Wednesday, October 29, 2025

জীবনে সফল হতে চাইলে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা বন্ধ করুন

 আমরা সবাই জীবনে সফলতা অর্জন করতে চাই। কিন্তু অনেক মানুষ আছে, যারা অন্যের সমালোচনার ভয়ে বা কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কায় সঠিক, যৌক্তিক ও উপকারী কাজ থেকেও পিছিয়ে আসে।

“পাছে লোকে কিছু বলে”— এই ধারণা থেকে আমাদেরকে ভয়, সংকোচ ও এক প্রকার লাজুকতা চেপে ধরে। ফলে আমাদের সংকল্পগুলো টালমাটাল করে। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা একমত যে, এ ধরনের মানসিকতা জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য এক বিশাল অন্তরায়। তাই আপনি যদি জীবনে বড় কিছু করতে চান এবং সফল হতে চান তবে আজই সবাইকে খুশি করার এই চেষ্টা বন্ধ করুন এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সাহসিকতার সাথে সঠিক কাজটি সঠিক পদ্ধতিতে করতে শুরু করুন। সেই সাথে ইস্তিখারা করুন এবং বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষের সাথে পরামর্শ করুন।
◈ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
اِحْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا تَعْجِزْ
“যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা গুরুত্ব সহকারে করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম হয়ো না।” [সহিহ মুসলিম, হা: ২৬৬৪]
◈ শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ. বলেন, “সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তিখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।”
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
“আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরামর্শ কর। অত:পর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসা কারীদেরকে পছন্দ করেন।“ [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
◈ কাতাদা রহ. বলেন, “মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তওফিক দেন।”
◈ ইমাম নওয়াবি রহ. বলেন, “আল্লাহ তাআলার নিকট ইস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ মানুষের জ্ঞান-গরিমা অপূর্ণ। সমষ্টিগতভাবে সে দুর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কী করবে না করবে বা কী সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।”
মনে রাখবেন, আপনার এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় হয়তো সব মানুষ খুশি হবে না কিন্তু অনেক মানুষ উপকৃত হবে। আর এই সাফল্যে আপনি নিজে অর্জন করবেন এক অপূর্ব আত্মতৃপ্তি ও অদম্য আত্মবিশ্বাস।
সুতরাং সিদ্ধান্ত নিন, সবাইকে খুশি করা নয় বরং নিজের লক্ষ্যই আপনার প্রথম অগ্রাধিকার যদি হয় তা সঠিক, যৌক্তিক ও উপকারী।
❑ জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য নির্দেশনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
মনে রাখবেন—
১. সবাইকে খুশি করা অসম্ভব: প্রত্যেক মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অভিজ্ঞতা এবং চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন। তাই আপনি কখনোই সবাইকে একসাথে খুশি করতে পারবেন না।
২. সমালোচনা নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন: লোকে কী বলবে বা ভাববে, তা নিয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করবেন না। আপনার নিজের উন্নতি ও লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দিন।
৩. নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দেবেন না: অন্যের জন্য বা অন্যকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের দীর্ঘদিনের লালিত কল্যাণমুখী স্বপ্নগুলোকে ত্যাগ করবেন না।
৪. সমালোচকদের উপেক্ষা করুন: আপনার কাজে সবাই একমত হবে না-এটা স্বাভাবিক। সুতরাং যারা নেতিবাচক সমালোচনা করে তাদের কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে চলুন।
৫. আপনার কাছে যা সঠিক তা অন্যের কাছে ভুল মনে হতে পারে। সবার কথা মেনে চলার দরকার নেই। কারণ প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন।
৬. সবাই আপনাকে বুঝবে না: আপনার জীবনের পথ, সংগ্রাম ও উদ্দেশ্য সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। যারা বোঝে না তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করবেন না।
৭. নেতিবাচক চিন্তাভাবনার মানুষ থেকে দূরে থাকুন: যারা নেতিবাচক কথা বলে বা অন্যের উপকারের জন্য কাজ করেও উৎসাহের পরিবর্তে নেতিবাচক ও হতাশা জনক মন্তব্য বা অনর্থক সমালোচনা করে তাদের এড়িয়ে চলুন।
৮. অন্যের ব্যর্থতায় আনন্দ পাওয়া মানুষদের এড়িয়ে চলুন: এমন কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ব্যর্থতা দেখে খুশি হয়। অনতিবিলম্বে এদের সঙ্গ ত্যাগ করুন।
৯. পরিবর্তনকে সবাই গ্রহণ করে না: বিষয়টা সঠিক কিন্তু অনেকের কাছে তা হয়ত নতুন বা অপরিচিত। তাই তা করতে গেলে সবাই আপনাকে সমর্থন করবে না, অথবা অনেকেই ভয় দেখাবে-এটাই স্বাভাবিক। তাই সঠিক কাজে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন।
১০. সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করলে আপনার নিজের ভেতরেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়বে এবং আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। নিজের মানসিক শান্তি ও সুস্থতার জন্য এই চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।
১১. নিজের মৌলিকত্ব ধরে রাখুন: অন্যকে খুশি করার জন্য যদি আপনি নিজের আসল স্বভাব ও ব্যক্তিত্ব বদলে ফেলেন তবে ভবিষ্যতে আপনাকে অনুতাপ করতে হতে পারে।
তাই জীবনে নিজের মৌলিকত্ব ও স্বাভাবিকতা ধরে রাখুন।
জনৈক মনিষী বলেন, “সাফল্যের মূল রহস্য কী তা জানি না। কিন্তু ব্যর্থতার মূল রহস্য হল, সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করা।”
মোটকথা, আপনি যত সুন্দর করেই কাজ করেন না কেন তা সব মানুষের নিকট পছন্দ হবে না-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আপনি সকলকে খুশি রাখতে চাইবেন তখন তা হবে আপনার জীবনের জন্য ব্যর্থতার মূল কারণ। সুতরাং সবাইকে খুশি করার উদ্দেশ্যে নয় বরং যেটা করা প্রয়োজন বা উপকারী সেটাই আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে সুন্দরভাবে সম্পাদন করার চেষ্টা করুন এবং তা অব্যাহত রাখুন। আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি একদিন অবশ্যই সফল হবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানদেরকে বঞ্চিত করে সকল সম্পদ আল্লাহর পথে দান করার বিধান

 প্রশ্ন: মোটামুটি সচ্ছল ৫ পুত্র সন্তানের এক পিতা তার সন্তানদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে তার একমাত্র পাঁচতলা বিশিষ্ট বিল্ডিংটি পাঞ্জেগানা মসজিদ হিসেবে দান করেন। এটা কি জায়েজ? ইসলামের দৃষ্টিতে কি এর জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।

উত্তর: কোনও মানুষ তার সকল সম্পদ আল্লাহর পথে দান করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে তার অবস্থার আলোকে দু ধরণের বিধান রয়েছে। যথা:
❂ এক. সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় দান:
একজন মানুষ তার সকল সম্পদের উপরে পূর্ণ কর্তৃত্ব শীল। সুতরাং একজন সুস্থ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় তার সম্পদকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনও বৈধ কাজে ব্যয় করার অধিকার রাখে তার অধীনস্থ যারা আছে যেমন: তার স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা বা যাদের ভরণ-পোষণ করা তার কাঁধে অর্পিত (ফরজ) তাদের জীবন-জীবিকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া।
সুতরাং সর্বনিম্ন এতটুকু সম্পদ রেখে সে যদি চায় সে তার বাকি সম্পদ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ-মাদরাসা, এতিমখানা কিংবা যে কোনও জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় করতে পারে। ইসলাম তাতে বাধা দেয় না। কিন্তু যদি তার অধীনস্থদের ভরণ-পোষণ সমপরিমাণ সম্পদ না রাখে তাহলে তা হারাম। কেননা ফরজ বাদ দিয়ে নফল কাজ করা শরিয়ত সম্মত নয়।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
كفى بالمرء إثما أن يضيع من يمون
“কোনও ব্যক্তির গুনাহগার (পাপী) হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার পোষ্যদের (যাদের ভরণপোষণ তার দায়িত্বে) অবহেলা করে।” [সহিহ মুসলিম হা: ৯৯৬]
❂ দুই: মূমুর্ষ অবস্থায় দান:
মুমূর্ষু অবস্থায় (মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায়) সম্পদ দান করার ব্যাপারে ইসলাম একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর তা হল, সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ। তবে এর থেকে কম হওয়া আরও ভালো।
হাদিসে এসেছে−
প্রখ্যাত সাহাবি সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. বলেন, বিদায় হজের সময় আমি এমন এক মারাত্মক ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছিলাম যে, মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এলেন।
আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রসুল, আপনি আমার যে মারাত্মক অসুস্থতা দেখছেন তা তো দেখছেনই। আমার অনেক সম্পদ আছে। আর আমার একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কোনও ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা (ওসিয়ত) করে দেব?’
[বুখারির অপর এক বর্ণনায় এসেছে: ‘তিনি বললেন: হে আল্লাহর রসুল, আমি কি আমার সমস্ত সম্পদ ওসিয়ত করে যাব?]
তিনি বললেন: ‘না’।
আমি বললাম: ‘তাহলে কি আমি অর্ধেক সদকা করব?’
তিনি বললেন:
لَا، الثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ ، إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ، إِلَّا أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَةُ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ
‘না, এক-তৃতীয়াংশ। আর এক-তৃতীয়াংশই অনেক বেশি। তুমি যদি তোমার ওয়ারিশদেরকে অভাব মুক্ত অবস্থায় রেখে যাও তবে তা মানুষকে হাত পাতার জন্য অভাবী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।”
[সহীহ বুখারী হা/২৭৪২), সহীহ মুসলিম, হা/ ১৬২৮]
মোটকথা,
১. সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় দান:
ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ (যা ফরজ) রেখে বাকি পুরোটা দান করা জায়েজ, যদি না তা পোষ্যদের আবশ্যকীয় হক নষ্ট করে। পোষ্যদের হক রক্ষা করা ফরজ। ফরজ বাদ দিয়ে নফল (সদকা) করা জায়েজ নয়।
২. মুমূর্ষু অবস্থায় (মৃত্যুশয্যায়) দান/ওসিয়ত:
সম্পদের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ ওসিয়ত করা জায়েজ; এর বেশি নয়।
সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে বলব, উক্ত দানকারী পূর্বোল্লেখিত শরিয়তের বিধান মেনে তার সম্পদ দান করতে পারে।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান একটি শিরক মিশ্রিত গান

 “মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান” এই গানটির লেখক হলেন, মোহিনী চৌধুরী। এটি একটি বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান, যা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই গানটার মধ্যে বেশ কিছু শিরকি এবং শরিয়ত বিরোধী কথাবার্তা আছে।

সুতরাং মুসলিমদের জন্য এই গানটি গাওয়া হারাম। তবে হিন্দু বা অন্য ধর্ম/আদর্শে বিশ্বাসীরা যা ইচ্ছা গাইতে পারে। সেটা তাদের বিষয়।
যাহোক, প্রিয় বন্ধুগণ, মুসলিমদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্য এই গানের কয়েকটি শরিয়ত বিরোধী, হিন্দুয়ানি বিশ্বাস এবং শিরকের উদাহরণ তুলে ধরা হল:
❂ ১. “মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান”-এই বাক্যটি ইসলামি ভাবধারা সম্পন্ন নয় বরং হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির সাথে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ।
কারণ-
ক. মন্দির: হিন্দুদের দেবালয় যেখানে দেব-দেবীর মূর্তি থাকে এবং তাদের নিকটে প্রার্থনা, উপাসনা ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যকলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
খ. মন্দিরে বলিদান:
বলি অর্থ: বিশেষ পূজোপকরণ।
দান অর্থ: ত্যাগ। অর্থাৎ দেবতার উদ্দেশ্যে বিশেষ ভাবে কিছু দান করার নাম বলিদান বা দেবতার উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ।
আর এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ‘মন্দিরে বলিদান’ হিন্দুদের ধর্মীয় আচারের অন্তর্ভুক্ত যা ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়াবহ শিরক।
❂ ২. “যাঁরা স্বর্গগত তাঁরা এখনও জানে স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।”
এখানে কয়েকটি শরিয়ত বিরোধী কথা আছে।” যথা:
ক. যারা দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করে ইসলামের দৃষ্টিতে তাদেরকে সরাসরি ‘স্বর্গবাসী’ (জান্নাতবাসী) বলা জায়েজ নাই। বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কোনও মুসলিম যদি রাষ্ট্রে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা কিংবা ইসলামি রাষ্ট্রকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করতে গিয়ে শত্রুর হাতে নিহত হয় তাহলে সে শহিদি মর্যাদা লাভ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় নয়।
খ. মুসলিমদের নিকট স্বর্গ (জান্নাত)-এর থেকে দেশ বা অন্য কিছু প্রিয় নয়। বরং মুমিন জীবনের সবচেয়ে প্রিয় অভীষ্ট লক্ষ্য হল, জান্নাত প্রাপ্তি। আর সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সে তার সমস্ত অর্থ-সম্পদ, ভিটা-মাটি, সমাজ-দেশ এমনকি নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে।
❂ ৩. “আজি রক্ত কমলে গাঁথা মাল্যখানি বিজয় লক্ষ্মী দেবে তাঁদেরই গলে।”
কেউ যদি বিশ্বাস করে ‘বিজয়লক্ষ্মী’ বা বিজয় ও সৌভাগ্যের দেবী বিজয় দান করে তাহলে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদে পরিণত হবে। কারণ তা আল্লাহর সাথে সরাসরি শিরক। এটি মূলত: হিন্দুয়ানি বিশ্বাস।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ
“বিজয় তো আসে একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকে।” [সূরা আনফাল: ১০]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে নিয়তে ত্রুটি থাকলে তার পরিণতি খুবই ভয়ানক

 ইবাদতের প্রাণশক্তি হল, ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা। তা সকল প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলে তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হবে।

দ্বীনের ইলম অর্জন নিঃসন্দেহে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এক্ষেত্রে যদি নিয়তের মধ্যে ত্রুটি থাকে তাহলে তা ইলম অন্বেষণকারীর জন্য আখিরাতে মহাবিপদের কারণ হবে। অর্থাৎ ইলম শেখার মূল উদ্দেশ্যই যদি হয়, অর্থ উপার্জন, পদমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান সুসংহত করা, যশ ও খ্যাতি লাভ অথবা অন্য কোনও দুনিয়ার স্বার্থ তাহলে তা ইলম অন্বেষণকারীর জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে।
তাই ইলম শিক্ষা অর্জনের পূর্বে নিয়তের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। আর তা হল, আল্লাহর দ্বীন জানা, মানা এবং সমাজে তার প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
❑ নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
◈ ১. রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنْ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِي رِيحَهَا “
“আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে ইলম অর্জন করতে হয় তা যদি কোন মানুষ শুধুমাত্র দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে তবে সে কিয়ামত দিবসে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।” [সুনান আবু দাউদ, হা/৩৩৬৪,, সহিহহুত তারগিব: ১০৫]
◈ ২. আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُبَاهِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ لِيَصْرِفَ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ فَهُوَ فِي النَّارِ
“যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা করে এই উদ্দেশ্যে যে, সে এর দ্বারা আলিমদের (জ্ঞানীদের) সাথে গর্ব করবে অথবা মূর্খদের সাথে ঝগড়া করবে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।”
[সহীহুল জামি’: ৬১৫৮, আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন]
◈ ৩. অপর একটি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
، ورجلٌ تعلَّمَ العِلْمَ وعلَّمَهُ ، وقَرَأَ القُرآنَ ، فأُتِيَ بهِ فعَرَّفَهُ نِعمَهُ ، فعَرَفَها ، قال : فما عمِلْتَ فيها ؟ قال : تعلَّمْتُ العِلْمَ وعلَّمْتُهُ ، وقَرَأْتُ فِيكَ القُرآنَ ، قال : كذبْتَ، ولكنَّكَ تعلَّمْتَ العِلْمَ لِيُقالَ عالِمٌ ، وقرأْتَ القُرآنَ لِيُقالَ : هو قارِئٌ فقدْ قِيلَ ، ثمَّ أُمِرَ بهِ فسُحِبَ على وجْهِهِ حتى أُلْقِيَ في النارِ
“আর এক ব্যক্তি যে ইলম (জ্ঞান) শিখেছিল ও অপরকে শিখিয়েছিল এবং কুরআন পাঠ করেছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর আল্লাহ তাকে তাঁর নিয়ামতসমূহ চেনাবেন, আর সে তা চিনতে পারবে।
আল্লাহ বলবেন: তুমি এই নিয়ামতসমূহের দ্বারা কী করেছ?
সে বলবে: আমি ইলম শিখেছি ও শিখিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি।
আল্লাহ বলবেন: তুমি মিথ্যা বলেছ। বরং তুমি ইলম শিখেছিলে, যেন তোমাকে ‘আলিম’ বলা হয় এবং কুরআন পাঠ করেছিলে, যেন তোমাকে ‘কারী’ বলা হয়। (দুনিয়াতে) তো তা বলা হয়েই গেছে।
অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”
[সহিহ মুসলিম, হা/১৯০৫। এটি সেই বিখ্যাত হাদিসের অংশ যা অনুযায়ী কিয়ামতের দিন প্রথম যাদের দ্বারা জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে।তারা হল, একজন শহিদ, একজন আলিম/ক্বারী এবং একজন দানশীল ব্যক্তি যারা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে (রিয়া) তাদের কাজ করেছিল] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিয়তের পরিশুদ্ধতা দান করুন এবং তাঁর অসন্তোষ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

পিতামাতা ও স্বামী-সন্তানের জন্য দুআ করলে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে এর দ্বারা উপকৃত হয়

 প্রশ্ন: আমি আমার পিতামাতা ও স্বামীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক অনেক দোয়া করি। এই দোয়ার কারণে কী তারা কিয়ামতে উপকৃত হবে?

উত্তর: জি, অবশ্যই হবে। আপনার এই দোয়ার কারণে আপনার পিতামাতা ও স্বামী কিয়ামতের দিন উপকৃত হবেন, ইনশা আল্লাহ।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عنْه عَمَلُهُ إِلَّا مِن ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِن صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو له
“যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়:
১. সাদকায়ে জারিয়া,
২. এমন ইলম যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং
৩. এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।”
[সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৩১]
এমনকি যে কোন মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য দোয়া করলে তারাও উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ চাই তাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক থাকুক অথবা না থাকুক। সুতরাং আপনি যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে আপনার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি,স্বামী এবং অপরাপর অন্যান্য মুসলিমদের জন্য দোয়া করুন। আপনার দোয়া তাদের জন্য আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ, কবরের আজাব থেকে মুক্তি, আখেরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যম হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন এবং তাদের উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে :
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

দাঈর অপরিহার্য গুণাবলি

 দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহর পথে আহবান করা হল, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মর্যাদা পূর্ণ কাজ। এটিই ছিল যুগে যুগে সকল নবী-রসুলের মূল দায়িত্ব এবং মিশন। এটি সরাসরি মহান আল্লাহর নির্দেশ। সে কারণে দাওয়াতের কাজ করা সাধ্য অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। যার যতটুকু সামর্থ্য ও যোগ্যতা আছে সে তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দাওয়াতের পথে অবদান রাখবে। আল্লাহর পথে আহ্বানকারী (দাঈ) তিনি সেই সম্মানিত ব্যক্তি, যিনি মানবতাকে সত্যের পথে আহ্বান করেন, সৎকাজের আদেশ দেন ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু মানুষকে আহ্বান করেন না নিজেও হন সেই আহ্বানের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তার দাওয়াত মুখে শুধু নয়, চরিত্র ও আচরণে প্রতিফলিত হয়। দাঈ মানে শুধু বক্তা বা লেখক নন। তিনি সেই মানুষ, যার প্রতিটি কথা, আচরণ ও হাসিতেও দাওয়াতের আলো ঝলমল করে। সে কারণে তার মধ্যে কিছু গুণাবলী থাকা অপরিহার্য। নিম্নে একজন দাঈর মধ্যে যে সকল গুনাবলী থাকা অত্যন্ত জরুরি সেগুলো কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

১. আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক: আল্লাহর পথের আহ্বানকারী তাকওয়া বা আল্লাহভীতি, হারাম থেকে দূরে থাকা, আমলে সালেহ বা সৎকর্ম এবং অধিক পরিমাণে দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
২. মানুষের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক: এক জন দাঈ মানুষের সাথে আন্তরিকতা পূর্ণ আচরণ, সাহায্য, সহানুভূতি এবং ভালোবাসার মাধ্যমে হৃদয়ের সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
৩. উদার ও প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গি: দাঈর জন্য সংকীর্ণতা মুক্ত ও সচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সর্বক্ষেত্রে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকে ন্যায়-নীতি ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি লালন করবেন।
৪. যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হবে তাদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা: তিনি যাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাবেন তাদের সংস্কৃতি, মানসিকতা ও প্রয়োজন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের সাথে কথা বলা এবং আচরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
৫. সহনশীলতা ও ক্ষমা: দাওয়াতের বিরোধিতা বা শত্রুতার মুখোমুখি হলে কিংবা কেউ কথা ও আচরণে কষ্ট দিলে সে ক্ষেত্রে সহনশীলতা এবং ক্ষমার মনোভাব বজায় রেখে সংযম পূর্ণ কোমল আচরণ করবে‌।
৬. কথা ও কাজের মিল: একজন দাঈর কথা এবং কাজের মিল থাকা অপরিহার্য।
৭. সত্যের ওপর অবিচলতা ও একাগ্রতা: দাঈ চাপ, ভয় বা প্রলোভনের মুখেও হক থেকে সরবে‌ না।
৮. বিনয় ও নম্রতা: যে ব্যক্তি দাওয়াতের পথে কাজ করবে সে অহংকার মুক্ত জীবন গঠন করবে‌। অহংকার শুধু হারাম নয় বরং কবিরা গুনাহ। তার কর্তব্য, সবার সঙ্গে ভদ্রতা ও নম্রতা পূর্ণ আচরণ করা। বিনয় ও নম্রতা মানুষকে কাছে টানে এবং অহংকার ও উগ্রতা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়।
৯. সাহস ও দৃঢ়তা: একজন দাঈ হবে সাহসী এবং নির্ভীক। সে হবে সত্যের পক্ষে ইস্পাত কঠিন চিত্তের অধিকারী। সে কখনো ভীরু ও কাপুরুষতার পরিচয় দিবে না। প্রয়োজনে সে ত্যাগ স্বীকার করার জন্যও প্রস্তুত থাকবে।
১০. ইখলাস বা আন্তরিকতা: সকল দাওয়াতি কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিগত যশ-খ্যাতি, অর্থ উপার্জন কিংবা দুনিয়াবি স্বার্থচিন্তা থাকবে না।
১১. সবর বা ধৈর্য: দাওয়াতের ফলাফল বিলম্বিত হলেও সে আশা না হারিয়ে অবিচলভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। কেননা ধৈর্য সফলতার চাবিকাঠি।
১২. লেবাস-পোশাক এবং ব্যক্তিত্বে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকা: আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারী পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত পোশাক পরিধান করবেন, দাওয়াতের মর্যাদার সাথে মানানসই ব্যক্তিত্ব বজায় রাখবেন এবং সম্মানজনকভাবে নিজেকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন।
১৩. জ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে দাওয়াত দেওয়া: দাঈর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, তিনি যে বিষয়ের দিকে মানুষকে আহ্বান করবেন সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন ও পড়াশোনা করা এবং সমসাময়িক বিষয়াদির দিকে নজর রাখা। জ্ঞান হল, আলো। জ্ঞান হল, শক্তি। জ্ঞান মানুষকে শক্তি এবং সাহসিকতার সাথে পথ চলতে সাহায্য করে। একজন দাঈ এই সকল গুনাবলী অর্জন করে তিনি নিজের জীবনকে দাওয়াতের ময়দানে জীবন্ত উদাহরণে পরিণত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। মহান আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

ফেরেশতাগণের নাম এবং তাঁদের প্রধান দায়িত্বসমূহ

 ফেরেশতাগণ হলেন, আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত পুত-পবিত্র এবং সম্মানিত সৃষ্টি। তাঁরা কখনও আল্লাহর আদেশ অমান্য করেন না। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী তাঁদের মধ্যে যাঁদের নাম ও কাজ জানা যায়। সেগুলো হলো:

❐ ১. প্রধান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ:
১. জিবরিল (আলাইহিস সালাম): তার দায়িত্ব, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবি-রসুলগণের নিকট ওহি পৌঁছে দেওয়া। তাঁকে “রূহুল কুদস” (পবিত্র আত্মা) বা “রূহুল আমিন” (বিশ্বস্ত আত্মা)ও বলা হয়।
২. মিকাইল (আলাইহিস সালাম): তিনি বৃষ্টি বর্ষণ এবং উদ্ভিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত।
৩. ইসরাফিল (আলাইহিস সালাম): তিনি শিঙ্গায় (صور) ফুঁক দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত।
প্রথম ফুঁকে সব কিছু ধ্বংস হবে এবং দ্বিতীয় ফুঁকে সবাই জীবিত হয়ে উঠবে।
৪. মালাকুল মউত (আলাইহিস সালাম): তিনি রূহ কবজ (প্রাণ সংহার) করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
(দ্রষ্টব্য: কুরআন ও হাদিসে তাঁর নাম ‘আজরাঈল’ হিসেবে আসেনি। বরং ‘মালাকুল মউত’ বা মৃত্যুর ফেরেশতা হিসেবে এসেছে।)
❐ ২. আমল সংরক্ষণ ও হিসাব-নিকাশের ফেরেশতাগণ:
৫. কিরামান কাতিবীন: মানুষের ভালো ও মন্দ সকল আমল লিপিবদ্ধ কারী ফেরেশতা মণ্ডলী।
(ডান পাশের জন নেকি বা সৎ কাজ এবং বাম পাশের জন গুনাহ বা খারাপ কাজ লেখেন)।
৬. হাফাযাহ (সংরক্ষক): বান্দাকে তার ঘুম, জাগরণ ও সকল অবস্থায় রক্ষা করা।
৭. মুনকার ও নাকির (আলাইহিমাস সালাম): কবরে মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা ও তার ইমানের পরীক্ষা নেওয়া।
❐ ৩. জান্নাত ও জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক:
৮. রিদওয়ান (আলাইহিস সালাম): জান্নাতের রক্ষক বা প্রধান তত্ত্বাবধায়ক। (তবে এ নামটি অধিক বিশুদ্ধ মতে প্রমাণিত নয়)
৯. মালিক (আলাইহিস সালাম): জাহান্নামের রক্ষক বা প্রধান তত্ত্বাবধায়ক।
❐ ৪. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব:
১০. আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণ: আল্লাহ তাআলার আরশ বহন করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
১১. সাইয়াহুন (ভ্রমণকারী) ফেরেশতাগণ: তাঁরা জিকির ও দ্বীনি মজলিসসমূহ খুঁজে বেড়ান এবং তাতে উপস্থিত হন।
১২. দিন ও রাতে পর্যায়ক্রমে দুনিয়ার বুকে আগমনকারী ফেরেশতাগণ: তারা দিনে ও রাতে মানুষের কাছে পালাক্রমে আসেন এবং তাদের আমল আল্লাহর কাছে নিয়ে যান।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ফেরেশতাদের ওপর যথাযথভাবে ইমান আনার তৌফিক দিন। আমিন।
সূত্র: ইসলাম ওয়েব
❖❖ প্রশ্ন: জান্নাতের রক্ষক ‘রিদওয়ান’ কি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর:
জান্নাতের রক্ষকের (খাজিন) নাম, রিদওয়ান (رِضوانُ) বলে ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। তবে আলেমদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই নামটি কুরআন এবং সহীহ সুন্নাহতে সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়নি।
জান্নাতের রক্ষক ‘রিদওয়ান’ সম্পর্কে আলেমদের অভিমত:
✪ ১. সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: রিদওয়ান কি জান্নাতের রক্ষক? এবং তাঁর নাম কোথায় উল্লেখ হয়েছে?
তারা উত্তরে বলেন,
لمشهورُ عند العُلَماءِ: أنَّ اسمَ خازِنِ الجَنَّةِ رِضْوانُ، وجاء ذِكْرُه في بعضِ الأحاديثِ التي في ثبوتِها نَظَرٌ. واللهُ أعلَمُ
“আলেমদের মাঝে প্রসিদ্ধ হল, জান্নাতের রক্ষকের নাম রিদওয়ান। কিছু হাদিসে এটি উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু সেগুলো প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপারে পর্যালোচনা করার অবকাশ আছে।। আল্লাহু আলাম-আল্লাহই ভালো জানেন।”
[ফাতাওয়ায়ে লাজনাহ দায়িমা, দ্বিতীয় পর্ব, ২/৩৫৩]
✪ ২. শাইখ ইবনে উসাইমিন ফতোয়া:
বিখ্যাত আলেম শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে বলেছেন:
أمَّا رِضْوانُ فمُوَكَّلٌ بالجنَّةِ، واسمُه هذا ليس ثابتًا ثبوتًا واضِحًا كثُبوتِ مالِكٍ خازِنِ النَّارِ، لكِنَّه مشهورٌ عند أهلِ العِلمِ بهذا الاسمِ. واللهُ أعلَمُ
“তবে রিদওয়ান জান্নাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর তাঁর এই নামটি জাহান্নামের রক্ষক মালিকের নামের সুস্পষ্ট প্রমাণের মতো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়। তবে এই নামেই তিনি আলেমদের মধ্যে সুপরিচিত। । আল্লাহু আলাম-আল্লাহই ভালো জানেন।”
[মাজমূ’ ফাতাওয়া ওয়ার রাসাইল-শাইখ আল উসাইমিন, ৩/১৬১]
উভয় ফতোয়ার সারমর্ম হলো, ‘রিদওয়ান’ নামটি আলেম সমাজে বহুল পরিচিত ও প্রসিদ্ধ হলেও জাহান্নামের রক্ষক ‘মালিকের’ নামের মতো এর সপক্ষে সহিহ দলিলের সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। বরং কিছু হাদিসে এর উল্লেখ পাওয়া যায় যার সত্যতার ভিত্তি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
অনুবাদ ও গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।

পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির উদ্দেশ্য এবং পর্নোগ্রাফির কুফল ও পরিণাম এবং মুক্তির উপায়সমূহ

 প্রশ্ন: পর্নোগ্রাফি কী? পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির উদ্দেশ্য কী? অশ্লীল ও নগ্ন ভিডিও দেখার কুফল ও পরিণাম কী কী? পর্নোগ্রাফির আগ্রাসন ও পর্নো ওয়েবসাইট থেকে মুক্তির উপায়গুলো কি কি?

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর ‘পর্নোগ্রাফি’ শব্দটি ইংরেজি Pornography থেকে উদ্ভূত, যা এসেছে গ্রিক শব্দ Pornographia থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ হলো— অশ্লীল বা যৌন উত্তেজনামূলক বিষয় উপস্থাপন করা।পর্নোগ্রাফি বলতে মূলত এমন কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও, চলচ্চিত্র বা অভিনয়কে বোঝায়, যার উদ্দেশ্য কেবল যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টি করা, কিন্তু যার কোনো শৈল্পিক, নৈতিক বা শিক্ষামূল্য নেই। অন্যভাবে বলা যায়, পর্নোগ্রাফি হলো— এমন সব অশ্লীল দৃশ্য, সংলাপ, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন উপস্থাপনা, যা মানুষের মনে কৃত্রিমভাবে যৌন আকর্ষণ বা কামোদ্দীপনা জাগায়।আর এ ধরনের অশ্লীল বিষয়বস্তু বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে—যেমন: বই, সাময়িকী, পোস্টার, আলোকচিত্র, অঙ্কন, পেইন্টিং, চলচ্চিত্র, ভিডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ কিংবা ইন্টারনেট। সংক্ষেপে বলা যায়—“যে কোনো প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে যৌন বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে মানুষের মনে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি বা কামনা উদ্রেক করার উদ্দেশ্যে তৈরি সামগ্রীই পর্নোগ্রাফি।(বিস্তারিত জানতে দেখুন; Bangla Academy English-Bengali Dictionary, Reprint, January, 2004, Page: 593; বাংলাদেশের আইন কানুন প্রতিবেদন, ৬ জুন, ২০১৫)
.
▪️পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?
.
বিশ্বে ইন্টারনেটের সূচনা হয় ১৯৬৯ সালে। বাংলাদেশে এটি চালু হয় ১৯৯৩ সালে এবং ১৯৯৬ সালে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। শুরুতে জ্ঞান ও তথ্যের আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমে জনপ্রিয়তা পেলেও, বাস্তবতা হলো—আজ এর অন্যতম প্রধান প্রসারতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অশ্লীলতা ও পর্নোগ্রাফির বিস্তার। পর্নোগ্রাফি তৈরিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা, আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি। পরিসংখ্যান বলছে,বর্তমানে ইন্টারনেটে প্রায় ৪.৬ মিলিয়ন পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট এবং ৪৫০ মিলিয়ন পর্নো ওয়েবপেজ সক্রিয় রয়েছে—এবং এই সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।বাংলাদেশও এই ভয়াবহ প্রবণতা থেকে মুক্ত নয়। স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট পর্নো ভিডিও ছড়িয়ে পড়াকে করে তুলেছে আরও সহজ ও দ্রুততর। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ৩২ সেকেন্ডে একটি নতুন পর্নো ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড হচ্ছে। এই অশ্লীল উপকরণগুলো অনায়াসে পৌঁছে যাচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিসের কর্মকর্তাদের হাতেও। এই অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের শিল্প—যা আজ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে—এর মূল উদ্দেশ্যই হলো: সকল শ্রেণির মানুষ অর্থাৎ নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীর সামনে তাদের নোংরামি, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, যেনা-ব্যভিচারের দৃশ্যকে নানা নাম ও আকর্ষণীয় আবরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা; ফলে মানুষকে ধীরে ধীরে নৈতিকতা ও লজ্জাশীলতা থেকে বিচ্যুত করে দেওয়া। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানুষকে নৈতিকতার পথ থেকে সরিয়ে, উদাসীন ও যৌন বিকৃত মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে।আজ লক্ষ কোটি যুবক-যুবতী এই প্রভাবের শিকার হচ্ছে। তারা বিনষ্ট হচ্ছে শারীরিক, মানসিক ও নৈতিকভাবে, এবং তাদের চরিত্রে ছড়িয়ে পড়ছে কলুষিত আচরণ। ইসলামের শত্রুরা এই নীরব যুদ্ধের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও জাতিকে অস্থিতিশীল করতে সচেষ্ট। এ পথ ধরে অনেকেই অবচেতনভাবে পাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের ধ্বংস ও নরকপ্রাপ্তির দিকে নিয়ে যায়। অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফি কেবল ব্যক্তিকে নয়, পুরো জাতিকে হুমকির মুখে ফেলে। কারণ প্রত্যেক জাতির যুবসমাজ হলো ভবিষ্যতের আলো, জাতির মেরুদণ্ড। যদি তারা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জাতির ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০০৬ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৩৭২ জন মানুষ সার্চ ইঞ্জিনে পর্নো কনটেন্ট খুঁজছিল। এখন সেই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহ সামাজিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে।
.
▪️পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল ভিডিও দেখার কুফল গুলো কি কি:
.
পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে আমাদের আমলনামা কলুষিত হয়, দীন ও চরিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং অন্তর শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।পর্ণ ও অশ্লীলতায় ডুবে থাকা ব্যক্তির অন্তর রোগাক্রান্ত হয়। সে অন্তরে ভয়-ভীতি, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও নি:সঙ্গতা অনুভব করে।অন্তর থেকে লজ্জা শরম বিদায় নেয়, ঈমানের স্বাদ উঠে যায় এবং আল্লাহ ভীতি লোপ পায়।তারপর সে ধীরে ধীরে নানা পাপাচারে লিপ্ত হয়, জিনা-ব্যভিচার ও নোংরামির পথ খুঁজতে থাকে, নিজের উপর জুলুম করতে থাকে, হস্তমৈথুন করে, তার শরীর ও চেহারায় পাপাচারের চিহ্ন ফুটে উঠে এবং শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। বিবাহিত হলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য শুরু হতে পারে এবং প্রেম-পরকীয়া জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ তখন হালাল স্ত্রীও তার কাছে অ পছন্দনীয় হয়ে যেতে পারে।একপর্যায়ে ইবাদত-বন্দেগিতে অনীহা সৃষ্টি হয়। এমনকি সম্ভাবনা আছে, একসময় সে আল্লাহর রাস্তা থেকে সরে যাবে।(আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন)।
.
▪️পর্ণ ও অশ্লীল-নগ্ন ভিডিও দেখার পরিণাম কি:
.
আমাদের জানা জরুরি যে,আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন।আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ“আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছে এবং হারাম করেছেন পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জানো না।” [সূরা আরাফ: ৩৩) ইসলামে পরপুরুষ বা পরনারীর দিকে কামনা-বাসনা সহকারে তাকানো হারাম। অনুরূপভাবে পরপুরুষ-পরনারীর লজ্জা স্থানের দিকে তাকানো হারাম। চাই তা সরাসরি হোক, বা ছবি বা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক।তাছাড়া যা কিছু ফেতনা সৃষ্টি করতে পারে বা কামভাবের উদ্রেক ঘটাতে পারে অথবা হারাম বিষয়ে নিমজ্জিত করতে পারে, তার সবকিছুর দিকে দৃষ্টি দিতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনقُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ. وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ “মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে”।(সূরা আন-নূর, ২৪/৩০-৩১)।
.
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,الْبَصَرُ هُوَ الْبَابُ الْأَكْبَرُ إِلَى الْقَلْبِ، وَأَعْمَرُ طُرُقِ الْحَوَاسِّ إِلَيْهِ، وَبِحَسَبِ ذَلِكَ كَثُرَ السُّقُوطُ مِنْ جِهَتِهِ. وَوَجَبَ التَّحْذِيرُ مِنْهُ، وَغَضُّهُ وَاجِبٌ عَنْ جَمِيعِ الْمُحَرَّمَاتِ، وَكُلِّ مَا يُخْشَى الْفِتْنَةُ مِنْ أَجْلِه.”চোখ হচ্ছে হৃদয়ে প্রবেশের সবচেয়ে বড় দরজা এবং ইন্দ্রিয়সমূহে ঢোকার সবচেয়ে উর্বর পথ। এই চোখের কারণেই পদস্খলন ঘটে। ফলে সে ব্যাপারে সতর্ক করা জরুরী। চোখের কারণে যত হারাম কাজ হতে পারে এবং যত ধরনের ফেতনায় নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তার সবগুলো থেকে চোখতে অবনমিত রাখা অপরিহার্য”।(ইমাম কুরতুবী,আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন তাফসীর কুরতুবী- (কায়রো: দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যাহ, ২য় মুদ্রণ: ১৩৮৪ হি./১৯৬৪ খৃ.), খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা/২২৩)
.
ইমাম আব্দুর রহমান নাছের আস সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,أَرْشِدِ الْمُؤْمِنِيْنَ، وَقُلْ لَهُمْ: الَّذِيْنَ مَعَهُمْ إِيْمَانٌ، يَمْنَعُهُمْ مِنْ وُقُوْعِ مَا يُخِلُّ بِالْإِيْمَانِ: {يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ} عَنِ النَّظَرِ إِلَى العَوْرَاتِ وَإِلَى النِّسَاءِ الأَجْنَبِيَّاتِ، وَإِلَى المُرْدَانِ الَّذِيْنَ يُخَافُ بِالنَّظَرِ إِلَيْهِمُ الْفِتْنَةُ، وَإِلَى زِيْنَةِ الدُّنْيَا الَّتِيْ تَفْتِنُ، وَتُوْقِعُ فِي الْمَحْذُوْرِ.‘আপনি মুমিনদেরকে নির্দেশনা দিন এবং তাদেরকে বলুন, যাদের সাথে ঈমান আছে, সেই ঈমানের বিচ্যুতি ঘটাতে পারে এমন বিষয় থেকে তাদেরকে তাদের ঈমানই বাধা প্রদান করবে: তারা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখবে গোপন বিষয়সমূহ থেকে, বেগানা নারীদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া থেকে এবং এমন কিশোর-যুবকের দিকে দৃষ্টি দেওয়া থেকে, যাদের দিকে তাকালে ফেতনার আশঙ্কা রয়েছে। অনুরূপভাবে তারা দুনিয়াবী এমন সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি দেওয়া থেকে তাদের চোখকে অবনমিত রাখবে, যেসব সৌন্দর্য ফেতনায় ফেলতে পারে এবং নিষিদ্ধ বিষয়ে নিপতিত করতে পারে”।(আব্দুর রহমান নাছের আস-সা‘দী, তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান (মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম মুদ্রণ: ১৪২০ হি./২০০০ খৃ.),পৃষ্ঠা: ৫৬৬)
.
এছাড়াও পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে চোখের গুনাহ হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا“নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা ইসরা: ৩৬) কিয়ামতের দিন আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। যেমন: আল্লাহ বলেন,الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‎“আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।”(সূরা ইয়াসিন: ৬৫) শুধু তাই নয়, আমরা প্রকাশ্যে বা গোপনে যা কিছু করি সব কিছু আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ফেরেশতামন্ডলী রেকর্ড রাখছেন। কিয়ামতের দিন আমাদের সব গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে-যদি আমরা তওবা না করি। সেজন্যই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন,لَا يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ، وَلَا الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ، وَلَا يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَلَا تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ ‘কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষের এবং কোনো নারী যেন অপর নারীর ‘আওরাত’ না দেখে। আর কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নিচে না থাকে। অনুরূপ কোনো নারীও যেন অপর নারীর সাথে এক কাপড়ের নিচে না থাকে”(সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮) তিনি আরো বলেন,لاَ تُبَاشِرُ المَرْأَةُ المَرْأَةَ، فَتَنْعَتَهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا ‘কোনো নারী অন্য নারীর সাথে শরীর মিলিয়ে শুবে না। কেননা সে তার স্বামীর নিকট অপর নারীর শরীরের বর্ণনা দিবে এবং মনে হবে সে যেন তাকে চাক্ষুস দেখছে”।(সহীহ বুখারী, হা/৫২৪০)
.
হাদীসটির ব্যাখায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,فَفِيهِ تَحْرِيمٌ نَظَرُ الرَّجُلِ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَالْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَهَذَا لَا خِلَافَ فِيهِ وَكَذَلِكَ نَظَرُ الرَّجُلِ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ حَرَامٌ بِالْإِجْمَاعِ وَنَبَّهَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِنَظَرِ الرَّجُلِ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ عَلَى نَظَرِهِ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَذَلِكَ بِالتَّحْرِيمِ أَوْلَى ‘এ “হাদীসে একজন পুরুষের অন্য পুরুষের গোপনাঙ্গের দিকে এবং একজন মহিলার অন্য মহিলার গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো হারাম হওয়ার প্রমাণ আছে। আর এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। একইভাবে, কোনো পুরুষের জন্য কোনো মহিলার গোপনাঙ্গের দিকে এবং কোনো মহিলার জন্য কোনো পুরুষের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো ইজমার ভিত্তিতে হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন পুরুষকে অন্য পুরুষের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানোর ব্যাপারে সতর্ক করার মাধ্যমে একজন পুরুষের জন্য একজন মহিলার গোপনাঙ্গের দিকে তাকানোর ব্যাপারে সাবধান করেছেন। বরং এটা আরো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হারাম”।(ইমাম নববী; আল-মিনহাজ শারহস সহীহি মুসলিম খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩০)
.
শুধু তাই নয়,নির্জনে সংঘটিত গুনাহের জন্যও পরকালে ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।এ সম্পর্কে একটি সতর্কতামূলক হাদীস এসেছে ইমাম ইবনু মাজাহ এর বর্ণনায়। প্রখ্যাত সাহাবী সাওবান (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “আমি আমার উম্মতের এমন কিছু মানুষের কথা জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামা পাহাড়সম শুভ্র নেকী নিয়ে হাজির হবে
আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন সে নেকগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণাতে পরিণত করে দিবেন”। সাওবান (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় আমাদের জানিয়ে দিন, আমাদের জন্য পরিষ্কার করে বলুন— যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই।”তখন নবী ﷺ বললেন,“তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই জাতি-গোষ্ঠীভুক্ত। তোমরা যেমন রাতে নামাজ আদায় কর, তারাও তেমনই ইবাদত করে। কিন্তু পার্থক্য এই যে— তারা নির্জনে অবস্থান করে আল্লাহ্‌র নিষিদ্ধ বিষয়গুলোতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।”(ইবনু মাজাহ: হা/৪২৪৫; ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদিসটি সহিহ বলেছেন)
.
হাফেয ইবনুল জাওযি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:”الحذر الحذر من الذنوب، خصوصًا ذنوب الخلوات ، فإن المبارزة لله تعالى تُسقط العبد من عينه. وأصلح ما بينك وبينه في السر، وقد أصلح لك أحوال العلانية “গুনাহ থেকে সাবধান! গুনাহ থেকে সাবধান! বিশেষতঃ নির্জনের গুনাহ থেকে। কেননা আল্লাহ্‌র সাথে দ্বন্দ করা বান্দাকে আল্লাহ্‌র চোখে মূল্যহীন করে দেয়। তোমার ও আল্লাহর মাঝের নিভৃতের অবস্থাকে সংশোধন কর; তবে তিনি তোমার বাহ্যিক অবস্থাগুলো সংশোধন করে দিবেন।”(ইবনুল জাওযি;সাইদুল খাত্বের পৃষ্ঠা-২০৭) তবে উপরোক্ত হাদিসটির উদ্দেশ্য এ নয়: যে ব্যক্তি নির্জনে গুনাতে লিপ্ত হয় এমন প্রত্যেক ব্যক্তি। কেননা সগিরা গুনাহ থেকে কেউই মুক্ত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামম বলেছেন:”প্রত্যেক বনী আদম ভুলকারী সর্বোত্তম ভুলকারী হচ্ছে তওবাকারীগণ।”(সুনানে তিরমিযি হা/২৪৯৯), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন] বরং এ হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে: মুনাফিকগণ কিংবা লৌকিকতাতে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ। যারা মানুষের সামনে নিজেদের দ্বীনদারি ও তাকওয়া প্রকাশ করে। আর যখন মানুষের চোখের আড়াল হয় তখন তারা তাদের আসল রূপে প্রকাশিত হয়। তারা আল্লাহ্‌ তাআলার মর্যাদাকে ভ্রুক্ষেপ করে না।
.
ইবনে হাজার আল-হাইছামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:(الْكَبِيرَةُ السَّادِسَةُ وَالْخَمْسُونَ بَعْدَ الثَّلَاثِمِائَةِ: إظْهَارُ زِيِّ الصَّالِحِينَ فِي الْمَلَأِ وَانْتِهَاكُ الْمَحَارِمِ وَلَوْ صَغَائِرَ فِي الْخَلْوَةِ) أَخْرَجَ ابْنُ مَاجَهْ بِسَنَدٍ رُوَاتُهُ ثِقَاتٌ عَنْ ثَوْبَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: لَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَعْمَالٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بَيْضَاءَ فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ هَبَاءً مَنْثُورًا…. الحديث ثم قال في آخر البحث:تَنْبِيهٌ: عَدُّ هَذَا هُوَ ظَاهِرُ الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ وَلَيْسَ بِبَعِيدٍ وَإِنْ لَمْ أَرَ مَنْ ذَكَرَهُ؛ لِأَنَّ مَنْ كَانَ دَأْبُهُ إظْهَارَ الْحَسَنِ وَإِسْرَارَ الْقَبِيحِ يَعْظُمُ ضَرَرُهُ وَإِغْوَاؤُهُ لِلْمُسْلِمِينَ؛ لِانْحِلَالِ رِبْقَةِ التَّقْوَى وَالْخَوْفِ مِنْ عُنُقِهِ.
“৩৫৬ তম কবিরা গুনাহ: মানুষের সামনে নেককারদের ভাব প্রকাশ করা, আর নিভৃতে গুনাহতে লিপ্ত হওয়া; এমনকি সেটা ছগিরা গুনাহ হলেও। ইবনে মাজাহ এক সনদে সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, যে সনদের রাবীগণ ছিকাত (নির্ভরযোগ্য)। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন:”আমি আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু মানুষের কথা জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামা পাহাড়সম শুভ্র নেকী নিয়ে হাজির হবে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন সে নেকগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণাতে পরিণত করে দিবেন।…”এরপর এ আলোচনার শেষে তিনি বলেন: সতর্কতা: এ বিষয়টিকে কবিরা গুনাহর মধ্যে গণ্য করাটা প্রথম হাদিসটির বাহ্যিক মর্ম এবং তা অবান্তর কিছু নয়; যদিও আমি কাউকে কবিরা গুনাহর মধ্যে এটাকে উল্লেখ করতে দেখিনি। কেননা যে ব্যক্তির অভ্যাস হল সুন্দর ভাব ফুটিয়ে তোলা; আর মন্দ ভাবকে লুকিয়ে রাখা মুসলমানদের উপর তার অনিষ্ট ও ধোঁকা জঘন্য— তাকওয়ার রজ্জু ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে এবং তার পক্ষ থেকে ভয় থাকার কারণে।”(আল-জাওয়াযের আন ইকতিরাফিল কাবায়ির (৩৫৬) আমরা আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি।
▪️ পর্নোগ্রাফির আগ্রাসন ও পর্নো ওয়েবসাইট থেকে মুক্তির উপায়গুলো কি কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
পর্নোগ্রাফির আসক্তি একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি—যার চিকিৎসা অপরিহার্য। এই আসক্তির সর্বাধিক কার্যকর চিকিৎসা হলো এর মূল উৎস থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, স্বেচ্ছায় কিংবা প্রয়োজনে কঠোরভাবে। পাশাপাশি নিজের সময়কে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারী কাজে ব্যয় করা, যেন শয়তানের জন্য কোনো অবসর না থাকে।এছাড়া প্রয়োজনে একজন যোগ্য মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে; যাতে তিনি প্রয়োজনীয় ঔষধ,চিকিৎসা এবং পরামর্শের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারেন।এছাড়াও পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি কিভাবে এই ভয়াবহ পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন এ সম্পর্ক নিম্নে আমরা কিছু উপদেশ ও পদক্ষেপ উল্লেখ করব:
(১) এই হারাম আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে নারী-পুরুষ উভয়কেই আত্মসংযম, ধৈর্য ও অবিচল পরিশ্রমের পথ অবলম্বন করতে হবে। এর জন্য করণীয় হলো—ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যেমন মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি) ব্যবহারে সতর্ক থাকা; কেননা এগুলোই প্রায়শই গুনাহের দরজা খুলে দেয়। রাসূল (ﷺ) বলেন,”নিশ্চয়ই চোখের যিনা হচ্ছে দেখা।”(সহীহ মুসলিম হা/৬৬৪৭)
.
(২) মন ও চিন্তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকর কাজে যেমন—শিক্ষা, ইবাদত, দাওয়াহ, কিংবা কোনো সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত রাখা।সর্বক্ষণ আল্লাহভীতি হৃদয়ে জাগ্রত রাখা—গোপনে ও প্রকাশ্যে যেন সর্বদা স্মরণ থাকে, “আল্লাহ আমাকে দেখছেন।যখন কেউ আন্তরিকভাবে নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে চায়, তখন আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তার জন্য মুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। কবি বলেন:إذا ما خلوت الدهر يوماً فلا تقل خلوت ولكن قل علي رقيب ولا تحسبن الله يغفل ســاعـة ولا أن ما تخفي عليه يغيـب”যদি তুমি কোনো দিন একাকী হও তাহলে বলো না আমি একা; বরং বলো: আমার একজন পর্যবেক্ষক আছেন। কখনো মনে করো না যে আল্লাহ এক মুহূর্ত গাফেল হন, মনে করো না যে, তুমি তার থেকে যা গোপন করছ তা তিনি জানেন না।” অন্য একজন কবি বলেন:وإذا خلوت بريبة في ظلمة والنفس داعية إلى الطغيان فاستحي من نظر الإله وقل لها إن الذي خلق الظلام يراني”যদি তুমি অন্ধকারে নির্জনে কোনো সন্দেহজনক কাজ করতে চাও এবং মন তোমাকে সীমালঙ্ঘনের দিকে আহ্বান করতে থাকে, তখন আল্লাহর দৃষ্টিপাতকে লজ্জা করো এবং মনকে বলো: যিনি এই অন্ধকারের স্রষ্টা তিনি আমাকে দেখছেন।”(গৃহীত ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৩৫১৯)।
.
(৩) এই অভ্যাস থেকে বাঁচার প্রেরণা যেন হয় আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা।কেননা আল্লাহ বলেন:قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِهِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَهُمۡ ؕ ذٰلِكَ اَزۡكٰی لَهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ”মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।”(সূরা নূর:৩০) আয়াতটি ইঙ্গিত দেয় যে, ব্যভিচারের পথ থেকে বিরত থাকা এবং দৃষ্টিসীমা সংরক্ষণ করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি মূলত চোখ ও দৃষ্টির দুষ্ট ব্যবহার থেকে উদ্ভূত।হাফেয ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে লিখেছেন,النظرة سهم سم إلى القلب ‘দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীর, যা মানুষের হৃদয়ে বিষের উদ্রেক করে”।(তাফসীর ইবনে কাসীর;খণ্ড;৩;পৃষ্ঠা;৩৭৬) আর হাদিসে এসেছে,আবু উমামা (রাঃ) বলেন,আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,اكفلوا لي بست اكفل لكم بالجنة… غضوا ابصارهم “তোমরা ছয়টি বিষয়ে আমাকে নিশ্চয়তা দাও। তাহ’লে আমি তোমাদের জান্নাতের যিম্মাদার হব। (তার মধ্যে একটি হ’ল) তোমরা তোমাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী কর”।(মুসনাদে আহমাদ হা/২২৭৫৭)
.
(৪) স্থায়ী সমাধান তথা বিয়ের মাধ্যমে এ অভ্যাসকে প্রতিরোধ করা। কারণ এটাই ছিল যুবকদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:,يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ-“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম”। (সহীহ বুখারী/৫০৬৫;সহীহ মুসলিম/১৪০০)
.
(৫) নানা রকম কু-চিন্তা ও খারাপ ভাবনা থেকে দূরে থাকা। দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যাণকর চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কারণ কু-চিন্তাকে বাড়তে দিলে সেটা এক পর্যায়ে কর্মের দিকে নিয়ে যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রয়ের বাইরে গিয়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন তা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
.
(৬) দৃষ্টিকে নত রাখা। কারণ কোন ব্যক্তি বা অশ্লীল ছবির দিকে দৃষ্টিপাত করা, সেটা জীবিত মানুষের হোক কিংবা আঁকা হোক, বাঁধহীন দৃষ্টি ব্যক্তিকে হারামের দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে”[সূরা নূর, আয়াত: ৩০] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তুমি দৃষ্টির পর দৃষ্টি দিবে না”[সুনানে তিরমিযি (২৭৭৭), আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন] তাই প্রথম দৃষ্টি, যে দৃষ্টি হঠাৎ করে পড়ে যায় সেটাতে গুনাহ না থাকলেও দ্বিতীয় দৃষ্টি হারাম। এছাড়া যে সব স্থানে যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে তোলার উপকরণ বিদ্যমান থাকে সেসব স্থান থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।একজন আরবী কবি বলেছেন,كل الحوادث مبداها من النظر+ ومعظم النار من مستصقر الشرر كم نظرة فتك في قلب صاحبها + فتك السهام بلا قوس ولا وتر والمرء ما دام ذا عين يقلبها + في اعين الغيد موقوف على الخطر يسر مقلته ما ضر مهجته + لا مرحبا بسرور عاد بالضرر،অর্থাৎ সমস্ত (যৌন) দুর্ঘটনার সূত্রপাত দৃষ্টি থেকেই হয়। অধিকাংশ অগ্নিকান্ড ঘটে ছোট অঙ্গার থেকেই। কত দৃষ্টি তার কর্তার হৃদয়কে ধ্বংস করেছে, ধনুক ও তারহীন তীরের মত। চোখওয়ালা মানুষ যতক্ষণ কামিনীদের চোখে চোখ রেখে বারবার দৃষ্টিপাত করে, ততক্ষণ সে বিপদের উপর দন্ডায়মান থাকে। যে জিনিস তার আত্মার জন্য ক্ষতিকর, তাই দিয়ে সে নিজের চক্ষুকে তুষ্ট করে। অথচ সেই খুশিকে কোন স্বাগতম নয়, যার পরিণাম হ’লো ক্ষতি।”(শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী; বই পাপ তার শাস্তি ও মুক্তির উপায়,পৃষ্ঠা; ৪০)
.
(৭) এ ধরণের কু-অভ্যাসের ফলে যেসব শারীরিক ক্ষতি ঘটে থাকে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। যেমন- দৃষ্টিশক্তি ও স্নায়ুর দুর্বলতা, প্রজনন অঙ্গের দুর্বলতা, মেরুদণ্ডের ব্যথা ইত্যাদি যেসব ক্ষতির কথা চিকিৎসকরা উল্লেখ করে থাকেন। অনুরূপভাবে বিভিন্ন মানসিক ক্ষতি; যেমন- উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মানসিক পীড়া অনুভব করা। এর চেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে-এগুলো দেখার পরে অনেকেই হস্তমৈথুন করে নামায নষ্ট করা। যেহেতু বারবার গোসল করা লাগে, যা করা কঠিন। বিশেষতঃ শীতের রাত্রিতে। অনুরূপভাবে রোযা নষ্ট করা।
.
(৮) কঠিন ইচ্ছা ও শক্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। শয়তানের কাছে হার না মানা। একাকী না থাকা; যেমন একাকী রাত কাটানো। হাদিসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন পুরুষকে একাকী রাত কাটাতে নিষেধ করেছেন।[মুসনাদে আহমাদ, হাদিসটি ‘সহিহুল জামে’ তে রয়েছে]
.
(৯) ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলা। যেমন- ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না-ঘুমানো; যেহেতু এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিষেধ আছে।
.
(১০) ধৈর্য ও সংযমের গুণে নিজেকে ভূষিত করা। কারণ হারাম কাজ থেকে ধৈর্য রাখা আমাদের উপর ফরয; যদিও আমাদের মাঝে সেগুলো করার চাহিদা থাকে। আমাদের জানা উচিত, যদি আমরা নিজেকে সংযমী রাখার চেষ্টা করি তাহলে পরিশেষে সেটা ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য আখলাকে পরিণত হবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সংযম অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তাকে সংযমী বানিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী থাকার চেষ্টা করবেন আল্লাহ্‌ তাকে অমুখাপেক্ষী বানিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য রাখার চেষ্টা করবেন আল্লাহ্‌ তাকে ধৈর্যশীল বানিয়ে দিবেন। কোন মানুষকে ধৈর্যের চেয়ে প্রশস্ত ও কল্যাণকর আর কোন দান দেয়া হয়নি।”(সহিহ বুখারী হা/১৪৬৯)
.
(১১) কেউ যদি এই গুনাহটি করে ফেলে তাহলে তার উচিত অনতিবিলম্বে তওবা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, নেকীর কাজ করা এবং ক্ষমাপ্রাপ্তির ব্যাপারে হতাশ না হওয়া। কেননা এ পাপটি একটি কবিরা গুনাহ।
.
(১২) সর্বশেষ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র কাছে আত্মসমর্পণ করে সাহায্য প্রার্থনা করা,দোয়ার মাধ্যমে তাঁর কাছে মিনতি করা, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এই কু-অভ্যাস থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায়। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়াকারীর ডাকে সাড়া দেন।আল্লাহ বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০] রাসূল (ﷺ) বলেন:وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنْ الصَّبْرِ”যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নি‘আমত কাউকে দেয়া হয়নি।”(সহীহ বুখারী হা/১৪৬৯)
.
অতএব, আমাদের মুসলিম যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি হলো—পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ ক্ষতি অনুধাবন করা এবং তা থেকে আত্মরক্ষার কার্যকর পথ গ্রহণ করা। সচেতনতা, ধৈর্য ও আত্মসংযমের মাধ্যমে আমরা এ মারাত্মক আসক্তি ও তার ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। পরিশেষে, আমরা আল্লাহ্ তাআলার কাছে ক্ষমা, হিদায়াত ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। নিশ্চয়ই আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

Translate