Saturday, July 19, 2025

স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দুনিয়ার সর্বোত্তম নারী-পুরুষ কারা

 প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দুনিয়ার সর্বোত্তম নারী-পুরুষ কারা, যাদেরকে রাসূল (ﷺ) নির্বাচন করতে বলেছেন?

▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:(الدنيا متاع، وخير متاعها المرأة الصالحة) ‘‘দুনিয়া এক উপভোগ্য সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’(সহীহ মুসলিম হা/১৪৬৭, নাসায়ী হা/ ৩২৩২, ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৫, মুসনাদে আহমাদ হা/৬৫৩১)
.
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
فقوله صلى الله عليه وسلم : ((الدنيا متاع)) يعني شيء يتمتع به، كما يتمتع المسافر بزاده ثم ينتهي، وخير متاعها المرأة الصالحة؛ إذا وفق الإنسان لامرأة صالحة في دينها وعقلها فهذا خير متاع الدنيا؛ لأنها تحفظه في سره وماله وولده. وإذا كانت صالحة في العقل أيضاً، فإنها تدبر له التدبير الحسن في بيته وفي تربية أولادها، إن نظر إليها سرته، وإن غاب عنها حفظته، وإن وكل إليها لم تخنه، فهذه المرأة هي خير متاع الدنيا.ولهذا قال النبي صلى الله عليه وسلم : (تنكح المرأة لأربع : لمالها، وحسبها، وجمالها، ودينها، فاظفر بذات الدين تربت يداك) (90)، يعني عليك بها، فإنها خير من يتزوجه الإنسان؛ فذات الدين وإن كانت غير جميلة الصورة، لكن يجملها خلقها ودينها، فاظفر بذات الدين تربت يداك.
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বাণী “দুনিয়া উপভোগের বস্তু” অর্থাৎ এটা এমন কিছু, যা মানুষ সাময়িকভাবে উপভোগ করে যেমন একজন মুসাফির তার সফরের রসদ ব্যবহার করে, অতঃপর তা শেষ হয়ে যায়। আর দুনিয়ার উত্তম উপভোগ হচ্ছে একজন সৎ-ধর্মপরায়ণা স্ত্রী। যদি কোনো মানুষকে এমন একজন স্ত্রী দান করা হয়, যে দ্বীনের দিক দিয়ে সৎ এবং বুদ্ধিবৃত্তির দিক দিয়েও পরিপক্ব তাহলে এটাই হচ্ছে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ। কারণ সে তার স্বামীকে তার গোপন বিষয়, সম্পদ এবং সন্তানদের ব্যাপারে নিরাপত্তা প্রদান করে। আর যদি সে বুদ্ধিমতীও হয়,তাহলে সে তার স্বামীর ঘরের ব্যবস্থা সুন্দরভাবে পরিচালনা করে এবং সন্তান প্রতিপালনে উত্তম ব্যবস্থাপনার পরিচয় দেয়। যখন স্বামী তার দিকে তাকায়, তখন সে তাকে আনন্দ দেয়; যখন সে (স্বামীর) অনুপস্থিত থাকে,তখন তার অনুপস্থিতিতেও সে তাকে হেফাজত করে; আর যখন কোনো দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করা হয়, সে তাতে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। এই ধরনের নারীই হচ্ছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে (সাধারণত) মেয়েদের বিয়ে করা হয়- কন্যার ধন-সম্পদের কারণে, তার বংশীয় আভিজাত্যের কারণে, তার রূপ-গুনের কারণে এবং তার দীনদারীর কারনে। তুমি ধার্মিকাকে পেয়ে ভাগ্যবান হও, (যদি এটা না কর তবে) তোমার দু’হাত ধূলিমাখা হোক”(সহীহুল বুখারী হা/ ৫০৯০,সহীহ মুসলিম হা/১৪৬৬) অর্থাৎ ধর্মপরায়ণ নারীকেই বিয়ে করো। কেননা,তিনিই প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের জন্য উত্তম জীবনসঙ্গিনী। এমনকি যদি তার চেহারার সৌন্দর্য নাও থাকে, তবুও তার চরিত্র ও দ্বীনদারিতা তাকে সত্যিকারের সুন্দর করে তোলে। সুতরাং  তুমি ধার্মিক নারীকেই বিয়ে করো তবেই তুমি সফল হবে। নচেৎ তোমার হাত ধূলিমাখা হোক।”(ইবনু উসাইমীন; শারহু রিয়াদিস সালিহিন; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৩৬)
.
জেনে রাখা জরুরি যে, ইসলাম যেমন একজন ধার্মিক, পরহেজগার ও দ্বীনদার স্ত্রীকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে, তেমনি একজন পুরুষকেও আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে।ইসলাম স্বামীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করে, সহনশীলতা ও মহত্ত্বের সাথে জীবনযাপন করে। দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখাই ইসলামের শিক্ষা।  ইসলাম এই বাস্তব সত্যও তুলে ধরেছে যে, যেমন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য রয়েছে, তেমনি স্ত্রীর প্রতিও স্বামীর রয়েছে নির্ধারিত অধিকার।তবে স্বামীর মর্যাদা উপরে। যেহেতু খরচের দায়িত্ব স্বামীর এবং পারিবারিক বিষয়াদির দায়িত্বও স্বামীর। ইসলাম ঘোষণা করেছে, সর্বোত্তম মুসলিম হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে আচার-আচরণে উত্তম। স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার সম্পদ গ্রহণ করাকে নিষিদ্ধ করেছে। এ বিষয়ক দলিল হচ্ছে, আল্লাহ্‌র বাণী: “তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর”(সূরা নিসা, আয়াত: ১৯) আল্লাহ্‌র বাণী:“আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ্‌ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”(সূরা নিসা, আয়াত: ২২৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে ওসিয়ত গ্রহণ কর।”(সহিহ বুখারী হা/৩৩৩১; সহিহ মুসলিম হা/১৪৬৮) অপর বর্ননায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।”(সুনানে তিরমিযি হা/৩৮৯৫; ইবনে মাজাহ হা/১৯৭৭; ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬
✍️জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate