Monday, October 14, 2024

নারীদের জন্য আলেমদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনার বিধান

 প্রশ্ন: আল্লাহ তো বলেছেন মুমিন নারী এবং পুরুষ কে তাদের দৃষ্টি হেফাজত করতে। অনিচ্ছাকৃত চোখ পরে যাওয়া গুনাহ নয় তাহলে আমরা অনলাইনে আলেম ওলামাদের গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচার শোনার সময়,অনেক সময় এমন হয় যে,এক দৃষ্টিতে আলেমদের মুখের দিকে তাকিয়ে লেকচার শুনি। তখন শুধু উনারা কি বলছেন সেদিকেই মনোযোগ থাকে। এখন আমার জিজ্ঞাসা হলো, এতে কি একজন নারীর গুনাহ হবে?

উত্তর: আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে হিজাব বা পর্দার বিধান দিয়েছেন; পুরুষদেরকে নয়। তাই পুরুষেরা স্বাভাবিকভাবে মাঠে-ঘাটে কাজ করবে, বাইরে চলাফেরা করবে, উন্মুক্ত মাঠে আলেমগণ বক্তব্য দিবে, অনলাইন-অফলাইনে দ্বীন প্রচার করবে, মসজিদের ইমামতি করবে, ‌যুদ্ধ-জিহাদ করবে, বিচার আচার করবে, সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে-এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বোধে নারীরা তাদেরকে দেখতে পারে। তবে যদি কোন পুরুষের চেহারা দেখে তার মধ্যে কুপ্রবৃত্তি জাগ্রত হয় বা ফিতনা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই দৃষ্টি নত করে নেওয়া আবশ্যক। এমতবস্থায় তার চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনাও জায়েজ নয়। এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই।
কিন্তু এমনটি না হলে পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েজ আছে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।

✪ একদল আলেমের মতে নারীদের জন্য আলেমদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনায় কোন দোষ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নারী সাহাবিগণ বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন, ইসলাম শিখতেন‌ এবং প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। এক্ষেত্রে তারা তার চেহারার দিকে তাকাতেন।

আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, মা জননী আয়েশা ঈদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে হাবশী বা নিগ্রো পুরুষদের সমরাস্ত্রের খেলা দেখেছেন। যেমন: উরওয়া আয়েশা রা. হতে বর্ণনা করেন যে,

كَانَ الْحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فَسَتَرَنِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَنْظُرُ فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتّٰى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ تَسْمَعُ اللَّهْوَ.

“একদিন হাবশিরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে ছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন্ বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৬৭/ বিয়ে-শাদি, পরিচ্ছেদ: ৬৭/৮৩. পরিবার-পরিজনের সঙ্গে উত্তমব্যবহার]

✪ আর কিছু আলেমের মতে, সাধারণ অবস্থাতেও নারীদের জন্য পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েজ নেই। কেননা আল্লাহ যেভাবে পুরুষদেরকে আদেশ করেছেন নারীদের থেকে দৃষ্টি নত রাখতে ঠিক তেমনি ভাবে নারীদেরকেও আদেশ করেছেন পুরুষদের দিকে দৃষ্টি নত রাখতে। [সূরা নূর: ৩১]

যাহোক, সতর্কতার স্বার্থে আলেমদের বক্তৃতা শোনার ক্ষেত্রে যদি তাদের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শুধু ভয়েস শ্রবণ করে উপকৃত হওয়া সম্ভব হয় তাহলে সেটাই যথেষ্ট। বিশেষ করে যুবতী নারীদের জন্য যুবক এবং সুদর্শন বক্তাদের দিকে না তাকানোর মধ্যেই মনের পবিত্রতা রয়েছে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় কল্যাণের উপরে প্রতিষ্ঠিত রাখুন এবং সব ধরনের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate