Saturday, December 14, 2024

মানুষকে গাধা, কুকুর ইত্যাদি বলে সম্বোধনের ব্যাপারে সাবধান বাণী

 ◈ ১. আলা ইবনুল মুসাইয়েব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা (মুসাইয়েব) বলেছেন,

لاتقل لصاحبك يا حمار يا كلب يا خنزير فيقول لك يوم القيامة : أتراني خلقت كلبا أو حمارا أو خنزيرا
“তোমার সঙ্গী-সাথীকে হে গাধা, হে কুকুর, ওহে শুয়োর বলে সম্বোধন করবে না। অন্যথায় কিয়ামতের দিন সে তোমাকে বলবে, “তুমি কি মনে করতে যে, আমাকে কুকুর, গাধা বা শুয়োর রূপে সৃষ্টি করা হয়েছিল?” [মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫/২৮২]

◈ ২. অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে, ইবরাহিম নাখঈ রাহ. থেকেও। [মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫/২৮৩]

◈ ৩. ইমাম নওবী রাহ. বলেন,
“ومن الألفاظ المذمومة المستعملة في العادة قوله لمن يخاصمه: يا حمار، يا تيس، ياكلب، ونحو ذلك، فهذا قبيح لوجهين: أحدهما: أنه كذب. والآخر: أنه إيذاء
“নিন্দনীয় যে সব শব্দ সচরাচর ব্যবহৃত হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, ঝগড়াঝাঁটিতে প্রতিপক্ষকে বলা: হে গাধা, হে পাঠা/ছাগল, কুকুর ইত্যাদি। তা দুটি কারণে কুৎসিত:
এক: তা মিথ্যা, অন্যটি হল, কষ্টদায়ক।” [আল আযকার, পৃষ্ঠা নং ৩৬৫]

◈ ৪. আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায বলেন, কোন মুমিন ব্যক্তির জন্য কাউকে গাধা, কুকুর, শুয়োর, খচ্চর, গরু-ছাগল ইত্যাদি বলে ডাকা শোভনীয় নয়। বরং সবচেয়ে সুন্দর নামে সম্বোধন করা উচিত।

এ সব উপাধি দিয়ে মানুষকে সম্বোধন করা হলে পারস্পারিক বিদ্বেষ সৃষ্টি, মন-কষাকষি, ঝগড়াঝাঁটি বা মারামারি হতে পারে।” [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]

◈ ৫. আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন বলেন, “মানুষকে জীবজন্তু বা পশুর উপাধি দিয়ে ডাকা হারাম।”

বিন বায, উসাইমিন রাহ. উভয়েই নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করেন:

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَسۡخَرۡ قَوۡمٞ مِّن قَوۡمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُواْ خَيۡرٗا مِّنۡهُمۡ وَلَا نِسَآءٞ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيۡرٗا مِّنۡهُنَّۖ وَلَا تَلۡمِزُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَلَا تَنَابَزُواْ بِٱلۡأَلۡقَٰبِۖ بِئۡسَ ٱلِٱسۡمُ ٱلۡفُسُوقُ بَعۡدَ ٱلۡإِيمَٰنِۚ وَمَن لَّمۡ يَتُبۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ

“হে ইমানদারগণ! কোনও মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনও মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরাও যেন অন্য নারীদেরকে উপহাস না করে। কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিনীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্ৰতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ইমানের পর মন্দ উপাধি অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো যালিম।” [সূরা হুজুরাত: ১১]

ইমাম ইবনে কাসির রাহ. উক্ত আয়াতে ولا تنابزوا بالألقاب “আর তোমরা একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডাকিও না” এর ব্যাখ্যায় বলেন,
أي : لا تتداعوا بالألقاب ، وهي التي يسوء الشخص سماعها
“অর্থাৎ তোমারা একে অপরকে এমন সব উপাধি দ্বারা ডাকাডাকি করো না যা সে শুনতে অপছন্দ করে।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]
আল্লাহ আমাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের নামে মানুষকে সম্বোধনের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬ ❂◯❂▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

মহিলাদের সেজদার পদ্ধতির ব্যাপারে বিভ্রান্তি নিরসন

 মহিলাদের সেজদা বিষয়ে আমাদের হানাফি সমাজে প্রচলিত পদ্ধতিতে যেভাবে উরু ও পেটকে একত্রিত করে, দু হাতের বাহুকে পাঁজরের সাথে লাগিয়ে এবং কুনুই সহ পুরো দু হাত মাটিতে বিছিয়ে এক ধরণেরর শুয়ে পড়ার মত করে সেজদা দেওয়ার পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে তা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শেখানো পদ্ধতি এবং মহিলা সাহাবিদের আমলের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে এ বিষয়ে কোনও সহিহ (বিশুদ্ধ) হাদিস নেই। বরং যেসব হাদিস এসেছে সেগুলো মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে জইফ বা দুর্বল। কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক বিষয় হলো যে, এ ক্ষেত্রে আমাদের হানাফি ভাইয়েরা তাদের মতের পক্ষে যেসব হাদিস পেশ করে থাকেন সেগুলো দেখে হাদিসের সহিহ-জইফ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেক সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে।

তাই নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের নাম উল্লেখ পূর্বক তাদের উল্লেখিত হাদিসগুলোর মান উপস্থাপন করা হলো এবং বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নে লিংক দেওয়া হলো যেন আবরি জানা আগ্রহী ভাই ও বোনেরা সত্য বিষয়টি জানতে পারেন:
وبالله التوفيق

✪ ১. ইমাম আবু দাউদ রাহ. তাঁর কিতাবুস সুনানের কিতাবুল মারাসীলে বিখ্যাত ইমাম ইয়াযিদ ইবনে আবী হাবীব রাহ.-এর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন যে,

أن النبى مر على امرأتين تصليان فقال : اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فان المرأة ليست فى ذلك كالرجل.

আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইজন মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তারা নামাজ পড়ছিল। তিনি তাদের বললেন, “যখন তোমরা সেজদা করবে তোমাদের শরীরের কিছু অংশ, (মানে পিছনের অংশ) মাটির সাথে মিলিয়ে রাখবে। কারণ নারী এই বিষয়ে পুরুষের মত নয়। ” -মারাসীলে আবু দাউদ, হাদিস ৮৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস ৩২০১; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, বায়হাকী, হাদিস ৪০৫৪

● উক্ত হাদিসটি জইফ। (ইমাম জাহাবি, আলবানি প্রমূখ)।
➧ বিস্তারিত:

✪ ২. ইমাম বায়হাকী রাহ. তাঁর ‘আসসুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الأخرى وإذا سجدت ألصقت بطنها في فخذيها كأستر ما يكون لها وإن الله تعالى ينظر إليها ويقول يا ملائكتي أشهدكم أني قد غفرت لها.
“নারী যখন নামাজে বসবে তখন তার এক উরু অন্য উরুর উপর রাখবে। আর যখন সেজদা করবে তখন তার পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আল্লাহ পাক ঐ নারীর দিকে তাকান এবং বলেন, হে ফিরিশতাগণ! আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি”। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস: ৩১৯৯)

● উক্ত হাদিসটি জইফ। (ইমাম জাহাবি, ইবনে আদি, বায়হাকি, ইবনুল কায়সারানি প্রমূখ)

✪ ৩. ইমাম তবারানী রাহ. ‘আলমুজামুল কাবীর’ গ্রন্থে ওয়ায়েল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন,

يا وائل بن حجر ! إذا صليت؛ فاجعل يديك حذاء أذنيك، والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها.

“হে ওয়ায়েল, যখন তুমি নামাজ পড়বে তখন তোমার দুই হাত কান বরাবর উঠাবে। আর নারী তার হাত উঠাবে বুক পর্যন্ত।” -মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদিস ২৮

● এ হাদিসটি জইফ (আলবানি)।

➧ বিস্তারিত:

✪ ৪. আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, سئل عن صلاة المرأة নারীর নামাজ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন,

إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها

“নারী যখন সেজদা করবে তখন যেন সে জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং তার দুই উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।” -মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক ৫০৭২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, ২৭৭৭
● এ হাদিসটি জইফ। (ইমাম জাহাবি, ইবনে আদি, বায়হাকি, ইবনুল কায়সারানি প্রমূখ)।

➧ বিস্তারিত:

❑ সঠিক পদ্ধতিতে মহিলাদের সেজদা দেওয়ার নিয়ম কী?
উত্তর:

সেজদার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগতভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এ মর্মে যে সব হাদিস এসেছে সেগুলো নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে শামিল করবে যতক্ষণ না নারীদের সেজদা দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলাদা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত কোনও হাদিস পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ ব্যাপারে একটিও সহিহ হাদিস নেই। এ মর্মে আমাদের হানাফি ভাইয়েরা যে সব হাদিস পেশ করে থাকেন কোনটিই বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয় যেমনটি মুহাদ্দিসগণ সনদের তাহকিক (সনদ বিশ্লেষণ)-এর মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন। (পূর্বোক্ত আলোচনা দেখুন)

◈◈ সেজদার পদ্ধতি সংক্রান্ত নিম্নোক্ত হাদিসগুলো নারী-পুরুষ সকলের জন্যই প্রযোজ্য:

❂ ১. আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াা সাল্লাম বলেছেন,

اعْتَدِلُوا فِي السُّجُودِ، وَلَا يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ انْبِسَاطَ الْكَلْبِ.

“সেজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর। তোমাদের কেউ যেন সেজদায় তার হাতকে বিছিয়ে না দেয় যেভাবে কুকুর হাত বিছিয়ে দেয়।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: আজান, পরিচ্ছেদ: ৫৩২. সেজদায় কনুই বিছিয়ে না দেওয়া। আবূ হুমাইদ (রা.) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা করেছেন এবং তাঁর দু হাত রেখেছেন, কিন্তু বিছিয়েও দেননি আবার তা গুটিয়েও রাখেননি।

ইমাম বুখারি উক্ত অধ্যায়ে আরেকটি অনুচ্ছেদে উক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তা হলো:
অনুচ্ছেদ: ১০/১৪১. সেজদায় কনুই বিছিয়ে না দেওয়া।
وَقَالَ أَبُو حُمَيْدٍ سَجَدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَوَضَعَ يَدَيْهِ غَيْرَ مُفْتَرِشٍ وَلاَ قَابِضِهِمَا.
আবু হুমাইদ রা. বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা করেছেন এবং তাঁর দু হাত রেখেছেন কিন্তু বিছিয়েও দেননি আর তা গুটিয়েও দেননি।

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪/ সালাত, অনুচ্ছেদ: পরিচ্ছেদ: ৪৫. সেজদার অঙ্গসমূহ ঠিকভাবে রাখা এবং দুই হাতের তালু মাটিতে রাখা, দুই কনুই পাঁজর থেকে ও পেট উরু থেকে পৃথক রাখা]

প্রাণীটি যখন অর্ধশায়িত অবস্থায় থাকে তখন যেভাবে তার সামনের দুই হাত জমিনে বিছানো থাকে, সেজদায় ঐভাবে হাত বিছিয়ে দেওয়া নিষেধ। এ হাদিসে যে শিক্ষা তা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই বিখ্যাত হাদিসেরই একটি প্রায়োগিক রূপ যাতে তিনি বলেছেন,

«صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي

“তোমরা ঐভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ”। [সহিহ বুখারি, হা/ ৬৩১] ওখানে পুরো নামাজের কথা বলা হয়েছে আর সহিহ বুখারীর এই হাদিসে নামাজের একটি অংশ সেজদা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

❂ ২. সহিহ মুসলিমেও এ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ওখানে বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন,

إِذَا سَجَدْتَ فَضَعْ كَفَّيْكَ وَارْفَعْ مِرْفَقَيْكَ

“যখন তুমি সেজদা করবে তখন দুই হাতের পাতা মাটিতে রাখবে। আর দুই কনুই উঁচু রাখবে”। -সহিহ মুসলিম, হাদিস ৪৯৪

সহিহ মুসলিমের এই হাদিস আর সহিহ বুখারীর উপরোক্ত হাদিসের মূলকথা একই। এই দুই হাদিস এবং এ বিষয়ের আরো বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া যায় যে, সেজদায় দুই হাতের বাহু পাঁজর থেকে আলাদা থাকবে এবং পেট উরু থেকে আলাদা থাকবে আর দুই হাত (অর্থাৎ কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত অংশ) মাটি থেকে উপরে থাকবে। এভাবেই সেজদা করার নিয়ম বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। এ পদ্ধতি নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

হাদিসে আল্লাহর পথ বলতে কী উদ্দেশ্য

 “আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল ব্যয় করা পৃথিবী ও তার মধ্যস্থিত সব কিছু হতে কল্যাণকর” এ হাদিসে ‘আল্লাহর পথ’ বলতে কী উদ্দেশ্য?

প্রশ্ন: “আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল ব্যয় করা পৃথিবী ও তার মধ্যস্থিত সব কিছু হতে কল্যাণকর”-এ হাদিসে ‘আল্লাহর পথ’ বলতে কী উদ্দেশ্য? এটি কি দ্বীনের যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
উত্তর: আনাস রা. হতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا

“আল্লাহ তাআলার পথে এক সকাল অথবা এক বিকাল ব্যয় করা অবশ্যই পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।” [সুনানে তিরমিজী (তাহকীক কৃত), অধ্যায়: ২০/ জিহাদের ফজিলত, অনুচ্ছেদ: ১৭. আল্লাহ তাআলার পথে এক সকাল ও এক বিকাল ব্যয় করার সওয়াব]

দ্বীনের কাজে সময় দেওয়া অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ কাজ। এতে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু উক্ত হাদিসে বর্ণিত এত বড় মর্যাদা সাধারণ কোনও দ্বীনের কাজের জন্য নয়। বরং তা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য। পূর্ণাঙ্গ হাদিস দেখলে জিহাদের বিষয়টি ফুটে উঠে। পূর্ণ হাদিসটি নিম্নরূপ:

সাহল ইবনে সাদ রা. হতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‏ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَرَوْحَةٌ يَرُوحُهَا الْعَبْدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ لَغَدْوَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا

“আল্লাহ তাআলার পথে এক দিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী ও তার মধ্যকার (উপরের) সব কিছু হতে উত্তম। (জিহাদের মাঠে) বান্দার এক বিকাল অথবা এক সকালের ব্যয় পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে কল্যাণকর। [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৮/ জি**হাদ, পরিচ্ছেদ: ১৮১৩. আল্লাহর রাস্তায় একদিন প্রহরারত থাকার ফজিলত। মহান আল্লাহর বাণী:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে ইমানদারগ‌‌ণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং অপরকেও ধৈর্যে উৎসাহিত কর এবং (প্রতিরক্ষায়) সদা প্রস্তুত থাক…আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরা আলে ইমরান: ২০০) [সুনানে তিরমিজি (তাহকিক কৃত), অধ্যায়: ২০/ জিহাদের ফজিলত, পরিচ্ছেদ: ২৬. আল্লাহর পথে পাহারা দানের সওয়াব]” ‏

◈ সহিহ বুখারির ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি বলেন,
الرباط ملازمة المكان الذي بين المسلمين والكفار لحراسة المسلمين
“মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যবর্তী এলাকায় মুসলিমদের রক্ষায় নিয়োজিত থাকাকে রিবাত (رباط) বলা হয়।”

◈ তাছাড়া লক্ষ্য করুন, ইমাম বুখারি ও ইমাম তিরমিজি রাহ. এ হাদিসটিকে জিহাদ অধ্যায়ে এবং মুসলিমদেরকে রক্ষার জন্য প্রহরার মর্যাদার অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসগণও তাই করেছেন।

◈ আল্লামা বিন বায রাহ. উপরোক্ত দুটি সহ মোট তিনটি হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

فهذه الأحاديث الثلاثة كلها تتعلق بالجهاد، والجهاد كما تقدم فضله عظيم ودرجة أهله عالية، وهو الجهاد في سبيل الله لإظهار دينه ودعوة الناس إلى سبيله وإلزامهم بالحق، فهو سبيل لإظهار الإسلام ونشره بين الناس وإلزام الناس بالحق وإخراجهم من الظلمات إلى النور، فلهذا كان فضله عظيمًا ودرجات أهله عالية

”এই তিনটি হাদিস সবই জিহাদের সাথে সম্পর্কিত। আর জিহাদের ফজিলত সুবিশাল এবং এর অধিকারী তথা মুজাহিদগণের মর্যাদা সুউচ্চ। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হলো, আল্লাহর দ্বীনের বিজয়, মানুষকে তাঁর পথে আহ্বান এবং তাদেরকে সত্যে গ্রহণে বাধ্য করার জন্য। এটি ইসলামের প্রকাশ এবং মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি মাধ্যম। এটি মানুষকে সত্য অনুসরণে বাধ্য করার এবং তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি উপায়। এই কারণেই এর ফজিলত সুবিশাল এবং এর অধিকারী তথা মুজাহিদদের মর্যাদা সুউচ্চ।”

সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম নওয়াবি রাহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের কথাই বলেছেন। তিনি বলেন,
، والظاهر أنه لا يختص ذلك بالغدو والرواح من بلدته ، بل يحصل هذا الثواب بكل غدوة أو روحة في طريقه إلى الغزو ، وكذا بغدوة وروحة في موضع القتال ؛ لأن الجميع يسمى غدوة وروحة في سبيل الله

সুতরাং এটিকে সাধারণ দ্বীনের মেহনত, দাওয়াত-তাবলিগ, তালিম ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ঠিক নয়-যেমনটি আমাদের দেশের তাবলীগ জামাত সহ বিভিন্ন ফিরকার লোকেরা করে থাকে। এমনটি করা হলে তা হবে হাদিসের অপব্যাখ্যা। হ্যাঁ, আল্লাহ দাওয়াতি কাজের মর্যাদা অপরিসীম। সে বিষয়ে বহু হাদিস রয়েছে। আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

তায়াম্মুমের জন্য মাটির ঢেলা বা মাটি সংরক্ষণ করা এবং তা দ্বারা তায়াম্মুম করার পদ্ধতি

 প্রশ্ন: অনেকেই সফরে ব্যাগে মাটির ঢেলা রাখে। কারণ বাস, ট্রেন বা প্লেনে যেখানে-সেখানে হয়তো তায়াম্মুমের জন্য মাটি পাওয়া যায় না। আবার সেখান থেকে ইচ্ছা হলেও নামাও যায় না। তাই তারা মাটির ঢেলাটাকে কোনো কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে একটু মাটি বের করে তায়াম্মুম করে থাকে। তাছাড়া শহরের বাড়িতে অনেক সময় মাটি পাওয়া যায় না। বৃদ্ধ মানুষদের জন্য অনেক সময় ওজু করে নামাজ পড়াটাই কষ্টকর হয়ে যায়। তখন অনেকেই এই মাটির ঢেলা থেকে খুঁচিয়ে মাটি বের করে তায়াম্মুম করে থাকে। এভাবে করা কি জায়েজ হবে?

উত্তর: তায়াম্মুম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ

“আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা স্ত্রী সহবাস করে, কিন্তু পরে যদি পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমণ্ডল ও হাতের উপর মাসেহ করে নাও।” [সূরা নিসা: ৪৩]

সুতরাং কেউ সফর অবস্থায় অথবা সেখানে যদি পানি না পাওয়ার বা পানি ব্যবহার করতে কষ্টসাধ্য হওয়ার আশংকা করে তাহলে সাথে কিছু মাটি/ঢেলা সংরক্ষণ করতে পারে যাতে প্রয়োজনে তা দ্বারা তায়াম্মুম করা সহজ হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে তা আপত্তিকর কিছু নয়। বরং তা দ্বীনী ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তারই পরিচয় বহন করে।

❑ ঢেলা বা মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার পদ্ধতি:
নিম্নোক্ত দুটি পদ্ধতিতে ঢেলা বা মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়:

◈ ১. পবিত্রতার নিয়তে বিসমিল্লাহ বলে দু হাত একত্রিত করে সরাসরি পাক মাটির ঢেলার উপর মাসেহ করবে। তারপর হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে বা দু হাত ঝেড়ে ফেলে হস্তদ্বয় পুরো মুখমণ্ডলে একবার মাসেহ করবে। অতঃপর বাম হাতের তালু দ্বারা ডান হাতের পিঠ এবং ডান হাতের তালু দ্বারা বাম হাতের পিঠ একবার মাসেহ করবে। আগে বাম হাত মাসেহ করলেও তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে।
(দু হাতের কুনই পর্যন্ত মাসেহ করার হাদিস শুদ্ধ নয়)।

◈ ২. অথবা ঢেলা থেকে যে কোনোভাবে কিছু মাটি অথবা কিছু ধুলো-বালি হাতে নিয়ে তা দু হাতে কচলে নিবে। দু হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে বা দু হাত ঝেড়ে ফেলে হস্তদ্বয় পুরো মুখমণ্ডলে একবার মাসেহ করবে। অতঃপর উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে তায়াম্মুম সম্পন্ন করবে।

➤➤ উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে উন্নত ফার্মেসিতে আধুনিক স্বাস্থ্য সম্মত তায়াম্মুম প্যাড অথবা বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত প্যাকেট জাত তায়াম্মুমের মাটি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে তায়াম্মুম করা অধিকতর সহজ ও স্বাস্থ্যসম্মত।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আত্মহত্যা কারী ব্যক্তিকে কি সাধারণ মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে

 প্রশ্ন: আত্মহত্যা কারী ব্যক্তিকে কি সাধারণ মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে?

উত্তর: নিঃসন্দেহে আত্মহত্যা করা কবিরা গুনাহ। তবে এ কারণে আত্মহত্যা কারী ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত কাফির-মুরতাদ হয়ে যায় না। তাই তার গোসল, জানাজা এবং কাফন-দাফনে কোন বাধা নেই। অনুরূপভাবে তার লাশ মুসলিমদের সামাজিক গোরস্থানে দাফন করতেও কোনো সমস্যা নেই। তবে সমাজের মান্যগণ্য আলেম-ওলামা, ইমাম, উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল এবং সর্বগ্রাহ্য শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গ এ সব কাজ থেকে বিরত থাকাই ভালো। যেন সর্বসাধারণ আত্মহত্যাকে মারাত্মক অন্যায় এবং ঘৃণ্য কাজ হিসেবে বুঝাতে পারে।❑ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি এবং বিশ্ববরেণ্য ফকিহ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায-এর ফতোয়া:

প্রশ্ন: আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির কি গোসল এবং জানাজার নামাজ পড়া যাবে?
উত্তর:
قاتل نفسه يغسل، ويصلى عليه، ويدفن مع المسلمين؛ لأنه عاص ما هو كافر، قتل النفس معصية، ما كفر، فإذا قتل نفسه -والعياذ بالله- يغسل، ويصلى عليه، ويكفن، ويصلى عليه، ويدفن مع المسلمين، لكن ينبغي للإمام الأكبر، ولمن له أهمية أن يترك الصلاة عليه من باب الإنكار، لئلا يظن أنه راض عن عمله.
فالإمام الأكبر السلطان، أو القضاة، أو رئيس البلد، وقاضي البلد، أو أميرها إذا ترك ذلك من باب إنكار هذا الشيء، وإعلان أن هذا خطأ؛ فهذا حسن، ولكن يصلي عليه بعض المسلمين

“যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে তাকে গোসল দিতে হবে, তার জানাজা পড়তে হবে এবং তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করতে হবে। কারণ আত্মহত্যা একটি গুনাহ তবে কাফির হওয়ার মতো নয়। তাই আত্মহত্যা করলে (আল্লাহর নিকট এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি) তাকে গোসল করাতে হবে, তাকে কাফন পরাতে হবে, তার জানাজা পরাতে হবে এবং মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করতে হবে। তবে বড় ইমাম বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির উচিত, এই অন্যায়ের প্রতিবাদস্বরূপ তার জানাজায় অংশগ্রহণ না করা। যেন এই ধারণা সৃষ্টি না হয় যে, তিনি এতে সন্তুষ্ট।

সুতরাং বড় ইমাম, সুলতান, কাজি (বিচারক) বা দেশের প্রধান যদি এই কাজটির নিন্দা ও প্রতিবাদ হিসেবে এ থেকে বিরত থাকে এবং এটাকে অন্যায় বলে ঘোষণা করে তাহলে তা ভালো। তবে অন্য কিছু মুসলিম তার জন্য জানাজা পড়বে।” [উৎস শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বায রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট]
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরণের শিরক বিদআত ও পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন পুত্রবধূর করণীয়

 শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরণের শিরক, বিদআত, অনৈসলামিক ও হারাম কার্যক্রম এবং পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন পুত্রবধূর করণীয়।

প্রশ্ন: আমার শ্বশুর বাড়ির ফ্যামিলির সবাই শিরক-বিদআতে লিপ্ত। তারা পীর ভক্ত। মাজারে যায়‌। এমনকি মৃত পীরের ছবি ফ্রেমে বেধে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। তাবিজ-সুতা ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে। মিলাদ, কিয়াম, চল্লিশা সহ নানা রকম বিদআতি কাজ করে। আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে চায় না‌। আমি এসব কাজে বাধা দিলে অনেক কথা শুনায় (আমার, আমার সন্তানদের ক্ষতি হবে এরকম বদ দুআর মতো কথা বলে)। নামাজ,পর্দার গুরুত্ব বুঝে না। আমার সামনে তারা এসব করলে আমি সইতে পারি না। কান্না আসে। এসব পরিবেশের কারণে মাঝে মাঝে নিজের ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমলে স্বাদ পাই না। অস্থির লাগে। কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে। আমার স্বামী ঢাকাতে ছোট্ট একটা জব করে। আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই। কিন্তু বাড়িতে আমার শাশুড়ি চান, আমার সন্তানদের নিয়ে আমি তার কাছে থাকি। কাজে একটু হেল্প করি। কাছে না থাকলে তার মনে কষ্ট। যেহেতু উনার বয়স হয়ে যাচ্ছে। এখন আমি কী করতে পারি?
উত্তর: আপনার শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরনের শিরক, বিদআত, অনৈসলামিক ও হারাম কার্যক্রম এবং পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে যথাসম্ভব দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়া আবশ্যক যদি তাদেরকে সংশোধন করা সম্ভব না হয় বা তাদের কাছে থাকার কারণে নিজের ঈমান, আমল ও আখলাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আপনার মাধ্যমে যদি তাদের মধ্যে সংশোধনী ও পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় তাহলে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে সেখানে থাকা উত্তম। কারণ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আপনার মাধ্যমে যদি একটি মানুষও সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় তাহলে তা হবে আপনার জন্য একটি লাল উট পাওয়ার থেকে উত্তম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ

“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” [সহিহ বুখারী]

যাহোক, আপনার স্বামী যেহেতু দূরে থাকেন সেহেতু সম্ভব হলে আপনি আপনার স্বামীর কাছে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনার স্বামীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আপনাকে এমন পাপ-পঙ্কিল পরিবেশ থেকে রক্ষা করা। তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে তা না করলে গুনাহগার হবে। কারণ মহান আল্লাহ তাকে তার স্ত্রী পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল বানিয়েছেন এবং কিয়ামতের দিন তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।

◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّـهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ

“পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব শীল (দায়িত্ববান) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।” [সূরা নিসা: ৩৪]

◈ তাছাড়া আল্লাহ তাআলা পুরুষকে আদেশ করেছেন যেন, সে নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচার পাশাপাশি যেন তার স্ত্রী-পরিবারকেও বাঁচায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا

“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” [সূরা তাহরীম: ৬]

◈ মহান আল্লাহ কেবল দায়িত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি তাকে কিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

ইবনে উমর রা.সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,

أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ : وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ”‏ ‏

“জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। …একজন পুরুষ তার পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সহিহ মুসলিম]

কিন্তু আপনার স্বামীর আর্থিক সংকট বা বিশেষ কোনও কারণে যদি আপনাকে তার সাথে রাখা সম্ভব না হয় তাহলে আপনার নিজের বাবার বাড়িতে অথবা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকার চেষ্টা করবেন।

উল্লেখ্য যে, আপনি সেখান থেকে চলে যাওয়ার কারণে আপনার স্বামীর বাবা-মা অসন্তুষ্ট হলেও এতে আপনি গুনাহগার হবেন না। কারণ সেখানে থাকা এবং তাদের সেবা করা আপনার জন্য ইসলাম আবশ্যক করেনি। উপরন্তু তাদের এমন পরিবেশে থাকার কারণে আপনার ঈমান-আকিদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যাহোক, এগুলোর কোনটাই সম্ভব না হলে তখন ধৈর্যের সাথে সেখানেই থাকবেন কিন্তু নিজেকে সর্বোচ্চ শিরক-বিদআত ও অন্যান্য পাপাচার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন।

এক্ষেত্রে আপনি নিরুপায়। আর لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا “আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপরে সাধ্যাতীত কোনও দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” [সূরা বাকারা ২৮৬ নম্বর আয়াত]
আল্লাহ সব ধরনের অকল্যাণ থেকে আপনাকে হেফাজত করুন এবং তার দ্বীনের উপরে মৃত্যু অবধি অবিচল রাখুন এই দোয়া করি। আমিন।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

যুদ্ধ কামনা করা নিষেধ তবে যুদ্ধ বেধে গেলে শত্রুর মোকাবেলায় অবিচল থাকা আবশ্যক

 ◈ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَيُّهَا النَّاسُ، لاَ تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ العَدُوِّ، وَسَلُوا اللَّهَ العَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ

‘‘হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর দুশমনের সাথে যুদ্ধ কামনা করো না। বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। তবে যদি যুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে যাও তবে ধৈর্য ধারণ করবে (অবিচল থাকবে।) আর জেনে রাখবে, জান্নাত হলো, তরবারির ছায়াতলে।’’
[সহীহ বুখারী/২৯৬৬,মাকতাবা শামেলা]

◈ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,

لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَسَلُوْا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاصْبِرُوْا وَاعْلَمُوْا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَمُجْرِيَ السَّحَابِ وَهَازِمَ الأَحْزَابِ اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ

‘’তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না। বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। আর যদি তাদের সম্মুখীন হয়ে যাও, তাহলে ধৈর্যধারণ করবে (অবিচল থাকবে।) জেনে রেখো, তরবারির ছায়ার নিচে রয়েছে জান্নাত। এরপর তিনি বলেন, হে আল্লাহ, কুরআন অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, শত্রুদলকে পরাভূত কারী, আপনি শত্রুদের পরাভূত করে আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।”[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ৫৬/১১২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের প্রথমাংশে যুদ্ধ শুরু না করলে সূর্য ঢলা পর্যন্ত বিলম্ব করতেন]

❑ হাদিসটির ব্যাখ্যা:

❂ সহিহ বুখারির ভাষ্যকার ইবনে বাত্তাল বলেছেন,

حكمة النهي أن المرء لا يعلم ما يئول إليه الأمر، وهو نظير سؤال العافية من الفتن.

“এই নিষেধের পিছনে যে হেকমত বা জ্ঞানগত কারণ রয়েছে তা হল, মানুষ জানে না যে, কোন বিষয়ের পরিণতি কী হবে। এটি এমন, যেমন কেউ ফিতনা বা বিপদ থেকে নিরাপত্তা কামনা করে।”
অর্থাৎ শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে নিষেধ করার কারণ হল, যুদ্ধের ফলাফল ভালো হবে নাকি মন্দ হবে, এতে বিজয় অর্জিত হবে নাকি পরাজয় ঘটবে সে সম্পর্কে তার ভবিষ্যৎ জ্ঞান নেই। এটা এটা ঠিক তেমন যেমন কেউ চায় যে, সে ফিতনা বা বিপদ থেকে নিরাপদ থাকুক।

❂ আবু বকর সিদ্দিক রা. বলেন,

لأن أعافى فأشكر أحب إلي من أن أبتلى فأصبر

“আমি সুস্থ ও নিরাপদ থেকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব-এটা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয় অসুস্থ বা বিপদের সম্মুখীন হওয়ার পর ধৈর্য ধরার চেয়ে।”

❂ কোনো কোনো মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

إنما نهى عن تمني لقاء العدو لما فيه من صورة الإعجاب والاتكال على النفوس والوثوق بالقوة وقلة الاهتمام بالعدو ، وكل ذلك يباين الاحتياط والأخذ بالحزم.

“শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এজন্য যে, এতে আত্মতুষ্টি, নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীলতা, শত্রুকে হালকা করে দেখা ইত্যাদি মনোভাব গোপন থাকে। আর এ সব কিছু সতর্কতা অবলম্বন ও ঝুঁকি এড়ানোর বিপরীত।” [islamweb]

❂ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায কে “তোমরা আল্লাহর দুশমনের সাথে যুদ্ধ কামনা করো না” হাদিসটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,

حمله العلماءُ على أنَّ المراد: على سبيل العجب بالنَّفس، على سبيل الثِّقة بالنفس، ونحو ذلك.

أما إذا تمنى لقاء العدو؛ رغبةً في الجهاد، أو رغبةً في الشَّهادة في سبيل الله، فهو يبدأ بالجهاد؛ لأنَّ الرسول حثَّ على الجهاد ورغَّب فيه: مَن مات ولم يغزُ، ولم يُحدِّث نفسه بالغزو؛ مات على شُعبةٍ من النِّفاق.

فالنَّهي عن التَّمني ليس على إطلاقه، وإنما المراد التَّمني الذي يصحبه فخر وخُيلاء، أو ثقة بالنفس، أما مَن يتمنى أن يحضر الجهاد، ويُجاهد في سبيل الله، وأن يلقى عدو الله؛ فلا بأس به، وليس داخلًا في النَّهي هذا

আলেমগণ বলেন যে, এ হাদিসের মূল অর্থ হল, আত্মতুষ্টি ও (আল্লাহর শক্তি এবং সাহায্যের পরিবর্তে) নিজের প্রতি আস্থা রাখা হলে শত্রুর সাথে যুদ্ধ কামনা করা নিষেধ। কিন্তু যদি কেউ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করে, জিহাদ করার জন্য বা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়ার জন্য তাহলে সে জিহাদ শুরু করতে পারে। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন,

مَن مات ولم يغزُ، ولم يُحدِّث نفسه بالغزو؛ مات على شُعبةٍ من النِّفاق

“যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ (জীবদ্দশায়) জি**হাদে অংশগ্রহণ করেনি বা জিহাদ করার ইচ্ছা পোষণও করেনি সে নিফাকের (মুনাফেকির) একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।”
সুতরাং যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করা সাধারণভাবে নিষিদ্ধ নয়। বরং যে আকাঙ্ক্ষার সাথে অহংকার, দাম্ভিকতা বা আত্মতুষ্টি মিশে থাকে সেই আকাঙ্ক্ষা নিষিদ্ধ। কিন্তু যে ব্যক্তি এ আকাঙ্ক্ষা করবে যে, সে জি**হাদে অংশগ্রহণ করবে, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহর শত্রুর মুখোমুখি হবে তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। এটা এই নিষেধের আওতাভুক্ত নয়।” [binbaz]

❑ কা**ফেরদের সাথে যুদ্ধ বেধে গেলে শত্রুর মোকাবেলায় সর্বশক্তি দিয়ে অবিচল থাকতে হবে। যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ:

হাদিসে আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে তারা যুদ্ধ বাধিয়ে দিলে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে হবে। প্রাণ ভয়ে পালানো হারাম ও কবিরা গুনাহ। (বিশেষ কিছু শর্ত ছাড়া)। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানোকে ৭টি ধ্বংসাত্মক কাজের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেন,

আবু হুরাইরা রা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ‏”‏‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ ‏”‏ الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‏”‏‏.‏

“তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হতে বেঁচে থাক। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসুল, সেগুলো কী কী? তিনি বললেন,
১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা,
২. জাদু করা
৩. যথার্থ কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করেছেন,
৪. সুদ খাওয়া,
৫. এতিম শিশুর অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা
৬. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
৭ সাধ্বী-সাধ্বী সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ দেওয়া।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৮৬/ দণ্ডবিধি, পরিচ্ছেদ: ৮৬/৪৫. সাধ্বী নারীদের প্রতি অপবাদ দেওয়া]

মোটকথা, আল্লাহর দুশমনদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ শুরু হলে স্পাত-কঠিন দৃঢ়তা এবং পরম ধৈর্যের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করত হবে। মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকবেন-এটা তার প্রতিশ্রুতি। ‘হয় বিজয় না হয় শাহাদাত’-এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, মুসলিম রাষ্ট্রকে শত্রু আগ্রাসন হাত থেকে রক্ষা, আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজত বা বিজয়ী করার জন্য যুদ্ধ করার এবং এ পথে শহিদ হওয়ার মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহু আলাম।

মহান আল্লাহ মুসলিম জাতিকে জি*হাদি বলে বলিয়ান হওয়ার তওফিক দান করুন, তাদেরকে বিজয় দান করুন, শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দিন এবং তাদেরকে পরাভূত করুন। আমিন। নিশ্চয় তিনি মহাপরাক্রমশালী ও সাহায্যকারী।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate