Sunday, May 19, 2024

তুহিন নামের ব্যাপারে বিভ্রান্তি নিরসন

 প্রশ্ন: তুহিন নামের অর্থ কী? অনেক হুজুর বলে যে, এটি আরবি ‘তাওহীন’ শব্দ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘তুহিন’ হয়েছে। যার অর্থ: অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়া। এ কথা কি সঠিক? ইসলামের দৃষ্টিতে এ নাম কি রাখা জায়েজ।

উত্তর: আমাদের দেশে তুহিন নামটি ছেলেদের নাম হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। তাই আমাদের জানা দরকার এ নামটি মুসলিমদের নামের ক্ষেত্রে ব্যবহারে কোনও সমস্যা আছে কি না বা অর্থগত ভাবে তাতে কোনও আপত্তি আছে কি না।

তুহিন Tuhin শব্দের ব্যাপারে বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে, এটি মূলত: সংস্কৃত শব্দ [√তুহ্‌+ইন]। সংস্কৃত থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছেন। অর্থাৎ এটি এখন তৎসম শব্দ।

এই শব্দের অর্থ হলো: (বিশেষ্য পদ) বরফ; তুষার; হিম। (বিশেষণ পদ) অত্যন্ত শীতল; তুষারের ন্যায় অতিশয় শীতল বা বরফের মত অত্যন্ত ঠাণ্ডা। যেমন: শীতের তুহিন রাত্রি, তিব্বতের তুহিন প্রান্তরে। এখান থেকে হিমালয় পর্বতকে বলা হয়, তুহিনাদ্রি বা তুহিনাচল ।
[দেখুন: বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (পরিমার্জিত সংস্করণ), উইকি সংকলন-বিশ্বকোষ দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১১১ (অনলাইন সংস্করণ), Bengali definition, English & Bengali Online Dictionary & Grammar ইত্যাদি]

এটি আরবি ‘তাওহীন’ (توهين) শব্দের পরিবর্তিত রূপ নয়। অর্থাৎ এর সাথে আরবির কোনও সম্পর্ক নেই। আরবিতে লিখলে তার বানান হবে, ْتُهِيْن

সুতরাং শরিয়তের দৃষ্টিতে তুহিন নাম রাখতে কোনও সমস্যা নেই। কারণ অর্থগতভাবে এতে শরিয়ত বিরোধী কিছু নেই। যারা বলে যে, এটি আরবি তাওহীন (توهين) শব্দের পরিবর্তিত রূপ তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, কিছু মানুষ বাংলা ও আরবি ভাষা এবং ইসলাম বিষয়ে খুব সামান্য জ্ঞান নিয়ে অযথা মানুষের মাঝে সংশয় ও বিতর্ক সৃষ্টি করে-যা দুঃখ জনক। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

তবে আমরা বলব, মুসলিমদের নামের ক্ষেত্রে শুধু বাংলা শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে সুন্দর অর্থবোধক আরবি নাম হওয়া উত্তম। যেন নাম শুনেই মুসলিম হিসেবে প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া যায়। একজন মুসলিম শিশুর নাম শুধু বাংলা শব্দ দ্বারা রাখা উচিৎ নয়। (যেটা বর্তমানে অনেকেই করছে)। কারণ বাংলা নাম থেকে কারও ব্যাপারে অনুমান করা যায় না, সে কি মুসলিম নাকি অমুসলিম। অথচ এই প্রাথমিক পরিচয়টুকু জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

সংসার ভাঙ্গার মূল কারণগুলো কী কী এবং স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে একজন স্ত্রীর কী করা উচিত

 প্রশ্ন: সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ গুলো কী কী? সংসার ভাঙ্গার একমাত্র করণ কি স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়া? কারণ আমার স্বামী বলেন যে, “নারীদের সংসার ভাঙতো না যদি তারা পুরুষদেরকে বাইরে পরকীয়া করতে না দিয়ে একাধিক বিয়ে করতে দিত।”

আমি ইসলাম পালনে নতুন। তাই স্পষ্টভাবে এসব জানি না। আমার স্বামীর এ কথা কি ইসলামের আলোকে সঠিক?

আরেকটি প্রশ্ন হল, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে একজন স্ত্রীর কী করা উচিত?
উত্তর: নিম্নে আপনার দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

১. আপনার স্বামীর উক্ত কথাটি পরিপূর্ণ সঠিক নয়। অর্থাৎ স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়াই সংসার ভাঙ্গার একমাত্র কারণ নয়। তবে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ।

নিম্নে সংসার ভঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করা হলো:

মূলত সংসার ভঙ্গের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। কখনো স্বামীর কারণে, কখনো স্ত্রীর কারণে আবার কখনো উভয়ের কারণে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।

☄️ ক. স্বামীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:

অনেক সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্ত্রীকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার প্রতি শারীরিক বা মানসিক জুলুম-নির্যাতন করা, তার প্রাপ্য হক আদায় না করা, তার সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাস ঘাতকতা করা, পরকীয়ায় লিপ্ত থাকা, শারীরিক অক্ষমতা, মাদকাসক্তি ও নেশা গ্রহণ, এমন কোনও বদ অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যা থাকা যা স্ত্রী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। ইত্যাদি নানা কারণে সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে।

☄️ খ. স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:

অনেক সময় স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী বা তার পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্বামীর আনুগত্য হীনতা, বিলাসিতা ও উচ্চমাত্রায় ভোগের মনোভাব, অ সহিষ্ণু আচরণ, ঝগড়া-ঝাটি করা, পরকীয়ার সম্পর্ক থাকা ইত্যাদি কারণে সংসার ভাঙ্গে।
আবার অনেক মেয়ে বিয়ের আগে মনের মধ্যে স্বামী সম্পর্কে আকাশ-কুসুম কল্পনা করে কিন্তু বাস্তবে তেমন না পেলে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। এতেও অনেক সময় সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে। তার মধ্যে জটিল কোন রোগ-ব্যাধিও সংসার ভাঙ্গার কারণ হয়। আবার স্বামীর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধা দেওয়াও সংসার ভাঙ্গার অন্যতম কারণ হতে পারে।

☄️ গ. উভয়ের পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:

স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকেও কিছু কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে। যেমন: বিয়ের পর সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া বা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ না থাকা, (অবশ্য এর পেছনেও উপরোক্ত কিছু কারণ দায়ী।) কোনোভাবেই মন-মানসিকতার দিক থেকে তাদের মাঝে মিলমিশ না হওয়া, ধৈর্য হীনতা, অতিরিক্ত রাগ, দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেওয়া, রূপ-সৌন্দর্য, স্মার্টনেস, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি কারণে অহংকার করা ইত্যাদি।
এ ছাড়াও স্বামী কিংবা স্ত্রী যদি এমন সব পাপাচারে লিপ্ত হয় যাতে তাদের উপর থেকে আল্লাহর রহমত ও বরকত উঠে যায়, তাদের মাঝে শয়তান অনুপ্রবেশ করে এবং আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা। যা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙ্গা পর্যন্ত গড়ায়। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।

▪️২. স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে শরিয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রীর করণীয় কী?

কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ের ইচ্ছে করে বা তার একাধিক বিয়ে করা তার জন্য প্রয়োজনীয় হয় তাহলে কোন স্ত্রীর জন্য তাতে বাধা দেওয়া বা এ ক্ষেত্রে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া বা শারীরিক-মানসিক ইত্যাদি কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ এই অধিকার স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تُقۡسِطُواْ فِي ٱلۡيَتَٰمَىٰ فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُواْ

“তাহলে তোমরা নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার বিয়ে করো। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।” [সূরা নিসা: ৩]

সুতরাং এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া আল্লাহ প্রদত্ত অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল-যা মারাত্মক অন্যায়।
তবে হ্যাঁ, একাধিক বিয়ের জন্য পুরুষের শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকা এবং স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করার শর্তারোপ করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তি যদি এই শর্ত পালন করতে সক্ষম হবে না বলে মনে করে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা হারাম।

স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে স্ত্রী এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারণ করবে। কোনভাবেই ধৈর্যধারণ সম্ভব না হলে সে খোলা তালাকের মাধ্যমে সংসার ত্যাগ করবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই কারণে স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা বা তাকে কোনভাবেই কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। কারণ ইসলামে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া গালাগালি করা হারাম ও কাবিরা গুনাহ। আর তা যদি হয় স্বামীর সাথে তাহলে তা আরও বেশি গর্হিত কাজ। কারণ মহান আল্লাহ স্বামীকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا

“পুরুষরা নারীদের কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাজতে তারা হেফাজত করে। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর । যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না । নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” [সূরা নিসা: ৩৪]

হাদিসে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদার অনুমতি দেওয়া হত তাহলে স্ত্রীদেরকে আদেশ করা হতো তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে।

এ বিষয়ে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।

মোটকথা, একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ করার পাশাপাশি তার প্রতি কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অনুরূপভাবে একজন স্ত্রীর জন্য (বৈধ বিষয়ে এবং সামর্থ্যের মধ্যে) তার স্বামীর আনুগত্যের পাশাপাশি তার প্রতিও কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রী যদি তার সঙ্গীর সাথে সদাচারণের পাশাপাশি একে অপরের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নির্দেশিত দায়িত্ব-কর্তব্য ও হকগুলো সঠিক আদায় করে তাহলে সংসার ভাঙ্গার পরিমাণ খুবই কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ আমাদের দাম্পত্যগুলোকে মধুময় করে দিন এবং স্বামী-স্ত্রীকে সব ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

জাহান্নামের উপত্যকার নাম ও সংখ্যা

 প্রশ্ন: জাহান্নামের তিনটি উপত্যকা সম্পর্কে রেফারেন্স সহ জানতে চাই।

উত্তর: জাহান্নামের উপত্যকার নাম ও সংখ্যা সংক্রান্ত কোনও হাদিস সহিহ নয়। বরং সবগুলোই জইফ বা দুর্বল। এ সকল জইফ (দুর্বল) হাদিসে জাহান্নামের তিনটি উপত্যকার নাম পাওয়া যায়। সেগুলা হল, হাবহাব, ওয়েল, জুব্বুল হাযান। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত তাই কুরআন ও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হাদিস ব্যতিরেকে এ বিষয়ে কথা বলা সঙ্গত নয়।

নিম্নে উক্ত তিনটি উপত্যকা প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদিস এবং সেগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের অভিমত উল্লেখ করা হলো:

◈ ১ম: হাবহাব

إنَّ في جهنَّمَ واديًا يُقالُ له: هَبْهَبٌ، حقًّا على اللهِ أنْ يُسكِنَه كلَّ جبَّارٍ

“জাহান্নামের একটি উপত্যকা রয়েছে তাকে বলা হয়, হাবহাব। আল্লাহর কর্তব্য হচ্ছে এই যে, তিনি তাতে প্রত্যেক একগুঁয়ে অত্যাচারী শাসককে সেখানে স্থান দিবেন।”

[হাদীসটি উকায়লী “আযযুয়াফা” গ্রন্থে (৪৯), ইবনে লাল তার “হাদীস” গ্রন্থে (১/১২৩), ইবনে আদী “আল-কামেল” গ্রন্থে (১/৪২০), হাকিম (৪/৫৯৬), ইবনে আসাকির (৫/৫৮/১), আবু ইয়ালা ও ত্ববারানী আযহার ইবনে সিনান সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনে আসে’ হতে, তিনি আবু বুরদাহ ইবনে আবু মুসা হতে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

❂ এ হাদিসটি জইফ (দুর্বল)। [সিলসিলা যাইফা, হা/১১৮১-আলবানি]

➧ হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে হাদিসটি জইফ হওয়ার কারণ নিম্নরূপ:

هو حديث ضعيف، فمداره على أزهر بن سنان القرشي ، وهو ضعيف
قال ابن معين في “ميزان الاعتدال” (1/ 172) : ” ليس بشيء “.
وَقَال أبو جعفر العقيلي: ” في حديثه وهم “. وينظر: “تهذيب الكمال” (2/ 327).
وقال أبو داود: ” ليس بشيء ” . “الجامع في الجرح والتعديل” (1/ 56).
وقال الهيثمي في “مجمع الزوائد” (10 /396) : فيه أزهر بن سنان وهو ضعيف.‏‏
وقد ضعف الحديث الألباني في “السلسلة الضعيفة” (1181)
——————-
◈ ২য়: জুব্বুল হাযান

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏”‏ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جُبِّ الْحُزْنِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا جُبُّ الْحُزْنِ قَالَ ‏”‏ وَادٍ فِي جَهَنَّمَ تَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ ‏”‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَدْخُلُهُ قَالَ ‏”‏ الْقُرَّاءُ الْمُرَاءُونَ بِأَعْمَالِهِمْ ‏”‏

“তোমরা জুবুল হাযান হতে আল্লাহ তাআলার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, জুব্বুল হাযান কী?
তিনি বললেন, তা জাহান্নামের মধ্যকার একটি উপত্যকা-যা থেকে স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক শতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে।
প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রসুল, তাতে কে প্রবেশ করবে?
তিনি বললেন, যেসব কুরআন পাঠক লোক দেখানো আমল করে।”
[তিরমিজি, হা/২৩৮৩, ইবনে মাজাহ, হা/২৫৬]

❂ এ হাদিসটিও জইফ (দুর্বল)। [যইফুল জামে, হা/২৪৬০-আলবানি]

➧ হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে হাদিসটি জইফ হওয়ার কারণ নিম্নরূপ:

هو حديث ضعيف ، فيه عمار بن سيف الضبي ، متروك الحديث
قال البخارى : لا يتابع ، منكر الحديث ، ذاهب . وقال الدارقطنى : كوفى متروك .
وينظر : “تهذيب التهذيب” (7 / 403).
كما فيه أبو معان أو أبو معاذ البصري، قال الحافظ ابن حجر في “التقريب” (8375): مجهول.
وضعف الحديث الألباني في “ضعيف الجامع” (2460).
—————–
◈ ৩য়: ওয়াইল

আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الْوَيْلُ وَادٍ فِي جَهَنَّمَ يَهْوِي فِيهِ الْكَافِرُ أَرْبَعِينَ خَرِيفًا قَبْلَ أَنْ يَبْلُغَ قَعْرَهُ

“ওয়াইল হল, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। এর তলদেশে পৌঁছার আগ পর্যন্ত কাফির চল্লিশ বছর নীচের দিকে যেতে থাকবে।”

[তিরমিজি, হা/ ৩১৬৪ [আল মাদানি প্রকাশনী], তা’লীকুর রাগীব ৪/২২৯]

❂ এ হাদিসটিও জইফ (দুর্বল)। [ যইফ তিরমিজি, হা/৩১৬৪-শাইখ আলবানি]

➧ হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে হাদিসটি জইফ হওয়ার কারণ নিম্নরূপ:

أخرجه الحاكم في “المستدرك” عن أبي سعيد مرفوعًا (3873) وموقوفًا (3972)، وقال: هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه “. وقال الذهبي في “التلخيص”: صحيح .
والصواب: أنه حديث ضعيف مرفوعًا وموقوفًا ، فمداره على دراج أبي السمح، عن أبي الهيثم…
ودراج أبو السمح ؛ ضعفه أكثر المحدثين :
قال أبو حاتم : في حديثه ضعف .
و قال النسائى : ليس بالقوى . وقال في موضع آخر: منكر الحديث .
وقال الدارقطنى : ضعيف .
وقال في موضع آخر : متروك .
وحكى ابن عدى ، عن أحمد بن حنبل : أحاديث دراج ، عن أبى الهيثم ، عن أبى سعيد :
فيها ضعف .
وينظر: “تهذيب التهذيب” (3/ 209).
كما أن في إسناد أحمد والترمذي : ابن لهيعة ، وهو ضعيف الحديث، اختلط بأخرة.
ولذلك ضعفه الألباني في “ضعيف الترمذي” (3164)، وقال الأرناؤوط في “تخريج شرح السنة” (4409) : إسناده ضعيف.
তথ্যসূত্র: islamqa.info
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ইসলামের দৃষ্টিতে মা দিবস

 আল হামদুলিল্লাহ্ ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ আম্মা বাদ:

‘মা দিবস’ অর্থ: সারা দিন, দিনমান, অহোরাত্র। তাই মা দিবস অর্থ দাঁড়ায়, মার জন্য একটি পুরো দিন। অর্থাৎ বছরের এক দিন মায়ের জন্য নিবেদন করবেন। তাঁর সেবায় কাটাবেন। তাঁকে খুশী রাখবেন। সেই দিনটিতে তাঁর পাশে থাকবেন। বিভিন্ন কার্য-কলাপের মধ্য দিয়ে সেই দিনটি পালন করবেন। কিছু লোকের পরিভাষায় একেই বলা হচ্ছে মা দিবস। মায়ের জন্য এমন একটি দিন আবিষ্কারের পিছনে কারণ কি? তা খোঁজ করলে, জানা যায়, পৃথিবীতে মায়ের সন্তানাদি নাকি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের হাতে মায়ের সেবা করার মত ও মায়ের পাশে থাকার মত কোন সময় নেই। অবশ্য অন্য কিছুর জন্য তাদের যথেষ্ট সময় থাকে! তাই প্রয়োজন হয়েছে একটি দিবসের। কারণ বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে একটি দিনও যদি মায়ের জন্য নির্দিষ্ট না করা যায় তো, লোকেরা কী বলবে?! জগত কী ভাববে?! মায়ের সম্মানের কী হবে?! জননীর ঋণ শোধ হবে কী ভাবে?!

ইতিহাস:

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী‘একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সবিলে-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত এই উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।

প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরও একটি ছুটির দিন ছিল, সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত।

মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচার-অনুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রি*ষ্টা*নদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী একটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যম।’

মা দিবস যাদের জন্য কান্না দিবস:

এই দিবসের পিছনে ইতিহাস যাই থাক না কেন এর অভ্যন্তরে একটি করুণ রহস্য লুকাইত আছে, যা অনেকে আঁচ করে না আর অনেকে ভ্রুক্ষেপ দেয় না। তা হল, এই দিনে মাতৃহীন এতিম ভাই-বোনদের অবস্থা। যাদের মা আছে তারা এই দিনে যখন নিজ মাকে খুশী করবে এবং নিজেও আনন্দে মেতে থেকে দিনটি উদযাপন করবে তখন এতিমদের মনে কত বড় ব্যথার সঞ্চার হবে? মা হারানোর পুরোনো তিক্ত কষ্টকর অনুভূতি তাদের মনে কেমন প্রভাব ফেলবে? তারা কি পালন করবে সে দিন? প্রকৃতপক্ষে মাতৃহারারাই তো বেশী সহানুভূতির হকদার। তাই কল্পিত এই প্রথা যদিও এক দিকে ভাল মনে হয় কিন্তু অন্য দিকে তা দারুণ করুণও বটে। মা দিবস উদযাপনকারীরা যদি সত্যিকার অর্থে ন্যায়পরায়ণ হোন তবে সেই দিনেই প্রয়োজন আছে ‘অনাথ দিবস’ পালন করার। আজ মা দিবস আবিষ্কৃত হয়েছে বটে কিন্তু অনাথ দিবস আবিষ্কৃত হয় নি!

ইসলামের দৃষ্টিতে এই দিবস:

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলাম আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দেয়। তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সম্পর্কচ্ছেদ থেকে সতর্ক করে। তবে সদ্ব্যবহারের শ্রেষ্ঠতা মায়ের জন্য নিবেদন করে, মাকেই বেশী হকদার মনে করে এবং পিতা-মাতা সহ সকল আত্মীয়ের সাথে ধারাবাহিক অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কের আদেশ দেয়। তাই মায়ের সেবার জন্য কোন একদিন নির্দিষ্ট করা আর অন্য দিনে গুরুত্ব না দেয়া ইসলাম স্বীকার করে না। যেমন এটা মায়ের জন্য স্বীকার করে না। অনুরূপভাবে পিতা সহ অন্যান্য আত্মীয়দের সাথেও সমীচীন মনে করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:

و قضى ربّك ألا تعبدوا إلاّ إيّاه و بالوالدين إحسانا

“তোমার প্রতিপালক হুকুম জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” [সূরা ইসরা/২৩]

তিনি আরও বলেন:

وَ وَصّيْنا الإنسانَ بوالديهِ حملته أمّه وهْناً على وهنٍ و فصاله في عامينِ أن اشكر لي ولوالديك إليّ المصير

“মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, (নির্দেশ দিচ্ছি) যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।” [সূরা লোকমান/১৪]

মহান আল্লাহ আরও বলেন: “ক্ষমতা পেলে সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির করেন আর তাদের দৃষ্টি শক্তিকে করেন অন্ধ।” [সূরা মুহাম্মদ/২২-২৩]

একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন:

” من أحق الناس بحسن صحابتي؟ قال أمك، قال ثم من؟ قال: ثم أمك، قال: ثم من؟ قال: ثم أمك، قال: ثم من؟ قال ثم أبوك.”

“আমার ভাল ব্যবহারের সবচেয়ে বেশী হকদার কে? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমার মা। সে লোক বলল: তারপর? তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন: তোমার মা। সেই লোক বলল: অতঃপর? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার মা। অতঃপর তোমার পিতা।” [বুখারী, অধ্যায়,আ্দব,নং৫৯৭১]

তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

” لا يدخل الجنة قاطع” رواه البخاري

“আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [বুখারী, অধ্যায়, আদব,নং ৫৯৮৪]

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তায়ালা আত্মীয়তা-সম্পর্ককে সম্বোধন করে বলেন: “যে তোমাকে বহাল রাখে আমিও তার সাথে সম্পর্ক বহাল রাখব; আর যে তোমার হতে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলল, নিশ্চয়, হে আমার প্রভু। আল্লাহ বললেন, যাও, তোমার জন্য তাই করা হল।” [বুখারী, অধ্যায়,আদব,নং ৫৯৮৭]

উপরে বর্ণিত কুরআনের তিনটি আয়াত ও তিনটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং তাঁর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতা-মাতা উভয়ের সম্মান করা এবং তাঁরা দু জন সহ সকল আত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখা সর্বাবস্থায় জরুরী করেছেন এবং তা ছিন্ন করাকে বড় গুনাহ, আল্লাহর ক্রোধ তথা জাহান্নামে প্রবেশের কারণ করেছেন।

তাই বছরের ৩৬৪ দিনকে উপেক্ষা করে কেবল ১টি দিন মায়ের জন্য নির্ধারণ করা এবং পিতা সহ সকল আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক না রাখা বা অবহেলা করা এটা পাশ্চাত্যদের শোভা দেয় কোন মুসলিমকে নয়।

দিবসের পর দিবস, আর কত দিবস!

অন্ধ অনুকরণ একটি এমন বিষয়, যেখানে দলিল-প্রমাণ অচল হয়ে যায়, সত্য গ্রহণ করা ও সত্যের সন্ধান করার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়, কারণ সে অন্তরে তালা বদ্ধ করে রাখে। এটি একটি এমন কুঅভ্যাস, যা থেকে আমাদের নবী (সা:) আমাদের সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে ই*হু*দী ও খৃ*ষ্টা*নদের অনুকরণ হতে সাবধান করেছেন। তাঁর সেই ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হয়েছে। আমরা আজ কোন না কোন রূপে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছি, বিশেষ করে দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে। তারা মা দিবস পালন করে তাই আমরাও অনেকে এটা পালন করি। তারা বাবা দিবস পালন করে তাই আমরাও অনেকে তা পালন করি। ভাই দিবস পালন করে তাই আমরাও অনেকে পালন করি। বোন দিবস আবিষ্কার করেছে তাই আমরাও মানি। জন্ম দিবস পালন করে তাই আমরাও সানন্দে জন্ম দিবস পালন করি। ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করে তাই অনেকে তা পালন করি। জানি না, ভবিষ্যতে যখন কেউ আঙ্কেল দিবস, আন্টি দিবস, হাজবেন্ড দিবস, ওয়াইফ দিবস, সান দিবস, ডটার দিবস, গ্র্যান্ড ফাদার দিবস, গ্র্যান্ড মাদার দিবস, ফাদার ইন্ ল দিবস, মাদার ইন্ ল দিবস ইত্যাদি আবিষ্কার করবে, তখন হয়ত: সে সব দিবসও আমরা পালন করতে শুরু করবো। অতঃপর বছরের কোন একটি দিন দিবস ব্যতীত বাকি থাকবে না! তাই বলছিলাম আর কত দিবস!

নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لتتبعنّ سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه، قالوا يا رسول الله اليهود والنصارى؟ قال: فمن?

“তোমরা তোমাদের পূর্বের লোকদের প্রথা ধাপে ধাপে পূর্ণরূপে অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি শাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে তো তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কি ই*হু*দী-খৃ*ষ্টা*ন? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তারা ছাড়া আবার কারা? [বুখারী,নং ৩২৬৯,৬৮৮৯ মুসলিম, নং ২৬৬৯]

আমার মা আমার ভালবাসা:

আমরা যদি খেয়াল করি দেখব, ম ধ্বনীটি সবচেয়ে সহজ। হয়তবা এই কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায় মা অর্থবোধক শব্দে ম অক্ষরটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কারণ, মানুষ তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে সবচেয়ে সহজ ভাষায় ডাকতে পছন্দ করে।

তাই এবার দেখব বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ কে কি বলে। এটি একটি এমন শব্দ, যা বিশ্বের যতগুলি প্রসিদ্ধ জীবন্ত ভাষা রয়েছে প্রায় সব ভাষায়‘মা’ শব্দটির সাথে ‘ম’ অক্ষরটি বা‘ম’ এর ধ্বনি লক্ষ্য করা যায়। আমি কোন ভাষাবিদ নই। আর এটা স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নেই। তবে কয়েকটি ভাষার অভিধান ও কিছু ওয়েবসাইট থেকে যা অবগত হলাম তারই কিছু বর্ণনা করার চেষ্টা করছি মাত্র।

১- ইংরেজি ভাষায় বাংলা ‘মা’ এর শব্দ হল, মাদার। দেখা যাচ্ছে, ‘ম’ রয়েছে।

২- আরবী ভাষায় ‘মা’ এর শব্দ হল,‘উম্ম ‘ । দেখা যাচ্ছে, ম আছে।

৩- উর্দু ভাষায় ‘মা’ এর শব্দ হল, ‘ মাঁ ’। ম আছে।

৪- সংস্কৃত এবং হিন্দি ভাষায় ‘মা’ এর শব্দ হল, ‘ মাতা ’। ম আছে।

৫- রাশিয়ান ভাষায় বলা হয়, ‘মাতি ’। ম রয়েছে।

৬- গ্রীক ভাষায় বলা হয়, ‘মাতা’। ম আছে।

৭- হলেন্ডী ভাষায় বলা হয়, ‘মড্যের’। ম আছে।

৮- ফ্রান্সী ভাষায় বলা হয়, ‘ম্যারে’। ম আছে।

৯- জার্মানি ভাষায় বলা হয়, ‘মুতার’। ম আছে।

১০- ফার্সি ভাষায় বলা হয়, ‘ মাদার ’। ম আছে।

১১- ল্যাটিন ভাষায় বলা হয়, ‘ম্যটার’। ম আছে।

১২- রোমানিয়ায় বলা হয়, ‘মামা’। ম আছে।

১৩- ইস্পেনিস ভাষায় বলা হয়, ‘মাদ্র্’। ম আছে।

১৪- ইতালি ভাষায় বলা হয়, ‘ম্যড্র’। এখানেও ম আছে।

তবে কিছু ভাষা এমনও রয়েছে যেখানে ‘ম’ নেই কিন্তু এসব ভাষার সংখ্যা খুবই কম। যেমন ফিলিপিনো ভাষায় মাকে বলা হয়, ‘নানায়’ এবং তুর্কী ভাষায় বলা হয়,‘এন্নে’। যেখানে ম নেই।

এছাড়া আমাদের সমাজে মাকে আরও বলা হয়, আম্মা জান, মাম্মী বা মোম। এখানেও দেখা যাচ্ছে ‘ম’ আছে।

[তথ্যসূত্র: লিসানুল্ আরব, সংসদ বাংলা অভিধান, আল মাউরিদ, ফারহাঙ্গে রাব্বানী, আরবী বাংলা অভিধান, ফিকাহ বিশ্বকোষ, এবং কয়েকটি আরবী ওয়েবসাইট।]

সুতরাং এত প্রিয় ব্যক্তিত্বের ভালবাসাকে যেন আমরা একটি দিনের সীমাবদ্ধ করে না ফেলি। মা শব্দটি যেমন অতি প্রিয় শব্দ তেমনি যেন তা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়। কৃত্রিমতা নয়; ভালবাসতে হবে হৃদয়ের একান্ত গহীন থেকে। ভালবাসতে হবে একদিনে জন্য নয়: বরং প্রতিদিন ও সার্বক্ষণিক ভাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী)
সাবেক দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার, খাফজি, সউদি আরব।
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

কুরআনুল কারীম হাত থেকে পড়ে গেলে করণীয় কি?

 

প্রশ্ন: কুরআনুল কারীম হাত থেকে পড়ে গেলে কি করণীয়? 


উত্তর :
অসর্তকতা বশত: হাত থেকে কুরআনুল কারীম পড়ে গেলে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

তবে আগামীতে সর্তক থাকতে হবে যেন, কোনোভাবেই কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন না করা হয়।

উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, কুরআন হাত থেকে পড়লে এর ওজন বরাবর চাল সদকা করতে হবে। এটি একটি ভুল কাজ। কেননা, ইসলামী শরিয়তে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি। তাই তা বর্জনীয়।

প্রশ্ন: আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?


উত্তর :
কুরআনের সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে কুরআনের মধ্যে এমন কোনো চিহ্ন বসানো উচিৎ নয় যাতে তার সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে। কুরআনে কারীমকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।

তবে একান্ত দরকারে (যেমন, মুখস্থ করার সুবিধার্থে) চিহ্ন দেয়ার প্রয়োজন হলে, আয়াতের নিচে বা উপরে সাধারণ কাঠ পেন্সিল ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেন তা প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন রাবার ব্যাবহার করা উচিৎ।

কিন্তু বলপেন, সাইনপেন বা এমন কালি ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা পরে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। আল্লাহু আলাম।

প্রশ্ন : কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?


উত্তর :
কুরআনের পৃষ্ঠাগুলোকে সহজে উল্টানের সুবাধার্থে এমনটি করা হয়। এটা দরকারে জায়েয হলেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উত্তম। কেননা, তা কুরআনের আদবের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ নয়। তাই এমনটি না করাই ভালো। আল্লাহু আলাম। 

আল্লাহর নিকট দেয়া অঙ্গীকার

 

আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। (এটা এজন্য করা হয়েছিল যে) আবার না কিয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। অথবা বলতে শুরু কর যে, অংশীদারিত্বের প্রথা তো আমাদের বাপ-দাদারা উদ্ভাবন করেছিল আমাদের পূর্বেই। আর আমরা হলাম তাদের পশ্চাৎবর্তী সন্তান-সন্ততি। তাহলে কি সে কর্মের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করবেন, যা পথভ্রষ্টরা করেছে? -[সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৭২-১৭৩]

ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন-

"আল্লাহ আদাম (আ) কে সৃষ্টির পর আরাফার তারিখে নামান নামক স্থানে তার থেকে একটি অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। তারপর পৃথিবীর শেষমুহূর্ত পর্যন্ত তার যে সকল ভবিষ্যত বংশধর জন্মগ্রহণ করবে তাদেরকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আকারে বের করলেন।

এরপর তাদের থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদেরকে তাঁর সামনে ছড়িয়ে দিলেন। তিনি তাদের সাথে সরসরি কথা বললেন: আমি কি তোমাদের রব নই?

তারা সকলেই উত্তর দিলো, হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম।

এরপর আল্লাহ ব্যাখ্যা করলেন, কেন তিনি সমগ্র মানবজাতির থেকে এই সাক্ষ্য নিলেন যে, তিনিই তাদের স্রষ্টা এবং প্রভু। তিনি বললেন, তোমাদের থেকে এজন্যই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো যেন, তোমরা কিয়ামতের দিন বলতে না পারো যে, 'আমরা এসব কিছু জানতাম না; আমরা জানতাম না যে, আপনিই ইলাহ, আমাদের রব; কেউ আমাদের বলেন নি যে, আমাদেরকে শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করতে হবে'।

আল্লাহ আরো ব্যাখ্যা করলেন যে, এটা এ কারণেও যেন মানুষ না বলেঃ 'আমাদের পূর্বপুরুষরাই (আল্লাহর সাথে) শির্ক করেছিলো, আর আমরা তো ছিলাম কেবল তাদের উত্তরসূরী; ওইসব বাতিলপন্থীরা যা করেছিল সেজন্য কি আমাদের ধ্বংস করে দিবেন?" - [সূরা আল-আরাফ এর ১৭২-১৭৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা; মুসনাদে আহমাদ; আস-সহীহা: ১৬২৩]

 শিক্ষা- আপনি পৃথিবীতে আসার পূর্বেই আল্লাহর আনুগত্য করার ওয়াদা দিয়ে এসেছেন। তাই পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া বিধান উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। যদিও এটা আপনার চারপাশের বিপরীতে হয়। (নিশচয়ই আল্লাহ এই বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞান রাখেন)

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের বর্ণনা

 

 "বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।" -[ক্বুরআন ৩ : ১২৩]

আল্লাহ্ তা'আলা আরও বলেন-
 "স্মরণ করো, সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ‌ তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলেন, দু’টি দলের মধ্য থেকে একটি তোমরা পেয়ে যাবে। তোমরা চাচ্ছিলে, তোমরা দুর্বল দলটি লাভ করবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল, নিজের বাণীসমূহের সাহায্যে তিনি সত্যকে সত্যরূপে প্রকাশিত করে দেখিয়ে দেবেন এবং কাফেরদের শিকড় কেটে দেবেন। যাতে করে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে দেন, যদিও পাপীরা অসন্তুষ্ট হয়।" -[ক্বুরআন ৮ : ৫-৮]

ইবনে ইসহাক বলেন, বদর যুদ্ধের ঘটনা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম ইবনে শিহাব, আসিম ইবনে উমার ইবনে কাতাদা, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর ও ইয়াজীদ ইবনে রুমান- এরা সবাই বর্ণনা করেছেন উরওয়া ইবনে যুবায়র থেকে। আর অন্যান্য আলিমগণ বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস থেকে। এদের প্রত্যেকই ঘটনার এক এক অংশ বর্ণনা করেছেন। আর তা থেকেই বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত রূপ নিচে বর্ণিত হল-

তাদের বর্ণনা এরুপ- রাসূলুল্লাহ (সা) যখন শুনতে পেলেন যে, আবূ সুফিয়ান সিরিয়া থেকে রওনা হয়ে এদিক আসছে, তখন তিনি মুসলিমদেরকে তার বিরুদ্ধে অভিযানে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানালেন এবং বললেন, কুরাইশদের এ কাফেলায় তাদের বহু ধনসম্পদ রয়েছে। তোমরা এগিয়ে যাও, হয়তো আল্লাহ্ ঐ ধন-সম্পদ তোমাদেরকে দিয়ে দিবেন। লোকজন রাসূলুল্লাহ (সা) এর আহ্বানে সাড়া দিল। তবে কিছু লোক দ্রুত হাজির হল আর কিছু লোক দ্বিধাবোধ করছিল। এর কারণ হচ্ছে, এ লোকগুলো বুঝতে পারছিল না যে, রাসূলুল্লাহ (সা) কোন যুদ্ধের সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা! আবু সুফিয়ানের কাছে জনগণের সম্পদের দায়িত্ব থাকায় ঝুঁকি এড়ানোর জন্যে হিজাযের নিকটবর্তী এসে যে কোন আরোহীর সঙ্গে দেখা হলেই সে তার থেকে গোপন সংবাদ নিতে থাকে। অবশেষে জনৈক আরোহী তাকে জানালো যে, মুহাম্মদ তার অনুসারীদেরকে তোমার ও তোমার কাফেলার বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ সংবাদ পেয়ে আবু সুফিয়ান সাবধানতা অবলম্বন করল এবং যমযম ইবনে আমর গীফারীকে তখনই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কায় পাঠিয়ে দিল এবং বলে দিল যে- কুরাইশদের কাছে গিয়ে বলবে, মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে তোমাদের কাফেলার বিরুদ্ধে অভিযানে বেরিয়েছেন, তাই তারা যেন তাদের সম্পদ রক্ষার্থে একদল সশস্ত্র লোক পাঠিয়ে দেয়। যমযম দ্রুত মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।

গিফারী মক্কার উপকণ্ঠে বাতনে ওয়াদীতে এসে উটের নাক কেটে হাওদা উলটিয়ে এবং জামা ছিঁড়ে ফেলে উচ্চঃস্বরে চিৎকার দিয়ে বলছিল- হে কুরাইশ জনগণ! বিপদ! বিপদ!! আবু সুফিয়ানসহ তোমাদের মালামাল লুট করার জন্যে মুহাম্মদ ও তাঁর সঙ্গীরা আক্রমণে বেরিয়েছেন। আমার মনে হয়, তোমরা আর তা রক্ষা করতে পারবে না। সাহায্যের জন্যে আগাও! সম্পদের জন্যে আগাও! ছুটে যাও।

ইবনে ইসহাক বলেন, ইয়াযীদ ইবনে রূমান আমার নিকট উরওয়া ইবনে যুবায়র থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশরা যুদ্ধে রওনা হওয়ার প্রাককালে বনূ বকরের সাথে তাদের বিরোধের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ভাবতে থাকে। ঠিক ঐ মূহর্তে ইবলিশ সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুশাম মুদলাজির আকৃতি ধারণ করে তাদের সামনে হাযির হয়। সে কুরাইশদের বলল, বনূ কিনানের লোকেরা যাতে পশ্চাৎ দিক থেকে তোমাদের উপর হামলা না করে আমি তার দায়িত্ব গ্রহণ করছি। এ প্রতিশ্রুতি পেয়ে কুরাইশরা দ্রুত যুদ্ধে রওনা হয়ে গেল।

অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর অভিযান সম্পর্কে ইবনে ইসহাক বলেন: রমাযান মাসের কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে অভিযানে বের হন। ইবনে উম্মে মাকতুমকে তিনি লোকদের নামাজের ইমামতীর দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর রাওহা থেকে আবু লুবাবাকে মদীনার শাসক নিযুক্ত করে ফেরত পাঠান। মুসআব ইবনে উমায়রের হাতে যুদ্ধের পতাকা অর্পণ করেন। উমাবী বলেন, মুসলিম বাহিনীতে দু'টি মাত্র ঘোড়া ছিল। তার একটির আরোহী ছিলেন মুসআব ইবনে উমায়র এবং অপরটিতে আরোহণ করেছিলেন যুবায়র ইবনে আওআম (রা)। ইবনে ইসহাক বলেন, মুসলিম বাহিনীতে সেদিন সত্তরটি উট ছিল, যাতে তারা পালাক্রমে আরোহী করতেন।

ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনা থেকে মক্কার পথে উঠে মদীনার বাইরের গিরিপথ দিয়ে অগ্রসর হতে লাগলেন এবং পর্যায়ক্রমে আকীক, যুল-হুলায়ফা, উলাতুল জায়শ, তুরবান, মালাল, গামীসুল-হুমাম, সখীরাতুল-ইয়ামামা, সায়ালা হয়ে ফাজ্জুর রাওহাতে পৌঁছেন। সেখান থেকে তিনি শানুকার সমতল পথ ধরে চলতে লাগলেন।

যাফরান নামক উপত্যকা আড়াআড়িভাবে পাড়ি দিয়ে যখন যাত্রা বিরতি করেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) সংবাদ পেলেন যে, কুরাইশরা তাদের বাণিজ্য কাফেলা রক্ষার্থে প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তিনি তাঁর সাথীগণকে এ বিষয়ে অবহিত করেন এবং এখন কী করা উচিত সে সম্পর্কে তাদের থেকে পরামর্শ আহ্বান করেন। আবূ বকর সিদ্দীকি (রা:) উঠে চমৎকারভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। এরপর উমার ইবনে খাত্তাব (রা) দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। এরপর মিকদাদ ইবনে আমর দন্ডায়মান হন। তিনি বলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ আপনাকে যা করতে নির্দেশ দেন আপনি তাই করুন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আল্লাহর কসম, আমরা আপনাকে সে কথা বলবো না, যে কথা বনী ঈসরাইলরা মূসা (আ) কে বলেছিল। তারা বলেছিল, আপনি আর আপনার প্রতিপালক যুদ্ধে যান, আমরা এখানে বসে থাকলাম। কিন্তু আমরা বলছি- আপনি ও আপনার প্রতিপালক যুদ্ধে যান, আমরাও আপনাদের সাথে থেকে যুদ্ধ করবো। সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে সদূর বারকূল গিমাদেও যেতে চান, তবে আমরা আপনার সঙ্গী হয়ে সেখান পর্যন্ত পৌঁছবো। রাসূলুল্লাহ (সা) মিকদাদের প্রশংসা করলেন এবং তার মঙ্গলের জন্য দু'আ করলেন।

এরপর তিনি উপস্থিত লোকদের কাছ থেকে পুনরায় পরামর্শ আহ্বান করলেন। তিনি মনে মনে চাচ্ছিলেন যে, আনসারদের মধ্য হতে কেউ কিছু বলুক। তখন সাআদ ইবনে মুআয উঠে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা) আপনি সম্ভবত আমাদের (আনসারদের) দিকে ইঙ্গিত করছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। সাআদ বললেন- আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি। আপনার দাওয়াতকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। আপনি যে বিধি-বিধান নিয়ে এসেছেন তার সত্যতার উপর সাক্ষ্য দিয়েছি এবং এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আপনার নিকট অংগীকার করেছি ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি যে, আপনার কথা শুনবো ও আপনার আনুগত্য করবো। সুতরাং ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যা সংকল্প করেছেন তাই করুন! আমরা আপনার সঙ্গে আছি। সেই সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে সমুদ্রে যান এবং তাতে ঝাঁপ দেন, তবে আমরাও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়বো এবং আমাদের একটি লোকও এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকবে না। আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে আগামীকাল শত্রুর মোকাবেলা করতে চান, তবে তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। যুদ্ধে আমরা ধৈর্যশীল এবং শত্রুর মোকাবেলায় অটল থাকবো। হতে পারে আল্লাহ্ আমাদের দ্বারা এমন বীরত্ব দেখাবেন, যা দেখে আপনার চোখ জুড়াবে।

সাআদ -এর এ বক্তব্য শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত আনন্দিত এবং উৎসাহিত বোধ করলেন। এরপর সবাইকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা সম্মুখে অগ্রসর হও এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা, আল্লাহ্ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, দু'দলের একদল আমাদের করায়ত্ত হবে। আল্লাহর কসম, শত্রুদের মধ্যে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হবে, তাদের সেই স্থানগুলো যেন আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি।

ইবনে ইসহাক বলেন, কুরায়শ বাহিনী (যুদ্ধের দিন) সকাল বেলা তাদের অবস্থান থেকে রণাংগনের দিকে বেরিয়ে এলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন:
 হে আল্লাহ্! এই সে কুরাইশ- যারা অশ্ববাহিনী নিয়ে দর্পভরে এগিয়ে আসছে। এরা আপনার বিদ্রোহী এবং আপনার রাসূলকে অস্বীকারকারী। হে আল্লাহ্! আমি আপনার সেই সাহায্যের প্রত্যাশী যার প্রতিশ্রুতি আমাকে দিয়েছেন। হে আল্লাহ্! এই সকাল বেলায় আপনি তাদেরকে ধ্বংস করে দিন।

ইমাম আহমাদ বলেন: উমার ইবনে খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- বদর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবাগণের প্রতি লক্ষ্য করেন। তাদের সংখ্যা ছিলো তিনশ'র কিছু বেশি। এরপর তিনি মুশরিকদের প্রতি লক্ষ্য করেন। ওদের সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও বেশি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) চাদরমুড়ি দিয়ে কিবলামুখী হন এবং দু'আ পাঠ করেন-
 হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ করেন। হে আল্লাহ্! আজ যদি ইসলামের এ দলটিকে আপনি ধ্বংস করেন তাহলে পৃথিবীর বুকে আর কখনও আপনার ইবাদাত করা হবে না।

অতঃপর চুড়ান্ত যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম বাহিনীর বিশাল বিজয় অর্জিত হয়। এমনকি ফেরেশতাগণ আল্লাহর নির্দেশে মুসলিম বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। যেমনটি আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-
 যখন তোমাদের পরওয়ারদেগার ফেরেশতাদিগকে নির্দেশ দান করেন যে, আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি, অতএব মুমিনদেরকে তোমরা দৃঢ়পদ করে রাখ। অচিরেই আমি কাফিরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই তাদের স্কন্ধে আঘাত হান, আঘাত হান প্রত্যেকটি আঙ্গুলের গিঁটে গিঁটে। যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের, সেজন্য এই নির্দেশ। বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। -[ক্বুরআন ৮ : ১২-১৩]


 তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩য় খণ্ড

রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ওহী নাযিলের সূচনা

 

 পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্ত পিন্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার রব বড়ই মেহেরবান, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। -[ক্বুরআন ৯৬ : ১-৫]

এ আয়াতগুলো নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) ফিরে এলেন। তখন তার হৃৎপিন্ড থরথর করে কাঁপছিল। তিনি ফিরে এলেন হযরত খাদিজা (রা) এর নিকট এবং বললেন আমাকে চাদরে ঢেকে দাও, আমাকে চাদরে ঢেকে দাও! তিনি তাঁকে চাদরে ঢেকে দিলেন। এক সময় তাঁর ভয় কেটে গেল। তিন খাদিজা (রা) নিকট ওই ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি তো আমার জীবন সম্পর্কে শংকিত হয়ে পড়েছি। খাদিজা (রা) বললেন, না, কখনো নয়, আল্লাহর কসম, তিনি কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তা রক্ষা করেন, মেহমানদের সমাদর করেন, অন্যের বোঝা বহন করেন, বিপদাপদে অন্যকে সাহায্য করেন।

এরপর খাদিজা (রা) তাঁকে নিয়ে তার চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল এর নিকট গেলেন। জাহিলী যুগে এ ব্যক্তি খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি হিব্রু ভাষায় পুস্তকাদি লিপিবদ্ধ করতেন। আল্লাহর দেয়া সামর্থ্য অনুযায়ী তিনি ইনজীল থেকে হীব্রু ভাষায় অনুবাদ করতেন। তখন তিনি বৃদ্ধ, দৃষ্টিশক্তি হীন। খাদিজা (রা) বললেন, চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলেন তা শুনুন! রাসূলুল্লাহ (সা) কে সম্বোধন করে ওয়ারাকা বললেন, ভাতিজা! আপনি কি দেখেছেন? রসূলুল্লাহ্ (সা) যা' যা' দেখেছেন তা তাঁকে অবহিত করলেন। ওয়ারাকা বললেন, ইনিতো গোপন বার্তাবাহক, যিনি মূসা (আ) এর নিকট আসতেন, হায়! ওই সময়ে আমি যদি শক্তি-সমর্থ যুবক থাকতাম, আমি যদি জীবিত থাকতাম, যে সময়ে আপনার সম্প্রদায় আপনাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ওরা কি আমাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে দেবে? ওয়ারাকা বললেন, জ্বী হ্যাঁ, আপনি যা নিয়ে এসেছেন এরুপ বাণী নিয়ে ইতোপূর্বে যিনিই এসেছেন তাঁর প্রতিই শত্রুতা পোষণ করা হয়েছে। আপনার যুগে আমি যদি বেঁচে থাকতাম তবে আপনাকে দৃঢ়ভাবে সাহায্য করতাম। এ ঘটনার অল্প দিনের মধ্যেই ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল ইনতিকাল করেন।

এদিকে সাময়িকভাবে ওহী আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা) খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা নাযিল করেন-
 হে বস্ত্র আবৃত (ব্যাক্তি)! উঠ, সতর্ক কর। তোমার পালনকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা কর। তোমার পোশাক পবিত্র কর। (যাবতীয়) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক। -[ক্বুরআন ৭৪ : ১-৫]


 তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩য় খণ্ড

রসূলুল্লাহ্ (সা) এর নবুওয়াত লাভ এবং এ সম্পর্কে কয়েকটি পূর্বাভাস

 মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, অনেক ইহুদী পণ্ডিত, নাসারা গণক এবং আরবের অনেকে আবির্ভাবের আগেই রসূলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে বলাবলি করতেন যে, তাঁর আগমনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ইহুদী ও নাসারা পণ্ডিতগণ তাদের কিতাবসমূহে বর্ণিত রাসূল (সা) এর গুণাবলী ও তাঁর আগমন কালের বিবরণ এবং তাদের নবীদের প্রতিশ্রুতি থেকে বিষয়টির ব্যাপারে অবহিত হতে পেরেছিলেন। যেমনটি আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-


 যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। কাজেই যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং তার সাথে অবতীর্ণ আলোর অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। -[ক্বুরআন ৭ : ১৫৭]
 মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবে। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন। তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলেও। তাদের অবস্থা যেন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। -[ক্বুরআন ৪৮ : ২৯]

সহীহ্ বুখারীতে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আল্লাহ্ যত নবী প্রেরণ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, যদি মুহাম্মদের আবির্ভাব ঘটে আর তখন তিনি জীবিত থাকেন, যেন অবশ্যই তিনি মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি ঈমান আনয়ন করেন এবং তাঁকে সাহায্য করেন। আর প্রত্যেক নবীকে আল্লাহ্ এই নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাঁরা নিজ নিজ উম্মাত থেকে এই অঙ্গীকার নিয়ে রাখেন যে, যদি মুহাম্মদের আবির্ভাব ঘটে আর তারা তখন জীবিত থাকে যেন তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে এবং তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর অনুসরণ করে।

 আর আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান, অতঃপর তোমাদের নিকট যা আছে তার সমর্থক কোন রসূল যখন তোমাদের নিকট আসবে, তখন সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, ‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি’। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। -[ক্বুরআন ৩ : ৮১]

অর্থাৎ প্রত্যেক নবীই মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেছেন এবং তাঁর আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন।

Translate