Thursday, October 16, 2025

রাসুলুল্লাহ কর্তৃক এক বৃদ্ধ মহিলাকে বোঝা বহনে সাহায্য করা এবং তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে প্রসিদ্ধ গল্পটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট

❑ প্রচলিত গল্পটি নিম্নরূপ:
মক্কার প্রখর রোদ ও উত্তপ্ত বালির উপর দিয়ে এক বৃদ্ধা মহিলা অতি কষ্টে কাঠের একটি ভারী বোঝা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
তাঁকে দেখে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নাম উল্লেখ না করে) এগিয়ে গেলেন এবং বিনয়ের সাথে তাঁকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিলেন। তিনি বৃদ্ধার কাঁধ থেকে ভারী বোঝাটি নিজের কাঁধে তুলে নিলেন এবং নীরবে তাঁর বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। দীর্ঘ পথে যেতে যেতে বৃদ্ধাটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুৎসা রটনা করতে লাগলেন। তিনি লোকটিকে সাবধান করে বললেন যে মক্কায় ‘মুহাম্মাদ’ নামে এক জাদুকর আছে, যে খারাপ চরিত্রের মানুষ এবং তার কথা যেন তিনি ভুলেও না শোনেন। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরবে সব কথা শুনলেন এবং কোনও প্রতিবাদ না করে বোঝা বহন করতে থাকলেন। অবশেষে তাঁরা বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছালেন। কাঠ নামিয়ে দেওয়ার পর কৃতজ্ঞ বৃদ্ধাটি তাঁকে কোনও প্রতিদান দিতে না পেরে পুনরায় সেই ‘জাদুকর’ মুহাম্মাদ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দিলেন।
তখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “যদি আমিই সেই মুহাম্মাদ হই, তাহলে কি তখনও তুমি আমাকে অবিশ্বাস করবে?” তাঁকে এমন বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও দয়ালু হিসেবে দেখে বৃদ্ধা মহিলা চমকে উঠলেন এবং তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন যে, যাকে তিনি খারাপ বলছিলেন, তাঁর চরিত্র আসলে কত মহৎ। মুহূর্তেই তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন এবং শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলেন।
(قصة الرسول صلى الله عليه وسلم مع امرأة عجوز: رأى رجل امرأة عجوزًا في مكة تحاول أن تحمل حزمة من الحطب، ولما رآها عجوزًا اتجه نحوها، وقال: أنا أحملها عنك، دُليني على دارك، وكان الطريق طويلًا، والرمال ملتهبة، والشمس حارقة، والهواء لافحًا، والبيت بعيدًا، والحمل ثقيلًا، فلما وصل إلى منزل تلك العجوز قالت له: يا بني، ليس لدي ما أكافئك به، ولكني سأُسدي إليك نصيحة، إذا رجعتَ إلى قومك في مكة، فهناك رجلٌ ساحر يدَّعي النبوة، يقال له محمد، إذا رأيته لا تصدِّقه، وإياك أن تتبعه، فقال: لماذا؟ قالت: لأنه سيِّئ الخُلق، قال: حتى وإن كنت أنا محمدًا الرسول؟ فقالت تلك
العجوز: إنْ كنت أنت محمدًا فأشهد أن لا إله إلا الله، وأنَّك رسول الله)).
الدرجة: لا أصل لها
[dorar..net]
এ গল্পটি কেউ কেউ এভাবে বলে যে━মক্কা বিজয়ের সময় এক বৃদ্ধ মহিলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভয়ে প্রাণপণে পালিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় তিনি তাকে সাহায্য করে তার বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর সেই মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- নিকট তার পরিচয় জানতে পেরে কালিমা শাহাদাত পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
❑ হাদিসটির মান: (বানোয়াট বা ভিত্তিহীন)
উক্ত গল্পগুলো আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ওয়াজ মাহফিলে অনেক বক্তা, মসজিদের মেম্বরে অনেক খতিব বা কেউ যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মহান চরিত্র মাধুরীর উদাহরণ পেশ করতে চায় তখন তারা এ জাতীয় গল্প পেশ করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এই গল্প কোনও নির্ভরযোগ্য হাদিস বা সিরাতের কিতাবে আসেনি। অর্থাৎ এটি একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন গল্প-যা হাদিসের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র মাধুরী এবং নিঃস্বার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে একজন সমালোচনা কারীর হৃদয়ে ইসলামের আলো প্রজ্বলিত করার প্রমাণ হিসেবে এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন গল্পের আদৌ প্রয়োজন নাই। কেননা এ সংক্রান্ত বিশুদ্ধ হাদিসের অভাব নেই। আমাদের কর্তব্য, সে সকল বিশুদ্ধ হাদিস পেশ করা। দুঃখজনক বিষয় হল, আমাদের সমাজের অনেক বক্তা, ইমাম, খতিব, দাঈ, ইসলামি সংগঠনের নেতা সহ অনেক মানুষ হাদিস যাচাই-বাছাই ছাড়া অনেক ভিত্তিহীন ও অপ্রমাণিত হাদিস বা হাদিসের গল্প পেশ করে থাকে! কিন্তু এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইসলামের দৃষ্টিতে এ কাজটি কবিরা গুনাহ। কেননা হাদিসে এসেছে, কেউ জেনে-বুঝে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার করলে তার পরিণতি জাহান্নাম। মনে রাখা কর্তব্য যে, মানুষের সাথে সাধারণ মিথ্যা কথা এবং আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা এক নয়। সাধারণ মিথ্যা কথা হারাম, কবিরা গুনাহ এবং মুনাফেকির বৈশিষ্ট্য। কিন্তু হাদিসের নামে মিথ্যাচার করার পরিণতি এর থেকেও ভয়াবহ।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إنَّ كَذِبًا عَلَيَّ ليسَ كَكَذِبٍ علَى أَحَدٍ، مَن كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
“আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা তোমাদের কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)। মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা), পরিচ্ছেদ: ২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ গুরুতর অপরাধ]
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের নামে সব ধরণের মিথ্যা তথ্য পরিবেশন, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট গল্প ও হাদিস প্রচারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব। 

সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ মাছ ​ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় করার বিধান

প্রশ্ন: বর্তমানে চলছে ইলিশ মাছ ধরার সরকারী নিষেধাজ্ঞা। প্রশ্ন হল, এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া জায়েজ আছে কি?
উত্তর: সরকার বছরের নির্দিষ্ট কিছু দিন যে সব নদ-নদীতে ইলিশের প্রজনন হয় সে সব নদ-নদীতে সর্ব প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে থাকে যেন মা ইলিশ স্বচ্ছন্দে ডিম পড়ার সুযোগ পায়।
ইলিশ গবেষকরা বলেছেন, “এই সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হবে। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।” (BBC/Bengali)
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এক ঘোষণা বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে চলতি বছর (২০২৫) আগামী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়কে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ পরিচালনা করা হবে। এই সময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রয়, মজুদ এবং জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলারের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হবে। অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।” [সূত্র: btv gov bd]
উল্লেখ্য, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন হচ্ছে, ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই সরকার দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। [Banglatribune]
সুতরাং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সময়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা চুরি করে ইলিশ ধরা বৈধ নয়।
ইসলাম মানুষকে নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বোধ শেখায়। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রণীত সরকারী আইন-কানুন অনুসরণ করা প্রতিটি নাগরিকের জন্য আবশ্যক। অন্যথায় আইন লঙ্ঘন করার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি সরকারী আইনে জেল-জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তার অর্থ এই নয় যে, এ সময় ইলিশ খাওয়া যাবে না বা ক্রয় করা যাবে না। কেননা হয়ত ব্যবসায়ীগণ অনুমোদিত সময়ে ইলিশ ধরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেছিল। এখন অতিরিক্ত লাভের আশায় সেগুলো নন মৌসুমে বিক্রয় করছে।
যাহোক, আপনি যদি নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন যে, মাছ বিক্রেতা চোরাইভাবে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরেছে বা জেলেদের নিকট থেকে মাছ ক্রয় করেছে তাহলে তাদের কাছে তা ক্রয় করা বৈধ নয়। কারণ তা অন্যায় কাজে সহায়তা করার শামিল। আর ইসলামে অন্যায়, দুর্নীতি ও চোরাকারবারিতে সহায়তা করা হারাম। (সূরা মায়িদা: ২) তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা গেলে যে কোনও সময় বাজার থেকে ইলিশ ক্রয় করতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী।

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA. 

জানাজার সাথে গমনের সওয়াব এবং এ ক্ষেত্রে পায়ে হাঁটা কিংবা গাড়িতে যাওয়া এবং গাড়িতে জানাজা বহন সংক্রান্ত বিধিবিধান

 প্রশ্ন: জানাজার সাথে গমনের সওয়াব কতটুকু? এ ক্ষেত্রে সওয়ার হয়ে যাওয়া এবং পায়ে হেঁটে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী? অনুরূপভাবে গাড়িতে জানাজা বহনের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।

উত্তর: নিম্নে সংক্ষেপে এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
❒ জানাজার সাথে গমন করার সওয়াব:
◈ কবরস্থান পর্যন্ত জানাজার সাথে অনুগমন করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من تبع جنازة مسلم إيمانا واحتسابا وكان معها حتى يصلى عليها ويفرغ من دفنها فإنه يرجع بقيراطين كل قيراط مثل جبل أحد»
“যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় কোন মুসলিমের জানাজায় অংশগ্রহন করল এবং দাফন পর্যন্ত তার সাথে থেকে দাফন কর্ম শেষ করল সে দু’কিরাত নেকি নিয়ে ফিরবে, প্রত্যেক কিরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ”। [সহিহ বুখারি]
◈ তাছাড়া এটি এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের অন্যতম একটি হক (অধিকার)।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ
‘‘একজন মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর পাঁচটি হক বা অধিকার রয়েছে;
১. সালামের জবাব দেওয়া
২. রোগীকে দেখতে যাওয়া বা তার শুশ্রূষা করা।
৩. জানাজার সাথে গমন করা
৪. দাওয়াত কবুল করা
৫. এবং হাঁচির জওয়াবে (আলহামদু লিল্লাহ বলা শুনলে) ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলা।’’[সহিহুল বুখারি ও মুসলিম]
❒ জানাজার সাথে পায়ে হেঁটে গমন করা উত্তম নাকি গাড়িতে আরহণ করে যাওয়া উত্তম?
জানাজার সাথে পায়ে হেঁটে গমন করা অধিক উত্তম। কিন্তু প্রয়োজনবোধে বাহনে চড়ে যাওয়া জায়েজ। যেমন: কবরস্থান অনেক দূরে হওয়া, আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম বা ঠাণ্ডা হওয়া, কাদা, পানি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি কোন কারণে পায়ে হাঁটা কষ্টকর হওয়া ইত্যাদি।
তবে আরহীগণ লাশ বহরের পেছনে পেছনে চলবে। কারণ আগে গাড়ি চললে ধুলোবালি উড়তে পারে যা হয়ত পেছনের জানাজা বহনকারী লোকজনের জন্য কষ্টের কারণ হবে।
আর পায়ে হাঁটার ক্ষেত্রে লাশের সামনে-পেছনে, ডানে-বামে চলতে কোন সমস্যা নেই। তবে উত্তম হল, পেছনে চলা।
✪ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
الرَّاكِبُ يسيرُ خلفَ الجَنازةِ ، والماشي يَمشي خلفَها ، وأمامَها ، وعن يمينِها ، وعن يسارِها قريبًا مِنها
“সওয়ারি (আরোহণকারী) জানাজার পেছনে চলবে আর হেঁটে যাওয়া ব্যক্তি জানাজার পেছনে, সামনে, ডানে এবং বামে তার কাছাকাছি থেকে চলতে পারে।”
[মুগিরা বিন শোবা রা. হতে বর্ণিত, সহিহ আবু দাউদ, হা/৩১৮০]
▪️ শায়খ আলবানি রাহ. বলেন: “কিন্তু হেঁটে যাওয়া উত্তম।‌ কারণ এটিই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে বেশি পরিচিত। তিনি জানাজার সাথে কখনো আরোহণ করেছেন বলে জানা যায় না। বরং সাওবান রা. বলেছেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাজার সাথে থাকা অবস্থায় তাঁর কাছে একটি বাহন আনা হল। কিন্তু তিনি তাতে চড়তে অস্বীকার করলেন। যখন তিনি ফিরে এলেন, তখন তাঁর কাছে বাহন আনা হল এবং তিনি তাতে আরোহণ করলেন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন:
«إِنَّ المَلَائِكَةَ كَانَتْ تَمْشِي فَلَمْ أَكُنْ لِأَرْكَبَ وَهُمْ يَمْشُونَ، فَلَمَّا ذَهَبُوا رَكِبْتُ»
“ফেরেশতারা হেঁটে যাচ্ছিল, তাই তারা হেঁটে যেতে থাকলে আমি আরোহণ করতে চাইনি। যখন তারা চলে গেল, তখন আমি আরোহণ করলাম।” [সুনানে আবি দাউদ, হা/ ৩১৭৭, সহিহ]
উক্ত হাদিস থেকে জানা গেলো, সওয়ারি থাকা স্বত্বেও কবরস্থান পর্যন্ত পায়ে হেঁটে গমন করা অধিক উত্তম। আর ফিরে আসার ক্ষেত্রে যানবাহনে আরোহণ করায় কোন সমস্যা নেই। উপরোক্ত হাদিসের পাশাপাশি অন্য হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনুদ দাহদাহ (রা.) এর জানাজার শেষে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে আর সাহাবিগণ তাঁর চারপাশে হেঁটে হেঁটে এসেছেন।
❑ গাড়িতে করে জানাজা বহন করার বিধান:
আল্লামা শাইখ উসাইমিন রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, জানাজার দাফন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য গাড়িতে করে জানাজা বহন করা উত্তম হবে নাকি কষ্টসাধ্য হলেও পায়ে হেঁটে বহন করা উত্তম হবে?
উত্তরে তিনি বলেন,
حملُ الجنازة على السيارة خطأ، إلا لحاجة كقلة المُشَيِّعين، أو بردٍ شديد، أو حرٍّ شديد، أو مطر. وإلا، فالسنَّة أن تُحمَلَ على الأكتاف.
ذلك لينتفع المُشَيِّعون، وليكون فيه عبرة لهم، ولئلا يُتَّخذ حملُها كحال الزفاف والولائم. لكن إذا صارت هناك حاجة، فلا بأس.
“গাড়িতে করে জানাজা বহন করা ভুল কাজ। তবে প্রয়োজন হলে তা করা যেতে পারে। যেমন: জানাজায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হলে অথবা তীব্র শীত, কিংবা তীব্র গরম, অথবা বৃষ্টি-বাদলের কারণে। প্রয়োজন না হলে, সুন্নাহ হল, জানাজাকে কাঁধে বহন করা। এর উদ্দেশ্য হল, জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা যেন এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং এটি যেন তাদের জন্য একটি শিক্ষা ও উপদেশ হয়। আর যাতে জানাজা বহন করাকে বিয়ে-শাদি বা ভোজের মতো আনন্দদায়ক অনুষ্ঠানের বহনের মতো মনে না করা হয়। তবে যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে এতে কোনও অসুবিধা নেই।” আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

পাত্রী পছন্দ হলে আংটি পরানো

 প্রশ্ন: পাত্রের তরফ থেকে পাত্রী দেখতে যাওয়ার সময় যে আংটি পরানো হয় তার মূল্য কি বিয়ের সময় মোহরানার টাকার সাথে ধার্য (হিসাব) করা হয়?

উত্তর: বিজ্ঞ আলেমদের মতে, পাত্রী দেখতে গিয়ে পছন্দ হলে তাকে আংটি পরানোর প্রচলন খৃষ্টানদের থেকে এসেছে। তাদের রীতি অনুযায়ী পাদ্রী গির্জায় পাত্রীর আঙ্গুল আংটি পরিয়ে দেয়। তাদের বিশ্বাস, এটি তাদের পরস্পরের মাঝে আকর্ষণ সৃষ্টি করবে বা ভালবাসা তৈরি করবে। সুতরাং ইসলামে এ ধরণের রীতি সমর্থনযোগ্য নয়। কেননা তা অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বনের শামিল-যা ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই মুসলিমদের উচিত, এ প্রথা থেকে বের হয়ে আসা। যাহোক, অজ্ঞতা বশতঃ এমনটি করা হলে সে ক্ষেত্রে তা ‘উপহার’ বলে গণ্য হবে; মোহর নয়। কারণ তখনও বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়নি এবং তা দেওয়ার সময় মোহর বলেও উল্লেখ করা হয়নি। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আল্লাহ আরশের উপরে রয়েছেন আবার তিনি নিচের আসমানেও নেমে আসেন সে সময় কি আরশ খালি হয়ে যায়

 আল্লাহ আরশের উপরে রয়েছেন আবার তিনি নিচের আসমানেও নেমে আসেন। সে সময় কি আরশ খালি হয়ে যায়? এ বিষয়ে সঠিক আকিদা কী?

প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা বলেন, “রহমান (দয়াময় আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত।” [সূরা ত্ব-হা: ৫]। সেই সাথে এটাও সত্য যে, আল্লাহ তাআলা প্রতি শেষ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন, যা বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
আমার প্রশ্ন হলো, আমার জিজ্ঞেস হলো, আল্লাহ আরশে আজিমে আছেন। তাহলে প্রতি রাতে তিনি প্রথম আসমানে নেমে আসেন। এ বিষয়ে আকিদা কী পোষণ করব? একটু বুঝিয়ে বলুন।
উত্তর:
✪ প্রথমত: প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জানা জরুরি যে, কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ তাআলার যে সকল সিফাত (গুণ ও‌ বৈশিষ্ট্য ) বর্ণিত হয়েছে সেগুলো যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস করা অপরিহার্য। এগুলোর কোন ধরনের আকার-আকৃতি, সাদৃশ্য, ধরণ ও প্রকৃতি বর্ণনা করা যাবে না। সেগুলোকে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করাও যাবে না। বরং কুরআন ও হাদিসে যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবেই প্রকৃত অর্থে বিশ্বাস করতে হবে।
✪ দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তায়ালা সাত আসমানের উপরে সমুন্নত রয়েছেন-এটা যেমন কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য নস দ্বারা প্রমাণিত তেমনি তিনি রাতের শেষ প্রহরে নিচের আসমানে নেমে আসেন সেটাও বহু নস দ্বারা প্রমাণিত। অতএব উভয়টির প্রতি বিশ্বাস করা আবশ্যক। আরও বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।
✪ তৃতীয়ত: তিনি কীভাবে আরশের উপরে সমুন্নত, কীভাবে নিচের আসমানে নেমে আসেন,‌ এই সময় আরশ খালি হয়ে যায় কিনা, পৃথিবীর কোথাও রাতের শেষ প্রহর অথচ কোথাও দুপুর, কোথাও বিকেল, কোথাও বা রাতের প্রথম প্রহর তাহলে তিনি কোথায় কীভাবে নিচের আসমানে অবতরণ করেন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা জায়েজ নেই। এগুলো বিদআতি প্রশ্ন। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণ কখনো এইসব প্রশ্ন করেননি। বরং তারা বিনা প্রশ্নে আল্লাহর এই সকল সিফাতের উপরে বিশ্বাস পোষণ করেছেন। সুতরাং তাদের মতই আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হতে হবে।
✪ চতুর্থত: “আল্লাহ আরশ থেকে কীভাবে নিচের আসমানে নেমে আসেন?” এই জাতীয় প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ার কারণ হল, আমরা আল্লাহর সিফাতগুলোকে মানবিক বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা বিচার করি। কিন্তু এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। আল্লাহর সিফাতকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অনুমান করা বা বিচার বিশ্লেষণ করা কখনো সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহর সিফাত বা গুণ-বৈশিষ্ট্য গুলো অবশ্যই তাঁর কোনো সৃষ্টি জীবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। ‌ আমাদের কার্যক্রম এবং গুণ-বৈশিষ্ট্য খুবই সীমিত ও দুর্বল কিন্তু আল্লাহ তাআলার গুণ বৈশিষ্ট্য অসীম অপার, অতুলনীয় ও অপরিমেয়। সুতরাং আল্লাহর আরশে উপরে অবস্থান করা এবং দুনিয়ার জমিনে অবতরণ করা অবশ্যই সত্য কিন্তু তার ধরণ-প্রকৃতি আল্লাহর জন্য যেমনটা শোভনীয় ঠিক তেমনই। আমাদের কোন কিছুর সাথে তার সাদৃশ্য বা মিল নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়েছেন।‌ তা হলো, “আল্লাহ তাআলা নিচের আসমানে অবতরণ করলে আরশ খালি হয়ে যাওয়া আবশ্যক নয়। যেভাবে মানুষ ঘুমালে তার আত্মা আল্লাহর নিকটে চলে যায় কিন্তু তা মানুষের দেহ থেকে পরিপূর্ণভাবে আলাদা হয় না।” আল্লাহু আলম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

রবিউল আখের মাসের বিশেষ আমল

 প্রশ্ন: আরবি বর্ষের ‘রবিউস সানি’ মাসের এমন কোন ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে কী যা কিনা মুসলিমদের জন্য পালনযোগ্য? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।

উত্তর: হিজরি বর্ষপঞ্জিকার ৪র্থ মাস হল, রবিউল আখের। (এ মাসটিকে ‘রবিউস সানি’ বলার থেকে ‘রবিউল আখের’ বলা, ভাষাগতভাবে অধিক বিশুদ্ধ)। এই মাসে বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদত হাদিসে সাব্যস্ত হয়নি। তাই এ মাস উপলক্ষে বিশেষ কোনও আমল বা ইবাদত করা শরিয়ত সম্মত নয়। তবে সাধারণভাবে অন্যান্য মাসে যে আমলগুলো রয়েছে সেগুলো এ মাসেও করা যাবে। যেমন: নতুন চাঁদ দেখার দুআ পড়া, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, আইয়ামে বীয তথা হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তিনটি রোজা অথবা মাসের যে কোনও দিন তিনটি রোজা রাখা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে এ মাসেও সাধারণভাবে দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, উমরা আদায় ইত্যাদি যথারীতি করা যাবে।
◈ শিয়াদের বিদআতি আমল:
২৩২ হিজরি মোতাবেক ৮৪৬ খৃষ্টাব্দে রবিউল আখের মাসের অষ্টম মতান্তরে দশম তারিখে শিয়া ইসনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের ১১তম ইমাম হাসান আসকারীর জন্ম দিবস। (জন্মস্থান: মদিনা মুনাওয়ারা)। তাই এ উপলক্ষে তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে সে দিন নফল রোজা রাখে এবং বিভিন্ন ধরনের আয়োজন-অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু ইসলামে কারো জন্ম দিবস পালনের উদ্দেশ্যে বিশেষ কোনো ইবাদত-বন্দেগি বা বিশেষ কোনো আয়োজন করা ভিত্তিহীন ও বিদআতি কাজ। তাই এ জন্মদিবস পালন থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কেননা, বিদআত মানেই ভ্রষ্টতা। যার পরিণতি, আমল বরবাদ হওয়া এবং আখিরাতে আল্লাহর রসুলের শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার এবং বিদআত বর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম কী এবং এটি পালন করা কি শরিয়ত সম্মত

 ফাতিহা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হল মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য কুরআনখানি, শবিনাখানি, দোয়া মাহফিল, মিলাদ মাহফিল অথবা ইসালে সওয়াব বা সওয়াব রেসানির মতো কার্যক্রম। ইয়াজদাহম একটি ফারসি শব্দ, যার অর্থ হল, এগারো (১১)। আর ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম বলতে বোঝানো হয়, ১১ রবিউস সানি তারিখে সংঘটিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, যা আব্দুল কাদের জিলানি-এর মৃত্যু বা ওফাত দিবস উপলক্ষে পালন করা হয়। এটাকে ‘গেয়ারভি শরিফ’ও বলা হয়ে থাকে। এটা পালনের জন্য বিশেষ কিছু পদ্ধতিও বলা হয়। যেমন:

– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ১১ বার,
আল্লাহ ১১ বার
– হু ১১ বার
– ইয়া শায়খ সুলতান সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানি শাইআঁনলিল্লাহ্ ১১ বার
– ক্বাসীদায়ে গাউসিয়া শরিফ এক বার
– শাজরা শরিফ একবার ইত্যাদি।
এছাড়াও বিশেষ কিছু সূরা, দুআ, দুরুদ ইত্যাদি। [সূত্র: ইসলামি বিশ্বকোষ]
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয়ে থাকে।
❑ এটা কি শরিয়ত সম্মত?
সঠিক আকিদা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তির মৃত্যু দিবস পালন করা শরিয়ত সম্মত নয়। এ ধরনের কার্যক্রমকে বিদআত বা নতুন উদ্ভাবিত প্রথা হিসেবে গণ্য করা হয়, যা দ্বীনের মূল নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সুতরাং আব্দুল কাদের জিলানি রাহ. বা অন্য কোনও ব্যক্তির মৃত্যু দিবস বা ওরস পালন করা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবিদের থেকে কারও মৃত্যু দিবস পালনের পক্ষে কোনও দলিল পাওয়া যায় না। আর দলিল বহির্ভূত কোনও ইবাদত করার অর্থই বিদআত।
একইভাবে প্রচলিত নিয়মে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কুরআনখানি, শবিনা খতম, এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করাকেও বিদআত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
❑ শাইখ আব্দুল কাদের জিলানি চিশতি রাহ. কে ছিলেন?
আব্দুল কাদের জিলানি রাহ. সমসাময়িক হাম্বলি মাজহাবের একজন অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও উঁচু মাপের ফকিহ বা ইসলামি আইনবিদ ছিলেন। অনেক বিজ্ঞ আলেম তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও উচ্চ মর্যাদার প্রশংসা করেছেন।
✪ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. আল গুনিয়াহ (الغنية لطالب طريق الحق)
২. আল ফাতহুর রাব্বানি (الفتح الرباني)
৩. ফুতুহুল গায়েব (فتوح الغيب)
◆ জন্ম: ৪৭১ হিজরি, তাবারিস্থানের (বর্তমানে ইরানের মাজানদারান) জিলান অঞ্চলে।
◆ মৃত্যু: ৫৬১ হিজরি, বাগদাদ, ইরাকে।
আমাদের সমাজে সুফি ঘরনার বিদআতিদের মধ্যে তাঁর সম্পর্কে অনেক ভিত্তিহীন কেচ্ছা-কাহিনী প্রচলিত আছে এবং তাঁর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা হয়-যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

গান গজল বা সংগীতের সুরে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান

 “কুন ফায়াকুন” (كن فيكون) সূরা আনআমের ৭৩ নম্বর আয়াত। অথচ এই আয়াতটিকে সংগীতের সুরে সংগীতের অংশ হিসেবে পড়া হচ্ছে! ইদানিং অনেক কথিত ইসলামি সংগীতে বা গজলের মধ্যে দুই-একটা আয়াত ঢুকিয়ে দেওয়ার ট্রেন্ডটা দেখা যাচ্ছে। অথচ ইসলামের বিধান হল, কুরআনে কারিমের কোন আয়াত গান, গজল বা সংগীতের সুরে পাঠ করা হারাম। বরং কুরআন পড়তে হবে, কূরআনের আদব রক্ষা করে, ভয়-ভীতি ও বিনয়-নম্রতা পূর্ণ হৃদয়ে এবং তারতিল সহকারে অর্থাৎ স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে ধীরে ধীরে-যেভাবে আল্লাহ আদেশ করেছেন (দেখুন: সূরা মুজাম্মেল-এর ৪ নাম্বার আয়াতের তাফসির) এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিগণ তেলাওয়াত করতেন।

– সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায বলেন,
لا يجوز للمؤمن أن يقرأ القرآن بألحان الغناء وطريقة المغنيين، بل يجب أن يقرأه كما قرأه سلفنا الصالح من أصحاب الرسول ﷺ وأتباعهم بإحسان، فيقرأه مرتلاً متحزنًا متخشعًا حتى يؤثر في القلوب التي تسمعه وحتى يتأثر هو بذلك. أما أن يقرأه على صفة المغنيين وعلى طريقتهم، فهذا لا يجوز
“একজন ইমানদারের জন্য গানের সুরে এবং গায়কদের ধাঁচে কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ নয়। বরং তাঁকে অবশ্যই সেইভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, যেভাবে আমাদের নেককার পূর্বসূরিগণ তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবিগণ এবং উত্তমভাবে তাঁদের অনুসারীগণ তেলাওয়াত করেছেন।
সুতরাং একজন ইমানদার ব্যক্তি তারতিল (ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে) সহকারে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এবং বিনীতভাবে তা তেলাওয়াত করবে, যাতে তা শ্রোতার হৃদয়ে প্রভাব ফেলে এবং সে নিজেও তাতে প্রভাবিত হয়। কিন্তু গায়কদের গায়কি ধাঁচে এবং তাদের স্টাইলে তা তেলাওয়াত করা জায়েজ নয়।”
[সূত্র: মাজমূ’ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাত-শাইখ ইবনে বায (৯/২৯০)]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

নাপাক অবস্থায় মৃত্যু কি খারাপ মৃত্যু বলে গণ্য হয়

 প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম শ্রদ্ধেয় শাইখ। এমন মৃত্যুর হুকুম কী যখন কোন নারী মাসিক চলাকালীন সময় অর্থাৎ নাপাকি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে? এই মৃত্যু কি খারাপ মৃত্যুর শামিল? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।

উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ. না, নাপাক অবস্থায় মৃত্যু খারাপ মৃত্যু,তার ইমানি দুর্বলতা কিংবা তার উপর আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট এমন কিছুর প্রমাণ বহন করে না। বরং একজন ইমানদার, তাকওয়াবান এবং জান্নাতি মানুষেরও ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটতে পারে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হানজালা বিন আমের রা. উহুদের যুদ্ধে জুনুবি (স্ত্রী সহবাস জনিত কারণে নাপাক) অবস্থায় শাহাদত বরণ করেছিলেন এবং ফেরেশতাগণ তাঁকে গোসল করিয়েছিল।
◈ আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إنَّ صاحبَكم حَنْظلةَ تغسِلُه الملائكةُ فسَلُوا صاحبتَه
“তোমাদের এই সাথী হানজালাকে রা.কে ফেরেশতাগণ গোসল করাচ্ছেন। তোমরা তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করো।”
তখন (তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে) তিনি বললেন: তিনি যুদ্ধের ডাক শুনেই জুনুবি (স্ত্রী মিলন জনিত কারণে নাপাক) অবস্থায় বের হয়ে পড়েছিলেন।
তখন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “এই কারণেই ফেরেশতাগণ তাকে গোসল করিয়েছেন।” [ইবনে হিব্বান, হা/৭০২৫, বায়হাকি, সহিহ-ইরওয়াউল গালীল, ৩/১৬৭]
এ কারণে এই সাহাবিকে গাসিলুল মালাইকাহ غسيل الملائكة (ফেরেশতা কর্তৃক গোসল করানো ব্যক্তি) বলা হয়ে থাকে।
সুতরাং স্বামী-স্ত্রী সহবাস কিংবা স্বপ্নদোষ ঘটার পর ফরজ গোসলের পূর্বে অথবা কোনও নারীর ঋতুস্রাব চলাকালীন অবস্থায় বা কোনও প্রসূতি নারীর রক্তস্রাব চলাকালীন সময় মৃত্যু ঘটলে এটা তার খারাপ মৃত্যু, ইমানি দুর্বলতা বা তার উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টির প্রমাণ বহন করে না। কারণ মৃত্যু এমন এক অবিসম্ভাবি বিষয় যে, তা যে কারও জীবনে যে কোনও মুহূর্তে নেমে আসতে পারে।
বিজ্ঞ আলেমগণ এমনটাই বলেছেন।
✪ তবে গোসল ফরজ হলে আমাদের কর্তব্য, যথাসম্ভব দ্রুত ফরজ গোসল করে নেওয়া। এটা অধিক উত্তম। বিনা দরকারে বিলম্ব না করাই ভালো। কিন্তু দরকার বোধে দেরি করলেও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ যদি এ কারণে কোনও ফরজ ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।
✪ হ্যাঁ, কেউ যদি জিনা, সমকামিতা, হস্তমৈথুন (আল্লাহ ক্ষমা করুন) ইত্যাদি হারাম কারণে নাপাক হয় অথবা কেউ যদি ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও শিরক-বিদআতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় থাকে অথবা নানা ধরণের ছোট পাপ অনবরত করতে থাকে বা বড় বড় গুনাহের কাজে জড়িত থাকে কিন্তু তওবা করার আগেই তার মৃত্যু এসে যায় তাহলে তা সূ-উল খাতিমাহ বা অপমৃত্যুর প্রমাণ যা হবে তার জন্য আখিরাতে দুর্ভাগ্যের কারণ। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন। তাই আমাদের কর্তব্য, মৃত্যুর পূর্বে আমাদের ইমান-আকিদা সংশোধন করা এবং অধিক পরিমান নেক আমল করার পাশাপাশি সব ধরণের পাপাচার থেকে দূরে থাকা এবং কোন পাপ ঘটে গেলে অনতিবিলম্বে লজ্জিত অন্তরে আল্লাহর নিকট তওবা করা। নিশ্চয় আল্লাহ দয়াময় ও তওবা কবুলকারী। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় না করা পর্যন্ত বসা নিষিদ্ধ

 হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশকারী ব্যক্তিকে দুই রাকাত সালাত আদায় করার আগে বসতে নিষেধ করেছেন।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ”
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন দুই রাকাত সালাত আদায় না করা পর্যন্ত না বসে।” [সহিহ মুসলিম, হা/৭১৪]
বরং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে বসে পড়ছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন,
“أَصَلَّيْتَ؟
‘তুমি কি সালাত আদায় করেছ?’
সে বলল, ‘না।’
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“قُمْ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَجَوَّزْ فِيهِمَا
‘তুমি ওঠো এবং দ্রুত দুই রাকাত সালাত আদায় করো।’ [সহিহ মুসলিম]
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বসার বা খুতবা শোনার অনুমতি দেননি যতক্ষণ না সে দুই রাকাত সালাত আদায় করে। তবে তিনি তাকে দ্রুত সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে সে খুতবা শুনতে পারে। কারণ খুতবা শোনা ওয়াজিব।
এ কারণেই যদি কোনো ব্যক্তি অন্যের সাথে কথা বলে- এমনকি সৎ কাজের আদেশও দেয় তবে সে জুমার প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ أَنْصِتْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ أَلْغَوْتَ”
“যখন তুমি তোমার সঙ্গীকে জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় ‘চুপ করো’ বলবে, তখন তুমি অনর্থক কাজ করলে।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
সুতরাং যখনই তোমাদের কেউ দিনের বা রাতের যে কোনো সময় মসজিদে প্রবেশ করবে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ পালনার্থে এবং তার নিষেধ থেকে বিরত থাকার জন্য দুই রাকাত সালাত আদায় না করে বসবে না।
-আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ.
শাইখের বক্তব্যের ভিডিও (বাংলা ক্যাপশন সহ)
ভিডিও বক্তব্য থেকে অনুবাদ:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।

গর্ভকালীন অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করা কি বৈধ এবং এতে কোনো সুবিধা বা ক্ষতি আছে কি

 প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর মূলনীতি হলো: স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা সর্বাবস্থায় ও সব সময় বৈধ; তবে শরীয়তে যেসব অবস্থায় তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেসব ব্যতীত। যেমন পায়ুপথে সহবাস করা, কিংবা ঋতুকাল (হায়েয) ও প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব (নিফাস) চলাকালীন সহবাস করা, রমজান মাসে দিনের বেলায় রোজা রেখে সহবাস করা এবং হজ্জ বা উমরাহর ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা নিষিদ্ধ।

.
আর গর্ভবতী স্ত্রীর ব্যাপারে: গর্ভবতী স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো শরঈ দলিল নেই। তবে যদি সহবাসের ফলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত নারী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মত দেন যে গর্ভাবস্থায় সহবাসে স্ত্রীর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে,তাহলে সে ক্ষেত্রে তা পরিহার করা (সহবাস থেকে বিরত থাকা) আবশ্যক।কিন্তু এমন কোনো আশঙ্কা না থাকলে গর্ভবতী স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সহবাস করা শরিয়তসম্মত ও বৈধ। দলিল হচ্ছে মহান আল্লাহর বানী;(نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ )”তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে গমন করতে পার।”(সূরা বাকারাহ: ২২৩) আল্লাহ তাআলা এখানে স্বামীকে তার স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাসের কোনো নির্দিষ্ট ভঙ্গি বা অবস্থানে সীমাবদ্ধ করেননি। শোয়া, বসা কিংবা কাত হয়ে যে কোনো ভঙ্গিতেই সহবাস বৈধ। তবে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ব্যতীত অন্য অঙ্গে, যেমন পায়ুপথ বা মুখে সহবাস করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, কারণ তা বিকৃত প্রবৃত্তি ও অস্বাভাবিক কামনার প্রকাশ। এ বিষয়ে একাধিক সহীহ হাদীসে স্পষ্ট নিষেধ এসেছে।হাফিয ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:قال ابن عباس : الحرث موضع الولد .( فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ ) أي : كيف شئْتم ، مقبلة ومدبرة في صِمام واحد ، كما ثبتت بذلك الأحاديث ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন:‘শস্যক্ষেত্র’ বলতে বোঝানো হয়েছে সন্তান উৎপন্ন হওয়ার স্থান। আল্লাহর বানী: “তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে গমন করতে পার।” এর অর্থ হলো,“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যেভাবে ইচ্ছা সহবাস করতে পারো সামনের দিক থেকে বা পেছন দিক থেকে, তবে তা একই ছিদ্রপথে (যোনিপথে) হতে হবে। এই অর্থে সহিহ হাদীসসমূহে প্রমাণ রয়েছে।”(তাফসির ইবনু কাসীর; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৫৮৮)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:গর্ভাবস্থায় কোন সময়ে স্বামীর জন্য স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস থেকে বিরত থাকা জরুরি? এবং বিশেষত গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে সহবাস করলে ভ্রূণের কোনো ক্ষতি হয় কি?
তারা উত্তর দিয়েছেন:
“لا بأس بجماع الحامل ما لم يكن فيه ضرر على الحمل ، وإنما الممنوع جماع الحائض ؛ لقوله تعالى : ( فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ ) البقرة/ 222 .ومثلها النفساء حتى تطهر من النفاس ، والمحرمة بحج أو عمرة”
“গর্ভবতী নারীর সঙ্গে সহবাসে কোনো অসুবিধা নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত এতে গর্ভের ক্ষতি হবে না। নিষিদ্ধ কেবলমাত্র ঋতুমতী নারীর সঙ্গে সহবাস করা, কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তোমরা হায়েজকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকো এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হইও না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে, তখন তাদের নিকট আস, যেমনভাবে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।”(সূরা আল-বাকারা: ২২২) একই নিয়ম প্রসূতি (নিফাসগ্রস্ত) নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যতক্ষণ না তিনি পবিত্র হন। এছাড়াও হজ্জ বা ওমরাহ পালনরত অবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ৩৫৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:আমার স্ত্রী এখন গর্ভাবস্থার অ্যাডভান্সড স্টেজে আছে, এখন তার সপ্তম মাস চলছে। আমি কি তার সাথে সহবাস (যৌন মিলন) করতে পারি? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। জবাবে শাইখ বলেন:
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، وبعد:يجوز للإنسان أن يُجامع زوجته الحامل متى شاء إلا إذا كان ذلك يضرّها ، فإنه يحرم عليه أن يفعل ما يضر بها ، وإن كان لا يضرها ولكن يشق عليها فإن الأولى عدم مجامعتها ، لأن اجتناب ما يشق عليها من حسن العشرة ، وقد قال تعالى : ( وعاشروهن بالمعروف ) النساء /19 ولكن المحرّم أن يجامع الرجل زوجته وهي حائض ، أو يجامعها في دبرها ، أو يجامعها وهي نفساء ، فإن ذلك محرم ولا يجوز ، وعلى المرء أن يتجنّب ذلك إلى ما أباحه الله . وإذا كانت حائضاً فله أن يستمتع بها فيما دون الفرج والدبر ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( اصنعوا كل شيء إلا النكاح ) رواه مسلم (الحيض /455)
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। পর সমাচার:”(গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের বিধান হলো) মানুষ যখন ইচ্ছা তার গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারে, যদি না তা স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর হয়। যদি সহবাস স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর হয়, তবে তা তার জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) হয়ে যাবে, কারণ এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা স্ত্রীর ক্ষতি করে।যদি সহবাস স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর না হয়, তবে তা যদি স্ত্রীর জন্য কষ্টকর বা কঠিন হয়, তাহলে সহবাস না করাই উত্তম। কারণ, স্ত্রীর জন্য যা কষ্টকর, তা পরিহার করাই হলো উত্তম দাম্পত্য আচরণের অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো।” (সূরা নিসা: ১৯) কিন্তু নিষিদ্ধ হলো যে পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে যখন সে হায়েযে (ঋতুমতী) থাকে,অথবা তার মলদ্বারে সহবাস করে,অথবা তার নিফাস (প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব) অবস্থায় সহবাস করে।নিশ্চয়ই এগুলো হারাম এবং বৈধ নয়।একজন মানুষের উচিত এসব থেকে বিরত থাকা এবং যা আল্লাহ বৈধ করেছেন, তাতেই সীমাবদ্ধ থাকা।আর যদি স্ত্রী হায়েয অবস্থায় থাকে,তবে স্বামীর জন্য বৈধ যে সে যোনিপথ ও মলদ্বার ছাড়া অন্যভাবে স্ত্রীর কাছ থেকে উপভোগ গ্রহণ করবে।কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গম ছাড়া সবকিছু করতে পারো।”(সহীহ মুসলিম,কিতাবুল হায়েয, হা/ ৪৫৫ ইমাম ইবনু উসাইমীন,ফাতাওয়া আল-উলামা ফি ‘ইশরাতিন নিসা,পৃষ্ঠা: ৫৫)
.
সৌদি আরবের অন্যতম আলেম শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু মানীঈ (হাফিযাহুল্লাহ)-কে গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
​তিনি উত্তরে বলেন:
​”ليس في الشريعة الإسلامية نهي عن جماع الرجل زوجته الحامل ، وإنما النهي خاص بجماع المرأة الحائض أو النفساء ، وأما إذا قرر الأطباء لامرأة معينة لظروفها الصحية أن جماع زوجها يضر بها : فهذه حالة خاصة لا يقاس عليها
​”ইসলামী শরীয়তে পুরুষ তার গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং নিষেধাজ্ঞা কেবল ঋতুমতী (মাসিক চলাকালীন) বা নিফাস অবস্থায় থাকা (সন্তান প্রসবের পর রক্তস্রাবকালে) নারীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে, যদি ডাক্তাররা কোনো নির্দিষ্ট নারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে এই সিদ্ধান্ত দেন যে স্বামীর সহবাস তার জন্য ক্ষতিকর হবে: তাহলে এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি এবং এর উপর ভিত্তি করে সাধারণ কোনো বিধান প্রয়োগ করা যাবে না।”(ফাতাওয়া ওয়া বুহুস শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু মানীঈ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২২৮)।
.
দ্বিতীয়ত: গর্ভকালীন অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসের কি কোনো সুবিধা বা অসুবিধা আছে?
.
কেউ কেউ বলে থাকেন,গর্ভাবস্থার শেষ মাসে সহবাস করা স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই বিষয়ে বলা যায়, গর্ভাবস্থার শেষ মাসগুলোতে সহবাসের ফলে স্ত্রীর ক্ষতি হয় কিনা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিশস্ত মহিলা ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করা উচিত।কেননা এটি নারীর প্রকৃতি, তার গর্ভধারণের ধরন এবং গর্ভাবস্থা থেকে সৃষ্ট প্রভাবের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন হতে পারে। তবে, নীতিগতভাবে বলতে গেলে: গর্ভাবস্থায় সহবাসের কারণে নারী বা ভ্রূণের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর ভ্রূণকে ফসলের সাথে এবং পুরুষের বীর্যকে সেই ফসলকে সেচ দেওয়া পানির সাথে তুলনা করেছেন। এটি বোঝায় যে ভ্রূণ পুরুষের বীর্য থেকে উপকৃত হয়, যার মানে গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস ও বীর্যপাত উপকারী।
.
​ইমাম ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,قال الإمام أحمد : الوطء يزيد في سمعه وبصره “ইমাম আহমাদ বলেছেন: সহবাস ভ্রূণের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।”(ইবনু ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৪০)
.
যদি প্রশ্ন ওঠে যে, গর্ভবতী অবস্থায় সহবাস কি শিশুর জন্মকে ত্বরান্বিত করে কি না, তবে সাধারণভাবে এর উত্তর হলো না, এটি সাধারণত সত্য নয়। শুধুমাত্র যদি সহবাস অত্যন্ত তীব্র হয় এবং স্ত্রীর জরায়ু যদি দুর্বল থাকে, তখনই এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, স্বামীকে গর্ভবতী স্ত্রীর মানসিক অবস্থা, শারীরিক ক্লান্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্য বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, বিশেষ করে গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে। সুতরাং সহবাসের সময় এমন অবস্থান বেছে নেওয়া উচিত যা স্ত্রী বা ভ্রূণের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ না হয়। কারণ ইসলামের একটি মূলনীতি হলো; কারও ক্ষতি করা যাবেনা এবং নিজের উপরও কোনো ক্ষতি আসতে দেয়া যাবেনা। দলিল হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ক্ষতি করা নয় এবং ক্ষতির বিপরীতে ক্ষতি করাও নয়”(মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২৩৪১), ইমাম আলবানী ‘সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায় ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

স্ত্রীর মৃত্যু হলে কি পুরুষকে ইদ্দত পালন করতে হয় এবং কখন তিনি পুনরায় বিবাহ করতে পারবেন

 ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর শোক পালন (ইদ্দত) মানে নির্দিষ্ট একটি সময় সাজসজ্জা ও সুগন্ধির ব্যবহার বর্জন করা। এটি নারীদের বৈশিষ্ট্য;পুরুষদের নয়। সুতরাং যে নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন, তার জন্য ইদ্দত পালন ও শোক পালন (ইদ্দত) ওয়াজিব। কিন্তু কোনো পুরুষের স্ত্রীর মৃত্যু হলে তার উপর শোক পালন (ইদ্দত) ওয়াজিব নয়।

.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন: ” وَتَجْتَنِبُ الزَّوْجَةِ الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا : الطِّيبَ وَالزِّينَةَ … هَذَا يُسَمَّى الْإِحْدَادَ , وَلَا نَعْلَمُ بَيْنَ أَهْلِ الْعِلْمِ خِلَافًا فِي وُجُوبِهِ عَلَى الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا“সদ্য বিধবা নারী সুগন্ধি ও সাজসজ্জা বর্জন করবে…। এটাকে শোকপালন বলা হয়। সদ্য বিধবা নারীর উপর এটি ওয়াজিব এ ব্যাপারে আলেমদের কোন মতভেদ আছে মর্মে আমরা জানি না।”(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১২৫)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,يجب على المرأة التي مات زوجها عنها العدة والإحداد“যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার উপর ইদ্দত পালন ও শোক পালন ওয়াজিব।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৪৭৯)
.
পক্ষান্তরে,আলেমদের ইজমা তথা সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষের উপর কোন শোকপালন নেই। আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে এসেছে: أَجْمَعُوا عَلَى أَنَّهُ لَا إحْدَادَ عَلَى الرَّجُلِ“তারা (আলেমগণ) এই মর্মে ইজমা (মতৈক্য) করেছেন যে, পুরুষের উপরে শোকপালন নেই।”(আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০৫)
.
সুতরাং কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা গেলে তার উপর কোনো ইদ্দত আরোপিত হয় না। ফলে স্বামী ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। যদিও শরীয়তের দৃষ্টিতে তাৎক্ষণিক বিয়ে সম্পূর্ণ বৈধ, তবুও সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু সময় স্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা এবং মর্যাদা রক্ষা করা উত্তম। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের পরামর্শমাত্র।অতএব, স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী যে কোনো সময় বিয়ে করতে পারেন। এই বিধানের প্রমাণ মহান আল্লাহর বানী:فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ“তোমরা তোমাদের পছন্দমতো নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও।’ (সূরা আন-নিসা: ৩)। এই আয়াতের মাধ্যমে পুরুষদেরকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া, সেজন্য প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্ত্রী জীবিত হোক বা মৃত,তা বিবাহের ক্ষেত্রে বাধা নয়।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:“​যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা যায়, তবে তার মৃত্যুর পর এক মাস, বা এর কম বা বেশি সময়ে কি তার পুনরায় বিবাহ করা জায়েজ? কারণ কিছু ইমাম বলেন যে, তার ইদ্দতকাল অর্থাৎ তিন মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করা জায়েজ নয়। আমি এই অবস্থা দেখে অবাক হয়েছি যে, এটা কি সঠিক নাকি ভুল?
​উত্তরে তারা বলেন:إذا ماتت زوجة الرجل فله أن يتزوج متى شاء، وليس لما ذكره من نقلت عنهم أصل، بل هو باطل. وبالله التوفيق، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.”​যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা যায়, তবে সে ইচ্ছামতো যখন খুশি পুনর্বিবাহ করতে পারে। যাদের থেকে আপনি এটি শুনেছেন,(অর্থাৎ তিন মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করা জায়েজ নয়।) তাদের উদ্ধৃতির কোনো সত্যতা নেই; বরং এটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা, এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের উপর আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ, খণ্ড: ১৮, পৃষ্ঠা: ২৭–২৮; ফাতওয়া নং: ৩৫৬৮)
.
স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:“আমরা যে অঞ্চলে আছি সেখানে একটি প্রথা আছে; তাহলো: কারো স্ত্রী মারা গেলে সে স্বামী ৬ মাস বা তদুর্ধ্ব সময়ের আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে না। আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: কেন? তারা বলবে: স্ত্রীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনস্বরূপ। ঘটনাক্রমে এক লোক তার স্ত্রী মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে বিয়ে করে ফেলে। মানুষ তার বিয়েতে যায়নি। এমনকি তারা এ লোককে সালাম পর্যন্ত দেয় না। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে; এমনকি সেটা যদি একদিন পরেও হয় বিয়ে করা কি শরিয়তে অনুমোদিত; নাকি অনুমোদিত নয়?
জবাবে তারা বলেন:هذه عادة جاهلية ، لا أصل لها في الشرع المطهر ، ولذا فإنه ينبغي التواصي بتركها وعدم اعتبارها ، ولا يجوز هجر من تزوج بعد وفاة امرأته مباشرة ؛ لأنه هجر بغير حق شرعي”এটি একটি জাহেলী প্রথা। পবিত্র শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। তাই এ প্রথাটি বর্জন করা ও এটাকে বিবেচনা না করার জন্য একে অপরকে নসিহত করা বাঞ্চনীয়। যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরপর বিয়ে করেছে তার সাথে সম্পর্কচ্ছিন্ন করা জায়েয নয়।কেননা তা শরিয়ত প্রদত্ত অধিকার ছাড়া সম্পর্কচ্ছেদ।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ১৫৬)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
আপনাদের দ্বীনি ভাই: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Translate