Monday, October 14, 2024

হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন জিনিস ভাড়া দেওয়া

 প্রশ্ন: হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে ফার্নিচার, মাইক, সিসি ক্যামেরা, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়া দেওয়া জায়েজ আছে কি?

উত্তর: হিন্দুরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ করে। তা হল, মূর্তিপূজা। এটি হল, শিরক। শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” [সূরা নিসা: ৪৮]

সুতরাং কোনও মুসলিমের জন্য জঘন্য শিরকের কাজে কোনও ভাবেই সহায়তা করা বৈধ নয়। অত:এব হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে ফার্নিচার, মাইক, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়াও দেওয়া যাবে না।

মোটকথা, পূজার কাজে ব্যবহার করার জন্য কোনও বস্তু বা উপকরণ তাদের কাছে বিক্রয় করা বা ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়। কারণ তা শিরকের কাজে সহায়তার শামিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

“সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]

আর এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, মূর্তি পূজা ও শিরক হল, সবচেয়ে বড় পাপ ও সীমালঙ্ঘন।

তবে সিসি ক্যামেরা ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। কারণ তা মুসলিম-হিন্দু সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। কেননা অনেক সময় কিছু স্বার্থান্বেষী অমুসলিম মুসলিম সেজে পূজা মণ্ডপে আক্রমণ চালিয়ে মুসলিমদের উপর তার দোষ চাপিয়ে দেয়। সিসি ক্যামেরা থাকলে হয়ত এমন চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে এতে কোনও সমস্যা নাই ইনশাআল্লাহ।

সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি বিশ্ববরণ্যে আলেম আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,

لا يجوز لمسلم التعاون للمسلم ولا المسلمة مشاركة النصارى أو اليهود أو غيرهم من الكفرة في أعيادهم ، بل يجب ترك ذلك ؛ لأن ” مَن تشبَّه بقوم فهو منهم ” ، والرسول عليه الصلاة والسلام حذرنا من مشابهتهم والتخلق بأخلاقهم ، فعلى المؤمن وعلى المؤمنة الحذر من ذلك ، ولا تجوز لهما المساعدة في ذلك بأي شيء لأنها أعياد مخالفة للشرع ، فلا يجوز الاشتراك فيها ، ولا التعاون مع أهلها ، ولا مساعدتهم بأي شيء لا بالشاي ولا بالقهوة ولا بغير ذلك كالأواني وغيرها ؛ ولأن الله سبحانه يقول : ( وتعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الإثم والعدوان واتقوا الله إن الله شديد العقاب ) فالمشاركة مع الكفرة في أعيادهم نوع من التعاون على الإثم والعدوان .
” مجموع فتاوى الشيخ ابن باز ” ( 6 / 405 ) .

“কোনও মুসলিম পুরুষ-নারীর জন্য ই-হুদি-খ্রি-স্টান বা অন্যান্য কা-ফেরদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা জায়েজ নয় বরং তা বর্জন করা আবশ্যক। কারণ “যে ব্যক্তি অন্য কোনও জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও চরিত্র গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

সুতরাং ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য এ বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি। এ উৎসব পালনে তাদেরকে কোনভাবেই সাহায্য করা বৈধ নয়। কেননা এগুলো শরিয়ত বিরোধী উৎসব। সুতরাং তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বৈধ নয়। চা, কফি, হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি দ্বারাও সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

“আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]

আর কা*ফেরদের সাথে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা তাদেরকে গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তার শামিল।” [ফতোয়া বিন বায, ৬/৪০৫]
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ঈদে নতুন পোশাক কেনা কোন বিলাসিতা নয়

 প্রশ্ন: স্বামীর যদি সামর্থ্য থাকে তবু্ও যদি সে সন্তানদের ঈদে নতুন ড্রেস কিনে না দেয় এবং বলে ঈদের কাপড় কিনা বিলাসিতা। কথাটা কি সঠিক? উল্লেখ্য সেই সন্তানেরা নানা বাড়ি থেকে নতুন ড্রেস গিফট পেয়েছে। এবং প্রতিটি সন্তানর‌ই বাবার কাছে এটা চাওয়া থাকে,না পেলে মন খারাপ হয়।

উত্তর: ঈদের সময় সুন্দর পোশাক পরা ও সাজ-সজ্জা করা সুন্নত। যেমন হাদিসে এসেছে,

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ عُمَرُ جُبَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ فِي السُّوقِ، فَأَخَذَهَا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ تَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَالْوُفُودِ‏.‏ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ‏”‌‏.‏ فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ، فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ، فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ قُلْتَ ‏”‏ إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ‏”‌‏.‏ وَأَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ الْجُبَّةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ تَبِيعُهَا أَوْ تُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ ‏”‌‏.

বদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এটি তো তার পোশাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর (রাঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন।”

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমর (রাঃ) তা গ্রহন করেন এবং সেটি নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোশাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নাই। অথচ আপনি এ জু্ব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।

[সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৩/ দুই ঈদ, পরিচ্ছেদঃ ৬০২. দুই ঈদ ও এতে সুন্দর পোশাক পরা]

আর এ কথা সত্য যে, ঈদের সময় সুন্দর ও নতুন জামা-কাপড় ঈদের আনন্দকে বৃদ্ধি করে দেয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। এমন অতিরিক্ত করা যাবে না যা অপচয় পর্যায়ে চলে যায়।

বরং সাধ্যানুযায়ী ভালো পোশাক পরবে, প্রয়োজন বোধে নতুন জামা ক্রয় করবে। আর্থিক সামর্থ থাকলে এটিকে বিলাসিতা বলা উচিৎ নয়। হ্যাঁ, সামার্থ্য না থাকলেও অনেক কষ্ট করে বা ধার-দেনা করে নতুন জামা ক্রয় করতেই হবে-এমন চিন্তা বিলাসিতা বলে গণ্য হতে পারে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ব্যাঙ খাওয়া হারাম

 প্রশ্ন: ব্যাঙ খাওয়া কি হারাম?

উত্তর: ব্যাঙ খাওয়া হারাম:

হাদিসে ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদিসটি হল: আব্দুর রহমান ইবনে উসমান রা. থেকে বর্ণিত:
أَنَّ طَبِيباً سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – عَنِ الضِّفْدَعِ يَجْعَلُهَا فِي دَوَاءٍ، فَنَهَى عَنْ قَتْلِهَا

“কোন চিকিৎসক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম কে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, এটা ঔষধে প্রয়োগ করবেন কি না? উত্তরে তিনি তা হত্যা করতে নিষেধ করলেন।” [আহমদ ১৫৩৩০, নাসাঈ ৪৩৫৫, আবু দাউদ ৩৮৭১, দারেমী ১৯৯৮, হাকিম ৪র্খ খণ্ড ৪১১ পৃষ্ঠা। সহীহুল জামে, হা/৬৯৭০]

আর শরিয়তের একটি মূলনীতি হল, যে প্রাণী হত্যা করা হারাম তা খাওয়াও হারাম। সেটা খাওয়া হালাল হলে তা হত্যা করা বৈধ হত।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

সালাতে ওয়াস‌ওয়াসা অনুভব হলে করণীয় ও একাধিক বার সংঘটিত ভুলের জন্য সাহু সেজদা দেয়ার বিধান

 প্রশ্ন: আমি নামাজে রাক‌আত ও সিজদা সংখ্যা বারবার ভুলে যাই। একটু অমনোযোগী হলেই আমার মনে থাকে না। নামাজ পড়ার সময় বারবার মনে মনে বলা লাগে আমি অমুক রাক‌আতে অমুক সিজদায় আছি। আগে তো আমার এরকম হতো না। ইদানিং খুব হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি এটা ওয়াসওয়াসা। আমার কি করণীয়? একই নামাজে আমি একাধিকবার ভুলে যাচ্ছি। একাধিকবার ভুলে গেলে কি একবার সাহু সিজদা দিলেই হবে? আমি কি সাহু সিজদা দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে এগুলো পাত্তা দিব না? শায়েখ দয়া করে করণীয় টা জানাবেন। দিন দিন এই রোগ বেড়েই যাচ্ছে।

উত্তর: আল্লাহ তায়ালা আপনার সমস্যা দূর করে দিন। আমিন। সালাতে কমবেশি সবারই অমনোযোগিতার কারণে ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। তবে খুব বেশি হলে অবশ্যই নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যাচাই করা উচিত। শারীরিক অসুখ-বিসুখ, দুর্বলতা,অতিরিক্ত কোন দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ ইত্যাদি আছে কিনা তা দেখা উচিত। ওয়াসওয়াসা রোগও মানুষের ইবাদত-বন্দেগি ও জীবন যাপনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
মোটকথা, আপনাকে আপনার নিজের অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করতে হবে।
প্রয়োজনে ফিজিক্যাল বা মেন্টাল ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। আর ওয়াসওয়াসা হলে সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজ কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি বেশি বেশি আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম পাঠ করতে হবে।
– সাহু সেজদার ব্যাপারে কথা হল, একাধিক ভুলের জন্য একবার সাহু সেজদাই যথেষ্ট। একাধিক ভুলের জন্য একাধিকবার সাহু সেজদার প্রয়োজন নেই। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে জেনে নিতে হবে যে, সালাতের কোন কোন ভুলের ক্ষেত্রে কখন কিভাবে সহ সেজদা দিতে হয়। আল্লাহ সমস্যা দূর করে দিন এবং সঠিকভাবে ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

শিশুর খতনা বা মুসলমানি উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার হুকুম

 প্রশ্ন: মরক্কোর অধিবাসীদের মধ্যে শিশুর খতনা উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার প্রথা চালু আছে। এই অনুষ্ঠান করা কি সুন্নত; না বিদআত?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ ও আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নবজাতকের খতনা উপলক্ষে ওলিমা বা ভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দোষের কিছু নেই।

ইবনে কুদামা (রহঃ) মুগনি গ্রন্থে (৭/২৮৬) বলেন:

খতনা উপলক্ষে দাওয়াত করা এবং বিয়ে ছাড়াও যে কোন উপলক্ষে খাওয়ার দাওয়াত করা মুস্তাহাব। যেহেতু এর মাধ্যমে খাদ্য খাওয়ানোর নেক আমল অর্জিত হয়। এ ধরনের দাওয়াত গ্রহণ করাও মুস্তাহাব; তবে ওয়াজিব নয়। এটি ইমাম মালেক, শাফেয়ি, আবু হানিফা ও তাঁর ছাত্রদের অভিমত।

যে কোন দাওয়াতকারীর দাওয়াত গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যেহেতু দাওয়াত গ্রহণ করলে দাওয়াতকারীর কাছে ভাল লাগে, তার মন প্রশান্ত হয়। ইমাম আহমাদকে একবার খতনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন এবং খাবার খান।

তবে এ ধরনের দাওয়াত খাওয়ানোর বিশেষ কোন ফজিলত নেই। যেহেতু এ ব্যাপারে বিশেষ কোন শরয়ি দলিল উদ্ধৃত হয়নি। কোন কারণ ছাড়া দাওয়াত খাওয়ানোর সাধারণ যে মর্যাদা এ আয়োজনেরও সে মর্যাদা। যদি দাওয়াতকারী এর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মুসলমান ভাইদের খাবার খাওয়ানোর আমল পালনের উদ্দেশ্য করে, স্বীয় খাদ্যসামগ্রী ব্যয় করার নিয়ত করে তাহলে আল্লাহ চাহেত তিনি সে সওয়াব পাবেন। সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:

খতনা উপলক্ষে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করা ইসলামি শরিয়তের দাবী। যেহেতু খতনা ইসলামপ্রিয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।” [সূরা ইউনুছ, আয়াত: ৫৮]। নিঃসন্দেহে খতনা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ উপলক্ষে ভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে কোন আপত্তি নেই। সমাপ্ত [ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ আদ্‌দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র), খণ্ড- ৫; পৃষ্ঠা-১৪২] আল্লাহই ভাল জানেন।

প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে দ্বীনহীন পাত্রের সাথে জোরপূর্বক বিবাহ দিতে চাইলে

 প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে দ্বীনহীন পাত্রের সাথে জোরপূর্বক বিবাহ দিতে চাইলে উক্ত নারী যদি বিয়ে করতে রাজি না হয় তাহলে কি ঐ নারী গুনাহগার হবে? আর এ ক্ষেত্রে ঐ নারীর করণীয় কী?

প্রশ্ন: আমার পরিবার থেকে আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চায়। এমনকি তারা সব সময় অর্থ সম্পদ দেখে শুধু তাই না তারা নামাজ, রোজা,পর্দা করার বিষয়ে নারাজ। মানে তাদের কথা সবার সামনে যেতে হবে। এই নিয়ে আমার পরিবারের সাথে আমার ঝামেলা হয়েছে। আমি অনেক কষ্টে জেনারেল লাইনে পড়েও দ্বীনের পথে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছি। আমি দ্বীনি পরিবার দেখে বিয়ে করতে চাই। যার মাধ্যমে আমি আমার পরিপূর্ণ ইসলাম মানতে পারবো, সকল নন মাহরামদের থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। আমি কোনো বেদ্বীন ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না। এগুলো নিয়ে পরিবারের সাথে অনেক ঝামেলা চলতেছে। আমি যে আমার পরিবারের সাথে এমন করছি এতে কি আমার গুনাহ হবে? কারণ আমি বেদ্বীন ছেলেকে বিয়ে করবো না। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর বিয়ের পূর্বে তার সম্মতি নেওয়া অপরিহার্য। তার সম্মতি ব্যতিরেকে জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া বৈধ নয়।
আবু সালামাহ রা. হতে বর্ণিত, আবু হুরায়রা রা. তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتّٰى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتّٰى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ.
“বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না।”
লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে?
তিনি বললেন, “তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি।”
[৬৯৭০; মুসলিম ১৬/৮, হাঃ ১৪১৯, আহমদ ৯৬১১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬০)

এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদিস বর্ণনা করেছেন- পূর্বে বিবাহ হয়েছিল এমন মহিলা তার নিজের বিয়েতে মত জানানোর ব্যাপারে তাদের অভিভাবক অপেক্ষাও বেশি অধিকার রাখে। আর অবিবাহিত মেয়েদের নিকট তাদের পিতা বিয়ের মত জানতে চাইলে তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতি জ্ঞাপক।
সুতরাং অভিভাবকের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, বিয়ের পূর্বে অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, বোন প্রমুখ যার বিয়ে দিতে চায় তার সাথে কথা বলবে, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে মূল্যায়ন করবে, তার আগ্রহ-অনাগ্রহকে আমলে নিয়ে তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিবে। যদি তার সম্মতি থাকে তাহলে বিয়ে দিবে; অন্যথায় এ ক্ষেত্রে অগ্রসর হবে না। এটাই ইসলামের বিধান। এ বিধান লঙ্ঘন করা কোনও অভিভাকের জন্য বৈধ নয়। এর পরিণতি খুবই খারাপ। এমন জোর-জবরদস্তি বা কনের অনুমতি হীন বিয়েতে দাম্পত্য জীবন চরম বিশৃঙ্খল এবং হুমকির সম্মুখীন হয়। অথচ এ বিধান টি আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)

সুতরাং কোন মেয়ে যদি কোন বিয়ের প্রস্তাবকে দ্বীনহীনতা কিংবা অপছন্দ হওয়ার কারণে ফিরিয়ে দেয় তাহলে তাতে কোন গুনাহ নেই। এজন্য সে গুনাহগার হবে না। তার বাবা-মা অসন্তুষ্ট হলেও সে তাদের অবাধ্য বলে গণ্য হবে না। কেননা এটি তার আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এই দুআটি কখন পাঠ‌ করতে হয়

 প্রশ্ন: “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” এই দুআটি কখন পাঠ‌ করতে হয়? এবং তা পাঠের মর্যাদা ও উপকারিতা কী?

উত্তর:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عن ثوبان رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا وقال اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام. قيل للأوزاعي وهو أحد رواة الحديث كيف الاستغفار؟ قال : يقول : أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله. رواه مسلم
প্রখ্যাত সাহাবি সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন (অর্থাৎ সালাম ফেরাতেন) তখন তিনবার পাঠ করতেন, আসতাগফিরুল্লাহ।
(অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি)
অত:পর পাঠ করতেন:
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়াযাল জালালি ওয়াল ইকরাম।”
(অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি শান্তি দাতা। শান্তি অবতীর্ণ হয় আপনার পক্ষ থেকেই। আপনি মহত্ব ও মর্যাদার অধিকারী।)
বর্ণনাকারী আউযায়ীকে প্রশ্ন করা হলো, কীভাবে ইস্তিগফার পাঠ করতে হয়? তিনি বললেন, (এভাবে বলবে), “আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ।” [সহিহ মুসলিম, হা/ ১৩৬২]

🔸এই দুআ পাঠের উপকারিতা:

▪️১) হাদিসের ভাষা থেকে এটা স্পষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করার পর তিনবার ইস্তিগফার, অতঃপর উপরোক্ত দুআটি নিয়মিত পাঠ করতেন।
এ হাদিসের প্রতি আমল করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ এবং তাঁর একটি সুন্নতের উপর আমল করা হয়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ এবং সুন্নাতের উপর আমল করা আল্লাহর ভালোবাসা, ক্ষমা এবং নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।
▪️২. আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের উপরে আমল করা তাঁর প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ
এবং গভীর ভালোবাসার প্রমাণ। এই ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।
▪️৩. এটি আল্লাহর মর্যাদার স্বীকৃতি জ্ঞাপক ও স্তুতি মূলক বাক্য। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
▪️৪. সালাতের পরে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার পর এই দুআটি পড়লে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো মোচন করবেন। পাশাপাশি, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জীবনে সুখ, শান্তি, দয়া ও বরকতের ফল্গুধারা নেমে আসবে। কারণ আল্লাহর একটি নাম হল, “আস সালাম” (শান্তি দাতা)। আর তার পক্ষ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়।
▪️৫. যেকোনো দুআ ও জিকির পাঠের মাধ্যমে মুখ ও জিহ্বাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করা হয়। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا بِذكر اللَّهِ
“তোমার জিহবা যেন সর্বদা আল্লাহর জিকির দ্বারা তরতাজা থাকে।” [সহীহ, তিরমিযী, হা/ ৩৩৭৫, ইবনে মাজাহ, হা/ ৩৭৯৩]
▪️৬. আল্লাহর জিকির অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে। ‌ আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَىِٕنُّ ٱلۡقُلُوبُ
“জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়।” [সূরা রাদ: ২৮]
– উল্লেখ্য যে, এ হাদিসে ফরজ সালাত শেষে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট (একবার আল্লাহু আকবার পড়ার হাদিসের তুলনায়)। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেওয়ার বিধান

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় আল্লাহর তারীফ করতেন, দরুদ পড়তেন, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করতেন এবং কিছু ওয়াজ-নসিহত ও করতেন। নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ

“আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” [সূরা ইবরাহিম: ৪]

রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবি ছিল এবং সাহাবিদেরও ভাষা আরবি ছিল, তাই তিনি আরবিতেই তাদেরকে নসিহত করতেন।

এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়াটা শরিয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।

• এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন: প্রত্যেক খতিবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। [তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪]

• আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবি জানলেও ফারসি ভাষায়ও চলবে। [হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭]

• আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী রহ. বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেওয়া জায়েজ। [মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫]

• হানাফি ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে, ফারসি ভাষাতে জুমার খুতবা দেওয়া জায়েজ।

• হানাফি ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবি ভাষায় খুতবা দেওয়া শর্ত নয়।

• হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে। (কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) [আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা ১/৯৮-৯৯]

❑ তবারা আগে ‘বয়ান’ একটি বিদআত:

নিজ ভাষায় খুতবা না দেওয়ার কারণে যেহেতু তা মানুষের বোধগম্য হয় না এজন্যই এই খুতবার আগে খতিবগণ বয়ানের ব্যবস্থা রেখেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম বিদআত। কারণ খুতবা দানের পূর্বে বয়ান দেওয়া এবং ইহাকে এভাবে স্থায়ী রূপ দেওয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আদৌ প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার পূর্বে কখনো এ ধরণের বয়ান দেন নি। দিতে বলেছেন বলে ও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এজন্যই এ সঊদি আরবের বরেণ্য মুফতি শাইখ ইবনে উসাইমিন রহ: কে মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান সম্পর্কে সওয়াল করা হলে তিনি তা সরাসরি জায়েজ বলে মন্তব্য করেন এবং একথা স্পষ্ট ভাবে বলেন যে, খতিবকে নিজ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। [দেখুন: শাইখ ইবনে উসাইমিনের ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম]

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু জামে মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়া হয়ে থাকে। বস্তুত: এটাই সুন্নত। এর বিপরীত সুন্নত বিরোধী কাজ যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক ইলম দান করুন এবং যাবতীয় বিদআত পরিত্যাগ করার তাওফিক দিন (আমিন)

❑ সংযুক্তি:

হাদিসে খুতবা (বক্তৃতা) কোন ভাষায় হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি বা এমন কোন নির্দেশ আসে নি যে, আরবি ভাষায় খুতবা দেওয়া আবশ্যক। সুতরাং মানুষ যে ভাষায় খুতবা শুনলে উপকৃত হবে সে ভাষায় হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

অত:এব, আল্লাহর প্রশংসা, নবীর প্রতি দুরুদ এবং কিছু আয়াত ও হাদিস আরবিতে বলার পর যদি সেগুলো বাংলা বা শ্রোতাদের ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাহলে খুতবার উদ্দেশ্যে বাস্তবায়িত হবে।

কারণ হাদিসে এসেছে: সামুরা বিন জুনদুব রা. হতে বর্ণিত,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب قائماً ويجلس بين الخطبتين ويقرأ آيات ويذكر الناس.

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন এবং দু খুতবার মাঝে বসতেন। কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং মানুষকে উপদেশ দিতেন।” [সহিহ নাসাঈ, হা/১৪১৭-সহিহ]

এখানে বুঝা যাচ্ছে, খতিব সাহেব শ্রোতাদেরকে খুতবার মধ্যে উপদেশ দিবেন ও তাদের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিবেন।

আর এ কথা বলা বাহুল্য যে, তাদের অ বোধগম্য ভাষায় বক্তৃতা হলে তারা কিছুই বুঝতে পারবে না- যা খুতবার মূল উদ্দেশ্যে পরিপন্থী।

আরবিতে খুতবা দেওয়া আবশ্যক হলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার মধ্যে যে সকল শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকত না। অর্থাৎ হাদিসে বর্ণিত ভাষা ছাড়া নিজে বানিয়ে আরবি বলার সুযোগ থাকত না-যেমন সালাতে নিজের মত করে আরবিতে কিরাআত পাঠ করা জায়েজ নয়।‍ অথচ যারা আরবিতে খুতবা দেন তারা কোন আলেমের লিখিত আরবি বক্তব্য পড়ে থাকেন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
লেখক:
শাইখ আখতারুল আমান বিস আব্দুস সালাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

নারীদের জন্য আলেমদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনার বিধান

 প্রশ্ন: আল্লাহ তো বলেছেন মুমিন নারী এবং পুরুষ কে তাদের দৃষ্টি হেফাজত করতে। অনিচ্ছাকৃত চোখ পরে যাওয়া গুনাহ নয় তাহলে আমরা অনলাইনে আলেম ওলামাদের গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচার শোনার সময়,অনেক সময় এমন হয় যে,এক দৃষ্টিতে আলেমদের মুখের দিকে তাকিয়ে লেকচার শুনি। তখন শুধু উনারা কি বলছেন সেদিকেই মনোযোগ থাকে। এখন আমার জিজ্ঞাসা হলো, এতে কি একজন নারীর গুনাহ হবে?

উত্তর: আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে হিজাব বা পর্দার বিধান দিয়েছেন; পুরুষদেরকে নয়। তাই পুরুষেরা স্বাভাবিকভাবে মাঠে-ঘাটে কাজ করবে, বাইরে চলাফেরা করবে, উন্মুক্ত মাঠে আলেমগণ বক্তব্য দিবে, অনলাইন-অফলাইনে দ্বীন প্রচার করবে, মসজিদের ইমামতি করবে, ‌যুদ্ধ-জিহাদ করবে, বিচার আচার করবে, সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে-এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বোধে নারীরা তাদেরকে দেখতে পারে। তবে যদি কোন পুরুষের চেহারা দেখে তার মধ্যে কুপ্রবৃত্তি জাগ্রত হয় বা ফিতনা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই দৃষ্টি নত করে নেওয়া আবশ্যক। এমতবস্থায় তার চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনাও জায়েজ নয়। এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই।
কিন্তু এমনটি না হলে পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েজ আছে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।

✪ একদল আলেমের মতে নারীদের জন্য আলেমদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনায় কোন দোষ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নারী সাহাবিগণ বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন, ইসলাম শিখতেন‌ এবং প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। এক্ষেত্রে তারা তার চেহারার দিকে তাকাতেন।

আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, মা জননী আয়েশা ঈদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে হাবশী বা নিগ্রো পুরুষদের সমরাস্ত্রের খেলা দেখেছেন। যেমন: উরওয়া আয়েশা রা. হতে বর্ণনা করেন যে,

كَانَ الْحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فَسَتَرَنِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَنْظُرُ فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتّٰى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ تَسْمَعُ اللَّهْوَ.

“একদিন হাবশিরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে ছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন্ বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৬৭/ বিয়ে-শাদি, পরিচ্ছেদ: ৬৭/৮৩. পরিবার-পরিজনের সঙ্গে উত্তমব্যবহার]

✪ আর কিছু আলেমের মতে, সাধারণ অবস্থাতেও নারীদের জন্য পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েজ নেই। কেননা আল্লাহ যেভাবে পুরুষদেরকে আদেশ করেছেন নারীদের থেকে দৃষ্টি নত রাখতে ঠিক তেমনি ভাবে নারীদেরকেও আদেশ করেছেন পুরুষদের দিকে দৃষ্টি নত রাখতে। [সূরা নূর: ৩১]

যাহোক, সতর্কতার স্বার্থে আলেমদের বক্তৃতা শোনার ক্ষেত্রে যদি তাদের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শুধু ভয়েস শ্রবণ করে উপকৃত হওয়া সম্ভব হয় তাহলে সেটাই যথেষ্ট। বিশেষ করে যুবতী নারীদের জন্য যুবক এবং সুদর্শন বক্তাদের দিকে না তাকানোর মধ্যেই মনের পবিত্রতা রয়েছে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় কল্যাণের উপরে প্রতিষ্ঠিত রাখুন এবং সব ধরনের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সৌদি আরব।

আল্লাহ আরশের উপরে রয়েছেন আবার তিনি নিচের আসমানেও নেমে আসেন সে সময় কি আরশ খালি হয়ে যায় এ বিষয়ে সঠিক আকিদা কী

 প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা বলেন, “রহমান (দয়াময় আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত।” [সূরা ত্ব-হা: ৫]। সেই সাথে এটাও সত্য যে, আল্লাহ তাআলা প্রতি শেষ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন, যা বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

আমার প্রশ্ন হলো, আমার জিজ্ঞেস হলো, আল্লাহ আরশে আজিমে আছেন। তাহলে প্রতি রাতে তিনি প্রথম আসমানে নেমে আসেন। এ বিষয়ে আকিদা কী পোষণ করব? একটু বুঝিয়ে বলুন।
উত্তর:
✪ প্রথমত: প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জানা জরুরি যে, কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ তাআলার যে সকল সিফাত (গুণ ও‌ বৈশিষ্ট্য ) বর্ণিত হয়েছে সেগুলো যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস করা অপরিহার্য। এগুলোর কোন ধরনের আকার-আকৃতি, সাদৃশ্য, ধরণ ও প্রকৃতি বর্ণনা করা যাবে না। সেগুলোকে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করাও যাবে না। বরং কুরআন ও হাদিসে যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবেই প্রকৃত অর্থে বিশ্বাস করতে হবে।

✪ দ্বিতীয়ত:

আল্লাহ তায়ালা সাত আসমানের উপরে সমুন্নত রয়েছেন-এটা যেমন কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য নস দ্বারা প্রমাণিত তেমনি তিনি রাতের শেষ প্রহরে নিচের আসমানে নেমে আসেন সেটাও বহু নস দ্বারা প্রমাণিত।
অতএব উভয়টির প্রতি বিশ্বাস করা আবশ্যক। আরও বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।

✪ তৃতীয়ত:

তিনি কীভাবে আরশের উপরে সমুন্নত, কীভাবে নিচের আসমানে নেমে আসেন,‌ এই সময় আরশ খালি হয়ে যায় কিনা, পৃথিবীর কোথাও রাতের শেষ প্রহর অথচ কোথাও দুপুর, কোথাও বিকেল, কোথাও বা রাতের প্রথম প্রহর তাহলে তিনি কোথায় কীভাবে নিচের আসমানে অবতরণ করেন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা জায়েজ নেই। এগুলো বিদআতি প্রশ্ন। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণ কখনো এইসব প্রশ্ন করেননি। বরং তারা বিনা প্রশ্নে আল্লাহর এই সকল সিফাতের উপরে বিশ্বাস পোষণ করেছেন। সুতরাং তাদের মতই আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হতে হবে।

✪ চতুর্থত:

“আল্লাহ আরশ থেকে কীভাবে নিচের আসমানে নেমে আসেন?” এই জাতীয় প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ার কারণ হল, আমরা আল্লাহর সিফাতগুলোকে মানবিক বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা বিচার করি। কিন্তু এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। আল্লাহর সিফাতকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অনুমান করা বা বিচার বিশ্লেষণ করা কখনো সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহর সিফাত বা গুণ-বৈশিষ্ট্য গুলো অবশ্যই তাঁর কোনো সৃষ্টি জীবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। ‌ আমাদের কার্যক্রম এবং গুণ-বৈশিষ্ট্য খুবই সীমিত ও দুর্বল কিন্তু আল্লাহ তাআলার গুণ বৈশিষ্ট্য অসীম অপার, অতুলনীয় ও অপরিমেয়।

সুতরাং আল্লাহর আরশে উপরে অবস্থান করা এবং দুনিয়ার জমিনে অবতরণ করা অবশ্যই সত্য কিন্তু তার ধরণ-প্রকৃতি আল্লাহর জন্য যেমনটা শোভনীয় ঠিক তেমনই। আমাদের কোন কিছুর সাথে তার সাদৃশ্য বা মিল নেই।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়েছেন।‌ তা হলো, “আল্লাহ তাআলা নিচের আসমানে অবতরণ করলে আরশ খালি হয়ে যাওয়া আবশ্যক নয়। যেভাবে মানুষ ঘুমালে তার আত্মা আল্লাহর নিকটে চলে যায় কিন্তু তা মানুষের দেহ থেকে পরিপূর্ণভাবে আলাদা হয় না।”
আল্লাহু আলম।

♦️আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল♦️

ইচ্ছাকৃত ভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে কাজে ফাঁকি দেওয়া বা ডিউটির সময় চুরি করা হারাম

 প্রশ্ন: আমি শুনেছি কেউ যদি অফিসের কাজে ফাঁকি দেয় তাহলে তার ওই সময়টুকুর ইনকাম হারাম হবে। এখন আমার দুলাভাই একটা বেসরকারি অফিসে চাকরি করে।কিন্তু আমি শুনেছি, তিনি কাজে ফাঁকি দেন, কাজের সময় বাসায় এসে রেস্ট নেন।এখন তার ইনকাম খাওয়া কি আমার জন্য জায়েজ হবে?

উত্তর: কোন কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কোন ব্যক্তি যখন চাকরির জন্য কন্ট্রাক্ট করে তখন লিখিতভাবে কিংবা মৌখিকভাবে কিছু শর্ত থাকে। যেমন: সপ্তাহে কত দিন কাজ, কত ঘণ্টা ডিউটি, বেতন-ভাতা, ছুটি ইত্যাদি।

এই ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের জন্য কৃত চুক্তি পালন করা ফরজ। আল্লাহ বলেন,

یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ أَوۡفُوا۟ بِٱلۡعُقُودِۚ

“হে মুমিনগণ, তোমরা চুক্তি পূর্ণ কর।” সূরা [মায়িদা: ১]

অতএব কোন কর্মচারী যদি নানা ছলচাতুরী করে ইচ্ছাকৃত ভাবে ডিউটির বাইরে সময় কাটায় অথবা ডিউটির মধ্যে কাজে ফাঁকি দেয় তাহলে সে শর্ত লঙ্ঘনকারী বলে বিবেচিত হবে। আর নিঃসন্দেহে তা গুনাহের কাজ। অনুরূপভাবে মালিক বা কর্তৃপক্ষ যদি কর্মচারীর সাথে কৃত চুক্তি লঙ্ঘন করে তাহলে সে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে। একদিকে আল্লাহর কাছে মানুষের হক নষ্ট করার অপরাধে দণ্ডিত হবে অন্যদিকে প্রচলিত আইনেও সে অন্যায়কারী হিসেবে গণ্য হবে।

যাহোক, কোন কর্মচারী ডিউটি রত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ভাবে যতটুকু ছলচাতুরী ও ফাঁকিবাজি করেছে ততটুকু উপার্জন হারাম বলে গণ্য হবে। অবশ্য বিশেষ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের অনুমতির সাপেক্ষে বাইরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে বা কোন কাজ করার দরকার হলে সেটা ভিন্ন কথা।

আরও উল্লেখ্য যে, ডিউটি চলাকালীন সময়ে সামান্য কিছু বিশ্রাম নেওয়া বা কলিগের সাথে খোশ গল্প করা অথবা ব্যক্তিগত জরুরি কাজকর্ম করা, সালাত আদায় করা, খাওয়া-দাওয়া, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ ইত্যাদিতে কোন সমস্যা নেই। কেননা সাধারণ নিয়ম হিসেবে এই ধরনের কাজ-কারবার প্রতিটি কোম্পানি বা সংস্থায় অনুমোদিত।
কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে কাজে ফাঁকি দেওয়া বা ডিউটির সময় চুরি করা হারাম। কেউ তা করলে তার এই সময় কালীন উপার্জনও হারাম বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

মোটকথা, সর্বাবস্থায় মানুষের হক আদায়, আমানতদারিতা, সততা, স্বচ্ছতা এবং সত্যবাদিতা অপরিহার্য। মানব জীবনে এগুলো অসাধারণ গুণ ও বৈশিষ্ট্য। এগুলোর মাধ্যমে যেমন ভাবে তার উপার্জন হালাল হবে তেমনি সে হবে সবার কাছে প্রিয় পাত্র এবং মহান আল্লাহও তাকে ভালবাসবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।

উত্তর প্রদানে :
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ঘরে খেলনার পুতুল থাকলে সালাত আদায়ের সময় করণীয় কী এবং এগুলো ঘরে থাকার দায় কার উপর বর্তাবে

 প্রশ্ন: আমার ছোট ভাই বোন তারা পুতুল দিয়ে খেলা করে কিন্তু পুতুল ঘরে থাকলে তো ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। আমি চাইলেও পুতুল গুলো সরাতে পারবো না এক্ষেত্রে আমার কী করণীয়? আমি শুনেছি ফজর এবং মাগরিবের ওয়াক্তে রহমতের ফেরেশতা ঘরে প্রবেশ করে তাই ঐ সময়ে পুতুল গুলো লুকিয়ে রাখলে যথেষ্ট হবে কি?

আর যে ঘরে নামাজ পড়বো ঐ ঘরে পুতুল থাকলে কি কোনও সমস্যা আছে?
উত্তর: ঘরে কোন প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইত্যাদি রাখা জায়েজ নেই। ঠিক তদ্রূপ বাচ্চাদের খেলনা পুতুলও রাখা জায়েজ নেই। (অবশ্য যদি সেগুলোর নাক, চোখ, মুখ, কান ইত্যাদি অবয়বগুলো মুছে দেওয়া হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ)।। হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে, আবু ত্বলহা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“‏ لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ ‏”
“যে ঘরে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি থাকে সেই ঘরে (আল্লাহর রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৭৭/ পোশাক, পরিচ্ছেদ: ৭৭/৮৮. ছবি সম্পর্কিত]
তাই অনতিবিলম্বে এগুলো থেকে ঘরবাড়িকে পরিষ্কার করা আবশ্যক। অন্যথায় বাড়ির প্রধান কর্তা ব্যক্তি এ জন্য গুনাহগার হবে। আপনার দ্বারা যদি সেগুলো ফেলে দেওয়া বা নষ্ট করা সম্ভব না হয় তাহলে এতে আপনি গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। কেননা তা আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইত্যাদি রয়েছে সে ঘরেও সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে উত্তম হলো, এসব থেকে মুক্ত অন্য কোনও ঘরে সালাত আদায় করা। কমপক্ষে সালাতের সময় এসব জিনিস কাপড় বা কোন কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Translate