প্রশ্ন: জান্নাতে শহীদকে বাহাত্তর জন হুর ও পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশের সুযোগ দেওয়ার পেছনে প্রজ্ঞা কী? অর্থাৎ এই নির্দিষ্ট সংখ্যাটির পেছনে হিকমাহ কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে।
(১).শাহাদাতের প্রথম রক্তবিন্দু ফোঁটা পড়ার সাথে সাথেই তার সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে,
(২) জান্নাতে তার স্থান সে দেখতে পাবে,
(৩) সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে,
(৪).সে কঠিন ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে,
(৫).তার মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।
(৬).তার সাথে টানা টানা ডাগর চোখবিশিষ্ট (৭২) বাহাত্তরজন জান্নাতী হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে, এবং
(৭).তার সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কুবুল করা হবে।”(তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনে মাজাহ হা/২৭৯৯; এবং মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৭৩০)
তাহক্বীক: ইমাম মুনযিরির লিখিত ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব-এ খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২১০; ইবনু হাজার ফাতহুল বারী-তে খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৬ উবাদাহ ইবনে সামিত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর হাদীস থেকে এটিকে হাসান বলেছেন, এবং ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) “সহীহ আত-তিরমিযী”-তে হাদিসটি সহীহ বলেছেন। (দেখুন: ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩৫০৪৯)
.
উক্ত হাদীসে হুরের নির্দিষ্ট সংখ্যা (৭২ জন) সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণী: “(৬) তাকে বাহাত্তর জন ডাগর চোখবিশিষ্ট হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে।” এই সংখ্যাটির নির্দিষ্টকরণের বিষয়ে, শাইখ ফকীহ মোল্লা আলী আল-ক্বারী হানাফি মৃত: ১০১৬ মতান্তরে ১০১০ হি:] (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:في التقييد بالثنتين والسبعين إشارة إلى أن المراد به التحديد لا التكثير ، ويحمل على أن هذا أقل ما يعطي ولا مانع من التفضل بالزيادة عليها”বাহাত্তর সংখ্যা দ্বারা নির্দিষ্টকরণের মধ্যে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, এর দ্বারা আধিক্য নয় বরং সুনির্দিষ্ট সংখ্যাই উদ্দেশ্য। তবে এটিকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় যে, এটি হলো সর্বনিম্ন পরিমাণ যা তাকে প্রদান করা হবে; আর এর ওপর অতিরিক্ত অনুগ্রহস্বরূপ আরও অধিক দেওয়া হতে পারে—এতে কোনো বাধা নেই।”(মিরকাতুল মাফাতীহ; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৪৮১)।
.
দ্বিতীয়ত: আর সে তার সত্তর জন নিকটাত্মীয়ের জন্য সুপারিশ করবে।” এ বাণীতে উল্লেখিত ‘সত্তর’ সংখ্যাটি হয়তো নির্দিষ্ট সংখ্যাকেই বোঝায়; আবার এটাও সম্ভব যে এর মাধ্যমে উদ্দেশ্য কেবল তার পরিবারের
বৃহৎ সংখ্যক সদস্যের জন্য সুপারিশ করা—নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়। কারণ, আরবরা সাধারণত ‘সাত’ ও তার গুণিতক সংখ্যা অধিকতা ও প্রাচুর্য বোঝাতে ব্যবহার করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী: (إِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ) (যদি তুমি তাদের জন্য সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করো,আল্লাহ তবুও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না)।(সূরা আল-তওবা/৮০)
এই আয়াতের প্রসঙ্গে শায়খ ত্বাহির ইবনু ‘আশূর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:سَبْعِينَ مَرَّةً) غير مراد به المقدار من العدد ، بل هذا الاسم من أسماء العدد التي تستعمل في معنى الكثرة ، قال في الكشاف : السبعون جار مجرى المثل في كلامهم للتكثير”সত্তর বার’ দ্বারা এখানে সংখ্যাগত পরিমাণ উদ্দেশ্য নয়; বরং এটি এমন এক সংখ্যা যা আরবদের কথোপকথনে আধিক্যের অর্থে ব্যবহৃত হয়। ‘আল-কাশশাফ’-এ বলা হয়েছে: ‘সত্তর’ তাদের ভাষায় বহুলতা বোঝানোর প্রবচনের মতো ব্যবহৃত হয়।”(আত-তাহরীর ওয়াত তানভীর; খন্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৩৪৬)
.
ইমাম মুনাওয়ি (রহিমাহুল্লাহ) শহীদ কর্তৃক তার সত্তর জন আত্মীয়ের জন্য সুপারিশের বিষয়ে বলেন:”ويحتمل أن المراد بالسبعين التكثير”সম্ভবত সত্তর দ্বারা আধিক্য উদ্দেশ্য।”(ফায়যুল কাদির খন্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৯৮)
.
নির্দিষ্ট সংখ্যার পিছনে প্রজ্ঞা (হেকমত) সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:
أما لماذا هذا العدد ؟ (اثنتان وسبعون ، أو السبعون على أن المراد به التحديد) فعلم ذلك عند الله تعالى ، والواجب علينا التسليم لخبر الله ، وخبر رسوله صلى الله عليه وسلم ، سواء عرفنا الحكمة من ذلك أو لم نعرف ، ولا داعي لتكلف الجواب ، والبحث عن حكمة ذلك
“আর কেন এই নির্দিষ্ট সংখ্যাটি? (বাহাত্তর বা সত্তর—যদি ধরে নেওয়া হয় যে এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যাই উদ্দেশ্য) নির্ধারণ করা হয়েছে—এ বিষয়টির জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে। আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর দেওয়া সংবাদ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর বাণীর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন ও আত্মসমর্পণ করা, আমরা এর অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা (হিকমত) জানি বা না জানি। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অযথা কষ্টসাধ্য ব্যাখ্যা দেওয়া বা এর পেছনের প্রজ্ঞা অনুসন্ধানের কোনো প্রয়োজন নেই।”(ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-১৩৫০৪৯)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬
No comments:
Post a Comment