Wednesday, October 29, 2025

হাত পায়ের নখ কাটা কিংবা চুল ফেলার পর সেগুলো দাফন করা কি আবশ্যক

 প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর হাত পায়ের নখ কাটা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত।পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে নারী-পুরুষের নখ বড় করে রাখা শরিয়তসম্মত নয়। কেননা মানুষ আল্লাহর প্রদত্ত মর্যাদাসম্পন্ন এক সভ্য সৃষ্টিজীব — কোনো মুসলিমের পক্ষে অসভ্য ও পশুসদৃশ আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।অতএব, নারী-পুরুষ উভয়েরই উচিত এ বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, চল্লিশ দিনের বেশি সময় ধরে হাত-পায়ের নখ, গোঁফ, নাভির নিচের লোম ও বগলের লোম অপসারণে বিলম্ব করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,”মানুষের স্বভাবগত আমল হলো: ৫টি। যথা- (১).নাভীর নিচের লোম সাফ করা (২).খাৎনা করা (৩). গোফ ছেঁটে ফেলা (৪).বগলের লোম সাফ করা (৫).নখ কাটা।”(সহীহ বুখারী হা/১২৫৭,৫৮৮৯, ৫৮৯০)। অপর বর্ননায় আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মোচ কাটা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা ও নখ কাটার ব্যাপারে আমাদের চল্লিশ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমরা যেন তা বেশি সময় ছেড়ে না দেই।”(সহীহ মুসলিম হা/২৫৮,তিরমিযী হা/২৭৫৮;আবু দাঊদ হা/ ৪২০০)

.
দ্বিতীয়ত: শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ব্যক্তি—নারী বা পুরুষ—হাত-পায়ের নখ বা শরীরের লোম কর্তন করার পর তা দাফন করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে যদি কেউ দাফন করে, তা উত্তম ও প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি দাফন না করে, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই, ইনশাআল্লাহ।কারণ প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)সহ কিছু সাহাবির কাছে থেকে কিছু আসার বর্নিত হয়েছে।তবে এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে কোনো সহীহ হাদীস প্রমাণিত হয়নি। চুল ও নখ দাফনের প্রসঙ্গে যে বর্ণনাগুলো উল্লেখ পাওয়া যায়, সেগুলোর কোনোটি সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়।
.
ইমাম বাইহাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘শুআবুল ঈমান’ গ্রন্থে বলেছেন—وقد روي حديث دفن الشعر والأظفار من أوجه، كلُّها ضعيفة“নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা সম্পর্কে একটি হাদিস একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সবগুলো সূত্র দুর্বল।”(নাসবুর রায়াহ ফি তাখরিজি আহাদিসিল হিদায়াহ,খণ্ড: ১,পৃষ্ঠা: ১৮৯)
.
হাত-পায়ের নখ কাটার পর সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। এই মর্মে ইমাম খাল্লাল তার আত তরাজ্জুল কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে,আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমাম,শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.] বলেছেন,” يَدفن الشعر والأظفار ، وإن لم يفعل : لم نَرَ به بأساً “চুল ও নখ মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। তবে না পুঁতলেও আমরা তাকে কোন সমস্যা মনে করি না।”(খাল্লাল ‘আত-তারাজ্জুল’ পৃষ্ঠা: ১৯)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,يستحب دفن ما أخذ من هذه الشعور والاظفار ومواراته في الارض نقل ذلك عن ابن عمر رضي الله عنهما واتفق عليه اصحابنا” চুল ও নখ যা কাটা হয়,তা মাটিতে দাফন করা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়)। এই বিষয়টি ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, এবং আমাদের সাথীরা (অর্থাৎ শাফি‘ঈ মাযহাবের ফকীহগণ) এই বিষয়ে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।” (ইমাম নববী আল-মাজমু; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৮৯)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,وَيُسَنُّ دَفْنُ مَا يُزِيلُهُ مِنْ شَعْرٍ وَظُفْرٍ وَدَمٍ“শরীর থেকে অপসারিত চুল, নখ ও রক্ত—এসব দাফন করা সুন্নত।”(আল-শারহুল কাবীর; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “চুল ও নখ কাটার পর সেগুলো দাফন করার হুকুম কী?
.
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন:
ذَكر أهل العلم أن دفن الشعر والأظافر أحسن وأولى ، وقد أُثر ذلك عن بعض الصحابة رضي الله عنهم ، وأما كون بقائه في العراء ، أو إلقائه في مكان يوجب إثماً : فليس كذلك “
“আহলুল ইলমগণ উল্লেখ করেছেন যে, চুল ও নখ দাফন করা উত্তম এবং অধিকতর উপযুক্ত। এ বিষয়ে সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-এর কাছ থেকে কিছু আসার (সাহাবিদের মতামত ও কর্ম) বর্নিত হয়েছে। পক্ষান্তরে এগুলো (চুল বা নখ) খোলা জায়গায় ফেলে রাখলে কিংবা কোন স্থানে ছুঁড়ে ফেললে গুনাহ হবে এমনটি নয়।”(ইবনু উসাইমীন মাজমুউ ফাতাওয়া: খণ্ড: ১১; প্রশ্নোত্তর নং ৬০ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৭৭৪০)। (আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন)।
▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

No comments:

Post a Comment

Translate