প্রশ্ন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কোন নবীকে কাপড় পরানো হবে?
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কোন নবীকে কাপড় পরানো হবে?
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী মৃত্যুবরণ করলে নাক ফুল, কানের দুল, হাতের চুড়ি, মালা ইত্যাদি খুলে ফেলা কি শিরক? এ প্রথা না কি হিন্দুদের থেকে এসেছে। এ কথা কি সঠিক?
❑ এ ব্যাপারে নিম্নে সম্মানিত ফকিহদের অভিমত তুলে ধরা হল:
সুতরাং কোনও মহিলার স্বামী মারা গেলে ইদ্দত পালন কালীন সময় (গর্ভবতী না হলে চার মাস দশ দিন আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) কোনও ধরণের সাজসজ্জা গ্রহণ, মেহেদি ও রং এর ব্যবহার, কানের দুল, নাকের ফুল, হাতের চুরি, গলার মালা ইত্যাদি পরিধান করা বৈধ নয়। কেউ পরে থাকলে তা খুলে ফেলবে। এটাই ইসলামের বিধান।
প্রশ্ন: স্বামী ধূমপান করে। কিন্তু স্ত্রী তাকে বুঝানোর পরেও তা পরিত্যাগ করে না। এমন স্বামীর সাথে ঘরসংসার করা কি জায়েজ?
❑ ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতি:
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ বলে, “একটা সিগারেটের গোড়া (ফিলটার) পুড়তে থাকার সময় যে ধোঁয়া বের হয় তা ধূমপায়ীর টেনে নেওয়া ধোঁয়াটুকুর চেয়ে ক্ষতিকর, কেননা এই ধোঁয়াটুকু কোনো রকম ছাঁকাছাঁকির ভেতর দিয়ে যায় না। আর এই ধোঁয়ায় থাকা বস্তুকণাগুলোও অনেক ছোট হয়। ফলে সেগুলো অনেক বেশি সময় ধরে বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে।’ এভাবেই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিলেন ভারতের কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতাল এবং মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক এসপি রায়।
এই জাতীয় পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, শ্বাসনালীসংক্রান্ত হাঁপানি, স্থায়ী শ্বাসকষ্ট, নানা ধরনের অ্যালার্জি এবং ফুসফুসের অন্যান্য রোগের জন্যও দায়ী বলে জানিয়েছেন গ্লোবাল হসপিটালসের মেডিকেল অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিত্সক নিলেশ লোকেশ্বর। ধূমপায়ীদের স্ত্রী বা স্বামী এবং কর্মক্ষেত্রে ধূমপানের ক্ষেত্রে সহকর্মীরা এ ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। এ ছাড়া নারী ও শিশুরা বরাবরই ধূমপান জনিত রোগের ঝুঁকিতে বেশি পড়ে।”
প্রতিবেদনে আও বলা হয়,
‘বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মারা যায় কোনো না কোনোভাবে তামাকজনিত নানা অসুস্থতার কারণে। আর এর মধ্যে প্রায় ছয় লাখ মানুষ ধূমপায়ী না হয়েও মারা যায় পরোক্ষ ধূমপানজনিত কারণে।” [দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা]
➤ ২য়ত: ধূমপায়ী স্বামীকে এর ভয়াবহতা, ক্ষয়-ক্ষতি ও ইসলামে তা হারাম হওয়ার বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে, ধূমপানে নিষেধ করতে হবে এবং নানাভাবে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। অত:পর সে যদি এই বদভ্যাস পরিত্যাগ করে এবং তার আচার-আচরণ ভালো হয় ও দীনমূখী হয় তাহলে তার সাথে সংসার অব্যাহত রাখায় আপত্তি নাই। কিন্তু সে যদি তা পরিত্যাগ না করে বরং আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে এবং তার সাথে ঘর সংসার করার কারণে স্ত্রী তার নিজের ও সন্তানদের স্বাস্থ্যগত, দীনদারিত্ব ও চারিত্রিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে এবং নানা চেষ্টার পরও তাকে এ পথ থেকে ফেরানো সম্ভব না হয় তাহলে খোলা তালাকের মাধ্যমে তার থেকে সংসার ভঙ্গ করা জায়েজ আছে।
প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায়, ফরসা বা সুন্দর চোখ বিশিষ্ট নারী কালো বোরখা পরিধান করে শুধু দুটি চোখ খোলা রাখে। এমন নারীকে খুব আকর্ষণীয় লাগে। এতে তার সৌন্দর্য যেন আরও বেশি প্রকাশ পায়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিতে নারীদের নিকাব পরিধান করার বিধান কী এবং রাস্তা চলাচলের জন্য চোখের কতটুকু খোলা রাখা জায়েজ?
◯ ক. ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলাদের মুখে নিকাব পরিধান করার বিধান কী?
উল্লেখ্য যে, এ অবস্থায় তারা নেকাব ও হাত মোজা পরিধান না করলেও মাথার ওড়না উপর থেকে ফেলে মুখমণ্ডল এবং হাতের লম্বা আস্তিন দ্বারা হাতের কব্জি দ্বয় পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখবে।
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল, ইহরাম ছাড়া অন্য অবস্থায় নিকাব পরিধান করা জায়েজ।
◯ খ. নিকাব কাকে বলে এবং চোখের কী পরিমাণ খোলা রাখা জায়েজ?
আর নিকাব পরিধান করা হলে, রাস্তা চলাচলের স্বার্থে দু চোখ (ভ্রূ’র নিম্নাংশ ও গালের উপরিভাগ) খোলা রাখা জায়েজ আছে। তবে শর্ত হল, ইচ্ছাকৃত ভাবে যেন চোখের ভ্রূ দ্বয় কিংবা চোখের নিচে গালের কোনও অংশ অতিরিক্ত প্রকাশ না করা হয়।
প্রশ্ন: গোস্ত/গোশত নাকি মাংস? মাংস শব্দ দ্বারা নাকি মায়ের অংশ বুঝায়? হিন্দুরা মাংস বলে তাই নাকি মুসলিমদের জন্য এই শব্দ ব্যবহার করা হারাম? এ ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।
❑ এ শব্দ দ্বয়ের আভিধানিক বিশ্লেষণ:
❑ বিশিষ্ট বাংলা ভাষা গবেষক, এ বিষয়ে বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ আমীন গোশত, মাংস ও মাংশ শব্দ সমূহের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন:
❑ হিন্দুরা মা তথা গরুর অংশ বুঝাতে ‘মাংস’ বলে-এ কথা কি ঠিক?
‘হিন্দুরা মা তথা গরুর অংশ বুঝাতে ‘মাংস’ বলে’-এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। কারণ তারা কেবল গরুর গোশতের ক্ষেত্রেই ‘মাংস’ শব্দ ব্যবহার করে না বরং ছাগল, হাস, মুরগি বা পাখির গোশতের ক্ষেত্রেও ‘মাংস’ শব্দ ব্যবহার করে কিন্তু ছাগল, হাস, মুরগি ইত্যাদি তো তাদের তাদের ‘মা’ নয়।
তাছাড়া বানান দেখুন। সঠিক বানান হল, মাংস; মাংশ নয়। বরং মাংশ শব্দটি বাংলা অভিধানে কোথাও নেই। সুতরাং ‘মাংস’ শব্দের বানান ‘মাংশ’ লেখা যেমন ভুল তেমনি ‘মায়ের (গরুর) অংশ’ ব্যাসবাক্যে সন্ধিবিচ্ছেদ করাটাও ভুল। যারা এমনটি বলে তারা নিতান্তই অজ্ঞতা বশত: বলে। সুতরাং বাংলা ব্যাকরণের দিক থেকেও এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
যিহার: পরিচয়, কাফফারা এবং এ সংক্রান্ত জরুরি বিধি-বিধান
তাই নিম্নে যিহারের সংজ্ঞা, এর কাফফারা এবং এ সংক্রান্ত জরুরি কিছু বিধান সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হল: وبالله التوفيق
❑ যিহার কী?
❑ যিহারের বিধান কী?
❑ যিহারের কাফফারা কী?
❑ স্ত্রীর পক্ষ থেকে কি স্বামীর সাথে যিহার হয়?
❂ কসম ভঙ্গের কাফফারা:
সুতরাং কেউ যদি আর্থিক সংকটের কারণে উপরোক্ত তিনটি জিনিসের কোনটি দ্বারা কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে লাগাতার তিনটি রোজা রাখবে।
❑ কোনও স্বামী যদি সাধারণভাবে তার স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করে তাহলে তার বিধান কী?
কোনও স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তার কোনও মাহরাম নারীর সাথে সাদৃশ্য না দিয়ে সাধারণভাবে হারাম ঘোষণা করে। যেমন: সে বলল, “তুমি আমার জন্য হারাম।” অথবা স্ত্রীকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে বলল, তুমি যদি এ কাজ করো তাহলে তুমি আমার জন্য হারাম বা এ জাতীয় বাক্য তাহলে তা যিহার বলে গণ্য হবে না।
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
তবে কেউ যদি উক্ত বাক্য বলার মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ত করে তাহলে তালাক বলে গণ্য হবে। কারণ “নিয়তের উপর সকল কর্ম নির্ভরশীল।” [সহিহ বুখারি]
❑ কোনও ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বা কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে তার কোনও মাহরামের সাথে বা তার বিশেষ কোনও অঙ্গের সাথে তুলনা করে তাহলে তার বিধান কী?
প্রশ্ন: একটি হাদিসে এসেছে, “অদূর ভবিষ্যতে ছাগল হবে মুসলিমের উত্তম সম্পদ।” এই হাদিসটিতে কী বুঝানো হয়েছে?
◈ শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রহ. বলেন, “ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে নিজের দীন রক্ষার্থে তা নিয়ে পর্বতের চূড়া অথবা উপত্যকায় পলায়ন করবে।” এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন, “ঈমানদার ব্যক্তি যখন গ্রাম ও শহরগুলোতে নিজের দীনের ব্যাপারে ভয় করবে তখন ফিতনা থেকে বাঁচতে তার ছাগল নিয়ে পাহাড়ের চূড়া এবং বৃষ্টির স্থান (উপত্যকা, মরুভূমি, সমতল ভূমি, বাগ-বাগিচা ইত্যাদি) স্থানে চলে যাবে।”
◈ তিনি আরও বলেন, “এমনটি ঘটেছে। যখন আলি রা. ও মুয়াবিয়া রা. এবং তৎপরবর্তী সময় বিভিন্ন ফিতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হয়েছিল তখন কিছু মানুষ এ সব ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে দূরে সরে নির্জন স্থানে চলে গিয়েছিল।” [alathar]
◉ ফিতনা-ফ্যাসাদের সময় নির্জনতা অবলম্বন প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস:
❑ ব্যখ্যা:
❑ কেমন ফিতনা-ফ্যাসাদের সময় নির্জনতা অবলম্বন করা উচিৎ এবং কখন উচিৎ নয়?
জুমহুর আলেমদের মতে, চতুর্দিকে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ফিতনা-ফ্যাসাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে পরিস্থিতি যদি এমন জটিল আকার ধারণ করে যে, মানুষের জন্য হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে অপারগ হওয়ার কারণে দীনের উপর টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যায় তখন সব কিছু ছেড়ে নির্জনে গিয়ে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এভাবে সে ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে এবং দীনকে হেফাজত করতে পারবে।
কিন্তু পরিস্থিতি যদি এতটা জটিল না হয় বরং সমাজে দীনের জ্ঞান চর্চার ব্যবস্থা থাকে, মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে, মসজিদে মসজিদে জুমা ও জামাতে সালাত প্রতিষ্ঠিত হয়, ঈদের সালাত কায়েম হয়, মাদরাসা-মসজিদগুলো আবাদ থাকে, দাওয়াতি কার্যক্রম চালু থাকে, মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগ পায়, সমাজে পাপাচার থাকলেও চেষ্টা করলে অনেক পাপ থেকে বাঁচা সম্ভব হয় তাহলে এমন পরিস্থিতিতে সমাজে বসবাস করা উত্তম। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا كَانَ مُخَالِطًا النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ خَيْرٌ مِنَ الْمُسْلِمِ الَّذِي لاَ يُخَالِطُ النَّاسَ وَلاَ يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ
“মুসলিমদের মাঝে যে ব্যক্তি লোকজনের সাথে মেশে না এবং তাদের পক্ষ থেকে কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণ করে না তার চেয়ে উত্তম হল ঐ ব্যক্তি, যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণ করে।” [সহীহ, ইবনে মাজাহ ৪০৩২, তিরমিজী, হা/ ২৫০]
এর ফলে সমাজে দীনের দাওয়াত অব্যাহত রাখা, মানুষকে কল্যাণের পথ দেখানো, সমাজ থেকে অন্যায় দুরীকরণে অবদান রাখা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ, অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, ঈমানদারের মৃত্যুতে তার জানাজায় অংশ গ্রহণ, রোগীর সেবা-শুশ্রূষা, ঈদ, জুমা ও জামাতে সালাত প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে অবারিত সওয়াব লাভ করা সম্ভব হবে।
ইমাম নওবি রাহ. বলেন, “নবীগণ এবং অধিকাংশ সাহাবি, তাবেঈ, আলেম এবং যাহেদগণ মানুষের সাথে মিশতেন।” [শরহে মুসলিম]
প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলারা কি খেলাধুলা করতে পারবে? খেলাধুলার ক্ষেত্রে ইসলামি মূলনীতি কী?
তবে এ ক্ষেত্রে কতিপয় ইসলামি মূলনীতি মেনে চলা আবশ্যক। যেমন:
নাশিদ তথা ইসলামি সঙ্গীত, গান-গজল ইত্যাদি চর্চা, পরিবেশন ও শ্রবণ করার বিধান: এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত
যাহোক, এ পর্যায়ে এই সব নাশিদ বা ইসলামি সংগীত বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি তা জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রথমত বলব, একজন সচেতন ও কর্তব্য পরায়ন সচেতন মুমিনের জন্য এইসব কথিত সংগীত গজল ও নাশিদ থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। কারণ এগুলো মূলত শিয়া, বিদআতি ও সুফিদের মাধ্যমে উৎপত্তি হয়েছে এবং কাল পরিক্রমায় বর্তমান যুগে এই আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইসলামের প্রথম যুগে এগুলোর কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
এগুলো শোনার নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন:
কুরআন তেলাওয়াত বা শোনার প্রতি অন্তরে গাফিলতি বা অমনোযোগিতা সৃষ্টি হওয়া, দুআ এবং জিকির-আজকার পাঠে অলসতা সৃষ্টি হওয়া, দীনের ইলম চর্চায় অবহেলা করা ইত্যাদি।
এসব কথিত নাশিদ বা ইসলামি সংগীত চর্চা করা ও পরিবেশনার জন্য শিল্পী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা বা এ কাজকে প্রফেশন হিসেবে গ্রহণ করা এবং শোনার প্রতি নেশা সৃষ্টি হওয়া গর্হিত কাজ। বিশেষ করে যেগুলোতে নারী কণ্ঠ, বিভিন্ন মিউজিক্যাল বা সিনেমার গানের সুর নকল, শিরক-বিদআত, অতিরঞ্জন ও শরিয়তে বিকৃতি মূলক কথাবার্তা হয়েছে। সেই সাথে যদি তাতে বাদ্যযন্ত্রের সংযোগ ঘটে তাহলে তা হারাম হওয়ার দিকটি আরও জটিল হবে-তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বাস্তবতা হচ্ছে, এ নাশিদ শিল্পীদের মন-মস্তিষ্কে সার্বক্ষণিক সঙ্গীত, নাশিদ, গান, সূর, তাল, লয়, ভোকাল, গায়কি ইত্যাদি বিষয়গুলো ঘুরপাক খায়। তাদের চিন্তা জগতে যে বিষয়টা কাজ করে তা হলো, কিভাবে নাশিদ বা সঙ্গীত পরিবেশ করে মানুষের চিত্ত রঞ্জন করা যায়, গলার সুর দ্বারা কিভাবে শ্রোতা-দর্শককে মুগ্ধ করা যায়, কিভাবে আরও বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করা যায়, কিভাবে প্রশংসা ও বাহবা কুড়ানো যায়, কিভাবে আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায় ইত্যাদি।
আর যারা নাশিদের সুরকার বা সুর ডিজাইনার তারা সাধারণত: সুর সৃষ্টির জন্য হারমোনিয়াম, সারেগামা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সাহায্য নিয়ে থাকে। অন্যথায় আকর্ষণীয় সুর সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।
❑ নাশিদ শোনার ব্যাপারে ইসলামি স্কলারদের অভিমত:
অবশ্য কবিতা আবৃত্তি করা বা শোনা শরিয়তে অনুমোদিত। কবিতা ও নাশিদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
নাশিদ বা ইসলামি সঙ্গীত বিষয়ে আধুনিক বিশ্বের কয়েকজন ইসলামি স্কলারের মতামত তুলে ধরা হল:
প্রশ্ন: ‘সালাফে সালেহিন’ কাদের বলা হয় এবং সালাফি কারা?
এই তিন যুগের পূণ্যবান মানুষদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আর সালাফিগণ এই পূর্বসূরিদের সাথে সম্পৃক্ত।
➤ শাইখ আলাবানি রাহ. বলেন,
“মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে বিভিন্ন জামায়াত বা দলের মত সালাফি আন্দোলন কোন এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত নয়। বরং এই সম্পৃক্ততা হল, পবিত্র ও নিষ্কলুষ একটি আদর্শের সাথে। কারণ পূর্বসূরিগণ সম্মিলিতভাবে গোমরাহির উপর থাকবেন-এটা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে পরবর্তী যুগের মানুষের ব্যাপারে শরিয়তে প্রশংসা বর্ণিত হয় নি। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নিন্দাবাদ বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি পূর্বোক্ত হাদিসের শেষাংশে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইঙ্গিত করে বলেছেন,
ثُمَّ يأتي مِن بعدِهِم أقوامٌ يَشْهَدُون ولا يُسْتَشْهَدُون إلى آخر الحديث
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ ِ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ أَوْ حَتّى تَقُوْمَ السَّاعَة
“আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে। বিরোধিতা কারীরা আল্লাহর হুকুম আসা পর্যন্ত তথা কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” এই হাদিসে শেষ জামানার একটি দলের বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। আরবি طَائِفَةٌ শব্দের মানে হল, একটি ছোট জামায়াত বা দল। আভিধানিক অর্থে এক বা একাধিক ব্যক্তি বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
অত:এব যখন আমরা সালাফিয়াতের অর্থ জানলাম, আরও জানলাম যে সালাফিগণ পূর্বসূরিদের সাথে সম্পৃক্ত এবং কোন মুসলিম যদি এই পূর্বসূরিদের আদর্শকে গ্রহণ করে তবে সেটাই সব চেয়ে নিরাপদ তখন কোন ব্যক্তি সালাফি ছাড়া অন্য অন্য কিছু হতে পারে না; সম্ভব নয়। কারণ, সালাফিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অর্থ হল এক নিরাপদ, নিষ্কলুষ এবং পবিত্র নীতি ও আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া।”
[সালাফি মতাদর্শ কী? আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানি রহ.]