৩৭২৫, ৩৭৩৭, ৩৮০৯, ৪৩২৭, ১৪৩০২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

الرِّبَا ثَلَاثَةٌ وَّسَبْعُوْنَ بَابًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: حُوْبًا، أَيْسَرُهَا مِثْلُ أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ، وَإِنَّ أَرْبَى الرِّبَا عِرْضُ الرَّجُلِ الْـمُسْلِمِ.

‘‘সুদের তিয়াত্তরটি গুনাহ্ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ্ হচ্ছে, কোন ব্যক্তির নিজ মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করার সমতুল্য গুনাহ্। আর সবচেয়ে বড় সুদ হলো, কোন মুসলিম ব্যক্তির ইয্যত হনন’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ২৩০৪, ২৩০৫; হা’কিম : ২/৩৭ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৩৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

دِرْهَمُ رِبَا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَّثَلَاثِيْنَ زَنْيَةً.

‘‘সুদের একটি টাকা জেনেশুনে খাওয়া ছত্রিশবার ব্যভিচার চাইতেও মারাত্মক’’। (আহমাদ : ৫/২২৫ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৩৭৫)

সুদের সম্পদ যত বেশিই হোক না কেন তাতে কোন বরকত নেই।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِيْ الصَّدَقَاتِ، وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيْمٍ»

’’আল্লাহ্ তা‘আলা সুদে কোন বরকত দেন না। তবে তিনি দানকে অবশ্যই বাড়িয়ে দেন। বস্ত্তত: আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক কৃতঘ্ন পাপীকে ভালোবাসেন না’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ.

‘‘সুদ যদিও দেখতে বেশি দেখা যায় তার পরিণতি কিন্তু ঘাটতির দিকেই’’। (হা’কিম : ২/৩৭ সাহীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৪২; ইব্নু মাজাহ্ ২৩০৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা সুদখোরকে শয়তানে ধরা ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন। আর তা এ কারণেই যে, তারা সুদকে লাভ বলে জ্ঞান করে; অথচ ব্যাপারটি একেবারেই তার উল্টো।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُـوْنَ إِلاَّ كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْـمَسِّ، ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوْا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا، وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا»

‘‘সুদখোররা (কিয়ামতের দিন) শয়তানে ধরা ব্যক্তির ন্যায় মোহাবিষ্ট হয়ে দাঁড়াবে। আর তা এ কারণেই যে, তারা বলে: ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৫)

যারা সুদখোর তারা পারতপক্ষে কখনো সুদ কম খেতে চায় না। বরং বেশি খেতে চাওয়াই তাদের সাধারণ অভ্যাস। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে তাদেরকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُوْا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সুদ বেশি বেশি খেয়ো না। বরং তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’।

(আ’লি ’ইমরান : ১৩০)

তবে গুনাহ্টি যত বড়ই হোক না কেন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাহ্কে নিজ দয়ায় তা থেকে তাওবা করার পদ্ধতিও শিক্ষা দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَمَنْ جَآءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ، وَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ، وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَآئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ، هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ»

‘‘অতঃপর যার নিকট নিজ প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে। ফলে সে তা ছেড়ে দিয়েছে। তা হলে যা ইতিপূর্বে হয়ে গেছে তাতে কোন অসুবিধে নেই এবং তার ব্যাপারটি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটেই সোপর্দ। (যদি সে নিজ তাওবার উপর অটল ও অবিচল থাকে তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তার পুণ্যকে বিনষ্ট করবেন না)। আর যারা আবারো সুদ খেতে শুরু করলো তারা হচ্ছে জাহান্নামী। যেখানে তারা সদা সর্বদা থাকবে’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৫)

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

«وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوْسُ أَمْوَالِكُمْ، لَا تَظْلِمُوْنَ وَلَا تُظْلَمُوْنَ، وَإِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ، وَأَنْ تَصَدَّقُوْا خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»

‘‘আর যদি তোমরা সুদ খাওয়া থেকে তাওবা করে নাও তা হলে তোমাদের জন্য রয়েছে শুধু তোমাদের মূলধনটুকু। তোমরা কারোর উপর অত্যাচার করবে না এবং তেমনিভাবে তোমাদের উপরও কোন অত্যাচার করা হবে না। আর যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি খুব অভাবগ্রস্ত হয়ে থাকে তাহলে তার স্বচ্ছলতার প্রতীক্ষা করো। আর যদি তোমরা তোমাদের মূলধনটুকুও দরিদ্র ঋণগ্রস্তদেরকে দান করে দাও তা হলে তা হবে তোমাদের জন্য আরো কল্যাণকর। যদি তোমরা তা জানো বা বুঝে থাকো তা হলে তা অতিসত্বর বাস্তবায়ন করো’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭৯-২৮০)

সুদ খাওয়া, খাওয়ানো, লেখা ও সে ব্যাপারে সাক্ষী দেয়া যেমন হারাম অথবা কবীরা গুনাহ্ তেমনিভাবে সুদী ব্যাংকে টাকা রাখা, পাহারাদারি করা অথবা সুদী ব্যাংকের সাথে যে কোন ধরনের লেনদেন করাও শরীয়ত বিরোধী কাজ তথা অবৈধ।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«تَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى، وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ، وَاتَّقُوْا اللهَ، إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ»

‘‘তোমরা নেক কাজ ও আল্লাহ্ভীরুতায় পরস্পরকে সহযোগিতা করো। তবে পাপাচার ও অত্যাচার করতে কাউকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহ্কে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি কঠিন শাস্তিদাতা’’। (মা’য়িদাহ্ : ২)

তবে যারা নিতান্ত অসুবিধায় পড়ে (চুরি অথবা আত্মসাৎ ইত্যাদির ভয়ে) মন্দের ভালো ইসলামী ব্যাংক কাছে না পেয়ে সুদী ব্যাংকে টাকা রেখেছেন তাদেরকে সদা সর্বদা নিজ অপারগতার কথা মনে রাখতে হবে। ভাবতে হবে, আমি যেন অপারগতার কারণে মৃত পশু খাচ্ছি। আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট এ জন্য সদা সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করবে। বিকল্প ব্যবস্থার জন্য অবশ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। ব্যাংক থেকে সুদ উঠিয়ে তা জনকল্যাণমূলক জায়িয কাজে খরচ করে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ব্যবস্থা করবে। তা ব্যয় করার সময় কখনো সাদাকার নিয়্যাত করবে না। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র এবং তিনি একমাত্র পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করে থাকেন। আর সুদ হচ্ছে অপবিত্র। সুতরাং তিনি তা কখনোই গ্রহণ করবেন না। সুদের টাকা খাদ্য, পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদির খাতে অথবা স্ত্রী-পুত্র এবং মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ তথা ওয়াজিব খরচায় ব্যয় করা যাবে না। তেমনিভাবে যাকাত আদায়, ট্যাক্স পরিশোধ, নিজকে যালিমের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও ব্যয় করা যাবে না। কারণ, এ সবগুলো প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সুদ খাওয়ারই শামিল।

৫. ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণও একটি বড় অপরাধ তথা কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ أَمْـوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا، وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا»

‘‘নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করে তারা সত্যিকারার্থে আগুন দিয়ে নিজের পেট ভরছে এবং অচিরেই তারা জাহান্নামের অগ্নিতে দগ্ধ হবে’’। (নিসা’ : ১০)

 ৬. কাফিরদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাফিরদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়নও একটি মারাত্মক অপরাধ তথা কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِيْنَ كَفَـرُوْا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْأَدْبَارَ، وَمَنْ يُّوَلِّـهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلاَّ مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ، فَقَدْ بَآءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ، وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ، وَبِئْسَ الْـمَصِيْرُ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখনই কাফিরদের সম্মুখীন হবে তখন তোমরা কখনোই তাদেরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করো না। যে ব্যক্তি সে দিন যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন অথবা নিজেদের অন্য সেনাদলের নিকট অবস্থান নেয়া ছাড়া যুদ্ধাবস্থায় কাফিরদের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে সে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার কোপানলে পতিত হবে এবং তার আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। যা একেবারেই নিকৃষ্টতম স্থান’’। (আন্ফাল্ : ১৫-১৬)

 ৭. সতী-সাধ্বী মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সতী-সাধ্বী মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া আরেকটি কঠিন অপরাধ তথা কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْـمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوْا فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী সরলমনা মু’মিন মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) রয়েছে মহা শাস্তি’’। (নূর : ২৩)

কোন সতী-সাধ্বী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার শাস্তি:

যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারেনি তাদের প্রত্যেককে আশিটি করে বেত্রাঘাত করা হবে, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْـمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوْا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ، فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً، وَلَا تَقْبَلُوْا لَـهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا، وَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ، إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوْا، فَإِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ»

‘‘যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তা হলে তোমরা ওদেরকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করো, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’। (নূর : ৪-৫)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَـمَّا نَزَلَ عُذْرِيْ ؛ قَامَ رَسُوْلُ اللهِ  عَلَى الْـمِنْبَرِ، فَذَكَرَ ذَلِكَ، وَتَلَا الْـقُرْآنَ، فَلَمَّا نَزَلَ ؛ أَمَرَ بِرَجُلَيْنِ وَامْرَأَةٍ ؛ فَضُرِبُوْا حَدَّهُمْ.

‘‘যখন আমার পবিত্রতা সম্পর্কে কুর‘আন নাযিল হলো তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তা সাহাবাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে দু’জন পুরুষ তথা হাস্সান বিন্ সাবিত আন্সারী ও মিস্ত্বাহ্ বিন্ উসাসাহ্ এবং একজন মহিলা তথা হা’ম্নাহ্ বিন্ত জা’হাশকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করতে আদেশ করেন। অতএব তাদেরকে সে পরিমাণ বেত্রাঘাত করা হয়’’।

(আবূ দাউদ ৪৪৭৪; তিরমিযী ৩১৮১; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১৫)

যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ তারা ছাড়া এ ব্যাপারে অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেকেই চার চার বার এ কথা সাক্ষ্য দিবে যে, সে নিশ্চিয়ই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক যদি সে এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। মহিলাটিও এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই তার স্বামী মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, নিশ্চয়ই তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَّـهُمْ شُهَدَآءُ إِلاَّ أَنْفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ أَحَدِهِمْ أَرْبَعُ شَهَادَاتٍ بِاللهِ، إِنَّهُ لَـمِنَ الصَّادِقِيْنَ، وَالْـخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَةَ اللهِ عَلَيْهِ إِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ، وَيَدْرَؤُا عَنْهَا الْعَذَابَ أَنْ تَشْهَدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ بِاللهِ، إِنَّهُ لَمِنَ الْكَاذِبِيْنَ، وَالْخَامِسَةَ أَنَّ غَضَبَ اللهِ عَلَيْهَا إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ».

‘‘যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো অথচ তাদের সপক্ষে তারা ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেককে চার চার বার এ বলে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, সে নিশ্চয়ই সত্যবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক সে যদি এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে সে এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিলে যে, তার স্বামী নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে’’। (নূর : ৬-৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যভিচারের অপবাদকে গুরুতর অপরাধ বলে সাব্যস্ত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَتَحْسَبُوْنَهُ هَيِّنًا، وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمٌ»

‘‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছো; অথচ তা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খুবই গুরুতর অপরাধ’’। (নূর : ১৫)

অপবাদ সর্বসাকুল্যে দু’ প্রকার:

১. যে অপবাদে শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন: ব্যভিচার কিংবা সমকামের প্রকাশ্য অপবাদ অথবা কারোর বংশীয় পরিচয় অস্বীকার করা।

২. যে অপবাদে শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণের কোন শাস্তি নেই। তবে এমতাবস্থায় অপবাদীকে শিক্ষামূলক কিছু শাস্তি অবশ্যই দেয়া হবে। যেমন: উক্ত ব্যাপারসমূহের অস্পষ্ট অপবাদ অথবা অন্য কোন ব্যাপারে অপবাদ।

যে যে কারণে অপবাদকারীকে বেত্রাঘাত করতে হয় না:

সর্বমোট চারটি কারণের যে কোন একটি কারণ পাওয়া গেলে অপবাদকারীকে আর বেত্রাঘাত করতে হয় না। যা নিম্নরূপ:

১. যাকে অপবাদ দেয়া হলো সে অপবাদকারীকে ক্ষমা করে দিলে।

২. যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে সে অপবাদকারীর অপবাদকে স্বীকার করলে।

৩. অপবাদকারী অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে কোন প্রমাণ দাঁড় করালে।

৪. পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে নিজকে লা’নত করতে রাজি হলে।

বিধানগতভাবে কাউকে অপবাদ দেয়া তিন প্রকার:

১. হারাম। অপবাদটি একেবারে মিথ্যে অথবা বানোয়াট হলে।

২. ওয়াজিব। কেউ নিজ স্ত্রীকে ঋতুমুক্তা তথা পবিত্রাবস্থায় কারোর সাথে ব্যভিচার করতে দেখলে। অথচ সে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর তার স্ত্রীর সাথে একবারও সহবাস করেনি এবং উক্ত ব্যভিচার থেকে সন্তানও জন্ম নিয়েছে।

৩. জায়িয। কেউ নিজ স্ত্রীকে কারোর সাথে ব্যভিচার করতে দেখলে। অথচ উক্ত ব্যভিচার থেকে কোন সন্তান জন্ম নেয়নি। এমতাবস্থায় সে নিজ স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিতে পারে অথবা তাকে অপবাদ না দিয়ে এমনিতেই তালাক্ব দিয়ে দিতে পারে। এমতাবস্থায় তালাক্ব দেয়াই সর্বোত্তম। কারণ, অপবাদ দিলে তার স্ত্রী অপবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মিথ্যা কসম খাবে অথবা অপবাদ স্বীকার করে অপমানিতা হবে। আর এমনিতেই তালাক্ব দিয়ে দিলে এসবের কোন ঝামেলাই থাকবে না।

কেউ কাউকে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করেছে বলে অপবাদ দিলে এ ব্যাপারে তাকে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে অথবা সে নিজকে লা’নত করবে। তা না হলে তার স্ত্রী এবং যাকে তার সাথে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই উক্ত অপবাদের বিচার চাওয়ার অধিকার রাখবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: হিলাল বিন্ উমাইয়াহ্ (রাঃ) শারীক বিন্ সা’হ্মা’ (রাঃ) কে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছে বলে অপবাদ দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

الْبَيِّنَةُ أَوْ حَدٌّ فِيْ ظَهْرِكَ.

‘‘সাক্ষী-প্রমাণ দিবে। নতুবা তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হবে’’। (বুখারী ২৬৭১)

 ৮. ব্যভিচার

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ব্যভিচার একটি মারাত্মক অপরাধ। হত্যার পরই যার অবস্থান। কারণ, তাতে বংশ পরিচয় সঠিক থাকে না। লজ্জাস্থানের হিফাযত হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক সম্মান রক্ষা পায় না। মানুষে মানুষে কঠিন শত্রুতার জন্ম নেয়। দুনিয়ার সুস্থ পারিবারিক ব্যবস্থা এতটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। একে অন্যের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দেয়। এ কারণেই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যার পরই এর উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ لَا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ إِلَـهًا آخَرَ، وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَلَا يَزْنُوْنَ، وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا، يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهِ مُهَانًا، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِـحًا، فَأُوْلَآئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّآتِهِمْ حَسَنَاتٍ، وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا»

‘‘আর যারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরীয়ত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে। তবে যারা তাওবা করে নেয়, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

(ফুর্কান : ৬৮-৭০)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَدْعُوَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَّطْعَمَ مَعَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيْلَةِ جَارِكَ.

‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কোন পাপটি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা’’। (বুখারী ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম ৮৬)

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেন:

«وَلَا تَقْرَبُوْا الزِّنَا، إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَّسَآءَ سَبِيْلًا»

‘‘তোমরা যেনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রা’ঈল্ : ৩২)

তবে এ ব্যভিচার মুহ্রিমা (যে মহিলাকে বিবাহ্ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম) এর সাথে হলে তা আরো জঘন্য। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করা সম্পর্কে বলেন:

«وَلَا تَنْكِحُوْا مَا نَكَحَ أَبَآؤُكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ إِلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ، إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَّمَقْتًا، وَسَآءَ سَبِيْلًا»

‘‘তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করো না। তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা’’। (নিসা’ : ২২)

বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমার চাচার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার হাতে ছিলো একখানা ঝান্ডা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন:

بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ  إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ اِمْرَأَةَ أَبِيْهِ ؛ فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ، وَآخُذَ مَالَهُ.

‘‘আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে’’। (আবূ দাউদ ৪৪৫৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৫৬)

মুহ্রিমাকে বিবাহ্ করা যদি এতো বড় অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে তাদের সাথে ব্যভিচার করা যে কতো বড়ো অপরাধ হবে তা সহজেই বুঝা যায়।

আল্লাহ্ তা‘আলা লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে সফলকাম বলেছেন। এর বিপরীতে অবৈধ যৌন সংযোগকারীকে ব্যর্থ, নিন্দিত ও সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قَدْ أَفْلَحَ الْـمُؤْمِنُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ، وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ، وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ، وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ، إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ، فَمَنِ ابْتَغَى وَرَآءَ ذَلِكَ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ»

‘‘মু’মিনরা অবশ্যই সফলকাম। যারা নামাযে অত্যন্ত মনোযোগী। যারা অযথা ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত। যারা যাকাত দানে অত্যন্ত সক্রিয়। যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারী অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী’’।

(মু’মিনূন : ১-৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে ব্যাপকভাবে মানব জাতির নিন্দা করেছেন। তবে যারা নিন্দিত নয় তাদের মধ্যে যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী অন্যতম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ، إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ، فَمَنِ ابْتَغَى وَرَآءَ ذَلِكَ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ»

‘‘আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী’’। (মা‘আরিজ : ২৯-৩১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যৌনাঙ্গ হিফাযতকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا شَبَابَ قُرَيْشٍ! احْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، لَا تَزْنُوْا، أَلَا مَنْ حَفِظَ فَرْجَهُ فَلَهُ الْـجَنَّةُ.

‘‘হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করো। কখনো ব্যভিচার করো না। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করতে পেরেছে তার জন্যই তো জান্নাত’’।

(সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪১০)

সাহ্ল্ বিন্ সা‘আদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ.

‘‘যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ তথা জিহবা এবং উভয় পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো’’। (বুখারী ৬৪৭৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা শুধু যৌনকর্মকেই হারাম করেননি। বরং তিনি এরই পাশাপাশি সব ধরনের অশ্লীলতাকেও হারাম করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْـحَقِّ، وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا، وَأَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ»

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও: নিশ্চয়ই আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা’’। (আ’রাফ্ : ৩৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা যখন ব্যভিচারকর্মকে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন তিনি সে সকল পথকেও নীতিগতভাবে রোধ করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে স্বভাবত: ব্যভিচারকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা পুরুষ ও মহিলা উভয় জাতিকে লজ্জাস্থান হিফাযতের পূর্বে সর্বপ্রথম নিজ দৃষ্টিকে সংযত করতে আদেশ করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ، وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ، ذَلِكَ أَزْكَى لَـهُمْ، إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ، وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ، وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ»

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি মু’মিনদেরকে বলে দাও: যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য প্রবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মু’মিন মহিলাদেরকেও বলে দাও: যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে’’। (নূর : ৩০-৩১)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِيْ الصُّدُوْرُ»

‘‘তিনিই চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্ত্ত সম্পর্কেও অবগত’’। (গাফির/মু’মিন : ১৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে অন্য কারোর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে চক্ষুর অপব্যবহার না হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهَا، ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ، فَإِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَآ أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ، وَإِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ، وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তো তোমাদের জন্য অনেক শ্রেয়। আশাতো তোমরা উক্ত উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যদি তোমরা উক্ত গৃহে কাউকে না পাও তা হলে তোমরা তাতে একেবারেই প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তোমাদেরকে তাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়: ফিরে যাও, তা হলে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তো তোমাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত’’। (নূর : ২৭-২৮)

আল্লাহ্ তা‘আলা বিশেষভাবে মহিলাদেরকে অপর পুরুষ থেকে পর্দা করতে আদেশ করেছেন। যাতে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি তার অপূর্ব সৌন্দর্যের উগ্র আকর্ষণ থেকে রক্ষা পায় এবং ক্রমান্বয়ে সে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত না হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا، وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ، وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبَآئِهِنَّ أَوْ أَبَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَآئِهِنَّ أَوْ أَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَآئِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ أُوْلِيْ الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَـالِ، أَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَآءِ، وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّ، وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَا الْـمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»

‘‘মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য (শরীরের সাথে এঁটে থাকা অলংকার বা আকর্ষণীয় পোষাক) প্রকাশ না করে। তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ পেয়ে যায় (বোরকা, চাদর, মোজা ইত্যাদি) তা প্রকাশ পেলে কোন অসুবিধে নেই। তাদের ঘাড়, গলা ও বক্ষদেশ (চেহারা সহ) যেন মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইপো, বোনপো, স্বজাতীয় মহিলা, মালিকানাধীন দাস, যৌন কামনা রহিত অধীন পুরুষ, নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তেমনিভাবে তারা যেন সজোরে ভূমিতে নিজ পদযুগল ক্ষেপণ না করে। কারণ, তাতে করে তাদের আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে। বরং হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা‘আলার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। তখনই তোমরা সফলকাম হতে পারবে’’। (নূর : ৩১)

 চারটি অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ব্যভিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় - ১. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন ব্যক্তি চারটি অঙ্গকে সঠিক ও শরীয়ত সম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সত্যিকারার্থে সে অনেকগুলো গুনাহ্ বিশেষভাবে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে পারে। তেমনিভাবে তার ধার্মিকতাও অনেকাংশে রক্ষা পাবে। আর তা হচ্ছে:

১. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি। তা রক্ষা করা লজ্জাস্থানকে রক্ষা করার শামিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

غُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ.

‘‘তোমাদের চোখ নিম্নগামী করো এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করো’’।

(আহমাদ : ৫/৩২৩; হা’কিম : ৪/৩৫৮, ৩৫৯; ইব্নু হিববান ২৭১ বায়হাক্বী : ৬/২৮৮)

হঠাৎ কোন হারাম বস্ত্তর উপর চোখ পড়ে গেলে তা তড়িঘড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার কিংবা একদৃষ্টে ওদিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন:

يَا عَلِيُّ! لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ، فَإِنَّ لَكَ الْأُوْلَى، وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ.

‘‘হে ‘আলী! বার বার দৃষ্টি ক্ষেপণ করো না। কারণ, হঠাৎ দৃষ্টিতে তোমার কোন দোষ নেই। তবে ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় দৃষ্টি অবশ্যই দোষের’’।

(আবূ দাউদ ২১৪৯; তিরমিযী ২৭৭৭; আহমাদ : ৫/৩৫১, ৩৫৩, ৩৫৭; হা’কিম : ২/১৯৪ বায়হাক্বী : ৭/৯০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারাম দৃষ্টিকে চোখের যেনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমনিভাবে কোন ব্যক্তির হাত, পা, মুখ, কান, মনও ব্যভিচার করে থাকে। তবে মারাত্মক ব্যভিচার হচ্ছে লজ্জাস্থানের ব্যভিচার। যাকে বাস্তবার্থেই ব্যভিচার বলা হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْـمَنْطِقُ، وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ فَزِنَاهُمَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلَانِ تَزْنِيَانِ فَزِنَاهُمَا الْـمَشْيُ، وَالْفَمُ يَزْنِيْ فَزِنَاهُ الْقُبَلُ، وَالْأُذُنُ زِنَاهَا الِاسْتِمَاعُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِيْ، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ وَيُكَذِّبُهُ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য যেনার কিছু অংশ বরাদ্দ করে রেখেছেন। যা সে অবশ্যই করবে। চোখের যেনা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ, মুখের যেনা হচ্ছে অশ্লীল কথোপকথন, হাতও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে হাত দিয়ে ধরা, পাও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে কোন ব্যভিচার সংঘটনের জন্য রওয়ানা করা, মুখও ব্যভিচার করে; তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে চুমু দেয়া, কানের ব্যভিচার হচ্ছে অশ্লীল কথা শ্রবণ করা, মনও ব্যভিচারের কামনা-বাসনা করে। আর তখনই লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে অথবা করে না’’।

(আবূ দাউদ ২১৫২, ২১৫৩, ২১৫৪)

দৃষ্টিই সকল অঘটনের মূল। কারণ, কোন কিছু দেখার পরই তো তা মনে জাগে। মনে জাগলে তার প্রতি চিন্তা আসে। চিন্তা আসলে অন্তরে তাকে পাওয়ার কামনা-বাসনা জন্মে। কামনা-বাসনা জন্মিলে তাকে পাওয়ার খুব ইচ্ছে হয়। দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে প্রতিজ্ঞার রূপ ধারণ করে। আর তখনই কোন কর্ম সংঘটিত হয়। যদি পথিমধ্যে কোন ধরনের বাধা না থাকে।

দৃষ্টির কুফল হচ্ছে আফসোস, ঊর্ধ্বশ্বাস ও অন্তরজ্বালা। কারণ, মানুষ যা চায় তার সবটুকু সে কখনোই পায় না। আর তখনই তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, দৃষ্টি হচ্ছে তীরের ন্যায়।

অন্তরকে নাড়া দিয়েই তা লক্ষ্যবস্ত্ততে পৌঁছায়। একেবারে শান্তভাবে নয়।

আরো আশ্চর্যের কাহিনী এই যে, দৃষ্টি অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আর এ ক্ষতের উপর অন্য ক্ষত (আবার তাকানো) সামান্যটুকু হলেও আরামপ্রদ। যার নিশ্চিত নিরাময় কখনোই সম্ভবপর নয়।

 চারটি অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ব্যভিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় - ২. মন ও মনোভাব

 শেয়ার ও অন্যান্য 

এ পর্যায় খুবই কঠিন। কারণ, মানুষের মনই হচ্ছে ন্যায়-অন্যায়ের একমাত্র উৎস। মানুষের ইচ্ছা, স্পৃহা, আশা ও প্রতিজ্ঞা মনেরই সৃষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে নিজ কুপ্রবৃত্তির উপর বিজয় লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না নিশ্চিতভাবে সে কুপ্রবৃত্তির শিকার হবে। পরিশেষে তার ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য।

মানুষের মনোভাবই পরিশেষে দুরাশার রূপ নেয়। মনের দিক থেকে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি সে যে দুরাশায় সন্তুষ্ট। কারণ, দুরাশাই হচ্ছে সকল ধরনের আলস্য ও বেকারত্বের পুঁজি। এটিই পরিশেষে লজ্জা ও আফসোসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুরাশাগ্রস্ত ব্যক্তি আলস্যের কারণে যখন বাস্তবতায় পৌঁছুতে পারে না তখনই তাকে শুধু আশার উপরই নির্ভর করতে হয়। মূলতঃ বাস্তববাদী হওয়াই একমাত্র সাহসীর পরিচয়।

মানুষের ভালো মনোভাব আবার চার প্রকার:

১. দুনিয়ার লাভার্জনের মনোভাব।

২. দুনিয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।

৩. আখিরাতের লাভার্জনের মনোভাব।

৪. আখিরাতের ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।

নিজ মনোভাবকে উক্ত চারের মধ্যে সীমিত রাখাই যে কোন মানুষের একান্ত কর্তব্য। এগুলোর যে কোনটিই মনে জাগ্রত হলে তা অতি তাড়াতাড়ি কাজে লাগানো উচিৎ। আর যখন এগুলোর সব কটিই মনের মাঝে একত্রে জাগ্রত হয় তখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণটিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। যা এখনই না করলে পরে করা আর সম্ভবপর হবে না।

কখনো এমন হয় যে, অন্তরে একটি প্রয়োজনীয় কাজের মনোভাব জাগ্রত হলো যা পরে করলেও চলে; অথচ এরই পাশাপাশি আরেকটি এমন কাজের মনোভাবও অন্তরে জন্মালো যা এখনই করতে হবে। না করলে তা পরবর্তীতে কখনোই করা সম্ভবপর হবে না। তবে কাজটি এতো প্রয়োজনীয় নয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় বস্ত্তটিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেউ কেউ অপরটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন যা শরীয়তের মৌলিক নীতি পরিপন্থী।

তবে সর্বোৎকৃষ্ট চিন্তা ও মনোভাব সেটিই যা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি কিংবা পরকালের জন্যই হবে। এ ছাড়া যত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে তা হচ্ছে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা অথবা ভ্রান্ত আশা।

যে চিন্তা-ফিকির একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য তা আবার কয়েক প্রকার:

১. কুর‘আন মাজীদের আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তাতে নিহিত আল্লাহ্ তা‘আলার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করা।

২. দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলার যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। এরই মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলার নাম ও গুণাবলী, কৌশল ও প্রজ্ঞা, দান ও অনুগ্রহ বুঝতে চেষ্টা করবে। কুর‘আন মাজীদে আল্লাহ্ তা‘আলা এ ব্যাপারে মানুষকে মনোনিবেশ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন।

৩. মানুষের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার যে অপার অনুগ্রহ রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। তাঁর দয়া, ক্ষমা ও ধৈর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

উক্ত ভাবনাসমূহ মানুষের অন্তরে আল্লাহ্ তা‘আলার একান্ত পরিচয়, ভয়, আশা ও ভালোবাসার জন্ম দেয়।

৪. নিজ অন্তর ও আমলের দোষ-ত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এতদ্ চিন্তা-চেতনা খুবই কল্যাণকর। বরং একে সকল কল্যাণের সোপানই বলা চলে।

৫. সময়ের প্রয়োজন ও নিজ দায়িত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। সত্যিকার ব্যক্তি তো সেই যে নিজ সময়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

ইমাম শাফি’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: আমি সূফীদের নিকট মাত্র দু’টি ভালো কথাই পেয়েছি। যা হচ্ছে: তারা বলে থাকে, সময় তলোয়ারের ন্যায়। তুমি তাকে ভালো কাজে নি:শেষ করবে। নতুবা সে তোমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করবে। তারা আরো বলে, তুমি অন্তরকে ভালো কাজে লাগাবে। নতুবা সে তোমাকে খারাপ কাজেই লাগাবে।

মনে কোন চিন্তা-ভাবনার উদ্রেক তা ভালো অথবা খারাপ যাই হোক না কেন দোষের নয়। বরং দোষ হচ্ছে খারাপ চিন্তা-চেতনাকে মনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ স্থান দেয়া। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষকে দু’টি চেতনা তথা প্রবৃত্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার একটি ভালো অপরটি খারাপ। একটি সর্বদা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টিই কামনা করে। পক্ষান্তরে অন্যটি গায়রুল্লাহ্’র সন্তুষ্টিই কামনা করে। ভালোটি অন্তরের ডানে অবস্থিত যা ফেরেশতা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। অপরটি অন্তরের বামে অবস্থিত যা শয়তান কর্তৃক নিয়ন্তিত। পরস্পরের মধ্যে সর্বদা যুদ্ধ ও সংঘর্ষ অব্যাহত। কখনো এর জয় আবার কখনো ওর জয়। তবে সত্যিকারের বিজয় ধারাবাহিক ধৈর্য, সতর্কতা ও আল্লাহ্ভীরুতার উপরই নির্ভরশীল।

অন্তরকে কখনো খালি রাখা যাবে না। ভালো চিন্তা-চেতনা দিয়ে ওকে ভর্তি রাখতেই হবে। নতুবা খারাপ চিন্তা-চেতনা তাতে অবস্থান নিবেই। সূফীবাদীরা অন্তরকে কাশ্ফের জন্য খালি রাখে বিধায় শয়তান সুযোগ পেয়ে তাতে ভালোর বেশে খারাপের বীজ বপন করে। সুতরাং অন্তরকে সর্বদা ধর্মীয় জ্ঞান ও হিদায়াতের উপকরণ দিয়ে ভর্তি রাখতেই হবে।

 চারটি অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ব্যভিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় - ৩. মুখ ও বচন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কখনো অযথা কথা বলা যাবে না। অন্তরে কথা বলার ইচ্ছা জাগলেই চিন্তা করতে হবে, এতে কোন ফায়দা আছে কি না? যদি তাতে কোন ধরনের ফায়দা না থাকে তা হলে সে কথা কখনো বলবে না। আর যদি তাতে কোন ধরনের ফায়দা থেকে থাকে তাহলে দেখবে, এর চাইতে আরো লাভজনক কোন কথা আছে কি না? যদি থেকে থাকে তাহলে তাই বলবে। অন্যটা নয়।

কারোর মনোভাব সরাসরি বুঝা অসম্ভব। তবে কথার মাধ্যমেই তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে বুঝে নিতে হয়।

ইয়াহ্য়া বিন্ মু‘আয (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: অন্তর হচ্ছে ডেগের ন্যায়। তাতে যা রয়েছে অথবা দেয়া হয়েছে তাই রন্ধন হতে থাকবে। বাড়তি কিছু নয়। আর মুখ হচ্ছে চামচের ন্যায়। যখন কেউ কথা বলে তখন সে তার মনোভাবই ব্যক্ত করে। অন্য কিছু নয়। যেভাবে আপনি কোন পাত্রে রাখা খাদ্যের স্বাদ জিহবা দিয়ে অনুভব করতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে কারোর মনোভাব আপনি তার কথার মাধ্যমেই টের পাবেন।

মন আপনার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রক ঠিকই। তবে সে আপনার কোন না কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সহযোগিতা ছাড়া যে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে না। সুতরাং আপনার মন যদি আপনাকে কোন খারাপ কথা বলতে বলে তখন আপনি আপনার জিহবার মাধ্যমে তার কোন সহযোগিতা করবেন না। তখন সে নিজ কাজে ব্যর্থ হবে নিশ্চয়ই এবং আপনিও গুনাহ্ কিংবা তার অঘটন থেকে রেহাই পাবেন।

এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَسْتَقِيْمُ إِيْمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهُ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ قَلْبُهُ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهُ.

‘‘কোন বান্দাহ্’র ঈমান ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার অন্তর ঠিক হয়। তেমনিভাবে কোন বান্দাহ্’র অন্তর ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার মুখ ঠিক হয়’’। (আহমাদ ৩/১৯৮)

সাধারণত মন মুখ ও লজ্জাস্থানের মাধ্যমেই বেশি অঘটন ঘটায় তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো কোন্ জিনিস সাধারণত: মানুষকে বেশির ভাগ জাহান্নামের সম্মুখীন করে তখন তিনি বলেন:

الْفَمُ وَالْفَرْجُ.

‘‘মুখ ও লজ্জাস্থান’’। (তিরমিযী ২০০৪; ইব্নু মাজাহ্ ৪৩২২; আহমাদ ২/২৯১, ৩৯২, ৪৪২; হা’কিম ৪/৩২৪; ইব্নু হিববান ৪৭৬ বুখারী/আদাবুল্ মুফ্রাদ, হাদীস ২৯২ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৪৫৭০)

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয বিন্ জাবাল্ (রাঃ) কে জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার সহযোগী আমল বলে দেয়ার পর আরো কিছু ভালো আমলের কথা বলেন। এমনকি তিনি সকল ভালো কাজের মূল, কান্ড ও চূড়া সম্পর্কে বলার পর বলেন:

أَلَا أُخْبِرُكَ بِمِلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟! قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ! فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ، قَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ! وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُوْنَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟! فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ! وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِيْ النَّارِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ.

‘‘আমি কি তোমাকে এমন বস্ত্ত সম্পর্কে বলবো যার উপর এ সবই নির্ভরশীল? আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র নবী! আপনি দয়া করে তা বলুন। অতঃপর তিনি নিজ জিহবা ধরে বললেন: এটাকে তুমি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবে। তখন আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র নবী! আমাদেরকে কথার জন্যও কি পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন: তোমার কল্যাণ হোক! হে মু‘আয! একমাত্র কথার কারণেই বিশেষভাবে সে দিন মানুষকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’’। (তিরমিযী ২৬১৬; ইব্নু মাজাহ্ ৪০৪৪; আহমাদ ৫/২৩১, ২৩৭ ‘আব্দু বিন্ ’হুমাইদ্/মুন্তাখাব্, ১১২ ‘আব্দুর্ রায্যাক্ব, হাদীস ২০৩০৩ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৪৬০৭)

অনেক সময় একটিমাত্র কথাই মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত এমনকি তার সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।

জুন্দাব্ বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

قَالَ رَجُلٌ: وَاللهِ لَا يَغْفِرُ اللهُ لِفُلَانٍ، فَقَالَ اللهُ تَعَالَى: مَنْ ذَا الَّذِيْ يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لَا أَغْفِرَ لِفُلَانٍ، فَإِنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ.

‘‘জনৈক ব্যক্তি বললো: আল্লাহ্’র কসম, আল্লাহ্ তা‘আলা ওকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন: কে সে? যে আমার উপর কসম খেয়ে বলে যে, আমি ওমুককে ক্ষমা করবো না। অতএব আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর উপর শপথকারীকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আমি ওকেই ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমার সকল নেক আমল ধ্বংস করে দিলাম’’।

(মুসলিম ২৬২১)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) উক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন:

وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَتَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَوْبَقَتْ دُنْيَاهُ وَاٰخِرَتَهُ.

‘‘সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! লোকটি এমন কথাই বলেছে যা তার দুনিয়া ও আখিরাত সবই ধ্বংস করে দিয়েছে’’।

(আবূ দাউদ্, হাদীস ৪৯০১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ مَا فِيْهَا يَهْوِيْ بِهَا فِيْ النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ.

‘‘বান্দাহ্ কখনো কখনো যাচবিচার ছাড়াই এমন কথা বলে ফেলে যার দরুন সে জাহান্নামে এতদূর পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত হয় যতদূর দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মাঝের ব্যবধান’’। (বুখারী ৬৪৭৭; মুসলিম ২৯৮৮)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ، مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ، فَيَكْتُبُ اللهُ عَلَيْهِ بِهَا سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ.

‘‘তোমাদের কেউ কখনো এমন কথা বলে ফেলে যাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন। সে কখনো ভাবতেই পারেনি কথাটি এমন এক মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছুবে; অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কথার দরুনই কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর তাঁর অসন্তুষ্টি অবধারিত করে ফেলেন’’।

(তিরমিযী ২৩১৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০৪০; আহমাদ ৩/৪৬৯; হা’কিম ১/৪৪-৪৬; ইব্নু হিববান ২৮০; মা’লিক ২/৯৮৫)

উক্ত জটিলতার কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতকে সর্বদা ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ.

‘‘যার আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালের উপর বিশ্বাস রয়েছে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে’’।

(বুখারী ৬০১৮, ৬০১৯ মুসলিম,হাদীস ৪৭, ৪৮; ইব্নু মাজাহ্ ৪০৪২)

সাল্ফে সালি’হীনগণ আজকের দিনটা ঠান্ডা কিংবা গরম এ কথা বলতেও অত্যন্ত সঙ্কোচ বোধ করতেন। এমনকি তাঁদের জনৈককে স্বপ্নে দেখার পর তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: আমাকে এখনো এ কথার জন্য আটকে রাখা হয়েছে যে, আমি একদা বলেছিলাম: আজ বৃষ্টির কতই না প্রয়োজন ছিলো! অতএব আমাকে বলা হলো: তুমি এটা কিভাবে বুঝলে যে, আজ বৃষ্টির খুবই প্রয়োজন ছিলো। বরং আমিই আমার বান্দাহ্’র কল্যাণ সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত।

অতএব জানা গেলো, জিহবার কাজ খুবই সহজ। কিন্তু তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

সবার জানা উচিৎ যে, আমাদের প্রতিটি কথাই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। তা যতই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হোক না কেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلاَّ لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ»

‘‘মানুষ যাই বলুক না কেন তা লিপিবদ্ধ করার জন্য দু’ জন অতন্দ্র প্রহরী (ফিরিশ্তা) তার সাথেই রয়েছে’’। (ক্বা’ফ: ১৮)

মানুষ তার জিহবা সংক্রান্ত দু’টি সমস্যায় সর্বদা ভুগতে থাকে। একটি কথার সমস্যা। আর অপরটি চুপ থাকার সমস্যা। কারণ, অকথ্য উক্তিকারী গুনাহ্গার বক্তা শয়তান। আর সত্য কথা বলা থেকে বিরত ব্যক্তি গুনাহ্গার বোবা শয়তান।

 চারটি অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ব্যভিচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় - ৪. পদ ও পদক্ষেপ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

অর্থাৎ সাওয়াবের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজে পদক্ষেপণ করা যাবে না।

মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি জায়িয কাজ একমাত্র নিয়্যাতের কারণেই সাওয়াবে রূপান্তরিত হয়।

উক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা সহজে এ কথাই বুঝতে পারলাম যে, কোন ব্যক্তি তার চোখ, মন, মুখ ও পা সর্বদা নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখলে তার থেকে কোন গুনাহ্ বিশেষ করে ব্যভিচার কর্মটি কখনো প্রকাশ পেতে পারে না। কারণ, দেখলেই তো ইচ্ছে হয়। আর ইচ্ছে হলেই তো তা মুখ খুলে বলতে মনে চায়। আর তখনই মানুষ তা অধীর আগ্রহে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

বিচ্যুতি তথা স্খলন যখন দু’ ধরনেরই তাই আল্লাহ্ তা‘আলা উভয়টিকে কুর‘আন মাজীদের মধ্যে একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

«وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا، وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْـجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا»

‘‘দয়ালু আল্লাহ্’র বান্দাহ্ ওরাই যারা নম্রভাবে চলাফেরা করে এ পৃথিবীতে। মূর্খরা যখন তাদেরকে (তাচ্ছিল্যভরে) সম্বোধন করে তখন তারা বলে: তোমাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! আমরা সবই সহ্য করে গেলাম; তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোন দ্বন্দ্ব নেই’’। (ফুর্ক্বান : ৬৩)

যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা দেখা ও ভাবাকে একত্রে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَعْلَمُ خَآئِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِيْ الصُّدُوْرُ»

‘‘তিনি চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্ত্ত সম্পর্কেও অবগত’’। (গাফির/মু’মিন : ১৯)

 ব্যভিচারের অপকার ও তার ভয়াবহতা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১. কোন বিবাহিতা মহিলা ব্যভিচার করলে তার স্বামী, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত হয়। জনসমক্ষে তারা আর মাথা উঁচু করে কথা বলতে সাহস পায় না।

২. কোন বিবাহিতা মহিলার ব্যভিচারের কারণে যদি তার পেটে সন্তান জন্ম নেয় তা হলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা জীবিত রাখা হবে। যদি তাকে হত্যাই করা হয় তা হলে দু’টি গুনাহ্ একত্রেই করা হলো। আর যদি তাকে জীবিতই রাখা হয় এবং তার স্বামীর সন্তান হিসেবেই তাকে ধরে নেয়া হয় তখন এমন ব্যক্তিকেই পরিবারভুক্ত করা হলো যে মূলতঃ সে পরিবারের সদস্য নয় এবং এমন ব্যক্তিকেই ওয়ারিশ বানানো হলো যে মূলতঃ ওয়ারিশ নয়। তেমনিভাবে সে এমন ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই পরিচয় বহন করবে যে মূলতঃ তার পিতা নয়। আরো কত্তো কি?

৩. কোন পুরুষ ব্যভিচার করলে তার বংশ পরিচয়ে গরমিল সৃষ্টি হয় এবং একজন পবিত্র মহিলাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

৪. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারীর উপর দরিদ্রতা নেমে আসে এবং তার বয়স কমে যায়। তাকে লাঞ্ছিত হতে হয় এবং তারই কারণে সমাজে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়ায়।

৫. ব্যভিচার ব্যভিচারীর অন্তরকে বিক্ষিপ্ত করে দেয় এবং ধীরে ধীরে তাকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। তেমনিভাবে তার মধ্যে চিন্তা, ভয় ও আশঙ্কার জন্ম দেয়। তাকে ফিরিশ্তা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং শয়তানের নিকটবর্তী করে দেয়। সুতরাং অঘটনের দিক দিয়ে হত্যার পরেই ব্যভিচারের অবস্থান। যার দরুন বিবাহিতের জন্য এর শাস্তিও জঘন্য হত্যা।

৬. কোন ঈমানদারের জন্য এ সংবাদ শ্রবণ করা সহজ যে, তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ সংবাদ শ্রবণ করা তার জন্য অবশ্যই কঠিন যে, তার স্ত্রী কারোর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে।

সা’দ বিন্ ’উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَوْ رَأَيْتُ رَجُلًا مَعَ اِمْرَأَتِيْ لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ.

‘‘আমি কাউকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে দেখলে তৎক্ষনাৎই আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেবো’’।

উল্লিখিত উক্তিটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কানে পৌঁছুতেই তিনি বললেন:

أَتَعْجَبُوْنَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ؟ وَاللهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ، وَاللهُ أَغْيَرُ مِنِّيْ، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللهِ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ.

‘‘তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো সা’দের আত্মসম্মানবোধ দেখে? আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আমার আত্মসম্মানবোধ তার চেয়েও বেশি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার আরো বেশি। যার দরুন তিনি হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতাকে’’।

(বুখারী ৬৮৪৬; মুসলিম ১৪৯৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ! وَاللهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ أَنْ يَّزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ.

‘‘হে মুহাম্মাদ্ এর উম্মতরা! আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আল্লাহ্ তা‘আলার চাইতেও আর কারোর আত্মসম্মানবোধ বেশি হতে পারে না। এ কারণেই তাঁর অসহ্য যে, তাঁর কোন বান্দাহ্ অথবা বান্দি ব্যভিচার করবে’’। (বুখারী ১০৪৪; মুসলিম ৯০১)

৭. ব্যভিচারের সময় ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমান সঙ্গে থাকে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا زَنَى الرَّجُلُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيْمَانُ ؛ كَانَ عَلَيْهِ كَالظُّلَّةِ، فَإِذَا انْقَطَعَ رَجَعَ إِلِيْهِ الْإِيْمَانُ.

‘‘যখন কোন পুরুষ ব্যভিচার করে তখন তার ঈমান তার অন্তর থেকে বের হয়ে মেঘের ন্যায় তার উপরে চলে যায়। অতঃপর যখন সে ব্যভিচারকর্ম সম্পাদন করে ফেলে তখন আবারো তার ঈমান তার নিকট ফিরে আসে’’। (আবূ দাউদ ৪৬৯০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ زَنَى أَوْ شَرِبَ الْـخَمْرَ نَزَعَ اللهُ مِنْهُ الْإِيْمَانَ كَمَا يَخْلَعُ الْإِنْسَانُ الْقَمِيْصَ مِنْ رَأْسِهِ.

‘‘যে ব্যক্তি ব্যভিচার অথবা মদ পান করলো আল্লাহ্ তা‘আলা তার ঈমান ছিনিয়ে নিবেন যেমনিভাবে কোন মানুষ তার জামা নিজ মাথার উপর থেকে খুলে নেয়’’। (হা’কিম ১/২২ কান্যুল্ ’উম্মাল্, হাদীস ১২৯৯৩)

৮. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমানে ঘাটতি আসে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ؛ وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ.

‘‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’’। (আবূ দাউদ ৪৬৮৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০০৭)

৯. ব্যভিচারের প্রচার-প্রসার কিয়ামতের অন্যতম আলামত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُّرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَثْبُتَ الْـجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْـخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا.

‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে: ’ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে, মূর্খতা ছেয়ে যাবে, (প্রকাশ্যে) মদ্য পান করা হবে এবং প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হবে’’। (বুখারী ৮০; মুসলিম ২৬৭১)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَا ظَهَرَ الرِّبَا وَالزِّنَا فِيْ قَرْيَةٍ إِلاَّ أَذِنَ اللهُ بِإِهْلَاكِهَا.

‘‘কোন এলাকায় সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ্ তা‘আলা তখন সে জনপদের জন্য ধ্বংসের অনুমতি দিয়ে দেন’’।

১০. ব্যভিচারের শাস্তির মধ্যে এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোন দন্ডবিধিতে নেই। যা নিম্নরূপ:

ক. বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি তথা হত্যা খুব ভয়ানকভাবেই প্রয়োগ করা হয়। এমনকি অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি কমানো হলেও তাতে দু’টি শাস্তি একত্রেই থেকে যায়। বেত্রাঘাতের মাধ্যমে শারীরিক শাস্তি এবং দেশান্তরের মাধ্যমে মানসিক শাস্তি।

খ. আল্লাহ্ তা‘আলা এর শাস্তি দিতে গিয়ে ব্যভিচারী অথবা ব্যভিচারিণীর প্রতি দয়া করতে নিষেধ করেছেন।

গ. আল্লাহ্ তা‘আলা এর শাস্তি জনসমক্ষে দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। লুক্কায়িতভাবে নয়।

১১. ব্যভিচার থেকে দ্রুত তাওবা করে খাঁটি নেক আমল বেশি বেশি করতে না থাকলে ব্যভিচারী অথবা ব্যভিচারিণীর খারাপ পরিণামের বিপুল আশঙ্কা থাকে। মৃত্যুর সময় তাদের ঈমান নসীব নাও হতে পারে। কারণ, বার বার গুনাহ্ করতে থাকা ভালো পরিণামের বিরাট অন্তরায়। বিশেষ করে কঠিন প্রেম ও ভালোবাসার ব্যাপারগুলো এমনই।

প্রসিদ্ধ একটি ঘটনায় রয়েছে, জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় কালিমা পড়তে বলা হলে সে বলে:

أَيْنَ الطَّرِيْقُ إِلَى حَمَّامِ مِنْجَابِ.

‘‘মিন্জাবের গোসলখানায় কিভাবে যেতে হবে। কোন্ পথে?’’

এর ঘটনায় বলা হয়, জনৈক ব্যক্তি তার ঘরের দরোজায় দাঁড়ানো ছিলো। এমতাবস্থায় তার পাশ দিয়ে জনৈকা সুন্দরী মহিলা যাচ্ছিলো। মহিলাটি তাকে মিন্জাব গোসলখানার পথ জিজ্ঞাসা করলে সে তার ঘরের দিকে ইশারা করে বললো: এটিই মিন্জাব গোসলখানা। অতঃপর মহিলাটি তার ঘরে ঢুকলে সেও তার পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকলো। মহিলাটি যখন দেখলো, সে অন্যের ঘরে এবং লোকটি তাকে ধোকা দিয়েছে তখন সে তার প্রতি খুশি প্রকাশ করে বললো: তোমার সঙ্গে একত্রিত হতে পেরে আমি খুবই ধন্য। সুতরাং কিছু খাবার-দাবার ও আসবাবপত্র জোগাড় করা প্রয়োজন যাতে করে আমরা উভয় একত্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। দ্রুত লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র খরিদ করে আনলো। ফিরে এসে দেখলো, মহিলাটি ঘরে নেই। কারণ, সে ভুলবশত ঘরে তালা লাগিয়ে যায়নি। অথচ মহিলাটি যাওয়ার সময় ঘরের কোন আসবাবপত্র সঙ্গে নেইনি। তখন লোকটি আধ পাগল হয়ে গেলো এবং গলিতে গলিতে এ বলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো:

يَا رُبَّ قَائِلَةٍ يَوْمًا وَقَدْ تَعِبَتْ كَيْفَ الطَّرِيْقُ إِلَى حَمَّامِ مِنْجَابِ.

‘‘হে অমুক! যে একদা ক্লান্ত হয়ে বলেছিলে, মিন্জাবের গোসলখানায় কিভাবে যেতে হয়। কোন্ পথে?’’

একদা সে উক্ত ছন্দটি বলে বেড়াতে লাগলো এমন সময় জনৈকা মহিলা ঘরের জানালা দিয়ে প্রত্যুক্তি করে বললো:

هَلاَّ جَعَلْتَ سَرِيْعًا إِذْ ظَفِرْتَ بِهَا حِرْزًا عَلَى الدَّارِ أَوْ قُفْلًا عَلَى الْبَابِ.

‘‘কেন তুমি তাকে পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত দরোজা বন্ধ করে ফেলোনি অথবা ঘরে তালা লাগিয়ে যাওনি?’’

তখন তার চিন্তা আরো বেড়ে যায় এবং প্রথমোক্ত ছন্দ বলতে বলতেই তার মৃত্যু হয়। নাঊযু বিল্লাহ্।

১২. কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার তাদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার ব্যাপক আযাব নিপতিত হওয়ার এক বিশেষ কারণ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا ظَهَرَ فِيْ قَوْمٍ الزِّنَا أَوِ الرِّبَا إِلاَّ أَحَلُّوْا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللهِ.

‘‘কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটলে তারা নিজেরাই যেন হাতে ধরে তাদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার আযাব নিপতিত করলো’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪০২)

মাইমূনাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَزَالُ أُمَّتِيْ بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَفْشُ فِيْهِمْ وَلَدُ الزِّنَا، فَإِذَا فَشَا فِيْهِمْ وَلَدُ الزِّنَا ؛ فَأَوْشَكَ أَنْ يَّعُمَّهُمُ اللهُ بِعَذَابٍ.

‘‘আমার উম্মত সর্বদা কল্যাণের উপর থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে জারজ সন্তানের আধিক্য দেখা না দিবে। যখন তাদের মধ্যে জারজ সন্তান বেড়ে যাবে তখনই আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে ব্যাপক আযাব দিবেন’’।

(সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪০০)

 ব্যভিচারের স্তর বিন্যাস

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১. অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার। এতে মেয়েটির সম্মানহানি ও চরিত্র বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো ব্যাপারটি সন্তান হত্যা পর্যন্ত পৌঁছোয়।

২. বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু স্বামীর সম্মানও বিনষ্ট হয়। তার পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছোয়। তার বংশ পরিচয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, সন্তানটি তারই বলে বিবেচিত হয়; অথচ সন্তানটি মূলতঃ তার নয়।

যেন এমন ঘটনা ঘটতেই না পারে সে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামী অনুপস্থিত এমন মহিলার বিছানায় বসা ব্যক্তির এক ভয়ানক রূপ চিত্রায়ন করেছেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَثَلُ الَّذِيْ يَجْلِسُ عَلَى فِرَاشِ الْـمُغِيْبَةِ مَثَلُ الَّذِيْ يَنْهَشُهُ أَسْوَدُ مِنْ أَسَاوِدِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি স্বামী অনুপস্থিত এমন কোন মহিলার বিছানায় বসে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে কিয়ামতের দিন কোন বিষাক্ত সাপ দংশন করে’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪০৫)

৩. যে কোন প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু প্রতিবেশীর অধিকারও বিনষ্ট হয় এবং তাকে চরম কষ্ট দেয়া হয়।

মিক্বদাদ্ বিন্ আস্ওয়াদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَأَنْ يَّزْنِيَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِيَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ.

‘‘সাধারণ দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করা এতো ভয়ঙ্কর নয় যতো ভয়ঙ্কর নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা’’।

(আহমাদ ৬/৮ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪০৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.

‘‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (মুসলিম ৪৬)

৪. যে প্রতিবেশী নামাযের জন্য অথবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা জিহাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার।

বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

حُرْمَةُ نِسَاءِ الْـمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ كَحُرْمَةِ أُمَّهَاتِهِمْ، وَمَا مِنْ رَجُلٍ مِنَ الْقَاعِدِيْنَ يَخْلُفُ رَجُلًا مِنَ الْـمُجَاهِدِيْنَ فِيْ أَهِلِهِ فَيَخُوْنُهُ فِيْهِمْ إِلاَّ وُقِفَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَيَأْخُذُ مِنْ عَمَلِهِ مَا شَاءَ، فَمَا ظَنُّكُمْ؟.

‘‘মুজাহিদদের স্ত্রীদের সম্মান যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা লোকদের নিকট তাদের মায়েদের সম্মানের মতো। কোন ঘরে বসে থাকা ব্যক্তি যদি কোন মুজাহিদ পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আমানতের খিয়ানত করে তখন তাকে মুজাহিদ ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ের জন্য কিয়ামতের দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। অতঃপর মুজাহিদ ব্যক্তি ঘরে বসা ব্যক্তির আমল থেকে যা মনে চায় নিয়ে নিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের কি এমন ধারণা হয় যে, তাকে এতটুকু সুযোগ দেয়ার পরও সে এ প্রয়োজনের দিনে ওর সব আমল না নিয়ে ওর জন্য এতটুকুও রেখে দিবে?’’ (মুসলিম ১৮৯৭)

৫. আত্মীয়া মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু আত্মীয়তার বন্ধনও বিনষ্ট করা হয়।

৬. মাহ্রাম বা এগানা (যে মহিলাকে বিবাহ্ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে চিরতরের জন্য হারাম) মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু মাহ্রামের অধিকারও বিনষ্ট করা হয়।

৭. বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তার উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তো তার স্ত্রীই রয়েছে। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।

৮. বুড়ো ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্য যে, তার উত্তেজনা তো তেমন আর উগ্র নয়। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.

‘‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি: বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি এবং অহঙ্কারী গরিব’’। (মুসলিম ১০৭)

৯. মর্যাদাপূর্ণ মাস, স্থান ও সময়ের ব্যভিচার। এতে উপরন্তু উক্ত মাস, স্থান ও সময়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয়।

কোন ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে এবং তা কেউ না জানলে অথবা বিচারকের নিকট তা না পৌঁছুলে তার উচিত হবে যে, সে তা লুকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কায়মনোবাক্যে খাঁটি তাওবা করে নিবে। অতঃপর বেশি বেশি নেক আমল করবে এবং খারাপ জায়গা ও সাথি থেকে দূরে থাকবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُوْ عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ»

‘‘তিনিই (আল্লাহ্ তা‘আলা) তাঁর বান্দাহ্দের তাওবা কবুল করেন এবং সমূহ পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা করো তাও তিনি জানেন’’।

(শূরা : ২৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু ‘আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى.

‘‘তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো যা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিবে তার উপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান প্রয়োগ করবো’’।

(’হাকিম ৪/২৭২)

উক্ত কারণেই মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ করেননি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বলেন: হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। কারণ, এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَتَى رَسُوْلَ اللهِ  رَجُلٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ، وَهُوَ فِيْ الْـمَسْجِدِ، فَنَادَاهُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَتَنَحَّى تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، حَتَّى ثَنَّى ذَلِكَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا شَهِدَ عَلَى نَفْسِهِ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ رَسُوْلُ اللهِ  فَقَالَ: أَبِكَ جُنُوْنٌ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَهَلْ أُحْصِنْتَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اِذْهَبُوْا بِهِ فَارْجُمُوْهُ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক মুসলিম আসলো। তখনো তিনি মসজিদে। অতঃপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ডেকে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি কোন রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বরাবর এসে আবারো বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো তার প্রতি কোন রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। এমন কি সে উক্ত স্বীকারোক্তি চার চার বার করলো। যখন সে নিজের উপর ব্যভিচারের সাক্ষ্য চার চার বার দিয়েছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন: তুমি কি পাগল? সে বললো: না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি বিবাহিত? সে বললো: জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন: তোমরা একে নিয়ে যাও এবং রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করো’’। (বুখারী ৫২৭১; মুসলিম ১৬৯১)

বুরাইদাহ্ (রাঃ) এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) কে বলেছিলেন:

وَيْحَكَ! اِرْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللهَ وَتُبْ إلَيْهِ.

‘‘আহা! তুমি ফিরে যাও। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমা চাও এবং তাঁর নিকট তাওবা করে নাও’’। (মুসলিম ১৬৯৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَـمَّا أَتَى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَبِيِّ  قَالَ لَهُ: لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ، قَالَ: لَا يَا رَسُوْلَ اللهِ!.

‘‘যখন মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো তখন তিনি তাকে বললেন: হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। সে বললো: না, হে আল্লাহ্’র রাসূল!’’

(বুখারী ৬৮২৪)

তবে বিচারকের নিকট ব্যাপারটি (সাক্ষ্য সবুতের মাধ্যমে) পৌঁছুলে অবশ্যই তাকে বিচার করতে হবে। তখন আর কারোর ক্ষমার ও সুপারিশের সুযোগ থাকে না।

এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফ্ওয়ান বিন্ উমাইয়াহ্কে চোরের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে তাকে বললেন:

هَلاَّ كَانَ ذَلِكَ قَبْلَ أَنْ تَأْتِيَنِيْ بِهِ؟!.

‘‘আমার নিকট আসার পূর্বেই কেন তা করলে না’’।

(আবূ দাউদ ৪৩৯৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৪ নাসায়ী ৮/৬৯; আহমাদ ৬/৪৬৬; হা’কিম ৪/৩৮০ ইব্নুল্ জারূদ্, হাদীস ৮২৮)

তেমনিভাবে উসামাহ্ (রাঃ) জনৈকা ক্বুরাশী চুন্নি মহিলার জন্য সুপারিশ করতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অত্যন্ত রাগতস্বরে বললেন:

يَا أُسَامَةُ! أَتَشْفَعُ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ ؟!.

‘‘তুমি কি আল্লাহ্ তা‘আলার দন্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করতে আসলে?!’’ (বুখারী ৬৭৮৮; মুসলিম ১৬৮৮; আবূ দাউদ ৪৩৭৩; তিরমিযী ১৪৩০; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৯৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تَعَافَوْا الْـحُدُوْدَ فِيْمَا بَيْنَكُمْ، فَمَا بَلَغَنِيْ مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَبَ.

‘‘তোমরা দন্ডবিধি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো একে অপরকে ক্ষমা করো। কারণ, আমার নিকট এর কোন একটি পৌঁছুলে তা প্রয়োগ করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে যাবে’’।

(আবূ দাউদ ৪৩৭৬)

শুধুমাত্র তিনটি পদ্ধতিতেই কারোর উপর ব্যভিচারের দোষ প্রমাণিত হয়। যা নিম্নরূপ:

১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারাক্তি করলে। কারণ, জুহাইনী মহিলা ও উনাইস্ (রাঃ) এর রজমকৃতা মহিলা ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি একবারই করেছিলো। অন্য দিকে মা’য়িয বিন্ মা’লিক (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চার চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিলো। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদীসটির বর্ণনাসমূহ মুয্তারিব তথা এক কথার নয়। কোন কোন বর্ণনায় চার চার বারের কথা। কোন কোন বর্ণনায় তিন তিন বারের কথা। আবার কোন কোন বর্ণনায় দু’ দু’ বারের কথারও উল্লেখ রয়েছে।

তবুও চার চারবার স্বীকারোক্তি নেয়াই সর্বোত্তম। কারণ, হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। যা বার বার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইসলামী দন্ডবিধি যে কোন যুক্তি সঙ্গত সন্দেহ কিংবা অজুহাতের কারণে রহিত হয়। যা ’উমর, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ এবং অন্যন্য সাহাবা (রাঃ) থেকেও বর্ণিত। ‘আল্লামা ইব্নুল্ মুন্যির্ (রাহিমাহুল্লাহ্) এ ব্যাপারে ’উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যেরও দাবি করেছেন। তেমনিভাবে চার চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারীকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করারও সুযোগ দেয়া হয়। যা একান্তভাবেই কাম্য।

তবে স্বীকারাক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট উল্লেখ এবং দন্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির উপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তার স্বীকারোক্তি পরিহার করে নেয় তা হলে তার কথাই তখন গ্রহণযোগ্য হবে। তেমনিভাবে স্বীকারকারী জ্ঞানসম্পন্নও হতে হবে।

২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার চার জন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে, তারা সত্যিকারার্থে ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গমকর্ম স্বচক্ষে দেখেছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَاللاَّتِيْ يَأْتِيْنَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِّسَآئِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوْا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنْكُمْ»

‘‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার চার জন সাক্ষী সংগ্রহ করো’’।

(নিসা’ : ১৫)

৩. কোন মহিলা গর্ভবতী হলে, অথচ তার স্বামী নেই।

’উমর (রাঃ) তাঁর যুগে এমন একটি বিচারে রজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যে কোন মহিলার উপর দন্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে, গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষণের কারণেও। এমনকি মেয়েটি গভীর নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তার সঙ্গে উক্ত ব্যভিচার কর্মটি সংঘটিত হতে পারে। তাই ’উমর (রাঃ) তাঁর যুগেই শেষোক্ত দু’টি অজুহাতে দু’ জন মহিলাকে শাস্তি দেননি। তবে কোন মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, অথচ তার স্বামী নেই এবং সে এমন কোন যুক্তিসঙ্গত অজুহাতও দেখাচ্ছে না যার দরুন দন্ডবিধি রহিত হয় তখন তার উপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

’উমর (রাঃ) তাঁর এক দীর্ঘ খুতবায় বলেন:

وَإِنَّ الرَّجْمَ حَقٌّ فِيْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى عَلَى مَنْ زَنَى، إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبْلُ أَوِ الْاِعْتِرَافُ.

‘‘নিশ্চয়ই রজম আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানে এমন পুরুষ ও মহিলার জন্যই নির্ধারিত যারা ব্যভিচার করেছে, অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সাথে সম্মুখ পথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয় জনই তখন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ মিলে যায় অথবা মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়’’। (বুখারী ৬৮২৯; মুসলিম ১৬৯১; তিরমিযী ১৪৩২; আবূ দাউদ ৪৪১৮; ইব্নু মাজাহ্ ২৬০১)

ব্যভিচারের শাস্তি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কেউ শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে সে যদি অবিবাহিত হয় তা হলে তাকে একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। আর যদি সে বিবাহিত হয় তা হলে তাকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করা হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«الزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِئَةَ جَلْدَةٍ، وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللهِ، إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী; তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ’ করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহ্’র বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত করতে না পারে যদি তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে’’। (নূর : ২)

আবূ হুরাইরাহ্ ও যায়েদ বিন্ খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اِقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللهِ، فَقَامَ خَصْمُهُ فَقَالَ: صَدَقَ، اِقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللهِ، فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ: إِنَّ ابْنِيْ كَانَ عَسِيْفًا عَلَى هَذَا، فَزَنَى بِامْرَأَتِهِ، فَقَالُوْا لِيْ: عَلَى ابْنِكَ الرَّجْمُ، فَفَدَيْتُ ابْنِيْ مِنْهُ بِمِئَةٍ مِنَ الْغَنَمِ وَوَلِيْدَةٍ، ثُمَّ سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ فَقَالُوْا: إِنَّمَا عَلَى ابْنِكَ جَلْدُ مِئَةٍ وَتَغْرِيْبُ عَامٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ : لَأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللهِ، أَمَّا الْوَلِيْدَةُ وَالْغَنَمُ فَرَدٌّ عَلَيْكَ، وَعَلَى ابْنِكَ جَلْدُ مِئَةٍ وَتَغْرِيْبُ عَامٍ، وَأَمَّا أَنْتَ يَا أُنَيْسُ! فَاغْدُ عَلَى امْرَأَةِ هَذَا فَارْجُمْهَا، فَغَدَا عَلَيْهَا أُنَيْسٌ فَرَجَمَهَا.

‘‘জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি আমাদের মাঝে কুর‘আনের ফায়সালা করুন। তার প্রতিপক্ষও দাঁড়িয়ে বললো: সে সত্য বলেছে। আপনি আমাদের মাঝে কুর‘আনের ফায়সালা করুন। তখন বেদুঈন ব্যক্তিটি বললো: আমার ছেলে এ ব্যক্তির নিকট কামলা খাটতো। ইতিমধ্যে সে এর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে বসে। সবাই আমাকে বললো: তোমার ছেলেটিকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। তখন আমি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নেই একে একটি বান্দি ও একশ’টি ছাগল দিয়ে। অতঃপর আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো: তোমার ছেলেকে একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি তোমাদের মাঝে কুর‘আনের বিচার করছি, বান্দি ও ছাগলগুলো তোমাকে ফেরত দেয়া হবে এবং তোমার ছেলেকে একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর হে উনাইস্! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও। অতঃপর তাকে রজম করো। অতএব উনাইস্ তার নিকট গেলো। অতঃপর তাকে রজম করলো’’।

(বুখারী ২৬৯৫, ২৬৯৬; মুসলিম ১৬৯৭, ১৬৯৮; তিরমিযী ১৪৩৩; আবূ দাউদ ৪৪৪৫; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৯৭)

’উবাদা বিন্ স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

خُذُوْا عَنِّيْ، خُذُوْا عَنِّيْ، فَقَدْ جَعَلَ اللهُ لَـهُنَّ سَبِيْلًا، الْبِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِئَةٍ وَنَفْيُ سَنَةٍ، وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِئَةٍ وَالرَّجْمُ.

‘‘তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের জন্য একটি ব্যবস্থা দিয়েছেন তথা বিধান অবতীর্ণ করেছেন। অবিবাহিত যুবক-যুবতীর শাস্তি হচ্ছে, একশ’টি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও মহিলার শাস্তি হচ্ছে, একশ’টি বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে হত্যা’’।

(মুসলিম ১৬৯০; আবূ দাউদ ৪৪১৫, ৪৪১৬; তিরমিযী ১৪৩৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৯৮)

উক্ত হাদীসে বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাকে একশ’টি বেত্রাঘাত করার কথা থাকলেও তা করতে হবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা’য়িয ও গা’মিদী মহিলাকে একশ’টি করে বেত্রাঘাত করেননি। বরং অন্য হাদীসে তাদেরকে শুধু রজম করারই প্রমাণ পাওয়া যায়।

আরেকটি কথা হচ্ছে, শরীয়তের সাধারণ নিয়ম এই যে, কারোর উপর কয়েকটি দন্ডবিধি একত্রিত হলে এবং তার মধ্যে হত্যার বিধানও থাকলে তাকে শুধু হত্যাই করা হয়। অন্যগুলো করা হয় না। ’উমর ও ’উস্মান (রা.) এটির উপরই আমল করেছেন এবং ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রাঃ) থেকেও ইহা বর্ণিত হয়েছে। তবে ‘আলী (রাঃ) তাঁর যুগে কোন এক ব্যক্তিকে রজমও করেছেন এবং বেত্রাঘাতও। ‘আব্দল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্, উবাই বিন্ কা’ব্ এবং আবূ যরও এ মত পোষণ করেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ  وَغَرَّبَ، وَضَرَبَ أَبُوْ بَكْرٍ  وَغَرَّبَ، وَضَرَبَ عُمَرُ  وَغَرَّبَ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরেছেন (বেত্রাঘাত করেছেন) ও দেশান্তর করেছেন, আবূ বকর (রাঃ) মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন এবং ’উমর (রাঃ) মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন’’। (তিরমিযী ১৪৩৮)

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَتَتِ النَّبِيَّ اِمْرَأَةٌ مِنْ جُهَيْنَةَ، وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَا، فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللهِ! أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ  وَلِيَّهَا، فَقَالَ: أَحْسِنْ إِلَيْهَا، فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِيْ بِهَا، فَفَعَلَ، فَأَمَرَ بِهَا، فَشُكَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أُمِرَ بِهَا فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا، فَقَالَ عُمَرُ: أَتُصَلِّيْ عَلَيْهَا يَا نَبِيَّ اللهِ! وَقَدْ زَنَتْ؟! فَقَالَ: لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ الْـمَدِيْنَةِ لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ أَفْضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنَفْسِهَا لِلهِ تَعَالَى.

‘‘একদা জনৈকা জুহানী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। তখন সে ব্যভিচার করে গর্ভবতী। সে বললো: হে আল্লাহ্’র নবী! আমি ব্যভিচারের শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। অতএব আপনি তা আমার উপর প্রয়োগ করুন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডেকে বললেন: এর উপর একটু দয়া করো। এ যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। লোকটি তাই করলো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলে তার কাপড় শরীরের সাথে শক্ত করে বেঁধে দেয়া হলো। এরপর তাকে রজম করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার নামায পড়ান। ’উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আশ্চর্যান্বিতের স্বরে বললেন: আপনি এর জানাযার নামায পড়াচ্ছেন, অথচ সে ব্যভিচারিণী?! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে এমন তাওবা করেছে যা মদীনাবাসীর সত্তরজনকে বন্টন করে দেয়া হলেও তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তুমি এর চাইতেও কি উৎকৃষ্ট কিছু পেয়েছো যে তার জীবন আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দিয়েছে।

(মুসলিম ১৬৯৬; আবূ দাউদ ৪৪৪০; তিরমিযী ১৪৩৫; ইব্নু মাজাহ্ ২৬০৩)

’উমর (রাঃ) তাঁর এক দীর্ঘ খুতবায় বলেন:

إِنَّ اللهَ بَعَثَ مُحَمَّدًا بِالْـحَقِّ، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ، فَكَانَ فِيْمَا أَنْزَلَ اللهُ عَلَيْهِ آيَةُ الرَّجْمِ، قَرَأْنَاهَا، وَوَعَيْنَاهَا، وَعَقَلْنَاهَا، فَرَجَمَ رَسُوْلَ الله ، وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ، فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَّقُوْلَ قَائِلٌ: مَا نَجِدُ الرَّجْمَ فِيْ كِتَابِ اللهِ، فَيَضِلُّوْا بِتَرْكِ فَرِيْضَةٍ أَنْزَلَهَا اللهُ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর উপর কুর‘আন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তার মধ্যে রজমের আয়াতও ছিলো। আমরা তা পড়েছি, মুখস্থ করেছি ও বুঝেছি। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং আমরাও তাঁর ইন্তেকালের পর রজম করেছি। আশঙ্কা হয় বহু কাল পর কেউ বলবে: আমরা কুর‘আন মাজীদে রজম পাইনি। অতঃপর তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত একটি ফরয কাজ ছেড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে’’।

(বুখারী ৬৮২৯; মুসলিম ১৬৯১; আবূ দাউদ ৪৪১৮)

’উমর (রাঃ) যে আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা হচ্ছে:

«الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا، فَارْجُمُوْهُمَا أَلْبَتَّةَ، نَكَالًا مِّنَ اللهِ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ»

‘‘বয়স্ক (বিবাহিত) পুরুষ ও মহিলা যখন ব্যভিচার করে তখন তোমরা তাদেরকে সন্দেহাতীতভাবে পাথর মেরে হত্যা করবে। এটি হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ এবং আল্লাহ্ তা‘আলা পরাক্রমশালী ও সুকৌশলী’’।

উক্ত আয়াতটির তিলাওয়াত রহিত হয়েছে। তবে উহার বিধান এখনও চালু।

কোন অবিবাহিত ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী যদি এমন অসুস্থ অথবা দুর্বল হয় যে, তাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একশ’টি বেত্রাঘাত করা হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে তা হলে তাকে একশ’টি বেত একত্র করে একবার প্রহার করা হবে।

সা’ঈদ্ বিন্ সা’দ্ বিন্ ’উবা’দাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ فِيْ أَبْيَاتِنَا رُوَيْجِلٌ ضَعِيْفٌ، فَخَبُثَ بِأَمَةٍ مِنْ إِمَائِهِمْ، فَذَكَرَ ذَلِكَ سَعِيْدٌ لِرَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ: اِضْرِبُوْهُ حَدَّهُ، فَقَالُـوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّهُ أَضْعَفُ مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: خُذُوْا عِثْكَالًا فِيْهِ مِئَةُ شِمْرَاخٍ، ثُمَّ اضْرِبُوْهُ بِهِ ضَرْبَةً وَاحِدَةً، فَفَعَلُوْا.

‘‘আমাদের এলাকায় জনৈক দুর্বল ব্যক্তি বসবাস করতো। হঠাৎ সে জনৈকা বান্দির সাথে ব্যভিচার করে বসে। ব্যাপারটি সা’ঈদ্ (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালে তিনি বললেন: তাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে দাও তথা একশ’টি বেত্রাঘাত করো। উপস্থিত সকলে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! সে তো তা সহ্য করতে পারবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একটি খেজুর বিহীন একশ’টি শাখাগুচ্ছ বিশিষ্ট থোকা নিয়ে তাকে তা দিয়ে এক বার মারবে। অতএব তারা তাই করলো’’।

(আহমাদ ৫/২২২; ইব্নু মাজাহ্ ২৬২২)

অমুসলিমকেও ইসলামী বিচারাধীন রজম করা যেতে পারে।

জা’বির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

رَجَمَ النَّبِيُّ  رَجُلًا مِنْ أَسْلَمَ، وَرَجُلًا مِنَ الْيَهُوْدِ وَامْرَأَةً.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আস্লাম বংশের একজন পুরুষকে এবং একজন ইহুদি পুরুষ ও একজন মহিলাকে রজম করেন’’। (মুসলিম ১৭০১)

ব্যভিচারের কারণে কোন সন্তান জন্ম নিলে এবং ভাগ্যক্রমে সে জীবনে বেঁচে থাকলে তার মায়ের সন্তান রূপেই সে পরিচয় লাভ করবে। বাপের নয়। কারণ, তার কোন বৈধ বাপ নেই। অতএব ব্যভিচারীর পক্ষ থেকে সে কোন মিরাস পাবে না।

আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الحَجَرُ.

‘‘সন্তান মহিলারই এবং ব্যভিচারীর জন্য শুধু পাথর তথা রজম’’।

(বুখারী ২০৫৩, ২২১৮, ৬৮১৮; মুসলিম ১৪৫৭, ১৪৫৮; ইব্নু হিববান ৪১০৪; হা’কিম ৬৬৫১; তিরমিযী ১১৫৭; বায়হাক্বী ১৫১০৬; আবূ দাউদ ২২৭৩; ইব্নু মাজাহ্ ২০৩৫, ২০৩৭; আহমাদ ৪১৬, ৪১৭)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ عَاهَرَ أَمَةً أَوْ حُرَّةً فَوَلَدُهُ وَلَدُ زِنَا، لَا يَرِثُ وَلَا يُوْرَثُ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন বান্দি অথবা স্বাধীন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করলো তার সন্তান হবে ব্যভিচারের সন্তান। সে মিরাস পাবে না এবং তার মিরাসও কেউ পাবে না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৭৯৪)

যে কোন ঈমানদার পবিত্র পুরুষের জন্য কোন ব্যভিচারিণী মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। তেমনিভাবে যে কোন ঈমানদার সতী মেয়ের জন্যও কোন ব্যভিচারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«الزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلاَّ زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً، وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَا إِلاَّ زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ، وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْـمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিকা মেয়েকেই বিবাহ করে এবং একজন ব্যভিচারিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিকই বিবাহ করে। মু’মিনদের জন্য তা করা হারাম’’। (নূর : ৩)

 দন্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোন হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বিচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিত।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

‘‘কোন মুসলিমের দোষ লুকিয়ে রাখলে আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষও লুকিয়ে রাখবেন’’।

(তিরমিযী ১৪২৫; ইব্নু মাজাহ্ ২৫৯২)

দন্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখবে:

কারোর উপর শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন দন্ডবিধি প্রয়োগ করার সময় তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا ضَرَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَّقِ الْوَجْهَ.

‘‘কেউ কাউকে (দন্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে) মারলে তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়’’।

(বুখারী ৫৫৯; মুসলিম ২৬১২; আবূ দাউদ ৪৪৯৩)

যে কোন দন্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ করা যাবে না:

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُقَامُ الْـحُدُوْدُ فِيْ الْـمَسَاجِدِ.

‘‘মসজিদে কোন দন্ডবিধি কায়েম করা যাবে না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৮)

’হাকীম বিন্ ’হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  أَنْ يُّسْتَقَادَ فِيْ الْـمَسْـجِدِ، وَأَنْ تُنْشَدَ فِيْهِ الْأَشْعَارُ، وَأَنْ تُقَامَ فِيْهِ الْـحُدُوْدُ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কারোর থেকে প্রতিশোধ নিতে, কবিতা আবৃত্তি করতে ও দন্ডবিধি কায়েম করতে নিষেধ করেছেন’’।

(আবূ দাউদ ৪৪৯০)

দুনিয়াতে কারোর উপর শরীয়তের কোন দন্ডবিধি কায়েম করা হলে তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যায় তথা তার অপরাধটি ক্ষমা করে দেয়া হয়। পরকালে এ জন্য তাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।

’উবা’দাহ্ বিন্ স্বা’মিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَصَابَ مِنْكُمْ حَدًّا، فَعُجِّلَتْ لَهُ عُقُوْبَتُهُ ؛ فَهُوَ كَفَّارَتُهُ، وَإِلاَّ فَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ، إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ، وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি (শয়তানের ধোকায় পড়ে) এমন কোন হারাম কাজ করে ফেলেছে যাতে শরীয়তের নির্দিষ্ট কোন দন্ডবিধি রয়েছে। অতঃপর তাকে দুনিয়াতেই সে দন্ড দেয়া হয়েছে। তখন তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর যদি তা তার উপর প্রয়োগ না করা হয় তা হলে সে ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন। চায়তো আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে পরকালে শাস্তি দিবেন নয়তো বা ক্ষমা করে দিবেন’’।

(তিরমিযী ১৪৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৫২)

কোন এলাকায় ইসলামের যে কোন দন্ডবিধি একবার প্রয়োগ করা সে এলাকায় চল্লিশ দিন যাবৎ বারি বর্ষণ থেকেও অনেক উত্তম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

حَدٌّ يُعْمَلُ بِهِ فِيْ الْأَرْضِ خَيْرٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ مِنْ أَنْ يُّمْطَرُوْا أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا.

‘‘বিশ্বের বুকে ধর্মীয় কোন দন্ডবিধি প্রয়োগ করা বিশ্ববাসীদের জন্য অনেক উত্তম চল্লিশ দিন লাগাতার বারি বর্ষণ থেকেও’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৫৮৬)

 ৯. সমকাম বা পায়ুগমন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।

সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহ্’র কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায় এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلُوْطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِيْنَ، إِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسآءِ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ»

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (আ’রাফ : ৮০-৮১)

আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

«وَلُوْطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا، وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِيْ كَانَتْ تَعْمَلُ الْـخَبَائِثَ، إِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِيْنَ»

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাঁকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা ছিলো নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায়’’। (আম্বিয়া : ৭৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

«قَالُوْا إِنَّا مُهْلِكُوْا أَهْلِ هَذِهِ الْقَرْيَةِ، إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوْا ظَالِمِيْنَ»

’’ফেরেশ্তারা ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেন: আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয়ই জালিম’’। (আন্কাবূত : ৩১)

লূত্ব (আঃ) এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ عَلَى الْقَوْمِ الْـمُفْسِدِيْنَ»

‘‘লূত্ব (আঃ) বললেন: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’’। (আন্কাবূত : ৩০)

ইব্রাহীম (আঃ) তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছে:

«يَآ إِبْرَاهِيْمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا، إِنَّهُ قَدْ جَآءَ أَمْرُ رَبِّكَ، وَإِنَّهُمْ آتِيْهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُوْدٍ»

‘‘হে ইব্রাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার প্রভুর ফরমান এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়’’। (হূদ্ : ৭৬)

যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত্ব (আঃ) কে জানিয়ে দেয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাঁকে বলা হলো:

«أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيْبٍ»

‘‘সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!’’ (হূদ্ : ৮১)

আল্লাহ্ তা‘আলা লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেন:

«فَلَمَّا جَآءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّـنْ سِجِّيْلٍ مَّنْضُوْدٍ، مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ، وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ بِبَعِيْدٍ»

‘‘অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো তোমার প্রভুর ভান্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়’’।

(হূদ্ : ৮২-৮৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

«فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِيْنَ، فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ، إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِيْنَ، وَإِنَّهَا لَبِسَبِيْلٍ مُّقِيْمٍ، إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়ই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমি জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী (বহু প্রাচীন) লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন’’।

(’হিজ্র : ৭৩-৭৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা’নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেননি।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন’’।

(আহমাদ ২৯১৫; ইব্নু হিববান ৪৪১৭; বায়হাক্বী ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬; আবূ ইয়া’লা ২৫৩৯; ‘আব্দুব্নু ’হুমাইদ্ ৫৮৯; হা’কিম ৪/৩৫৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত’’।

(সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪২০)

বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ এসে যায় যাতে তিনি বলেন:

إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ عَمَلُ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘আমার উম্মতের উপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি’’।

(তিরমিযী ১৪৫৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১১; আহমাদ ২/৩৮২ সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪১৭)

ফুযাইল্ ইব্নু ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَوْ أَنَّ لُوْطِيًّا اغْتَسَلَ بِكُلِّ قَطْرَةٍ مِّنَ السَّمَاءِ لَقِيَ اللهَ غَيْرَ طَاهِرٍ.

‘‘কোন সমকামী ব্যক্তি আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে’’।

(দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব : ১৪২)

 সমকামের অপকার ও তার ভয়াবহতা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সমকামের মধ্যে এতো বেশি ক্ষতি ও অপকার নিহিত রয়েছে যার সঠিক গণনা সত্যিই দুষ্কর। যা ব্যক্তি ও সমষ্টি পর্যায়ের এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কীয়। যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:

ধর্মীয় অপকারসমূহ:

প্রথমত: তা কবীরা গুনাহ্সমূহের একটি। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক অনেক নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমনকি তা যে কারোর তাওহীদ বিনষ্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর তা এভাবে যে, এ নেশায় পড়ে শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর তা একদা তাকে শির্ক পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। কখনো ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, সে ধীরে ধীরে অশ্লীলতাকে ভালোবেসে ফেলে এবং সাধুতাকে ঘৃণা করে। তখন সে হালাল মনে করেই সহজভাবে উক্ত কর্মতৎপরতা চালিয়ে যায়। তখন সে কাফির ও মুর্তাদ হতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বাস্তবে দেখা যায় যে, যে যত বেশি শির্কের দিকে ধাবিত সে তত বেশি এ কাজে লিপ্ত। তাই লুত্ব সম্প্রদায়ের মুশ্রিকরাই এ কাজে সর্ব প্রথম লিপ্ত হয়।

এ কথা সবারই জানা থাকা উচিৎ যে, শির্ক ও ইশ্ক্ব পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর ব্যভিচার ও সমকামের পূর্ণ মজা তখনই অনুভূত হয় যখন এর সাথে ইশ্ক্ব জড়িত হয়। তবে এ চরিত্রের লোকদের ভালোবাসা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তনশীল। আর তা একমাত্র শিকারের পরিবর্তনের কারণেই হয়ে থাকে।

চারিত্রিক অপকারসমূহ:

প্রথমত: সমকামই হচ্ছে চারিত্রিক এক অধ:পতন। স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। এরই কারণে লজ্জা কমে যায়, মুখ হয় অশ্লীল এবং অন্তর হয় কঠিন, অন্যদের প্রতি দয়া-মায়া সম্পূর্ণরূপে নি:শেষ হয়ে একেবারেই তা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়, পুরুষত্ব ও মানবতা বিলুপ্ত হয়, সাহসিকতা, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়। নির্যাতন ও অঘটন ঘটাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাহসী করে তোলে। উচ্চ মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বেকুব বানিয়ে তোলে। তার উপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যায়। তার দিকে মানুষ খিয়ানতের সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয় এবং উত্তরোত্তর সার্বিক উন্নতি থেকে ক্রমান্বয়ে পিছে পড়ে যায়।

মানসিক অপকারসমূহ:

উক্ত কর্মের অনেকগুলো মানসিক অপকার রয়েছে যা নিম্নরূপ:

১. অস্থিরতা ও ভয়-ভীতি অধিক হারে বেড়ে যায়। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাকেই ভয় করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে অন্য সকল ভয় থেকে মুক্ত রাখবেন। আর যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করবে না তাকে সকল ভয় এমনিতেই ঘিরে রাখবে। কারণ, শাস্তি কাজের অনুরূপ হওয়াই শ্রেয়।

২. মানসিক বিশৃঙ্খলতা ও মনের অশান্তি তার নিকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এ হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে সে ব্যক্তির জন্য নগদ শাস্তি যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসবে। আর এ সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হবে মনের অশান্তি ততই বেড়ে যাবে।

আল্লামাহ্ ইব্নু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: এ কথা সবারই জানা উচিৎ যে, কেউ কাউকে ভালোবাসলে (যে ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য নয়) সে প্রিয় ব্যক্তি অবশ্যই তার প্রেমিকের ক্ষতি সাধন করবে এবং এ ভালোবাসা অবশ্যই প্রেমিকের যে কোন ধরনের শাস্তির কারণ হবে।

৩. এ ছাড়াও উক্ত অবৈধ সম্পর্ক অনেক ধরনের মানসিক রোগের জন্ম দেয় যা বর্ণনাতীত। যার দরুন তাদের জীবনের স্বাদ একেবারেই নি:শেষ হয়ে যায়।

৪. এ জাতীয় লোকেরা একাকী থাকাকেই বেশি ভালোবাসে এবং তাদের একান্ত শিকার অথবা উক্ত কাজের সহযোগী ছাড়া অন্য কারোর সাথে এরা একেবারেই মিশতে চায় না।

৫. স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বহীনতা জন্ম নেয়। মেযাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কোন কাজে এরা স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

৬. নিজের মধ্যে পরাজয় ভাব জন্ম নেয়। নিজের উপর এরা কোন ব্যাপারেই আস্থাশীল হতে পারে না।

৭. নিজের মধ্যে এক জাতীয় পাপ বোধ জন্ম নেয়। যার দরুন সে মনে করে সবাই আমার ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে। সুতরাং মানুষের ব্যাপারে তার একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়।

৮. এ জাতীয় লোকদের মাঝে হরেক রকমের ওয়াস্ওয়াসা ও অমূলক চিন্তা জন্ম নেয়। এমনকি ধীরে ধীরে সে পাগলের রূপ ধারণ করে।

৯. এ জাতীয় লোক ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণহীন যৌন তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সদা সর্বদা সে যৌন চেতনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।

১০. মানসিক টানাপড়েন ও বেপরোয়াভাব এদের মধ্যে জন্ম নেয়।

১১. বিরক্তি ভাব, নিরাশা, কুলক্ষুণে ভাব, আহাম্মকি জযবাও এদের মধ্যে জন্ম নেয়।

১২. এদের দেহের কোষসমূহের উপরও এর বিরাট একটা প্রভাব রয়েছে। যার দরুন এ ধরনের লোকেরা নিজকে পুরুষ বলে মনে করে না। এ কারণেই এদের কাউ কাউকে মহিলাদের সাজ-সজ্জা গ্রহণ করতেও দেখা যায়।

শারীরিক অপকারসমূহ:

শারীরিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছু দিন পর পরই এ সংক্রান্ত নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কোন একটি রোগের উপযুক্ত ওষুধ খুঁজতে খুঁজতেই দেখা যায় নতুন আরেকটা রোগ আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এই হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যিকার ফলাফল।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوْا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِيْ لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِيْ أسْلَافِهِمْ الَّذِيْنَ مَضَوْا.

‘‘কোন সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে অবশ্যই মহামারি ও বহু প্রকারের রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিলো না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৪০৯১; হা’কিম ৮৬২৩ ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস ৪৬৭১)

সুতরাং ব্যাধিগুলো নিম্নরূপ:

১. নিজ স্ত্রীর প্রতি ধীরে ধীরে অনীহা জন্ম নেয়।

২. লিঙ্গের কোষগুলো একেবারেই ঢিলে হয়ে যায়। যদ্দরুন পেশাব ও বীর্যপাতের উপর কোন নিয়ন্ত্রণই থাকে না।

৩. এ জাতীয় লোকেরা টাইফয়েড এবং ডিসেন্ট্রিয়া রোগেও আক্রান্ত হয়।

৪. এরই ফলে সিফিলিস রোগেরও বিশেষ প্রাদুর্ভাব ঘটে। লিঙ্গ অথবা রোগীর হৃদ্পিন্ড, আঁত, পাকস্থলী, ফুসফুস ও অন্ডকোষের ঘা এর মাধ্যমেই এ রোগের শুরু। এমনকি পরিশেষে তা অঙ্গ বিকৃতি, অন্ধত্ব, জিহবা’র ক্যান্সার এবং অঙ্গহানীর বিশেষ কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এটি ডাক্তারদের ধারণায় একটি দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি।

৫. কখনো কখনো এরা গনোরিয়ায়ও আক্রান্ত হয় এবং এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণত: একটু বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে উক্ত রোগে প্রায় পঁচিশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। বর্তমানে ধারণা করা হয়, এ জাতীয় রোগীর হার বছরে বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি। যার অধিকাংশই যুবক।

এ জাতীয় রোগে প্রথমত লিঙ্গে এক ধরনের জ্বলন সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি তাতে বিশ্রী পুঁজও জন্ম নেয়। এটি বন্ধ্যত্বের একটি বিশেষ কারণও বটে। এরই কারণে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। উক্ত জ্বলনের কারণে ধীরে ধীরে লিঙ্গাগ্রের ছিদ্রের আশপাশ লাল হয়ে যায়। পরিশেষে সে জ্বলন মুত্রথলী পর্যন্ত পৌঁছোয়। তখন মাথা ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া শরীরের রক্তে পৌঁছুলে তখন হৃদ্পিন্ডে জ্বলন সৃষ্টি হয়। আরো কত্তো কী?

৬. হেরপেস রোগও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম ব্যাধি। এমেরিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়, হেরপেসের এখনো কোন চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয়নি এবং এটি ক্যান্সার চাইতেও মারাত্মক। শুধু এমেরিকাতেই এ রোগীর হার বছরে দু’ কোটি এবং ব্রিটিনে এক লক্ষ।

এ রোগ হলে প্রথমে লিঙ্গাগ্রে চুলকানি অনুভূত হয়। অতঃপর চুলকানির জায়গায় লাল ধরনের ফোস্কা জাতীয় কিছু দেখা দেয় যা দ্রুত বড় হয়ে পুরো লিঙ্গে এবং যার সাথে সমকাম করা হয় তার গুহ্যদ্বারে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর ব্যথা খুবই চরম এবং এগুলো ফেটে গিয়ে পরিশেষে সেস্থানে জ্বলন ও পুঁজ সৃষ্টি হয়। কিছু দিন পর রান ও নাভির নীচের অংশও ভীষণভাবে জ্বলতে থাকে। এমনকি তা পুরো শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং তার মগজ পর্যন্তও পৌঁছোয়। এ রোগের শারীরিক ক্ষতির চাইতেও মানসিক ক্ষতি অনেক বেশি।

৭. এইড্সও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম রোগ। এ রোগের ভয়ঙ্করতা নিম্নের ব্যাপারগুলো থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়:

ক. এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।

খ. এ রোগ খুবই অস্পষ্ট। যার দরুন এ সংক্রান্ত প্রশ্ন অনেক বেশি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সেগুলোর তেমন আশানুরূপ উত্তর দিতে পারছেন না।

গ. এ রোগের চিকিৎসা একেবারেই নেই অথবা থাকলেও তা অতি স্বল্প মাত্রায়।

ঘ. এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

এইড্সের কারণে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুন যে কোন ছোট রোগও তাকে সহজে কাবু করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ রোগে আক্রান্ত শতকরা ৯৫ জনই সমকামী এবং এ রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৯০ জনই তিন বছরের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে।

৮. এ জাতীয় লোকেরা ‘‘ভালোবাসার ভাইরাস’’ অথবা ‘‘ভালোবাসার রোগ’’ নামক নতুন ব্যাধিতেও কখনো কখনো আক্রান্ত হয়। তবে এটি এইড্স চাইতেও অনেক ভয়ানক। এ রোগের তুলনায় এইড্স একটি খেলনা মাত্র।

এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে ছয় মাস যেতে না যেতেই তার পুরো শরীর ফোস্কা ও পুঁজে ভরে যায় এবং ক্ষরণ হতে হতেই সে পরিশেষে মারা যায়। সমস্যার ব্যাপার হলো এই যে, এ রোগটি একেবারেই লুক্কায়িত থাকে যতক্ষণ না যৌন উত্তেজনা প্রশমনের সময় এ সংক্রান্ত হরমোনগুলো উত্তেজিত হয়। আর তখনই উক্ত ভাইরাসগুলো নব জীবন পায়। তবে এ রোগ যে কোন পন্থায় সংক্রমণ করতে সক্ষম। এমনকি বাতাসের সাথেও।

 সমকামের শাস্তি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ فَاقْتُلُوْا الْفَاعِلَ وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ.

‘‘কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে’’। (আবূ দাউদ ৪৪৬২; তিরমিযী ১৪৫৬; ইব্নু মাজাহ্ ২৬০৯; বায়হাক্বী ১৬৭৯৬; হা’কিম ৮০৪৭, ৮০৪৯)

উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اُرْجُمُوْا الْأَعْلَى وَالْأَسْفَلَ، اُرْجُمُوْهُمَا جَمِيْعًا.

’’উপর-নীচের উভয়কেই রজম করে হত্যা করো’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬১০)

আবূ বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রাঃ) এবং হিশাম বিন্ আব্দুল্ মালিক (রাহিমাহুল্লাহ্) সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।

মুহাম্মাদ বিন্ মুন্কাদির (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَتَبَ خَالَدُ بْنُ الْوَلِيْدِ إِلَى أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ أَنَّهُ وَجَدَ رَجُلًا فِيْ بَعْضِ ضَوَاحِيْ الْعَرَبِ يُنْكَحُ كَمَا تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ، فَجَمَعَ لِذَلِكَ أَبُوْ بَكْرٍ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ ، وَفِيْهِمْ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ ، فَقَالَ عَلِيٌّ : إِنَّ هَذَا ذَنْبٌ لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أُمَّةٌ إِلاَّ أُمَّةً وَاحِدَةً، فَفَعَلَ اللهُ بِهِمْ مَا قَدْ عَلِمْتُمْ، أَرَى أَنْ تَحْرِقَهُ بِالنَّارِ، فَاجْتَمَعَ رَأْيُ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ  أَنْ يُّحْرَقَ بِالنَّارِ، فَأَمَرَ بِهِ أَبُوْ بَكْرٍ أَنْ يُّحْرَقَ بِالنَّارِ.

‘‘খালিদ্ বিন্ ওয়ালীদ্ (রাঃ) একদা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবূ বকর (রাঃ) সকল সাহাবাদেরকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘আলী (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন: এ এমন একটি গুনাহ্ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ফরমান জারি করেন’’।

(বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৫৩৮৯)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

يُنْظَرُ أَعْلَى بِنَاءٍ فِيْ الْقَرْيَةِ، فَيُرْمَى اللُّوْطِيُّ مِنْهَا مُنَكَّسًا، ثُمَّ يُتْبَعُ بِالْحِجَارَةِ.

‘‘সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার উপর পাথর মারা হবে’’।

(ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৩২৮ বায়হাক্বী ৮/২৩২)

সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى رَجُلًا أَوِ امْرَأَةً فِيْ الدُّبُرِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার মলদ্বারে গমন করে’’। (ইব্নু আবী শায়বাহ্, হাদীস ১৬৮০৩; তিরমিযী ১১৬৫)

 সমকামের চিকিৎসা - রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসা (দৃষ্টিশক্তি হিফাযতের মাধ্যমে)

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত একটি তীর যা শুধু মানুষের আফসোসই বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। তা হলেই সমকামের প্রতি অন্তরে আর উৎসাহ জন্ম নিবে না। এ ছাড়াও দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো ফায়দা রয়েছে যা নিম্নরূপ:

১. তাতে আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ মানা হয়। যা ইবাদতেরই একাংশ এবং ইবাদাতের মধ্যেই সমূহ মানব কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

২. বিষাক্ত তীরের প্রভাব থেকে অন্তর বিমুক্ত থাকে। কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর।

৩. মন সর্বদা আল্লাহ্ অভিমুখী থাকে।

৪. মন সর্বদা সন্তুষ্ট ও শক্তিশালী থাকে।

৫. অন্তরে এক ধরনের নূর তথা আলো জন্ম নেয় যার দরুন সে উত্তরোত্তর ভালোর দিকেই ধাবিত হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ»

‘‘(হে রাসূল!) তুমি মু’মিনদেরকে বলে দাও: তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করে’’। (নূর : ৩০)

এর কয়েক আয়াত পরই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«اللهُ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، مَثَلُ نُوْرِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيْهَا مِصْبَاحٌ»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলাই আকাশ ও পৃথিবীর জ্যোতি। (সত্যিকার ঈমানদারের অন্তরে) তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার। যার মধ্যে রয়েছে একটি প্রদীপ’’। (নূর : ৩৫)

৬. হক্ব ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে বিশেষ প্রভেদজ্ঞান সৃষ্টি হয় যার দরুন দৃষ্টি সংযতকারীর যে কোন ধারণা অধিকাংশই সঠিক প্রমাণিত হয়। ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ্ তা‘আলা লূত্ব সম্প্রদায়ের সমকামীদেরকে অন্তর্দৃষ্টিশূন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِيْ سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُوْنَ»

‘‘আপনার জীবনের কসম! ওরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে তথা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে’’। (’হিজ্র : ৭২)

৭. অন্তরে দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও শক্তি জন্ম নেয় এবং মানুষ তাকে সম্মান করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلِلهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ، وَلَكِنَّ الْـمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ»

‘‘সম্মান ও ক্ষমতা তো আল্লাহ্ তা‘আলা, তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও (সত্যিকার) ঈমানদারদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা তো তা জানে না’’।

(মুনা’ফিক্বূন : ৮)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًا، إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ، وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ»

‘‘কেউ ইয্যত ও সম্মান চাইলে সে যেন জেনে রাখে, সকল সম্মানই তো আল্লাহ্ তা‘আলার। (অতএব তাঁর কাছেই তা কামনা করতে হবে। অন্যের কাছে নয়) তাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ তথা যিকির ইত্যাদি আরোহণ করে এবং নেক আমলই তা উনণীত করে’’। (ফা’ত্বির : ১০)

সুতরাং আল্লাহ্’র আনুগত্য, যিকির ও নেক আমলের মাধ্যমেই তাঁরই নিকট সম্মান কামনা করতে হবে।

৮. তাতে মানব অন্তরে শয়তানের ঢুকার সুগম পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, সে দৃষ্টি পথেই মানব অন্তরে প্রবেশ করে খালিস্থানে বাতাস প্রবেশের চাইতেও অতি দ্রুত গতিতে। অতঃপর সে দেখা বস্ত্তটির সুদৃশ্য দৃষ্টি ক্ষেপণকারীর মানসপটে স্থাপন করে। সে দৃষ্ট বস্ত্তটির মূর্তি এমনভাবে তৈরি করে যে, অন্তর তখন তাকে নিয়েই ব্যস্ত হতে বাধ্য হয়। এরপর সে অন্তরকে অনেক ধরনের আশা ও অঙ্গীকার দিতে থাকে। অন্তরে উত্তরোত্তর কুপ্রবৃত্তির তাড়না জাগিয়ে তোলে। সে মনের মাঝে উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তাতে বহু প্রকারের গুনাহ্’র জ্বালানি ব্যবহার করে আরো উত্তপ্ত করতে থাকে। অতঃপর হৃদয়টি সে উত্তপ্ত আগুনে লাগাতার পুড়তে থাকে। সে অন্তর্দাহ থেকেই বিরহের উত্তপ্ত ঊর্ধ্ব শ্বাসের সৃষ্টি।

৯. অন্তর সর্বদা মঙ্গলজনক কর্ম সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ পায়। অবৈধ দৃষ্টি ক্ষেপণে মানুষ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। অন্তর গাফিল হয়ে যায়। প্রবৃত্তি পূজায় ধাবিত হয় এবং সকল ব্যাপারে এক ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হয়।

এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا»

‘‘যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি এবং যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এমনকি যার কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করেছে আপনি তার আনুগত্য করবেন না’’। (কাহ্ফ : ২৮)

১০. অন্তর ও দৃষ্টির মাঝে এমন এক সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, একটি খারাপ হলে অন্যটি খারাপ হতে বাধ্য। তেমনিভাবে একটি সুস্থ থাকলে অন্যটিও সুস্থ থাকতে বাধ্য। সুতরাং যে দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করবে তার অন্তরও তারই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

 সমকামের চিকিৎসা - রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসা (তা থেকে দূরে রাখে এমন বস্ত্ত নিয়ে ব্যস্ততার মাধ্যমে। )

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আর তা হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে অধিক ভয় বা অধিক ভালোবাসা। অর্থাৎ অন্যকে ভালোবাসার কারণে আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসা না পাওয়ার আশঙ্কা করা অথবা আল্লাহ্ তা‘আলাকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, তিনি ভিন্ন অন্যকে আর ভালোবাসার সুযোগ না পাওয়া যার ভালোবাসা আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসার অধীন নয়। কারণ, এ কথা একেবারেই সত্য যে, আল্লাহ্ তা‘আলা মানব অন্তরে জন্মগতভাবেই এমন এক শূন্যতা রেখে দিয়েছেন যা একমাত্র তাঁরই ভালোবাসা পরিপূর্ণ করতে পারে। সূতরাং কারোর অন্তর উক্ত ভালোবাসা থেকে খালি হলে তিনি ভিন্ন অন্যদের ভালোবাসা তার অন্তরে অবশ্যই জায়গা করে নিতে চাইবে। তবে কারোর মধ্যে নিমোক্ত দু’টি গুণ থাকলেই সে উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যা নিম্নরূপ:

১. বিশুদ্ধ অন্তর্দৃষ্টি। যার মাধ্যমে সে প্রিয়-অপ্রিয়ের স্তরসমূহের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। তখনই সে মূল্যবান বন্ধুকে পাওয়ার জন্য নিম্নমানের বন্ধুকে ছাড়তে পারবে এবং বড় বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ছোট বিপদ মাথা পেতে মেনে নিতে পারবে।

২. ধৈর্য ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। যার উপর নির্ভর করে সে উক্ত কর্মসমূহ আঞ্জাম দিতে পারবে। কারণ, এমন লোকও আছে যাদের মধ্যে প্রথমোক্ত গুণ রয়েছে। তবে সে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না তার মধ্যে দ্বিতীয় গুণটি না থাকার দরুন।

সুতরাং কারোর মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসা এবং যার ভালোবাসা আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসার অধীন নয় তার ভালোবাসা একত্র হতে পারে না এবং যার মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসা নেই সেই একমাত্র মহিলাদের অথবা শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের ভালোবাসায় মত্ত থাকতে পারে।

দুনিয়ার কোন মানুষ যখন তাঁর ভালোবাসায় কারোর অংশীদারি সহ্য করতে পারে না তখন আল্লাহ্ তা‘আলা কেন তাঁর ভালোবাসায় অন্যের অংশীদারি সহ্য করবেন? এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর ভালোবাসায় শির্ক কখনোই ক্ষমা করবেন না।

ভালোবাসার আবার কয়েকটি স্তর রয়েছে। যা নিম্নরূপ:

১. সাধারণ সম্পর্ক জাতীয় ভালোবাসা যার দরুন এক জনের মন অন্য জনের সঙ্গে লেগে যায়। আরবী ভাষায় এ সম্পর্ককে ‘‘আলা’ক্বাহ্’’ বলা হয়।

২. ভালোবাসায় মন উপচে পড়া। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘‘স্বাবা’বাহ্’’ বলা হয়।

৩. এমন ভালোবাসা যা মন থেকে কখনো ভিন্ন হয় না। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘‘গারা’ম’’ বলা হয়।

৪. নিয়ন্ত্রণহীন ভালোবাসা। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘‘ইশ্ক্ব’’ বলা হয়। এ জাতীয় ভালোবাসা আল্লাহ্ তা‘আলার শানে প্রযোজ্য নয়।

৫. এমন ভালোবাসা যার দরুন প্রিয়ের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘‘শওক্ব’’ বলা হয়। এমন ভালোবাসা আল্লাহ্ তা‘আলার শানে অবশ্যই প্রযোজ্য।

’উবা’দাহ্ বিন্ স্বা’মিত, ‘আয়েশা, আবূ হুরাইরাহ্ ও আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার সাক্ষাৎ চায় আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ চাইবেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার সাক্ষাৎ চায় না আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ চাইবেন না’’।

(বুখারী ৬৫০৭, ৬৫০৮; মুসলিম ২৬৮৩, ২৬৮৪, ২৬৮৫, ২৬৮৬)

৬. এমন ভালোবাসা যার দরুন কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার একান্ত গোলাম হয়ে যায়। এ জাতীয় ভালোবাসাই শির্কের মূল। কারণ, ইবাদতের মূল কথাই তো হচ্ছে, প্রিয়ের একান্ত আনুগত্য ও অধীনতা। আর এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানজনক গুণ হচ্ছে তাঁর ‘‘আব্দ’’ বা সত্যিকার গোলাম হওয়া তথা বিনয় ও ভালোবাসা নিয়েই আল্লাহ্ তা‘আলার অধীনতা স্বীকার করা। এ জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং যা ইসলামের মূল কথাও বটে। আর এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে ‘‘আব্দ’’ শব্দে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা দা’ওয়াতী ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘‘আব্দ’’ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন:

«وَأَنَّهُ لَـمَّا قَامَ عَبْدُ اللهِ يَدْعُوْهُ كَادُوْا يَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِ لِبَدًا»

‘‘আর যখন আল্লাহ্’র বান্দাহ্ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে (আল্লাহ্ তা‘আলাকে) ডাকার (তাঁর ইবাদত করার) জন্য দন্ডায়মান হলো তখন তারা (জিনরা) সবাই তাঁর নিকট ভিড় জমালো’’। (জিন : ১৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা নবুওয়াতের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘‘আব্দ’’ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন:

«وَإِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهِ»

‘‘আমি আমার বান্দাহ্’র (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা যদি তাতে সন্দিহান হও তবে সেরূপ একটি সূরাহ নিয়ে আসো’’।

(বাক্বারাহ্ : ২৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা ইস্রা’র ক্ষেত্রেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘‘আব্দ’’ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন:

«سُبْحَانَ الَّذِيْ أَسْرَى بِعَبْدهِ لَيْلًا مِّنَ الْـمَسْجِدِ الْـحَرَامِ إِلَى الْـمَسْجِدِ الْأَقْصَى»

‘‘পবিত্র সে সত্তা যিনি নিজ বান্দাহ্কে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) রাত্রিবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মস্জিদুল হারাম থেকে মস্জিদুল আক্বসায় (বাইতুল মাক্বদিসে)’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রাঈল : ১)

সুপারিশের হাদীসের মধ্যেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘‘আব্দ’’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিয়ামতের দিবসে ’ঈসা (আঃ) এর নিকট সুপারিশ চাওয়া হলে তিনি বলবেন:

اِئْتُوْا مُحَمَّدًا ، عَبْدًا غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ.

‘‘তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাও। তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার এমন এক বান্দাহ্ যাঁর পূর্বাপর সকল গুনাহ্ আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন’’। (বুখারী ৪৪৭৬; মুসলিম ১৯৩)

উক্ত হাদীসে সুপারিশের উপযুক্ততার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে ক্ষমা প্রাপ্ত আল্লাহ্ তা‘আলার খাঁটি বান্দাহ্ হওয়ার দরুন।

উক্ত নিরেট ভালোবাসা বান্দাহ্’র নিকট আল্লাহ্ তা‘আলার একান্ত প্রাপ্য হওয়ার দরুন আল্লাহ্ তা‘আলা তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে বন্ধু বা সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«مَا لَكُمْ مِنْ دُوْنِهِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا شَفِيْعٍ»

‘‘তোমাদের জন্য তিনি ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু নেই, না আছে কোন সুপারিশকারী’’। (সাজ্দাহ্ : ৪)

তিনি আরো বলেন:

«لَيْسَ لَهُمْ مِّنْ دُوْنِهِ وَلِيٌّ وَّلَا شَفِيْعٌ»

‘‘ওদের (মু’মিনদের) জন্য তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) ভিনণ না আছে কোন বন্ধু আর না আছে কোন সুপারিশকারী’’। (আন্‘আম : ৫১)

তেমনিভাবে পরকালে তিনি ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু কারোর কাজেও আসবে না।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ مَّا كَسَبُوْا شَيْئًا وَلَا مَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ أَوْلِيَآءَ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ»

‘‘তাদের ধন-সম্পদ এবং আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু সে দিন তাদের কোন কাজে আসবে না। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি’’।

(জা’সিয়াহ্ : ১০)

মূল কথা, ভালোবাসায় আল্লাহ্ তা‘আলার সঙ্গে কাউকে শরীক করে সত্যিকার ইবাদত করা যায় না। তবে আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য কাউকে ভালোবাসা এর বিপরীত নয়। বরং তা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভালোবাসার পরিপূরকও বটে।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَحَبَّ لِلهِ وَأَبْغَضَ لِلهِ وَأَعْطَى لِلهِ وَمَنَعَ لِلهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্’র জন্য কাউকে ভালোবাসলো, আল্লাহ্’র জন্য কারোর সাথে শত্রুতা পোষণ করলো, আল্লাহ্’র জন্য কাউকে দিলো এবং আল্লাহ্’র জন্য কাউকে বঞ্চিত করলো সে যেন নিজ ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিলো’’। (আবূ দাউদ ৪৬৮১; ত্বাবারানী/কাবীর ৭৬১৩, ৭৭৩৭, ৭৭৩৮)

এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসাকে অন্য সবার ভালোবাসার উপর প্রধান্য না দিলে সে ব্যক্তি কখনো পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।

অতএব আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য কাউকে ভালোবাসা যতই কঠিন হবে ততই আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসা কঠিন হবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে ভালোবাসা আবার চার প্রকার। যে গুলোর মধ্যে ব্যবধান না জানার দরুনই অনেকে এ ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হয়। আর তা নিম্নরূপ:

ক. আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভালোবাসা। তবে তা নিরেট ভালোবাসা না হলে কখনো তা কারোর ফায়দায় আসবে না।

খ. আল্লাহ্ তা‘আলা যা ভালোবাসেন তাই ভালোবাসা। যে এ ভালোবাসায় যত অগ্রগামী সে আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসায় তত অগ্রগামী।

গ. আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য ভালোবাসা। এ ভালোবাসা উক্ত ভালোবাসার পরিপূরক।

ঘ. আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অন্য কাউকে তাঁর সমপর্যায়েই ভালোবাসা। আর এটিই হচ্ছে শির্ক।

আরো এক প্রকারের ভালোবাসা রয়েছে যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আর তা হচ্ছে স্বভাবগত ভালোবাসা। যেমন: স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা।

৭. চূড়ান্ত ভালোবাসা। এমন চরম ভালোবাসা যে, প্রেমিকের অন্তরে আর কাউকে ভালোবাসার কোন জায়গাই থাকে না। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ‘‘খুল্লাহ্’’ এবং এ জাতীয় প্রেমিককে ‘‘খালীল’’ বলা হয়। আর এ জাতীয় ভালোবাসা শুধুমাত্র দু’ জন নবীর জন্যই নির্দিষ্ট। যারা হচ্ছেন ইব্রাহীম (আঃ) ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

জুন্দাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَى اللهِ أَنْ يَّكُوْنَ لِيْ مِنْكُمْ خَلِيْلٌ، فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى قَدِ اتَّخَذَنِيْ خَلِيْلًا، كَمَا اتَّخَذَ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا، وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا مِنْ أُمَّتِيْ خَلِيْلًا لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيْلًا.

‘‘তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আমার খলীল হোক এ ব্যাপার থেকে আমি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মুক্তি চাচ্ছি। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে নিজ খলীল হিসেবে চয়ন করেছেন যেমনিভাবে চয়ন করেছেন ইব্রাহীম (আঃ) কে। আমি যদি আমার উম্মত থেকে কাউকে খলীল বানাতাম তা হলে আবূ বকরকেই আমার খলীল বানাতাম’’। (মুসলিম ৫৩২)

খলীলের চাইতে হাবীব কখনো উন্নত হতে পারে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে নিজ খলীল বানাননি। তবে ‘আয়েশা তাঁর হাবীবাহ্ ছিলেন এবং আবূ বকর, ’উমর ও অন্যান্যরা তাঁর হাবীব ছিলেন।

এ কথা সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ভালোবাসার পাত্র আবার দু’ প্রকার। যা নিম্নরূপ:

ক. স্বকীয়ভাবে যাকে ভালোবাসতে হয়। অন্য কারোর জন্য তার ভালোবাসা নয়। আর তা এমন সত্তার ব্যাপারে হতে পারে যার গুণাবলী চূড়ান্ত পর্যায়ের ও চিরস্থায়ী এবং যা তার থেকে কখনো ভিন্ন হয় না। তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, মানুষ কাউকে দু’ কারণেই ভালোবাসে। আর তা হচ্ছে মহত্ত্ব ও পরম সৌন্দর্য। উক্ত দু’টি গুণ আল্লাহ্ তা‘আলার মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়েরই রয়েছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব একান্ত স্বকীয়ভাবে তাঁকেই ভালোবাসতে হবে। তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে নয়।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সব কিছু দিচ্ছেন, সুস্থ রাখছেন, সীমাহীন করুণা করছেন, তাঁর শানে অনেক অনেক দোষ করার পরও তিনি তা লুকিয়ে রাখছেন এবং ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তিনি আমাদের দো‘আ কবুল করছেন, আমাদের সকল বিপদাপদ কাটিয়ে দিচ্ছেন; অথচ আমাদের প্রতি তাঁর কোন প্রয়োজন নেই বরং তিনি বান্দাহ্কে গুনাহ্ করার সুযোগ দিচ্ছেন, তাঁরই ছত্রছায়ায় বান্দাহ্ তার প্রবৃত্তির সকল চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছে যদিও তা তাঁর বিধান রিরুদ্ধ। সুতরাং আমরা তাঁকেই ভালো না বেসে আর কাকে ভালোবাসবো? বান্দাহ্’র প্রতি তাঁর পক্ষ থেকে শুধু কল্যাণই কল্যাণ নেমে আসছে অথচ তাঁর প্রতি বান্দাহ্’র পক্ষ থেকে অধিকাংশ সময় খারাপ আমলই উঠে যাচ্ছে, তিনি অগণিত নিয়ামত দিয়ে বান্দাহ্’র প্রিয় হতে চান অথচ তিনি তার মুখাপেক্ষী নন আর বান্দাহ্ গুনাহ্’র মাধ্যমে তাঁর অপ্রিয় হতে চায় অথচ সর্বদা সে তাঁর মুখাপেক্ষী। তারপরও আল্লাহ্’র অনুগ্রহ কখনো বন্ধ হচ্ছে না আর বান্দাহ্’র গুনাহ্ও কখনো কমছে না।

দুনিয়ার কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে তার স্বার্থের জন্যই ভালোবাসে কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্কে ভালোবাসেন একমাত্র তারই কল্যাণে। তাতে আল্লাহ্ তা‘আলার কোন লাভ নেই।

দুনিয়ার কেউ কারোর সাথে কখনো লেনদেন করে লাভবান না হলে সে তার সাথে দ্বিতীয়বার আর লেনদেন করতে চায় না। লাভ ছাড়া সে সামনে এক কদমও বাড়াচ্ছে না। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্’র সাথে লেনদেন করছেন একমাত্র তারই লাভের জন্য। নেক আমল একে দশ সাতশ’ পর্যন্ত আরো অনেক বেশি। আর গুনাহ্ একে এক এবং দ্রুত মার্জনীয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্কে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই জন্যে। আর দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন বান্দাহ্’র জন্যে।

বান্দাহ্’র সকল চাওয়া-পাওয়া একমাত্র তাঁরই নিকটে। তিনিই সবচেয়ে বড় দাতা। বান্দাহ্কে তিনি তাঁর নিকট চাওয়া ছাড়াই আশাতীত অনেক কিছু দিয়েছেন। তিনি বান্দাহ্’র পক্ষ থেকে কম আমলে সন্তুষ্ট হয়েই তাঁর নিকট তা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন এবং গুনাহ্গুলো ক্ষমা করে দেন। তিনি তাঁর নিকট বার বার কোন কিছু চাইলে বিরক্ত হন না। বরং এর বিপরীতে তিনি তাতে প্রচুর সন্তুষ্ট হন। তিনি তাঁর নিকট কেউ কিছু না চাইলে খুব রাগ করেন।

আমাদের সবার জানা থাকা উচিত যে, আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি রক্ষা করে চলার নামই বিলায়াত। যার মূলে রয়েছে তাঁর একান্ত ভালোবাসা। শুধু নামায, রোযা কিংবা মুজাহাদার নামই বিলায়াত নয়। বান্দাহ্’র খারাপ কাজে তিনি লজ্জা পান। কিন্তু বান্দাহ্ তাতে একটুও লজ্জা পায় না। তিনি বান্দাহ্’র গুনাহ্সমূহ লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু বান্দাহ্ তার গুনাহ্গুলো লুকিয়ে রাখতে রাজি নয়। তিনি বান্দাহ্কে অগণিত নিয়ামত দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি কামনার প্রতি তাকে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু বান্দাহ্ তা করতে অস্বীকার করে। তাই তিনি এ উদ্দেশ্যে যুগে যুগে রাসূল ও তাদের নিকট কিতাব পাঠান। এরপরও তিনি এ উদ্দেশ্যে প্রতি শেষ রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন: কে আছো আমার কাছে চাইবে আমি তাকে সবই দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। তিনি বান্দাহ্’র প্রতি এতো মেহেরবান যে মাও তার সন্তানের প্রতি এতো মেহেরবানী করে না। বান্দাহ্’র তাওবা দেখে তিনি এতো বেশি খুশি হন যতটুকু খুশি সে ব্যক্তিও হয় না যে ধু ধু মরুভূমিতে খাদ্য-পানীয়সহ তার সওয়ারি হারিয়ে জীবনের আশা ছেড়ে দেয়ার পর আবার তা ফিরে পেয়েছে। তার আলোকে দুনিয়া আলোকিত। তিনি সর্বদা জাগ্রত। তাঁর জন্য কখনো ঘুম শোভা পায় না। তিনি সত্যিকার ইনসাফগার। তাঁর নিকট রাত্রের আমল উঠে যায় দিনের আমলের পূর্বে। দিনের আমল উঠে যায় রাতের আমলের পূর্বে। নূরই তাঁর আচ্ছাদন। সে আচ্ছাদন সরিয়ে ফেললে তাঁর ছেহারার আলোকরশ্মি তাঁর দৃষ্টির দূরত্ব পর্যন্ত তাঁর সকল সৃষ্টিকে জ্বালিয়ে ফেলবে। সুতরাং একমাত্র তাঁকেই ভালোবাসতে হবে।

জান্নাতের সর্ববৃহৎ নিয়ামত হবে সরাসরি আল্লাহ্ তা‘আলার সাক্ষাৎলাভ। আর আত্মার সর্বচূড়ান্ত স্বাদ তাতেই নিহিত রয়েছে। তা এখন থেকেই তাঁর ভালোবাসার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে এবং তাঁর ভালোবাসার মধ্যেই দুনিয়াতে আত্মার সমূহ তৃপ্তি নিহিত। এটাই মু’মিনের জন্য দুনিয়ার জান্নাত। এ কারণেই আলিমগণ বলে থাকেন: দুনিয়ার জান্নাত যে পেয়েছে আখিরাতের জান্নাত সেই পাবে। তাই আল্লাহ্ প্রেমিকদের কখনো কখনো এমন ভাব বা মজা অনুভব হয় যার দরুন সে বলতে বাধ্য হয় যে, এমন মজা যদি জান্নাতীরা পেয়ে থাকেন তা হলে নিশ্চই তাঁরা সুখে রয়েছেন।

খ. অন্যের জন্য যাকে ভালোবাসতে হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার কাউকে ভালোবাসতে হলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই ভালোবাসতে হবে। স্বকীয়ভাবে নয়। তবে এ কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে ভালোবাসা কখনো মনের বিপরীতও হতে পারে। তবে তা তাঁর জন্যই মেনে নিতে হবে যেমনিভাবে সুস্থতার জন্য অপছন্দ পথ্য খাওয়া মেনে নিতে হয়।

অতএব সর্ব নিকৃষ্ট ভালোবাসা হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে ভালোবাসা। আর সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা হচ্ছে এককভাবে আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভালোবাসা এবং তাঁর ভালোবাসার বস্ত্তকে সর্বদা প্রাধান্য দেয়া।

ভালোবাসাই সকল কাজের মূল। চাই সে কাজ ভালোই হোক বা খারাপ। কারণ, কোন ব্যক্তিকে ভালোবাসলেই তার মর্জিমাফিক কাজ করতে ইচ্ছা হয় এবং কোন বস্ত্তকে ভালোবাসলেই তা পাওয়ার জন্য মানুষ কর্মোদ্যোগী হয়। সুতরাং সকল ধর্মীয় কাজের মূল হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা যেমনিভাবে সকল ধর্মীয় কথার মূল হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস।

কোন ভালোবাসা কারোর জন্য লাভজনক প্রমাণিত হলে তার প্রভাব তথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তার জন্য লাভজনক হতে বাধ্য। আর কোন ভালোবাসা কারোর জন্য ক্ষতিকর হলে তার প্রভাব তথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তার জন্য ক্ষতিকর হতে বাধ্য। তাই আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার জন্য কান্না করলে বা তাঁকে না পাওয়ার দরুন হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হলে তা বান্দাহ্’র কল্যাণেই আসবে। ঠিক এরই বিপরীতে কোন সুন্দরী মেয়ে অথবা শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন কোন ছেলেকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার জন্য কান্না করলে বা তাঁকে না পাওয়ার দরুন হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হলে তা কখনোই বান্দাহ্’র কল্যাণে আসবে না। বরং তা তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেই প্রমাণিত হবে।

সুন্দরী কোন নারী অথবা শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন কোন ছেলেকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, তার সন্তুষ্টিকে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়, কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার ও তার অধিকার পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে তার অধিকারকেই প্রাধান্য দেয়া হয়, তার জন্য মূল্যবান সম্পদ ব্যয় করা হয় অথচ আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য মূল্যহীন সম্পদ, তার জন্য মূল্যবান সময় ব্যয় করা হয় যা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য করা হয় না, সর্বদা তার নৈকট্যার্জনের চেষ্টা করা হয় অথচ আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্যার্জনের একটুও চেষ্টা করা হয় না এমন ভালোবাসা বড় শির্ক যা ব্যভিচার চাইতেও অত্যন্ত মারাত্মক।

 সমকামের চিকিৎসা - রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

তাওহীদ বিরোধী উক্ত রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সর্ব প্রথম এ কথা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সে উক্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে শুধু মূর্খতা এবং গাফিলতির দরুনই। অতএব সর্ব প্রথম তাকে আল্লাহ্ তা‘আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ, তাঁর সাধারণ নীতি ও নিদর্শন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। অতঃপর তাকে এমন কিছু প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ইবাদত করতে হবে যার দরুন সে উক্ত মত্ততা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এরই পাশাপাশি সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সবিনয়ে সর্বদা এ দো‘আ করবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা যেন তাকে উক্ত রোগ থেকে ত্বরিত মুক্তি দেন। বিশেষ করে সম্ভাবনাময় স্থান, সময় ও অবস্থায় দো‘আ করবে। যেমন: আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়, রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশ, সিজদাহ্ এবং জুমার দিনের শেষ বেলা ইত্যাদি ইত্যাদি।

সংক্ষিপ্তাকারে প্রস্তাবিত চিকিৎসাসমূহ:

১. প্রথমে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট উক্ত গুনাহ্ থেকে খাঁটি তাওবা করে নিন। কারণ, কেউ আল্লাহ্ তা‘আলা নিকট একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য অথবা তাঁরই কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাওবা করে নিলে আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তা কবুল করবেন এবং তাকে সেভাবেই চলার তাওফীক দিবেন।

২. আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি দৃঢ় একনিষ্ঠ হোন। এটিই হচ্ছে এর একান্ত মহৌষধ। আল্লাহ্ তা‘আলা ইউসুফ (আঃ) কে এ একনিষ্ঠতার কারণেই ’ইশ্ক্ব এবং প্রায় নিশ্চিত ব্যভিচার থেকে রক্ষা করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْءَ وَالْفَحْشَآءَ، إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْـمُخْلَصِيْنَ»

‘‘তাকে (ইউসুফ (আঃ) কে) মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্যই এভাবে আমি আমার নিদর্শন দেখালাম। কারণ, তিনি তো ছিলেন আমার একান্ত একনিষ্ঠ বান্দাহ্দের অন্যতম’’। (ইউসুফ : ২৪)

৩. ধৈর্য ধরুন। কারণ, কোন অভ্যাসগত কঠিন পাপ ছাড়ার জন্য ধৈর্যের একান্তই প্রয়োজন। সুতরাং ধৈর্য ধারণের বার বার কসরত করতে হবে। এমনিভাবেই ধীরে ধীরে এক সময় ধৈর্য ধারণ অভ্যাসে পরিণত হবে।

আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَمَنْ يَّتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ، وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ.

‘‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে এমন কিছু দেন নি যা ধৈর্যের চাইতেও উত্তম এবং বিস্তর কল্যাণকর’’।

(বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০; মুসলিম ১০৫৩)

এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, মনের কোন চাহিদা পূরণ করা থেকে ধৈর্য ধারণ করা অনেক সহজ তা পূরণ করার পর যে কষ্ট, শাস্তি, লজ্জা, আফসোস, লাঞ্ছনা, ভয়, চিন্তা ও অস্থিরতা পেয়ে বসবে তা থেকে ধৈর্য ধারণ করার চাইতে। তাই একেবারে শুরুতেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

৪. মনের বিরোধিতা করতে শিখুন। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মনের বিরোধিতা করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا، وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْـمُحْسِنِيْنَ»

‘‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। আল্লাহ্ তা‘আলা নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের সাথেই রয়েছেন’’। (‘আন্কাবূত : ৬৯)

৫. আল্লাহ্ তা‘আলা যে সর্বদা আপনার কর্মকান্ডের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আছেন তা অনুভব করতে শিখুন। সুতরাং উক্ত কাজ করার সময় মানুষ আপনাকে না দেখলেও আল্লাহ্ তা‘আলা যে আপনার প্রতি দেখেই আছেন তা ভাবতে হবে। এরপরও যদি আপনি উক্ত কাজে লিপ্ত থাকেন তখন অবশ্যই এ কথা ভাবতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার সম্মান ও মর্যাদা আপনার অন্তরে নেই। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার উক্ত কর্ম দেখলেও আপনার এতটুকুও লজ্জা হয় না। আর যদি আপনি এমন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার কর্মকান্ড দেখছেনই না তা হলে তো আপনি নিশ্চয়ই কাফির।

৬. জামাতে নামায পড়ার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হোন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْـمُنْكَرِ»

‘‘নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’’। (‘আন্কাবূত : ৪৫)

৭. বেশি বেশি নফল রোযা রাখতে চেষ্টা করুন। কারণ, রোযার মধ্যে বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি উত্তেজনা প্রশমনেরও এক বাস্তবমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। যেমনিভাবে রোযা আল্লাহ্ভীরুতা শিক্ষা দেয়ার জন্যও এক বিশেষ সহযোগী।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.

‘‘হে যুবকরা! তোমাদের কেউ সঙ্গমে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ তার চোখকে নিম্নগামী করবে এবং তার লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কারণ, রোযা তার জন্য একান্ত যৌন উত্তেজনা প্রতিরোধক’’।

(বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৬; মুসলিম ১৪০০)

৮. বেশি বেশি কুর‘আন তিলাওয়াত করুন। কারণ, কুর‘আন হচ্ছে সর্ব রোগের চিকিৎসা। তাতে নূর, হিদায়াত, মনের আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। সুতরাং উক্ত রোগে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি কুর‘আন তিলাওয়াত, মুখস্থ ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা অবশ্যই কর্তব্য যাতে তার অন্তর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়।

৯. বেশি বেশি আল্লাহ্’র যিকির করুন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলার যিকিরে অন্তরের বিরাট একটা প্রশান্তি রয়েছে এবং যে অন্তর সর্বদা আল্লাহ্’র যিকিরে ব্যস্ত থাকে শয়তান সে অন্তর থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। সুতরাং এ জাতীয় ব্যক্তির জন্য যিকির অত্যন্ত উপকারী।

১০. আল্লাহ্ তা‘আলার সকল বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান হোন। তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলাও আপনার প্রতি যত্নবান হবেন। আপনাকে জিন ও মানব শয়তান এবং অন্তরের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করবেন। তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার ধার্মিকতা, সততা, মানবতা এবং সম্মানও রক্ষা করবেন।

১১. অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ কার্য সম্পাদন করুন। তা হলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সহজেই আপনি একটি হালাল ক্ষেত্র পেয়ে যাবেন।

১২. জান্নাতের ’হুরের কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। যাদের চোখ হবে বড় বড় এবং যারা হবে অতুলনীয়া সুন্দরী লুক্কায়িত মুক্তার ন্যায়। নেককার পুরুষদের জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পেতে হলে দুনিয়ার এ ক্ষণিকের অবৈধ স্বাদ পরিত্যাগ করতেই হবে।

১৩. শ্মশ্রুবিহীন সে প্রিয় ছেলেটি থেকে খুব দূরে থাকুন। যাকে দেখলে আপনার অন্তরের সে লুক্কায়িত কামনা-বাসনা দ্রুত জাগ্রত হয়। এমন দূরে থাকবেন যে, সে যেন কখনো আপনার চোখে না পড়ে এবং তার কথাও যেন আপনি কখনো শুনতে না পান। কারণ, বাহ্যিক দূরত্ব অন্তরের দূরত্ব সৃষ্টি করতে অবশ্যই বাধ্য।

১৪. তেমনিভাবে উত্তেজনাকর সকল বস্ত্ত থেকেও দূরে থাকুন যেগুলো আপনার লুক্কায়িত কামনা-বাসনাকে দ্রুত জাগ্রত করে। অতএব মহিলা ও শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে মেলামেশা করবেন না। বিশ্রী ছবি ও অশ্লীল গান শুনবেন না। আপনার নিকট যে অডিও ভিডিও ক্যাসেট, ছবি ও চিঠি রয়েছে সবগুলো দ্রুত নস্যাৎ করে দিন। উত্তেজনাকর খাদ্যদ্রব্য আপাতত বন্ধ রাখুন। তা আর কিছু দিনের জন্য গ্রহণ করবেন না। ইতিপূর্বে যেখানে উক্ত কাজ সম্পাদিত হয়েছে সেখানে আর যাবেন না।

১৫. লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকুন। কখনো একা ও অবসর থাকতে চেষ্টা করবেন না। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ইত্যবসরে ঘরের প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে পারেন। কুর‘আন শরীফ মুখস্থ করতে পারেন অথবা অন্ততপক্ষে বেচাকেনা নিয়েও ব্যস্ত হতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

১৬. সর্বদা শয়তানের ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করুন। কোন কুমন্ত্রণাকে একটুর জন্যও অন্তরে স্থান দিবেন না।

১৭. নিজের মনকে দৃঢ় করুন। কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, এ ব্যাধি এমন নয় যে তার কোন চিকিৎসা নেই। সুতরাং আপনি নিরাশ হবেন কেন?

১৮. উচ্চাকাঙ্খী হোন। উচ্চাভিলাসের চাহিদা হচ্ছে এই যে, আপনি সর্বদা উন্নত গুণে গুণান্বিত হতে চাইবেন। অরুচিকর অভ্যাস ছেড়ে দিবেন। লাঞ্ছনার স্থানসমূহে কখনো যাবেন না। সমাজের সম্মানি ব্যক্তি সেজে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব হাতে নিবেন।

১৯. অভিনব বিরল চিকিৎসাসমূহ থেকে দূরে থাকুন। যেমন: কেউ উক্ত কাজ ছাড়ার জন্য এভাবে মানত করলো যে, আমি যদি এমন কাজ আবারো করে ফেলি তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য ছয় মাস রোযা রাখা অথবা দশ হাজার রিয়াল সাদাকা করা আমার উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। তেমনিভাবে এ বলে কসম খেলো যে, আল্লাহ্’র কসম! আমি আর এমন কাজ করবো না। শুরুতে কসমের কাফ্ফারার ভয়ে অথবা মানত ওয়াজিব হওয়ার ভয়ে উক্ত কাজ করা থেকে বেঁচে থাকলেও পরবর্তীতে তা কাজে নাও আসতে পারে।

কখনো কখনো কেউ কেউ কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী কোন কোন ওষুধ সেবন করে। তা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

২০. নিজের মধ্যে প্রচুর লজ্জাবোধ জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন। কারণ, লজ্জাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যা কল্যাণই কল্যাণ এবং তা ঈমানেরও একটি বিশেষ অঙ্গ বটে। লজ্জাবোধ মানুষকে ভালো কাজ করতে উৎসাহ যোগায় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।

 নিম্নোক্ত কয়েকটি কাজ করলে কারোর মধ্যে ধীরে ধীরে লজ্জাবোধ জন্ম নেয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১. বেশি বেশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী পড়বেন।

২. সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) ও প্রসিদ্ধ লজ্জাশীল সাল্ফে সা’লি’হীনদের জীবনী পড়বেন।

৩. লজ্জাশীলতার ফলাফল সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করবেন। বিশেষ করে লজ্জাহীনতার ভীষণ কুফল সম্পর্কেও সর্বদা ভাববেন।

৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবেন যা বললে বা করলে লজ্জাবোধ কমে যায়।

৫. লজ্জাশীলদের সাথে বেশি বেশি উঠাবসা করবেন এবং লজ্জাহীনদের থেকে একেবারেই দূরে থাকবেন।

৬. বার বার লজ্জাশীলতার কসরত করলে একদা সে ব্যক্তি অবশ্যই লজ্জাশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে এমন গুণ থাকা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তখনই সে বড় হলে তা তার বিশেষ কাজে আসবে।

ওয়াহাব বিন্ মুনাবিবহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

إِذَا كَانَ فِيْ الصَّبِيِّ خَصْلَتَانِ: الْـحَيَاءُ وَالرَّهْبَةُ رُجِيَ خَيْرُهُ.

‘‘কোন বাচ্চার মধ্যে দু’টি গুণ থাকলেই তার কল্যাণের আশা করা যায়। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে লজ্জা আর অপরটি হচ্ছে ভয়-ভীতি’’।

ইমাম আস্মা’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

مَنْ كَسَاهُ الْـحَيَاءُ ثَوْبَهُ لَمْ يَرَ النَّاسُ عَيْبَهُ.

‘‘লজ্জা যার ভূষণ হবে মানুষ তার দোষ দেখতে পাবে না।

২১. যারা অন্য জন কর্তৃক এ জাতীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন (বিশেষ করে তা উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) তাদের একান্তই কর্তব্য হচ্ছে সর্বদা সতর খোলা থেকে সতর্ক থাকা। চাই তা খেলাধুলার সময় হোক বা অন্য কোন সময়। কারণ, এরই মাধ্যমে সাধারণত অন্য জন তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে।

২২. সাজ-সজ্জায় স্বাভাবিকতা বজায় রাখবেন। উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবেই প্রযোজ্য। সুতরাং এদের জন্য কখনোই উচিৎ নয় যে, এরা কড়া সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ব্যতিক্রমধর্মী আঁটসাঁট পোশাক পরবে। সাজ-সজ্জার ব্যাপারে কাফির ও মহিলাদের অনুসরণ করবে। মাথা আঁচড়ানো বা চুলের ভাঁজের প্রতি গুরুত্ব দিবে। এ জন্যই যে, তা অন্যের ফিৎনার কারণ।

২৩. উঠতি বয়সের ছেলেদের আরেকটি কর্তব্য হচ্ছে, তারা যে কারোর সঙ্গে মজা বা রঙ্গ-তামাশা করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, অধিক কৌতুক মানুষের সম্মান বিনষ্ট করে দেয় এবং বোকাদেরকে তার ব্যাপারে অসভ্য আচরণ করতে সাহসী করে তোলে। তবে জায়িয কৌতুক একেবারেই নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু তা নেককারদের সঙ্গেই হওয়া উচিৎ এবং তা ভদ্রতা ও মধ্যপন্থা বজায় রেখেই করতে হবে।

২৪. আত্ম সমালোচনা করতে শিখবেন। সময় থাকতে এখনই নিজের মনের সঙ্গে বুঝাপড়া করে নিবেন। চাই আপনি ছোটই হোন অথবা বড়। সেই কর্মটি আপনিই করে থাকুন অথবা তা আপনার সাথেই করা হোক না কেন।

আপনি যদি বড় বা বয়স্ক হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, এখনো আমি কিসের অপেক্ষায় রয়েছি? এ মারাত্মক কাজটি এখনো ছাড়ছিনে কেন? আমি কি সরাসরি আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তির অপেক্ষা করছি? না কি মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছি?

আর যদি আপনি অল্প বয়স্ক বা ছোট হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, আমি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আমি অনেক দিন বাঁচবো। না কি যে কোন সময় আমার মৃত্যু আসতে পারে অথচ আমি তখনো উক্ত গুনাহে লিপ্ত। আর যদি আমি বেঁচেই থাকি তা হলে এমন ঘৃণ্য কাজ নিয়েই কি বেঁচে থাকবো? আমার যৌবন কি এ কাজেই ব্যয় হতে থাকবে? আমি কি বিবাহ্ করবো না? তখন আমার স্ত্রী ও সন্তানের কি পরিণতি হবে? আমি কি কোন এক দিন মানুষের কাছে লাঞ্ছিত হবো না? আমি কি কখনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হবো না? আমার কারণেই কি এ পবিত্র সমাজ ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে না? আমি কি আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তি ও অভিশাপের কারণ হচ্ছি না? কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে আমার অবস্থান কি হবে?

২৫. উক্ত কর্মের পরিণতি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করবেন। কারণ, কিছুক্ষণের মজার পরই আসছে দীর্ঘ আপসোস, লজ্জা, অপমান ও শাস্তি।

২৬. মনে রাখবেন, এ জাতীয় মজার কোন শেষ নেই। এ ব্যাধি হচ্ছে চুলকানির ন্যায়। যতই চুলকাবেন ততই চুলকানি বাড়বে। একটি শিকার মিললেই আরেকটি শিকারের ধান্ধায় থাকতে হবে। কখনোই আপনার এ চাহিদা মিটবে না।

২৭. নেককারদের সাথে উঠাবসা করবেন ও বদ্কারদের থেকে বহু দূরে থাকবেন। কারণ, নেককারদের সাথে উঠাবসা করলে অন্তর সজীব হয়, ব্রেইন আলোকিত হয়। আর বদ্কারদের থেকে দূরে থাকলে ধর্ম ও ইয্যত রক্ষা পায়।

২৮. বেশি বেশি রুগ্ন ব্যক্তির শুশ্রূষা করবেন, বার বার মৃত ব্যক্তির লাশ দেখতে যাবেন, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করবেন ও তার কবর যিয়ারত করবেন। তেমনিভাবে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করবেন। কারণ, তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনের এক বিশেষ সহযোগী।

২৯. কারোর হুমকির সামনে কোন ধরনের নতি স্বীকার করবেন না। বরং তা দ্রুত প্রশাসনকে জানাবেন। বিশেষ করে এ ব্যাপারটি ছোটদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। কারণ, এ কথাটি আপনি বিশেষভাবেই জেনে রাখবেন যে, এ জাতীয় ব্যক্তিরা যতই কাউকে ভয় দেখাক না কেন তারা এ ব্যাপারে উক্ত ব্যক্তির কঠিনতা বা সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা দেখলে অবশ্যই পিছপা হতে বাধ্য হবে।

কেউ এ ব্যাপারে নিজকে অক্ষম মনে করলে সে যেন দ্রুত তা নিজ পিতা, বড় ভাই, আস্থাভাজন শিক্ষক অথবা কোন ধার্মিক ব্যক্তিকে জানায়, যাতে তাঁরা তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারে।

৩০. বেশি বেশি সাধুতা ও তাওবাকারীদের কাহিনী সম্ভার পড়বেন। কারণ, তাতে বহু ধরনের শিক্ষা, আত্মসম্মানের প্রতি উৎসাহ এবং বিশেষভাবে অসম্মানের প্রতি নিরুৎসাহ সৃষ্টি হবে।

৩১. বেশি বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ক্যাসেটসমূহ বিশেষ মনযোগ সহ শ্রবণ করবেন এবং গানের ক্যাসেটসমূহ শুনা থেকে একেবারেই বিরত থাকবেন।

৩২. সমাজের যে যে নেককার ব্যক্তিরা যুবকদের বিষয়সমূহ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন তাদের কারোর নিকট নিজের এ দুরবস্থা বিস্তারিত জানাবেন যাতে তাঁরা আপনাকে এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকটও আপনার এ অবস্থার পূর্ণ বিবরণ দিতে পারেন যাতে তিনি আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেন অথবা উত্তেজনা প্রশমনের কোন পদ্ধতি বাতলিয়ে দিতে পারেন।

প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই এ কথা জানা উচিত যে, শরীয়ত ও বিবেককে আশ্রয় করেই কোন মানুষ তার সার্বিক কল্যাণ ও তার পরিপূর্ণতা এবং সকল অঘটন অথবা অন্ততপক্ষে তার কিয়দংশ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে থাকে।

সুতরাং বিবেকবানের সামনে যখন এমন কোন ব্যাপার এসে পড়ে যার মধ্যে ভালো ও খারাপ উভয় দিকই রয়েছে তখন তার উপর দু’টি কর্তব্য এসে পড়ে। তার মধ্যে একটির সম্পর্ক জ্ঞানের সাথে এবং অপরটির সম্পর্ক কাজের সাথে। অর্থাৎ তাকে সর্ব প্রথম এ কথা জানতে হবে যে, উক্ত উভয় দিকের মধ্য থেকে কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সে সেটিকেই প্রাধান্য দিবে। আর এ কথা সবারই জানা যে, কোন মেয়ে বা শ্মশ্রুবিহীন ছেলের প্রেমে পড়ার মধ্যে দুনিয়াবী বা ধর্মীয় কোন ফায়েদা নেই। বরং তাতে দীন-দুনিয়ার অনেকগুলো গুরুতর ক্ষতি রয়েছে যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:

ক. আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে তাঁর কোন সৃষ্টির ভালোবাসা ও তার স্মরণে নিমগ্ন হওয়া। কারণ, উভয়টি একত্রে সমভাবে কারোর হৃদয়ে অবস্থান করতে পারে না।

খ. তার অন্তর আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসার দরুন নিদারুণ কষ্ট ও শাস্তির সম্মুখীন হয়। কারণ, প্রেমিক কখনো চিন্তামুক্ত হতে পারে না। বরং তাকে সর্বদা চিন্তাযুক্তই থাকতে হয়। প্রিয় বা প্রিয়াকে না পেয়ে থাকলে তাকে পাওয়ার চিন্তা এবং পেয়ে থাকলে তাকে আবার কখনো হারানোর চিন্তা।

গ. প্রেমিকের অন্তর সর্বদা প্রিয় বা প্রিয়ার হাতেই থাকে। সে তাকে যেভাবেই চালাতে চায় সে সেভাবেই চলতে বাধ্য। তখন তার মধ্যে কোন নিজস্ব ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে না। এর চাইতে আর বড় কোন লাঞ্ছনা আছে কি?

ঘ. দীন-দুনিয়ার সকল কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত হয়। কারণ, ধর্মীয় কল্যাণের জন্য তো আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি অন্তরের উন্মুখতা একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা প্রেমিকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অন্য দিকে দুনিয়াবী কল্যাণ তো দীনি কল্যাণেরই অধীন। দীনি কল্যাণ যার হাত ছাড়া হয় দুনিয়ার কল্যাণ সুস্থভাবে কখনো তার হস্তগত হতে পারে না।

ঙ. দীন-দুনিয়ার সকল বিপদ তার প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। কারণ, মানুষ যখন আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর প্রেমে পড়ে যায় তখন তার অন্তর আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে পড়ে। আর কারোর অন্তর আল্লাহ্ বিমুখ হলে শয়তান তার অন্তরে হাঁটু গেড়ে বসে। তখনই সকল বিপদাপদ তার দিকে দ্রুত ধাবমান হয়। কারণ, শয়তান তো মানুষের আজন্ম শত্রু। আর কারোর কঠিন শত্রু যখন তার উপর কাবু করতে পারে তখন কি সে তার যথাসাধ্য ক্ষতি না করে এমনিতেই বসে থাকবে?!

চ. শয়তান যখন প্রেমিকের অন্তরে অবস্থান নিয়ে নেয় তখন সে উহাকে বিক্ষিপ্ত করে ছাড়ে এবং তাতে প্রচুর ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ঢেলে দেয়। কখনো কখনো এমন হয় যে, সে একান্ত বদ্ধ পাগলে পরিণত হয়। লাইলী প্রেমিক ঐতিহাসিক প্রেমপাগল মজনুর কথা তো আর কারোর অজানা নয়।

ছ. এমনকি প্রেমিক কখনো কখনো প্রেমের দরুন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিজের সকল অথবা কিছু বাহ্যেন্দ্রিয় হারিয়ে বসে। প্রত্যক্ষভাবে হারানো তো এভাবে যে, প্রেমে পড়ে তো অনেকে নিজ শরীরই হারিয়ে বসে। ধীরে ধীরে তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তার কোন ইন্দ্রিয়ই আর সুস্থভাবে বাহ্যিক কোন কাজ সমাধা করতে পারে না।

একদা জনৈক যুবককে ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) এর নিকট হাযির করা হলো। তখন তিনি ‘‘আরাফাহ্’’ ময়দানে অবস্থানরত। যুবকটি একেবারেই দুর্বল হয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেলো। তখন ইব্নু ‘আববাস্ (রা.) উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞাসা করলেন: যুবকটির কি হলো? লোকেরা বললো: সে প্রেমে পড়েছে। এ কথা শুনেই তিনি তখন থেকে পুরো দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রেম থেকে আশ্রয় কামনা করেন।

পরোক্ষভাবে বাহ্যেন্দ্রিয় লোপ পায় তো এ ভাবেই যে, প্রেমের দরুন তার অন্তর যখন বিনষ্ট হয়ে যায় তখন তার বাহ্যেন্দ্রিয়গুলোও আর সঠিক কাজ করে না। তখন তার চোখ আর তার প্রিয়ের কোন দোষ দেখে না। কান আর প্রিয়কে নিয়ে কোন গাল শুনতে বিরক্তি বোধ করে না। মুখ আর প্রিয়ের অযথা প্রশংসা করতে লজ্জা পায় না।

জ. ’ইশ্ক্বের পর্যায়ে যখন কেউ পৌঁছে যায় তখন তার প্রিয় পাত্রই তার চিন্তা-চেতনার একান্ত কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়। তখন তার সকল শারীরিক ও মানসিক শক্তিসমূহ অচল হয়ে পড়ে। তখন সে এমন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার চিকিৎসা একেবারেই দুষ্কর।

এ ছাড়াও প্রেমের আরো অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন: কোন প্রেমিক যখন লোক সমাজে তার প্রেমের কথা প্রকাশ করে দেয় তখন তার প্রিয়ের উপর সর্ব প্রথম বিশেষভাবে যুলুম করা হয়। কারণ, মানুষ তখন অনর্থকভাবে তাকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করতে থাকে। এমনকি তার ব্যাপারে কোন মানুষ কোন কথা বানিয়ে বললেও অন্যরা তা বিশ্বাস করতে একটুও দেরি করে না। এমন কি শুধু প্রিয়ের উপরই যুলুম সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা তার সমস্ত পরিবারবর্গের উপরও বর্তায়। কারণ, এতে করে তাদেরও প্রচুর মানহানী হয়। অন্যদেরকেও মিথ্যারোপের গুনাহে নিমজ্জিত করা হয়। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়াকে পাওয়ার জন্য অন্যের সহযোগিতা নেয়া হয় তখন তারাও গুনাহ্গার হয়। এ পথে যারা বাধা সৃষ্টি করে তাদের অনেককে কখনো কখনো হত্যাও করা হয়। কতো কতো গভীর সম্পর্ক যে এ কারণে বিচ্ছিন্ন করা হয় তার কোন ইয়ত্তা নেই। কতো প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের অধিকার যে এ ক্ষেত্রে বিনষ্ট হয় তার কোন হিসেব নেই। আর যদি এ ক্ষেত্রে যাদুর সহযোগিতা নেয়া হয় তা হলে একে তো শির্ক আবার এর উপর কুফরী। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া মিলেই যায় তখন একে অপরকে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের উপর যুলুম করতে সহযোগিতা করে এবং একে অপরের সন্তুষ্টির জন্য কতো মানুষের কতো মাল যে হরণ করে তার কোন হিসেব নেই। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া অত্যন্ত চতুর হয়ে থাকে তখন সে প্রেমিককে আশা দিয়ে দিয়ে তার সকল সম্পদ বিনষ্ট করে দেয়। কখনো সে এমন কান্ড একই সঙ্গে অনেকের সাথেই করে বেড়ায়। তখন প্রেমিক রাগ করে কখনো তাকে হত্যা বা মারাত্মকভাবে আহত করে। আরো কতো কি?

সুতরাং কোন বুদ্ধিমান এতো কিছু জানার পরও এ জাতীয় প্রেমে কখনো আবদ্ধ হতে পারে না।

 ১০. মিথ্যা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মিথ্যা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া একটি মারাত্মক অপরাধ।

কোন বিষয়ে নিশ্চিত জানাশোনা না থাকা সত্ত্বেও সে বিষয়ে অনুমান ভিত্তিক কোন কথা বলা সত্যিই অপরাধ এবং তা অধিকাংশ সময় মিথ্যা হতেই বাধ্য।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ، إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَآئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُوْلًا»

‘‘যে বিষয়ে তোমার পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পেছনে পড়ো না তথা অনুমানের ভিত্তিতে কখনো পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয়ই তুমি কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় এ সবের ব্যাপারে (কিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’’।

(ইস্রা’/বানী ইস্রাঈল : ৩৬)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«قُتِلَ الْـخَرَّاصُوْنَ»

‘‘(অনুমান ভিত্তিক) মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক’’। (যারিয়াত : ১০)

মিথ্যুক আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পাওয়ার উপযুক্ত।

মুবাহালার আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَةَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ»

‘‘অতঃপর আমরা সবাই (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) এ মর্মে প্রার্থনা করি যে, মিথ্যুকদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক’’।

(আ’লি ’ইমরান : ৬১)

মুলা‘আনার আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالْـخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَةَ اللهِ عَلَيْهِ إِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ»

‘‘পঞ্চমবার পুরুষ এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক যদি সে (নিজ স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে) মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে’’।

(নূর : ৭)

মিথ্যা কখনো কখনো মিথ্যাবাদীকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় এবং মিথ্যা বলতে বলতে পরিশেষে সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মিথ্যুক হিসেবেই পরিগণিত হয়।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْـجَنَّةِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا، وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ، وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا.

‘‘তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরো। কারণ, সত্য পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথ। কোন ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বললে এবং সর্বদা সত্যের অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সত্যবাদী হিসেবেই লিখিত হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। কারণ, মিথ্যা পাপাচারের রাস্তা দেখায় আর পাপাচার জাহান্নামের রাস্তা। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বললে এবং সর্বদা মিথ্যার অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মিথ্যাবাদী রূপেই লিখিত হয়’’।

(মুসলিম ২৬০৭)

সামুরাহ্ বিন্ জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ’’একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিজ স্বপ্ন বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন: গত রাত আমার নিকট দু’ জন ব্যক্তি এসেছে। তারা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললো: চলুন, তখন আমি তাদের সাথেই রওয়ানা করলাম। যেতে যেতে আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছুলাম যে চিত হয়ে শায়িত। অন্য আরেক জন তার পাশেই দাঁড়িয়ে একটি মাথা বাঁকানো লোহা হাতে। লোকটি বাঁকানো লোহা দিয়ে শায়িত ব্যক্তির একটি গাল, নাকের ছিদ্র এবং চোখ ঘাড় পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলছে। এরপর সে উক্ত ব্যক্তির অন্য গাল, নাকের ছিদ্র এবং চোখটিকেও এমনিভাবে ছিঁড়ে ফেলছে। লোকটি শায়িত ব্যক্তির এক পার্শ্ব ছিঁড়তে না ছিঁড়তেই তার অন্য পার্শ্ব পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে এবং লোকটি শায়িত ব্যক্তিটির সাথে সে ব্যবহারই করছে যা পূর্বে করেছে। ফিরিশ্তাদ্বয় উক্ত ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেন: উক্ত ব্যক্তির দোষ এই যে, সে ভোর বেলায় ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলে বেড়ায় যা দুনিয়ার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে’’। (বুখারী ৭০৪৭; মুসলিম ২২৭৫)

বিশেষ আফসোসের ব্যাপার এই যে, অনেক রসিক ব্যক্তি শুধুমাত্র মানুষকে হাসানোর জন্যই মিথ্যা কথা বলে থাকেন। তাতে তার ইহলৌকিক অন্য কোন ফায়েদা নেই। অথচ সে অন্যকে ফুর্তি দেয়ার জন্যই এমন জঘন্য কাজ করে থাকে।

’হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَيْلٌ لِلَّذِيْ يُحَدِّثُ بِالْـحَدِيْثِ، لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ فَيَكْذِبُ، وَيْلٌ لَهُ، وَيْلٌ لَهُ.

‘‘অকল্যাণ হোক সে ব্যক্তির যে মানুষকে হাসানোর জন্যই মিথ্যা কথা বলে। অকল্যাণ হোক সে ব্যক্তির; অকল্যাণ হোক সে ব্যক্তির’’।

(তিরমিযী ২৩১৫)

অনেকের মধ্যে তো আবার মিথ্যা স্বপ্ন তথা স্বপ্ন বানিয়ে বলার প্রবণতা রয়েছে। বর্তমানে নতুন নতুন মাযার তৈরির এই তো হচ্ছে একমাত্র পুঁজি। কোন পীর-বুযুর্গের নাম-গন্ধও নেই অথচ মাযার উঠার অলীক স্বপ্ন আউড়িয়ে নতুন নতুন মাযারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। একে তো মাযার উঠানো আবার তা তথা কথিত অলীক স্বপ্নের ভিত্তিতে। আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন এ জাতীয় মানুষকে দু’টি যব একত্রে জোড়া দিতে বাধ্য করবেন অথচ সে তা করতে পারবে না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ أَنْ يَّعْقِدَ بَيْنَ شَعِيْرَتَيْنِ، وَلَنْ يَّفْعَلَ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখেছে বলে দাবি করলো অথচ সে তা দেখেনি তা হলে তাকে দু’টি যব একত্রে জোড়া দিতে বাধ্য করা হবে অথচ সে তা কখনোই করতে পারবে না’’।

(বুখারী ৭০৪২; তিরমিযী ২২৮৩)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ أَفْرَى الْفِرَى أَنْ يُّرِيَ عَيْنَيْهِ مَا لَمْ تَرَ.

‘‘সর্ব নিকৃষ্ট মিথ্যা এই যে, কেউ যা স্বপ্নে দেখেনি তা সে দেখেছে বলে দাবি করছে’’। (বুখারী ৭০৪৩)

তবে অতি প্রয়োজনীয় কোন কল্যাণ অর্জনের জন্য অথবা নিশ্চিত কোন অঘটন থেকে বাঁচার জন্য; যা সত্য বললে কোনভাবেই হবে না এবং তাতে কারোর কোন অধিকারও বিনষ্ট করা হয় না অথবা কোন হারামকেও হালাল করা হয় না এমতাবস্থায় মিথ্যা বলা জায়িয। তবুও এমতাবস্থায় এমনভাবে মিথ্যাটিকে উপস্থাপন করা উচিৎ যাতে বাহ্যিকভাকে তা মিথ্যা মনে হলেও বাস্তবে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয় না। কারণ, কথাটি বলার সময় তার ধ্যানে সত্য কোন একটি দিক তখনো উদ্ভাসিত ছিলো। আরবী ভাষায় যা তাওরিয়া বা মা‘আরীয নামে পরিচিত।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ فِيْ الْـمَعَارِيْضِ لَـمَنْدُوْحَةً عَنِ الْكَذِبِ.

‘‘ঘুরিয়ে কথা বললে জাজ্বল্য মিথ্যা বলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়’’।

(বায়হাক্বী ১০/১৯৯ ইব্নু ‘আদী ৩/৯৬)

উম্মে কুল্সূম বিন্তে ’উক্ববাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِيْ يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، وَيَقُوْلُ خَيْرًا وَيَنْمِيْ خَيْرًا.

‘‘সে ব্যক্তি মিথ্যুক নয় যে মানুষের পরস্পর বিরোধ মীমাংসা করে এবং সে উক্ত উদ্দেশ্যেই ভালো কথা বলে এবং তা বানিয়ে বলে’’।

(বুখারী ২৬৯২; মুসলিম ২৬০৫)

উম্মে কুল্সূম বিন্তে ’উক্ববাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র তিনটি ব্যাপারেই মিথ্যা বলার সুযোগ দিয়েছেন। তিনি বলতেন:

لَا أَعُدُّهُ كَاذِبًا : الرَّجُلُ يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، يَقُوْلُ الْقَوْلَ وَلَا يُرِيْدُ بِهِ إِلاَّ الْإِصْلَاحَ، وَالرَّجُلُ يَقُوْلُ فِيْ الْـحَرْبِ، وَالرَّجُلُ يُحَدِّثُ اِمْرَأَتَهُ، وَالْـمَرْأَةُ تُحَدِّثُ زَوْجَهَا.

‘‘আমি মিথ্যা মনে করি না যে, কোন ব্যক্তি মানুষের পরস্পর বিরোধ মীমাংসার জন্য কোন কথা বানিয়ে বলবে। তার উদ্দেশ্য কেবল বিরোধ মীমাংসাই। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি শত্রু পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধে জেতার জন্য কোন কথা বানিয়ে বলবে। তেমনিভাবে কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীর সঙ্গে এবং কোন মহিলা নিজ স্বামীর সঙ্গে কোন কথা বানিয়ে বলবে’’।

(আবূ দাউদ ৪৯২১)

ইব্নু শিহাব যুহ্রী বলেন: আমার শুনাজানা মতে তিন জায়গায়ই মিথ্যা কথা বলা যায়। আর তা হচ্ছে যুদ্ধ, মানুষের পরস্পর বিরোধ মীমাংসা এবং স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর কথা।

মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানও কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম।

আল্লাহ্’র খাঁটি বান্দাহ্দের বৈশিষ্ট্য তো এই যে, তারা কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দিবেন না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ»

‘‘আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না’’। (ফুরকান : ৭২)

 মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার অপকারসমূহ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ক. বিচারককে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার ব্যাপারে লক্ষ্যভ্রষ্ট করা। কারণ, বিচার ফায়সালা নির্ণিত হয় বাদীর পক্ষের সাক্ষী অথবা বিবাদীর কসমের উপর। অতএব বাদীর পক্ষের সাক্ষী ভুল হলে এবং বিচার সে সাক্ষীর ভিত্তিতেই হলে ফায়সালা নিশ্চয়ই ভুল হতে বাধ্য। আর তখন এর একমাত্র দায়-দায়িত্ব সাক্ষীকেই বহন করতে হবে এবং এ জন্য সেই গুনাহ্গার হবে।

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ، وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ إِلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُوْنَ أَلْـحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، وَأَقْضِيْ لَهُ عَلَى نَحْوِ مَا أَسْمَعُ، فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ مِنْ حَقِّ أَخِيْهِ شَيْئًا فَلَا يَأْخُذْ، فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنَ النَّارِ.

‘‘আমি তো মানুষ মাত্র। আর তোমরা আমার কাছে মাঝে মাঝে বিচার নিয়ে আসো। হয়তো বা তোমাদের কেউ কেউ নিজ প্রমাণ উপস্থাপনে অন্যের চাইতে অধিক পারঙ্গম। অতএব আমি শুনার ভিত্তিতেই তার পক্ষে ফায়সালা করে দেই। সুতরাং আমি যার পক্ষে তার কোন মুসলিম ভাইয়ের কিছু অধিকার ফায়সালা করে দেই সে যেন তা গ্রহণ না করে। কারণ, আমি উক্ত বিচারের ভিত্তিতে তার হাতে একটি জাহান্নামের আগুনের টুকরাই উঠিয়ে দেই’’।

(বুখারী ২৪৫৮, ২৬৮০, ৬৯৬৭, ৭১৬৯, ৭১৮১, ৭১৮৫; মুসলিম ১৭১৩)

খ. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে বিবাদীর উপর বিশেষভাবে যুলুম করা হয়। কারণ, এরই মাধ্যমে তার বৈধ অধিকার অবৈধভাবে অন্যের হাতে তুলে দেয়া হয়। তখন সে মাযলুম। আর মাযলুমের ফরিয়াদ আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো বৃথা যেতে দেন না।

গ. মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে বাদীর উপরও যুলুম করা হয়। কারণ, এরই মাধ্যমে তার হাতে আগুনের একটি টুকরা উঠিয়ে দেয়া হয়। যা ভবিষ্যতে তার সমূহ অকল্যাণই ডেকে নিয়ে আসে।

ঘ. মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে দোষীকে আরো হঠকারী বানিয়ে দেয়া হয়। কারণ, সে এরই মাধ্যমে কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পায়। অতএব সে মিথ্যা সাক্ষ্য পাওয়ার আশায় আরো অপরাধ কর্ম ঘটিয়ে যেতে কোন দ্বিধা করে না।

ঙ. মিথ্যা সাক্ষ্য এর ভিত্তিতে অনেক হারাম বস্ত্তকে হালাল করে দেয়া হয়। অনেক মানুষের জীবন বিসর্জন দিতে হয়। অনেক সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা হয়। এ সবের জন্য বাদী-বিবাদী ও বিচারক কিয়ামতের দিন মিথ্যা সাক্ষীর বিপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট বিচার দায়ের করবে।

চ. মিথ্যা সাক্ষ্য এর মাধ্যমে বাদীকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়; অথচ সে দোষী এবং বিবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় অথচ সে দোষী নয়।

ছ. মিথ্যা সাক্ষ্য এর মাধ্যমে শরীয়তের হালাল-হারামের ব্যাপারে বিনা জ্ঞানে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করা হয়।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ: الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَوْلُ الزُّوْرِ، أَوْ قَالَ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ.

‘‘সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন: হয়তোবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া’’।

(বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ৮৮)

 ১১. ফরয নামায আদায় না করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ফরয নামায আদায় না করাও একটি মারাত্মক অপরাধ। যা শির্ক তথা কুফরও বটে এবং যার পরিণতিই হচ্ছে জাহান্নাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوْا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوْا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُوْلَآئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا»

‘‘নবী ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের পর আসলো এমন এক অপদার্থ বংশধর যারা নামায বিনষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির পূজারী হলো। সুতরাং তারা ‘‘গাই’’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করা হবে না’’।

(মার্ইয়াম : ৫৯-৬০)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآؤُوْنَ، وَيَمْنَعُوْنَ الْـمَاعُوْنَ»

‘‘সুতরাং ওয়াইল্ নামক জাহান্নাম সেই মুসল্লীদের জন্য যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল। যারা লোক দেখানোর জন্যই তা আদায় করে এবং যারা গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় ছোটখাট বস্ত্ত অন্যকে দিতে অস্বীকৃতি জানায়’’। (মা’ঊন : ৪-৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِيْنَةٌ، إِلاَّ أَصْحَابَ الْيَمِيْنِ، فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ، عَنِ الْـمُجْرِمِيْنَ، مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ، قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْـمُصَلِّيْنَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ، حَتَّى أَتَانَا الْيَقِيْنُ»

‘‘প্রতিটি ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে সে দিন আবদ্ধ থাকবে। তবে তারা নয় যারা নিজ আমলনামা ডান হাতে পেয়েছে। তারা জান্নাতেই থাকবে। তারা অপরাধীদের সম্পর্কে পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এমনকি তারা জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে: কেন তোমরা সাক্বার নামক জাহান্নামে আসলে? তারা বলবে: আমরা তো নামাযী ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদেরকেও খাবার দিতাম না। বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সাথে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। আর এমনিভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেলো’’। (মুদ্দাস্সির : ৩৮-৪৭)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلَاةِ

‘‘কোন ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মাঝে ব্যবধান শুধু নামায না পড়ারই। যে নামায ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেলো’’।

(মুসলিম ৮২; তিরমিযী ২৬১৯ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৭)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

العَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ

‘‘আমাদের ও কাফিরদের মাঝে ব্যবধান শুধু নামাযেরই। যে নামায ত্যাগ করলো সে কাফির হয়ে গেলো’’।

(তিরমিযী ২৬২১ ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৮ মুস্তাদ্রাক, হাদীস ১১ আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৭ বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১ ইবনে হিববান/ইহ্সান, হাদীস ১৪৫৪ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৩০৩৯৬ দারাক্বুত্বনী ২/৫২)

বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ.

‘‘যে ব্যক্তি আসরের নামায পরিত্যাগ করলো তার সকল আমল বরবাদ হয়ে গেলো’’। (বুখারী ৫৫৩, ৫৯৪)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الَّذِيْ تَفُوْتُهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ كَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلُهُ وَمَالُهُ.

‘‘যে ব্যক্তির আসরের নামায ছুটে গেলো তার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদের যেন বিরাট ক্ষতি হয়ে গেলো’’। (বুখারী ৫৫২; মুসলিম ৬২৬)

মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দশটি নসীহত করলেন তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে,

وَلَا تَتْرُكَنَّ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا، فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ.

‘‘তুমি ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করলো তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার কোন জিম্মাদারি থাকলো না’’।

(আহমাদ ৫/২৩৮)

নামায পড়া মুসলিমদের একটি বাহ্যিক নিদর্শন। সুতরাং যে নামায পড়ে না সে মুসলিম নয়।

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা কিছু মালামাল বন্টন সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে জনৈক উঁচু গাল, ঠেলা কপাল এবং গর্তে ঢোকা চোখ বিশিষ্ট ঘন শ্মশ্রুমন্ডিত মাথা নেড়া জঙ্ঘার উপর কাপড় পরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বললো:

يَا رَسُوْلَ الله! اتَّقِ اللهَ، قَالَ: وَيْلَكَ، أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الْأَرْضِ أَنْ يَّتَّقِيَ اللهَ؟! قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، قَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ قَالَ: لَا، لَعَلَّهُ أَنْ يَّكُوْنَ يُصَلِّيْ.

‘‘হে আল্লাহ্’র রাসূল! আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি ধ্বংস হয়ে যাও! আমি কি দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি নই; যে আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করবে। বর্ণনাকারী বলেন: যখন লোকটি রওয়ানা করলো তখন খালিদ বিন্ ওয়ালীদ্ (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি কি তার গর্দান কেটে ফেলবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, হয়তো বা সে নামায পড়ে’’। (বুখারী ৪৩৫১)

’উমর (রাঃ) বলেন:

لَاحَظَّ فِيْ الإِسْلَامِ لِمَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ

‘‘নামায ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফির’’। (বায়হাকী, হাদীস ১৫৫৯, ৬২৯১)

‘আলী (রাঃ) বলেন:

مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَهُوَ كَافِرٌ

‘‘যে নামায পড়ে না সে কাফির’’। (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)

আব্দুল্লাহ বিন্ মাসঊদ (রাঃ) বলেন:

مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَلَا دِيْنَ لَهُ

‘‘যে নামায পড়ে না সে মোসলমান নয়’’। (বায়হাকী, হাদীস ৬২৯১)

আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক তাবেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

كَاْنَ أَصْحَابُ النَّبِىِّ  لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنْ الَاعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ.

‘‘সাহাবায়ে কেরাম নামায ছাড়া অন্য কোন আমল পরিত্যাগ করাকে কুফুরী মনে করতেন না’’। (তিরমিযী ২৬২২)

 ১২. ফরয হওয়া সত্ত্বেও যাকাত আদায় না করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর উপর যাকাত ফরয হওয়া সত্ত্বেও যাকাত আদায় না করা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَآ آتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّـهُمْ، بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّـهُمْ، سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلِلهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ»

‘‘যাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলা অনুগ্রহ করে কিছু সম্পদ দিয়েছেন; অথচ তারা উহার কিয়দংশও আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করতে কার্পণ্য করে তারা যেন এ কথা মনে না করে যে, তাদের এ কৃপণতা তাদের কোন উপকারে আসবে। বরং এ কৃপণতা তাদের জন্য সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনবে। তারা যে সম্পদ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করতে কৃপণতা করেছে তা কিয়ামতের দিন তাদের কণ্ঠাভরণ হবে। একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের স্বত্বাধিকারী এবং তোমরা যা করছো তা আল্লাহ্ তা‘আলা ভালোভাবেই জানেন’’। (আ’লি ইমরান : ১৮০)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوْبُهُمْ وَظُهُوْرُهُمْ، هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوْقُوْا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُوْنَ»

‘‘যারা স্বর্ণ-রুপা সংরক্ষণ করে এবং তা আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় একটুও ব্যয় করেনা তথা যাকাত দেয়না আপনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে কঠিন শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন যে দিন জাহান্নামের আগুনে ওগুলোকে উত্তপ্ত করে তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে: এ হচ্ছে ওসম্পদ যা তোমরা নিজের জন্যে সংরক্ষণ করেছিলে। সুতরাং তোমরা এখন নিজ সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ করো’’। (তাওবাহ্ : ৩৪-৩৫)

যাকাত আদায় না করা মুশ্রিকদের একটি বিশেষ চরিত্রও বটে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ، الَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ، وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُوْنَ»

‘‘ওয়াইল্ নামক জাহান্নাম এমন মুশ্রিকদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না এবং যারা আখিরাতে অবিশ্বাসী’’। (হা’ মীম আস্সাজদাহ্/ ফুস্সিলাত : ৬-৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّيْ مِنْهَا حَقَّهَا، إِلاَّ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْـهَا فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِيْنُهُ وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيْدَتْ لَهُ، فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيْلَهُ، إِمَّا إِلَى الْـجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ.

‘‘কোন স্বর্ণ ও রুপার মালিক যদি উহার যাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের পাত তৈরি করা হবে এবং তা জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালিয়ে উত্তপ্ত করে তার পার্শ্বদেশ, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে তা আবার গরম করে দেয়া হবে। এমন দিনে যে দিন দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যখন সকল মানুষের ফায়সালা শেষ হবে তখন সে জান্নাতে যাবে বা জাহান্নামে’’। (মুসলিম ৯৮৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَاهُ اللهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيْبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِيْ بِشِدْقَيْهِ، ثُمَّ يَقُوْلُ: أَنَا مَالُكَ، أَنَا كَنْزُكَ، ثُمَّ تَلَا آيَةَ آلِ عِمْرَانَ.

‘‘যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা ধন-সম্পদ দিয়েছেন। অথচ সে উহার যাকাত আদায় করেনি তখন তার সমূহ ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন মাথায় চুল বিহীন একটি সাপের রূপ দেয়া হবে। যার উভয় চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে। যা তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পাশ দংশন করতে থাকবে এবং বলবে: আমি তোমার সম্পদ। আমি তোমার ধনভান্ডার। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ আ’লি ইমরানের আয়াতটি তিলাওয়াত করেন’’। (বুখারী ১৪০৩)

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ صَاحِبِ إِبِلٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهَا حَقَّهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَـةِ أَكْثَرَ مَا كَانَتْ قَطُّ، وَقَعَدَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، تَسْتَنُّ عَلَيْهِ بَقَوَائِمِهَا وَأَخْفَافِهَا، وَلَا صَاحِبِ بَقَرٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهَا حَقَّهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرَ مَا كَانَتْ، وَقَعَدَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، تَنْطَحُهُ بِقُرُوْنِهَا وَتَطَؤُهُ بِقَوَائِمِهَا، وَلَا صَاحِبِ غَنَمٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهَا حَقَّهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَـرَ مَا كَانَتْ، وَقَعَدَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، تَنْطَحُهُ بِقُرُوْنِـهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا، لَيْسَ فِيْهَا جَمَّاءُ وَلَا مُنْكَسِرٌ قَرْنُهَا، وَلَا صَاحِبِ كَنْـزٍ لَا يَفْعَلُ فِيْهِ حَقَّهُ، إِلاَّ جَاءَ كَنْزُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، يَتْبَعُهُ فَاتِحًا فَاهُ، فَإِذَا أَتَاهُ فَرَّ مِنْهُ، فَيُنَادِيْهِ: خُذْ كَنْزَكَ الَّذِيْ خَبَأْتَهُ، فَأَنَا عَنْهُ غَنِيٌّ، فَإِذَا رَأَى أَنْ لَا بُدَّ مِنْـهُ، سَلَكَ يَدَهُ فِيْ فِيْهِ، فَيَقْضَمُهَا قَضْمَ الْفَحْلِ.

‘‘কোন উটের মালিক উটের অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে তার নিকট উপস্থিত হবে এবং সে এক প্রশস্ত ভূমিতে তাদের অপেক্ষায় থাকবে। উটগুলো তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে। কোন গরুর মালিক গরুর অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে তার নিকট উপস্থিত হবে এবং সে এক প্রশস্ত ভূমিতে তাদের অপেক্ষায় থাকবে। গরুগুলো তাকে শিং দিয়ে গুঁতো মারবে এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে। কোন ছাগলের মালিক ছাগলের অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে তার নিকট উপস্থিত হবে এবং সে এক প্রশস্ত ভূমিতে তাদের অপেক্ষায় থাকবে। ছাগলগুলো তাকে শিং দিয়ে গুঁতো মারবে এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে যাবে। সেগুলোর মধ্যে কোন একটি এমন হবে না যে তার কোন শিং নেই অথবা থাকলেও তার শিং ভাঙ্গা। কোন সংরক্ষিত সম্পদের মালিক উক্ত সম্পদের অধিকার তথা যাকাত আদায় না করলে তা কিয়ামতের দিন মাথায় চুল বিহীন একটি সাপের রূপ ধারণ করবে। সাপটি মুখ খোলা অবস্থায় তার পিছু নিবে এবং তার নিকট পৌঁছুতেই লোকটি তা থেকে পালাতে শুরু করবে। তখন সাপটি তাকে ডেকে বলবে: নাও তোমার সম্পদ যা তুমি লুকিয়ে রেখেছিলে। তাতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। লোকটি যখন দেখবে আর কোন গত্যন্তর নেই তখন সে তার হাতখানা সাপের মুখে ঢুকিয়ে দিবে। তখন সাপটি তার হাতখানা চাবাতে থাকবে এক মহা শক্তিধরের ন্যায়’’।

(মুসলিম ৯৮৮)

কোন সম্প্রদায় যাকাত দিতে অস্বীকার করলে প্রশাসন বল প্রয়োগ করে হলেও তার থেকে অবশ্যই যাকাত আদায় করে নিবে। যেমনটি আবূ বকর (রাঃ) তাঁর যুগের যাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের সাথে করেছেন। এমনকি প্রয়োজনে শাস্তি স্বরূপ তাদের থেকে যাকাতের চাইতেও বেশি সম্পদ নিতে পারে। আর তা একমাত্র প্রশাসকের বিবেচনার উপরই নির্ভরশীল।

আবূ বকর (রাঃ) ইরশাদ করেন:

وَاللهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ، فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْـمَالِ، وَاللهِ لَوْ مَنَعُوْنِيْ عَنَاقًا كَانُوْا يُؤَدُّوْنَهَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ  لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا.

‘‘আল্লাহ্’র কসম! অবশ্যই আমি যুদ্ধ করবো ওদের সঙ্গে যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। তারা নামায পড়ে ঠিকই তবে যাকাত দিতে অস্বীকার করে। অথচ যাকাত হচ্ছে সম্পদের অধিকার। আল্লাহ্’র কসম! তারা যদি আমাকে ছাগলের একটি ছোট বাচ্চা (অন্য বর্ণনায় রশি) দিতেও অস্বীকার করে যা তারা দিয়েছিলো আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা হলেও আমি তাদের সাথে তা না দেয়ার দরুন যুদ্ধ করবো’’। (বুখারী ৬৯২৪, ৬৯২৫)

মু‘আবিয়া বিন্ হাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের যাকাত সম্পর্কে বলেন:

وَمَنْ مَنَعَهَا فَإِنَّا آخِذُوْهَا وَشَطْرَ مَالِهِ عَزْمَةً مِنْ عَزَمَاتِ رَبِّنَا عَزَّ وَجَلَّ.

‘‘যে ব্যক্তি যাকাতের উটটি দিতে অস্বীকার করবে আমি তো তা নেবোই বরং তার সম্পদের অর্ধেকও নিয়ে নেবো আমার মহান প্রভুর অধিকার হিসেবে’’। (আবূ দাউদ ১৫৭৫)

 ১৩. কোন ওযর ছাড়াই রমযানের রোযা না রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরীয়ত সম্মত কোন অসুবিধে না থাকা সত্ত্বেও রমযানের রোযা না রাখা একটি মারাত্মক অপরাধ।

আবূ উমামাহ্ বা’হিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أَتَانِيْ رَجُلَانِ فَأَخَذَا بِضَبْعِيْ، فَأَتَيَا بِيْ جَبَلًا وَعِرًا، فَقَالَا: اصْعَدْ، فَقُلْتُ: إِنِّيْ لَا أُطِيْقُهُ، فَقَالَا: سَنُسَهِّلُهُ لَكَ، فَصَعَدْتُ، حَتَّى إِذَا كُنْتُ فِيْ سَوَادِ الْجَبَلِ إِذَا بِأَصْوَاتٍ شَدِيْدَةٍ، قُلْتُ: مَا هَذِهِ الْأَصْوَاتُ؟ قَالُوْا: هَذَا عُوَاءُ أَهْلِ النَّارِ، ثُمَّ انْطَلَقَا بِيْ، فَإِذَا أَنَا بِقَوْمٍ مُعَلَّقِيْنَ بِعَرَاقِيْبِهِمْ، مُشَقَّقَةٍ أَشْدَاقُهُمْ، تَسِيْلُ أَشْدَاقُهُمْ دَمًا، قُلْتُ: مَنْ هَؤُلَآءِ؟ قَالَ: الَّذِيْنَ يُفْطِرُوْنَ قَبْلَ تَحِلَّةِ صَوْمِهِمْ.

‘‘আমি একদা ঘুমুচ্ছিলাম। এমতাবস্থায় দু’ ব্যক্তি এসে আমার বাহু ধরে এক দুরতিক্রম্য পাহাড়ে নিয়ে গেলো। তারা আমাকে বললো: পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম: আমি উঠতে পারবো না। তারা বললো: আমরা পাহাড়টিকে আপনার আরোহণযোগ্য করে দিচ্ছি। অতঃপর আমি পাহাড়টিতে উঠলাম। যখন আমি পাহাড়টির চূড়ায় উঠলাম তখন খুব চিৎকার শুনতে পেলাম। তখন আমি তাদেরকে বললাম: এ চিৎকার কিসের? তারা বললো: এ চিৎকার জাহান্নামীদের। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে সামনে এগুলো। দেখতে পেলাম, কিছু সংখ্যক লোককে পায়ের গোড়ালির মোটা রগে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হলো। তাদের মুখ চিরে দেওয়া হয়েছে। তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম: এরা কারা? তারা বললো: এরা ওরা যারা ইফতারের পূর্বে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে’’। (নাসায়ী/কুবরা, হাদীস ৩২৮৬)

 ১৪. ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা একটি মারাত্মক অপরাধ।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلِلهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا، وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَـمِيْنَ»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই উক্ত ঘরের হজ্জ করা ওদের উপর বাধ্যতামূলক যারা এ ঘরে পৌঁছুতে সক্ষম। যে ব্যক্তি (হজ্জ না করে) আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কুফরি করলো তার জানা উচিৎ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব জগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী’’। (আ’লি ইমরান : ৯৭)

’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ رِجَالًا إِلَى هَذِهِ الْأَمْصَارِ فَيَنْظُرُوْا كُلَّ مَنْ كَانَ لَهُ جِدَةٌ وَلَـمْ يَحُجَّ لِيَضْرِبُوْا عَلَيْهِمُ الْـجِزْيَةَ، مَا هُمْ بِمُسْلِمِيْنَ، مَا هُمْ بِمُسْلِمِيْنَ.

‘‘আমার ইচ্ছে হয় যে, আমি কতেক ব্যক্তিকে শহরগুলোতে পাঠাবো। অতঃপর যাদের সম্পদ রয়েছে অথচ হজ্জ করেনি তাদের উপর কর বসিয়ে দিবে। তারা মুসলিম নয়। তারা মুসলিম নয়’’।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَنْ قَدَرَ عَلَى الْـحَجِّ فَتَرَكَهُ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَّمُوْتَ يَهُوْدِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا.

‘‘যে ব্যক্তি হজ্জ করতে সক্ষম অথচ হজ্জ করেনি। সে ইহুদী হয়ে মরুক বা খ্রিস্টান হয়ে তাতে কিছু আসে যায় না’’।

 ১৫. আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করা একটি মারাত্মক অপরাধ। তম্মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করা সর্বোচ্চ অপরাধ। চাই তা জেনে হোক অথবা না জেনে। চাই তা তাঁর নাম, কাম বা গুণাবলীতে হোক অথবা তাঁর শরীয়তে। আল্লাহ্ তা‘আলাকে এমন গুণে গুণান্বিত করা যে গুণ না তিনি নিজে তাঁর জন্য চয়ন করেছেন না তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সম্পর্কে কাউকে সংবাদ দিয়েছেন। বরং তা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনার বিপরীত। এর অবস্থান শির্কের পরপরই। আবার কখনো কখনো তা শির্ক চাইতেও মারাত্মক রূপ ধারণ করে যখন তা জেনে শুনে হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللهِ كَذِبًا لِيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ، إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ الْقَوْمَ الظَّالِـمِيْنَ»

‘‘যে ব্যক্তি না জেনেশুনে আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদেরকে কখনো সুপথ দেখান না’’।

(আন্‘আম : ১৪৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللهِ كَذِبًا، أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ، إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ»

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে এবং তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? বস্ত্তত যালিমরা কখনো সফলকাম হতে পারে না’’। (আন্‘আম : ২১)

তিনি আরো বলেন:

«وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوْحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوْحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ، وَمَنْ قَالَ سَأُنْزِلُ مِثْلَ مَآ أَنْزَلَ اللهُ، وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ غَمَرَاتِ الْـمَوْتِ وَالْمَلَآئِكَةُ بَاسِطُوْا أَيْدِيْهِمْ، أَخْرِجُوْا أَنْفُسَكُمْ، الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْـهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ غَيْرَ الْـحَقِّ، وَكُنْتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُوْنَ»

‘‘ওব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী আর কে হতে পারে? যে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করে অথবা বলে: আমার নিকট ওহী পাঠানো হয়; অথচ তার নিকট কোন ওহী পাঠানো হয়নি। আরো বলে: আল্লাহ্ তা‘আলা যেরূপ (তাঁর আয়াতসমূহ) অবতীর্ণ করেন আমিও সেরূপ অবতীর্ণ করি। আর যদি তুমি দেখতে পেতে সে মৃত্যু সময়কার কঠিন অবস্থা যার সম্মুখীন হচ্ছে যালিমরা তখন সত্যিই ভয়ানক অবস্থাই দেখতে পেতে। তখন ফিরিশ্তারা তাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে বলবে: তোমাদের জীবনপ্রাণ বের করে দাও। আজ তোমাদেরকে লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেয়া হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর অবৈধভাবে মিথ্যারোপ করতে এবং অহঙ্কার করে তাঁর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করতে’’।

(আন্‘আম : ৯৩)

তিনি আরো বলেন:

«وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِيْنَ كَذَبُوْا عَلَى اللهِ وُجُوْهُهُمْ مُسْوَدَّةٌ، أَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ»

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে আপনি কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো দেখবেন। উদ্ধতদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?’’ (যুমার : ৬০)

যে মুশ্রিক আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অন্যকে শরীক করে; অথচ সে আল্লাহ্ তা‘আলার সকল গুণাবলী বাস্তবে যথার্থভাবে বিশ্বাস করে সে ব্যক্তি তুলনামূলকভাবে ওব্যক্তি অপেক্ষা অনেক ভালো যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে না; অথচ সে আল্লাহ্ তা‘আলার সমূহ গুণাবলীতে যথার্থ বিশ্বাসী নয়।

যেমন: কোন ব্যক্তি কারো রাষ্ট্রক্ষমতা ও তদ্সংক্রান্ত সকল গুণাবলীতে বিশ্বাসী অথচ সে কোন কোন কাজে তার অংশীদারকেও বিশ্বাস করে এমন ব্যক্তি ওব্যক্তি অপেক্ষা অনেক ভালো যে উক্ত ব্যক্তির অংশীদার সাব্যস্ত করে না এবং তার রাষ্ট্রক্ষমতা ও তদ্সংক্রান্ত গুণাবলীতেও বিশ্বাসী নয়।

আবূ হুরাইরাহ্, মুগীরাহ্ ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ এবং আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে আমার উপর মিথ্যারোপ করলো সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিলো’’। (বুখারী ১১০, ১২৯১, ৩৪৬১, ৬১৯৭; মুসলিম ৩, ৪; তিরমিযী ২৬৫৯)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَكْذِبُوْا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ.

‘‘তোমরা কখনো আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করলো সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। (বুখারী ১০৬; মুসলিম ১)

জেনেশুনে ভুল হাদীস বর্ণনাকারীও মিথ্যুকদের অন্তর্গত।

মুগীরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ حَدَّثَ عَنِّيْ حَدِيْثًا ؛ وَهُوَ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ ؛ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِيْنَ.

‘‘যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করলো অথচ সে জানে যে, তা আমার কথা নয় বরং তা ডাহা মিথ্যা তা হলে সে মিথ্যুকদেরই একজন’’। (তিরমিযী ২৬৬২)

 ১৬. মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া একটি গুরুতর অপরাধ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْكَبَائِرُ: الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَالْيَمِيْنُ الْغُمُوْسُ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ.

‘‘কবীরা গুনাহ্গুলো হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, ইচ্ছাকৃত মিথ্যে কসম খাওয়া, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা’’। (বুখারী ৬৮৭০)

মুগীরা বিন্ শু’বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوْقَ الْأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَمَنْعًا وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন মায়ের অবাধ্যতা, জীবিত মেয়েকে দাফন করা, কারোর প্রাপ্য না দেয়া ও নিজের পাওনা নয় এমন বস্ত্ত কারোর নিকট চাওয়া। তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য অপছন্দ করেন যে কোন শুনা কথা বলা, বেশি বেশি চাওয়া ও সম্পদ বিনষ্ট করা’’। (বুখারী ২৪০৮, ৫৯৭৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنَّانٌ وَلَا عَاقٌّ وَلَا مُدْمِنُ خَمَرٍ.

‘‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা: যে ব্যক্তি কাউকে অনুগ্রহ করে পুনরায় খোঁটা দেয়, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি’’।(জা’মিউস্ সাগীর : ৬/২২৮)

তিনি আরো বলেন:

ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْـجَنَّةَ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ..

‘‘তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি’’। (জা’মিউস্ সাগীর : ৩/৬৯)

তিনি আরো বলেন:

لَا يَدْخُلُ حَائِطَ الْقُدْسِ سِكِّيْرٌ وَلَا عَاقٌّ وَلَا مَنَّانٌ.

‘‘তিন ব্যক্তি বাইতুল্ মাক্বদিসে প্রবেশ করতে পারবেনা: অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং যে ব্যক্তি কাউকে অনুগ্রহ করে পুনরায় খোঁটা দেয়’’। (সিল্সিলাতুল্ আহা’দীসিস্ সাহীহাহ্ : ২/২৮৯)

মাতা-পিতার অবাধ্যতার সরূপ:

মাতা-পিতার অবাধ্যতা দু’ ধরনের: হারাম ও মাকরূহ্।

ক. হারাম অবাধ্যতার দৃষ্টান্ত। যেমন:

মাতা-পিতা সন্তানের উপর কোন ব্যাপারে কসম খেয়েছেন। অথচ সে তাদের উক্ত কসমটি রক্ষা করেনি।

মাতা-পিতা সন্তানের নিকট প্রয়োজনীয় কিছু চেয়েছেন। অথচ সে তাদের উক্ত চাহিদা পূরণ করেনি।

মাতা-পিতা সন্তানের নিকট কোন কিছু আশা করেছেন। অথচ সে তাদের উক্ত আশা ভঙ্গ করেছে।

মাতা-পিতা সন্তানকে কোন কাজের আদেশ করেছেন। অথচ সে তাদের উক্ত আদেশটি মান্য করেনি।

মাতা-পিতাকে মেরে, গালি দিয়ে বা কারোর নিকট তাদের গীবত বা দোষ চর্চা করে তাদেরকে কষ্ট দেয়া সর্বোচ্চ নাফরমানি। তবে গুনাহ্’র কাজে তাদের কোন আনুগত্য করা যাবে না।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا، وَصَاحِبْهُمَا فِيْ الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا، وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ، ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ»

‘‘তোমার মাতা-পিতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করতে পীড়াপীড়ি করে যে ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান নেই তথা কুর‘আন ও হাদীসের কোন সাপোর্ট নেই তাহলে তুমি এ ব্যাপারে তাদের কোন আনুগত্য করবেনা। তবে তুমি এতদ্সত্ত্বেও দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এবং সর্বদা তুমি আমি (আল্লাহ্) অভিমুখী মানুষের পথ অনুসরণ করবে। কারণ, পরিশেষে তোমাদের সকলকে আমার নিকটই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি তোমাদের কর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই অবগত করবো’’। (লুক্বমান : ১৫)

খ. মাকরূহ্ অবাধ্যতার দৃষ্টান্ত। যেমন:

আপনার পিতা খাবার শেষ করেছেন। এখন তিনি হাত ধুতে চাচ্ছেন এবং তিনি স্বয়ং উঠে গিয়ে হাতও ধুয়েছেন। আপনি শুধু তা দেখেই আছেন। কিছুই করেননি। এতে আপনি পিতার অবাধ্য হননি।

তবে কাজটি আরো ভালো হতো যদি আপনি আপনার কাজের ছেলেকে হাত ধোয়ার পানিটুকু আপনার পিতাকে এগিয়ে দিতে বলতেন।

কাজটি আরো ভালো হতো যদি আপনি স্বয়ং উঠে গিয়ে হাত ধোয়ার পানিটুকু আপনার পিতাকে এগিয়ে দিতেন।

তবে আপনার পিতা যদি দাঁড়াতে না পারেন অথবা দাঁড়াতে কষ্ট হয় অথবা আপনার পিতা স্বয়ং আপনাকেই পানি উপস্থিত করতে আদেশ করলেন এবং আপনি আদেশটি পালন করলেন না তখন কিন্তু আপনি আপনার পিতার অবাধ্য বলে বিবেচিত হবেন।

অবাধ্যতার আরো কিছু দৃষ্টান্ত:

১. মাতা-পিতার নিকট আপনি কখনো বসছেন না। তাদের ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন না। পারিবারিক সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনাই করছেন না এবং তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে কিছু জানতেও চাচ্ছেন না।

২. তারা আপনার যে যে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন সে ব্যাপারে আপনি তাদের নিকট কোন পরামর্শও চাচ্ছেন না। কারণ, কিছু কিছু ব্যাপার তো এমনো থাকতে পারে যে তারা সে ব্যাপারে আপনাকে কোন পরামর্শ দেয়ারই যোগ্যতা রাখেন না। তখনো কিন্তু আপনি সে ব্যাপারে বিজ্ঞ লোকের পরামর্শ তাদের সম্মুখে উপস্থাপন করে তাদের মতামত চাইতে পারেন। তখন অবশ্যই তারা এ পরামর্শ সমর্থন করবেন এবং আপনার উপর সন্তুষ্ট হবেন।

৩. কোথাও যাওয়ার সময় আপনি তাদের অনুমতি চাচ্ছেন না অথবা ঘর থেকে বেরনোর সময় আপনি তাদেরকে জানিয়ে বেরুচ্ছেন না।

৪. সহজভাবে তাদের যে কোন খিদ্মত আঞ্জাম দেয়ার আপনার কোন সদিচ্ছাই নেই। অথচ এ ব্যাপারে তাদের নিকট অপারগতা প্রকাশ করতে আপনি খুবই তৎপর। আপনি কখনো এ কথা জানতে চাচ্ছেন না যে, তারা আমার এ অপারগতার কথা বিশ্বাস করছেন কি? নাকি আপনার অপারগতার কথা তারা প্রত্যাখ্যানই করছেন। নাকি তারা শুধু আপনার কথা শুনেই চুপ থাকলেন। আপনার উপর অসন্তুষ্টির কারণে পরিষ্কার কিছু বলছেননা। কারণ, আপনি মনে করছেন, তারা আমার অপারগতার কথা শুনেই আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। অথচ ব্যাপারটি অন্য রকমও হতে পারে।

৫. আপনার প্রয়োজনকেই আপনার মাতা-পিতার প্রয়োজনের উপর অগ্রাধিকার দিলেন। যেমন: আপনাকে তারা কোন কাজের আদেশ করলেন। উত্তরে আপনি বললেন: এখন আমার একটুও সময় নেই। সময় পেলেই তা করে ফেলবো।

৬. নিজকে আপনার মাতা-পিতার চাইতেও বড় মনে করলেন। তা সাধারণত হয়ে থাকে যখন আপনি সামাজিক কোন সম্মানের অধিকারী হয়ে থাকেন অথবা মাতা-পিতা অপেক্ষা আপনি বেশি নেককার। যেমন: আপনি নামায পড়ছেন অথচ আপনার মাতা-পিতা নামায পড়ছেন না। তখনই আপনার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবাধ্যতা পাওয়া যাওয়া খুবই সহজ।

৭. মাতা-পিতার মধ্যে কোন অপরাধ অবলোকন করে আপনি তাদের অবাধ্য হলেন। যেমন: আপনার মাতা-পিতা খুব কঠিন মেজাজের, অত্যন্ত কৃপণ, গোঁয়ার বা একগুঁয়ে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, শির্ক চাইতে আর বড় অপরাধ দুনিয়াতে নেই। যখন আপনার মাতা-পিতা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে আপনাকে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করতে বললেও আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার মাতা-পিতার সাথে দুনিয়াতে ভালো ব্যবহার করতে আদেশ করেছেন তখন এ ছাড়া অন্য কোন অপরাধের কারণে তাদের অবাধ্য হওয়া মারাত্মক অপরাধই বটে।

৮. দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করে আপনি তাদের সঙ্গে কোন ব্যাপারে তর্ক ধরলেন। যেমনিভাবে আপনি তর্ক ধরে থাকেন আপনার সাথী-সঙ্গীদের সাথে। কারণ, আপনি তাদের সঙ্গে কোন দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করতে আদিষ্ট নন। বরং আপনি সর্বদা তাদের সঙ্গে নম্রতা দেখাতে একান্তভাবে বাধ্য।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوْا إِلاَّ إِيَّاهُ، وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا، إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَـهُمَا أُفٍّ، وَلَا تَنْهَرْهُمَا، وَقُلْ لَـهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا، وَاخْفِضْ لَـهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ، وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا»

‘‘আপনার প্রভু এ বলে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত করবেনা এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন বা উভয়জন তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদেরকে বিরক্তি সূচক কোন শব্দ বলবেনা এবং তাদেরকে ভৎর্সনাও করবেনা। বরং তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলবে। দয়াপরবশ হয়ে তাদের প্রতি সর্বদা বিনয়ী থাকবে এবং সর্বদা তাদের জন্য এ দো‘আ করবে যে, হে আমার প্রভু! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেমনিভাবে শৈশবে তারা আমার প্রতি অশেষ দয়া করে আমাকে লালন-পালন করেছেন’’। (ইস্রা/বানী ইসরাঈল্ : ২৩-২৪)

তবে তারা আপনাকে কোন গুনাহ্’র আদেশ করলে আপনি তাদেরকে কুর‘আন ও হাদীসের বাণী শুনিয়ে সে আদেশ থেকে বিরত রাখবেন।

৯. মাতা-পিতার পারস্পরিক ঝগড়া দেখে আপনি তাদের যে কারোর পক্ষ নিয়ে অন্যজনকে কোন অপবাদ, কটু কথা বা বিরক্তি সূচক শব্দ বললেন। এমনকি তার অবাধ্য হলেন। যেমন: আপনি আপনার মাতা-পিতার মধ্যে কোন ঝগড়া হতে দেখলেন এবং আপনি বুঝতেও পারলেন যে, আপনার পিতা এ ব্যাপারে সত্যিকারই দোষী। সুতরাং আপনি এ পরিবেশে আপনার পিতাকে কোন গাল-মন্দ করতে পারেননা এবং তার সাথে কোন কঠোরতাও দেখাতে পারেননা। যাতে আপনি তার অবাধ্য বলে বিবেচিত হবেন। বরং আপনার কাজ হবে, সূক্ষ্মভাবে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়া। তবে খেয়াল রাখবেন, মীমাংসা করতে গিয়ে আপনার পিতাকে আপনি কোন বিশ্রী শব্দ বলবেন না। যাতে তিনি আপনাকে আপনার মায়ের পক্ষপাতী বলে মনে না করেন। বরং আপনি আপনার পিতার প্রতি ভালোবাসা দেখাবেন এবং তাদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। এরপরও আপনার পিতা হঠকারিতা দেখালে আপনি তাকে কটু বাক্য শুনাতে পারেন না এবং তার প্রতি কঠোরও হতে পারেন না।

১০. আপনি বিবাহ করার পর আপনার মাতা-পিতা থেকে ভিন্ন হয়ে গেলেন। আপনি মনে করছেন, আপনার মাতা-পিতার সঙ্গে আপনার মানসিকতার কোন মিল নেই। সুতরাং দূরে থাকাই ভালো অথবা আপনার স্ত্রী আপনাকে ভিন্ন হতে বাধ্য করেছে অথবা আপনি আপনার পরিবারের উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চান অথবা আপনি মনে করছেন, ঘরে এমন লোক রয়েছে যারা তাদের খিদমতের জন্য যথেষ্ট অথবা আপনি একাকী ভালো খেতে ও ভালো পরতে চান। কারণ, আপনার এমন সঙ্গতি নেই যে, আপনি আপনার মাতা-পিতাকে নিয়ে ভালো খাবেন ও ভালো পরবেন।

আপনার ধারণাগুলো সঠিক কিনা সে বিষয়ে আলোচনা না করে আমি উক্ত ব্যাপারে আপনাকে একটি মৌলিক ধারণা দিতে চাই। তা হচ্ছে এই যে, এ ব্যাপারে আপনাকে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে:

ক. তাদের থেকে ভিন্ন হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে তাদের অনুমতি চাইতে হবে। তারা আপনাকে ভিন্ন হওয়ার মৌখিক অনুমতি দিলেও আপনাকে এ ব্যাপারে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, তারা অনুমতিটুকু সুস্পষ্ট ভাষায় ও সন্তুষ্ট চিত্তে দিচ্ছেন কিনা? নাকি এমনিতেই দিচ্ছেন।

খ. তাদের খিদমতের জন্য পছন্দসই যথেষ্ট লোক থাকতে হবে। সুতরাং ঘরের মধ্যে যদি তাদের খিদমতের জন্য কোন লোক না থাকে অথবা তারা আপনার ও আপনার স্ত্রীর খিদমতের মুখাপেক্ষী হন তাহলে এমতাবস্থায় আপনার জন্য ভিন্ন হওয়া জায়িয হবে না। যদিও তারা আপনাকে এ ব্যাপারে মৌখিক অনুমতি দিয়ে থাকে। কারণ, সে অনুমতি কখনো সন্তুষ্ট চিত্তে হবে না।

গ. তাদেরকে সর্বদা প্রয়োজনীয় খরচাদি দিতে হবে। আপনি যেখানেই থাকুননা কেন।

১১. তারা আপনাকে কোন সংবাদ জিজ্ঞাসা করছেন। অথচ আপনি এ ব্যাপারে তাদেরকে কোন উত্তরই দিচ্ছেন না। যেমন: আপনি কোন ব্যাপারে খুশি হয়েছেন অথবা নাখোশ। তখন এ ব্যাপারে আপনার মাতা-পিতা জানতে চাইলেন। অথচ আপনি কিছুই বলছেননা।

১২. আপনি কারোর মাতা-পিতাকে গালি দিলেন। অতঃপর সেও আপনার মাতা-পিতাকে গালি দিয়েছে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ، قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ.

‘‘সর্ববৃহৎ অপরাধ হচ্ছে নিজ মাতা-পিতাকে লা’নত করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহ্’র রাসূল! মানুষ কিভাবে নিজ মাতা-পিতাকে লা’নত করতে পারে? তিনি বললেন: তা এভাবেই সম্ভব যে, সে কারোর মাতা-পিতাকে গালি দিলো। অতঃপর সে ব্যক্তি এর মাতা-পিতাকে গালি দিলো’’। (বুখারী ৫৯৭৩; মুসলিম ৯০)

 মাতা-পিতার অবাধ্যতার কারণসমূহ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সন্তান কখনো এমন মনে করে যে, আমার মাতা-পিতার এ আদেশটি মানার চাইতে অন্য কোন নেক আমল করা অনেক ভালো। যেমন: তার পিতা তাকে বলেছেন: অমুক বস্ত্তটি বাজার থেকে নিয়ে আসো। তখন দেখা যাচ্ছে, তার মন তা করতে চাচ্ছেনা। কারণ, সে মনে করছে, কুর‘আন হিফ্জ অথবা ধর্মীয় বিষয়ের কোন ক্লাসে বসা তার জন্য এর চাইতেও অনেক বেশি সাওয়াবের।

তার এ কথা জানা উচিৎ যে, তার নেক আমলটি তো আর জিহাদ চাইতে উত্তম নয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতা-পিতার খিদমতকে হিজ্রত ও জিহাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন:

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللهِ  فَقَالَ: أُبَايِعُكَ عَلَى الْـهِجْرَةِ وَالْـجِهَادِ، أَبْتَغِيْ الْأَجْرَ مِنَ اللهِ، قَالَ: فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَيٌّ ؟ قَالَ: نَعَمْ، بَلْ كِلَاهُمَا، قَالَ: فَتَبْتَغِيْ الْأَجْرَ مِنَ اللهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا.

‘‘আল্লাহ্’র নবীর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বললো: আমি সাওয়াবের আশায় আপনার নিকট হিজ্রত ও জিহাদের বায়‘আত করতে চাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার মাতা-পিতার কোন একজন বেঁচে আছে কি? সে বললো: জি, উভয় জনই বেঁচে আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কি সত্যিই সাওয়াব চাও? সে বললো: জি। তিনি বললেন: অতএব তুমি তোমার মাতা-পিতার নিকট চলে যাও। তাদের সঙ্গে সদাচরণ করো’’। (মুসলিম ২৫৪৯)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

سَأَلْتُ النَّبِيَّ  : أَيُّ الْعَمَـلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ قَالَ: الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: بِرُّ الْوَالِدَيْنِ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: الْـجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ.

‘‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেছি, কোন আমল আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন: সময় মতো নামায পড়া। বর্ণনাকারী বলেন: আমি বললাম: অতঃপর। তিনি বললেন: মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ। আমি বললাম: অতঃপর। তিনি বললেন: আল্লাহ্’র পথে জিহাদ করা’’। (বুখারী ৫৯৭০)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ: جِئْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْـهِجْرَةِ، وَتَرَكْتُ أَبَوَيَّ يَبْكِيَانِ، فَقَالَ: ارْجِعْ عَلَيْهِمَا ؛ فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا.

‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলের নিকট এসে বললো: আমার মাতা-পিতাকে কাঁদিয়ে আমি আপনার নিকট হিজ্রতের বায়‘আত করতে এসেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের নিকট ফিরে যাও। তাদেরকে হাসাও যেমনিভাবে তাদেরকে কাঁদিয়েছো’’। (আবূ দাউদ ২৫২৮).

মু‘আবিয়া বিন্ জা’হিমা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমার পিতা জা’হিমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন:

أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ، وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيْرُكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ : هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَالْزَمْهَا، فَإِنَّ الْـجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلَيْهَا.

’’আমি আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাচ্ছি। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার মা জীবিত আছেন? সে বললো: হাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাঁর খিদমতে লেগে যাও। কারণ, নিশ্চয়ই জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে। অর্থাৎ তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারলেই জান্নাত পাবে’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ১/৩৯৫)

২. সন্তান কোন একটি নফল নেক আমল করতে যাচ্ছে এবং তা করতে গেলে তার মাতা-পিতার খিদমতে সমস্যা দেখা দিবে সত্যিই কিংবা সে আমল করতে তাকে বহু দূর যেতে হবে। তবুও সে তা করতে গিয়ে মাতা-পিতার অনুমতি নিচ্ছে না অথবা তাদেরকে এ ব্যাপারটি জানিয়েও যাচ্ছে না। কারণ, সে মনে করছে, যে কোন নেক আমল করতে মাতা-পিতার অনুমতি নিতে হয় না। অথচ এ মানসিকতা একেবারেই ভুল। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীকে জিহাদ করার জন্য মাতা-পিতার অনুমতি নিতে আদেশ করেন। তা হলে অন্য যে কোন নফল নেক আমলের জন্য তাদের অনুমতি চাওয়া তো আবশ্যকই বটে। বিশেষ করে যখন তার অনুপস্থিতিতে তাদের খিদমতে সমস্যা দেখা দেওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে।

সুতরাং যে আমল করতে বহু দূর যেতে হয় না অথবা তা করতে গেলে মাতা-পিতার খিদমতে কোন ত্রুটি হয় না এমন আমল করার জন্য মাতা-পিতার অনুমতি আবশ্যক নয়। বরং এ সকল ক্ষেত্রে তাদের সন্তষ্টি অর্জনের জন্য তাদেরকে জানিয়ে যাবে মাত্র। অতএব সৌদী আরবে অবস্থানরত কোন প্রবাসীকে হজ্জ বা ’উমরাহ্ করার জন্য মাতা-পিতার অনুমতি নিতে হবে না।

আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

هَاجَرَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ  مِنَ الْيَمَنِ، فَقَالَ: هَلْ لَكَ أَحَدٌ بِالْيَمَنِ؟ قَالَ: أَبَوَايَ، قَالَ: أَذِنَا لَكَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: ارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَاسْتَأْذِنْهُمَا، فَإِنْ أَذِنَا لَكَ فَجَاهِدْ، وَإِلاَّ فَبِرَّهُمَا.

‘‘জনৈক ব্যক্তি ইয়েমেন থেকে হিজ্রত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়েমেনে তোমার কেউ আছে? সে বললো: সেখানে আমার মাতা-পিতা রয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তারা তোমাকে হিজ্রত করার অনুমতি দিয়েছে কি? সে বললো: না। তিনি বললেন: তুমি তাদের নিকট গিয়ে অনুমতি চাও। তারা অনুমতি দিলে যুদ্ধ করবে। নতুবা তাদের নিকট থেকেই তাদের সঙ্গে সদাচরণ করবে’’। (আবূ দাউদ ২৫৩০)

৩. সাধারণত ক্লাসের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে এ ব্যাপারে কমই নসীহত করে থাকেন। তারা এ ব্যাপারে কম গুরুত্ব দেয়ার কারণেই মাতা-পিতার অবাধ্যতা বেড়েই চলছে।

৪. অন্যন্য ব্যাপারে যেমন প্রচুর বাস্তব নমুনা পাওয়া যায় তেমনিভাবে মাতা-পিতার বাধ্যতার ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ছোটরা বড়দের কাছ থেকে এ ব্যাপারে অনুকরণীয় জ্বলন্ত আদর্শ খুঁজে না পাওয়ার দরুন হাতে-কলমে কার্যকরী শিক্ষা পাচ্ছে না।

৫. আদতেই মাতা-পিতারা নেককার সন্তানকে যে কোন কাজের জন্য বেশি বেশি আদেশ করেন। যা বদকার ছেলেকে করেন না। কিন্তু এতে করে অনেক নেককার ছেলের মধ্যে এ ভুল মনোভাব জন্ম নেয় যে, আমার মাতা-পিতা ওকে খুব ভালোবাসে। অথচ ব্যাপারটা এমন নয়। বরং তাঁরা আপনাকে বেশি ভালোবাসার দরুনই বার বার কাজের ফরমায়েশ করছেন। কারণ, তারা জানেন, আপনি ভালো হওয়ার দরুন ওদের সকল ফরমায়েশ আপনি ঠিক ঠিক মানবেন। এর বিপরীতে অন্য জন এমন নয়। তাই আপনি ওদের একমাত্র নেক সন্তান হিসেবে অন্যদের পক্ষের ঘাটতিটুকু আপনারই পূরণ করা উচিৎ।

৬. সন্তানের মধ্যে আল্লাহ্’র ভয় না থাকা অথবা মাতা-পিতার অনুগ্রহের কথা অস্বীকার করা।

৭. পিতা-মাতা সন্তানকে ছোট থেকেই এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ না দেয়া অথবা সন্তান নেককার হওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে দো‘আ না করা।

৮. পিতা-মাতা তাদের পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তবে তা তাদের সন্তান তাদের সঙ্গে দূরাচার করা জায়িয করে দেয়না। কারণ, তারা পাপ করলে আপনিও পাপ করবেন কি? আপনি তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করলে আপনার সন্তানরাও আপনার সঙ্গে তেমন আচরণ করবে।

৯. অনেক মাতা-পিতা সন্তানদেরকে কিছু দেয়ার ব্যাপারে সমতা বজায় রাখে না। যদ্দরুন যে কম পাচ্ছে সে নিজকে মাযলুম তথা অত্যাচারিত মনে করে। তখন সে মাতা-পিতার অবাধ্য হতে উদ্ধত হয়।

১০. অনেক মাতা-পিতা কোন সন্তান তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার পরও তাকে ভুল বুঝে থাকে অথবা তার উপর যুলুম করে অথবা তারা তার কাছ থেকে এমন কিছু চায় যা তার পক্ষে দেয়া সম্ভবপর নয়। এমতাবস্থায় সন্তানটি তাদের সাথে আর ভালো ব্যবহার করতে চায় না। এমন করা ঠিক নয়। বরং আপনি ধৈর্যের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়্যাতে তাদের খিদমত করে যাবেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ»

‘‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে অপরিমিত সাওয়াব দেয়া হবে’’। (যুমার : ১০)

 মাতা-পিতার অবাধ্যতার কিছু অপকার

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তির রিযিকে সংকট দেখা দেয় এবং তার জীবনে কোন বরকত হয় না।

আবূ হুরাইরাহ্ এবং আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُّبْسَطَ لَهُ فِيْ رِزْقِهِ، وَأَنْ يُّنْسَأَ لَهُ فِيْ أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি রিযিকে প্রশস্ততা ও বয়সে বরকত চায় তার উচিৎ সে যেন নিজ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে’’।

(বুখারী ২০৬৭, ৫৯৮৫, ৫৯৮৬; মুসলিম ২৫৫৭)

কারোর জন্য নিজ মাতা-পিতার চাইতেও নিকটাত্মীয় আর কে হতে পারে?

২. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :

رِضَا الرَّبِّ فِيْ رِضَا الْوَالِدَيْنِ وَسَخَطُهُ فِيْ سَخَطِهِمَا.

‘‘প্রভুর সন্তুষ্টি মাতা-পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাঁদের অসন্তুষ্টির মধ্যে’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ৩/১৭৮)

৩. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তির সন্তানও তার অবাধ্য হবে অথবা হওয়া স্বাভাবিক।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«مَنْ عَمِلَ صَالِـحًا فَلِنَفْسِهِ، وَمَنْ أَسَآءَ فَعَلَيْهَا، وَمَا رَبُّكَ بِظَلاَّمٍ لِّلْعَبِيْدِ»

‘‘যে ব্যক্তি সৎ কাজ করলো সে তা তার ভালোর জন্যই করলো। আর যে মন্দ কাজ করলো সে অবশ্যই উহার প্রতিফল ভোগ করবে। আপনার প্রভু তাঁর বান্দাহ্দের প্রতি কোন যুলুম করেন না’’। (ফুস্সিলাত/ হা’ মীম আস্ সাজ্দাহ্ : ৪৬)

৪. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি যখন তার অপরাধের কথা বুঝতে পারবে তখন সে চরমভাবে লজ্জিত হবে। তার বিবেক সর্বদা তাকে দংশন করতে থাকবে। কিন্তু তখন এ লজ্জা আর কোন কাজে আসবে না।

৫. কোন সন্তান তার মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়ার কারণে তার মাতা-পিতা তাকে কোন বদদো‘আ বা অভিশাপ দিলে তা তার সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনবে।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثُ دَعْوَاتٍ لَا تُرَدُّ: دَعْوَةُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ، وَدَعْوَةُ الصَّائِمِ، وَدَعْوَةُ الْـمُسَافِرِ.

‘‘তিনটি দো‘আ কখনো না মঞ্জুর করা হয়না: মাতা-পিতার দো‘আ তার সন্তানের জন্য, রোযাদারের দো‘আ ও মুসাফিরের দো‘আ’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ৩/৬৩)

যেমনিভাবে মাতা-পিতার দো‘আ সন্তানের কল্যাণে আসে তেমনিভাবে তাদের বদদো‘আও তার সকল অকল্যাণ ডেকে আনে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘জুরাইজ’’ নামক জনৈক ইবাদাতগুযার ব্যক্তি কোন এক গির্জায় ইবাদাত করতো। একদা তার মা তার গির্জায় এসে তাকে ডাকতে শুরু করলো। বললো: হে ‘‘জুরাইজ’’! আমি তোমার মা। তুমি আমার সাথে কথা বলো। তার মা তাকে নামায পড়তে দেখলো। তখন সে তাঁর ডাকে বললো: হে আল্লাহ্! আমার মা এবং আমার নামায! এ কথা বলেই সে নামাযে রত থাকলো। এভাবে তার মা তিন দিন তাকে ডাকলো এবং সে প্রতি দিন তাঁর সঙ্গে একই আচরণ দেখালো। তৃতীয় দিন তার মা তাকে এ বলে বদদো‘আ করলো: হে আল্লাহ্! আপনি আমার ছেলেটিকে মৃত্যু দিবেন না যতক্ষণ না সে কোন বেশ্যা মহিলার চেহারা দেখে। আল্লাহ্ তা‘আলা তার মায়ের বদদো‘আ কবুল করেন।

জনৈক মেষচারক তার গির্জায় রাত্রিযাপন করতো। একদা এক সুন্দরী মহিলা গ্রাম থেকে বের হয়ে আসলে সে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর মহিলাটি একটি ছেলে জন্ম দেয়। মহিলাটিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে: সন্তানটি ইবাদাতগুযার ব্যক্তির। এ কথা শুনে সাধারণ জনগণ কুড়াল-সাবল নিয়ে গির্জায় উপস্থিত হয়। তারা গির্জায় এসে তাকে নামায পড়তে দেখে তার সাথে কোন কথা বলেনি। বরং তারা গির্জাটি ধ্বংস করার কাজে লেগে গেলো। সে এ কান্ড দেখে গির্জা থেকে নেমে আসলো। তখন তারা তাকে বললো: কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকলে এ মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করো। ইবাদাতগুযার ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বাচ্চার মাথায় হাত রেখে বললো: তোমার পিতা কে? বাচ্চাটি বললো: মেষচারক। জনগণ তা শুনে তাকে বললো: আমরা তোমার ধ্বংসপ্রাপ্ত গির্জা সোনা-রূপা দিয়ে বানিয়ে দেবো। সে বললো: তা করতে হবে না। বরং তোমরা মাটি দিয়েই বানিয়ে দাও যেভাবে পূর্বে ছিলো। (মুসলিম ২৫৫০)

৬. মানুষ তার বদনাম করবে এবং তার দিকে সুদৃষ্টিতে তাকাবেনা।

৭. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ! مَنْ أَدْرَكَ أَحَدَ وَالِدَيْهِ فَمَاتَ، فَدَخَلَ النَّارَ، فَأَبْعَدَهُ اللهُ، قُلْ: آمِيْنُ، فَقُلْتُ: آمِيْنُ.

‘‘আমার নিকট জিব্রীল এসে বললো: হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি মাতা-পিতার কোন একজনকে জীবিত পেয়েও তাদের খিদমত করেনি। বরং তার অবাধ্য হয়েছে এবং যদ্দরুন সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে নিজ রহমত থেকে বঞ্চিত করুক। আপনি বলুন: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন। আমি বললাম: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ১/৭৮)

 ১৭. স্ত্রীর গুহ্যদ্বার ব্যবহার অথবা মাসিক অবস্থায় তার সাথে সঙ্গম করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

১৭. স্ত্রীর গুহ্যদ্বার ব্যবহার অথবা মাসিক অবস্থায় তার সাথে সঙ্গম করা:

কামোত্তেজনা প্রশমনের জন্য স্ত্রীদের মলদ্বার ব্যবহার অথবা মাসিক অবস্থায় তার সাথে সঙ্গম করা আরেকটি মারাত্মক অপরাধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কর্মকে ছোট সমকাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

هِيَ اللُّوْطِيَّةُ الصُّغْرَى، يَعْنِيْ الرَّجُلَ يَأْتِيْ اِمْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا.

‘‘সেটি হচ্ছে ছোট সমকাম। অর্থাৎ পুরুষ নিজ স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহার করা’’। (আহমাদ ৬৭০৬, ৬৯৬৭, ৬৯৬৮; বায়হাক্বী ১৩৯০০)

খুযাইমাহ্ বিন্ সা’বিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ لَا يَسْتَحْيِيْ مِنَ الْـحَقِّ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، لَا تَأْتُوْا النِّسَاءَ فِيْ أَدْبَارِهِنَّ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যটি তিন বার বলেছেন। অতএব তোমরা মহিলাদের গুহ্যদ্বার ব্যবহার করো না’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ১৯৫১ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ১৬৮১০)

আল্লাহ্ তা‘আলা মহিলাদের গুহ্যদ্বার ব্যবহারকারীর প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন না।

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ اِمْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না যে নিজ স্ত্রীর গুহ্যদ্বার ব্যবহার করে’’ (ইব্নু মাজাহ্ ১৯৫০ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ১৬৮১১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের গুহ্যদ্বার ব্যবহারকারীকে কাফির বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى النِّسَاءَ فِيْ أَعْجَازِهِنَّ فَقَدْ كَفَرَ.

‘‘যে ব্যক্তি মহিলাদের গুহ্যদ্বার ব্যবহার করলো সে যেন কুফরি করলো’’। (‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৯৫৮)

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوْ امْرَأَةً فِيْ دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ .

‘‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করলো অথবা কোন মহিলার মলদ্বার ব্যবহার করলো অথবা কোন গণককে বিশ্বাস করলো সে যেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ বিধানকে অস্বীকার করলো’’। (তিরমিযী ১৩৫ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ১৬৮০৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের মলদ্বার ব্যবহারকারীকে লা’নত দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَلْعُوْنٌ مَنْ أَتَى اِمْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا.

‘‘অভিশপ্ত সে ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহার করে’’। (আবূ দাউদ ২১৬২)

১৮. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা একটি মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের নিন্দা করেন এবং তাদেরকে লা’নত ও অভিসম্পাত দেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوْا فِيْ الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوْا أَرْحَامَكُمْ، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ»

‘‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন’’। (মুহাম্মাদ্ : ২২-২৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ بَعْدِ مِيْثَاقِهِ وَيَقْطَعُوْنَ مَآ أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُّوْصَلَ، وَيُفْسِدُوْنَ فِيْ الْأَرْضِ، أُوْلَآئِكَ لَـهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَـهُمْ سُوْءُ الدَّارِ»

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে দেয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ্ তা‘আলা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে লা’নত ও অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ আবাস’’। (রা’দ্ : ২৫)

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।

জুবায়ের বিন্ মুত্ব’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ قَاطِعٌ.

‘‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না’’।

(বুখারী ৫৯৮৪; মুসলিম ২৫৫৬; তিরমিযী ১৯০৯; আবূ দাউদ ১৬৯৬ আব্দুর্ রায্যাক, হাদীস ২০২৩৮; বায়হাক্বী ১২৯৯৭)

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْـخَمْرِ وَقَاطِعُ الرَّحِمِ وَمُصَدِّقٌ بِالسِّحْرِ.

‘‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না: অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে বিশ্বাসী’’। (আহমাদ ১৯৫৮৭; হা’কিম ৭২৩৪; ইব্নু হিববান ৫৩৪৬)

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর নেক আমল আল্লাহ্ তা‘আলা গ্রহণ করেন না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَعْمَالَ بَنِيْ آدَمَ تُعْرَضُ كُلَّ خَمِيْسٍ لَيْلَةَ الْـجُمُعَةِ، فَلَا يُقْبَلُ عَمَلُ قَاطِعِ رَحِمٍ.

‘‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না’’। (আহমাদ ১০২৭৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। উপরন্তু আখিরাতের শাস্তি তো তার জন্য প্রস্ত্তত আছেই।

আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُّعَجِّلَ اللهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوْبَةَ فِيْ الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِيْ الْآخِرَةِ مِنَ الْبَغْيِ وَقَطِيْعَةِ الرَّحِمِ.

‘‘দু’টি গুনাহ্ ছাড়া এমন কোন গুনাহ্ নেই যে গুনাহ্গারের শাস্তি আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়াতেই দিবেন এবং তা দেওয়াই উচিৎ; উপরন্তু তার জন্য আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। গুনাহ্ দু’টি হচ্ছে, অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী’’।

(আবূ দাউদ ৪৯০২; তিরমিযী ২৫১১; ইব্নু মাজাহ্ ৪২৮৬; ইব্নু হিববান ৪৫৫, ৪৫৬ বায্যার, হাদীস ৩৬৯৩; আহমাদ ২০৩৯০, ২০৩৯৬, ২০৪১৪)

কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ الْـخَلْقَ، حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْ خَلْقِهِ قَالَتِ الرَّحِمُ: هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ الْقَطِيْعَةِ، قَالَ: نَعَمْ، أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ، وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ؟ قَالَتْ: بَلَى يَا رَبِّ! قَالَ: فَهُوَ لَكِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টিকুল সৃজন শেষে আত্মীয়তার বন্ধন (দাঁড়িয়ে) বললো: এটিই হচ্ছে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন: হ্যাঁ, ঠিকই। তুমি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করবো যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে এবং আমি ওর সাথেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবো যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে। তখন সে বললো: আমি এ কথায় অবশ্যই রাজি আছি হে আমার প্রভু! তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন: তা হলে তোমার জন্য তাই হোক’’। (বুখারী ৪৮৩০, ৫৯৮৭; মুসলিম ২৫৫৪)

কেউ কেউ মনে করেন, আত্মীয়-স্বজনরা তার সাথে দুর্ব্যবহার করলে তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা জায়িয। মূলতঃ ব্যাপারটি তেমন নয়। বরং আত্মীয়রা আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করার পরও আপনি যদি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার দেখান তখনই আপনি তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেছেন বলে প্রমাণিত হবে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْـمُكَافِئِ وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِيْ إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا.

‘‘সে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে না যে কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলেই সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। বরং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী সে ব্যক্তি যে কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলেও সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে’’। (বুখারী ৫৯৯১; আবূ দাউদ ১৬৯৭; তিরমিযী ১৯০৮; বায়হাক্বী ১২৯৯৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমার এমন কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করি অথচ তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি অথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে ধৈর্যের পরিচয় দেই অথচ তারা আমার সাথে কঠোরতা দেখায়। অতএব তাদের সাথে এখন আমার করণীয় কি? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ، وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيْرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ.

‘‘তুমি যদি সত্যি কথাই বলে থাকো তা হলে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাইয়ে দিচ্ছো। আর তুমি যতদিন পর্যন্ত তাদের সাথে এমন ব্যবহার করতে থাকবে ততদিন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাদের উপর তোমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে’’। (মুসলিম ২৫৫৮)

উম্মে কুল্সূম বিন্তে ’উক্ববাহ্, ’হাকীম বিন্ ’হিযাম ও আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ الصَّدَقَةُ عَلَى ذِيْ الرَّحِمِ الْكَاشِحِ.

‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ সাদাকা হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যে আপনার শত্রু তার উপর সাদাকা করা’’।

(ইব্নু খুযাইমাহ্, হাদীস ২৩৮৬; বায়হাক্বী ১৩০০২; দা’রামী ১৬৭৯; ত্বাবারানী/কাবীর ৩১২৬, ৩৯২৩, ৪০৫১ আওসাত্ব, হাদীস ৩২৭৯; আহমাদ ১৫৩৫৫, ২৩৫৭৭)

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির ও ‘আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:

صِلْ مَنْ قَطَعَكَ، وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ، وَأَعْرِضْ عَمَّنْ ظَلَمَكَ.

‘‘আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো ওর সঙ্গে যে তোমার সঙ্গে সে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, দাও ওকে যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে এবং যালিমের পাশ কেটে যাও তথা তাকে ক্ষমা করো’’।

(আহমাদ ১৭৩৭২, ১৭৪৮৮ ’হাকিম, হাদীস ৭২৮৫; বায়হাক্বী ২০৮৮০; ত্বাবারানী/কাবীর ৭৩৯, ৭৪০ আওসাত্ব, হাদীস ৫৫৬৭)

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে রিযিক ও বয়সে বরকত আসে।

আনাস্ ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُّبْسَطَ لَهُ فِيْ رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِيْ أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিযিক ও বয়স বেড়ে যাক সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে’’।

(বুখারী ২০৬৭, ৫৯৮৫, ৫৯৮৬; মুসলিম ২৫৫৭; আবূ দাউদ ১৬৯৩)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تَعَلَّمُوْا مِنْ أَنْسَابِكُمْ مَا تَصِلُوْنَ بِهِ أَرْحَامَكُمْ ؛ فَإِنَّ صِلَةَ الرَّحِمِ مَحَبَّةٌ فِيْ الْأَهْلِ، مَثْرَاةٌ فِيْ الْـمَالِ، مَنْسَأَةٌ فِيْ الْأَثَرِ.

‘‘তোমরা নিজ বংশ সম্পর্কে ততটুকুই জানবে যাতে তোমরা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে পারো। কারণ, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে আত্মীয়-স্বজনদের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং ধন-সম্পদ ও বয়স বেড়ে যায়’’। (তিরমিযী ১৯৭৯)

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ঈমানের একটি বাহ্যিক পরিচয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন নিজ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে’’। (বুখারী ৬১৩৮)

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে জান্নাত অতি নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম অতি দূরবর্তী হয়ে যায়।

আবূ আইয়ূব আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 : إِنْ تَمَسَّكَ بِمَا أُمِرَ بِهِ دَخَلَ الْـجَنَّةَ.جَاءَ رَجُلٌ إلَى النَبِيِّ  فَقَالَ: دُلَّنِيْ عَلَى عَمَلٍ أَعْمَلُهُ يُدْنِيْنِيْ مِنَ الْـجَنَّةِ وَيُبَاعِدُنِيْ مِنَ النَّارِ، قَالَ: تَعْبُدُ اللهَ، لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيْمُ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِيْ الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ ذَا رَحِمِكَ، فَلَمَّا أَدْبَرَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন: (হে নবী!) আপনি আমাকে এমন একটি আমল বাতলিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদাত করবে; তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। নামাজ কা’য়িম করবে, যাকাত দিবে ও নিজ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করবে। লোকটি রওয়ানা করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: সে যদি আদিষ্ট বিষয়গুলো আঁকড়ে ধরে রাখে তা হলে সে জান্নাতে যাবে’’। (বুখারী ১৩৯৬, ৫৯৮২, ৫৯৮৩; মুসলিম ১৩)

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে গুনাহ্ মাফ হয়। যদিও তা বড় হোক না কেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ  فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ أَصَبْتُ ذَنْبًا عَظِيْمًا، فَهَلْ لِيْ مِنْ تَوْبَةٍ؟ قَالَ: هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: هَلْ لَكَ مِنْ خَالَةٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَبِرَّهَا.

‘‘জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি একটি বড় গুনাহ্ করে ফেলেছি। সুতরাং আমার জন্য কি তাওবাহ্ আছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেন: তোমার কি মা আছে? সে বললো: নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কি খালা আছে? সে বললো: জি হ্যাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সুতরাং তার সাথেই ভালো ব্যবহার করবে’’। (তিরমিযী ১৯০৪)

আত্মীয়-স্বজনদেরকে সাদাকা করলে দু’টি সাওয়াব পাওয়া যায়: একটি সাদাকার সাওয়াব এবং অপরটি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার।

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে সাদাকা করার উপদেশ দিলে নিজ স্বামীদেরকেও সাদাকা করা যাবে কি না সে ব্যাপারে দু’ জন মহিলা সাহাবী বিলাল (রাঃ) এর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:

لَـهُمَا أَجْرَانِ : أَجْرُ الْقَرَابَةِ وَأَجْرُ الصَّدَقَةِ.

‘‘(স্বামীদেরকে দিলেও চলবে) বরং তাতে দু’টি সাওয়াব রয়েছে: একটি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার সাওয়াব এবং আরেকটি সাদাকার সাওয়াব’’। (বুখারী ১৪৬৬; মুসলিম ১০০০)

একদা মাইমূনা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না জানিয়ে একটি বান্দি স্বাধীন করে দিলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে সম্পর্কে জানালে তিনি বলেন:

أَمَا إِنَّكِ لَوْ أَعْطَيْتِهَا أَخْوَالَكِ كَانَ أَعْظَمَ لِأَجْرِكِ.

‘‘জেনে রাখো, তুমি যদি বান্দিটিকে তোমার মামাদেরকে দিয়ে দিতে তা হলে তুমি আরো বেশি সাওয়াব পেতে’’।

(বুখারী, ২৫৯২, ২৫৯৪; মুসলিম ৯৯৯; আবূ দাউদ ১৬৯০)

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার বিশেষ গুরুত্বের কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সাহাবাদেরকে মিসরে অবস্থানরত তাঁরই আত্মীয়-স্বজনের প্রতি ভালো ব্যবহারের ওয়াসিয়ত করেন।

আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُوْنَ مِصْرَ، وَهِيَ أَرْضٌ يُسَمَّى فِيْهَا الْقِيْرَاطُ، فَإِذَا فَتَحْتُمُوْهَا فَأَحْسِنُوْا إِلَى أَهْلِهَا، فَإِنَّ لَـهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا أَوْ قَالَ: ذِمَّةً وَصِهْرًا.

‘‘তোমরা অচিরেই মিশর বিজয় করবে। যেখানে ক্বীরাতের (দিরহাম ও দীনারের অংশ বিশেষ) প্রচলন রয়েছে। যখন তোমরা তা বিজয় করবে তখন সে এলাকার অধিবাসীদের প্রতি দয়া করবে। কারণ, তাদের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি ও আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। (ইস্মা’ঈল (আঃ) এর মা হা’জার (‘আলাইহাস্ সালা’ম) সেখানকার) অথবা হয়তো বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কারণ, তাদের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি ও আমার শ্বশুর পক্ষীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। (রাসূলের স্ত্রী মা’রিয়া (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) সেখানকার)’’। (মুসলিম ২৫৪৩)

অন্ততপক্ষে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হলেও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে হবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

بُلُّوْا أَرْحَامَكُمْ وَلَوْ بِالسَّلَامِ.

‘‘অন্ততপক্ষে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হলেও তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করো’’। (বায্যার, হাদীস ১৮৭৭)

 ১৯. কোন ক্ষমতাশীল ব্যক্তির তার অধীনস্থদের উপর যুলুম করা অথবা তাদেরকে ধোঁকা দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন ক্ষমতাশীল ব্যক্তির জন্য তার অধীনস্থদের উপর যুলুম করা অথবা তাদেরকে যে কোন ব্যাপারে ধোঁকা দেয়া কখনোই জায়িয নয়। বরং তা কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। কোন ব্যক্তির জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّمَا السَّبِيْلُ عَلَى الَّذِيْنَ يَظْلِمُوْنَ النَّاسَ وَيَبْغُوْنَ فِيْ الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْـحَقِّ، أُوْلَآئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»

‘‘শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। বস্ত্তত: এদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি’’।(শূরা’ : ৪২)

জা’বির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا الظُّلْمَ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘কারোর উপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, এ অত্যাচার কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার রূপেই দেখা দিবে’’। (মুসলিম ২৫৭৮)

মা’ক্বিল বিন্ ইয়াসা’র মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيْهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوْتُ يَوْمَ يَمُوْتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ.

‘আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বান্দাহ্’র উপর সাধারণ জনগণের কোন দায়িত্বভার অর্পণ করলে অতঃপর সে তাদেরকে সে ব্যাপারে ধোঁকা দিয়ে মারা গেলে তার উপর জান্নাত হারাম করে দেন’’। (বুখারী ৭১৫১; মুসলিম ১৪২ আবূ ‘আওয়ানাহ্, হাদীস ৭০৪৫, ৭০৪৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

أَيُّمَا رَاعٍ غَشَّ رَعِيَّتَهُ فَهُوَ فِيْ النَّارِ.

‘‘যে কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার অধীনস্থ প্রজাদেরকে ধোঁকা দিলে সে জাহান্নামে যাবে’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ২৭১৩)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ أَمِيْرِ عَشَرَةٍ إِلاَّ يُؤْتَى بِهِ مَغْلُوْلَةً يَدُهُ إِلَى عُنُقِهِ، أَطْلَقَهُ عَدْلُهُ أَوْ أَوْبَقَهُ جَوْرَهُ.

‘‘কোন ব্যক্তি দশ জনের আমীর হলেও তাকে (কিয়ামতের দিন) গলায় হাত বেঁধে উপস্থিত করা হবে। তার ইনসাফ তাকে ছাড়িয়ে নিবে অথবা তার যুলুম তাকে ধ্বংস করবে’’। (আহমাদ ৯৫৭৩ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ১২৬০২ বায্যার, হাদীস ১৬৩৮, ১৬৩৯, ১৬৪০, দারিমী ২/২৪০ বায়হাক্বী ৩/১২৯)

অত্যাচারী প্রশাসক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুপারিশ পাবে না।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِيْ لَنْ تَنَالَـهُمَا شَفَاعَتِيْ : إِمَامٌ ظَلُوْمٌ غَشُوْمٌ، وَكُلُّ غَالٍ مَارِقٌ.

‘‘আমার উম্মাতের মধ্য থেকে দু’ জাতীয় মানুষই (কিয়ামতের দিন) আমার সুপারিশ পাবে না। তাদের একজন হচ্ছে বড় যালিম প্রশাসক এবং অন্যজন হচ্ছে প্রত্যেক ধর্মচ্যুত হঠকারী ব্যক্তি’’ (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ৮ হাদীস ৮০৭৯ আর্রোয়ানী, হাদীস ১১৮৬ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২১৮)

অত্যাচারী আমীরের সহযোগীরাও কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পান থেকে বঞ্চিত থাকবে।

’হুযাইফাহ্ ও জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

سَيَكُوْنُ أُمَرَاءُ فَسَقَةٌ جَوَرَةٌ، فَمَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّيْ وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَنْ يَّرِدَ عَلَيَّ الْحَوْضَ.

‘‘অচিরেই এমন আমীর আসবে যারা হবে ফাসিক ও যালিম। যারা তাদের মিথ্যাকে সত্য এবং তাদের যুলুমে সহযোগিতা করবে তারা আমার নয় আর আমিও তাদের নই। তারা কখনোই আমার হাউজে কাউসারে অবতরণ করবে না’’। (আহমাদ ৫/৩৮৪ হাদীস ১৫২৮৪ বায্যার, হাদীস ১৬০৬, ১৬০৭, ১৬০৯; হা’কিম ৪/৪২২ ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস ৩০২০)

যে আমীর ও প্রশাসকরা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চলে না এতদুপরি তারা প্রজাদের উপর যুলুম ও নির্যাতনের কারণে তাদের লা’নত ও ঘৃণার পাত্র হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সর্ব নিকৃষ্ট শাসক বলে আখ্যায়িত করেন।

আয়িয বিন্ ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الْـحُطَمَةُ.

’’যালিমই হচ্ছে সর্ব নিকৃষ্ট প্রশাসক’’। (মুসলিম ১৮৩০)

‘আউফ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

شِرَارُ أَئِمَّتِكُمْ الَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُوْنَكُمْ.

‘‘তোমাদের মধ্যকার সর্ব নিকৃষ্ট প্রশাসক হচ্ছে ওরা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা করো এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তেমনিভাবে যাদেরকে তোমরা লা’নত করো এবং তারাও তোমাদেরকে লা’নত করে’’। (মুসলিম ১৮৫৫)

যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুযায়ী বিচার করে না তাদেরকে তিনি বেকুব বলে আখ্যায়িত করেন।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ ! أَعَاذَكَ اللهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، أُمَرَاءَ يَكُوْنُوْنَ مِنْ بَعْدِيْ، لَا يَهْتَدُوْنَ بِهَدْيِيْ، وَلَا يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ.

‘‘হে কা’ব্ বিন্ ’উজ্রাহ্! আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে বেকুবদের প্রশাসন থেকে রক্ষা করুন। আমার ইন্তিকালের পরে এমন কিছু আমির আসবে যারা আমার আদর্শে আদর্শবান এবং আমার সুন্নাতের অনুসারী হবে না’’।

(আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৭১৯; আহমাদ ৩/৩২১, ৩৯৯ হাকিম ৩/৪৮০, ৪/৪২২; ইব্নু হিববান ১৭২৩, ৪৫১৪ আবূ নু‘আইম/’হিল্য়াহ্ ৮/২৪৭)

ঠিক এরই বিপরীতে ন্যায় ও ইন্সাফ প্রতিষ্ঠাকারী প্রশাসকরা আল্লাহ্ তা‘আলার ‘আর্শের নিচে ছায়া পাবে এবং নূরের মিম্বারের উপর তাদের অবস্থান হবে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ : الْإِمَامُ الْعَادِلُ.

‘‘সাত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার ‘আর্শের ছায়া পাবে যে দিন আর কোন ছায়া থাকবে না। তার মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন ইন্সাফ প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রপতি’’। (বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬; মুসলিম ১০৩১)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْـمُقْسِطِيْنَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُوْرٍ، عَنْ يَمِيْنِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِيْنٌ، الَّذِيْنَ يَعْدِلُوْنَ فِيْ حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيْهِمْ وَمَا وَلُوْا.

‘‘নিশ্চয়ই ইন্সাফ প্রতিষ্ঠাকারীরা কিয়ামতের দিন পরম দয়ালু আল্লাহ্ তা‘আলার ডানে নূরের মিম্বারের উপর অবস্থান করবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলার উভয় হাতই ডান। ইন্সাফকারী ওরা যারা বিচার কার্যে, নিজ পরিবারবর্গে ও অধীনস্থদের উপর ইন্সাফ করবে’’। (মুসলিম ১৮২৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদেরকে খুব তাড়াতাড়ি নিজ ভুল শুধরে নেয়ার জন্য কিছু সময় অবশ্যই দিয়ে থাকেন। তবে যখন তিনি তাদেরকে একবার ধরবেন তখন কিন্তু আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ لَيُمْلِيْ لِلظَّالِمِ، حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ، ثُمَّ قَرَأَ: «وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ، إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيْمٌ شَدِيْدٌ»

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমকে কিছু সময় সুযোগ দিয়ে থাকেন। তবে যখন তিনি তাকে একবার পাকড়াও করবেন তখন আর কিন্তু (শাস্তি না দিয়ে) তাকে ছাড়বেন না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন যার অর্থ: এভাবেই তিনি কোন জনপদ অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে। নি:সন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যাতনাদায়ক সুকঠিন’’। [(হূদ : ১০২ (বুখারী ৪৬৮৬; মুসলিম ২৫৮৩]

ময্লুমের বদ্দো‘আ আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই কবুল করেন। যদিও সে কাফির অথবা ফাসিক হয়ে থাকুক না কেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে ইয়ামানে পাঠানোর সময় বিদায়ী নসীহত করতে গিয়ে বলেন:

وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْـمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ.

‘‘ময্লুমের বদ্দো‘আ থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, তার বদ্দো‘আ ও আল্লাহ্ তা‘আলার মাঝে কোন পর্দা বা আড় নেই। অতএব তার বদ্দো‘আ কবুল হবেই হবে’’। (বুখারী ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭; মুসলিম ১৯; আবূ দাউদ ১৫৮৪; তিরমিযী ৬২৫; আহমাদ ২০৭১)

খুযাইমাহ্ বিন্ সা’বিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا دَعْوَةَ الْـمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهَا تُحْمَلُ عَلَى الْغَمَامِ، يَقُوْلُ اللهُ: وَعِزَّتِيْ وَجَلَالِيْ لَأَنْصُرَنَّكَ وَلَوْ بَعْدَ حِيْنٍ.

’’তোমরা ময্লুমের বদ্দো‘আ থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, তার বদ্দো‘আ মেঘমালার উপর উঠিয়ে নেয়া হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: আমার সম্মান ও মহিমার কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো যদিও তা কিছু দিন পরেই হোক না কেন’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ৪ হাদীস ৩৭১৮ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২১৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دَعْوَةُ الْـمَظْلُوْمِ مُسْتَجَابَةٌ، وَإِنْ كَانَ فَاجِرًا فَفُجُوْرُهُ عَلَى نَفْسِهِ.

‘‘ময্লুমের বদ্দো‘আ অবশ্যই গ্রহণীয়। যদি সে ফা’জির তথা গুনাহ্গার হয়ে থাকে তা হলে তার গুনাহ্ তারই ক্ষতি করবে। তবে তা তার ফরিয়াদ গ্রহণে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না’’। (আহমাদ ৮৭৮১ ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস ১১৮২)

আনাস্ বিন্ মা’লিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دَعْوَةُ الْـمَظْلُوْمِ وَإِنْ كَانَ كَافِرًا، لَيْسَ دُوْنَهَا حِجَابٌ.

‘‘ময্লুমের বদ্ দো‘আ কবুল হতে কোন বাধা নেই যদিও সে কাফির হয়ে থাকুক না কেন’’। (আহমাদ ১২৫৭১ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২৩১)

কেউ কারোর উপর কোন ধরনের যুলুম করে থাকলে তাকে আজই সে ব্যাপারে তার সাথে যে কোনভাবে মীমাংসা করে নিতে হবে। কারণ, কিয়ামতের দিন কারোর হাতে এমন কোন টাকাকড়ি থাকবে না যা দিয়ে তখন কোন মীমাংসা করা যেতে পারে। বরং তখন মীমাংসার একমাত্র মাধ্যম হবে সাওয়াব অথবা গুনাহ্। অন্যকে নিজ সাওয়াব দিয়ে দিবে নতুবা তার গুনাহ্ বহন করবে। এমনো তো হতে পারে যে, তাকে অন্যের গুনাহ্ বহন করেই জাহান্নামে যেতে হবে। আর তখনই তার মতো নি:স্ব আর কেউই থাকবে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَحَدٍ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لَا يَكُوْنَ دِيْنَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ، إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ، وَفِيْ رِوَايَةِ التِّرْمِذِيْ: رَحِمَ اللهُ عَبْدًا كَانَتْ لِأَخِيْهِ عِنْدَهُ مَظْلَمَةٌ فِيْ عِرْضٍ أَوْ مَالٍ، فَجَاءَهُ، فَاسْتَحَلَّهُ.

‘‘কারোর কাছে অন্য কারোর কোন হরণ করা অধিকার থাকলে (তা ইয্যত, সম্পদ অথবা যে কোন সম্পর্কীয় হোক না কেন) সে যেন তার সাথে আজই সে ব্যাপারে মীমাংসা করে নেয়। সে দিনের অপেক্ষা সে যেন না করে যে দিন কোন দীনার-দিরহাম তথা টাকা-পয়সা থাকবে না। সে দিন তার কোন নেক আমল থেকে থাকলে অন্যের অধিকার হরণের পরিবর্তে তার থেকে তা ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর যদি সে দিন তার কোন নেক আমল না থেকে থাকে তা হলে তার প্রতিপক্ষের গুনাহ্ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে’’। (বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪; তিরমিযী ২৪১৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَتَدْرُوْنَ مَا الْـمُفْلِسُ؟ قَالُوْا: الْـمُفْلِسُ فِيْنَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ، فَقَالَ: إِنَّ الْـمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِيْ يَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِيْ قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُّقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ، فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِيْ النَّارِ.

‘‘তোমরা কি জানো নি:স্ব কে? সাহাবারা বললেন: নি:স্ব সে ব্যক্তিই যার কোন দিরহাম তথা টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার উম্মাতের মধ্যে সে ব্যক্তিই নি:স্ব যে কিয়ামতের দিন (আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে) অনেকগুলো নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে। অথচ (হিসেব করতে গিয়ে) দেখা যাবে যে, সে অমুককে গালি দিয়েছে। অমুককে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে। অমুকের সম্পদ খেয়ে ফেলেছে। অমুকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং অমুককে মেরেছে। তখন একে তার কিছু সাওয়াব দেয়া হবে এবং ওকে আরো কিছু। এমনিভাবে যখন তার সকল সাওয়াব ও পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ এখনো তার দেনা বাকি তখন ওদের গুনাহ্সমূহ তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে জাহান্নামে দেয়া হবে’’। (মুসলিম ২৫৮১; তিরমিযী ২৪১৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَتُؤَدُّنَّ الْـحُقُوْقَ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْـجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ.

‘‘তোমরা সকলেই কিয়ামতের দিন অন্যের হৃত অধিকারসমূহ সেগুলোর অধিকারীদেরকেই পৌঁছিয়ে দিবে অবশ্যই। এমনকি সে দিন শিংবিশিষ্ট ছাগল থেকেও শিংবিহীন ছাগলের জন্য ক্বিসাস্ তথা সমপ্রতিশোধ নেয়া হবে’’। (মুসলিম ২৫৮২)

কেউ মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কারোর কোন অধিকার অবৈধভাবে হরণ করলে তাকে অবশ্যই সে জন্য জাহান্নামে যেতে হবে এবং জান্নাত হবে তার উপর হারাম।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِهِ، فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا، يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: وَإِنْ قَضِيْبًا مِنْ أَرَاكٍ.

‘‘কেউ (মিথ্যা) কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম বাধ্যতামূলক করেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। জনৈক (সাহাবী) বলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! যদিও সামান্য কোন কিছু হোক না কেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যদিও ‘‘আরাক’’ গাছের ডাল সমপরিমাণ হোক না কেন। যা মিসওয়াকের গাছ’’। (মুসলিম ১৩৭)

বিশেষ করে কেউ কারোর জমিন অবৈধভাবে হরণ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট হবেন এবং সে পরিমাণ সাত স্তর জমিন তার গলায় পরিয়ে দিবেন।

ওয়ায়িল বিন্ ’হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اقْتَطَعَ أَرْضًا ظَالِـمًا لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.

‘‘কেউ কারোর জমিন অবৈধভাবে হরণ করলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তখন তিনি তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট’’। (মুসলিম ১৩৯)

‘আ’য়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مِنْ ظَلَمَ قِيْدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرْضِيْنَ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর এক বিঘত সমপরিমাণ জমিন অবৈধভাবে হরণ করলো (কিয়ামতের দিন) তার গলায় সাত জমিন পরিয়ে দেয়া হবে’’। (বুখারী ২৪৫৩, ৩১৯৫; মুসলিম ১৬১২)

 কোন যালিমের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যা করতে হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

إِذَا أَتَيْتَ سُلْطَانًا مَهِيْبًا تَخَافُ أَنْ يَسْطُوَ بِكَ فَقُلْ: اللهُ اَكْبَرُ، اللهُ أَعَزُّ مِنْ خَلْقِهِ جَمِيْعًا، اللهُ أَعَزُّ مِمَّا أَخَافُ وَأَحْذَرُ، أَعُوْذُ بِاللهِ الَّذِيْ لَا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ، الْـمُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ أَنْ يَّقَعْنَ عَلَى الْأَرْضِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، مِنْ شَرِّ عَبْدِكَ فُلَانٍ وَجُنُوْدِهِ وَأَتْبَاعِهِ وَأَشْيَاعِهِ مِنَ الْـجِنِّ وَالْإِنْسِ، اللَّهُمَّ كُنْ لِيْ جَارًا مِنْ شَرِّهِمْ، جَلَّ ثَنَاؤُكَ، وَعَزَّ جَارُكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ ـ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ـ.

‘‘যখন তুমি ভয়ঙ্কর কোন রাষ্ট্রপতির সামনে উপস্থিত হও এবং তার যুলুম ও আক্রমণের ভয় পাও তখন উপরোক্ত দো‘আটি বলবে যার অর্থ: আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বমহান। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সকল সৃষ্টি থেকেও অধিক সম্মানী। আমি যা ভয় পাচ্ছি অথবা যে ব্যাপারে আশঙ্কা করছি এর চাইতেও আল্লাহ্ তা‘আলা অনেক ঊর্ধ্বে। আমি আল্লাহ্ তা‘আলার আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই। তিনিই সমস্ত আকাশ মন্ডলকে ধরে রেখেছেন যেন তাঁর অনুমতি ছাড়া তা ভূমন্ডলে ভেঙ্গে না পড়ে। (হে আল্লাহ্! আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি) আপনার অমুক বান্দাহ্, তার সেনাবাহিনী, অনুসারী ও অনুগামীদের অনিষ্ট থেকে। চাই তারা জিন হোক অথবা মানব। হে আল্লাহ্! আপনি তাদের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আপনি প্রশংসিত সুমহান। আপনার আশ্রয়ই বড় আশ্রয়। আপনার নাম কতই না বরকতময়। আপনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। উক্ত দো‘আটি তিন বার বলবে’’।

(ইব্নু আবী শাইবাহ্ খন্ড ৬ হাদীস ২৯১৭৭ ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১০ হাদীস ১০৫৯৯ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২৩৮)

 ২০. গর্ব, দাম্ভিকতা ও আত্মঅহঙ্কার

 শেয়ার ও অন্যান্য 

গর্ব, দাম্ভিকতা, অহঙ্কার ও অহংবোধ একটি মারাত্মক অপরাধ। যা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খুবই অপছন্দনীয় এবং যা আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ অসন্তুষ্টি ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণও বটে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْـمُسْتَكْبِرِيْنَ»

‘‘নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) অহংকারীদেরকে ভালোবাসেন না’’। (না'হল : ২৩)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ رَجُلٍ يَخْتَالُ فِيْ مِشْيَتِهِ وَيَتَعَاظَمُ فِيْ نَفْسِهِ إِلاَّ لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.

‘‘কোন ব্যক্তি গর্বভরে চলাফেরা করলে এবং যে সত্যিই আত্মম্ভরী সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা তখন তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট থাকবেন’’। (আহমাদ ৫৯৯৫ বুখারী/আল্-আদাবুল্ মুফ্রাদ্, হাদীস ৫৪৯; হা’কিম ১/৬০)

আবূ সা’ঈদ খুদ্রী ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْعِزُّ إِزَارُهُ، وَالْكِبْرِيَاءُ رِدَاؤُهُ، فَمَنْ يُنَازِعُنِيْ عَذَّبْتُهُ.

‘‘ইয্যত তাঁর (আল্লাহ্ তা‘আলার) নিম্ন বসন এবং গর্ব তাঁর চাদর। যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে আমার সাথে দ্বন্দ্ব করবে তাকে আমি শাস্তি দেবো’’। (মুসলিম ২৬২০)

মূসা (আঃ) সকল গর্বকারীদের থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার আশ্রয় কামনা করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَقَالَ مُوْسَى إِنِّيْ عُذْتُ بِرَبِّيْ وَرَبِّكُمْ مِّنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لاَّ يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْـحِسَابِ»

‘‘মূসা (আঃ) বললো: যারা হিসাব দিবসে বিশ্বাসী নয় সে সকল অহঙ্কারী ব্যক্তি থেকে আমি আমার ও তোমাদের প্রভুর আশ্রয় কামনা করছি’’। (গাফির/মু’মিন : ২৭)

সর্ব প্রথম গুনাহ্ যা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে করা হয়েছে তা হচ্ছে অহঙ্কার। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِآدَمَ فَسَجَدُوْا إِلاَّ إِبْلِيْسَ، أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ»

‘‘যখন আমি ফিরিশ্তাদেরকে বললাম: তোমরা আদমকে সিজদাহ্ করো। তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদাহ্ করলো। শুধুমাত্র সেই অহঙ্কার বশত সিজদাহ্ করতে অস্বীকার করলো। আর তখনই সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো’’। (বাক্বারাহ্ : ৩৪)

দলীল বিহীন যারা কুর‘আন ও হাদীস নিয়ে অন্যের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তারা অহঙ্কারীই বটে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِيْ آيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ، إِنْ فِيْ صُدُوْرِهِمْ إِلاَّ كِبْـرٌ، مَا هُمْ بِبَالِغِيْهِ، فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ»

‘‘যারা দলীল বিহীন আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াতসমূহ নিয়ে ঝগড়া করে তাদের অন্তরে রয়েছে শুধু অহঙ্কারই অহঙ্কার। তারা তাদের উদ্দেশ্যে কখনো সফলকাম হবে না। অতএব তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার শরণাপন্ন হও। তিনিই তো সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (গাফির/মু’মিন : ৫৬)

গর্বকারীরা সত্যিই জাহান্নামী এবং যাদেরকে নিয়ে জাহান্নাম জান্নাতের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছে।

’হা’রিসা বিন্ ওয়াহ্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ قَالُوْا: بَلَى، قَالَ: كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ.

‘‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে সংবাদ দেবো না? সাহাবারা বললেন: অবশ্যই দিবেন। তখন তিনি বলেন: জাহান্নামী হচ্ছে প্রত্যেক কঠিন প্রকৃতির ধনী কৃপণ অহঙ্কারী’’। (বুখারী ৪৯১৮, ৬০৭১, ৬৬৫৭; মুসলিম ২৮৫৩)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تَحَاجَّتِ النَّارُ وَالْـجَنَّةُ، فَقَالَتِ النَّارُ: أُوْثِرْتُ بِالْـمُتَكَبِّـرِيْنَ وَالْـمُتَجَبِّرِيْنَ، وَقَالَتِ الْـجَنَّةُ: فَمَا لِيْ لَا يَدْخُلُنِيْ إِلاَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ وَعَجَزُهُمْ.

‘‘জাহান্নাম ও জান্নাত পরস্পর তর্ক করছিলো। জাহান্নাম বললো: আমাকে দাম্ভিক ও অহঙ্কারী মানুষগুলো দেয়া হয়েছে যা তোমাকে দেয়া হয়নি। জান্নাত বললো: আমার কি দোষ যে, দুর্বল, অক্ষম ও গুরুত্বহীন মানুষগুলোই আমার ভেতর প্রবেশ করছে’’। (মুসলিম ২৮৪৬)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ، قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً، قَالَ: إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْـجَمَالَ، الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ.

‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ গর্ব থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক সাহাবী বললো: মানুষ তো চায় যে, তার কাপড় সুন্দর হোক এবং তার জুতো সুন্দর হোক (তাও কি গর্ব বলে গণ্য হবে?) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সুন্দর। অতএব তিনি সুন্দরকেই পছন্দ করেন। তবে গর্ব হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানব অবমূল্যায়ন’’। (মুসলিম ৯১)

গর্বকারীদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন মানুষের আকৃতিতেই ছোট পিপীলিকার ন্যায় উঠাবেন। তখন তাদের লাঞ্ছনার আর কোন সীমা থাকবে না।

‘আমর বিন্ শু‘আইব্ তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يُحْشَرُ الْـمُتَكَبِّرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِيْ صُوَرِ الرِّجَالِ، يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ، فَيُسَاقُوْنَ إِلَى سِجْنٍ فِيْ جَهَنَّمَ ـ يُسَمَّى بُوْلَسَ ـ تَعْلُوْهُمْ نَارُ الْأَنْيَارِ، يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ ؛ طِيْنَةِ الْـخَبَالِ.

‘‘গর্বকারীদেরকে কিয়ামতের দিন মানুষের আকৃতিতেই ছোট পিপীলিকার ন্যায় উঠানো হবে। সর্ব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদেরকে ছেয়ে যাবে। ‘‘বূলাস’’ নামক জাহান্নামের একটি জেলখানার দিকে তাদেরকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তাদের উপরে থাকবে শুধু আগুন আর আগুন এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত পান করানো হবে’’। (তিরমিযী ২৪৯২; আহমাদ ৬৬৭৭ দায়লামী, হাদীস ৮৮২১ বায্যার, হাদীস ৩৪২৯)

একদা বানী ইস্রা’ঈলের জনৈক ব্যক্তি গর্ব করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কঠিন শাস্তি দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটে যায়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِيْ فِيْ حُلَّةٍ، تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ، مُرَجِّلٌ جُمَّتَهُ، إِذْ خَسَفَ اللهُ بِهِ، فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

‘‘একদা জনৈক ব্যক্তি এক জোড়া জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে (রাস্তা দিয়ে) চলছিলো। তাকে নিয়েই তার খুব গর্ববোধ হচ্ছিলো। তার জমকালো লম্বা চুলগুলো সে খুব যত্নসহকারে আঁচড়িয়ে রেখেছিলো। হঠাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেন এবং সে কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই নিচের দিকে নামতে থাকবে’’। (বুখারী ৫৭৮৯, ৫৭৯০; মুসলিম ২০৮৮)

সালামাহ্ বিন্ আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَكَلَ رَجُلٌ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ  بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: كُلْ بِيَمِيْنِكَ، قَالَ: لَا أَسْتَطِيْعُ، قَالَ: لَا اسْتَطَعْتَ، مَا مَنَعَهُ إِلاَّ الْكِبْرُ، قَالَ: فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيْهِ.

‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাম হাতে খাচ্ছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: ডান হাতে খাও। সে বললো: আমি ডান হাতে খেতে পারবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঠিক আছে; তুমি আর পারবেও না। দম্ভের কারণেই সে তা করতে রাজি হয়নি। অতএব সে আর কখনো ডান হাত মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি’’।

(মুসলিম ২০২১ ইব্নু হিববান খন্ড ১৪ হাদীস ৬৫১২, ৬৫১৩ বাইহাক্বী, হাদীস ১৪৩৮৮ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৪৪৪৫; দা’রামী ২০৩২ আবূ ‘আওয়ানাহ্, ৮২৪৯, ৮২৫১, ৮২৫২; আহমাদ ১৬৫৪০, ১৬৫৪৬, ১৬৫৭৮ ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ৭ হাদীস ৬২৩৫, ৬২৩৬; ইব্নু ’হুমাইদ্ ৩৮৮)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা দাম্ভিকের সাথে কথা বলবেন না, তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.

‘‘তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ্ থেকেও পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি ও দাম্ভিক ফকির’’। (মুসলিম ১০৭)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ.

‘‘যে ব্যক্তি গর্ব করে নিজ নিম্ন বসন মাটিতে টেনে চলবে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’। (বুখারী ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪; মুসলিম ২০৮৫)

 ২১. মদ্য পান অথবা যে কোন মাদকদ্রব্য সেবন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মদ্য পান অথবা যে কোন নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ তথা সেবন (চাই তা খেয়ে কিংবা পান করেই হোক অথবা ঘ্রাণ নেয়া কিংবা ইন্জেকশন গ্রহণের মাধ্যমেই হোক) একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্। যার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপ ও অভিসম্পাত রয়েছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে মদ্যপান তথা যে কোন নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ অথবা সেবনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শয়তান চায় এরই মাধ্যমে মানুষে মানুষে শত্রুতা, হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহ্’র স্মরণ ও নামায থেকে মানুষকে গাফিল করতে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْـخَمْرُ وَالْـمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ، فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ، إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِيْ الْـخَمْرِ وَالْـمَيْسِرِ، وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ، فَهَلْ أَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। তা হলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?’’ (মা’য়িদাহ্ : ৯০-৯১)

উক্ত আয়াতে মদ্যপানকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, উহাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা, তা থেকে বিরত থাকার ইলাহী আদেশ, তা বর্জনে সমূহ কল্যাণ নিহিত থাকা, এরই মাধ্যমে শয়তানের মানুষে মানুষে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে গাফিল রাখার চেষ্টা এবং পরিশেষে ধমকের সুরে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ থেকে মদ্যপানের ভয়ঙ্করতার পর্যায়টি সুস্পষ্টরূপেই প্রতিভাত হয়।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَمَّا حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ مَشَى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ  بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، وَقَالُوْا: حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ وَجُعِلَتْ عِدْلًا لِلشِّرْكِ.

‘‘যখন মদ্যপান হারাম করে দেয়া হলো তখন সাহাবারা একে অপরের নিকট গিয়ে বলতে লাগলো: মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে এবং উহাকে শির্কের পাশাপাশি অবস্থানে রাখা হয়েছে’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১২ হাদীস ১২৩৯৯; হা’কিম খন্ড ৪ হাদীস ৭২২৭)

মদ বা মাদকদ্রব্য সকল অকল্যাণ ও অঘটনের মূল।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ মর্মে ওয়াসিয়াত করেন:

لَا تَشْرَبِ الْـخَمْرَ ؛ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ.

‘‘(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৪)

একদা বনী ইস্রাঈলের জনৈক রাষ্ট্রপতি সে যুগের জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তিকে চারটি কাজের যে কোন একটি করতে বাধ্য করে। কাজগুলো হলো: মদ্য পান, মানব হত্যা, ব্যভিচার ও শুকরের গোস্ত খাওয়া। এমনকি তাকে এর কোন না কোন একটি করতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। পরিশেষে উক্ত ব্যক্তি বাধ্য হয়ে মদ্য পানকেই সহজ মনে করে তা করতে রাজি হলো। যখন সে মদ্য পান করে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গেলো তখন উক্ত সকল কাজ করাই তার জন্য সহজ হয়ে গেলো।

এ কথা সবারই জানা থাকা দরকার যে, হাদীসের পরিভাষায় সকল মাদক দ্রব্যকেই ‘‘খাম্র’’ বলা হয় তথা সবই মদের অন্তর্ভুক্ত। আর মদ বলতেই তো সবই হারাম।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ.

‘‘প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই মদ বা মদ জাতীয়। আর প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই তো হারাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক মদ জাতীয় বস্ত্তই হারাম’’। (মুসলিম ২০০৩; আবূ দাউদ ৩৬৭৯; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৫০, ৩৪৫৩)

‘আয়িশা, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্, মু‘আবিয়াহ্ ও আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মধুর সুরার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:

كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ، وَبِعِبَارَةٍ أُخْرَى: كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ.

‘‘প্রত্যেক পানীয় যা নেশাকর তা সবই হারাম। অন্য শব্দে, প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই হারাম’’। (মুসলিম ২০০১; আবূ দাউদ ৩৬৮২; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৯, ৩৪৫১, ৩৪৫২, ৩৪৫৪)

তেমনিভাবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, যে বস্ত্তটি বেশি পরিমাণে সেবন করলে নেশা আসে তা সামান্য পরিমাণে সেবন করাও হারাম।

জা’বির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَا أَسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ.

‘‘প্রত্যেক নেশাকর বস্ত্তই হারাম এবং যে বস্ত্তটির বেশি পরিমাণ নেশাকর তার সামান্যটুকুও হারাম’’। (আবূ দাউদ ৩৬৮১; তিরমিযী ১৮৬৪, ১৮৬৫; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৫৫, ৩৪৫৬, ৩৪৫৭)

শুধু আঙ্গুরের মধ্যেই মদের ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা যে কোন বস্ত্ত থেকেও বানানো যেতে পারে এবং তা সবই হারাম।

নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنَ الْعِنَبِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ التَّمْرِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْعَسَلِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْبُرِّ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الشَّعِيْرِ خَمْرًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَمِنَ الزَّبِيْبِ خَمْرًا.

‘‘নিশ্চয়ই আঙ্গুর থেকে যেমন মদ হয় তেমনিভাবে খেজুর, মধু, গম এবং যব থেকেও তা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কিসমিস থেকেও মদ হয়’’। (আবূ দাউদ ৩৬৭৬; তিরমিযী ১৮৭২)

নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْـخَمْرَ مِنَ الْعَصِيْرِ، وَالزَّبِيْبِ، وَالتَّمْرِ، وَالْحِنْطَةِ، وَالشَّعِيْرِ، وَالذُّرَةِ، وَإِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ كُلِّ مُسْكِرٍ.

‘‘নিশ্চয়ই মদ যেমন যে কোন ফলের রস বিশেষভাবে আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি হয় তেমনিভাবে কিসমিস, খেজুর, গম, যব এবং ভুট্টা থেকেও তা তৈরি হয়। আর আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে প্রত্যেক নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করছি’’। (আবূ দাউদ ৩৬৭৭)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা ’উমর (রাঃ) মিম্বারে উঠে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠের পর বললেন:

نَزَلَ تَحْرِيْمُ الْـخَمْرِ وَهِيَ مِنْ خَمْسَةٍ : الْعِنَبِ وَالتَّمْرِ وَالْعَسَلِ وَالْحِنْطَةِ وَالشَّعِيْرِ، وَالْـخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ.

‘‘মদ হারাম হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তখন পাঁচটি বস্ত্ত দিয়েই মদ তৈরি হতো। আর তা হচ্ছে, আঙ্গুর, খেজুর, মধু, গম এবং যব। তবে মদ বলতে এমন সব বস্ত্তকেই বুঝানো হয় যা মানব ব্রেইনকে প্রমত্ত করে’’। (বুখারী ৪৬১৯, ৫৫৮১, ৫৫৮৮, ৫৫৮৯; মুসলিম ৩০৩২; আবূ দাউদ ৩৬৬৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশ শ্রেণীর লোককে লা’নত তথা অভিসম্পাত করেন।

আনাস্ বিন্ মালিক ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  فِيْ الْـخَمْرِ عَشْرَةً: عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْـمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالْـمُشْتَرِيَ لَهَا، وَالْـمُشْتَرَاةَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لُعِنَتِ الْـخَمْرُ بِعَيْنِهَا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لَعَنَ اللهُ الْـخَمْرَ وَشَارِبَهَا.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের ব্যাপারে দশ জন ব্যক্তিকে লা’নত বা অভিসম্পাত করেন: যে মদ বানায়, যে মূল কারিগর, যে পান করে, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নেয়া হয়, যে অন্যকে পান করায়, বিক্রেতা, যে লাভ খায়, খরিদদার এবং যার জন্য খরিদ করা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সরাসরি মদকেই অভিসম্পাত করা হয়। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ্ তা‘আলা অভিসম্পাত করেন মদ ও মদপানকারীকে ...’’। (তিরমিযী ১২৯৫; আবূ দাউদ ৩৬৭৪; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৩, ৩৪৪৪)

কেউ দুনিয়াতে মদ পান করে থাকলে আখিরাতে সে আর মদ পান করতে পারবে না। যদিও সে জান্নাতী হোক না কেন যতক্ষণ না সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে নেয়।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ فِيْ الدُّنْيَا لَمْ يَشْرَبْهَا فِيْ الْآخِرَةِ إِلاَّ أَنْ يَّتُوْبَ، وَفِيْ رِوَايَةِ الْبَيْهَقِيْ: وَإِنْ أُدْخِلَ الْـجَنَّةَ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করলো সে আর আখিরাতে মদ পান করতে পারবে না যতক্ষণ না সে খাঁটি তাওবা করে নেয়। ইমাম বায়হাক্বীর বর্ণনায় রয়েছে, যদিও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়’’। (বুখারী ৫২৫৩; মুসলিম ২০০৩; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৬ বায়হাক্বী খন্ড ৩ হাদীস ৫১৮১ খন্ড ৮ হাদীস ১৭১১৩ শু‘আবুল্ ঈমান ২/১৪৮ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৩৬১)

অভ্যস্ত মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য। সে জান্নাতে যাবে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مُدْمِنُ الْـخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ.

’’অভ্যস্ত মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৮)

আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَا أُبَالِيْ شَرِبْتُ الْـخَمْرَ أَوْ عَبَدتُّ هَذِهِ السَّارِيَةَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ.

‘‘মদ পান করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতিরেকে এ (কাঠের) খুঁটিটির ইবাদাত করার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য করি না। কারণ, উভয়টিই আমার ধারণা মতে একই পর্যায়ের অপরাধ’’। (নাসায়ী ৫১৭৩ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৩৬৫)

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ.

‘‘অভ্যস্ত মাদকসেবী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৩৯)

কোন ব্যক্তি যে কোন মাদকদ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত বা মাতাল হলে আল্লাহ্ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোন নামায কবুল করবেন না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَـلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.

‘‘কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে খাঁটি তাওবাহ্ করে নেয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারো তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবাহ্ করে নেয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারো তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবাহ্ করে নেয় তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহ্ তা‘আলার দায়িত্ব হবে কিয়ামতের দিন তাকে ‘‘রাদ্গাতুল্ খাবা’ল্’’ পান করানো। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘‘রাদ্গাতুল্ খাবা’ল্’’ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪০)

মদ্যপায়ী ব্যক্তি মদ পানের সময় ঈমানদার থাকে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ؛ وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ.

‘‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’’।

(বুখারী ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; মুসলিম ৫৭; আবূ দাউদ ৪৬৮৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০০৭)

স্বাভাবিকভাবে কোন এলাকায় মদের বহুল প্রচলন ঘটলে তখন পৃথিবীতে স্বভাবতই ভূমি ধস হবে, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি ঘটবে এবং আকাশ থেকে আল্লাহ্’র আযাব অবতীর্ণ হবে।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْـمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْـخُمُوْرُ.

‘‘এ উম্মতের মাঝে ভূমি ধস, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি এবং আকাশ থেকে আল্লাহ্’র আযাব অবতীর্ণ হবে। তখন জনৈক মুসলিম বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! সেটা আবার কখন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যখন গায়ক-গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ্য প্রচলন ঘটবে এবং মদ্য পান করা হবে’’। (তিরমিযী ২২১২)

এতদুপরি মদ পানের পাশাপাশি মদ পান করাকে হালাল মনে করা হলে সে জাতির ধ্বংস তো একেবারেই অনিবার্য।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِيْ خَمْسًا فَعَلَيْهِمُ الدَّمَارُ : إِذَا ظَهَرَ التَّلَاعُنُ، وَشَرِبُوْا الْـخُمُوْرَ، وَلَبِسُوْا الْـحَرِيْرَ، وَاتَّخَـذُوْا الْقِيَانَ، وَاكْتَفَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ.

‘‘যখন আমার উম্মত পাঁচটি বস্ত্তকে হালাল মনে করবে তখন তাদের ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য। আর তা হচ্ছে, একে অপরকে যখন প্রকাশ্যে লা’নত করবে, মদ্য পান করবে, পুরুষ হয়ে সিল্কের কাপড় পরিধান করবে, গায়িকাদেরকে সাদরে গ্রহণ করবে, (যৌন ব্যাপারে) পুরুষ পুরুষের জন্য যথেষ্ট এবং মহিলা মহিলার জন্য যথেষ্ট হবে’’। সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৩৮৬)

ফিরিশ্তারা মদ্যপায়ীর নিকটবর্তী হন না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

ثَلَاثَةٌ لَا تَقْرَبُهُمُ الْـمَلَائِكَةُ : الْـجُنُبُ وَالسَّكْرَانُ وَالْـمُتَضَمِّخُ بِالْـخَلُوْقِ.

‘‘ফিরিশ্তারা তিন ধরনের মানুষের নিকটবর্তী হন না। তারা হচ্ছে, জুনুবী ব্যক্তি (যার গোসল ফরয হয়েছে) মদ্যপায়ী এবং ‘‘খালূক্ব’’ (যাতে যা’ফ্রানের মিশ্রণ খুবই বেশি) সুগন্ধ মাখা ব্যক্তি’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তার্হীবি, হাদীস ২৩৭৪)

ঈমানদার ব্যক্তি যেমন মদ পান করতে পারে না তেমনিভাবে সে মদ পানের মজলিসেও উপস্থিত হতে পারে না।

জা’বির ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَشْرَبِ الْـخَمْرَ، مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُشْرَبُ عَلَيْهَا الْـخَمْرُ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন মদ পান না করে এবং যে মজলিসে মদ পান করা হয় সেখানেও যেন সে না বসে’’। (আহমাদ ১৪৬৯২ ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১১ হাদীস ১১৪৬২ আওসাত্ব, হাদীস ২৫১০; দা’রামী ২০৯২)

যে ব্যক্তি জান্নাতে মদ পান করতে ইচ্ছুক সে যেন দুনিয়াতে মদ পান না করে এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করেনি আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তাকে জান্নাতে মদ পান করাবেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّسْقِيَهُ اللهُ الْـخَمْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهَا فِيْ الدُّنْيَا، وَمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّكْسُوَهُ اللهُ الْـحَرِيْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهُ فِيْ الدُّنْيَا.

‘‘যার মনে চায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে আখিরাতে মদ পান করাবেন সে যেন দুনিয়াতে মদ পান করা ছেড়ে দেয় এবং যার মনে চায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে আখিরাতে সিল্কের কাপড় পরাবেন সে যেন দুনিয়াতে সিল্কের কাপড় পরা ছেড়ে দেয়’’। (ত্বাবারানী/আওসাত্ব খন্ড ৮ হাদীস ৮৮৭৯)

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَنْ تَرَكَ الْـخَمْرَ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ لَأَسْقِيَنَّهُ مِنْهُ فِيْ حَظِيْرَةِ الْقُدُسِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করেনি আমি তাকে অবশ্যই জান্নাতে মদ পান করাবো’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তার্হীবি, হাদীস ২৩৭৫)

যে ব্যক্তি প্রথম বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামায পড়তে পারলো না সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ سُكْرًا مَرَّةً وَاحِدَةً ؛ فَكَأَنَّمَا كَانَتْ لَهُ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا فَسُلِبَهَا، وَمَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ سُكْرًا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ طِيْنَةِ الْخَبَالِ، قِيْلَ: وَمَا طِيْنَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ جَهَنَّمَ.

‘‘যে ব্যক্তি প্রথম বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামায ছেড়ে দিলো সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি চতুর্থ বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামায ছেড়ে দিলো আল্লাহ্ তা‘আলার দায়িত্ব হবে তাকে ‘‘ত্বীনাতুল্ খাবাল্’’ পান করানো। জিজ্ঞাসা করা হলো: ‘‘ত্বীনাতুল্ খাবাল্’’ বলতে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত’’। (হা’কিম ৭২৩৩ বাইহাক্বী, হাদীস ১৬৯৯, ১৭১১৫ ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস ৬৩৭১; আহমাদ ৬৬৫৯)

কোন রোগের চিকিৎসা হিসেবেও মদ পান করা যাবে না।

ত্বারিক্ব বিন্ সুওয়াইদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিকিৎসার জন্য মদ তৈরি করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:

إِنَّهُ لَيْسَ بِدَوَاءٍ، وَلَكِنَّهُ دَاءٌ.

‘‘মদ তো ওষুধ নয় বরং তা রোগই বটে’’। (মুসলিম ১৯৮৪; আবূ দাউদ ৩৮৭৩)

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা হারাম বস্ত্তর মধ্যে তোমাদের জন্য কোন চিকিৎসা রাখেননি’’। (বাইহাক্বী, হাদীস ১৯৪৬৩ ইব্নু হিববান খন্ড ৪ হাদীস ১৩৯১)

নামের পরিবর্তনে কখনো কোন জিনিস হালাল হয়ে যায় না। সুতরাং নেশাকর দ্রব্য যে কোন আধুনিক নামেই সমাজে চালু হোক না কেন তা কখনো হালাল হতে পারে না। অতএব তামাক, সাদাপাতা, জর্দা, গুল, পচা তথা মদো সুপারি ইত্যাদি হারাম। কারণ, তা নেশাকর। সামান্য পরিমাণেই তা খাওয়া হোক অথবা বেশি পরিমাণে। পানের সাথেই তা খাওয়া হোক অথবা এমনিতেই চিবিয়ে চিবিয়ে। ঠোঁট ও দাঁতের মাড়ির ফাঁকেই সামান্য পরিমাণে তা রেখে দেয়া হোক অথবা তা গিলে ফেলা হোক। নেশা হিসেবেই তা ব্যবহার করা হোক অথবা অভ্যাসগতভাবে। মোটকথা, উহার সর্বপ্রকার ও সর্বপ্রকারের ব্যবহার সবই হারাম।

আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَذْهَبُ اللَّيَالِيْ وَالْأَيَّامُ حَتَّى تَشْرَبَ فِيْهَا طَائِفَةُ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ ؛ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا.

‘‘রাত-দিন যাবে না তথা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মদ পান করে। তবে তা মদের নামেই পান করবে না বরং অন্য নামে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৭)

’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَشْرَبُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ بِاسْمٍ يُسَمُّوْنَهَا إِيَّاهُ.

‘‘আমার একদল উম্মত মদ পান করবে। তবে তা নতুন নামে যা তারা তখন আবিষ্কার করবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৮)

কেউ কেউ আবার মদ পান না করলেও মদের ব্যবসার সাথে যে কোনভাবে অবশ্যই জড়িত। মদ পান না করলেও মদ বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও সিগারেট ও বিড়ি বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও তিনি সাদাপাতা, গুল ও জর্দা খাওয়ায় সরাসরি জড়িত। বরং কেউ কেউ তো কথার মোড় ঘুরিয়ে অথবা কুর‘আন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তা হালাল করতে চান। অন্যকে ধূমপান করতে নিষেধ করলেও নিজের পেটে কেজি কেজি সাদাপাতা ও জর্দা ঢুকাতে লজ্জা পান না। তাদের অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করা উচিৎ। নিজে ভালো হতে না পারলেও অন্যকে ভালো হতে সুযোগ দেয়া উচিৎ। আল্লাহ্’র লা’নতকে অবশ্যই ভয় পেতে হবে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَمَّا نَزَلَتِ الْآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ الرِّبَا ؛ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ  فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِيْ الْـخَمْرِ.

‘‘যখন সুদ সংক্রান্ত সূরাহ বাক্বারাহ্’র শেষ আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর থেকে বের হয়ে মদের ব্যবসা হারাম করে দেন’’। (আবূ দাউদ ৩৪৯০, ৩৪৯১; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْـخَمْرَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـخِنْزِيْرَ وَثَمَنَهُ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার বিক্রিমূল্যও। মৃত হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার বিক্রিমূল্যও। শূকর হারাম করে দিয়েছেন এবং উহার বিক্রিমূল্যও’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ـ ثَلَاثًا ـ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ وَفِيْ رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَةَ: فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পড়ুক ইহুদিদের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বদ্দো‘আটি তিন বার দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন। তখন তারা তা সরাসরি না খেয়ে তা বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেলো। অথচ তাদের এ কথা জানা নেই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়ের উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করে দিলে উহার বিক্রিমূল্যও হারাম করে দেন। ইব্নু মাজাহ্’র বর্ণনায় রয়েছে, যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করে দেয়া হয় তখন তারা চর্বিগুলো একত্র করে আগুনের তাপে গলিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিলো’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৫; ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৬)

মদ্যপান কিয়ামতের আলামতগুলোর অন্যতম।

আনাস্ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَّظْهَرَ الْـجَهْلُ، وَيَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتُشْرَبَ الْـخَمْرُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ، حَتَّى يَكُوْنَ لِـخَمْسِيْنَ اِمْرَأَةً قَيِّمُهُنَّ رَجُلٌ وَاحِدٌ.

‘‘কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে এও যে, মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে, জ্ঞান কমে যাবে, ব্যভিচার বেড়ে যাবে, মদ পান করা হবে, পুরুষ কমে যাবে এবং মহিলা বেড়ে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার দায়িত্বশীল শুধু একজন পুরুষই হবে’’। (বুখারী ৫৫৭৭; মুসলিম ২৬৭১)

 মাদকদ্রব্য সেবনের অপকারসমূহ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ক. নিয়মিত প্রচুর মাদকদ্রব্য সেবনে মানব মেধা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়।

খ. এরই মাধ্যমে সমাজে বহু প্রকারের খুন ও হত্যাকান্ড বিস্তার লাভ করে। তথা সামাজিক সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।

গ. এরই মাধ্যমে অনেক সতী-সাধ্বী মহিলার ইয্যত বিনষ্ট হয়। এরই সুবাদে দিন দিন সকল প্রকারের অপকর্ম, ব্যভিচার ও সমকাম বেড়েই চলছে। এমনো শুনা যায় যে, অমুক মদ্যপায়ী নেশার তাড়নায় নিজ মেয়ে, মা অথবা বোনের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। এমন অঘটন করতে তো মুসলিম দূরে থাক অনেক সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধও লজ্জা পায়।

মদ্যপায়ী ব্যক্তি কখনো কখনো নেশার তাড়নায় তার নিজ স্ত্রীকেও তালাক দিয়ে দেয়; অথচ সে তখন তা এতটুকুও অনুভবও করতে পারে না। মূলতঃ এ জাতীয় ব্যক্তির মুখে তালাক শব্দ বেশির ভাগই উচ্চারিত হতে দেখা যায়। আর এমতাবস্থায় সে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে সহবাস করার দরুন তা ব্যভিচার বলেই পরিগণিত হয়।

ঘ. এরই পেছনে কতো কতো মানব সম্পদ যে বিনষ্ট হয় তার কোন ইয়ত্তা নেই। মাদকসেবীরা কখনো কখনো এক টাকার নেশার বস্ত্ত একশ’ টাকা দিয়ে কিনতেও রাজি। তা হাতের নাগালে না পেলে তারা ভারী অস্থির হয়ে পড়ে।

ঙ. এরই মাধ্যমে কোন জাতির সার্বিক শক্তি ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হয়। কারণ, যুবকরাই তো জাতির শক্তি ও ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্য সেবনের সুবাদে বহুবিধ অঘটন ঘটিয়ে কতো যুবক যে আজ জেলহাজতে রাত পোহাচ্ছে তা আর কারোর অজানা নেই।

চ. এরই কারণে কোন জাতির অর্থনৈতিক, সামরিক ও উৎপাদন শক্তি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। কারণ, এ সকল ক্ষেত্র তো স্বভাবত যুবকদের উপরই নির্ভরশীল। ইতিহাসে প্রসিদ্ধ যে, খ্রিষ্টীয় ষোলশ’ শতাব্দীতে চাইনিজ ও জাপানীরা যখন পরস্পর যুদ্ধের সম্মুখীন হয় তখন চাইনিজরা পরাজয় বরণ করে। তারা এ পরাজয়ের খতিয়ান খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায় যে, তাদের সেনাবাহিনীর মাঝে তখন আফিমসেবীর সংখ্যা খুবই বেশি ছিলো। তাই তারা পরাজিত হয়েছে।

ছ. মাদকদ্রব্য সেবনে অনেকগুলো শারীরিক ক্ষতিও রয়েছে। তম্মধ্যে ফুসফুস প্রদাহ, বদহজমী, মাথা ব্যথা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, খিঁচুনি ইত্যাদি অন্যতম। এ ছাড়াও মাদক সেবনের দরুন আরো অনেক মানসিক ও তান্ত্রিক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যা বিস্তারিত বলার অবকাশ রাখে না।

জ. মাদকদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে হিফাযতকারী ফিরিশ্তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। কারণ, তারা এর দুর্গন্ধে কষ্ট পায় যেমনিভাবে কষ্ট পায় মানুষরা।

ঝ. মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে মাদকসেবীর কোন নেক ও দো‘আ চল্লিশ দিন পর্যন্ত কবুল করা হয় না।

ঞ. মৃত্যুর সময় মাদকসেবীর ঈমানহারা হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে।

মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হওয়ার বিশেষ কারণসমূহ:

ক. পরকালে যে সর্বকাজের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট জবাবদিহি করতে হবে সে চেতনা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া।

খ. সন্তান প্রতিপালনে মাতা-পিতার বিশেষ অবহেলা। যে বাচ্চা ছোট থেকেই গান-বাদ্য, নাটক-ছবি দেখে অভ্যস্ত তার জন্য এ ব্যাপারটি অত্যন্ত সহজ যে, সে বড় হয়ে ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, আফিমখোর ও গাঁজাখোর হবে। এমন হবেই না কেন অথচ তার হৃদয়ে কুর‘আন ও হাদীসের কোন অংশই গচ্ছিত নেই যা তাকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম হবে। কিয়ামতের দিন এ জাতীয় মাতা-পিতাকে অবশ্যই কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

গ. অধিক অবসর জীবন যাপন। কারণ, কেউ আল্লাহ্ তা‘আলার যিকির ও তাঁর আনুগত্য থেকে দূরে থাকলে এমনকি দুনিয়ার যে কোন লাভজনক কাজ থেকেও দূরে থাকলে শয়তান অবশ্যই তাকে বিপথগামী করবে।

ঘ. অসৎ সাথীবন্ধু। কারণ, অসৎ সাথীবন্ধুরা তো এটাই চাবে যে, তাদের দল আরো ভারী হোক। সবাই একই পথে চলুক। এ কথা তো সবারই মুখে মুখে রয়েছে যে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস; অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।

 মদখোরের শাস্তি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার উপর উক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে। তবে তাকে এ জন্য কখনোই হত্যা করা হবে না। যা সকল গবেষক ’উলামাদের ঐকমত্যে প্রমাণিত।

মু‘আবিয়া ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদখোর সম্পর্কে বলেন:

إِذَا سَكِرَ وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِذَا شَرِبَ الْـخَمْرَ فَاجْلِدُوْهُ، فَإِنْ عَادَ فَاجْلِدُوْهُ، فَإِنْ عَادَ فَاجْلِدُوْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيْ الرَّابِعَةِ: فَإِنْ عَادَ فَاضْرِبُوْا عُنُقَهُ.

‘‘যখন কেউ (কোন নেশাকর দ্রব্য সেবন করে) নেশাগ্রস্ত হয় অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন কেউ মদ পান করে তখন তোমরা তাকে বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থবার বললেন: আবারো নেশাগ্রস্ত হলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে’’।

(আবূ দাউদ ৪৪৮২; তিরমিযী ১৪৪৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬২০; নাসায়ী ৫৬৬১; আহমাদ ৪/৯৬)

ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ্) জাবির ও ক্বাবীস্বাহ্ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চতুর্থবার মদ পান করেছে এমন ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে মেরেছেন। তবে হত্যা করেননি।

আনাস্ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أُتِيَ بِرَجُلٍ عِنْدَ النَّبِيِّ  قَدْ شَرِبَ الْـخَمْرَ، فَجَلَدَهُ بِجَرِيْدَتَيْنِ نَحْوَ أَرْبَعِيْنَ، وَفَعَلَهُ أَبُوْ بَكْرٍ، فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ، فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنُ بْنُ عَوْفٍ: أَخَفُّ الْحُدُوْدِ ثَمَانُوْنَ، فَأَمَرَ بِهِ عُمَرُ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একদা জনৈক মদ্যপায়ীকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে পাতা বিহীন দু’টি খেজুরের ডাল দিয়ে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবূ বকর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফতকালে তাই করেছিলেন। তবে ’উমর (রাঃ) যখন খলীফা হলেন তখন তিনি সাহাবাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তখন আব্দুর রহ্মান বিন্ ‘আউফ্ (রাঃ) বললেন: সর্বনিম্ন দন্ডবিধি হচ্ছে আশিটি বেত্রাঘাত। তখন ’উমর (রাঃ) তাই বাস্তবায়নের আদেশ করেন। (বুখারী ৬৭৭৩; মুসলিম ১৭০৬; আবূ দাউদ ৪৪৭৯)

আনাস্ (রাঃ) থেকে এও বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  يَضْرِبُ فِيْ الْـخَمْرِ بِالنِّعَالِ وَالْـجَرِيْدِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্যপানের শাস্তি স্বরূপ মদ্যপায়ীকে জুতো ও খেজুরের ডাল দিয়ে পেটাতেন’’। (আবূ দাউদ ৪৪৭৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১৮)

’হুযাইন্ বিন্ মুন্যির আবূ সাসান্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি ’উস্মান (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববাহ্কেও তাঁর নিকট উপস্থিত করা হলো। সে মানুষকে ফজরের দু’ রাক‘আত্ নামায পড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলো: তোমাদেরকে আরো কয়েক রাক্‘আত্ বেশি পড়িয়ে দেবো কি? তখন দু’জন ব্যক্তি তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলো। তাদের একজন তার ব্যাপারে এ বলে সাক্ষ্য দিলো যে, সে মদ পান করেছে। অপরজন এ বলে সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে। তখন ’উস্মান (রাঃ) বললেন: সে মদ পান করেছে বলেই তো বমি করেছে? তখন তিনি ‘আলী (রাঃ) কে বললেন: হে ‘আলী! দাঁড়াও। ওকে বেত্রাঘাত করো। ‘আলী (রাঃ) তাঁর ছেলে হাসান্ (রাঃ) কে বললেন: হে হাসান! দাঁড়াও। ওকে বেত্রাঘাত করো। তখন হাসান্ (রাঃ) রাগাম্বিত স্বরে বললেন: বেত্রাঘাত সেই করুক যে উক্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তখন ‘আলী (রাঃ) ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ জা’ফর (রাঃ) কে বললেন: হে ‘আব্দুল্লাহ্! দাঁড়াও। তাকে বেত্রাঘাত করো। তখন ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বেত্রাঘাত করছিলেন আর ‘আলী (রাঃ) তা গণনা করছিলেন। চল্লিশটি বেত্রাঘাতের পর ‘আলী (রাঃ) বললেন: বেত্রাঘাত বন্ধ করো। অতঃপর তিনি বললেন:

جَلَدَ النَّبِيُّ  أَرْبَعِيْنَ، وَجَلَدَ أَبُوْ بَكْرٍ أَرْبَعِيْنَ، وَعُمَرُ ثَمَانِيْنَ، وَكُلٌّ سُنَّةٌ، وَهَذَا أَحَبُّ إِلَيَّ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবূ বকর (রাঃ) ও চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। কিন্তু ’উমর (রাঃ) আশিটি বেত্রাঘাত করেন। তবে চল্লিশটি বেত্রাঘাতই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়’’। (মুসলিম ১৭০৭; আবূ দাউদ ৪৪৮১; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১৯)

 ধূমপান

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ধূমপানও মাদকদ্রব্যের অধীন এবং তা প্রকাশ্য গুনাহ্গুলোর অন্যতম। ব্যাপারটি খুবই ভয়াবহ; তবে সে অনুযায়ী উহার প্রতি কোন গুরুত্বই দেয়া হচ্ছে না। বরং তা বিশেষ অবহেলায় পতিত। তাই ভিন্ন করে উহার অপকার ও হারাম হওয়ার কারণগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। যা নিম্নরূপ:

১. ধূমপান খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি অত্যন্ত নিকৃষ্ট বস্ত্ত। আর সকল নিকৃষ্ট বস্ত্তই তো শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَيُحِلُّ لَـهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْـخَبَائِثَ»

‘‘আরো সে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য পবিত্র ও উত্তম বস্ত্তসমূহ হালাল করে দেন এবং হারাম করেন নিকৃষ্ট ও অপবিত্র বস্ত্তসমূহ’’। (আ’রাফ : ১৫৭)

খ. ধূমপানে সম্পদের বিশেষ অপচয় হয়। আর সম্পদের অপচয় তো হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا، إِنَّ الْـمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ، وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا»

‘‘কিছুতেই সম্পদের অপব্যয় করো না। কারণ, অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ’’।

(ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ২৬-২৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَلَا تُسْرِفُوْا، إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْـمُسْرِفِيْنَ»

‘‘তবে তোমরা (পোশাক-পরিচ্ছদ ও পানাহারে) অপচয় ও অপব্যয় করো না। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা অপচয়কারীদেরকে কখনো পছন্দ করেন না’’। (আ’রাফ : ৩১)

একজন বিবেকশূন্যের হাতে নিজ সম্পদ উঠিয়ে দেয়া যদি না জায়িয ও হারাম হতে পারে এ জন্য যে, সে উক্ত সম্পদগুলো অপচয় ও অপব্যয় করবে তা হলে আপনি নিজকে বিবেকবান মনে করে নিজেই নিজ টাকাগুলো কিভাবে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে পারেন এবং তা জায়িযও হতে পারে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُؤْتُوْا السُّفَهَآءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِيْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ قِيَامًا»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জীবন নির্বাহের জন্য তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা তোমরা বেয়াকুবদের হাতে উঠিয়ে দিও না’’। (নিসা’ : ৫)

গ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আর আত্মহত্যা ও নিজ জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া মারাত্মক হারাম ও একান্ত কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا، وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَانًا وَّظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيْهِ نَارًا، وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرًا»

‘‘তোমরা নিজেদেরকে (যে কোন পন্থায়) হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল। যে ব্যক্তি সীমাতিক্রম ও অত্যাচার বশত এমন কান্ড করে বসবে তাহলে অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর এ কাজটা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষে একেবারেই সহজসাধ্য’’। (নিসা’ : ২৯-৩০)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ»

‘‘তোমরা কখনো ধ্বংসের দিকে নিজ হস্ত সম্প্রসারিত করো না’’। (বাক্বারাহ্ : ১৯৫)

ঘ. বিশ্বের সকল স্বাস্থ্যবিদদের ধারণামতে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য একান্তই ক্ষতিকর। সুতরাং আপনি এরই মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য বিনাশ করতে পারেন না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ ও ’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ.

‘‘না তুমি নিজ বা অন্যের ক্ষতি করতে পারো। আর না তোমরা পরস্পর (প্রতিশোধের ভিত্তিতে) একে অপরের ক্ষতি করতে পারো’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৩৬৯, ২৩৭০)

ঙ. ধূমপানের মাধ্যমে মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। কারণ, ধূমপায়ী যখন ধূমপান করে তখন তার আশপাশের অধূমপায়ীরা বিড়ি ও সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট পান। এমনকি নিয়মিত ধূমপায়ীরা কথা বলার সময়ও তার আশপাশের অধূমপায়ীরা কষ্ট পেয়ে থাকেন। নামায পড়ার সময় ধূমপায়ী ব্যক্তি যিকির ও দো‘আ উচ্চারণ করতে গেলে অধূমপায়ীরা তার মুখের নিকৃষ্ট দুর্গন্ধে ভীষণ কষ্ট পেয়ে থাকেন। কখনো কখনো তার জামা-কাপড় থেকেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। আর তাদেরকে কষ্ট দেয়া তো অত্যন্ত পাপের কাজ।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَّإِثْمًا مُّبِيْنًا»

‘‘যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেয় অথচ তারা কোন অপরাধ করেনি এ জাতীয় মানুষরা নিশ্চয়ই অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহ্’র বোঝা বহন করবে’’। (আহ্যাব : ৫৭)

চ. পিয়াজ ও রসুনের মতো হালাল জিনিস খেয়ে যখন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ অথচ শরীয়তে জামাতে নামায পড়ার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। কারণ, ফিরিশ্তারা তাতে খুব কষ্ট পেয়ে থাকেন তখন ধূমপান করে কেউ মসজিদে কিভাবে যেতে পারে? অথচ তা একই সঙ্গে দুর্গন্ধ ও হারাম। তাতে কি ফিরিশ্তারা কষ্ট পান না? তাতে কি মুসল্লিরা কষ্ট পায় না?

জাবির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُوْ آدَمَ.

‘‘যে ব্যক্তি পিয়াজ ও রসুন খেলো সে যেন আমার মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ, ফিরিশ্তারা এমন জিনিসে কষ্ট পায় যাতে কষ্ট পায় আদম সন্তান’’। (বুখারী ৮৫৪; মুসলিম ৫৬৪)

ছ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ ছেলে-সন্তানকে অঙ্গহানি ও ত্রুটিপূর্ণ বৃদ্ধির প্রতি ঠেলে দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণানুযায়ী নিকুটিন পুরুষের বীর্যকে বিষাক্ত করে দেয়। যদ্দরুন সন্তান প্রজন্মে বিশেষ ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি কখনো কখনো প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

জ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ ছেলে-সন্তানকে চারিত্রিক অধ:পতনের দিকে বিশেষভাবে ঠেলে দেয়া হয়। কারণ, তারা ভাগ্যক্রমে জন্মগত অঙ্গহানি থেকে বাঁচলেও পিতার ধূমপান দেখে তারা নিজেরাও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

আরবী ভাষার প্রবাদে বলা হয়:

وَمَنْ شَابَهَ أَبَاهُ فَمَا ظَلَمَ.

‘‘যে নিজের বাপের মতো হয়েছে সে কোন অপরাধ করেনি’’।

আরেক প্রবাদে বলা হয়:

وَكُلُّ قَرِيْنٍ بِالْـمُقَارِنِ يَقْتَدِيْ.

‘‘প্রত্যেক সঙ্গী তার আরেক সঙ্গীরই অনুসরণ করে। আর পিতা তো তার বাচ্ছার দীর্ঘ সময়েরই সঙ্গী’’।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَكَذَلِكَ مَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوْهَا إِنَّا وَجَدْنَآ آبَآءَنَا عَلَى أُمَّةٍ، وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ»

‘‘এভাবেই তোমার পূর্বে যখনই আমি কোন এলাকায় কোন ভীতি প্রদর্শনকারী (নবী) পাঠিয়েছি তখনই সে এলাকার ঐশ্বর্যশালীরা বলেছে, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এই একই মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি। আর আমরা তো তাদেরই পদাঙ্ক অনুসারী’’। (যুখ্রুফ : ২৩)

তিনি আরো বলেন:

«وَإِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً قَالُوْا وَجَدْنَا عَلَيْهَآ آبَآءَنَا، وَاللهُ أَمَرَنَا بِهَا، قُلْ إِنَّ اللهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ، أَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ»

‘‘যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে বসে তখন তারা বলে: আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এমনই করতে দেখেছি এবং আল্লাহ্ তা‘আলাও তো আমাদেরকে এমনই করতে আদেশ করেছেন। হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তুমি ঘোষণা করে দাও যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো অশ্লীল কাজের আদেশ করেন না। তোমরা কি আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে এমন সব কথা বলছো যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই’’। (আ’রাফ : ২৮)

ঝ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকেও বিশেষভাবে কষ্ট দেয়া হয়। কারণ, সে তো আপনার জীবন সঙ্গী। আপনার সবকিছুই তো তার সঙ্গে জড়িত। তাই সে আপনার মুখের দুর্গন্ধে কষ্ট পাবে অবশ্যই। আবার কখনো কখনো তো কোন কোন স্ত্রী অসতর্কভাবে নিজেও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন তার উপর যুলুম চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।

ঞ. ধূমপান সন্তানকে মাতা-পিতার অবাধ্য হতে সহযোগিতা করে। কারণ, ধূমপায়ী স্বভাবত নিজ মাতা-পিতা থেকে দূরে থাকতে চায়। যাতে তারা তার অভ্যাসের ব্যাপারটি আঁচ করতে না পারে। আর এভাবেই সে ধীরে ধীরে তাঁদের অবাধ্য হয়ে পড়ে।

ট. ধূমপান ধূমপায়ীর নেককার সঙ্গী একেবারেই কমিয়ে দেয়। কারণ, তারা এ জাতীয় মানুষ থেকে দূরে থাকতে চায়। এমনকি কেউ কেউ তো এ জাতীয় মানুষকে সালামও দিতে চায় না।

ঠ. ধূমপানের মাধ্যমে ইসলামের শত্রুদেরকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করা হয়। কারণ, এরই মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিন দিন বেড়ে যায় এবং তা ও তার কিয়দংশ পরবর্তীতে ইসলামেরই বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।

ড. ধূমপান ধীরে ধীরে মেধাকে বিনষ্ট করে দেয়। যা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কারণ, তা চিন্তা শক্তিকে একেবারেই দুর্বল করে দেয়। এমনকি ধীরে ধীরে তার মধ্যে মেধাশূন্যতা দেখা দেয়। স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের মাঝে একদা এক জরিপ চালিয়ে দেখা যায় যে, ধূমপায়ীরা অধূমপায়ীর তুলনায় খুবই কম মেধা সম্পন্ন এবং কোন কিছু তাড়াতাড়ি বুঝতে অক্ষম।

ঢ. ধূমপানের মাধ্যমে হৃদয়, চোখ ও দাঁতকে ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়। অথচ অন্তর মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা। চোখ হচ্ছে জীবনের প্রতি একটি জানালা। দাঁত হচ্ছে মানুষের বিশেষ এক সৌন্দর্য। ধূমপানের কারণে হৃদয়ের শিরা-উপশিরাগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং হঠাৎ রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চোখ দিয়ে এক ধরনের পানি বের হয়। চোখের পাতাগুলো জ্বলতে থাকে। কখনো কখনো চোখ ঝাপসা ও অন্ধ হয়ে যায়। দাঁতে পোকা ধরে। দাঁত হলুদবর্ণ হয়ে যায়। দাঁতের মাড়ি জ্বলতে থাকে। জিহবা ও মুখে ঘা ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। ঠোঁট বিবর্ণ হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

ণ. ধূমপান ধূমপায়ীকে তার বাধ্য গোলাম বানিয়ে রাখে। নেশা ধরলেই উহার আয়োজন করতেই হবে। নতুবা সে অন্তরে এক ধরনের সঙ্কীর্ণতা ও অস্থিরতা অনুভব করবে। পুরো দুনিয়াই তার নিকট অন্ধকার মনে হবে। আর এ কথা সবারই জানা যে, একজনের গোলামীতেই শান্তি; অনেকের গোলামীতে নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ أَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ»

‘‘অনেকগুলো প্রভু ভালো না কি এমন আল্লাহ্ যিনি একক পরাক্রমশালী’’। (ইউসুফ : ৩৯)

ত. ধূমপায়ীর নিকট যে কোন ইবাদাত ভারী মনে হয়। বিশেষ করে রোযা। কারণ, সে রোযা থাকাবস্থায় আর ধূমপান করতে পারে না। গরম মৌসুমে তো দিন বড় হয়ে যায়। তখন তার অস্থিরতার আর কোন সীমা থাকে না। তেমনিভাবে হজ্জও তাকে বিশেষভাবে বিব্রত করে।

থ. এ ছাড়াও ধূমপানের কারণে অনেক ধরনের ক্যান্সার জন্ম নেয়। তম্মধ্যে ফুসফুস, গলা, ঠোঁট, খাদ্য নালী, শ্বাস নালী, জিহবা, মুখ, মূত্রথলি, কিডনী ইত্যাদির ক্যান্সার অন্যতম।

এ ছাড়াও ধূমপানের সমস্যাগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে পানাহারে রুচিহীনতা, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মাথা ব্যথা, শ্রবণ শক্তিতে দুর্বলতা, হঠাৎ মৃত্যু, যক্ষ্মা, বদ্হজমী, পাকস্থলীতে ঘা, কলিজায় ছিদ্র ও সম্পূর্ণরূপে উহার বিনাশ, শারীরিক শীর্ণতা, বক্ষ ব্যাধি, অত্যধিক কফ ও কাশি, স্নায়ুর দুর্বলতা, চেহারার লাবণ্য বিনষ্ট হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

 ধূমপান সংক্রান্ত আরো কিছু কথা:

 শেয়ার ও অন্যান্য 

# আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৮৩ সনের রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে সিগারেট কেনার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় উহার দুই তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা অবশ্যই সম্ভবপর হবে।

# আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়, ধূমপানের অপকারিতায় বছরে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৩ লাখ ৪৬ হাজার ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে। তেমনিভাবে চীনে ১ লাখ ৪০ হাজার, ব্রিটেনে ৫৫ হাজার, সুইডেনে আট হাজার এবং পুরো বিশ্বে ২৫ লাখ ব্যক্তি প্রতি বছর মৃত্যু বরণ করে।

# চীনের সাঙ্গাহাই শহরের এক মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, সেখানকার ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৬০ জনের ৯০ ভাগই ধূমপায়ী।

# আরেক রিপোর্টে বলা হয়, ধূমপানের অপকারিতায় মৃত্যুর হার দুর্ঘটনা ও যুদ্ধ ক্ষেত্রের মৃত্যুর হারের চাইতেও অনেক বেশি।

# ৪৬ বছর ও ততোধিক বয়সের লোকদের মধ্যে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর হার অধূমপায়ীদের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি।

# ধূমপান হচ্ছে পদস্খলনের প্রথম কারণ।

# কেউ দৈনিক ২০ টি সিগারেট পান করলে তার শরীরে শতকরা পনেরো ভাগ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়।

# ধূমপানের অপকারিতায় ব্রিটেনে দৈনিক ৪৪ ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে।

# বিড়ি ও সিগারেটের শেষাংশ প্রথমাংশের তুলনায় আরো বেশি ক্ষতিকর।

# লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে এই যে, চতুষ্পদ জন্তুর সামনে তামাক রাখা হলে ওরা তা খেতে চায় না; অথচ মানুষ খুব সহজভাবেই তা দৈনিক প্রচুর পরিমাণে গলাধ:করণ করে যাচ্ছে।

 ধূমপানের কাল্পনিক উপকারসমূহ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ধূমপায়ীরা নিজেদের দোষকে ঢাকা দেয়ার জন্য অধূমপায়ীদেরকে ধূমপানের কিছু কাল্পনিক উপকার বুঝাতে চায় যা নিম্নরূপ:

ক. মনের অশান্তি দূর করার জন্যই ধূমপান করা হয়। তাদের এ কথা নিশ্চিতভাবেই জানা উচিৎ যে, একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার যিকিরের মাধ্যমেই মানুষের অন্তরে শান্তির সঞ্চার হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ»

‘‘জেনে রাখো, আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণেই অন্তর শান্তি পায়’’। (রা’দ্ : ২৮)

খ. ধূমপান কোন ব্যাপারে গভীর চিন্তা করতে সহযোগিতা করে। মূলত ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এর উল্টো। বরং ধূমপান শ্বাসকষ্ট ও গলা শুকিয়ে যাওয়ার দরুন মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়।

গ. ধূমপান মানুষের স্নায়ুগুলোকে সতেজ করে তোলে। মূলত ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এর বিপরীত। বরং ধূমপান মানুষের স্নায়ুগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং এরই প্রভাবে দ্রুত হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়।

ঘ. ধূমপানে বন্ধু বাড়ে। এ কথা একাংশে ঠিক। তবে ধূমপানে ধূমপায়ী বন্ধু বাড়ে, ভালো বন্ধু নয়।

ঙ. ধূমপানে ক্লান্তি দূর হয়। এ কথা একেবারেই ঠিক নয়। বরং ধূমপানে ক্লান্তি আরো বেড়ে যায়। কারণ, ধূমপানে স্নায়ু দৌর্বল্য ও রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে।

আবার কেউ কেউ তো অন্যের অনুকরণে ধূমপান করে থাকে। কাউকে ধূমপান করতে দেখে তার খুব ভালো লেগেছে তাই সেও ধূমপান করে। কিয়ামতের দিন তার এ অনুসরণ কোন কাজেই আসবে না।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَبَرَزُوْا لِلهِ جَمِيْعًا، فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا، فَهَلْ أَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ، قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْ، سَوَآءٌ عَلَيْنَآ أَجَزِعْنَآ أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ»

‘‘সবাই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট উপস্থিত হলে দুর্বলরা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসারীই ছিলাম। অতএব তোমরা কি আমাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তি থেকে এতটুকুও রক্ষা করতে পারবে? তারা বলবে: আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক পথ দেখালে অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে তা দেখাতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই তাতে কিছুই আসে যায় না। এখন আমাদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার আযাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার আর কোন পথ নেই’’। (ইব্রাহীম : ২১)

আবার কেউ কেউ তো দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন: আমি বুঝে শুনেই ধূমপান করছি। এতে তোমাদের কি যায় আসে? এ জাতীয় ব্যক্তিদেরকে এখন থেকেই পরকালের পরিণতির কথা চিন্তা করা উচিৎ।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَخَابَ كُـلُّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ، مِنْ وَّرَآئِهِ جَهَنَّمُ، وَيُسْقَى مِنْ مَّآءٍ صَدِيْدٍ، يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيْغُهُ، وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ، وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ، وَمِنْ وَّرَآئِهِ عَذَابٌ غَلِيْظٌ»

‘‘প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থকাম হলো। পরিণামে তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। অতি কষ্টেই তারা তা গলাধ:করণ করবে; সহজে নয়। সর্বদিক থেকে মৃত্যু তার দিকে ধেয়ে আসবে; অথচ সে মরবে না এবং এর পরেও তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি’’। (ইব্রাহীম : ১৫-১৭)

যেভাবে আপনি ধূমপান ছাড়বেন:

ধূমপানের উপরোক্ত ব্যক্তিগত ও সামাজিক অপকার জানার পর আশাতো আপনি এখনি ধূমপান থেকে তাওবা করতে প্রস্ত্তত। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপার আপনাকে বিশেষ সহযোগিতা করবে যা নিম্নরূপ:

ক. আল্লাহ্ তা‘আলার উপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধূমপান ত্যাগের ব্যাপারে কঠিন প্রতিজ্ঞা তথা তাওবা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্ তা‘আলার সহযোগিতা চেয়ে তাঁর কাছে বিশেষভাবে ফরিয়াদ করতে হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَا الْـمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রত্যাবর্তন করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’। (নূর : ৩১)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْـمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْأَرْضِ، أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ، قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ»

‘‘তিনিই তো উত্তম যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে, বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোন মা’বূদ আছে কি? তোমরা তো অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো’’। (নাম্ল : ৬২)

খ. ধূমপানের অপকারগুলো দৈনিক নিজে ভাবুন এবং নিজ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও স্ত্রী-সন্তানদের সামনে এগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।

গ. ধূমপায়ীদের সঙ্গ ছেড়ে দিন। অন্ততপক্ষে ধূমপানের মজলিস থেকে বহু দূরে এবং কল্যাণকর কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকুন।

ঘ. ধূমপানকে ঘৃণা করতে চেষ্টা করুন এবং সর্বদা এ কথা ভাবুন যে, কেউ একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কোন হারাম বস্ত্ত পরিত্যাগ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা এর প্রতিদান হিসেবে তাকে এর চাইতে আরো উন্নত ও কল্যাণকর বস্ত্ত দান করবেন।

আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কেউ কোন হারাম বস্ত্ত পরিত্যাগ করলে তা সহজেই পরিত্যাগ করা সম্ভব। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব প্রথম আপনাকে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন যে, আপনি উক্ত হারাম বস্ত্ত পরিত্যাগে কতটুকু সত্যবাদী। তখন আপনি এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে পারলে তা পরিশেষে সত্যিই মজায় রূপান্তরিত হবে।

ধূমপান পরিত্যাগ করলে প্রথমত: আপনার গভীর ঘুম নাও আসতে পারে। রক্তে ঘাটতি দেখা দিবে। দীর্ঘ সময় কোন কিছু নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারবেন না। রাগ ও অস্থিরতা বেড়ে যাবে। নাড়ির সাধারণ গতি কমে যাবে। ব্রেইন কেমন যেন হালকা ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ধূমপানের জন্য অন্তর কিলবিল করতে থাকবে। তবে তা কিছু দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।

ঙ. কখনো মনের ভেতর ধূমপানের ইচ্ছে জন্মালে সাথে সাথে মিস্ওয়াক করুন অথবা চুইঙ্গাম খেতে থাকুন।

চ. চা ও কপি খুব কমই পান করুন। বরং এরই পরিবর্তে সাধ্যমত ফল-মূলাদি খেতে চেষ্টা করুন।

ছ. প্রতিদিন নাস্তার পর এক গ্লাস লেবু বা আঙ্গুরের জুস পান করুন। তা হলে ধূমপানের চাহিদা একটু করে হলেও হ্রাস পাবে।

জ. যত্ন সহকারে নিয়মিত ফরয নামাযগুলো আদায় করুন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَأَقِمِ الصَّلَاةَ، إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْـمُنْكَرِ، وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ، وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ»

‘‘নামায কায়েম করো। কারণ, নামাযই তো তোমাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যাই করছো আল্লাহ্ তা‘আলা তা সবই জানেন’’। (‘আন্কাবূত : ৪৫)

ঝ. বেশি বেশি রোযা রাখার চেষ্টা করুন। কারণ, তা মনোবলকে শক্তিশালী করায় ও কুপ্রবৃত্তি মোকাবিলায় বিশেষ সহযোগিতা করবে।

ঞ. বেশি বেশি কুর‘আন তেলাওয়াত করুন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ»

‘‘নিশ্চয়ই এ কুর‘আন সঠিক পথ প্রদর্শন করে’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রাঈল : ৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«يَآ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَبِّكُمْ، وَشِفَآءٌ لِّمَا فِيْ الصُّدُوْرِ، وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘হে মানব সকল! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উপদেশ, অন্তরের চিকিৎসা এবং মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত এসেছে’’। (ইউনুস : ৫৭)

চ. বেশি বেশি যিকির করুন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ»

‘‘জেনে রাখো, একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার যিকির বা স্মরণেই মানব অন্তর প্রশান্তি লাভ করে’’। (রা’দ্ : ২৮)

ছ. সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। কারণ, শয়তানই তো গুনাহ্সমূহকে মানব সম্মুখে সুশোভিত করে দেখায়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلَى أُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَـهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَـهُمْ، فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»

‘‘আল্লাহ্’র কসম! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান তাদের (অশোভনীয়) কর্মকান্ডকে তাদের নিকট সুশোভিত করে দেখিয়েছে। সুতরাং শয়তান তো আজ তাদের বন্ধু অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য (কিয়ামতের দিন) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে’’। (নাহ্ল : ৬৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ»

’’শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তা হলে তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার আশ্রয় কামনা করো। তিনিই তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’’।

(আ’রাফ : ২০০)

জ. নেককার লোকদের সাথে চলুন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهُ، وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيْدُ زِيْنَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا، وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ، وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا»

‘‘তুমি সর্বদা নিজকে ওদের সংস্রবেই রাখবে যারা সকাল-সন্ধ্যায় নিজ প্রভুকে ডাকে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কখনো তাদের থেকে নিজ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। তবে ওদের অনুসরণ কখনোই করো না যাদের অন্তর আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে দিয়েছি এবং যারা নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে নিজ কর্মকান্ডে সীমাতিক্রম করে’’। (কাহ্ফ : ২৮)

একবার দু’বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, নিরাশ হওয়া কাফিরের পরিচয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَيْأَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِ، إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে তোমরা কখনো নিরাশ হয়ো না। কারণ, একমাত্র কাফিররাই তো আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে থাকে’’। (ইউসুফ : ৮৭)

আপনি দ্রুত ধূমপান ছাড়তে না পারলেও অন্ততপক্ষে তা কমাতে চেষ্টা করুন এবং তা প্রকাশ্য পান করবেন না তা হলে কোন এক দিন আপনি তা সম্পূর্ণরূপে ছাড়তে পারবেন।

২২. জুয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

জুয়া বলতে সে সকল খেলাকে বুঝানো হয় যাতে বাজি কিংবা হারজিতের প্রশ্ন রয়েছে। জুয়া যে ধরনেরই হোক না কেন তা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْـخَمْرُ وَالْـمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ، فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ، إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِيْ الْـخَمْرِ وَالْـمَيْسِرِ، وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ، فَهَلْ أَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকে। তা হলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?’’ (মা’য়িদাহ্ : ৯০-৯১)

উক্ত আয়াতে জুয়াকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, উহাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা, তা থেকে বিরত থাকার ইলাহী আদেশ, তা বর্জনে সমূহ কল্যাণ নিহিত থাকা, এরই মাধ্যমে শয়তানের মানুষে মানুষে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে গাফিল রাখার চেষ্টা এবং পরিশেষে ধমকের সুরে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ থেকে জুয়ার ভয়ঙ্করতার পর্যায়টি সুস্পষ্টরূপেই প্রতিভাত হয়।

জুয়ার অনেকগুলো নতুন-পুরাতন ধরন রয়েছে যা হাতেগুনে উল্লেখ করা সত্যিই কষ্টকর। সময়ের পরিবর্তনে আরো যে কতো ধরনের জুয়ার পথ আবিষ্কৃত হবে তা আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন। তবুও নিম্নে জুয়ার কয়েকটি ধরনের কথা উল্লেখ করা হলো:

ক. লটারি বা ভাগ্যপরীক্ষা। অর্থের বিনিময়ে কোন সংস্থা বা সংগঠনের প্রাইজ বন্ড খরিদ করে বেশি, সমপরিমাণ কিংবা কম মূল্যের পুরষ্কার পাওয়া অথবা একেবারেই কিছু না পাওয়া। এ পন্থা একেবারেই হারাম। চাই উক্ত লটারির অর্থ জনকল্যাণেই ব্যবহার হোক না কেন। কারণ, পরকালের সাওয়াব তো শরীয়ত নিষিদ্ধ কোন পন্থায় অর্জন করা যায় না।

খ. জাহিলী যুগে দশজন লোক একত্রে মিলে একটি উট খরিদ করতো। প্রত্যেকেই সমানভাবে উট কেনার পয়সা পরিশোধ করতো। কিন্তু জবাইয়ের পর তারা লটারির মাধ্যমে শুধু সাত ভাগই নির্ধারণ করে নিতো। আর বাকি তিনজনকে কিছুই দেয়া হতো না। এটি হচ্ছে জুয়ার প্রাচীন রূপ।

গ. কার্ডের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে জুয়া খেলা তো বর্তমান সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। যা ছোট-বড় কারোর অজানা নয়। শুধু এরই মাধ্যমে মানুষের কতো টাকা যে আজ পর্যন্ত বেহাত হয়েছে বা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

ঘ. এমন কোন পণ্য খরিদ করা যার মধ্যে অজানা কিছু পুরস্কার রয়েছে। কখনো পাওয়া যায় আবার কখনো কিছুই পাওয়া যায় না। তেমনিভাবে পণ্য খরিদের সময় দোকানদাররা গ্রাহকদের মাঝে কিছু নাম্বার বিতরণ করে থাকে। যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে অথবা লটারি ছাড়াই পুরস্কার ঘোষণা দেয়া হয়। তাতে কেউ পায় আবার অনেকেই কিছুই পায় না।

ঙ. সকল ধরনের বীমা কার্যকলাপও জুয়ার অন্তর্গত। জীবন বীমা, গাড়ি বীমা, বাড়ি বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বীমা, বিশেষ কোন পণ্যের বীমা, সাধারণ বীমা ইত্যাদি। এমনকি বর্তমানে গায়ক-গায়িকারা কন্ঠস্বর বীমাও করে থাকে। বীমাগুলোতে ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ সরূপ টাকা প্রাপ্তির আশায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা জমা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বস্ত্তর ক্ষতি সাধন হলেই ক্ষতি সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। নতুবা নয়। ক্ষতিপূরণ জমা দেয়া টাকা থেকে কম, উহার সমপরিমাণ অথবা তা থেকে অনেকগুণ বেশিও হয়ে থাকে।

চ. জায়িয খেলাধুলাসমূহ খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে পুরস্কার সম্বলিত হলে তাও জুয়ার অন্তর্গত। কিন্তু পুরস্কারটি তৃতীয় পক্ষ থেকে হলে তা অবশ্য জায়িয। তবে শরীয়তের কোন ফায়েদা রয়েছে এমন সকল খেলাধুলা পুরস্কার সম্বলিত হলেও তাতে কোন অসুবিধে নেই। আর ইসলাম বিরোধী খেলাধুলা তো কোনভাবেই জায়িয নয়। চাই তাতে পুরস্কার থাকুক বা নাই থাকুক।

 ২৩. চুরি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

চুরি এমন একটি মারাত্মক অপরাধ যা মানুষের ধন-সম্পদের নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঘটায়।

অভিধানের পরিভাষায় চুরি বলতে কারোর কোন জিনিস সুকৌশলে লুক্কায়িতভাবে নিয়ে নেওয়াকে বুঝানো হয়।

শরীয়তের পরিভাষায় চুরি বলতে যথাযথভাবে সংরক্ষিত কারোর কোন মূল্যবান সম্পদ লুক্কায়িতভাবে নিয়ে নেওয়াকে বুঝানো হয় যা নিজের বলে তার কোন সন্দেহ নেই।

চুরি তো চুরিই। তবে তুচ্ছ কোন জিনিস চুরি করা যা অন্যের কাছে চাইলে এমনিতেই পাওয়া যায় তা হচ্ছে নিকৃষ্টতম চুরি। এ জাতীয় চোরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে লা’নত করেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ، يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ، وَيَسْرِقُ الْـحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন এমন চোরকে যার হাত খানা কাটা গেলো একটি লোহার টুপি অথবা এক খানা রশি চুরির জন্য’’।

(বুখারী ৬৭৮৩; মুসলিম ১৬৮৭)

এর চাইতেও আরো নিকৃষ্ট চুরি হচ্ছে হজ্জ কিংবা ’উমরাহ্ পালনকারীদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বা পথখরচা চুরি করা। তাতে পবিত্র ভূমির সম্মানও ক্ষুণ্ণ হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলার মেহ্মানদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণ কালীন নামায পড়ার সময় তাঁর সম্মুখে জাহান্নাম উপস্থাপিত করা হলে তিনি তাতে এ জাতীয় একজন চোর দেখতে পান। তিনি বলেন:

وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَ الْـمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِيْ النَّارِ، كَانَ يَسْرِقُ الْـحَاجَّ بِمِحْجَنِهِ، فَإِنْ فُطِنَ لَهُ قَالَ: إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِيْ، وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِهِ.

‘‘এমনকি আমি জাহান্নামে সে মাথা বাঁকানো লাঠি ওয়ালাকে দেখতে পেলাম যে নিজ নাড়িভুঁড়ি টেনে বেড়াচ্ছে। সে নিজ লাঠিটি দিয়ে হাজীদের আসবাবপত্র চুরি করতো। ধরা পড়ে গেলে সে বলতো: এটা তো আমার আংটায় এমনিতেই লেগে গেলো। আর কেউ টের না পেলে সে জিনিসটি নিয়ে চলে যেতো’’। (মুসলিম ৯০৪)

চোর চুরি করার সময় ঈমানদার থাকে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ؛ وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ.

‘‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখনও সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’’।

(বুখারী ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; মুসলিম ৫৭; আবূ দাউদ ৪৬৮৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০০৭)

 চোরের শাস্তি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর ব্যাপারে তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অথবা গ্রহণযোগ্য যে কোন দু’ জন সাক্ষীর মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত হয়ে গেলে অথচ চোরা বস্ত্তটি যথাযোগ্য হিফাযতে ছিলো এবং বস্ত্তটি তার মালিকানাধীন হওয়ার ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ ছিলো না এমনকি বস্ত্তটি সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ অথবা পৌনে তিন গ্রাম রূপা সমমূল্য কিংবা এর চাইতেও বেশি ছিলো তখন তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে, আবার চুরি করলে তার বাম পা, আবার চুরি করলে তার বাম হাত এবং আবার চুরি করলে তার ডান পা কেটে ফেলা হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْا أَيْدِيَهُمَا جَـزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ»

‘‘তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)

‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُقْطَعُ يَدُ السَّارِقِ إِلاَّ فِيْ رُبْعِ دِيْنَارٍ فَصَاعِدًا.

‘‘সিকি দিনার তথা এক গ্রাম থেকে একটু বেশি স্বর্ণ (অথবা উহার সমমূল্য) এবং এর চাইতে বেশি চুরি করলেই কোন চোরের হাত কাটা হয়। নতুবা নয়’’।

(বুখারী ৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১; মুসলিম ১৬৮৪; তিরমিযী ১৪৪৫; আবূ দাউদ ৪৩৮৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৩৪)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَطَعَ رَسُوْلُ اللهِ  يَدَ سَارِقٍ فِيْ مِجَنِّ ثَمَنُهُ ثَلَاثَةُ دَرَاهِمَ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক চোরের হাত কাটলেন একটি ঢাল চুরির জন্য যার মূল্য ছিলো তিন দিরহাম তথা প্রায় নয় গ্রাম রূপা কিংবা উহার সমমূল্য’’।

(বুখারী ৬৭৯৫, ৬৭৯৬, ৬৭৯৭, ৬৭৯৮; মুসলিম ১৬৮৬; তিরমিযী ১৪৪৬; আবূ দাউদ ৪৩৮৫, ৪৩৮৬; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৩৩)

কারোর চুরির ব্যাপারটি যদি বিচারকের নিকট না পৌঁছায় এবং সে এতে অভ্যস্তও নয় এমনকি সে উক্ত কাজ থেকে অতিসত্বর তাওবা করে নেক আমলে মনোনিবেশ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এমতাবস্থায় তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট না পৌঁছানোই উত্তম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَمَنْ تَابَ مِنْ بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللهَ يَتُوْبُ عَلَيْهِ، إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٍ»

‘‘অনন্তর যে ব্যক্তি যুলুম তথা চুরি করার পর (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) তাওবা করে এবং নিজ আমলকে সংশোধন করে নেয় তবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা পরম ক্ষমাশীল অতিশয় দয়ালু’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)

আর যদি কোন ব্যক্তি চুরিতে অভ্যস্ত হয় এবং সে চুরিতে কারোর হাতে ধরাও পড়েছে তখন তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট অবশ্যই জানাবে। যাতে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে অপকর্মটি ছেড়ে দেয়।

কারোর নিকট কোন কিছু আমানত রাখার পর সে তা আত্মসাৎ করলে এবং কেউ কারোর কোন সম্পদ লুট অথবা ছিনতাই করে ধরা পড়লে চোর হিসেবে তার হাত খানা কাটা হবে না। পকেটমারের বিধানও তাই। তবে তারা কখনোই শাস্তি পাওয়া থেকে একেবারেই ছাড় পাবে না। এদের বিধান হত্যাকারীর বিধানাধীন উল্লেখ করা হয়েছে।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ عَلَى خَائِنٍ، وَلَا مُنْتَهِبٍ وَلَا مُخْتَلِسٍ قَطْعٌ.

‘‘আমানত আত্মসাৎকারী, লুটেরা এবং ছিনতাইকারীর হাতও কাটা হবে না’’।

(আবূ দাউদ ৪৩৯১, ৪৩৯২, ৪৩৯৩; তিরমিযী ১৪৪৮; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪০, ২৬৪১; ইব্নু হিববান ১৫০২ নাসায়ী ৮/৮৮; আহমাদ ৩/৩৮০)

কেউ কারোর কোন ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেয়ে ধরা পড়লে তার হাতও কাটা হবে না। এমনকি তাকে কোন কিছুই দিতে হবে না। আর যদি সে কিছু সাথে নিয়ে যায় তখন তাকে জরিমানাও দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যদি গাছ থেকে ফল পেড়ে নির্দিষ্ট কোথাও শুকাতে দেয়া হয় এবং সেখান থেকেই কেউ চুরি করলো তখন তা হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাতও কেটে দেয়া হবে।

রা’ফি’ বিন্ খাদীজ ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا قَطْعَ فِيْ ثَمَرٍ وَلَا كَثَرٍ.

‘‘কেউ কারোর ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলে অথবা কারোর খেজুর গাছের মাথি-মজ্জা খেয়ে ফেললে তার হাতও কাটা হবে না’’।

(আবূ দাউদ ৪৩৮৮; তিরমিযী ১৪৪৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪২, ২৬৪৩; ইব্নু হিববান ১৫০৫ নাসায়ী ৮/৮৮; আহমাদ ৩/৪৬৩)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাছের ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:

مَنْ أَصَابَ بِفِيْهِ مِنْ ذِيْ حَاجَةٍ غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً ؛ فَلَا شَيْءَ عَلَيْهِ، وَمَنْ خَرَجَ بِشَيْءٍ مِنْهُ ؛ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوْبَةُ، وَمَنْ سَرَقَ مِنْهُ شَيْئًا بَعْدَ أَنْ يُؤْوِيَهُ الْـجَرِيْنُ فَبَلَغَ ثَمَنَ الْـمِجَنِّ ؛ فَعَلَيْهِ الْقَطْعُ، وَمَنْ سَرَقَ دُوْنَ ذَلِكَ ؛ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوْبَةُ.

‘‘কেউ প্রয়োজনের খাতিরে সাথে কিছু না নিয়ে (কারোর কোন ফলগাছের ফল) শুধু খেলে তাকে এর জরিমানা স্বরূপ কিছুই দিতে হবে না। আর যে শুধু খায়নি বরং সাথে কিছু নিয়ে গেলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যে ফল শুকানোর জায়গা থেকে চুরি করলো এবং তা ছিলো একটি ঢালের সমমূল্য তখন তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে। আর যে এর কম চুরি করলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে’’। (আবূ দাউদ ৪৩৯০; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৫ নাসায়ী ৮/৮৫; হা’কিম ৪/৩৮০)

কেউ কারোর কাছ থেকে কোন কিছু ধার নিয়ে তা অস্বীকার করলে এবং তা তার অভ্যাসে পরিণত হলে এমনকি বস্ত্তটি হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَتْ اِمْرَأَةٌ مَخْزُوْمِيَّةٌ تَسْتَعِيْرُ الْـمَتَاعَ وَتَجْحَدُهُ، فَأَمَرَ النَّبِيُّ  أَنْ تُقْطَعَ يَدُهَا.

‘‘জনৈকা মাখ্জূমী মহিলা মানুষ থেকে আসবাবপত্র ধার নিয়ে তা অস্বীকার করতো তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খানা কাটতে আদেশ করলেন’’। (মুসলিম ১৬৮৮; আবূ দাউদ ৪৩৭৪, ৪৩৯৫, ৪৩৯৬, ৪৩৯৭)

তবে কোন কোন বর্ণনায় তার চুরির কথাও উল্লেখ করা হয়।

কেউ ঘুমন্ত ব্যক্তির কোন কিছু চুরি করলে এবং তা হাত কাটা সমপরিমাণ হলে তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে।

স্বাফ্ওয়ান বিন্ উমাইয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كُنْتُ نَائِمًا فِيْ الْـمَسْجِدِ، عَلَيَّ خَمِيْصَةٌ لِيْ ثَمَنُ ثَلَاثِيْنَ دِرْهَمًا، فَجَاءَ رَجُلٌ فَاخْتَلَسَهَا مِنِّيْ، فَأُخِذَ الرَّجُلُ، فَأُتِيَ بِهِ رَسُوْلَ اللهِ  فَأَمَرَ بِهِ لِيُقْطَعَ.

‘‘আমি একদা মসজিদে ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমার গায়ে একটি চাদর ছিলো ত্রিশ দিরহামের। ইতিমধ্যে জনৈক ব্যক্তি এসে চাদরটি আমার থেকে ছিনিয়ে নিলো। লোকটিকে ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি তার হাত খানা কেটে ফেলতে বলেন’’।

(আবূ দাউদ ৪৩৯৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪৪ নাসায়ী ৮/৬৯; আহমাদ ৬/৪৬৬; হা’কিম ৪/৩৮০ ইব্নুল জারূদ্, হাদীস ৮২৮)

অনেকেই রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পদ চুরি করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, সবাই তো করে যাচ্ছে তাই আমিও করলাম। এতে অসুবিধে কোথায়? মূলত এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, জাতীয় সম্পদ বলতে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সম্পদকেই বুঝানো হয়। সুতরাং এর সাথে বহু লোকের অধিকারের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষভাবে তাতে রয়েছে গরিব, দু:খী, ইয়াতীম, অনাথ ও বিধবাদের অধিকার। তাই ব্যক্তি সম্পদের তুলনায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এর চুরিও খুবই মারাত্মক।

আবার কেউ কেউ কোন কাফিরের সম্পদ চুরি করতে এতটুকুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, কাফিরের সম্পদ আত্মসাৎ করা একেবারেই জায়িয। মূলত এরূপ ধারণাও সম্পূর্ণটাই ভুল। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন সকল কাফিরের সম্পদই হালাল যাদের সঙ্গে এখনো মুসলিমদের যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান। মুসলিম এলাকায় বসবাসরত কাফির ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফির এদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

কেউ কেউ তো আবার অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে তার আসবাবপত্র চুরি করে। কেউ কেউ আবার ঠিক এরই উল্টো। সে তার মেহমানের টাকাকড়ি বা আসবাবপত্র চুরি করে। এ সবই নিকৃষ্ট চুরি।

আবার কোন কোন পুরুষ বা মহিলা তো এমন যে, সে কোন না কোন দোকানে ঢুকলো পণ্য খরিদের জন্য গাহক বেশে অথচ বের হলো চোর হয়ে।

কেউ শয়তানের ধোঁকায় চুরি করে ফেললে তাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে চুরিত বস্ত্তটি উহার মালিককে ফেরৎ দিতে হবে। চাই সে তা প্রকাশ্যে দিক অথবা অপ্রকাশ্যে। সরাসরি দিক অথবা কোন মাধ্যম ধরে। যদি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উহার মালিক বা তার ওয়ারিশকে পাওয়া না যায় তা হলে সে যেন বস্ত্তটি অথবা বস্ত্তটির সমপরিমাণ টাকা মালিকের নামে সাদাকা করে দেয়। যার সাওয়াব মালিকই পাবে। সে নয়।

 ২৪. সন্ত্রাস, অপহরণ, দস্যুতা ও লুন্ঠন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। চাই সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হোক অথবা নাই হোক। কারণ, তারা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। তবে সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হলে অবশ্যই হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। আর সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা না হলে সে অঘটনগুলো সম্পাদনকারীদেরকে চারটি শাস্তির যে কোন একটি শাস্তি দিতে হবে। হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসী দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলতে হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এমনকি তারা শুধুমাত্র একজনকেই হত্যা করার ব্যাপারে কয়েকজন অংশ গ্রহণ করলেও তাদের সকলকেই হত্যা করা হবে। যদি তারা সরাসরি উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَسْعَوْنَ فِيْ الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُّقَتَّلُوْا أَوْ يُصَلَّبُوْا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيْهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ، ذَلِكَ لَـهُمْ خِزْيٌ فِيْ الدُّنْيَا وَلَـهُمْ فِيْ الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ، إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَقْدِرُوْا عَلَيْهِمْ فَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ»

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধি-বিধানের উপর হঠকারিতা দেখায় এবং (হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ও ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসী দেয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এ হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকের ভীষণ অপমান এবং পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে যদি তারা স্বেচ্ছায় তাওবা করে নেয় তাহলে জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩৩)

তবে মানুষের হৃত অধিকার তাদেরকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قُتِلَ غُلَامٌ غِيْلَةً، فَقَالَ عُمَرُ: لَوِ اشْتَرَكَ فِيْهِ أَهْلُ صَنْعَاءَ لَقَتَلْتُهُمْ بِهِ.

‘‘জনৈক যুবককে চুপিসারে হত্যা করা হলে ’উমর (রাঃ) বললেন: পুরো সান্‘আবাসীরাও (বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী) যদি উক্ত যুবককে হত্যা করায় অংশ গ্রহণ করতো তা হলে আমি তাদের সকলকেই ওর পরিবর্তে হত্যা করতাম। তাদেরকে আমি কখনোই এমনিতেই ছেড়ে দিতাম না’’। (বুখারী ৬৮৯৬)

 ২৫. মিথ্যা কসম

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মিথ্যা কসম খাওয়াও একটি কবীরা গুনাহ্। চাই তা কোন বিপদ থেকে বাঁচার জন্যই হোক অথবা কারোর কোন সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার জন্যই হোক।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْكَبَائِرُ : الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَالْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ.

‘‘কবীরা গুনাহ্গুলো হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া’’। (বুখারী ৬৬৭৫, ৬৮৭০, ৬৯২০)

মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রেতার সাথে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আবূ যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ ثَلَاثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ: خَابُوْا وَخَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: الْـمُسْبِلُ، وَالْـمَنَّانُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: الْـمَنَّانُ الَّذِيْ لَا يُعْطِيْ شَيْئًا إِلاَّ مَنَّهُ، وَالْـمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْـحَلِفِ الْكَاذِبِ.

‘‘তিন ব্যক্তি এমন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিন বার বলেছেন। আবূ যর (রাঃ) বলেন: তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা কারা হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোন কিছু দিয়েই খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য সাপ্লাইকারী’’। (মুসলিম ১০৬)

আব্দুল্লাহ্ বিন মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِيْنٍ كَاذِبًا لِيَقْتَطِعَ مَالَ رَجُلٍ لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.

‘‘কেউ কারোর সম্পদ অবৈধভাবে আহরণের জন্য মিথ্যা কসম খেলে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ দিবে যে, তিনি (আল্লাহ্) তার উপর খুবই রাগান্বিত’’। (বুখারী ২৩৫৬, ২৩৫৭, ২৪১৬, ২৪১৭, ২৫১৫, ২৫১৬, ২৬৬৬, ২৬৬৭, ২৬৬৯, ২৬৭০, ২৬৭৩, ২৬৭৬, ২৬৭৭)

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِهِ، فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا، يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: وَإِنْ قَضِيْبًا مِنْ أَرَاكٍ.

‘‘কেউ (মিথ্যা) কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম বাধ্যতামূলক করেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। জনৈক (সাহাবী) বলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! যদিও সামান্য কোন কিছু হোক না কেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যদিও ‘‘আরাক’’ গাছের ডাল সমপরিমাণ হোক না কেন। যা মিসওয়াকের গাছ’’। (মুসলিম ১৩৭)

 ২৬. চাঁদাবাজি

 শেয়ার ও অন্যান্য 

চাঁদাবাজি আরেকটি মারাত্মক অপরাধ। কোন প্রভাবশালী চক্র কর্তৃক জোর পূর্বক কাউকে কোথাও নিজ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অথবা নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে বাধ্য করাকে সাধারণত চাঁদাবাজি বলা হয়। দস্যুতার সাথে এর খুবই মিল। চাঁদা উত্তোলনকারী, চাঁদা লেখক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই উক্ত গুনাহ্’র সমান অংশীদার। এরা যালিমের সহযোগী অথবা সরাসরি যালিম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّمَا السَّبِيْلُ عَلَى الَّذِيْنَ يَظْلِمُوْنَ النَّاسَ وَيَبْغُوْنَ فِيْ الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْـحَقِّ، أُوْلَآئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»

‘‘শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ করে বেড়ায়। বস্ত্তত: এদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি’’। (শূরা’ : ৪২)

তিনি আরো বলেন:

«وَلَا تَرْكَنُوْا إِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ، وَمَا لَكُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ»

’’তোমরা যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না তথা তাদেরকে যুলুমের সহযোগিতা করো না। অন্যথায় তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। আর তখন আল্লাহ্ ছাড়া কেউ তোমাদের সহায় হবে না। অতএব তখন তোমাদেরকে কোন সাহায্যই করা হবে না’’। (হূদ্ : ১১৩)

জা’বির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا الظُّلْمَ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘কারোর উপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, এ অত্যাচার কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার রূপেই দেখা দিবে’’। (মুসলিম ২৫৭৮)

 ২৭. যুলুম, অত্যাচার ও কারোর উপর অন্যায় মূলক আক্রমণ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর জন্য অন্যের উপর যে কোনভাবে যুলুম, অত্যাচার অথবা অন্যায় মূলক আক্রমণ হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কাউকে মারা, হত্যা করা, আহত করা, গালি দেয়া, অভিসম্পাত করা, ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া, দুর্বলের উপর হাত উঠানো চাই সে হোক নিজের কাজের ছেলে কিংবা নিজের কাজের মেয়ে অথবা নিজ স্ত্রী-সন্তান; তেমনিভাবে জোর করে কারোর কোন অধিকার হরণ ইত্যাদি ইত্যাদি যুলুমেরই অন্তর্গত।

যুলুম পারস্পরিক বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে। আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি করে। মানুষের মাঝে হিংসা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয় এবং এরই কারণে ধনী ও গরীবের মাঝে ধীরে ধীরে ঘৃণা ও শত্রুতা জেগে উঠে। তখন উভয় পক্ষই দুনিয়ার বুকে অশান্তি নিয়েই জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদের জন্য জাহান্নামে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। যা তাকে গ্রহণ করতেই হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِيْنَ نَارًا، أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا، وَإِنْ يَّسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَاءٍ كَالْـمُهْلِ يَشْوِيْ الْوُجُوْهَ، بِئْسَ الشَّرَابُ، وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا»

‘‘আমি যালিমদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত রেখেছি। যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি। যা তাদের মুখমন্ডল পুড়িয়ে দিবে। এটা কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং সে জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়’’। (কাহ্ফ : ২৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَسَيَعْلَمُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا أَيَّ مُنْقَلَبٍ يَّنْقَلِبُوْنَ»

’’অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানবে কোথায় তাদের গন্তব্যস্থল!’’ (শু‘আরা’ : ২২৭)

আবূ যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

يَا عِبَادِيْ! إِنِّيْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِيْ وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَـمُوْا.

‘‘হে আমার বান্দাহ্রা! নিশ্চয়ই আমি আমার উপর যুলুম হারাম করে দিয়েছি অতএব তোমাদের উপরও তা হারাম। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না’’। (মুসলিম ২৫৭৭)

কেউ কেউ কোন যালিমকে অনায়াসে মানুষের উপর যুলুম করতে দেখলে এ কথা ভাবে যে, হয়তো বা সে ছাড় পেয়ে গেলো। তাকে আর কোন শাস্তিই দেয়া হবে না। না, ব্যাপারটা কখনোই এমন হতে পারে না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে কিয়ামতের দিনের কঠিন শাস্তির অপেক্ষায় রেখেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَ، إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَـصُ فِيْهِ الْأَبْصَارُ، مُهْطِعِيْنَ مُقْنِعِيْ رُؤُوْسِهِمْ، لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ، وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ»

‘‘তুমি কখনো মনে করো না যে, যালিমরা যা করে যাচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা সে ব্যাপারে গাফিল। বরং তিনি তাদেরকে সুযোগ দিচ্ছেন কিয়ামতের দিন পর্যন্ত। যে দিন সবার চক্ষু হবে স্থির বিস্ফারিত। সে দিন তারা ভীত-বিহবল হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ছুটোছুটি করবে। তাদের চক্ষু এতটুকুর জন্যও নিজের দিকে ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে একেবারেই আশা শূন্য’’। (ইব্রাহীম : ৪২-৪৩)

কারোর মধ্যে বিনয় ও নম্রতা না থাকলেই সে কারোর উপর উদ্যত ও আক্রমণাত্মক হতে পারে। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা সকলকে বিনয়ী ও নম্র হতে আদেশ করেন।

’ইয়ায বিন্ ’হিমার মুজাশি’য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা খুৎবা দিতে গিয়ে বলেন:

وَإِنَّ اللهَ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتَّى لَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ، وَلَا يَبْغِيَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এ মর্মে আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা নম্র ও বিনয়ী হও; যাতে করে একের অন্যের উপর গর্ব করার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় এবং একের অন্যের উপর অত্যাচার বা আক্রমণাত্মক আচরণ করার সুযোগ না আসে’’। (মুসলিম ২৮৬৫)

আবূ মাস্’ঊদ্ আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كُنْتُ أَضْرِبُ غُلَامًا لِيْ، فَسَمِعْتُ مِنْ خَلْفِيْ صَوت، فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! هُوَ حُرٌّ لِوَجْهِ اللهِ، فَقَالَ: أَمَا لَوْ لَمْ تَفْعَلْ لَلَفَحَتْكَ النَّارُ أَوْ لَمَسَّتْكَ النَّارُ.ًا : اعْلَمْ، أَبَا مَسْعُوْدٍ ! لَلَّهُ أَقْدَرُ عَلَيْكَ مِنْكَ عَلَيْهِ، فَالْتَفَتُّ فَإِذَا هُوَ رَسُوْلُ اللهِ 

’’আমি আমার একটি গোলামকে মারছিলাম এমতাবস্থায় পেছন থেকে শুনতে পেলাম, কে যেন আমাকে বড় আওয়াজে বলছে: শুনো, হে আবূ মাস্’ঊদ্! তুমি এর উপর যতটুকু ক্ষমতাশীল তার চাইতেও অনেক বেশি ক্ষমতাশীল আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার উপর। অতঃপর আমি (পেছনে) তাকিয়ে দেখি, তিনি হচ্ছেন স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতএব আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! একে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য স্বাধীন করে দিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি যদি এমন না করতে তা হলে তোমাকে জাহান্নামের অগ্নি স্পর্শ করতো অথবা পুড়িয়ে দিতো’’।

(মুসলিম ১৬৫৯)

হিশাম বিন্ ’হাকীম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ يُعَذِّبُ الَّذِيْنَ يُعَذِّبُوْنَ النَّاسَ فِيْ الدُّنْيَا.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ওদেরকে শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষকে (অন্যায়ভাবে) শাস্তি দেয়’’। (মুসলিম ২৬১৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যাচারী ও কারোর উপর অন্যায় মূলক আক্রমণকারীর শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। উপরন্তু আখিরাতের শাস্তি তো তার জন্য প্রস্ত্তত আছেই।

আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُّعَجِّلَ اللهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوْبَةَ فِيْ الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِيْ الْآخِرَةِ مِنَ الْبَغْيِ وَقَطِيْعَةِ الرَّحِمِ.

‘‘দু’টি গুনাহ্ ছাড়া এমন কোন গুনাহ্ নেই যে গুনাহ্গারের শাস্তি আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়াতেই দিবেন এবং তা দেওয়াই উচিৎ; উপরন্তু তার জন্য আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। গুনাহ্ দু’টি হচ্ছে, অত্যাচার তথা কারোর উপর অন্যায় মূলক আক্রমণ এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী’’।

(আবূ দাউদ ৪৯০২; তিরমিযী ২৫১১; ইব্নু মাজাহ্ ৪২৮৬; ইব্নু হিববান ৪৫৫, ৪৫৬ বায্যার, হাদীস ৩৬৯৩; আহমাদ ২০৩৯০, ২০৩৯৬, ২০৪১৪)

 ২৮. হারাম ভক্ষণ ও হারামের উপর জীবন যাপন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

হারাম ভক্ষণ ও হারামের উপর জীবন যাপন কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। তা যে কোন উপায়েই হোক না কেন।

বর্তমান যুগের দর্শন তো খাও, দাও, ফুর্তি করো। এ দর্শন বাস্তবায়নের জন্য সকলেই উঠে-পড়ে লাগছে। সবার মধ্যে শুধু সম্পদ সঞ্চয়েরই নেশা। চাই তা চুরি করে হোক অথবা ডাকাতি। সুদ-ঘুষ খেয়ে হোক অথবা ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করে। কোন অবৈধ বস্ত্তর ব্যবসা করে হোক অথবা সমকাম, ব্যভিচার, গান-বাদ্য, অভিনয়, যাদু ও গণন বিদ্যা চর্চা করে। জাতীয় বা কারোর ব্যক্তিগত সম্পদ লুট করেই হোক অথবা কাউকে বিপদে ফেলে। শরীয়তে এ জাতীয় দর্শনের কোন স্থান নেই।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ، وَتُدْلُوْا بِهَا إِلَى الْـحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»

‘‘তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়রূপে গ্রাস করো না এবং তা ঘুষরূপে বিচারকদেরকেও দিও না জেনেশুনে মানুষের কিছু ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার জন্য’’। (বাক্বারাহ্ : ১৮৮)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়রূপে গ্রাস করো না। তবে যদি তা পরস্পরের সম্মতিক্রমে ব্যবসায়ের ভিত্তিতে হয়ে থাকে তা হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই’’। (নিসা’ : ২৯)

হারামখোরের দো‘আ আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো কবুল করেন না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ، أَشْعَثَ أَغْبَـرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ! يَا رَبِّ! وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْـحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟!.ثُمَّ ذَكَرَ رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে ক্লান্ত, মাথার চুল যার এলোমেলো ধূলেধূসরিত সে নিজ উভয় হাত আকাশের দিকে সম্প্রসারিত করে বলছে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম তথা তার পুরো জীবনোপকরণই হারামের উপর নির্ভরশীল। অতএব তার দো‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে?!’’ (মুসলিম ১০১৫)

উক্ত হাদীস থেকে হারাম ভক্ষণের ভয়াবহতা সুস্পষ্টরূপে বুঝে আসে। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা মুসাফিরের দো‘আ ফেরৎ দেন না অথচ এখানে তার দো‘আ কবুলই করা হচ্ছে না। আর তা এ কারণেই যে, তার জীবন পুরোটাই হারামের উপর নির্ভরশীল।

হারামখোর পরকালে একমাত্র জাহান্নামেরই উপযুক্ত। জান্নাতের নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ لَـحْمٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ.

‘‘যে শরীর হারাম দিয়ে গড়া তা একমাত্র জাহান্নামেরই উপযুক্ত’’। (ত্বাবারানী/কবীর ১৯/১৩৬ সা’হীহুল্ জামি’, হাদীস ৪৪৯৫)

 ২৯. আত্মহত্যা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আত্মহত্যা একটি মহাপাপ। যেভাবেই সে আত্মহত্যা করুক না কেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا»

‘‘এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু’’। (নিসা’ : ২৯)

জুন্দাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كَانَ بِرَجُلٍ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَقَالَ اللهُ: بَدَرَنِيْ عَبْدِيْ بِنَفْسِهِ، حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ.

‘‘জনৈক ব্যক্তি গুরুতর আহত হলে সে তার ক্ষতগুলোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলো। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন: আমার বান্দাহ্ স্বীয় জান কবযের ব্যাপারে তড়িঘড়ি করেছে অতএব আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিলাম’’। (বুখারী ১৩৬৪)

সাবিত্ বিন্ যাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَيْءٍ فِيْ الدُّنْيَا عَذَّبَهُ اللهُ بِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন বস্ত্ত দিয়ে আত্মহত্যা করলো আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে সে বস্ত্ত দিয়েই শাস্তি দিবেন’’।

(বুখারী ১৩৬৩, ৬০৪৭, ৬১০৫, ৬৬৫২; মুসলিম ১১০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهُ فِيْ يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا، وَمَنْ شَرِبَ سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا، وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا.

‘‘যে ব্যক্তি কোন লোহা বা লোহা জাতীয় বস্ত্ত দিয়ে আত্মহত্যা করলো সে লোহা বা লোহা জাতীয় বস্ত্তটি তার হাতেই থাকবে। তা দিয়ে সে জাহান্নামের আগুনে নিজ পেটে আঘাত করবে এবং তাতে সে চিরকাল থাকবে। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করলো সে জাহান্নামের আগুনে বিষ পান করতেই থাকবে এবং তাতে সে চিরকাল থাকবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলো সে জাহান্নামের আগুনে লাফাতেই থাকবে এবং তাতে সে চিরকাল থাকবে’’। (বুখারী ৫৭৭৮; মুসলিম ১০৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الَّذِيْ يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِيْ النَّارِ، وَالَّذِيْ يَطْعَنُهَا يَطْعَنُهَا فِيْ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলো সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবেই করতে থাকবে এবং যে ব্যক্তি নিজকে বর্শা অথবা অন্য কোন কিছু দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যা করলো সেও জাহান্নামে গিয়ে এভাবেই করতে থাকবে’’। (বুখারী ১৩৬৫)

আত্মহত্যা জাহান্নামে যাওয়ার একটি বিশেষ কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আগাম সংবাদ দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ’হুনাইন্ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। পথিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মুসলিম সম্পর্কে বললেন: এ ব্যক্তি জাহান্নামী। যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো তখন লোকটি এক ভয়ানক যুদ্ধে লিপ্ত হলো এবং সে তাতে প্রচুর ক্ষত-বিক্ষত হলো। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! যার সম্পর্কে আপনি ইতিপূর্বে বললেন: সে জাহান্নামী সে তো আজ এক ভয়ানক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে মৃত্যু বরণ করলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন: সে জাহান্নামী। তখন মুসলিমদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে সন্দিহান হলো। এমতাবস্থায় সংবাদ এলো: সে মরেনি; সে এখনো জীবিত। তবে তার দেহে অনেকগুলো মারাত্মক ক্ষত রয়েছে। যখন রাত হলো তখন লোকটি আর ধৈর্য ধরতে না পেরে আত্মহত্যা করলো। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ দেয়া হলে তিনি বলেন: আল্লাহ্ সুমহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্ তা‘আলার বান্দাহ্ ও তাঁর প্রেরিত রাসূল। অতঃপর তিনি বিলাল (রাঃ) কে এ মর্মে ঘোষণা দিতে বললেন যে,

إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ إِلاَّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللهَ يُؤَيِّدُ هَذَا الدِّيْنَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ.

‘‘একমাত্র মু’মিন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো কখনো কোন কোন গুনাহ্গার ব্যক্তির মাধ্যমেও ইসলামকে শক্তিশালী করে থাকেন’’। (মুসলিম ১১১)

 ৩০. অবিচার

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কুর‘আন ও হাদীসের সুস্পষ্ট জ্ঞান ও তা যথাস্থানে প্রয়োগ করার যথেষ্ট প্রজ্ঞা ছাড়া বিচারকার্য পরিচালনা করা অথবা কোন ব্যাপারে সত্য উদ্ভাসিত হয়ে যাওয়ার পরও তা পাশ কাটিয়ে গিয়ে অন্যায়মূলক বিচার করা একটি মারাত্মক অপরাধ।

বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْقُضَاةُ ثَلَاثَةٌ: وَاحِـدٌ فِيْ الْـجَنَّةِ، وَاثْنَانِ فِيْ النَّارِ، فَأَمَّا الَّذِيْ فِيْ الْـجَنَّةِ ؛ فَرَجُلٌ عَرَفَ الْـحَقَّ فَقَضَى بِهِ، وَرَجُلٌ عَرَفَ الْـحَقَّ فَجَارَ فِيْ الْـحُكْمِ ؛ فَهُوَ فِيْ النَّارِ، وَرَجُلٌ قَضَى لِلنَّاسِ عَلَى جَهْلٍ ؛ فَهُوَ فِيْ النَّارِ.

‘‘বিচারক তিন প্রকারের। তম্মধ্যে একজন জান্নাতী আর অপর দু’জন জাহান্নামী। যিনি জান্নাতী তিনি হচ্ছেন এমন বিচারক যে সত্য উদ্ঘাটন করে উহার আলোকেই বিচার করেন। আরেকজন এমন যে, তিনি সত্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন ঠিকই তবে তিনি তা সূক্ষ্মভাবে পাশ কাটিয়ে গিয়ে অন্যায় ও অত্যাচারমূলক বিচার করে থাকেন। এমন বিচারক জাহান্নামী। আরেকজন এমন যে, তিনি অজ্ঞতা ও মূর্খতাকেই পুঁজি করে বিচার করে থাকেন। অতএব তিনিও জাহান্নামী’’।

(আবূ দাউদ ৩৫৭৩; তিরমিযী ১৩২২; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪৪)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ مَعَ الْقَاضِيْ مَا لَمْ يَجُرْ، فَإِذَا جَارَ تَخَلَّى عَنْهُ وَلَزِمَهُ الشَّيْطَانُ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা বিচারকের সহযোগিতায়ই থাকেন যতক্ষণ না সে বিচারে কারোর উপর যুলুম করে। তবে যখন সে বিচারে কারোর উপর যুলুম করে বসে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সহযোগিতা উঠিয়ে নেন এবং শয়তার তাকে আঁকড়ে ধরে’’। (তিরমিযী ১৩৩০; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪১)

বিচার সংক্রান্ত কিছু কথা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বিচার করার সময় উভয় পক্ষের সম্পূর্ণ কথা মনোযোগ সহকারে শুনে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে সত্য পর্যন্ত পৌঁছুতে হয়।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিচারক হিসেবে ইয়েমেনে পাঠাচ্ছিলেন। তখন আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি আমাকে বিচারক হিসেবে পাঠাচ্ছেন; অথচ আমি অল্প বয়সের একজন যুবক এবং বিচার কার্য সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

إِنَّ اللهَ سَيَهْدِيْ قَلْبَكَ وَيُثَبِّتُ لِسَانَكَ، فَإِذَا جَلَسَ بَيْنَ يَدَيْكَ الْـخَصْمَانِ ؛ فَلَا تَقْضِيَنَّ حَتَّى تَسْمَعَ مِـنَ الْآخَرِ ؛ كَمَا سَمِعْتَ مِنَ الْأَوَّلِ ؛ فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يَتَبَيَّنَ لَكَ الْقَضَاءُ، قَالَ: فَمَا زِلْتُ قَاضِيًا أَوْ مَا شَكَكْتُ فِيْ قَضَاءٍ بَعْدُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন এবং তোমার জিহবাকে দৃঢ় করবেন। যখন তোমার সামনে উভয় পক্ষ উপস্থিত হবে তখন তুমি দ্রুত বিচার করবে না যতক্ষণ না তুমি দ্বিতীয় পক্ষ থেকে তাদের কথা শুনো যেমনিভাবে শুনেছিলে প্রথম পক্ষ থেকে। কারণ, তখনই তোমার সামনে বিচারের ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। ‘আলী (রাঃ) বলেন: তখন থেকেই আমি বিচারক অথবা তিনি বললেন: অতঃপর আমি আর বিচারের ক্ষেত্রে কখনোই কোন সন্দেহের রোগে ভুগিনি’’।

(আবূ দাউদ ৩৫৮২; তিরমিযী ১৩৩১)

 বিচারকের নিকট যে কোন ব্যক্তির অভিযোগ পৌঁছানো যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় উহার প্রতি বিচারককে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে

 শেয়ার ও অন্যান্য 

‘আমর বিন্ মুর্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ إِمَامٍ يُغْلِقُ بَابَهُ دُوْنَ ذَوِيْ الْـحَاجَةِ وَالْـخَلَّةِ وَالْـمَسْكَنَةِ ؛ إِلاَّ أَغْلَقَ اللهُ أَبْوَابَ السَّمَاءِ دُوْنَ خَلَّتِهِ وَحَاجَتِهِ وَمَسْكَنَتِهِ.

‘‘কোন সমস্যায় জর্জরিত ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রপতি অথবা বিচারকের নিকট তার অভিযোগ উত্থাপন করতে বাধাগ্রস্ত হলে সেও আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিজ সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে বাধাগ্রস্ত হবে’’। (তিরমিযী ১৩৩২)

 বিচারক বিচারের সময় কোন ব্যাপারেই রাগান্বিত হতে পারবেন না

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحْكُمُ الْـحَاكِمُ بَيْنَ اثْنَيْنِ وَهُوَ غَضْبَانُ.

‘‘কোন বিচারক যেন রাগান্বিত অবস্থায় দু’ পক্ষের মাঝে বিচার না করে’’। (তিরমিযী ১৩৩৪; আবূ দাউদ ৩৫৮৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪৫)

 ঘুষ খেয়ে অন্যায়ভাবে বিচারকারীকে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ الرَّاشِيْ وَالْـمُرْتَشِيْ فِيْ الْـحُكْمِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেন বিচারের ব্যাপারে ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়কেই’’। (তিরমিযী ১৩৩৬, ১৩৩৭; আবূ দাউদ ৩৫৮০; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪২)

 বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষী-প্রমাণ উপস্থাপনের দায়িত্ব একমাত্র বাদীর উপর এবং কসম হচ্ছে বিবাদীর উপর

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শু‘আইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাঁর খুৎবায় বলেন:

الْبَيِّنَةُ عَلَى الْمُدَّعِيْ وَالْيَمِيْنُ عَلَى الْـمُدَّعَى عَلَيْهِ.

‘‘বাদীর উপর সাক্ষী-প্রমাণ এবং বিবাদীর উপর কসম’’। (তিরমিযী ১৩৪১)

 কেউ কারোর কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কসম গ্রহণ করতে চাইলে সে ব্যক্তি কসমের শব্দ থেকে যাই বুঝবে উহার ভিত্তিতেই কসমের সত্যতা কিংবা অসত্যতা নিরূপিত হবে। কসমকারীর নিয়তের ভিত্তিতে নয়। তবে যদি কসম গ্রহণকারী যালিম হয়ে থাকে এবং কসমকারীর কথার ভিত্তিতেই সে ব্যক্তি যুলুম করার সুযোগ পাবে তখন কসমকারীর নিয়তই গ্রহণযোগ্য হবে।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَمِيْنُكَ عَلَى مَا يُصَدِّقُكَ بِهِ صَاحِبُكَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِنَّمَا الْيَمِيْنُ عَلَى نِيَّةِ الْـمُسْتَحْلِفِ.

‘‘তোমার কসম কসম গ্রহণকারী সত্য বললেই সত্য বলে বিবেচিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কসমের সত্যতা কিংবা অসত্যতা কসম গ্রহণকারীর নিয়তের উপরই নির্ভরশীল’’। (তিরমিযী ১৩৫৪; ইব্নু মাজাহ্ ২১৫০, ২১৫১)

 যাদের সাক্ষ্য গহণযোগ্য নয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আত্মসাৎকারী পুরুষ ও মহিলার সাক্ষ্য, কারোর বিপক্ষে তার শত্রুর সাক্ষ্য, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর সাক্ষ্য, কাউকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে তার বিরুদ্ধে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারার দরুন দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য, কোন পরিবারের পক্ষে তাদের কাজের লোকের সাক্ষ্য এবং শরীয়তের বিধি-বিধানের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ লোকের সাক্ষ্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

رَدَّ رَسُوْلُ اللهِ  شَهَادَةَ الْـخَائِنِ وَالْـخَائِنَةِ، وَذِيْ الْغِمْرِ عَلَى أَخِيْهِ، وَرَدَّ شَهَادَةَ الْقَانِعِ لِأَهْلِ الْبَيْتِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَلَا تَجُوْزُ شَهَادَةُ زَانٍ وَلَا زَانِيَةٍ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মসাৎকারী পুরুষ ও মহিলার সাক্ষ্য এবং কোন মুসলিম ভাইয়ের বিপক্ষে তার শত্রুর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন। তেমনিভাবে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন কোন পরিবারের পক্ষে তাদের কাজের লোকের সাক্ষ্য। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কোন ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর সাক্ষ্যও শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়’’।

(আবূ দাউদ ৩৬০০, ৩৬০১; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৯৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَجُوْزُ شَهَادَةُ بَدَوِيٍّ عَلَى صَاحِبِ قَرْيَةٍ.

‘‘কোন মরুবাসীর সাক্ষ্য শহুরে ব্যক্তির বিপক্ষে বৈধ নয়। কারণ, মরুবাসী শরীয়তের বিধি-বিধান না জানার দরুন সাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রদান সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ’’। (আবূ দাউদ ৩৬০২; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৯৬)

 বিচারের ক্ষেত্রে কোন কারণে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভবপর না হলে অন্ততপক্ষে পরস্পরের ছাড়ের ভিত্তিতে একান্ত বুঝাপড়ার মাধ্যমে কোন এক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াও জায়িয।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আমর বিন্ ‘আউফ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الصُّلْحُ جَائِزٌ بَيْنَ الْـمُسْلِمِيْنَ ؛ إِلاَّ صُلْحًا أَحَلَّ حَرَامًا أَوْ حَرَّمَ حَلَالًا.

‘‘মুসলিমদের মাঝে পরস্পরের বুঝাপড়ার ভিত্তিতে কোন এক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াও জায়িয। তবে সে সিদ্ধান্ত এমন যেন না হয় যে, তাতে কোন হারামকে হালাল করা হয়েছে অথবা হালালকে হারাম করা হয়েছে’’। (আবূ দাউদ ৩৫৯৪; তিরমিযী ১৩৫২; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৮২)

 অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের অধিকার সংরক্ষণের খাতিরে একজন সাক্ষী এবং বাদীর কসমের ভিত্তিতেও বিচার করা যেতে পারে।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আবূ হুরাইরাহ্, জাবির ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

قَضَى رَسُوْلُ اللهِ بِالْيَمِيْنِ مَعَ الشَّاهِدِ.

‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাক্ষী ও বাদীর কসমের ভিত্তিতে ফায়সালা করেন। (আবূ দাউদ ৩৬০৮, ৩৬১০; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৯৭, ২৩৯৮, ২৩৯৯)

 কোন ধরনের সুযোগ পেয়ে নিজের নয় এমন জিনিস দাবি করলে সে মুসলিম থাকে না। বরং তার ঠিকানা হয় তখন জাহান্নাম।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ ادَّعَى مَا لَيْسَ لَهُ فَلَيْسَ مِنَّا، وَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি এমন জিনিস দাবি করলো যা তার নয় তা হলে সে আমার উম্মত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪৮)

বিচারকের বিচার কোন অবৈধ বস্ত্তকে বৈধ করে দেয় না। সুতরাং কেউ বিচারের মাধ্যমে কোন কিছু পেয়ে গেলে যা তার নয় সে যেন অতিসত্বর তা মালিককে পৌঁছিয়ে দেয়। সে যেন অবৈধভাবে তা ভোগ বা ভক্ষণ না করে।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ، وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ إِلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُوْنَ أَلْـحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، وَأَقْضِيْ لَهُ عَلَى نَحْوِ مَا أَسْمَعُ، فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ مِنْ حَقِّ أَخِيْهِ شَيْئًا فَلَا يَأْخُذْ، فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنَ النَّارِ.

‘‘আমি তো মানুষ মাত্র। আর তোমরা আমার কাছে মাঝে মাঝে বিচার নিয়ে আসো। হয়তো বা তোমাদের কেউ কেউ নিজ প্রমাণ উপস্থাপনে অন্যের চাইতে অধিক পারঙ্গম। অতএব আমি শুনার ভিত্তিতেই তার পক্ষে ফায়সালা করে দেই। সুতরাং আমি যার পক্ষে তার কোন মুসলিম ভাইয়ের কিছু অধিকার ফায়সালা করে দেই সে যেন তা গ্রহণ না করে। কারণ, আমি উক্ত বিচারের ভিত্তিতে তার হাতে একটি জাহান্নামের আগুনের টুকরাই উঠিয়ে দেই’’। (বুখারী ২৪৫৮, ২৬৮০, ৬৯৬৭, ৭১৬৯, ৭১৮১, ৭১৮৫; মুসলিম ১৭১৩)

 আপনার স্বেচ্ছাচারিতা যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আপনার মালিকানাধীন জায়গায় আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না যাতে অন্য জন কষ্ট পায়। বরং এমনভাবেই আপনি আপনার জমিন ব্যবহার করবেন যাতে আপনার পাশের ব্যক্তি কোনভাবেই কষ্ট না পায়।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ ও ’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ.

‘‘না তুমি নিজ বা অন্যের ক্ষতি করতে পারো। আর না তোমরা পরস্পর (প্রতিশোধের ভিত্তিতে) একে অপরের ক্ষতি করতে পারো’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৩৬৯, ২৩৭০)

আবূ স্বিরমাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ ضَارَّ أَضَرَّ اللهُ بِهِ، وَمَنْ شَاقَّ شَقَّ اللهُ عَلَيْهِ.

‘‘যে অপরের ক্ষতি করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার ক্ষতি করবেন এবং যে অপরকে কষ্ট দিবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তাকে কষ্ট দিবেন’’। (আবূ দাউদ ৩৬৩৫; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৭১)

 কোন ধনী ব্যক্তি অন্যের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে টালবাহানা করলে অথবা কেউ কাউকে কোন ব্যাপারে অপবাদ দিলে এবং লোকটিও সে ব্যাপারে সন্দেহভাজন হলে তাকে জেলে আটকে রাখা হবে যতক্ষণ না সে উক্ত ব্যাপারে সুস্পষ্ট উক্তি করে।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শারীদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيُّ الْوَاجِدِ يُحِلَّ عِرْضَهُ وَعُقُوْبَتَهُ.

‘‘ধনী লোকের টালবাহানা তার ইয্যত বিনষ্ট করা এবং তাকে শাস্তির সম্মুখীন করাকে জায়িয করে দেয়’’। (আবূ দাউদ ৩৬২৮)

মু‘আবিয়া বিন্ ’হাইদাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন:

 رَجُلًا فِيْ تُهْمَةٍ.حَبَسَ النَّبِيُّ 

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে অপবাদের ভিত্তিতেই আটক করেন’’। (আবূ দাউদ ৩৬৩০)

 নিজেই ভুলের উপর তা জেনেশুনেও কেউ অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَاصَمَ فِيْ بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ ؛ لَمْ يَزَلْ فِيْ سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ.

‘‘কেউ যদি জেনেশুনে অন্যায় ব্যাপারে অপরের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর খুবই রাগান্বিত হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে’’। (আবূ দাউদ ৩৫৯৭)

 কেউ অবৈধভাবে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তা জেনেশুনেও অন্য কেউ এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।

 শেয়ার ও অন্যান্য 

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَعَانَ عَلَى خُصُوْمَةٍ بِظُلْمٍ ؛ لَمْ يَزَلْ فِيْ سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ.

‘‘কেউ যদি জেনেশুনে অন্যায় মূলক বিবাদে অন্যকে সহযোগিতা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর খুবই রাগান্বিত হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪৯; ’হা’কিম ৪/৯৯)

 ৩১. কারোর বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর বংশ মর্যাদা হানি করাও কবীরা গুনাহ্সমূহের অন্যতম। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় কুফরি বলে আখ্যায়িত।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اثْنَتَانِ فِيْ النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ، الطَّعْنُ فِيْ النَّسَبِ وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْـمَيِّتِ.

‘‘মানুষের মধ্যে দু’টি চরিত্র কুফরি পর্যায়ের। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে কারোর বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা আর অপরটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বিলাপ করা’’। (মুসলিম ৬৭)

 ৩২. আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া কল্যাণময় বিধানকে লঙ্ঘন করে মানব রচিত যে কোন বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা বা তা গ্রহণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া কল্যাণময় বিধানকে লঙ্ঘন করে মানব রচিত যে কোন বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা বা গ্রহণ করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَآ أَنْزَلَ اللهُ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ»

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া বিধানানুযায়ী বিচার করে না সে তো কাফির’’। (মা’য়িদাহ্ : ৪৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَآ أَنْزَلَ اللهُ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الظَّالِـمُوْنَ»

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া বিধানানুযায়ী বিচার করে না সে তো জালিম’’। (মা’য়িদাহ্ : ৪৫)

তিনি আরো বলেন:

«وَمَنْ لَّـمْ يَحْكُمْ بِمَآ أَنْزَلَ اللهُ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ»

’’যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া বিধানানুযায়ী বিচার করে না সে তো ফাসিক্ব তথা ধর্মচ্যুত নাফরমান’’। (মা’য়িদাহ্ : ৪৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে মানব রচিত আইন গ্রহণকারীদেরকেও ঈমানশূন্য তথা কাফির বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَّكْفُرُوْا بِهِ، وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيْدًا،.. فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتَّى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا»

‘‘আপনি কি ওদের ব্যাপারে অবগত নন? যারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাব ও পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের উপর ঈমান এনেছে বলে ধারণা পোষণ করছে, অথচ তারা তাগূতের (আল্লাহ্ বিরোধী যে কোন শক্তি) ফায়সালা কামনা করে। বস্ত্তত: তাদেরকে ওদের বিরুদ্ধাচরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। শয়তান চায় ওদেরকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করতে। ... অতএব আপনার প্রতিপালকের কসম! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারে না যতক্ষণ না তারা আপনাকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক বানিয়ে নেয় এবং আপনার সকল ফায়সালা নি:সঙ্কোচে তথা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়’’। (নিসা’ : ৬০-৬৫)

তবে মানব রচিত বিধান কর্তৃক বিচার কার্য পরিচালনা করার কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। যা নিম্নরূপ:

ক. যে বিচারক বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান বর্তমান যুগে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য কোনভাবেই উপযোগী নয় তা হলে সে কাফির। এ ব্যাপারে সকল মুসলিমের ঐকমত্য রয়েছে। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানকে অস্বীকার করেছে যা নিশ্চিত কুফরি।

খ. যে বিচারক বিশ্বাস করে যে, মানব রচিত বিধানই বর্তমান যুগে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী; আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান নয়, চাই তা সর্ব বিষয়েই হোক অথবা শুধুমাত্র নব উদ্ভাবিত বিষয়াবলীতে, তা হলে সেও কাফির। এ ব্যাপারেও সকল মুসলিমের ঐকমত্য রয়েছে। কারণ, সে মানব রচিত বিধানকে আল্লাহ্ তা’লার বিধানের উপর প্রাধান্য দিয়েছে, যা কুফরি।

গ. যে বিচারক বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান যেমন বর্তমান যুগে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য উপযোগী তেমনিভাবে মানব রচিত বিধানও, তা হলে সেও কাফির। কারণ, সে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমপর্যায়ে দাঁড় করিয়েছে যা শির্ক তথা কুফরিও বটে।

ঘ. যে বিচারক বিশ্বাস করে যে, বর্তমান যুগে আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানের আলোকে যেভাবে বিচার কার্য পরিচালনা করা সম্ভব তেমনিভাবে মানব রচিত যে কোন বিধানের আলোকেও বিচার কার্য পরিচালনা করা সম্ভব তা হলে সেও কাফির। যদিও সে এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানই সর্বোত্তম। কারণ, সে নিশ্চিত হারাম বস্ত্তকে হালাল মনে করছে। যা কুফরিরই অন্তর্গত।

ঙ. যে বিচারক মনে করে যে, বর্তমান যুগের শরীয়ত বিরোধী আদালতসমূহই মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল; ইসলামী শরীয়ত নয় তা হলে সেও কাফির। কারণ, সেও নিশ্চিত হারাম বস্ত্তকে হালাল মনে করছে। যা কুফরিরই অন্তর্গত।

চ. যে গ্রাম্য মোড়ল মনে করে যে, তার এ অভিজ্ঞতালব্ধ বিচারই মানুষের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় তা হলে সেও কাফির। কারণ, সেও নিশ্চিত হারাম বস্ত্তকে হালাল মনে করছে। যা কুফরিরই অন্তর্গত।

ছ. যে বিচারক মনে করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানই বিচারের ক্ষেত্রে একমাত্র গ্রহণযোগ্য বিধান; অন্য কোন মানব রচিত বিধান নয়। এর পরও সে মানব রচিত কোন বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা করে যাচ্ছে এবং সে এও মনে করছে যে, আমার এ কর্ম নীতি কখনোই ঠিক হতে পারে না তা হলে সে সত্যিই বড় পাপী। কারণ, সে নিজ স্বার্থ বা প্রবৃত্তি পূজারী। তবে সে কাফির নয়।

মানব রচিত আইন গ্রহণকারীদেরও কয়েকটি পর্যায় রয়েছে যা নিম্নরূপ:

ক. যে বিচারপ্রার্থী এ কথা জানে যে, তার প্রশাসক বা বিচারক আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান অনুযায়ী বিচার করছে না। তবুও সে তার প্রশাসক বা বিচারকেরই অনুসরণ করছে এবং এও মনে করছে যে, তার প্রশাসক বা বিচারকের বিচার কার্যই সঠিক। তারা যা হালাল বলে তাই হালাল এবং তারা যা হারাম বলে তাই হারাম তা হলে সে কাফির। কারণ, সে তার প্রশাসক বা বিচারককে তার প্রভু বানিয়ে নিয়েছে যা শির্ক তথা কুফরিও বটে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«اِتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْـمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدُوْا إِلَهًا وَّاحِدًا، لَا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ»

‘‘তারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ছেড়ে নিজেদের আলিম, ধর্ম যাজক ও মার্ইয়ামের পুত্র মাসীহ্ (ঈসা) (আঃ) কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তাদেরকে শুধু এতটুকুই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই ইবাদাত করবে। তিনি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই। তিনি তাদের শির্ক হতে একেবারেই পূতপবিত্র’’। (তাওবাহ্: ৩১)

‘আদি’ বিন্ হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَتَيْتُ النَّبِيَّ وَفِيْ عُنُقِيْ صَلِيْبٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ : يَا عَدِيُّ! اِطْرَحْ عَنْكَ هَذَا الْوَثَنَ، وَسَمِعْتُهُ يَقْرَأُ فِيْ سُوْرَةِ بَرَاءَةٍ:

«اِتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ»

قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ لَمْ يَكُوْنُوْا يَعْبُدُوْنَهُمْ وَلَكِنَّهُمْ كَانُوْا إِذَا أَحَلُّوْا لَـهُمْ شَيْئًا اِسْتَحَلُّوْهُ وَإِذَا حَرَّمُوْا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوْهُ.

‘‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে গলায় স্বর্ণের ক্রুশ ঝুলিয়ে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে ডেকে বলেন: হে ‘আদি’! এ মূর্তিটি (ক্রুশ) গলা থেকে ফেলে দাও। তখন আমি তাঁকে উক্ত আয়াতটি পড়তে শুনেছি। ‘আদি’ বলেন: মূলতঃ খ্রিষ্টানরা কখনো তাদের আলিমদের উপাসনা করতো না। তবে তারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে বিনা প্রমাণে আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতো। আর এটিই হচ্ছে আলিমদেরকে প্রভু মানার অর্থ তথা আনুগত্যের শির্ক’’। (তিরমিযী ৩০৯৫)

উক্ত বিধান আলিম ও ধর্ম যাজকদের ব্যাপারে যেমন প্রযোজ্য তেমনিভাবে বিচারক ও প্রশাসকদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

খ. যে বিচারপ্রার্থী মনে করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার বিচারই সঠিক। তার বিচারকের বিচার সঠিক নয়। আল্লাহ্ তা‘আলা যাই হালাল বলেন তাই হালাল আর তিনি যাই হারাম বলেন তাই হারাম। তবুও সে তার বিচারকের বিচারই গ্রহণ করছে তার কোন স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে তা হলে সে সত্যিই বড় পাপী। কারণ, সে স্বার্থ পূজারী। তবে সে কাফির নয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

عَلَى الْـمَرءِ الْـمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيْمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ إِلاَّ أَنْ يُّؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أَمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ.

‘‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি তার উপরস্থের যে কোন কথা শুনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে বাধ্য তা তার পছন্দসই হোক বা নাই হোক যতক্ষণ না তিনি তাকে কোন গুনাহ্’র আদেশ করেন। তবে যদি তিনি তাকে কোন গুনাহ্’র আদেশ করেন তখন তার জন্য উক্ত কথাটি শুনা ও মানা বৈধ নয়’’। (বুখারী ৭১৪৪; মুসলিম ১৮৩৯)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারী সাহাবীকে আমীর বানিয়ে একটি সেনাদল পাঠান এবং তাদেরকে তাদের আমীরের যাবতীয় কথা শুনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে আদেশ করেন। পথিমধ্যে তারা উক্ত আমীরকে কোন এক ব্যাপারে রাগিয়ে তুললে তিনি তাদেরকে আদেশ করলেন যে, তোমরা আমার জন্য কিছু জ্বালানি কাঠ একত্রিত করো। তখন তারা তাই করলো। আমীর সাহেব তাদেরকে সেগুলোতে আগুন ধরাতে বললেও তারা তাই করলো। অতঃপর তিনি তাদেরকে বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার যাবতীয় কথা শুনতে ও আমার আনুগত্য করতে আদেশ করেননি? তারা সকলেই বললো: অবশ্যই। আমীর বললেন: তা হলে তোমরা আগুনে প্রবেশ করো। তখন তারা একে অপরের চেহারা চাওয়া-চাওয়ি শুরু করলো। তারা বললো: আমরা তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছুটেই আসলাম আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে। এভাবেই কিছু সময় কেটে গেলো। ইতোমধ্যে তাঁর রাগ নেমে গেলো এবং আগুন নিভিয়ে দেয়া হলো। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:

لَوْ دَخَلُوْهَا مَا خَرَجُوْا مِنْهَا، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِيْ الْـمَعْرُوْفِ.

‘‘যদি তারা তাতে (আগুনে) প্রবেশ করতো তা হলে তারা আর সেখান থেকে বের হতে পারতো না। নিশ্চয়ই আনুগত্য হচ্ছে (কুর‘আন ও হাদীস সম্মত) সৎ কাজেই’’। (বুখারী ৭১৪৫; মুসলিম ১৮৪০)

গ. যে বিচারপ্রার্থী বাধ্য হয়েই শরীয়ত বিরোধী বিচার গ্রহণ করেছে; সন্তুষ্ট চিত্তে নয় তা হলে সে কাফিরও নয়। গুনাহ্গারও নয়।

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، فَتَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ.

‘‘তোমাদের উপর এমন আমীর নিয়োগ করা হবে যাদের কিছু কর্মকান্ড হবে মেনে নেয়ার মতো আর কিছু মেনে নেয়ার মতো নয়। সুতরাং যা মেনে নেয়ার মতো নয় তা কেউ অপছন্দ করলে সে দায়মুক্ত হলো। আর যে তা মেনে নিলো না সে নির্ভেজাল থাকলো। আর যে তাতে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো এবং তার অনুসরণ করলো সেই হবে নিশ্চিত দোষী’’। (মুসলিম ১৮৫৪)

 ৩৩. ঘুষ নিয়ে কারোর পক্ষে বা বিপক্ষে বিচার করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ঘুষ নিয়ে কারোর পক্ষে বা বিপক্ষে বিচার করাও একটি মহাপাপ এবং হারাম কাজ। তাই তো আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ খেয়ে অন্যায়ভাবে বিচারকারীকে লা’নত করেন।

আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ الرَّاشِيْ وَالْـمُرْتَشِيْ فِيْ الْـحُكْمِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেন বিচারের ব্যাপারে ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়কেই’’। (তিরমিযী ১৩৩৬, ১৩৩৭; আবূ দাউদ ৩৫৮০; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪২)

 ৩৪. কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য হালাল করা অথবা নিজের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য হালাল করে দেয়া অথবা নিজের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আরেকটি মহাপাপ এবং হারাম কাজ। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় মানুষকে লা’নত ও অভিসম্পাত করেন।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْـمُحَلِّلَ وَالْـمُحَلَّلَ لَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন (কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য) হালালকারীকে এবং যার জন্য তাকে হালাল করা হয়েছে’’। (আবূ দাউদ ২০৭৬)

জাবির, ‘আলী ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ الْـمُحَلِّلَ وَالْـمُحَلَّلَ لَهُ.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন (কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য) হালালকারীকে এবং যার জন্য তাকে হালাল করা হয়েছে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৯৬১, ১৯৬২; তিরমিযী ১১১৯, ১১২০)

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْـمُسْتَعَارِ؟ قَالُوْا: بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: هُوَ الْـمُحَلِّلُ، لَعَنَ اللهُ الْـمُحَلِّلَ وَالْـمُحَلَّلَ لَهُ.

‘‘আমি কি তোমাদেরকে ধার করা পাঁঠার সংবাদ দেবো না? সাহাবারা বললেন: হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহ্’র রাসূল। তখন তিনি বললেন: সে হচ্ছে হালালকারি। আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন (কোন মহিলাকে তিন তালাকের পর নামে মাত্র বিবাহ্ করে তালাকের মাধ্যমে অন্যের জন্য) হালালকারিকে এবং যার জন্য তা হালাল করা হয়েছে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৯৬৩)

 ৩৫. পুরুষদের মহিলার সাথে অথবা মহিলাদের পুরুষের সাথে যে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

পুরুষদের মহিলার সাথে অথবা মহিলাদের পুরুষের সাথে যে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখাও আরেকটি বড় গুনাহ্ এবং হারাম কাজ। চাই তা পোশাক-আশাকে হোক অথবা চাল-চলনে। উঠা-বসায় হোক অথবা কথা-বার্তায়। সুতরাং পুরুষরা মহিলাদের স্বর্ণের চেইন, গলার হার, হাতের চুড়ি, কানের দুল, পায়ের খাড়ু ইত্যাদি এবং মহিলারা পুরুষের পেন্ট, শার্ট, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, জুববা, পাজামা, টুপি ইত্যাদি পরতে পারে না। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় পুরুষ ও মহিলাকে অভিসম্পাত করেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ الْـمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْـمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.

‘‘আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন এমন পুরুষকে যারা মহিলাদের সাথে যে কোন ভাবে (পোশাকে, চলনে ইত্যাদি) সামঞ্জস্য বজায় রাখতে উৎসাহী এবং সে মহিলাদেরকে যারা পুরুষদের সাথে যে কোন ভাবে (পোশাকে, চলনে ইত্যাদি) সামঞ্জস্য বজায় রাখতে উৎসাহী’’। (বুখারী ৫৮৮৫, ৫৮৮৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ  الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْـمَرْأَةِ، وَالْـمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পুরুষকে লা’নত করেন যে পুরুষ মহিলার ঢঙে পোশাক পরে এবং এমন মহিলাকে লা’নত করেন যে মহিলা পুরুষের ঢঙে পোশাক পরে’’। (আবূ দাউদ ৪০৯৮; ইব্নু হিববান ৫৭৫১, ৫৭৫২; হা’কিম ৪/১৯৪; আহমাদ ২/৩২৫)

৩৬. নিজ অধীনস্থ মহিলাদের অশ্লীলতায় খুশি হওয়া অথবা তা চোখ বুজে মেনে নেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নিজ অধীনস্থ মহিলাদের অশ্লীলতায় খুশি হওয়া অথবা তা চোখ বুজে মেনে নেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম কাজ। যাকে আরবী ভাষায় দিয়াসাহ্ এবং উক্ত ব্যক্তিকে দাইয়ূস বলা হয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمُ الْـجَنَّةَ : مُـدْمِنُ الْـخَمْرِ، وَالْعَاقُّ، وَالدَّيُّوْثُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِيْ أَهْلِهِ الْـخَبَثَ.

‘‘তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তারা হলো মধ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং এমন আত্মমর্যাদাহীন বা ঈর্ষাহীন ব্যক্তি যে নিজ পরিবারবর্গের ব্যাপারে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা মেনে নেয়’’।

(আহমাদ ২/৬৯, ১২৮ সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩০৫২ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তার্হীব, হাদীস ২৩৬৬)

‘আম্মার বিন্ ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ أَبَدًا : الدَّيُّوْثُ، وَالرَّجُلَةُ مِنَ النِّسَاءِ، وَمُدْمِنُ الْـخَمْرِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَمَّا مُدْمِنُ الْـخَمْرِ فَقَدْ عَرَفْنَاهُ فَمَا الدَّيُّوْثُ؟ قَالَ: الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلَى أَهْلِهِ، قُلْنَا: فَمَا الرَّجُلَةُ مِنَ النِّسَاءِ؟ قَالَ: الَّتِيْ تَشَبَّهُ بِالرِّجَالِ.

‘‘তিন ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হলো আত্মমর্যাদাহীন বা ঈর্ষাহীন ব্যক্তি, পুরুষ মার্কা মেয়ে এবং মধ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মধ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তিকে তো আমরা চিনি তবে আত্মমর্যাদাহীন বা ঈর্ষাহীন ব্যক্তি বলতে আপনি কাকে বুঝাচ্ছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে নিজ পরিবারবর্গের নিকট কে বা কারা আসা-যাওয়া করছে এর কোন খবরই রাখে না বা এর কোন পরোয়াই করে না। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: তা হলে পুরুষ মার্কা মেয়ে বলতে আপনি কাদেরকে বুঝাতে চাচ্ছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে মহিলা পুরুষের সাথে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখে’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তার্হীব, হাদীস ২০৭১, ২৩৬৭)

আত্মমর্যাদাহীনতা বা ঈর্ষাহীনতার আরেকটি পর্যায় এই যে, কেউ নিজ মেয়ে বা স্ত্রীকে গায়রে মাহ্রাম তথা যার সাথে দেখা দেয়া হারাম এমন কারোর সাথে সরাসরি, টেলিফোন অথবা মোবাইলে কথা বলতে বা হাসাহাসি করতে কিংবা নির্জনে বসে গল্প-গুজব করতে দেখলো অথচ সে কিছুই বললো না।

আত্মমর্যাদাহীনতা বা ঈর্ষাহীনতার আরেকটি পর্যায় এও যে, কারোর কাজের ছেলে বা গাড়ি চালক তার অন্দরমহলে যখন-তখন ঢুকে পড়ছে এবং তার স্ত্রী-কন্যার সাথে কথাবার্তা বলছে। তার স্ত্রী-কন্যারা যখন-তখন গাড়ি চালকের সাথে একাকী মার্কেট, পার্ক, বিয়ে বাড়ি ইত্যাদির দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে অথচ সে তা জানা সত্ত্বেও তাদেরকে এ ব্যাপারে কিছুই বলছে না।

আত্মমর্যাদাহীনতা বা ঈর্ষাহীনতার আরেকটি পর্যায় এও যে, কারোর স্ত্রী-কন্যা বেপর্দাভাবে রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর পিপাসার্ত যুবকরা ওদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে বার বার তাকিয়ে আত্মতৃপ্ত হচ্ছে অথচ সে তা জানা সত্ত্বেও তাদেরকে এ ব্যাপারে কিছুই বলছে না।

আত্মমর্যাদাহীনতা বা ঈর্ষাহীনতার আরেকটি পর্যায় এও যে, কারোর স্ত্রী-কন্যা টিভির পর্দায় অর্ধ উলঙ্গ নায়ক-নায়িকার গলা ধরাধরি, চুমোচুমি ইত্যাদি দেখে উক্ত নায়কের প্রতি নিজের অজান্তেই আসক্ত হয়ে পড়ছে অথচ সে নিজেই জেনে-শুনে তাদের জন্য এ কুব্যবস্থা চালু করে রেখেছে। আরো কত্তো কী?

 ৩৭. প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। যা খ্রিস্টানদের একান্ত বৈশিষ্ট্য এবং যে কারণে কবরে শাস্তি পেতে হয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: بَلَى إِنَّهُ كَبِيْرٌ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ، ثُمَّ أَخَذَ جَرِيْدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا نِصْفَيْنِ، فَغَرَزَ فِيْ كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لِمَ فَعَلْتَ هَذَا ؟ قَالَ: لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا.مَرَّ النَّبِيُّ 

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন: এ দু’ জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তা আপাত দৃষ্টিতে কোন বড় অপরাধের জন্য নয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, বাস্তবে তা সত্যিই বড় অপরাধ অথবা বস্ত্তত: উক্ত দু’টি গুনাহ্ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের জন্য কোন কষ্টকরই ছিলো না। তাদের এক জন নিজ প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতার্জন করতো না আর অপর জন মানুষের মাঝে চুগলি করে বেড়াতো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দু’ ভাগ করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কেন এমন করলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হয়তো বা তাদের শাস্তি হালকা করে দেয়া হবে যতক্ষণ না ডাল দু’টি শুকাবে’’। (বুখারী ২১৮; মুসলিম ২৯২)

প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতার্জন না করার মধ্যে এটিও যে, আপনি প্রস্রাব শেষেই দ্রুত উঠে গেলেন অথচ প্রস্রাবের কয়েক ফোঁটা এখনো থেকে গেছে যা পরবর্তীতে আপনার কাপড়কে নাপাক করে দিচ্ছে অথবা প্রস্রাবের পর আপনি পানি বা ঢিলা কিছুই ব্যবহার করেননি। তাই প্রস্রাবের ফোঁটায় আপনার কাপড় নাপাক হয়ে যাচ্ছে।

এর চাইতেও আরো কঠিন অপরাধ এই যে, অনেক খ্রিস্টান মার্কা ভদ্রলোক দেয়ালে ফিট করা ইংলিশ প্রস্রাব খানায় অর্ধ উলঙ্গ হয়ে প্রস্রাব করে সাথে সাথেই কাপড় পরে নেয় অথচ সে ঢিলা বা পানি কিছুই ব্যবহার করেনি। এমতাবস্থায় দু’টি দোষ একত্রে পাওয়া যায়। খোলা জায়গায় অর্ধ উলঙ্গ হওয়া এবং পবিত্রতার্জন না করা। কখনো কখনো এ সব প্রস্রাব খানায় প্রস্রাবের পর পানি ছাড়তে গেলে প্রস্রাব গায়ে আসে। এমন অনেক কান্ড আমাদের স্বচক্ষে দেখা। যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

 ৩৮. কোন পশুর চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পশুর চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দেয়াও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় মানুষকে লা’নত ও অভিসম্পাত এবং এ জাতীয় কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الضَّرْبِ فِيْ الْوَجْهِ وَعَنِ الْوَسْمِ فِيْ الْوَجْهِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারায় প্রহার করা এবং চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দেয়া থেকে নিষেধ করেন’’। (মুসলিম ২১১৬ ইব্নু খুযাইমাহ্, হাদীস ২৫৫১)

জাবির (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ حِمَارٌ قَدْ وُسِمَ فِيْ وَجْهِهِ، فَقَالَ: لَعَنَ اللهُ الَّذِيْ وَسَمَهُ، وَفِيْ رِوَايَةِ أَبِيْ دَاوُدَ: أَمَا بَلَغَكُمْ أَنِّيْ قَدْ لَعَنْتُ مَنْ وَسَمَ الْبَهِيْمَةَ فِيْ وَجْهِهَا أَوْ ضَرَبَهَا فِيْ وَجْهِهَا.

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যার চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দেয়া হয়েছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করুক সে ব্যক্তিকে যে গাধাটির চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দিলো। আবূ দাউদের বর্ণনায় রয়েছে, তোমাদের নিকট কি এ কথা পৌঁছায়নি যে, আমি সে ব্যক্তিকে লা’নত করেছি যে কোন পশুর চেহারায় পুড়িয়ে দাগ দেয় অথবা চেহারায় মারে’’। (মুসলিম ২১১৭; আবূ দাউদ ২৫৬৪)

 ৩৯. ধর্মীয় জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তা কাউকে না বলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ধর্মীয় জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তা কাউকে না বলা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন এবং সকল লা’নতকারীরাও তাকে লা’নত করে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَآ أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْـهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِيْ الْكِتَابِ، أُوْلَآئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ، إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُوْا وَ أَصْلَحُوْا وَ بَيَّنُوْا فَأُوْلَآئِكَ أَتُوْبُ عَلَيْهِمْ، وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ»

‘‘আমি যে সকল উজ্জ্বল নিদর্শন ও হিদায়াত নাযিল করেছি তা মানুষকে কুর‘আন মাজীদে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার পরও যারা তা লুকিয়ে রাখে তাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন এবং অন্য সকল লা’নতকারীরাও তাদেরকে লা’নত করে। তবে যারা তাওবা করে নিজ কর্ম সংশোধন করে নেয় এবং লুক্কায়িত সত্য প্রকাশ করে আমি তাদের তাওবা গ্রহণ করবো। বস্ত্তত: আমিই তো তাওবা গ্রহণকারী করুণাময়। (বাক্বারাহ্ : ১৫৯-১৬০)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَآ أَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُوْنَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا أُولَآئِكَ مَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ إِلاَّ النَّارَ، وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْـهُدَى وَالْعَذَابَ بِالْـمَغْفِرَةِ، فَمَآ أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা‘আলা যে কুর‘আন মাজীদ নাযিল করেছেন তা লুকিয়ে রেখেছে এবং এর পরিবর্তে (দুনিয়ার) সামান্য সম্পদ খরিদ করে নিয়েছে তারা তো নিজ পেটে শুধু আগুন ঢুকাচেছ, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সাথে কোন কথাই বলবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ্ থেকেও পবিত্র করবেন না। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। কারণ, এরাই তো হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি খরিদ করে নিয়েছে। সুতরাং আশ্চর্য! তারা জাহান্নামের ব্যাপারে কতই না ধৈর্যশীল!’’ (বাক্বারাহ্ : ১৭৪-১৭৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 شَيْئًا أَبَدًا، لَوْلَا قَوْلُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ : «إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَآ أَنْزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ.. » إِلَى آخِرِ الْآيَتَيْنِ.وَاللهِ لَوْلَا آيَتَانِ فِيْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى مَا حَدَّثْتُ عَنْهُ يَعْنَى عَنِ النَّبِيِّ 

‘‘আল্লাহ্’র কসম! যদি দু’টি আয়াত কুর‘আন মাজীদের মধ্যে না থাকতো তা হলে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কখনো কোন কিছু (হাদীস) বর্ণনা করতাম না। আয়াত দু’টি উপরে উল্লিখিত হয়েছে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬২)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ، وَفِيْ رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَةَ : يَعْلَمُهُ فَكَتَمَهُ ؛ أُلْـجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ.

‘‘যাকে এমন কিছু জিজ্ঞাসা করা হলো যা সে জানে অথচ সে তা লুকিয়ে রেখেছে তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে’’। (আবূ দাউদ ৩৬৫৮; তিরমিযী ২৬৪৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪, ২৬৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ رَجُلٍ يَحْفَظُ عِلْمًا فَيَكْتُمُهُ ؛ إِلاَّ أُتِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلْجَمًا بِلِجَامٍ مِنَ النَّارِ.

‘‘কেউ কোন কিছু সত্যিকারভাবে জেনেও তা লুকিয়ে রাখলে তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরিয়ে উঠানো হবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬১)

 ৪০. নিরেট ধর্মীয় জ্ঞান দুনিয়া কামানো বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে শিক্ষা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নিরেট ধর্মীয় জ্ঞান দুনিয়া কামানো বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে শিক্ষা করাও আরেকটি বড় অপরাধ। তাই তো উক্ত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। বরং সে হবে তখন জাহান্নামী।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ؛ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيْبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرَفَ الْـجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন সম্পদ পাওয়ার জন্য এমন কোন জ্ঞান শিখে যা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই শিখতে হয় এমন ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না’’। (আবূ দাউদ ৩৬৬৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৫২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর, আবূ হুরাইরাহ্ ও হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ، أَوْ لِيُبَاهِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ، أَوْ لِيَصْرِفَ وُجُوْهَ النَّاسِ إِلَيْهِ فَهُوَ فِيْ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করলো এ জন্য যে, সে এরই মাধ্যমে বোকা বা মূর্খদের সাথে ঝগড়া করবে এবং আলিমদের সাথে বড়াই করবে অথবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করবে তা হলে সে জাহান্নামী’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৫৩)

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَعَلَّمُوْا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوْا بِهِ الْعُلَمَاءَ، وَلَا لِتُمَارُوْا بِهِ السُّفَهَاءَ، وَلَا تَخَيَّرُوْا بِهِ الْمَجَالِسَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارُ النَّارُ.

‘‘তোমরা ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করো না আলিমদের সাথে বড়াই এবং বেকুব বা মূর্খদের সাথে ঝগড়া অথবা কোন মজলিসের মধ্যমণি হওয়ার জন্য। কেউ এমন করলে জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৫৪)

 ৪১. যে কোন ধরনের আত্মসাৎ বা বিশ্বাসঘাতকতা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে কোন ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মসাৎ বা খেয়ানত আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম কাজ। চাই সে বিশ্বাসঘাতকতা আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথেই হোক অথবা ধর্মের সাথে। চাই সে খেয়ানত জাতীয় সম্পদেই হোক অথবা কারোর ব্যক্তিগত সম্পদে। চাই তা যুদ্ধলব্ধ সম্পদেই হোক অথবা সংগৃহীত যাকাতের মালে। চাই তা কারোর কথার আমানতেই হোক অথবা ইয্যতের আমানতে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা ঈমানের দোহাই পূর্বক সকল ঈমানদারদেরকে এমন করতে বারণ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَخُوْنُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ، وَتَخُوْنُوْا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনেশুনে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত খেয়ানত করো না’’। (আন্ফাল : ২৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা আমানতে খেয়ানতকারীকে কখনোই ভালোবাসেন না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَى سَوَاءٍ، إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْـخَائِنِيْنَ»

‘‘তুমি কোন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করলে তুমি তাদের সাথে কৃত চুক্তি তাদের মুখেই ছুঁড়ে মারো যেমনিভাবে তারাও তা তোমার সঙ্গে করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা খেয়ানতকারীদেরকে কখনোই ভালোবাসেন না’’। (আন্ফাল : ৫৮)

খেয়ানতকারীদের ষড়যন্ত্র কোনভাবেই সফলকাম হবে না।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَأَنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ كَيْدَ الْـخَائِنِيْنَ»

‘‘আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র কখনোই সফল করেন না’’। (ইউসুফ : ৫২)

আনাস্ ও আবূ উমামাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا إِيْمَانَ لِـمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ.

’’সে ব্যক্তির ঈমান নেই যার কোন আমানতদারি নেই’’। (আহমাদ ১২৩৮৩, ১২৫৬৭, ১৩১৯৯ বায্যার, হাদীস ১০০ ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস ৭৭৯৮)

কোন সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে কোন কাজ উদ্ধারের জন্য অথবা তাঁর নৈকট্যার্জনের জন্য জনগণ তাঁকে যে হাদিয়া বা উপঢৌকন দিয়ে থাকে তাও সরকারী সম্পদ হিসেবেই গণ্য। তা নিজের জন্য গ্রহণ করা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার শামিল।

আবূ ’হুমাইদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

اسْتَعْمَلَ رسُوْلُ اللهِ رَجُلًا عَلَى صَدَقَاتِ بَنِيْ سُلَيْمٍ يُدْعَى ابْنَ اللُّتْبِيَّةِ، فَلَمَّا جَاءَ حَاسَبَهُ، قَالَ: هَذَا مَالُكُمْ، وَهَذَا هَدِيَّةٌ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : فَهَلاَّ جَلَسْتَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْكَ وَأُمِّكَ حَتَّى تَأْتِيَكَ هَدِيَّتُكَ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا، ثُمَّ خَطَبَنَا، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّيْ أَسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلَى الْعَمَلِ مِمَّا وَلاَّنِيَ اللهُ فَيَأْتِيْ فَيَقُوْلُ: هَذَا مَالُكُمْ وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِيْ، أَفَلَا جَلَسَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْهِ وَأُمِّهِ حَتَّى تَأْتِيَهُ هَدِيَّتُهُ، وَاللهُ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ إِلاَّ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বনু সুলাইম গোত্রের সাদাকা উঠানোর জন্য দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন। যার নাম ছিলো ইব্নুল্ লুত্বিয়্যাহ্। সে সাদাকা উঠিয়ে ফেরৎ আসলে তার হিসাব-কিতাব নেয়া হয়। তখন সে বললো: এগুলো আপনাদের তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর এগুলো আমাকে দেয়া হাদিয়া। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি কেন নিজ বাড়িতে বসে থাকোনি? তা হলে হাদিয়াগুলো তোমার কাছে এমনিতেই এসে যেতো। যদি তুমি এতোই সত্যবাদী হয়ে থাকো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিলেন। খুতবায় আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করার পর বললেন: আমি তোমাদের কাউ কাউকে আমার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কোন দায়িত্ব দিয়ে পাঠাই। অতঃপর সে ফিরে এসে বলে: এগুলো আপনাদের তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর এগুলো আমাকে দেয়া হাদিয়া। সে কেন নিজ বাড়িতে বসে থাকেনি? তা হলে হাদিয়াগুলো তার কাছে এমনিতেই এসে যেতো। আল্লাহ্ তা‘আলার কসম খেয়ে বলছি, তোমাদের কেউ কোন বস্ত্ত অবৈধভাবে গ্রহণ করলে কিয়ামতের দিন সে তা বহন করেই আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে। তা যাই হোক না কেন’’।

(বুখারী ৬৯৭৯; মুসলিম ১৮৩২)

বন্টনের পূর্বে যুদ্ধলব্ধ কোন সম্পদ আত্মসাৎ করা হলে তা কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারীর উপর আগুন হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ يَوْمَ خَيْبَرَ، فَلَمْ نَغْنَمْ ذَهَبًا وَلَا فِضَّةً إِلاَّ الْأَمْوَالَ وَالثِّيَابَ وَالْـمَتَاعَ، فَأَهْدَى رَجُلٌ مِنْ بَنِيْ الضُّبَيْبِ يُقَالُ لَهُ رِفَاعَةُ بْنُ زَيْدٍ لِرَسُوْلِ اللهِ غُلَامًا يُقَالُ لَهُ مِدْعَمٌ، فَوَجَّهَ رَسُوْلُ اللهِ إِلَى وَادِيْ الْقُرَى، حَتَّى إِذَا كَانَ بِوَادِيْ الْقُرَى بَيْنَمَا مِدْعَمٌ يَحُطُّ رَحْلًا لِرَسُوْلِ اللهِ إِذَا سَهْمٌ عَائِرٌ فَقَتَلَهُ، فَقَالَ النَّاسُ: هَنِيْئًا لَهُ الْـجَنَّةُ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : كَلاَّ، وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِيْ أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْـمَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْـمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا.

‘‘একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খাইবার যুদ্ধে বের হলাম। সেখানে আমরা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে কোন স্বর্ণ বা রূপা পাইনি। তবে পেয়েছিলাম কিছু অন্যান্য সম্পদ, কাপড়-চোপড় ও ঘরের আসবাবপত্র। ইতিমধ্যে বনুয্ যুবাইব্ গোত্রের রিফা‘আহ্ বিন্ যায়েদ নামক জনৈক ব্যক্তি মিদ্‘আম নামক একটি গোলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাদিয়া দিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্-ক্বুরা উপত্যকার দিকে রওয়ানা করে সেখানে পৌঁছুলে গোলামটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উটের পিঠের আসনটি নিচে রাখছিলো এমতাবস্থায় একটি বিক্ষিপ্ত তীর তার গায়ে বিঁধে সে মারা গেলো। সকলে বলে উঠলো: গোলামটি কতইনা ধন্য; তার জন্য প্রস্ত্তত রয়েছে জান্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; তা কখনোই নয়। সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! খাইবারের যুদ্ধে বন্টনের পূর্বে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে সে যে চাদরটি আত্মসাৎ করেছিলো তা আগুন হয়ে (কিয়ামতের দিন) তার উপর দাউ দাউ করে জ্বলবে। (বুখারী ৬৭০৭, ৪২৩৪; মুসলিম ১১৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানতে খেয়ানতকারীকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا : إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.

‘‘চারটি চরিত্র কারোর মধ্যে পাওয়া গেলে সে খাঁটি মুনাফিক হিসেবেই বিবেচিত হবে। আর যার মধ্যে সেগুলোর একটি পাওয়া গেলো তার মধ্যে তো শুধু মুনাফিকীর একটি চরিত্রই পাওয়া গেলো যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়। উক্ত চরিত্রগুলো হলো: যখন তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হয় তখন সে তা খেয়ানত করে, যখন সে কোন কথা বলে তখন সে মিথ্যা বলে, যখন সে কারোর সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তখন সে তা ভঙ্গ করে এবং যখন সে কারোর সাথে ঝগড়া দেয় তখন সে অশ্লীল কথা বলে’’। (বুখারী ৩৪)

 ৪২. কাউকে কোন কিছু দান করে অতঃপর খোঁটা দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর প্রতি কোন প্রকার অনুগ্রহ করে অথবা তাকে কোন কিছু দান করে অতঃপর তা উল্লেখ পূর্বক খোঁটা দেয়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম কাজ। এমন কান্ড করলে উক্ত দান বা অনুগ্রহের কখনোই কোন সাওয়াব মিলবে না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى، كَالَّذِيْ يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَآءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا، لَا يَقْدِرُوْنَ عَلَى شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوْا، وَاللهُ لَا يَهْدِيْ الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের দান-সাদাকা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে বিনষ্ট করো না সে ব্যক্তির ন্যায় যে নিজ ধন-সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য উপরন্তু সে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং পরকালেও বিশ্বাসী নয়। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এমন এক মসৃণ পাথরের ন্যায় যার উপর কিছু মাটি জমেছে অতঃপর ভারি বর্ষণ হয়ে সে মাটি সরে গিয়ে শুষ্ক মসৃণ হয়ে গেলো। তারা যা অর্জন করেছে তা আর কিছুই পেলো না। মূলতঃ আল্লাহ্ তা‘আলা কাফির সম্প্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না’’। (বাক্বারাহ্ : ২৬৪)

যে ব্যক্তি কিছু দান করে অতঃপর খোঁটা দেয় আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার সাথে কোন কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করবেন না উপরন্তু তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আবূ যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ  ثَلَاثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ: خَابُوْا وَخَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: الْـمُسْبِلُ، وَالْـمَنَّانُ وَفِيْ رِوَايَةٍ: الْـمَنَّانُ الَّذِيْ لَا يُعْطِيْ شَيْئًا إِلاَّ مَنَّهُ، وَالْـمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْـحَلِفِ الْكَاذِبِ.

‘‘তিন ব্যক্তি এমন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিন বার বলেছেন। আবূ যর (রাঃ) বলেন: তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা কারা হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোন কিছু দিয়ে খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য সাপ্লাইকারী’’। (মুসলিম ১০৬)

 ৪৩. তাক্বদীরে অবিশ্বাস

 শেয়ার ও অন্যান্য 

তাক্বদীরে অবিশ্বাস করাও একটি কবীরা গুনাহ্ তথা কুফরিও বটে। তাই তো তাক্বদীরে অবিশ্বাসকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ عَاقٌّ وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ وَلَا مُكَذِّبٌ بِقَدَرٍ.

‘‘মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ্যপানে অভ্যস্ত এবং তাক্বদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (আহমাদ : ৬/৪৪১ সা’হীহাহ্, হাদীস ৬৭৫)

উবাই বিন কা’ব, ’হুযাইফাহ্, আব্দুল্লাহ্ বিন মাস্’ঊদ ও যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَوْ أَنَّ اللهَ عَذَّبَ أَهْـلَ سَمَاوَاتِهِ وَأَهْلَ أَرْضِهِ لَعَذَّبَهُمْ وَهُوَ غَيْرُ ظَالِمٍ لَـهُمْ، وَلَوْ رَحِمَهُمْ لَكَانَتْ رَحْمَتُهُ خَيْرًا لَـهُمْ مِنْ أَعْمَالِهِمْ، وَلَوْ كَانَ لَكَ جَبَلُ أُحُدٍ ذَهَبًا ـ أَوْ مِثْلُ جَبَلِ أُحُدٍ ذَهَبًا ـ تُنْفِقُهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا قَبِلَهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ كُلِّهِ، فَتَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَمَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيْبَكَ، وَأَنَّكَ إِنْ مُتَّ عَلَى غَيْرِ هَذَا دَخَلْتَ النَّارَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা যদি ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের সকলকেই শাস্তি দেন তা হলে তিনি তা দিবেন অথচ তিনি তাতে যালিম বলে বিবেচিত হবেন না। আর যদি তিনি সকলকে দয়া করেন তা হলে তাঁর দয়াই হবে তাদের জন্য সর্বোত্তম তাদের আমল চাইতেও। যদি তোমার উ’হুদ পাহাড় বা উ’হুদ পাহাড় সমতুল্য স্বর্ণ থাকে এবং তা তুমি সবই আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করে দিলে তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার পক্ষ থেকে তা কখনোই কবুল করবেন না যতক্ষণ না তুমি তাক্বদীরের (ভালো-মন্দ) পুরোটার উপরই দৃঢ় বিশ্বাস আনবে এবং এও বিশ্বাস করবে যে, তোমার ভাগ্যে যা ঘটেছে তা না ঘটে পারতো না এবং যা ঘটেনি তা কখনোই ঘটতো না। তুমি যদি এ বিশ্বাস ছাড়াই ইন্তেকাল করলে তা হলে তুমি জাহান্নামে যাবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৭৬ আবূ ‘আস্বিম/আস্-সুন্নাহ্ : ২৪৫)

যারা তাক্বদীরে অবিশ্বাসী তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় এ উম্মতের অগ্নিপূজক বলে আখ্যায়িত। তারা অসুস্থ হলে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের কুশলাদি জানা যাবে না। মরে গেলে তাদের নামাযে জানাযায় উপস্থিত হওয়া যাবে না এবং কোথাও তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে সালাম করা যাবে না।

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مَجُوْسَ هَذِهِ الْأُمَّةِ الْـمُكَذِّبُوْنَ بِأَقْدَارِ اللهِ، إِنْ مَرِضُـوْا فَلَا تَعُوْدُوْهُمْ، وَإِنْ مَاتُوْا فَلَا تَشْهَدُوْهُمْ، وَإِنْ لَقِيْتُمُوْهُمْ فَلَا تُسَلِّمُوْا عَلَيْهِمْ.

‘‘নিশ্চয়ই তাক্বদীরে অবিশ্বাসীরা এ উম্মতের অগ্নিপূজক। তারা অসুস্থ হলে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের কুশলাদি জানা যাবে না। মরে গেলে তাদের নামাযে জানাযায় উপস্থিত হওয়া যাবে না এবং কোথাও তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে সালাম করা যাবে না’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ৯১ ত্বাবারানী/সগীর, হাদীস ১২৭ আবূ ‘আস্বিম/আস্-সুন্নাহ্ : ৩২৮)

 ৪৪. কারোর দোষ অনুসন্ধান অথবা তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর দোষ অনুসন্ধান অথবা তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনদেরকে এমন করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ، إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَّلَا تَجَسَّسُوْا»

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। কারণ, কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারোর গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করো না’’। (’হুজুরাত : ১২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে উচ্চ স্বরে বলেন:

يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يُفْضِ الْإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ! لَا تُؤْذُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تُعَيِّرُوْهُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ ؛ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْـمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِيْ جَوْفِ رَحْلِهِ.

‘‘হে লোক সকল! তোমরা যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে ঢুকেনি তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিও না। তাদেরকে লজ্জা দিও না। তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না। কারণ, যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ অনুসন্ধান করলো আল্লাহ্ তা‘আলাও তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর যার দোষ আল্লাহ্ তা‘আলা অনুসন্ধান করবেন তাকে অবশ্যই তিনি লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন যদিও সে নিজ ঘরের অভ্যন্তরেই অবস্থান করুক না কেন’’। (তিরমিযী ২০৩২)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيْثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُوْنَ، أَوْ يَفِرُّوْنَ مِنْهُ صُبَّ فِيْ أُذُنِهِ الْآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা গুপ্তভাবে শুনলো; অথচ সে তাদের কথাগুলো শুনুক তারা তা পছন্দ করছে না অথবা তারা তার অবস্থান টের পেয়ে তার থেকে দূরে পালিয়ে যাচ্ছে কিয়ামতের দিন এ জন্য তার কানে সিসা ঢেলে দেয়া হবে’’। (বুখারী ৭০৪২)

মু‘আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

إِنَّكَ إِنِ اتَّبَعْتَ عَوْرَاتِ النَّاسِ أَفْسَدْتَهُمْ، أَوْ كِدْتَ أَنْ تُفْسِدَهُمْ.

‘‘নিশ্চয়ই তুমি মানুষের দোষ অনুসন্ধান করলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিবে অথবা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিবে’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮৮)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) এর নিকট জনৈক ব্যক্তিকে আনা হলো যার দাড়ি থেকে তখনো মদের ফোঁটা ঝরছিলো অতঃপর তিনি বললেন:

إِنَّا قَدْ نُهِيْنَا عَنِ التَّجَسُّسِ، وَلَكِنْ إِنْ يَّظْهَرْ لَنَا شَيْءٌ نَأْخُذْ بِهِ.

‘‘আমাদেরকে গোয়েন্দাগিরি বা কারোর দোষ অনুসন্ধান করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে আমাদের নিকট কোন কিছু প্রকাশ পেলেই তখন সে জন্য আমরা তাকে পাকড়াও করতে পারি’’। (আবূ দাউদ ৪৮৯০)

কেউ কারোর ঘরে তার অনুমতি ছাড়াই উঁকি মারলে ঘরের মালিক কোন বস্ত্ত দিয়ে তার চোখ ফুটো করে দিলে এর জন্য তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَوْ أَنَّ امْرًَا اطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ إِذْنٍ فَخَذَفْتَهُ بِحَصَاةٍ، فَفَقَأْتَ عَيْنَهُ، لَمْ يَكُنْ عَلَيْكَ جُنَاحٌ.

‘‘কোন ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া তোমার ঘরে উঁকি মারলে অতঃপর তুমি কুঁচি পাথর অথবা কঙ্কর মেরে তার চোখ ফুটো করে দিলে এতে তোমার কোন গুনাহ্ হবে না’’। (বুখারী ৬৯০২; মুসলিম ২১৫৮)

 ৪৫. চুগলি (চুগলখোর) করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

চুগলি(চুগলখোর) করা তথা মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব লাগানোর জন্য একের কথা অন্যের কাছে লাগানো কবীরা গুনাহ্। মানুষে মানুষে বৈরিতা-বিদ্বেষ, আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছেদ এবং মুসলিমদের মাঝে পরস্পর শত্রুতা জন্ম নেয়ার এ এক বড় কারণ। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এ জাতীয় ব্যক্তির আনুগত্য করতে নিষেধ করেন। চাই সে যতই সম্পদশালী হোক না কেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلاَّفٍ مَّهِيْنٍ، هَمَّازٍ مَّشَّآءٍ بِنَمِيْمٍ، مَّنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيْمٍ، عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيْمٍ أَنْ كَانَ ذَا مَالٍ وَّبَنِيْنَ»

‘‘তুমি অনুসরণ করো না এমন প্রত্যেক ব্যক্তির যে কথায় কথায় কসম খায়, লাঞ্ছিত, পরনিন্দুক, চুগলখোর, কল্যাণকর কাজে বাধা প্রদানকারী, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, রূঢ় স্বভাবের অধিকারী এবং সর্বোপরি সে কুখ্যাত। এ জন্য অনুসরণ করো না যে, সে ব্যক্তি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধশালী’’। (ক্বালাম : ১০-১৪)

চুগলি করা কবরের আযাবের বিশেষ একটি কারণ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَرَّ النَّبِيُّ  بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: بَلَى إِنَّهُ كَبِيْرٌ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ، ثُمَّ أَخَذَ جَرِيْدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا نِصْفَيْنِ، فَغَرَزَ فِيْ كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لِمَ فَعَلْتَ هَذَا ؟ قَالَ: لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا.

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন: এ দু’ জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তা আপাত দৃষ্টিতে কোন বড় অপরাধের জন্য নয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, বাস্তবে তা সত্যিই বড় অপরাধ অথবা বস্ত্তত: উক্ত দু’টি গুনাহ্ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের জন্য কোন কষ্টকরই ছিলো না। তাদের এক জন নিজ প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতার্জন করতো না আর অপর জন মানুষের মাঝে চুগলি করে বেড়াতো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দু’ ভাগ করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কেন এমন করলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হয়তো বা তাদের শাস্তি হালকা করে দেয়া হবে যতক্ষণ না ডাল দু’টি শুকাবে’’। (বুখারী ২১৮; মুসলিম ২৯২)

চুগলখোর জান্নাতে যাবে না।

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ قَتَّاتٌ وَفِيْ رِوَايَةٍ: نَمَّامٌ.

‘‘চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (বুখারী ৬০৫৬; মুসলিম ১০৫)

কেউ কারোর সাথে কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকালে তা আর অন্যের কাছে বলা যাবে না। বরং উক্ত কথাগুলোকে আমানত হিসেবেই ধরে নিতে হবে।

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا حَدَّثَ الرَّجُلُ بِالْـحَدِيْثِ ثُمَّ الْتَفَتَ ؛ فَهِيَ أَمَانَةٌ.

‘‘কোন ব্যক্তি কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকালে তা আমানত হিসেবেই ধরে নিতে হবে’’। (আবূ দাউদ ৪৮৬৮)

তবে কারোর কাছে অন্যের ব্যাপারে মীমাংসার নিয়তে ভালো কথা লাগানো মিথ্যা অথবা চুগলি নয়।

উম্মে কুলসূম (রাযিয়াললাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَمْ يَكْذِبْ مَنْ نَمَى بَيْنَ اِثْنَيْنِ لِيُصْلِحَ وَفِيْ لَفْظٍ: لَيْسَ بِالْكَاذِبِ مَنْ أَصْلَحَ بَيْنَ النَّاسِ ؛ فَقَالَ خَيْرًا أَوْ نَمَى خَيْرًا.

‘‘সে ব্যক্তি মিথ্যা বলেনি যে দু’ জনের মাঝে মীমাংসার জন্য চুগলি করলো। অন্য শব্দে এসেছে, সে ব্যক্তি মিথ্যুক নয় যে মানুষের মাঝে মীমাংসা করলো এবং তা করতে গিয়ে ভালো কথা বললো অথবা ভালো কথার চুগলি করলো’’। (আবূ দাউদ ৪৯২০)

কেউ কারোর নিকট অন্যের ব্যাপারে চুগলি করলে তার করণীয় হবে ছয়টি কাজ। যা নিম্নরূপ:

ক. তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করবে না। কারণ, সে ফাসিক। আর ফাসিকের সংবাদ শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।

খ. তাকে এ মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং তাকে সদুপদেশ দিবে।

গ. তাকে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য ঘৃণা করবে। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটও সত্যিই ঘৃণিত।

ঘ. যার সম্পর্কে সে চুগলি করেছে তার সম্পর্কে আপনি খারাপ ভাববেন না।

ঙ. এরই কথার কারণে আপনি ওর পেছনে পড়বেন না।

চ. উক্ত চুগলি সে অন্যের নিকট বর্ণনা করতে যাবে না।

৪৬. কাউকে লা’নত বা অভিসম্পাত করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে লা’নত বা অভিসম্পাত করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে লা’নত করা তাকে হত্যা করার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সাবিত বিন্ যাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَمَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ.

‘‘কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে লা’নত করা তাকে হত্যা করার সমতুল্য’’। (বুখারী ৬০৪৭)

লা’নত করা তো কোনভাবেই মু’মিনের চরিত্র হতে পারে না।

কাউকে লা’নত করা কোন সিদ্দীক তথা বিনা দ্বিধায় নবী আদর্শের সত্যিকার অনুসারী এমনকি সাধারণ কোন মু’মিনেরও বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْبَغِيْ لِصِدِّيْقٍ أَنْ يَّكُوْنَ لَعَّانًا.

‘‘কোন সিদ্দীকের জন্য উচিৎ নয় যে, সে লা’নতকারী হবে’’। (মুসলিম ২৫৯৭)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَكُوْنُ الْـمُؤْمِنُ لَعَّانًا.

‘‘মু’মিন তো কখনো লা’নতকারী হতে পারে না’’। (তিরমিযী ২০১৯)

কাউকে লা’নত করলে সে ব্যক্তি লা’নতের উপযুক্ত না হলে উক্ত লা’নত লা’নতকারীর উপরই প্রত্যাবর্তন করবে।

উম্মুদ্দারদা’ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আবুদ্দারদা’ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئًا صَعِدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ، فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ دُوْنَهَا، ثُمَّ تَهْبِطُ إِلَى الْأَرْضِ، فَتُغْلَقُ أَبْوَابُهَا دُوْنَهَا، ثُمَّ تَأْخُذُ يَمِيْنًا وَشِمَالًا، فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَاغًا رَجَعَتْ إِلَى الَّذِيْ لُعِنَ، فَإِنْ كَانَ لِذَلِكَ أَهْلًا، وَإِلاَّ رَجَعَتْ إِلَى قَائِلِهَا.

‘‘নিশ্চয়ই কোন বান্দাহ্ কোন বস্ত্তকে লা’নত করলে উক্ত লা’নত আকাশের দিকে উঠে যায়। ইতিমধ্যেই আকাশের দরোজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা আকাশে উঠতে না পেরে জমিনের দিকে নেমে আসে। ইতিমধ্যেই জমিনের দরোজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা ডানে-বাঁয়ে পথ খোঁজাখুঁজি করে। পরিশেষে কোন ক্ষেত্র না পেয়ে তা লা’নতকৃত ব্যক্তির নিকটই ফিরে আসে। যদি সে উক্ত লা’নতের উপযুক্তই হয়ে থাকে তা হলে তো ভালোই নতুবা তা লা’নতকারীর দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে’’। (আবূ দাউদ ৪৯০৫)

লা’নতকারী শহীদ ও সুপারিশকারী হতে পারবে না।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَكُوْنُ اللَّعَّانُوْنَ شُفَعَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘লা’নতকারীরা কিয়ামতের দিন কখনো শহীদ ও সুপারিশকারী হতে পারবে না’’। (মুসলিম ২৫৯৮; আবূ দাউদ ৪৯০৭)

কেউ কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে লা’নত করলে তিনি অন্যের কাছে তাঁর নিজ সম্মান হারিয়ে ফেলেন।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ  فِيْ بَعْـضِ أَسْفَارِهِ، وَامْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ عَلَى نَاقَةٍ، فَضَجِرَتْ فَلَعَنَتْهَا، فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللهِ  فَقَالَ: خُذُوْا مَا عَلَيْهَا وَدَعُوْهَا، فَإِنَّهَا مَلْعُوْنَةٌ.

‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর করছিলেন এমতাবস্থায় জনৈকা আন্সারী মহিলা নিজ উটের উপর বিরক্ত হয়ে তাকে লা’নত করলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে সাহাবাদেরকে বললেন: তোমরা তার সকল আসবাবপত্র নামিয়ে লও এবং তাকে এমনিতেই ছেড়ে দাও। কারণ, সে লা’নতপ্রাপ্তা’’।(মুসলিম ২৫৯৫)

 ৪৭. কারোর সাথে কোন ব্যাপারে চুক্তি বা ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর সাথে কোন ব্যাপারে চুক্তি বা ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো এ জাতীয় ব্যক্তিকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا : إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.

‘‘চারটি চরিত্র কারোর মধ্যে পাওয়া গেলে সে খাঁটি মুনাফিক হিসেবেই বিবেচিত হবে। আর যার মধ্যে সেগুলোর একটি পাওয়া গেলো তার মধ্যে তো শুধু মুনাফিকীর একটি চরিত্রই পাওয়া গেলো যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়। উক্ত চরিত্রগুলো হলো: যখন তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হয় তখন সে তা খেয়ানত করে, যখন সে কোন কথা বলে তখন সে মিথ্যা বলে, যখন সে কারোর সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তখন সে তা ভঙ্গ করে এবং যখন সে কারোর সাথে ঝগড়া দেয় তখন সে অশ্লীল কথা বলে’’। (বুখারী ৩৪)

কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চুক্তি ভঙ্গকারী বা ওয়াদা খেলাফীর পাছার নিকট একটি করে ঝান্ডা প্রোথিত থাকবে এবং যা দিয়ে সে কিয়ামতের দিন বিশ্ব জন সমাবেশে পরিচিতি লাভ করবে।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُعْرَفُ بِهِ.

‘‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চুক্তি ভঙ্গকারীর একটি করে ঝান্ডা হবে যা দিয়ে সে পরিচিতি লাভ করবে’’। (মুসলিম ১৭৩৭)

আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ عِنْدَ اسْتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চুক্তি ভঙ্গকারীর একটি করে ঝান্ডা হবে যা তার পাছার নিকট প্রোথিত থাকবে’’। (মুসলিম ১৭৩৮)

আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لَهُ بِقَدْرِ غَدْرِهِ، أَلَا وَلَا غَادِرَ أَعْظَمُ غَدْرًا مِنْ أَمِيْرِ عَامَّةٍ.

‘‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চুক্তি ভঙ্গকারীর একটি করে ঝান্ডা হবে যা তার চুক্তি ভঙ্গের পরিমাণ অনুযায়ী উত্তোলন করা হবে। জেনে রাখো, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় চুক্তি ভঙ্গকারী আর কেউ হতে পারে না যে সাধারণ জনগণের দায়িত্বভার হাতে নিয়ে তাদের সঙ্গেই চুক্তি ভঙ্গ করে’’। (মুসলিম ১৭৩৮)

 ৪৮. কোন মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য হওয়াও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এ জাতীয় মহিলাদের জন্য পর্যায়ক্রমে কয়েকটি শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَاللَّاتِيْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوْهُنَّ وَاهْجُرُوْهُنَّ فِيْ الْـمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوْهُنَّ، فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوْا عَلَيْهِنَّ سَبِيْلًا، إِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيْرًا»

‘‘আর যে নারীদের তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও তথা আল্লাহ্ তা‘আলার আযাবের ভয়-ভীতি দেখাও, তাদেরকে শয্যায় পরিত্যাগ করো এবং প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করো। এতে করে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের ব্যাপারে আর অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সমুন্নত মহীয়ান’’। (নিসা’ : ৩৪)

কোন মহিলা তার স্বামীর প্রয়োজনের ডাকে সাড়া না দিলে যদি সে তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে তা হলে ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকেন যতক্ষণ না সে সকালে উপনীত হয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْـمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.

‘‘কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীকে তার শয্যার দিকে ডাকলে সে যদি তাতে সাড়া না দেয় অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে তা হলে ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকে যতক্ষণ না সে সকালে উপনীত হয়’’। (বুখারী ৩২৩৭; মুসলিম ১৪৩৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ! مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُوْ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا، فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلاَّ كَانَ الَّذِيْ فِيْ السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا.

‘‘সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! কোন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে তার শয্যার দিকে ডাকলে সে যদি তাতে সাড়া দিতে অস্বীকার করে তা হলে সে সত্তা যিনি আকাশে রয়েছেন (আল্লাহ্ তা‘আলা) তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন যতক্ষণ না তার উপর তার স্বামী সন্তুষ্ট হয়’’। (বুখারী ৩২৩৭, ৫১৫৩; মুসলিম ১৪৩৬)

কোন মহিলা নিজ স্বামীর সমূহ অধিকার আদায় না করলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার সমূহ অধিকার আদায় করেছে বলে ধর্তব্য হবে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَّسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لَأَمَرْتُ الْـمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ! لَا تُؤَدِّيْ الْـمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا كُلِّهِ، حَتَّى لَوْ سَأَلَـهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ.

‘‘আমি যদি কাউকে আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম তা হলে মহিলাকে তাঁর স্বামীর জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম। কারণ, সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! কোন মহিলা নিজ প্রভুর সমূহ অধিকার আদায় করেছে বলে ধর্তব্য হবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর সমূহ অধিকার আদায় করে। এমনকি কোন মহিলাকে তার স্বামী সহবাসের জন্য ডাকলে তাতে তার অস্বীকার করার কোন অধিকার নেই। যদিও সে তখন উটের পিঠে আরোহণ অবস্থায় থাকুক না কেন’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৮৮০; আহমাদ ৪/৩৮১ ইব্নু হিববান/ইহ্সান, হাদীস ৪১৫৯ বায়হাক্বী ৭/২৯২)

স্বামীর সন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জান্নাত এবং তার অসন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জাহান্নাম।

একদা জনৈকা সাহাবী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার স্বামীর কথা উল্লেখ করলে তিনি তাকে বলেন:

انْظُرِيْ أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ، فَإِنَّهُ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ.

‘‘ভেবে দেখো তার সাথে তুমি কি ধরনের আচরণ করছো! কারণ, সেই তো তোমার জান্নাত এবং সেই তো তোমার জাহান্নাম’’।

(আহমাদ ৪/৩৪১ নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩ ইব্নু আবী শাইবাহ্ ৪/৩০৪; হা’কিম ২/১৮৯ বায়হাক্বী ৭/২৯১)

কোন মহিলা তার স্বামীর অবদানসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি কখনো সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى امْرَأَةٍ لَا تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا، وَهِيَ لَا تَسْتَغْنِيْ عَنْهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন মহিলার দিকে (সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে) তাকান না যে নিজ স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; অথচ সে তার স্বামীর প্রতি সর্বদাই মুখাপেক্ষিণী’’। (নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ২৪৯, ২৫০; হা’কিম ২/১৯০ বায়হাক্বী ৭/২৯৪ খতীব ৯/৪৪৮)

কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রী তথা ’হূররা সে মহিলাকে তিরস্কার করতে থাকে।

মু‘আয বিন্ জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُؤْذِيْ امْرَأَةٌ زَوْجَهَا إِلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْـحُوْرِ الْعِيْنِ: لَا تُؤْذِيْهِ، قَاتَلَكِ اللهُ ! فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيْلٌ، أَوْشَكَ أَنْ يُّفَارِقَكِ إِلَيْنَا.

‘‘কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রীরা বলে: তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ্ তোমাকে ধ্বংস করুক! কারণ, সে তো তোমার কাছে কিছু দিনের জন্য। বেশি দেরি নয় যে, সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২০৪৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা, তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং স্বামীর আনুগত্যহীনতার কারণেই অধিকাংশ মহিলারা জাহান্নামে যাবে।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اطَّلَعْتُ فِيْ الْـجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ فِيْ النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ.

‘‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখতে পেলাম, জান্নাতীদের অধিকাংশই গরীব শ্রেণীর এবং জাহান্নামে উঁকি মেরে দেখতে পেলাম, জাহান্নামীদের অধিকাংশই মহিলা’’। (বুখারী ৩২৪১; মুসলিম ২৭৩৮)

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ! تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّيْ أُرِيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ، فَقُلْنَ: وَبِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ.

‘‘হে মহিলারা! তোমরা (বেশি বেশি) সাদাকা করো। কারণ, আমি তোমাদেরকেই জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী রূপে দেখেছি। মহিলারা বললো: কেন হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা বেশি লা’নত করে থাকো এবং স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করো না’’। (বুখারী ৩০৪; মুসলিম ৮০)

 ৪৯. যে কোন প্রাণীর চিত্রাঙ্কন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে কোন প্রাণীর চিত্রাঙ্কন করাও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। কিয়ামতের দিন এ জাতীয় চিত্রাঙ্কনকারীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ.

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব কঠিন

শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা (বিনা প্রয়োজনে) ছবি তোলে বা তৈরি করে’’। (বুখারী ৫৯৫০; মুসলিম ২১০৯)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে এসে দেখলেন, আমি আমার বৈঠকখানা তথা খেলনাপাতি রাখার জায়গাকে এমন একটি পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছি যার উপর কিছু ছবি অঙ্কিত ছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন:

أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ.

‘‘কিয়ামতের দিন সর্ব কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়’’।

(বুখারী ৫৯৫৪; মুসলিম ২১০৭; বাগাওয়ী ৩২১৫ নাসায়ী : ৮/২১৪ বায়হাক্বী : ২৬৯)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) বলেন: অতঃপর আমি সে ছিঁড়া পর্দাটি দিয়ে হেলান দেয়ার জন্য একটি বা দু’টি তাকিয়া বানিয়ে নিয়েছি।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِيْ النَّارِ، يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَتُعَذِّبُهُ فِيْ جَهَنَّمَ.

‘‘প্রত্যেক ছবিকার জাহান্নামী। প্রত্যেক ছবির পরিবর্তে তার জন্য একটি করে প্রাণী ঠিক করা হবে যে তাকে সর্বদা জাহান্নামের মধ্যে শাস্তি দিতে থাকবে’’। (মুসলিম ২১১০)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

مَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً فِيْ الدُّنْيَا كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا الرُّوْحَ، وَلَيْسَ بِنَافِخٍ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন ছবি এঁকেছে কিয়ামতের দিন তাকে এ ছবিগুলোতে রূহ্ দিতে বলা হবে। কিন্তু সে কখনোই তা করতে পারবে না’’।

(বুখারী ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২; মুসলিম ২১১০; বাগাওয়ী ৩২১৯ নাসায়ী : ৮/২১৫ ইব্নু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪-৪৮৫; আহমাদ : ১/২৪১, ৩৫০; ত্বাবারানী/কাবীর ১২৯০০)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يُقَالُ لَـهُمْ: أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ، وَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ لَا تَدْخُلُ بَيْتًا فِيْهِ الصُّوْرَةُ.

‘‘নিশ্চয়ই এ সকল ছবিকারদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা যা বানিয়েছো তাতে জীবন দাও। কিন্তু তারা কখনো তা করতে পারবে না। নিশ্চয়ই ফিরিশ্তারা এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে ছবি রয়েছে’’। (বুখারী ২১০৫, ৫৯৫৭; মুসলিম ২১০৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা চিত্রাঙ্কনকারীদেরকে সর্ব বৃহৎ জালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْـقِيْ، فَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً، وَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً، وَلْيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً.

‘‘ওই ব্যক্তির ন্যায় জালিম আর কেউ হতে পারে না? যে আমার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়। মূলতঃ সে কখনোই তা করতে পারবে না। যদি সে তা করতে পারবে বলে দাবি করে তাহলে সে যেন একটি দানা, একটি পিঁপড়া এবং একটি যব বানিয়ে দেখায়’’। (বুখারী ৫৯৫৩, ৭৫৫৯; মুসলিম ২১১১ বায়হাক্বী : ৭/২৬৮; বাগাওয়ী ৩২১৭ ইব্নু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪; আহমাদ : ২/২৫৯, ৩৯১, ৪৫১, ৫২৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَهَا عَيْنَانِ تُبْصِرَانِ، وَأُذُنَانِ تَسْمَعَانِ، وَلِسَانٌ يَنْطِقُ، يَقُوْلُ: إِنِّيْ وُكِّلْتُ بِثَلَاثَةٍ: بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ، وَبِكُلِّ مَنْ دَعَا مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ، وَبِالْـمُصَوِّرِيْنَ.

‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে ঘাড় সহ একটি মাথা বের হবে যার দু’টি চোখ হবে যা দিয়ে সে দেখবে, দু’টি কান হবে যা দিয়ে সে শুনবে এবং একটি জিহবা হবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। সে বলবে: তিন জাতীয় মানুষকে শাস্তি দেয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা হচ্ছে, প্রত্যেক প্রভাবশালী গাদ্দার, প্রত্যেক এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অন্য কাউকে শরীক করেছে এবং ছবি অঙ্কনকারীরা’’। (তিরমিযী ২৫৭৪; আহমাদ ৮৪৩০)

কারোর ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকলে সে ঘরে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করবেন না।

আবূ ত্বাল্হা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَدْخُلُ الْـمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا تَصَاوِيْرُ.

‘‘যে ঘরে কুকুর এবং (কোন প্রাণীর) ছবি রয়েছে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশ্তা প্রবেশ করবেন না’’। (বুখারী ৫৯৪৯; মুসলিম ২১০৬)

 ৫০. বিপদের সময় ধৈর্যহীন হয়ে বিলাপ ধরা, মাথা, গাল বা বুকে আঘাত করা, মাথার চুল বা পরনের জামাকাপড় ছেঁড়া, মাথা মুন্ডন করা এবং নিজের সমূহ ধ্বংস বা যে কোন অকল্যাণ কামনা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর উপর আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোন বিপদ আসলে তাতে অধৈর্য হয়ে বিলাপ করা, মাথা, গাল বা বুকে আঘাত করা, মাথার চুল বা পরনের জামাকাপড় ছেঁড়া, মাথা মুন্ডন করা বা নিজের সমূহ ধ্বংস কিংবা যে কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اثْنَتَانِ فِيْ النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ، الطَّعْنُ فِيْ النَّسَبِ وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْـمَيِّتِ.

‘‘মানুষের মধ্যে দু’টি চরিত্র কুফরি পর্যায়ের। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কারোর বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা আর অপরটি হচ্ছে কোন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বিলাপ করা’’। (মুসলিম ৬৭)

আবূ মালিক আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ.

‘‘বিলাপকারিণী মহিলা মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করলে তাকে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে জ্বালানি তেল বা আলকাতরার পোশাক পরিয়ে এবং চর্ম রোগ বা খোস-পাঁচড়ার জামা গায়ে জড়িয়ে’’। (মুসলিম ৯৩৪)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْـخُدُوْدَ، وَشَقَّ الْـجُيُوْبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْـجَاهِلِيَّةِ.

‘‘সে আমার উম্মত নয় যে (বিপদে পড়ে ক্ষিপ্ত হয়ে) নিজ গন্ড দেশে সজোরে আঘাত করে, বুকের কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহিলী যুগের বিলাপ ধরে’’। (বুখারী ১২৯৪, ১২৯৭, ১২৯৮; মুসলিম ১০৩; নাসায়ী ১৮৬২, ১৮৬৪; ইব্নু মাজাহ্ ১৬০৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় মহিলাকে লা’নত করেছেন এবং তার থেকে নিজ দায়মুক্তি ও অসম্পৃক্ততা ঘোষণা করেছেন।

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

إِنَّ رَسُوْلَ الله  لَعَنَ مَنْ حَلَقَ أَوْ سَلَقَ أَوْ خَرَقَ.

’’নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেছেন মাথা মুন্ডনকারিণী, বিলাপকারিণী ও পোশাক ছিন্নকারিণী মহিলাকে’’। (নাসায়ী ১৮৬৯)

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ  لَعَنَ الْـخَامِشَةَ وَجْهَهَا، وَالشَّاقَّةَ جَيْبَهَا، وَالدَّاعِيَةَ بِالْوَيْلِ وَالثُّبُوْرِ.

‘‘নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেছেন সে মহিলাকে যে নিজ চেহারায় খামচি মারে, নিজ বুকের কাপড় ছিঁড়ে এবং নিজ ধ্বংসকে আহবান করে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৬০৭)

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ  بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ وَالْـحَالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ.

‘‘নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাপকারিণী, মাথা মুন্ডনকারিণী ও পোশাক ছিন্নকারিণী মহিলা থেকে নিজ দায়মুক্তি ঘোষণা করেন’’। (বুখারী ১২৯৬; মুসলিম ১০৪; ইব্নু মাজাহ্ ১৬০৮)

কেউ জীবিত থাকাবস্থায় নিজ পরিবারকে বিলাপের ব্যাপারে সতর্ক না করলে সে মারা যাওয়ার পর তার পরিবার তার জন্য বিলাপ করলে তাকে সে জন্য কবরে শাস্তি দেয়া হবে।

’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمَيِّتُ يُعَذَّبُ فِيْ قَبْرِهِ بِمَا نِيَحَ عَلَيْهِ.

‘‘মৃত ব্যক্তিকে তার উপর কারোর বিলাপের কারণে তার কবরেই তাকে শাস্তি দেয়া হবে’’। (বুখারী ১২৯২)

 ৫১. কোন মুসলিমকে গালি বা যে কোনভাবে কষ্ট দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মুসলিমকে গালি বা যে কোনভাবে কষ্ট দেয়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্। যদিও সে লোকটি মৃত হোক না কেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَّإِثْمًا مُّبِيْنًا

‘‘যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কোন অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয় তারা অপবাদ ও সুপষ্ট গুনাহ্’র বোঝা বহন করে’’। (আহযাব : ৫৮)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

سِبَابُ الْـمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.

‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং হত্যা করা কুফরি’’। (বুখারী ৬০৪৪, ৭০৭৬; মুসলিম ৬৪)

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَسُبُّوْا الْأَمْوَاتَ، فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قَدَّمُوْا.

‘‘তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কারণ, তারা দুনিয়াতে যা করেছে তার ফলাফল তো এমনিতেই ভোগ করবে’’। (বুখারী ১৩৯৩, ৬৫১৬)

কোন কোন মানুষ অন্যের অনিষ্ট করতে বা তাকে কষ্ট দিতে সিদ্ধহস্ত। তাই অন্যরা সাধ্যমতো তার থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। এমন মানুষ আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ.

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে যাকে অন্যরা পরিত্যাগ করে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে’’। (বুখারী ৬০৩২; মুসলিম ২৫৯১)

একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সুতরাং সে তার উপর যুলুম করতে পারে না, তার অসহযোগিতা করতে পারে না এবং তাকে নীচও ভাবতে পারে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمُسْلِمُ أَخُوْ الْـمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ.. بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَّحْقِرَ أَخَاهُ الْـمُسْلِمَ، كُلُّ الْـمُسْلِمِ عَلَى الْـمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.

‘‘একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সুতরাং সে তার উপর যুলুম করতে পারে না, তার অসহযোগিতা করতে পারে না এবং তাকে নীচও ভাবতে পারে না। একজন ব্যক্তির নিকৃষ্ট প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অন্য মুসলিম ভাইকে নীচ বলে মনে করবে। একজন মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও ইয্যত হারাম। সে তা কোনভাবেই হনন বা ক্ষুণ্ণ করতে পারে না’’। (মুসলিম ২৫৬৪)

 ৫২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদেরকে গালি দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদেরকে গালি দেয়া আরেকটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ، لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ، فَوَ الَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ! لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ.

‘‘তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালি দিও না। তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালি দিও না। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমাদের কেউ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় উহুদ্ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ সাদাকা করলেও তাদের কারোর এক অঞ্জলি সমপরিমাণ অথবা তার অর্ধেকের সাওয়াব পাবে না’’। (মুসলিম ২৫৪০)

আবূ সাঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা খালিদ বিন্ ওলীদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন্ ‘আউফ (রাঃ) এর মাঝে কোন একটি ব্যাপার নিয়ে মনোমালিন্য হলে খালিদ বিন্ ওলীদ (রাঃ) আব্দুর রহমান বিন্ ‘আউফ (রাঃ) কে গালি দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেয়ে খালিদ বিন্ ওলীদ (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন:

لَا تَسُبُّوْا أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِيْ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَوْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ.

‘‘তোমরা আমার (প্রথম যুগের) কোন সাহাবাকে গালি দিও না। কারণ, তোমাদের কেউ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় উহুদ্ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ সাদাকা করলেও তাদের কারোর এক অঞ্জলি সমপরিমাণ অথবা তার অর্ধেকের সাওয়াব পাবে না’’। (বুখারী ৩৬৭৩; মুসলিম ২৫৪১)

যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদেরকে গালি দেয় তাদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত পতিত হবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَبَّ أَصْحَابِيْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ.

‘‘যে ব্যক্তি আমার কোন সাহাবাকে গালি দিলো তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত পতিত হোক’’। (ত্বাবারানী/কবীর ১২৭০৯ সা’হীহুল্ জামি’, হাদীস ৫২৮৫)

‘আলী, আন্সারী সাহাবীগণ এমনকি যে কোন সাহাবীকে ভালোবাসা ঈমানের পরিচায়ক।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

وَالَّذِيْ فَلَقَ الْـحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ! إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ  إِلَيَّ أَنْ لَا يُحِبَّنِيْ إِلاَّ مُؤْمِنٌ، وَلَا يُبْغِضُنِيْ إِلاَّ مُنَافِقٌ.

‘‘সে সত্তার কসম যিনি বীজ থেকে উদ্ভিদ এবং সকল প্রাণী করেছেন! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: একমাত্র মু’মিনই তোমাকে ভালোবাসবে এবং একমাত্র মুনাফিকই তোমার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে’’। (মুসলিম ৭৮)

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

آيَةُ الْإِيْمَانِ حُبُّ الْأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الْأَنْصَارِ.

‘‘আন্সারী সাহাবাগণকে ভালোবাসা ঈমানের পরিচায়ক এবং তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা মুনাফিকির পরিচায়ক’’। (বুখারী ১৭, ৩৭৮৪; মুসলিম ৭৪)

বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আন্সারী সাহাবাগণ সম্পর্কে বলেন:

الْأَنْصَارُ لَا يُحِبُّهُمْ إِلاَّ مُؤْمِنٌ، وَلَا يُبْغِضُهُمْ إِلاَّ مُنَافِقٌ، فَمَنْ أَحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللهُ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ اللهُ.

‘‘একমাত্র মু’মিনই আন্সারী সাহাবাগণকে ভালোবাসবে এবং একমাত্র মুনাফিকই তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসলো আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ভালোবাসবেন এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করলো আল্লাহ্ তা‘আলা তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবেন’’। (বুখারী ৩৭৮৩; মুসলিম ৭৫)

 ৫৩. নিজ প্রতিবেশীকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নিজ প্রতিবেশীকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

যে ব্যক্তি নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় সে সত্যিকারের মু’মিন নয়।

আবূ শুরাইহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللهِ لَا يُؤْمِنُ، قِيْلَ: وَمَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: الَّذِيْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.

‘‘আল্লাহ্’র কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন হতে পারে না। আল্লাহ্’র কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন হতে পারে না। আল্লাহ্’র কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন: যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়’’। (বুখারী ৬০১৬)

প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.

‘‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়’’। (মুসলিম ৪৬)

নিজ প্রতিবেশীর প্রতি দয়াশীল হওয়া সত্যিকারের ঈমানের পরিচায়ক।

আবূ হুরাইরাহ্ এবং আবূ শুরাইহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন তার প্রতিবেশীর প্রতি দয়াশীল হয়’’। (মুসলিম ৪৭, ৪৮)

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

! إِنَّ فُلَانَةً تُصَلِّيْ اللَّيْلَ وَتَصُوْمُ النَّهَارَ، وَفِيْ لِسَانِهَا شَيْءٌ يُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا سَلِيْطَةٌ، فَقَالَ: لَا خَيْرَ فِيْهَا، هِيَ فِيْ النَّارِ.قِيْلَ: يَا رَسُوْلِ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা রাত্রিবেলায় নফল নামায পড়ে এবং দিনের বেলায় নফল রোযা রাখে অথচ সে কর্কশভাষী তথা নিজ মুখ দিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার মধ্যে কোন কল্যাণ নিহিত নেই। সে জাহান্নামী’’। (হা’কিম ৪/১৬৬)

জিব্রীল (আঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজ প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে এতো বেশি তাকিদ দিয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ প্রতিবেশীকে তাঁর ওয়ারিশ বানিয়ে দেয়ার আশঙ্কা পোষণ করেছেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا زَالَ جِبْرِيْلُ يُوْصِيْنِيْ بِالْـجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ.

‘‘জিব্রীল (আঃ) আমাকে এতো বেশি প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার অসিয়ত করছিলেন যে, তখন আমার আশঙ্কা হচ্ছিলো হয়তোবা তিনি তাকে আমার ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন’’। (বুখারী ৬০১৫; মুসলিম ২৬২৫)

জিনিস যতই সামান্য হোক না কেন তা প্রতিবেশীকে দিতে লজ্জাবোধ করবেন না। কারণ, কিছু না দেয়ার চাইতে সামান্য দেয়াই ভালো।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন:

يَا نِسَاءَ الْـمُسْلِمَاتِ! لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ.

‘‘হে মুসলিম মহিলারা! কোন প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীকে কোন কিছু তা যদিও অতি সামান্য হয় তুচ্ছ মনে করে দেয়া থেকে বিরত থাকবে না এমনকি তা ছাগলের খুরই বা হোক না কেন’’। (বুখারী ৬০১৭; মুসলিম ১০৩০)

জিনিস কম হলে তা নিকটতম প্রতিবেশীকেই দিবে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার দু’জন প্রতিবেশী রয়েছে। অতএব তাদের মধ্য থেকে সর্ব প্রথম আমি কাকে হাদিয়া দেবো? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا.

‘‘নিকটবর্তী প্রতিবেশীকেই হাদিয়া দিবে। যার ঘরের দরোজা তোমারই দরোজার পাশে’’। (বুখারী ৬০২০)

 ৫৪. কোন আল্লাহ্’র ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করা অথবা তাঁকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন আল্লাহ্’র ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করা অথবা তাঁকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। কারণ, তাদেরকে কষ্ট দেয়া মানে স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেয়া। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করবেন এবং আখিরাতে রয়েছে তার জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ لَعَنَهُمُ اللهُ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَأَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا»

‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেয় আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নত করবেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন লাঞ্ছনাকর শাস্তি’’। (আহ্যাব : ৫৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ: مَنْ عَادَى لِيْ وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْـحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِيْ بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِيْ يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِيْ يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِيْ يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِيْ يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِيْ يَمْشِيْ بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِيْ لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَـاذَنِيْ لَأُعِيْذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِيْ عَنْ نَفْسِ الْـمُؤْمِنِ، يَكْرَهُ الْـمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করলো আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। ফরয আমল চাইতেও আমার নিকট অধিক প্রিয় এমন কোন আমল নেই যার মাধ্যমে কোন বান্দাহ্ আমার নিকটবর্তী হতে পারে। এতদ্সত্ত্বেও কোন বান্দাহ্ যদি লাগাতার নফল আমলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হয় তখন আমি তাকে ভালোবাসি। আর আমি কখনো কাউকে ভালোবাসলে তার কান আমার নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তখন সে তা দিয়ে এমন কিছুই শুনে যাতে আমি সন্তুষ্ট হই। তার চোখও আমার নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তখন সে তা দিয়ে এমন কিছুই দেখে যাতে আমি সন্তুষ্ট হই। তার হাতও আমার নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তখন সে তা দিয়ে এমন কিছুই ধরে যাতে আমি সন্তুষ্ট হই। তার পাও আমার নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। তখন সে তা দিয়ে এমন কিছুর প্রতিই চলে যাতে আমি সন্তুষ্ট হই। সে আমার নিকট কোন কিছু চাইলে আমি তাকে তা দিয়ে থাকি। আমার নিকট সে কোন কিছু থেকে আশ্রয় চাইলে আমি তাকে তা থেকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। আমি কোন কিছু করতে এতটুকুও ইতস্তত করি না যতটুকু ইতস্তত করি কোন মু’মিনের জীবন নিতে। সে মৃত্যু চায় না। আর আমি তাকে কোন ভাবেই দু:খ দিতে চাই না’’। (বুখারী ৬৫০২)

‘আয়িয বিন্ ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আবূ সুফ্য়ান নিজ দলবল নিয়ে সাল্মান, স্বুহাইব ও বিলাল (রাঃ) এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তখন তাঁরা আবূ সুফ্য়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলার কসম! আল্লাহ্’র তরবারি এখনো তাঁর এ শত্রুর গর্দান উড়িয়ে দেয়নি। তখন আবূ বকর (রাঃ) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা কুরাইশ নেতার ব্যাপারে এমন কথা বলতে পারলে?! অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘটনাটি জানানো হলে তিনি বললেন:

يَا أَبَا بَكْرٍ! لَعَلَّكَ أَغْضَبْتَهُمْ، لَئِنْ كُنْتَ أَغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أَغْضَبْتَ رَبَّكَ.

‘‘হে আবূ বকর! সম্ভবত তুমি তাদেরকে রাগিয়ে দিলে! যদি তুমি তাদেরকে রাগান্বিত করে থাকো তা হলে যেন তুমি আল্লাহ্ তা‘আলাকে রাগান্বিত করলে’’। (মুসলিম ২৫০৪)

অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) তাঁদের নিকট এসে বললেন: হে আমার ভাইয়েরা! আমি তো তোমাদেরকে রাগিয়ে দিয়েছি। তাঁরা বললেন: না, হে আমাদের শ্রদ্ধেয় ভাই! বরং আমরা আপনার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দো‘আ করছি তিনি যেন আপনাকে ক্ষমা করে দেন।

তবে একটি কথা না বললেই হয় না। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার ওলী হওয়ার জন্য এ ব্যাপারে কারোর ইজাযত বা খিলাফত পেতে হবে কি? তার বংশটি কোন ওলীর বংশ হতে হবে কি? ওলী হওয়ার জন্য সুফিবাদের ধরা-বাঁধা নিয়মানুযায়ী রিয়াযত-মুজাহাদা করতে হবে কি? উক্ত পথ পাড়ি দিতে কোন ইযাযতপ্রাপ্ত ওলীর হাত ধরতে হবে কি? ইত্যাদি ইত্যাদি।

না, এর কিছুই করতে হবে না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেয়া ওলীর নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী আমাদেরকে উক্ত পথ পাড়ি দিতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ، الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُـوْنَ، لَـهُمُ الْبُشْرَى فِيْ الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِيْ الْآخِرَةِ، لَا تَبْدِيْلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ، ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ»

‘‘জেনে রেখো, (কিয়ামতের দিন) নিশ্চয়ই আল্লাহ্’র ওলীদের কোন ভয় থাকবে না। না থাকবে তাঁদের কোন চিন্তা ও আশঙ্কা। তাঁরা হচ্ছেন খাঁটি ঈমানদার এবং সত্যিকার আল্লাহ্ভীরু। তাঁদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুসংবাদ দুনিয়া এবং আখিরাতেও। আল্লাহ্ তা‘আলার কথায় কোন হেরফের নেই। এটাই হচ্ছে চূড়ান্ত সফলতা’’। (ইউনুস : ৬২-৬৪)

উক্ত আয়াতে ওলী হওয়ার জন্য খাঁটি ঈমান এবং সত্যিকার আল্লাহ্ভীরুতার শর্ত দেয়া হয়েছে। তথা সকল ফরজ কাজসমূহ পালন করা এবং সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকা। কখনো হঠাৎ কোন পাপকর্ম ঘটে গেলে তাওবার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা নেয়া। উপরন্তু নফল আমলসমূহের প্রতি বেশি মনযোগী হওয়া এবং আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা।

মু‘আয বিন্ জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَجَبَتْ مَحَبَّتِيْ لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِيَّ، وَلِلْمُتَجَالِسِيْنَ فِيَّ، وَلِلْمُتَزَاوِرِيْنَ فِيَّ، وَلِلْمُتَبَاذِلِيْنَ فِيَّ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: আমার কর্তব্য ওদেরকে ভালোবাসা যারা আমার জন্য অন্যকে ভালোবাসে, আমার জন্য অন্যের সাথে উঠে-বসে, আমার জন্য অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং আমারই জন্য কাউকে দান করে’’।

(ইব্নু হিববান/মাওয়ারিদ, হাদীস ২৫১০; বাগাওয়ী ৩৪৬৩ কোযায়ী, হাদীস ১৪৪৯, ১৪৫০)

 ৫৫. লুঙ্গি, পাজামা অথবা যে কোন কাপড় টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে পরা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট অথবা যে কোন কাপড় টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে পরা কবীরা গুনাহ্। চাই তা গর্ব করেই হোক অথবা এমনিতেই।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزَارِ فَفِيْ النَّارِ.

‘‘লুঙ্গি, পাজামা বা প্যান্টের যে অংশটুকু পায়ের গিঁটের নিচে যাবে তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’’। (বুখারী ৫৭৮৭)

যে ব্যক্তি টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধান করে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার সাথে কোন কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আবূ যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

 ثَلَاثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ: خَابُوْا وَخَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: الْـمُسْبِلُ، وَالْـمَنَّانُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: الْـمَنَّانُ الَّذِيْ لَا يُعْطِيْ شَيْئًا إِلاَّ مَنَّهُ، وَالْـمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘তিন ব্যক্তি এমন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিন বার বলেছেন। আবূ যর (রাঃ) বলেন: তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা কারা হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোন কিছু দিয়ে খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য সাপ্লাইকারী’’। (মুসলিম ১০৬; আবূ দাউদ ৪০৮৭, ৪০৮৮)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ.

‘‘যে ব্যক্তি গর্ব করে নিজ নিম্ন বসন মাটিতে টেনে চলবে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’।

(বুখারী ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪; মুসলিম ২০৮৫)

একজন মু’মিনের লুঙ্গি, পাজামা ইত্যাদি জঙ্ঘার অর্ধেক পর্যন্তই হওয়া উচিৎ। পায়ের গিঁট পর্যন্ত হলেও চলবে। তবে যে ব্যক্তি গিঁটের নিচে পরবে সে গর্বকারীরই অন্তর্ভুক্ত।

জাবির বিন্ সুলাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

وَارْفَعْ إِزَارَكَ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، فَإِنْ أَبَيْتَ فَإِلَى الْكَعْبَيْنِ، وَإِيَّاكَ وَإِسْبَالَ الْإِزَارِ فَإِنَّهَا مِنَ الْـمَخِيْلَةِ، وَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْـمَخِيْلَةَ.

‘‘তোমার নিম্ন বসন জঙ্ঘার অর্ধেকে উঠিয়ে নাও। তা না করলে অন্ততপক্ষে পায়ের গিঁট পর্যন্ত। তবে গিঁটের নিচে পরা থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকবে। কারণ, তা অহঙ্কারের পরিচায়ক। আর আল্লাহ্ তা‘আলা অহঙ্কার করা পছন্দ করেন না’’। (আবূ দাউদ ৪০৮৪)

আবূ সাঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِزْرَةُ الْـمُسْلِمِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، وَلَا حَرَجَ فِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ.

‘‘একজন মুসলিমের নিম্ন বসন জঙ্ঘার অর্ধেক পর্যন্তই হওয়া চাই। তবে তা এবং পায়ের গিঁটের মাঝে থাকলেও কোন অসুবিধে নেই’’।

(আবূ দাউদ ৪০৯৩)

জামা এবং পাগড়িও গিঁটের নিচে যেতে পারবে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْإِسْبَالُ فِيْ الْإِزَارِ وَالْقَمِيْصِ وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘গিঁটের নিচে পরা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট, জামা, পাগড়ি ইত্যাদির মধ্যেও ধরা হয়। যে ব্যক্তি গর্ব করে এগুলোর কোনটি মাটিতে টেনে চলবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’।

(আবূ দাউদ ৪০৯৪)

অসতর্কতাবশত প্যান্ট, লুঙ্গি বা পাজামা গিঁটের নিচে চলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্রই তা গিঁটের উপরে উঠিয়ে নিবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যখন আমার নিম্ন বসন ছিলো গিঁটের নিচে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

يَا عَبْدَ اللهِ! ارْفَعْ إِزَارَكَ، فَرَفَعْتُهُ، ثُمَّ قَالَ: زِدْ، فَزِدْتُ، فَمَا زِلْتُ اَتَحَـرَّاهَا بَعْدُ، فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ: إِلَى أَيْنَ ؟ فَقَالَ: أَنْصَافِ السَّاقَيْنِ.

‘‘হে আব্দুল্লাহ্! তোমার নিম্ন বসন (গিঁটের উপর) উঠিয়ে নাও। তখন আমি উপরে উঠিয়ে নিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন: আরো উপরে। তখন আমি আরো উপরে উঠিয়ে নিলাম। এরপর থেকে আজো পর্যন্ত আমি এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছি। উপস্থিত লোকদের কেউ বলে উঠলো: তখন আপনি কোন পর্যন্ত উঠিয়েছিলেন? তিনি বললেন: জঙ্ঘার অর্ধ ভাগ পর্যন্ত’’। (মুসলিম ২০৮৬)

৫৬. সোনা বা রুপার প্লেট কিংবা গ্লাসে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সোনা বা রুপার প্লেট কিংবা গ্লাসে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الَّذِيْ يَأْكُلُ أَوَ يَشْرَبُ فِيْ آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِيْ بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ.

‘‘যে ব্যক্তি সোনা বা রুপার আসবাবপত্রে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে সে যেন নিজের পেটে জাহান্নামের আগুন ঢুকায়’’। (বুখারী ৫৬৩৪; মুসলিম ২০৬৫)

সোনা, রুপার প্লেট-বাটি এবং হাল্কা বা ঘন সিল্ক দুনিয়াতে কাফির পুরুষরাই ব্যবহার করবে। মুসলিমরা নয়। কারণ, মুসলিমদের জন্য তা প্রস্ত্তত রয়েছে আখিরাতে।

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَلْبَسُوْا الْـحَرِيْرَ وَلَا الدِّيْبَاجَ، وَلَا تَشْرَبُوْا فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَا تَأْكُلُوْا فِيْ صِحَافِهَا فَإِنَّهَا لَهُمْ فِيْ الدُّنْيَا، وَلَنَا فِيْ الْآخِرَةِ.

‘‘তোমরা হাল্কা বা ঘন সিল্ক পরিধান করো না। তেমনিভাবে সোনা রুপার পেয়ালায় পান করো না এবং এ গুলোর প্লেটে খেও না। কারণ, সেগুলো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য এবং আখিরাতে আমাদের জন্য’’। (বুখারী ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩১; মুসলিম ২০৬৭)

 ৫৭. কোন পুরুষের স্বর্ণ বা সিল্কের কাপড় পরিধান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পুরুষের জন্য স্বর্ণ বা সিল্কের কাপড় পরিধান করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ মূসা আশ্‘আরী, ‘আলী ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

حُرِّمَ لِبَاسُ الْـحَرِيْرِ وَالذَّهَبِ عَلَى ذُكُوْرِ أُمَّتِيْ، وَأُحِلَّ لِإِنَاثِهِمْ.

‘‘সিল্ক ও স্বর্ণ আমার পুরুষ উম্মতের উপর হারাম করে দেয়া হয়েছে এবং তা হালাল করা হয়েছে মহিলাদের জন্য’’। (তিরমিযী ১৭২০ ইব্নু মাজাহ্, ৩৬৬২, ৩৬৬৪)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

رَأَى رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِيْ يَدِ رَجُلٍ، فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ وَقَالَ: يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِيْ يَدِهِ، فَقِيْلَ لِلرَّجُلِ بَعْدَمَا ذَهَبَ رَسُوْلُ اللهِ : خُذْ خَاتِمَكَ انْتَفِعْ بِهِ، قَالَ: لَا وَالله! لَا آخُذُهُ أَبَدًا، وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُوْلُ اللهِ .

‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির হাতে একটি সোনার আংটি দেখতে পেলেন। তখন তিনি সোনার আংটিটি তার হাত থেকে খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন: তোমাদের কেউ ইচ্ছে করে আগুনের জ্বলন্ত কয়লা হাতে নিতে চায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে লোকটিকে বলা হলো: আংটিটা নিয়ে নাও। অন্য কোন কাজে লাগাতে পারবে। লোকটি বললো: আল্লাহ্ তা‘আলার কসম! আমি তা কখনোই কুড়িয়ে নিতে পারবো না যা একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুলে ফেলে দিলেন’’। (মুসলিম ২০৯০)

সোনা, রুপার প্লেট-বাটি এবং হাল্কা বা ঘন সিল্ক দুনিয়াতে কাফির পুরুষরাই ব্যবহার করবে। মুসলিমরা নয়। কারণ, তাদের জন্য তা প্রস্ত্তত রয়েছে আখিরাতে।

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَلْبَسُوْا الْـحَرِيْرَ وَلَا الدِّيْبَاجَ، وَلَا تَشْرَبُوْا فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَا تَأْكُلُوْا فِيْ صِحَافِهَا فَإِنَّهَا لَهُمْ فِيْ الدُّنْيَا، وَلَنَا فِيْ الْآخِرَةِ.

‘‘তোমরা হাল্কা বা ঘন সিল্ক পরিধান করো না। তেমনিভাবে সোনা রুপার পেয়ালায় পান করো না এবং এ গুলোর প্লেটে খেও না। কারণ, সেগুলো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য এবং আখিরাতে আমাদের জন্য’’। (বুখারী ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩১; মুসলিম ২০৬৭)

’উমর ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ لَبِسَ الْـحَرِيْرَ فِيْ الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِيْ الْآخِرَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সিল্ক পরিধান করবে সে আর আখিরাতে তা পরিধান করবে না’’। (বুখারী ৫৮৩৩, ৫৮৩৪)

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকেও বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّمَا يَلْبَسُ الْـحَرِيْرَ فِيْ الدُّنْيَا مَنْ لَا خَلَاقَ لَهُ فِيْ الْآخِرَةِ.

‘‘দুনিয়াতে সিল্কের কাপড় সেই পরিধান করবে যার জন্য আখিরাতে এ জাতীয় কিছুই থাকবে না’’। (বুখারী ৫৮৩৫)

 ৫৮. কোন গোলাম বা যার পেছনে অগ্রিম টাকা খরচ করে চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্য আনা হয়েছে চুক্তি শেষ না হতেই তার পলায়ন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন গোলাম বা যার পেছনে অগ্রিম টাকা খরচ করে চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্য আনা হয়েছে চুক্তি শেষ না হতেই তার পলায়ন হারাম বা কবীরা গুনাহ্।

জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا عَبْدٍ أَبَقَ مِنْ مَوَالِيْهِ فَقَدْ كَفَرَ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِمْ.

‘‘কোন গোলাম নিজ মনিব থেকে পলায়ন করলে সে কাফির হয়ে যাবে যতক্ষণ না তার মনিবের কাছে ফিরে আসে’’। (মুসলিম ৬৮)

জারীর (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا أَبَقَ الْعَبْدُ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ.

‘‘কোন গোলাম তার মনিবের কাছ থেকে পলায়ন করলে তার কোন নামাযই কবুল করা হবে না’’। (মুসলিম ৭০)

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يَقْبَلُ اللهُ لَـهُمْ صَلَاةً، وَلَا تَصْعَدُ لَـهُمْ حَسَنَةٌ : الْعَبْدُ الْآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى مَوَالِيْهِ، وَالْـمَرأَةُ السَّاخِطُ عَلَيْهَا زَوْجُهَا حَتَّى يَرْضَى، وَالسَّكْرَانُ حَتَّى يَصْحُوَ.

‘‘তিন ব্যক্তির নামায আল্লাহ্ তা‘আলা গ্রহণ করেন না এবং তাদের কোন সাওয়াবও আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট উঠবে না। তারা হচ্ছে, নিজ মনিবের কাছ থেকে পলায়নকারী গোলাম যতক্ষণ না সে তাদের কাছে ফিরে আসে। সে মহিলা যার উপর তার স্বামী অসন্তুষ্ট যতক্ষণ না সে তার উপর সন্তুষ্ট হয় এবং কোন নেশাখোর মাতাল ব্যক্তি যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়’’। (ইব্নু হিববান/ইহ্সান, হাদীস ৫৩৩১ কান্যুল্ ’উম্মাল, হাদীস ৪৩৯২৭)

ফাযালাহ্ বিন্ ’উবাইদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا تَسْأَلْ عَنْهُمْ : رَجُلٌ فَارَقَ الْـجَمَاعَةَ وَعَصَى إِمَامَهُ فَمَاتَ عَاصِيًا، وَعَبْدٌ أَبَقَ فَمَاتَ، وَامْرَأَةٌ غَابَ عَنْهَا زَوْجُهَا وَقَدْ كَفَاهَا الْـمُؤْنَةَ فَتَبَرَّجَتْ.

’’তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাই করো না। তারা হচ্ছে, মুসলিম জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি যে নিজ প্রশাসকের অবাধ্য এবং এমতাবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়। নিজ মনিব থেকে পলায়নকারী গোলাম এবং এমতাবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়। এমন এক মহিলা যার স্বামী বাড়িতে নেই এবং সে তার স্ত্রীর খরচাদি দিয়েই বাড়ি থেকে বিদায় নিয়েছে অথবা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে অথচ সে মহিলা বেপর্দা অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়’’।

(বুখারী/আদাবুল্ মুফ্রাদ, হাদীস ৫৯০; ইব্নু হিববান ৪৫৫৯ বায্যার, হাদীস ৮৪ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৭৭৯৭ ’হাকিম ১/১১৯)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ تَوَلَّى غَيْرَ مَوَالِيْهِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত ওই ব্যক্তির উপর যে নিজ মনিব ছেড়ে অন্য কাউকে মনিব হিসেবে গ্রহণ করলো’’। (আহমাদ ২৯১৩ ’হাকিম ৪/১৫৩)

 ৫৯. নিশ্চিতভাবে জানা সত্ত্বেও নিজ পিতাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজ পিতা হিসেবে গ্রহণ করা বা পরিচয় দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নিশ্চিতভাবে জানা সত্ত্বেও নিজ পিতাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজ পিতা হিসেবে গ্রহণ করা বা পরিচয় দেয়া (যদিও তা শুধু কাগজপত্রে এবং যে কোন কারণেই হোক না কেন) হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

সা‘আদ্ বিন্ আবী ওয়াক্কাস এবং আবূ বাকরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيْهِ فَالْـجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ.

‘‘যে ব্যক্তি নিজ পিতাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজ পিতা হিসেবে পরিচয় দেয়; অথচ সে জানে যে, এ ব্যক্তি নিশ্চয়ই তার পিতা নয় তা হলে জান্নাত তার উপর হারাম হয়ে যাবে’’। (বুখারী ৪৩২৬, ৪৩২৭, ৬৭৬৬; মুসলিম ৬৩)

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ أَوِ انْتَمَى إِلَى غَيْرِ مَوَالِيْهِ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا.

‘‘যে ব্যক্তি নিজ পিতাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজ পিতা হিসেবে পরিচয় দেয় অথবা নিজ মনিবকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজ মনিব হিসেবে পরিচয় দেয় তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত পতিত হোক। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার কোন নফল অথবা ফরয আমল কবুল করবেন না’’। (মুসলিম ১৩৭০)

কোন কোন সন্তান তো এমনও আছে যে, ছোট বেলায় তার পিতা তার প্রতি বহু অবহেলা দেখিয়েছে। এমনকি তার কোন খবরা খবরই সে রাখেনি। তখন বড় হয়ে সে সন্তান তার পিতাকেই অস্বীকার করে বসে অথবা পরিচয় দিতে সঙ্কোচ বোধ করে। হয়তো বা সে কখনো তার সৎ বাবাকেই আপন বাবা হিসেবে পরিচয় দেয়। এমতাবস্থায় সত্যিই সে মারাত্মক অপরাধী। পিতার কৃতকর্মের জন্য সে আখিরাতে শাস্তি ভোগ করবে অবশ্যই। তবে তাতে সন্তানের নিজ পিতাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَرْغَبُوْا عَنْ آبَائِكُمْ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ أَبِيْهِ فَهُوَ كُفْرٌ.

‘‘তোমরা নিজ পিতার প্রতি অনীহা প্রকাশ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি নিজ পিতার প্রতি অনীহা প্রকাশ করলো সে কুফরি করলো’’। (বুখারী ৬৭৬৮; মুসলিম ৬২)

 ৬০. কারোর সাথে কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর সাথে কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তা এভাবে যে, কোন সত্য প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নেই বরং অন্যকে অপমান করা এবং নিজের কৃতিত্ব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যেই কারোর কথায় দোষ-ত্রুটি বের করার চেষ্টা করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে এ জাতীয় লোকদের লুক্কায়িত উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يُجَـادِلُوْنَ فِيْ آيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ، إِنْ فِيْ صُدُوْرِهِمْ إِلاَّ كِبْرٌ، مَا هُمْ بِبَالِغِيْهِ، فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা কোন দলীল ছাড়াই আল্লাহ্ তা‘আলার নিদর্শনসমূহ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তাদের অন্তরে রয়েছে শুধু অহঙ্কার যা সফল হবার নয়। অতএব তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার শরণাপন্ন হও। তিনিই তো সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (গাফির/মু’মিন : ৫৬)

কারোর সাথে তর্ক করলে তা একমাত্র সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই এবং সুন্দর পন্থায় হতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُجَادِلُوْا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلاَّ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ»

‘‘তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে একমাত্র উত্তম পন্থায়ই তর্কে লিপ্ত হবে’’। (‘আন্কাবূত : ৪৬)

কারোর সাথে অনর্থক ঝগড়া-ফাসাদকারী আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট একেবারেই ঘৃণিত এবং তারাই তাঁর কোপানলে পতিত।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الْأَلَدُّ الْـخَصْمُ.

’’নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে অহেতুক ঝগড়া-ফাসাদকারীই’’। (বুখারী ২৪৫৭, ৪৫২৩; মুসলিম ২৬৬৮)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَاصَمَ فِيْ بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ ؛ لَمْ يَزَلْ فِيْ سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ.

‘‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কারোর সাথে বাতিল কোন জিনিস নিয়ে ঝগড়া-ফাসাদ করলো আল্লাহ্ তা‘আলা সত্যিই তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়’’। (আবূ দাউদ্, হাদীস ৩৫৯৭; আহমাদ ৫৩৮৫)

কুর‘আন নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা কুফরি।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمِرَاءُ فِيْ الْقُرْآنِ كُفْرٌ.

‘‘কুর‘আন নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা কুফরি’’।

(আবূ দাউদ্, হাদীস ৪৬০৩; আহমাদ ৭৮৪৮ ইব্নু হিববান/মাওয়ারিদ্, হাদীস ৫৯ ’হাকিম ২/২২৩)

কোন ব্যক্তি হিদায়াতের রাস্তা থেকে ফসকে গেলেই অহেতুক ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত হয়।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

 هَذِهِ الْآيَةَ: (مَا ضَرَبُوْهُ لَكَ إِلاَّ جَدَلًا، بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُوْنَ)مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوْا عَلَيْهِ إِلاَّ أُوْتُوْا الْجَدَلَ، ثُمَّ تَلَا رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘কোন জাতি হিদায়াত পাওয়ার পর আবারো পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে (আল্লাহ্ তা‘আলা) তাদেরকে অহেতুক ঝগড়া-ফাসাদে ব্যস্ত করে দেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন: যার মর্মার্থ: তারা শুধু বাক-বিতন্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এমন কথা বললো। বস্ত্তত তারা বাক-বিতন্ডাকারী সম্প্রদায়’’। [যুখরুফ : ৫৮ (তিরমিযী ৩২৫৩; আহমাদ ৫/২৫২-২৫৬; ইব্নু মাজাহ্ ৪৮ ’হাকিম ২/৪৪৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের মধ্যে এ জাতীয় বাকপটু মুনাফিকের আশঙ্কাই করেছিলেন।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ كُلُّ مُنَافِقٍ عَلِيْمِ اللِّسَانِ.

‘‘আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে প্রত্যেক বাকপটু মুনাফিকেরই বেশি আশঙ্কা করছি’’। (ত্বাবারানী/কবীর খন্ড ১৮ হাদীস ৫৯৩; ইব্নু হিববান ৮০ বায্যার, হাদীস ১৭০)

 ৬১. নিজ প্রয়োজনের বেশি পানি ও ঘাস অন্যকে দিতে অস্বীকার করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নিজ প্রয়োজনের বেশি পানি ও ঘাস অন্যকে দিতে অস্বীকার করাও কবীরা গুনাহ্।

‘আমর বিন্ শু‘আইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি তাঁর পিতা থেকে এবং তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ مَنَعَ فَضْلَ مَاءٍ أَوْ كَلَأٍ مَنَعَهُ اللهُ فَضْلَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি বাড়তি পানি ও ঘাস অন্যকে দিতে অস্বীকার করলো আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে তাঁর অনুগ্রহ করতে অস্বীকার করবেন’’। (আহমাদ ৬৬৭৩, ৬৭২২, ৭০৫৭ স’হীহুল্ জামি’, হাদীস ৬৫৬০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ : رَجُلٌ حَلَفَ عَلَى سِلْعَةٍ لَقَدْ أَعْطَى بِهَا أَكْثَرَ مِمَّا أَعْطَى وَهُوَ كَاذِبٌ، وَرَجُلٌ حَلَفَ عَلَى يَمِيْنٍ كَاذِبَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ لِيَقْتَطِعَ بِهَا مَالَ رَجُلٍ مُسْلِمٍ، وَرَجُلٌ مَنَعَ فَضْلَ مَاءٍ فَيَقُوْلُ اللهُ: الْيَوْمَ أَمْنَعُكَ فَضْلِيْ كَمَا مَنَعْتَ فَضْلَ مَا لَمْ تَعْمَلْ يَدَاكَ.

‘‘তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না। তারা হলো, এমন এক ব্যক্তি যে কোন পণ্যের ব্যাপারে এ বলে মিথ্যা কসম খেলো যে, ক্রেতা যা দিয়েছে সে তার বেশি দিয়েই পণ্যটি ক্রয় করেছে; অথচ কথাটি একেবারেই মিথ্যা। আরেক জন ব্যক্তি এমন যে, সে আসরের পর মিথ্যা কসম খেলো অন্য আরেক জন মুসলিমের সম্পদ অবৈধভাবে হরণ করার জন্য। আরেক জন ব্যক্তি এমন যে, সে বাড়তি পানি অন্যকে দিতে অস্বীকার করলো। আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে বলবেন: আজ আমি তোমাকে অনুগ্রহ করতে অস্বীকার করলাম যেমনিভাবে তুমি অস্বীকার করলে অন্যকে বাড়তি পানি দেয়া থেকে; অথচ তা তুমি সৃষ্টি করোনি’’। (বুখারী ২৩৬৯)

 ৬২. কাউকে ওজনে কম দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাউকে ওজনে কম দেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ، الَّذِيْنَ إِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ، وَإِذَا كَالُوْهُمْ أَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ، أَلَا يَظُنُّ أُوْلَآئِكَ أَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ، لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ، يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ»

‘‘জাহান্নামের ওয়াইল নামক উপত্যকা ওদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। তবে অন্যদের থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণভাবেই নিয়ে নেয়। কিন্তু অন্যকে দেয়ার সময় মাপে বা ওজনে কম দেয়। তারা কি ভাবে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে সে মহান দিবসে যে দিন সকল মানুষ দাঁড়াবে (হিসাব দেয়ার জন্য) সর্ব জগতের প্রতিপালকের সম্মুখে’’। (মুত্বাফ্ফিফীন : ১-৬)

 ৬৩. আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ মনে করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ মনে করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَفَأَمِنُوْا مَكْرَ اللهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْـخَاسِرُوْنَ»

‘‘তারা কি নিজেদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলার সূক্ষ্ম পাকড়াও থেকে নিরাপদ মনে করে? বস্ত্তত: একমাত্র ক্ষতিগ্রস্তরাই আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নি:শঙ্ক হতে পারে’’। (আ’রাফ : ৯৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْـحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوْا بِهَا، وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُوْنَ، أُوْلَآئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ»

‘‘যারা (পরকালে) আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং যারা পার্থিব জীবন নিয়েই পরিতৃপ্ত ও নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধেও গাফিল তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। তা একমাত্র তাদেরই কার্যকলাপের কারণে’’। (ইউনুস : ৭-৮)

আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে নিরাপদ মনে করা এটাও যে, বান্দাহ্ গুনাহ্ করতে থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমার আশা করবে।

ইসমাঈল বিন রাফি’ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

مِنَ الَامْنِ مِنْ مَكْرِ اللهِ إِقَامَةُ الْعَبْدِ عَلَى الذَّنْبِ يَتَمَنَّى عَلَى اللهِ الْـمَغْفِرَةَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার সূক্ষ্ম পাকড়াও থেকে নির্ভয় হওয়ার মানে এও যে, বান্দাহ্ গুনাহ্ করতে থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমার আশা করবে’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৮০)

আমি বা আপনি যতই নেক আমল করি না কেন তাতে গর্বের কিছুই নেই এবং তাতে আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে নিরাপদ মনে করারও কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ, আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই যে, আমাদের আমলগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বদা কবুল করছেন। আর কবুল করে থাকলেও আমরা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত নই যে, আমরা সর্বদা এ জাতীয় আমল করার সুযোগ পাবো। এ কারণে সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নেক আমলের উপর টিকে থাকার দো‘আ করতে হবে।

আবার কেউ কেউ তো এমনো আছে যে, সে আমল ততো বেশি করে না ঠিকই এরপরও আরেক জনের ব্যাপারে এতটুকু বলতে দ্বিধা করে না যে, আমরা তো অন্তত এতটুকু হলেও করছি। অমুক তো এতটুকুও করছে না। আপনি কি নিশ্চিত যে, আপনার এতটুকু আমলই আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে কবুল হয়ে যাচ্ছে। বরং সবারই উচিৎ সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করা এবং নিজের গুনাহ্’র কথা স্মরণ করে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বদা কান্নাকাটি করা। সাথে সাথে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দ্বীনের উপর অটল থাকার দো‘আ করা।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! নাজাত পাওয়া যাবে কিভাবে? তিনি বললেন:

أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ، وَابْكِ عَلَى خَطِيْئَتِكَ.

‘‘জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করো, নিজ ঘরেই অবস্থান করো এবং গুনাহ্’র জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কান্নাকাটি করো। (তিরমিযী ২৪০৬)

শাহ্র বিন্ ’হাউশাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قُلْتُ لِأُمِّ سَلَمَةَ: يَا أُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ! مَا كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ رَسُوْلِ اللهِ إِذَا كَانَ عِنْدَكِ؟ قَالَتْ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَائِهِ: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ! ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا أَكْثَرَ دُعَاءَكَ: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ! ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ ؟! قَالَ: يَا أُمَّ سَلَمَةَ! إِنَّهُ لَيْسَ آدَمِيٌّ؛ إِلاَّ وَقَلْبُهُ بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللهِ ؛ فَمَنْ شَاءَ أَقَامَ، وَمَنْ شَاءَ أَزَاغَ، فَتَلَا مُعَاذٌ: «رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا»

‘‘আমি উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে বললাম: হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনার নিকট থাকাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় কি দো‘আ করতেন? তিনি বললেন: অধিকাংশ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনি ইসলামের উপর অটল অবিচল রাখুন। উম্মে সালামাহ্ (রাঃ) বললেন: আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনাকে দেখছি আপনি অধিকাংশ সময় উপরোক্ত দো‘আ করেন। মূলতঃ এর রহস্য কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে উম্মে সালামাহ্! প্রতিটি মানুষের অন্তর আল্লাহ্ তা‘আলার দু’টি আঙ্গুলের মধ্যে অবস্থিত। ইচ্ছে করলে তিনি কারোর অন্তর সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আর ইচ্ছে করলে তিনি কারোর অন্তর বক্র পথে পরিচালিত করেন। বর্ণনাকারী মু‘আয বলেন: এ জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বদা তাঁর নিকট নিম্নোক্ত দো‘আ করতে আদেশ করেন যার অর্থ:

হে আমার প্রভু! আপনি আমাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন। অতএব আমাদের অন্তরকে আর বক্র পথে পরিচালিত করবেন না। (তিরমিযী ৩৫২২)

 ৬৪. আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হওয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَنْ يَّقْنَطُ مِنْ رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلاَّ الضَّالُّوْنَ»

‘‘একমাত্র পথভ্রষ্টরাই নিজ প্রভুর করুণা থেকে নিরাশ হয়ে থাকে’’। (হিজ্র : ৫৬)

তিনি আরো বলেন:

«وَلَا تَيْأَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِ، إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ»

‘‘তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার করুণা থেকে কখনোই নিরাশ হয়ো না। কারণ, একমাত্র কাফিররাই আল্লাহ্ তা‘আলার করুণা থেকে নিরাশ হয়ে থাকে’’। (ইউসুফ : ৮৭)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) বলেন:

أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَالَامْنُ مِنْ مَكْرِ اللهِ وَالْقُنُوْطُ مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ وَالْيَأْسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ.

‘‘সর্ববৃহৎ পাপ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, তাঁর শাস্তি থেকে নিজকে নিরাপদ ভাবা এবং তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া’’। (‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৯৭০১)

তবে মঙ্গলজনক নিয়ম হচ্ছে এই যে, সুস্থতার সময় আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় পাওয়া এবং অসুস্থতা বা মৃত্যুর সময় আল্লাহ্ তা‘আলার রহমতের আশা করা। আর উভয়টির মধ্যে সর্বদা সমতা বজায় রাখাই তো সর্বোত্তম।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর মৃত্যুর তিন দিন আগে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

لَا يَمُوْتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ.

‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আল্লাহ্ তা‘আলার উপর সুধারণা নিয়েই মৃত্যু বরণ করে’’। (মুসলিম ২৮৭৭; আবূ দাউদ ৩১১৩; ইব্নু মাজাহ্ ৪২৪২)

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ شَابٌّ وَهُوَ فِيْ الْـمَوْتِ، فَقَالَ: كَيْفَ تَجِدُكَ؟ قَالَ: وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ أَرْجُوْ اللهَ، وَإِنِّيْ أَخَافُ ذُنُوْبِيْ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا يَجْتَمِعَانِ فِيْ قَلْبِ عَبْدٍ فِيْ مِثْلِ هَذَا الْمَوْطِنِ إِلاَّ أَعْطَاهُ اللهُ مَا يَرْجُوْ، وَآمَنَهُ مِمَّا يَخَافُ.

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক যুবকের নিকট গেলেন তখন সে মুমূর্ষু অবস্থায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি অবস্থায় আছো? সে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্’র কসম! আমি আল্লাহ্ তা‘আলার রহমতের আশা করছি এবং নিজের গুনাহ্’র ব্যাপারে ভয় পাচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এমন সময় কোন বান্দাহ্’র অন্তরে এ দু’ জিনিস থাকলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার আশা পূরণ এবং তার ভয় দূরীভূত করবেন’’। (তিরমিযী ৯৮৩; ইব্নু মাজাহ্ ৪৩৩৭)

মানুষ যতই গুনাহ্ করুক না কেন তবুও সে কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত হতে নিরাশ হতে পারে না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ، إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ، وَأَنِيْبُوْا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوْا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَّأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ»

‘‘আপনি আমার বান্দাহ্দেরকে এ বাণী পৌঁছিয়ে দিন যে, হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা যারা গুনাহ্’র মাধ্যমে নিজেদের প্রতি অধিক অত্যাচার- অবিচার করেছো আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ থেকে কখনো নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তোমরা নিজ প্রতিপালক অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার বহু পূর্বে। জেনে রাখো, এরপর কিন্তু তোমাদেরকে আর সাহায্য করা হবে না’’। (যুমার : ৫৩-৫৪)

আশা ও ভয়ের সংমিশ্রণকেই ঈমান বলা হয়। নবী ও রাসূলদের ঈমান এ পর্যায়েরই ছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِيْ الْـخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًا وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ»

‘‘তারা (নবী ও রাসূলরা) সৎকর্মে দৌড়ে আসতো এবং আমাকে ডাকতো আশা ও ভয়ের মাঝে। তেমনিভাবে তারা ছিলো আমার নিকট সুবিনীত’’। (আম্বিয়া : ৯০)

তিনি আরো বলেন:

«أُوْلآئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ يَبْتَغُوْنَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيْلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُوْنَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُوْنَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُوْرًا»

’’তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো নিজ প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করে বেড়ায়। এ প্রতিযোগিতায় যে, কে কতটুকু আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং তারা আল্লাহ্ তা‘আলার দয়া কামনা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় পায়। আপনার প্রতিপালকের শাস্তি সত্যিই ভয়াবহ’’। (ইসরা/বানী ইসরাঈল : ৫৭)

 ৬৫. মৃত পশু, প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোস্ত খাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মৃত পশু, প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোস্ত খাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ لَآ أَجِدُ فِيْ مَآ أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَّطْعَمُهُ إِلَّآ أَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا أَوْ لَـحْمَ خِنْزِيْرٍ، فَإِنَّهُ رِجْسٌ»

‘‘(হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) তুমি বলে দাও: আমার কাছে যে ওহী পাঠানো হয়েছে তাতে আমি আহারকারীর জন্য কোন কিছু হারাম পাইনি শুধু তিনটি বস্ত্ত ছাড়া। আর তা হচ্ছে, মৃত পশু, প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত। কেননা, তা নাপাক’’। (আন্‘আম : ১৪৫)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْـمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَـحْمُ الْـخِنْزِيْرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ، وَالْـمُنْخَنِقَةُ وَالْـمَوْقُوْذَةُ وَالْـمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَا أَكَـلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ، وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ، ذَلِكُمْ فِسْقٌ»

‘‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত পশু, (প্রবাহিত) রক্ত, শুকরের গোস্ত, যে পশুকে যবাই করা হয়েছে আল্লাহ্ তা‘আলা ভিন্ন অন্য কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির নামে, যে পশুর গলায় ফাঁস পড়ে সে মারা গেছে, যে পশুকে ধারালো নয় এমন কোন বস্ত্তর মাধ্যমে আঘাত করে মারা হয়েছে, যে পশু উঁচু কোন স্থান থেকে পড়ে মারা গেছে, যে পশুকে অন্য কোন পশু আঘাত করে বা গুঁতো দিয়ে মেরেছে, যে পশুকে অন্য কোন হিংস্র পশু মেরে তার গোস্ত খেয়েছে, তবে এগুলোর মধ্য থেকে যে পশুকে তোমরা জীবিত পেয়ে যবাই করতে সক্ষম হয়েছো তা খেতে পারো, যে পশুকে মূর্তি (বা কোন পীরের) আস্তানায় যবাই করা হয়েছে এবং তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু তীরের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ। তোমাদের এ সকল কর্মকান্ড সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলার প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩)

দাবা খেলা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। আর এ দাবা খেলাকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকরের গোস্ত ও রক্ত দিয়ে হাত রাঙ্গানোর সাথে তুলনা করেছেন। তা হলে শুকরের গোস্ত খাওয়া কতটুকু গুনাহ্’র কাজ তা এখান থেকেই সহজে অনুমান করা যায়।

বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِشِيْرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِيْ لَـحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ.

‘‘যে ব্যক্তি দাবা খেললো সে যেন নিজ হাতকে শুকরের গোস্ত ও রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করলো’’। (মুসলিম ২২৬০)

৬৬. জুমু‘আহ্ ও জামাতে নামায না পড়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

জুমু‘আহ্ ও জামাতে নামায না পড়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

কেউ লাগাতার কয়েকটি জুমু‘আহ্ ছেড়ে দিলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার

অন্তরে মোহর মেরে দেন। তখন সে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْـجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوْبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكُوْنُنَّ مِنَ الْغَافِلِيْنَ.

‘‘কিছু সংখ্যক লোক জুমু‘আহ্ পরিত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুক নয়তো আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহর মেরে দিবেন। তখন তারা নিশ্চয়ই গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’’। (মুসলিম ৮৬৫)

এমনকি যে ব্যক্তি অলসতা বশত তিন ওয়াক্ত জুমু‘আহ্’র নামায ছেড়ে দিয়েছে তার অন্তরেও আল্লাহ্ তা‘আলা মোহর মেরে দিবেন।

আবুল্ জা’দ্ যাম্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللهُ عَلَى قَلْبِهِ.

‘‘যে ব্যক্তি তিন ওয়াক্ত জুমু‘আহ্’র নামায অলসতা বশত ছেড়ে দিলো আল্লাহ্ তা‘আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন’’। (আবূ দাউদ ১০৫২)

যারা জামাতে উপস্থিত হয়ে ফরয নামাযগুলো আদায় করছে না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصّلَاةِ فَتُقَامَ، ثُمَّ آمُرَرَجُلًا فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِيْ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَىْ قَوْمٍ لَايَشْهَدُوْنَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ بِالنَّارِ.

‘‘আমার ইচ্ছে হয় কাউকে নামায পড়ানোর দায়িত্ব দিয়ে লাকড়ির বোঝাসহ কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে তাদের পিছু নেই যারা জামাতে উপস্থিত হয় না এবং তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই’’। (বুখারী ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০; মুসলিম ৬৫১; আবূ দাউদ ৫৪৮; আহমাদ ৩৮১৬)

যে ব্যক্তি শরয়ী অজুহাত ছাড়াই ঘরে নামায পড়লো তার নামায আদায় হবে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَمِعَ الـمُنَادِىَ بِالصَّلَاةِ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنِ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلَاةُ الَّتِيْ صَلَّى، قِيْلَ: وَمَا الْعُذْرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ.

‘‘যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনেও মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামায পড়লো অথচ তার নিকট মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার শরয়ী কোন ওযর নেই তা হলে তার আদায়কৃত নামায আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে কবুল হবে না। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি ওযর বলতে কি ধরনের ওযর বুঝাতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন: ভয় অথবা রোগ’’। (আবূ দাউদ ৫৫১ বায়হাকী, হাদীস ৫৪৩১)

আব্দুল্লাহ্ বিন আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ ثُمَّ لَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلَا صَلَاةَ لَهُ

‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয়নি অথচ তার কোন ওযর নেই। তা হলে তার নামায হবে না’’। (বায়হাকী, হাদীস ৪৭১৯, ৫৩৭৫)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

مَنْ سَمِعَ الُمنَادِىَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ، لَمْ يَجِدْ خَيْرًا وَلَمْ يُرَدْ بِهِ

‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয়নি অথচ তার কোন ওযরই ছিলো না সে কল্যাণপ্রাপ্ত নয় অথবা তার সাথে কোন কল্যাণ করার ইচ্ছেই করা হয়নি’’। (ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৩৪৬৬)

 ৬৭. কাউকে ধোঁকা দেয়া বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে কোনভাবে কাউকে ধোঁকা দেয়া বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا يَحِيْقُ الْـمَكْرُ السَّيِّئُ إِلاَّ بِأَهْلِهِ»

‘‘কূট ষড়যন্ত্র একমাত্র ষড়যন্ত্রকারীদেরকেই বেষ্টন করে নেয়’’। (ফাত্বির : ৪৩)

ক্বাইস্ বিন্ সা’দ্ ও আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمَكْرُ وَالْـخَدِيْعَةُ فِيْ النَّارِ.

‘‘ধোঁকা ও ষড়যন্ত্র জাহান্নামে যাওয়ার বিশেষ কারণ’’। (ইব্নু ‘আদি’ ২/৫৮৪ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান ২/১০৫/২; হা’কিম ৪/৬০৭)

 ৬৮. কারোর সাথে তর্কের সময় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর সাথে তর্কের সময় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا : إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.

‘‘চারটি চরিত্র কারোর মধ্যে পাওয়া গেলে সে খাঁটি মুনাফিক হিসেবেই বিবেচিত হবে। আর যার মধ্যে সেগুলোর একটি পাওয়া গেলো তার মধ্যে তো শুধু মুনাফিকীর একটি চরিত্রই পাওয়া গেলো যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়। উক্ত চরিত্রগুলো হলো: যখন তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হয় তখন সে তা খেয়ানত করে, যখন সে কোন কথা বলে তখন সে মিথ্যা বলে, যখন সে কারোর সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তখন সে তা ভঙ্গ করে এবং যখন সে কারোর সাথে ঝগড়া দেয় তখন সে অশ্লীল কথা বলে’’। (বুখারী ৩৪)

 ৬৯. কারোর জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর জমিনের সীমানা ঠেলে তার কিয়দংশ নিজের অধিকারভুক্ত করে নেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন সে ব্যক্তিকে যে অন্যের জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে’’। (মুসলিম ১৯৭৮; আহমাদ ২৯১৩; ’হা’কিম ৪/১৫৩)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَخَذَ شَيْئًا مِنَ الْأَرْضِ بَغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِيْنَ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর জমিনের কিয়দংশ অবৈধভাবে হরণ করলো তাকে কিয়ামতের দিন সাত জমিন পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে’’। (বুখারী ২৪৫৪, ৩১৯৬)

 ৭০. সমাজে কোন বিদ্‘আত বা কুসংস্কার চালু করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সমাজে কোন বিদ্‘আত কিংবা কুসংস্কার চালু করা অথবা এগুলোর দিকে কাউকে আহবান করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

জারীর বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَنَّ فِيْ الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَّنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ.

‘‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন বিদ্‘আত কিংবা কুসংস্কার চালু করলো সে কুসংস্কারের গুনাহ্ তো তাকে অবশ্যই বহন করতে হবে উপরন্তু যারা তার পরবর্তীতে উক্ত গুনাহ্ করবে তাদের সকলের গুনাহ্ও তাকে বহন করতে হবে অথচ তাদের গুনাহ্ এ কারণে এতটুকুও কম করা হবে না’’। (মুসলিম ১০১৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا.

‘‘যে ব্যক্তি কাউকে কোন গুনাহ্ তথা ভ্রষ্টতার দিকে ডাকলো তার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা উক্ত গুনাহ্’র কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ্ তার আমলনামায় লেখা হবে অথচ এ কারণে তাদের গুনাহ্ এতটুকুও কম করা হবে না’’। (মুসলিম ২৬৭৪)

 ৭১. কারোর দিকে ছুরি বা কোন অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর দিকে দা, ছুরি বা অন্য কোন অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيْهِ بِحَدِيْدَةٍ فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ حَتَّى يَدَعَهُ، وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لِأَبِيْهِ وَأُمِّهِ.

‘‘কেউ নিজ কোন মুসলিম ভাইয়ের দিকে লোহা জাতীয় কোন অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করলে ফিরিশ্তারা তাকে লা’নত করতে থাকে যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। যদিও উক্ত ব্যক্তি তার সহোদর ভাইই হোক না কেন’’। (মুসলিম ২৬১৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদীসে এ নিষেধের কারণও উল্লেখ করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يُشِيْرُ أَحَدُكُمْ إِلَى أَخِيْهِ بِالسِّلَاحِ، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِيْ أَحَدُكُمْ لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِيْ يَدِهِ فَيَقَعُ فِيْ حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ.

‘‘তোমাদের কেউ যেন নিজ অন্য মুসলিম ভাইয়ের দিকে অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত না করে। কারণ, তোমাদের কারোরই জানা নেই যে, হয়তো বা শয়তান তার হাত টেনে অন্যের গায়ে লাগিয়ে দিবে। তখন সে জাহান্নামের গহবরে নিক্ষিপ্ত হবে’’। (বুখারী ৭০৭২; মুসলিম ২৬১৭)

 ৭২. চেহারায় দাগ দেয়া, চেহারার কেশ উঠানো, নিজের চুলের সাথে অন্য চুল সংযোজন কিংবা দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

চেহারায় দাগ দেয়া, চেহারার কেশ উঠানো, নিজের চুলের সাথে অন্য চুল সংযোজন কিংবা দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করাও হারাম এবং কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْـمُوْتَشِمَاتِ وَالْـمُتَنَمِّصَاتِ وَالْـمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْـنِ، الْـمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন সে মহিলাকে যে অপরের চেহারা দাগে এবং যে অপরকে দিয়ে নিজ চেহারা দাগ করায়, যার চেহারার কেশ উঠানো হয় এবং যে মহিলা সৌন্দর্যের জন্য নিজ দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে; আল্লাহ্ প্রদত্ত গঠন পরিবর্তন করে’’।

(বুখারী ৪৮৮৬, ৫৯৩১, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮; মুসলিম ২১২৫)

আবূ হুরাইরাহ্, আয়েশা, আস্মা’ ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْـمُسْتَوْصِلَةَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন নিজের চুলের সাথে অন্য চুল সংযুক্তকারিণী মহিলাকে এবং যার জন্য তা করা হয়েছে তাকেও’’। (বুখারী ৫৯৩৩, ৫৯৩৪, ৫৯৩৭, ৫৯৪২; মুসলিম ২১২২, ২১২৩, ২১২৪)

 ৭৩. হারাম শরীফের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মক্কা ও মদীনার হারাম এলাকার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَنْ يُّرِدْ فِيْهِ بِإِلْـحَادٍ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ»

‘‘আর যে ব্যক্তি হারাম শরীফের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার ইচ্ছে করবে আমি তাকে আস্বাদন করাবো মর্মন্তুদ শাস্তি’’। (হাজ্জ : ২৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللهِ ثَلَاثَةٌ : مُلْحِدٌ فِيْ الْـحَرَمِ، وَمُبْتَغٍ فِيْ الْإِسْلَامِ سُنَّةَ الْـجَاهِلِيَّةِ، وَمُطَّلِبٌ دَمَ امْرِئٍ بِغَيْرِ حَقٍّ لِيُهْرِيْقَ دَمَهُ.

‘‘তিন ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট। হারাম শরীফের সম্মান ক্ষুণ্ণকারী, মুসলিম হয়ে জাহিলিয়্যাতের মত ও পন্থা অন্বেষণকারী এবং অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করতে আগ্রহী’’। (বুখারী ৬৮৮২)

 ৭৪. কবীরা গুনাহ্’র কারণে কোন ক্ষমতাসীনকে কাফির সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কবীরা গুনাহ্’র কারণে কোন ক্ষমতাসীনকে কাফির সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা আরকটি কবীরা গুনাহ্।

এ জাতীয় ব্যক্তিকে আরবীতে খারিজী এবং একের অধিককে খাওয়ারিজ বলা হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় খারিজীদেরকে জাহান্নামের কুকুর এবং আকাশের নিচের সর্বনিকৃষ্ট নিহত বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইব্নু আবী আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـخَوَارِجُ كِلَابُ النَّارِ.

‘‘খারিজীরা হচ্ছে জাহান্নামের কুকুর’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৭২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

شَرُّ قَتْلَى قُتِلُوْا تَحْتَ أَدِيْمِ السَّمَاءِ، وَخَيْرُ قَتِيْلٍ مَنْ قَتَلُوْا، كِلَابُ أَهْلِ النَّارِ، قَدْ كَانُوْا هَؤُلَاءِ مُسْلِمِيْنَ فَصَارُوْا كُفَّارًا.

‘‘(খারিজীরাই হচ্ছে) আকাশের নিচের সর্বনিকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি এবং তারা যাদেরকে হত্যা করবে তারাই হবে সর্বোৎকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি। তারা হচ্ছে জাহান্নামীদের কুকুর। তারা ছিলো একদা মুসলিম অতঃপর হলো কাফির’’। (তিরমিযী ৩০০০; ইব্নু মাজাহ্ ১৭৫)

এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় খারিজীদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে সাওয়াবও ঘোষণা দিয়েছেন।

‘আলী ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَأْتِيْ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ حُدَثَاءُ الْأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الْأَحْلَامِ، يَقُوْلُوْنَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، يَمْرُقُوْنَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْـرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْآنَ، لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، فَأَيْنَمَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ، فَإِنَّ قَتْلَهُمْ أَجْرٌ لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘শেষ যুগে এমন এক জাতি আসবে যাদের বয়স হবে কম এবং তারা হবে বোকা। কথা বলবে সর্বশ্রেষ্ঠ কথা। তবে তারা ইসলাম থেকে তেমনিভাবে বের হয়ে যাবে যেমনিভাবে বের হয়ে যায় তীর শিকারের শরীর থেকে। তারা কুর‘আন পড়বে ঠিকই। তবে তাদের কুর‘আন গলা অতিক্রম করবে না তথা কবুল করা হবে না। তোমরা যেখানেই তাদেরকে পাবে হত্যা করবে। কারণ, তাদেরকে হত্যা করলে কিয়ামতের দিন সাওয়াব পাওয়া যাবে’’। (বুখারী ৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩০; মুসলিম ১০৬৬; ইব্নু মাজাহ্ ১৬৭)

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোন অসদাচরণ দেখলে তা ধৈর্যের সাথে মেনে নিবে। এ জন্য তার আনুগত্য প্রত্যাখ্যান এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيْرهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ، فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً.

‘‘যে ব্যক্তি নিজ ক্ষমতাসীনের পক্ষ থেকে কোন অসদাচরণ দেখে সে যেন তা ধৈর্যের সাথে মেনে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি চলমান প্রশাসন থেকে এক বিঘত সমপরিমাণ তথা সামান্যটুকুও বের হয়ে যায় সে জাহিলী যুগের মৃত্যু বরণ করবে’’। (বুখারী ৭০৫৩; মুসলিম ১৮৪৯)

‘আউফ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا مَنْ وَلِيَ عَلَيْهِ وَالٍ، فَرَآهُ يَأْتِيْ شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِيْ مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلَا يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ.

‘‘জেনে রাখো, কারোর উপর কোন ব্যক্তি ক্ষমতাসীন হলে এবং সে ব্যক্তি কোন গুনাহ্’র কাজ করলে তার সে গুনাহ্কেই তুমি অপছন্দ করবে তবে তার আনুগত্য একেবারেই প্রত্যাখ্যান করবে না’’। (মুসলিম ১৮৫৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَا حُجَّةَ لَهُ، وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً.

‘‘যে ব্যক্তি চলমান কোন প্রশাসনের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলো সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তখন এ ব্যাপারে তার কোন কৈফিয়ত শুনা হবে না এবং যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো যে, তখন সে কোন প্রশাসনের আনুগত্যের দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা করেনি তা হলে সে জাহিলী যুগের মৃত্যু বরণ করবে’’। (মুসলিম ১৮৫০)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِيْ أَثَرَةً وَأُمُوْرًا تُنْكِرُوْنَهَا، قَالُوْا: فَمَا تَأْمُرُنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: أَدُّوْا إِلَيْهِمْ حَقَّهُمْ، وَسَلُوْا اللهَ حَقَّكُمْ.

‘‘নিশ্চয়ই তোমরা আমার মৃত্যুর পর (ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে) নিজ স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং আরো অনেক অসৎ কাজ দেখতে পাবে। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন আপনি আমাদেরকে কি করার আদেশ করছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তখন তোমরা তাদের অধিকার তথা আনুগত্য আদায় করবে এবং নিজ অধিকার আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট চাবে’’। (বুখারী ৭০৫২)

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোন শরীয়ত বিরোধী কার্য পরিলক্ষিত হলে তা কখনো সমর্থন করা যাবে না। বরং তখন এ ব্যাপারে নিজের অসম্মতি অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কখনো অস্ত্র ধরা যাবে না যতক্ষণ না তারা নামায পরিত্যাগ করে অথবা তাদের পক্ষ থেকে শরীয়তের নিরেট প্রমাণ ভিত্তিক সুস্পষ্ট কুফরি পাওয়া যায়।

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، فَتَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ: لَا، مَا صَلُّوْا.

‘‘তোমাদের উপর এমন কতেক ক্ষমতাসীন আসবে যারা কিছু কাজ করবে শরীয়ত সম্মত আর কিছু শরীয়ত বিরোধী। যে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে সে কোনমতে নিষ্কৃতি পাবে আর যে তা মেনে নিতে অস্বীকার করবে সে সুন্দরভাবে নিরাপদ থাকবে আর যে তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয় সেই দোষী। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি এমন ক্ষমতাসীনদের সথে যুদ্ধ করবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, যতক্ষণ তারা নামায আদায় করে’’। (মুসলিম ১৮৫৪)

’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

بَايَعَنَا رَسُوْلُ اللهِ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، فِيْ مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ وَأَنْ نَقُوْلَ بِالْحَقِّ حَيْثُمَا كُنَّا، لَا نَخَافُ فِيْ اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাই‘আত করেছেন ক্ষমতাসীনদের কথা শুনতে এবং তাদের আনুগত্য করতে। চাই তা আমাদের ভালোই লাগুক বা নাই লাগুক, চাই তা সচ্ছল অবস্থায় হোক বা অসচ্ছল অবস্থায় অথবা আমাদের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে নিজ স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার অবস্থায়ই হোক না কেন এবং আমারা যেন ক্ষমতাসীনদের সাথে ক্ষমতার লড়াই না করি। আমরা যেন সত্য কথা বলি যেখানেই আমরা থাকি না কেন। আমরা যেন আল্লাহ্ তা‘আলার ব্যাপারে কোন নিন্দাকারীর নিন্দাকে পরোয়া না করি যতক্ষণ না আমরা তাদের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কুফরি দেখতে পাই যে কুফরির ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে সঠিক প্রমাণ রয়েছে’’। (বুখারী ৭০৫৫, ৭০৫৬, ৭১৯৯, ৭২০০; মুসলিম ১৭০৯)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلَاحَ فَلَيْسَ مِنَّا.

‘‘যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে সে আমার উম্মত নয়’’। (বুখারী ৭০৭০; মুসলিম ৯৮)

 ৭৫. কোন ব্যক্তির স্ত্রী বা কাজের লোককে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন ব্যক্তির স্ত্রী বা কাজের লোককে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলাও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَبَّبَ زَوْجَةَ امْرِئٍ أَوْ مَمْلُوْكَهُ فَلَيْسَ مِنَّا.

‘‘কেউ অন্য কারোর স্ত্রী বা কাজের লোককে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুললে সে আমার উম্মত নয়’’।

(আবূ দাউদ ৫১৭০; আহমাদ ৯১৫৭; ’হা’কিম ২/১৯৬ বায়হাক্বী ৮/১৩)

৭৬. শরীয়তের সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ ছাড়াই কোন মুসলিমকে কাফির বলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরীয়তের সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ ছাড়াই কোন মুসলিমকে কাফির বলা আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَرْمِيْ رَجُلٌ رَجُلًا بِالْفُسُوْقِ، وَلَا يَرْمِيْهِ بِالْكُفْرِ إِلاَّ ارْتَدَّتْ عَلَيْهِ، إِنْ لَمْ يَكُنْ صَاحِبُهُ كَذَلِكَ.

‘‘কোন ব্যক্তি কাউকে ফাসিক বা কাফির বললে তা তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে যদি উক্ত ব্যক্তি এমন শব্দের উপযুক্তই না হয়’’। (বুখারী ৬০৪৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرِئٍ قَالَ لِأَخِيْهِ : يَا كَافِرُ، فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا، إِنْ كَانَ كَمَا قَالَ، وَإِلاَّ رَجَعَتْ عَلَيْهِ.

‘‘কেউ নিজ কোন মুসলিম ভাইকে কাফির বললে তা উভয়ের কোন এক জনের উপরই বর্তায়। যদি উক্ত ব্যক্তি সত্যিকারার্থে কাফির হয়ে থাকে তা তো হলোই আর যদি সে সত্যিকারার্থে কাফির নাই হয়ে থাকে তা হলে তা তার উপরই বর্তাবে’’। (মুসলিম ৬০)

 ৭৭. শরীয়তের যে কোন দন্ডবিধি প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরীয়তের যে কোন দন্ডবিধি প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

কোন ব্যক্তি কারোর ক্বিসাস্ অথবা দিয়াত বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করলে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের অভিশাপ নিপতিত হয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قُتِلَ عِمِّيًّا أَوْ رِمِّيًّا بِحَجَرٍ أَوْ سَوْطٍ أَوْ عَصًا فَعَقْلُهُ عَقْلُ الْـخَطَإِ، وَمَنْ قُتِلَ عَمْدًا فَهُوَ قَوَدٌ، وَمَنْ حَالَ دُوْنَهُ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ.

‘‘যার হত্যাকারীর পরিচয় মিলেনি অথবা যাকে পাথর মেরে কিংবা লাঠি ও বেত্রাঘাতে হত্যা করা হয়েছে তার দিয়াত হচ্ছে ভুলবশত হত্যার দিয়্যাত। তবে যাকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা হয়েছে তার শাস্তি হবে ক্বিসাস্। যে ব্যক্তি উক্ত ক্বিসাস্ বা দিয়াত বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার পক্ষ থেকে কোন প্রকার তাওবা অথবা ফিদ্য়া (ক্ষতিপূরণ) গ্রহণ করা হবে না। অন্য অর্থে, তার পক্ষ থেকে কোন ফরয ও নফল ইবাদাত গ্রহণ করা হবে না’’। (আবূ দাউদ ৪৫৪০, ৪৫৯১ নাসায়ী : ৮/৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৮৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ حَالَتْ شَفَاعَتُهُ دُوْنَ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ فَقَدْ ضَادَّ اللهَ.

‘‘যার সুপারিশ আল্লাহ্ তা‘আলার কোন দন্ডবিধি প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করলো সে সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলার বিরুদ্ধাচরণ করলো’’। (আবূ দাউদ ৩৫৯৭; আহমাদ ৫৩৮৫ ত্বাবারানী, হাদীস ১৩০৮৪ বায়হাক্বী ৮/৩৩২; ’হা’কিম ৪/৩৮৩)

 ৭৮. কোন মৃত ব্যক্তির কবর খনন করে তার কাফনের কাপড় চুরি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মৃত ব্যক্তির কবর খনন করে তার কাফনের কাপড় চুরি করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম।

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

 الْـمُخْتَفِيَ وَالْـمُخْتَفِيَةَ.لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেন কাফন চোর ও চুন্নিকে’’। (বায়হাক্বী ৮/৩৭০ সিল্সিলাতুল্ আহা’দীসিস্ সা’হীহাহ্, হাদীস ২১৪৮)

 ৭৯. কোন জীবিত পশুর এক বা একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে তাকে বিশ্রী বা বিকৃত করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন জীবিত পশুর এক বা একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে তাকে বিশ্রী বা বিকৃত করা আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ مَثَّلَ بِالْـحَيْوَانِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করুক সে ব্যক্তিকে যে কোন জীবিত পশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে তাকে বিকৃত করে দেয়’’। (নাসায়ী ৪১৩৯)

এমন অপকর্ম সংঘটন করা যদি কোন জীবিত পশুর সাথে গুরুতর অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে তা কোন মানুষের সাথে সংঘটন করা যে কতটুকু ভয়াবহ তা এখান থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। এ জাতীয় হিংস্র অমানুষদের সুবুদ্ধি ফিরে আসবে কি?

 ৮০. কোন মু’মিন বা মুসলিম ব্যক্তি অহঙ্কারকারী কৃপণ অথবা কঠিন হৃদয় সম্পন্ন হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মু’মিন বা মুসলিম ব্যক্তি অহঙ্কারকারী কৃপণ অথবা কঠিন হৃদয় সম্পন্ন হওয়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ الْـجَوَّاظُ وَالْـجَعْظَرِيُّ.

‘‘অহঙ্কারকারী কৃপণ ও কঠিন হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (স’হীহুল্ জামি’, হাদীস ৪৫১৯)

 ৮১. শরীয়তের কোন বিধান অমান্য করার জন্য যে কোন ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ কোন বিধান অমান্য করার জন্য যে কোন ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ، حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَجَمَّلُوْهَا فَبَاعُوْهَا.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ইহুদিদেরকে অভিসম্পাত করুক। কারণ, তাদের উপর যখন (আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে) চর্বি হারাম করে দেয়া হয়েছে তখন তারা তা গলিয়ে তেল বানিয়ে বিক্রি করেছে’’। (বুখারী ৩৪৬০)

অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা যখন কারো উপর কোন জিনিস হারাম করেন তখন তার বিক্রিলব্ধ পয়সাও হারাম করে দেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বাইতুল্লাহ্’র রুকনে ইয়ামানীর পার্শ্বে বসা অবস্থায় দেখেছিলাম। তিনি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললেন:

لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ثَلَاثًا، إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ইহুদিদেরকে লা’নত করুক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিনবার বলেছেন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন; অথচ তারা তা বিক্রি করে সে পয়সা ভক্ষণ করে। বস্তত: আল্লাহ্ তা‘আলা কোন জাতির উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করলে তার বিক্রিলব্ধ পয়সাও হারাম করে দেন’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৮)

বর্তমান যুগে হারামকে হালাল করার জন্য হরেক রকমের কৌশলই গ্রহণ করা হয়। সুদ খাওয়ার জন্য বর্তমান সমাজে কতো ধরনের পলিসি যে গ্রহণ করা হচ্ছে বা হয়েছে তা আজ কারোরই অজানা নয়। আবার কখনো কখনো হারাম বস্ত্তর নাম পাল্টিয়ে উহাকে হালাল বানিয়ে নেয়া হয়। আরো কত্তো কী?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বহু পূর্বেই এ ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।

আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَذْهَبُ اللَّيَالِيْ وَالْأَيَّامُ حَتَّى تَشْرَبَ فِيْهَا طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ ؛ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا.

‘‘দিনরাত শেষ হবে না তথা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক মদ পান করবে। তারা মদকে অন্য নামে আখ্যায়িত করবে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৪৪৭)

অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বহু পূর্বেই এ জাতীয় সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ.

‘‘প্রত্যেক নেশাকর বস্তই মদ। আর সকল প্রকারের মদই হারাম’’। (মুসলিম ২০০৩)

কোন হারাম বস্তকে হালাল করার জন্য এ জাতীয় কূটকৌশল সত্যিই ভয়ঙ্কর। কারণ, মানুষ তখন কোন লজ্জা বা ভয় ছাড়াই নির্দ্বিধায় এ সকল কাজ করে থাকে এ কথা ভেবে যে, তা তো হালালই এবং তা অতি দ্রুত গতিতেই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।

 ৮২. মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بَهَا النَّاسَ.

‘‘দু’ জাতীয় মানুষ এমন রয়েছে যারা জাহান্নামী। তবে আমি তাদেরকে এখনো দেখিনি। তাদের মধ্যে এক জাতীয় মানুষ এমন যে, তাদের হাতে থাকবে লাঠি যা দেখতে গাভীর লেজের ন্যায়। এগুলো দিয়ে তারা অযথা মানুষকে প্রহার করবে’’। (মুসলিম ২১২৮)

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَكُوْنُ فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ الْبَقَرِ، يَغْدُوْنَ فِيْ سَخَطِ اللهِ، وَيَرُوْحُوْنَ فِيْ غَضَبِهِ.

‘‘এ উম্মতের মধ্যে শেষ যুগে এমন কিছু লোক পরিলক্ষিত হবে যাদের সাথে থাকবে লাঠি যা দেখতে গাভীর লেজের ন্যায়। তারা সকালে বের হবে আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি নিয়ে এবং বিকেলে ফিরবে আল্লাহ্ তা‘আলার ক্রোধ নিয়ে’’। (আহমাদ ৫/২৫০; ’হা’কিম ৪/৪৩৬ ত্বাবারানী, হাদীস ৮০০০)

 ৮৩. কোন বিপদ আসলে তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে না নিয়ে বরং আল্লাহ্ তা‘আলার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন বিপদ আসলে তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে না নিয়ে বরং আল্লাহ্ তা‘আলার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম।

মু’মিন বলতেই তাকে এ কথা অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে, তার জীবনে যে কোন অঘটন ঘটুক না কেন তা একমাত্র তারই কিঞ্চিৎ কর্মফল। এর চাইতে আর বেশি কিছু নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْ عَنْ كَثِيْرٍ»

‘‘তোমাদের যে কোন বিপদাপদ ঘটুক না কেন তা তো একমাত্র তোমাদেরই কর্মফল। তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের অনেক অপরাধই ক্ষমা করে দেন’’। (শূরা : ৩০)

বিপদ যতো বড়োই হোক প্রতিদানও ততো বড়ো। তবে বিপদের সময় আল্লাহ্ তা‘আলার উপর অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকা চাই। বরং বিপদাপদ আসা তো আল্লাহ্ তা‘আলার ভালোবাসার পরিচায়কও বটে।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ، وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ.

‘‘নিশ্চয়ই বিপদ যতো বড়ো প্রতিদানও ততোই বড়ো। আর আল্লাহ্ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসলেই তো তাদেরকে বিপদের সম্মুখীন করেন। অতঃপর যে ব্যক্তি এতে সন্তুষ্ট থাকলো তার জন্যই তো আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি আর যে ব্যক্তি এতে অসন্তুষ্ট হলো তার জন্যই তো আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি’’। (তিরমিযী ২৩৯৬; ইব্নু মাজাহ্ ৪১০৩ সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ২১১০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা কারোর সাথে ভালোর ইচ্ছে করলে তাকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন’’। (বুখারী ৫৬৪৫)

মু’মিনের উপর যে কোন বিপদই আসুক না কেন সে জন্য তাকে একটি করে সাওয়াব এবং একটি করে তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ شَيْءٍ يُصِيْبُ الْـمُؤْمِنَ حَتَّى الشَّوْكَةِ تُصِيْبُهُ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً، أَوْ حُطَّتْ عَنْهُ بِهَا خَطِيْئَةٌ.

‘‘মু’মিনের উপর যে কোন বিপদই আসুক না কেন এমনকি তার পায়ে একটি কাঁটা বিঁধলেও আল্লাহ্ তা‘আলা এর পরিবর্তে তার জন্য একটি সাওয়াব লিখে রাখবেন এবং তার একটি গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন’’। (মুসলিম ২৫৭২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيْبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ فَمَا سِوَاهُ إِلاَّ حَطَّ اللهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا.

‘‘মুসলিমের কোন কষ্ট হলে চাই তা অসুখের কারণেই হোক অথবা অন্য যে কোন কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা সে জন্য তার গুনাহ্গুলো ক্ষমা করে দেন যেমনিভাবে গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে পড়ে’’। (মুসলিম ২৫৭১)

যে ব্যক্তি দীনের উপর যত বেশি অটল তার বিপদও ততো বেশি। এ কারণেই নবীরা বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। এরপর যে যতটুকু নবীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে সে ততো বেশি বিপদের সম্মুখীন হবে।

সা’দ্ বিন্ আবী ওয়াক্কাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً ؟ قَالَ: الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْأَمْثَلُ، فَالْأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِيْنِهِ، فَإِنْ كَانَ دِيْنُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِيْ دِيْنِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِيْنِهِ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِيْ عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيْئَةٌ.

‘‘আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মানুষের মধ্যে কারা বেশিরভাগ কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয় ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নবীগণ অতঃপর যারা তাদের আদর্শে বেশি অনুপ্রাণিত অতঃপর যারা এর পরের অবস্থানে। সুতরাং যে কোন ব্যক্তিকে তার ধার্মিকতার ভিত্তিতেই বিপদের সম্মুখীন করা হয়। অতএব তার ধার্মিকতা যদি শক্ত হয় তার বিপদও ততো শক্ত হবে। আর যার ধার্মিকতায় দুর্বলতা রয়েছে তাকে তার ধার্মিকতা অনুযায়ীই বিপদের সম্মুখীন করা হবে। সুতরাং বিপদ বান্দাহ্’র সাথে লেগেই থাকবে। এমনকি পরিশেষে তার অবস্থা এমন হবে যে, সে দুনিয়ার বুকে বিচরণ করছে ঠিকই অথচ তার কোন গুনাহ্ই নেই’’। (তিরমিযী ২৩৯৮; ইব্নু মাজাহ্ ৪০৯৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْـمُؤْمِنِ وَالْـمُؤْمِنَةِ فِيْ نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللهَ، وَمَا عَلَيْهِ خَطِيْئَةٌ.

‘‘মু’মিন পুরুষ ও মহিলার সাথে বিপদ লেগেই থাকবে চাই তা তার ব্যক্তি সংক্রান্ত হোক অথবা সন্তান ও সম্পদ সংক্রান্ত। এমনকি পরিশেষে অবস্থা এমন হবে যে, সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করছে ঠিকই অথচ তার কোন গুনাহ্ই নেই’’। (তিরমিযী ২৩৯৯)

ফুযাইল্ বিন্ ’ইয়ায্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَا يَبْلُغُ الْعَبْدُ حَقِيْقَةَ الْإِيَمَانِ حَتَّى يَعُدَّ الْبَلَاءَ نِعْمَةً، وَالرَّخَاءَ مُصِيْبَةً، وَحَتَّى لَا يُحِبَّ أَنْ يُحْمَدَ عَلَى عِبَادَةِ اللهِ تَعَالَى.

‘‘বান্দাহ্ কখনো ঈমানের মূলে পৌঁছুতে পারবে না যতক্ষণ না সে বিপদকে নিয়ামত এবং সচ্ছলতাকে বিপদ মনে করবে এবং যতক্ষণ না সে আল্লাহ্’র ইবাদতের উপর মানুষের প্রশংসা অপছন্দ করবে’’।

ধৈর্য যে কোন মুসলিমের স্বাভাবিক ভূষণ হওয়া উচিৎ। বিপদের সময় যেমন সে ধৈর্য ধারণ করবে তেমনিভাবে সুখের সময়ও তাকে আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বরং এ সময়ের ধৈর্য প্রথমোক্ত ধৈর্যের চাইতে আরো গুরুত্বপূর্ণ।

শাইখুল ইসলাম ইব্নু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

أَمَّا نِعْمَةُ الضَّرَّاءِ فَاحْتِيَاجُهَا إِلَى الصَّبْرِ ظَاهِرٌ، وَأَمَّا نِعْمَةُ السَّرَّاءِ فَتَحْتَاجُ إِلَى الصَّبْرِ عَلَى الطَّاعَةِ فِيْهَا، فَإِنَّ فِتْنَةَ السَّرَّاءِ أَعْظَمُ مِنْ فِتْنَةِ الضَّرَّاءِ، الْفَقْرُ يَصْلُحُ عَلَيْهِ خَلْقٌ كَثِيْرٌ، وَالْغِنَى لَا يَصْلُحُ عَلَيْهِ إِلاَّ أَقَلُّ مِنْهُمْ، وَلِـهَذَا كَانَ أَكْثَرَ مَنْ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ الْـمَسَاكِيْنُ، لِأَنَّ فِتْنَةَ الْفَقْرِ أَهْوَنُ، وَكِلَاهُمَا يَحْتَاجُ إِلَى الصَّبْرِ وَالشُّكْرِ، لَكِنْ لَمَّا كَانَ فِيْ السَّرَّاءِ اللَّذَّةُ، وَفِيْ الضَّرَّاءِ الْأَلَمُ اشْتَهَرَ ذِكْرُ الشُّكْرِ فِيْ السَّرَّاءِ، وَالصَّبْرِ فِيْ الضَّرَّاءِ.

‘‘বিপদের সময় ধৈর্য ধরার ব্যাপারটি একেবারেই সুস্পষ্ট যা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে একটি নিয়ামতও বটে। তেমনিভাবে সুখের সময়ও আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাও আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত। তবে সুখের পরীক্ষা বেশি কঠিন দু:খের পরীক্ষার চাইতেও। দরিদ্রতা বেশি সংখ্যক মানুষকেই মানায় কিন্তু ধন-সম্পদ খুব অল্প সংখ্যক লোককেই মানায়। এ কারণে দরিদ্ররাই বেশির ভাগ জান্নাতী। কারণ, দরিদ্রতার পরীক্ষা অনেকটাই সহজ। তবে উভয় অবস্থায়ই ধৈর্য ও আল্লাহ্’র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু সুখে বেশির ভাগ মজা এবং দু:খে বেশির ভাগ কষ্ট থাকার দরুনই সুখের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতার ব্যবহার বেশি এবং দু:খের ক্ষেত্রে ধৈর্য’’।

আপনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অতএব এমনও তো হতে পারে যে, আপনি যে বস্ত্তটিকে আপনার জন্য কল্যাণকর ভাবছেন তা সত্যিই আপনার জন্য অকল্যাণকর আর আপনি যে বস্ত্তটিকে আপনার জন্য অকল্যাণকর ভাবছেন তা সত্যিই আপনার জন্য কল্যাণকর।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ، وَعَسَى أَنْ تُحِبُّـوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ، وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ»

‘‘এমনও তো হতে পারে যে, তোমরা কোন বস্ত্তকে নিজের জন্য অপছন্দ করছো অথচ তাই হচ্ছে তোমাদের জন্য কল্যাণকর তেমনিভাবে তোমরা কোন বস্ত্তকে নিজের জন্য পছন্দ করছো; অথচ তাই হচ্ছে তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্ত্তত: আল্লাহ্ তা‘আলাই এ ব্যাপারে সঠিক জানেন আর তোমরা তা জানো না’’। (বাক্বারাহ্ : ২১৬)

বস্ত্তত: মু’মিনের জন্য সবই কল্যাণকর। তার জীবনে কোন খুশির ব্যাপার ঘটলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা আদায় করবে তখন তা তার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হবে। তেমনিভাবে তার জীবনে কোন দু:খের ব্যাপার ঘটলে সে তা ধৈর্যের সাথে মেনে নিবে তখনও তা তার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হবে।

স্বুহাইব্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

عَجَبًا لِأَمْرِ الْـمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.

‘‘মু’মিনের ব্যাপারটি খুবই আশ্চর্যজনক। কারণ, তার সকল অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। আর এ ব্যাপারটি একমাত্র মু’মিনের জন্য। অন্য কারোর জন্য নয়। কারণ, তার জীবনে যখন কোন খুশির সংবাদ আসে তখন সে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অতএব তা তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়। তেমনিভাবে তার জীবনে যখন কোন দু:খের সংবাদ আসে তখন সে ধৈর্যের সাথে তা মেনে নেয় অতএব তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়’’। (মুসলিম ২৯৯৯)

 কারোর উপর কোন বিপদ আসলে তাকে যা করতে হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর উপর কোন বিপদ আসলে তাকে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়তে হয়:

إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ، اللَّهُمَّ آجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِنْهَا.

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ عَبْدٍ تُصِيْبُهُ مُصِيْبَةٌ فَيَقُوْلُ: إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ، اللَّهُمَّ آجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِنْهَا، إِلاَّ أَجَرَهُ اللهُ فِيْ مُصِيْبَتِهِ وَأَخْلَفَ لَهُ خَيْرًا مِنْهَا.

‘‘কোন বান্দাহ্’র উপর বিপদ আসলে সে যদি বলে: আমরা সবাই আল্লাহ্’রই জন্য এবং আমাদের সকলকে তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ্! আপনি আমার এ বিপদে আমাকে সাওয়াব দান করুন এবং আমাকে এর চাইতেও ভালো প্রতিদান দিন তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে উক্ত বিপদে ধৈর্য ধারণের জন্য সাওয়াব দান করেন এবং তাকে এর চাইতেও উত্তম প্রতিদান দেন’’। (মুসলিম ৯১৮)

 বিপদাপদ আসলে যে চিকিৎসাগুলো গ্রহণ করতে হয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বিপদাপদ আসলে নিম্নোক্ত কাজগুলো অবশ্যই করণীয়:

১. এ কথা মনে করবে যে, দুনিয়াটা হচ্ছে পরীক্ষার ক্ষেত্র। সুতরাং এখানে সর্বদা আরাম করার তেমন কোন সুযোগ নেই।

২. এ কথাও মনে করবে যে, যতটুকু বিপদ আমার ভাগ্যে লেখা আছে তা তো ঘটবেই তাতে আমার করার কিছুই নেই। বরং তাতে একমাত্র সন্তুষ্টই থাকতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে।

৩. এটাও মনে করবে যে, এর চাইতে আরো বড় বিপদও তো আসতেই পারতো। তা হলে সে কঠিন বিপদ থেকে তো রক্ষাই পাওয়া গেলো।

৪. যে ব্যক্তি আপনার মতোই বিপদগ্রস্ত তার প্রতি খেয়াল করবেন। তা হলে বিপদের প্রকোপ সামান্যটুকু হলেও লাঘব হবে।

৫. আপনার চাইতেও বেশি বিপদগ্রস্ত এমন লোকের প্রতি তাকাবেন। তা হলে একটু হলেও খুশি লাগবে।

৬. আপনি যা হারিয়েছেন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তার চাইতেও আরো উন্নত প্রতিদানের আশা করবেন। যদি বিকল্প পাওয়া সম্ভবপর হয়ে থাকে।

৭. অন্ততপক্ষে ধৈর্যের ফযীলতের কথা খেয়াল করে ধৈর্য ধরবেন। আর যদি পারেন আল্লাহ্ তা‘আলার ফায়সালার উপর পূর্ণ সন্তুষ্ট থাকবেন।

৮. এ কথা অবশ্যই মনে করবেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার সকল ফায়সালাই আমার জন্য কল্যাণকর তা যাই হোক না কেন।

৯. এ কথাও মনে করতে হবে যে, কঠিন বিপদ নেককার হওয়ারই পরিচায়ক।

১০. এটাও মনে করবে যে, আমি আল্লাহ্’র গোলাম। আর গোলামের মনিবের উপর করার তো কিছুই নেই।

১১. আপনার অন্তর কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার ফায়সালার উপর বিদ্রোহ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই শায়েস্তা করবেন। কারণ, ক্ষিপ্ত হওয়াতে ক্ষতি ছাড়া কোন ফায়েদা নেই।

১২. এ কথা মনে করবেন যে, কোন বিপদ কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সুতরাং এ বিপদও এক সময় অবশ্যই কেটে যাবে।

৮৪. কোন বেগানা পুরুষের সামনে কোন মহিলার খাটো, স্বচ্ছ কিংবা সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন বেগানা পুরুষের সামনে কোন মহিলার খাটো, স্বচ্ছ কিংবা সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بَهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ، مُمِيْلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُؤُوْسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيْحَهَا، وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وَكَذَا.

‘‘দু’ জাতীয় মানুষ এমন রয়েছে যারা জাহান্নামী। তবে আমি তাদেরকে এখনো দেখিনি। তাদের মধ্যে এক জাতীয় মানুষ এমন যে, তাদের হাতে থাকবে লাঠি যা দেখতে গাভীর লেজের ন্যায়। এগুলো দিয়ে তারা অযথা মানুষকে প্রহার করবে। তাদের মধ্যে আরেক জাতীয় মানুষ হবে এমন মহিলারা যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ। তারা বেগানা পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে ঝুলে পড়া উটের কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি উহার সুগন্ধও পাবে না। অথচ উহার সুগন্ধ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়’’। (মুসলিম ২১২৮)

বর্তমান যুগে এমন সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরা হচ্ছে যে, বলাই মুশকিল, তা সেলাই করে পরা হয়েছে না কি পরে সেলানো হয়েছে। আবার এমন খাটো কাপড়ও পরা হয় যে, বলতে ইচ্ছে হয়: যখন লজ্জার মাথা খেয়ে এতটুকুই খুলে দিলে তখন আর বাকিটাই বা খুলতে অসুবিধে কোথায়? আবার এমন খোলা কাপড়ও পরিধান করা হয় যে, বাতাস তাদের মনের গতি বুঝে তা উড়িয়ে দিয়ে তাদের সবটুকুই মানুষকে দেখিয়ে দেয়। তখনই তাদের লুক্কায়িত প্রদর্শনেচ্ছা সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়। আবার কখনো এমন স্বচ্ছ কাপড় পরিধান করা হয় যে, তা পরেও না পরার মতো। বরং তা পরার পর মানুষ তাদের দিকে যতটুকু তাকায় পুরো কাপড় খুলে চললে ততটুকু তাকাতো না।

 ৮৫. কোন ঝগড়া-ফাসাদে যুলুমের সহযোগিতা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন ঝগড়া-ফাসাদে যুলুমের সহযোগিতা করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম।

কেউ অবৈধভাবে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তা জেনেশুনেও অন্য কেউ এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَعَانَ عَلَى خُصُوْمَةٍ بِظُلْمٍ ؛ لَمْ يَزَلْ فِيْ سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ.

‘‘কেউ যদি জেনেশুনে অন্যায় মূলক বিবাদে অন্যকে সহযোগিতা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর খুবই রাগান্বিত হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৩৪৯; ’হা’কিম ৪/৯৯)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَعَانَ ظَالِمًا لِيُدْحِضَ بِبَاطِلِهِ حَقًّا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُوْلِهِ.

‘‘কেউ যদি কোন যালিমকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করলো যে, সে তার বাতিল দিয়ে কোন হক্বকে প্রতিহত করবে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যিম্মাদারি তার উপর থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়’’।

(সা’হী’হুল্ জা’মি’ ৬০৪৮)

 ৮৬. আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টির মাধ্যমে কোন মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টির মাধ্যমে কোন মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করা কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি:

مَنِ الْتَمَسَ رِضَا اللهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ اللهُ مُؤْنَةَ النَّاسِ وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَا النَّاسِ بِسَخَطِ اللهِ وَكَلَهُ اللهُ إِلَى النَّاسِ.

‘‘যে ব্যক্তি মানুষকে অসন্তুষ্ট করে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টিই কামনা করে মানুষের ব্যাপারে তার জন্য একমাত্র আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসন্তুষ্ট করে একমাত্র মানুষের সন্তুষ্টিই কামনা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে মানুষের হাতে ছেড়ে দেন। তিনি আর তার কোন ধরনের সহযোগিতা করেন না’’। (তিরমিযী ২৪১৪)

 ৮৭. অমূলকভাবে কোন নেককার ব্যক্তিকে রাগান্বিত করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

অমূলকভাবে কোন নেককার ব্যক্তিকে রাগান্বিত করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

‘আয়িয বিন্ ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আবূ সুফিয়ান নিজ দলবল নিয়ে সালমান, সুহাইব ও বিলাল (রাঃ) এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তখন তাঁরা আবূ সুফিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলার কসম! আল্লাহ্’র তরবারি এখনো তাঁর এ শত্রুর গর্দান উড়িয়ে দেয়নি। তখন আবূ বকর (রাঃ) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা কুরাইশ নেতার ব্যাপারে এমন কথা বলতে পারলে?! অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘটনাটি জানানো হলে তিনি বললেন:

يَا أَبَا بَكْرٍ! لَعَلَّكَ أَغْضَبْتَهُمْ، لَئِنْ كُنْتَ أَغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أَغْضَبْتَ رَبَّكَ.

‘‘হে আবূ বকর! সম্ভবত তুমি তাদেরকে রাগিয়ে দিলে! যদি তুমি তাদেরকে রাগান্বিত করে থাকো তা হলে যেন তুমি আল্লাহ্ তা‘আলাকে রাগান্বিত করলে’’। (মুসলিম ২৫০৪)

অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) তাঁদের নিকট এসে বললেন: হে আমার ভাইয়েরা! আমি তো তোমাদেরকে রাগিয়ে দিয়েছি। তাঁরা বললেন: না, হে আমাদের শ্রদ্ধেয় ভাই! বরং আমরা আপনার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দো‘আ করছি তিনি যেন আপনাকে ক্ষমা করে দেন।

বর্তমান যুগে পরিস্থিতি আরো অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এখন তো রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, খেলাধুলা, গানবাদ্য ইত্যাকার যে কোন বিষয় এমনকি সাধারণ ছুতানাতা নিয়েও একে অপরের সাথে তর্কবিতর্ক করে পরস্পর গালাগালি, হাতাহাতি এমনকি একে অপরকে হত্যা করতেও সচরাচর দেখা যায়। কখনো কখনো তো পরিস্থিতি এমন পর্যায়েও দাঁড়ায় যে, সমাজে পরিচিত তথাকথিত বহু পাক্কা নামাযীকেও একজন কাফির বা ফাসিককে নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ সৃষ্টি করে তর্কবিতর্ক করতে দেখা যায়।

 ৮৮. কারোর নিজের জন্য রাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর নিজের জন্য রাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করাও হারাম এবং কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَغْيَظُ رَجُلٍ عَلَى اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَخْبَثُهُ وَأَغْيَظُهُ عَلَيْهِ رَجُلٌ كَانَ يُسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ، لَا مَلِكَ إِلاَّ اللهُ.

‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব বেশি রাগান্বিত হবেন সে ব্যক্তির উপর এবং সে তাঁর নিকট সর্বনিকৃষ্টও বটে যাকে একদা রাজাধিরাজ বলে ডাকা হতো। অথচ সত্যিকার রাজা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই’’। (মুসলিম ২১৪৩; বাগাওয়ী ৩৩৭০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّهُ مَلِكُ الْأَمْلَاكِ، لَا مَلِكَ إِلاَّ اللهُ.

‘‘এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ তা‘আলা অনেক বেশি রাগান্বিত হবেন যে নিজকে রাজাধিরাজ মনে করে। অথচ সত্যিকার রাজা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই’’। (আহমাদ ২/৪৯২; ’হা’কিম ৪/২৭৫; স’হীহুল্ জা’মি’ ৯৮৮)

 ৮৯. যে কথায় আল্লাহ্ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হবেন এমন কথা বলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে কথায় আল্লাহ্ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হবেন এমন কথা বলা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

বিলাল্ বিন্ ’হারিস্ মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ، مَا يَظُنَّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ، فَيَكْتُبُ اللهُ لَهُ بِهَا رِضْوَانَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ، وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ، مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ، فَيَكْتُبُ اللهُ عَلَيْهِ بِهَا سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ.

‘‘তোমাদের কেউ কখনো এমন কথা বলে ফেলে যাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর খুবই সন্তুষ্ট হন। সে কখনো ভাবতেই পারেনি কথাটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছুবে। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কথার দরুনই কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর তাঁর সন্তুষ্টি অবধারিত করে ফেলেন। আবার তোমাদের কেউ কখনো এমন কথাও বলে ফেলে যাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট হন। সে কখনো ভাবতেই পারেনি কথাটি এমন এক মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছুবে; অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কথার দরুনই কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর তাঁর অসন্তুষ্টি অবধারিত করে ফেলেন’’।

(তিরমিযী ২৩১৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০৪০; আহমাদ ৩/৪৬৯; হা’কিম ১/৪৪-৪৬; ইব্নু হিববান ২৮০; মা’লিক ২/৯৮৫)

 ৯০. কোন পুরুষের বেগানা কোন মহিলার সাথে অথবা কোন মহিলার বেগানা কোন পুরুষের সাথে নির্জনে অবস্থান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পুরুষের বেগানা কোন মহিলার সাথে অথবা কোন মহিলার বেগানা কোন পুরুষের সাথে নির্জনে অবস্থান করা হারাম। চাই তা কোন ঘরেই হোক অথবা কোন রুমে কিংবা কোন গাড়িতে অথবা লিফ্টে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُوْ مَحْرَمٍ.

‘‘কোন পুরুষ যেন বেগানা কোন মহিলার সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে সে মহিলার এগানা কোন পুরুষের উপস্থিতি ছাড়া’’। (মুসলিম ১৩৪১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ.

‘‘কোন পুরুষ যেন বেগানা কোন মহিলার সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে। এমন করলে তখন শয়তানই হবে তাদের তৃতীয় জন’’। (তিরমিযী ১১৭১)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ بَعْدَ يَوْمِيْ هَذَا عَلَى مُغِيْبَةٍ إِلاَّ وَمَعَهُ رَجُلٌ أَوْ اثْنَانِ.

‘‘আজকের পর কোন পুরুষ যেন এমন মহিলার ঘরে প্রবেশ না করে যার স্বামী তখন উপস্থিত নেই। তবে তার সাথে অন্য এক বা দু’ জন পুরুষ থাকলে তখন তারা প্রবেশ করতে পারবে’’। (মুসলিম ২১৭৩)

অন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নিষেধাজ্ঞার কারণও উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো শয়তানের প্রবঞ্চনা ও কুমন্ত্রণার ভয়।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَلِجُوْا عَلَى الْـمُغِيْبَاتِ ؛ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِيْ مِنْ أَحَدِكُمْ مَجْرَى الدَّمِ، قُلْنَا: وَمِنْكَ ؟! قَالَ: وَمِنِّيْ ؛ وَلَكِنَّ اللهَ أَعَانَنِيْ عَلَيْهِ فَأَسْلَمَ

‘‘তোমরা এমন মহিলার ঘরে প্রবেশ না করে যার স্বামী তখন উপস্থিত নেই। কারণ, শয়তান তোমাদের শিরাউপশিরায় চলাচল করে। সাহাবাগণ বললেন: আমরা বললাম: আপনারো? তিনি বললেন: আমারো। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাই আমি তার অনিষ্ট হতে নিরাপদ অথবা তাই সে এখন আমার অনুগত’’। (তিরমিযী ১১৭২)

 ৯১. বেগানা কোন মহিলার সাথে কোন পুরুষের মুসাফাহা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বেগানা কোন মহিলার সাথে কোন পুরুষের মুসাফাহা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَأَنْ يُّطْعَنَ فِيْ رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيْدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ.

‘‘তোমাদের কারোর মাথায় লোহার সুঁই দিয়ে আঘাত করা তার জন্য অনেক শ্রেয় বেগানা কোন মহিলাকে স্পর্শ করার চাইতে যা তার জন্য হালাল নয়’’।

(স’হীহুল্ জা’মি’ ৪৯২১)

কেউ কেউ মনে করেন, আমার মন খুবই পরিষ্কার। তাঁকে আমি মা, খালা অথবা বোনের মতোই মনে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তা হলে মুসাফাহা করতে অসুবিধে কোথায়। আমরা তাদেরকে বলবো: আপনার চাইতেও বেশি পরিষ্কার ছিলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তর। এরপরও তিনি যে কোন বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহা করতে অস্বীকৃতি জানান।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنِّيْ لَا أُصَافِحُ النِّسَاءَ أَوْ إِنِّيْ لَا أَمَسُّ أَيْدِيْ النِّسَاءِ.

‘‘নিশ্চয়ই আমি কোন বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহা করতে রাজি নই’’।

(স’হীহুল্ জা’মি’ ৩৫০৯, ৭০৫৪)

বর্তমান সমাজে এমনো কিছু আত্মমর্যাদাহীন লোক রয়েছে যাদের নেককার স্ত্রী, মেয়ে ও বোনেরা বেগানা পুরুষের সাথে মুসাফাহা করতে রাজি নয়; চাই তা লজ্জাবশত হোক অথবা ঈমানী চেতার দরুন; তবুও এ ধর্মহীন লোকেরা তাদেরকে উক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। তাদের এ কথা মনে রাখা উচিৎ যে, একবার যদি তাদের লজ্জা উঠে যায় দ্বিতীয়বার তা ফিরিয়ে আনা অবশ্যই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারেও এ কথা চিন্তা করা দরকার যে, যার লজ্জা নেই তার ঈমানও নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْـحَيَاءَ وَالْإِيْمَانَ قُرِنَا جَمِيْعًا، فَإِذَا رُفِعَ أَحَدُهُمَا رُفِعَ الْآخَرُ.

‘‘লজ্জা ও ঈমান একই সূত্রে গাঁথা। তার মধ্যে একটি ফসকে গেলে অন্যটিও ফসকে যাবে অবশ্যই’’। (স’হীহুল্ জা’মি’ ৩২০০)

 ৯২. কোন মাহরাম পুরুষের সঙ্গ ছাড়া যে কোন মহিলার দূর-দূরান্ত সফর করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মাহরাম তথা যে পুরুষের সাথে মহিলার দেখা দেয়া জায়িয এমন কোন পুরুষের সঙ্গ ছাড়া যে কোন মহিলার দূর-দূরান্ত সফর করা হারাম। চাই তা হজ্জ, ’উমরাহ্ তথা ধর্মীয় যে কোন কাজের জন্যই হোক অথবা শুধু বেড়ানোর জন্য। চাই তা গাড়িতেই হোক অথবা প্লেনে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيْرَةَ يَوْمٍ إِلاَّ مَعَ ذِيْ مَحْرَمٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য এটা জায়িয নয় যে, সে এক দিনের দূরত্ব সমপরিমাণ রাস্তা সফর করবে অথচ তার সাথে তার কোন মাহ্রাম নেই’’। (মুসলিম ১৩৩৯)

আবূ সাঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ سَفْرًا يَكُوْنُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصَاعِدًا إِلاَّ وَمَعَهَا أَبُوْهَا أَوْ ابْنُهَا أَوْ زَوْجُهَا أَوْ أَخُوْهَا أَوْ ذُوْ مَحْرَمٍ مِنْهَا.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য এটা জায়িয নয় যে, সে তিন দিন অথবা তিন দিনের বেশি দূরত্ব সমপরিমাণ রাস্তা সফর করবে অথচ তার সাথে তার পিতা, ছেলে, স্বামী, ভাই অথবা যে কোন মাহ্রাম নেই’’। (মুসলিম ১৩৪০)

অনেক মহিলা তো কোন মাহ্রাম ছাড়া শুধু একাই সফর শুরু করে দেয়। তার এ কথা জানা নেই যে, সে গাড়ি বা প্লেনে কার সাথেই বা বসবে। পুরুষের সাথে না মহিলার সাথে। পুরুষের সাথে বসলে সে কি ভালো পুরুষ হবে না খারাপ পুরুষ। মহিলার সাথে বসলে গাড়ি কি ঠিক জায়গায় সময় মতো পৌঁছুবে না কি অসময়ে। পথিমধ্যে হঠাৎ সে কোন বিপদে পড়লে কেউ কি তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে সাওয়াবের আশায় না ভোগের আশায়। আরো কত্তো কী।

এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, মাহ্রাম পুরুষটি জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম সাবালক হওয়া চাই। তা না হলে তার মধ্যে আর মহিলার মধ্যে পার্থক্যই বা থাকলো কোথায়?! বরং তখন সে নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। অন্য মহিলার নিরাপত্তার ব্যাপার তো এরপরেই আসছে।

 ৯৩. গান-বাদ্য কিংবা মিউজিক শুনা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

গান-বাদ্য কিংবা মিউজিক শুনাও হারাম কাজ এবং কবীরা গুনাহ্।

আবূ মা’লিক আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْـحِرَ وَالْـحَرِيْرَ وَالْـخَمْرَ وَالْـمَعَازِفَ.

‘‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু সম্প্রদায় অবশ্যই জন্ম নিবে যারা ব্যভিচার, সিল্কের কাপড়, মদ্য পান ও বাদ্যকে হালাল মনে করবে’’। (বুখারী ৫৫৯০)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার কসম খেয়ে বলেন: আল্লাহ্’র বাণী:

«وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَريْ لَـهْوَ الْـحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًا، أُوْلَآئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ»

‘‘মানুষের মধ্য থেকে তো কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত: আল্লাহ্ তা‘আলার পথ থেকে অন্যদেরকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য তথা গান (কিংবা সেগুলোর আসবাবপত্র) খরিদ করে এবং আল্লাহ্ প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে (পরকালে) অবমাননাকর শাস্তি’’। (লুক্বমান : ৬)

ইব্নু মাস্’ঊদ্ (রাঃ) কসম খেয়ে বলেন: উপরোক্ত আয়াত থেকে একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে গান-বাদ্য।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদ্যকে অভিসম্পাতও করেন। তিনি বলেন:

صَوْتَانِ مَلْعُوْنَانِ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ : مِزْمَارٌ عِنْدَ نِعْمَةٍ، وَرَنَّةٌ عِنْدَ مُصِيْبَةٍ.

‘‘দু’ ধরনের আওয়াজ দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নতপ্রাপ্ত। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সুখের সময়ের বাদ্য। আর অপরটি বিপদের সময়ের চিৎকার’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৮০১)

বর্তমান যুগে নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের দ্রুত আবিষ্কার, গায়ক-গায়িকা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীর সরগরম বাজার, আধুনিক সুরের রকমফের, গানের ভাষা ও ইঙ্গিতের ভয়ানকতা ব্যাপারটিকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সুতরাং তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আর কারোর সামান্যটুকু সন্দেহের অবকাশও থাকতে পারে না। উপরন্তু গান হচ্ছে ব্যভিচারের প্রথম ধাপ এবং গান মানুষের মধ্যে মুনাফিকীরও জন্ম দেয়।

৯৪. ধন-সম্পদের অপচয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ধন-সম্পদ অপচয় করাও আরেকটি হারাম কাজ এবং কবীরা গুনাহ্। যদিও তা নিজেরই হোক না কেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا، إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْـمُسْرِفِيْنَ»

‘‘তোমরা খাও এবং পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না’’। (আ’রাফ : ৩১)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلَاثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلَاثًا، فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوْهُ، وَلَا تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا، وَأَنْ تَعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَلَا تَفَرَّقُوْا، وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য তিনটি কাজ পছন্দ করেছেন। তেমনিভাবে আরো তিনটি কাজ অপছন্দ। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য যা পছন্দ করেছেন তা হলো, তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং তোমরা সবাই একমাত্র আল্লাহ্’র রজ্জুকেই আঁকড়ে ধরবে। কখনো বিক্ষিপ্ত হবে না। তিনি তোমাদের জন্য যা অপছন্দ করেছেন তা হলো, এমন কথা বলা হয়েছে; অমুক এমন কথা বলেছে তথা অযথা সংলাপ, অহেতুক অত্যধিক প্রশ্ন এবং ধন-সম্পদের বিনষ্ট সাধন’’। (মুসলিম ১৭১৫)

প্রতিটি মানুষকে কিয়ামতের দিন অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার সম্মুখে নিজের সম্পদের হিসেব দিতে হবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَزُوْلُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ: عَنْ عُمُرِهِ فِيْمَ أَفْنَاهُ؟ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيْمَ أَبْلَاهُ؟ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ؟ وَفِيْمَ أَنْفَقَهُ؟ وَمَاذَا عَمِلَ فِيْمَا عَلِمَ؟

‘‘কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের দু’টি পা আল্লাহ্ তা‘আলার সম্মুখ থেকে এতটুকুও নড়বে না যতক্ষণ না সে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়: তার পুরো জীবন সে কি কাজে ক্ষয় করেছে? তার পূর্ণ যৌবন সে কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার ধন-সম্পদ সে কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছে এবং কি কাজে খরচ করেছে? তার জ্ঞানানুযায়ী সে কতটুকু আমল করেছে?’’ (তিরমিযী ২৪১৬)

 ৯৫. আল্লাহ্ তা‘আলার দয়া কিংবা অনুগ্রহ অস্বীকার তথা নিজ সম্পদ থেকে গরীবের অধিকার আদায়ে অনীহা প্রকাশ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আল্লাহ্ তা‘আলার দয়া কিংবা অনুগ্রহ অস্বীকার তথা নিজ সম্পদ থেকে গরীবের অধিকার আদায়ে অনীহা প্রকাশ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বনী ইস্রাঈলের কয়েকজন ব্যক্তিকে অঢেল সম্পদ দিয়ে পুনরায় তাদেরকে ফিরিশ্তার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। তাদের অধিকাংশই তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার একান্ত অনুগ্রহ নয় বলে তাঁর নিয়ামত অস্বীকার করত: তা তাদের বাপ-দাদার সম্পদ বলে দাবি করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেন। আর যারা তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ বলে স্বীকার করলো তাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট হন এবং তাদের সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

إِنَّ ثَلَاثَةً فِيْ بَنِيْ إِسْرَآئِيْلَ: أَبْـرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى، أَرَادَ اللهُ أَنْ يَّبْتَلِيَهُمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مَلَكًا، فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: لَوْنٌ حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبَ عَنِّيْ الَّذِيْ قَدْ قَذِرَنِيْ النَّاسُ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ قَـذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا وَجِلْدًا حَسَنًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْإِبِلُ، أَوْ قَالَ: الْبَقَرُ ـ شَكَّ إِسْحَاقُ ـ إِلاَّ أَنَّ الْأَبْرَصَ أَوِ الْأَقْرَعَ قَالَ أَحَدُهُمَا: الْإِبِلُ وَقَالَ الْآخَرُ: الْبَقَرُ، قَالَ: فَأُعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَآءَ، فَقَالَ: بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْهَا، قَالَ: فَأَتَى الْأَقْرَعَ فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبَ عَنِّيْ هَذَا الَّذِيْ قَدْ قَذِرَنِيْ النَّاسُ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ وَأُعْطِيَ شَعْرًا حَسَنًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْبَقَرُ، فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلًا، فَقَالَ: بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْهَا، قَالَ: فَأَتَى الْأَعْمَى فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: أَنْ يَرُدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِيْ فَأُبْصِرَ بِهِ النَّاسَ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرَهُ، قَالَ: فَأَيُّ الْمَـالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْغَنَمُ، فَأُعْطِيَ شَاةً وَالِدًا، فَأَنْتَجَ هَذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا، قَالَ: فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِنَ الْإِبِلِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْبَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْغَنَمِ، قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ أَتَى الْأَبْرَصَ فِيْ صُوْرَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ: رَجُلٌ مِسْكِيْنٌ، قَدِ انْقَطَعَتْ بِيْ الْحِبَالُ فِيْ سَفَرِيْ، فَلَا بَلَاغَ لِيْ الْيَوْمَ إِلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذِيْ أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحَسَنَ وَالْجِلْدَ الْحَسَنَ وَالْمَالَ بَعِيْرًا أَتَبَلَّغُ عَلَيْهِ فِيْ سَفَرِيْ، فَقَالَ: الْحُقُوْقُ كَثِيْرَةٌ، فَقَالَ لَهُ: كَأَنِّيْ أَعْرِفُكَ، أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ؟ فَقِيْرًا فَأَعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ: إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا الْمَالَ كَابِرًا عَنْ كَابِـرٍ، فَقَالَ: إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتُ، قَالَ: وَأَتَى الْأَقْرَعَ فِيْ صُوْرَتِهِ، فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذَا، وَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ عَلَى هَذَا، فَقَالَ: إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ، قَالَ: وَأَتَى الْأَعْمَى فِيْ صُوْرَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ: رَجُلٌ مِسْكِيْنٌ وَابْنُ سَبِيْلٍ، انْقَطَعَتْ بِيْ الْحِبَالُ فِيْ سَفَرِيْ، فَلَا بَلَاغَ لِيْ الْيَوْمَ إِلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذِيْ رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ، شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا فِيْ سَفَرِيْ، فَقَالَ: قَدْ كُنْتُ أَعْمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِيْ، فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ، فَوَاللهِ لَا أَجْهَدُكَ الْيَوْمَ شَيْئًا أَخَذْتَهُ لِلهِ، فَقَالَ: أَمْسِكْ مَالَكَ، فَإِنَّمَا ابْتُلِيْتُمْ، فَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيْكَ.

‘‘বনী ইস্রাঈলের তিন ব্যক্তি শ্বেতী রোগী, টাক মাথা ও অন্ধের নিকট আল্লাহ্ তা‘আলা জনৈক ফিরিশ্তা পাঠিয়েছেন তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে। ফিরিশ্তাটি শ্বেতী রোগীর নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে সুন্দর রং ও মনোরম চামড়া এবং আমার এ রোগটি যেন ভালো হয়ে যায়, যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তা তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে তার কদর্যতা দূর হয়ে যায় এবং তাকে সুন্দর রং ও মনোরম চামড়া দেয়া হয়। আবারো ফিরিশ্তা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: উট অথবা গরু। শ্বেতি রোগী অথবা টাক মাথার যে কোন এক জন উট চেয়েছে আর অন্য জন গাভী। বর্ণনাকারী ইস্হাক এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছেন। যা হোক তাকে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উষ্ট্রী দেয়া হলো এবং ফিরিশ্তা তার জন্য দো‘আ করলেন: আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার এ উষ্ট্রীর মধ্যে বরকত দিক!

এরপর ফিরিশ্তা টাক মাথা লোকটির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে সুন্দর চুল এবং আমার এ রোগটি যেন ভালো হয়ে যায়, যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার কদর্যতা দূর হয়ে যায় এবং তাকে সুন্দর চুল দেয়া হয়। আবারো ফিরিশ্তা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: গাভী। অতএব তাকে গর্ভবতী একটি গাভী দেয়া হলো এবং ফিরিশ্তা তার জন্য দো‘আ করলেন: আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার এ গাভীর মধ্যে বরকত দিক!

এরপর ফিরিশ্তা অন্ধ লোকটির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা যেন আমার চক্ষুটি ফিরিয়ে দেয়। যাতে আমি মানুষ জন দেখতে পাই। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তা তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার চক্ষুটি ফিরিয়ে দেন। আবারো ফিরিশ্তা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: ছাগল। অতএব তাকে গর্ভবতী একটি ছাগী দেয়া হলো। অতঃপর প্রত্যেকের উষ্ট্রী, গাভী ও ছাগী বাচ্চা দিতে থাকে। এতে করে কিছু দিনের মধ্যেই প্রত্যেকের উট, গরু ও ছাগলে এক এক উপত্যকা ভরে যায়।

আরো কিছু দিন পর ফিরিশ্তা শ্বেতী রোগীর নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি এক জন গরিব মানুষ। আমার পথ খরচা একেবারেই শেষ। এখন এক আল্লাহ্ অতঃপর তুমি ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তাই আমি আল্লাহ্ তা‘আলার দোহাই দিয়ে তোমার নিকট একটি উট চাচ্ছি যিনি তোমাকে সুন্দর রং, মনোরম চামড়া ও সম্পদ দিয়েছেন যাতে আমার পথ চলা সহজ হয়ে যায়। উত্তরে সে বললো: দায়িত্ব অনেক বেশি। তোমাকে কিছু দেয়া এখন আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। ফিরিশ্তা তাকে বললেন: তোমাকে চেনা চেনা মনে হয়। তুমি কি শ্বেতী রোগী ছিলে না? মানুষ তোমাকে ঘৃণা করতো। তুমি কি দরিদ্র ছিলে না? অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন। সে বললো: না, আমি কখনো গরিব ছিলাম না। এ সম্পদগুলো আমি বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। অতঃপর ফিরিশ্তা বললেন: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ তা‘আলা যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।

অনুরূপভাবে ফিরিশ্তা টাক মাথার নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে সে জাতীয় কথাই বললেন যা বলেছেন শ্বেতী রোগীর সঙ্গে এবং সেও সে উত্তর দিলো যা দিয়েছে শ্বেতী রোগী। অতঃপর ফিরিশ্তা বললেন: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ তা‘আলা যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।

তেমনিভাবে ফিরিশ্তা অন্ধের নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি দরিদ্র মুসাফির মানুষ। আমার পথ খরচা একেবারেই শেষ। এখন এক আল্লাহ্ অতঃপর তুমি ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তাই আমি আল্লাহ্ তা‘আলার দোহাই দিয়ে তোমার নিকট একটি ছাগল চাচ্ছি যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন যাতে আমার পথ চলা সহজ হয়ে যায়। উত্তরে সে বললো: আমি নিশ্চয়ই অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা আমার চক্ষু ফিরিয়ে দিয়েছেন। অতএব তোমার যা ইচ্ছা নিয়ে যাও এবং যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আজ আমি তোমাকে বারণ করবো না যাই তুমি আল্লাহ্’র জন্য নিবে। ফিরিশ্তা বললেন: তোমার সম্পদ তুমিই রেখে দাও। তোমাদেরকে শুধু পরীক্ষাই করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তোমার সাথীদ্বয়ের উপর হয়েছেন অসন্তুষ্ট। (বুখারী ৩৪৬৪, ৬৬৫৩; মুসলিম ২৯৬৪)

উক্ত হাদীসে প্রথমোক্ত ব্যক্তিদ্বয় আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ অস্বীকার ও তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কারণে তিনি তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁর দেয়া নিয়ামত তিনি তাদের থেকে ছিনিয়ে নেন। অন্য দিকে অপর জন তাঁর নিয়ামত স্বীকার করেন এবং তাতে তাঁর অধিকার আদায় করেন বিধায় আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর সন্তুষ্ট হন এবং তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।

অতএব নিয়ামতের শুকর আদায় করা অপরিহার্য। নিয়ামতের শুকর বলতে বিনয় ও ভালোবাসার সঙ্গে অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ স্বীকার করাকেই বুঝানো হয়।

 ৯৬. বিদ্‘আতী কিংবা প্রবৃত্তিপূজারীদের সাথে উঠা-বসা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বিদ্‘আতী কিংবা প্রবৃত্তিপূজারীদের সাথে উঠ-বসা করা হারাম। কারণ, তারা ইসলামের ব্যাপারে একজন খাঁটি মুসলিমের সামনে হরেক রকমের সংশয়-সন্দেহ উপস্থাপন করে তাঁর মূল পুঁজি তথা বিশুদ্ধ আক্বীদা-বিশ্বাসকেই নষ্ট করে দেয়।

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا، وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ.

‘‘খাঁটি মু’মিনই যেন তোমার একমাত্র সঙ্গী হয় এবং একমাত্র পরহেযগার ব্যক্তিই যেন তোমার খাবার খায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৩২)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَا تُجَالِسْ أَهْلَ الْأَهْوَاءِ ؛ فَإِنَّ مُجَالَسَتَهُمْ مُمْرِضَةٌ لِلْقَلْبِ.

‘‘তোমরা প্রবৃত্তিপূজারীদের পার্শ্বে বসো না। কারণ, তাদের সাথে উঠা-বসা করলে অন্তর রোগাক্রান্ত হয়ে যায়’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৪০)

ফুযাইল্ বিন্ ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

صَاحِبُ بِدْعَةٍ لَا تَأْمَنْهُ عَلَى دِيْنِكَ، وَلَا تُشَاوِرْهُ فِيْ أَمْرِكَ، وَلَا تَجْلِسْ إِلَيْهِ، وَمَنْ جَلَسَ إِلَى صَاحِبِ بِدْعَةٍ أَوْرَثَهُ اللهُ الْعَمَى.

‘‘তোমার ধর্মকর্ম একজন বিদ্‘আতীর হাতে কখনোই নিরাপদ নয়। সুতরাং তোমার কোন ব্যাপারে তার সামান্যটুকু পরামর্শও নিবে না। এমনকি তার নিকটেও কখনো বসবে না। কারণ, যে ব্যক্তি কোন বিদ্‘আতীর নিকট বসলো সে অচিরেই তার অন্তর্দৃষ্টি হারিয়ে ফেললো’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৪২)

মুসলিম বিন্ ইয়াসা’র (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَا تُمَكِّنْ صَاحِبَ بِدْعَةٍ مِنْ سَمْعِكَ فَيَصُبُّ فِيْهِ مَا لَا تَقْدِرُ أَنْ تُخْرِجَهُ مِنْ قَلْبِكَ.

‘‘কোন বিদ্‘আতীকে কখনো তোমার কানের কাছে ঘেঁষতে দিবে না। কারণ, সে তখন তোমার কানে এমন কিছু ঢুকিয়ে দিবে যা আর কখনো তোমার অন্তর থেকে বের করতে পারবে না’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৫৯)

মুফায্যাল্ বিন্ মুহাল্হাল্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَوْ كَانَ صَاحِبُ الْبِدْعَةِ إِذَا جَلَسْتَ إِلَيْهِ يُحَدِّثُكَ بِبِدْعَتِهِ حَذِرْتَهُ وَفَرَرْتَ مِنْهُ، وَلَكِنَّهُ يُحَدِّثُكَ بِأَحَادِيْثِ السُّنَّةِ فِيْ بُدُوِّ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يُدْخِلُ عَلَيْكَ بِدْعَتَهُ فَلَعَلَّهَا تَلْزَمُ قَلْبَكَ، فَمَتَى تُخْرِجُ مِنْ قَلْبِكَ ؟!.

‘‘যদি কোন বিদ্‘আতীর নিকট বসলেই সে তোমার সাথে বিদ্‘আতের কথা আলোচনা করে তা হলে তুমি তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে এবং তার থেকে দূরে সরে যেতে পারতে। কিন্তু সে তো তা করছে না বরং সে সর্বপ্রথম তোমাকে সুন্নাতের কিছু হাদীস শুনাবে অতঃপর তার বিদ্‘আত তোমার নিকট সাপ্লাই দিবে। তখন তা তোমার অন্তরের সাথে গেঁথে যাবে যা অন্তর থেকে বের করার সুযোগ আর কখনো তোমার হবে না’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৪৪)

বর্তমান বিশ্বের অনেকেই অন্যের সাথে তার পারস্পরিক সম্পর্ক রাখার ব্যাপারটিকে সংখ্যাধিক্যের সাথে জুড়ে দেয়। তখন সে নিজ সুবিধার জন্য যাদের সংখ্যা বেশি তাদের সাথেই উঠাবসা করে এবং তাদের সাথেই বন্ধুত্ব পাতায়। কে সত্যের উপর আর কে মিথ্যার উপর তা সে কখনোই ভেবে দেখে না। অথচ ধর্মের খাতিরে তাকে একমাত্র সত্যের সাথীই হতে হবে। মিথ্যার নয়।

ফুযাইল্ বিন্ ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

اتَّبِعْ طُرُقَ الْـهُدَى، وَلَا يَضُرُّكَ قِلَّةُ السَّالِكِيْنَ، وَإِيَّاكَ وَطُـرُقَ الضَّلَالَةِ، وَلَا تَغْتَرْ بِكَثْرَةِ الْـهَالِكِيْنَ.

‘‘একমাত্র হিদায়াতের পথই অনুসরণ করো; এ পথের লোক সংখ্যা কম হলে তাতে তোমার কোন অসুবিধে নেই এবং ভ্রষ্টতার পথ থেকে বহু দূরে অবস্থান করো; সে পথের লোক সংখ্যা বেশি বলে তুমি তাতে ধোঁকা খেয়ো না’’। (আল্ ই’তিস্বাম : ১/১১২)

 ৯৭. ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

«وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْـمَحِيْضِ، قُلْ هُوَ أَذًى، فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِي الْـمَحِيْضِ، وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ»

‘‘তারা আপনাকে নারীদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলে দিন: তা হচ্ছে অশুচিতা। অতএব তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট থেকে দূরে থাকো। এমনকি তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তীও হবে না’’। (বাকারাহ : ২২২)

আবূ হুরাইরাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوْ امْرَأَةً فِيْ دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ .

‘‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করলো অথবা কোন মহিলার মলদ্বার ব্যবহার করলো অথবা কোন গণককে বিশ্বাস করলো সে যেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ বিধানকে অস্বীকার করলো’’।

 ৯৮. যে কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মহিলার রাস্তায় বের হওয়া অথবা বেগানা কোন পুরুষের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মহিলার রাস্তায় বের হওয়া অথবা বেগানা কোন পুরুষের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম। চাই সে পুরুষ কাজের লোক হোক অথবা গাড়ি চালক। চাই সে পণ্য বিক্রেতা হোক অথবা দারোয়ান। চাই সে যুবক হোক অথবা বুড়ো। চাই সে বের হওয়া কোন ইবাদাত পালনের জন্য হোক অথবা এমনতিই ঘোরা-ফেরার জন্য।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ ثُمَّ مَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوْا رِيْحَهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ.

‘‘যে মহিলা কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে বেগানা কোন পুরুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলো; যেন তারা তার সুগন্ধি গ্রহণ করতে পারে তা হলে সে সত্যিই ব্যভিচারিণী’’। (সা’হী’হুল্ জা’মি’ ২৭০১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ تَطَيَّبَتْ ثُمَّ خَرَجَتْ إِلَى الْـمَسْجِدِ لِيُوْجَدَ رِيْحُهَا لَمْ يُقْبَلْ مِنْهَا صَلَاةٌ حَتَّى تَغْتَسِلَ اغْتِسَالَـهَا مِنَ الْـجَنَابَةِ.

‘‘কোন মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদ অভিমুখে বের হলে; যাতে তার সুগন্ধি অন্য পুরুষের নাকে যায় তা হলে তার নামায কবুল করা হবে না যতক্ষণ না সে জানাবাতের গোসল তথা পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করে নেয়’’। (সা’হী’হুল্ জা’মি’ ২৭০১)

কোন মহিলা যদি যে কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে নিজ ঘর থেকে নামাযের জন্য মসজিদ অভিমুখে বের হলে সে নাপাক হয়ে যায়; যাতে করে তার নামায কবুল হওয়ার জন্য তাকে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করতে হয় তা হলে যে মহিলা শুধু ঘোরা-ফেরার জন্য ঘর থেকে উৎকট সুগন্ধি ব্যবহার করে পার্ক বা নদীকূল অভিমুখে বের হয় সে আর কতটুকুই বা পবিত্র থাকতে পারবে। তাই তো এদের অনেককেই শুধু বিধানগত নাপাকই নয় বরং বাস্তবে নাপাক হয়ে ঘরে ফিরছে বলে পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়। এরপরও কি তাদের এতটুকু চেতনাও ফিরবে না?!

 ৯৯. কারোর জন্য অন্যের কাছে কোন ব্যাপারে সুপারিশ করে তার থেকে কোন উপঢৌকন গ্রহণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর জন্য অন্যের কাছে কোন ব্যাপারে সুপারিশ করে তার থেকে কোন উপঢৌকন গ্রহণ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَي لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا، فَقَبِلَهَا مِنْهُ، فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيْمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا.

‘‘কেউ নিজ কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য অন্যের নিকট কোন ব্যাপারে সুপারিশ করলে সে যদি তাকে এ জন্য কোন উপঢৌকন দেয় এবং উক্ত ব্যক্তি তা গ্রহণ করে তা হলে সে যেন সুদের এক বিরাট দরোজায় ঢুকে পড়লো’’। (আবূ দাউদ ৩৫৪১)

বর্তমান যুগে তো এমন অনেক লোকই পাওয়া যায় যার আয়ের অধিকাংশই এ জাতীয়। তার অবশ্যই এ কথা জানা দরকার যে, তার এ সকল সম্পদ একেবারেই হারাম। ব্যাপারটি আরো জটিল হয়ে দাঁড়ায় যখন এ জাতীয় উপঢৌকন অবৈধ কোন সুপারিশের জন্য হয়ে থাকে।

সুপারিশের মাধ্যমে কেউ কারোর বৈধ কোন উপকার করতে পারলে সে যেন তা করে। কারণ, তা সত্যিই পুণ্যের কাজ। কারণ, মানুষের মাঝে কারোর সম্মানজনক অবস্থান তা তো একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই দান। অতএব সে জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে কোন মুসলামান ভাইয়ের জন্য বৈধ সুপারিশের মাধ্যমে। যাতে তার কোন বৈধ অধিকার আদায় হয়ে যায় অথবা কোন হৃত অধিকার উদ্ধার পায়।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَّنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ.

‘‘তোমাদের কেউ নিজ কোন মুসলিম ভাইয়ের উপকার করতে পারলে সে যেন তা করে’’। (মুসলিম ২১৯৯)

আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোন ভিক্ষুক আসলে অথবা তাঁর নিকট কোন কিছু চাওয়া হলে তিনি বলতেন:

 مَا شَاءَ.اشْفَعُوْا تُؤْجَرُوْا، وَيَقْضِيْ اللهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ 

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তো তাঁর নবীর মুখ দিয়ে যাই চান ফায়সালা করবেনই। এতদ্সত্ত্বেও তোমরা এর জন্য সুপারিশ করো; তোমাদেরকে সে জন্য সাওয়াব দেয়া হবে’’। (বুখারী ১৪৩২; মুসলিম ২৬২৭)

তবে কারোর জন্য সুপারিশ করতে গিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব করা যাবে না। অন্যথায় এক জনের সুবিধার জন্য অন্যের উপর যুলুম করা হবে। আর তখনই অন্যের সুবিধার জন্য নিজকেই অযথা গুনাহ্’র বোঝা বহন করতে হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«مَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَّكُنْ لَهُ نَصِيْبٌ مِنْهَا، وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَّكُنْ لَهُ كِفْلٌ مِّنْهَا، وَكَانَ اللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيْتًا»

‘‘কেউ কারোর জন্য ভালো সুপারিশ করলে সে তার (সাওয়াবের) কিয়দংশ পাবে। আর কেউ কারোর জন্য খারাপ সুপারিশ করলে সেও তার (গুনাহ্’র) কিয়দংশ পাবে। আল্লাহ্ তা‘আলা সকল বস্ত্তর রক্ষণাবেক্ষণকারী’’। (নিসা’ : ৮৫)

 ১০০. কোন মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দেয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

قَالَ اللهُ تَعَالَى: ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: رَجُلٌ أَعْطَى بِيْ ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيْرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো। তাদের একজন হচ্ছে, যে ব্যক্তি আমার নামে কসম খেয়ে কারোর সাথে কোন অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করেছে। দ্বিতীয়জন হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন পুরুষকে বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেয়েছে। আর তৃতীয়জন হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোন পুরুষকে মজুর হিসেবে খাটিয়ে তার মজুরি দেয়নি’’। (বুখারী ২২২৭, ২২৭০)

এ জাতীয় ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সত্যিকার অর্থেই দরিদ্র।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَتَدْرُوْنَ مَا الْـمُفْلِسُ؟ قَالُوْا: الْـمُفْلِسُ فِيْنَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ، فَقَالَ: إِنَّ الْـمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِيْ يَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِيْ قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُّقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ، فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِيْ النَّارِ.

‘‘তোমরা কি জানো নি:স্ব কে? সাহাবারা বললেন: নি:স্ব সে ব্যক্তিই যার কোন দিরহাম তথা টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার উম্মাতের মধ্যে সে ব্যক্তিই নি:স্ব যে কিয়ামতের দিন (আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে) অনেকগুলো নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে; অথচ (হিসেব করতে গিয়ে) দেখা যাবে যে, সে অমুককে গালি দিয়েছে। অমুককে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে। অমুকের সম্পদ খেয়ে ফেলেছে। অমুকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং অমুককে মেরেছে। তখন একে তার কিছু সাওয়াব দেয়া হবে এবং ওকে আরো কিছু। এমনিভাবে যখন তার সকল সাওয়াব ও পুণ্য শেষ হয়ে যাবে; অথচ এখনো তার দেনা বাকি তখন ওদের গুনাহ্সমূহ তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে জাহান্নামে দেয়া হবে’’। (মুসলিম ২৫৮১; তিরমিযী ২৪১৮)

কোন মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দেয়ার কয়েকটি ধরন রয়েছে যা নিম্নরূপ:

ক. সরাসরি তার মজুরি দিতে অস্বীকার করা। তাকে এমন বলা যে, তুমি আমার কাছে কোন মজুরিই পাবে না।

খ. পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী তার মজুরি না দেয়া। বরং নিজ ইচ্ছা মতো তার মজুরি কিছু কম দেয়া।

গ. কাগজপত্রে নির্দিষ্ট মজুরি বা বেতন উল্লেখ করে অন্য দেশ থেকে কাজের লোক নিয়ে এসে তাকে এর কম মজুরিতে চাকুরি করতে বাধ্য করা। অন্যথায় তাকে নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানোর হুমকি দেয়া; অথচ সে অনেকগুলো টাকা খরচ করে এখানে এসেছে।

ঘ. কোন মজুরকে নির্দিষ্ট কাজ বা নির্দিষ্ট সময় চাকুরি করার জন্য নিয়ে এসে তার সাথে নতুন কোন চুক্তি ছাড়া তাকে অন্য কাজ বা বাড়তি সময় চাকুরি করার জন্য বাধ্য করা।

ঙ. মজুরের মজুরি দিতে দেরি করা; অথচ সে তার মজুরি সময় মতো পেলে তা অন্য কাজে খাটিয়ে আরো লাভবান হতে পারতো।

 ১০১. একেবারে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারোর কাছে কিছু ভিক্ষা চাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

একেবারে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারোর কাছে কোন কিছু ভিক্ষা চাওয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি করে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে চেহারা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উঠবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَأَلَ وَلَهُ مَا يُغْنِيْهِ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُمُوْشٌ، أَوْ خُدُوْشٌ، أَوْ كُدُوْحٌ فِيْ وَجْهِهِ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا الْغِنَى ؟ قَالَ: خَمْسُوْنَ دِرْهَمًا أَوْ قِيْمَتُهَا مِنَ الذَّهَبِ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর কাছে কোন কিছু ভিক্ষা চাইলো; অথচ তার নিকট তার প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা হলে তার এ ভিক্ষাবৃত্তি কিয়ামতের দিন তার চেহারায় ক্ষতবিক্ষত অবস্থার রূপ নিবে। জনৈক সাহাবী বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ বলতে আপনি কতটুকু সম্পদকে বুঝাচ্ছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: পঞ্চাশ দিরহাম রুপা অথবা উহার সমপরিমাণ স্বর্ণ’’। (আবূ দাউদ ১৬২৬)

অপ্রয়োজনীয় ভিক্ষাবৃত্তি করা মানে প্রচুর পরিমাণ জাহান্নামের অগ্নি সঞ্চয় করা।

সাহ্ল্ বিন্ হান্যালিয়্যাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ سَأَلَ وَعِنْدَهُ مَا يُغْنِيْهِ فَإِنَّمَا يَسْتَكْثِرُ مِنَ النَّارِ، وَفِيْ لَفْظٍ: مِنْ جَمْرِ جَهَنَّمَ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا يُغْنِيْهِ ؟ وَفِيْ آخَـرَ: وَمَا الْغِنَى الَّذِيْ لَا تَنْبَغِيْ مَعَهُ الْمَسْأَلَةُ ؟ قَالَ: قَدْرُ مَا يُغَدِّيْهِ وَيُعَشِّيْهِ، وَفِيْ آخَرَ: أَنْ يَّكُوْنَ لَهُ شِبْعُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ أَوْ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর কাছে কোন কিছু ভিক্ষা চাইলো; অথচ তার নিকট তার প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা হলে সে যেন জাহান্নামের অঙ্গার প্রচুর পরিমাণে সঞ্চয় করলো। সাহাবাগণ বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ বলতে আপনি কতটুকু সম্পদকে বুঝাচ্ছেন? অথবা কারোর নিকট কতটুকু ধন-সম্পদ থাকলে আর তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা অনুচিৎ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সকাল-সন্ধ্যার খানা অথবা পুরো দিনের পেটভরে খাবার’’। (আবূ দাউদ ১৬২৯)

ধনী হওয়ার নেশায় ভিক্ষাকারী কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে তার চেহারায় কোন গোস্তই থাকবে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتَّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِيْ وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَـحْمٍ.

‘‘কোন ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তির পেশা চালু রাখলে সে কিয়ামতের দিন (আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে) এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় গোস্তের কোন টুকরাই অবশিষ্ট থাকবে না’’। (বুখারী ১৪৭৪; মুসলিম ১০৪০)

ধনী অথবা কর্ম করতে সক্ষম এমন কোন ব্যক্তি কারোর নিকট সাদাকা চাইতেও পারে না এবং খেতেও পারে না।

একদা সুঠাম দেহের দু’জন লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সাদাকা নিতে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন:

إِنْ شِئْتُمَا أَعْطَيْتُكُمَا، وَلَا حَظَّ فِيْهَا لِغَنِيٍّ وَلَا لِقَوِيٍّ مُكْتَسِبٍ.

‘‘তোমরা উভয় আমার নিকট সাদাকা চাইলে আমি তা তোমাদেরকে দিতে পারি। তবে তোমরা এ কথা সর্বদা মনে রাখবে যে, ধনী ও কর্ম করতে সক্ষম এমন শক্তিশালী পুরুষের জন্য সাদাকায় কোন অধিকার নেই’’। (আবূ দাউদ ১৬৩৩)

তবে পাঁচ প্রকারের ধনীর জন্য সাদাকা খাওয়া জায়িয।

‘আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِيٍّ إِلاَّ لِخَمْسَةٍ: لِغَازٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، أَوْ لِعَـامِلٍ عَلَيْهَا، أَوْ لِغَارِمٍ، أَوْ لِرَجُلٍ اشْتَرَاهَا بِمَالِهِ، أَوْ لِرَجُلٍ كَانَ لَهُ جَارٌ مِسْكِيْنٌ فَتُصُدِّقَ عَلَى الْـمِسْكِيْنِ فَأَهَدَاهَا الْـمِسْكِيْنُ لِلْغَنِيِّ.

‘‘শুধুমাত্র পাঁচ ধরনের ধনীর জন্যই সাদাকা খাওয়া জায়িয। আল্লাহ্’র পথে লড়াইকারী, সাদাকা উঠানোর কাজে নিযুক্ত সরকারী কর্মচারী, অন্যের জরিমানা বা দিয়াত বহনকারী, যে ধনী ব্যক্তি নিজ পয়সা দিয়েই সাদাকার বস্ত্ত কিনে নিয়েছে, যে ধনী ব্যক্তির প্রতিবেশী গরিব এবং তাকেই কেউ কোন কিছু সাদাকা দিলে সে যদি তা ধনী ব্যক্তিকে হাদিয়া হিসেবে দেয়’’। (আবূ দাউদ ১৬৩৫)

কেউ যদি নিজ জীবন এমনভাবে পরিচালনা করতে পারে যে, সে কখনো কারোর নিকট কোন কিছুই চায় না তা হলে এমন ব্যক্তির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের দায়িত্ব নেন।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ يَّكْفُلُ لِيْ أَنْ لاَّ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا، وَأَتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ، فَقَالَ ثَوْبَانُ: أَنَا ؛ فَكَانَ لَا يَسْأَلُ أَحَدًا شَيْئًا.

‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য এ দায়িত্ব নিবে যে, সে আর কারোর কাছে কোন কিছুই চাইবে না তা হলে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেবো। সাওবান (রাঃ) বললেন: আমিই হবো সেই ব্যক্তি। আর তখন থেকেই সাওবান (রাঃ) কারোর নিকট কোন কিছুই চাইতেন না’’। (আবূ দাউদ ১৬৪৩)

তবে প্রশাসনিক কোন ব্যক্তির কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় কোন কিছু চাওয়া যায়। যা না হলেই নয়।

সামুরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمَسَائِلُ كُدُوْحٌ يَكْدَحُ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ، فَمَنْ شَاءَ أَبْقَى عَلَى وَجْهِهِ، وَمَنْ شَاءَ تَرَكَ، إِلاَّ أَنْ يَّسْأَلَ الرَّجُلُ ذَا سُلْطَانٍ، أَوْ فِيْ أَمْرٍ لَا يَجِدُ مِنْهُ بُدٌّ.

‘‘ভিক্ষাবৃত্তি ক্ষতের ন্যায়। যার মাধ্যমে মানুষ তার নিজ চেহারাকেই ক্ষতবিক্ষত করে। সুতরাং যে চায় তার চেহারায় ক্ষতগুলো থেকে যাক সেই ভিক্ষাবৃত্তি করবে। আর যে চায় তার চেহারায় ক্ষতগুলো না থাকুক সে যেন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেয়। তবে প্রশাসনিক কোন ব্যক্তির কাছে কিছু চাওয়া যায় অথবা এমন ব্যাপারে কারোর কাছে কিছু চাওয়া যায় যা না হলেই নয়’’। (আবূ দাউদ ১৬৩৯)

ক্বাবীস্বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সাদাকা চাইলে তিনি আমাকে বলেন:

يَا قَبِيْصَةُ! إِنَّ الْـمَسْأَلَةَ لَا تَحِلُّ إِلاَّ لِأَحَدِ ثَلَاثَةٍ: رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً، فَحَلَّتْ لَهُ الْـمَسْأَلَةُ، فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيْبَهَا، ثُمَّ يُمْسِكُ، وَرَجُـلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ فَاجْتَاحَتْ مَالَهُ، فَحَلَّتْ لَهُ الْـمَسْأَلَةُ، فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيْبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ: سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ، وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُوْلَ ثَلَاثَةٌ مِنْ ذَوِيْ الْحِجَى مِنْ قَوْمِهِ : قَدْ أَصَابَتْ فُلَانًا الْفَاقَةُ، فَحَلَّتْ لَهُ الْـمَسْأَلَةُ، فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيْبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ، ثُمَّ يُمْسِكُ، وَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ الْـمَسْأَلَةِ ـ يَا قَبِيْصَةُ ـ سُحْتٌ ؛ يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا.

‘‘হে ক্বাবীস্বাহ্! ভিক্ষা শুধুমাত্র তিন ব্যক্তির জন্যই জায়িয। তার মধ্যে একজন হচ্ছে, যে ব্যক্তি অন্য কারোর পক্ষ থেকে জরিমানা বা দিয়াত জাতীয় কোন কিছুর যামানত কিংবা দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে তখন তার জন্য ভিক্ষা করা জায়িয যতক্ষণ না সে তা সংগ্রহ করতে পারে। তবে তা সংগ্রহ হয়ে গেলে সে আর ভিক্ষা করবে না। অপরজন হচ্ছে, যাকে প্রাকৃতিক কোন বড় দুর্যোগ পেয়ে বসেছে যার দরুন তার সকল সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে তখনও তার জন্য ভিক্ষা করা জায়িয যতক্ষণ না সে তার প্রয়োজনীয় জীবিকা সংগ্রহ করতে পারে। আরেকজন হচ্ছে, যে ব্যক্তি অভাবের কষাঘাতে একেবারেই জর্জরিত এমনকি তার বংশের তিনজন বুদ্ধিমানও এ ব্যাপারে তাকে সার্টিফাই করেছে যে, সে সত্যিই অভাবগ্রস্ত তখনও তার জন্য ভিক্ষা করা জায়িয যতক্ষণ না সে তার প্রয়োজনীয় জীবিকা সংগ্রহ করতে পারে। তবে তা সংগ্রহ হয়ে গেলে সে আর ভিক্ষা করবে না। হে ক্বাবীস্বাহ্! এ ছাড়া আর সকল ভিক্ষাবৃত্তি হারাম। ভিক্ষুক যা হারাম হিসেবেই ভক্ষণ করবে’’। (আবূ দাউদ ১৬৪০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি সর্বদা সাহাবাদেরকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি তাঁদেরকে এও বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজ অভাবের কথা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাকেই বলবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার সে অভাব দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি নিজ অভাবের কথা একমাত্র মানুষকেই বলবে তার সে অভাব কখনোই দূর হবে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدْ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ أَوْشَكَ اللهُ لَهُ بِالْغِنَى ؛ إِمَّا بِمَوْتٍ عَاجِلٍ أَوْ غِنًى عَاجِلٍ.

‘‘যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হলে শুধুমাত্র মানুষের কাছেই ধরনা দেয় তার অভাব কখনোই দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হলে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার কাছেই ধরনা দিবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার অভাব অতিসত্বর দূর করে দিবেন। আর তা এভাবে যে, অতিসত্বর সে মৃত্যু বরণ করবে অথবা অতিসত্বর সে ধনী হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ১৬৪৫)

তবে কেউ কাউকে চাওয়া ছাড়াই কোন কিছু দিলে সে তা গ্রহণ করতে পারে। প্রয়োজনে সে তা খাবে এবং বাকিটুকু সাদাকা করবে।

’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا أُعْطِيْتَ شَيْئًا مِنْ غَيْرِ أَنْ تَسْأَلَهُ فَكُلْ وَتَصَدَّقْ.

‘‘তোমাকে চাওয়া ছাড়াই কোন কিছু দেয়া হলে তুমি তা খাবে এবং বাকিটুকু সাদাকা করবে’’। (আবূ দাউদ ১৬৪৭)

’উমর (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে আমাকে কিছু দান করলে আমি তাঁকে বলতাম: আপনি আমাকে তা না দিয়ে আমার চাইতেও যার প্রয়োজন বেশি তাকে দিন তখন তিনি বলেন:

خُـذْهُ، إِذَا جَاءَكَ مِنَ الْـمَالِ شَيْءٌ وَأَنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلَا سَائِلٍ فَخُذْهُ، وَمَا لَا فَلَا تُتْبِعْهُ نَفْسَكَ.

‘‘তুমি এটি নিয়ে নাও। মনে রাখবে, তোমার নিকট এমনিতেই কোন সম্পদ এসে গেলে; অথচ তুমি তা চাওনি এবং উহার জন্য তুমি লালায়িতও ছিলে না তা হলে তুমি তা নিতে পারো। আর যা এমনিতেই আসছে না সে জন্য তুমি কখনো লালায়িত হয়ো না’’।

(বুখারী ১৪৭৩; মুসলিম ১০৪৫)

সম্পদের প্রতি চরমভাবে লালায়িত না হয়ে তা সহজে ও শরীয়ত সম্মত উপায়ে সংগ্রহ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাতে বরকত দিয়ে থাকেন। ঠিক এরই বিপরীতে সম্পদের প্রতি অত্যন্ত লালায়িত হয়ে তা সংগ্রহ করলে তাতে আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো বরকত দেন না।

’হাকীম বিন্ ’হিযাম (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাকে তা দেন, আরো চাইলে আরো দেন, আরো চাইলে আরো দেন এবং বলেন:

يَا حَكِيْمُ! إِنَّ هَذَا الْـمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُوْرِكَ لَهُ فِيْهِ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيْهِ كَالَّذِيْ يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ.

‘‘হে ’হাকীম! এ দুনিয়ার সম্পদ তো হৃদয়গ্রাহী মনোরম। (অতএব তা সবাই সঞ্চয় করতে চাইবে) সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রতি লালায়িত না হয়ে তা গ্রহণ করে তাতে সত্যিই বরকত হয়। আর যে ব্যক্তি তার প্রতি লালায়িত হয়ে সঞ্চয় করে তাতে বরকত দেয়া হয় না। যেমন: যে ব্যক্তি খায় কিন্তু তার পেট ভরে না’’। (বুখারী ১৪৭২)

ভিক্ষা করার চাইতে নিজের হাতে কামাই করে খাওয়া অনেক উত্তম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَأَنْ يَأْخُذُ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ ثُمَّ يَغْدُوَ إِلَى الْـجَبَلِ، فَيَحْتَطِبَ، فَيَبِيْعَ، فَيَأْكُلَ وَيَتَصَدَّقَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّسْأَلَ النَّاسَ.

‘‘তোমাদের কেউ ভোর বেলায় রশি হাতে নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে কাঠ কেটে তা বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা কিছু খাবে আর বাকিটুকু সাদাকা করবে তা তার জন্য অনেক উত্তম মানুষের নিকট হাত পাতার চাইতে’’। (বুখারী ১৪৮০; মুসলিম ১০৪২)

 ১০২. কারোর থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা অথবা পরিশোধ করতে টালবাহানা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা অথবা পরিশোধ করতে টালবাহানা করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ বা হারাম।

শরীয়তে ঋণের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা পরিশোধ না করে কিয়ামতের দিন এক কদমও সামনে এগুনো যাবে না। এমনকি যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও ধন-সম্পদ সবকিছুই আল্লাহ্’র রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছে সেও নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلاَّ الدَّيْنَ.

‘‘শুধুমাত্র ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গুনাহ্ই ক্ষমা করে দেয়া হবে’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৮১১৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:

سُبْحَانَ اللهِ! مَاذَا أَنْزَلَ اللهُ مِنَ التَّشْدِيْدِ فِيْ الدَّيْنِ، وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ رَجُلًا قُتِلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْـجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ دَيْنُهُ.

‘‘কি আশ্চর্য! আল্লাহ্ তা‘আলা ঋণের ব্যাপারে কতই না কঠিন বিধান নাযিল করেছেন! সেই সত্তার কসম খেয়ে বলছি যাঁর হাতে আমার জীবন, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্’র রাস্তায় একবার শহীদ করা হলে অতঃপর আবারো জীবিত করা হলে অতঃপর আবারো শহীদ করা হলে অতঃপর আবারো জীবিত করা হলে অতঃপর আবারো শহীদ করা হলেও যদি তার উপর কোন ঋণ থেকে থাকে তা হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তার উক্ত ঋণ তার পক্ষ থেকে আদায় করা হয়’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৯৪)

ব্যাপারটি আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন কোন ব্যক্তি কারোর থেকে ঋণ নেয়ার সময়ই তা পরিশোধ না করার পরিকল্পনা করে অথবা তখনই তার দৃঢ় বিশ্বাস যে, সে কখনো তা পরিশোধ করতে পারবে না।

কেউ কেউ তো এমনো মনে করে যে, আমি যার থেকে ঋণ নিয়েছি সে বড় ধনী ব্যক্তি। সুতরাং তাকে উক্ত ঋণ না দিলে তার কোন ক্ষতি হবে না। এ চিন্তা কখনোই সঠিক নয়। কারণ, ঋণ তো ঋণই। তা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। চাই ঋণদাতার এর প্রতি কোন প্রয়োজন থাকুক বা নাই থাকুক। চাই তা কম হোক অথবা বেশি।

 ১০৩. গীবত বা পরদোষ চর্চা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

গীবত বা পরদোষ চর্চা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম কাজ। গীবত বলতে অন্যের অনুপস্থিতিতে কারোর নিকট তার কোন দোষ চর্চাকে বুঝানো হয়। যা শুনলে সে রাগান্বিত অথবা অসন্তুষ্ট হবে। অন্ততপক্ষে তার মনে সামান্যটুকু হলেও কষ্ট আসবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কুর‘আন মাজীদে মু’মিনদেরকে এমন অপতৎপরতা চালাতে কঠিনভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। এমনকি তিনি এর প্রতি মু’মিনদের কঠিন ঘৃণা জন্মানোর জন্যে এর এক বিশ্রী দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَّأْكُلَ لَـحْـمَ أَخِيْهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ، وَاتَّقُوْا اللهَ، إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَّحِيْمٌ»

‘‘তোমরা একে অপরের গীবত চর্চা করো না। তোমাদের কেউ কি চায় সে তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত কামড়ে কামড়ে খাবে। বস্ত্তত: তোমরা তা কখনোই করতে চাইবে না। তা হলে তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা গ্রহণকারী অত্যন্ত দয়ালু’’। (’হুজুরাত : ১২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এর বিস্তারিত পরিচয় দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَتَدْرُوْنَ مَا الْغِيْبَةُ ؟ قَالُوْا: اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ، قِيْلَ: أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِيْ أَخِيْ مَا أَقُوْلُ ؟ قَالَ: إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ.

‘‘তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলা হয়? সাহাবারা বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে ভালো জানেন। তখন তিনি বলেন: তোমার মুসলিম ভাই অপছন্দ করে এমন কোন কথা তার পেছনে বলা। জনৈক সাহাবী বললেন: আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যেই থাকে তাও কি তা গীবত হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি যা বলছো তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তা হলেই তো গীবত। আর যদি তার মধ্যে তা না পাওয়া যায় তা হলে তা বুহ্তান তথা মিথ্যা অপবাদ’’। (মুসলিম ২৫৮৯; আবূ দাউদ ৪৮৭৪; তিরমিযী ১৯৩৪)

কারো কারোকে যখন অন্যের গীবত করা থেকে বারণ করা হয় তখন তিনি বলে থাকেন, আমি হুবহু কথাটি তার সামনেও বলতে পারবো। তাকে আমি এতটুকুও ভয় পাই না। মূলতঃ তার এ ধরনের উক্তি কোন কাজের নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গীবত না হওয়ার জন্য এ ধরনের সাহসিকতার শর্ত দেননি। সুতরাং তার সামনে বলার সাহস থাকলেও তা গীবত হবেই।

একদা ‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) স্বাফিয়্যাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) এর পেছনে তার শারীরিক খর্বাকৃতির ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তুলে ধরলে তিনি তাঁকে বলেন:

لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِمَاءِ الْبَحْرِ لَمَزَجَتْهُ، قَالَتْ: وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَانًا فَقَالَ: مَا أُحِبُّ أَنِّيْ حَكَيْتُ إِنْسَانًا وَأَنَّ لِيْ كَذَا وَكَذَا.

‘‘তুমি এমন কথা বললে যা এক সাগর পানির সাথে মিশালেও তা মিশে যাবে বরং তা বাড়তি বলেও মনে হবে। ‘আয়িশা বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে জনৈক ব্যক্তির অভিনয় করলে তিনি আমাকে বলেন: আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমি কারোর অভিনয় করবো আর আমি এতো এতো কিছুর মালিক হবো’’। (আবূ দাউদ ৪৮৭৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’রাজে গিয়ে গীবতকারীদের শাস্তি স্বচক্ষে দেখে আসলেন।

আনাস্ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَمَّا عُرِجَ بِيْ مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَـهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَصُدُوْرَهُمْ، فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيْلُ ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ لُـحُوْمَ النَّاسِ وَيَقَعُوْنَ فِيْ أَعْرَاضِهِمْ.

‘‘যখন আমি মি’রাজে গেলাম তখন এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যারা তামার নখ দিয়ে নিজেদের বক্ষ ও মুখমন্ডল ক্ষতবিক্ষত করছে। আমি বললাম: এরা কারা হে জিব্রীল! তিনি বললেন: এরা ওরা যারা মানুষের গোস্ত খায় এবং তাদের ইজ্জত লুটায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৭৮)

কারোর গীবত করা মুনাফিকের আলামত।

আবূ বারযাহ্ আস্লামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيْمَانُ قَلْبَهُ ! لَا تَغْتَابُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَـوْرَتَهُ، وَمَنْ يَّتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِيْ بَيْتِهِ.

‘‘হে তোমরা যারা মুখে ঈমান এনেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত এবং তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি মুসলিমদের ছিদ্রান্বেষণ করবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তার ছিদ্রান্বেষণ করবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা যার ছিদ্রান্বেষণ করবেন তাকে তিনি তার ঘরেই লাঞ্ছিত করবেন’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮০)

কাউকে অন্যের গীবত করতে দেখলে তাকে অবশ্যই বাধা দিবেন। তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আপনাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيْهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি অন্যের অপবাদ খন্ডন করে নিজ কোন মুসলিম ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করলো আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন’’। (তিরমিযী ১৯৩১)

মু‘আয বিন্ আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا مِنْ مُنَافِقٍ بَعَثَ اللهُ مَلَكًا يَحْمِيْ لَـحْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ، وَمَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَيْءٍ يُرِيْدُ شَيْنَهُ بِهِ حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে মুনাফিকের কুৎসার হাত থেকে রক্ষা করলো আল্লাহ্ তা‘আলা (এর প্রতিফল স্বরূপ) কিয়ামতের দিন তার নিকট এমন একজন ফিরিশ্তা পাঠাবেন যে তার শরীরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে তার ইজ্জত হননের উদ্দেশ্যে কোন ব্যাপারে অপবাদ দিলো আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন (এর প্রতিফল স্বরূপ) জাহান্নামের পুলের উপর আটকে রাখবেন যতক্ষণ না সে উক্ত অপবাদ থেকে নিষ্কৃতি পায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮৩)

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে তাবুক এলাকায় বসেছিলেন এমতাবস্থায় তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: কা’ব বিন্ মা’লিক কোথায়? তখন বনী সালিমাহ্ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তার সম্পদ ও আত্মগর্ব তাকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে। তখন মু‘আয বিন্ জাবাল (রাঃ) প্রত্যুত্তরে বললেন: হে ব্যক্তি তুমি অত্যন্ত খারাপ উক্তি করলে। হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্’র কসম! আমরা তার ব্যাপারে ভালো ধারণাই রাখি। (মুসলিম ২৭৬৯)

তবে কোন সঠিক ধর্মীয় উদ্দেশ্য যদি গীবত ছাড়া কোনভাবেই অর্জিত না হয় তখন প্রয়োজনের খাতিরে কারো কারোর গীবত করা যায় যা নিম্নরূপ:

১. কেউ কারো কর্তৃক যুলুম তথা অত্যাচারের শিকার হলে তার জন্য জায়িয অত্যাচারীর বিপক্ষে রাষ্ট্রপতি কিংবা বিচারপতির নিকট নালিশ করা। যাতে করে মযলুম তার হৃত অধিকার ফিরে পায়।

২. কাউকে বহুবার ওয়ায নসীহত করার পরও সে যদি শরীয়ত বিরোধী উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত না হয় তা হলে তার বিরুদ্ধে এমন ব্যক্তির কাছে নালিশ করা যাবে যে তাকে উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত রাখতে সক্ষম।

৩. কোন অঘটনের ব্যাপারে উক্ত ঘটনার পূর্ণ বর্ণনা দিয়ে অভিজ্ঞ কোন মুফতি সাহেবের নিকট ফতোয়া চাওয়া। তবে এ ব্যাপারে কারোর নাম ধরে না বলা অনেক ভালো। বরং সে মুফতি সাহেবকে বলবে: জনৈক ব্যক্তি কিংবা জনৈকা মহিলা এমন এমন কাজ করেছে অতএব এর শরয়ী সিদ্ধান্ত কি?

৪. কারোর ব্যাপারে সাধারণ মুসলিমদেরকে সতর্ক করা। যা নিম্নরূপ:

ক. কোন হাদীসের বর্ণনাকারী কিংবা কোন সাক্ষী অগ্রহণযোগ্য হলে তার ব্যাপারে অন্যকে সতর্ক করা।

খ. কেউ কারোর ব্যাপারে আপনার নিকট পরামর্শ চাইলে তাকে সঠিক তথ্য ভিত্তিক পরামর্শ দেয়া। চাই তা কারোর সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারেই হোক অথবা তার নিকট কোন আমানত রাখার ব্যাপারে কিংবা তার সাথে কোন ধরনের লেনদেন করার ব্যাপারে।

গ. কোন ধর্মীয় জ্ঞান অনুসন্ধানীকে কোন বিদ্‘আতী কিংবা কোন ফাসিকের নিকট জ্ঞান আহরণ করতে দেখলে তাকে সে ব্যাপারে সতর্ক করা। তবে এ ব্যাপারে হিংসা যেন কোনভাবেই স্থান নিতে না পারে সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

ঘ. কোন ক্ষমতাসীন ব্যক্তি উক্ত পদের অনুপযুক্ত প্রমাণিত হলে কিংবা ফাসিক অথবা গাফিল হলে তার ব্যাপারে তার উপরস্থ ব্যক্তিকে জানানো যাতে করে তাকে উক্ত পদ থেকে বহিষ্কার করা যায় অথবা অন্ততপক্ষে সামান্যটুকু হলেও তাকে পরিশুদ্ধ করা যায়।

৫. কেউ সপ্রকাশ্যে কোন গুনাহ্ কিংবা বিদ্‘আত করলে সে গুনাহ্টি অন্যের কাছে বলা যায়। যাতে করে তার বিরুদ্ধে বিপুল জনমত সৃষ্টি করে উহার প্রতিকার করা যায়।

৬. কারোর কোন দোষ কোন সমাজে এমনভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করলে যা না বললে কেউ তাকে চিনবে না তখন সে দোষ উল্লেখ পূর্বক তার পরিচয় দেয়া যায়। তবে অন্যভাবে তার পরিচয় দেয়া সম্ভব হলে সেভাবেই পরিচয় দেয়া উচিৎ।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন:

ائْذَنُوْا لَهُ، بِئْسَ أَخُوْ الْعَشِيْرَةِ وَبِئْسَ ابْنُ الْعَشِيْرَةِ.

‘‘তাকে ঢুকার অনুমতি দাও। সে তো এক নিকৃষ্ট বংশীয়’’। (বুখারী ৬০৩২, ৬০৫৪, ৬১৩১; মুসলিম ২৫৯১)

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন মুনাফিক সম্পর্কে বলেন:

مَا أَظُنُّ فُلَانًا وَفُلَانًا يَعْرِفَانِ مِنْ دِيْنِنَا شَيْئًا.

‘‘আমার ধারণা মতে অমুক আর অমুক ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না’’। (বুখারী ৬০৬৭)

ফাত্বিমা বিন্তে ক্বাইস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন আমি তালাকের ইদ্দত শেষ করে হালাল হয়ে গেলাম তখন মু‘আবিয়া ও আবূ জাহ্ম (রা.) আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালে তিনি আমাকে বলেন:

أَمَّا أَبُوْ جَهْمٍ فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِهِ، وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ فَصَعْلُوْكٌ، لَا مَالَ لَهُ، انْكِحِيْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ.

‘‘আবূ জাহ্ম তো লাঠি কাঁধ থেকেই নামায় না আর মু‘আবিয়া তো খুবই গরীব; তার কোন সম্পদই নেই। তবে তুমি উসামাহ্ বিন্ যায়েদের সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারো’’। (মুসলিম ১৪৮০)

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আবূ সুফ্য়ানের স্ত্রী হিন্দ বিন্ত ’উত্বাহ্ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো:

يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيْحٌ، لَا يُعْطِيْنِيْ مِنَ النَّفَقَةِ مَا يَكْفِيْنِيْ وَيَكْفِيْ بَنِيَّ إِلاَّ مَا أَخَذْتُ مِنْ مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمِهِ، فَهَلْ عَلَيَّ فِيْ ذَلِكَ مِنْ جُنَاحٍ ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : خُذِيْ مِنْ مَالِهِ بِالْمَعْرُوْفِ مَا يَكْفِيْكِ وَيَكْفِيْ بَنِيْكِ.

‘‘হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ সুফ্য়ান তো খুবই কৃপণ। সে তো আমার ও আমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট এতটুকু খরচা আমাদেরকে দেয় না। তবে আমি তাকে না জানিয়ে তার সম্পদ থেকে কিছু নিয়ে নিতে পারি। এতে কি আমার কোন গুনাহ্ হবে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট এতটুকু খরচা তো তার সম্পদ থেকে ন্যায়ভাবে নিতে পারো’’। (বুখারী ২২১১; মুসলিম ১৭১৪)

যায়েদ বিন্ আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম তখন আব্দুল্লাহ্ বিন্ উবাইকে বলতে শুনলাম সে বলছে: তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আশপাশের লোকদের উপর কোন টাকা-পয়সা খরচ করো না যাতে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গ ছেড়ে দেয়। সে আরো বললো: আমরা এখান থেকে মদীনায় ফিরে গেলে আমাদের মধ্যে যারা পরাক্রমশালী তারা অধমদেরকে মদীনা থেকে বের করে দিবে। যায়েদ বলেন: আমি ব্যাপারটি আমার চাচা অথবা ’উমর (রাঃ) কে জানালে তাঁরা তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানায়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকেন। আমি ব্যাপারটি তাঁকে বিস্তারিত জানালে তিনি আব্দুল্লাহ্ ও তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠান। তারা উপস্থিত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কসম খেয়ে বললো: তারা এমন কথা বলেনি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথা বিশ্বাস করলেন এবং আমাকে মিথ্যুক ভাবলেন। তখন আমি খুব চিন্তিত হই যা ইতিপূর্বে হইনি। আর তখনই আল্লাহ্ তা‘আলা আমার সাপোর্টে সূরাহ মুনাফিক্বূনের প্রথম তিনটি আয়াত নাযিল করেন। (বুখারী ৪৯০০; মুসলিম ২৭৭২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বন্টন করে শেষ করলে জনৈক আন্সারী বললো: আল্লাহ্’র কসম! মুহাম্মাদ এ বন্টনে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি কামনা করেনি। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে সংবাদ দিলে তিনি রাগে লাল হয়ে বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা (আঃ) কে দয়া করুন। তাঁকে এর চাইতেও বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছিলো; অথচ তিনি তা অকাতরে সহ্য করেছেন। (বুখারী ৬০৫৯; মুসলিম ১০৬২)

উক্ত ঘটনাসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই অথবা অন্য কোন ব্যক্তি তাঁর সামনেই অন্যের গীবত করে। যা প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় কোন উদ্দেশ্যে গীবত জায়িয হওয়াই প্রমাণ করে।

কেউ কারোর গীবত করে তার নিকট ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করাই উচিৎ। তেমনিভাবে কেউ স্বেচ্ছায় তার সকল গীবতকারীকে ব্যাপকভাবে ক্ষমা করে দিলে তা আরো অনেক ভালো।

ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكُوْنَ مِثْلَ أَبِيْ ضَيْغَمٍ أَوْ ضَمْضَمٍ ؛ كَانَ إِذَا أَصْبَحَ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّيْ قَدْ تَصَدَّقْتُ بِعِرْضِيْ عَلَى عِبَادِكَ !.

‘‘তোমরা কি আবূ যায়গাম অথবা আবূ যামযামের মতো হতে পারো না? সে প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বলতো: হে আল্লাহ্! আমি আমার ইয্যত তোমার সকল বান্দাহ্’র জন্য সাদাকা করে দিলাম’’।

১০৪. চুল বা দাঁড়িতে কালো রং লাগানো

 শেয়ার ও অন্যান্য 

চুল বা দাঁড়িতে কালো রং লাগানো আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَكُوْنُ قَوْمٌ يَخْضِبُوْنَ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ ؛ كَحَوَاصِلِ الْـحَمَامِ، لَا يَرِيْحُوْنَ رَائِحَةَ الْـجَنَّةِ.

‘‘শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা (চুল বা দাঁড়িতে) কালো রং লাগাবে। যা দেখতে কবুতরের পেটের ন্যায়। তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না’’। (আবূ দাউদ ৪২১২; নাসায়ী ৫০৭৭)

কারোর মাথার চুল বা দাঁড়ি সাদা হয়ে গেলে তাতে কালো ছাড়া যে কোন কালার লাগানো সুন্নাত।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى لَا يَصْبُغُوْنَ ؛ فَخَالِفُوْهُمْ.

‘‘ইহুদী ও খ্রিস্টানরা (মাথার চুল বা দাঁড়ি) কালার করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করবে তথা কালার করবে’’। (আবূ দাউদ ৪২০৩)

জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أُتِيَ بِأَبِيْ قُحَافَةَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ، وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : غَيِّرُوْا هَذَا بِشَيْءٍ، وَاجْتَنِبُوْا السَّوَادَ.

‘‘মক্কা বিজয়ের দিন (আবূ বকর (রাঃ) এর পিতা) আবূ ক্বুহাফাহ্কে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে) উপস্থিত করা হলো। তখন তার মাথার চুল ও দাঁড়ি সাদা ফল ও ফুল বিশিষ্ট গাছের ন্যায় দেখাচ্ছিলো। তা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন: তোমরা কোন কিছু দিয়ে এর কালার পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো কালার কিন্তু লাগাবে না’’।

(আবূ দাউদ ৪২০৪; নাসায়ী ৫০৭৮)

তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত মেহেদি, জাফরান ও অর্স (লাল গোলাপের রস) দিয়ে কালার করতেন।

আবূ রিম্সাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ও আমার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি আমার পিতাকে বলেন: এ ছেলেটি কে? তখন আমার পিতা বললেন: সে আমারই ছেলে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি তার সাথে অপরাধমূলক আচরণ করো না। আবূ রিম্সাহ্ বলেন: তখন তাঁর দাঁড়ি মেহেদি লাগানো ছিলো।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ النَّبِيُّ  يَلْبَسُ النِّعَالَ السِّبْتِيَّةَ، وَيُصَفِّرُ لِحْيَتَهُ بِالْوَرْسِ وَالزَّعْفَرَانِ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার জুতো পরিধান করতেন এবং অর্স তথা লাল গোলাপের রস ও জাফরান দিয়ে দাঁড়িটুকু হলুদ করে নিতেন’’। (আবূ দাউদ ৪২১০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

إِنَّ أَحْسَنَ مَا غُيِّرَ بِهِ هَذَا الشَّيْبُ : الْحِنَّاءُ وَالْكَتَمُ.

‘‘নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বস্ত্ত যা দিয়ে বার্ধক্যের সাধা বর্ণকে পরিবর্তন করা যায় তা হচ্ছে মেহেদি ও কাতাম; যার ফল মরিচের ন্যায়’’। (আবূ দাউদ ৪২০৫; নাসায়ী ৫০৮০)

 ১০৫. অসিয়ত বা দানের ক্ষেত্রে সন্তানদের কাউকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যের ক্ষতি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

অসিয়ত বা দানের ক্ষেত্রে সন্তানদের কাউকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যের ক্ষতি করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

মূলতঃ কারোর নিজ কোন সন্তানের জন্য কোন কিছুর অসিয়ত করাই না জায়িয। কারণ, সে তো ওয়ারিশ। আর ওয়ারিশের জন্য অসিয়ত করা তো কোন প্রকারেই জায়িয নয়। সুতরাং কোন সন্তানের জন্য কোন কিছুর অসিয়ত করা মানেই অন্য সন্তানের ক্ষতি করা।

আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِيْ حَقٍّ حَقَّهُ، فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং ওয়ারিশের জন্য আর কোন অসিয়ত চলবে না’’।

(আবূ দাউদ ২৮৭০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৭৬৩)

তেমনিভাবে কোন ধর্মীয় ক্ষেত্র অথবা কোন ব্যক্তির জন্য সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করাও নিজ সন্তানদের ক্ষতি সাধন করার শামিল।

সা’দ্ বিন্ আবী ওয়াক্কাস্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রোগাক্রান্ত হই। এমনকি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার তো অনেকগুলো সম্পদ। তবে একটি মেয়ে ছাড়া আমার আর কোন ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ সাদাকা করে দেবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না। আমি বললাম: তা হলে অর্ধেক সম্পদ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না। আমি বললাম: তা হলে এক তৃতীয়াংশ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঠিক আছে এক তৃতীয়াংশ। তবে তাও অনেক বেশি। তিনি আরো বললেন:

أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ.

‘‘তুমি তোমার সন্তানদেরকে ধনী রেখে যাওয়া তোমার জন্য অনেক উত্তম তাদের গরীব রেখে যাওয়ার চাইতে যাতে তারা মানুষের কাছে হাত পাতে’’। (আবূ দাউদ ২৮৬৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৭৫৮)

যারা জীবিত থাকতেই সময় মতো আল্লাহ্’র রাস্তায় সাদাকা করে না তারা মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে এলোমেলোভাবে সাদাকা করে নিজ ওয়ারিশদের ক্ষতি সাধন করে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন ধরনের সাদাকা উত্তম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيْحٌ حَرِيْصٌ، تَأْمُلُ الْبَقَاءَ، وَتَخْشَى الْفَقْرَ، وَلَا تُمْهِلْ، حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ قُلْتَ: لِفُلَانٍ كَذَا، لِفُلَانٍ كَذَا، وَقَدْ كَانَ لِفُلَانٍ.

‘‘তুমি সাদাকা করবে যখন তুমি সুস্থ থাকো এবং সম্পদের প্রতি তোমার লোভ থাকে। দুনিয়ায় থাকার ইচ্ছা এবং দরিদ্রতার ভয় পাও। সাদাকা করতে দেরি করো না কিন্তু। এমন যেন না হয়, রূহ গলায় পৌঁছে গেলো। আর তুমি বললে: অমুকের জন্য এতো। অমুকের জন্য এতো; মূলতঃ তা অন্যের জন্যই’’। (আবূ দাউদ ২৮৬৫)

কোন সন্তানকে এককভাবে কোন কিছু দান করা যাবে না। বরং দিতে চাইলে সবাইকে সমানভাবেই দিতে হবে। নতুবা স্বেচ্ছায় অন্য সন্তানের ক্ষতি সাধন করা হবে।

নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমার মা আমার পিতার নিকট আমার জন্য কিছু বিশেষ দান চাইলে তিনি আমাকে একটি গোলাম দান করেন। তখন আমার মা বললেন: আমি এতে সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে সাক্ষী বানাবেন। তখন আমার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ‘আমরাহ্ বিন্তে রাওয়াহার গর্ভজাত ছেলে তথা আমারই সন্তান নু’মানকে একটি গোলাম দিয়েছি। সে এ ব্যাপারে আপনাকে সাক্ষী বানাতে চায়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهُ ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَارْجِعْهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لَا تُشْهِدْنِيْ عَلَى جَوْرٍ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَلَيْسَ يَسُرُّكَ أَنْ يَّكُوْنُوْا لَكَ فِيْ الْبَرِّ سَوَاءً ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: فَلَا إِذًا.

‘‘তোমার সকল সন্তানকেই এমন করে একটি একটি গোলাম দিয়েছো? তিনি বললেন: না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সুতরাং তা ফেরৎ নিয়ে নাও। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো। অন্য বর্ণনায় আরো রয়েছে, আমাকে যুলুমের সাক্ষী বানিও না। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে, তোমার কি মনে চায় না যে, তোমার সকল সন্তান তোমার সাথে সমানভাবেই ভালো ব্যবহার দেখাক? তিনি বললেন: অবশ্যই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা হলে তুমি নু’মানকে এককভাবে একটি গোলাম দিতে পারো না’’। (বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০; মুসলিম ১৬২৩; ইব্নু মাজাহ্ ২৪০৪, ২৪০৫)

এ যুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই যদি কেউ তার সন্তানকে কোন কিছু এককভাবে দিয়ে দেয় তা ফেরত নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে; যদিও তা অন্যের ক্ষেত্রে জায়িয নয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُّعْطِيَ عَطِيَّةً، أَوْ يَهَبَ هِبَةً فَيَرْجِعَ فِيْهَا، إِلاَّ الْوَالِدَ فِيْمَا يُعْطِيْ وَلَدهُ، وَمَثَلُ الَّذِيْ يُعْطِيْ الْعَطِيَّةَ ثُمَّ يَرْجِعُ فِيْهَا، كَمَثَلِ الْكَلْبِ يَأْكُلُ، فَإِذَا شَبِعَ قَاءَ، ثُمَّ عَادَ فِيْ قَيْئِهِ.

‘‘কোন ব্যক্তির জন্য জায়িয নয় যে, সে কাউকে কোন কিছু দিয়ে তা আবার ফেরৎ নিবে। তবে পিতা তার সন্তানকে কোন কিছু দিয়ে তা আবার ফেরৎ নিতে পারে। যে ব্যক্তি কাউকে কোন কিছু দিয়ে তা আবার ফেরৎ নেয় সে যেন কুকুরের ন্যায়। পেট ভরে খাদ্য খেয়ে বমি করলো এবং আবারো সেই বমি খোলো’’। (আবূ দাউদ ৩৫৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৪০৬)

তবে কোন সন্তানকে প্রয়োজনের খাতিরে কোন কিছু দিলে তা অন্যকেও সমভাবে দিতে হবে এমন নয় যতক্ষণ না তারো প্রয়োজন দেখা দেয়। যেমন: কেউ স্কুল, কলেজ অথবা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে তখন তার খরচ কিংবা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাকে দেয়ার সময় অন্য জনেরও এমন প্রয়োজন দেখা দিলে তাকেও দিবে এ মানসিকতা থাকতে হবে।

 ১০৬. কারোর একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় না রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় না রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ، فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا ؛ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ.

‘‘যার দু’টি স্ত্রী রয়েছে এতদ্সত্ত্বেও সে এক জনের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়লো তা হলে সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে উঠবে যে, তার এক পার্শ্ব নিম্নগামী থাকবে’’।

(আবূ দাউদ ২১৩৩)

সুতরাং প্রত্যেক স্ত্রীর মাঝে খাদ্য-পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং রাত্রি যাপনের ব্যাপারে সমতা বজায় রাখতে হবে। তবে মনের টান অন্য জিনিস। তাতে সবার মধ্যে সমতা বজায় রাখা কখনোই সম্ভবপর নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَنْ تَسْتَطِيْعُوْا أَنْ تَعْدِلُوْا بَيْنَ النِّسَآءِ، وَلَوْ حَرَصْتُمْ، فَلَا تَمِيْلُوْا كُلَّ الْـمَيْلِ فَتَذَرُوْهَا كَالـْمُعَلَّقَةِ، وَإِنْ تُصْلِحُوْا وَتَتَّقُوْا فَإِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا».

‘‘তোমরা কখনো স্ত্রীদের মাঝে (সার্বিকভাবে) সুবিচার স্থাপন করতে পারবে না। এ ব্যাপারে যতই তোমাদের ইচ্ছা বা নিষ্ঠা থাকুক না কেন। অতএব তোমরা কোন এক জনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না। যাতে করে অপর জন ঝুলানো অবস্থায় থেকে যায়। তবে যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে নাও এবং আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল করুণাময়’’। (নিসা’ : ১২৯)

তবে কোন স্ত্রীকে এমনভাবে ভালোবাসা যা অন্য স্ত্রীর উপর যুলুম করতে উৎসাহিত করে তা অবশ্যই অপরাধ। যেমন: তাকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, সর্বদা তারই আবদার-আবেদন রক্ষা করা হয় অন্য জনের নয় এবং তার কাছেই বেশি বেশি রাত্রি যাপন করা হয় অন্য জনের কাছে নয়। এমনকি তাকে সর্বদা নিকটে রেখেই অন্যকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।

 ১০৭. কারোর কবরের উপর হাঁটা বা বসা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর কবরের উপর হাঁটা বা বসা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَأَنْ يَّجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ.

‘‘তোমাদের কেউ জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর বসলে তার কাপড় পুড়ে যদি তা চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাও তার জন্য অনেক ভালো কারোর কবরের উপর বসার চাইতে’’।

(মুসলিম ৯৭১; ইব্নু মাজাহ্ ১৫৮৮)

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَأَنْ أَمْشِيَ عَلَى جَمْرَةٍ أَوْ سَيْفٍ أَوْ أَخْصِفَ نَعْلِيْ بِرِجْلِيْ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَمْشِيَ عَلَى قَبْرِ مُسْلِمٍ، وَمَا أُبَالِيْ أَوَسَطَ الْقُبُوْرِ قَضَيْتُ حَاجَتِيْ أَوْ وَسَطَ السُّوْقِ.

‘‘জ্বলন্ত অঙ্গার অথবা তলোয়ারের উপর হাঁটা কিংবা জুতোকে পায়ের সাথে সিলিয়ে দেয়া আমার নিকট অতি প্রিয় কোন মুসলিমের কবরের উপর হাঁটার চাইতে। আমি এ ব্যাপারে কোন পার্থক্য করি না যে, আমি কবরসমূহের মাঝে মল-মূত্র ত্যাগ করলাম না কি বাজারের মাঝে’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ১৫৮৯)

কোন কবরস্থানে প্রয়োজনের তাগিদে হাঁটতে চাইলে জুতোগুলো খুলে কবরগুলোর মাঝে খালি পায়েই হাঁটবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনৈক ব্যক্তিকে জুতো পায়ে কবরস্থানে হাঁটতে দেখে বললেন:

يَا صَاحِبَ السِّبْتِيَّتَيْنِ ! أَلْقِهِمَا.

‘‘হে জুতো ওয়ালা! জুতোগুলো খুলে ফেলো’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৫৯০)

 ১০৮. কোন মহিলার নিজের উপর তার স্বামীর অবদান অস্বীকার করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মহিলার নিজের উপর তার স্বামীর অবদান অস্বীকার করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَأُرِيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ، وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ، قَالُوْا: بِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: بِكُفْرِهِنَّ، قِيْلَ: يَكْفُرْنَ بِاللهِ؟ قَالَ: يَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ، وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ، لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ.

‘‘আমাকে জাহান্নাম দেখানো হলো। অথচ আজকের মতো এতো ভয়ঙ্কর দৃশ্য আমার জীবনে আমি আর কখনো দেখিনি। জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীকে আমি মহিলাই পেলাম। সাহাবারা বললেন: তা কেন হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন: তারা কুফরী করেছিলো। বলা হলো: তারা কি আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কুফরী করেছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, বরং তারা নিজ স্বামীর সাথে কুফরী করেছে তথা তার অবদান অস্বীকার করেছে। তুমি যদি তাদের কারোর প্রতি পুরো জীবন অনুগ্রহ করলে আর সে হঠাৎ তোমার পক্ষ থেকে (তার রুচি বিরুদ্ধ) কোন কিছু পেয়ে গেলো তখন সে নির্দ্বিধায় বলে ফেলবে: আমি কখনোই তোমার কাছ থেকে ভালো কিছু দেখতে পাইনি’’।

(বুখারী ১০৫২; মুসলিম ৯০৭)

 ১০৯. বিনা ওযরে ওয়াক্ত পার করে নামায পড়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বিনা ওযরে ওয়াক্ত পার করে নামায পড়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوْا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوْا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا، إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُوْلَآئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا».

‘‘নবী ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের পর আসলো এমন এক অপদার্থ বংশধর যারা নামায বিনষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির পূজারী হলো। সুতরাং তারা ‘‘গাই’’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করা হবে না’’। (মার্ইয়াম : ৫৯-৬০)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্, সা’ঈদ্ বিন্ মুসাইয়িব, ’উমর বিন্ আব্দুল আযিয, মাসরূক্ব ও অন্যান্যদের মতে উক্ত আয়াতে নামায বিনষ্ট করা বলতে ওয়াক্ত পার করে নামায পড়াকে বুঝানো হয়েছে।

নামায তো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পড়তে হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْـمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا».

‘‘নিশ্চয়ই নামায নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মু’মিনদের উপর ফরয করা হয়েছে’’। (নিসা’ : ১০৩)

 ১১০. নামাযের মধ্যে ধীরস্থিরভাবে রুকূ’, সিজ্দাহ্ বা অন্যান্য রুকন আদায় না করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নামাযের মধ্যে ধীরস্থিরভাবে রুকূ’, সিজ্দাহ্ বা অন্যান্য রুকন আদায় না করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ আব্দুল্লাহ্ আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে কিছু সংখ্যক সাহাবাদেরকে নিয়ে মসজিদেই বসেছিলেন এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে নামায পড়তে শুরু করলো। সে রুকূ ও সিজ্দাহ্ ঠিকভাবে করছিলো না। তখন তিনি সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

أَتَرَوْنَ هَذَا ؟ مَنْ مَاتَ عَلَى هَذَا مَاتَ عَلَى غَيْرِ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ، يَنْقُرُ صَلَاتَهُ كَمَا يَنْقُرُ الْغُرَابُ الدَّمَ.

‘‘তোমরা একে দেখতে পাচ্ছো। কোন ব্যক্তি এভাবে নামায পড়তে পড়তে মৃত্যু বরণ করলে ইসলামের উপর তার মৃত্যু হবে না। সে নামায পড়ছে যেন কোন কাক রক্তের উপর ঠোকর মারছে’’।

(ইব্নু খুযাইমাহ্ ১/৩৩২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

لَا تُجْزِئُ صَلَاةٌ لَا يُقِيْمُ الرَّجُلُ فِيْهَا صُلْبَهُ فِيْ الرُّكُوْعِ وَالسُّجُوْدِ.

‘‘ওই ব্যক্তির নামায হবে না যে রুকূ’ ও সিজ্দায় নিজ পিঠকে সোজা রাখে না’’। (ইব্নু খুযাইমাহ্ ১/৩৩২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِيْ يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِهِ ؟ قَالَ: لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهَا وَلَا سُجُوْدَهَا.

‘‘সর্ব নিকৃষ্ট চোর সে ব্যক্তি যে নামায চুরি করে। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে আবার নামায চুরি করে কিভাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে রুকূ’ ও সিজ্দাহ্ সঠিকভাবে আদায় করে না’’। (স’হীহুল জা’মি’, হাদীস ৯৯৭)

 ১১১. নামাযের কোন রুকন ইমামের আগে আদায় করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নামাযের কোন রুকন ইমামের আগে আদায় করা আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

أَمَا يَخْشَى الَّذِيْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يُحَوِّلَ صُوْرَتَهُ صُوْرَةَ حِمَارٍ.

‘‘ওই ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না যে ইমাম সাহেবের পূর্বেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করবেন অথবা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন’’।

(বুখারী ৬৯১; মুসলিম ৪২৭; আবূ দাউদ ৬২৩)

তিনি আরো বলেন:

لَا تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلَا بِالسُّجُوْدِ وَلَا بِالْقِيَامِ وَلَا بِالْقُعُوْدِ وَلَا بِالاِنْصِرَافِ.

‘‘তোমরা আমার আগে রুকু, সিজদাহ, উঠা, বসা ও সালাম আদায় করবে না’’। (মুসলিম ৪২৬)

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ ও আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কোন রুকন আদায়ে ইমামের অগ্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

لَا وَحْدَكَ صَلَّيْتَ وَلَا بِإِمَامِكَ اِقْتَدَيْتَ

‘‘(তোমার নামাযই হয়নি) না তুমি একা পড়লে না ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে’’। (রিসালাতুল ইমাম আহমাদ)

যে কোন কাজ ইমাম সাহেবের একটু পরেই করতে হবে। অর্থাৎ ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সিজদার জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে ও সমানতালে কোন রুকন আদায় করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

الإِمَامُ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ

‘‘ইমাম সাহেব তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন’’। (মুসলিম ৪০৪ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৫৯৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلَاتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلَا تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ.

‘‘ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন’’।

(বুখারী ৩৭৮, ৮০৫, ১১১৪; মুসলিম ৪১৪, ৪১৭; আবূ দাউদ ৬০৩)

তিনি আরো বলেন:

إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَقَاْلَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَارْفَعُوْا وَقُوْلُوْا رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا.

‘‘যখন ইমাম সাহেব তাকবীর সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে। আর যখন তিনি রুকুতে চলে যাবেন তখন তোমরা রুকু শুরু করবে। আর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে ‘‘সামি‘আল্লাহু লিমান্ হামিদাহ্’’ বলবেন তখন তোমরা রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে’’রাববানা ওয়া লাকাল্ হাম্দ’’ বলবে। আর যখন তিনি সিজদায় যাবেন তখন তোমরা সিজদাহ শুরু করবে’’। (বুখারী ৭২২, ৭৩৪, ৮০৫; মুসলিম ৪১৪)

বারা বিন ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَاْنَ النَّبِيُّ  إِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُوْدِ لَا يَحْنِيْ أَحَدٌ ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِىُّ  جَبْهَتَهُ عَلَى الَارْضِ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদাহর জন্যে ঝুঁকে পড়তেন আমাদের কেউ নিজ পৃষ্ঠদেশ বাঁকা করতো না যতক্ষণ না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ কপাল জমিনে রাখতেন’’। (বুখারী ৬৯০, ৮১১; মুসলিম ৪৭৪; আবূ দাউদ ৬২১)

 ১১২. দূর্গন্ধযুক্ত কোন বস্ত্ত যেমন: কাঁচা পিয়াজ, রসুন, বিড়ি, সিগারেট, হুঁকো ইত্যাদি খেয়ে বা পান করে সরাসরি মসজিদে চলে আসা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

দূর্গন্ধযুক্ত কোন বস্ত্ত যেমন: কাঁচা পিয়াজ, রসুন, বিড়ি, সিগারেট, হুঁকো ইত্যাদি খেয়ে বা পান করে সরাসরি মসজিদে চলে আসা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম কাজ।

’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

ثُمَّ إِنَّكُمْ، أَيُّهَا النَّاسُ! تَأْكُلُوْنَ شَجَرَتَيْنِ لَا أَرَاهُمَا إِلاَّ خَبِيْثَتَيْنِ، هَذَا الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ، لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ  إِذَا وَجَدَ رِيْحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِيْ الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيْعِ، فَمَنْ أَكَلَهُمَا فَلْيُمِتْهُمَا طَبْخًا.

‘‘হে লোক সকল! তোমরা দুর্গন্ধময় দু’টি উদ্ভিদ খাচ্ছো যা পিয়াজ ও রসুন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, তিনি কারোর নিকট থেকে মসজিদে থাকাবস্থায় এমন গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে বক্বী’তে পাঠিয়ে দিতেন। অতএব কেউ তা খেতে চাইলে সে যেন তা পাকিয়ে খায়’’। (মুসলিম ৫৬৭)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الْمُنْتِنَةِ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ الْإِنْسُ.

‘‘যে ব্যক্তি এ দুর্গন্ধময় উদ্ভিদ খেলো সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটও না ঘেঁষে। কারণ, ফিরিশ্তাগণ এমন বস্ত্ত কর্তৃক কষ্ট পায় যা কর্তৃক কষ্ট পায় মানুষগণ। (মুসলিম ৫৬৪)

 ১১৩. শরয়ী কোন কারণ ছাড়া কোন মুসলিমের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরয়ী কোন কারণ ছাড়া কোন মুসলিমের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِـمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ.

‘‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কেউ তা করলে সে মৃত্যুর পর জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’।

(আবূ দাউদ ৪৯১৪ স’হীহুল জা’মি’, হাদীস ৭৬৩৫)

এক বছর কারোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা তো তাকে হত্যা করার ন্যায়।

আবূ খিরাশ্ সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً ؛ فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِهِ.

‘‘কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন করা মানে তাকে হত্যা করা’’। (আবূ দাউদ ৪৯১৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্ক ছিন্নতার একটি ধরনও উল্লেখ করেছেন। যা থেকে দোষী ব্যক্তির বাস্তব চিত্র সবার সামনে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায় এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পরিচয়ও মিলে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَكُوْنُ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَّهْجُرَ مُسْلِمًا فَوْقَ ثَلَاثَةٍ، فَإِذَا لَقِيَهُ سَلَّمَ عَلَيْهِ ثَلَاثَ مِرَارٍ ؛ كُلُّ ذَلِكَ لَا يَرُدُّ عَلَيْهِ ؛ فَقَدْ بَاءَ بِإِثْمِهِ.

‘‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তা এমন যে, তার সাথে ওর সাক্ষাৎ হলে সে তাকে তিন বার সালাম দেয়; অথচ সে তার সালামগুলোর একটি বারও উত্তর দিলো না। এতে তারই গুনাহ্ হবে; ওর নয়’’। (আবূ দাউদ ৪৯১৩)

আবূ আইয়ূব আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَّهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، يَلْتَقِيَانِ ؛ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِيْ يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ.

‘‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তা এমন যে, তাদের পরস্পরের সাক্ষাৎ হলো; অথচ তারা একে অপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তবে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম সালাম বিনিময় কওে’’। (আবূ দাউদ ৪৯১১)

কারোর সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে মন কষাকষি হলে তথা পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষভাব জন্ম নিলে আল্লাহ্ তা‘আলার সাধারণ ক্ষমা থেকে তারা বঞ্চিত থাকবে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ كُلَّ يَوْمِ اثْنَيْنِ وَخَمِيْسٍ، فَيُغْفَرُ فِيْ ذَلِكَ الْيَوْمَيْنِ لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا، إِلاَّ مَنْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيْهِ شَحْنَاءُ، فَيُقَالُ : أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا.

‘‘প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরোজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং উক্ত উভয় দিনেই সকল শির্কমুক্ত বান্দাহ্কে ক্ষমা করে দেয়া হয়। তবে এমন দু’জন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না যাদের পরস্পরে শত্রুতা রয়েছে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়: এদেরকে আরো কিছু সময় দাও যাতে তারা সমঝোতায় আসতে পাওে’’। (আবূ দাউদ ৪৯১৬)

তবে সম্পর্ক ছিন্ন করা যদি শরয়ী কোন কারণে হয়ে থাকে তা হলে তা অবশ্যই জায়িয। যেমন: কেউ নামায পড়ে না অথবা কেউ প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করে। সুতরাং আপনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। তবে এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, যদি কারোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তার মধ্যে পাপবোধ জন্ম নেয় অথবা তার সঠিক পথে ফিরে আসার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা অবশ্যই দরকার। কারণ, তা অসৎ কাজে বাধা দেয়ার শামিল। তবে যদি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে আরো গাদ্দার অথবা আরো হঠকারী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করাই উচিৎ। বরং তাকে মাঝে মাঝে নসীহত করবে এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা স্ত্রীর সাথে চল্লিশ দিন কথা বলেননি। আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) তাঁর ছেলের সাথে মৃত্যু পর্যন্ত কথা বলেননি। ’উমর বিন্ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ্) জনৈক ব্যক্তিকে দেখে নিজ চেহারা ঢেকে ফেলেন।

১১৪. কোন স্বাধীন পুরুষকে বিক্রি করে তার মূল্য খাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন স্বাধীন পুরুষকে বিক্রি করে তার মূল্য খাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

قَالَ اللهُ تَعَالَى : ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : رَجُلٌ أَعْطَى بِيْ ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيْرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো। তাদের একজন হচ্ছে, যে ব্যক্তি আমার নামে কসম খেয়ে কারোর সাথে কোন অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করেছে। দ্বিতীয়জন হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন পুরুষকে বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেয়েছে। আর তৃতীয়জন হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোন পুরুষকে মজুর হিসেবে খাটিয়ে তার মজুরি দেয়নি’’। (বুখারী ২২২৭, ২২৭০)

বর্তমান যুগে ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী কর্তৃক কোন এলাকার সুঠাম দেহ স্বাধীন পুরুষ এবং স্বাধীনা যুবতী মহিলাকে জোরপূর্বক কিংবা অর্থের লোভ দেখিয়ে সম্মানজনক কাজের কথা বলে অবৈধ কাজ কিংবা নীচু কাজের জন্য অন্য এলাকার কারোর নিকট কাজের লোক হিসেবে বিক্রি করে দিয়ে সে পয়সা খাওয়াও এরই শামিল।

 ১১৫. নিজের মাতা-পিতাকে সরাসরি লা’নত দেয়া অথবা তাদের লা’নতের কারণ হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নিজের মাতা-পিতাকে সরাসরি লা’নত দেয়া অথবা তাদের লা’নতের কারণ হওয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَّلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ، قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ.

‘‘সর্ব বৃহৎ কবীরা গুনাহ্’র একটি এও যে, কোন ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে লা’নত দিবে। বলা হলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কিভাবেই বা কোন ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে লা’নত করতে পারে? তিনি বললেন: সে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয় তখন সে ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয়। তেমনিভাবে সে অন্যের মাকে গালি দেয় তখন সেও তার মাকে গালি দেয়’’। (বুখারী ৫৯৭৩)

 ১১৬. কাউকে খারাপ কোন নামে ডাকা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাউকে খারাপ কোন নামে ডাকা আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَلْمِزُوْا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْأَلْقَابِ، بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ، وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ».

‘‘তোমরা অন্য কোন মুসলিম ভাইকে কোন কিছুর অপবাদ দিও না এবং কোন খারাপ নামেও ডেকো না। কারণ, কারোর জন্য ঈমান আনার পর ফাসিকী উপাধিটি খুবই নিকৃষ্ট। যারা উক্ত অপকর্ম থেকে তাওবা করবে না তারাই তো সত্যিকারার্থে যালিম’’। (’হুজুরাত : ১১)

কোন মানুষকে এমন কোন উপাধিতে ভূষিত করা যা শুনলে তার মনে কষ্ট আসে তা সকল আলিমের মতেই হারাম। চাই তা সরাসরি তারই ভূষণ হোক অথবা তার পিতা-মাতার। যেমন: কানা, অন্ধ ইত্যাদি অথবা কানার ছেলে, লম্পটের ছেলে ইত্যাদি।

 ১১৭. শরীয়ত সম্মত ভালো কোন উদ্দেশ্য ছাড়া যালিমদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে সম্মান করা ও ভালোবাসা এমনকি যুলুমের কাজে তাদের সহযোগিতা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরীয়ত সম্মত ভালো কোন উদ্দেশ্য ছাড়া যালিমদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে সম্মান করা ও ভালোবাসা এমনকি যুলুমের কাজে তাদের সহযোগিতা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

কা’ব বিন্ ’উজ্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أُعِيْذُكَ بِاللهِ يَا كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ ! مِنْ أُمَرَاءَ يَكُوْنُوْنَ مِنْ بَعْدِيْ، فَمَنْ غَشِيَ أَبْوَابَهُمْ فَصَدَّقَهُمْ فِيْ كَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّيْ وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَا يَرِدُ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ غَشِيَ أَبْوَابَهُمْ أَوْ لَمْ يَغْشَ، فَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ فِيْ كَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَهُوَ مِنِّيْ وَأَنَا مِنْهُ، وَسَيَرِدُ عَلَيَّ الْحَوْضَ.

‘‘হে কা’ব বিন্ ’উজ্রাহ্! আমি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তোমার জন্য আশ্রয় চাচ্ছি এমন আমিরদের থেকে যারা আমার পরে আসবে। যে তাদের দরোজা মাড়াবে এবং তাদের মিথ্যা সাপোর্ট করবে এমনকি তাদের যুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার নয় এবং আমিও তার নই; আমার সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না এমনকি আমার হাউযে কাউসারের পানিও তার ভাগ্যে জুটবে না। তবে যে ব্যক্তি তাদের দরোজা মাড়িয়েছে কিন্তু তাদের মিথ্যার কোন সাপোর্ট দেয়নি এবং তাদের যুলুমেও সে কোন সহযোগিতা করেনি অথবা একেবারেই তাদের দরোজা মাড়ায়নি সে আমার এবং আমিও তার; তার সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে এমনকি সে আমার হাউযে কাউসারের পানিও পান করবে’’। (তিরমিযী ৬১৪)

 ১১৮. শরীয়তের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ছাড়া কুর‘আনের কোন আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া অথবা কুর‘আনের কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরীয়তের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ছাড়া কুর‘আনের কোন আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া অথবা কুর‘আনের কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা কবীরা গুনাহ্ ও হারাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْـحَقِّ، وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا، وَأَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ».

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও: নিশ্চয়ই আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা’’। (আ’রাফ্ : ৩৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اقْرَؤُوْا الْقُرْآنَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ، فَأَيَّمَا قَرَأْتُمْ أَصَبْتُمْ، وَلَا تُمَارُوْا فِيْهِ، فَإِنَّ الْمِرَاءَ فِيْهِ كُفْرٌ.

‘‘তোমরা কুর‘আন পড়ো সাতভাবে তথা সাতটি আঞ্চলিক রূপে। এ রূপগুলোর মধ্য থেকে তোমরা যেভাবেই পড়বে তাই শুদ্ধ। তবে কুর‘আনকে নিয়ে তোমরা অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করো না। কারণ, তা করা কুফরি’’। (স’হীহুল্ জা’মি’ ১১৬৩)

আবূ বকর (রাঃ) কে কুর‘আন মাজীদের নিম্ন আয়াত:

«وَفَاكِهَةً وَّأَبًّا»

(‘আবাসা : ৩১).

উক্ত আয়াতের ‘‘আববুন্’’ শব্দ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:

أَيُّ سَمَاءٍ تُظِلُّنِيْ، وَأَيُّ أَرْضٍ تُقِلُّنِيْ إِذَا قُلْتُ فِيْ كِتَابِ اللهِ مَا لَا أَعْلَمُ.

‘‘কোন্ আকাশই বা আমাকে ছায়া দিবে এবং কোন্ জমিনই বা আমাকে বহন করবে যদি আমি আল্লাহ্’র কিতাব সম্পর্কে সঠিকভাবে কোন কিছু না জেনেশুনে মনগড়া কোন কথা বলি’’।

 ১১৯. কোন নামাযীর সামনে দিয়ে চলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন নামাযীর সামনে দিয়ে চলা হারাম।

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّيْ فَلَا يَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ، وَلْيَدْرَأْهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ.

‘‘যখন তোমাদের কেউ নামায পড়ে তখন সে যেন কাউকে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে না দেয়। বরং কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে তাকে সাধ্য মতো বাধা দিবে। যদি তাতেও কোন ফায়েদা না হয় তা হলে তার সাথে প্রয়োজনে লড়াই করবে। কারণ, সে তো শয়তান’’। (মুসলিম ৫০৫)

কোন নামাযীর সামনে দিয়ে হাঁটা কতো যে মারাত্মক তা অনুমান করা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত বাণী থেকে।

আবূ জুহাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَوْ يَعْلَمُ الْـمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْـمُصَلِّيْ مَاذَا عَلَيْهِ، لَكَانَ أَنْ يَّقِفَ أَرْبَعِيْنَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَّمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ قَالَ أَبُوْ النَّضْرِ: لَا أَدْرِيْ قَالَ: أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ سَنَةً.

‘‘যদি নামাযীর সামনে দিয়ে হাঁটা ব্যক্তি জানতে পারতো তার কতটুকু গুনাহ্ হচ্ছে তা হলে তার জন্য চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম বলে বিবেচিত হতো নামাযীর সামনে দিয়ে হাঁটার চাইতে। হাদীস বর্ণনাকারী আবুন্ নায্র বলেন: আমি সঠিকভাবে জানি না চল্লিশ দিন না কি মাস না কি বছর’’। (মুসলিম ৫০৭)

 ১২০. তাকে দেখে অন্য লোক তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক তা পছন্দ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

তাকে দেখে অন্য লোক তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক তা পছন্দ করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

মু‘আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ النَّاسُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, মানুষ তাকে দেখলেই তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক তা হলে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়’’। (বুখারী/আদাবুল্ মুফ্রাদ্, হাদীস ৯৭৭; আবূ দাউদ ৫২২৯ তিরমিযী ২/১২৫; আহমাদ ৪/৯৩, ১০০ ত্বাহাবী/মুশ্কিলুল্ আসার ২/৪০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের নিকট এতো প্রিয় পাত্র ছিলেন তবুও তাঁরা তাঁর সম্মানে দাঁড়াতেন না।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

، وَكَانُوْا إِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا لَهُ، لِمَا كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ مِنْ كِرَاهِيَتَهِ لِذَلِكَ.مَا كَانَ فِيْ الدُّنْيَا شَخْصٌ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ رُؤْيَةً مِنْ رَسُوْلِ اللهِ 

‘‘দুনিয়াতে সাহাবাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাইতে আরো বেশি ভালোবাসার পাত্র আর কেউ ছিলেন না। যাঁকে দেখতে তাঁরা ছিলেন লালায়িত। তবুও তাঁরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতেন তাঁর সম্মানে কেউ দাঁড়াতেন না। কারণ, তাঁরা জানতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি পছন্দ করেন না’’।

(বুখারী/আদাবুল্ মুফ্রাদ্, হাদীস ৯৪৬ তিরমিযী ২/১২৫; আহমাদ ৩/১৩২ ত্বাহাবী/মুশ্কিলুল্ আসার ২/৩৯ ইব্নু আবী শায়বাহ্ ৮/৫৮৬ বায়হাক্বী/ শু‘আবুল্ ঈমান ৬/৪৬৯/৮৯৩৬)

 ১২১. কারোর কবরের উপর মসজিদ বানানো

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর কবরের উপর মসজিদ বানানো হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ شِرَارِ النَّاسِ مَنْ تُدْرِكُهُمُ السَّاعَةُ وَهُمْ أَحْيَاءُ، وَالَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ.

‘‘সর্ব নিকৃষ্ট মানুষ ওরা যারা জীবিত থাকতেই কিয়ামত এসে গেলো এবং ওরা যারা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করলো’’।

(ইব্নু খুযাইমাহ্, হাদীস ৭৮৯ ইব্নু হিববান/ইহ্সান, হাদীস ৬৮০৮; ত্বাবারানী/কাবীর ১০৪১৩ বায্যার/কাশ্ফুল আস্তার, হাদীস ৩৪২০)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: উম্মে হাবীবাহ্ ও উম্মে সালামাহ্ (রা.) ইথিওপিয়ায় একটি গির্জা দেখেছিলেন যাতে অনেকগুলো ছবি টাঙ্গানো রয়েছে। তাঁরা তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালে তিনি বলেন:

إِنَّ أُوْلآئِكَ إِذَا كَانَ فِيْهِمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ فَمَاتَ، بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا، وَصَوَّرُوْا فِيْهِ تِلْكَ الصُّوَرَ، فَأُوْلآئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘নিশ্চয়ই ওরা তাদের মধ্যে কোন ওলী-বুযুর্গ ইন্তিকাল করলে তারা ওর কবরের উপর মসজিদ বানিয়ে নেয় এবং এ জাতীয় ছবিসমূহ টাঙ্গিয়ে রাখে। ওরা কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসেবে সাব্যস্ত হবে’’। (বুখারী ৪২৭, ৪৩৪, ১৩৪১, ৩৮৭৩; মুসলিম ৫২৮ ইব্নু খুযাইমাহ্, হাদীস ৭৯০)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারী ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে লা’নত (অভিশাপ) দিয়েছেন।

‘আয়েশা ও ইব্নে ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

، طَفِقَ يَطْرَحُ خَمِيْصَةً عَلَى وَجْهِهِ، فَإِذَا اغْتَمَّ كَشَفَهَا عَنْ وَجْهِهِ، فَقَالَ وَهُوَ كَذَلِكَ: لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى، اِتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ، يُحَذِّرُ مَا صَنَعُوْا.لَمَّا نُزِلَ بِرَسُوْلِ اللهِ 

‘‘যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু শয্যায় তখন তিনি চাদর দিয়ে নিজ মুখমন্ডল ঢেকে ফেললেন। অতঃপর যখন তাঁর শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তখন তিনি চেহারা খুলে বললেন: ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত; তারা নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিলো। এ কথা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতকে সে কাজ না করতে সতর্ক করে দিলেন’’।

(বুখারী ৪৩৫, ৪৩৬, ৩৪৫৩, ৩৪৫৪, ৪৪৪৩, ৪৪৪৪; মুসলিম ৫৩১)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর মসজিদ বানানোর ব্যাপারে শুধু লা’নত ও নিন্দা করেই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি তা করতে সুস্পষ্টভাবে নিষেধও করেছেন।

জুন্দাব্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوْا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ.

‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা নিজ নবী ও ওলী-বুযুর্গদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিতো। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করছি’’। (মুসলিম ৫৩২)

 ১২২. কোন পুরুষের উপুড় হয়ে শোয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পুরুষের উপুড় হয়ে শোয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

ত্বিহ্ফাহ্ আল-গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে মসজিদের মধ্যে উপুড় হয়ে শুতে দেখে পা দিয়ে ধাক্কা মেরে বললেন:

مَا لَكَ وَلِهَذَا النَّوْمِ ! هَذِهِ نَوْمَةٌ يَكْرَهُهَا اللهُ، أَوْ يُبْغِضُهَا اللهُ.

‘‘তোমার কি হলো! এমনভাবে ঘুমাও কেন? এমন ঘুম তো আল্লাহ্ তা‘আলা ঘৃণা করেন তথা পছন্দ করেন না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৭৯১)

আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যখন আমি উপুড় হয়ে ঘুমুচ্ছিলাম। তখন তিনি আমাকে পা দিকে ধাক্কা মেরে বললেন:

يَا جُنَيْدِبُ ! إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ.

‘‘হে জুনাইদিব! এ শোয়া তো জাহান্নামীদের শোয়া’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৩৭৯২)

 ১২৩. কোন গুনাহ্ একাকীভাবে করে পরে তা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন গুনাহ্ একাকীভাবে করে পরে তা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো আরকটি কবীরা গুনাহ্ বা হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ أُمَّتِيْ مُعَافًى إِلاَّ الْمُجَاهِرِيْنَ، وَإِنَّ مِنَ الْـمُجَاهَرَةِ أَنْ يَّعْمَـلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا، ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ، فَيَقُوْلُ : يَا فُلَانُ! عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْهُ.

‘‘আমার প্রতিটি উম্মতই নিরাপদ তথা ক্ষমার যোগ্য। তবে প্রকাশ্য গুনাহ্গাররা নয়। আর প্রকাশ্য গুনাহ্ বলতে এটাকেও বুঝানো হয় যে, কেউ রাত্রিবেলায় মানব সমাজের অলক্ষ্যেই গুনাহ্’র কাজটা করলো। ভোর পর্যন্ত কারোর নিকট তা ফাঁস হয়ে যায়নি; অথচ ভোর হতেই সে অন্যকে বললো: হে অমুক! আমি গত রাত্রিতে এমন এমন অপকর্ম করেছিলাম। আল্লাহ্ তা‘আলা তো তার উক্ত কর্মটি সকাল পর্যন্ত লুকিয়ে রাখলেন; অথচ সে ভোর হতেই তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিলো’’।

(বুখারী ৬০৬৯)

এ ছাড়াও কোন গুনাহ্’র কাজ জনসমাজে বার বার বলা হলে অথবা প্রকাশ্যে আলোচনা করা হলে মানুষ তা সহজেই গ্রহণ করে নেয় এবং তা ধীরে ধীরে ব্যাপকতা লাভ করে। এ ভয়ঙ্করতার প্রতি লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ أَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِيْ الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ».

‘‘নিশ্চয়ই যারা অশ্লীল কাজ মুসলিম সমাজে চালু হয়ে যাক তা পছন্দ করে তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও। আল্লাহ্ তা‘আলাই এর ভয়ঙ্করতা সম্পর্কে ভালোই জানেন; অথচ তোমরা তা জানো না’’। (নূর : ১৯)

১২৪. শরয়ী কোন দোষের কারণে মুসল্লীরা কারোর ইমামতি অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার সেই ইমামতি পদে বহাল থাকা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শরয়ী কোন দোষের কারণে মুসল্লীরা কারোর ইমামতি অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার সেই ইমামতি পদে বহাল থাকা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম কাজ।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ آذَانَهُمْ : الْعَبْدُ الْآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ، وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ، وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُوْنَ.

‘‘তিন ব্যক্তির নামায তাদের কানের উপরে যায় না তথা কবুল হয় না। মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া গোলামের নামায যতক্ষণ না সে মালিকের নিকট ফিরে আসে। সে মহিলার নামায যে রাতটি কাটিয়ে দিলো; অথচ তার স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট। সে ইমামের নামায যে নামায খানা পড়ালো; অথচ মুসল্লীরা তার নামায পড়ানোটা পছন্দ করছে না’’।

(তিরমিযী ৩৬০; স’হীহুল্ জা’মি’ ৩০৫৭)

‘আমর বিন্ ’হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে নিম্নোক্ত হাদীসটি বলা হতো:

أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اثْنَانِ : امْرَأَةٌ عَصَتْ زَوْجَهَا، وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُوْنَ.

‘‘কিয়ামতের দিন সর্ব কঠিন শাস্তি পাবে দু’জন ব্যক্তি: তার মধ্যে এক জন হচ্ছে, যে মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য এবং অপর জন হচ্ছে, যে ইমাম কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করছে; অথচ তারা তার ইমামতি করাটা পছন্দ করছে না’’। (তিরমিযী ৩৫৯)

 ১২৫. কারোর অনুমতি ছাড়া তার ঘরে উঁকি মারা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর অনুমতি ছাড়া তার ঘরে উঁকি মারা কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اطَّلَعَ فِيْ بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَقَدْ حَلَّ لَهُمْ أَنْ يَّفْقَؤُوْا عَيْنَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর ঘরে উঁকি মারলো তাদের অনুমতি ছাড়া তার চোখটি গুঁটিয়ে দেয়া হালাল’’। (মুসলিম ২১৫৮)

সাহ্ল বিন্ সা’দ্ সা’য়িদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরোজার ফাঁক দিয়ে তাঁর ঘরে উঁকি মারছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে ছিলো একটি শলা যা দিয়ে তিনি নিজ মাথা খানি চুলকাচ্ছিলেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উঁকি মারার ব্যাপারটা টের পেয়ে গেলেন তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

لَوْ أَعْلَمُ أَنَّكَ تَنْظُرُنِيْ لَطَعَنْتُ بِهِ فِيْ عَيْنِكَ، إِنَّمَا جُعِلَ الْإِذْنُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ.

‘‘যদি আমি ইতিপূর্বে জানতে পারতাম, তুমি আমাকে দরোজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখছো তা হলে আমি এ শলা দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম। আরে কারোর ঘরে ঢুকার পূর্বে তার অনুমতি নেয়ার ব্যাপারটি তো শরীয়তে রাখা হয়েছে একমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিত কোন জায়গায় কারোর চোখ পড়বে বলেই তো’’। (মুসলিম ২১৫৬)

বর্তমান যুগে মানুষের ঘর-বাড়িগুলো একটার সাথে অন্যটা লাগোয়া এবং ঘরের দরোজা-জানালাগুলো পরস্পর মুখোমুখী হওয়ার দরুন একের পক্ষে অন্যের ঘরে উঁকি দেয়া খুবই সহজ। অতএব এ পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ তা‘আলার ভয় প্রত্যেকের অন্তরে জাগিয়ে তুলতে হবে। তা হলেই এ গুনাহ্ থেকে সকলের বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। অন্যথায় নয়। উপরন্তু এতে করে অন্য মুসলিম ভাইয়ের সম্মানহানি এবং প্রতিবেশীর অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়।

 ১২৬. কারোর কাছে মিথ্যা স্বপ্ন তথা স্বপ্ন বানিয়ে বলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর কাছে মিথ্যা স্বপ্ন তথা স্বপ্ন বানিয়ে বলা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম কাজ।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ أَنْ يَّعْقِدَ بَيْنَ شَعِيْرَتَيْنِ، وَلَنْ يَّفْعَلَ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখেছে বলে দাবি করলো অথচ সে তা দেখেনি তা হলে তাকে দু’টি যব একত্রে জোড়া দিতে বাধ্য করা হবে অথচ সে তা কখনোই করতে পারবে না’’। (বুখারী ৭০৪২; তিরমিযী ২২৮৩)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ أَفْرَى الْفِرَى أَنْ يُّرِيَ عَيْنَيْهِ مَا لَمْ تَرَ.

‘‘সর্ব নিকৃষ্ট মিথ্যা এই যে, কেউ যা স্বপ্নে দেখেনি তা সে দেখেছে বলে দাবি করছে’’। (বুখারী ৭০৪৩)

 ১২৭. কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করা আরেকটি হারাম কাজ। দালালি বলতে নিলামে বিক্রি কোন মাল তো তার কেনার কোন ইচ্ছে নেই; অথচ সে উক্ত পণ্যের বেশি দাম হাঁকিয়ে ওর মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কাজ করতে সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَلَا تَنَاجَشُوْا، وَلَا يَزِيْدَنَّ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ.

‘‘তোমরা দালালি করো না এবং এক জন মুসলিম অন্য মুসলিম ভাইয়ের ক্ষতি করার জন্য পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিবে না’’। (বুখারী ২৭২৩)

বর্তমান যুগে নিলামে গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে এমন অপতৎপরতা বেশি দেখা যায়। গাড়ির দাম হাঁকার সময় গাড়ির মালিক, তার বন্ধুবান্ধব অথবা কোন দালাল ক্রেতার বেশে ক্রেতাদের মাঝে সতর্কভাবে ঢুকে পড়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়; অথচ পণ্যটি কেনার তাদের কোন ইচ্ছে নেই। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। কারণ, তারা তখন পণ্যটি আসল দামের চাইতে অনেক বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়; অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত অপতৎপরতাকে জাহান্নামের কারণ বলে আখ্যায়িত করেন।

ক্বাইস্ বিন্ সা’দ্ ও আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمَكْرُ وَالْخَدِيْعَةُ فِيْ النَّارِ.

‘‘ধোঁকা ও ষড়যন্ত্র জাহান্নামে যাওয়ার বিশেষ কারণ’’। (ইব্নু ‘আদি’ ২/৫৮৪ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান ২/১০৫/২; হা’কিম ৪/৬০৭)

 ১২৮. পণ্যের দোষ-ত্রুটি ক্রেতাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

পণ্যের দোষ-ত্রুটি ক্রেতাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা আরেকটি হারাম কাজ।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمُسْلِمُ أَخُوْ الْـمُسْلِمِ، وَلَا يَحِلُّ لـِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيْهِ بَيْعًا فِيْهِ عَيْبٌ إِلاَّ بَيَّنَهُ لَهُ.

‘‘একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলিম অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের কাছে ত্রুটিযুক্ত কোন কিছু বিক্রি করলে তার জন্য সে ত্রুটি লুকিয়ে রাখা কখনোই জায়িয নয়। বরং তা তাকে অবশ্যই জানিয়ে দিতে হবে’’।

(ইব্নু মাজাহ্ ২২৭৬ স’হীহুল্ জামি’, হাদীস ৬৭০৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যের একটি স্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি উক্ত স্তূপে হাত ঢুকিয়ে দিলে ভেতরের খাদ্য ভেজা দেখতে পান। তখন তিনি বলেন:

مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ ؟ قَالَ: أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: أَفَلَا جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَيْ يَرَاهُ النَّاسُ؟ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّيْ.

‘‘এটা কি, হে খাদ্যের মালিক? সে বললো: হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! বৃষ্টি হয়েছিলো তো তাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি কেন ভেজা খাদ্যগুলো উপরে রাখলে না তা হলেই তো মানুষ তা দেখতে পেতো। যে কোন মুসলিমকে ধোঁকা দিলো তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই’’।

(মুসলিম ১০২)

প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে এ কথা জানতে হবে যে, বেচা-বিক্রিতে কাউকে ধোঁকা দিলে সে ব্যবসায় বরকত ও সত্যিকারের সমৃদ্ধি কখনোই আসে না। হঠাৎ দেখা যাবে কোন একটি জটিল রোগ একই চোটে লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট করে দিলো। হঠাৎ ব্যবসায় ধস নেমে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়ে গেলো।

’হাকীম বিন্ ’হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُـوْرِكَ لَهُمَا فِيْ بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَذَبَا وَكَتَمَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا.

‘‘ক্রেতা-বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে স্বাধীন যতক্ষণ না তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। যদি তারা এ ক্ষেত্রে সত্যবাদিতার পরিচয় দেয় এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে উভয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দিবেন। আর যদি তারা এ ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি একে অপর থেকে লুকিয়ে রাখে তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ক্রয়-বিক্রয় থেকে বরকত উঠিয়ে নিবেন’’। (বুখারী ২১১০)

 ১২৯. দাবা খেলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

দাবা খেলা আরেকটি হারাম কাজ। এতে করে জুয়ার প্রশস্ত পথ খুলে যায় এবং প্রচুর মূল্যবান সময় বিনষ্ট হয়।

আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ ؛ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি দাবা খেললো সে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবাধ্য হলো’’। (আবূ দাউদ ৪৯৩৮; ইব্নু মাজাহ্ ৩৮৩০)

বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيْرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: غَمَسَ يَدَهُ فِيْ لَـحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ.

‘‘যে ব্যক্তি দাবা খেললো সে যেন তার হাত খানা শুকরের গোস্ত ও রক্তে রঞ্জিত করলো অথবা তাতে ডুবিয়ে দিলো’’। (মুসলিম ২৬৬০; আবূ দাউদ ৪৯৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ৩৮৩১)

 ১৩০. তৃতীয় জনকে দূরে রেখে অন্য দু’ জন পরস্পর চুপিসারে কথা বলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

তৃতীয় জনকে দূরে রেখে অন্য দু’ জন পরস্পর চুপিসারে কথা বলা আরেকটি হারাম কাজ। তেমনিভাবে তৃতীয় জনের সামনে অন্য দু’ জন এমন ভাষায় কথা বলা যা সে বুঝে না অথবা এমন আকার-ইঙ্গিতে কথা বলা যা সে বুঝে না তাও হারাম। কারণ, তাতে সে সত্যিই ব্যথিত হবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا كُنْتُمْ ثَلَاثَةً فَلَا يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُوْنَ صَاحِبِهِمَا، فَإِنَّ ذَلِكَ يُحْزِنُهُ.

‘‘যখন তোমরা শুধুমাত্র তিন জন থাকবে তখন তৃতীয় জনকে দূরে রেখে অন্য দু’ জন পরস্পর চুপিসারে কথা বলবে না। কারণ, এ রকম আচরণ তৃতীয় জনকে সত্যিই ব্যথিত কওে’’। (মুসলিম ২১৮৪)

তবে কোন জন সমুদ্রের মাঝে দু’ ব্যক্তি পরস্পর চুপিসারে কথা বললে তাতে কোন অসুবিধে নেই। কারণ, উক্ত হাদীসের দ্বিতীয় বর্ণনায় রয়েছে,

إِذَا كُنْتُمْ ثَلَاثَةً فَلَا يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُوْنَ الْآخَرِ، حَتَّى تَخْتَلِطُوْا بِالنَّاسِ، مِنْ أَجْلِ أَنْ يُحْزِنَهُ.

‘‘যখন তোমরা শুধুমাত্র তিন জন থাকবে তখন অন্য জনকে দূরে রেখে তোমরা দু’ জন পরস্পর চুপিসারে কথা বলবে না যতক্ষণ না তোমরা মানব জন সমুদ্রে হারিয়ে যাও। কারণ, এ রকম আচরণ তৃতীয় জনকে ব্যথিত করে’’।

 ১৩১. ইহুদি ও খ্রিস্টানকে সর্ব প্রথম নিজ থেকেই সালাম দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ইহুদি ও খ্রিস্টানকে সর্ব প্রথম নিজ থেকেই সালাম দেয়া আরেকটি হারাম কাজ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَبْدَؤُوْا الْيَهُوْدَ وَلَا النَّصَارَى بِالسَّلَامِ، فَإِذَا لَقِيْتُمْ أَحَدَهُمْ فِيْ طَرِيْقٍ فَاضْطَرُّوْهُ إِلَى أَضْيَقِهِ.

‘‘তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানকে সর্ব প্রথম নিজ থেকেই সালাম দিও না। বরং যখনই তাদের কাউকে রাস্তায় পাবে তখনই তাকে একেবারে সংকীর্ণ পথেই চলতে বাধ্য করবে’’।

(মুসলিম ২১৬৭)

এ ছাড়াও সালাম তো ভালোবাসারই একান্ত প্রতীক। তাই ওদেরকে সালাম দেয়া যাবে না। কারণ, তাদের সাথে ভালোবাসা ঈমান বিধ্বংসীই বটে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَآءَ، بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ، وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ، إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ».

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তারা তো একে অপরের বন্ধু। তোমাদের কেউ তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদেরকে সুপথ দেখান না’’। (মা’য়িদাহ্ : ৫১)

ওদের আল্লাহ্ তা‘আলাকে নিশ্চয়ই ভয় করা উচিৎ যারা খেলার পাগল হয়ে কাফির খেলোয়াড়কেও ভালোবাসে এবং গানের পাগল হয়ে কাফির গায়ক-গায়িকাকেও ভালোবাসে; অথচ তাদের করণীয় হচ্ছে শুধু ঈমানদারদেরকেই ভালোবাসা যদিও তারা তার উপর যুলুম ও অত্যাচার করুক না কেন এবং কাফিরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা যদিও তারা তার উপর দয়া বা অনুগ্রহ করুক না কেন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা এ দুনিয়াতে কিতাব ও রাসূল পাঠিয়েছেন এ জন্যই যে, যেন সকল আনুগত্য হয় একমাত্র তাঁরই জন্য। সুতরাং ভালোবাসা হবে একমাত্র তাঁরই আনুগত্যকারীদের জন্য এবং শত্রুতা হবে একমাত্র তাঁরই বিরুদ্ধাচারীদের জন্য। সম্মান পাবে একমাত্র তাঁরই বন্ধুরা এবং লাঞ্ছনা পোহাবে একমাত্র তাঁরই শত্রুরা। ভালো প্রতিদান পাবে একমাত্র তাঁরই বন্ধুরা এবং শাস্তি পাবে একমাত্র তাঁরই শত্রুরা।

 ১৩২. মসজিদে থুথু ফেলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মসজিদে থুথু ফেলা আরেকটি হারাম কাজ।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْبُزَاقُ فِيْ الْـمَسْجِدِ خَطِيْئَةٌ، وَكَفَّارَتُهَا دَفْنُهَا.

‘‘মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ্’র কাজ। যার কাফ্ফারা হলো তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলা’’। (বুখারী ৪১৫)

 ১৩৩. অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে অতঃপর তা ভুলে যাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে অতঃপর তা ভুলে যাওয়া বিশেষ করে (তীর, গোলা, বারুদ ইত্যাদি) নিক্ষেপ করা শিখে অতঃপর তা পরিচালনা করা ভুলে যাওয়া আরেকটি হারাম কাজ। কারণ, এভাবে একে একে সবাই তা ভুলে গেলে মুসলিমরা একদা আর শত্রুর মুকাবিলা করতে সক্ষম হবে না।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ عَلِمَ الرَّمْيَ ثُمَّ تَرَكَهُ، فَلَيْسَ مِنَّا أَوْ قَدْ عَصَى.

‘‘যে ব্যক্তি (তীর, গোলা, বারুদ ইত্যাদি) নিক্ষেপ করা শিখে অতঃপর তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে সে আমার উম্মত নয় কিংবা সে নিশ্চয়ই গুনাহ্’র কাজ করলো’’। (মুসলিম ১৯১৯)

১৩৪. বিক্রি করতে গিয়ে বান্দিকে তার সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বিক্রি করতে গিয়ে বান্দিকে তার সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করা আরেকটি হারাম কাজ।

আবূ আইয়ূব আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الْوَالَدَةِ وَوَلَدِهَا فَرَّقَ اللهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَحِبَّتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন বান্দিকে তার সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে তার প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন’’। (তিরমিযী ১২৮৩, ১৫৬৬)

 ১৩৫. মক্কার হারাম শরীফের কোন গাছ কাটা, শিকারের উদ্দেশ্যে সেখানকার কোন পশু-পাখি তাড়ানো এবং সেখানকার রাস্তা থেকে কোন হারানো জিনিস কুড়িয়ে নেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মক্কার হারাম শরীফের কোন গাছ কাটা, শিকারের উদ্দেশ্যে সেখানকার কোন পশু-পাখিকে তাড়ানো এবং সেখানকার রাস্তা থেকে কোন হারানো জিনিস কুড়িয়ে নেয়া আরেকটি হারাম কাজ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ هَذَا الْبَلَدَ حَرَّمَهُ اللهُ، لَا يُعْضَدُ شَوْكُهُ، وَلَا يُنَفَّرُ صَيْدُهُ، وَلَا يَلْتَقِطُ لُقْتَطَهُ إِلاَّ مَنْ عَرَّفَهَا.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা এ শহরকে হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং এর কোন গাছ কাটা যাবে না। শিকারের উদ্দেশ্যে এর কোন পশু-পাখি তাড়ানো যাবে না এবং এর রাস্তা থেকে হারানো কোন জিনিস কুড়িয়ে নেয়া যাবে না’’। (বুখারী ১৫৮৭)

 ১৩৬. আযানের পর কোন ওযর ছাড়া জামাতে নামায না পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

আযানের পর কোন ওযর ছাড়া জামাতে নামায না পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া আরেকটি হারাম কাজ।

আবুশ্শা’সা’ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كُنَّا قُعُوْدًا فِيْ الـْمَسْجِدِ مَعَ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، فَأَذَّنَ الْـمُؤَذِّنُ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الـْمَسْجِدِ يَمْشِيْ، فَأَتْبَعَهُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ بَصَرَهُ حَتَّى خَرَجَ مِنَ الـْمَسْجِدِ، فَقَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ : أَمَّا هَذَا فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ .

‘‘আমরা একদা আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় মুআয্যিন আযান দিলো। তখন জনৈক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তার দিকে অপলক তাকিয়েই থাকলেন যতক্ষণ না সে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলো। তখন আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বললেন: এ তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধাচরণ করলো’’। (মুসলিম ৫/১৬২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا أَذَّنَ الْـمُؤَذِّنُ فَلَا يَخْرُجْ أَحَدٌ حَتَّى يُصَلِّيَ.

‘‘যখন মুআয্যিন আযান দিবে তখন তোমাদের কেউ (মসজিদ থেকে) বের হবে না যতক্ষণ না সে (উক্ত মসজিদে) নামায পড়ে নেয়’’।

 ১৩৭. সন্দেহের দিনে রামাযানের রোযা রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সন্দেহের দিনে রামাযানের রোযা রাখা আরেকটি হারাম কাজ।

‘আম্মার বিন্ ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ صَامَ الْيَوْمَ الَّذِيْ يَشُكُّ فِيْهِ النَّاسُ فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ .

‘‘যে ব্যক্তি এমন দিনে রামাযানের রোযা রাখলো যে দিন রামাযানের প্রথম দিন হওয়া সম্পর্কে মানুষের সন্দেহ রয়েছে তা হলে সে সত্যিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধাচরণ করলো’’। (তিরমিযী ৬৮৬; আবূ দাউদ ২৩৩৪; ইব্নু মাজাহ্ ১৬৬৮)

শা’বানের ত্রিশতম দিন রামাযানের প্রথম দিন হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিলে শা’বান মাস পুরা করাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الشَّهْرُ تِسْعٌ وَّعِشْرُوْنَ لَيْلَةً، فَلَا تَصُوْمُوْا حَتَّى تَرَوْهُ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوْا الْعِدَّةَ ثَلَاثِيْنَ.

‘‘আরবী মাস উনত্রিশ দিনেরও হতে পারে। তাই তোমরা রোযা রাখবে না যতক্ষণ না নতুন মাসের চাঁদ দেখবে। তবে আকাশে মেঘ থাকলে শা’বান মাস ত্রিশ দিন পুরা করবে’’। (বুখারী ১৯০৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

صُوْمُوْا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوْا لِرُؤْيَتِهِ، فَإِنْ غُبِّيَ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوْا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلَاثِيْنَ.

‘‘তোমরা রামাযানের চাঁদ দেখলেই রোযা রাখবে এবং ঈদের চাঁদ দেখলেই রোযা ছাড়বে। তবে আকাশে মেঘ থাকলে শা’বান মাস ত্রিশ দিন পুরা করবে’’। (বুখারী ১৯০৯)

 ১৩৮. মানুষের চলাচলের পথে, গাছের ছায়ায় কিংবা পুকুর ও নদ-নদীর ঘাটে মল ত্যাগ

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মানুষের চলাচলের পথে, গাছের ছায়ায় কিংবা পুকুর ও নদ-নদীর ঘাটে মল ত্যাগ আরেকটি হারাম কাজ কিংবা কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا اللَّاعِنَيْنِ، قَالُوْا: وَمَا اللَّاعِنَانِ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟! قَالَ: الَّذِيْ يَتَخَلَّى فِيْ طَرِيْقِ النَّاسِ أَوْ ظِلِّهِمْ.

‘‘তোমরা অভিশাপের দু’টি কারণ হতে দূরে থাকো। সাহাবা (রাযিয়াল্লাহু আন্হুম) বললেন: অভিশাপের কারণ দুটি কি? তিনি বললেন: পথে-ঘাটে অথবা ছায়াবিশিষ্ট গাছের তলায় মল-মূত্র ত্যাগ করা’’। (আবূ দাউদ ২৫)

মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا الْـمَلَاعِنَ الثَّلَاثَةَ : الْبَرَازَ فِيْ الْمَوَارِدِ، وَقَارِعَةِ الطَّرِيْقِ، وَالظِّلِّ.

‘‘তোমরা লা’নতের তিনটি কারণ থেকে দূরে থাকো। যা হচ্ছে, পুকুর ও নদী ঘাট, রাস্তার মধ্যভাগ এবং গাছের ছায়ায় মল-মূত্র ত্যাগ করা’’ । (আবূ দাউদ ২৬ ইব্নু মাজাহ, হাদীস ৩২৮)

 ১৩৯. কোন পশুকে খাদ্য-পানীয় না দিয়ে দীর্ঘ সময় এমনিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে বেঁধে রাখা যাতে সে ক্ষিধা-পিপাসায় মরে যায়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পশুকে খাদ্য-পানীয় না দিয়ে দীর্ঘ সময় এমনিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে বেঁধে রাখা যাতে সে ক্ষিধা-পিপাসায় মরে যায় এমন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دَخَلَتِ امْرَأَةٌ النَّارَ فِيْ هِرَّةٍ رَبَطَتْهَا، فَلَمْ تُطْعِمْهَا، وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ.

‘‘জনৈকা মহিলা একটি বিড়ালের দরুন জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছে। না তাকে কিছু খেতে দিয়েছে। না তাকে ছেড়ে দিয়েছে যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় টুকিয়ে খেতে পারে’’। (বুখারী ২৩৬৫, ৩৩১৮)

 ১৪০. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের মহান দায়িত্ব পরিহার করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের মহান দায়িত্ব পরিহার করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«لُعِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ بَنِيْ إِسْرَآئِيْلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُوْدَ وَعِيْسَى بْنِ مَرْيَمَ، ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ، كَانُوْا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُّنْكَرٍ فَعَلُوْهُ، لَبِئْسَ مَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ».

‘‘বানী ইস্রাঈলের (ইহুদি ও খ্রিস্টানদের) কাফিরদের উপর লা’নত দাঊদ ও ’ঈসা বিন্ মারইয়াম (‘আলাইহিমুস-সালাম) এর মুখে এবং তা এ কারণে যে, তারা ছিলো ওহীর আদেশ বিরোধী এবং সীমা লঙ্ঘনকারী। তারা একে অপরকে কৃত গর্হিত কাজ থেকে নিষেধ করতো না। মূলতঃ তাদের উক্ত কাজ ছিলো অত্যন্ত নিকৃষ্ট’’। (মা’য়িদাহ্ : ৭৮-৭৯)

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ ! لَتَأْمُرُنَّ بِالـْمَعْرُوْفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الـْمُنْكَرِ، أَوْ لَيُوْشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَّبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِّنْهُ، ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ، فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ.

‘‘সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। তা না হলে আল্লাহ্ তা‘আলা অচিরেই তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে বিশেষ শাস্তি পাঠাবেন। তখন তোমরা তাঁকে ডাকবে; অথচ তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না’’। (তিরমিযী ২১৬৯)

 ১৪১. মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রি করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম কাজ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْـمٌ: أُشَيْمِطٌ زَانٍ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ، وَرَجُلٌ جَعَلَ اللهُ بِضَاعَتَهُ لَا يَشْتَرِيْ إِلاَّ بِيَمِيْنِهِ، وَلَا يَبِيْعُ إِلاَّ بِيَمِيْنِهِ.

‘‘তিন জাতীয় মানুষের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন (সুদৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছে, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, নির্ধন গর্বকারী এবং এমন এক ব্যক্তি যার পণ্যের অবস্থা আল্লাহ্ তা‘আলা এমন করেছেন যে, কিনতে গেলেও সে কসম খায় এবং বিক্রি করতে গেলেও সে কসম খায়’’। (স’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৩০৭২)

ব্যবসার ক্ষেত্রে কসম খেলে পণ্য দ্রুত বিক্রি করা যায় ঠিকই। কিন্তু তাতে সত্যিকারার্থে কোন ফায়েদা বা বরকত নেই।

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْـحَلِفِ فِيْ الْبَيْعِ، فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ.

‘‘তোমরা বেচা-বিক্রিতে বেশি কসম খাওয়া থেকে দূরে থাকো। কারণ, তাতে পণ্য বাজারজাত হয় বেশি ঠিকই। তবে তাতে কোন বরকত থাকে না’’। (মুসলিম ১৬০৭)

 ১৪২. কোন মোসলমানকে নিয়ে ঠাট্টা-মশ্কারা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মোসলমানকে নিয়ে ঠাট্টা-মশ্কারা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ، عَسَى أَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ، وَلَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ، عَسَى أَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ، وَلَا تَلْمِزُوْآ أَنْفُسَكُمْ، وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْأَلْقَابِ، بِئْسَ الْاِسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ، وَمَنْ لَّـمْ يَتُبْ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ».

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষ যেন অন্য কোন পুরুষকে নিয়ে ঠাট্টা না করে। কারণ, যাকে নিয়ে ঠাট্টা করা হচ্ছে হয় তো বা সে (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) ঠাট্টাকারীর চাইতেও উত্তম। তেমনিভাবে তোমাদের মধ্যকার কোন মহিলা যেন অন্য কোন মহিলাকে নিয়ে ঠাট্টা না করে। কারণ, যাকে নিয়ে ঠাট্টা করা হচ্ছে হয় তো বা সে (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) ঠাট্টাকারিণীর চাইতেও উত্তম। তোমরা কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। কারণ, ঈমানের পর কুফরি খুবই নিকৃষ্টতম ভূষণ। যারা এ রকম আচরণ থেকে তাওবা করবে না তারা অবশ্যই যালিম’’।(’হুজুরাত : ১১)

ঠাট্টা বলতেই তা একটি হারাম কাজ। চাই তা কথার মাধ্যমেই হোক অথবা অভিনয়ের মাধ্যমে। চাই তা ইঙ্গিতে হোক অথবা প্রকাশ্যে। চাই তা কোন ব্যক্তির গঠন নিয়েই হোক অথবা তার কথা নিয়ে কিংবা তার কোন বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

 ১৪৩. দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে কোন মানুষের সাথে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট এ জাতীয় লোক হবে সর্ব নিকৃষ্ট লোকদের অন্যতম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ، الَّذِيْ يَأْتِيْ هَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ، وَهَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ.

‘‘তুমি কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দ্বিমুখী নীতি অবলম্বনকারীকে সর্ব নিকৃষ্ট লোকদের অন্যতম দেখতে পাবে। যে এদের কাছে আসে এক চেহারায় আবার অন্যের কাছে যায় অন্য চেহারায়’’। (বুখারী ৬০৫৮; মুসলিম ২৫২৬)

‘আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَ لَهُ وَجْهَانِ فِيْ الدُّنْيَا ؛ كَانَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করবে কিয়ামতের দিন তার আগুনের দু’টি জিহবা হবে’’। (আবূ দাউদ ৪৮৭৩)

১৪৪. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানানো

 শেয়ার ও অন্যান্য 

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানানো হারাম ও কবীরা গুনাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَلَّ رَجُلًا يَقُوْلُ مَا يَفْعَلُ بِأَهْلِهِ، وَلَعَلَّ امْرَأَةً تُخْبِرُ بِمَا فَعَلَتْ مَعَ زَوْجِهَا ؟! فَأَرَمَّ الْقَوْمُ، فَقُلْتُ: إِيْ وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّهُنَّ لَيَفْعَلْنَ وَإِنَّهُمْ لَيَفْعَلُوْنَ، قَالَ: فَلَا تَفْعَلُوْا، فَإِنَّمَا ذَلِكَ مَثَلُ الشَّيْطَانِ لَقِيَ شَيْطَانَةً فِيْ طَرِيْقٍ فَغَشِيَهَا وَالنَّاسُ يَنْظُرُوْنَ.

‘‘হয়তোবা কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। হয়তোবা কোন মহিলা তার স্বামীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় ?! সাহাবায়ে কিরাম চুপ থাকলেন। কেউ কোন কিছুই বললেন না। তখন আমি (বর্ণনাকারী) বললাম: হ্যাঁ, আল্লাহ্’র কসম! হে আল্লাহ্’র রাসূল! মহিলারা এমন করে থাকে এবং পুরুষরাও। তিনি বললেন: না, তোমরা এমন করো না। কারণ, এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন যে কোন এক শয়তান অন্য শয়তানের সাথে রাস্তায় সহবাস করলো। আর মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো’’। (আল্বানী/আ’দাবুয্ যিফাফ : ১৪৪)

 ১৪৫. কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِيْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ ؛ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ.

‘‘যে কোন মহিলা কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া নিজ স্বামীর নিকট তালাক চাইলো তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ২২২৬; তিরমিযী ১১৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২০৫৫)

সাওবান (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمُخْتَلِعَاتُ ؛ هُنَّ الـمُنَافِقَاتُ.

‘‘(কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া) কোন কিছুর বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারিণী মহিলারা মুনাফিক’’। (তিরমিযী ১১৮৬)

তবে কোন মারাত্মক সমস্যা দেখা দিলে কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণ করা যেতে পারে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা হাবীবা বিন্তে সাহ্লকে তার স্বামী সাবিত বিন্ ক্বাইস বিন্ শাম্মাস মেরে তার একটি হাড় ভেঙ্গে ফেলে। ভোর বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে জানানো হলে তিনি সাবিতকে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর বললেন: তুমি তার (তার স্ত্রী) কাছ থেকে কিছু সম্পদ নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। সাবিত বললেন: এমনকি চলে হে আল্লাহ্’র রাসূল! তিনি বললেন: হ্যাঁ, চলে। তখন সাবিত বললেন: আমি তাকে দু’টি খেজুরের বাগান দিয়েছি। এখনো তা তারই দখলে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বাগান দু’টি নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। অতঃপর সাবিত তাই করলেন। (আবূ দাউদ ২২২৮)

 ১৪৬. যিহার তথা নিজ স্ত্রীকে আপন মায়ের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে তুলনা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যিহার তথা নিজ স্ত্রীকে আপন মায়ের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে তুলনা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«الَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْكُمْ مِّنْ نِّسَآئِهِمْ مَّا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ، إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلاَّ اللَّآئِيْ وَلَدْنَهُمْ، وَإِنَّهُمْ لَيَقُوْلُوْنَ مُنْكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُوْرًا، وَإِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُوْرٌ».

‘‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজ স্ত্রীদের সাথে যিহার তথা তাকে তার মায়ের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে তুলনা করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়। তাদের মা তো ওরাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। নিশ্চয়ই তারা এ ব্যাপারে মিথ্যা ও নিকৃষ্ট কথা বলে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী অত্যন্ত ক্ষমাশীল’’। (মুজাদালাহ্ : ২)

উক্ত আয়াতে যিহারকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর মিথ্যা কথা বলা তো কবীরা গুনাহ্। সুতরাং যিহার করাও কবীরা গুনাহ্।

 ১৪৭. সন্তান প্রসবের পূর্বে কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সন্তান প্রসবের পূর্বে কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম কাজ।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা জনৈক ব্যক্তি একটি গর্ভবতী বান্দি তার তাঁবুর সামনে নিয়ে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন: মনে হয় লোকটি সঙ্গম করার জন্যই ওকে নিয়ে এসেছে ?! তাঁরা বললেন: হ্যাঁ, তাই তো মনে হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মনে চায় তাকে এমন অভিসম্পাত দেই যা তার সাথে তার কবর পর্যন্ত পৌছুবে। কিভাবে সে গর্ভের সন্তানটিকে ওয়ারিশ বানাবে; অথচ সে তার জন্য হালাল নয়। কিভাবে সে তাকে দাস বানাবে; অথচ সে তার জন্য হালাল নয়। (মুসলিম ১৪৪১)

আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُوْطَأُ حَامِلٌ حَتَّى تَضَعَ، وَلَا غَيْرُ ذَاتِ حَمْلٍ حَتَّى تَحِيْضَ حَيْضَةً.

‘‘কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গম করা যাবে না যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে এবং গর্ভবতী নয় এমন কোন বান্দির সাথেও সঙ্গম করা যাবে না যতক্ষণ না সে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে। [তা হলে সে যে গর্ভবতী নয় তা নিশ্চিত হওয়া যাবে’’।] (আবূ দাউদ ২১৫৭)

রুওয়াইফি’ বিন্ সাবিত আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّسْقِيَ مَآءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ، وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّقَعَ عَلَى امْرَأَةٍ مِنَ السَّبْيِ حَتَّى يَسْتَبْرِئَهَا بِحَيْضَةٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন পুরুষের জন্য হালাল হবে না কোন গর্ভবতী বান্দির সাথে সঙ্গম করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন পুরুষের জন্য হালাল হবে না গর্ভবতী নয় এমন কোন বান্দির সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে তার গর্ভবতী না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়’’। (আবূ দাউদ ২১৫৮)

 ১৪৮. কোন দুনিয়ার স্বার্থের জন্য প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন দুনিয়ার স্বার্থের জন্য প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ : رَجُلٌ عَلَى فَضْلِ مَاءٍ بِالطَّرِيْقِ يَمْنَعُ مِنْهُ ابْنَ السَّبِيْلِ، وَرَجُلٌ بَايَعَ إِمَامًا لَا يُبَايِعُهُ إلاَّ لِدُنْيَاهُ، إِنْ أَعْطَاهُ مَا يُرِيْدُ وَفَّى لَهُ وَإِلاَّ لَمْ يَفِ لَهُ، وَرَجُلٌ يُبَايِعُ رَجُلًا بِسِلْعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ، فَحَلَفَ بِاللهِ لَقَدْ أُعْطِيَ بِهَا كَذَا وَكَذَا ؛ فَصَدَّقَهُ، فَأَخَذَهَا وَلَمْ يُعْطَ بِهَا.

‘‘তিন জন মানুষের সাথে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করবে না বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি: পথিমধ্যে অবস্থিত জনৈক ব্যক্তি যার নিকট তার প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি রয়েছে; অথচ সে পথচারীকে তা পান করতে বাধা দিচ্ছে। জনৈক ব্যক্তি যে তার প্রশাসককে মেনে নিয়েছে দুনিয়ার জন্য। তার উদ্দেশ্য হাসিল হলে তাকে সে মেনে নেয় নতুবা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। জনৈক ব্যক্তি যে আসরের নামাযের পর পণ্য বিক্রি করার সময় এমন কসম খায় যে, তার উক্ত পণ্যের মূল্য এতো পর্যন্ত উঠেছে। তখন ক্রেতা তা বিশ্বাস করে তার উক্ত পণ্য কিনে নিয়েছে; অথচ তার উক্ত পণ্যের মূল্য এতটুকু পর্যন্ত উঠেনি’’। (বুখারী ৭২১২; নাসায়ী ৪৪৬৪)

 ১৪৯. জনসম্মুখে বুযুর্গি দেখিয়ে ভেতরে ভেতরে হারাম কাজ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

জনসম্মুখে বুযুর্গি দেখিয়ে ভেতরে ভেতরে হারাম কাজ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِيْ يَأْتُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيْضًا، فَيَجْعَلُهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُوْرًا، قَالَ ثَوْبَانُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! صِفْهُمْ لَنَا، جَلِّهِمْ لَنَا ؛ أَنْ لَا نَكُوْنَ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَا نَعْلَمُ، قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ وَيَأْخُذُوْنَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُوْنَ، وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللهِ انْتَهَكُوْهَا.

‘‘আমি আমার উম্মতের এমন কিছু সম্প্রদায়কে চিনি যারা কিয়ামতের দিন তিহামা পাহাড়ের ন্যায় শুভ্র-পরিচ্ছন্ন অনেকগুলো নেকি নিয়ে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হবে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা সেগুলোকে ধূলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দিবেন। সাওবান বলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি আমাদেরকে তাদের বর্ণনা দিন। তাদের ব্যাপারটি আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলুন। তা হলে আমরা না জেনে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তারা তোমাদেরই মুসলিম ভাই। দেখতে-শুনতে তোমাদেরই মতো। তারাও তাহাজ্জুদ পড়ে যেমনিভাবে তোমরা পড়ো। তবে তারা এমন সম্প্রদায় যে, যখন তারা নির্জনে যায় তখন তারা হারাম কাজে লিপ্ত হয়’’। (ইব্নু মাজাহ্ ৪৩২১)

এদের ব্যাপারটি এতো ভয়ানক হওয়ার কারণ এই যে, তারা মূলতঃ আল্লাহ্ভীরু না হওয়ার দরুন বাহ্যিক বুযুর্গি দেখিয়ে সাধারণ মুসলিমকে সুকৌশলে পথভ্রষ্ট করা তাদের জন্য অনেক সহজ। কারোর স্ত্রী-সন্তান তাদের হাতে নিরাপদ নয়।

তবে এর মানে এই নয় যে, কেউ ভেতরে ভেতরে হারাম কাজ করলে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিবে যাতে মানুষ তাকে প্রকাশ্যভাবে বুযুর্গ মনে না করে। বরং যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার ব্যাপারটি লুকিয়ে রেখেছেন তা হলে সেও যেন তার ব্যাপারটি লুকিয়ে রাখে। তবে এ ধরনের অভ্যাস পরিত্যাগ করার দুর্বার চেষ্টা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, এ ধরনের আচরণ মুনাফিকির পর্যায়ে পড়ে।

 ১৫০. মানুষকে দেখানো অথবা গর্ব করার জন্য ঘোড়ার প্রতিপালন

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মানুষকে দেখানো অথবা গর্ব করার জন্য ঘোড়ার প্রতিপালন হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـخَيْلُ لِثَلَاثَةٍ: لِرَجُلٍ أَجْرٌ وَلِرَجُلٍ سِتْرٌ وَعَلَى رَجُلٍ وِزْرٌ، فَأَمَّا الَّذِيْ لَهُ أَجْرٌ: فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ.. وَرَجُلٌ رَبَطَهَا تَغَنِّيًا وَتَعَفُّفًا وَلَمْ يَنْسَ حَقَّ اللهِ فِيْ رِقَابِهَا وَلَا ظُهُوْرِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ، وَرَجُلٌ رَبَطَهَا فَخْرًا وَرِيَاءً فَهِيَ عَلَى ذَلِكَ وِزْرٌ.

‘‘ঘোড়া তিন জাতীয় মানুষের জন্য। কারোর জন্য তা সাওয়াব কামানোর মাধ্যম হবে। আবার কারোর জন্য তা নিজ সম্মান রক্ষা করার মাধ্যম হবে। আবার কারোর জন্য তা গুনাহ্’র কারণ হবে। যার জন্য তা সাওয়াব কামানোর মাধ্যম হবে সে ওই ব্যক্তি যে ঘোড়াটিকে আল্লাহ্’র রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রতিপালন করছে। ... দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছে সে যে ঘোড়াটিকে সচ্ছলতা ও আরেক জনের নিকট হাত পাতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিপালন করছে। আর সে এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকারসমূহ ভুলে যায়নি। তা হলে তা তার জন্য সম্মান রক্ষার মাধ্যম হবে। আরেকজন ঘোড়াটিকে লোক দেখানো এবং গর্ব করার জন্য প্রতিপালন করছে। তা হলে তা তার জন্য গুনাহ্’র কারণ হবে’’। (বুখারী ৭৩৫৬; মুসলিম ৯৮৭)

 ১৫১. সাধারণ শৌচাগারে নিম্নবসন ছাড়া কারোর প্রবেশ করা অথবা নিজ স্ত্রীকে প্রবেশ করতে দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সাধারণ শৌচাগারে নিম্নবসন ছাড়া কারোর প্রবেশ করা অথবা নিজ স্ত্রীকে প্রবেশ করতে দেয়াও হারাম। কারণ, এ জাতীয় শৌচাগারে পর্দা রক্ষা করা অসম্ভবই বটে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُدْخِلْ حَلِيْلَتَهُ الْـحَمَّامَ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَدْخِلِ الْـحَمَّامَ إِلاَّ بِمِئْزَرٍ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُدَارُ عَلَيْهَا الْخَمْرُ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ শৌচাগারে প্রবেশ করতে না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন নিম্নবসন ছাড়া সাধারণ শৌচাগারে প্রবেশ না করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন এমন খাবার টেবিলে না বসে যেখানে মদ বা মাদকদ্রব্য পরিবেশন করা হয়’’। (তিরমিযী ২৮০১ আল্বানী/আ’দাবুয্ যিফাফ : ১৩৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

الْـحَمَّامُ حَرَامٌ عَلَى نِسَاءِ أُمَّتِيْ.

‘‘সাধারণ শৌচাগার আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হারাম। (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৩১৯২)

 ১৫২. যে মজলিসে হারামের আদান-প্রদান হয় এমন মজলিসে অবস্থান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

যে মজলিসে হারামের আদান-প্রদান হয় এমন মজলিসে অবস্থান করা হারাম।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُدْخِلْ حَلِيْلَتَهُ الْحَمَّامَ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَدْخِلِ الْحَمَّامَ إِلاَّ بِمِئْزَرٍ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُدَارُ عَلَيْهَا الْخَمْرُ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ শৌচাগারে প্রবেশ করতে না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন নিম্নবসন ছাড়া সাধারণ শৌচাগারে প্রবেশ না করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন এমন খাবার টেবিলে না বসে যেখানে মদ বা মাদকদ্রব্য পরিবেশন করা হয়’’। (তিরমিযী ২৮০১ আল্বানী/আ’দাবুয্ যিফাফ : ১৩৯)

 ১৫৩. বিচারকের মাধ্যমে কারোর নিকট এমন কিছু দাবি করা যা আপনার নয়

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বিচারকের মাধ্যমে কারোর নিকট এমন কিছু দাবি করা যা আপনার নয় হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ ادَّعَى مَا لَيْسَ لَهُ فَلَيْسَ مِنَّا، وَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর নিকট এমন কিছু দাবি করলো যা তার নয় তা হলে সে আমার উম্মত নয় এবং সে যেন নিজ ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’’। (মুসলিম ৬১)

১৫৪. উচ্চ স্বরে কুর‘আন তিলাওয়াত করে অথবা যে কোন কথা বলে মসজিদের কোন মুসল্লিকে কষ্ট দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

উচ্চ স্বরে কুর‘আন তিলাওয়াত করে অথবা যে কোন কথা বলে মসজিদের কোন মুসল্লিকে কষ্ট দেয়া হারাম কাজ।

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে ই’তিকাফ করলে সাহাবাদের উচ্চ কিরাত শুনতে পান। তখন তিনি পর্দা উঠিয়ে বলেন:

أَلَا إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ، فَلَا يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلَا يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِيْ الْقِرَاءَةِ أَوْ قَالَ: فِيْ الصَّلَاةِ.

‘‘জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই তার প্রভুর সাথে একান্তে আলাপ করে। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন এ সময় অন্যকে কষ্ট না দেয় এবং নামাযের ভেতরে বা বাইরে উচ্চ স্বরে কিরাত না পড়ে’’।

(আবূ দাউদ ১৩৩২)

উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ার চাইতে নিচু স্বরে কিরাত পড়ায় সাওয়াব বেশি।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـجَاهِرُ بِالْقُرْآنِ كَالْجَاهِرِ بِالصَّدَقَةِ، وَالْـمُسِرُّ بِالْقُرْآنِ كَالْـمُسِرِّ بِالصَّدَقَةِ.

‘‘উচ্চ স্বরে কুর‘আন পড়া প্রকাশ্য সাদাকার ন্যায়। আর নিচু স্বরে কুর‘আন পড়া লুক্কায়িত সাদাকার ন্যায়’’। (আবূ দাউদ ১৩৩৩)

তবে উচ্চ স্বরে কুর‘আন পড়ায় কারোর কোন ক্ষতি না হয়ে যদি লাভ হয় তা হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা রাত্রি বেলায় ঘর থেকে বের হয়ে দেখলেন আবূ বকর (রাঃ) নিচু স্বরে নামায পড়ছেন আর ’উমর (রাঃ) উচ্চ স্বরে। যখন তাঁরা উভয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একত্রিত হলেন তখন তিনি বললেন: হে আবূ বকর! আমি একদা তোমাকে নিচু স্বরে নামায পড়তে দেখলাম। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি যাঁর সাথে একান্তে আলাপ করছিলাম তিনি তো আমার আওয়ায শুনেছেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’উমর (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে ’উমর! আমি একদা তোমাকে উচ্চ স্বরে নামায পড়তে দেখলাম। তখন ’উমর (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি শয়তানকে তাড়াচ্ছিলাম আর ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগাচ্ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো দেখলেন বিলাল (রাঃ) এক সূরাহ থেকে কিছু আয়াত আবার অন্য সূরাহ থেকে আরো কিছু আয়াত তিলাওয়াত করছেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ) কে একদা এ ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন: কথাগুলো খুবই সুন্দর! আল্লাহ্ তা‘আলা সবগুলো একত্রিত করে নিবেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে বললেন: তোমরা সবাই ঠিক করেছো। (আবূ দাউদ ১৩৩০)

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা জনৈক সাহাবী রাত্রি বেলার নামাযে উচ্চ স্বরে কিরাত পড়েছেন। ভোর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা অমুককে দয়া করুন! সে গতরাত আমাকে অনেকগুলো আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা আমার পড়া থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলো। (আবূ দাউদ ১৩৩১)

 ১৫৫. স্বামী ছাড়া অন্য কোন আত্মীয়া-বান্ধবীর জন্য কোন মহিলার তিন দিনের বেশি শোক পালন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

স্বামী ছাড়া অন্য কোন আত্মীয়া-বান্ধবীর জন্য কোন মহিলার তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হারাম।

যায়নাব বিন্তে আবী সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন শাম দেশ থেকে আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ) এর মৃত্যু সংবাদ আসলো তখন এর তৃতীয় দিনে (তাঁর মেয়ে) উম্মে ’হাবীবাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) তাঁর দু’ হাত ও উভয় গন্ডদেশে হলুদ রঙ্গের খোশবু লাগিয়ে বললেন: আমার এ হলুদ রঙ্গের খোশবু লাগানোর কোন প্রয়োজন ছিলো না যদি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস না শুনতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য হালাল হবে না স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃতের জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করা যাবে’’। (বুখারী ১২৮০, ১২৮১, ৫৩৩৪, ৫৩৪৫; মুসলিম ১৪৮)

 ১৫৬. কোন হারাম বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রি ও এর বিক্রয়লব্ধ পয়সা খাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন হারাম বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রি ও এর বিক্রিলব্ধ পয়সা খাওয়া হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى، وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ، وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ».

‘‘তোমরা একে অপরকে নেক কাজ ও আল্লাহ্ভীরুতা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করো। তবে গুনাহ্’র কাজ ও শত্রুতা বিকাশে কারোর সাহায্য করো না এবং আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি কঠিন শাস্তিদাতা’’। (মা’য়িদাহ্ : ২)

এ কথা নিশ্চিত যে, কারোর কাছ থেকে কোন হারাম বস্ত্ত ক্রয় করা মানে হারামের প্রচার-প্রসারে তার সহযোগিতা করা এবং কারোর নিকট কোন হারাম বস্ত্ত বিক্রি করা মানে তাকে উক্ত হারাম কাজে উৎসাহিত করা।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বাইতুল্লাহ্’র রুক্নে ইয়ামানীর পার্শ্বে বসা অবস্থায় দেখেছিলাম। তিনি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললেন:

لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ثَلَاثًا، إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ইহুদিদেরকে লা’নত করুক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিনবার বলেছেন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের উপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন; অথচ তারা তা বিক্রি করে সে পয়সা ভক্ষণ করে। বস্তত: আল্লাহ্ তা‘আলা কোন জাতির উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করলে তার বিক্রিলব্ধ পয়সাও হারাম করে দেন’’। (আবূ দাউদ ৩৪৮৮)

 ১৫৭. বড়ো বড়ো দাঁত বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পশু ও বড়ো বড়ো নখ বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পাখির গোস্ত খাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বড়ো বড়ো দাঁত বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পশু ও বড়ো বড়ো নখ বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পাখির গোস্ত খাওয়া হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كُلُّ ذِيْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ فَأَكْلُهُ حَرَامٌ.

‘‘প্রত্যেক বড়ো বড়ো দাঁত বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পশুর গোস্ত খাওয়া হারাম’’। (মুসলিম ১৯৩৩)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  عَنْ كُلِّ ذِيْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ، وَعَنْ كُلِّ ذِيْ مِخْلَبٍ مِنَ الطَّيْرِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বড়ো বড়ো দাঁত বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পশু ও প্রত্যেক বড়ো বড়ো নখ বিশিষ্ট থাবা মেরে ছিঁড়ে খাওয়া হিংস্র পাখির গোস্ত খেতে নিষেধ করেছেন’’। (মুসলিম ১৯৩৪)

 ১৫৮. গৃহপালিত গাধার গোস্ত খাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

গৃহপালিত গাধার গোস্ত খাওয়া হারাম।

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَـمَّا فَتَحَ رَسُوْلُ اللهِ  خَيْبَرَ أَصَبْنَا حُمُرًا خَارِجَ الْقَرْيَةِ، فَطَبَخْنَا مِنْهَا، فَنَادَى مُنَادِيْ رَسُوْلِ اللهِ  : أَلَا إِنَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ يَنْهَيَانِكُمْ عَنْهَا، فَإِنَّهَا رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ، فَأُكْفِئَتِ الْقُدُوْرُ بِمَا فِيْهَا، وَإِنَّهَا لَتَفُوْرُ بِمَا فِيْهَا.

‘‘যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবার বিজয় করলেন তখন আমরা জনবসতির বাইরে কিছু গাধা পেয়ে যাই। আমরা তা যবাই করে কিছু পাকিয়ে ফেললাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন: তোমরা জেনে রাখো, আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে গাধার গোস্ত খেতে নিষেধ করছেন। কারণ, তা নাপাক এবং শয়তানের কাজ। তখন সবগুলো পাতিল গোস্তসহ উবু করে ফেলা হয়; অথচ তখনো পাতিলগুলো গোস্তসহ উথলে উঠছিলো’’। (মুসলিম ১৯৪০)

উক্ত হাদীসে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) যে কতো দ্রুত আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীসমূহ আমলে বাস্তবায়িত করতেন তা খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়; অথচ তাঁরা ছিলেন তখন খুবই ক্ষুধার্ত।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  عَنْ أَكْلِ الْحِمَارِ الْأَهْلِيِّ يَوْمَ خَيْبَرَ، وَكَانَ النَّاسُ احْتَاجُوْا إِلَيْهَا.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের দিন গৃহপালিত গাধা খেতে নিষেধ করেছেন; অথচ তা তখন সবারই খাওয়ার প্রয়োজন ছিলো’’। (মুসলিম ৫৬১)

 ১৫৯. মুত্‘আ বিবাহ্ তথা কোন কিছুর বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিবাহ্ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মুত্‘আ বিবাহ্ তথা কোন কিছুর বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিবাহ্ করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ، إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ، فَمَنِ ابْتَغَى وَرَآءَ ذَلِكَ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ».

‘‘আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী’’। (মা‘আরিজ : ২৯-৩১)

উক্ত আয়াতের মর্মানুযায়ী যে মহিলার সাথে মুত্‘আ করা হচ্ছে সে প্রথমত: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়মিত স্ত্রী নয়। কারণ, এ জাতীয় মহিলা বিধিসম্মতভাবে তার পক্ষ থেকে কোন মিরাস পায় না, চুক্তি শেষে তাকে তালাকও দিতে হয় না এবং তাকে ইদ্দতও পালন করতে হয় না। এমনকি সে তার অধিকারভুক্ত দাসীও নয়। সুতরাং তার সাথে যৌনক্রিয়া সম্পাদন করা সীমালংঘনই বটে।

সাব্রাহ্ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ! إِنِّيْ قَدْ كُنْتُ أَذِنْتُ لَكُمْ فِيْ الاسْتِمْتَاعِ مِنَ النِّسَاءِ، وَإِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ ذَلِكَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَيْءٌ فَلْيُخَلِّ سَبِيْلَهُ، وَلَا تَأْخُذُوْا مِمَّا آتَيْتُمُوْهُنَّ شَيْئًا.

‘‘হে মানব সকল! আমি তোমাদেরকে ইতিপূর্বে মহিলাদের সাথে মুত্‘আ করতে অনুমতি দিয়েছিলাম; অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা এখন তা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম করে দিয়েছেন। অতএব তোমাদের কারোর নিকট এ জাতীয় কোন মহিলা থেকে থাকলে সে যেন তাকে নিজ গতিতে ছেড়ে দেয়। আর তোমরা যা তাদেরকে মোহর হিসেবে দিয়েছো তা থেকে এতটুকুও ফেরত নিবে না’’। (মুসলিম ১৪০৬)

উক্ত বিবাহ্ ইসলামের শুরু যুগে কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধকালীন সময়ে সাহাবায়ে কিরাম যখন নিজ স্ত্রীদের থেকে বহু দূরে অবস্থান করতেন তখন তাঁদেরই নিতান্ত প্রয়োজনে চালু করা হয়। যা মক্কা বিজয়ের সময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় এবং যা কিয়ামত পর্যন্ত এ দীর্ঘ কালের যে কোন সময় তার যতোই প্রয়োজন হোক না কেন তা আর চালু করা যাবে না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’উদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 لَيْسَ لَنَا نِسَاءٌ، فَقُلْنَا: أَلَا نَسْتَخْصِيْ ؟ فَنَهَانَا عَنْ ذَلِكَ، ثُمَّ رَخَّصَ لَنَا أَنْ نَنْكِحَ الْـمَرْأَةَ بِالثَّوْبِ إِلَى أَجَلٍ.كُنَّا نَغْزُوْ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ 

‘‘একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বেরুতাম। তখন আমাদের সঙ্গে আমাদের স্ত্রীগণ ছিলো না। তাই আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম: আমরা কি খাসি হয়ে যাবো না? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেন। বরং তিনি শুধুমাত্র একটি কাপড়ের বিনিময়ে হলেও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিবাহ্ তথা মুত্‘আ করা আমাদের জন্য হালাল করে দিলেন’’। (মুসলিম ১৪০৪)

খাইবারের যুদ্ধ পর্যন্ত সাধারণভাবে এ নিয়ম চালু ছিলো। অতঃপর তা উক্ত যুদ্ধেই সর্ব প্রথম নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 عَنْ مُتْعَةِ النِّسَاءِ يَوْمَ خَيْبَرَ، وَعَنْ أَكْلِ لُحُوْمِ الْحُمُرِ الْإِنْسِيَّةِ.نَهَى رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের যুদ্ধে গৃহপালিত গাধার গোস্ত খাওয়া এবং মহিলাদের সাথে মুত্‘আ করা নিষেধ করে দিয়েছেন’’। (মুসলিম ১৪০৭)

মক্কা বিজয়ের সময় তা আবার কিছু দিনের জন্য চালু করা হয়। অতঃপর তা আবার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

সাব্রাহ্ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 بِالْـمُتْعَةِ عَامَ الْفَتْحِ حِيْنَ دَخَلْنَا مَكَّةَ، ثُمَّ لَمْ نَخْرُجْ مِنْهَا حَتَّى نَهَانَا عَنْهَا.أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় মক্কায় প্রবেশ করে আমাদেরকে মুত্‘আ করতে আদেশ করেন। অতঃপর মক্কা থেকে বের হতে না হতেই তা আবার নিষেধ করে দেন’’। (মুসলিম ১৪০৬)

সাব্রাহ্ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা মক্কা বিজয়ের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মক্কায় পনেরো দিন অবস্থান করেছিলাম। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মুত্‘আ করতে অনুমতি দিলেন। অনুমতি পেয়েই আমি ও আমার এক চাচাতো ভাই মুত্‘আ করতে রওয়ানা করলাম। আমি ছিলাম তার চাইতে একটু বেশি জোয়ান, ফরসা ও সুন্দর গড়নের। আর সে ছিলো একটু কালো বর্ণের। আমাদের উভয়ের সাথে ছিলো দু’টি চাদর। তবে আমার চাদরটি ছিলো পুরাতন। আর তার চাদরটি ছিলো খুবই সুন্দর এবং নতুন। আমরা মক্কার উঁচু-নিচু ঘুরতে ঘুরতে বনূ ‘আমির বংশের এক সুন্দরী মহিলা পেয়ে গেলাম। আমরা তাকে বললাম: আমাদের কেউ কি তোমার সাথে মুত্‘আ করতে পারবে ? সে বললো: তোমরা আমাকে এর বিনিময়ে কি দিবে ? তখন আমরা উভয়ে তাকে নিজ নিজ চাদর দেখালাম। আমার সাথীর চাদর দেখে সে আকৃষ্ট হয়। তবে তাকে দেখে নয়। আবার আমাকে দেখে সে আকৃষ্ট হয়। তবে আমার চাদর দেখে নয়। আমার সাথী বললো: এর চাদরটি পুরাতন। আর আমার চাদরটি নতুন। তখন সে বললো: এর চাদরে কোন সমস্যা নেই। কথাটি সে দু’ বার অথবা তিন বার বললো। অতঃপর আমি তার সাথে তিন দিন মুত্‘আ করি। ইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যার কাছে মুত্‘আর মহিলা রয়েছে সে যেন তাকে ছেড়ে দেয়।

(মুসলিম ১৪০৬)

সকল সাহাবায়ে কিরাম মুত্‘আ হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত ছিলেন। তবে ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে তা হালাল হওয়ার মতও পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি মৃত্যুর পূর্বে উক্ত মত পরিহার করেছেন। অতএব তা সাহাবাদের সর্ব সম্মতিক্রমে হারামই প্রমাণিত হলো। নিম্নে সাহাবাগণের কয়েকটি উক্তি উল্লিখিত হলো:

‘আলী (রাঃ) বলেন: রমযানের রোযা অন্যান্য বাধ্যতামূলক রোযাকে রহিত করে দিয়েছে যেমনিভাবে তালাক, ইদ্দত ও মিরাস মুত্‘আ বিবাহ্কে রহিত করে দিয়েছে। (মুস্বান্নাফি আব্দির রায্যাক্ব ৭/৫০৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) বলেন: তালাক, ইদ্দত ও মিরাস মুত্‘আ বিবাহ্কে রহিত করে দিয়েছে। (মুস্বান্নাফি আব্দির রায্যাক্ব ৭/৫০৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) কে উক্ত মুত্‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: তা ব্যভিচার। (মুস্বান্নাফি আব্দির রায্যাক্ব ৭/৫০৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রা.) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও বলেন: তা ব্যভিচার। (মুস্বান্নাফি ইব্নি আবী শাইবাহ্ ৩/৫৪৬)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) বলেন: মুত্‘আ বিবাহ্ হারাম। এর প্রমাণ সূরাহ মা‘আরিজের উনত্রিশ থেকে একত্রিশ নম্বর আয়াত।

(বায়হাক্বী ৭/২০৬)

জা’ফর বিন্ মুহাম্মাদ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: তা হুবহু ব্যভিচার। এতে কোন সন্দেহ নেই। (বায়হাক্বী ৭/২০৭)

ইমাম নাওয়াওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: ‘আল্লামাহ্ মাযিরী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: মুত্‘আ বিবাহ্ ইসলামের শুরু যুগে জায়িয ছিলো। যা পরবর্তী যুগে বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা রহিত করা হয় এবং এর হারামের উপর সকল গ্রহণযোগ্য আলিম একমত।

‘আল্লামাহ্ ক্বাযী ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: শুধু রাফিযী ছাড়া সকল আলিম তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত এবং সবাই এ ব্যাপারেও একমত যে, এখনো কোন ব্যক্তি তা সম্পাদন করলে সাথে সাথেই তা বাতিল হয়ে যাবে। চাই সে উক্ত মহিলার সাথে সঙ্গম করুক বা নাই করুক। (মুসলিম/ইমাম নাওয়াওয়ীর ব্যাখ্যা ৯-১০/১৮৯)

শিয়া সম্প্রদায় এখনো উক্ত মুত্‘আ বিবাহ্কে হালাল মনে করে। যা কুর‘আন-সুন্নাহ্’র সম্পূর্ণ বিরোধী। কোন কোন বর্ণনা মতে ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) ও তাঁর কিছু ভক্তরা উক্ত বিবাহ্ জায়িয বললে বা করলে তা জায়িয হয়ে যাবে না। কারণ, কুর‘আন-সুন্নাহ্’র সামনে কোন সাহাবার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু অন্যান্য সকল সাহাবা তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত এবং তিনিও পরিশেষে উক্ত মত থেকে ফিরে এসেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। মূলতঃ আজো যারা উক্ত অগ্রহণযোগ্য মতকে আঁকড়ে ধরে আছে তারা নিশ্চয়ই নিজ কুপ্রবৃত্তির অদম্য পূজারী। নতুবা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি সুনিশ্চিত হওয়ার পরও একটি বিচ্ছিন্ন মতকে আঁকড়ে ধরার আর অন্য কোন মানে হয় না।

 ১৬০. শিগার বিবাহ্

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শিগার বিবাহ্ তথা একজন অপরজনকে এমন বলা যে, আমি তোমার নিকট আমার বোন বা মেয়েটিকে বিবাহ্ দিচ্ছি এ শর্তে যে, তুমি আমার নিকট তোমার বোন বা মেয়েটিকে বিবাহ্ দিবে। তবে তাতে কোন ধরনের মোহরের আদান-প্রদান হবে না অথবা হতেও পারে এমন কাজ হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্, জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الشِّغَارِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিগার বিবাহ্ করতে নিষেধ করেন’’। (মুসলিম ১৪১৫, ১৪১৬, ১৪১৭)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا شِغَارَ فِيْ الْإِسْلَامِ.

‘‘ইসলাম ধর্মে শিগার বিবাহ্ বলতে কিছুই নেই’’। (মুসলিম ১৪১৫)

 ১৬১. কোন মহিলাকে বিবাহ্ করার পর সে স্ত্রী থাকাবস্থায় তার আপন খালা অথবা ফুফীকে বিবাহ্ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মহিলাকে বিবাহ্ করার পর সে স্ত্রী থাকাবস্থায় তার আপন খালা অথবা ফুফীকে বিবাহ্ করা হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يُجْمَعُ بَيْنَ الْـمَرْأَةِ وَعَمَّتِهَا وَلَا بَيْنَ الْـمَرْأَةِ وَخَالَتِهَا.

‘‘কোন মহিলা ও তার (আপন) ফুফীকে এবং কোন মহিলা ও তার (আপন) খালাকে কারোর বিবাহ্ বন্ধনে একত্রিত করা যাবে না’’।

(মুসলিম ১৪০৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُنْكَحُ الْعَمَّةُ عَلَى بِنْتِ الْأَخِ وَلَا ابْنَةُ الْأُخْتِ عَلَى الْـخَالَةِ.

‘‘ফুফীকে তার ভাতিজির উপর এবং বোনঝিকে তার খালার উপর বিবাহ্ করা যাবে না’’। (মুসলিম ১৪০৮)

 ১৬২. রামাযান বা কুরবানের ঈদের দিনে রোযা রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

রামাযান বা কুরবানের ঈদের দিনে রোযা রাখা হারাম।

আবূ ’উবাইদ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি ’উমর (রাঃ) এর সাথে ঈদের নামায পড়ার জন্য উপস্থিত হলাম। তিনি নামায শেষে খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন:

إِنَّ هَذَيْنِ يَوْمَانِ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنْ صِيَامِهِمَا: يَوْمُ فِطْرِكُمْ مِنْ صِيَامِكُمْ، وَالْآخَرُ: يَوْمٌ تَأْكُلُوْنَ فِيْهِ مِنْ نُسُكِكُمْ.

‘‘এ দু’ দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা থাকতে নিষেধ করেছেন। এক দিন হচ্ছে যে দিন তোমরা রামাযানের রোযা শেষ করবে। আরেক দিন হচ্ছে যে দিন তোমরা কুরবানীর গোস্ত খাবে’’। (মুসলিম ১১৩৭)

আবূ হুরাইরাহ্, আবূ সা’ঈদ্ ও ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنْ صِيَامِ يَوْمَيْنِ: يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ দিন রোযা থাকতে নিষেধ করেছেন: কুরবানীর ঈদের দিন ও রামাযানের ঈদের দিন’’। (মুসলিম ৮২৭, ১১৩৮, ১১৪০)

 ১৬৩. নামাযের ভেতর দো‘আ অবস্থায় আকাশের দিকে তাকানো

 শেয়ার ও অন্যান্য 

নামাযের ভেতর দো‘আ অবস্থায় আকাশের দিকে তাকানো হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ رَفْعِهِمْ أَبْصَارَهُمْ عِنْدَ الدُّعَاءِ فِيْ الصَّلَاةِ إِلَى السَّمَاءِ أَوْ لَتُخْطَفَنَّ أَبْصَارُهُمْ.

‘‘নামাযের ভেতর দো‘আর সময় আকাশের দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত তারা যেন তা দ্বিতীয়বার না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টি হৃত-লুন্ঠিত হবে’’। (মুসলিম ৪২৯)

১৬৪. বংশ নিয়ে অন্যের সাথে গর্ব করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বংশ নিয়ে অন্যের সাথে গর্ব করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ মালিক আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَرْبَعٌ فِيْ أُمَّتِيْ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ، لَا يَتْرُكُوْنَهُنَّ: الْفَخْـرُ فِيْ الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِيْ الْأَنْسَابِ، وَالاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُوْمِ، وَالنِّيَاحَةُ.

‘‘আমার উম্মতের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি কাজ চালু থাকবে। তারা তা কখনোই ছাড়বে না। বংশ নিয়ে গৌরব, অন্যের বংশে আঘাত, কোন কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস এবং বিলাপ’’। (মুসলিম ৯৩৪ ’হা-কিম : ১/৩৮৩ ত্বাবারানি/কাবীর, হাদীস ৩৪২৫, ৩৪২৬ বায়হাক্বী: ৪/৬৩; বাগাওয়ী ১৫৩৩ ইব্নু আবী শাইবাহ্ : ৩/৩৯০; আহমাদ : ৫/৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৪ ‘আব্দুর রায্যাক : ৩/৬৬৮৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ يَفْتَخِرُوْنَ بِآبَائِهِمْ الَّذِيْنَ مَاتُوْا، إِنَّمَا هُمْ فَحْمُ جَهَنَّمَ، أَوْ لَيَكُوْنُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللهِ مِنَ الْجُعْلِ الَّذِيْ يُدَهْدِهُ الْخِرَاءَ بِأَنْفِهِ، إِنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِليَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ، إِنَّمَا هُوَ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ، أَوْ فَاجِرٌ شَقِيٌّ، النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُوْ آدَمَ، وَآدَمُ خُلِقَ مِنْ تُرَابٍ.

‘‘নিজেদের মৃত বাপ-দাদাদেরকে নিয়ে গর্বকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত তারা যেন তা দ্বিতীয়বার না করে। কারণ, তারা তো মূলতঃ জাহান্নামের কয়লা। অন্যথায় তারা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মলকীটের চাইতেও অধিক মূল্যহীন বলে বিবেচিত হবে। আরে মলকীটের কাজই তো শুধু নাক দিয়ে মলখন্ড ঠেলে নেয়া। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে জাহিলী যুগের হঠকারিতা তথা নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে নিয়ে গর্ব করা থেকে পবিত্র করেছেন। মূলতঃ মানুষ তো শুধুমাত্র দু’ প্রকার: মুত্তাকী ঈমানদার অথবা দুর্ভাগা ফাসিক। সকল মানুষই তো আদম সন্তান। আর আদম (আঃ) কে তো মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং এতে একের উপর অন্যের গর্বের কীই বা রয়েছে ?! (তিরমিযী ৩৯৫৫)

 ১৬৫. কবর বা মাজারের দিকে ফিরে নামায পড়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কবর বা মাজারের দিকে ফিরে নামায পড়া হারাম।

আবূ মার্সাদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَجْلِسُوْا عَلَى الْقُبُوْرِ وَلَا تُصَلُّوْا إِلَيْهَا.

‘‘তোমরা কবরের উপর বসোনা এবং উহার দিকে ফিরে নামাযও পড়ো না’’। (মুসলিম ৯৭২; আবূ দাউদ ৩২২৯ ইব্নু খুযাইমাহ্, হাদীস ৭৯৩)

আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 عَنِ الصَّلَاةِ بَيْنَ الْقُبُوْرِ.نَهَى النَّبِيُّ 

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। (ইব্নু হিববান, হাদীস ৩৪৫; আবূ ইয়া’লা ২৮৮৮ বায্যার/কাশ্ফুল আস্তার, হাদীস ৪৪১, ৪৪২)

 ১৬৬. শক্ত হওয়া বা পাকার আগে কোন ফল-শস্য বিক্রি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

শক্ত হওয়া বা পাকার আগে কোন ফল-শস্য বিক্রি করা হারাম।

জাবির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  عَنْ بَيْعِ الثَّمَـرِ حَتَّى يَبْدُوَ صَلَاحُـهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: حَتَّى يَطِيْبَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ بَيْعِ الثَّمَرَةِ حَتَّى تُطْعِمَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: حَتَّى تُشْقِهَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: حَتَّى تُشْقِحَ وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَتَأْمَنَ الْعَاهَةَ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন কোন ফল বা শস্য বিক্রি করতে যতক্ষণ না তা খাওয়ার উপযুক্ত হয়, পাকে তথা লাল বা হলদে রং ধারণ করে কিংবা তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কামুক্ত হয়’’।

(মুসলিম ১৫৩৬ স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯২৪)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ  عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتَّى يَزْهُوَ، وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتَّى يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ، نَهَى الْبَائِعَ وَالْـمُشْتَرِيَ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন খেজুর বিক্রি করতে যতক্ষণ না তা লাল বা হলদে রং ধারণ করে এবং শস্য বিক্রি করতে যতক্ষণ না তা সাদা রং ধারণ করে ও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কামুক্ত হয়। তিনি তা করতে নিষেধ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই’’। (মুসলিম ১৫৩৫)

 ১৬৭. কুকুরের বিক্রিমূল্য, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচারলব্ধ পয়সা অথবা গণকের গণনালব্ধ পয়সা গ্রহণ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কুকুরের বিক্রিমূল্য, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচারলব্ধ পয়সা অথবা গণকের গণনালব্ধ পয়সা গ্রহণ করা হারাম।

আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন কুকুরের বিক্রিমূল্য, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচারলব্ধ পয়সা এবং গণকের গণনালব্ধ পয়সা গ্রহণ করতে’’। (মুসলিম ১৫৬৭)

রা’ফি’ বিন্ খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَمَنُ الْكَلْبِ خَبِيْثٌ، وَمَهْرُ الْبَغِيِّ خَبِيْثٌ، وَكَسْبُ الْحَجَّامِ خَبِيْثٌ.

‘‘কুকুরের বিক্রিলব্ধ পয়সা নিকৃষ্ট, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচারলব্ধ পয়সা এবং কারোর শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করে উপার্জিত পয়সা নিকৃষ্ট’’। (মুসলিম ১৫৬৮)

তবে পরবর্তীতে কারোর শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করে উপার্জিত পয়সাগুলো হালাল করে দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনৈক দূষিত রক্ত বেরকারী গোলামকে তাঁর দূষিত রক্ত বের করার কাজ শেষে উক্ত কর্মের পয়সাগুলো দিয়ে দেন এবং তার জন্য টেক্স কমানোর সুপারিশ করেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

حَجَمَ النَّبِيَّ عَبْدٌ لِبَنِيْ بَيَاضَةَ، فَأَعْطَاهُ النَّبِيُّ أَجْرَهُ، وَكَلَّمَ سَيِّدَهُ فَخَفَّفَ عَنْهُ مِنْ ضَرِيْبَتِهِ، وَلَوْ كَانَ سُحْتًا لَمْ يُعْطِهِ النَّبِيُّ .

‘‘একদা বানী বায়াযা গোত্রের জনৈক গোলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূষিত রক্ত বের করে দিলে তিনি তাকে তার প্রাপ্য দিয়ে দেন এবং তার মালিকের সাথে কথা বলে তার টেক্স কমিয়ে দেন। যদি দূষিত রক্ত বেরকারীর উক্ত পয়সাগুলো হারাম হতো তা হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা দিতেন না’’। (মুসলিম ১২০২)

 ১৬৮. তিনটি বিশেষ সময়ে নফল নামায পড়া ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

তিনটি বিশেষ সময়ে নফল নামায পড়া ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হারাম।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيْهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُـرَ فِيْهِنَّ مَوْتَانَا، حِيْنَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ، وَحِيْنَ يَقُوْمُ قَائِمُ الظَّهِيْرَةِ حَتَّى تَمِيْلَ الشَّمْسُ، وَحِيْنَ تَضَيَّفُ الشثَلَاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ َّمْسُ لِلْغُرُوْبِ حَتَّى تَغْرُبَ.

‘‘তিনটি সময় এমন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সে সময়গুলোতে নামায পড়তে অথবা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে নিষেধ করেছেন। সূর্য উঠার সময় যতক্ষণ না তা পূর্ণভাবে উঠে যায়। ঠিক দুপুর বেলায় যতক্ষণ না তা মধ্যাকাশ থেকে সরে যায়। সূর্য ডুবার সময় যতক্ষণ না তা সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়’’। (মুসলিম ৮৩১)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا طَلَعَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَأَخِّرُوْا الصَّلَاةَ حَتَّى تَرْتَفِعَ، وَإِذَا غَابَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَأَخِّرُوْا الصَّلَاةَ حَتَّى تَغِيْبَ.

‘‘যখন সূর্যের কিয়দংশ উদিত হয় তখন নামায পড়তে একটু দেরি করো যতক্ষণ না সূর্য সম্পূর্ণরূপে উঠে যায় এবং যখন সূর্যের কিয়দংশ ডুবে যায় তখন নামায পড়তে একটু দেরি করো যতক্ষণ না সূর্য সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়’’। (বুখারী ৫৮৩)

 ১৬৯. ঋণ ও বিক্রি, এক চুক্তিতে দু’ বিক্রি, মূলের দায়-দায়িত্ব নেয়া ছাড়া তা থেকে লাভ গ্রহণ এবং নিজের কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ঋণ ও বিক্রি, এক চুক্তিতে দু’ বিক্রি, মূলের দায়-দায়িত্ব নেয়া ছাড়া তা থেকে লাভ গ্রহণ এবং নিজের কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রি করা হারাম।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আত্তাব বিন্ আসীদ্ (রাঃ) কে মক্কায় পাঠানোর সময় বলেন:

أَتَدْرِيْ إِلَى أَيْنَ أَبْعَثُكَ ؟ إِلَى أَهْلِ اللهِ، وَهُمْ أَهْلُ مَكَّةَ، فَانْهَهُمْ عَنْ أَربَعٍ: عَنْ بَيْعٍ وَسَلَفٍ، وَعَنْ شَرْطَيْنِ فِيْ بَيْعٍ، وَرِبْحِ مَا لَمْ يُضْمَنْ، وَبَيْعِ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ.

‘‘তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কোথায় পাঠাচ্ছি? আল্লাহ্ তা‘আলার ঘরের নিকট অবস্থানকারীদের কাছে তথা মক্কার অধিবাসীদের নিকট। তুমি তাদেরকে চার জাতীয় বেচা-বিক্রি থেকে নিষেধ করবে: বিক্রি ও ঋণ, দু’ শর্তে বিক্রি, মূলের দায়-দায়িত্ব নেয়া ছাড়া তা থেকে লাভ গ্রহণ এবং নিজের কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রি’’।

(সিল্সিলাতুল্-আ’হাদীসিস্-স্বা’হী’হাহ্, হাদীস ১২১২)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ سَلَفٌ وَبَيْعٌ، وَلَا شَرْطَانِ فِيْ بَيْعٍ، وَلَا رِبْحُ مَا لَمْ يُضْمَنْ، وَلَا بَيْعُ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ.

‘‘কোনভাবেই হালাল হবে না ঋণ ও বিক্রি, দু’ শর্তে বিক্রি, মূলের দায়-দায়িত্ব নেয়া ছাড়া তা থেকে লাভ গ্রহণ এবং নিজের কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রি’’। (তিরমিযী ১২৩৪; ইব্নু মাজাহ্ ২২১৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 عَنْ بَيْعَتَيْنِ فِيْ بَيْعَةٍ.نَهَى رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক চুক্তিতে দু’ বিক্রি নিষেধ করেছেন’’। (তিরমিযী ১২৩১)

’হাকীম বিন্ ’হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললাম: কখনো কখনো এমন হয় যে, জনৈক ব্যক্তি আমার নিকট থেকে এমন জিনিস ক্রয় করতে চায় যা আমার নিকট নেই। তা এভাবে যে, আমি মার্কেট থেকে তা ক্রয় করে তার কাছে বিক্রি করবো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:

لَا تَبِعْ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ

‘‘তোমার কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রি করো না’’।

(তিরমিযী ১২৩২; ইব্নু মাজাহ্ ২২১৭)

ঋণ ও বিক্রি মানে আপনি এমন বললেন যে, আমি তোমার নিকট এ সাইকেলটি বিক্রি করলাম এ শর্তে যে, তুমি আমাকে এক হাজার টাকা ঋণ দিবে। এতে ঋণের মাধ্যমে লাভ গ্রহণ করা হয় যা হারাম।

দু’ শর্তে বিক্রি তথা এক চুক্তিতে দু’ বিক্রি মানে আপনি এমন বললেন যে, আমি এ কাপড়টি তোমার নিকট নগদে এক শ’ এবং বাকিতে দু’ শ’ টাকায় বিক্রি করলাম অথবা এমন বললেন যে, আমি এ কাপড়টি তোমার নিকট এক মাসে টাকা পরিশোধের শর্তে এক শ’ টাকা এবং দু’ মাসে টাকা পরিশোধের শর্তে দু’ শ’ টাকায় বিক্রি করলাম।

মূলের দায়-দায়িত্ব নেয়া ছাড়া তা থেকে লাভ গ্রহণ মানে আপনি কারোর থেকে কোন পণ্য খরিদ করে তা অধিকারে আনার পূর্বেই অন্যের নিকট তা কিছু লাভের ভিত্তিতে বিক্রি করে দিলেন। তখন আপনি উক্ত পণ্যের দায়-দায়িত্ব না নিয়েই তা থেকে লাভ গ্রহণ করলেন। কারণ, উক্ত পণ্যের দায়-দায়িত্ব তো এখনো প্রথম বিক্রেতার উপর।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا اشْتَرَيْتَ مَبِيْعًا فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.

‘‘যখন তুমি কোন পণ্য খরিদ করো তখন তা বিক্রি করবে না যতক্ষণ না তা অধিকারে আনো’’। (স্বা’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৩৪২)

নিজের কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রি করা মানে কোন গরু বা মহিষ পালিয়ে গিয়েছে; অথচ আপনি তা বিক্রি করে দিয়েছেন। কোন জমিন আপনার দখলে নেই তথা যা আপনার হাত ছাড়া; অথচ আপনি তা বিক্রি করে দিয়েছেন।

 ১৭০. কাউকে কিছু দান করে তা আবার ফেরত নেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাউকে কিছু দান করে তা আবার ফেরত নেয়া হারাম।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُّعْطِيَ عَطِيَّةً أَوْ يَهَبَ هِبَةً فَيَرْجِعَ فِيْهَا إِلاَّ الْوَالِدَ فِيْمَا يُعْطِـيْ وَلَدَهُ، وَمَثَلُ الَّذِيْ يُعْطِيْ الْعَطِيَّةَ ثُمَّ يَرْجِعُ فِيْهَا كَمَثَلِ الْكَلْبِ يَأْكُلُ فَإِذَا شَبِعَ قَاءَ، ثُمَّ عَادَ فِيْ قَيْئِهِ.

‘‘কারোর জন্য হালাল হবে না যে, সে কোন কিছু দান করে তা আবার ফেরত নিবে। তবে পিতা কোন কিছু নিজ সন্তানকে দিয়ে তা আবার ফেরত নিতে পারে। যে ব্যক্তি কোন কিছু দান করে তা আবার ফেরত নেয় তার দৃষ্টান্ত সে কুকুরের ন্যায় যে পেট ভরে খেয়ে বমি করে দেয়। অতঃপর সে বমিগুলো আবার নিজে খায়’’।

(আবূ দাউদ ৩৫৩৯; নাসায়ী ৩৬৯২; ইব্নু মাজাহ্ ২৪০৬, ২৪০৭, ২৪১৩, ২৪১৪, ২৪১৫)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ لَنَا مَثَلُ السُّوْءِ ؛ الْعَائِدُ فِيْ هِبَتِهِ كَالْكَلْبِ يَعُوْدُ فِيْ قَيْئِهِ.

‘‘আমাদের জন্য নিকৃষ্ট কোন দৃষ্টান্ত নেই, যেহেতু আমরা মু’মিন। যে ব্যক্তি কোন কিছু দান করে তা আবার ফেরত নেয় তার দৃষ্টান্ত সেই কুকুরের ন্যায় যে বমি করে তা আবার নিজে খায়’’।

(তিরমিযী ১২৯৮; নাসায়ী ৩৭০১)

কেউ কারোর কাছ থেকে নিজ দান ফেরত নিতে চাইলে সে হুবহু তাই ফেরত নিবে যা সে দান করেছে। এর চাইতে এতটুকুও সে আর বেশি নিতে পারবে না। যদিও তা তার দানেরই ফলাফল হোক না কেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَثَلُ الَّذِيْ يَسْتَرِدُّ مَا وَهَبَ كَمَثَلِ الْكَلْبِ يَقِيْءُ فَيَأْكُلُ قَيْئَهُ، فَإِذَا اسْتَرَدَّ الْوَاهِبُ فَلْيُوَقَّفْ فَلْيُعَرَّفْ بِمَا اسْتَرَدَّ ثُمَّ لِيُدْفَعْ إِلَيْهِ مَا وَهَبَ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন কিছু দান করে তা আবার ফেরত নেয় তার দৃষ্টান্ত সে কুকুরের ন্যায় যে বমি করে তা আবার নিজে খায়। যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন কিছু দান করে সে আবার তা ফেরত নেয় তা হলে তাকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে সে যা ফেরত নিয়েছে তা যেন তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে তাই দেয়া হয় যা সে দান করেছে’’। (আবূ দাউদ ৩৫৪০)

 ১৭১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার নফল রোযা রাখা অথবা তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার নফল রোযা রাখা অথবা তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُوْمَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، وَلَا تَأْذَنُ فِيْ بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، وَمَا أَنْفَقَتْ مِنْ نَفَقَةٍ عَنْ غَيْرِ أَمْرِهِ فَإِنَّهُ يُؤَدَّى إِلَيْهِ شَطْرُهُ.

‘‘কোন মহিলার জন্য জায়িয হবে না তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোন নফল রোযা রাখা এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয়া। কোন মহিলা তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার কোন সম্পদ ব্যয় করলে তার অর্ধেক তাকে ফেরত দিতে হবে’’।

(বুখারী ৫১৯৫; মুসলিম ১০২৬)

 ১৭২. সতিনের তালাক অথবা কারোর কাছে বিবাহ্ বসার জন্য তার পূর্বের স্ত্রীর তালাক চাওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সতিনের তালাক অথবা কারোর কাছে বিবাহ্ বসার জন্য তার পূর্বের স্ত্রীর তালাক চাওয়া হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تَسْأَلُ طَلَاقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا، فَإِنَّمَا لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لَا تَسْأَلِ الـْمَرْأَةُ طَلَاقَ الْأُخْرَى لِتَكْتَفِئَ مَا فِيْ إِنَائِهَا.

‘‘কোন মহিলার জন্য হালাল হবে না তার কোন মুসলিম বোনের তালাক চাওয়া যাতে করে তার স্বামীর ভাগটুকু পুরোপুরি নিজের আয়ত্বে এসে যায়। কারণ, সে তো তাই পাবে যা তার ভাগ্যে লেখা আছে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কোন মহিলা যেন অন্য মহিলার তালাক না চায় যাতে করে তার স্বামীর ভাগটুকু পুরোপুরি নিজের আয়ত্বে এসে যায়’’। (বুখারী ৫১৫২; মুসলিম ১৪১৩)

 ১৭৩. কাফিরদের সাথে যে কোনভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কাফিরদের সাথে যে কোনভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ، وَلَا يَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوْبُهُمْ، وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ».

‘‘মু’মিনদের কি এখনো আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও অবতীর্ণ অহীর সত্য বাণী শুনে অন্তর বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি ?! উপরন্তু তারা যেন পূর্বেকার আহলে কিতাবদের মতো না হয় বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর যাদের অন্ত:করণ কঠিন হয়ে পড়েছিলো। মূলতঃ তাদের অধিকাংশই তো ফাসিক’’। (’হাদীদ : ১৬)

উক্ত আয়াতে যদিও তাদের ন্যায় অন্তরকে কঠিন বানাতে নিষেধ করা হয়েছে যা একমাত্র গুনাহ্’রই কুফল তবুও যে কোনভাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখাও শরীয়তে নিষিদ্ধ। যা বিপুল সংখ্যক হাদীস ভান্ডার কর্তৃক প্রমাণিত। যার কিয়দংশ বিষয় ভিত্তিক নিম্নে প্রদত্ত হলো:

নামায সংক্রান্ত:

শাদ্দাদ্ বিন্ আউস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

خَالِفُوْا الْيَهُوْدَ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّوْنَ فِيْ نِعَالِهِمْ وَلَا خِفَافِهِمْ.

‘‘ইহুদিদের বিপরীত করো। (অতএব জুতো পরে নামায পড়ো।) কারণ, ইহুদিরা জুতো ও মোজা পরে নামায পড়ে না’’। (আবূ দাউদ ৬৫২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا كَانَ لِأَحَدِكُمْ ثَوْبَانِ فَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ إِلاَّ ثَوْبٌ وَاحِدٌ فَلْيَتَّـزِرْ بِهِ، وَلَا يَشْتَمِلْ اشْتِمَالَ الْيَهُوْدِ.

‘‘কারোর দু’টি কাপড় থাকলে সে যেন উভয়টি পরেই নামায পড়ে। আর যদি কারোর একটি মাত্র কাপড় থাকে তা হলে সে যেন কাপড়টিকে নিম্ন বসন হিসেবেই পরিধান করে। ইহুদিদের মতো সে যেন কাপড়টিকে পুরো শরীর পেঁচিয়ে না পওে’’। (আবূ দাউদ ৬৩৫)

রোযা সংক্রান্ত:

বশীর খাস্বাস্বিয়াহ্ (রাঃ) এর স্ত্রী লাইলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি দু’ দিন লাগাতার রোযা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী বশীর তা আমাকে করতে দেয়নি। বরং তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:

إِنَّمَا يَفْعَلُ ذَلِكَ النَّصَارَى، صُوْمُوْا كَمَا أَمَرَكُمُ اللهُ، وَأَتِمُّوْا الصَّوْمَ كَمَا أَمَرَكُمُ اللهُ، «وَأَتِمُّوْا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ» فَإِذَا كَانَ اللَّيْلُ فَأَفْطِرُوْا.

‘‘এমন কাজ তো খ্রিস্টানরাই করে। তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবিক রোযা রাখবে এবং তাঁর নির্দেশ মোতাবিকই তা সম্পূর্ণ করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা সম্পূর্ণ করো। সুতরাং রাত আসলেই তোমরা ইফতার করে ফেলবে’’। (আহমাদ ৫/২২৫)

হজ্জ সংক্রান্ত:

‘আমর বিন্ মাইমূন (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা ’উমর (রাঃ) মুয্দালিফায় ফজরের নামায শেষে দাঁড়িয়ে বললেন:

إِنَّ الـْمُشْرِكِيْنَ كَانُوْا لَا يُفِيْضُوْنَ مِنْ جَمْعٍ حَتَّى تُشْرِقَ الشَّمْسُ عَلَى ثَبِيْرَ، وَيَقُوْلُوْنَ: أَشْرِقْ ثَبِيْرُ )كَيْمَا نُغِيْرُ(، فَخَالَفَهُمُ النَّبِيُّ  فَأَفَاضَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ.

‘‘মুশ্রিকরা মুয্দালিফাহ্ থেকে রওয়ানা করতো না যতক্ষণ না সাবীর পাহাড়ের উপর সূর্য উদিত হতো। তারা বলতো: হে সাবীর পাহাড়! তুমি সকালে উপনীত হও যাতে আমরা রওয়ানা করতে পারি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরোধিতা করেই সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা করেন’’।

(বুখারী ১৬৮৪, ৩৮৩৮)

কবর সংক্রান্ত:

জারীর বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اللَّحْدُ لَنَا وَالشَّقُّ لِأَهْلِ الْكِتَابِ.

‘‘লাহ্দ্ তথা এক সাইড ঢালু করা কবর আমাদের জন্য আর মধ্যভাগ গর্ত করা কবর আহ্লে কিতাবদের জন্য’’। (আহমাদ ৪/৩৬৩(

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اللَّحْدُ لَنَا وَالشَّقُّ لِغَيْرِنَا.

‘‘লাহ্দ্ তথা এক সাইড ঢালু করা কবর আমাদের জন্য আর মধ্যভাগ গর্ত করা কবর অন্যদের জন্য’’।

(আবূ দাউদ ৩২০৮; তিরমিযী ১০৪৫)

জুন্দাব্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوْا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ.

‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা নিজ নবী ও ওলী-বুযুর্গদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিতো। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করছি’’। (মুসলিম ৫৩২)

পোশাক ও সাজ-সজ্জা সংক্রান্ত:

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَشْرَبُوْا فِيْ إِنَاءِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَا تَلْبَسُوْا الدِّيْبَاجَ وَالْحَرِيْرَ، فَإِنَّهُ لَهُمْ فِيْ الدُّنْيَا وَهُوَ لَكُمْ فِيْ الْآخِرَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘তোমরা সোনা ও রুপার পেয়ালায় কোন কিছু পান করো না এবং মোটা ও পাতলা সিল্কের কাপড় পরিধান করো না। কারণ, তা তো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আখিরাতে কিয়ামতের দিনে’’। (মুসলিম ২০৬৭)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

 عَلَيَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ، فَلَا تَلْبَسْهَا، قُلْتُ: أَغْسِلُهُمَا ؟ قَالَ: بَلْ أَحْرِقْهُمَا.رَأَى رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গায়ে দু’টি ’উস্বফুর নামী উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত লাল-হলুদ রঙে রঙানো কাপড় দেখে বললেন: এগুলো কাফিরদের পোশাক। সুতরাং তুমি তা পরো না। আমি বললাম: আমি কি কাপড় দু’টি ধুয়ে ফেলবো? তিনি বললেন: না, বরং কাপড় দু’টি পুড়ে ফেলবে’’। (মুসলিম ২০৭৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى لَا يَصْبُغُوْنَ ؛ فَخَالِفُوْهُمْ.

‘‘ইহুদী ও খ্রিস্টানরা (মাথার চুল বা দাঁড়ি) কালার করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করবে তথা কালার করবে’’। (আবূ দাউদ ৪২০৩)

অভ্যাস ও আচরণ সংক্রান্ত:

‘আমর বিন্ শু‘আইব তাঁর পিতা থেকে তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوْا بِالْيَهُوْدِ وَلَا بِالنَّصَارَى ؛ فَإِنَّ تَسْلِيْمَ الْيَهُوْدِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ، وَتَسْلِيْمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ.

‘‘সে আমার উম্মত নয় যে অমুসলিমদের সাথে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখলো। তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখো না। কারণ, ইহুদিরা সালাম দেয় আঙ্গুলের ইশারায়। আর খ্রিস্টানরা সালাম দেয় হাতের ইশারায়’’। (তিরমিযী ২৬৯৫)

এ ছাড়াও যে কোনভাবে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখা শরীয়তে নিষিদ্ধ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন জাতির সাথে যে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখলো সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’’। (আবূ দাউদ ৪০৩১)

১৭৪. কোন অন্ধকে পথভ্রষ্ট করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন অন্ধকে পথভ্রষ্ট করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ كَمَّهَ أَعْمَى عَنِ السَّبِيْلِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: مَلْعُوْنٌ مَنْ كَمَّهَ أَعْمَى عَنْ طَرِيْقٍ.

‘‘আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন অন্ধকে পথভ্রষ্ট করে’’। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১; ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)

 ১৭৫. কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ وَقَعَ عَلَى بَهِيْمَةٍ.

‘‘আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়’’। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১; ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى بَهِيْمَةً فَاقْتُلُوْهُ وَاقْتُلُوْهَا مَعَهُ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলো তাকে হত্যা করো এবং তার সাথে সেই পশুটিকেও’’। (আবূ দাউদ ৪৪৪৬)

 ১৭৬. মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভের জন্য যে কোন উন্নত মানের পোশাক পরিধান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভের জন্য যে কোন উন্নত মানের পোশাক পরিধান করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبًا مِثْلَهُ، ثُمَّ تُلَهَّبُ فِيْهِ النَّارُ.

‘‘যে ব্যক্তি মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভের জন্য যে কোন উন্নত মানের পোশাক পরিধান করলো আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে সে জাতীয় পোশাকই পরাবেন। অতঃপর তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হবে’’। (আবূ দাউদ ৪০২৯)

 ১৭৭. কারোর বিক্রির উপর অন্যের বিক্রি অথবা কারোর বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্যের প্রস্তাব

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কারোর বিক্রির উপর অন্যের বিক্রি অথবা কারোর বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্যের প্রস্তাব হারাম।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَبِعِ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ، وَلَا يَخْطُبْ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيْهِ إِلاَّ أَنْ يَأْذَنَ لَهُ.

‘‘কোন ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের বিক্রির উপর দ্বিতীয় বিক্রি করবে না এবং কোন ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর দ্বিতীয় প্রস্তাব দিবে না যতক্ষণ না তাকে পূর্ব ব্যক্তি উক্ত কাজের অনুমতি দেয়’’। (মুসলিম ১৪১২)

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمُؤْمِنُ أَخُوْ الـْمُؤْمِنِ، فَلَا يَحِلُّ لِلْمُؤْمِنِ أَنْ يَبْتَاعَ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ، وَلَا يَخْطُبَ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيْهِ حَتَّى يَذَرَ.

‘‘মু’মিন তো মু’মিনেরই ভাই। সুতরাং কোন মু’মিনের জন্য হালাল হবে না তার অন্য কোন মু’মিন ভাইয়ের বিক্রির উপর দ্বিতীয় বিক্রি করা এবং তার অন্য কোন মু’মিন ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর দ্বিতীয় প্রস্তাব দেয়া যতক্ষণ না সে উক্ত বিক্রি বা বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়’’। (মুসলিম ১৪১৪)

 ১৭৮. মদীনার হারাম এলাকার কোন গাছ কাটা, শিকার তাড়ানো এবং তাতে কোন বিদ্‘আত করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

মদীনার হারাম এলাকার কোন গাছ কাটা, শিকার তাড়ানো এবং তাতে কোন বিদ্‘আত করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الـْمَدِيْنَةُ حَرَامٌ مَا بَيْنَ عَائِرَ إِلَى ثَوْرٍ، لَا يُخْتَلَى خَلَاهَا، وَلَا يُنَفَّرُ صَيْدُهَا، وَلَا تُلْتَقَطُ لُقَطَتُهَا إِلاَّ لِمَنْ أَشَادَ بِهَا، وَلَا يَصْلُحُ لِرَجُلٍ أَنْ يَحْمِلَ فِيْهَا السِّلَاحَ لِقِتَالٍ، وَلَا يَصْلُحُ أَنْ يُقْطَعَ مِنْهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ أَنْ يَعْلِفَ رَجُلٌ بَعِيْرَهُ.

‘‘মদীনার ‘আয়ির পাহাড় থেকে সাউর পাহাড় পর্যন্ত হারাম এলাকা। সেখানকার (কারোর কোন পরিশ্রম ছাড়া নিজে জন্মানো) কোন উদ্ভিদ কাটা যাবে না, কোন শিকার তাড়ানো যাবে না, কোন হারানো জিনিস উঠানো যাবে না। তবে কোন ব্যক্তি যদি তা প্রচার বা বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্যে উঠায় তা হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। সেখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে কারোর জন্য অস্ত্র বহন করাও জায়িয নয়। তেমনিভাবে সেখানকার কোন গাছ কাটাও জায়িয নয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি তার উটকে ঘাস খাওয়াতে চায় তা হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই।

(আবূ দাউদ ২০৩৪, ২০৩৫)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

الْـمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ، فَمَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا.

‘‘মদীনার ‘আইর পাহাড় থেকে সাউর পাহাড় পর্যন্ত হারাম এলাকা। কেউ তাতে কোন বিদ্‘আত করলে অথবা কোন বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দিলে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, সকল ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত পতিত হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত গ্রহণ করবেন না’’।

(মুসলিম ১৩৭০; আবূ দাউদ ২০৩৪)

‘আস্বিম আল-আ’হ্ওয়াল (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি একদা আনাস্ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মদীনা শরীফকে হারাম করেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তা হারাম।

لَا يُخْتَلَى خَلَاهَا، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ.

‘‘সেখানকার (কারোর কোন পরিশ্রম ছাড়া নিজে জন্মানো) কোন উদ্ভিদ কাটা যাবে না। কেউ কাটলে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, সকল ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত পতিত হবে’’। (মুসলিম ১৩৬৭)

কেউ কাউকে তাতে গাছ কাটা অথবা শিকার করা অবস্থায় ধরতে পারলে তার জন্য উক্ত ব্যক্তির সাথে থাকা সকল বস্ত্ত ছিনিয়ে নেয়া হালাল হবে।

সুলাইমান বিন্ আবূ আব্দুল্লাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি সা’দ্ বিন্ আবী ওয়াক্বাস্ (রাঃ) কে মদীনার হারাম এলাকায় শিকাররত জনৈক গোলামকে ধরে তার সকল পোশাক-পরিচ্ছদ ছিনিয়ে নিতে দেখেছি। অতঃপর তার মালিক পক্ষ সা’দ্ (রাঃ) এর সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হারাম এলাকাকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন:

مَنْ أَخَذَ أَحَدًا يَصِيْدُ فِيْهِ فَلْيَسْلُبْهُ ثِيَابَهُ.

‘‘কেউ কাউকে এ হারাম এলাকায় শিকাররত অবস্থায় ধরতে পারলে সে যেন তার সকল পোশাক-পরিচ্ছদ ছিনিয়ে নেয়’’।

(আবূ দাউদ ২০৩৭)

সা’দ্ (রাঃ) বলেন: সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আমার জন্য হালাল করেছেন তা আমি ফেরত দেবো না। তবে তোমরা চাইলে আমি এর মূল্য পরিশোধ করতে পারি।

সা’দ্ (রাঃ) এর গোলাম থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: একদা সা’দ্ (রাঃ) মদীনার কিছু গোলামকে হারাম এলাকার গাছ কাটতে দেখেন। অতঃপর তিনি তাদের আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেন। এ ব্যাপারে তাদের মালিক পক্ষ তাঁর সাথে কথা বললে তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদীনার যে কোন গাছ কাটতে নিষেধ করতে শুনেছি এবং তিনি বলেন:

مَنْ قَطَعَ مِنْهُ شَيْئًا فَلِمَنْ أَخَذَهُ سَلَبُهُ.

‘‘কেউ কাউকে মদীনার হারাম এলাকার কোন গাছ কাটা অবস্থায় ধরতে পারলে তার সমূহ আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অধিকার রয়েছে’’। (আবূ দাউদ ২০৩৮)

 ১৭৯. ইদ্দত চলাকালীন অবস্থায় কোন মহিলার সাথে সহবাস করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ইদ্দত চলাকালীন অবস্থায় কোন মহিলার সাথে সহবাস করা হারাম। ইদ্দত বলতে এখানে কাফিরদের সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে কোন বিবাহিতা বান্দিকে ধরে আনার পর তার একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করা অথবা তার পেটে বাচ্চা থাকলে তার বাচ্চাটি প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাকে বুঝানো হয়।

রুওয়াইফি’ বিন্ সাবিত আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ’হুনাইন যুদ্ধের সময় বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَسْقِيَ مَاءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ، وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَقَعَ عَلَى امْـرَأَةٍ مِنَ السَّبْيِ حَتَّى يَسْتَبْرِئَهَا بِحَيْضَةٍ، لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَبِيْعَ مَغْنَمًا حَتَّى يُقْسَمَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য হালাল হবে না অন্যের ক্ষেতে নিজের পানি সেচ দেয়া তথা গর্ভবতীর সাথে সহবাস করা। তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য হালাল হবে না কাফিরদের সাথে যুদ্ধলব্ধ কোন বান্দির সাথে সহবাস করা যতক্ষণ না একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম করে তার জরায়ু খালি থাকা নিশ্চিত হওয়া যায়। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য হালাল হবে না বন্টনের পূর্বে কোন যুদ্ধলব্ধ মাল বিক্রি করা’’।

(আবূ দাউদ ২১৫৮, ২১৫৯)

 ১৮০. সাম্প্রদায়িকতা অথবা জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করে এমন কথা বলা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সাম্প্রদায়িকতা অথবা জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করে এমন কথা বলা হারাম। মূলতঃ মুনাফিকরাই এ জাতীয় কর্মকান্ডে উসকানি দিয়ে থাকে।

জাবির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। তখন জনৈক মুহাজির ছেলে জনৈক আন্সারী ছেলের সাথে দ্বন্দ্ব করে তার পাছায় আঘাত করে। তখন আন্সারী ছেলেটি এ বলে ডাক দিলো: হে আন্সারীরা! তোমরা কোথায়? তোমরা আমার সহযোগিতা করো। এ আমাকে মেরে ফেলছে। মুহাজির ছেলেটি বললো: হে মুহাজিররা! তোমরা কোথায়? তোমরা আমার সহযোগিতা করো। এ আমাকে মেরে ফেলছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ কি? জাহিলী যুগের ডাক শুনা যাচ্ছে কেন ? সাহাবাগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উক্ত ব্যাপারটি জানালে তিনি বলেন:

دَعُوْهَا، فَإِنَّهَا مُنْتِنَةٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فَلَا بَأْسَ، وَلْيَنْصُرِ الرَّجُلُ أَخَاهُ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا، إِنْ كَانَ ظَالِمًا فَلْيَنْهَهُ، فَإِنَّهُ لَهُ نَصْرٌ، وَإِنْ كَانَ مَظْلُوْمًا فَلْيَنْصُرْهُ.

‘‘আরে এমন কথা ছাড়ো, এটি একটি বিশ্রী কথা! অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আরে ব্যাপারটি তো সাধারণ, তা হলে এতে কোন অসুবিধে নেই। তবে মনে রাখবে, প্রত্যেক ব্যক্তি যেন তার অন্য মুসলিম ভাইকে সহযোগিতা করে। চাই সে যালিম হোক অথবা মাযলুম। যালিম হলে তাকে যুলুম করতে বাধা দিবে। এটিই হবে তার সহযোগিতা। আর মাযলুম হলে তো তার সহযোগিতা করবেই’’।

(বুখারী ৪৯০৫, ৪৯০৭; মুসলিম ২৫৮৪)

ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ্ বিন্ উবাই কথাটি শুনে বললো: আরে তাদেরকে ছাড়া হবে না। তারা এমন করবে কেন ? আমরা মদীনায় পৌঁছুলে এ অধমদেরকে মদীনা থেকে বের করে দেবো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কথাটি পৌঁছুলে ’উমর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন: আপনি আমাকে একটু সুযোগ দিন। মুনাফিকটির গর্দান উড়িয়ে দেবো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ক্ষান্ত হও, মানুষ বলবে: মুহাম্মাদ তার সাথীদেরকে হত্যা করে দিচ্ছে। জাবির (রাঃ) বলেন: হিজরতের পর মুহাজিররা কম থাকলেও পরবর্তীতে মুহাজিরদের সংখ্যা বেড়ে যায়।

 ১৮১. ইদ্দত চলাকালীন সময় বিধবা মহিলার শরীয়ত নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

ইদ্দত চলা কালীন সময় বিধবা মহিলার শরীয়ত নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করা হারাম।

উম্মে ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُحِدُّ امْرَأَةٌ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا، وَلَا تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوْغًا إِلاَّ ثَوْبَ عَصْبٍ، وَلَا تَكْتَحِلُ، وَلَا تَمَسُّ طِيْبًا إِلاَّ إِذَا طَهُرَتْ نُبْذَةً مِنْ قُسْطٍ أَوْ أَظْفَارٍ.

‘‘কোন মহিলা যেন নিজ স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃতের জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন না করে। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করা যাবে। উক্ত শোক পালনের সময় সৌন্দর্য বর্ধক কোন রঙিন কাপড় সে পরিধান করবে না। তবে স্বাভাবিক যে কোন কাপড় সে পরিধান করতে পারবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ইয়েমেন থেকে এ জাতীয় কিছু কাপড় তখন আমদানি করা হতো। চোখে সুরমা লাগাবে না। কোন সুগন্ধি সে ব্যবহার করবে না। তবে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতার পর স্রাবের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য এ জাতীয় সামান্য কিছু সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ‘‘ক্বুস্ত্ব’’ ও ‘‘আয্ফার’’ জাতীয় সুগন্ধি উক্ত কাজে ব্যবহৃত হতো’’। (মুসলিম ৯৩৮)

তিনি আরো বলেন:

الـْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا لَا تَلْبَسُ الْمُعَصْفَرَ مِنَ الثِّيَابِ وَلَا الـْمُمَشَّقَةَ وَلَا الْـحُلِـيَّ، وَلَا تَخْتَضِبُ، وَلَا تَكْتَحِلُ.

‘‘যে মহিলার স্বামী মৃত্যু বরণ করেছে সে মহিলা ’উস্বফুর নামী উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত লাল-হলুদ রঙে রঙানো কাপড়, লাল মাটিতে রঙানো কাপড় এবং স্বর্ণালঙ্কার পরবে না। হাত পাও রঙাবে না এবং সুরমাও লাগাবে না’’। (স্বা’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ৬৬৭৭)

 ১৮২. হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, দালালি ও কারোর পেছনে পড়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, দালালি ও কারোর পেছনে পড়া হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَحَاسَدُوْا، وَلَا تَنَاجَشُوْا، وَلَا تَبَاغَضُوْا، وَلَا تَدَابَرُوْا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا، الْـمُسْلِمُ أَخُـوْ الـْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا، وَيُشِيْرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، بِحَسْبِ امْرِئٍ مِّنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْـمُسْلِمَ، كُلُّ الْـمُسْلِمِ عَلَى الْـمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.

‘‘তোমরা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ করো না। ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করো না। একে অপরের প্রতি শত্রুতা পোষণ করো না। কারোর পেছনে পড়ো না। কেউ অন্যের বিক্রির উপর দ্বিতীয় বিক্রি করবে না। বরং তোমরা এক আল্লাহ্ তা‘আলার বান্দাহ্ হিসেবে পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। সত্যিই এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। তাই কোন মুসলিম ভাইয়ের উপর যুলুম করা যাবে না, তাকে বিপদে ফেলে রাখা যাবে না। তাকে কোন ভাবেই হীন মনে করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বুকের দিকে তিন বার ইঙ্গিত করে বললেন: আল্লাহ্ ভীরুতার স্থান তো এটিই। কারোর খারাপ হওয়ার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, সে অন্য মুসলিম ভাইকে হীন মনে করবে। এক মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত হারাম’’। (মুসলিম ২৫৬৪)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّـنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ، وَلَا تَحَسَّسُوْا، وَلَا تَجَسَّسُوْا، وَلَا تَنَافَسُوْا، وَلَا تَحَاسَدُوْا، وَلَا تَبَاغَضُـوْا، وَلَا تَقَاطَعُوْا، وَلَا تَدَابَـرُوْا، وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا.

‘‘তোমরা কারোর ব্যাপারে অমূলক ধারণা করো না। কারণ, অমূলক ধারণা মিথ্যা কথারই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা গোয়েন্দাগিরি করো না। (দুনিয়ার ব্যাপারে) কারোর সাথে প্রতিযোগিতা করো না। হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা করো না। কারোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না। কারোর পেছনে পড়ো না। বরং তোমরা এক আল্লাহ্ তা‘আলার বান্দাহ্ হিসেবে পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও’’। (মুসলিম ২৫৬৩)

 ১৮৩. কোন মুহ্রিমের জন্য জামা, পায়জামা, পাগড়ি, টুপি বা মোজা পরিধান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মুহ্রিমের (যে ব্যক্তি হজ্জ বা ’উমরাহ্ করার জন্য মিক্বাত থেকে দু’টি সাদা কাপড় পরে ইহ্রামের নিয়্যাত করেছে) জন্য জামা, পায়জামা, পাগড়ি, টুপি ও মোজা পরিধান করা হারাম।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَلْبَسُ الْـمُحْرِمُ الْقَمِيْصَ، وَلَا الْعِمَامَةَ، وَلَا السَّرَاوِيْلَ، وَلَا الْبُـرْنُسَ، وَلَا ثَوْبًا مَسَّهُ زَعَفْرَانٌ وَلَا وَرْسٌ، وَلَا الْـخُفَّيْنِ إِلاَّ لِمَنْ لَمْ يَجِدِ النَّعْلَيْنِ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْهُمَا فَلْيَقْطَعْهُمَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ.

‘‘কোন মুহ্রিম জামা, পাগড়ি, পায়জামা, টুপি এবং এমন কাপড় পরিধান করবে না যাতে জাফরান অথবা ওয়ার্স (সুগন্ধি জাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ) লাগানো হয়েছে। তেমনিভাবে মোজাও পরবে না। তবে কারোর জুতো না থাকলে সে তার মোজা দু’টো গিঁটের নিচ পর্যন্ত কেটে নিবে’’। (বুখারী ৫৮০৬; মুসলিম ১১৭৭)

১৮৪. হারাম বস্ত্ত দিয়ে চিকিৎসা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করাও হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ الدَّاءَ وَالدَّوَاءَ، فَتَدَاوَوْا، وَلَا تَتَدَاوَوْا بِحَرَامٍ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা রোগ সৃষ্টি করেছেন এবং তার সাথে তার চিকিৎসাও। সুতরাং রোগ হলে তোমরা তার চিকিৎসা করো। তবে হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করো না’’। (স্বা’হী’হুল-জা’মি’, হাদীস ১৬৩৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা হারাম বস্তুর মধ্যে এ উম্মতের জন্য কোন চিকিৎসাই রাখেননি।

উম্মে সালামাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা হারাম বস্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য কোন চিকিৎসা রাখেননি’’। (বাইহাক্বী, হাদীস ১৯৪৬৩ ইব্নু হিববান খন্ড ৪ হাদীস ১৩৯১)

 ১৮৫. কোন নির্দোষকে অন্যের দোষে দন্ডিত করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন নির্দোষকে অন্যের দোষে দন্ডিত করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلاَّ عَلَيْهَا، وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرَى».

‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। কোন পাপীই অন্যের পাপের বোঝা নিজে বহন করবে না’’। (আন্‘আম : ১৬৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَمَنْ يَّكْسِبْ خَطِيْئَةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِ بَرِيْئًا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتَانًا وَّإِثْمًا مُّبِيْنًا».

‘‘যে ব্যক্তি নিজেই কোন অপরাধ বা পাপ করে তা নিরপরাধ কোন ব্যক্তির উপর আরোপ করে তা হলে সে নিজেই উক্ত অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহ্ বহন করবে’’। (নিসা’ : ১১২)

‘আমর বিন্ আ’হ্ওয়াস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিদায় হজ্জের দিবসে নিম্নোক্ত কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

أَلَا لَا يَجْنِيْ جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ، وَلَا يَجْنِيْ وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ، وَلَا مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ.

‘‘যে কোন অপরাধী অপরাধের জন্য সে নিজেই দায়ী। অন্য কেউ নয়। অতএব পিতার অপরাধের জন্য সন্তান দায়ী নয়। অনুরূপভাবে সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাও দায়ী নন’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৭১৯)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَرْجِعُوْا بَعْدِيْ كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ، وَلَا يُؤْخَذُ الرَّجُلُ بِجَرِيْرَةِ أَبِيْهِ وَلَا بِجَرِيْرَةِ أَخِيْهِ.

‘‘আমার ইন্তিকালের পর তোমরা কাফির হয়ে যেও না। পরস্পর হত্যাকান্ড করো না। কাউকে তার পিতা বা ভাইয়ের দোষে পাকড়াও করা যাবে না’’। (নাসায়ী ৪১২৯)

 ১৮৬. কোন গুনাহ্’র কাজে মানত করে তা পুরা করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন গুনাহ্’র কাজে মানত করে তা পুরা করা হারাম। তবে এ ক্ষেত্রে তাকে কসমের কাফ্ফারা দিতে হবে।

‘আয়েশা(রাঃ)(রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ نَذَرَ أَنْ يُّطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَ اللهَ فَلَا يَعْصِهِ.

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্য (ইবাদাত) করবে বলে মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে তথা মানত পুরা করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যতা তথা গুনাহ্’র কাজ করবে বলে মানত করেছে সে যেন তাঁর অবাধ্য না হয় তথা মানত পুরা না কওে’’।

(আবূ দাউদ ৩২৮৯; তিরমিযী ১৫২৬; ইব্নু মাজাহ্ ২১৫৬)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) আরো বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا نَذْرَ فِيْ مَعْصِيَةٍ ؛ وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِيْنٍ.

‘‘কোন গুনাহ্’র ব্যাপারে মানত করা চলবে না। তবে কেউ অজ্ঞতাবশত: এ জাতীয় মানত করে ফেললে উহার কাফ্ফারা কসমের কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হবে’’। (আবূ দাউদ ৩২৯০, ৩২৯২; তিরমিযী ১৫২৪, ১৫২৫; ইব্নু মাজাহ্ ২১৫৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

النَّذْرُ نَذْرَانِ : فَمَا كَانَ لِلهِ فَكَفَّارَتُهُ الْوَفَاءُ، وَمَا كَانَ لِلشَّيْطَانِ فَلَا وَفَاءَ فِيْهِ، وَعَلَيْهِ كَفَّارَةُ يَمِيْنٍ.

‘‘মানত দু’ প্রকার। তার মধ্যে যা হবে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই জন্য তার কাফ্ফারা হবে শুধু তা পুরা করা। আর যা হবে শয়তানের জন্য তথা শরীয়ত বিরোধী তা কখনোই পুরা করতে হবে না। তবে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কসমের কাফ্ফারা দিতে হবে’’।

(ইব্নুল জারূদ্/মুন্তাক্বা, হাদীস ৯৩৫ বায়হাক্বী ১০/৭২)

সুতরাং কেউ যদি তার কোন আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে বলে মানত করে কিংবা কোন ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দিবে বলে মানত করে অথবা কোন হারাম কাজ করবে বলে মানত করে তা হলে সে এ জাতীয় মানত পুরা করবে না। বরং সে কসমের কাফ্ফারা তথা দশ জন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে অথবা তাদেরকে কাপড় কিনে দিবে। আর তা অসম্ভব হলে তিনটি রোযা রাখবে।

 ১৮৭. কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর দেখা এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা হারাম। আর কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা তো অবশ্যই হারাম তা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সতর বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মানব শরীরের যে অঙ্গ দেখা অন্যের জন্য হারাম উহাকেই বুঝানো হয়।

বিশুদ্ধ মতে কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর হাত, পা, ঘাড় ও মাথা ছাড়া তার বাকি অংশটুকু তথা গলা বা ঘাড় থেকে হাঁটু পর্যন্ত। অনুরূপভাবে কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন বেগানা মহিলার পুরো শরীরটিই সতর। তবে কোন পুরুষের জন্য তার কোন মাহ্রাম (যাকে চিরতরে বিবাহ্ করা তার জন্য হারাম) মহিলার সতর ততটুকুই যতটুকু কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর।

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ، وَلَا الـْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ، وَلَا يُفْضِيْ الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِيْ ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَلَا تُفْضِيْ الـْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِيْ الثَّوْبِ الْوَاحِدِ.

‘‘কোন পুরুষ অন্য কোন পুরুষের সতরের দিকে একেবারেই তাকাবে না এবং কোন মহিলা অন্য কোন মহিলার সতরের দিকে একেবারেই তাকাবে না। তেমনিভাবে কোন পুরুষ অন্য কোন পুরুষের সাথে একই কাপড়ের নিচে অবস্থান করবে না এবং কোন মহিলা অন্য কোন মহিলার সাথে একই কাপড়ের নিচে অবস্থান করবে না’’। (মুসলিম ৩৩৮)

 ১৮৮. কোন মুহ্রিমের জন্য বিবাহ্ করা ও বিবাহ্’র প্রস্তাব দেয়া

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মুহ্রিমের জন্য বিবাহ্ করা ও বিবাহ্’র প্রস্তাব দেয়া হারাম। মুহ্রিম বলতে যে ব্যক্তি হজ্জ বা ’উমরাহ্ করার জন্য মিক্বাত থেকে দু’টি সাদা কাপড় পরে ইহ্রাম বেঁধেছে তাকেই বুঝানো হয়।

’উস্মান বিন্ ‘আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَنْكِحُ الْمُحْرِمُ وَلَا يُنْكَحُ وَلَا يَخْطُبُ.

‘‘কোন মুহ্রিম ই’হরাম অবস্থায় বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না এবং তাকে কেউ বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধও করাবে না। এমনকি এমতাবস্থায় সে কাউকে বিবাহ্’র প্রস্তাবও দিবে না’’। (মুসলিম ১৪০৯)

 ১৮৯. বাম হাতে খাওয়া, সহজে হাত বের করা যায় না অথবা অসতর্কতাবস্থায় লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এমনভাবে কাপড় পরিধান করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

বাম হাতে খাওয়া, সহজে হাত বের করা যায় না অথবা অসতর্কতাবস্থায় লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এমনভাবে কাপড় পরিধান করা হারাম।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ أَنْ يَّأْكُلَ الرَّجُلُ بِشِمَالِهِ، أَوْ يَمْشِيَ فِيْ نَعْلٍ وَاحِدَةٍ، وَأَنْ يَشْتَمِلَ الصَّمَّاءَ، وَأَنْ يَجْتَبِيَ فِيْ ثَوْبٍ وَاحِدٍ كَاشِفًا عَنْ فَرْجِهِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন বাম হাতে খেতে, একটিমাত্র জুতো পরে হাঁটতে, সহজে হাত বের করা যায় না অথবা লজ্জাস্থান খুলে যায় এমনভাবে কাপড় পরতে’’। (মুসলিম ২০৯৯)

 ১৯০. একটু কমবেশি করে সোনার পরিবর্তে সোনা অথবা রুপার পরিবর্তে রুপা বিক্রি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

একটু কমবেশি করে সোনার পরিবর্তে সোনা অথবা রুপার পরিবর্তে রুপা বিক্রি করা হারাম।

আবূ বাকরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَبِيْعُوْا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ إِلاَّ سَوَاءً بِسَوَاءٍ، وَالْفِضَّـةَ بِالْفِضَّـةِ سَوَاءً بِسَوَاءٍ، وَبِيْعُوْا الذَّهَبَ بِالْفِضَّـةِ وَالْفِضَّـةَ بِالذَّهَبِ كَيْفَ شِئْتُمْ.

‘‘তোমরা সোনাকে সোনার পরিবর্তে কোন রকম কমবেশি করা ছাড়া সমান পরিমাণে বিক্রি করবে এবং রুপাকে রুপার পরিবর্তে কোন রকম কমবেশি করা ছাড়া সমান পরিমাণে বিক্রি করবে। তবে সোনাকে রুপার পরিবর্তে এবং রুপাকে সোনার পরিবর্তে যাচ্ছে তাই বিক্রি করতে পারো’’। (বুখারী ২১৭৫, ২১৮২; মুসলিম ১৫৯০)

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَبِيْعُـوْا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ إِلاَّ مِثْلًا بِمِثْلٍ، وَلَا تُشِفُّـوْا بَعْضَهَا عَلَى بَعْـضٍ، وَلَا تَبِيْعُـوْا الْوَرِقَ بِالْوَرِقِ إِلاَّ مِثْلًا بِمِثْلٍ، وَلَا تُشِفُّـوْا بَعْضَهَا عَلَى بَعْـضٍ، وَلَا تَبِيْعُوْا مِنْهَا غَائِبًا بِنَاجِزٍ.

‘‘তোমরা সোনাকে সোনার পরিবর্তে সমান পরিমাণে বিক্রি করবে; তাতে কোন রকম কমবেশি করো না এবং রুপাকে রুপার পরিবর্তে সমান পরিমাণে বিক্রি করবে; তাতে কোন রকম কমবেশি করো না। তবে এর মধ্যে কোনটা অনুপস্থিত থাকলে উপস্থিতের পরিবর্তে তা বিক্রি করবে না। অর্থাৎ এ সকল ক্ষেত্রে উভয় পণ্যই সাথে সাথে হস্তান্তর করতে হবে। বাকিতে বিক্রি করা যাবে না’’। (বুখারী ২১৭৭; মুসলিম ১৫৮৪)

 ১৯১. সোনাকে রুপার পরিবর্তে অথবা রুপাকে সোনার পরিবর্তে বাকি বিক্রি করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

সোনাকে রুপার পরিবর্তে অথবা রুপাকে সোনার পরিবর্তে বাকি বিক্রি করা হারাম।

আবুল-মিন্হাল (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমার এক অংশীদার কিছু রুপা হজ্জ মৌসুম পর্যন্ত বাকিতে বিক্রি করে আমাকে তা জানালে আমি তাকে বললাম: কাজটি তো ঠিক করোনি। তখন সে বললো: আমি তো কাজটি বাজারেই করেছি। আমাকে তো কেউ উক্ত কাজে বাধাই দিলো না। অতঃপর আমি ব্যাপারটি বারা’ বিন্ ‘আযিব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসলেন তখনো আমরা এ জাতীয় বেচাবিক্রি করতাম। অতঃপর তিনি একদা বললেন:

مَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ فَلَا بَأْسَ بِهِ، وَمَا كَانَ نِسِيْئَةً فَهُوَ رِبًا.

‘‘তা নগদ বা হাতে হাতে হলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। তবে বাকিতে হলে তাতে সুদ হবে’’। (মুসলিম ১৫৮৯)

এরপরও বারা’ (রাঃ) আমাকে বললেন: তুমি যায়েদ বিন্ আরক্বামের নিকট যাও। কারণ, তিনি হচ্ছেন আমার চাইতেও বড়ো ব্যবসায়ী। তাই তিনি এ ব্যাপারে অবশ্যই সঠিক জানবেন। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও একই কথা বললেন।

বারা’ বিন্ ‘আযিব ও যায়েদ বিন্ আরক্বাম (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

 عَنْ بَيْعِ الذَّهَبِ بِالْوَرِقِ أَوِ الْوَرِقِ بِالذَّهَبِ دَيْنًا.نَهَى رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপার পরিবর্তে সোনা এবং সোনার পরিবর্তে রুপা বাকিতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’’। (বুখারী ২১৮০, ২১৮১; মুসলিম ১৫৮৯)

 ১৯২. কোন মুহ্রিমের জন্য ইহ্রামরত থাকাবস্থায় কোন পশু শিকার করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

কোন মুহ্রিমের (যে ব্যক্তি হজ্জ বা ’উমরাহ্ করার জন্য মিক্বাত থেকে দু’টি সাদা কাপড় পরেছে) জন্য ইহ্রামরত থাকাবস্থায় কোন পশু শিকার করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَقْتُلُوْا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ، وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ، يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِيْنَ أَوْ عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوْقَ وَبَالَ أَمْرِهِ، عَفَا اللهُ عَمَّا سَلَفَ، وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللهُ مِنْهُ، وَاللهُ عَزِيْزٌ ذُوْ انْتِقَامٍ».

‘‘হে ঈমানদারগণ তোমরা ইহ্রামরত থাকাবস্থায় কোন বন্য পশুকে হত্যা করো না। যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক এ জাতীয় পশুকে হত্যা করলো তাকে অবশ্যই হত্যাকৃত পশুর সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে এ ব্যাপারে দু’ জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিই ফায়সালা করে দিবে। তা হাদিও (হজ্জ সংশ্লিষ্ট কোরবানীর পশু) হতে পারে যা যবাইয়ের জন্য কা’বায় পৌঁছিয়ে দেয়া হবে অথবা কাফ্ফারা স্বরূপ খাদ্যদ্রব্যও হতে পারে যা মক্কার মিসকিনদেরকে খাওয়ানো হবে কিংবা এর সমপরিমাণ রোযা রেখে দিবে। তা এ জন্যই করা হলো যাতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করতে পারে। যা (গুনাহ্) অতীত হয়ে গেছে আল্লাহ্ তা‘আলা তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবে যে ব্যক্তি আবারো এমন কর্ম করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার থেকে সত্যিই প্রতিশোধ নিবেন। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তো পরাক্রমশালী প্রতিশোধ গ্রহণকারী’’। (মা’য়িদাহ্ : ৯৫)

তবে কোন মুহ্রিম ব্যক্তি এমতাবস্থায় মানুষের জন্য কষ্টদায়ক পাঁচটি প্রাণীর যে কোনটি হত্যা করলে তাকে এর পরিবর্তে কোন কিছুই দিতে হবে না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

خَمْسٌ مِنَ الدَّوَابِّ مَنْ قَتَلَهُنَّ وَهُوَ مُحْرِمٌ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ : الْعَقْرَبُ وَالْفَأْرَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُوْرُ وَالْغُرَابُ وَالْحِدَأَةُ.

‘‘পাঁচ জাতীয় প্রাণীকে কেউ ইহরামরত অবস্থায় হত্যা করলে তাতে কোন অসুবিধে নেই: বিচ্ছু, ইঁদুর, আক্রমণাত্মক কুকুর, কাক ও চিল’’। (বুখারী ১৮২৬, ৩৩১৫; মুসলিম ১১৯৯)

 ১৯৩. স্বামীর মৃত্যুর পর কোন মহিলাকে তার মৃত স্বামীর কোন আত্মীয়ের নিকট বিবাহ্ বসতে বাধ্য করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

স্বামীর মৃত্যুর পর কোন মহিলাকে তার মৃত স্বামীর কোন আত্মীয়ের নিকট বিবাহ্ বসতে বাধ্য করা হারাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوْا النِّسَآءَ كَرْهًا، وَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ».

‘‘হে ঈমানদারগণ এটা তোমাদের জন্য হালাল হবে না যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে যাবে এবং তোমরা তাদেরকে প্রতিরোধ করো না’’। (নিসা’ : ১৯)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: জাহিলী যুগে কেউ মারা গেলে তার ওয়ারিশ্রা তার স্ত্রীর মালিক হয়ে যেতো। তখন বিবাহ্’র ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার নিজের উপর তার কোন কর্তৃত্ব থাকতো না। ওয়ারিশ্দের কেউ চাইলে তাকে নিজেই বিবাহ্ করে নিতো অথবা তাদের খেয়ালখুশি মতো কারোর নিকট উক্ত মহিলাকে বিবাহ্ দিয়ে দিতো। নয়তো বা তাকে এভাবেই রেখে দিতো। কারোর নিকট তাকে বিবাহ্ও দিতো না। তখন উক্ত আয়াতটি তাদের ব্যাপারেই নাযিল হয়। (আবূ দাউদ ২০৮৯)

১৯৪. পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে বিবাহ্ করা

 শেয়ার ও অন্যান্য 

পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে তথা সতাই মাকে বিবাহ্ করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تَنْكِحُوْا مَا نَكَحَ أَبَآؤُكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ إِلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ، إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَّمَقْتًا، وَسَآءَ سَبِيْلًا».

‘‘তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করো না। তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা’’। (নিসা’ : ২২)

বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমার চাচার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার হাতে ছিলো একখানা ঝান্ডা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন:

 إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ اِمْرَأَةَ أَبِيْهِ ؛ فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ، وَآخُذَ مَالَهُ.بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ 

‘‘আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে’’। (আবূ দাউদ ৪৪৫৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৫৬)

হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের সকলকে উক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্সমূহ থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন। আ’মীন সুম্মা আ’মীন।


No comments:

Post a Comment

Translate