Wednesday, October 29, 2025

অবৈধ বিবাহের মাধ্যমে কি আত্মীয়তার নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয়

 প্রশ্ন: অবৈধ বিবাহের মাধ্যমে কি আত্মীয়তার (“হুরমাতে মুসাহারাত” বা “মাহরাম সম্পর্কের) নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয়?

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️ প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর আমাদের জানা উচিত যে,বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে চারজনের সাথে বিবাহ হারাম হয়,তারা হলেন:
(১).পিতার স্ত্রী, আল্লাহ তাআলা বলেন:وَ لَا تَنۡكِحُوۡا مَا نَكَحَ اٰبَآؤُكُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَ ؕ اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَۃً وَّ مَقۡتًا ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا “নারীদের মধ্যে তোমাদের পিতৃ পুরুষ যাদেরকে বিয়ে করেছে, তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না,তবে পূর্বে যা সংঘটিত হয়েছে (সেটা ক্ষমা করা হলো) নিশ্চয় তা ছিল অশ্লীল, মারাত্মক ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট পন্থা।”(সূরা নিসা: ২২) জাহেলিয়াত যুগে পিতার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে পুত্ররা বিনাদ্বিধায় বিয়ে করে নিত।(দেখুন,সহীহ বুখারী হা/৪৫৭৯) এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এই নির্লজ্জ কাজটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন এবং একে ‘আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ বলে অভিহিত করেছেন।ফলে আলেমগণ বলেন, পিতা কোন নারীকে বিয়ে করার সাথে সাথেই সন্তানদের জন্য সে নারী হারাম হয়ে যাবে। চাই তার সাথে পিতার সহবাস হোক বা না হোক। অনুরূপভাবে যে নারীকে পুত্র বিয়ে করেছে সেও পিতার জন্য হারাম হয়ে যাবে, তার সাথে পুত্রের সহবাস হোক বা না হোক।
.
(২). স্ত্রীর মা, যদি স্বামী স্ত্রীর সাথে বিবাহ চুক্তি সম্পন্ন করে, অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে বিবাহের চুক্তির সাথে সাথেই স্ত্রীর মা হারাম হয়ে যায়, সহবাসের প্রয়োজন নেই; আল্লাহ তাআলা বলেন:” وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْا”আর তোমাদের স্ত্রীদের মাতাগণ (শ্বাশুড়ী)…”(সূরা আন-নিসা: ২৩) এই আয়াতে বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে স্ত্রীর মা অর্থাৎ, শাশুড়ীকে। (স্ত্রীর নানী-দাদীও এর অন্তর্ভুক্ত হবে) চিরতরে হারাম করা হয়েছে, সুতরাং যদি কোন মহিলাকে বিবাহ করার পরে পরেই সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তবুও তার মায়ের (শাশুড়ীর) সাথে বিবাহ হারাম হবে। তবে যদি কোন মহিলাকে বিয়ের পর সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয হবে।
.
(৩). স্ত্রীর মেয়ে, যদি স্ত্রীর সাথে সহবাস হয়; দলিল আল্লাহ তাআলার বাণী:وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ”এবং তোমাদের স্ত্রীদের ঐ সকল কন্যা, যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে, যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছ। যদি তোমরা তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে (তাদের কন্যাদেরকে বিবাহ করলে) তোমাদের কোনো পাপ নেই।” (সূরা আন-নিসা: ২৩) আয়াতে رَبِيْبة ‘রাবীবা’ (সৎ কন্যা) অর্থাৎ স্ত্রীর আগের স্বামীর মেয়ে। এটা শর্তের ভিত্তিতে হারাম হয়। যেমন, যদি সৎ কন্যার মায়ের সাথে সহবাস করে নেয় তবেই সে হারাম হবে, অন্যথা তার সাথে বিয়ে হালাল। فِي حُجُوْرِكُمْ (যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে) এটা অধিকাংশ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, শর্ত হিসাবে বলা হয়নি। অতএব এই মেয়ে যদি কোন অন্য কারো অভিভাবকত্বে বা অন্য স্থানে লালিতা-পালিতা হয় বা অন্য জায়গায় বসবাস করে থাকে, তবুও তার সাথে বিবাহ হারাম।
.
(৪). একই সাথে দুই বোন, অথবা স্ত্রী এবং তার ফুফু, অথবা স্ত্রী এবং তার খালাকে বিবাহ করা হারাম: কেননা আল্লাহ তা‘আলা পুরুষদের জন্য মহিলাদের মধ্যে হারাম করা বিষয়গুলোর তালিকা দিতে গিয়ে বলেছেন,”আর দুই বোনকে একত্রে (বিবাহ বন্ধনে) জমা করাও (তোমাদের জন্য হারাম), তবে যা অতীত হয়ে গেছে, হয়ে গেছে।”(সূরা আন-নিসা: ২৩)। এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন;لا تُنكَحُ المرأةُ على عَمَّتِها، ولا على خالتِها أخرجه”কোন নারীকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে বিবাহ করা যাবে না।”(সহীহ বুখারী হা/৫১০৯, সহীহ মুসলিম হা/১৪০৮)। অন্যত্র তিনি বলেন,”ভাতিজীর সাথে তার ফুফুকে বিবাহ করা যাবে না। অনুরূপভাবে খালার সাথে ভাগ্নিকে বিবাহ করা যাবে না”।(সহীহ মুসলিম হা/১৪০৮ (৩৫)।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিধানের হেতু (কারণ) বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:فإنَّكُنَّ إذا فَعَلْتُنَّ ذلك قَطَّعْتُنَّ أَرْحَامَكُنَّ“যদি তোমরা এটি কর তাহলে আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোকে ছিন্ন করবে”।(সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৪১১৬) আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো এ কারণে ছিন্ন হবে যেহেতু সতীনদের মাঝে ঈর্ষা থাকে। তাই যদি সতীনদের একজন অন্যদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়া হয়; তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন ঘটবে। তবে যদি একজনকে তালাক্ব দিয়ে দেয়া হয় এবং তার ইদ্দত শেষ হয়ে যায় তখন তার বোন, ফুফু বা খালাকে বিয়ে করা জায়েয; সেই অনিষ্টটি অটুট না থাকার কারণে।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,”একই চুক্তিতে দুই বোনকে বিবাহ করা কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট দলীল দ্বারা হারাম। তা তারা সহোদরা হোক, অথবা শুধু পিতৃসূত্রে বা মাতৃসূত্রে বোন হোক, অথবা তারা রক্তের সম্পর্কের হোক কিংবা দুধের সম্পর্কের, তারা স্বাধীন নারী হোক বা দাসী হোক, কিংবা একজন স্বাধীন নারী ও অন্যজন দাসী হোক- সব ক্ষেত্রেই এটি হারাম। এ ব্যাপারে ছাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম), তাবিঈগণ এবং সমগ্র সালাফ সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন।ইবনু মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) ও এ ব্যাপারে ইজমা বর্ণনা করেছেন”।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ২৩৫)।
.
▪️ দ্বিতীয়ত: আলেমগণ সর্বসম্মত যে—বৈধ (সঠিক) বিবাহ, ত্রুটিপূর্ণ (ফাসিদ) বিবাহ এবং সন্দেহজনক সহবাস—এই তিন অবস্থার যেকোনোটির মাধ্যমেই হুরমাতে মুসাহারাত (আত্মীয়তার নিষেধাজ্ঞা) প্রতিষ্ঠিত হয়।তবে তারা মতভেদ করেছেন এমন ক্ষেত্রে, যখন সম্পর্কটি সম্পূর্ণ অবৈধ হয়—যেমন শরিয়ত স্বীকৃত নয় এমন বিবাহ বা প্রকাশ্য ব্যভিচার। অর্থাৎ, কেউ যদি কোনো নারীকে মুতআ (অস্থায়ী) বিবাহে গ্রহণ করে, অথবা তার সঙ্গে ব্যভিচার করে—তাহলে ঐ নারীর কন্যা তার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে কি না—এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ বিদ্যমান। এক্ষেত্রে আলেমগন দুটি ভাগে বিভক্ত।
.
(১).হানাফি ও হাম্বলি মাজহাবের আলেমগণ বলেন, যদি কেউ কোনো নারীর মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করে, তাহলে ঐ নারীর মেয়ে তার জন্য হারাম হয়ে যায়। কারণ, তাদের মতে অবৈধ সহবাসও (জিনা) মুসাহারার ক্ষেত্রে বৈধ সহবাসের মতোই প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ, যেমন কেউ কোনো নারীর সঙ্গে বৈধভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহবাস করলে ঐ নারীর কন্যা তার জন্য সর্বসম্মতভাবে হারাম হয়ে যায়, তেমনি অবৈধভাবে সহবাসের মাধ্যমেও একই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। এর দলিল হলো আল্লাহ তাআলার বাণী:( وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ )
“আর তোমাদের সৎ কন্যারা যারা তোমাদের গৃহে লালিত হয়েছে, তোমাদের সেই স্ত্রীদের থেকে, যাদের সঙ্গে তোমরা সহবাস করেছ; কিন্তু যদি তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস না করে থাকো, তবে তাতে তোমাদের কোনো গুনাহ নেই।”(সূরা আন-নিসা: ২৩)
.
(২).অপরদিকে মালিকি ও শাফেয়ি মাজহাবের আলেমদের মতে, ব্যভিচারের কারণে স্ত্রী হারাম হয়ে যায় না। অর্থাৎ, কেউ যদি কোনো নারীর মায়ের (শাশুড়ীর) সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে সেই নারীর (স্ত্রীর) সঙ্গে তার বিবাহ নিষিদ্ধ হবে না।তাদের বক্তব্য হলো—হারাম কাজ কোনো হালাল বিষয়কে হারাম করে না। আর দলিলের আলোকে এটাই বিশুদ্ধ মত।কারণ শরিয়ত সম্মতভাবে বৈধ পন্থায় বিবাহের মত হালাল এবং সুদৃঢ় সম্পর্ক তৃতীয় পক্ষের কারো অপরাধের কারণে নিমিষেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। তালাক ব্যতিরেকে কখনোই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় না। ইসলামে এমন কোনো বিধান নেই। তাছাড়া হাদিসে এসেছে,প্রখ্যাত সাহাবী,‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন:أنَّ وطءَ الحرامِ لا يُحرِّمُ”যিনা বৈবাহিক বন্ধনকে হারাম করে না”।(মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, বায়হাক্বী হা/১৩৯৯১; ইমাম আলবানী, ইরওয়া; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৮৭; হা/১৮৮১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,”এক লোক তার শাশুড়ীর সাথে যেনা করলে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘তারা পাপী। কিন্তু এ পাপ তার স্ত্রীকে তার জন্য হারাম করে না”।(বায়হাক্বী, ইমাম আলবানী, ইরওয়া; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৮৮) প্রখ্যাত সাহাবী,আলী (রাঃ) বলেন, যেনা বৈধ বিবাহ বন্ধনকে হারাম করতে পারে না।”(ইমাম আলবানী;ইরওয়া ৬/২৮৮ পৃঃ,তা‘লীক্ব বুখারী) বিশিষ্ট তাফসিরকারক শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আস-শানক্বিতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
الخلاف في هذه المسألة مشهور معروف ، وأرجح القولين دليلا فيما يظهر أن الزنى لا يحرُم به حلال”এই বিষয়ে মতভেদ প্রসিদ্ধ ও পরিচিত। কিন্তু প্রমাণের দিক থেকে যে মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতীয়মান হয় তা হলো ব্যভিচার (জিনা) দ্বারা কোনো বৈধ সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় না।”(আযওয়াউল বায়ান, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৩৪১)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,”ولو وطئ أم امرأته أو بنتها حرمت عليه امرأته نص أحمد على هذا في رواية جماعةٍ ، وروي نحو ذلك عن عمران بن حصين ، وبه قال الحسن وعطاء وطاوس ومجاهد والشعبي والنخعي والثوري وإسحاق وأصحاب الرأي .وروى ابن عباس أن الوطء الحرام لا يحرِّم ، وبه قال سعيد بن المسيب ويحيى بن يعمر وعروة والزهري ومالك والشافعي وأبو ثور وابن المنذر”যদি কেউ নিজের স্ত্রীর মায়ের সঙ্গে অথবা স্ত্রীর মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তার বর্তমান স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যাবে।এ বিষয়ে ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়; যা একাধিক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে।একই মত বর্ণিত হয়েছে সাহাবি ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)-এর থেকেও।এ মতের পক্ষাবলম্বন করেছেন—হাসান বাসরী,আতা, তাওস, মুজাহিদ,শা‘বী, নাখাঈ,ইমাম সাওরী, ইসহাক ইবন রাহওয়াইহ এবং আসহাবুর রা’য় (অর্থাৎ হানাফি ফকীহগণ)। অপরদিকে, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর থেকে বর্ণিত আছে যে,“হারাম যৌন সম্পর্ক (ব্যভিচার) কোনো স্থায়ী হারামত্ব সৃষ্টি করে না।”এই মত গ্রহণ করেছেন— সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়ামার, উরওয়া ইবনু যুবাইর, যুহরী, ইমাম মালিক, ইমাম আশ-শাফেঈ, আবু সাওর এবং ইবনুল মুনযির (রহিমাহুমুল্লাহ)।”(ইবনু কুদামাহ আল মুগনী, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৯০)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
“لو زنى رجل بامرأة فهل يحرم عليها أصله وفرعه ، وهل يحرم عليه أصلها وفرعها ؟ الجواب :لا يحرم ، لأنه لا يدخل في الآية ، قال تعالى : وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ ) قال ( مَا نَكَحَ آبَاؤُكُمْ ) والزانية لا تدخل في هذا … ومع هذا فمذهب الحنابلة أن الزنى كالنكاح ، فإذا زنى بامرأة حرم عليه أصولها وفروعها ، وحرم عليها أصوله وفروعه تحريما مؤبدا ، بل من غرائب العلم أن يجعل السفاح كالنكاح ، بل من أغرب ما يكون ، وهو من أضعف الأقوال … والصواب أنه لا أثر في تحريم المصاهرة لغير عقد صحيح ؛ وذلك لأن العقود إذا أطلقت في الشرع حملت على الصحيح ، فالصواب في هذه المسألة أن كل ما كان طريقه محرما فإنه لا أثر له في التحريم والمصاهرة “
“যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে কি ঐ নারীর মা ও মেয়েরা তার জন্য হারাম হয়ে যাবে? অথবা ঐ পুরুষের বংশীয় নারীসমূহ (মা, দাদি
মেয়ে ইত্যাদি) ঐ নারীর জন্য হারাম হয়ে যাবে?
উত্তর: না, হারাম হবে না। কারণ এ ব্যাপারটি কুরআনের ঐ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:”তোমাদের স্ত্রীদের মায়েরা, আর তোমাদের তত্ত্বাবধানে থাকা সেসব সৎকন্যারা যারা তোমাদের সেই স্ত্রীদের সন্তান যাদের সঙ্গে তোমরা সহবাস করেছ—অতএব যদি তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস না করে থাকো, তবে তাতে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই—এবং তোমাদের পুত্রদের স্ত্রীগণ…”(সূরা আন-নিসা: ২৩) এবং তিনি আরও বলেনঃ “তোমাদের পিতারা যাদের বিবাহ করেছেন, তোমরা তাদের বিবাহ করো না।”(সূরা আন-নিসা: ২২) অতএব, ব্যভিচারিণী (যার সঙ্গে জিনা করা হয়েছে) এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, হাম্বলি ফকীহদের মতে, ব্যভিচার (জিনা) কে বিবাহের সমতুল্য ধরা হয়।তাদের মতে, যদি কেউ কোনো নারীর সঙ্গে জিনা করে, তাহলে ঐ নারীর মা ও মেয়েরা তার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে, এবং একইভাবে ঐ নারীর জন্যও ঐ পুরুষের মা, দাদি, মেয়ে ইত্যাদি হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু এটি ‘বিদ্যা’ বা জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় যে ব্যভিচারকে বিবাহের সমতুল্য গণ্য করা হয়েছে! বরং এটি সবচেয়ে বিস্ময়কর মতগুলোর একটি, এবং নিঃসন্দেহে এটি দুর্বলতম মতগুলোর অন্তর্ভুক্ত। আর সঠিক কথা হলো: যে সম্পর্ক বা কাজ অবৈধ (হারাম) পথে সংঘটিত হয়েছে, তার দ্বারা মাহরাম সম্পর্ক বা হারামত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারণ শরীয়তে যখন কোনো চুক্তি বা সম্পর্কের কথা বলা হয়, তা কেবল সহীহ (বৈধ) চুক্তিকেই নির্দেশ করে।‌ অতএব এই মাস’আলায় সঠিক মত হলো যে, কোনো সম্পর্ক যদি হারাম পথে গঠিত হয় (যেমন ব্যভিচার, অবৈধ সহবাস), তবে তার দ্বারা মাহরামত্ব বা হারামত্বের কোনো প্রভাব পড়ে না।”(ইবনু উসাইমীন; আশ শারহুল মুমতি; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২০৩)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate