Wednesday, October 29, 2025

পবিত্র কুরআনসহ শরীয়তের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টার বিধান

 প্রশ্ন: পবিত্র কুরআনসহ শরীয়তের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টার বিধান কী? এ সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তে বর্ণিত সকল হুকুম-আহকাম নিয়ে বিস্তারিত।

▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর পবিত্র কুরআনের অন্যতম মাহাত্ম্য হল যে, কুরআন আল্লাহ তা‘আলার কালাম। আল্লাহ তা‘আলা তা বলেছেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তা শুনেছেন এবং আল্লাহর নির্দেশে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তা নিয়ে শেষনবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছেন। শেষনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট থেকে শুনেছেন এবং স্মৃতিস্থ করেছেন। এই কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সম্পৃক্ত ব্যক্তির জন্য সম্মান ও মর্যাদাকর; সেটা লিখনগত, লিপিগত, উচ্চারণগত, মুখস্তগত, তেলাওয়াতগত, জ্ঞানগত বা আমলগত যেই ধরণের সম্পৃক্ততা হোক না কেন। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র কিতাবের সাথে যে কোন ধরণের সম্পর্ক তৈরী করা ও তাতে নিয়োজিত হওয়া সম্পর্ককারী ব্যক্তির জন্য সম্মানজনক এবং সম্পর্কের অনুপাতে উভয় জাহানে তার জন্য মর্যাদাবৃদ্ধিকর। আল্লাহ্‌ তাআলা প্রত্যেক জিনিসের একটা পরিমাণ নির্ধারণ করে রেখেছেন। কুরআন মক্কাতে নাযিল হওয়া সম্মানিত শহর মক্কার জন্য সম্মানের, রমযানে কুরআন নাযিল হওয়া রমযানের জন্য সম্মানের, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে কুরআন নাযিল হওয়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য সম্মানের, যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাঁকে সম্মানিত করেছেন এবং আসমান থেকে, রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে কুরআন বহন করা বহনকারী ফেরেশতা জিব্রাইল আলাইহিস সালামের জন্য সম্মানের—যেহেতু কুরআনুল কারীম সমগ্র সৃষ্টি জগতের রব, মহান আল্লাহ্‌র বাণী এবং সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত কালাম — সুতরাং এ বাণীর সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, উপহাস করা, অপবিত্র স্থানে নিক্ষেপ করা কিংবা এর কোনো পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে অপমান করা নিঃসন্দেহে এক মহা গুনাহ, বরং তা প্রকাশ্য বড় কুফরি ও ঈমান নষ্টকারী কাজ।সুতরাং যে ব্যক্তি এ ধরনের জঘন্য কর্মে লিপ্ত হবে, সে কঠোর শাস্তির যোগ্য এবং আল্লাহ্‌র ক্রোধের অধিকারী হবে। কারণ,আলেমগণের সর্বসম্মত অভিমত হলো— কুফরির মাধ্যমে রসিকতা করাও কুফরি।নিশ্চয়ই কুরআনুল কারীম নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ কেবল সেইসব নির্বোধ, সীমালঙ্ঘনকারী ও আল্লাহভীতিহীন ব্যক্তিরাই করে থাকে—যারা দাবী করে যে, আমরা কৌতুক ও বিনোদন করছিলাম; ঠিক ঐ সমস্ত লোকদের মত যাদের সম্পর্কে নিন্মত্ত আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল।
.
মহান আল্লাহ বলেন,یَحۡذَرُ الۡمُنٰفِقُوۡنَ اَنۡ تُنَزَّلَ عَلَیۡهِمۡ سُوۡرَۃٌ تُنَبِّئُهُمۡ بِمَا فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ قُلِ اسۡتَهۡزِءُوۡا ۚ اِنَّ اللّٰهَ مُخۡرِجٌ مَّا تَحۡذَرُوۡنَ وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰهِ وَ اٰیٰتِهٖ وَ رَسُوۡلِهٖ کُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ, وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰهِ وَ اٰیٰتِهٖ وَ رَسُوۡلِهٖ کُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ “মুনাফেকরা ভয় করে তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না জানি নাযিল হয়, যা ওদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে! বলুন, ‘তোমরা বিদ্রূপ করতে থাক; তোমরা যে ভয় করছ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তা বের করে দেবেন। আর আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।’ বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্‌, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রূপ করছিলে? ওজর পেশ করো না। ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ। আমরা তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব। কারণ তারা অপরাধী।”[সূরা তাওবা: ৬৪-৬৬]
.
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ)
তাঁর তাফসির গ্রন্থে সাদ থেকে, তিনি যায়েদ বিন আসলাম থেকে বর্ণনা করেন যে:أن رجلاً مِن المنافقين قال لعوف بن مالك في غزوة تَبوك: ما لقُرَّائنا هؤلاء؛ أرغبنا بطونًا وأكذبنا ألسنةً، وأجبننا عند اللقاء؟! فقال له عوف: كذبتَ، ولكنك منافقٌ، لأُخْبِرَنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم، فذهب عوفٌ إلى رسول الله ليُخبره، فوجد القرآن قد سبَقه، قال زيد: قال عبدالله بن عمر: فنظرتُ إليه مُتعلقًا بحَقَب ناقة رسول الله صلى الله عليه وسلم تنكبُهُ الحجارة، يقول: ( إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ ) [التوبة: 65]، فيقول له النبيُّ صلى الله عليه وسلم: ( أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ ) [التوبة: 65].”তাবুক যুদ্ধের সময় মুনাফিকদের এক লোক আউফ বিন মালেক (রাঃ) কে বলেন: আমাদের এ সব ক্বারীদের একি অবস্থা তারা পেটের ব্যাপারে আমাদের সকলের চেয়ে বেশি আগ্রহী, আমাদের মধ্যে বেশি মিথ্যাবাদী এবং যুদ্ধের ময়দানে তারা বেশি ভীরু? তখন আউফ তাকে বললেন: তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি মুনাফিক। অবশ্যই আমি তোমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানাব। তখনি আউফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানানোর জন্য চলে গেলেন। গিয়ে দেখলেন যে, তার আগেই কুরআন নাযিল হয়ে গেছে। যায়েদ বলেন: আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) বলেন: আমি দেখলাম সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উটের রশির সাথে লটকানো অবস্থায় পাথরের আঘাত খাচ্ছে আর বলছে: ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বলছিলেন: “তোমরা কি আল্লাহ্‌, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রূপ করছিলে?”।(তাফসিরে তাবারি; খন্ড: ১৪ পৃষ্ঠা: ৩৩৩)
.
ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসির গ্রন্থে বলেন: “لا يخلو أن يكون ما قالوه من ذلك جدا أو هزلا، وهو كيفما كان : كفر؛ فإن الهزل بالكفر : كفر، لا خُلْف فيه بين الأمة، فإن التحقيق أخو الحق والعلم، والهزل أخو الباطل والجهل “তারা যা বলেছিল তা হয়তো মন থেকে বলেছিল কিংবা ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিল। যেভাবেই বলুক না কেন: এটা কুফরি। কেননা কুফরি দিয়ে ঠাট্টা করাও কুফরি– এ নিয়ে উম্মতের মাঝে কোন মতভেদ নেই। আর বাস্তব তথ্য হচ্ছে হক্ক ও জ্ঞানের ভাই। আর ঠাট্টা-মশকরা হচ্ছে- বাতিল ও অজ্ঞতার ভাই।(দেখুন আবু বকর ইবনুল আরাবীর তাফসির গ্রন্থে খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৪৩)
.
ইসহাক বিন রাহুইয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:وَقَدْ أَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ أَنَّ مَنْ سَبَّ الله عز وجل أَوْ سَبْ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَوْ دَفَعَ شَيْئًا أَنْزَلَهُ اللهُ أَوْ قَتَلَ نَبِيًّا مِنْ أَنْبِيَاءِ اللَّهِ وَهُوَ مَعَ ذَلِكَ مُقِرٌّ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ أَنَّهُ كَافِرُ”উলামাগণ একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে কিংবা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেয়, অথবা আল্লাহর নাজিলকৃত কোনো বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে, কিংবা আল্লাহর কোনো একজন নবিকে হত্যা করে, তাহলে সে আল্লাহর নাজিলকৃত বিষয়কে স্বীকার করে নিলেও একজন কাফির।”(ইবনু আব্দিল বার, আত-তামহিদ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২২৬; মুহাম্মাদ বিন নাসর আল-মারওয়াজি, তাজিমু কদরিস সালাত; খণ্ড: ২: পৃষ্ঠা: ৯২৯)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:وأجمعت الأمة على وجوب تعظيم القرآن على الإطلاق وتنزيهه وصيانته، وأجمعوا على أن من استخف بالقرآن، أو بشيء منه، أو بالمصحف، أو ألقاه في قاذورة، أو كذَّب بشيء مما جاء به من حكم أو خبر، أو نفى ما أثبته، أو أثبت ما نفاه، أو شك في شيء من ذلك، وهو عالم به: كفر “উম্মতের মধ্যে এ বিষয়ে সর্বসম্মত ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, কুরআনকে সর্বপ্রকারে সম্মান করা, তার মর্যাদা রক্ষা করা এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখা ফরজ। তাঁরা এ ব্যাপারেও একমত হয়েছেন যে—যে ব্যক্তি কুরআনকে, কুরআনের কোনো অংশকে, কিংবা মুসহাফকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, অথবা তাকে অপবিত্র স্থানে নিক্ষেপ করে, কিংবা কুরআনের কোনো বিধান বা তথ্যকে অস্বীকার করে, অথবা কুরআন যা সত্য বলে প্রমাণ করেছে তা অস্বীকার করে, কিংবা যা অস্বীকার করেছে তা সত্য বলে প্রমাণ করে, অথবা এসব বিষয়ের কোনো একটিতে (সচেতনভাবে) জেনে শুনে সন্দেহ পোষণ করে— সে নিঃসন্দেহে কাফির।”(নববী আল-মাজমূ; খণ্ড:  ২: পৃষ্ঠা: ১৭০)
.
খতীব শারবিনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: “الفعل المكفر ما تعمده استهزاء صريحاً بالدين، أو جحوداً له: كإلقاء مصحف بقاذورة، وسجود لصنم”যে কাজ ধর্মকে উপহাস করার উদ্দেশ্যে করা হয়, বা তাকে অস্বীকার করার মানে রাখে যেমন মুসহাফকে অপবিত্র স্থানে ফেলা, অথবা মূর্তির সামনে সেজদা করা এসবই কুফরি।”(মুগনীল মুহতাজ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা; ১৭৬)
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:وقد اتفق المسلمون على أن من استخف بالمصحف، مثل أن يلقيه في الحش أو يركضه برجله إهانة له: أنه كافر”মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে,যে ব্যক্তি মুসহাফকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে,যেমন তা পায়খানায় নিক্ষেপ করা বা পায়ে মাড়ানো ইত্যাদি অপমানসূচক কাজ করে,সে কাফির।”(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৪২৫)
ইমাম ইবনে হাজম আল-যাহেরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:صَحَّ بِالنَّصِّ أَن كل من اسْتَهْزَأَ بِاللَّه تَعَالَى ، أَو بِملك من الْمَلَائِكَة ، أَو بِنَبِي من الْأَنْبِيَاء عَلَيْهِم السَّلَام ، أَو بِآيَة من الْقُرْآن ، أَو بفريضة من فَرَائض الدّين بعد بُلُوغ الْحجَّة إِلَيْهِ ، فَهُوَ كَافِر”প্রত্যক্ষ দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত: যে ব্যক্তির নিকট দলিল পৌঁছার পরও সে ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহকে কিংবা কোন ফেরেশতাকে কিংবা কোন নবীকে কিংবা কুরআনের কোন আয়াতকে কিংবা ইসলামের কোন একটি ফরজ বিধানকে বিদ্রূপ করে সে ব্যক্তি কাফের।[আল-ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৪২)
শাইখ সুলাইমান আলে-শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:من استهزأ بالله ، أو بكتابه ، أو برسوله ، أو بدينه : كفر ، ولو لم يقصد حقيقة الاستهزاء ، إجماعاً”যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে, কিংবা আল্লাহর কিতাবের সাথে কিংবা তাঁর রাসূলের সাথে, কিংবা তাঁর ধর্মের সাথে বিদ্রূপ করে: সকল আলেমের ইজমার ভিত্তিতে সে কাফের। যদিও সে এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে বিদ্রূপ করা উদ্দেশ্য না করে থাকুক।[তাইসীরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা: ৬১৭]
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] ‘আল-মাজমুউস সামীন’ বইয়ে বলেন: فجانب الربوبية والرسالة والوحي والدين جانب محترم لا يجوز لأحد أن يبعث فيه لا باستهزاء بإضحاك ، ولا بسخرية ، فإن فعل فإنه كافر ، لأنه يدل على استهانته بالله عز وجل ورسله وكتبه وشرعه ، وعلى من فعل هذا أن يتوب إلى الله عز وجل مما صنع ، لأن هذا من النفاق ، فعليه أن يتوب إلى الله ويستغفر ويصلح عمله ويجعل في قلبه خشية من الله عز وجل وتعظيمه وخوفه ومحبته ، والله ولي التوفيق .”‘আল্লাহর রুবুবিয়্যাত, রিসালাত,ওহী এবং দ্বীন সম্মানিত বিষয়। কারো জন্য এগুলো নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা জায়েয নেই। কেউ এমনটি করলে সে কাফের হয়ে যাবে। কারণ ঠাট্টা-মশকরা করা প্রমাণ করে যে, সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল, কিতাবাদি এবং শরীয়তকে হেয় করে, তাচ্ছিল্য করে। যে ব্যক্তি এমনটি করবে তাকে তার কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। কারণ এটি নিফাক। তাকে আল্লাহর কাছে তাওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে, আমল ঠিক করতে হবে এবং হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি শঙ্কা, সম্মান, ভয় ও ভালোবাসা পয়দা করতে হবে। আল্লাহই তৌফিকদাতা।”।(ইবনু উসাইমীন ‘আল-মাজমুউস সামীন; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৬৩)
.
প্রকৃতপক্ষে নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়া অনেকেই এমন সব কথা বলেন, কাজ করেন, কিংবা এমন বিশ্বাস পোষণ করেন—যা সাধারণ মানুষের চোখে হয়তো নিছক রসিকতা, হালকা মন্তব্য বা তুচ্ছ কাজ মনে হয়; কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেগুলো ইমান নষ্টকারী ভয়াবহ অপরাধ।অনেকেই অজান্তে ঈমান হারিয়ে ফেলেন—তারপরও নামাজ পড়েন, দান-সদকা করেন, হজ ও ওমরায় অংশ নেন; অথচ তারা জানেনই না যে, কুফরির গহ্বরে পড়ে তাঁদের মুসলমানিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে।অঢেল সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করলেও, প্রতি বছর হজ ও ওমরা করলেও—তাদের কোনো সওয়াব হবে না; কারণ ইমান নষ্ট হয়ে গেলে সব আমলই বৃথা হয়ে যায়।ইমান ভঙ্গের কারণগুলো আসলে একেকটি মারাত্মক ফাঁদ। অনেকেই জানেন না, কোন ফাঁদটি তাঁর পায়ের নিচে লুকিয়ে আছে!এই কারণেই যুগে যুগে আহলুস সুন্নাহর আলেমগণ ইমান ভঙ্গের কারণসমূহ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষকে সতর্ক ও সাবধান করেছেন। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার,মহান আল্লাহ,তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে কিংবা দ্বীনের মৌলিক কোনো বিধি বিধানকে নিয়ে ঠাট্টা করা এমন কুফরী যার মাধ্যমে ব্যক্তি ঈমান আনার পরে কাফের হয়ে যায়।অনুরূপভাবে কিছু সুন্নতকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করাও কুফরি। যেমন দাড়ি রাখা, হিজাব পরা বা টাকনুর উপরে জামা পরা ইত্যাদি সুন্নাহ গুলো নিয়ে হাসি ঠাট্টা করাও ঈমান ভঙ্গের কারণ।শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:الاستهزاء بالله وآياته ورسوله كفر يكفر به صاحبه بعد إيمانه “আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করা এমন কুফরী যার মাধ্যমে ব্যক্তি ঈমান আনার পরে কাফের হয়ে যায়।”(ইবনু তাইমিয়া আল-ঈমান; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৮৪)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Translate