প্রশ্ন: মোটামুটি সচ্ছল ৫ পুত্র সন্তানের এক পিতা তার সন্তানদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে তার একমাত্র পাঁচতলা বিশিষ্ট বিল্ডিংটি পাঞ্জেগানা মসজিদ হিসেবে দান করেন। এটা কি জায়েজ? ইসলামের দৃষ্টিতে কি এর জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: কোনও মানুষ তার সকল সম্পদ আল্লাহর পথে দান করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে তার অবস্থার আলোকে দু ধরণের বিধান রয়েছে। যথা:
❂ এক. সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় দান:
একজন মানুষ তার সকল সম্পদের উপরে পূর্ণ কর্তৃত্ব শীল। সুতরাং একজন সুস্থ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় তার সম্পদকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনও বৈধ কাজে ব্যয় করার অধিকার রাখে তার অধীনস্থ যারা আছে যেমন: তার স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা বা যাদের ভরণ-পোষণ করা তার কাঁধে অর্পিত (ফরজ) তাদের জীবন-জীবিকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া।
সুতরাং সর্বনিম্ন এতটুকু সম্পদ রেখে সে যদি চায় সে তার বাকি সম্পদ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ-মাদরাসা, এতিমখানা কিংবা যে কোনও জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় করতে পারে। ইসলাম তাতে বাধা দেয় না। কিন্তু যদি তার অধীনস্থদের ভরণ-পোষণ সমপরিমাণ সম্পদ না রাখে তাহলে তা হারাম। কেননা ফরজ বাদ দিয়ে নফল কাজ করা শরিয়ত সম্মত নয়।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
كفى بالمرء إثما أن يضيع من يمون
“কোনও ব্যক্তির গুনাহগার (পাপী) হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার পোষ্যদের (যাদের ভরণপোষণ তার দায়িত্বে) অবহেলা করে।” [সহিহ মুসলিম হা: ৯৯৬]
❂ দুই: মূমুর্ষ অবস্থায় দান:
মুমূর্ষু অবস্থায় (মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায়) সম্পদ দান করার ব্যাপারে ইসলাম একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর তা হল, সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ। তবে এর থেকে কম হওয়া আরও ভালো।
হাদিসে এসেছে−
প্রখ্যাত সাহাবি সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. বলেন, বিদায় হজের সময় আমি এমন এক মারাত্মক ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছিলাম যে, মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এলেন।
আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রসুল, আপনি আমার যে মারাত্মক অসুস্থতা দেখছেন তা তো দেখছেনই। আমার অনেক সম্পদ আছে। আর আমার একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কোনও ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা (ওসিয়ত) করে দেব?’
[বুখারির অপর এক বর্ণনায় এসেছে: ‘তিনি বললেন: হে আল্লাহর রসুল, আমি কি আমার সমস্ত সম্পদ ওসিয়ত করে যাব?]
তিনি বললেন: ‘না’।
আমি বললাম: ‘তাহলে কি আমি অর্ধেক সদকা করব?’
তিনি বললেন:
لَا، الثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ ، إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ، إِلَّا أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَةُ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ
‘না, এক-তৃতীয়াংশ। আর এক-তৃতীয়াংশই অনেক বেশি। তুমি যদি তোমার ওয়ারিশদেরকে অভাব মুক্ত অবস্থায় রেখে যাও তবে তা মানুষকে হাত পাতার জন্য অভাবী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।”
[সহীহ বুখারী হা/২৭৪২), সহীহ মুসলিম, হা/ ১৬২৮]
মোটকথা,
১. সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় দান:
ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ (যা ফরজ) রেখে বাকি পুরোটা দান করা জায়েজ, যদি না তা পোষ্যদের আবশ্যকীয় হক নষ্ট করে। পোষ্যদের হক রক্ষা করা ফরজ। ফরজ বাদ দিয়ে নফল (সদকা) করা জায়েজ নয়।
২. মুমূর্ষু অবস্থায় (মৃত্যুশয্যায়) দান/ওসিয়ত:
সম্পদের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ ওসিয়ত করা জায়েজ; এর বেশি নয়।
সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে বলব, উক্ত দানকারী পূর্বোল্লেখিত শরিয়তের বিধান মেনে তার সম্পদ দান করতে পারে।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment